মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
‘আবদুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে মদীনার বসতিহীন এলাকা দিয়ে চলছিলাম। তিনি একখানি খেজুরের ডালে ভর দিয়ে একদল ইয়াহুদীর কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তারা একজন অন্যজনকে বলতে লাগল, ‘তাঁকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর।’ আর একজন বলল, ‘তাঁকে কোনো প্রশ্ন করো না, হয়ত এমন কোনো জওয়াব দিবেন যা তোমার পছন্দ করো না।’ আবার তাদের কেউ কেউ বলল, ‘তাঁকে আমরা প্রশ্ন করবই।’ তারপর তাদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে আবুল কাসিম রূহ কী?’ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চুপ করে রইলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাঁর প্রতি অহী নাযিল হচ্ছে। তাই আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। তারপর যখন সে অবস্থা কেটে গেল তখন তিনি বললেন,
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশরা ইয়াহুদীদেরকে বলল, তোমরা আমাদেরকে কিছু প্রশ্ন দাও এ লোকটিকে জিজ্ঞেস করি। তারা বলল, তাকে রূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করো। তখন এ আয়াত নাযিল হয়,
“তারা তোমাকে রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত এবং তাদেরকে সামান্যই জ্ঞান দেওয়া হয়েছে।” [সূরা ইসরা: ৮৫]
তারা বলল, আমাদেরকে অনেক ইলম দান করা হয়েছে। আমাদেরকে তাওরাত দান করা হয়েছে। আর যাকে তাওরাত দান করা হয়েছে মূলতঃ তাকে অনেক কল্যাণ দান করা হয়েছে। তখন আল্লাহ নাযিল করেন,
“বল, ‘আমার রবের কথা লেখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়ে যায় তবে সমুদ্র নিঃশেষ হয়ে যাবে আমার রবের কথা শেষ হওয়ার আগেই”। [সূরা আল-কাহফ: ১০৯। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৩০৯। হাদীসের সনদটি সহীহ।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, দ্বিপ্রহরের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে আসলেন এবং যোহরের সালাত আদায় করলেন। সালাম ফিরানোর পর তিনি মিম্বরে উঠে দাঁড়ালেন এবং কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করলেন। তিনি উল্লেখ করলেন যে, কিয়ামতের পূর্বে অনেক বড় বড় ঘটনা সংঘটিত হবে। তারপর তিনি বললেন, কেউ যদি আমাকে কোনো বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে ভাল মনে করে, তাহলে সে তা করতে পারবে। আল্লাহর শপথ! আমি এখানে অবস্থান করা পর্যন্ত তোমরা আমাকে যে বিষয়েই জিজ্ঞাসা করবে, আমি তা তোমাদের অবহিত করব। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এতে লোকেরা খুব কাঁদতে থাকল। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব বলতে থাকলেন। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার আশ্রয়স্থল কোথায়? তিনি বললেন, জাহান্নাম। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন হুযাফা রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা হুযাফা। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তারপর তিনি বার বার বলতে থাকলেন, তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর। তোমরা আমার কাছে প্রশ্ন কর। এতে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন এবং বললেন, আমরা আল্লাহকে রব হিসাবে মেনে, ইসলামকে দীন হিসাবে গ্রহণ করে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসূল হিসাবে বিশ্বাস করে সন্তুষ্ট আছি। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন এ কথা বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নীরব হয়ে গেলেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তাঁর কসম করে বলছি, এইমাত্র আমি যখন সালাতে ছিলাম তখন এই দেওয়ালের প্রান্তে জান্নাত ও জাহান্নাম আমার সম্মুখে পেশ করা হয়েছিল। আজকের ন্যায় এমন কল্যাণ ও অকল্যাণ আমি আর দেখিনি। [বুখারী, হাদীস নং ৭২৯৪, মুসলিম, হাদীস নং ২৩৫৯।]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত গোলাম সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দাঁড়িয়েছিলাম। ইতিমধ্যেই ইয়াহুদীদের এক পণ্ডিত ব্যক্তি এসে বলল, আসসালামুআলাইকা ইয়া মুহাম্মাদ! এরপর আমি তাকে এমন এক ধাক্কা মারলাম যে, সে প্রায় পড়েই গিয়েছিল আর কি! সে বলল, তুমি আমাকে ধাক্কা মারলে কেন? আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ বলতে পার না। ইয়াহুদী বলল, আমরা তাঁকে তাঁর পরিবার পরিজন যে নাম রেখেছে সে নামেই ডাকি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার নাম মুহাম্মাদ। আমার পরিবারের লোকই আমার এ নাম রেখেছে। এরপর ইয়াহুদী বলল, আমি আপনাকে (কয়েকটি কথা) জিজ্ঞাসা করতে এসেছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার কি লাভ হবে, যদি আমি তোমাকে কিছু বলি? সে বলল, আমি আমার কান পেতে শুনব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কাছে যে লাঠিটি ছিল তা দিয়ে মাটিতে আঁকা-ঝোকা করলেন। তারপর বললেন, জিজ্ঞাসা কর। ইয়াহুদী বলল, যেদিন এক যমীন ও আসমান পাল্টে গিয়ে কি অন্য যমীন ও আসমানে পরিণত হবে (অর্থাৎ কিয়ামাত হবে) সেদিন লোকজন কোথায় থাকবে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা সেদিন পুলসিরাতের কাছে অন্ধকারে থাকবে। সে বলল, কে সর্বপ্রথম (তা পার হবার) অনুমতি লাভ করবে? তিনি বললেন, দরিদ্র মুহাজিরগন। ইয়াহুদী বলল, জান্নাতে যখন তারা প্রবেশ করবে তখন তাদের তোহফা কি হবে? তিনি বললেন, মাছের কলিজার টুকরা। সে বলল, এরপর তাদের সকালের নাস্তা কি হবে? তিনি বললেন, তাদের জন্য জান্নাতের ষাড় যবেহ করা হবে যা জান্নাতের আশে পাশে চরে বেড়াত। সে বলল, এরপরে তাদের পানীয় কি হবে? তিনি বললেন, সেখানকার একটি ঝর্ণার পানি যার নাম ‘সালসাবীল’। সে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন। সে আরো বলল যে, আমি আপনার কাছে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতে এসেছি যা নবী ছাড়া পৃথিবীর কোন অধিবাসী জানে না অথবা একজন কি দুইজন লোক ছাড়া। তিনি বললেন, আমি, যদি তোমাকে তা বলে দিই তাতে তোমার কি কোনো উপকার হবে? সে বলল, আমি এ আমার কান পেতে শুনব। সে বলল, আমি আপনাকে সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাস করতে এসেছি। তিনি বললেন, পুরুষের বীর্য সাদা এবং মেয়েলোকের বীর্য হলুদ। যখন উভয়টি একত্রিত হয়ে যায় এবং পুরুষের বীর্য মেয়েলোকের ডিম্বের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন আল্লাহর হুকুমে পুত্র সন্তান হয়। আর যখন মেয়েলোকের ডিম্বপুরুষের বীর্যের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করে তখন আল্লাহর হুকুমে কন্যা সন্তান হয়। ইয়াহুদী বলল, আপনি ঠিকই বলেছেন এবং নিশ্চয়ই আপনি নবী। এরপর সে চলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ লোক আমার কাছে যা জিজ্ঞাসা করেছে, ইতোপূর্বে আমার সে সম্পর্কে কোন জ্ঞানই ছিল না। আল্লাহ তা‘আলা এক্ষণে আমাকে তা জানিয়ে দিলেন। [মুসলিম, হাদীস নং ৩১৫।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন খায়বার বিজিত হয়, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একটি (ভুনা) বকরী হাদীয়া দেওয়া হয়; যাতে বিষ ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ দিলেন যে, এখানে যত ইয়াহূদী আছে, সকলকে একত্রিত কর্ তাদের সকলকে তাঁর সামনে একত্রিত করা হল। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের একটি প্রশ্ন করব। তোমরা কি আমাকে তার সত্য উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, সত্য উত্তর দিব, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমাদের পিতা কে? তারা বলল, অমুক।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা মিথ্যা বলেছ, বরং তোমাদের পিতা অমুক।’ তারা বলল, ‘আপনিই সত্য বলেছেন।’ তখন তিনি বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, দিব, হে আবুল কাসিম! আর যদি আমরা মিথ্যা বলি, তবে আপনি আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলবেন, যেমন আমাদের পিতা সম্পর্কে আমাদের মিথ্যা ধরে ফেলেছেন।’ তখন তিনি তাদের জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কারা দোযখবাসী?’ তারা বলল, আমরা তথায় অল্প কিছু দিন অবস্থান করব, তারপর আপনারা (মুসলিমরা) আমাদের পেছনে সেখানে থেকে যাবেন।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘দুর হও, তোমরাই তথাই থাকবে। আল্লাহর কসম। আমরা কখনো কখনো তাতে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হব না।’ তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি যদি তোমাদের একটি প্রশ্ন করি, তোমরা কি তার সঠিক উত্তর দিবে? তারা বলল, হ্যাঁ, হে আবুল কাসিম!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি এ বকরীটিতে বিষ মিশিয়েছ?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ।’ তিনি বললেন, ‘কিসে তোমাদের এ কাজে উদ্ধুদ্ধ করল?’ তারা বলল, ‘আমরা চেয়েছি আপনি যদি মিথ্যাবাদী হন, তবে আমরা আপনার থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি লাভ করব আর আপনি যদি নবী হন তবে তা আপনার কোনো ক্ষতি করবে না।’ [বুখারী, হাদীস নং ৩১৬৯।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবদুল্লাহ ইবন সালামের কাছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মদীনায় আগমনের খবর পৌঁছল, তখন তিনি তাঁর কাছে আসলেন। এরপর তিনি বলেছেন, আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করতে চাই যার উত্তর নবী ছাড়া আর কেউ অবগত নয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? আর সর্বপ্রথম খাবার কি, যা জান্নাতবাসী খাবে? আর কি কারণে সন্তান তার পিতার সাদৃশ্য লাভ করে? আর কিসের কারণে (কোন কোনো সময়) তার মামাদের সাদৃশ্য হয়? তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এইমাত্র জিবরীল আলাইহিস সালাম আমাকে এ বিষয়ে অবহিত করেছেন। রাবি বলেন, তখন আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, সে তো ফিরিশতাগণের মধ্যে ইয়াহূদীদের শত্রু। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিয়ামতের প্রথম নিদর্শন হলো আগুন যা মানুষকে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে তাড়িয়ে নিয়ে একত্রিত করবে। আর প্রথম খাবার যা জান্নাতবাসীরা খাবেন তা হলো মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান সদৃশ হওয়ার রহস্য এই যে পুরুষ যখন তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন যদি পুরুষের বীর্যের পূর্বে স্খলিত হয় তখন সন্তান তার সাদৃশ্যতা লাভ করে। তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি-নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসুল। এরপর তিনি বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়াহূদিরা অপবাদ ও কুৎসা রটনাকারী সম্প্রদায়। আপনি তাদেরকে আমার সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করার পূর্বে তারা যদি আমার ইসলাম গ্রহণের বিষয় জেনে ফেলে, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা রতনা করবে। তারপর ইয়াহূদিরা এলো এবং আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম কেমন লোক? তারা বলল, তিনি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যক্তি এবং সবচেয়ে বিজ্ঞ ব্যাক্তির পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম ব্যক্তির পুত্র। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি আবদুল্লাহ ইসলাম গ্রহন করে, এতে তোমাদের অভিমত কি হবে? তারা বলল, এর থেকে আল্লাহ তার তাঁকে রক্ষা করুক। এমন সময় আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের সামনে বের হয়ে আসলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। তখন তারা বলতে লাগল, সে আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির সন্তান এবং তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হয়ে গেল। [বুখারী, হাদীস নং ৩৩২৯।]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখ একজন ইয়াহুদীকে কালি মাখা এবং বেত্রাঘাত কৃত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন তিনি বলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছে? তারা বলল, হ্যাঁ। এরপর তাদের মধ্য হতে একজন আলিম (পাদরী) ব্যক্তিকে ডাকালেন এবং বললেন, তোমাকে সেই আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, যিনি মুসা আলাইহিস সালামের প্রতি তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন, তোমরা কি তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এরূপই পেয়েছ? তখন ইয়াহুদী আলিম ব্যক্তি বললেন, না। তিনি আরো বললেন, আপনি যদি আমাকে আল্লাহর কসম দিয়ে এভাবে না বলতেন তবে আমি আপনাকে জানাতাম না যে, এর প্রকৃত শাস্তি রজম (পাথর নিক্ষেপ করা)। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্মানীত ব্যক্তিদের মাঝে এর ব্যাপক প্রচলন হয়ে গেছে। অতএব, আমরা যখন এতে কোনো সম্ভ্রান্ত লোককে পেতাম, তখন তাকে ছেড়ে দিতাম এবং যখন কোনো দুর্বল ব্যক্তিকে পাকড়াও করতাম তখন তার উপর শরী‘য়তের প্রকৃত শাস্তি বাস্তবায়িত করতাম। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলেই এসো, আমরা সম্মিলিতভাবে এ ব্যাপারে একটি শাস্তি নির্ধারিত করে নেই, যা ভদ্র ও অভদ্র সকলের উপরই প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আমরা ব্যভিচারের শাস্তি কালি লাগানো এবং বেত্রাঘাত করাকেই গ্রহন করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের পরিবর্তে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি, যে তোমার নির্দেশ ‘রজম’ বাস্তবায়িত করলাম যা তারা বাতিল করে ফেলেছিল। সুতরাং তিনি তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিলেন। অবশেষে ঐ ইয়াহুদীকে পাথর মারা হল। এরপর মহান আল্লাহ এই আয়াত নাযিল করেন, “হে রাসুল! যারা কাজে দ্রুতগামী তাদের কার্যকলাপ যেন আপনাকে চিন্তিত না করে”। “যদি তোমদেরকে তা প্রদত্ত করা হয়, তবে তা ধারণ কর” [সূরা আল-মায়েদা: ৪১] পর্যন্ত অবতীর্ণ করেন। তারা (ইয়াহুদীরা) বলতো যে, তোমরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গমন করো, যদি তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে কালি লাগালো এবং বেত্রাঘাতের নির্দেশ প্রদান করেন, তবে তোমরা তা কার্যকর করবে; আর যদি তিনি রজমের নির্দেশ দেন তবে তা প্রত্যাখ্যান করবে। আল্লাহ তা‘আলা (এই মর্মে) আয়াত অবতীর্ণ করেন, “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত মুতাবিক বিচারকার্য পরিচালনা করে না তারাই হলো কাফির তথা অস্বীকারকারী সম্প্রদায়”। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুসারে বিচার করে না তারাই- হলো জালিম তথা অত্যাচারী দল”। “আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত আয়াত অনুযায়ী বিচার করে না তারাই হলো ফাসিক তথা সীমালঙ্ঘনকারী দল”। এই সবগুলো আয়াত কাফিরদের সম্পর্কেই অবতীর্ণ হয়। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭০০।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কোনো বিষয়ে (অতিরিক্ত) প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দূত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমানা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্থাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের উপর দিনে ও রাতে পাচ ওয়াক্ত সালাত ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঠিকই বলেছো। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, প্রতি বছর রমাদান মাসের সাওম পালন করা আমাদের উপর ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলেছে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর হজ্জ ফরয। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সত্যি বলেছে। রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে। [মুসলিম, হাদীস নং ১২।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/21
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।