মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ
লেখকঃ শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী
৩৩
দ্বাবিংশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল হওয়া তাঁর নবুওয়তের প্রমাণ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/33
এ পরিচ্ছেদটি নবুওয়ত সাব্যস্ত করার জন্য যদিও যথেষ্ট নয়; কেননা সৎলোক ও মাযলুমের দু‘আও কবুল হয়, যদিও মাযলুম ব্যক্তি কাফির হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামেরও সব দো‘আ কবুল হয়নি। যেমন, তিনি একদল কুরাইশের ব্যাপারে দো‘আ করেছিলেন, তখন আল্লাহ নাযিল করেন,
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন: ‘হে আল্লাহ্! আপনি তাকে কিতাব (কুরআন) শিক্ষা দিন।’ [বুখারী, হাদীস নং ৭৫।]
আল্লাহ তা‘আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল করেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীদের মধ্যে সর্বাধিক তাফসীরকারক ছিলেন।
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শৌচাগারে গেলেন, তখন আমি তাঁর জন্য উযূর পানি রাখলাম। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘এটা কে রেখেছে?’ তাঁকে জানানো হলে তিনি বলেন, ‘ইয়া আল্লাহ! আপনি তাকে দীনের জ্ঞান দান করুন। [বুখারী, হাদীস নং ১৪৩, মুসলিম, হাদীস নং ২৪৭৭।]
‘আবদুল্লাহ্ ইবন মাস্’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার বায়তুল্লাহ্র পাশে সালাত আদায় করছিলেন এবং সেখানে আবূ জাহল ও আর সঙ্গীরা বসা ছিল। এমন সময় তাদের একজন অন্যজনকে বলে উঠল, ‘তোমাদের মধ্যে কে অমুক গোত্রের উটনীর নাড়ীভুঁড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সিজদা করেন তখন তার পিঠের উপর রাকতে পারে?’ তখন কওমের বড় পাষন্ড (‘উকবা) তাড়াতাড়ি গিয়ে তা নিয়ে এল এবং তাঁর প্রতি নজর রাখল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদায় গেলেন, তখন সে তাঁর পিঠের উপর দুই কাঁধের মাঝখানে তা রেখে দিল। ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি (এ দৃশ্য) দেখেছিলাম কিন্তু আমার কিছু করার ছিল না। হায়! আমার যদি কিছু প্রতিরোধ শক্তি থাকত! তিনি বলেন, তারা হাসতে লাগল এবং একে অন্যের উপর লুটিয়ে পড়তে লাগল। আর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন সিজদায় থাকলেন, মাথা উঠালেন না। অবশেষে হযরত ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা এলেন এবং সেটি তাঁর পিঠের উপর থেকে ফেলে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা উঠিয়ে বললেন, ইয়া আল্লাহ্! আপনি কুরায়শকে ধ্বংস করুন। এরূপ তিনবার বললেন। তিনি যখন তাদের বদ দো‘আ করেন তখন তা তাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার করল। বর্ণনাকারী বলেন, তারা জনত যে, এ শহরে দো‘আ কবূল হয়। এরপর তিনি নাম ধরে বললেন, ইয়া আল্লহ্! আবূ জাহলকে ধ্বংস করুন। এবং ‘উতবা ইবন রাবী’আ, শায়বা ইব্ন রবী’আ, ওয়ালীদ ইবন ‘উতবা, উময়্যা ইবন খালাফ ও ‘উকবা ইবন মু’আইতকে ধ্বংস করুন। রাবী বলেন, তিনি সপ্তম ব্যক্তির নামও বলেছিলেন কিন্তু তিনি স্মরণ রাখতে পারেন নি। ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার জান, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের নাম উচ্চারণ করেছিলেন, তাদের আমি বদরের কূপের মধ্যে নিহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেছি। [বুখারী, হাদীস নং ২৪০।]
আবদুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন লোকদেরকে ইসলাম বিমুখ ভুমিকায় দেখলেন, তখন দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহিস সালামের যামানার সাত বছরের (দুর্ভিক্ষের) ন্যায় তাঁদের উপর সাতটি বছর দুর্ভিক্ষ দিন। ফলে তাঁদের উপর এমন দুর্ভিক্ষ আপতিত হল যে, তা সব কিছুই ধ্বংস করে দিল। এমনকি মানুষ তখন চামড়া, মৃতদেহ এবং পচা ও গলিত জানোয়ারও খেতে লাগলো। ক্ষুধার তাড়নায় অবস্থা এতদূর চরম আকার ধারণ করল যে, কেউ যখন আকাশের দিকে তাকাত তখন সে ধুঁয়া দেখতে পেত। এমতাবস্থায় আবু সুফিয়ান (ইসলাম গ্রহনের পূর্বে) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলল, হে মুহাম্মদ! তুমি তো আল্লাহ্র আদেশ মেনে চল এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক অক্ষুণ্ণ রাখার আদেশ দান কর। কিন্তু তোমার কাউমের লোকেরা তো মরে যাচ্ছে। তুমি তাঁদের জন্য আল্লাহ্র নিকট দো‘আ কর। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন: “আপনি সে দিনটির অপেক্ষায় থাকুন যখন আকাশ সুস্পষ্ট ধুঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাবে...... সেদিন আমি প্রবলভাবে তোমাদের পাকড়াও করব”। [সূরা দুখান, আয়াত: ১০-১৬] আবদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সে কঠিন আঘাত এর দিন ছিল বদরের যুদ্ধের দিন। ধুঁয়াও দেখা গেছে, আঘাতও এসেছে। আর মক্কার মুশরিকদের নিহত ও গ্রেফতারের যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, তাও সত্য হয়েছে। সত্য হয়েছে সুরা রুম-এর এ আয়াত ও (রুমবাসী দশ বছরের মধ্যে পারসিকদের উপর আবার বিজয় লাভ করবে)। [বুখারী, হাদীস নং ১০০৭। মুসলিম, হাদীস নং ২৭৯৮।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন শেষ রাকা‘আত থেকে মাথা উঠালেন, তখন বললেন, হে আল্লাহ্! আইয়্যাশ ইবন আবু রাবী’আহকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! সালামা ইবন হিশামকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! ওয়ালীদ ইবন ওয়ালীদকে রক্ষা করুণ। হে আল্লাহ্! দুর্বল মু’মিনদেরকে মুক্তি দিন। হে আল্লাহ্! মুযার গোত্রের উপর আপনার শাস্তি কঠোর করে দিন। হে আল্লাহ্! ইউসুফ আলাইহিস সালামের যমানার দুর্ভিক্ষের বছরগুলোর ন্যায় (এদের উপর) কয়েক বছর দুর্ভিক্ষ দিন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বললেন, গিফার গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করুন। আর আসলাম গোত্র, আল্লাহ তাদেরকে নিরাপদে রাখুন। ইবন আবু যিনাদ (রহ.) তাঁর পিতা থেকে বলেন, এ সমস্ত দো‘আ ফজরের সালাতে ছিল। [বুখারী, হাদীস নং ১০০৬।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জুমু‘আর দিন মিম্বারের সোজাসোজি দরজা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেল এবং রাস্তাগুলোর চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন, যেন তিনি আমাদের বৃষ্টি দেন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন উভয় হাত তুলে দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ্! বৃষ্টি দিন, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা তখন আকাশে মেঘমালা, মেঘের চিহ্ন বাঁ কিছুই দেখতে পাইনি। অথচ সাল’আ পর্বত ও আমাদের মধ্যে কোনো ঘর বাড়ী ছিল না। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হঠাৎ সাল’আ পর্বতের পেছন থেকে ঢালের মত মেঘ বেরিয়ে এল এবং তা মধ্য আকাশে পৌঁছে বিস্তৃত হয়ে পড়ল। তারপর বর্ষণ শুরু হল। তিনি বলেন, আল্লাহর কসম! আমরা ছয়দিন সুর্য দেখতে পাইনি। তারপর একব্যক্তি পরবর্তি জুমু’আর দিন সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তখন দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল এবং রাস্তাঘাটও বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। কাজেই আপনি আল্লাহর নিকট বৃষ্টি বন্ধের জন্য দো‘আ করুন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উভয় হাত তুলে দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ্! আমাদের আশে পাশে, আমাদের উপর নয়, টিলা, পাহাড়, উচ্চভূমি, মালভূমি, উপত্যকা এবং বনাঞ্চলে বর্ষণ করুন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এতে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা (মসজিদ থেকে বেরিয়ে) রোদে চলতে লাগলাম। শরীক (রহ.) (বর্ণনাকারী) বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু কে জিজ্ঞাসা করলাম, এ লোকটি কি আগের সে লোক? তিনি বললেন, আমি জানিনা। [বুখারী, হাদীস নং ১০১৩।]
আব্বাদ ইবন তামীম রহ. তাঁর চাচার থেকে বর্ণনা করেন, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ছিলেন। তিনি তাঁর কাছে বর্ণনা করেছেন যে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণকে নিয়ে তাঁদের জন্য বৃষ্টির দু‘আর উদ্দেশ্যে বের হলেন। তিনি দাঁড়ালেন এবং দাঁড়িয়েই আল্লাহ্র দরবারে দো‘আ করলেন। তারপর কিবলামুখী হয়ে নিজ চাঁদর উল্টিয়ে দিলেন। এরপর তাঁদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হল। [বুখারী, হাদীস নং ১০২৩।]
‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলে আবূ বকর ও বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমা জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লেন। আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহু জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়লে তিনি এ কবিতা অংশটি আবৃত্তি করতেন,
“প্রত্যেক ব্যক্তিই তাঁর পরিবার ও স্বজনদের মাঝে দিন কাটাচ্ছেন, অথচ মৃত্যু তাঁর জূতার ফিতা চেয়েও অধিক নিকটবর্তী”।
আর বিলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু জ্বর উপশম হলে উচ্চস্বরে এ কবিতা অংশ আবৃত্তি করতেন,
হায়, আমি যদি মক্কার প্রান্তরে একটি রাত কাটাতে পারতাম এমনভাবে যে, আমার চারদিকে থাকবে ইযখির এবং জালীল নামক ঘাস।
মাজান্না নামক ঝর্নার পানি কোনো দিন পান করার সুযোগ পাব কি? শামা এবং তাফীল পাহাড় আবার প্রকাশিত হবে কি?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ্! তুমি শায়বা ইবন রাবী’আ, ‘উতবা ইবন রাবী’আ এবং উমায়্যা ইবন খালফের প্রতি লা’নত বর্ষন কর; যেমনি ভাবে তাঁরা আমাদেরকে আমাদের মাতৃভূমি থেকে বের করে মহামারির দেশে ঠেলে দিয়েছে। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করলেন, হে আল্লাহ! মদীনাকে আমাদের নিকট প্রিয় বানিয়ে দাও যেমন মক্কা আমাদের নিকট প্রিয় বা এর চেয়ে বেশী। হে আল্লাহ! আমাদের সা’ ও মুদে বরকত দান কর এবং মদীনাকে আমাদের জন্য স্বাস্থ্যকর বানিয়ে দাও। স্থানান্তরিত করে দাও জুহফাতে এর জ্বরের প্রকোপ বা মহামারীকে। ‘আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমরা যখন মদীনা এসেছিলাম তখন তা ছিল আল্লাহর যমীনে সর্বাপেক্ষা অধিক মহামারীর স্থান। তিনি আরো বলেন, সে সময় মদীনায় বুথান নামক একটি ঝর্না ছিল যার থেকে বিকৃত ও বর্ন স্বাদের পানি প্রবাহিত হত। [বুখারী, হাদীস নং ১৮৮৯।]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (আমার মাতা) উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে আগমান করলেন। তিনি তাঁর সামনে খেজুর ও ঘি পেশ করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমাদের ঘি মশকে এবং খেজুর তার বরতনে রেখে দাও। কারণ আমি সায়িম। এরপর তিনি ঘরের এক পাশে গিয়ে নফল সালাত আদায় করলেন এবং উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা ও তাঁর পরিজনের জন্য দো‘আ করলেন। উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার একটি ছোট ছেলে আছে। তিনি বললেন: কে সে? উম্মে সুলাইম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, আপনার খাদেম আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার জন্য দুনিয়া ও আখেরাতের যাবতীয় কল্যানের দো‘আ করলেন। তিনি বললেন: হে আল্লাহ! তুমি তাকে মাল ও সন্তান-সন্ততি দান কর এবং তাকে বরকত দাও। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আনসারগণের মধ্যে অধিক সম্পদশালীদের একজন। রাবী বলেন, আমার কন্যা উমাইনা আমাকে জানিয়েছে যে, হাজ্জাজ (ইবন ইউসুফ) - এর বসরায় আগমনের পূর্ব পর্যন্ত একশত বিশের অধিক আমার সন্তান মারা গেছে। ইবন আবূ মারইয়াম (রহ.) .....হুমায়দ (রহ.) এর সূত্রে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করতে শুনেছেন। [বুখারী, হাদীস নং ১৯৮২।]
সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোনো এক সফরে লোকদের পাথেয় কমে গিয়েছিল এবং তারা অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়লেন। তখন তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট তাদের উট যবেহ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য এলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের অনুমতি দিলেন। তারপরে তাদের সঙ্গে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাক্ষাৎ হলে তারা তাঁকে এ খবর দিলেন। তিনি বললেন, উট শেষ হয়ে যাবার পর তোমাদের বাঁচার কি উপায় থাকবে? তারপর উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! উট শেষ হয়ে যাবার পর বাঁচার কি উপায় হবে? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লোকদের কাছে ঘোষণা করে দাও যে, যাদের কাছে অতিরিক্ত যে খাদ্য সামগ্রী আছে, তা যেন আমার কাছে নিয়ে আসে। এর জন্য একটা চামড়া বিছিয়ে দেওয়া হল। তারা সেই চামড়ার উপর তা রাখলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তাতে বরকতের জন্য দো‘আ করলেন। এরপর তিনি তাদেরকে তাদের পাত্রগুলো নিয়ে আসতে বললেন, লোকেরা দু’হাত ভর্তি করে করে নিল। সবার নেওয়া শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নাই এবং নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর রাসূল। [বুখারী, হাদীস নং ২৪৮৪।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু অথবা আবু সাঈদ খূদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেন, (সন্দেহ রাবী ‘আমাশের) তাবুকের যুদ্ধের সময়ে লোকেরা দারুণ খাদ্যাভাবে পতিত হলো । তারা আরয করল, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি আপনি অনুমতি দেন, তাহলে আমরা আমাদের উটগুলো যবেহ করে তার গোশত খাই এবং আর চর্বি ব্যবহার করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যবেহ করতে পার। রাবী বলেন, ইত্যবসরে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আসলেন এবং আরয করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! যদি এরূপ করা হয়, তাহলে বাহন কমে যাবে বরং আপনি লোকদেরকে তাদের উদ্বৃত্ত রসদ নিয়ে উপস্হিত হতে বলুন, তাতে তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে বরকতের দো‘আ করুন। আশা করা যায়, আল্লাহ তাতে বরকত দিবেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, ঠিক আছে। একটি দস্তরখান আনতে বললেন এবং তা বিছালেন, এরপর সকলের উদ্বৃত্ত রসদ চেয়ে পাঠালেন। রাবী বলেন, তখন কেউ একমুঠো গম নিয়ে হাযির হলো, কেউ একমুঠো খেজুর নিয়ে হাযির হলো, কেউ এক টুকরা রুটি নিয়ে আসল, এভাবে কিছু পরিমাণ রসদ-সামগ্রী দস্তরখানায় জমা হলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর বললেন, তোমরা নিজ নিজ পাত্রে রসদপত্র ভর্তি করে নাও। সকলেই নিজ নিজ পাত্র ভরে নিল, এমনকি এ বাহিনীর কোনো পাত্রই আর অপূর্ণ রইল না। এরপর সকলে পরিতৃপ্ত হয়ে আহার করলেন। কিছু উদ্বৃত্তও রয়ে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর প্রেরিত রাসুল-যে ব্যক্তি সন্দেহাতীতভাবে এ কথা দু’টির উপর বিশ্বাস রেখে আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে, সে জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে না। [মুসলিম, হাদীস নং ২৭।]
আবদুল্লাহ ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তার মা যায়নাব বিনতে হুমাইদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা একবার তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! একে বাই‘আত করে নিন। তিনি বললেন যে তো ছোট। তখন তিনি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন ও তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। যুহরা ইবন ‘মাবাদ রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, তার দাদা আবদুল্লাহ ইবন হিশাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে নিয়ে বাজারে যেতেন, খাদ্য সামগ্রী খরিদ করতেন। পথে ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর সাথে দেখা হলে তারা তাকে বলতেন (আপনার সাথে ব্যবসায়) আমাদেরও শরীক করে নন। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। এ কথায় তিনি তাদের শরীক করে নিতেন। অনেক সময় (লভ্যাংশ হিসাবে) এক উট বোঝাই মাল তিনি ভাগে পেতেন আর তা বাড়ীতে পাঠিয়ে দিতেন। [বুখারী, হাদীস নং ২৫০১।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুফাইল ইবন আম্র দাওসী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ও তাঁর সঙ্গীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এস বলল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! দাওস গোত্রের লোকেরা ইসলাম গ্রহণে অবাধ্য হয়েছে ও অস্বীকার করেছে। আপনি তাদের বিরুদ্ধে দো‘আ করুন’। তারপর বলা হলো, দাওস গোত্র ধ্বংস হোক। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি দাওস গোত্রকে হিদায়াত করুন এবং তাদের (ইসলামে) নিয়ে আসুন’। [বুখারী, হাদীস নং ২৯৩৭, মুসলিম, হাদীস নং ২৫২৪।]
সাহল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর যুদ্ধের দিন বলেন, আগামীকাল আমি এমন এক ব্যক্তির হাতে পতাকা দিব, যার হাতে আল্লাহ তা‘আলা বিজয় দান করবেন। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবাসে, আর আল্লাহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভালবাসেন। লোকেরা এ চিন্তায় সারা রাত কাটিয়ে দেয় যে, কাকে এ পতাকা দেওয়া হয়? আর পর দিন সকালে প্রত্যেকেই তা পাওয়ার আকাঙ্খা পোষণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আলী কোথায়? বলা হল, তাঁর চোখে অসুখ। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে মুখের লালা লাগিয়ে দিলেন এবং তাঁর জন্য দো‘আ করলেন। তাতে তিনি আরোগ্য লাভ করলেন। যেন আদৌ তাঁর চোখে কোনো রোগই ছিল না। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাতে পতাকা দিলেন। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জিজ্ঞাসা করলেন, আমি তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ চালিয়ে যাব যতক্ষণ না তারা আমাদেরও মত হয়ে যায়। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তুমি স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়ে তাদেরও আঙ্গিনায় অবতরণ কর। তারপর তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহবান কর এবং ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদেও জন্য যা অপিরহার্য তা তাদেরকে জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে হেদায়েত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লালবর্ণের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা উত্তম। [বুখারী, হাদীস নং ২৯৪২, মুসলিম, হাদীস নং ২৪০৬।]
জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছুক্ষণ পরে এসে আমার সঙ্গে মিলিত হন; আমি তখন আমার পানি-সেচের উটনীর উপর আরোহী ছিলাম। উটনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল; এটি মোটেই চলতে পারছিল না। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার উটের কি হয়েছে? আমি বললাম, ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনীটির পেছন দিক থেকে গিয়ে উটনী-টিকে হাঁকালেন এবং এটির জন্য দো‘আ করলেন। এরপর এটি সবক’টি উটের আগে আগে চলতে থাকে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, এখন তোমার উটনীটির কিরূপ মনে হচ্ছে? আমি বললাম, ভালই। এটি আপনার বরকত লাভ করেছে। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি এটি আমার নিকট বিক্রয় করবে? তিনি বলেন, আমি মনে মনে লজ্জাবোধ করলাম। (কারণ) আমার নিকট এ উটটি ব্যতীত পানি বহনকারী অন্য কোনো উটনী ছিল না। আমি বললাম, হ্যাঁ (বিক্রয় করব)। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে আমার নিকট বিক্রয় কর। অনন্তর আমি উটনীটি তাঁর নিকট এ শর্তে বিক্রয় করলাম যে, মদীনায় পৌছা পর্যন্ত এর উপর আরোহন করব। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি সদ্য বিবাহিত একজন পুরুষ। তারপর আমি তাঁর নিকট অনুমতি চাইলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি লোকদের আগে আগে চললাম এবং মদীনায় পৌছে গেলাম। তখন আমার মামা আমার সঙ্গে সাক্ষাত করলেন। তিনি আমাকে উটনী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। আমি তাকে সে বিষয়ে অবহিত করলাম যা আমি করেছিলাম। তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন। তিনি (রাবী) বলেন, আর যখন আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট অনুমতি চেয়েছিলাম, তখন তিনি আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তুমি কি কুমারী বিবাহ করেছ, না এমন মহিলাকে বিবাহ করেছ যার পূর্বে বিবাহ হয়েছিল? আমি বললাম, এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি যার পূর্বে বিবাহ হয়েছে। তিনি বললেন, তুমি কুমারী বিবাহ করলে না কেন? তুমি তার সঙ্গে খেলাধূলা করতে এবং সেও তোমার সঙ্গে খেলাধূলা করত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতা শহীদ হয়েছেন। আমার কয়েকজন ছোট ছোট বোন রয়েছে। তাই আমি তাদের সমবয়সের কোনো মেয়ে বিবাহ করা পছন্দ করিনি; যে তাদেরকে আদব-আখলাক শিক্ষা দিতে পারবে না এবং তাদের দেখাশোনা করতে পারবে না। তাই আমি একজন পূর্ব বিবাহ হয়েছে এমন মহিলাকে বিবাহ করেছি; যাতে সে তাদের দেখাশুনা করতে পারে এবং তাদেরকে আদব-কায়দা শিক্ষা দিতে পারে। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসেন, পরদিন আমি তাঁর নিকট উটনীটি নিয়ে উপস্থিত হলাম। তিনি আমাকে এর মূল্য দিলেন এবং উটটিও ফেরত দিলেন। মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমাদের বিবেচনায় এটি উত্তম। আমরা এতে কোনো দোষ মনে করি না। [বুখারী, হাদীস নং ২৯৬৭।]
বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আমার পিতার নিকট আমাদের বাড়িতে আসলেন। তিনি আমার পিতার নিকট থেকে একটি হাওদা ক্রয় করলেন এবং আমার পিতাকে বললেন, তোমার ছেলে বারাকে আমার সাথে হাওদাটি বয়ে নিয়ে যেতে বল। আমি হাওদাটি বহন করে তাঁর সাথে চললাম। আমার পিতাও উহার মূল্য গ্রহণ করার জন্য আমাদের সঙ্গী হলেন। আমার পিতা তাঁকে বললেন, হে আবু বকর, দয়া করে আপনি আমাদেরকে বলুন, আপনারা কি করেছিলেন, যে রাতে (হিজরতের সময়) আপনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথী ছিলেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই। আমরা (সাওর গুহা থেকে বের হয়ে) সারারাত চলে পরদিন দুপুর পর্যন্ত চললাম। যখন রাস্তাঘাট জনশূন্য হয়ে পড়ল, রাস্তায় কোনো মানুষের যাতায়াত ছিল না। হঠাৎ একটি লম্বা ও চওড়া পাথর আমাদের নযরে পড়লো, যার পতিত ছায়ায় সূর্যের তাপ প্রবেশ করছিল না। আমরা সেখানে গিয়ে অবতরণ করলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য নিজ হাতে একটি জায়গা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিলাম, যাতে সেখানে তিনি ঘুমাতে পারেন। আমি ঐ স্থানে একটি চামড়ার বিছানা পেতে দিলাম এবং বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি আপনার নিরাপত্তার জন্য পাহারায় নিযুক্ত রইলাম। তিনি শুয়ে পড়লেন। আর আমি চারপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য বেরিয়ে পড়লাম। হঠাৎ দেখতে পেলাম, একজন মেষ রাখাল তার মেষপাল নিয়ে পাথরের দিকে ছুটে আসছে। সেও আমাদের মত পাথরের ছায়ায় আশ্রয় নিতে চায়। আমি বললাম, হে যুবক, তুমি কার অধীনস্থ রাখাল? সে মদীনার কি মক্কার এক ব্যক্তির নাম বলল, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মেষপালে কি দুগ্ধবতী মেষ আছে? সে বলল, হ্যাঁ আছে। আমি বললাম, তুমি কি দোহন করে দিবে? সে বলল, হ্যাঁ। তারপর সে একটি বকরী ধরে নিয়ে এল। আমি বললাম, এর স্তন ধুলা-বালু, পশম ও ময়লা থেকে পরিষ্কার করে নাও। রাবী আবু ইসহাক (রহ.) বলেন, আমি বারা’কে দেখলাম এক হাত অপর হাতের উপর রেখে ঝাড়ছেন। তারপর ঐ যুবক একটি কাঠের বাটিতে কিছু দুধ দোহন করল। আমার সাথেও একটি চামড়ার পাত্র ছিল।আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অজুর পানি ও পান করার পানি রাখার জন্য নিয়েছিলাম। আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসলাম। (তিনি ঘুমিয়ে ছিলেন) তাঁকে জাগানো উচিৎ মনে করলাম না। কিছুক্ষণ পর তিনি জেগে উঠলেন। আমি দুধ নিয়ে হাজির হলাম। আমি দুধের মধ্যে সামান্য পানি ঢেলেছিলাম তাতে দুধের নীচ পর্যন্ত ঠান্ডা হয়ে গেল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি দুধ পান করুন। তিনি পান করলেন, আমি তাতে সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনও কি আমাদের যাত্রা শুরুর সময় হয়নি? আমি বললাম, হ্যাঁ হয়েছে। পুনরায় শুরু হল আমাদের যাত্রা। ততক্ষণে সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে। সুরাকা ইবন মালিক (অশ্বারোহণে) আমাদের পশ্চাদ্ধাবন করছিল। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাদের অনুধাবনে কে যেন আসছে। তিনি বললেন, চিন্তা করোনা, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ আমাদের সাথে রয়েছেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিরুদ্ধে দো‘আ করলেন। তৎক্ষণাৎ আরোহীসহ ঘোড়া তাঁর পেট পর্যন্ত মাটিতে ধেবে গেল, শক্ত মাটিতে। রাবী যুহায়র এই শব্দটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, আমার ধারণা এরূপ শব্দ বলেছিলেন। সুরাকা বলল, আমার বিশ্বাস আপনারা আমার বিরুদ্ধে দো‘আ করেছেন। আমার (উদ্ধারের) জন্য আপনারা দোয়া করে দিন। আল্লাহর কসম আপনাদের আপনাদের অনুসন্ধানকারীদেরকে আমি ফিরিয়ে নিয়ে যাব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দো‘আ করলেন। সে রেহাই পেল। ফিরে যাওয়ার পথে যার সাথে তার সাক্ষাৎ হতো, সে বলত (এদিকে গিয়ে পশুশ্রম করো না।) আমি সব দেখে এসেছি। যাকেই পেয়েছে, ফিরিয়ে নিয়েছে। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সে আমাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করেছে। [বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৫, মুসলিম, হাদীস নং ২০০৯।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় এলেন তখন উঠের পিঠে আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পেছনে ছিলেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ছিলেন বয়োজ্যেষ্ঠ ও পরিচিত। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন (দেখতে) জাওয়ান ও অপরিচিত তখন বর্ণনাকারী বলেন, যখন আবূ বকরের সঙ্গে কারো সাক্ষাত হত, সে জিজ্ঞাসা করত হে আবু বকর, তোমার সম্মুখে বসা ঐ ব্যক্তি কে? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলতেন তিনি আমার পথ প্রদর্শক। রাবী বলেন, প্রশ্নকারী সাধারণ পথ মনে করত এবং তিনি (আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) সত্যপথ উদ্দেশ্যে করতেন। তারপর একবার আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু পিছনে তাকিয়ে হটাৎ দেখতে পেলেন একজন অশ্বারোহী তাঁদের প্রায় নিকটে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! এই যে একজন অশ্বারোহী আমাদের পিছনে প্রায় নিকটে পৌঁছে গেছে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছনের দিকে তাকিয়ে দো‘আ করলেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি ওকে পাকড়াও করুন। তৎক্ষণাৎ ঘোড়াটি তাকে নীচে ফেলে দিয়ে দাঁড়িয়ে হরেষা রব করতে লাগল। তখন অশ্বারোহী বলল, ইয়া নবী আল্লাহ! আপনার যা ইচ্ছা আমাকে আদেশ করুন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেখানেই থেমে যাও। কেউ আমাদের দিকে আসতে চাইলে তুমি তাকে বাঁধা দিবে। বর্ণনাকারী বলেন, দিনের প্রথম ভাগে ছিল সে নবীর বিরুদ্ধে সংগ্রামকারী আর দিনের শেষ ভাগে হয়ে গেল তাঁর পক্ষ থেকে অস্ত্রধারণকারী। এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার হারারায় একপাশে অবতরণ করলেন। এরপর আনসারদের সংবাদ দিলেন। তাঁরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং উভয়কে সালাম করে বললেন, আপনারা নিরাপদ এবং মান্য হিসেবে আরোহণ করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু উটে আরোহণ করলেন আর আনসারগণ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাঁদের বেষ্টন করে চলতে লাগলেন। মদীনায় লোকেরা বলতে লাগল, আল্লাহ্র নবী এসেছেন, আল্লাহ্র নবী এসেছেন, লোকজন উচু যায়গায় উঠে তাঁদের দেখতে লাগল। আর বলতে লাগল আল্লাহর নবী এসেছেন। তিনি সামনের দিকে চলতে লাগলেন। অবশেষে আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর বাড়ীর পাশে গিয়ে অবতরণ করলেন। আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু ঐ সময় তাঁর পরিবারের লোকদের সাথে কথাবার্তা বলছিলেন। ইতিমধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম তাঁর আগমনের কথা শুনলেন তখন তিনি তাঁর নিজের বাগানে খেজুর আহরণ করছিলেন। তখন তিনি তাড়াতাড়ি ফল আহরণ করা থেকে বিরত হলেন এবং আহরিত খেজুরসহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে হাযির হলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু কথাবার্তা শুনে নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের লোকদের মধ্যে কার বাড়ী এখান থেকে সবচেয়ে নিকটবর্তী? আবূ আইয়ুব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ইয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই তো বাড়ী, এই যে তার দরজা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে চল, আমাদের বিশ্রামের ব্যাবস্থা কর। তিনি বললেন আপনারা উভয়েই চলুন। আল্লাহ বরকত দানকারী। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাড়ী আসলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এসে হাযির হলেন এবং বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল; আপনি সত্য নিয়ে এসেছেন। ইয়া রাসূলুল্লাহ! ইয়াহূদী সম্প্রদায় জানে যে আমি তাদের সর্দার এবং আমি তাঁদের সর্দারের পুত্র। আমি তাদের মধ্যে বেশী জ্ঞানী এবং তাদের বড় জ্ঞানীর সন্তান। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি একথাটা জানাজানি হওয়ার পূর্বে আপনি তাদের ডাকুন এবং আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করুণ, আমার সম্পর্কে তাদের ধারণা অবগত হউন। কেননা তারা যদি জানতে পারে যে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি, তবে আমার সম্বন্ধে তারা এমন সব অলিক উক্তি করবে যে সব আমার মধ্যে নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (ইয়াহূদী সম্প্রদায়কে) ডেকে পাঠালেন। তারা এসে তার কাছে হাযির হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়, তোমাদের উপর অভিশাপ! তোমরা সেই আল্লাহ্কে ভয় কর, তিনি ছাড়া ‘মাবুদ নেই। তোমরা নিচ্ছয়ই জান যে আমি সত্য রাসূল। সত্য নিয়েই তোমাদের নিকট এসেছি। সুতরাং তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। তারা উত্তর দিল, আমরা এসব জানিনা। তারা তিনবার একথা বলল। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে আবদুল্লাহ ইবন সালাম রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কেমন লোক? তারা উত্তর দিল, তিনি আমাদের নেতা এবং আমাদের নেতার সন্তান। তিনি আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ আলিম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ আলিমের সন্তান। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের মতামত কি হবে? তারা বলল, আল্লাহ হেফাজত করুন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করবেন তা কিছুতেই হতে পারেনা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, আচ্ছা বলতো, তিনি যদি মুসলিম হয়েই যান তবে তোমরা কী মনে করবে? তারা বলল, আল্লাহ্ রক্ষা করুন, তিনি মুসলিম হয়ে যাবেন ইহা কিছুতেই সম্ভব নয়। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবন সালাম, তুমি এদের সামনে বেরিয়ে আস। তিনি বেরিয়ে আসলেন এবং বললেন, হে ইয়াহূদী সম্প্রদায়! আল্লাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহ্র কসম, যিনি ব্যতীত কোনো মা’বুদ নেই। তোমরা নিশ্চয়ই জান তিনি সত্য রাসুল, হোক নিয়েই আগমন করেছেন। তখন তারা বলে উঠল, তুমি মিথ্যা বলছ। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বের করে দিলেন। [বুখারী, হাদীস নং ৩৯১১।]
আবু যায়েদ আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমার কাছে আস। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত দিয়ে তাঁর মাথা ও দাঁড়ি মাসেহ করলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহ তাকে সুন্দর করুন এবং তাঁর সৌন্দর্য স্থায়ী করুন। তিনি বলেন, তাঁর একশত বছরেরও বেশি বয়স হয়েছিল অথচ তাঁর মাথা ও দাঁড়ির চুল সামান্য পরিমাণ ছাড়া পাকেনি। তিনি প্রফুল্ল চেহারার অধিকারী ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর চেহারা কুঞ্চিত হয়নি। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২০৭৩৩।]
সালমা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খায়বার অভিযানে বের হলাম। আমরা রাতের বেলায় চলছিলাম। দলের মধ্যে থেকে একজন ‘আমির ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল যে, আপনি কি আপনার (ছোট) কবিতাগুলো থেকে কিছু পড়ে আমাদের শোনাবেন না? ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহু ছিলেন একজন কবি। সুতরাং তিনি দলের লোকদের হুদী গেয়ে শোনাতে লাগলেন। ‘‘হে আল্লাহ! তুমি না হলে, আমরা হেদায়েত পেতাম না। আমরা সাদাকা দিতাম না, সালাত আদায় করতাম না। আমাদের আগেকার গুনাহ ক্ষমা করুন; যা আমরা করেছি। আমরা আপনার জন্য উৎসর্গিত। যদি আমরা শত্রুর সম্মুখীন হই, তখন আমাদের পদদ্বয় সুদৃঢ় রাখুন। আমাদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। শত্রুর ডাকের সময় আমরা যেন বীরের মত ধাবিত হই, যখন তারা হৈ-হুল্লোড় করে, আমাদের উপর আক্রমণ চালায়।’’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ উট চালক লোকটি কে? সে যে এ রকম উট চালিয়ে যাচ্ছে লোকেরা বললেন, তিনি ‘আমির ইবন আকওয়া। তিনি বললেন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন। দলের একজন বললেন, ইয়া নবী আল্লাহ। তার জন্য তো শাহাদত নিদির্ষ্ট হয়ে গেল। হায়! যদি আমাদের এ সুযোগ দান করতেন। তারপর আমরা খায়বার পৌঁছে শত্রুদের অবরোধ করে ফেললাম। এ সময় আমরা অতিশয় ক্ষুধার্ত হয়ে পড়লাম। অবশেষে আল্লাহ (খায়বার যুদ্ধে) তাদের উপর আমাদের বিজয় দান করলেন। তারপর যেদিন খায়বার বিজিত হলো, সেদিন লোকেরা অনেক আগুন জালালো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা এত সব আগুন কি জন্য জ্বালাচ্ছ? লোকেরা বলল, গোশত রান্নার জন্য। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কিসের গোশত? তারা বলল, গৃহপালিত গাধার গোশত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এসব গোশত ফেলে দাও এবং হাড়িগুলো ভেঙ্গে ফেল। একব্যক্তি বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ! বরং গোশতগুলো ফেলে আমরা হাড়িগুলো ধুয়ে নি? তিনি বললেন, তবে তাই কর। রাবী বলেন, যখন লোকেরা যুদ্ধে সারিবদ্ধ হল। ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুর তলোয়ার খানা খাটো ছিল। তিনি এক ইয়াহূদীকে মারার উদ্দেশ্যে এটি দিয়ে তার উপর আক্রমণ করলেন। কিন্তু তার তলোয়ারের ধারালো অংশ ‘আমির রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাটুতে এসে আঘাত করল। এতে তিনি মারা গেলেন। তারপর ফিরার সময় সবাই ফিরলেন। সালমা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমার চেহারার রং পরিবর্তন দেখে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার কি হয়েছে? আমি বললাম, আমার বাপ-মা আপনার উপর কোরবান হোক! লোকেরা বলছে যে, ‘আমিরের আমল সব বরবাদ হয়ে গেছে। তিনি বললেন, এ কথাটা কে বলেছে? আমি বললাম, অমুক, অমুক অমুক এবং উসায়দ ইবন হুয়াইর আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যারা এ কথা বলেছে, তারা মিথ্যা বলেছে। তিনি বললেন, তাঁর দু’টি পুরস্কার রয়েছে, সে জাহিদ এবং মুজাহিদ। আরব ভূ-খন্ডে তাঁর মত লোক অল্পই জন্ম নিয়েছে। [বুখারী, হাদীস নং ৬১৪৮।]
জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি আমাকে যুল-খালাসার পেরেশানী থেকে স্বস্থি দেবেনা? আমি বললাম: অবশ্যই। এরপর আমি (আমাদের) আহমাস গোত্র থেকে একশত পঞ্চাশ জন অশ্বারোহী সৈনিক নিয়ে চললাম। তাদের সবাই ছিলো অশ্ব পরিচালনায় অভিজ্ঞ। কিন্তু আমি তখনো ঘোড়ার উপর স্থির হয়ে বসতে পারতাম না। তাই ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালাম। তিনি তাঁর হাত দিয়ে আমার বুকের উপর আঘাত করলেন। এমনকি আমি আমার বুকে তাঁর হাতের চিহ্ন পর্যন্ত দেখতে পেলাম। তিনি দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ্! একে স্থির হয়ে বসে থাকতে দিন এবং তাকে হেদায়েত দানকারী ও হেদায়েত লাভকারী বানিয়ে দিন’। জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এরপরে আর কখনো আমি আমার ঘোড়া থেকে পড়ে যাইনি। তিনি আরো বলেছেন যে, যুল-খালাসা ছিলো ইয়ামানের অন্তর্গত খাসআম ও বাজীলা গোত্রের একটি (তীর্থ) ঘর। সেখানে কতগুলো মূর্তি স্থাপিত ছিলো। লোকেরা এগুলোর পূজা করত এবং এ ঘরটিকে বলা হতো কা’বা। রাবী বলেন, এরপর তিনি সেখানে গেলেন এবং ঘরটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন আর এর ভিটামাটিও চুরমার করে দিলেন। রাবী আরো বলেন, আর যখন জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু ইয়ামানে গিয়ে উঠলেন তখন সেখানে এক লোক থাকত, সে তীরের সাহায্যে ভাগ্য নির্নয় করত, তাকে বলা হল, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিনিধি এখানে আছেন, তিনি যদি তোমাকে পাকড়াও করার সুযোগ পান তাহলে তোমার গর্দান উড়িয়ে দেবেন। রাবী বলেন, এরপর একদা সে ভাগ্য নির্নয়ের কাজে লিপ্ত ছিল, সেই মূহুর্তে জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু সেখানে পৌঁছে গেলেন। তিনি বললেন, তীরগুলো ভেঙ্গে ফেল এবং আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই- এ কথার সাক্ষ্য দাও, অন্যথায় তোমার গর্দান উড়িয়ে দেব। লোকটি তখন তীরগুলো ভেঙ্গে ফেলল এবং (আল্লাহ্ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই, এ কথার) সাক্ষ্য দিল। এরপর জারীর রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু আরতাত নামক আহমাস গোত্রের এক ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পাঠালেন খোশখবরী শোনানোর জন্য। লোকটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! সে সত্তার (আল্লাহর) কসম করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঘরটিকে ঠিক খুজলি-পাঁচড়া আক্রান্ত উটের মতো কালো করে রেখে আমি এসেছি। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আহমাস গোত্রের অশ্বারোহী এবং পদাতিক সৈনিকদের সার্বিক কল্যাণ ও বরকতের জন্য পাঁচবার দোয়া করলেন। [বুখারী, হাদীস নং ৪৩৫৭।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহুর এক ছেলে রোগে ভুগছিল। (একদিন) আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু (তাঁর কাজে) বেরিয়ে যাওয়ার পর শিশুটি মারা যায়। যখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু ফিরে এলেন, (স্ত্রীকে) জিজ্ঞাসা করলেন, আমার ছেলে কি করছে? স্ত্রী উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, সে আগের চাইতে শান্ত আছে। এরপর তিনি তাঁকে রাতের খাবার দিলেন, তিনি তা খেলেন, তারপর তার সঙ্গে মিলিত হলেন। এরপর তিনি অবসর হলে উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, শিশুটিকে দাফন করে এস। সকাল হলে আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে এসে তাঁকে (সব) ঘটনা বললেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি আজ রাতে মিলিত হয়েছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি (দু‘আ করে) বললেন, ইয়া আল্লাহ। তাদের উভয়ের জন্য বরকত দিন। এরপর তার একটি ছেলে জন্ম গ্রহণ করে। তখন আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বললেন, তাকে (কোলে) তুলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে নিয়ে যাও। উম্মে সুলায়ম রাদিয়াল্লাহু আনহা তার সাথে কয়েকটি খেজুর দিলেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে (শিশুটিকে) হাতে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, তার সাথে কিছু আছে কি? তারা বললেন, হ্যাঁ, কয়েকটি খেজুর। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেগুলো নিয়ে চিবালেন। এরপর তা তাঁর মুখ থেকে নিয়ে শিশুটির মুখে দিলেন। তারপর তার জন্য বরকতের দো‘আ করলেন এবং তার নাম রাখলেন আব্দুল্লাহ। [মুসলিম, হাদীস নং ২১৪৪।]
উম্মে খালিদ বিনতে খালিদ ইবন সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতার সঙ্গে হলুদ বর্ণের জামা পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সান্না-সান্না। (রাবী) আব্দুল্লাহ রহ. বলেন, হাবশী ভাষায় তা সুন্দর অর্থে ব্যবহৃত। উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর আমি তাঁর মহরে নব্যুতের স্থান নিয়ে কৌতুক করতে লাগলাম। আমার পিতা আমাকে ধমক দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ছোট মেয়ে তাকে করতে দাও।’ এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন, এ কাপড় পরিধান কর আর পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর, পুরানো কর, আবার পরিধান কর, পুরানো কর। (অর্থাৎ দীর্ঘ দিন পরিধান কর)। আব্দুল্লাহ (ইবন মুবারক) রহ. বলেন, উম্মে খালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহা এতদিন জীবিত থাকেন যে, তাঁর আলোচনা চলতে থাকে। [বুখারী, হাদীস নং ৩০৭১।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিলাম। তিনি ছিলেন মুশরিক। একদিন আমি তাকে মুসলিম হতে বললাম। কিন্তু তিনি আমাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এমন একটি মন্তব্য করলেন যা ছিল আমার জন্য অসহনীয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তিনি আমার আহবান প্রত্যাখান করেই চলছেন। আজকেও আমি তাকে দাওয়াত দিলাম। কিন্তু তিনি আমাকে আপনার সম্পর্কে এমন কথা শুনিয়ে দিলেন যা অত্যন্ত আপত্তিকর। অতএব আপনি আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন তিনি যেন আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করুন। আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দু‘আয় খুশি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম। এসে দেখি আমাদের ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। আমার মা আমার পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলেন এবং বলেন, অপেক্ষা কর। আমি বাইরে থেকে পানি পড়ার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। মা গোসল করেলন, জামা পড়লেন এবং ওড়না গায়ে দিলেন। অতঃপর দরজা খুলে দিয়ে বললেন, “হে হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বান্দাহ ও রাসূল”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি খুশির চোটে কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ফিরে আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহ তা‘আলা আপনার দো‘আ কবুল করেছেন এবং আবু হুরায়রার মাকে হিদায়াত দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর প্রশংসা ও গুণগাণ করলেন এবং ভাল কথা বললেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর কাছে দো‘আ করুন- তিনি যেন মুসলিমদের অন্তরে আমার এবং আমার মায়ের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন এবং আমাদের মধ্যেও যেন তাদের জন্য ভালবাসা সৃষ্টি করে দেন। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আল্লাহ! আপনি আপনার এই বান্দাহ আবু হুরায়রা এবং তার মাকে মুমিনদের প্রিয়পাত্র করে দিন এবং মু’মিনদেরকেও তাদের প্রিয়পাত্র করে দিন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অতঃপর এমন কোনো মুমিন পয়দা হয়নি- যে আমার কথা শুনেছে অথবা আমাকে দেখেছে- কিন্তু আমাকে ভালবাসেনি (প্রত্যেকেই আমাকে ভালবেসেছে)। [মুসলিম, হাদীস নং ২৪৯১।]
আবদুল্লাহ্ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে তাঁর চিঠি দিয়ে পাঠালেন এবং তাকে বাহরাইনের গভর্নরের কাছে তা পৌঁছে দিতে নির্দেশ দিলেন। এরপর বাহরাইনের গভর্নর তা কিসরা (পারস্য সম্রাট)-এর কাছে দিলেন। পত্রটি পড়ার পর সে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল। [বর্ণনাকারী ইবন শিহাব (রহ.) বলেন] আমার ধারনা ইবন মুসায়্যাব (রহ.) বলেছেন, (এ ঘটনার খবর পেয়ে) রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জন্য বদ-দু’আ করেন যে, তাদেরকেও যেন সম্পূর্ণরূপে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয়। [বুখারী, হাদীস নং ৬৪।]
ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আ করেছেন, হে আল্লাহ আপনি আবু জাহেল বা উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে যাকে পছন্দ করেন তাঁর ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে ইসলামকে শক্তিশালী করুন। ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অধিক প্রিয় ছিলেন। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৬৮১। ইমাম তিরমিযী রহ. বলেন, হাদীসটি হাসান সহীহ গরীব।]
সালামা ইবন আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাম হাতে আহার করছিল। তিনি বললেন, তুমি তোমার ডান হাতে আহার কর। সে বললো, আমি পারবো না। তিনি বললেন, তুমি যেন না-ই পার। একমাত্র অহঙ্কারই তাকে বাধা দিচ্ছে। সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সে আর তার ডান হাত মুখের কাছে তুলতে পারেনি। [মুসলিম, হাদীস নং ২০২১।]
আয়েশা বিনত সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে, তার পিতা বলেছেন, আমি যখন মক্কায় কঠিনভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখার জন্য আসেন। আমি বললাম, হে আল্লার নবী! আমি সম্পদ রেখে যাচ্ছি। আর আমার একটি মাত্র কন্যা ছাড়া আর কেউ নেই। এ অবস্থায় আমি কি আমার দু’তৃতীয়াংশ সম্পদের ব্যাপারে অসীয়ত করে এক-তৃতীয়াংশ রেখে যাব? তিনি উত্তর দিলেন, না। আমি বললামঃ তা হলে অর্ধেক রেখে দিয়ে আর অর্ধেকের ব্যাপারে অসীয়ত করে যেতে পারি। তিনি বললেন, না। আমি বললাম, তাহলে দু’তৃতীয়াংশ রেখে দিয়ে এক-তৃতীয়াংশ এর ব্যাপারে অসীয়ত করে যেতে পারি? তিনি উত্তর দিলেন, এক-তৃতীয়াংশের পার, তবে এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তারপর তিনি আমার কপালের উপর তাঁর হাত রাখলেন এবং আমার চেহারা ও পেটের উপর হাত বুলিয়ে বললেন, হে আল্লাহ, সা’দকে তুমি নিরাময় কর। তার হিজরত পুর্ন করতে দিন। আমি তার হাতের হিমেল পরশ এখনও পাচ্ছি এবং মনে করি আমি তা কিয়ামত পর্যন্ত পাব। [বুখারী, হাদীস নং ৫৬৫৯।]
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বণিত যে, আবদুর রহমান বিন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এমন অবস্থায় এলেন যে, তার সুফরার চিহ্ন বিদ্যমান ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চিহ্ন সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। আবদুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার উত্তরে বললেন, তিনি এক আনসারী নারীকে শাদী করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কি পরিমাণ মোহরানা দিয়েছে? তিনি বললেন, আমি তাকে খেজুরের আঁটির সমপরিমাণ স্বর্ণ দিয়েছি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর যদি একটি বকরী দিয়েও হয়। [বুখারী, হাদীস নং ৫১৫৩।]
আল্লাহ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো‘আ কবুল করেছেন। আব্দুর রহমান ইবন আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবীদের মধ্যে অধিক সম্পদশালী ছিলেন।
‘আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, যুরাইক গোত্রের লাবীদ ইবন ‘আসাম নামক এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জাদু করে।। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল হতো তিনি একটি কাজ করছেন, অথচ তা তিনি করেন নি। একদিন বা এক রাত্রি তিনি আমার কাছে ছিলেন। তিনি বার বার দো‘আ করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেন, হে ‘আয়েশা! তুমি কি উপলব্ধি করতে পেরেছ যে, আমি আল্লাহর কাছে যা জানতে চেয়েছিলাম, তিনি আমাকে তা জানিয়ে দিয়েছেন। (স্বপ্নে দেখি) আমার নিকট দু’জন লোক আসেন। তাদের একজন আমার মাথার কাছে এবং অপরজন দু‘পায়ের কাছে বসেন। একজন তাঁর সঙ্গীকে বলেন, এ লোকটির কি ব্যথা (অসুখ)? তিনি বলেন, জাদু করা হয়েছে। প্রথম জন বলল, কে জাদু করেছে? দ্বিতীয় জন বলেন, লাবীদ ইন আ‘সাম। প্রথম জন জিজ্ঞাসা করেন, কিসের মধ্যে? দ্বিতীয়জন উত্তর দেন, চিরুনী, মাথা আচড়ানোর সময় উঠা চুল এবং এক পুং খেজুর গাছের ‘জুব’-এর মধ্যে। প্রথম জন বলেন, তা কোথায়? দ্বিতীয় জন বলেন, ‘যারওয়ান’ নামক কুপের মধ্যে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকজন সাহাবী সঙ্গে নিয়ে তথায় যান। পরে ফিরে এসে বলেন, হে আয়েশা! সে কুপের পানি মেহেদী পানির মত (লাল) এবং তার পাড়ের খেজুর গাছের মাথাগুলো শয়তানের মাথার মত। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি কি এ কথা প্রকাশ করে দিবেন না? তিনি বললেন, আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, আমি মানুষকে এমন ব্যাপারে প্ররোচিত করতে পছন্দ করি না, যাতে অকল্যাণ রয়েছে। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিলে সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলা হয়। [বুখারী, হাদীস নং ৫৭৬৩, মুসলিম, হাদীস নং ২১৮৯।]
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর নিআমতকে স্মরণ কর, যখন সেনাবাহিনী তোমাদের কাছে এসে গিয়েছিল, তখন আমি তাদের উপর প্রবল বায়ু ও সেনাদল প্রেরণ করলাম যা তোমরা দেখনি। আর তোমরা যা কর আল্লাহ তার সম্যক দ্রষ্টা। যখন তারা তোমাদের কাছে এসেছিল তোমাদের উপরের দিক থেকে এবং তোমাদের নিচের দিক থেকে আর যখন চোখগুলো বাঁকা হয়ে পড়েছিল এবং প্রাণ কন্ঠ পর্যন্ত পৌঁছেছিল। আর তোমরা আল্লাহ সম্পর্কে নানা রকম ধারণা পোষণ করছিলে। [সূরা: আল্-আহযাব: ৯-১০] এ আয়াতগুলো থেকে নিন্মোক্ত আয়াত পর্যন্ত নাযিল করেন।
“আল্লাহ কাফিরদেরকে তাদের আক্রোশসহ ফিরিয়ে দিলেন, তারা কোনো কল্যাণ লাভ করেনি। যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রবল শক্তিমান, পরাক্রমশালী”। [সূরা: আল্-আহযাব: ২৫]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/33
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।