hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সহীহ হাদীসের আলোকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ

লেখকঃ শাইখ মুকবিল ইবন হাদী আল ওয়াদি‘য়ী

১৮
অষ্টম পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নবুওয়তের প্রমাণ: অল্প পানিতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বরকত
حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : " خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَعْضِ مَخَارِجِهِ، وَمَعَهُ نَاسٌ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَانْطَلَقُوا يَسِيرُونَ، فَحَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَلَمْ يَجِدُوا مَاءً يَتَوَضَّئُونَ، فَانْطَلَقَ رَجُلٌ مِنَ القَوْمِ، فَجَاءَ بِقَدَحٍ مِنْ مَاءٍ يَسِيرٍ، فَأَخَذَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَتَوَضَّأَ، ثُمَّ مَدَّ أَصَابِعَهُ الأَرْبَعَ عَلَى القَدَحِ ثُمَّ قَالَ : «قُومُوا فَتَوَضَّئُوا» فَتَوَضَّأَ القَوْمُ حَتَّى بَلَغُوا فِيمَا يُرِيدُونَ مِنَ الوَضُوءِ، وَكَانُوا سَبْعِينَ أَوْ نَحْوَهُ ".

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এক সফরে বের হয়েছিলেন। তাঁর সাথে সাহাবীরাও ছিলেন। তাঁরা চলতে লাগলেন তখন সালাতের সময় হয়ে গেল কিন্তু অজু করার জন্য কোথাও পানি পাওয়া গেল না। কাফিলার এক ব্যক্তি (আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নিজেই) সামান্য পানিসহ একটি পেয়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত করলেন। তিনি পেয়ালাটি হাতে নিয়ে তার-ই পানি দিয়ে অজু করলেন এবং তাঁর হাতের চারটি আঙ্গুল পেয়ালার মধ্যে সোজা করে ধরে রাখলেন। আর বললেন, উঠ তোমরা সকলে অজু কর। সকলেই ইচ্ছামত অজু করে নিল। তাদেঁর সংখ্যা সত্তর বা এর কাছাকাছি ছিল। [বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৪।]

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : أُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ، وَهُوَ بِالزَّوْرَاءِ، فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ، «فَجَعَلَ المَاءُ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ» قَالَ قَتَادَةُ : قُلْتُ لِأَنَسٍ : كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ : ثَلاَثَ مِائَةٍ، أَوْ زُهَاءَ ثَلاَثِ مِائَةٍ .

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি পানির পাত্র আনা হল, তখন তিনি (মদীনার নিকটবর্তী) যাওরা নামক স্থানে অবস্থান করছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রে রেখে দিলেন আর তখনই পানি আঙ্গলির ফাঁক দিয়ে উপচে পড়তে লাগল। ঐ পানি দিয়ে উপস্থিত সকলেই অজু করে নিলেন। কাতাদা (রহ.) বলেন, আমি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনাদের লোক সংখ্যা কত ছিল? আমরা তিন'শ অথবা তিন'শ এর কাছাকাছি ছিলাম। [বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭২।]

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ أَنَّهُ قَالَ : رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَحَانَتْ صَلاَةُ العَصْرِ، فَالْتَمَسَ النَّاسُ الوَضُوءَ فَلَمْ يَجِدُوهُ، فَأُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَضُوءٍ، فَوَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ الإِنَاءِ يَدَهُ، وَأَمَرَ النَّاسَ أَنْ يَتَوَضَّئُوا مِنْهُ قَالَ : «فَرَأَيْتُ المَاءَ يَنْبُعُ مِنْ تَحْتِ أَصَابِعِهِ حَتَّى تَوَضَّئُوا مِنْ عِنْدِ آخِرِهِمْ» .

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন অযূর পানি তালশ করতে লাগল কিন্তু পেলনা। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কিছু পানি আনা হল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে সে পাত্র থেকে অযু করতে বললেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাঁদের শেষ ব্যক্তি পর্যন্ত তা দেয়ে উযূ করল। [বুখারী, হাদীস নং ১৬৯, মুসলিম, হাদীস নং ২২৭৯।]

عَنْ أَنَسٍ قَالَ : حَضَرَتِ الصَّلاَةُ، فَقَامَ مَنْ كَانَ قَرِيبَ الدَّارِ إِلَى أَهْلِهِ، وَبَقِيَ قَوْمٌ، «فَأُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِخْضَبٍ مِنْ حِجَارَةٍ فِيهِ مَاءٌ، فَصَغُرَ المِخْضَبُ أَنْ يَبْسُطَ فِيهِ كَفَّهُ، فَتَوَضَّأَ القَوْمُ كُلُّهُمْ» قُلْنَا : كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ : «ثَمَانِينَ وَزِيَادَةً» .

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাড়ী নিকটে ছিল তাঁরা (অযু করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোনো অযুর ব্যবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য একটি পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক অযু করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনারা কতজন ছিলেন?’ তিনি বললেন, ‘আশিজন বা আরো বেশী। [বুখারী, হাদীস নং ১৯৫।]

عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «دَعَا بِإِنَاءٍ مِنْ مَاءٍ، فَأُتِيَ بِقَدَحٍ رَحْرَاحٍ، فِيهِ شَيْءٌ مِنْ مَاءٍ، فَوَضَعَ أَصَابِعَهُ فِيهِ» قَالَ أَنَسٌ : «فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَى المَاءِ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ» قَالَ أَنَسٌ : فَحَزَرْتُ مَنْ تَوَضَّأَ، مَا بَيْنَ السَّبْعِينَ إِلَى الثَّمَانِينَ .

আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একপাত্র পানি চাইলেন। একটি বড় পাত্র তাঁর কাছে আনা হল, তাতে সামান্য পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে তাঁর আঙ্গুল রাখলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি পানির দিকে তাকাতে লাগলাম। তাঁর আঙ্গুলের ভেতর দিয়ে পানি উথলে উঠতে লাগল। আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, যারা অযু করেছিল, আমি অনুমান করলাম তাদের সংখ্যা ছিল ৭০ থেকে ৮০ জন। [বুখারী, হাদীস নং ২০০।]

عَنْ عِمْرَانَ، قَالَ : كُنَّا فِي سَفَرٍ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَإِنَّا أَسْرَيْنَا حَتَّى كُنَّا فِي آخِرِ اللَّيْلِ، وَقَعْنَا وَقْعَةً، وَلاَ وَقْعَةَ أَحْلَى عِنْدَ المُسَافِرِ مِنْهَا، فَمَا أَيْقَظَنَا إِلَّا حَرُّ الشَّمْسِ، وَكَانَ أَوَّلَ مَنِ اسْتَيْقَظَ فُلاَنٌ، ثُمَّ فُلاَنٌ، ثُمَّ فُلاَنٌ - يُسَمِّيهِمْ أَبُو رَجَاءٍ فَنَسِيَ عَوْفٌ ثُمَّ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ الرَّابِعُ - وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا نَامَ لَمْ يُوقَظْ حَتَّى يَكُونَ هُوَ يَسْتَيْقِظُ، لِأَنَّا لاَ نَدْرِي مَا يَحْدُثُ لَهُ فِي نَوْمِهِ، فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ عُمَرُ وَرَأَى مَا أَصَابَ النَّاسَ وَكَانَ رَجُلًا جَلِيدًا، فَكَبَّرَ وَرَفَعَ صَوْتَهُ بِالتَّكْبِيرِ، فَمَا زَالَ يُكَبِّرُ وَيَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّكْبِيرِ حَتَّى اسْتَيْقَظَ بِصَوْتِهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا اسْتَيْقَظَ شَكَوْا إِلَيْهِ الَّذِي أَصَابَهُمْ، قَالَ : «لاَ ضَيْرَ - أَوْ لاَ يَضِيرُ - ارْتَحِلُوا»، فَارْتَحَلَ، فَسَارَ غَيْرَ بَعِيدٍ، ثُمَّ نَزَلَ فَدَعَا بِالوَضُوءِ، فَتَوَضَّأَ، وَنُودِيَ بِالصَّلاَةِ، فَصَلَّى بِالنَّاسِ، فَلَمَّا انْفَتَلَ مِنْ صَلاَتِهِ إِذَا هُوَ بِرَجُلٍ مُعْتَزِلٍ لَمْ يُصَلِّ مَعَ القَوْمِ، قَالَ : «مَا مَنَعَكَ يَا فُلاَنُ أَنْ تُصَلِّيَ مَعَ القَوْمِ؟» قَالَ : أَصَابَتْنِي جَنَابَةٌ وَلاَ مَاءَ، قَالَ : «عَلَيْكَ بِالصَّعِيدِ، فَإِنَّهُ يَكْفِيكَ»، ثُمَّ سَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَاشْتَكَى إِلَيْهِ النَّاسُ مِنَ العَطَشِ، فَنَزَلَ فَدَعَا فُلاَنًا - كَانَ يُسَمِّيهِ أَبُو رَجَاءٍ نَسِيَهُ عَوْفٌ - وَدَعَا عَلِيًّا فَقَالَ : «اذْهَبَا، فَابْتَغِيَا المَاءَ» فَانْطَلَقَا، فَتَلَقَّيَا امْرَأَةً بَيْنَ مَزَادَتَيْنِ - أَوْ سَطِيحَتَيْنِ - مِنْ مَاءٍ عَلَى بَعِيرٍ لَهَا، فَقَالاَ لَهَا : أَيْنَ المَاءُ؟ قَالَتْ : عَهْدِي بِالْمَاءِ أَمْسِ هَذِهِ السَّاعَةَ وَنَفَرُنَا خُلُوفٌ، قَالاَ لَهَا : انْطَلِقِي، إِذًا قَالَتْ : إِلَى أَيْنَ؟ قَالاَ : إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَتْ : الَّذِي يُقَالُ لَهُ الصَّابِئُ، قَالاَ : هُوَ الَّذِي تَعْنِينَ، فَانْطَلِقِي، فَجَاءَا بِهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَدَّثَاهُ الحَدِيثَ، قَالَ : فَاسْتَنْزَلُوهَا عَنْ بَعِيرِهَا، وَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِنَاءٍ، فَفَرَّغَ فِيهِ مِنْ أَفْوَاهِ المَزَادَتَيْنِ - أَوْ سَطِيحَتَيْنِ - وَأَوْكَأَ أَفْوَاهَهُمَا وَأَطْلَقَ العَزَالِيَ، وَنُودِيَ فِي النَّاسِ اسْقُوا وَاسْتَقُوا، فَسَقَى مَنْ شَاءَ وَاسْتَقَى مَنْ شَاءَ وَكَانَ آخِرُ ذَاكَ أَنْ أَعْطَى الَّذِي أَصَابَتْهُ الجَنَابَةُ إِنَاءً مِنْ مَاءٍ، قَالَ : «اذْهَبْ فَأَفْرِغْهُ عَلَيْكَ»، وَهِيَ قَائِمَةٌ تَنْظُرُ إِلَى مَا يُفْعَلُ بِمَائِهَا، وَايْمُ اللَّهِ لَقَدْ أُقْلِعَ عَنْهَا، وَإِنَّهُ لَيُخَيَّلُ إِلَيْنَا أَنَّهَا أَشَدُّ مِلْأَةً مِنْهَا حِينَ ابْتَدَأَ فِيهَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اجْمَعُوا لَهَا» فَجَمَعُوا لَهَا مِنْ بَيْنِ عَجْوَةٍ وَدَقِيقَةٍ وَسَوِيقَةٍ حَتَّى جَمَعُوا لَهَا طَعَامًا، فَجَعَلُوهَا فِي ثَوْبٍ وَحَمَلُوهَا عَلَى بَعِيرِهَا وَوَضَعُوا الثَّوْبَ بَيْنَ يَدَيْهَا، قَالَ لَهَا : «تَعْلَمِينَ، مَا رَزِئْنَا مِنْ مَائِكِ شَيْئًا، وَلَكِنَّ اللَّهَ هُوَ الَّذِي أَسْقَانَا»، فَأَتَتْ أَهْلَهَا وَقَدِ احْتَبَسَتْ عَنْهُمْ، قَالُوا : مَا حَبَسَكِ يَا فُلاَنَةُ، قَالَتْ : العَجَبُ لَقِيَنِي رَجُلاَنِ، فَذَهَبَا بِي إِلَى هَذَا الَّذِي يُقَالُ لَهُ الصَّابِئُ فَفَعَلَ كَذَا وَكَذَا، فَوَاللَّهِ إِنَّهُ لَأَسْحَرُ النَّاسِ مِنْ بَيْنِ هَذِهِ وَهَذِهِ، وَقَالَتْ : بِإِصْبَعَيْهَا الوُسْطَى وَالسَّبَّابَةِ، فَرَفَعَتْهُمَا إِلَى السَّمَاءِ - تَعْنِي السَّمَاءَ وَالأَرْضَ - أَوْ إِنَّهُ لَرَسُولُ اللَّهِ حَقًّا، فَكَانَ المُسْلِمُونَ بَعْدَ ذَلِكَ يُغِيرُونَ عَلَى مَنْ حَوْلَهَا مِنَ المُشْرِكِينَ، وَلاَ يُصِيبُونَ الصِّرْمَ الَّذِي هِيَ مِنْهُ، فَقَالَتْ : يَوْمًا لِقَوْمِهَا مَا أُرَى أَنَّ هَؤُلاَءِ القَوْمَ يَدْعُونَكُمْ عَمْدًا، فَهَلْ لَكُمْ فِي الإِسْلاَمِ؟ فَأَطَاعُوهَا، فَدَخَلُوا فِي الإِسْلاَمِ .

‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এক সফরে ছিলাম। আমরা রাতে চলতে চলতে শেষরাতে এক স্থনে ঘুমিয়ে পড়লাম। মুসাফিরের জন্য এর চাইতে মধুর ঘুম আর হতে পারে না। (আমরা এমন ঘোর নিদ্রায় নিমগ্ন ছিলাম যে) সূর্যের তাপ ছাড়া অন্য কিছু আমাদের জাগাতে পারেনি। সরবপ্রথম জাগলেন অমুক, তারপর অমুক, তারপর অমুক। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহ.) তাঁদের সবাইর নাম নিয়েছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহ.) তাঁদের নাম মনে রাখতে পারেন নি। চতুর্থবারে জেগে ওঠা ব্যক্তি ছিলেন ‘উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমালে আমরা কেউ তাঁকে জাগাতাম না, যতখন তা তিনি নিজেই জেগে উঠতেন। কারণ নিদ্রাবস্থায় তাঁর উপর কি অবতীর্ণ হচ্ছে তা তো আমাদের জানা নেই। ‘উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জেগে যখন মানুষের অবস্থা দেখলেন, আর তিনি ছিলেন দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তি—উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে শুরু করলেন। তিনি ক্রমাগত উচ্চস্বরে তাকবীর বলতে লাগলেন। এমন কি তাঁর শব্দে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেগে উঠলেন। তখন লোকেরা তাঁর কাছে ওজর পেশ করলো। তিনি বললেন, কোনো ক্ষতি নেই বা বললেন, কোনো ক্ষতি হবে না। এখান থেকে চল। তিনি চলতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে থামলেন। অযুর পানি আনলেন এবং অযু করলেন। সালাতের আযান দেওয়া হল। তিনি লোকদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। সালাত শেষ করে দেখলেন, এক ব্যক্তি পৃথক দাড়িয়ে আছেন। তিনি লোকদের সাথে সালাত আদায় করেননি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে অমুক! তোমাকে লোকদের সাথে সালাত আদায় করতে কিসে বাধা দিল? তিনি বললেন, আমার উপর গোসল ফরয হয়েছে। অথচ পানি নেই। তিনি বললেন, পবিত্র মাটি নাও (তায়াম্মুম কর), এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুনরায় সফর শুরু করলেন। লোকেরা তাঁকে পিপাসার কষ্ট জানালো। তিনি অবতরণ করলেন, তারপর অমুক ব্যক্তি কে ডাকলেন। (রাবী) আবূ রাজা’ (রহ.) তাঁর নাম উল্লেখ করেছিলেন কিন্তু ‘আওফ (রহ.) তা ভুলে গিয়েছেন। তিনি ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে ডাকলেন। তারপর উভয়কেই পানি খুঁজে আনতে বললেন। তাঁরা পানির খোঁজে বের হলেন। তাঁরা পথে এক মহিলাকে দুই মশক পানি উটের উপর করে নিতে দেখলেন। তাঁরা জিজ্ঞাসা করলেন, পানি কোথায়? সে বললো, গতকাল এ সময়ে আমি পানির নিকটে ছিলাম। আমার পাত্র পেছনে রয়ে গেছে। তাঁরা বললেন, এখন আমাদের সঙ্গে চলো। সে বললো, কোথায়? তাঁরা বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট। সেই লোকটির কাছে যাকে সাবি’ (ধর্ম পরিবর্তনকারী) বলা হয়? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, তোমরা যাকে এই বলে থাক। আচ্ছা এখন চল। তাঁরা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন এবং সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। ‘ইমরান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, লোকেরা স্ত্রীলোকটিকে তাঁর উট থেকে নামালেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি পাত্র আনতে বললেন এবং উভয় মশকের মুখ খুলে তাতে পানি ঢাললেন এবং সেগুলোর মুখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর সে মশকের নীচের মুখ খুলে দিয়ে লোকদের মধ্যে পানি পান করার ও জন্তু-জানোয়ারকে পানি পান করানোর ঘোষণা দিলেন। তাঁদের মধ্যে যার ইচ্ছা পানি পান করলেন ও জন্তুকে পান করালেন। অবশেষে যে ব্যক্তির গোসলের দরকার ছিল, তাকে এক পাত্র পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ পানি নিয়ে যাও এবং গোসল সার। ঐ মহিলা দাঁড়িয়ে দেখছিল যে তাঁর পানি নিয়ে কি করা হচ্ছে। আল্লাহর কসম! যখন তাঁর থেকে পানি নেওয়া শেষ হলো তখন আমাদের মনে হলো, মশকগুলো পুরবাপেক্ষা অধিক ভর্তি। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, মহিলার জন্য কিছু একত্র কর। লোকেরা মহিলার জন্য আজওয়া (বিশেষ খেজুর), আটা ও ছাতু এনে একত্র করলেন। যখন তাঁরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী জমা করলেন, তখন তা একটা কাপড়ে বেধে মহিলাকে উটের উপর সওয়ার করালেন এবং তাঁর সামনে কাপড়ে বাঁধা গাঁটরিটি রেখে দিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি জান যে, আমরা তোমার পানি মোটেই কম করিনি; বরং আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের পানি পান করিয়েছেন। এরপর সে তাঁর পরিজনের কাছে ফিরে গেল। তাঁর বেশ দেরি হয়েছিল। পরিবারের লোকজন তাঁকে জিজ্ঞেসা করল, হে অমুক! তোমার এত দেরি হল কেন? উত্তরে সে বললো একটা আশ্চার্যজনক ঘটনা! দু’জন লোকের সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তাঁরা আমাকে সেই লোকটির কাছে নিয়ে গিয়েছিল, যকে সাবি’ বলা হয়। আর সেখানে সে এসব করল। এ বলে সে মধ্যমা ও তর্যনী আঙ্গুল দিয়ে আসমান ও যমীনের দিকে ইশারা করে বলল, আল্লাহর কসম! সে এ দু’টির সবচাইতে বড় জাদুকর, নয় তো সে বাস্তবিকই আল্লাহর রাসূল। এ ঘটনার পর মুসলিমরা ওই মহিলার গোত্রের আশেপাশের মুশরিকদের উপর হামলা করতেন কিন্তু মহিলার সাথে সম্পর্কযুক্ত গোত্রের কোনো ক্ষতি করতেন না। এসব দেখে কি তোমরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে না? তাঁরা সবাই মহিলাটির কথা মেনে নিল এবং ইসলামে দাখিল হয়ে গেল। [বুখারী, হাদীস নং ৩৪৪।]

عَنِ المِسْوَرِ بْنِ مَخْرَمَةَ، وَمَرْوَانَ، يُصَدِّقُ كُلُّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا حَدِيثَ صَاحِبِهِ، قَالاَ : خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَمَنَ الحُدَيْبِيَةِ حَتَّى إِذَا كَانُوا بِبَعْضِ الطَّرِيقِ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّ خَالِدَ بْنَ الوَلِيدِ بِالْغَمِيمِ فِي خَيْلٍ لِقُرَيْشٍ طَلِيعَةٌ، فَخُذُوا ذَاتَ اليَمِينِ» فَوَاللَّهِ مَا شَعَرَ بِهِمْ خَالِدٌ حَتَّى إِذَا هُمْ بِقَتَرَةِ الجَيْشِ، فَانْطَلَقَ يَرْكُضُ نَذِيرًا لِقُرَيْشٍ، وَسَارَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى إِذَا كَانَ بِالثَّنِيَّةِ الَّتِي يُهْبَطُ عَلَيْهِمْ مِنْهَا بَرَكَتْ بِهِ رَاحِلَتُهُ، فَقَالَ النَّاسُ : حَلْ حَلْ فَأَلَحَّتْ، فَقَالُوا : خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَا خَلَأَتْ القَصْوَاءُ، وَمَا ذَاكَ لَهَا بِخُلُقٍ، وَلَكِنْ حَبَسَهَا حَابِسُ الفِيلِ»، ثُمَّ قَالَ : «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لاَ يَسْأَلُونِي خُطَّةً يُعَظِّمُونَ فِيهَا حُرُمَاتِ اللَّهِ إِلَّا أَعْطَيْتُهُمْ إِيَّاهَا»، ثُمَّ زَجَرَهَا فَوَثَبَتْ، قَالَ : فَعَدَلَ عَنْهُمْ حَتَّى نَزَلَ بِأَقْصَى الحُدَيْبِيَةِ عَلَى ثَمَدٍ قَلِيلِ المَاءِ، يَتَبَرَّضُهُ النَّاسُ تَبَرُّضًا، فَلَمْ يُلَبِّثْهُ النَّاسُ حَتَّى نَزَحُوهُ وَشُكِيَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ العَطَشُ، فَانْتَزَعَ سَهْمًا مِنْ كِنَانَتِهِ، ثُمَّ أَمَرَهُمْ أَنْ يَجْعَلُوهُ فِيهِ، فَوَاللَّهِ مَا زَالَ يَجِيشُ لَهُمْ بِالرِّيِّ حَتَّى صَدَرُوا عَنْهُ، فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ جَاءَ بُدَيْلُ بْنُ وَرْقَاءَ الخُزَاعِيُّ فِي نَفَرٍ مِنْ قَوْمِهِ مِنْ خُزَاعَةَ، وَكَانُوا عَيْبَةَ نُصْحِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ أَهْلِ تِهَامَةَ، فَقَالَ : إِنِّي تَرَكْتُ كَعْبَ بْنَ لُؤَيٍّ، وَعَامِرَ بْنَ لُؤَيٍّ نَزَلُوا أَعْدَادَ مِيَاهِ الحُدَيْبِيَةِ، وَمَعَهُمُ العُوذُ المَطَافِيلُ، وَهُمْ مُقَاتِلُوكَ وَصَادُّوكَ عَنِ البَيْتِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : " إِنَّا لَمْ نَجِئْ لِقِتَالِ أَحَدٍ، وَلَكِنَّا جِئْنَا مُعْتَمِرِينَ، وَإِنَّ قُرَيْشًا قَدْ نَهِكَتْهُمُ الحَرْبُ، وَأَضَرَّتْ بِهِمْ، فَإِنْ شَاءُوا مَادَدْتُهُمْ مُدَّةً، وَيُخَلُّوا بَيْنِي وَبَيْنَ النَّاسِ، فَإِنْ أَظْهَرْ : فَإِنْ شَاءُوا أَنْ يَدْخُلُوا فِيمَا دَخَلَ فِيهِ النَّاسُ فَعَلُوا، وَإِلَّا فَقَدْ جَمُّوا، وَإِنْ هُمْ أَبَوْا، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأُقَاتِلَنَّهُمْ عَلَى أَمْرِي هَذَا حَتَّى تَنْفَرِدَ سَالِفَتِي، وَلَيُنْفِذَنَّ اللَّهُ أَمْرَهُ " ، فَقَالَ بُدَيْلٌ : سَأُبَلِّغُهُمْ مَا تَقُولُ، قَالَ : فَانْطَلَقَ حَتَّى أَتَى قُرَيْشًا، قَالَ : إِنَّا قَدْ جِئْنَاكُمْ مِنْ هَذَا الرَّجُلِ وَسَمِعْنَاهُ يَقُولُ قَوْلًا، فَإِنْ شِئْتُمْ أَنْ نَعْرِضَهُ عَلَيْكُمْ فَعَلْنَا، فَقَالَ سُفَهَاؤُهُمْ : لاَ حَاجَةَ لَنَا أَنْ تُخْبِرَنَا عَنْهُ بِشَيْءٍ، وَقَالَ ذَوُو الرَّأْيِ مِنْهُمْ : هَاتِ مَا سَمِعْتَهُ يَقُولُ، قَالَ : سَمِعْتُهُ يَقُولُ كَذَا وَكَذَا، فَحَدَّثَهُمْ بِمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَامَ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ فَقَالَ : أَيْ قَوْمِ، أَلَسْتُمْ بِالوَالِدِ؟ قَالُوا : بَلَى، قَالَ : أَوَلَسْتُ بِالوَلَدِ؟ قَالُوا : بَلَى، قَالَ : فَهَلْ تَتَّهِمُونِي؟ قَالُوا : لاَ، قَالَ : أَلَسْتُمْ تَعْلَمُونَ أَنِّي اسْتَنْفَرْتُ أَهْلَ عُكَاظَ، فَلَمَّا بَلَّحُوا عَلَيَّ جِئْتُكُمْ بِأَهْلِي وَوَلَدِي وَمَنْ أَطَاعَنِي؟ قَالُوا : بَلَى، قَالَ : فَإِنَّ هَذَا قَدْ عَرَضَ لَكُمْ خُطَّةَ رُشْدٍ، اقْبَلُوهَا وَدَعُونِي آتِيهِ، قَالُوا : ائْتِهِ، فَأَتَاهُ، فَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِنْ قَوْلِهِ لِبُدَيْلٍ، فَقَالَ عُرْوَةُ عِنْدَ ذَلِكَ : أَيْ مُحَمَّدُ أَرَأَيْتَ إِنِ اسْتَأْصَلْتَ أَمْرَ قَوْمِكَ، هَلْ سَمِعْتَ بِأَحَدٍ مِنَ العَرَبِ اجْتَاحَ أَهْلَهُ قَبْلَكَ، وَإِنْ تَكُنِ الأُخْرَى، فَإِنِّي وَاللَّهِ لَأَرَى وُجُوهًا، وَإِنِّي لَأَرَى أَوْشَابًا مِنَ النَّاسِ خَلِيقًا أَنْ يَفِرُّوا وَيَدَعُوكَ، فَقَالَ لَهُ أَبُو بَكْرٍ الصِّدِّيقُ : امْصُصْ بِبَظْرِ اللَّاتِ، أَنَحْنُ نَفِرُّ عَنْهُ وَنَدَعُهُ؟ فَقَالَ : مَنْ ذَا؟ قَالُوا : أَبُو بَكْرٍ، قَالَ : أَمَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، لَوْلاَ يَدٌ كَانَتْ لَكَ عِنْدِي لَمْ أَجْزِكَ بِهَا لَأَجَبْتُكَ، قَالَ : وَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُلَّمَا تَكَلَّمَ أَخَذَ بِلِحْيَتِهِ، وَالمُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ قَائِمٌ عَلَى رَأْسِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَمَعَهُ السَّيْفُ وَعَلَيْهِ المِغْفَرُ، فَكُلَّمَا أَهْوَى عُرْوَةُ بِيَدِهِ إِلَى لِحْيَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَرَبَ يَدَهُ بِنَعْلِ السَّيْفِ، وَقَالَ لَهُ : أَخِّرْ يَدَكَ عَنْ لِحْيَةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَرَفَعَ عُرْوَةُ رَأْسَهُ، فَقَالَ : مَنْ هَذَا؟ قَالُوا : المُغِيرَةُ بْنُ شُعْبَةَ، فَقَالَ : أَيْ غُدَرُ، أَلَسْتُ أَسْعَى فِي غَدْرَتِكَ؟ وَكَانَ المُغِيرَةُ صَحِبَ قَوْمًا فِي الجَاهِلِيَّةِ فَقَتَلَهُمْ، وَأَخَذَ أَمْوَالَهُمْ، ثُمَّ جَاءَ فَأَسْلَمَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «أَمَّا الإِسْلاَمَ فَأَقْبَلُ، وَأَمَّا المَالَ فَلَسْتُ مِنْهُ فِي شَيْءٍ»، ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَيْنَيْهِ، قَالَ : فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً إِلَّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ : أَيْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى المُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ، وَكِسْرَى، وَالنَّجَاشِيِّ، وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلَّا وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمْ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ عَرَضَ عَلَيْكُمْ خُطَّةَ رُشْدٍ فَاقْبَلُوهَا، فَقَالَ رَجُلٌ مِنْ بَنِي كِنَانَةَ : دَعُونِي آتِيهِ، فَقَالُوا : ائْتِهِ، فَلَمَّا أَشْرَفَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَصْحَابِهِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «هَذَا فُلاَنٌ، وَهُوَ مِنْ قَوْمٍ يُعَظِّمُونَ البُدْنَ، فَابْعَثُوهَا لَهُ» فَبُعِثَتْ لَهُ، وَاسْتَقْبَلَهُ النَّاسُ يُلَبُّونَ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ قَالَ : سُبْحَانَ اللَّهِ، مَا يَنْبَغِي لِهَؤُلاَءِ أَنْ يُصَدُّوا عَنِ البَيْتِ، فَلَمَّا رَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ، قَالَ : رَأَيْتُ البُدْنَ قَدْ قُلِّدَتْ وَأُشْعِرَتْ، فَمَا أَرَى أَنْ يُصَدُّوا عَنِ البَيْتِ، فَقَامَ رَجُلٌ مِنْهُمْ يُقَالُ لَهُ مِكْرَزُ بْنُ حَفْصٍ، فَقَالَ : دَعُونِي آتِيهِ، فَقَالُوا : ائْتِهِ، فَلَمَّا أَشْرَفَ عَلَيْهِمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «هَذَا مِكْرَزٌ، وَهُوَ رَجُلٌ فَاجِرٌ»، فَجَعَلَ يُكَلِّمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَبَيْنَمَا هُوَ يُكَلِّمُهُ إِذْ جَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ مَعْمَرٌ : فَأَخْبَرَنِي أَيُّوبُ، عَنْ عِكْرِمَةَ أَنَّهُ لَمَّا جَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «لَقَدْ سَهُلَ لَكُمْ مِنْ أَمْرِكُمْ» قَالَ مَعْمَرٌ : قَالَ الزُّهْرِيُّ فِي حَدِيثِهِ : فَجَاءَ سُهَيْلُ بْنُ عَمْرٍو فَقَالَ : هَاتِ اكْتُبْ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ كِتَابًا فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الكَاتِبَ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ»، قَالَ سُهَيْلٌ : أَمَّا الرَّحْمَنُ، فَوَاللَّهِ مَا أَدْرِي مَا هُوَ وَلَكِنِ اكْتُبْ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ كَمَا كُنْتَ تَكْتُبُ، فَقَالَ المُسْلِمُونَ : وَاللَّهِ لاَ نَكْتُبُهَا إِلَّا بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «اكْتُبْ بِاسْمِكَ اللَّهُمَّ» ثُمَّ قَالَ : «هَذَا مَا قَاضَى عَلَيْهِ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ»، فَقَالَ سُهَيْلٌ : وَاللَّهِ لَوْ كُنَّا نَعْلَمُ أَنَّكَ رَسُولُ اللَّهِ مَا صَدَدْنَاكَ عَنِ البَيْتِ، وَلاَ قَاتَلْنَاكَ، وَلَكِنِ اكْتُبْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «وَاللَّهِ إِنِّي لَرَسُولُ اللَّهِ، وَإِنْ كَذَّبْتُمُونِي، اكْتُبْ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ» - قَالَ الزُّهْرِيُّ : وَذَلِكَ لِقَوْلِهِ : «لاَ يَسْأَلُونِي خُطَّةً يُعَظِّمُونَ فِيهَا حُرُمَاتِ اللَّهِ إِلَّا أَعْطَيْتُهُمْ إِيَّاهَا» - فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «عَلَى أَنْ تُخَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ البَيْتِ، فَنَطُوفَ بِهِ»، فَقَالَ سُهَيْلٌ : وَاللَّهِ لاَ تَتَحَدَّثُ العَرَبُ أَنَّا أُخِذْنَا ضُغْطَةً، وَلَكِنْ ذَلِكَ مِنَ العَامِ المُقْبِلِ، فَكَتَبَ، فَقَالَ سُهَيْلٌ : وَعَلَى أَنَّهُ لاَ يَأْتِيكَ مِنَّا رَجُلٌ وَإِنْ كَانَ عَلَى دِينِكَ إِلَّا رَدَدْتَهُ إِلَيْنَا، قَالَ المُسْلِمُونَ : سُبْحَانَ اللَّهِ، كَيْفَ يُرَدُّ إِلَى المُشْرِكِينَ وَقَدْ جَاءَ مُسْلِمًا؟ فَبَيْنَمَا هُمْ كَذَلِكَ إِذْ دَخَلَ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلِ بْنِ عَمْرٍو يَرْسُفُ فِي قُيُودِهِ، وَقَدْ خَرَجَ مِنْ أَسْفَلِ مَكَّةَ حَتَّى رَمَى بِنَفْسِهِ بَيْنَ أَظْهُرِ المُسْلِمِينَ، فَقَالَ سُهَيْلٌ : هَذَا يَا مُحَمَّدُ أَوَّلُ مَا أُقَاضِيكَ عَلَيْهِ أَنْ تَرُدَّهُ إِلَيَّ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «إِنَّا لَمْ نَقْضِ الكِتَابَ بَعْدُ»، قَالَ : فَوَاللَّهِ إِذًا لَمْ أُصَالِحْكَ عَلَى شَيْءٍ أَبَدًا، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «فَأَجِزْهُ لِي»، قَالَ : مَا أَنَا بِمُجِيزِهِ لَكَ، قَالَ : «بَلَى فَافْعَلْ»، قَالَ : مَا أَنَا بِفَاعِلٍ، قَالَ مِكْرَزٌ : بَلْ قَدْ أَجَزْنَاهُ لَكَ، قَالَ أَبُو جَنْدَلٍ : أَيْ مَعْشَرَ المُسْلِمِينَ، أُرَدُّ إِلَى المُشْرِكِينَ وَقَدْ جِئْتُ مُسْلِمًا، أَلاَ تَرَوْنَ مَا قَدْ لَقِيتُ؟ وَكَانَ قَدْ عُذِّبَ عَذَابًا شَدِيدًا فِي اللَّهِ، قَالَ : فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الخَطَّابِ : فَأَتَيْتُ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ : أَلَسْتَ نَبِيَّ اللَّهِ حَقًّا، قَالَ : «بَلَى»، قُلْتُ : أَلَسْنَا عَلَى الحَقِّ، وَعَدُوُّنَا عَلَى البَاطِلِ، قَالَ : «بَلَى»، قُلْتُ : فَلِمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِي دِينِنَا إِذًا؟ قَالَ : «إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ، وَلَسْتُ أَعْصِيهِ، وَهُوَ نَاصِرِي»، قُلْتُ : أَوَلَيْسَ كُنْتَ تُحَدِّثُنَا أَنَّا سَنَأْتِي البَيْتَ فَنَطُوفُ بِهِ؟ قَالَ : «بَلَى، فَأَخْبَرْتُكَ أَنَّا نَأْتِيهِ العَامَ»، قَالَ : قُلْتُ : لاَ، قَالَ : «فَإِنَّكَ آتِيهِ وَمُطَّوِّفٌ بِهِ»، قَالَ : فَأَتَيْتُ أَبَا بَكْرٍ فَقُلْتُ : يَا أَبَا بَكْرٍ أَلَيْسَ هَذَا نَبِيَّ اللَّهِ حَقًّا؟ قَالَ : بَلَى، قُلْتُ : أَلَسْنَا عَلَى الحَقِّ وَعَدُوُّنَا عَلَى البَاطِلِ؟ قَالَ : بَلَى، قُلْتُ : فَلِمَ نُعْطِي الدَّنِيَّةَ فِي دِينِنَا إِذًا؟ قَالَ : أَيُّهَا الرَّجُلُ إِنَّهُ لَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَيْسَ يَعْصِي رَبَّهُ، وَهُوَ نَاصِرُهُ، فَاسْتَمْسِكْ بِغَرْزِهِ، فَوَاللَّهِ إِنَّهُ عَلَى الحَقِّ، قُلْتُ : أَلَيْسَ كَانَ يُحَدِّثُنَا أَنَّا سَنَأْتِي البَيْتَ وَنَطُوفُ بِهِ؟ قَالَ : بَلَى، أَفَأَخْبَرَكَ أَنَّكَ تَأْتِيهِ العَامَ؟ قُلْتُ : لاَ، قَالَ : فَإِنَّكَ آتِيهِ وَمُطَّوِّفٌ بِهِ، - قَالَ الزُّهْرِيُّ : قَالَ عُمَرُ -: فَعَمِلْتُ لِذَلِكَ أَعْمَالًا، قَالَ : فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ قَضِيَّةِ الكِتَابِ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَصْحَابِهِ : «قُومُوا فَانْحَرُوا ثُمَّ احْلِقُوا»، قَالَ : فَوَاللَّهِ مَا قَامَ مِنْهُمْ رَجُلٌ حَتَّى قَالَ ذَلِكَ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ، فَلَمَّا لَمْ يَقُمْ مِنْهُمْ أَحَدٌ دَخَلَ عَلَى أُمِّ سَلَمَةَ، فَذَكَرَ لَهَا مَا لَقِيَ مِنَ النَّاسِ، فَقَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ : يَا نَبِيَّ اللَّهِ، أَتُحِبُّ ذَلِكَ، اخْرُجْ ثُمَّ لاَ تُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ كَلِمَةً، حَتَّى تَنْحَرَ بُدْنَكَ، وَتَدْعُوَ حَالِقَكَ فَيَحْلِقَكَ، فَخَرَجَ فَلَمْ يُكَلِّمْ أَحَدًا مِنْهُمْ حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ نَحَرَ بُدْنَهُ، وَدَعَا حَالِقَهُ فَحَلَقَهُ، فَلَمَّا رَأَوْا ذَلِكَ قَامُوا، فَنَحَرُوا وَجَعَلَ بَعْضُهُمْ يَحْلِقُ بَعْضًا حَتَّى كَادَ بَعْضُهُمْ يَقْتُلُ بَعْضًا غَمًّا، ثُمَّ جَاءَهُ نِسْوَةٌ مُؤْمِنَاتٌ فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى : { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا جَاءَكُمُ المُؤْمِنَاتُ مُهَاجِرَاتٍ فَامْتَحِنُوهُنَّ } [ الممتحنة : 10] حَتَّى بَلَغَ بِعِصَمِ الكَوَافِرِ فَطَلَّقَ عُمَرُ يَوْمَئِذٍ امْرَأَتَيْنِ، كَانَتَا لَهُ فِي الشِّرْكِ فَتَزَوَّجَ إِحْدَاهُمَا مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ، وَالأُخْرَى صَفْوَانُ بْنُ أُمَيَّةَ، ثُمَّ رَجَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى المَدِينَةِ، فَجَاءَهُ أَبُو بَصِيرٍ رَجُلٌ مِنْ قُرَيْشٍ وَهُوَ مُسْلِمٌ، فَأَرْسَلُوا فِي طَلَبِهِ رَجُلَيْنِ، فَقَالُوا : العَهْدَ الَّذِي جَعَلْتَ لَنَا، فَدَفَعَهُ إِلَى الرَّجُلَيْنِ، فَخَرَجَا بِهِ حَتَّى بَلَغَا ذَا الحُلَيْفَةِ، فَنَزَلُوا يَأْكُلُونَ مِنْ تَمْرٍ لَهُمْ، فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ لِأَحَدِ الرَّجُلَيْنِ : وَاللَّهِ إِنِّي لَأَرَى سَيْفَكَ هَذَا يَا فُلاَنُ جَيِّدًا، فَاسْتَلَّهُ الآخَرُ، فَقَالَ : أَجَلْ، وَاللَّهِ إِنَّهُ لَجَيِّدٌ، لَقَدْ جَرَّبْتُ بِهِ، ثُمَّ جَرَّبْتُ، فَقَالَ أَبُو بَصِيرٍ : أَرِنِي أَنْظُرْ إِلَيْهِ، فَأَمْكَنَهُ مِنْهُ، فَضَرَبَهُ حَتَّى بَرَدَ، وَفَرَّ الآخَرُ حَتَّى أَتَى المَدِينَةَ، فَدَخَلَ المَسْجِدَ يَعْدُو، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ رَآهُ : «لَقَدْ رَأَى هَذَا ذُعْرًا» فَلَمَّا انْتَهَى إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : قُتِلَ وَاللَّهِ صَاحِبِي وَإِنِّي لَمَقْتُولٌ، فَجَاءَ أَبُو بَصِيرٍ فَقَالَ : يَا نَبِيَّ اللَّهِ، قَدْ وَاللَّهِ أَوْفَى اللَّهُ ذِمَّتَكَ، قَدْ رَدَدْتَنِي إِلَيْهِمْ، ثُمَّ أَنْجَانِي اللَّهُ مِنْهُمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «وَيْلُ أُمِّهِ مِسْعَرَ حَرْبٍ، لَوْ كَانَ لَهُ أَحَدٌ» فَلَمَّا سَمِعَ ذَلِكَ عَرَفَ أَنَّهُ سَيَرُدُّهُ إِلَيْهِمْ، فَخَرَجَ حَتَّى أَتَى سِيفَ البَحْرِ قَالَ : وَيَنْفَلِتُ مِنْهُمْ أَبُو جَنْدَلِ بْنُ سُهَيْلٍ، فَلَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ، فَجَعَلَ لاَ يَخْرُجُ مِنْ قُرَيْشٍ رَجُلٌ قَدْ أَسْلَمَ إِلَّا لَحِقَ بِأَبِي بَصِيرٍ، حَتَّى اجْتَمَعَتْ مِنْهُمْ عِصَابَةٌ، فَوَاللَّهِ مَا يَسْمَعُونَ بِعِيرٍ خَرَجَتْ لِقُرَيْشٍ إِلَى الشَّأْمِ إِلَّا اعْتَرَضُوا لَهَا، فَقَتَلُوهُمْ وَأَخَذُوا أَمْوَالَهُمْ، فَأَرْسَلَتْ قُرَيْشٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُنَاشِدُهُ بِاللَّهِ وَالرَّحِمِ، لَمَّا أَرْسَلَ، فَمَنْ أَتَاهُ فَهُوَ آمِنٌ، فَأَرْسَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِمْ، فَأَنْزَلَ اللَّهُ تَعَالَى : { وَهُوَ الَّذِي كَفَّ أَيْدِيَهُمْ عَنْكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ عَنْهُمْ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ بَعْدِ أَنْ أَظْفَرَكُمْ عَلَيْهِمْ } [ الفتح : 24] حَتَّى بَلَغَ { الحَمِيَّةَ حَمِيَّةَ الجَاهِلِيَّةِ } [ الفتح : 26] وَكَانَتْ حَمِيَّتُهُمْ أَنَّهُمْ لَمْ يُقِرُّوا أَنَّهُ نَبِيُّ اللَّهِ، وَلَمْ يُقِرُّوا بِبِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، وَحَالُوا بَيْنَهُمْ وَبَيْنَ البَيْتِ ".

মিসওয়ার ইবন মাখরামা ও মারওয়ান রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তাদের উভয়ের একজনের বর্ণনা অপরজনের বর্ণনার সমর্থন করে, তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুদায়বিয়ার সময় বের হলেন। যখন সাহাবীগন রাস্তার এক জায়গায় এসে পৌঁছলেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘খালিদ ইবন ওয়ালিদ কুরাইশদের অশ্বারোহী অগ্রগামী বাহিনী নিয়ে গামিম নামক স্থানে অবস্থান করছে। তোমরা ডান দিকে চল’ আল্লাহর কসম! খালিদ মুসলিমদের উপস্থিতি টেরও পেলো না, এমনকি যখন তারা মুসলিম সেনাবাহিনীর পশ্চাতে ধূলিরাশি দেখতে পেল, তখন সে কুরাইশদের সংবাদ দেওয়ার জন্য ঘোড়া দৌড়িয়ে চলে গেল। এদিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অগ্রসর হয়ে যখন সেই গিরিপথে পৌঁছলেন, যেখান থেকে মক্কার সোজা পথ চলে গিয়েছে, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটনী বসে পড়ল। লোকজন তাকে (উঠাবার জন্য) ‘হাল-হাল’ বলল, কাসওয়া ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কাসওয়া ক্লান্ত হয়নি এবং তা তার স্বভাবও নয় বরং তাকে তিনিই আটকিয়েছেন যিনি হাতি বাহিনীকে আটকিয়েছিলেন।’ তারপর তিনি বললেন, ‘সেই সত্তার কসম, যাঁর হাততে আমার প্রাণ‘ কুরাইশরা আল্লাহর সম্মানিত বিষয়সমূহের মধ্যে যে কোনো বিষয়ের সম্মান প্রদর্শনার্থে কিছু চাইলে আমি তা পূরণ করব।’ এরপর তিনি তাঁর উষ্টিকে ধমক দিলে সে উঠে দাঁড়াল। রাবী বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের পথ ত্যাগ করে হুদায়বিয়ার শেষ প্রান্তে অল্প পানি বিশিষ্ট কূপের কাছে অবতরণ করেন। লোকজন তা থেকে অল্প-অল্প পানি নিচ্ছিল। এভাবে কিছুক্ষনের মধ্যেই লোকজন পানি শেষ করে ফেলল এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পিপাসার অভিযোগ করা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোষ থেকে একটি তীর বের করলেন এবং সেই তীরটি সেই কূপে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। আল্লাহর কসম! তখন পানি উপচে উঠতে লাগল, এমনকি সকলেই তৃপ্তি সহকারে পানি পান করলেন। এমন সময় বুদাইল ইবন ওয়ারকা আল-খুযাঈ তার খুযা‘আ গোত্রের কিছু লোক নিয়ে এলো। তারা তিহামাবাসীদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আন্তরিক হিতাকাঙ্খি ছিল। বুদাইল বলল, আমি কাব ইবন লুওহাই ও আমির ইবন লুওহাইকে রেখে এসেছি। তারা হুদায়বিয়ার প্রচুর পানির নিকট অবস্থান করছে। তাদের সঙ্গে রয়েছে সাবকসহ দুগ্ধবতী অনেক উষ্ট্রী। তারা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ও বাইতুল্লাহ যিয়ারতে বাধা প্রদান করতে প্রস্তুত। রাসূরুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আমি তো কারো সঙ্গে যুদ্ধ করতে আসিনি; বরং উমরা করতে এসেছি। যুদ্ধ নিঃসন্দেহে কুরাইশদের দূর্বল করে ফেলেছে, ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা যদি চায়, তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাদের সঙ্গে সন্ধি করতে পারি আর তারা আমার ও কাফিরদের মধ্যকার বাধা তুলে নিবে। যদি আমি তাদের উপর জয়ী হয় তবে অন্যান্য লোক ইসলামে যেভাবে প্রবেশ করেছে, তারাও চাইলে তা করতে পারবে। আর না হয়, তারা এসময়টুকুতে শান্তিতে থাকবে। কিন্তু তারা যদি আমার প্রস্তাব অস্বীকার করে, তা হলে সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমার গর্দান বিচ্ছিন্ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা এ ব্যাপারে তাদের যুদ্ধ করে যাব। আর নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দীনকে প্রতিষ্ঠিত করবেন।’ বুদাইল বলল, ‘আমি আপনার বক্তব্য তাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিব। এরপর বুদাইল কুরাইশদের কাছে এসে বলল, ‘তাঁর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে তোমার কিছু বলার প্রয়োজন মনে করি না। কিন্তু তাদের বিবেকবান লোকেরা বলল, ‘তুমি তাঁকে যা বলতে শুনেছ, আমাদেরকে তা বল।’ তারপর বুদাইল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা বলেছিলেন, সব তাদের শুনাল। তারপর উরওয়া ইবন মাসউদ উটে দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে লোকেরা! আমি কি তোমাদের পিতৃতুল্য নই? তারা বলল, ‘হ্যাঁ নিশ্চয়ই।’ উরওয়া বলল, ‘তোমরা কি আমার সন্তান তুল্য নও?’ তারা বলল, ‘হ্যাঁ অবশ্যই।’ উরওয়া বলল, আমার সম্বন্ধে তোমাদের কি কোনো অভিযোগ আছে? তারা বলল, না। উরওয়া বলল, তোমরা কি জান না যে, আমি তোমদের সাহায্যের জন্য উকাযবাসীদের কাছে আবেদন করেছিলাম এবং তারা আমাদের আহবানে সাড়া দিতে অস্বীকার করলে আমি আমার আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্তুতি ও আমার অনুগতদের নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছিলাম? তারা বলল, হ্যাঁ, জানি। উরওয়া বলল, এই লোকটি তোমাদের কাছে একটি ভাল প্রস্তাব পেশ করেছেন। তোমরা তা মেনে নাও এবং আমাকে তাঁর কাছে যেতে দাও। তারা বলল, আপনি তাঁর কাছে যান। তারপর উরওয়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এল এবং তাঁর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সঙ্গে কথা বললেন, যেমনিভাবে বুদাইলের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। উরওয়া তখন বলল, হে মুহাম্মদ, আপনি কি চান যে, আপনার কওমকে নিশ্চিহৃ করে দিবেন, আপনি আপনার পূর্বের আরববাসীদের এমন কারো কথা শুনেছেন যে, সে নিজ কওমের মুলোৎপাটন করতে উদ্যত হয়েছিল? আর যদি অন্য রকম হয়, (তখন আপনার কি অবস্থা হবে?) আল্লাহর কসম! আমি কিছু চেহারা দেখছি এবং বিভিন্ন ধরণের লোক দেখতে পাচ্ছি যাঁরা পালিয়ে যাবে এবং আপনাকে পরিত্যাগ করবে। তখন আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে বললেন, তুমি লাত দেবীর লজ্জাস্থান চেটে খাও। আমরা কি তাঁকে ছেড়ে পালিয়ে যাব? উরওয়া বলল, সে কে? লোকজন বললেন, আবূ বকর। উরওয়া বললেন, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, আমি তাঁর কসম করে বলছি, আমার যদি আপনার ইহসান না থাকত, যার প্রতিদান আমি দিতে পারিনি, তাহলে নিশ্চই আপনার কথার জবাব দিতাম। রাবী বললেন, উরওয়া পুনরায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে কথা বলতে শুরু করলেন। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়িতে হাত দিত। তখন মুগীরা ইবন ‘শুবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিয়রে দাঁড়িয়ে ছিলেন এবং তাঁর সাথে ছির একটি তরবারী ও মাথায় ছিল লৌহ শিরস্ত্রা। উরওয়া যখনই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়ির দিকে তার হাত বাড়াতো মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর তরবারীর হাতল দিয়ে তার হাতে আঘাত করতেন এবং বলতেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দাঁড়ি থেকে তোমার হাত হটাও। উরওয়া মাথা তুলে বলল, এ কে? লোকজন বললেন, মুগীরা ইবন ‘শুবা। উরওয়া বলল, হে গাদ্দার! আমি কি তোমার গাদ্দারীর পরিণতি থেকে তোমাকে উদ্ধারের চেষ্টা করিনি? মুগীরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জাহেলী যুগে কিছু লোকদের সা্থে ছিলেন। একদিন তাদের হত্যা করে তাদের সহায় সম্পদ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার ইসলাম মেনে নিলাম, কিন্তু যে মাল তুমি নিয়েছ, তার সাথে আমার কোনো সর্ম্পক নেই। তারপর রউরওয়া চোখের কোনো দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন। তিনি তাঁদের কোনো আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন। তিনি অযু করলে তাঁর অযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হতো। তিনি যখন কথা বলতেন, তখন নিরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগন তাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। তারপর উরওয়া তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার (রোম) কিসরা (পারস্য) ও নাজ্জাশী (আবিসিনিয়ার) সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোনো রাজা বাদশাহকেই তার অনুসরীদের ন্যায় এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোনো সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোনো আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি অযু করলে তাঁর অযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। তিনি তোমাদের কাছে একটি ভালো প্রস্তাব পাঠিয়েছেন, তোমরা তা মেনে নাও। তা শুনে কিনানা গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, আমাকে তাঁর নিকট যেতে দাও। লোকেরা বলল, যাও। সে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণের কাছে এল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো অমুক ব্যক্তি এবং এমন গোত্রের লোক, যারা কুরবানীর পশুকে সম্মান করে থাকে। তোমরা তার কাছে কুরবাণীর পশু নিয়ে আস। তারপর তার কাছে তা নিয়ে আসা হলো এবং লোকজন তালবিয়া পাঠ করতে করতে তার সামনে এলেন। তা দেখে লোকটি বলল, সুবাহান্নাল্লাহ! এমন সব লোকদেরকে কা‘বা যিয়ারত থেকে বাধা দেওয়া সঙ্গত নয়। তারপর সে তার সঙ্গীদের কাছে ফিরে গিয়ে বলল, আমি কুরবাণরি পশু দেখে এসেছি, সেগুলোকে কিলাদা পরানো হয়েছে ও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাই তাদের কা‘বা যিয়ারত বাধা প্রদান সঙ্গত মনে করি না। তখন তাদের মধ্যে থেকে মিকরায ইবন হাফস নামক এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, আমাকে তাঁর কাছে যেতে দাও। তারা বলল, তাঁর কাছে যাও। তারপর সে যখন মুসলিমদের নিকটবর্তী হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ হলো মিরকাজ, দুষ্ট প্রকৃতির লোক’। অতপর সে কথা বলতে লাগল, এমন সময় সুহাইল ইবন ‘আমর আসল। মা‘মার (রহ.) বলেন, সুহাইল ইবন আমর আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদের জন্য তোমাদের কাজ সহজ হয়ে গেল।’ মা’মার (রহ.) বলেন, যুহরী (রহ.) তার বর্ণিত হাদীসে বলেছেন যে, সুহাইল এসে বলল, আমাদের ও আপনার মাঝে চুক্তি লিখুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন একজন লিখক ডাকলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, লিখুন: ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’। তখন সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! রহমান কে-? আমরা তা জানিনা, বরং পূর্বে আপনি যেমন লিখতেন ‘বিসমিআল্লাহুম্মা’ সেভাবে লিখুন। মুসলিমগন বললেন, আল্লাহর কসম! আমরা ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ ছাড়া আর কিছু লিখব না। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘বিসমিআল্লাহুম্মা’ লিখ। তারপর বললেন, এটা যার উপর চুক্তিবদ্ধ হয়েছে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! আমরা যদি আপনাকে আল্লাহর রাসূল বলেই বিশ্বাস করতাম, তাহলে আপনাকে কা‘বা যিয়ারত দেখে বাধা দিতাম না এবং আপনাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে উদ্যত হতাম না। বরং আপনি লিখুন, আব্দুল্লাহ পুত্র মুহাম্মদ (এর পুত্র থেকে)। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘নিশ্চুই আমি আল্লাহর রাসূল; কিন্তু তোমরা যদি আমাকে অস্বীকার কর তবে লিখ, আব্দুল্লাহর পুত্র মুহাম্মদ।’ যুহরী (র) বলেন, এটি এ জন্য যে, তিনি বলেছিলেন, তারা যদি আল্লাহর পবিত্র বস্তুগুলোর সম্মান করার কোনো কথা দাবী করে তাহলে আমি তাদের সে দাবী মেনে নিব। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ চুক্তি কর যে, তারা আমাদের ও কা‘বা শরীফের মধ্যে কোনো প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে না, যাতে আমরা (নির্বিঘ্নে) তাওয়াফ করতে পারি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! আরববাসীরা যেন এ কথা বলার সুযোগ না পায় যে, এ প্রস্তাব গ্রহণে আমাদের বাধ্য করা হয়েছে। বরং আগামী বছর তা হতে পারে। তারপর লেখা হলো। সুহাইল বলল, এ-ও লিখা হোক যে, আমাদের কোনো লোক যদি আপনার কাছে চলে আসে এবং সে যদিও আপনার দীন গ্রহণ করে থাকে, তবুও তাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিবেন। মুসলিমগণ বললেন, সুবাহান্নাল্লাহ! যে ইসলাম গ্রহন করে আমাদের কাছে এসেছে, তাকে কেমন করে মুশরিকদের কাছে ফেরত দেওয়া যেতে পারে? এমন সময় আবূ জানদাল ইবন সুহাইল ইবন ‘আমর সেখানে এসে উপস্থি হলেন। তিনি বেরি পরিহিত অবস্থায় ধীরে ধীরে চলছিলেন। তিনি মক্কার নিম্নচল থেকে বের হয়ে এসে মুসলিমদের সামনে নিজেকে পেশ করলেন। সুহাইল বলল, হে মুহাম্মদ! আপনার সাথে আমার চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী প্রথম কাজ হলো তাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এখনো তো চুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সুহাইল বলল, আল্লাহর কসম! তাহলে আমি আপনাদের সঙ্গে আর কখনো সন্ধি করব না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কেবল এ লোকটিকে আমার কাছে থাকার অনুমতি দাও। সে বলল, না। এ অনুমতি আমি দেবো না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তুমি এটা কর। সে বলল, আমি তা করব না। মিকরায বলল, আমরা তাকে আপনার কাছে থাকার অনুমতি দিলাম। আবু জানদাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে মুসলিম সমাজ, আমাকে মুশরিকদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে, অথচ আমি মুসলিম হয়ে এসেছি। আপনার কি দেখছেন না, আমি কত কষ্ট পাচ্ছি। আল্লাহর রাস্তায় তাকে অনেক নির্যাতিত করা হয়েছে। উমর ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম এবং বললাম, আপনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, আমরা কি হকের উপর নই? আর আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমি বললাম, তাহলে দীনের ব্যাপারে কেন আমরা হেয় হবো? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললাম, ‘আমি অবশ্যই রাসূল; অতএব আমি তার অবাধ্য হতে পারি না, অথচ তিনিই আমার সাহার্যকারী। আমি বললাম, আপনি কি আমাদের বলেন নাই যে, আমরা শীঘ্রই বায়তুল্লাহ যাব এবং তাওয়অফ করব। তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি কি এ বছরই আসার কথা বলেছি? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, তুমি অবশ্যই কা‘বা গৃহে যাবে এবং তাওয়াফ করবে। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তারপর আমি আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে গিয়ে বললাম, হে আবূ বকর। তিনি কি আল্লাহর সত্য নবী নন? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘অবশ্যই।’ আমি বললাম, আমরা কি সত্যের উপর নই এবং আমাদের দুশমনরা কি বাতিলের উপর নয়? আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, নিশ্চয়ই। আমি বললাম, তবে কেন আমরা এখন আমাদের দীনের ব্যাপারে এত হীনতা স্বীকার করব? আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, ‘ওহে’ নিশ্চয়ই তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তিনি তাঁর রবের নাফরমানী করতে পারেন না। তিনিই তাঁর সাহায্যকারী। তুমি তাঁর অনুসরণকে আকড়ে ধরো। আল্লাহর কসম! তিনি সত্যের উপর আছেন। আমি বললাম, তিনি কি বলেননি যে, আমরা অচিরেই বায়তুল্লাহ যাব এবং তার তাওয়াফ করব। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, অবশ্যই। কিন্তু তুমি এবারই যে যাবে তিনি এ কথা কি বলেছিলেন? আমি বললাম, না। আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তবে নিশ্চয়ই তুমি সেখানে যাবে এবং তার তাওয়াফ করবে। যুহরী (রহ.) বলেন যে, উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেছিলেন, আমি এর জন্য (অর্থাৎ ধৈর্যহীনতার কাফফারা হিসাবে) অনেক নেক আমল করেছি। বর্ণনাকারী বলেন, সন্ধিপত্র লেখা শেষ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা উঠ এবং কুরবানী কর ও মাথা কামিয়ে ফেল। রাবী বলেন, আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা তিনবার বলার পরও কেউ উঠলেন না। তাদের কাউকে উঠতে না দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহার কাছে এসে লোকদের এ আচরণের কথা বলেন। উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা বললেন, হে আল্লাহর নবী, আপনি যদি তাই চান, তাহলে আপনি বাইরে যান ও তাদের সাথে কোনো কথা না বলে আপনার উট আপনি কুরবানী করুন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিন। সেই অনুযায়ী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেরিয়ে গেলেন এবং কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের পশু কুরবানী দিলেন এবং ক্ষুরকার ডেকে মাথা মুড়িয়ে নিলেন। তা দেকে সাহাবীগণ উঠে দাঁড়ালেন ও নিজ নিজ পশু কুরবানী দিলেন এবং একে অপরের মাথা কামিয়ে দিলেন। অবস্থা এমন হলো যে, ভীড়ের কারণে একে অপরের উপর পড়তে লাগলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কয়েকজন মুসলিম মহিলা এলেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, “হে মুমিনগণ! মুমিন মহিলারা তোমাদের কাছে হিযরত করে আসলে তাদেরকে পরীক্ষা করুন”। [সূরা আল-মুমতাহিনা: ১০] তখন উমরা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তার দুস্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেন, তারা মুশরিক ছিল। তাদের একজনকে মু‘আবিয়া ইবন আবূ সুফিয়ান এবং অপরজনকে সাফওয়ান ইবন উমাইয়া বিয়ে করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় ফিরে আসলেন। তখন আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু নামক কোরাইশ গোত্রের এক ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলেন। মক্কার কুরাইশরা তাঁর তালাশে দু‘জন লোক পাঠাল। তারা (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে) বলল, আপনি আমাদের সাথে যে চুক্তি করেছেন (তা পূর্ণ করুন)। তিনি তাকে ঐ দুই ব্যক্তির হাওয়ালা করে দিলেন। তাঁরা তাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল এবং যুল-হুলায়ফায় পৌছে অবতরণ করল আর তাদের সাথে যে খেজুর ছিল তা খেতে লাগল। আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাদের একজনকে বললেন, আল্লাহর কসম! হে অমুক, তোমার তরবারীটি খুবই চমৎকার দেখছি। সে লোকটি তরবারীটি বের করে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম! এটি একটি উৎকৃষ্ট তরবারী। আমি একাধিক বার তা পরীক্ষা করেছি। আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তলোয়ারটি আমি দেখতে চাই তা আমাকে দেখাও। তারপর লোকটি আবূ বাসীরকে তলোয়ারটি দিল। আবূ বাসীর সেটি দ্বারা তাকে এমন আঘাত করলেন যে, তাতে সে মরে গেল। তার অপর সঙ্গী পালিয়ে মদীনায় এসে পৌছল এবং দাঁড়িয়ে মসজিদে প্রবেশ করল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে বললেন, এই লোকটি ভীতিজনক কিছু দেখে এসেছে। ইতিমধ্যে লোকটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌঁছে বলল, আল্লাহর কসম! আমার সঙ্গীকে হত্যা করা হয়েছে, আমিও নিহত হতাম। এমন সময় আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুও সেখানে এসে উপস্থিত হলেন এবং বললেন, ইয়া নবীআল্লাহ! আল্লাহর কসম! আল্লাহ আপনার দায়িত্ব সম্পূর্ণ করে দিয়েছেন। আমাকে তার কাছে ফেরত দিয়েছেন; এ ব্যাপারে আল্লাহ আমাকে তাদের কবল থেকে নাজাত দিয়েছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সর্বনাশ! এতো যুদ্ধের আগুন প্রজ্জলিতকারী, কেউ যদি তাকে বিরত রাখত। আবূ বাসীর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যখন এ কথা শুনলেন, তখন বুঝতে পারলেন যে, তাকে তিনি আবার কাফিরদের কাছে ফেরত পাঠাবেন। তাই তিনি বেরিয়ে নদীর তীরে এসে পড়লেন। রাবী বলেন, এ দিকে আবু জানদার ইবন সুহাইল কাফিরদের কবল থেকে পালিয়ে এসে আবূ বাসীরের সঙ্গে মিলিত হলেন। এরপর থেকে কুরাইশ গোত্রের যে-ই ইসলাম গ্রহণ করত, সে-ই আবূ বাসীরের সঙ্গে এসে মিলিত হতো। এভাবে তাদের একটি দল হয়ে গেল। আল্লাহর কসম! তারা যখনই শুনতেন যে, কুরাইশদের কোনো বানিজ্য কাফিলা সিরিয়া যাবে, তখনই তারা তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন আর তাদের হত্যা করতেন ও তাদের মাল সামান কেড়ে নিতেন তখন কুরাইশরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে লোক পাঠাল। আল্লাহ ও আত্মীয়তার ওয়াসীলা দিয়ে আবেদন করল যে, আপনি আবূ বাসীরের কাছে এর থেকে বিরত থাকার জন্য নির্দেশ পাঠান। এখন থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে) কেউ এলে সে নিরাপদ থাকবে (কুরাইশদের কাছে ফেরত পাঠাতে হবে না)। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে নির্দেশ পাঠালেন। এ সময় আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন, “তিনি তাদের হাত তোমাদের থেকে এবং তোমাদের হাত হাত তাদের থেকে বিরত রেখেছেন.......জাহেলী যুগের অহমিকা”। পর্যন্ত [সূরা আল-ফাতহ: ২৬] তাদের অহমিকা এই ছিল যে, তারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহর নবী বলে স্বীকার করেনি, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম’ বলে স্বীকার করেনি এবং বায়তুল্লাহ ও মুসলিমদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল। [বুখারী, হাদীস নং ২৭৩১।]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ : عَطِشَ النَّاسُ يَوْمَ الحُدَيْبِيَةِ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَ يَدَيْهِ رِكْوَةٌ فَتَوَضَّأَ، فَجَهِشَ النَّاسُ نَحْوَهُ، فَقَالَ : «مَا لَكُمْ؟» قَالُوا : لَيْسَ عِنْدَنَا مَاءٌ نَتَوَضَّأُ وَلاَ نَشْرَبُ إِلَّا مَا بَيْنَ يَدَيْكَ، فَوَضَعَ يَدَهُ فِي الرِّكْوَةِ، فَجَعَلَ المَاءُ يَثُورُ بَيْنَ أَصَابِعِهِ، كَأَمْثَالِ العُيُونِ، فَشَرِبْنَا وَتَوَضَّأْنَا قُلْتُ : كَمْ كُنْتُمْ؟ قَالَ : لَوْ كُنَّا مِائَةَ أَلْفٍ لَكَفَانَا، كُنَّا خَمْسَ عَشْرَةَ مِائَةً .

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুদাবিয়ায় অবস্থান কালে একদিন সাহাবায়ে কেরাম পানির পীপাসায় অত্যন্ত কাতর হয়ে পড়লেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মুখে একটি (চামড়ার) পাত্রে অল্প পানি ছিল। তিনি অজু করলেন। তাঁর নিকট পানি আছে মনে করে সকলে ঐ দিকে ধাবিত হলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,তোমাদের কি হয়েছে? তাঁরা বললেন, আপনার সম্মুখস্থ পাত্রের সামান্য পানি ব্যতীত অজু ও পান করার মত পানি আমাদের নিকট নাই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন। তখনই তাঁর হাত উপচিয়ে ঝর্ণা ধারার ন্যায় পানি ছুটিয়ে বের হতে লাগলো। আমরা সকলেই পানি পান করলাম আর অজু করলাম। সালিম (রহ.) (একজন রাবী) বলেন, আমি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনারা কতজন ছিলেন? আমরা যদি এক লক্ষও হতাম, তবুও আমারদের জন্য পানি যথেষ্ট হত। তবে আমরা ছিলাম মাত্র পনেরশ’। [বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৬।]

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، هَذَا الحَدِيثَ قَالَ : قَدْ رَأَيْتُنِي مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ حَضَرَتِ العَصْرُ، وَلَيْسَ مَعَنَا مَاءٌ غَيْرَ فَضْلَةٍ، فَجُعِلَ فِي إِنَاءٍ فَأُتِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِهِ، فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهِ وَفَرَّجَ أَصَابِعَهُ، ثُمَّ قَالَ : «حَيَّ عَلَى أَهْلِ الوُضُوءِ، البَرَكَةُ مِنَ اللَّهِ» فَلَقَدْ رَأَيْتُ المَاءَ يَتَفَجَّرُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِهِ، فَتَوَضَّأَ النَّاسُ وَشَرِبُوا، فَجَعَلْتُ لاَ آلُو مَا جَعَلْتُ فِي بَطْنِي مِنْهُ، فَعَلِمْتُ أَنَّهُ بَرَكَةٌ . قُلْتُ لِجَابِرٍ : كَمْ كُنْتُمْ يَوْمَئِذٍ؟ قَالَ : أَلْفًا وَأَرْبَعَ مِائَةٍ .

জাবির ইবন আবদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সংগে ছিলাম, এ সময় আসরের সময় হয়ে গেল। অথচ আমাদের সংগে বেঁচে যাওয়া সামান্য পানি ব্যতীত কিছুই ছিল না। তখন সেটুকু একটি পাত্রে রেখে পাত্রটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে পেশ করা হল। তিনি পাত্রটির মধ্যে নিজের হাত ঢুকিয়ে দিলেন এবং আঙ্গলগুলো ছড়িয়ে দিলেন। এরপর বললেন, এস যাদের অযুর প্রয়োজন আছে। বরকত তো আসে আল্লাহ’র কাছ থেকে। জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, তখন আমি দেখলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঙ্গলগুলোর ফাঁক থেকে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। লোকজন অযূ করল এবং পানি পান করল। আমিও আমার উদরে যতটুকু সম্ভব ছিল ততটুকু পান করতে ত্রুটি করলাম না। কেননা, আমি জানতাম এটি বরকতে পানি। রাবী বলেন, আমি জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললাম, সে দিন আপনারা কত লোক ছিলেন? তিনি বললেন, এক হাজার চারশ জন। [বুখারী, হাদীস নং ৫৬৩৯।]

عَنِ البَرَاءِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ : كُنَّا يَوْمَ الحُدَيْبِيَةِ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً وَالحُدَيْبِيَةُ بِئْرٌ، فَنَزَحْنَاهَا، حَتَّى لَمْ نَتْرُكْ فِيهَا قَطْرَةً، فَجَلَسَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَفِيرِ البِئْرِ «فَدَعَا بِمَاءٍ فَمَضْمَضَ وَمَجَّ فِي البِئْرِ» فَمَكَثْنَا غَيْرَ بَعِيدٍ ثُمَّ اسْتَقَيْنَا حَتَّى رَوِينَا، وَرَوَتْ، أَوْ صَدَرَتْ رَكَائِبُنَا .

বারা’আ ইবন আযির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুদাবিয়ায় চৌদ্দশ লোক ছিলাম। হুদায়বিয়া একটি কুপ, আমরা তা হতে পানি এমন ভাবে উঠিয়ে নিলাম যে তাতে এক ফোঁটা পানিও বাকী থাকলো না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কূপের কিনারায় বসে কিছু পানি আনার জন্য আদেশ করলেন। (সামান্য পানি আনা হলো) তিনি কুল্লি করে ঐ পানি কূপে নিক্ষেপ করলেন। কিছু সময় অপেক্ষা করলাম। তখন কূপটি পানিতে ভরে গেল। আমরা পান করে তৃপ্তি লাভ করলাম, আমাদের উটগুলোও পানি পানে তৃপ্ত হল। অথবা বলেছেন আমাদের উটগুলো পানি পান করে প্রত্যাবর্তন করল। [বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৭।]

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ : كُنَّا نَعُدُّ الآيَاتِ بَرَكَةً، وَأَنْتُمْ تَعُدُّونَهَا تَخْوِيفًا، كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفَرٍ، فَقَلَّ المَاءُ، فَقَالَ : «اطْلُبُوا فَضْلَةً مِنْ مَاءٍ» فَجَاءُوا بِإِنَاءٍ فِيهِ مَاءٌ قَلِيلٌ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِي الإِنَاءِ، ثُمَّ قَالَ : «حَيَّ عَلَى الطَّهُورِ المُبَارَكِ، وَالبَرَكَةُ مِنَ اللَّهِ» فَلَقَدْ رَأَيْتُ المَاءَ يَنْبُعُ مِنْ بَيْنِ أَصَابِعِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَقَدْ كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ وَهُوَ يُؤْكَلُ .

আবদুল্লাহ ইবন মাস’উদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (সাহাবাগণ) অলৌকিক ঘটনাসমূহকে বরকত ও কল্যাণকর মনে করতাম আর তোমরা (যারা সাহাবী নও) ঐ সব ঘটনাকে ভীতিকর মনে কর। আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সফরে ছিলাম। আমাদের পানি কমিয়ে আসল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অতিরিক্ত পানি তালাশ কর। (তালাশের পর) সাহাবাগণ একটি পাত্র নিয়ে আসলেন যার ভেতর সামান্য পানি ছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত মোবারক ঐ পাত্রের ভেতর ঢুকিয়ে দিলেন এবং ঘোষণা করলেন, বরকতময় পানি নিতে সকলেই এসো। এ বরকত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তখন আমি দেখতে পেলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আঙ্গুলের ফাঁক দিয়ে পানি উপচে পড়ছে। সময় বিশেষে আমরা খাদ্য-দ্রব্যের তাসবীহ পাঠ শুনতাম আর তা খাওয়া হতো। [বুখারী, হাদীস নং ৩৫৭৯।]

عَنْ إِيَاسُ بْنُ سَلَمَةَ، قَالَ حَدَّثَنِي أَبِي، قَالَ : قَدِمْنَا الْحُدَيْبِيَةَ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ أَرْبَعَ عَشْرَةَ مِائَةً، وَعَلَيْهَا خَمْسُونَ شَاةً لَا تُرْوِيهَا، قَالَ : فَقَعَدَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى جَبَا الرَّكِيَّةِ، فَإِمَّا دَعَا، وَإِمَّا بَصَقَ فِيهَا، قَالَ : فَجَاشَتْ، فَسَقَيْنَا وَاسْتَقَيْنَا، قَالَ : ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَعَانَا لِلْبَيْعَةِ فِي أَصْلِ الشَّجَرَةِ ، قَالَ : فَبَايَعْتُهُ أَوَّلَ النَّاسِ، ثُمَّ بَايَعَ، وَبَايَعَ، حَتَّى إِذَا كَانَ فِي وَسَطٍ مِنَ النَّاسِ، قَالَ : «بَايِعْ يَا سَلَمَةُ» قَالَ : قُلْتُ : قَدْ بَايَعْتُكَ يَا رَسُولَ اللهِ فِي أَوَّلِ النَّاسِ، قَالَ : «وَأَيْضًا»، ............. قَالَ : فَضَرَبَ رَأْسَ مَرْحَبٍ فَقَتَلَهُ، ثُمَّ كَانَ الْفَتْحُ عَلَى يَدَيْهِ ( الخ ).

আয়াস ইবনে সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমার পিতা (সালামা ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে হুদায়বিয়ায় আগম করলাম। আমরা সংখ্যায় ছিলাম চৌদ্দশ’ এবং তাদের (মুসলিমদের) কাছে ছিলো এমন পঞ্চাশটি বকরী যাদের দুগ্ধ দোহন করা হতো না। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) সংকীর্ণ একটি কুপের পাড়ে তাশরিফ রাখলেন। পরে তিনি দো‘আ করেছেন অথবা থুথু ফেলেছেন, (যা-ই হোক) ফলে কুপের পানি কানায় কানায় ভরতি হয়ে গেলো। আমরা সকলে নিজেরাও পান করলাম, আর আমাদের জানোয়ারগুলোকে পান করালাম। পরে তিনি আমাদেরকে একটি বৃক্ষের নীচে (বাবলা গাছ) বাই‘য়াত করার জন্য আহবান করলেন। তিনি (সালামা) বলেন, সকলের আগে আমিউ (তাঁর হাতে হাত রেখে) বাই‘য়াত করলাম। পরে লোকেরা একের পর এক বাইয়াত করলো। অবশেষে বাই‘য়াতের সিলসিলা মাঝামাঝি পর্যায়ে পৌঁছলে, তিনি আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে সালামা! বাইয়াত করো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো সমস্ত লোকের আগেই বাইয়াত করেছি। তিনি বললেন, আবারও বাইয়াত করো। সুতরাং আমি দ্বিতীয়বার বাইয়াত করলাম। সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেখলেন যে আমি নিরস্ত্র। অর্থাৎ আমার কাছে যুদ্ধের কোনো হাতিয়ার নেই। সুতরাং তিনি আমাকে একখানা ঢাল দিলেন (তিনি ‘হাজানা’ দিয়েছেন অথবা ‘দারাকা’, দুটির অর্থ প্রায় কাছাকাছি)। এরপর তিনি (লোকদেরকে) বাইয়াত করাতে থাকলেন। অবশেষে যখন বাইয়াত সিলসিলা প্রায় শেষ পর্যায়ে পৌঁছলো তখন তিনি আমাকে পুনরায় লক্ষ্য করে বললেন, হে সালামা! তুমি কি আমার হাতে বাইয়াত করবে না? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি তো একবার সমস্ত লোকের পূর্বেই বাইয়াত করেছি। আবার মাঝখানেও একবার বাইয়াত করেছি। তিনি বললেন, আবারও করো। সালামা বলেন, পুনরায় তৃতীয়বার তাঁর হাতে বাইয়াত করলাম। পরে তিনি আমাকে বললেন, হে সালামা! আমি যে তোমাকে একখানা ঢাল দিয়েছিলাম, তা কি করলে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার চাচা আমেরের সাথে আমার সাক্ষাত হলে, দেখলাম, তিনি নিরস্ত্র তাঁর কাছে কোনো হাতিয়ার নেই। অতএব, আমি তা তাঁকে দিয়ে ফেলেছি। সালামা বলেন, আমার কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি তো ঐ ব্যক্তির মতো, সে সর্বপ্রথম বলে, হে আল্লাহ! আমাকে এমন একজন বন্ধু মিলিয়ে দাও, যে হবে আমার নিজের (দেহের) চাইতে আমার কাছে অধিক প্রিয়। সালামা বলেন, পরে মুশরিকরা আমার সাথে একটা সন্ধিচুক্তি করার জন্য দূত পাঠিয়ে যোগাযোগ স্থাপন করলো। পরে আমাদের মধ্যে বার বার হাঁটাহাঁটি করলে শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথে একটা সন্ধি চুক্তি সম্পাদন হয়ে গেলো। সালামা বলেন, আমি ছিলাম, তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর খাদেম। আমি তাঁর ঘোড়াকে পানি পান করাতাম ও তার গায়েল ধুলাবালি পরিস্কার করতাম এবং তাঁর খেদমত করতাম, এর বিনিময়ে আমি তাঁর খাদ্য থেকেই খাওয়া দাওয়া করতাম। আর আমার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ যা ছিলো তা আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে ছেড়ে রাখলাম। সালামা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মক্কাবাসীদের সাথে আমাদের সন্ধি-চুক্তি হয়ে গেলে, আমরা পরস্পর পরস্পরের সাথে মিলেমিশে চলতে লাগলাম। (ঠিক এ সময় একদিন) আমি একটি বৃক্ষের নীচে এসে গাছ তলার কাঁটা-কুটা পরিস্কার করে সেখানে শুয়ে পড়লাম। এমন সময় মক্কার মুশরিকদের চার ব্যক্তি আমার কাছে আসলো এবং তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে নানা প্রকার অশোভন ও আপত্তিকর কথাবর্তা বললো। তাতে আমি তাদের ওপর ভীষণ ক্ষেপে গেলাম, পরে আমি অন্য আরেকটি গাছতলায় চলে গেলাম। এ সময় তারা তাদের হাতিয়ারগুলো গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখে সবাই শুয়ে পড়লো। ঠিক এমন সময় উপত্যকার নিম্ন প্রান্ত থেকে কোনো এক আহবানকারী চিৎকার করে এ আওয়াজ দিলো যে, “মুহাজিরীনরা কোথায়? ইবনে যুনাঈমকে হত্যা করা হয়েছে”। সালামা বলেন, এ আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই আমি আমার তরবারী কোষমুক্ত করে ঐ চার ব্যক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম। অথচ তারা সবাই তখনও শায়িত অবস্থায় ছিলো্ আমি গিয়ে তাদের হাতিয়ারগুলো নিয়ে সেগুলোকে আমার হাতে মধ্যে মুঠো করে বেঁধে নিলাম। সালামা বলেন, পরে আমি বললাম, সেই মহান সত্তার কসম! যিনি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমন্ডলকে সবচেয়ে মর্যাদা দান করেছেন। সাবধান! তোমাদের কেউ মাথা তুলবে না। যদি কেউ মাথা ওঠাও, তবে চোখে যা দেখছো ওটার দ্বারা তাকে শেষ করে দেবো। সালামা বলেন, পরে আমি তাদেরকে হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলাম। তিনি বলেন, এ সময় আমার চাচা আমের ও ‘আবালাহ্’ গোত্রের ‘মিকরায’ নামে এক ব্যক্তিবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ধরে নিয়ে আসলো। সে ছিলো সত্তরজন মুশরিকের মধ্যে একটি গাত্রাবৃত ঘোড়ার ওপর আরোহী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন, তোমরা এদের সবাইকে ছেড়ে দাও। অপরাধের সূচনা করা এবং বার বার অপরাধ করা তাদেরকেই মানায় (অর্থাৎ সন্ধিচুক্তির খেলাফ করাটা তাদেরকেই সাজে), এ বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে মাফ করে দিলেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ নাযিল করলেন, “আমি মক্কা অঞ্চলে ওদের ওপর তোমাদেরকে বিজয়ী করার পর, তাদের হাত তোমাদের ওপর থেকে এবং তোমাদের হাত তাদের ওপর থেকে নিবারণ করেছি”। [সূরা আল-ফাতহ: ২৪] আয়াতটি সবটুকুই নাযিল করলেন। সালামা বলেন, অতঃপর আমরা মদীন অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করলাম এবং আমরা এসে এক জায়ঘায় অবস্থান করলাম। এদিকে আমাদের ও ‘লাহ্ইয়ান’ গোত্রের মধ্যখানে একটি মাত্র পাহাড়ের ব্যবধান। আর তারা ছিলো মুশরিক। রাতের বেলায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য তাদের (মুশরিকদের) গোপন সংবাদ সরবরাহ করার জন্যে যে গুপ্তচর হিসেবে উক্ত পাহাড়ের ওপর আরোহণ করবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যে আল্লাহর কাছে “ইস্তিগফার” করলেন। সালামা বলেন, আমি উক্ত রাতে দু’কি তিনবার সে পাহাড়ে আরোহণ করলাম। পরে আমি মদীনায় ফিরে আসলাম। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর গোলাম ‘রাবাহ্’ কে তাঁর স্বীয় সওয়ারী জানোয়ার (আদ্বাহ) দিয়ে পাঠালেন এবং আমিও তার সঙ্গে ছিলাম। আর আমি বের হলাম তার সাথে তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ঘোড়া নিয়ে মুক্ত মাঠের পানে। যখন ভোর হলো হঠাৎ সংবাদ পেলাম আবদুর রহমান আল-কাযারী অতর্কিত আক্রমণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জানোয়ারগুলো ছিনিয়ে নিয়ে গেছে এবং তাঁর রাখালকেও হত্যা করে ফেলেছে। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, হে রাবাহ! ধরো, এ ঘোড়াটি নিয়ে যাও এবং ওটা তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহর কাছে পৌঁছিয়ে দাও, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ সংবাদ জানিয়ে দাও যে, মুশরিকরা তাঁর পশুর পাল লুন্ঠন করে নিয়ে গেছে। সালামা বলেন, অতঃপর আমি একটি উঁচু টিলার ওপর দাঁড়িয়ে মদীনাকে সম্মুখে রেখে বলে সংকেত ধ্বনি উচ্চারণ করে তিনবার খুব জোরে চিৎকার দিলাম। অতঃপর আমি (মুশরিকদের) পিছু ধাওয়া করে তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে করতে বেরিয়ে পড়লাম এবং এ শোক (কবিতা) আবৃত্তি করতে থাকলাম, আমি হলাম আক্ওয়ার সুযোগ্য সন্তান এবং আজকের দিনেই প্রমাণিত হবে, কার মা তাকে অধিক দুগ্ধ পাণ করিয়েছে”। পরে আমি তাদের একজনকে আয়ত্তে পেয়ে তার সওয়ারী লক্ষ্য করে তীর ছুড়লাম, শেষ পর্যন্ত তীরটি তার বাহু ছেদ করে চলে গেলো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, লও হে এই পুরস্কার! আমাকে চিনো? আমি হলাম আক্ওয়ার সুযোগ্য পুত্র। আজই প্রমাণিত হবে নিকৃষ্ট ইতর কে? এবং কার মা তাকে দুগ্ধপাণ করিয়েছে। সালামা বলেন, আল্লাহর কসম! আমি অনবরত বিরামহীনভাবে তাদেরকে তীর নিক্ষেপ করতে থাকলাম এবং ওদের জখমী ও আহত করতে থাকলাম। পরে যখন তাদের অশ্বারোহী আমার কাছে ফিরে আসলো, তখন আমি একটি বৃক্ষের নীচে এসে বসে পড়লাম। অতঃপর আমি তাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করে আহবান করে দিলাম। অবশেষে যখন তারা পাহাড়ের সরু পথের নিকটবর্তী হলো তখন তার মধ্যে ঢুকে গেলো। এ সময় আমি পাহাড়ের ওপরে উঠে গেলাম এবং ওপর থেকে তাদেরকে পাথর নিক্ষেপ করতে থাকলাম। সালামা বলেন, আমি সারাক্ষণ তাদের পিছু ধাওয়া করতেই থাকলাম। শেষ নাগাদ আল্লাহ সৃষ্ট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে কোনো উষ্ট্র সওয়ারীকে আমি আমার পেছনেই ফেলে দিলাম। ফলে আমার ও মুশরিকদের মাঝখানে আমিই রয়ে গেলাম। এরপর আমি তীর নিক্ষেপ করতে করতে তাদের পিছু ধাওয়া করলে শেষ পর্যন্ত তারা গায়ের বোঝা হালকা করার নিমিত্তে ত্রিশখানার বেশী চাদর ও ত্রিশটি তীর ফেলে গেলো। আর আমি তাদের ফেলে যাওয়া প্রত্যেকটি জিনিসের ওপর পাথর চাপা দিয়ে চিহ্ন রেখে যেতে লাগলাম, যেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা দেখে চিনতে পারেন যে, ওগুলো আমার ছিনতাইকৃত জিনিস। অবশেষে তারা (মুশরিকরা) এক টিলার সংকীর্ণ স্থানে গিয়ে উপস্থিত হলো। এমন সময় হঠাৎ অমুক (আবদুর রহমান) ইবনে বাদরুল ফাযারী এসে তাদের কাছে উপস্থিত হলো। তখন তারা সকলে বসে দুপুরের খানা খাচ্ছিলো, আর আমি পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে বসা ছিলাম। এ সময় ফাযারী আমাকে দেখতে পেয়ে সঙ্গের লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলো, ঐ যে ওপরে আমি দেখছি ওটা কি? তারা বললো, এই তো সে ব্যক্তি যে আমাদেরকে অস্থির করে তুলেছে। আল্লাহর শপথ! ঐ সাত-সকাল থেকেই সে আমাদের পিছু ধাওয়া করে আমাদেরকে তীরের মুখে রেখেছে। এমন কি শেষ নাগাদ আমাদের হাতে যা কিছু ছিলো সবকিছুই সে ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। সালামা বলেন, তাদের কথা শুনে ইবনুল ফাযারী বললো, তোমাদের মধ্য থেকে চারজন লোক তার দিকে ওঠো। সালামা বলেন, অতঃপর তাদের থেকে চারজন পাহাড়ের মধ্যে আমার কাঠে উঠে আসলো। তিনি বলেন, যখন তারা আমার এতো নিকটে আসলো যে, এখন আমি তাদের সাথে কথাবার্তা বলতে পারি, তখন আমি বললাম, তোমরা কি আমাকে চিনো, আমি কে? তারা বললো, না এবং জিজ্ঞেস করলো, তুমি কে? উত্তরে বললাম, আমি সালামাহ ইবনুল আক্ওয়া। সেই মহান সত্তার কসম করে বলছি, যিনি মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখমন্ডলকে মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন, আমি তোমাদের কোনো ব্যক্তিকে ধরার সংকল্প করলে সে কখনো আমার নাগালের বাইরে যেতে পারবে না। এবং আমি তাকে ধরেই ফেলবো। কিন্তু তোমাদের কেউই আমাকে ধরতে বা কাবু করতে সক্ষম হবে না। এ সময় তাদের একজন আমার দাবীর সমর্থনে বললো, আমার ধারণাও তাই। সালামা বলেন, পরে তারা ফিরে চলে গেলো, কিন্তু আমি আমার জায়গা ত্যাগ করলাম না। অবশেষে এতক্ষণ পরে দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অশ্বারোহী সৈন্যরা বাগানের ভেতরে প্রবেশ করেছে। সালামা বলেন, দেখলাম তাঁদের সর্বপ্রথম লোকটি হলেন আল-আখরামুল আসাদী। তাঁর পেছনে আবু কাতাদাহ আনসারী এবং তাঁর পেছনে মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ কিন্দী। তিনি বলেন, তাঁরা এখানে আসলে, আমি আখরামের ঘোড়ার লাগাম ধরে থামিয়ে বললাম, ওরা (মুশরিকরা) সবাই পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়ে গেছে। আরো বললাম, হে আখরাম! ওদের থেকে হুঁশিয়ার থাকো। কেননা এমন যেন না হয়, তারা তোমাকে হত্যা করে ফেলে। ইত্যবসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা এসে পৌঁছে গেলেন। তখন আখরাম আমাকে লক্ষ্য করে বললো, হে সালামা! যদি তুমি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখো, আর এটাও জানো যে জান্নাত আছে, সত্য। জাহান্নাম আছে তাও সত্য- তাহলে আমার ও আমার শাহাদাতের মাঝখানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করো না। সালামা বলেন, তার কথা শুনে আমি তার রাস্তা ছেড়ে দিলাম। অতঃপর তাঁর ও আবদুর রহমান ফাযারীর মধ্যে মোকাবিলা (লড়াই) চললো। ফলে আখরাম, আবদুর রহমানের ঘোড়ার পা কেটে ফেললো আর আবদুর রহমান তাকে (আখরামকে) শহীদ করে দিলো এবং সে ঘোড়া পরিবর্তন করে আখরামের ঘোড়ার ওপর চড়ে বসলো। এ অবস্থা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অশ্বারোহী সিপাহী আবু কাতাদাহ অগ্রসর হয়ে আবদুর রহমানকে বর্শা দ্বারা আঘাত করে হত্যা করে ফেললো। সালামা বলেন, সেই মহান সত্তার শপথ করে বলছি যিনি মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেছেন! আমি ওদের (শত্রুদের) পেছনে পদব্রজে এমনভাবে দৌড়ালাম যে, আমি আমার পেছনে তাকিয়ে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গীদের কাউকে তো দেখলামই না, এমনকি তাদের ঘোড়ার পায়ের নীচের ধুলাবালি পর্যন্ত কিছুই উড়তেও দেখলাম না। (অর্থাৎ তারা আমার অনেক দূরে পেছনে পড়ে গেলা)। অবশেষে তারা (শত্রুরা) সূর্যাস্তের পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশের দিকে অগ্রসর হলো। সেখানে পানি ছিলো। ওটাকে ‘যী-কারাদ’ বলা হয়। (এই কূপের নামানুসারেই উক্ত এলাকার নামকরণ হয়েছে)। তারা সেখানে পানি পান করার উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলো। কেননা তারা সবাই ছিলো পিপাসার্ত। সালামা বলেন, যখন তারা পেছনে তাকিয়ে দেখলো যে, আমি তাদেরকে পেছন থেকে দৌড়াচ্ছি, তখন তারা সেখান থেকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালো। এভাবে আমি তাদেরকে ওখান থেকে বিতাড়িত করলাম এবং এক ফোঁটা পানিও পান করতে দিলাম না। তিনি বলেন, তারা ওখান থেকে বেরিয়ে দৌড়ে এক টিলার মধ্যে আশ্রয় নিলো। তিনি বলেন, তারা সবাই দৌড়ে পালারো বটে, কিন্তু আমি তাদের এক ব্যক্তিকে আয়ত্তের মধ্যে পেয়ে এমনভাবে তীর ছুড়লাম যে, তা তার বাহুকে ছিদ্র করে চলে গেলো। তখন আমি তাকে লক্ষ্য করে বললাম, ওহে, লও (পুরস্কার)! জেনে নাও, “আমি হলাম আকওয়ার সুযোগ্য পুত্র। আজই প্রমাণ হবে কার মা তাকে অধিক দুগ্ধপান করিয়েছে”। (তীর খেয়ে) সে হতচকিত হয়ে বললো, ওহে তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! তুমি কি সেই আকওা! যে প্রাতঃভোর থেকে আমাদের পেছনে ধাওয়া করছো? তিনি বলেন, উত্তরে আমি বললাম, হে নিজের আত্মার দুশমন! হাঁ, আমিই সেই আকওয়াম, যে প্রাতঃভোর থেকে তোমাদেরকে তাড়িয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, অতঃপর তারা টিলার ওপরে দু’টি ঘোড়া ফেলে রেখে ওখান থেকে পালিয়ে জান বাঁচালো। তিনি বলেন, অতঃপর আমি উক্ত ঘোড়া দু’টি হাঁকিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে আসলাম। সালামা বলেন, এমন সময় আমেরের সাথে আমার সাক্ষাত হলো। তাঁর কাছে ছিলো চামড়ার একটি থলি, তার মধ্যে ছিলো সামান্য কিছু দুগ্ধ এবং আরেকটি পাত্রের মধ্যে কিছু পানি। সুতরাং আমি তা থেকে অযু করলাম এবং পানও করলাম। পরে আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। এ সময় তিনি পানির ঐ কূপের কাছেই ছিলেন যেখান থেকে আমি ওদেরেকে (শত্রুদেরকে) বিতাড়িত করেছিলাম। এসে দেখি, আমি মুশরিকদের থেকে উট, চাদর এবং তীর-বর্শা যা কিছু ছিনিয়ে নিয়েছিলাম সে সমস্ত প্রত্যেকটি জিনিসই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে নিয়েছেন এবং আরো দেখলাম, শত্রুদের থেকে আমার ছিনিয়ে নেওয়া উটগুলো থেকে বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু একটি উট যবেহ করে নিয়েছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্যে তার কলিজি (যকৃৎ) ও মেরু দাঁড়ার গোস্ত ভাজা করছে। সালামা বলেন, এ সময় আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে অনুমতি দিন, আমি সকলের মধ্য থেকে একশ জন লোক নির্বাচন করে, শত্রুদের পেছনে ধাওয়া করি। ফলে তাদের লোকদের কাছে সংবাদ পৌঁছানোর মত একজন লোককেও জ্যান্ত ছাড়বো না বরং সবাইকে হত্যা করে ফেলবো। তিনি বলেন, আমার সংকল্পের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে হেসে দিলেন যে, আগুনের রৌশনীতে তাঁর মাড়ির দাঁত পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়লো। তখন তিনি বললেন, হে সালামা! তুমি স্বয়ং নিজেকে কি এরূপই মনে করো যে, তুমি এটা করতে সক্ষম? আমি বললাম, সেই সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সম্মানিত করেছেন, হ্যাঁ পারবো। তখন তিনি বললেন, এতক্ষণে তারা নিশ্চয়ই ‘গাতফান’ ভূমিতে পৌঁছে গেছে। এমন সময় গাতফান থেকে এক ব্যক্তি এসে বললো, তাদের এ সমস্ত লোকদের জন্য অমুক ব্যক্তি একটি উট যবেহ করছে। যখন তারা উক্ত উটের চামড়া খুলে সবেমাত্র অবসর হয়েছে, এমন সময় তাকিয়ে দেখলো যে, ধুলাবালি আকাশে উড়ছে (অর্থাৎ মুসলিম সৈন্যরা এসে গেছে)। তখন মুসলিমরা তোমাদের কাছে এসে গেছে, বলে চিৎকার করে, তারা সবাই ওখান থেকে পালিয়ে গেলো। পরদিন ভোর হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাদের আজকের উত্তম অশ্বারোহী ছিলেন আকু কাতাদাহ্ এবং উত্তম পদাতিক ছিলেন সালামা। সালামা বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (যুদ্ধলব্ধ মাল থেকে) আমাকে দু’ভাগ দিলেন, একভাগ অশ্বারোহীর এবং আরেকভাগ পদাতিকের। তিনি উক্ত দুই ভাগ একত্রেই আমাকে দিলেন। পরে তিনি আমাকে তাঁর নিজস্ব সওয়ারী ‘আদবা’ ওপর তাঁর পেছনে বসিয়ে মদীনার দিকে প্রত্যাবর্তন করলেন। তিনি বলেন, আমরা মদীনার দিকে রওয়ানা করে যাচ্ছিলাম ঠিক এমন সময় আনসারী এক ব্যক্তি বললো, দৌড়ে কেউ আমার আগে যেতে পারবে না। সে আবার প্রতিযোগী আহ্বান করে বললো, আছে কেউ যে, আমার আগে মদীনার পৌঁছতে পারে? সে পুনরায় আহ্বান করলো, কে আছে এমন যে আমার আগে মদীনায় পৌঁছতে পারে? সে উক্ত কথাটি বার বার পুনরাবৃত্তি করতে থাকলো। আমি তার কথা শুনে বললাম, তুমি কি কোনো ভদ্র লোকের সম্মান করবে না এবং কোনো শরীফ-সম্ভ্রান্ত লোককে ভয় করবে না? সে বললো, না; তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি হন, তাঁকে সম্মানও করবো এবং ভয়ও করবো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্যে উৎসর্গ হোক। আমাকে ছেড়ে দিন (অর্থাৎ অনুমতি দিন), আমি ঐ লোকটির সাথে প্রতিযোগিতা করবো। তিনি বললেন, যদি ইচ্ছে হয় যেতে পারো। সালামা বলেন, তখন আমি বললাম, আমি তোমার কাছে যাবো। এ বলে আমি আমার পা চালাতে লাগলাম পরে দৌড়াতে আরম্ভ করলাম এবং একটি অথবা দুটি উঁচু ভূমি তাকে পেছনে ফেলে এক জায়গায় এসে আমি আমার শরীরকে বিশ্রাম দিলাম। অতঃপর আবার তার পেছনে দৌড়াতে লাগলাম। এবারও আমি তাকে একটি অথবা দুটি উঁচুভূমি পেছনে ফেরে দিলাম। পরে আমি তার কাছে গিয়ে তার দুবাহু ধরে নাড়া দিয়ে বললাম, আল্লাহর কসম! আমি তোমাকে হারিয়ে দিয়েছি। সে বললো, আমারও ধারণা যে, আমি হেরে গেছি। তিনি বলেন, সুতরাং আমি তার পূর্বেই মদীনায় পৌঁছে গেলাম।

সালামা বলেন, আল্লাহর কসম! উক্ত ঘটনার কেবলমাত্র তিন দিন পরেই আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে খাইবার অভিমুখে রওয়ানা করলাম। এ সময় আমার চাচা আমের লোকদের সাথে সুরেলা কন্ঠে গাইতে লাগলেন, আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহ অনুগ্রহ না করতেন, আমরা হেদায়েতের পথ পেতাম না। দান-সাদকা করতাম না এবং সালাতও পড়তাম না এবং আমরা তোমার করুণা থেকে বিমুখ নই। অতএব শত্রু মোকাবিলায় আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখো, আর আমাদের ওপর প্রশান্তি নাযিল করো, কবিতা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এ গায়ক কে? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আমের। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বললেন, আল্লাহ তোমাকে মাফ করুন। সালামা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো ব্যক্তি জন্যে বিশেষভাবে ইসতিগফার করেছেন সে শহীদই হয়েছে। তখন উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর উটের ওপর বসা ছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে বললেন, হে আল্লাহর নবী! যদি আমেরের সাথে আমাদেরকেও উপকৃত করতেন! (যদি আমাদের জন্যেও এরূপ বিশেষ দু’আ করতেন তাহলে খুবই ভালো হতো) সালামা বলেন, যখন আমরা খায়বার এলাকায় আগমন করলাম (যুদ্ধের ব্যুহ বচনা হলো এবং মোকাবিলার জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বী আহবানের পালা আসলো) তখন খায়বারবাসীদের অধিপতি মারহাব তার তরবারী উঁচু করে বলতে লাগলো, খায়বার ভূমি খুব ভালো অবগত আছে যে, আমি হলাম মারহাব, আপাদমস্তক অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত একজন পরীক্ষিত বীর সেনানী। যখন যুদ্ধ সম্মুখে আসে তখন সে জ্বলন্ত অগ্নি। সালামা বলেন, আমার চাচা আমের তার মোকাবিলায় এসে দাঁড়ালেন এবং বললেন, খায়বার ভূমি অবশ্যই জানে আমি হলাম আমের। মজবুত অস্ত্রে সজ্জিত প্রচন্ড যুদ্ধে অপরাজেয় বীর। সালামা বলেন, এরপর তাদের দু’জনের আঘাত পরস্পরের মধ্যে ওলট-পালট হতে লাগলো। পরে মারহাবের তারবারির আঘাত এক সময় এসে আমার চাচা আমেরের ঢালের ওপর পড়লো। তখন আমের ঢালের নীচ দিয়ে তাকে আঘাত করতেই অতর্কিতভাবে তরবারী এসে তাঁর নিজ দেহের জোড়ার শাহরগটি কেটে দিলো, তাতেই তিনি ইনতিকাল করলেন। সালামা বলেন, আমি বের হয়ে দেখলাম লোকেরা বলাবলি করছে যে, আমেরের সমস্ত আমল বাতিল হয়ে গেছে। কেননা সে আত্মহত্যা করেছে। সালামা বলেন, আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম এবং বললাম, আল্লাহর রাসূল! আমেরের আমল তো বাতিল হয়ে গেছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ কথা কে বলেছে? আমি বললাম, আপনার সঙ্গীদের কিছুসংখ্যক লোক বলেছে। তিনি বলেন, যে এ কথা বলেছে সে মিথ্যা বলেছে, বরং সে দ্বিগুন সওয়াবের অধিকারী হয়েছে। অতঃপর তিনি আমাকে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে পাঠালেন। এ সময় তাঁর চোখ উঠেছে (চক্ষু রোগগ্রস্ত)। পরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ইসলামী পতাকা অবশ্যই এমন ব্যক্তির হাতে অর্পণ করবো যে আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসে। অথবা তিনি বলেছেন, যাকে আল্লাহ্ও তাঁর রাসূল ভালোবাসেন। সালামা বলেন, পরে আমি আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কাছে আসলাম এবং তাঁকে ধরে ধরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে নিয়ে আসলাম। এসময়ও তিনি চক্ষু রোগে ভুগছিলেন। শেষ নাগাদ আমি তাঁকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিয়ে আসলে তিনি তাঁর উভয় চক্ষুর মধ্যে থুথু লাগিয়ে দিলে তৎক্ষণাতই তা আরোগ্য হয়ে গেলা এবং ইসলামী পতাকা তাঁর হাতেই প্রদান করলেন। এ সময় মারহাব বেরিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দী আহবান করে বললো, কায়বার ভালোভাবেই জানে আমি হলাম মারহাব, মজবুত অস্ত্রের অধিকারী অপরাজেয় রণবীর। যখন যুদ্ধ সম্মুখে আসে তখন প্রজ্জলিত অগ্নিকূন্ড। তার জবাবে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, আমি সেই রণবীর, আমার মা আমার নাম রেখেছেন হায়দার। যেমন বিশাল জঙ্গলের কুৎসিত ভয়ঙ্কর সিংহ। যারা আমার কাছে আসে আমি তাদেরকে ‘সুন্দরার’ দাড়িপাল্লা দ্বারা কানায় কানায় ভরতি করে দিয়ে দেই। এ বলে মারহাবের মাথায় আঘাত করতেই সে নিহত হলো। অতঃপর তাঁর হাতেই খায়বার বিজয় হলো। [মুসলিম, হাদীস নং ১৮০৭।]

عَنْ مُعَاذ بْن جَبَلٍ، قَالَ : خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَامَ غَزْوَةِ تَبُوكَ، فَكَانَ يَجْمَعُ الصَّلَاةَ، فَصَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا، وَالْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا، حَتَّى إِذَا كَانَ يَوْمًا أَخَّرَ الصَّلَاةَ، ثُمَّ خَرَجَ فَصَلَّى الظُّهْرَ وَالْعَصْرَ جَمِيعًا، ثُمَّ دَخَلَ، ثُمَّ خَرَجَ بَعْدَ ذَلِكَ، فَصَلَّى الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ جَمِيعًا، ثُمَّ قَالَ : «إِنَّكُمْ سَتَأْتُونَ غَدًا، إِنْ شَاءَ اللهُ، عَيْنَ تَبُوكَ، وَإِنَّكُمْ لَنْ تَأْتُوهَا حَتَّى يُضْحِيَ النَّهَارُ، فَمَنْ جَاءَهَا مِنْكُمْ فَلَا يَمَسَّ مِنْ مَائِهَا شَيْئًا حَتَّى آتِيَ» فَجِئْنَاهَا وَقَدْ سَبَقَنَا إِلَيْهَا رَجُلَانِ، وَالْعَيْنُ مِثْلُ الشِّرَاكِ تَبِضُّ بِشَيْءٍ مِنْ مَاءٍ، قَالَ فَسَأَلَهُمَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «هَلْ مَسَسْتُمَا مِنْ مَائِهَا شَيْئًا؟» قَالَا : نَعَمْ، فَسَبَّهُمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ لَهُمَا مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَقُولَ . قَالَ : ثُمَّ غَرَفُوا بِأَيْدِيهِمْ مِنَ الْعَيْنِ قَلِيلًا قَلِيلًا، حَتَّى اجْتَمَعَ فِي شَيْءٍ، قَالَ وَغَسَلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيهِ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ، ثُمَّ أَعَادَهُ فِيهَا، " فَجَرَتِ الْعَيْنُ بِمَاءٍ مُنْهَمِرٍ أَوْ قَالَ : غَزِيرٍ - شَكَّ أَبُو عَلِيٍّ أَيُّهُمَا قَالَ - حَتَّى اسْتَقَى النَّاسُ، ثُمَّ قَالَ «يُوشِكُ، يَا مُعَاذُ إِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، أَنْ تَرَى مَا هَاهُنَا قَدْ مُلِئَ جِنَانًا» .

মুয়ায ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে (যুদ্ধে) বের হলাম। (এ সফরে) তিনি (দুই) সালাত একত্রে আদায় করতেন। অর্থাৎ যোহর ও আসর একত্রে আদায় করতেন আর মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করতেন। অবশেষে এক দিন (এমন) হল যে, সালাত বিলম্বিত করলেন। তারপর বের হয়ে এসে যোহব ও আসর একত্রে আদায় করলেন, অতঃপর (তাঁবুতে) প্রবেশ করলেন। তারপর আবার বেরিয়ে এলেন এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করলেন। তারপর বললেন, ইনশা আল্লাহ তোমরা আগামীকাল তাবুক প্রস্রবণে পৌছবে আর চাশতের সময় না হওয়া পর্যন্ত তোমরা সেখানে পৌছতে পারবে না। তোমাদের মধ্যে যে সেখানে (প্রথমে) পৌছবে, সে যেন তার পানির কিছুই স্পর্শ না করে যতক্ষন না আমি এসে পৌছি। আমরা (যথাসময়ই) সেখানে পৌছলাম। (কিন্তু) ইতিমধ্যে দু’ব্যক্তি আমাদের আগে সেখানে পৌছে গিয়েছিল। আর প্রস্রবণটিতে জুতার ফিতার ন্যায় ক্ষীণ ধারায় কিছু সামান্য পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। মু‘য়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ দুজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা তার থেকে কিছু পানি স্পর্শ করেছ কি? তারা দু’জন বলল, হ্যাঁ। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের দুজনকে তিরস্কার করলেন। আর আল্লাহর যা ইচ্ছা, তাদের তাই বললেন। রাবী বলেন, তারপর লোকেরা তাদের হাত দিয়ে অঞ্জলী ভরে ভরে প্রস্রবণ থেকে অল্প অল্প করে (পানি) তুলল অবশেষে তা একটি পাত্রে কিছু পরিমাণ সঞ্চিত হল। রাবী বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে তাঁর দু’হাত এবং মুখ মুবারক ধুলেন এবং পরে তা (পানি) তাতে (প্রস্রবণে) উলটিয়ে (ঢেলে) দিলেন। ফলে প্রস্রবণটি প্রবল পানি ধারায় অথবা রাবী বলেছেন, প্রচুর পরিমাণে প্রবাহিত হতে লাগল। আবু আলী (রহ.) সন্দেহ করেছেন যে, রাবী এর মধ্যে কোনটি বলেছেন। এবার লোকেরা প্রয়োজনমত পানি পান করল। পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে মু‘য়ায যদি তুমি দীর্ঘজিবী হও, তবে আশা করা যায় যে, তুমি দেখতে পাবে, প্রস্রবণের এ স্থানটি বাগানে ভরে গিয়েছে। [মুসলিম, হাদীস নং ৭০৬।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন