মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ
লেখকঃ শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী
২০
দশম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: গায়েবী বিষয়ে তাঁর সংবাদ দেওয়া এবং তিনি যেভাবে বলেছেন সেগুলো ঠিক সেভাবেই সংঘটিত হয়েছিল।
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নাজাশী যে দিন মারা যান সেদিন-ই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মৃত্যু সংবাদ দেন এবং জানাযার স্থানে গিয়ে লোকদের কাতারবদ্ধ করে চার তাক্বির আদায় করলেন। [বুখারী, হাদীস নং ১২৪৫।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আবিসিনিয়ার বাদশাহ্) নাজাশীর মৃত্যুর দিনই আমাদের তার মৃত্যু সংবাদ জানান এবং বলেন: তোমরা তোমাদের ভাই-এর (নাজাশীর) জন্য ইস্তিগফার কর। আর ইবন শিহাব সা‘য়ীদ ইবন মুসায়্যাব (রহ.) সূত্রে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে মুসাল্লায় কাতার করলেন, এরপর চার তাক্বীর আদায় করেন। [বুখারী, হাদীস নং ১৩২৭-১৩২৮।]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন নাজাশীর মৃত্যু হল তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আজ একজন সৎ ব্যক্তি মারা গেছেন। উঠো, এবং তোমাদের (ধর্মীয়) ভাই আসহামার জন্য জানাযার সালাত আদায় কর। [বুখারী, হাদীস নং ৩৮৭৭।]
জাবির ইবন আবদুল্লাহ আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নাজাশীর উপর জানাযার সালাত আদায় করেন। আমরাও তাঁর পিছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় কাতারে ছিলাম। [বুখারী, হাদীস নং ৩৮৭৮।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতা যুদ্ধের অবস্থা বর্ণনায়) বললেন, যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পতাকা বহন করেছে তারপর শহীদ হয়েছে। তারপর জা‘ফর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; সেও শহীদ হয়। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং সেও শহীদ হয়। এ সংবাদ বলেছিলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু’চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছিল। এরপর খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পরামর্শ ছাড়াই (পতাকা) হাতে তুলে নেয় এবং তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত হয়। [বুখারী, হাদীস নং ১২৪৬।]
আব্দুল্লাহ ইবন জা’ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মূতার যুদ্ধে) যায়েদ ইবন হারেসা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেনাপতি করে সৈন্যবাহিনী প্রেরণ করেন। আর বলে দিলেন যে, যদি যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু শহীদ হন তবে তোমাদের আমীর হবেন জাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনিও যদি শহীদ হন তবে তোমাদের আমীর হবেন আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু। যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছেন তারপর এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, তিনি শহীদ হয়েছে। তারপর জা'ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; তিনিও এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, শহীদ হন তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং তিনিও এমনভাবে জিহাদ করেছেন যে, শহীদ হন। এরপর খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা হাতে তুলে নেন এবং তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত হয়। তাদের সংবাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি লোকদের মাঝে নেমে আসেন। অতঃপর তিনি আল্লাহর হামদ ও সানা করেন। তিনি বলেন, তোমাদের ভাইয়ের শত্রুর মোকাবিলা করছে। যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছে তারপর শহীদ হয়েছে। তারপর জা'ফর রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) হাতে নিয়েছে; সেও শহীদ হয়। তারপর আবদুল্লাহ্ ইবন রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (পতাকা) ধারন করে এবং সেও শহীদ হয়। অতঃপর আল্লাহর তরবারী খ্যাত খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা বহন করেছে। আল্লাহ তাঁর দ্বারা বিজয় সূচিত করেছেন। জা’ফর পরিবারকে সুযোগ দাও তাদের জন্য শান্তনা। জা’ফর পরিবারকে সুযোগ দাও তাদের জন্য শান্তনা। অতপর তাদেরকে নিয়ে আসা হলো। তিনি বললেন, আজকের পরে তোমরা আমার ভাইয়ের জন্য কাঁদবে না, আমার ভাইয়ের ছেলের জন্য দো‘আ করো। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৫০। হাদীসটি সহীহ্ম এর সনদের রিজাল সবাই সিকাহ।]
আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং যুবায়র ও মিকদাদ ইবন আসওয়াদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠিয়ে বললেন, ‘তোমরা খাখ্ বাগানে যাও। সেখানে তোমরা এক মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট একটি পত্র আছে, তোমরা তার কাছ থেকে তা নিয়ে আসবে’। তখন আমরা রওনা করলাম। আমাদের ঘোড়া আমাদের নিয়ে দ্রুত বেগে চলছিল। অবশেষে আমরা উক্ত খাখ্ নামক বাগানে পৌঁছলাম এবং সেখানে আমরা মহিলাটিকে দেখতে পেলাম। আমরা বললাম, ‘পত্র বাহির কর’। সে বলল, ‘আমার কাছে তো কোনো পত্র নেই’। আমরা বললাম, ‘তুমি অবশ্যই পত্র বের করে দিবে, নচেৎ তোমার কাপড় খুলতে হবে’। তখন সে তার চুলের খোঁপা থেকে পত্রটি বের করে দিল। আমরা তখন সে পত্রটি নিয়ে রাসূল্লাল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হলাম। দেখা গেল, তা হাতিব ইবন আবূ বালতাবা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পক্ষ থেকে মক্কার কতিপয় মুশরিক ব্যক্তির নিকট লেখা হয়েছে। যাতে তাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে হাতিব! একি ব্যাপার?’ তিনি বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমার ব্যাপারে কোনো তড়িত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না। মূলত আমি কুরাইশ বংশীয় লোক ছিলাম না। তবে তাদের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। আর যারা আপনার সঙ্গে মুহাজিরগণ রয়েছেন, তাদের সকলেরই মক্কাবাসীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। যার কারণে তাঁদের পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদ নিরাপদ। তাই আমি চেয়েছি, যেহেতু আমার বংশগতভাবে এ সম্পর্ক নেই, কাজেই আমি তাদের প্রতি এমন কিছু কুফরী কিংবা মুরতাদ হওয়ার উদ্দেশ্যে করিনি এবং ইসলাম গ্রহণের পর পুনঃ কুফরীতে প্রত্যাবর্তন করার প্রতি আকৃষ্ট হবার কারণেও নয়’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হাতিব তোমাদের নিকট সত্য কথা বলেছে’। তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই’। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি’। সুফিয়ান (রহ.) বলেন এ সনদটি কতই না উত্তম। [বুখারী, হাদীস নং ৩০০৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯৪।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, আব্দুল্লাহ ইবন আবু রাবা রহ. বলেন, আমি একটি প্রতিনিধি দলের সাথে (যার মধ্যে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ছিলেন) মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে গেলাম। সেই সময় ছিল রামাযান মাস। তখন তাঁরা একে অন্যের জন্য খানা পাকাতেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু অধিকাংশ সময় আমাদেরকে তাঁর বাসস্থানে দাওয়াত করতেন। সুতরাং একদিন আমি তাঁকে বললাম, আমিও খানা তৈয়ার করবো এবং সলকেই আমার বাসস্থানে-দাওয়াত করবো। আমি খানা তৈরীর নির্দেশ দিলাম। এরপর আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে আমি বিকালে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, আজ রাতে আমার বাসায় আপনার দাওয়াত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আপনি আজ আমার-পূর্বেই দাওয়াত দিয়ে দিলেন, আমি বললাম, হ্যাঁ। আমি সকলকেই দাওয়াত করলাম। তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, হে আনসার- সম্প্রদায়! আমি কি তোমাদেরকে তোমাদের সম্পর্কে একটি হাদীস বর্ণনা করবে না? তারপর তিনি মক্কা বিজয়ের ঘটনা বর্ণনা করতে শুরু করলেন। তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার দিকে অগ্রসর হলেন এবং পরিশেষে তিনি তথায় উপনীত হলেন। এরপর যুবাইরকে মক্কার একদিকে এবং খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে অপর দিকে প্রেরণ করলেন। আর আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সেইসব লোকদের উপর নেতা বানিয়ে পাঠালেন যাদের কাছে লৌহ বর্ম ছিলনা। তারা উপত্যকার ভিতরের পথ অবলম্বন করে চললেন। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন একটি ছোট সেনাদলের মধ্যে। তিনি তাকালেন এবং আমাকে দেখে বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি উপস্থিত। এরপর তিনি বললেন, আমার নিকট আনসার ব্যতীত আর কেউ যেন না আসে। শাইবান ব্যতীত অন্য বর্ণনাকারী অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, তারপর তিনি বললেন, আনসারদেরকে আহবান কর। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর আনসারগণ তার চারপাশে জমায়েত হলেন। এদিকে কুরাইশগণও তাদের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং অনুগতদেরকে একত্রিত করলো। এরপর তারা বলল, আমরা তাদেরকে আগে প্রেরণ করব। যদি তাদের- ভাগে কিছু জুটে, তবে আমরাও তো তাদের সঙ্গেই আছি। আর যদি তারা বিপদের সম্মুখীন হয় তবে তারা আমাদের কাছে যা চাইবে, তাই দিয়ে দেব। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে বললেন, তোমরা কি কুরাইশের বিভিন্ন গোত্রের লোক এবং তাদের অনুগতদেরকে দেখতে পাচ্ছ। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং হাত আপন হাতের উপর রেখে ইঙ্গিত করলেন, (মক্কার পথে যারা তোমাদের বাধা দেয় তোমরা তাদের খতমঁ করে দিবে)। এরপর বললেন, অবশেষে সাফা পাহাড়ে তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা অগ্রসর হতে লাগলাম। আমাদের মধ্য হতে কেউ যাকে কতল করতে চেয়েছে তাকে কতল করেছে। তাই তাদের মধ্য হতে কেউই আমাদের উপর আক্রমণ করতে সাহস পায়নি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আবু সুফিয়ান এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আজ কুরাইশ সম্প্রদায়ের রক্ত হালাল করে-দেওয়া হয়েছে। আজকের পরে আর কোনো কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা দিলেন, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে-নিরাপদ। সূতরাং আনসারগণ একে অপরের সাথে বলাবলি করতে লাগল যে, লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বদেশের অনুপ্রেরণ এবং স্বদেশ প্রেমে পেয়ে বসেছে। আবু হুতায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন যে, তখনই অহী অবতীর্ণ হল। যখন অহী অবতীর্ণ হতো তখন তা আমাদের নিকট গোপন থাকত না। ঐ সময় কারো সাধ্য হতো না যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে চোখ তোলে দেখে, যতক্ষননা অহী শেষ হতো। এরপর যখন অহী শেষ হল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আনসার সম্প্রদায়! তারা বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা আপনার কাছে উপস্থিত। তখন তিনি বললেন, তোমরা কি বলেছ, যে, লোকটিকে স্বদেশের অনুপ্রেরণায় পেয়ে বসেছে”। তখন তারা বললেন, এ রকম কিছু হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কখনও না। নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর বান্দা এবং তার প্রেরিত রাসুল। আমি আল্লহর উদ্দেশ্যে স্বদেশ ত্যাগ করে তোমাদের কাছে গিয়েছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের সাথে। তারা কাঁদতে কাদতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে অগ্রসর হলেন এবং কাঁদতে লাগলেন, আল্লাহর শপথ! আমরা যা বলেছিলাম, তা ছিল আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি আমাদের ভালবাসা ও দূর্বলতার কারণে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের বক্তব্য-বিশ্বাস করেন এবং তোমাদের ওযর গ্রহণ করলেন। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর মক্কার জনগণ আবু সুফিয়ানের বাড়ীর দিকে চলে গেল- (জীবন রক্ষার জন্যে) আর অন্যান্য মানুষ আপন ঘরে দরজা লাগিয়ে বসে রইল এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘হজরে আসওয়াদ’ এর নিকটবর্তী হয়ে একে চুম্বন এবং বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করলেন। এরুপর তিনি বাইতুল্লাহর পাশ্বে রক্ষিত একটি মূর্তির নিকটবর্তী হলেন, যাকে তারা উপাসনা করতো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে তখন একটি ধনুক ছিল, তিনি এর এক প্রান্তে ধরে রেখেছিলেন। যখন তিনি মূর্তিটির নিকটবর্তী হলেন তখন তিনি তা দ্বারা এর চোখে খুচাতে লাগলেন এবং বললেন, “সত্য আগমন করেছে এবং বাতিল (মিথ্যা) চলে গিয়েছে।” [সূরা ইসরা : ৮১] এরপর বায়তুল্লাহর তাওয়াফ শুরু শেষে তিনি সাফা পাহাড়ের দিকে গমন করলেন। এরপর তাতে আরোহণ করে বাইতুল্লাহর দিকে চেয়ে দেখলেন এবং দু’হাত উচু করে আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং তার যা পার্থনা করার তাই প্রার্থনা করলেন। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।]
সুলাইমান ইবন মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে উক্ত সনদে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তবে তার হাদীসে অতিরিক্ত কথা উল্লেখ রয়েছে যে, তারপর তিনি তার এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ইশারা করে বললেন, তোমরা তাদেরকে খতম করে দাও। এতে আরো উল্লেখ রয়েছে সে, তখনঁ তারা বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা এ রকম কিছু বলেছি। তখন তিনি বললেন, তাহলে আমার-নামের কী আর থাকবে। সুতরাং এমনটি কখনো হবে না। আমিতো আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।]
আব্দুল্লাহ ইবন রাবাহ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন যে তিনি বলেন, আমরা ভ্রমন করে মুয়াবিয়া ইবন আবু সূফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট গেলাম। আমাদের মধ্যে তখন আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ছিলেন। প্রত্যেকেই এক দিন তার সাথীর জন্য খাবার তৈয়ার করতে হয় একদিন আমার পালা আসল। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আজতো আমার পালা! অতএব, সকালেই আমার বাসস্থানে এলেন, “তখনও খানা পাকানো শেষ হয় নাই। তখন আমি বললাম, হে আবু হুরায়রা! আপনি যদি আমাদেরকে খানা পাকানোর পূর্ব পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন হাদীস বর্ণনা করতেন! (তবে ভাল হতো) অতএব, বললেন, আমরা মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন খালিদ ইবন ওয়ালীদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ডানদিকের বাহিনীর এবং যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বাম দিকের বাহিনীর নেতৃত্ব প্রদান করলেন। আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পদাতিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করলেন প্রান্তর অতিক্রম করার জন্য। এরপর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আনসারদেরকে আমার কাছে আসার জন্য আহবান কর। অতএব আমি তাদেরকে আহবান করলাম। এরপর তাঁরা দ্রুত আসলেন। তখন তিনি বললেন, হে আনসারগণ! তোমরা কি কুরাইশের দলের লোক দেখতে পাচ্ছ। প্রতি উত্তরে তারা বললেন, হ্যাঁ। অতএব তিনি বললেন, আগামীকাল যখন তোমরা (যূদ্ধক্ষেত্রে) তাদের মোকাবিলা করবে তখন তাদেরকে সম্পুর্ন নির্মূল করে দেবে। তারপর তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রেখে ইঙ্গিতে বললেন, তাদেরকে সমূলে বিনষ্ট করে দেবে। তারপর বললেন, আমার সাথে তোমাদের এক হবার স্থান সাফা পাহাড়। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন যে কোনো বিধর্মী আনসারদের লক্ষ্যস্হলে পড়েছে, তাকেই তারা নির্মুল করেছে। এরপরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফা পাহাড়ের উপর আরোহণ করলেন। যখন আনসারগণ তথীয় উপনীত হয়ে সাফা পাহাড় ঘিরে ফেললো, ইত্যবসরে আবু সুফিয়ান এলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কুরাইশদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আজ থেকে আর কোন কুরাইশের অস্তিত্ব থাকবেনা। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি আবু সুফিয়ানের বাড়িতে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। যে অস্ত্র ফেলে দিবে সেও নিরাপদ এবং যে স্বীয় গৃহের দরজা বন্ধ করে রাখবে সেও নিরাপদ। তখন আনসারগণ বলাবলি করছিল যে, এ লোকটিকে (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেয়ে বসেছে। এমতাবস্হ্যয় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অহী নাযিল হল। এরপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরাই কি বলেছিলে যে, ‘এ লোকটিকে (হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে) স্বীয় গোত্রের ভালবাসা এবং স্বদেশের অনুরাগে পেছো বসেছে’। সাবধান! তোমরা কি জানা আমার নাম কি-! কথাটি তিনি তিনবার বলেছেন। আমি হলাম মুহাম্মাদ, আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসুল। আমি আল্লাহর নির্দেশেই তোমাদের কাছে হিজরত করেছি। আমার জীবন ও মরণ তোমাদের জীবনও মরণের সাথে সস্পৃক্ত। তখন তাঁরা বললো, আল্লাহর শপথ! আমরা একথা বলেছিলাম আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি দুর্বলতার কারণে। (যেন তিনি আমাদেরকে ছেড়ে না যান)। নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তোমাদের সত্য বলেছেন করেছেন এবং তোমাদের ওযর কবুল করেছেন। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮০।]
আবু হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে তাবুক যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমরা ‘ওয়াদিল কুরা’ এলাকায় এক মহিলার একটি বাগানের কাছে পৌছলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা এর পরিমাণ অনুমান কর। আমরা এর পরিমাণ অনুমান করলাম। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশ ওয়াসুক (প্রায় পঞ্চাশ মণ) পরিমাণ অনুমান করলেন এবং (স্ত্রীলোকটিকে) বললেন, আমরা ইনশা আল্লাহ তোমার এখানে ফিরে আসা পর্যন্ত এ পরিমাণ ধরে রাখ। পরে আমরা এগিয়ে চললাম এবং তাবুক পৌছে গেলাম। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন আজ রাতে প্রচণ্ড বায়ু প্রবাহ তোমাদের উপর দিয়ে বয়ে যাবে। তাই তোমাদের কেউ যেন তার মাঝে দাড়িয়ে না থাকে এবং যার উট আছে, সে যেন তার দড়ি শক্ত করে বেঁধে রাখে। সে রাতে প্রচণ্ড বাতাস প্রবাহিত হল। এক ব্যক্তি দাঁড়ালে বাতাস তাকে উঠিয়ে নিল। অবশেষে ‘তাই’ নামক পাহাড়ে ফেলে দিল। আর (ঐ সময় নিকটবর্তী) “আয়লার” এলাকা প্রধান (শাসক) ইবনুল আলমার দূত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে একটি চিঠি লিখে পাঠালেন এবং তাকে একটি চাদর হাদিয়া পাঠালেন। তারপর আমরা এগিয়ে চলতে চলতে “ওয়াদিল কুরা” পৌছলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রীলোকটিকে (বাগানের মালিক) তার বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তার ফল কি পরিমাণে পৌছেছে? সে বলল, দশ ওয়াসক। তার পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি দ্রুত যাচ্ছি। তোমাদের মধ্যে যার ইচ্ছা হয়, সে আমার সঙ্গে দ্রুত যেতে পারে। আর যার ইচ্ছা, সে অবস্থান করতে পারে। আমরা বের হয়ে পড়লাম। অবশেষে মদীনার কাছাকাছি পৌছলাম। তখন তিনি বললেন, এ (মদীনা) হল তোবা পবিত্র ও উত্তম স্থান। আর এ হল উহুদ। আর তা এমন পাহাড়, যে আমাদের ভালবাসে এবং আমরাও তাকে ভালবাসি। তারপর বললেন, আনসারীদের শ্রেষ্ঠ পরিবার বনূ-নাজ্জার, তারপর বনূ আব্দুল আশহাল, তারপর বনূ হারিস ইবন খাযরাজ, তারপর বনূ সাঈদা পরিবার। আর আনসারদের প্রতিটি গোত্রই উত্তম। সাদ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদের সাথে এসে মিলিত হলে (তাঁবু গোত্রের) আবু উসায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, আপনি কি দেখেন নি যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার গোত্রগুলির মাঝে ক্রমানূসারে শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের গোত্রকে তালিকার শেষে রেখেছেন। তখন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি আনসার গোত্রগুলির শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করেছেন এবং আমাদের শেষে রেখেছেন! তখন তিনি বললেন, শ্রেষ্ঠ তালিকাতে অন্যতম হওয়াও কি তোমাদের জন্য যথেষ্ট নয়? [মুসলিম, হাদীস নং ১৩৯২।]
আমির ইবন শারাহীল শাবী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি যাহহাক ইবন কায়সের বোন ফাতিমা বিনত কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞেস করলেন -যে সমন্ত মহিলাগণ প্রথমে হিজরত করেছিলেন, তিনি তাদের অন্যতম-। তিনি বলেন, আপনি, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যে হাদীস শুনেছেন, অন্যের দিকে সম্বোধন করা ব্যতীরেকে, এমন একটি হাদীস আপনি আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আচ্ছা, তুমি যদি শুনতে চাও, তবে অবশ্যই আমি বর্ণনা করবো। সে বলল, হ্যাঁ আপনি বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আমি ইবন মুগীরা রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বিবাহ করেছি। তখন তিনি কুরাইশী যুবকদের উত্তম ব্যক্তি ছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে প্রথম যুদ্ধে শরীক হয়েই তিনি শহীদ হয়ে যান। আমি বিধবা হয়ে যাবার পর আবদুল রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু আমার নিকট বিবাহের পয়গাম পাঠান। পয়গাম পাঠান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরো কতিপয় সাহাবী। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও তাঁর আযাদকৃত গোলাম উসামা ইবন যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য পয়গাম পাঠান। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ হাদীসটি আমি পূর্বেই শুনেছিলাম যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাকে ভালবাসে সে যেন উসামাকেও ভালবাসে। ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করার পর আমি তাকে বলেছি, আমার বিষয়টি আপনার ইখতিয়ারে ছেড়ে দিলাম। আপনি যার সাথে ইচ্ছা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিন। অতঃপর তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট চলে যাও। উম্মে শারীক একজন আনসারী বিত্তশালী মহিলা। আল্লাহর পথে সে অধিক ব্যয় করে এবং তার নিকট অধিক অতিথি আসে। একথা শুনে আমি বললাম, আমি তাই করব। তখন তিনি বললেন, তুমি উম্মে শারীকের নিকট যেয়ো না। কেনানা উম্মে শারীক অধিক আপ্যায়নকারী মহিলা এবং আমি এটাও পছন্দ করিনা যে, তোমার ওড়না পড়ে যাক বা তোমার পায়ের গোছা হতে কাপড় খসে যাক আর লোকেরা তোমার শরীরের এমন স্থান দেখে নিক যা তুমি কখনো পসন্দ করনা। তবে তুমি তোমার চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবন মাকতুম রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট চলে যাও। তিনি বনী ফিহরের এক ব্যক্তি। ফিহর কুরাইশেরই একটি শাখা গোত্র। ফাতিমা যে খান্দানের লোক তিনিও সে খান্দানেরই মানুষ। আমি তার নিকট চলে গেলাম। অতঃপর আমার ইদ্দত সমাপ্ত হলে আমি জনৈক আহ্বানকারীর আওয়াজ শুনতে পেলাম। বস্তুতঃ তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নির্ধারিত আহ্বানকারী ছিলেন। তিনি এ মর্মে আহবান করছিলেন যে সালাতের উদ্দেশ্যে তোমরা একত্রিত হয়ে যাও। অতঃপর আমি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলাম এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করলাম। তিনি বলেন, কাওমের পেছনে যে কাতারে মহিলাগণ ছিলেন আমি সে কাতারেই ছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শেষে হাসিমুখে মিম্বরে বসে গেলেন। অতপর বললেন, প্রত্যেকেই আপন আপন স্থানে বসে যাও। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা কি জান, আমি কি জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি তোমাদেরকে কোন আশা বা ভীতি প্রদর্শনের জন্য একত্রিত করিনি। তবে আমি তোমাদেরকে কেবল এ জন্য একত্রিত করেছি যে, তামীমদারী রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রথমে খ্রীষ্টান ছিল। সে আমার নিকট এসে বায়আত গ্রহণ করেছে এবং ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। সে আমার কাছে এমন একটি কাহিনী বর্ণনা করেছে যদ্বারা আমার সেই বর্ণনার সত্যায়ন হয়ে যায়, যা আমি দাজ্জাল সম্পর্কে তোমাদের শ্রুতিগোচর করেছিলাম। সে আমাকে বলেছে যে, একবার সে লখম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকসহ একটি সামুদ্রিক নৌকায় আরোহণ করেছিল। সামুদ্রিক তুফান এক মাস পর্যন্ত তাদেরকে নিয়ে খেলা করতে থাকো অতঃপর সূর্যাস্তের সময় তারা সমুদ্রের এক দ্বীপে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরপর তারা ছোট ছোট নৌকায় বসে ঐ দ্বীপে প্রবেশ করে। দ্বীপে নামতেই জন্তুর মত একটি জিনিস তাদের দৃষ্টিগোচর হল। তার সমগ্র দেহ লোমে আবৃত ছিল। লোমের কারণে তার আগা-পাছা চিনা যাচ্ছিল না। লোকেরা তাকে বলল, হতভাগা, তুই কে? সে বলল, আমি দাজ্জালের গুপ্তচর। লোকেরা বলল- গুপ্তচর আবার কি? সে বলল! লোক সকল! ঐযে গীর্জা দেখা যায় সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষা করয়ে তামীমদারী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার মুখে এক ব্যক্তির কথা শুনে আমরা ভীত ছিলাম যে, সে আবার শয়তান তো নয়! আমরা দ্রুত হেটে গীর্জায় প্রবেশ করতঃ এক বিশালদেহী ব্যক্তিকে দেখতে পেলাম। ইতোপূর্বে এমন আমরা আর কখনো দেখিনি। লোহার শিকলে বাধা অবস্থায় দুই হ্যাইর মধ্য দিয়ে তার উভয় হাত ঘাড়ের সাথে মিলানো। আমরা তাকে বললাম, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলল, তোমরা আমার সন্ধান কিছু না কিছু পেয়েই গেছ। এখন তোমরা বল, তোমাদের পরিচয় কি? তারা বলল, আমরা আরবের বাসিন্দা। আমরা সমুদ্রে নৌকায় চড়ে ভ্রমণ করছিলাম। আমরা সমূদ্রকে উত্তাল তরঙ্গে উদ্বেলিত অবস্থায় পেয়েছি। এক মাস পর্যন্ত ঝাড়ের কবলে থেকে আমরা তোমার এ দ্বীপে এসে পৌছেছি। অতঃপর ছোট ছোট নৌকায় আরোহণ করে এ দ্বীপে আমরা প্রবেশ করেছি। এখানে আমরা একটি সর্বাঙ্গ লোমে আবৃত জন্তুকে দেখতে পেয়েছি। লোমের আধিক্যের কারণে আমরা তার আগা-পাছা চিহ্নিত করতে পারছিলাম না। আমরা তাকে বলেছি, তোর সর্বনাশ হোক, তুই কে? সে বলেছে, সে নাকি দাজ্জালের গুপ্তচর। আমরা বললাম, গুপ্তচর আবার কি! তখন সে বলেছে, ঐ যে গীর্জা দেখা যায়, তোমরা সেখানে চল। সেখানে এক ব্যক্তি অধীর আগ্রহে তোমাদের অপেক্ষায় আছে। তাই আমরা দ্রুত তোর কাছে এসে গেছি। আমরা তার কথায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি; না জানি এ আবার কোন জ্বীন ভূত কিনা? অতঃপর সে বলল, তোমরা আমাকে বাইসানের খেজুর বাগানের খবর বল। আমরা বললাম, এর কোনো বিষয়টি সস্পর্কে তুই সংবাদ জানতে চাচ্ছিস? সে বলল, বাইসানের খেজুর বাগানে ফল আসে কি না, এ সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করছি। তাকে আমরা বললাম, হ্যাঁ, আছে। সে বলল, সেদিন নিকটেই যেদিন এগুলোতে ফল ধরবে না। অতঃপর সে বলল, আচ্ছা, তিবরিয়া সমুদ্র সম্পর্কে আমাকে অবগত কর।” আমরা বললাম, এর কোনো বিষয় সম্পর্কে তুই আমাদের থেকে জানতে চাচ্ছিস! সে বলল, এর মধ্যে পানি আছে কি? তারা বলল,হ্যাঁ, সেখানে বহু পানি আছে। অতঃপর সে বলল, সেদিন বেশী দূরে নয়, যখন এ সাগরে পানি থাকবে না। সে আবার বলল, যুগার এর ঝর্ণা সম্পর্কে তোমরা আমাকে অবহিত কর। তারা বলল, তুই এর কি সম্পর্কে আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছিস। সে বলল, এর ঝর্ণাতে পানি আছে কি? এবং এ জনপদের লোকেরা তাদের ক্ষেত্রে এ ঝর্ণার পানি দেয় কি! আমরা বললাম হ্যাঁ, এতে বহু পানি আছে এবং এ জনপদের লোকেরা এপানি দ্বারাই তাদের ক্ষেত সিক্ত করে। সে পুনরায় বলল, তোমরা আমাকে উম্মীদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সংবাদ দাও। সে এখন কি করছেই তারা বলল, তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় চলে এসেছেন। সে জিজ্ঞেস করল, আরবের লোকেরা তার সাথে যুদ্ধ করছে কি! আমরা বললাম, হ্যাঁ, করেছে। সে বলল, সে তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছে। আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, তিনি আরবের পার্শবর্তী এলাকায় জয়ী হয়েছেন এবং তারা তার বশ্যতা স্বীকার করে নিয়েছে। সে বলল, এ কি হয়েই গেছে ? আমরা বললাম, হ্যাঁ। সে বলল, বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়াই জনগণের জন্য মঙ্গলজনক ছিল। এখন আমি নিজের সম্পর্কে তোমাদেরকে বলছি, আমিই মাসীহ দাজ্জাল। অতি সত্ত্বরই আমি এখান থেকে বাইরে যাবার অনুমতি পেয়ে যাব। বাইরে যেয়ে আমি সমগ্র পৃথিবী প্রদক্ষিণ করবো। চল্লিশ দিনের ভেতর এমন কোনো জনপদ থাকবে না, যেখানে আমি প্রবেশ না করব। তবে মক্কা ও তায়্যিবা এ দু-টি স্থানে আমার প্রবেশ নিষিদ্ধ। যখন আমি এ দুটির কোনো একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন এক ফিরিশতা উন্মুক্ত তরবারি হস্তে সামনে এসে আমাকে বাধা দিবে। এ দুটি স্থানের সকল রাস্তায় ফিরিশতাদের পাহারা থাকবে। বর্ণনাকারী বলেন, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ছড়ি দ্বারা মিম্বরে আঘাত করে বললেন, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা, এই হচ্ছে তায়্যিবা। অর্থাৎ তায়্যিবা অর্থ এই মদীনায় সাবধান! আমি কি এ কথাটি ইতোপূর্বে তোমাদেরকে বলিনি? তখন লোকেরা বলল, হ্যাঁ, আপনি বলেছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তামীমদারীর কথাটি আমার খুবই পছন্দ হয়েছে! যেহেতু তা সামঞ্জস্যপূর্ণ আমার ঐ বর্ণনার- যা আমি তোমাদেরকে দাজ্জাল, মাদীনা ও মক্কা সস্পর্কে ইতোপূর্বে বলেছি। তিনি আরো বললেন, সিরিয়া সাগরে অথবা ইয়ামান সাগরে বরং পূর্বদিকে রয়েছে, পূর্নদিকে রয়েছে, পূর্বদিকে রয়েছে। এসময় তিনি স্বীয় হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারাও করলেন। বর্ণনাকারী ফাতিমা বিনত কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ হাদীস আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুখস্থ করেছি। [মুসলিম, হাদীস নং ২৯৪২।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যখন আবু সুফিয়ানের (মদীনায়) আগ্রাভিযানের সংবাদ পৌছল। তখন তিনি সাহাবীদের সাথে এ নিয়ে পরামর্শ করলেন। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু এ ব্যাপারে কথা বললেন, কিন্তু তাঁর কথার উত্তর দিলেন না। এরপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কথা বললেন। তিনি তার কথারও কোনো উত্তর দিলেন না। পরিশেষে সা‘দ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু দন্ডায়মান হলেন। এরপর বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি কি আমাদের জবাব প্রত্যাশা করেন? সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আপনি আমাদেরকে আমাদের ঘোড়া নিয়ে সমুদ্রে ঝাঁপ দিতে বলেন, তবে নিশ্চয়ই আমরা যেখানে ঝাপ দিব। আর যদি আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দেন, সাওয়ারী হাঁকিয়ে ‘বারকুল গামাদ’ পর্যন্ত পৌঁছার জন্য তবে আমরা তাই করবো। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে আহ্বান করলেন। তখন সকলে রওয়ানা হলেন এবং বদর নামক স্থানে সম্মিলীত হলেন। আর সাহাবীগণের সামনে সেখান কুরাইশের উটের পানিপানকারী সাকীগণও উপনীত হল। তাদের মধ্যে বনী হাজ্জাজের একজন কৃষ্ণকায় দাস ছিল। সাহাবীগণ তাকে পাকড়াও করলেন। তারপর তাকে আবু সুফিয়ান এবং তার সাথীদের সম্পর্কে তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলতে লাগলো, আবু সুফিয়ান সম্পর্কে আমার কোনো কিছু জানা নেই। তবে আবু জাহল, উতবা, শায়বা এবং উমাইয়া ইবন খালফ তো-উপাস্থিত আছে। যখন সে এরূপ বললো তখন তাঁরা তাকে প্রহার করতে লাগলেন। এমতাবস্থায় সে বলল, হ্যাঁ, আমি আবু সুফিয়ান সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তখন তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন। এরপর যখন তারা পুনরায় আবু সুফিয়ান সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করলেন, তখন সে বলল, আবু সুফিয়ান জনগণের মাঝে উপস্তিত আছেন। যখন সে পুনরায় এ একই কথা বলল, তখন তাঁরা আবার তাকে প্রহার করতে লাগলেন। সে সময় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দন্ডায়মান ছিলেন। অতএব, যখন তিনি এ অবস্থা দেখলেন, তখন সালাত সমাপ্ত করার পর বললেন, সে আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার জান, যখন সে তোমাদের কাছে সত্য কথা বলে তখন তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভূমির উপর স্বীয় হাত রেখে বললেন, এ স্থান অমুক বিধর্মীর ধরাশায়ী হওয়ার স্থান বা মৃত্যুস্হল। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থানে যে বিধর্মীর নাম নিয়ে হাত রেখেছিলেন, সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে, এর বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয়নি। [মুসলিম, হাদীস নং ১৭৭৯।]
জনৈক আনসার সাহাবী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক ব্যক্তির জানাযায় শরীক ছিলাম। এ সময় আমি দেখতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরের কাছে দাঁড়িয়ে যারা কবর খুঁড়ছিল তাদের বলেন, পায়ের দিকে প্রশস্ত কর, মাথার দিকে চওড়া কর। এরপর তিনি সেখান থেকে ফিরতে উদ্যত হলে জনৈক মহিলার আহ্বনকারী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ডাকার জন্য সেখানে উপস্থিত হয়। তিনি সেখানে গেলে তাঁর জন্য খাদ্য উপস্থিত করা হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খেতে শুরু করলে অন্যরাও খাওয়া শুরু করেন। তখন আমাদের মুরব্বীরা লক্ষ্য করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক লোকমা মুখে দিয়ে কেবল তা চিবাচ্ছেন, কিন্তু তা গিলছেন না। এ সময় তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে, এ গোশত এমন এক বকরীর, যা তার মালিকের বিনা অনুমতিতে নেওয়া হয়েছে। তখন সে মহিলা বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি জনৈক ব্যক্তিকে বকরী খরিদ করার জন্য 'বাকী' নামক বাজারে পাঠিয়েছিলাম, সেখানে বকরী পাওয়া যায় নি। এরপর আমি আমার প্রতিবেশী, যিনি একটি বকরী খরিদ করেন, তাকে বলি যে, তিনি যেন তার বকরীটি ক্রয়মূল্যে আমাকে প্রদান করেন। কিন্তু তাকেও বাড়ীতে পাওয়া যায় নি। তখন আমি তার স্ত্রীর নিকট লোক পাঠাই, যিনি আমাকে বকরীটি দিয়েছেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এ গোশত বন্দীদের খাইয়ে দাও। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৩৩২। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।]
সাহল ইবন হানযলিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তাঁরা হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সফরে ছিলেন। তখন দ্রুতগতিতে উট চালিয়ে সন্ধ্যাকালে মাগরিবের সালাতের সময় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট গিয়ে পৌঁছলেন। এমন সময় একজন অশ্বারোহী সৈনিক এসে তাঁকে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি আপনাদের নিকট হতে আলাদা হয়ে ঐ সব পাহাড়ের উপর আরোহণ করে দেখতে পেলাম যে, হাওয়াযিন গোত্রের স্ত্রী-পুরুষ সকলেই তাদের উট, বকরি সবকিছু নিয়ে হুনায়নে একত্রিত হয়েছে। তা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ঐ সকল বস্তু ইনশাআল্লাহ আগামীকাল মুসলিমদের গনীমতের সামগ্রীতে পরিণত হবে। এরপর তিনি বললেন, আজ রাতে আমাদেরকে কে পাহাড়া দিবে? আনাস ইবন আবূ মারসাদ আল্-গানাবী রাদিয়াল্লাহু আনহু উত্তর করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি পাহাড়া দেবো। তিনি বললেন, তাহলে তুমি ঘোড়ায় আরোহণ কর। তিনি তাঁর একটি ঘোড়ায় আরোহণ করে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে নির্দেশ দিলেন, যাও, এ দু‘পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকার দিকে রওয়ানা হয়ে এর চূড়ায় পৌঁছে পাহারায় রত থাকো। আমরা যেন তোমার আসার আগে আজ রাতে কোনো ধোঁকায় না পড়ি। ভোরবেলায় রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালাতের স্থানে গিয়ে ফজরের দু‘রাক‘আত ( সুন্নাত) সালাত আদায় করলেন। তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তোমাদের পাহাড়াদার অশ্বারোহী সৈনিকের কোনো সন্ধান পেয়েছ কী? সকলে উত্তর করল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! তিনি পাহাড়ায় রত আছেন বলে মনে হয় কিন্তু দেখতে পাইনি। এরপর ফজর সালাতের ইকামত দেওয়া হলে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত পড়াতে আরম্ভ করলেন। এমতাবস্থায় তিনি উপত্যকার দিকে লক্ষ্য রাখতে রাখতে সালাত শেষ করে সালাম ফিরালেন। এরপর তিনি বললেন, তোমরা সকলে সুসংবাদ নাও যে, তোমাদের পাহাড়াদার সৈনিক এসে পড়েছে। আমরা উপত্যকায় গাছের ফাঁকে দেখতে পেলাম যে, তিনি সত্যই এসে পড়েছেন। এমনকি তিনি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দাঁড়িয়ে সালাম করলেন এবং বললেন, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন সেভাবে আমি এই উপত্যকার উপরাংশের শেষ মাথায় গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সকাল হওয়ার পর আমি উভয় পাহাড়ের উপত্যকা দু’টির উপরে উঠে তাকালাম, কোনো শত্রুকেই দেখতে পেলাম না। তা শুনে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি সারারাত কখনও কি ঘোড়ার পিঠ হতে নেমেছিলে? তিনি উত্তর করলেন, না, সালাত পড়ার জন্য অথবা পায়খানা-প্রসাবের প্রয়োজন ছাড়া কখনও ঘোড়ার পিঠ হতে নামিনি। তা শুনে রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে উদ্দেশ্য করে বললেন, তোমার জন্য জান্নাত অবধারিত হল। তোমার জীবনে আর কোনো অতিরিক্ত নেককাজ না করলেও চলবে। (অর্থাৎ সারারাত জাগ্রত থেকে পাহারায় রত থাকার মত বৃহৎ নেক কাজটি তোমার জান্নাতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট। অবশ্য ফরয-ওয়াজিব যথারীতি পালনের পর)। [আবু দাউদ, হাদীস নং ২৫০১। আলবানী রহ. বলেছেন, হাদীসটি সহীহ।]
জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন মদীনার নিকটবর্তী হলাম তখন আমার উটকে বেঁধে (চুল, মোছ ও অন্যান্য পশম পরিস্কার করে) হালাল হলাম এবং বস্ত্র পরিধান করলাম। অতঃপর আমি মসজিদে প্রবেশ করলাম, দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছেন। লোকজন আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আমি আমার পাশে বসা লোককে জিজ্ঞেস করলাম, হে আব্দুল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি আমার কথা উল্লেখ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, উত্তমভাবেই উল্লেখ করেছেন। তিনি যখন খুতবা দিচ্ছিলেন হঠাৎ তিনি বললেন, এ দরজা দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইয়ামেনের উত্তম ব্যক্তি প্রবেশ করবে। তাঁর চেহারায় থাকবে রাজা বাদশার চিহ্ন। জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহ আমাকে যে পরীক্ষা করেছেন সে জন্য আমি তাঁর প্রশংসা করি। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৯১৮০। হাদীসটি সহীহ।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/20
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।