hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

লেখকঃ শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী

নবীগণের সত্যতার উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহ
আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি যে, নবীগণের সত্যতার উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহের সংখ্যা অনেক। একজন সত্যবাদী নবী সর্বোত্তম মানুষ, আর আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যাবাদী একজন ভণ্ড সর্বনিকৃষ্ট মানুষ। এদু’য়ের মাঝে এতো বিস্তর পার্থক্য রয়েছে যে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ গণনা করে শেষ করতে পারবে না। সুতরাং নবীগণের সততার নিদর্শন কিভাবে অন্যান্য জাদুকর ও গণকদের নিদর্শনের সাথে সন্দেহে নিক্ষেপ করবে? আর তাই জাদুকর ও গণকদের মিথ্যা হওয়ার প্রমাণসমূহ এতই অগণিত অসংখ্য যে তা বলে শেষ করা যাবে না। সুতরাং যে কেউ নবীদের সত্যবাদিতার প্রমাণ কোনো সংখ্যায় নির্ধারণ করবে সে অবশ্যই ভুল করবে। বরং নবীগণের সত্যতার নিদর্শনসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার এমন নিদর্শন যা তাঁর আদেশ, নিষেধ, অঙ্গিকার ও ধমক ইত্যাদির উপর প্রমাণ বহন করে। আর আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহ অসংখ্য ও নানা ধরণের, যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, এককত্ব, (ওয়াহদানিয়াত), ইলম, কুদরত, হিকমত ও রহমতের উপর প্রমাণবাহী নিদর্শনসমূহ।

আল-কুরআন আল্লাহর নিদর্শন, এর উদাহরণে ভরপুর। কুরআন সেগুলোকে আয়াত তথা নিদর্শন ও বুরহান তথা দলিল নামে নামকরণ করেছে। ...

বস্তুত: জাদুকর, গণক, অসৎ লোক ও নবীর অনুসারী ছাড়া অন্যান্যরা যেসব আশ্চর্যকর জিনিস নিয়ে আসে তা জিন ও ইনসানের সাধ্যের বাইরে নয়। মানুষ যা করতে পারে তা জিনের সাধ্যের মধ্যে আবার জিন যা করে তা মানুষের সাধ্যের বাইরে নয়। পার্থক্য শুধু পদ্ধতিগত। যেমন একজন জাদুকর জাদুর সাহায্যে কাউকে হত্যা করা, কাউকে অসুস্থ করা, কারো জ্ঞান শূন্য করে দেওয়া বা কারো চলাফেরা বা কথা বন্ধ করে দেওয়া ইত্যাদি। এসব কিছুই মানুষের সাধ্যের মধ্যে, অন্য মানুষও এগুলো করতে পারে, তবে অন্য পন্থায় করতে সক্ষম হয়। জিনেরা হাওয়া ও পানিতে ভাসতে পারে এবং অনেক ভারী জিনিস বহন করে নিয়ে আসতে পারে যেমনটি সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য ইফরিত জিন করেছিল।

﴿ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ ﴾ [ النمل : ٣٩ ]

“এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত”। [সূরা আন্-নামাল: ৩৯]

এ ধরণের কাজ অন্য জিন ও মানুষ করতে পারে। এজন্যই এ ধরণের কাজ নবীর মু‘জিযা হতে পারে না। অনেক মানুষই জিন হাসিল করে বাতাসে উড়ে, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। যেমন ইফরিত বিলকিসের সিংহাসন ইয়ামেন থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতো।

আমরা ঐ সব ভণ্ডদের কথা জানি যারা আল্লাহর নেককার বান্দাহ নয় বরং তাদের মধ্যে কাফির, মুনাফিক, ফাসিক ও অজ্ঞ লোক রয়েছে যারা শরি‘য়াতের কিছুই জানে না, শয়তান তাদেরকে উড়িয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যায়, তাদেরকে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে যায়, ফলে তারা ইহরাম ও তালবিয়্যাহ ছাড়াই আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হয়। আর এসব কাজ করা হারাম।

অজ্ঞলোকেরা মনে করেন এগুলো অলীদের কারামত। তারা জিন হাসিল করে এসব কাজ করে অজ্ঞলোকদেরকে ধোঁকা দেয়, যদিও তাদের অনেক অধ্যবসায় ও ইবাদত বন্দেগী রয়েছে। এমনিভাবে জিনেরা মানুষের কাছে অন্যের সম্পদ চুরি করে নিয়ে আসে, যেমনিভাবে মানুষ মানুষের সম্পদ চুরি করে, তবে জিনেরা অচেনা স্থান থেকে খাদ্য, পানীয় নিয়ে আসতে পারে। এজন্যই এধরণের কাজ নবীর সত্যতার নিদর্শন হতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানির মধ্যে হাত দিলে তাঁর আঙ্গুলের মধ্য দিয়ে পানি নির্গত হয়েছিল, এটা তাঁর নবুওয়তের সত্যতার নিদর্শন ছিল। এ ধরণের কাজ জিন ইনসান কেউ করতে সক্ষম হয়নি। এমনিভাবে সামান্য খাবার বেশি হয়ে যাওয়া, এ কাজও মানুষ ও জিন কেউ করতে সক্ষম নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গায়েব থেকে কখনও খাদ্য ও পানীয় নিয়ে আসেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী খুবাইব ইবন আদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল, যখন তাকে মক্কায় বন্দি করে রাখা হয়েছিল তখন তিনি আঙ্গুর প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সুতরাং এধরণের কাজ নবীগণের বৈশিষ্ট্য নয়। যেমন, মারইয়াম আলাইহিস সালাম যদিও নবী ছিলেন না কিন্তু তাঁর জন্য খাবার নিয়ে আসা হতো। যদি তা হালাল খাদ্য থেকে নিয়ে আসা হতো তবে তা কারামত হিসেবে হয়ত কোনো ফিরিশতা বা মুসলিম জিন তা নিয়ে আসত। আবার কখনও তা হারাম খাদ্য থেকেও আসতে পারে। তাই নবীগণের সব আলামত অলীদের কারামত হতে পারে না। কিন্তু মু‘তাযিলা, আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা এখানে দু’টির মধ্যে পার্থক্য না করে সমান করে দিয়েছে। তারা বলেছেন, নবীর নিদর্শন ও অন্যান্যদের কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য হলো তিনি নবুওয়তের দাবীদার হবেন এবং অনুরূপ আনতে চ্যালেঞ্জ করবেন। এটা মারাত্মক ভুল। কারণ নবীগণের নবুওয়তের প্রমাণ করে এমন নিদর্শনসমূহ সেসব বিষয় থেকে উর্ধ্বে যাতে নবী ও তাদের অনুসারীরা অংশীদার। যেমন: কুরআনের অনুরূপ কুরআন নিয়ে আসা, পূর্ববর্তী নবী ও তাদের উম্মতের সংবাদ দেওয়া, কিয়ামতের দিন যা হবে সে সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, কিয়ামতের আলামত, যমীন থেকে উষ্ট্রী বের করা, লাঠি সাপে পরিণত হওয়া, সমুদ্র দু’ভাগ হয়ে যাওয়া, মাটি দ্বারা পাখি তৈরি করে তা আল্লাহর আদেশে ফুঁৎকার দিয়ে জীবন্ত পাখি সৃষ্টি হওয়া, সুলাইমান আলাইহিস সালাম কর্তৃক জিনদের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার ইত্যাদি নবী ছাড়া অন্যদের মধ্যে ছিল না।

কিন্তু মু’মিন জিন মু’মিনদেরকে সাহায্য করে থাকে এবং কাফির, ফাসিক জিন খারাপ কাজে তাদেরকে সাহায্য করে, যেমনিভাবে মানুষ মানুষকে ভাল ও খারাপ কাজে সাহায্য করে। কিন্তু জিনদের এমন আনুগত্য যা সুলাইমান আলাইহিস সালামের জন্য ছিল তা তিনি ছাড়া অন্য কারোর জন্য ছিল না। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সুলাইমান আলাইহিস সালামকে যা দেওয়া হয়েছে তাঁর চেয়েও অধিক দান করা হয়েছে। তিনি জিনদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরণ করেছিলেন, তাদেরকে আদেশ করেছেন আল্লাহর উপর ঈমান আনতে ও তাঁর আনুগত্য করতে। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন, নিজের কোনো প্রয়োজন বা খিদমতে তাদেরকে কাজে লাগান নি, যেমনটি করেছিলেন নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শক্তি দ্বারা জোর করেন নি, যেমনটি সুলাইমান আলাইহিস সালাম জিনদের সাথে করেছিলেন। বরং তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিনদের সাথে মানুষের আচরণের মতই আচরণ করেছিলেন। ফলে মু’মিন জিনেরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে জিহাদে শরিক হয়েছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি আল্লাহর বিধানের শাস্তির ব্যবস্থাও করেছিলেন। ফলে তিনি তাদের সাথে আল্লাহর বান্দা ও রাসূল সুলভ আচরণ করেছিলেন, নবী ও বাদশাহ সুলভ আচরণ করেন নি, যেমনটি নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম করেছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালেহীন উম্মতেরাও তাঁরই অনুসরণ করে, তিনি যেভাবে জিন ও ইনসানকে আদেশ দিয়েছেন তারাও সেভাবেই করে থাকেন। তবে কিছু লোকেরা এর বিপরীতও আছেন, যারা কিছু জিনকে হালাল কাজে ব্যবহার করেন, যেমন তারা মানুষকে ব্যবহার করেন। এতে করে এ ধরণের লোকদের দীনদারীতার কমতি দেখা দেয়, বিশেষ করে তারা যখন জিনদেরকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করেন। আবার কিছু লোক এর চেয়েও খারাপ, তারা জিনদেরকে জুলুম নির্যাতন, অশ্লীল ইত্যাদি হারাম কাজে ব্যবহার করেন। ফলে তারা অন্যায়ভাবে মানুষকে হত্যা করেন এবং অশ্লীল কাজে জিনদের সাহায্য নেয়, যেমন তারা তাদের জন্য নারী বা শিশু হাজির করান বা তাদের চাহিদার জিনিস হাজির করান। আবার আরেকদল তাদেরকে কুফুরী কাজেও ব্যবহার করেন। এ ধরণের কাজ অলীদের কারামত হতে পারে না। কেননা সালেহীনদের কারামত ঈমান ও আল্লাহর তাকওয়ার কারণে হয়ে থাকে, কুফুরী, ফাসেকী ও অবাধ্যতার কারণে নয়। তাছাড়া পূর্ববর্তী সালেহীনগণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য ছাড়া অন্য কাজে জিনদেরকে ব্যবহার করেন নি। তাদের চেয়ে নিম্ন পর্যায়ের যারা তাদের কেউ কেউ বৈধ কাজে জিনদেরকে ব্যবহার করেছেন। অন্যদিকে জিনদেরকে হারাম কাজে ব্যবহার করা হারাম। তাদেরকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করলে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন।

এদের অনেকের থেকেই এ নি‘আমত উঠিয়ে নিয়ে নেওয়া হয়, অতঃপর তাদের আনুগত্যও উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, ফলে ব্যক্তি ফাসিক হয়ে যায়, অনেক সময় দীন ইসলাম থেকে দূরে সরেও যায় অর্থাৎ মুরতাদ হয়ে যায়। মানুষের আনুগত্যের চেয়ে জিনের আনুগত্য অবশ্যই উত্তম নয়। বরং মানুষ বেশি সম্মানিত, মর্যাদাবান ও উত্তম, তাদের আনুগত্যও বেশি উপকারী ও ফায়েদাবান। মানুষ যখন আল্লাহর আনুগত্য করে তখন সে প্রশংসিত ও সাওয়াবের অধিকারী হয়, আর যখন আল্লাহর অবাধ্য হয় তখন সে নিন্দনীয় ও গুনাহগার হয়।

এমনিভাবে জিনদের আনুগত্য, যারা মানুষের আনুগত্য করে তারা হয়ত ভাল ও দীনের কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করবে বা মন্দ ও অসৎ কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করবে। তারা যদি ভাল কাজে আনুগত্য করে তবে তারাও প্রশংসিত ও সাওয়াবের অধিকারী হবেন, আর মন্দ ও খারাপ কাজে সহযোগিতা ও আনুগত্য করলে নিন্দনীয় ও গুনাহের অধিকারী হবেন। জিনদের উপর কেউ জুলুম করলে অনেক সময় তারা সে ব্যক্তিকে হত্যা করে ফেলে। এ সব কিছু আমরা বাস্তবতা থেকে জানি, তাই এখানে বেশি দীর্ঘ করার প্রয়োজন নেই। নবীগণের আলামত এ ধরণের হতে পারে না।

আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ করানো হয়েছিল তা তাঁর রবের নিদর্শন দেখানোর উদ্দেশ্যে ছিল। এটা তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ أَفَتُمَٰرُونَهُۥ عَلَىٰ مَا يَرَىٰ ١٢ وَلَقَدۡ رَءَاهُ نَزۡلَةً أُخۡرَىٰ ١٣ عِندَ سِدۡرَةِ ٱلۡمُنتَهَىٰ ١٤ عِندَهَا جَنَّةُ ٱلۡمَأۡوَىٰٓ ١٥ ﴾ [ النجم : ١٢، ١٥ ]

“সে যা দেখেছে, সে সম্পর্কে তোমরা কি তার সাথে বিতর্ক করবে? আর সে তো তাকে আরেকবার দেখেছিল। সিদরাতুল মুনতাহার নিকট। যার কাছে জান্নাতুল মা’ওয়া অবস্থিত”। [সূরা আন্-নাজম: ১২-১৫]

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ ٦٠ ﴾ [ الاسراء : ٦٠ ]

“আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মিরাজের রাতে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব নিদর্শন দেখানো হয়েছিল সেসব দৃশ্যই এখানে উদ্দেশ্য। এটা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বৈশিষ্ট্য ও তাঁর নবুওয়তের নিদর্শন। নতুবা শুধু দীর্ঘ পথ অতিক্রম করা জিনদের মাধ্যমে যারা কাজ আদায় করা তাদের দ্বারাও হাসিল হতে পারে। কারণ ইফরিত জিন সুলাইমান আলাইহিস সালামকে বলেছিল,

﴿ قَالَ عِفۡرِيتٞ مِّنَ ٱلۡجِنِّ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن تَقُومَ مِن مَّقَامِكَۖ وَإِنِّي عَلَيۡهِ لَقَوِيٌّ أَمِينٞ ٣٩ ﴾ [ النمل : ٣٩ ]

“এক শক্তিশালী জিন বলল, ‘আপনি আপনার স্থান থেকে উঠার পূর্বেই আমি তা এনে দেব। আমি নিশ্চয়ই এই ব্যাপারে শক্তিমান, বিশ্বস্ত”। [সূরা আন্-নামাল: ৩৯] ইয়ামেনের রাজপ্রসাদ থেকে রানীর সিংহাসন শামে নিয়ে আসা মসজিদুল হারাম থেকে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করার চেয়ে কঠিন কাজ। আর

﴿ قَالَ ٱلَّذِي عِندَهُۥ عِلۡمٞ مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِ أَنَا۠ ءَاتِيكَ بِهِۦ قَبۡلَ أَن يَرۡتَدَّ إِلَيۡكَ طَرۡفُكَۚ فَلَمَّا رَءَاهُ مُسۡتَقِرًّا عِندَهُۥ قَالَ هَٰذَا مِن فَضۡلِ رَبِّي لِيَبۡلُوَنِيٓ ءَأَشۡكُرُ أَمۡ أَكۡفُرُۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشۡكُرُ لِنَفۡسِهِۦۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيّٞ كَرِيمٞ ٤٠ ﴾ [ النمل : ٤٠ ]

“যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, ‘আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার কাছে নিয়ে আসব’। অতঃপর যখন সুলাইমান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেল, তখন বলল, ‘এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে, তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা”। [সূরা আন্-নামাল: ৪০] মসজিদুল হারাম থেকে আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করার চেয়ে জিনের এ কাজটি অধিক কঠিন ছিল। (সুতরাং বুঝা গেল যে, শুধু মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসায় ভ্রমন নয় বরং সেখানে ও তৎপরবর্তী বিভিন্ন নিদর্শন দেখাই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ)

যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে ও সুলাইমান আলাইহিস সালামের চেয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান। আর তাই বলা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যেসব জিনিস দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তা ঐ সব নেয়ামতের চেয়ে উত্তম। আর তা হলো আল্লাহ তাকে মিরাজের রাতে আল্লাহর নিদর্শন দেখাতে সফর করিয়েছেন। সুতরাং রাসূলের বিশেষত্ব তো এই যে ইসরা ও মিরাজ ছিল তাঁকে আল্লাহর নিদর্শনসমূহের কিছু নিদর্শন দেখানো। যেমনিভাবে তিনি জিবরীলকে অন্যবার দেখেছেন, সিদরাতুল মুন্তাহার নিকটে, যার কাছে রয়েছে জান্নাতুল মাওয়া, যখন সে গাছটিকে ঢেকে রাখে যা ঢেকে রাখার, তাঁর দৃষ্টি বিভ্রমও হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করে নি।

আর এটি অর্থাৎ উক্তত নিদর্শনসমূহ দেখা সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও অন্য কারো অর্জিত হয়নি। জিনেরা যদিও মানুষকে বাতাসে উড়াতে পারে তবে তারা আসমানে আরোহণ করতে পারে না এবং রবের নিদর্শন অবলোকন করতে পারে না। তাই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা দান করা হয়েছে তা মানুষ ও জিনের ক্ষমতার বাইরে। মিরাজের রজনীতে জিবরীল আলাইহিস সাআলামকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী করা হয়েছিল, কেননা আল্লাহ তাকে তাঁর রিসালা মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য নির্বাচিত করেছেন, আর আল্লাহ ফিরিশতা ও মানুষের মধ্য থেকে রাসূল নির্বাচিত করেন। ইসরার উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর বড় বড় নিদর্শন অবলোকন করা ও তা মানুষকে সংবাদ দেওয়া।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে এ সংবাদ দিয়েছেন তখন মুশরিকেরা মিথ্যারোপ করল আর আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্যান্য মু’মিনেরা বিশ্বাস করল। এটা মানুষের জন্য পরীক্ষা ছিল। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ ٦٠ ﴾ [ الاسراء : ٦٠ ]

“আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০] অর্থাৎ বিপদ ও পরীক্ষা হিসেবে মানুষের জন্য নির্ধারণ করেছি যাতে করে তাদের মধ্যকার কাফের ও ঈমানদারের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেছেন,

﴿ وَإِذۡ قُلۡنَا لَكَ إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِٱلنَّاسِۚ وَمَا جَعَلۡنَا ٱلرُّءۡيَا ٱلَّتِيٓ أَرَيۡنَٰكَ إِلَّا فِتۡنَةٗ لِّلنَّاسِ وَٱلشَّجَرَةَ ٱلۡمَلۡعُونَةَ فِي ٱلۡقُرۡءَانِۚ وَنُخَوِّفُهُمۡ فَمَا يَزِيدُهُمۡ إِلَّا طُغۡيَٰنٗا كَبِيرٗا ٦٠ ﴾ [ الاسراء : ٦٠ ]

“আর স্মরণ কর, যখন আমি তোমাকে বললাম, ‘নিশ্চয় তোমার রব মানুষকে ঘিরে রেখেছেন। আর যে ‘দৃশ্য’ আমি তোমাকে দেখিয়েছি তা এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষ [তা হল- যাক্কুম বৃক্ষ যার মূল জাহান্নামে।] কেবল মানুষের পরীক্ষাস্বরূপ নির্ধারণ করেছি’। আমি তাদের ভয় দেখাই; কিন্তু তা কেবল তাদের চরম অবাধ্যতা বাড়িয়ে দেয়”। [সূরা আল-ইসরা: ৬০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে ইসরার সংবাদ দেন তখন তারা তা অস্বীকার করেছিল, কিন্তু যখন তারা মসজিদুল আকসার বর্ণনা জিজ্ঞাসা করেছে তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বর্ণনা করেছেন। তারা জানত যে, তিনি মসজিদুল আকসা কখনও দেখেনি, তাই তিনি যখন তার বর্ণনা দিলেন তখন তাদের মধ্যে যারা মসজিদুল আকসা দেখেছে তারা তাঁকে বিশ্বাস করেছিল। এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসরার দলিল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তারা আর মিথ্যারোপ করতে পারেনি।

আর এটা উল্লেখ করা হয় যে, তিনি তাঁর রবের বড় বড় নিদর্শন দেখেছেন। তিনি জিবরীল আলাইহিস সালামকে স্বচক্ষে তাঁর আসলী সূরতে দেখেছেন। কেননা জিবরীল আলাইহিস সালামের দর্শন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের পূর্ণতা ছিল, এতে স্পষ্ট হয়েছে যে, যে ব্যক্তি তাঁর কাছে কুরআন নিয়ে আসেন তিনি একজন ফিরিশতা, সে শয়তান নয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ إِنَّهُۥ لَقَوۡلُ رَسُولٖ كَرِيمٖ ١٩ ذِي قُوَّةٍ عِندَ ذِي ٱلۡعَرۡشِ مَكِينٖ ٢٠ مُّطَاعٖ ثَمَّ أَمِينٖ ٢١ ﴾ [ التكوير : ١٩، ٢١ ]

“নিশ্চয় এ কুরআন সম্মানিত রাসূলের [জিবরীল (আলাইহিস সালাম)।] আনিত বাণী। যে শক্তিশালী, আরশের মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন। মান্যবর, সেখানে সে বিশ্বস্ত”। [সূরা আত্-তাকওয়ীর: ১৯-২১]

﴿ وَمَا صَاحِبُكُم بِمَجۡنُونٖ ٢٢ وَلَقَدۡ رَءَاهُ بِٱلۡأُفُقِ ٱلۡمُبِينِ ٢٣ وَمَا هُوَ عَلَى ٱلۡغَيۡبِ بِضَنِينٖ ٢٤ وَمَا هُوَ بِقَوۡلِ شَيۡطَٰنٖ رَّجِيمٖ ٢٥ فَأَيۡنَ تَذۡهَبُونَ ٢٦ إِنۡ هُوَ إِلَّا ذِكۡرٞ لِّلۡعَٰلَمِينَ ٢٧ ﴾ [ التكوير : ٢٢، ٢٧ ]

“আর তোমাদের সাথী [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।] পাগল নয়। আর সে [মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।] তাকে [জিবরীল (আলাইহিস সালাম)।] সুস্পষ্ট দিগন্তে দেখেছে। আর সে তো গায়েব সম্পর্কে কৃপণ নয়। আর তা কোনো অভিশপ্ত শয়তানের উক্তি নয়। সুতরাং তোমরা কোথায় যাচ্ছ? এটাতো সৃষ্টিকুলের জন্য উপদেশমাত্র”। [সূরা আত্-তাকওয়ীর: ২২-২৭]

ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. অন্যত্র বলেন,

নবীগণের মু‘জিযা আর জাদুকর ও গণকদের অলৌকিক ঘটনার মধ্যে পার্থক্য হলো:

প্রথমত: নবী কিতাব থেকে যা বলেন তা সত্য, কখনও মিথ্যা হতে পারে না। অন্যদিকে জাদুকর ও গণকেরা সে সত্যের বিরুদ্ধে যা বলে তা অবশ্যই মিথ্যা হতে বাধ্য। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,

﴿ هَلۡ أُنَبِّئُكُمۡ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ ٱلشَّيَٰطِينُ ٢٢١ تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٖ ٢٢٢ ﴾ [ الشعراء : ٢٢١، ٢٢٢ ]

‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়’? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা আশ-শু‘আরা: ২২১-২২২]

দ্বিতীয়ত: নবী যা নির্দেশ দেয় ও করে আর নবী ব্যতীত অন্যান্যরা যা নির্দেশ দেয় ও করে এর মাধ্যমেও পার্থক্য সূচিত হয়ে যায়; কারণ আদেশ ও কাজের দিক বিবেচনায়, নবীগণ ন্যায়পরায়নতা, আখেরাতের কামনা, আল্লাহর ইবাদত, কল্যাণ ও তাকওয়ার কাজের আদেশ দেন, পক্ষান্তরে তাদের বিরোধীরা শির্ক, জুলুম, দুনিয়া অর্জন, অসৎ ও অন্যায় কাজের আদেশ দিয়ে থাকে।

তৃতীয়ত: জাদুকর ও গণকদের কাজ হলো সাধারণ কাজ যা সে পেশার বিশেষজ্ঞদের কাছে পরিচিত, সেগুলো আসলে অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়, পক্ষান্তরে নবীগণের সত্যতার নিদর্শন তারা ও তাদের অনুসারী ছাড়া অন্য কারো মধ্যে পাওয়া যায় না।

চতুর্থত: জাদু ও গণকবিদ্যা মানুষ শিক্ষার মাধ্যমে অর্জন করতে পারে। কিন্তু নবুওয়ত কেউ ইচ্ছা করে অর্জন করতে পারে না।

পঞ্চমত: যদি ধরে নেওয়া হয় যে, নবুওয়ত অর্জন করা যায় তবে তা সৎ কাজ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা, তাওহীদ ইত্যাদির মাধ্যমে অর্জিত হতো, এটা আল্লাহ ব্যতীত অন্যের সাথে মিথ্যাচার তো দূরের কথা স্বয়ং আল্লাহর সাথে মিথ্যাচারের মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব নয়। নবুওয়ত যদি অর্জন করা যেতো তবে তা আল্লাহর সাথে সত্যবাদিতার মাধ্যমেই অর্জিত হতো।

ষষ্ঠত: জাদুকর ও গণকেরা যা করে তা মানুষ ও জিনের সাধ্যের বাইরে নয়। আর এরা সকলেই রাসূলের অনুগত্য করতে আদিষ্ট। অন্যদিকে রাসূলগণের নিদর্শনসমূহ মানুষ ও জিনের সাধ্যের বাইরে, বরং রাসূলগণ যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছে তাদের কাছে এগুলো অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ الاسراء : ٨٨ ]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

সপ্তমত: জাদুকর ও গণকদের অলৌকিক ঘটনাগুলোকে অন্যরা অন্য কিছু দিয়ে মুকাবিলা করতে সক্ষম, কিন্তু নবীগণের আলামত কখনও অনুরূপ কিছু দিয়ে মুকাবিলা করা যায় না।

অষ্টমত: জাদুকর ও গণকদের আনা জিনিসগুলো বনী আদমের সাধ্যের বাইরের বিষয় নয়, বরং এগুলো অন্য সাধারণ মানুষের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার, কিন্তু নবীগণের নিদর্শনসমূহ বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী সকলের নিকটই অস্বাভাবিক ও অলৌকিক।

নবমত: নবীগণের এসব অলৌকিক কাজ সব মাখলুকাতের কাছেই সাধ্যের বাইরে, এমনকি ফিরিশতাদেরও সাধ্যের বাইরে। যেমন: কুরআন নাযিল করা, আল্লাহর সাথে মূসা আলাইহিস সালামের কথা বলা ইত্যাদি। পক্ষান্তরে অন্যান্যদের কর্মকাণ্ড জিন ও শয়তানের সাধ্যের মধ্যেই।

দশমত: যদি কিছু আলামত ফিরিশতাদের সাধ্যের মধ্যেও হয়, তবে সেক্ষেত্রে এটা জানা আবশ্যক যে ফিরিশতারা আল্লাহর ব্যাপারে কখনও মিথ্যা কথা বলে না, তারা মানুষকে কখনও মিথ্যা কথা বলেন না যে আল্লাহ তাঁকে রাসূল হিসেবে পাঠিয়েছেন। মূলত শয়তানরা এ কাজ করে থাকে। আর আমাদের ও আমাদের পূর্বের সৎলোকদের কারামত নানা ধরণের। এগুলো নেককারদের কাছে অলৌকিক নয়, পক্ষান্তরে নবীগণের নিদর্শন নেককারদের কাছেই অস্বাভাবিক ও অলৌকিক। নেককারদের কারামত দো‘আ ও ইবাদতের মাধ্যমে লাভ করা যায়; কিন্তু নবীগণ তা সেভাবে লাভ করতে পারেন না, যদিও মানুষ নবীদের কাছে তা চায়, যতক্ষণ না আল্লাহ তা সংঘটিত হওয়ার অনুমতি দেন। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ لَوۡلَآ أُنزِلَ عَلَيۡهِ ءَايَٰتٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡأٓيَٰتُ عِندَ ٱللَّهِ وَإِنَّمَآ أَنَا۠ نَذِيرٞ مُّبِينٌ ٥٠ ﴾ [ العنكبوت : ٥٠ ]

“আর তারা বলে, ‘তার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে নিদর্শনসমূহ নাযিল হয় না কেন’? বল, ‘নিদর্শনসমূহ তো আল্লাহর কাছে, আর আমি তো কেবল একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী”। [সূরা আল্-আনকাবূত: ৫০]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ وَقَالُواْ لَوۡلَا نُزِّلَ عَلَيۡهِ ءَايَةٞ مِّن رَّبِّهِۦۚ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ قَادِرٌ عَلَىٰٓ أَن يُنَزِّلَ ءَايَةٗ وَلَٰكِنَّ أَكۡثَرَهُمۡ لَا يَعۡلَمُونَ ٣٧ ﴾ [ الانعام : ٣٧ ]

“আর তারা বলে, ‘কেন তার উপর তার রবের পক্ষ থেকে কোনো নিদর্শন নাযিল করা হয়নি’? বল, ‘নিশ্চয় আল্লাহ যে কোনো নিদর্শন নাযিল করতে সক্ষম। কিন্তু তাদের অধিকাংশ জানে না”। [সূরা আল-আন‘আম: ৩৭]

একাদশতম: নবীর পূর্বেও অন্যান্য নবী অতিবাহিত হয়েছেন, তিনি কেবল এমন জিনিসেরই আদেশ নিষেধ করেন পূর্ববর্তী নবীগণ সাধারণত সেসব বিষয়ের আদেশ নিষেধ করতেন সুতরাং তাঁর অনেক উদাহরণ রয়েছে যাদের থেকে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করে (নবীর সততার ব্যাপারে) সিদ্ধান্ত নিতে পারে। যেমনিভাবে জাদুকর ও গণকরা তাদেরও অনুরূপ লোক আছে যাদের দেখে লোকেরা শিক্ষা গ্রহণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

দ্বাদশতম: নবীগণ মানুষকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের আদেশ নিষেধ করে থাকেন। ফলে তারা তাওহীদ, ইখলাস, সততা, ইত্যাদির আদেশ দেন এবং শির্ক, মিথ্যা, জুলুম ইত্যাদি থেকে নিষেধ করেন। তাদের কাজ কর্ম মানুষের আকল ও স্বভাবের সামাঞ্জস্যপূর্ণ। তারা যা নিয়ে আসেন তা সুস্থ বিবেক ও সহীহ রেওয়ায়েত সত্যায়ন করে। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।

ভূমিকা সমাপ্ত হলো

শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. থেকে বেশি উদ্ধৃত করা হয়েছে। কেননা তিনি ইসলামের দুশমনের সংশয় অপনোদন করেছেন। আল্লাহ তাঁকে ইসলামের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

এখন মূল অধ্যয় শুরু করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর কাছে সাহায্য ও তাওফিক কামনা করছি। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট, উত্তম অকীল। লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন