মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
“আর আমি তো ইতঃপূর্বে ইবরাহীমকে সঠিক পথের জ্ঞান দিয়েছিলাম এবং আমি তার সম্পর্কে ছিলাম সম্যক অবগত। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলল, ‘এ মূর্তিগুলো কী, যেগুলোর পূজায় তোমরা রত রয়েছ’? তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এদের পূজা করতে দেখেছি’। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা সবাই রয়েছ স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে’। তারা বলল, ‘তুমি কি আমাদের নিকট সত্য নিয়ে এসেছ, নাকি তুমি খেল-তামাশা করছ’? সে বলল, ‘না, বরং তোমাদের রব তো আসমানসমূহ ও যমীনের রব; যিনি এ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আর এ বিষয়ে আমি অন্যতম সাক্ষী’। আর আল্লাহর কসম, তোমরা চলে যাওয়ার পর আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যাপারে অবশ্যই কৌশল অবলম্বন করব’। অতঃপর সে মূর্তিগুলোকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিল তাদের বড়টি ছাড়া, যাতে তারা তাঁর দিকে ফিরে আসে। তারা বলল, ‘আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে কে এমনটি করল? নিশ্চয় সে যালিম’। তাদের কেউ কেউ বলল, ‘আমরা শুনেছি এক যুবক এই মূর্তিগুলোর সমালোচনা করে। তাকে বলা হয় ইবরাহীম’। তারা বলল, ‘তাহলে তাকে লোকজনের সামনে নিয়ে এসো, যাতে তারা দেখতে পারে’। তারা বলল, ‘হে ইবরাহীম, তুমিই কি আমাদের দেবদেবীগুলোর সাথে এরূপ করেছ’? সে বলল, ‘বরং তাদের এ বড়টিই একাজ করেছে। তাই এদেরকেই জিজ্ঞাসা কর, যদি এরা কথা বলতে পারে’। তখন তারা নিজদের দিকে ফিরে গেল [. এ বাক্যের অর্থ ‘তারা মনে মনে চিন্তা করল তারা বিবেক বুদ্ধি খাটাল’ ও হতে পারে।] এবং একে অন্যকে বলতে লাগল, ‘তোমরাই তো যালিম’। অতঃপর তাদের মাথা অবনত হয়ে গেল এবং বলল, ‘তুমি তো জানই যে, এরা কথা বলতে পারে না’। সে (ইবরাহীম) বলল, ‘তাহলে কি তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদাত কর, যা তোমাদের কোনো উপকার করতে পারে না এবং কোনো ক্ষতিও করতে পারে না’? ‘ধিক তোমাদেরকে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ইবাদাত কর তাদেরকে! ‘তবুও কি তোমরা বুঝবে না’? তারা বলল, ‘তাকে আগুনে পুড়িয়ে দাও এবং তোমাদের দেবদেবীদেরকে সাহায্য কর, যদি তোমরা কিছু করতে চাও’। আমি বললাম, ‘হে আগুন, তুমি শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও ইবরাহীমের জন্য’ । আর তারা তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত করে দিলাম”। [সূরা আল-আম্বিয়া: ৫১-৭০]
“আর নিশ্চয় ইবরাহীম তার দীনের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত। যখন সে বিশুদ্ধচিত্তে তার রবের নিকট উপস্থিত হয়েছিল। যখন সে তার পিতা ও তার কওমকে বলেছিল, ‘তোমরা কিসের ইবাদত কর’? তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে মিথ্যা উপাস্যগুলোকে চাও’? ‘তাহলে সকল সৃষ্টির রব সম্পর্কে তোমাদের ধারণা কী’? অতঃপর সে তারকারাজির মধ্যে একবার দৃষ্টি দিল। তারপর বলল, ‘আমি তো অসুস্থ’। অতঃপর তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে তার কাছ থেকে চলে গেল। তারপর চুপে চুপে সে তাদের দেবতাদের কাছে গেল এবং বলল, ‘তোমরা কি খাবে না?’ তোমাদের কী হয়েছে যে, তোমরা কথা বলছ না’? অতঃপর সে তাদের উপর সজোরে আঘাত হানল। তখন লোকেরা তার দিকে ছুটে আসল। সে বলল, ‘তোমরা নিজেরা খোদাই করে যেগুলো বানাও, তোমরা কি সেগুলোর উপাসনা কর’, অথচ আল্লাহই তোমাদেরকে এবং তোমরা যা কর তা সৃষ্টি করেছেন’? তারা বলল, ‘তার জন্য একটি স্থাপনা তৈরী কর, তারপর তাকে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ কর’। আর তারা তার ব্যাপারে একটা ষড়যন্ত্র করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমি তাদেরকে সম্পূর্ণ পরাভূত করে দিলাম। আর সে বলল, ‘আমি আমার রবের দিকে যাচ্ছি, তিনি অবশ্যই আমাকে হিদায়াত করবেন।‘হে আমার রব, আমাকে সৎকর্মশীল সন্তান দান করুন’। অতঃপর তাকে আমি পরম ধৈর্যশীল একজন পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দিলাম। অতঃপর যখন সে তার সাথে চলাফেরা করার বয়সে পৌঁছল, তখন সে বলল, ‘হে প্রিয় বৎস, আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি তোমাকে যবেহ করছি, অতএব দেখ তোমার কী অভিমত’; সে বলল, ‘হে আমার পিতা, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, আপনি তাই করুন। আমাকে ইনশাআল্লাহ আপনি অবশ্যই ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন’। অতঃপর তারা উভয়ে যখন আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে [ইসমাঈলকে] কাত করে শুইয়ে দিল তখন আমি তাকে আহবান করে বললাম, ‘হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। নিশ্চয় আমি এভাবেই সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’।‘নিশ্চয় এটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা’। আর আমি এক মহান যবেহের [তা ছিল একটি জান্নাতী দুম্বা।] বিনিময়ে তাকে মুক্ত করলাম”। [সূরা আস্-সাফফাত: ৮৩-১০৭]
“আর স্মরণ কর ‘যখন ইবরাহীম বলল, ‘হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা থেকে দূরে রাখুন’। হে আমার রব, নিশ্চয় এসব মূর্তি অনেক মানুষকে পথভ্রষ্ট করেছে, সুতরাং যে আমার অনুসরণ করেছে, নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত, আর যে আমার অবাধ্য হয়েছে, তবে নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম, হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিযিক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে”। [সূরা: ইবরাহীম: ৩৫-৩৭]
“আর যখন ইবরাহীম বলল ‘হে, আমার রব, আমাকে দেখান, কিভাবে আপনি মৃতদেরকে জীবিত করেন। তিনি বললেন, তুমি কি বিশ্বাস করনি’? সে বলল, ‘অবশ্যই হ্যাঁ, কিন্তু আমার অন্তর যাতে প্রশান্ত হয়’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি চারটি পাখি নাও। তারপর সেগুলোকে তোমার প্রতি পোষ মানাও। অতঃপর প্রতিটি পাহাড়ে সেগুলোর টুকরো অংশ রেখে আস। তারপর সেগুলোকে ডাক, সেগুলো দৌড়ে আসবে তোমার নিকট। আর জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [সূরা আল-বাকারা: ২৬০]
“আর অবশ্যই আমার ফেরেশতারা সুসংবাদ নিয়ে ইবরাহীমের কাছে আসল, তারা বলল, ‘সালাম’। সেও বলল, ‘সালাম’। বিলম্ব না করে সে একটি ভুনা গো বাছুর নিয়ে আসল। অতঃপর যখন সে দেখতে পেল, তাদের হাত এর প্রতি পৌঁছছে না, তখন তাদেরকে অস্বাভাবিক মনে করল এবং সে তাদের থেকে ভীতি অনুভব করল। তারা বলল, ‘ভয় করো না, নিশ্চয় আমরা লূতের কওমের কাছে প্রেরিত হয়েছি’। আর তার স্ত্রী দাঁড়ানো ছিল, সে হেসে উঠল। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম ইসহাকের ও ইসহাকের পরে ইয়া‘কূবের। সে বলল, ‘হায়, কী আশ্চর্য! আমি সন্তান প্রসব করব, অথচ আমি বৃদ্ধা, আর এ আমার স্বামী, বৃদ্ধ? এটা তো অবশ্যই এক আশ্চর্যজনক ব্যাপার’! তারা বলল, ‘আল্লাহর সিদ্ধান্তে তুমি আশ্চর্য হচ্ছ? হে নবী পরিবার, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত। নিশ্চয় তিনি প্রশংসিত সম্মানিত’। অতঃপর যখন ইবরাহীম থেকে ভয় দূর হল এবং তার কাছে সুসংবাদ এল, তখন সে লূতের কওম সম্পর্কে আমার সাথে বাদানুবাদ করতে লাগল। নিশ্চয় ইবরাহীম অত্যন্ত সহনশীল, অধিক অনুনয় বিনয়কারী, আল্লাহমুখী। হে ইবরাহীম, তুমি এ থেকে বিরত হও। নিশ্চয় তোমার রবের সিদ্ধান্ত এসে গেছে এবং নিশ্চয় তাদের উপর আসবে আযাব, যা প্রতিহত হবার নয়”। [সূরা: হূদ: ৬৯-৭৬]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মিরাজ রজনীতি আমি মূসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মূসা আলাইহিস সালামের আকৃতি বর্ণনা করেছেন। মূসা আলাইহিস সালাম একজন দীর্ঘদেহী, মাথায় কোকড়ানো চুলবিশিষ্ট, যেন শানুআ গোত্রের একজন লোক। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি ঈসা আলাইহিস সালামের দেখা পেয়েছি। এরপর তিনি তাঁর আকৃতি বর্ণনা করে বলেছেন, তিনি হলেন মাঝারি গড়নের গৌর বর্ণবিশিষ্ট, যেন তিনি এই মাত্র হাম্মামখানা হত বেরিয়ে এসেছেন। আর আমি ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকেও দেখেছি। তাঁর সন্তানদের মধ্যে আকৃতিতে আমিই তার বেশী সাদৃশ্যপূর্ণ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তারপর আমার সামনে দু’টি পেয়ালা আনা হল। একটিতে দুধ, অপরটিতে শরাব। আমাকে বলা হলো, আপনি যেটি ইচ্ছা গ্রহণ করতে পারেন। আমি দুধের পেয়ালাটি গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। তখন আমাকে বলা হলো, আপনি ফিত্রাত বা স্বাভাবিকেই গ্রহণ করে নিয়েছেন। দেখুন! আপনি যদি শরাব গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। [বুখারী, হাদীস নং ৩৪৩৭।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের হাশর ময়দানে খালি পা, বিবস্ত্র এবং খাতনাবিহীন অবস্তায় উপস্থিত করা হবে। এরপর তিনি (এ কথার সমর্থনে) পবিত্র কুরআনের আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন, “যে ভাবে আমি প্রথমে সৃষ্টির সুচনা করেছিলাম, সেভাবে পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার প্রতিশ্রুতি। এর বাস্তবায়ন আমি করবই”। [আম্বিয়া : ১০৪] আর কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যাকে কাপর পরানো হবে তিনি হবেন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম। আর (সে দিন) আমার অনুসারীদের মধ্য হতে কয়েকজনকে পাকড়াও করে বাম দিকে অর্থাৎ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে । তখন আমি বলব, এরা তো আমার অনুসারী, এরা তো আমার অনুসারী! এ সময় আল্লাহ্বলবেন, যখন আপনি এদের থেকে বিদায় নেন, তখন তারা পূর্ব ধর্মে ফিরে যায়। কাজেই তারা আপনার সাহাবী নয়। তখন আল্লাহ্র নেক বান্দা ঈসা আলাইহিস সালাম যেমন বলেছিলেন; তেমন আমি বলব, “হে আল্লাহ্! আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিন আমি ছিলাম তাদের অবস্থার পর্যবেক্ষক। আপনি পরক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়”। [বাকারা: ১২৯] [বুখারী, হাদীস নং ৩৩৪৯।]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর স্ত্রী সারা’কে নিয়ে হিজরত করলেন এবং এমন এক জনপদে প্রবেশ করলেন, যেখানে এক বাদশাহ ছিল, অথবা বললেন, এক অত্যাচারী শাসক ছিল। তাকে বলা হলো যে, ইবরাহীম (নামক এক ব্যক্তি) এক পরমা সুন্দরী নারীকে নিয়ে (আমাদের এখানে) প্রবেশ করেছে। সে তখন তাঁর কাছে লোক পাঠিয়ে জিজ্ঞাসা করল, হে ইবরাহীম, তোমার সাথে এ নারী কে? তিনি বললেন, আমার বোন। তারপর তিনি সারা’র কাছে ফিরে এসে বললেন, তুমি আমার কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন করোনা। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম. দুনিয়াতে (এখন) তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ মুমিন নেই। সুতরাং আমি ও তুমি দ্বীনী ভাই-বোন। এরপর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম (বাদশাহর নির্দেশে) সারা’কে বাদশাহর কাছ পাঠিয়ে দিলেন। বাদশাহ তাঁর দিকে অগ্রসর হল। সারা উযু করে সালাত আদায়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং এ দুআ করলেন, হে মহান আল্লাহ্ তা’আলা, আমিও তোমার উপর এবং তোমার রাসূলের উপর ঈমান এনেছি এবং আমার স্বামী ছাড়া সকল থেকে আমার লজ্জাস্থানের সংরক্ষন করেছি। তুমি এই কাফিরকে আমার উপর ক্ষমতা দিওনা। তখন বাদশাহ বেহুঁশ হয়ে পড়ে মাটিতে পায়ের আঘাত করতে লাগল। তখন সারা বললেন, আয় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন, এ যদি মারা যায়, তবে লোকে বলবে, স্ত্রীলোকটি একে হত্যা করেছে। তখন সে সংজ্ঞা ফিরে পেল। এভাবে দুইবার বা তিনবারের পর বাদশাহ বলল, মহান আল্লাহ্ তা’আলার কসম, তোমরা আমার নিকট এক শয়তানকে পাঠিয়েছ। একে ইবরাহীমের কাছে ফিরিয়ে দাও এবং তার জন্য হাজেরাকে হাদীয়া স্বরুপ দান কর। সারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিকট ফিরে এসে বললেন, আপনি জানেন কি, মহান আল্লাহ্ তা’আলা কাফিরকে লজ্জিত ও নিরাশ করেছেন এবং সে এক বাঁদি হাদীয়া হিসাবে দেয়। [বুখারী, হাদীস নং ২২১৭।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তিনবার ব্যতীত কোনো মিথ্যা কথা বলেন নি। অত্যাচারী বাদশাহর দেশে তাকে যেতে হয়েছিল এবং তার সাথে ‘সারা’ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ছিলেন। এরপর রাবী পূর্ণ হাদীস বর্ণনা করেন। (সেই বাদশাহ) হাজেরাকে তাঁর সেবার জন্য তাঁকে দান করেন। তিনি ফিরে এসে বললেন, আলস্নাহ্ কাফের থেকে আমাকে নিরাপত্তা দান করেছেন এবং আমার খেদমতের জন্য আজেরা (হাজেরা)-কে দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘‘হে আকাশের পানির সমত্মানগণ (কুরাইশ)! এ হাজেরাই তোমাদের মা।’’ [বুখারী, হাদীস নং ৫০৮৪।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা কা’বা ঘরে প্রবেশ করলেন। সেখানে তিনি ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম ও মারইয়ামের ছবি দেখতে পেলেন। তখন তিনি বললেন, তাদের (কুরাইশদের) কি হল? অথচ তারা তো শুনতে পেয়েছে, যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকবে, সে ঘরে ফিরিশতাগণ প্রবেশ করেন না। এ যে ইব্রাহীমের ছবি বানানো হয়েছে, (ভাগ্য নিরধারক জুয়ার তীর নিক্ষেপরত অবস্থায়) তিনি কেন ভাগ্য নির্ধারক তীর নিক্ষেপ করবেন! [বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫১।]
ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা’বা ঘরে ছবিসমূহ দেকতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তাঁর নির্দেশ তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। আর তিনি দেখতে পেলেন, ইব্রাহীম এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালামের হাতে ভাগ্য নিরধারণের তীর। তখন তিনি বললেন, আল্লাহ তাদের (কুরাইশদের) অপর লানত বর্ষণ করুক। আল্লাহ্র কসম, তারা দু’জন কখনও ভাগ্য নির্ধারক তীর করেন নি। [বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫২।]
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের দিন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পিতা আযরের দেখা পাবেন। আযরের মুখমণ্ডল কালিমা এবং ধুলাবালি থাকবে। তখন ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম তাকে বলবেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। এরপর ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম (আল্লাহ্র কাছে) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহমর থকে বঞ্চিত হওয়ার থেকে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইব্রাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নিচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার স্থানে সরবশরীরে রক্তমাখা আক্তি জানোয়ার পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। [বুখারী, হাদীস নং ৩৩৫০।]
আবু সাঈদ, মাওলা মাহরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তারা মদীনায় কষ্ট ও দুঃখে পতিত হন। তিনি আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর নিকট উপস্হিত হয়ে তাঁকে বললেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যনা অনেক এবং আমরা দুঃখ দুর্দশার সমুঙ্খীন হয়েছি। তাই আমি আমার পবিবারকে কোনো শস্য শ্যামল এলাকায় স্থানান্তরের মনস্হ করেছি। আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, তা করো না বরং মদীনাকে আকড়ে থাক। কারণ, একদা আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে বের হলাম, আমার মনে হয়, তিনি এও বলেছেন যে এবং উসফান পর্যন্ত পৌছলেন। এখানে তিনি কয়েক রাত অবস্থান করলেন। লোকেরা বলল, আল্লাহর কসম! আমরা এখানে অযথা সময় নষ্ট করছি। অথচ আমাদের পরিবার পরিজন আমাদের পশ্চাতে নিরাপত্তাহীন অবস্থায় রয়েছে এবং আমরা তাদের (নিরাপত্তার) ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। একথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পৌছলে তিনি বলেন, কি ব্যাপার, তোমাদের একথা আমার নিকটে পৌঁছেছে। রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কথাটা কিভাবে পূর্বব্যক্ত করেছেন তা আমার মনে নেই। সেই সত্তার নামে শপথ অথবা সেই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য আমি মনস্হ করেছি, অথবা যদি তোমরা চাও রাবী বলেন, আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু কোনটি বলেছেন, তা আমার সঠিক মনে নাই। তবে আমি নিশ্চিত আমার উষ্ট্রীকে অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ দিব এবং মদীনায় পৌছা পর্যন্ত তার একটি গিটও খুলব না। (যাত্রা বিরতি করব না)। তারপর তিনি বললেন, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং তা পবিত্র ও সন্মানিত হয়েছে। আর আমি মদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম যা দুই পাহাড়ের (আইর ও উহুদ) মধ্যস্হলে অবস্হিত। অতএব এখানে রক্তপাত করা যাবে না, এখানে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে অস্ত্রবহন করা যাবে না এবং পশু খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্য ব্যতীত গাছপাথর পাতাও পাড়া যাবে না। হে আল্লাহ! আমাদের এই শহরে বরকত দান করুন হে আল্লাহ! আমাদের সা’- এ বকরত দান করুন। হে আল্লাহ! আমাদের মুদ্দ-এ বরকত দান করুন। হে আল্লাহ! বরকতের সাথে আমাদের আরো দুটি বরকত দান করুন। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! মদীনার এমন কোনো প্রবেশ পথ বা গিরি সংকট নেই যেখানে তোমাদের মদীনায় ফিরে আসা পর্যন্ত দু-জন করে ফিরিশতা পাহারায় নিযুক্ত নেই। পুনরায় তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে বললেন, “তোমরা রওনা হও।” অতএব আমরা রওনা হলাম এবং মদীনায় এসে পৌছলাম । সেই সত্তার শপথ যার নামে আমরা শপথ করি অথবা যার নামে শপথ করা হয়- হাম্মাদ তার উধর্বতন রাবী কোনটি বলেছেন সে সমন্ধে সন্দেহে পড়েছেন। আমরা মদীনায় প্রবেশ করে বাহনের পিঠের হাওদা তখনও খুলিনি ইত্যাবসরে আবদুল্লাহ ইবন গাতফান গোত্রের লোকেরা আমাদের উপর অতর্কিতে আক্রমণ করে, অথচ এরূপ কিছু করার দুঃসাহস তাদের হয় নি। [মুসলিম, হাদীস নং ১৩৭৪।]
জাবির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কার হারাম নির্ধারণ করেছেন, আর আমি মদীনাকে হারাম বলে ঘোষণা করছি- এর দুই প্রান্তের কঙ্করময় মাঠের মধ্যবর্তী অংশকে। অতএব এখানকার কোনো কাটাযূক্ত গাছও কাটা যাবে না এবং এখানকার জীবজন্তুও শিকার করা যাবে না। [মুসলিম, ১৩৬২।]
আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, মদীনার দুই প্রাস্তের প্রস্তরময় ভূমির মধ্যবর্তী স্থানকে আমি হারাম ঘোষণা করছি, যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মক্কাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। (রাবী) আবদুর রহমান বলেন, অতঃপর আবু সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু যদি আমাদের কারও হাতে পাখি দেখতে পেতেন তবে তিনি তার হাত থেকে পাখিকে মুক্ত করে ছেড়ে দিতেন। [মুসলিম, ১৩৭৪।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/431/56
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।