hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

লেখকঃ শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী

অলৌকিক ঘটনার ব্যাপারে মু‘তাযিলাদের মতামত বিশ্লেষণ
ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেছেন, (আন-নুবূওয়াত: ১৫০)

তাদের (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদের) পূর্বে মু‘তাযিলারা বলত, স্বাভাবিক ঘটনার বিপরীত অলৌকিক কোনো কিছু ঘটা রাসূলদের নবুওয়তের প্রমাণ। অতঃএব, নবী ছাড়া কারো থেকে অলৌকিক কিছু ঘটা জায়েয নয়। তাদের এ মতামতের কারণে তারা জাদুর দ্বারা অস্বাভাবিক কিছু ঘটানোকে অস্বীকার করত। যেমন, কোনো কিছুর সাহায্য ছাড়া কারো মৃত্যু ও রোগমুক্তি দান করা। তাদের এ মতের কারণে তারা গণকবাজিকেও অস্বীকার করত। আরও অস্বীকার করতো জিনদের দ্বারা কিছু গায়েবের সংবাদ প্রদান করাকে। অনুরূপভাবে তারা অলীদের কারামতকেও অস্বীকার করত। অতঃপর এরা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আসলো এবং ফুকাহা ও হাদীসবিদগণের মত তারাও জাদু, গণনাবিদ্যা ও কারামতের ব্যাপারসমূহের বাস্তবতা স্বীকার করে নিলো।

কিন্তু তাদেরকে (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদেরকে) প্রশ্ন করে বলা হলো, তোমরা এ অলৌকিক কর্মকাণ্ড এবং মু‘জিযার মধ্যে কীভাবে পার্থক্য কর?

তখন তারা বললো, মু‘জিযা ও অলৌকিক ঘটনার মাঝে ধরণগত কোনো পার্থক্য নেই। তারা আরও বলল, আল্লাহ নবীগণকে এমন বিশেষ কোনো অলৌকিক শক্তি দান করেন না যা অন্যদের সাধ্য নেই বরং সব অলৌকিক শক্তিই একই ধরণের। এ অলৌকিক ঘটনা শুধু অলৌকিকতার কারণে দলিল নয়, বরং যখন তা নবুওয়তের দাবীর সাথে যুক্ত হবে এবং রাসূল যখন সেটার অনুরূপ কিছু নিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পর তাদের পক্ষ থেকে তা মোকাবিলা করা থেকে নিরাপদ হবে কেবল তখনই তা দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে। সুতরাং অলৌকিক কর্ম সংঘটিত করা স্বয়ং সেটা বা সে ধরনের কিছু দলীল হিসেবে ধর্তব্য হবে না। যতক্ষণ না তখনই তা দলীল হিসেবে ধর্তব্য হবে যখন নবুওয়তের দাবীদার সেটাকে দলীল হিসেবে পেশ করবে। অন্যথায় তা নবুওয়তের দলীল হবে না। তাই নবুওয়তের দলীল-প্রমাণ হওয়ার জন্য তাদের নিকট শর্ত হচ্ছে এ অলৌকিকতার মুকাবিলা করা থেকে নিরাপদ থাকা। অর্থাৎ তারা সেরূপ আনতে ব্যর্থ হবে। তাই আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের নিকট এটাই হচ্ছে নবীদের মু‘জিযা ও অন্যান্যদের অলৌকিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে পার্থক্য করার সর্বশেষ সীমা। সুতরাং যখন নবওয়তের দাবীদার ব্যক্তি বলবে যে তোমরা এ নিদর্শনের মত কিছু নিয়ে আস, ফলে তারা তা আনয়ন করতে অপারগ হয়ে যাবে তখন তা সেটা উক্ত নবীর বিশেষ মু‘জিযা হিসেবে বিবেচিত হবে। নতুবা তাদের মতে জাদুকর ও গণকদের দ্বারা সংঘটিত কোনো অলৌকিক কর্মকাণ্ডের অনুরূপ কর্মকাণ্ড নবীর মু‘জিযা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে, যদি নবী অনুরূপ কিছুকে তার নবুওয়তের সত্যতার উপর দলীল হিসেবে পেশ করে।

সুতরাং তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) নিকট নবুওয়তের দলীল হচ্ছে নবুওয়তের দাবী এবং অলৌকিকতা এ দু’টির সমন্বিত রূপ। শুধু অলৌকিকতা নবুওয়তের প্রমাণ নয়। আর সেটা গ্রহণযোগ্য তখনই হবে যখন সেটা মুকাবিলা করা থেকে নিরাপদ হবে অর্থাৎ সেটার মুকাবিলা করা কারও পক্ষে সম্ভব না হবে। বরং কখনও কখনও তারা অলৌকিকতাও শর্ত করেন না বরং শর্ত করেন যে এটার অনুরূপ আনার চ্যালেঞ্জের মুকাবিলা করা থেকে মুক্ত হতে হবে এবং সেটার বিপরীত কিছু নিয়ে আসা মানুষের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠবে যদিও সেটা মানুষের মধ্যে সচরাচর ঘটে থাকে অলৌকিক নয়। সুতরাং বুঝা গেল যে, তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) নিকট নবুওয়তের প্রমাণ তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন তা দু’টি বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হবে: নবুওয়তের দাবীর সাথে সম্পৃক্ততা এবং যাদেরকে অনুরূপ আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া হয়েছে তাদের পক্ষে অনুরূপ কিছু আনতে অক্ষম হওয়া।

তারা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আরও বলে থাকেন যে, নবীদের অলৌকিক ঘটনা জাদুকর, গনক এবং নেককার বান্দাদের দ্বারা সংঘটিত হওয়া সম্ভব তবে তা তাদের নবুওয়তের উপর প্রমাণবহ হবে না কারণ তারা তো নবুওয়তের দাবী করে তা পেশ করে নি।

তারা (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়ারা) আরও বলে থাকেন যে, কেউ এসব অলৌকিক ঘটনার সাথে নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার হলে আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায় তাকে অক্ষম করে দেওয়া এবং এ অলৌকিক কাজকে ব্যর্থ করে দেওয়ার জন্য এমন কাউকে নিয়োজিত করা যার মাধ্যমে নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদারের দাবীর সপক্ষে পেশ করা দলীল-প্রমাণাদি বাতিল ও অসার হয়ে যাবে।

আর যখন তাদেরকে বলা হলো, আল্লাহর এমন এমন করা উচিত’ কেন? অথচ তোমাদের মতে, আল্লাহর জন্য সব কাজ করা জায়েয, কোনো কাজ করা তার উপর ওয়াজিব নয়। তখন তারা বলে, কেননা আল্লাহ যদি এরূপ না করেন, বা কাউকে এর মোকাবিলা করতে নিয়োজিত না করেন তবে নবীগণের মু‘জিযা বাতিল হয়ে যাবে।

আবার যখন তাদেরকে বলা হলো, তোমাদের নীতি অনুযায়ী তো এটা বৈধ যে আল্লাহ সেটার দলিল হওয়াই বাতিল করে দিবেন; কারণ তোমাদের মতে, আল্লাহর জন্য সব কাজ করা জায়েয। তখন তারা তাদের পূর্ববর্তী দু’টি উত্তর প্রদান করে থাকে, হয় তাদেরকে এটা মেনে নিতে হয় আল্লাহ এর উপর ক্ষমতাবান নয়, নতুবা এটা বলতে হয় যে দলীল হওয়ার বিষয়টি অত্যাবশ্যকভাবে জানা বিষয়। অথচ এ উভয় উত্তরই যে দুর্বল এটা সর্বজন বিদিত।

এখানে আরেকটি বিষয় তাদের (আশায়েরা ও মাতুরিদিয়াদের) উপর এসে পড়ে, তা হচ্ছে, তোমরা কেন একথা বলো যে, নবীগণের সত্যতা প্রমাণে পেশ করা তাদের মু‘জিযাকে অবশ্যই নবুওয়তের দাবীসহকারে অলৌকিক হতে হবে এবং এর মোকাবিলা করতে অক্ষম হওয়া হতে হবে। কারণ তোমাদের এ কথাটি নিন্মোক্ত কারণে বাতিল বলে গণ্য হবে:

প্রথম কারণ: নবী যা নিয়ে আসেন তা যদি জাদুকর ও গণকও নিয়ে আসেন তাহলে অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে, জাদুকর ও গণকের মুকাবিলা করা যাবে কিন্তু নবীর মুকাবিলা করা যাবে না। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, এ ব্যাপারে (নবী ও জাদুকর-গণকের মধ্যে) পার্থক্য নির্ণয়কারী বিষয় হচ্ছে মুকাবিলা করতে সক্ষম না হওয়া।

সুতরাং তোমরা এটা বলো যে: যে কেউ নবুওয়তের দাবী করবে এবং বলবে, আমার মু‘জিযা হলো অনুরূপ দাবী কেউ করবে না তাহলে সে সত্যবাদী, অথবা কেউ এর অনুরূপ দাবী করতে সক্ষম হবে না তাহলে সে সত্যবাদী। অথবা তিনি (নবী) স্বাভাবিক কোনো কাজই যেমন খাওয়া, পান করা ও পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি করবেন এবং বলবেন, আমার মু‘জিযা হলো অনুরূপ কাজ কেউ করবে না বা কেউ অনুরূপ কাজ করতে পারবে না, তাহলে সে সত্যবাদী। ফলে তারা এভাবে অত্যাবশ্যকীয় করে নিল। আর তারা বিবেচিত হবেন। বস্তুত আশায়েরাগণ এটা নিজেদের উপর আবশ্যকও করে নিয়েছেন এবং তারা এ কারণে (নবীর পক্ষ থেকে দাবী করা) অস্বাভাবিক কাজ নিয়ে আসা অন্যদের থেকে অসম্ভব বলে থাকে তেমনিভাবে (নবীর পক্ষ থেকে দাবী করা) স্বাভাবিক কাজও অন্যদের থেকে নিয়ে আসা অসম্ভব মনে করে থাকে। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় (আশায়েরা-মাতুরিদিয়াদের মতে) কোনো রাসূল যদি বলেন, আমার মু‘জিযা হলো আমি গাধায় বা ঘোড়ায় আরোহণ করতে পারি বা এ খাদ্য খেতে পারি বা এ পোশাক পরিধান করতে পারি বা ঐ স্থানে যেতে পারি বা অনুরূপ কিছু করতে পারি কিন্তু অন্যরা এসব করতে পারে না। তাহলে এগুলো তার দাবীর সত্যতার পক্ষে প্রমাণ হিসেবে ধর্তব্য হবে।

বস্তুত এভাবে বলার কোনো নির্দিষ্ট নিয়মকানুন নেই। কেননা কোনো সম্প্রদায় যা করতে পারে আর কোনো সম্প্রদায় যা করতে পারে না তা নির্দিষ্ট কোনো ছকে বাঁধা নয়। তবে এটা ঐ লোকদের দেওয়া মু‘জিযার ব্যাখ্যাকে বাদ দেয় যারা মু‘জিযা বলতে অলৌকিক কাজ বুঝে। (অর্থাৎ আশায়েরাদের) কেননা লৌকিক বিষয়সমূহ নানা রকম হতে পারে।

অবশ্য তারা (মু‘তাযিলা ও আশায়েরাগণ) তা উল্লেখ করেছেন। তারা বলেন, প্রত্যেক জাতির জন্য তা-ই মু‘জিযা হবে যা সে জাতির জন্য অলৌকিক তথা অস্বাভাবিক হবে। তারা আরও বলেন, মু‘জিযাকে অবশ্যই সে লোকদের কাছে অস্বাভাবিক কাজ হিসেবে বিবেচিত হতে হবে যাদেরকে নবী তার প্রতি ঈমানের দাওয়াত দিচ্ছেন। যদিও অন্যদের কাছে তা স্বাভাবিক মনে হতে পারে। তারা আরও বলেন, নবওয়াতের দাবীকারী যদি মিথ্যাবাদী হন তবে আল্লাহ তা‘আলা সে পেশার অনুরূপ কাউকে নিয়োজিত করবেন যে তার মোকাবিলা করতে সক্ষম হবেন অথবা সে তাকে উক্ত মু‘জিযা আনয়ন করতে বাধা দিবেন।

বস্তুত এটাই হচ্ছে দ্বিতীয় কারণ যা তাদের সে মূলনীতি অসার হওয়ার উপর প্রমাণ বহন করে যা আশায়েরা ও মু‘তাযিলারা প্রণয়ন করেছিল।

তৃতীয় কারণ: ‘অনুরূপ কিছু দ্বারা মুকাবিলা’ বলতে বুঝায়, নবী যে দলিল নিয়ে এসেছেন তারাও অনুরূপ দলিল নিয়ে আসবেন। আর তাদের মতে, নবীর নবুওয়তের দলিল হলো, নবুওয়তের দাবী ও অলৌকিক ঘটনা। সুতরাং তাদের এ কথা দ্বারা এটা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়ে যে, অনুরূপ কিছু দ্বারা মুকাবিলা করা দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে, নবী ছাড়া অন্যরাও নবুওয়তের দাবী করবে ও অলৌকিক কিছু নিয়ে আসবে। তাদের এ কথার উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, (তাদের নিকট) কুরআনের অনুরূপ বা দশ সূরা বা অনুরূপ একটি সূরা আনয়ন করা নবীর মোকাবিলা বুঝায় না। যেমন তাদের (মুকাবিলাকারীদের) কেউ নবুওয়তের দাবী করবে আর তা (অলৌকিক কর্মকাণ্ড) করতে সক্ষম হবে। তাদের এ কথা স্পষ্ট বিবেক (আকল) ও বিশুদ্ধ বর্ণনা উভয়ের বিপরীত। কারণ রাসূল যদি কুরাইশদেরকে বলতেন, তোমাদের কেউ নবী হওয়ার দাবী করে কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব আনতে পারবে না, কেবল তখনই সেটা নবুওয়তের আলামত বলে বিবেচিত হবে। কেননা, (তাদের নিকট) শুধু কুরআনের তিলাওয়াত কোনো দলিল-প্রমাণ হতে পারে না; কারণ কেউ তা অন্যের থেকে শিখেও পড়তে পারে। তাই শুধু তিলাওয়াত দলিল হতে পারে না। কেননা সেটার সাথে নবুওয়তের দাবী সংশ্লিষ্ট করা হয় নি। আর যদি সে নবুওয়তের দাবী করেও ফেলত তবে আল্লাহ তাকে অলৌকিক কিছু করতে ভুলিয়ে দিতেন বা অন্য কাউকে নিয়োজিত করতেন যিনি সেটার মুকাবিলা করতে পারে- যেমনটি তোমরা বলে থাকো, তাহলে কুরাইশ ও অন্যান্য আলেমরা জানত যে এটা একটা বাতিল কথা।

চতুর্থ কারণ: কখনো কখনো মিথ্যাবাদীরা নবুওয়তের দাবী করতে পারে এবং তারা জাদু ও গণনার সাহায্যে এমন কিছু নিদর্শন পেশ করতে পারে যার মোকাবিলা কেউ করতে সক্ষম হয় না। অথচ তারা আসলেই মিথ্যাবাদী। এক্ষেত্রে মু‘তাযিলাদের দাবী অসার প্রমাণিত হলো। যেমন, ইয়ামেনের আসাদ আল-উনসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় নবুওয়তের দাবী করেছিল, সে শয়তানের সাহায্যে কিছু গায়েবের সংবাদও দিয়েছিল, কেউ তার মোকাবিলা করেননি। তার মিথ্যাচার নানা ভাবে জানা গেছে। আল্লাহ বলেন,

﴿ هَلۡ أُنَبِّئُكُمۡ عَلَىٰ مَن تَنَزَّلُ ٱلشَّيَٰطِينُ ٢٢١ تَنَزَّلُ عَلَىٰ كُلِّ أَفَّاكٍ أَثِيمٖ ٢٢٢ ﴾ [ الشعراء : ٢٢١، ٢٢٢ ]

‘আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব, কার নিকট শয়তানরা অবতীর্ণ হয়’? তারা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক চরম মিথ্যাবাদী ও পাপীর নিকট। [সূরা আশ-শু‘আরা: ২২১-২২২]

এমনিভাবে মুসাইলামাতুল কাযযাব, হারিস আল-দামেশকী, মাকহুল আল-হালাবী, বাবা রূমী-আল্লাহ এদের উপর লানত বর্ষণ করুন- এরা সকলেই নবুওয়তের মিথ্যাদাবীদার এবং শয়তানের সাহায্যে কিছু অলৌকিক সংবাদও দিত।

পঞ্চম কারণ: বস্তুত নবীগণের আলামতের শর্ত এটা নয় যে, এটা দ্বারা নবী দলিল পেশ করবে এবং এর অনুরূপ কিছু আনতে চ্যালেঞ্জ করবে। বরং এটা নবীর নবুওয়তের আলামত, যদিও এটা উক্ত দু’শর্ত থেকে খালি থাকে। যেমন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে নানা সংবাদ দিয়েছেন, কিন্তু এটা দ্বারা তিনি তার নবুওয়তের দলিল পেশ করেননি। এমনিভাবে আল্লাহ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দ্বারা অনেক মু‘জিযা সংঘটিত করিয়েছেন, যেমন অল্প খাবার ও পানীয় বেশি হওয়া, দু’আঙ্গুলের মাঝ থেকে পানি বের হওয়া, সামান্য খাদ্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক সকলের অন্য যথেষ্ট হওয়া ইত্যাদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নবুওয়তের প্রমাণ ছিল, কিন্তু তিনি এগুলো দ্বারা দলিল পেশ করেনি এবং এর অনুরূপ কেউ মোকাবিলাও করেননি। বরং এটা মুসলমানের প্রয়োজনে ছিল। এমনিভাবে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম নবুওয়ত প্রাপ্তির পরে অগ্নিতে নিক্ষেপিত হয়েছিল এবং এটা দ্বারা তিনি মানুষকে তাওহীদের দিকে আহ্বান করেছিলেন।

ষষ্ঠ কারণ: মু‘তাযিলা ও অন্যান্যরা যেমন ইবন হাযম রহ. যা উল্লেখ করেছেন যে, নবীগণের আলামত তাদের জন্যই খাস হতে হবে এটা সহীহ কথা। কিন্তু অলীদের কারামতও দালায়েলুন নুবুওয়াহ, যা সত্যিকার নবীর অনুসারী ছাড়া অন্যদের কাছে পাওয়া যাবে না। অন্যদিকে জাদুকর ও গণকরা যে সব আশ্চর্যকর জিনিস নিয়ে আসে তা নবী ও তাদের অনুসারী ছাড়া অন্যদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র। বরং এটা মিথ্যা ও পাপাচারের অন্তর্ভুক্ত। এটা ঐ পেশার মানুষ ছাড়া অন্যদের কাছে অস্বাভাবিক ব্যাপার মনে হয়। প্রত্যেক শিল্পই অন্যান্য অদক্ষ লোকের নিকট একটু অস্বাভাবিক ব্যাপারই মনে হয়। কিন্তু এটা নবুওয়তের আলামত হতে পারে না। নবীগণের আলামত নবী ছাড়া অন্য সকলের কাছেই অলৌকিক ব্যাপার, যদিও নবীগণের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার মাত্র।

সপ্তম কারণ: নবীগণের আলামত তিনি যাদের কাছে প্রেরিত তাদের কাছে অস্বাভাবিক হতে হবে, তারা হলেন মানুষ ও জিন। তাই মানুষ ও জিন কেউ নবীর আলামতের মত আলামত আনতে পারবে না। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ الاسراء : ٨٨ ]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

অন্যদিকে ফিরিশতারা এর মোকাবিলা করতে সক্ষম হলে এতে কোনো অসুবিধে নেই। কেননা ফিরিশতারা নবীগণের উপর আল্লাহর আয়াত নাযিল করেন। তারা জাদুকর ও গণকের কাছে নাযিল হন না, যেমনিভাবে শয়তান নবীগণের কাছে নাযিল হয় না। ফিরিশতারা আল্লাহর ব্যাপারে মিথ্যারোপ করেন না। ফিরিশতাদের কাজ যেমন, আল্লাহর পক্ষ থেকে নবীর কাছে গায়েবের সংবাদ বহন করে নিয়ে আসা, শত্রুর উপর বিজয় লাভ করা, তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়া ইত্যাদি নবীগণের স্বাভাবিক কাজের বহির্ভূত। বরং এগুলো নবী ছাড়া অন্যদের দ্বারা সম্ভব নয়। এতে উক্ত কাজটি নকস কমতি হয়ে যায় না। বরং কাজটি অলৌকিকই থেকে যায়। [সাধারণ মানুষের চাহিদার প্রতি খেয়াল রেখে সংক্ষেপ করা হয়েছে।]

আল-কুরআন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ হওয়া থেকে সর্বযুগেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিরন্তন মু‘জিযা, এর আয়াতসমূহ সকলের জন্যই চ্যালেঞ্জ। যেমন আল্লাহ বলেছেন,

﴿ فَلۡيَأۡتُواْ بِحَدِيثٖ مِّثۡلِهِۦٓ إِن كَانُواْ صَٰدِقِينَ ٣٤ ﴾ [ الطور : ٣٤ ]

“অতএব, তারা যদি সত্যবাদী হয় তবে তার অনুরূপ বাণী নিয়ে আসুক”। [সূরা আত্-তূর: ৩৪]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِعَشۡرِ سُوَرٖ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَيَٰتٖ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٣ ﴾ [ هود : ١٣ ]

“নাকি তারা বলে, ‘সে এটা রটনা করেছে’? বল, ‘তাহলে তোমরা এর অনুরূপ দশটি সূরা বানিয়ে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পার ডেকে আন, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা: হূদ: ১৩]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٣٨ ﴾ [ يونس : ٣٨ ]

“নাকি তারা বলে, ‘সে তা বানিয়েছে’? বল, ‘তবে তোমরা তার মত একটি সূরা (বানিয়ে) নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া যাকে পারো ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও”। [সূরা ইউনুস: ৩৮]

আল্লাহ আরো বলেছেন,

﴿ قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨ ﴾ [ الاسراء : ٨٨ ]

“বলুন, ‘যদি মানুষ ও জিন এ কুরআনের অনুরূপ হাযির করার জন্য একত্রিত হয়, তবুও তারা এর অনুরূপ হাযির করতে পারবে না যদিও তারা একে অপরের সাহায্যকারী হয়’’। [সূরা আল-ইসরা: ৮৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুরুতে তাদেরকে এ সংবাদ দিয়েছেন। জিন ও ইনসান কেউ এর মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়নি। তারা সকলেই অক্ষম হয়েছিল। তাই এরূপ হওয়া নবী ছাড়া কারো পক্ষে সম্ভব নয়। কালের পরিক্রমায় আরব অনারব, কুরআনের পক্ষের ও বিরোধী বহু জাতি কুরআনের অনুরূপ কিছু আনায়ন করতে আপ্রান চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরিশেষে তারা ব্যর্থ হয়েছে। একথা সকলেই জানে।

একথা সকলেই জানে যে, কুরআনের আয়াত, ছন্দমালা, গায়েব সম্পর্কে সংবাদ, এর আদেশ, নিষেধ, ধমক, ওয়াদা, মহৎ, মানুষের অন্তরে এর স্থান ইত্যাদি মু‘জিযা। কুরআন যখন অন্য ভষায় অনুবাদ করা হয় তখন এর অর্থ মু‘জিযা হিসেবে থাকে। কেননা এর অনুরূপ কিছু পৃথিবীতে পাওয়া যায় না।

যখন বলা হবে, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরেরও তো অনুরূপ কোনো গ্রন্থ পৃথিবীতে নেই, তখন আমরা বলব, অন্যান্য নবীগণের মু‘জিযা তাদের জন্যই খাস, যদিও একই ধরণের মু‘জিযা পাওয়া যায়। যেমন, গায়েব সম্পর্কে সংবাদ দেওয়া, এগুলো উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। এছাড়াও মৃত্যু ব্যক্তিকে জীবিত করা অনেক নবীরই মু‘জিযা ছিল। যেমন মূসা ও ঈসা আলাইহিস সালাম এটা করেছেন।

এখানে এক নবীকে অন্য নবীর উপর প্রধান্য দেওয়া আমাদের উদ্দেশ্য নয়, বরং আমাদের উদ্দেশ্য হলো এক এক নবী তার মু‘জিযা নিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা ও বৈশিষ্ট্যময় ছিলেন। তাদের এ সব আলামত নবী ছাড়া অন্যদের মাঝে ছিল না। তবে একই ধরণের আলামত যদি একাধিক নবীর মাঝে পাওয়া যায় তবে তা আরো মজবুত করে এবং একথা জোরদার করে যে এগুলো শুধু নবীগণের মু‘জিযা। কেননা এক নবী অন্য নবীকে সত্যায়ন করে। এক নবীর মুজিযা সমস্ত নবীগণেরই মুজিযার শামিল। এমনিভাবে তাদের অনুসারীদের আলামতও তাদেরই মুজিযা। কেননা তারা একে অন্যের সত্যায়ন করেন। অতএব, জাদুকর, গণক ইত্যাদি লোকের অলৌকিকতা একে অন্যের বিরোধিতা করে।

মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন তা তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ এবং সেগুলো সাধারণভাবে সকল নবীগণেরও নবুওয়তের প্রমাণ, বিশেষ করে কুরআনে যেসব নবীর নাম উল্লেখ আছে এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যাদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন। অতএব, যখন ধরে নেওয়া হবে যে, তাওরাত, ইঞ্জিল ও যাবুরে যেসব ইলম, গায়েবের সংবাদ, আদেশ, নিষেধ ইত্যাদি রয়েছে এগুলো মুজিযা এতে কোনো অসুবিধে নেই, বরং এটা সেসব নবীগণের নবুওয়তের প্রমাণ এবং তাদের নবুওয়তের প্রমাণ যাদের সম্পর্কে এসব কিতাব সুসংবাদ দিয়েছে। আর যারা বলেন, এসব কিতাব মুজিযা নয়, তাহলে হয়তো কুরআনের মত শব্দ, ছন্দ ইত্যাদি হিসেবে মুজিযা নয় বলে ধরা হবে। এটা মূলত ভাষাবিদ ও ইবরানী ভাষা বিশেষজ্ঞদের ব্যাপার।

অন্যদিকে অর্থের বিচারে তাওরাত মু‘জিযা, কেননা এতে গায়েবের সংবাদ, আদেশ, নিষেধ রয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এতে প্রমাণিত হয় যে, সব নবীগণের কিতাবসমূহ মুজিযা, কেননা এতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের সুসংবাদ ছিল। তবে একথা গণকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না, কেননা তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আগমনের কিছুদিন পূর্বে শয়তানের মাধ্যমে তাঁর আগমনের সংবাদ দিয়েছিল। এমনিভাবে কোনো কিতাবের দ্বিতীয় নবী যদি প্রথম নবীর কিতাবের মধ্যে যা আছে তার সংবাদ দেন তবে তা মু‘জিযা হিসেবে গণ্য হবে না। কেননা এভাবে আলেমগণ করতে পারেন। তবে দ্বিতীয় নবী যদি প্রথম নবীর চেয়ে অতিরিক্ত কোনো সংবাদ দেন তবে তা মুজিযা হিসেবে গণ্য হবে। যেমন আশ‘য়াআ ও দাউদ আলাইহিস সালামের কিতাব, এতে মূসা আলাইহিস সালামের তাওতের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু সংবাদ ছিল। তাই এ কিতাব উক্ত নবীগণের মু‘জিযা, কেননা এতে গায়েবের এমন কিছু সংবাদ ছিল যা নবী ছাড়া কেউ জানতেন না। এমনিভাবে এতে আদেশ, নিষেধ, অঙ্গিকার ও ধমক ছিল, যা নবী ছাড়া অন্য কেউ আনায়ন করতে পারেন না, বা নবীর অনুসারী ছাড়া কেউ আনায়ন করতে পারেন না। নবীর অনুসারী নবীর আদেশের মতই আদেশ নিষেধ, ওয়াদা ও ধমক দিয়ে থাকবেন, এগুলো মূলত নবীরই বৈশিষ্ট্য। তবে মিথ্যাবাদী নবীর দাবীদার নবীর আদেশ নিষেধের মত সব কিছু আদেশ নিষেধ করবে না। কেননা এতে তার উদ্দেশ্য সাধিত হবে না।

এসব মিথ্যাবাদীরা নবীগণের মত আদেশ নিষেধ করার কল্পনাও করতে পারবে না। কেননা এভাবে করা তাদের উদ্দেশ্যের পরিপন্থী, বরং যদিও প্রাথমিক দিকে কিছু কিছু ভাল কাজের আদেশ দিয়ে থাকে তবে তা মানুষকে ধোঁকা ও প্রতারণা করার মানসে করে থাকে। অবশেষে তাদের কাজের মধ্যে বৈপরীত্য দেখা দিবেই। কেউ প্রকাশ্যভাবে নবীর সাদৃশ কাজ করলেও অভ্যন্তরে আসলে সে মুনাফিক, যেমন কিছু নাস্তিক যারা প্রকাশ্যে ইসলাম দেখিয়েছে কিন্তু অন্তরে শির্ক, পাপাচার ও জুলুম পোষণ করেছিল। তারা সালাত, সাওম ও শরী‘য়াতের অন্যান্য আদেশ সঠিকভাবে পালন করত না। যারা প্রকাশ্যে ইসলাম দেখায় ও গোপনে নাস্তিকতা ও কুফুরী পোষণ করে তাদের কথা ও কাজে বৈপরীত্য দেখা দিবেই।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন