মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
নবী মুহাম্মদ সা. এর আগমনের প্রেক্ষাপট, উদ্দেশ্য, দা‘ওয়াতের পদ্ধতি ও কৌশল
লেখকঃ ড. মো: আবদুল কাদের
৫
২. মূর্তিপূজা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/470/5
আরবের মুশরিকদের বিভিন্ন গোত্র বিভিন্ন দেব-দেবীর উপাসনা করত। তারা গাছ, পাথর ও মাটি দিয়ে বিভিন্ন মানুষ বা প্রাণীর ছবি তৈরী করত। মূর্তির সাথে তাদের এক ধরনের ভালবাসা জন্মে গিয়েছিল। বনু খোজা‘আ গোত্রের সরদার আমর ইবনে লোহাই নামক এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম আরবদের মধ্যে মূর্তির প্রচলন করেছিলেন। [সর্বপ্রথম ‘কাওমে নূহ’ মূর্তিপূজার প্রচলন করেছিল। তারা ওয়াদ, সুত্তয়া, ইয়াগুছ, ইয়া‘উক ও নসর নামক মূর্তির পূজা করত। এ মর্মে কুরআনে এসেছে ﴿وَقَالُواْ لَا تَذَرُنَّ ءَالِهَتَكُمۡ وَلَا تَذَرُنَّ وَدّٗا وَلَا سُوَاعٗا وَلَا يَغُوثَ وَيَعُوقَ وَنَسۡرٗا ٢٣﴾ [ نوح : ٢٣ ] ‘‘তারা বলল, তোমরা ছাড়বে না তোমাদের উপাস্যদের এবং তোমরা ওয়াদ, সূওয়া, ইয়াগুছ, ইয়া‘উক ও নসরের উপাসনা পরিত্যাগ করবে না।’’ আল-কুরআন, সূরা নূহ : ২৩।ওয়াদ ছিল ‘কালব’ গোত্রের দেবতা, ‘সুওয়া’ ‘হুযাইল’ গোত্রের, ‘ইয়াগুছ’ ‘মায্যাহ’ গোত্রের, ‘ইয়া‘উক’ ইয়ামেনের ‘হামদান’ গোত্রের এবং ‘নাসর’ মীনা অঞ্চলের ‘হামীর’ গোত্রের দেবতা ছিল। (ড. জামীল আব্দুল্লাহ আল-মিসরী, তারিখুদ দা‘ওয়াহ আল-ইসলামিয়্যাহ ফি জামানির রাসূল ওয়াল খোলাফায়ে রাশেদীন, (মদীনা মুনওয়ারা : মাকতাবাতুদ দার, ১৯৮৭ খৃ.), পৃ. ৩১।] অবশ্য তার পূর্বেই নূহ আলাইহিস সালাম-এর সময়ে সর্বপ্রথম মূর্তিপূজার সূচনা হয়। [এ মর্মে পবিত্র কুরআনে এসেছে ﴿ أَفَرَءَيۡتُمُ ٱللَّٰتَ وَٱلۡعُزَّىٰ ١٩ وَمَنَوٰةَ ٱلثَّالِثَةَ ٱلۡأُخۡرَىٰٓ ٢٠ ﴾ [ النجم : ١٩، ٢٠ ] ‘‘তোমরা কি ভেবে দেখছো ‘লা’ত’ ও ‘ওয্যা’ সম্পর্কে এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্পর্কে ?’’ আল-কুরআন, সূরা আন্ নাজম : ১৯-২০।লাত: চারকোণ বিশিষ্ট একটি পাথরের মূর্তি, যার চতুর্পার্শে আরবরা তা’ওয়াফ করতো। এটি তায়েফে স্থাপন করা হয়েছিল। (আল্লামা ছফিউর রহমান মুবারকপূরী, আর রাহীকুল মাখতুম, অনু: খাদিজা আক্তার রেজায়ী, (ঢাকা: আল-কোরআন একাডেমী লন্ডন, বাংলাদেশ সেন্টার, ৯ম সংস্করণ, ২০০৩), পৃ. ৫১)।মানাত : কালো পাথরে নির্মিত মূর্তি, যা লোহিত সাগরের উপকূলে কোদাইদ এলাকার মুসাল্লাল নামক জায়গায় স্থাপন করা হয়েছিল। (প্রাগুক্ত)ওয্যা: ওয্যা ছিল আরাফাতের নিকটবর্তী ‘নাখলা’ নামক স্থানের মূর্তি। কুরাইশদের নিকট এ মূর্তিটি সর্বাধিক সন্মানিত ছিল।] তাদের দেবতাদের মধ্যে ‘লাত’ ‘মানাত’ ও ‘ওয্যা’ ছিল প্রসিদ্ধ ও প্রধান মূর্তি। এছাড়াও তারা ‘ইসাফ’ ও ‘নায়েলা’ নামক মূর্তিদ্বয়েরও উপাসনা করত। [‘ইসাফ’ ছিল কা‘বাঘর সংলগ্ন। আর ‘নায়েলা’ ছিল যমযমের কাছে। কুরায়শরা কা‘বা সংলগ্ন মূর্তিটাকেও অপর মূর্তি কাছে সরিয়ে দেয়। এটা ছিল সে জায়গা যেখানে আরবরা কুরবানী করত। (সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, নবীয়ে রহমত, অনু: আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী, (ঢাকা ও চট্টগ্রাম : মজলিস নাশইরাত-ই-ইসলাম, ১৯৯৭ খৃ), পৃ. ১১১।] এসব মূর্তির অনুসরণে স্বল্প সময়ের মধ্যে হেজাজের সর্বত্র শির্কের আধিক্য এবং মূর্তি স্থাপনের হিড়িক পড়ে যায়। প্রত্যেক গোত্র পর্যায়ক্রমে মক্কার ঘরে ঘরে মূর্তি স্থাপন করে। পবিত্র কা‘বা গৃহেই ৩৬০ টি দেবতার মূর্তি ছিল। ৩৬০ দিনে হয় এক বছর। তারা প্রত্যেক দিনের জন্য ভিন্ন ভিন্ন নির্দিষ্ট মা‘বুদের পূজা করত। [তাহের সূরাটী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫১৫।] মক্কার অলিতে-গলিতে মূর্তি ফেরী করে বিক্রি করা হত। দেহাতী লোকেরা এটা পছন্দ করত, খরিদ করত এবং এর দ্বারা আপন ঘরের সৌন্দর্য্য বর্ধন করত। [সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১১।] এছাড়াও পৌত্তলিকরা বিভিন্নভাবে উল্লেখিত মূর্তির উপাসনা করত। যেমন,
ক. তারা মূর্তির সামনে নিবেদিত চিত্তে বসে থাকত এবং তাদের কাছে আশ্রয় পার্থনা করত। তাদেরকে জোরে জোরে ডাকত এবং প্রয়োজনপূরণ, মুশকিল আসান বা সমস্যার সমাধানের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করত।
খ. মূর্তিগুলোর উদ্দেশ্যে হজ্ব ও তওয়াফ করতো। তাদের সামনে অনুনয় বিনয় এবং সিজদায় উপনীত হতো।
গ. মূর্তির নামে নযর-নেওয়ায ও কুরবানী করত। এমর্মে কুরআনে এসেছে, ‘‘তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে সেসব জন্তু যা আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গ করা হয়।’’ [আল-কুরআন, সূরা আল-মায়িদা : ৩।]
ঘ. মূর্তির সন্তুষ্টি লাভের জন্য পানাহারের জিনিস, উৎপাদিত ফসল এবং চতুষ্পদ জন্তুর একাংশ মূর্তির জন্য তারা পৃথক করে রাখতো। পাশাপাশি আল্লাহর জন্যেও একটা অংশ রাখতো। পরে বিভিন্ন অবস্থার প্রেক্ষিতে আল্লাহর জন্য রাখা অংশ মূর্তির কাছে পেশ করতো। কিন্তু মূর্তির জন্য রাখা অংশ কোন অবস্থায়ই আল্লাহর কাছে পেশ করতো না। [আল্লাহ বলেন, ﴿وَجَعَلُواْ لِلَّهِ مِمَّا ذَرَأَ مِنَ ٱلۡحَرۡثِ وَٱلۡأَنۡعَٰمِ نَصِيبٗا فَقَالُواْ هَٰذَا لِلَّهِ بِزَعۡمِهِمۡ وَهَٰذَا لِشُرَكَآئِنَاۖ فَمَا كَانَ لِشُرَكَآئِهِمۡ فَلَا يَصِلُ إِلَى ٱللَّهِۖ وَمَا كَانَ لِلَّهِ فَهُوَ يَصِلُ إِلَىٰ شُرَكَآئِهِمۡۗ سَآءَ مَا يَحۡكُمُونَ١٣٦﴾ [ الانعام : ١٣٦ ] ‘‘আল্লাহ যেসব শষ্য ও পশু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তারা আল্লাহর জন্যে একাংশ নির্দিষ্ট করে এবং নিজেদের ধারণা মতে বলে, এটা আল্লাহর জন্যে এবং এটা আমাদের দেবতাদের জন্যে। যা তাদের দেবতাদের অংশ তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। কিন্তু যা আল্লাহর অংশ তা তাদের দেবতাদের কাছে পৌঁছায়। তারা যা মীমাংসা করে তা বড়ই নিকৃষ্ট।’’ আল-কুরআন, সূরা আল-আন‘আম : ১৩৬।]
এছাড়াও তারা বিভিন্ন মূর্তির নামে পশু মানত করতো। সর্বপ্রথম মূর্তির নামে পশু ছেড়েছিলেন, ‘আমর ইবন লোহাই। [ইমাম বুখারী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৪৯৯।] তারা যেসব আচার অনুষ্ঠান পালন করতো এজন্য যে মূর্তি তাদের আল্লাহর নৈকট্য লাভে সক্ষম করে দেবে এবং আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। [আল-কুরআন, সূরা ইউনুস : ১৮।] তাদের এ আকীদা বিশ্বাসের সত্যায়ন করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘ওরা আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করে তা তাদের ক্ষতিও করে না, উপকারও করে না। ওরা বলে এগুলো আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশকারী। [ইবন হিশাম, সীরাতুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১ম খন্ড, (ঢাকা: ই.ফা.বা. ১৯৯৪ ইং), পৃ. ৬৫।] তারা বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন মূর্তির ধারণা পোষণ করে পূজা করত। যখন কোন সফরের ইচ্ছা করত, তখন তারা আরোহন করার সময় মূর্তিটি স্পর্শ করত। সফরে রওয়ানা হওয়ার পূর্বে এটা ছিল তাদের শেষ কাজ এবং ফিরে এসেও ঘরে প্রবেশের পূর্বে এটা ছিল তাদের সর্বপ্রথম কাজ।
নৈতিক ও চারিত্রিক দিক থেকে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। তাদের মাঝে জুয়া খেলা ও মদপানের ব্যাপক প্রচলন ছিল। বিলাসিতা, ইন্দ্রিয়পূজা, ও নাচগানের আসর জমাত অধিক হারে এবং এতে মদপানের ছড়াছড়ি চলত। বহু রকমের অশ্লীলতা, জুলুম-নির্যাতন, অপরের অধিকার হরণ, বে-ইনসাফী ও অবৈধ উপার্জনকে তাদের সমাজে খারাপ চোখে দেখা হত না। [সাইয়্যেদ আবুল হাসান আলী নদভী, প্রাগুক্ত, পৃ. ১১০।] মক্কার মূল ও প্রাচীন বাসিন্দা জাফর ইবন আবি তালিব আবিসিনিয়া অধিপতি নাজ্জাসীর সামনে তৎকালীন আরব সমাজের ও জাহিলী কর্মকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছিলেন,‘‘ রাজন! আমরা ছিলাম জাহিলিয়াতের ঘোর তমাসায় নিমজ্বিত একটি জাতি। আমরা মূর্তিপূজা করতাম, মৃত জীব ভক্ষন করতাম, সর্বপ্রকার নির্লজ্জ কাজ করতাম, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করতাম, প্রতিবেশীর সাথে খারাপ আচরণ করতাম এবং শক্তিশালী ও সবল লোকেরা দুর্বলকে শোষন করতাম।’’ [ইবন হিশাম, প্রাগুক্ত, ১ম খন্ড, পৃ. ৩৩৬।]
উলঙ্গপনা ও বেহায়াপনায় তাদের যথেষ্ট খ্যাতি ছিল। কা‘বাঘর তাওয়াফের সময় পুরুষেরা উলঙ্গ হয়ে তওয়াফ করতো এবং মহিলারা সব পোষাক খুলে ফেলে ছোট জামা পরিধান করে তাওয়াফ করতো। তাওয়াফের সময় তারা অশ্লিল কবিতা আবৃত্তি করতো। কবিতাটির অনুবাদ নিম্নরূপ:
‘‘লজ্জাস্থানের কিছুটা বা সবটুকু খুলে যাবে আজ।
যেটুকু যাবে দেখা ভাবব না অবৈধ কাজ।’’ [আল্লামা ছফিউর রহমান মোবারকপূরী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৫৬।]
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাবকালে সমগ্র পৃথিবীতে নারী জাতির অবস্থা ছিল অতি শোচনীয় ও মর্মান্তিক। আরব সমাজেও নারীর অবস্থা এর ব্যতিক্রম ছিল না। নারী তার দেহের রক্ত দিয়ে মানব বংশধারা অব্যাহত রাখলেও তার সেই অবদানের কোন স্বীকৃতি ছিল না। সে পিতা, ভ্রাতা, স্বামী সকলের দ্বারা নির্যাতিত হত। যুদ্ধবন্দী হলে হাটে-বাজারে দাসীরূপে বিক্রয় হত, চতুস্পদ জন্তুর ন্যায়। আরব সমাজে কন্যা সন্তানের জন্মই ছিল এক অশুভ লক্ষণ, সম্মান হানিকর ও আভিজাত্যে কুঠারাঘাত তুল্য। তাই কন্যার জন্ম গ্রহণের সাথে সাথে তার জন্মদাতা লজ্জা ও অপমানে মুখ লুকিয়ে বেড়াত এবং হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে তাকে জীবন্ত মাটি চাপা দিতেও কুন্ঠাবোধ করত না। পবিত্র কুরআনে এ চিত্র খুব সুন্দর ভাবে বিধৃত হয়েছে।
‘‘যখন তাদের কাউকেও কন্যার সুসংবাদ প্রদান করা হয়, তখন তাদের মুখমণ্ডল মলিন হয়ে যায় এবং হৃদয় দগ্ধ হতে থাকে। যে বস্তুর সুসংবাদ তাকে দেয়া হয়েছিল তার লজ্জায় সে নিজেকে কওম থেকে লুকিয়ে চলে এবং মনে মনে চিন্তা করে যে, ওকে কি অপমানের সাথে গ্রহণ করবে না কি তাকে মাটির মধ্যে পুতে রাখবে?’’ [আল-কুরআন, সূরা আন্ নাহল : ৫৮-৫৯।]
তৎকালীন সময়ে অগণিত নিষ্পাপ শিশুর বিলাপ আরবের মরুবক্ষে মিশে আছে তার হিসেব কে দেবে?
এ ধরনের কত যে ঘৃণ্য ও জঘন্য প্রথা তাদের মধ্যে বিরাজমান ছিল তার কোন হিসেব নেই। পবিত্র কুরআনে সে দিকে ইঙ্গিত করেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে জিজ্ঞাসা করা হবে কি অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল ?’’ [পবিত্র কুরআনে এসেছে, ﴿ وَإِذَا ٱلۡمَوۡءُۥدَةُ سُئِلَتۡ ٨ بِأَيِّ ذَنۢبٖ قُتِلَتۡ ٩ ﴾ [ التكوير : ٨، ٩ ] আল-কুরআন, সূরা আত্ তাকভীর : ৮-৯।]
বিবাহের সময় তাদের মাতামতের কোন গুরুত্বই ছিল না। একজন পুরুষ অসংখ্য নারীকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারত। [এ মর্মে হাদীসে এসেছে, قال ابن عميرة الأسدي، أسلمت وعندي ثمان نسوة قال فذكره ذلك للنبي صلى الله عليه وسلم فقال النبي صلى الله عليه وسلم : «اختر منهن أربعة» ‘‘ইবন উমায়রা আল-আসাদী (রা.) বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণ করার সময় আমার আটজন স্ত্রী ছিল। বিষয়টি আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তাদের মধ্য থেকে চারজনকে বেছে নাও।’’(আবু দাউদ, প্রাগুক্ত, কিতাবুত তালাক, বাবু ফি মান আসলামা ওয়া ইনদাহু নিছায়ান আকছারা মিন আরবা ‘আও উখতানে, হাদীস নং- ২২৪১)।] একইভাবে তালাকের ব্যাপারে কোন প্রতিবন্ধকতা ছিল না। পুরুষরা যখনই ইচ্ছা করত যতবার ইচ্ছা তালাক দিত এবং ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই তালাক প্রত্যাহার করত। [হাদীসে বর্ণিত আছে, «إن الرجل كان إذا طلق امرأته فهو أحق برجعتها و إن طلقها ثلاثاً» ‘‘কোন ব্যক্তি নিজ স্ত্রীকে তালাক প্রদানের পর তা প্রত্যাহার করার অধিকারী হতো, যদিও সে তাকে তিন তালাক দিত।’’(আবু দাউদ, প্রাগুক্ত, বাবু ফী নাসখিল মুরাজাআ বা‘দাত তাতলীকাতিছ ছালাছ, হাদীস নং- ২১৯৫)]
স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী নিজ স্বামীর ওয়ারিশদের উত্তরাধিকারী সম্পত্তিতে পরিণত হত। তাদের কাউকে কেউ ইচ্ছা করলে বিবাহ করত আথবা অপরের নিকট বিবাহ দিত অথবা আদৌ বিবাহ না দেওয়ার ব্যাপারেও তাদের ইখতিয়ার ছিল, যাতে স্বামী প্রদত্ত তার সম্পদ অপরের হস্তগত হতে না পারে। [সহীহ বুখারীতে এসেছে, ﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ لَا يَحِلُّ لَكُمۡ أَن تَرِثُواْ ٱلنِّسَآءَ كَرۡهٗاۖ وَلَا تَعۡضُلُوهُنَّ لِتَذۡهَبُواْ بِبَعۡضِ مَآ ءَاتَيۡتُمُوهُنَّ ١٩ ﴾ [ النساء : ١٩ ] ، قال عن ابن عباس كانوا إذا مات الرجل كان أولياؤه أحق لامرأته إن شاء بعضهم بزوجها و إن شاءوا لم يزوجها و هم أحق بها من أهلها فنزلت هذه الآية في ذلك . “ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, আল্লাহর বাণী ‘‘হে ঈমানদার লোক সকল! নারীদেরকে জবরদস্তিমূলক ভাবে উত্তরাধিকার গণ্য করা তোমাদের জন্য বৈধ নয়। তোমরা তাদেরকে যা দিয়েছ তা হতে কিছু আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখ না।’’ সূরা আন্ নিসা : ১৯ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার ওয়ারিসগণ তার স্ত্রীর উপর কর্তৃত্বশীল হতো। কেউ ইচ্ছা করলে তাকে বিবাহ করত অথবা অন্যত্রে বিবাহ দিত অথবা বিবাহ না দিয়ে আটকিয়ে রাখত। তার পরিবারের লোকজনের তুলনায় তারা হতো তার উপর কর্তৃত্বশীল। এ সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। (মুহাম্মদ ইবন ইসমাঈল, প্রাগুক্ত, তাফসীর সূরা আন্ নিসা, বাবু লা ইয়াহিল্লু লাকুম আন তারিছান নিসাআ কারহান, হাদীস নং- ৪৫৭৯)।]
মৃতের সম্পদে নারীর কোন উত্তরাধিকারী স্বত্ব স্বীকৃত ছিল না। [হাদিসে এসেছে: একদা ছাবিত ইবন কায়েস (রা.) এর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ছাবিত উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন তাঁর দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু ছাবিতের ভাই তার সমস্ত পরিত্যাক্ত সম্পত্তি দখল রে নিয়েছে। এ প্রেক্ষিতে মীরাসের আয়াত অবতীর্ণ হয়। (দ্র. আবু দাউদ, প্রাগুক্ত ফারাইদ, বাবু মা জা‘আ ফী মীরাছিস সুলব হাদীস নং-২৮৯১, ইমাম তিরমিযী, প্রাগুক্ত, ফারাইদ, বাবু মাজআ ফী মীরাযিল বনাত, হাদীস নং ২০৯২;অবশ্য তিরমিযীতে ছাবিতের স্থলে সাদ ইবনুর রবী (রা.)-এর উল্লেখ আছে)।] এমনিভাবে জাহেলী যুগে আরব সমাজে নারী ছিল অবহেলিত, লাঞ্চিত ও অধিকার বঞ্চিত। মূলত তাদের দীনী অনুভূতি তথা দীনে ইবরাহীমের থেকে দূরে সরে যাওয়ার কারণেই এ ধরনের ঘৃণ্য ও জঘণ্য কাজ আঞ্জাম দিতে সক্ষম ছিল।
এছাড়াও জাজিরাতুল আরবের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াহূদী, খৃষ্টান মাজুসিয়াত বা অগ্নিপূজক এবং সাবেয়ী মতবাদের ব্যাপক প্রচলন ছিল। দীনের ব্যপারে ইয়াহূদী ও খৃষ্টানরা বাড়াবাড়ি করত। ইয়াহূদীরা ওযাইর আলাইহিস সালাম ও খৃষ্টানরা ঈসা আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর পুত্র সাব্যস্ত করে। তাই তাদের ঈমান আনয়নের দাবী নিরর্থক। তারা পন্ডিত ও পুরোহিতদেরকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে এবং মরিয়মের পুত্রকেও। ফলে তারাও সমকালীন আরবে অন্যান্যদের ন্যায় শির্কে নিমজ্জিত ছিল। ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা আসার পরও তারা মতবিরোধ করত। তাদের চরিত্র নিরূপণ করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন,
‘‘ইয়াহূদীরা বলে, খৃষ্টানরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়, আবার খৃষ্টানরা বলে ইয়াহূদীরা কোন ভিত্তির উপরেই নয়, অথচ তারা কিতাব পাঠ করে। এমনিভাবে যারা মূর্খ তারাও ওদের মতই উক্তি করে। অতএব, আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মধ্যে ফয়সালা দিবেন। যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করেছিল।’’ [আল-কুরআন, সূরা আল-বাকারা : ১১৩।]
তারা তাদের পূর্ব পুরুষদের পদাংকের অন্ধ অনুসারী ছিল। যখন তাদের নিকট হেদায়েত বাণী আসত তখন তারা বলত ইতোপূর্বে আমরা আমাদের বাপ-দাদাদের পথ অনুসরণ করে চলেছি, এখনও তাদের অনুসরণ করে যাব। এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘‘আমি কি তাদেরকে কুরআনের পূর্বে কোন কিতাব দিয়েছি, যার ফলে তারা তাকে আকড়ে রেখেছে? বরং তারা বলে, আমরা আমাদের পূর্বপূরুষদেরকে পেয়েছি এক পথের পথিক এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করে পথপ্রাপ্ত।’’ [আল-কুরআন, সূরা যুখরুফ : ২১-২২।]
মক্কার পৌত্তলিকরা ভাগ্য পরীক্ষার জন্য ‘আযলাম’ [ أزلام শব্দটি زلم এর বহুবচন। ‘যালাম’ এমন তীরকে বলা হয়, যে তীরে পালক লাগানো থাকে না।] বা ফাল-এর তীর ব্যবহার করত। এ কাজের জন্য তাদের সাতটি তীর ছিল। তন্মধ্যে একটিতে نعم (হ্যাঁ) অপরটিতে لا (না) এবং অন্যগুলোতে অন্য শব্দ লিখিত ছিল। এ তীরগুলো কাবাগৃহের খাদেমের কাছে থাকত। কেউ নিজ ভাগ্য পরীক্ষা করতে চাইলে অথবা কোন কাজ করার পূর্বে তা উপকারী হবে না অপকারী, তা জানতে চাইলে সে কা‘বার খাদেমের কাছে পৌঁছে একশত মুদ্রা উপঢৌকন দিত। অতঃপর খাদেম তীর বের করে আনতেন, যদি তাতে হ্যাঁ লেখা থাকে তবে কাজটিকে উপকারী মনে করা হত। অন্যথায় তারা বুঝে নিত যে. কাজটি করা ঠিক হবে না। [মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী, প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৮।]
শুধু এ সকল কুসংস্কারে বিশ্বাস করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি বরং রিসালাত ও আখিরাতকেও তারা অস্বীকার করত। তাদের ধারণা ছিল যে, পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন, কালের প্রবাহেই মৃত্যু হয়। [ ﴿ وَقَالُواْ مَا هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا ٱلدُّنۡيَا نَمُوتُ وَنَحۡيَا وَمَا يُهۡلِكُنَآ إِلَّا ٱلدَّهۡرُۚ وَمَا لَهُم بِذَٰلِكَ مِنۡ عِلۡمٍۖ إِنۡ هُمۡ إِلَّا يَظُنُّونَ ٢٤ ﴾ [ الجاثية : ٢٤ ] আল-কুরআন, সূরা জাসিয়া : ২৪।] আর কোন মানব রাসূল হতে পারে না, এ ধারণা তাদেরকে রিসালাতে অবিশ্বাসী করার জন্য প্ররোচিত করত। [ ﴿ وَمَا مَنَعَ ٱلنَّاسَ أَن يُؤۡمِنُوٓاْ إِذۡ جَآءَهُمُ ٱلۡهُدَىٰٓ إِلَّآ أَن قَالُوٓاْ أَبَعَثَ ٱللَّهُ بَشَرٗا رَّسُولٗا ٩٤ ﴾ [ الاسراء : ٩٤ ] আল-কুরআন, সূরা বনী ইসরাঈল : ৯৪।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/470/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।