hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সৎব্যক্তিদের আসরসমূহ থেকে চার আসর

লেখকঃ শাইখ আহমদ আর-রুমী আল-হানাফী রহ.

৩৫
চতুর্থ আসর: (মূলগ্রন্থে তা আটান্নতম আসর) মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও তার জন্য প্রস্তুতির অপরিহার্যতা প্রসঙ্গে
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أكثروا ذكر هادم اللذات الموت » .

“তোমরা স্বাদ বিধ্বংসী মুত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর।” [ইবনু হাব্বান (৪/২৮১, ২৮২), হাদিস নং- ২৯৮১, ২৯৮২, ২৯৮৩, ২৯৮৪; জানাযা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মৃত্যুর স্মরণ প্রসঙ্গে ( فصل في ذكر الموت ); হাদিসটি আবূ সালমা সূত্রে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত। আর অপর এক বর্ণনার মধ্যে " الموت " শব্দটি অতিরিক্ত আছে। আর আলবানী ‘সহীহ আল-জামে‘’ ( صحيح الجامع ) –এর মধ্যে (২৬৪৮), হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, হাদিস নং- ১২১১ এবং তিনি তার সনদকে ইবনু ওহাব, ইবনু হাব্বান ও আল-বাযারের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।] এই হাদিসটি ‘মাসাবীহ’ ( المصابيح ) গ্রন্থের হাসান হাদিসের অন্তর্ভুক্ত, যা আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণনা করেছেন; তার অর্থ হল, মৃত্যু প্রতিটি স্বাদ ও রুচিকে ধ্বংস করে দেয়; সুতরাং তোমরা তার কথা বেশি বেশি স্মরণ কর; যাতে তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পার। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “তোমরা স্বাদ বিধ্বংসী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর” খুব সংক্ষিপ্ত একটি বাক্য, কিন্তু তিনি তাতে সকল উপদেশকে সন্নিবেশিত করেছেন। কেননা, সত্যিকার অর্থে যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে, তার উপর বর্তমানের স্বাদ-আহ্লাদ ও ভবিষ্যতের আকাঙ্খা শক্তি হ্রাস পায়; আর তা স্বাদ-আহ্লাদের কামনা-বাসনা থেকে তাকে বিমুখ করে দেয়; কিন্তু নিশ্চল প্রাণ ও অলস মন প্রয়োজন অনুভব করে উচ্চ আওয়াজ ও দীর্ঘ উপদেশের; তা না হলে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ كُلُّ نَفۡسٖ ذَآئِقَةُ ٱلۡمَوۡتِۗ ﴾ [ الانبياء : ٣٥ ]

[প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে] [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৩৫]

সাথে সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

« أكثروا ذكر هادم اللذات الموت »

(তোমরা স্বাদ বিধ্বংসী মুত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর) এর মধ্যে এমন উপদেশ রয়েছে, যার কথা শ্রবণকারী এবং তা প্রত্যক্ষকারীর জন্য তা-ই যথেষ্ট।

কারণ, মৃত্যুর স্মরণ এই নশ্বর পৃথিবীর প্রতি অনাগ্রহের চেতনাকে জাগ্রত করে এবং প্রতিটি মুহূর্তে স্থায়ী আবাসভূমি পরকালের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করে; কেননা, আলেমগণ বলেছেন: মৃত্যু শুধু অস্তিত্বহীন ও বিনাশকারী বস্তুই নয়, বরং তার কাজ হল শরীরের সাথে আত্মার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা এবং একটা থেকে অপরটার মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি করা; এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় পরিবর্তন করা এবং এক জগৎ থেকে আরেক জগতে স্থানান্তর করা; আর তা বড় আকারের বিপদ-মুসিবতগুলোর মধ্য থেকে অন্যতম মহামুসিবত, আল্লাহ তা‘আলা তাকে মুসিবত (বিপদ) বলেই নামকরণ করেছেন; তিনি বলেন:

﴿... فَأَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةُ ٱلۡمَوۡتِۚ ﴾ [ المائ‍دة : ١٠٦ ]

“ ... এবং তোমাদেরকে মৃত্যুর বিপদ পেয়ে বসে। ...” [সূরা আল-ময়েদা, আয়াত: ১০৬]

সুতরাং মৃত্যু হচ্ছে মহামুসিবত এবং তার চেয়ে বড় মুসিবত হল তার থেকে অন্যমনস্ক হওয়া, তার স্মরণ না করা ও তার ব্যাপারে চিন্তাভাবনার কমতি করা। নিশ্চয়ই এককভাবে তার মাঝেই শিক্ষা গ্রহণকারীর জন্য শিক্ষা রয়েছে।

ইমাম কুরতবী র. তাঁর ‘আত-তাযকিরা’ নামক গ্রন্থে বলেন: গোটা জাতি এই ব্যাপারে একমত যে, মৃত্যুর জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই এবং নেই কোনো নির্দিষ্ট ব্যাধি, বরং তা এরকমই, ব্যক্তি তার ব্যাপারে আতঙ্কগ্রস্ত থেকেই তার জন্য প্রস্তুত থাকবে; কিন্তু যার উপর দুনিয়ার মোহ বিজয় লাভ করবে এবং যে তার মোহে নিমগ্ন থাকবে, নিশ্চিতরূপেই সে মৃত্যুর স্মরণ থেকে অন্যমনস্ক হয়ে পড়বে এবং সে তাকে স্মরণ করবে না, বরং তার নিকট যখন তার আলোচনা করা হবে, তখন সে তা অপছন্দ করবে এবং স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে সেখান থেকে কেটে পড়বে; কারণ, তার হৃদয়ের মধ্যে দুনিয়া প্রেমের প্রবলতা এবং তার সংশ্লিষ্ট বস্তুসমূহ তার মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত থাকায় সে ঐ মৃত্যুর ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করা থেকে বিরত থাকে, যা দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করার একমাত্র কারণ এবং সে তার স্মরণ করাকে পছন্দ করে না; আর যদি তার কথা স্মরণ করেও তবে তা করে মৃত্যুর উপর ক্ষোভ ও দুঃখপ্রকাশ করার জন্য! আর তার নিন্দাবাদে সে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, অথচ মৃত্যুর এরকমের স্মরণ তাকে আল্লাহ তা‘আলার নিকট থেকে আরও দূরত্বে ঠেলে দেয়; কেননা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

« من كره لقاء الله كره الله لقاءه» .

“যে ব্যক্তি আল্লাহ সাক্ষাতকে অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করেন।” [বুখারী (১১/৩৬৪), হাদিস নং- ৬৫০৭; কোমলতা অধ্যায় ( كتاب الرقاق ), পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে পছন্দ করে, আল্লাহও সেই ব্যক্তির সাক্ষাতকে পছন্দ করেন ( باب من أحب لقاء الله أحب الله لقاءه ); মুসলিম (৪/২০৬৫), হাদিস নং- ২৬৮৩, যিকির অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাতকে পছন্দ করে, আল্লাহও সেই ব্যক্তির সাক্ষাতকে পছন্দ করেন ( باب من أحب لقاء الله أحب الله لقاءه ), হাদিসটি মারফু‘ সনদে কাতাদার সূত্রে আনাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি ‘উবাদা রা. থেকে বর্ণনা করেন।]

এতদসত্ত্বেও মৃত্যুকে স্মরণ করাটা তার জন্য কল্যাণকর; কারণ, মৃত্যুর স্মরণ তার নিয়ামতসমূহকে বিস্বাদ করে দেয় এবং তার নির্ভেজাল স্বাদকে অতিষ্ট করে দেয়। আর এমন বস্তু যা মানুষের স্বাদকে বিস্বাদে পরিণত করে এবং কামনা-বাসনাকে সংকুচিত করে, তা তার সৌভাগ্যের অন্যতম কারণ; আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« أكثروا ذكر هادم اللذات الموت » .

“তোমরা স্বাদ বিধ্বংসী মুত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ কর।” [ইবনু হাব্বান (৪/২৮১, ২৮২), হাদিস নং- ২৯৮১, ২৯৮২, ২৯৮৩, ২৯৮৪; জানাযা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: মৃত্যুর স্মরণ প্রসঙ্গে ( فصل في ذكر الموت ); হাদিসটি আবূ সালমা সূত্রে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত। আর অপর এক বর্ণনার মধ্যে " الموت " শব্দটি অতিরিক্ত আছে। আর আলবানী ‘সহীহ আল-জামে‘’ ( صحيح الجامع ) –এর মধ্যে (২৬৪৮) হাদিসটিকে হাসান বলেছেন, হাদিস নং- ১২১১ এবং তিনি তার সনদকে ইবনু ওহাব, ইবনু হাব্বান ও আল-বাযারের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন।] কারণ, মানুষ সার্বক্ষণিক দু’টি অবস্থার মধ্যে বিরাজমান থাকে; হয় সে সঙ্কটময় ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে থাকে, নতুবা প্রাচুর্য ও নিয়ামতের মধ্যে অবস্থান করে; সুতরাং সে যদি সঙ্কটময় ও কষ্টকর অবস্থার মধ্যে থাকে, তাহলে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা তার জন্য সহজ হয়, কেননা সে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, প্রতিষ্ঠিত হতে পারছেনা; আর যদি সে প্রাচুর্য ও নিয়ামতের মধ্যে অবস্থান করে, তাহলে তার নিকট মৃত্যু খুবই জটিল; সুতরাং মৃত্যুর স্মরণ তাকে প্রতারণা করা ও প্রাচুর্যের আরাম-আয়েশ থেকে বিরত রাখবে; যেমনটি হাদিসে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

« كفى بالموت واعظا » .

“উপদেশ দাতা হিসেবে মৃত্যুই যথেষ্ট” [আবূ দারদা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র বক্তব্য থেকে ইবনু ‘আসাকীর এই বর্ণনাটি করেছেন; এটাকে হাদিসে মারফু‘ হিসেবে সহীহভাবে আমি অবগত নই। কেবলমাত্র তাবারানী অত্যন্ত দুর্বল সনদে তা মারফু বর্ণনা করেছেন। অবশ্য মাওকুফ বর্ণনায় তা ইবন মাসউদ, আম্মার ইবন ইয়াসের, আনাস প্রমুখ সাহাবী থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে। [সম্পাদক]]!!

আবু আলী আদ-দাক্কাক বলেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে, সে ব্যক্তি তিনটি জিনিস দ্বারা সম্মানিত হবে: দ্রুত তাওবা করা, মনের তৃপ্তি অনুভব করা এবং ইবাদতে প্রফুল্লতা অর্জিত হওয়া। আর যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা ভুলে যাবে, তাকে তিনটি জিনিস দ্বারা শাস্তি দেওয়া হবে: তাওবা করার ক্ষেত্রে গড়িমাসি করা, দুনিয়ার প্রতি লোভ এবং ইবাদতের ক্ষেত্রে অবহেলা।

উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন: “হে আল্লাহর রাসূল! শহীদদের সাথে কোনো ব্যক্তির হাশর হবে কি? জবাবে তিনি বললেন: হ্যাঁ, যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে বিশ বার মৃত্যুর কথা স্মরণ করবে।” [এই বর্ণনাটি তাবারানী তার মু‘জামুল আওসাত (৭৬৭৬) এর কাছাকাছি বর্ণনা।]

আর এই মর্যাদা লাভের কারণ হল, মৃত্যুর স্মরণ দুনিয়াকে অস্থায়ী আবাস বলে ভাবতে এবং আখিরাতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বাধ্য করে। আর তার (মৃত্যুর) ব্যাপারে অবহেলা তাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও তার মজায় ডুবে থাকার দিকে এবং আখিরাতকে ভুলে থাকতে আহ্বান করে। অথচ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমাকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন:

«كن في الدنيا كأنك غريب أو عابر سبيل» . ( أخرجه الترمذي و ابن ماجه ) .

“তুমি দুনিয়ায় এমনভাবে বসবাস কর, মনে হবে তুমি যেন অপরিচিত অথবা মুসাফির।” [তিরমিযী (৪/৫৬৭), হাদিস নং- ২৩৩৩, অধ্যায়: দুনিয়ার মোহত্যাগ ( كتاب الزهد عن رسول الله صلى الله عليه و سلم ), পরিচ্ছেদ: আশা-আকাঙ্খা সীমিতকরণ প্রসঙ্গে যেসব বর্ণনা এসেছে ( باب ما جاء في قصر الأمل ); ইবনু মাজাহ (২/১৩৭৮), হাদিস নং- ৪১১৪, অধ্যায়: দুনিয়ার মোহত্যাগ ( كتاب الزهد ), পরিচ্ছেদ: দুনিয়ার উপমা প্রসঙ্গে ( باب مثل الدنيا ); আহমদ (২/২৪), হাদিসটি মুজাহিদের সূত্রে আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত। আর আলবানী ‘সহীহ আল-জামে‘’ ( صحيح الجامع ) –এর মধ্যে (২/৮৪০) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, হাদিস নং- ৪৫৭৯] অতএব নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেন তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন: নিশ্চয়ই তুমি মুসাফির, অচিরেই তুমি পরকালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে; সুতরাং দুনিয়াকে আঁকড়ে ধরো না এবং তার প্রাচুর্য ও আসবাবপত্রের দিকে ঝুঁকে পড়বে না। আর তোমার সুস্থতাকে গনীমত হিসেবে গ্রহণ কর এবং তাকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্যের কাজে ব্যবহার কর; আর তুমি তোমার জীবনে এমন কিছু পেশ করার চেষ্টা কর, পুরস্কার দিবসের দিন যার দ্বারা তোমার চক্ষু শীতল হবে; আর এটা হাসিল হবে শুধু মৃত্যুর কথা স্মরণ করার দ্বারা। সুতরাং এ জন্যই মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সর্বোত্তম ও সবচেয়ে উপকারী কাজ বলে বিবেচিত। পক্ষান্তরে মৃত্যুর ব্যাপারে মানুষের চিন্তাভাবনার কমতি ও তার কথা স্মরণ না করার করণে তার ব্যাপারে তারা উদাসীন থাকে; আর যে ব্যক্তি তার কথা স্মরণ করে, সে মুক্তমনে তার স্মরণ করে না, বরং দুনিয়ার বহু ব্যস্ততার দ্বারা ব্যস্ততম হৃদয়ে তার কথা স্মরণ করে, ফলে এ স্মরণ তার হৃদয় মনে কোন প্রভাব ফেলতে পারে না। অথচ বান্দার উপর ওয়াজিব হল, সে তার অন্তরকে সবকিছু থেকে মুক্ত রাখলেও মৃত্যুর স্মরণ থেকে মুক্ত রাখবে না; কারণ মৃত্যু তার সামনে অপেক্ষমান। সুতরাং সে যখন মুক্তমনে তার কথা স্মরণ করবে, তখন নিশ্চিতভাবে তা তার মাঝে প্রভাব ফেলবে; আর এই সময় দুনিয়াতে তার হাসি ও আনন্দ কমে যাবে এবং তার অন্তর বিগলিত হবে। সুতরাং যার আত্মা বারবার অপরাধ করার প্রবণতার জালে আবদ্ধ হয়ে যায়, তার উপর আবশ্যক হল, তার আত্মাকে অন্তরের চিকিৎসা করার দ্বারা পরিশুদ্ধ করা; আর অন্তরের চিকিৎসা করাটা অত্যাবশ্যক। বিশেষ করে যখন অন্তর কঠোর হয়ে যায়, তখন তার চিকিৎসা করতে হয় চারটি জিনিস দ্বারা; আলেমগণ বলেছেন: যখন অন্তরসমূহ কঠোর ও নিষ্ঠুর হয়ে যাবে, তখন তার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপর আবশ্যক হবে চারটি জিনিসকে কর্তব্য বলে গ্রহণ করা:

প্রথমত: জ্ঞানের সেসব আসরসমূহে উপস্থিত হওয়া, যাতে মানুষকে বেশি বেশি দুনিয়া থেকে আখিরাতের দিকে এবং অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে আহ্বান করা হয়; কারণ, এটা এমন জিনিস, যা অন্তরকে নরম ও কোমল করে এবং তার মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করে।

দ্বিতীয়ত: মৃত্যুর কথা স্মরণ করা, যা সকল প্রকার স্বাদ ও মজা ধ্বংস করে, দল থেকে বিচ্ছিন্ন করে এবং ছেলে ও মেয়েদেরকে ইয়াতীম করে।

তৃতীয়ত: মরণাপন্ন ব্যক্তিদেরকে প্রত্যক্ষ করা; কারণ, মুমূর্ষু ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করা এবং তার মৃত্যুযন্ত্রণা ও প্রাণ বের হওয়ার দৃশ্য অবলোকন করা এবং তার মৃত্যুর পরে তার চেহারা নিয়ে চিন্তাভাবনা করাটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের স্বাদ-আহ্লাদকে হ্রাস করে, তাদের মন থেকে হাসি-আনন্দ দূর করে দেয়, চোখের পাতাকে ঘুমাতে বারণ করে, শরীরকে আরাম-আয়েশ উপলব্ধি করা থেকে অন্তরায় সৃষ্টি করে এবং আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং এই তিনটি বিষয়ের মাধ্যমে ঐ ব্যক্তির চিকিৎসার সহযোগিতা নেওয়া উচিত, যার অন্তর কঠোর হয়ে গেছে এবং যার আত্মা বারবার অপরাধ করার প্রবণতার জালে আবদ্ধ হয়েছে। সুতরাং সে যদি এর দ্বারা উপকৃত হয়, তাহলে এটাই যথেষ্ট; আর যদি তার অন্তরের ময়লা প্রকট হয় এবং অপরাধের উপায়-উপকরণগুলো দৃঢ়মূল হয়, তাহলে, [চতুর্থত:] এ ক্ষেত্রে কবর যিয়ারত এমন প্রভাব বিস্তার করবে, প্রথম ও দ্বিতীয় বিষয়টি যে প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি; আর এ জন্যই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«زُورُوا الْقُبُورِ فَإِنَّها تذكر الموت والآخرة و تزهد في الدنيا » .

“তোমরা কবর যিয়ারত কর; কারণ, তা মুত্যু ও আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে এবং তা দুনিয়ার মোহ ত্যাগে অনুপ্রাণিত করে।” [মুসলিম (২/৬৭১), হাদিস নং- ৯৭৬, জানাযা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক তাঁর প্রভু নিকট মায়ের কবর যিয়ারতের অনুমতি প্রার্থনা প্রসঙ্গে ( باب اسْتِئْذَانِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِى زِيَارَةِ قَبْرِ أُمِّهِ ); হাদিসটি আবূ হাযেমের সূত্রে আবূ হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত।] তন্মধ্যে প্রথমটি হলো কান দ্বারা শ্রবণ করা এবং দ্বিতীয়টি হল নিশ্চিত গন্তব্যের ব্যাপারে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা; আর মরণাপন্ন ব্যক্তিকে প্রত্যক্ষ করা ও কবর যিয়ারত করার মধ্যে সরাসরি দেখা বা অবলোকন করার ব্যাপার রয়েছে; আর এ জন্যই এ দু’টি বিষয় প্রথম ও দ্বিতীয়টির চেয়ে অধিক তাৎপর্যপূর্ণ; তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ليس الخبر كالمعاينة » .

“সংবাদ সরাসরি অবলোকন করার মত নয়।” [আহমদ (১/২৭১), হাকেম (২/৩২১) এবং তিনি বলেছেন: হাদিসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তের আলোকে সহীহ, কিন্তু তাঁরা তাদের গ্রন্থদ্বয়ে তা বর্ণনা করেননি, আর ইমাম যাহাবী র.ও অনুরূপ অভিমত ব্যক্ত করেছেন; হাদিসটি সা‘ঈদ ইবন যোবায়েরের সূত্রে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফু‘ সনদে বর্ণিত। আর আলবানী ‘সহীহ আল-জামে‘’ ( صحيح الجامع ) –এর মধ্যে (২/৯৪৮) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, হাদিস নং- ৫৩৭৩ ও ৫৩৭৪, তিনি আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন।]

কিন্তু মরণাপন্ন ব্যক্তির অবস্থা প্রত্যক্ষ করার দ্বারা শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা সব সময় সম্ভব হয়ে উঠে না। আর যে ব্যক্তি এক মুহূর্তের মধ্যে তার অন্তরের চিকিৎসা করতে চায়, তার জন্য তা যথাযথ হবে না। অবশ্য কবর যিয়ারতের মাধ্যমে চিকিৎসা করার বাস্তবতা খুব দ্রুত সম্প্রসারিত হয় এবং তার দ্বারা উপকৃত হওয়ার বিষয়টি খুবই ব্যাপক। কিন্তু যে ব্যক্তি কবর যিয়ারতের ইচ্ছা পোষণ করবে, তার জন্য উচিত হবে বিদ‘আত আশ্রিত যিয়ারত থেকে বেঁচে থাকা, যে পদ্ধতির যিয়ারত এ যামানার অধিকাংশ মানুষ করে থাকে। তা হল কিছু ব্যক্তিকে বরকতপূর্ণ মনে করে তাদের কবরের নিকট সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তা যিয়ারত করা; আর তাকে প্রদক্ষিণ করা, চুম্বন করা, স্পর্শ করা, কবরের মাটিতে গাল ঘষা, তার বালি গ্রহণ করা, কবরবাসীকে ডাকা, তাদের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করা; তাদের নিকট সাহায্য-সহযোগিতা, রিযিক, ক্ষমা, সন্তান, ঋণ পরিশোধ করা, দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা, চিন্তামুক্ত করা ইত্যাদি প্রয়োজন পূরণের জন্য সাহায্য চাওয়া, যা মূর্তিপূজারীগণ তাদের মূর্তিদের নিকট চেয়ে থাকে; অথচ এর কোনো কিছুই মুসলিম আলেমদের সর্বসম্মত মতে শরী‘য়ত সম্মত নয়। কেননা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবা, তাবে‘য়ীন ও দীনের সকল ইমামগণের মধ্য থেকে কেউ এই ধরনের কাজ করেননি। বরং তার উচিত হবে, কবর যিয়ারতের আদবসমূহ যথাযথভাবে গ্রহণ করা; সেখানে আসার সময় মনোযোগ সহকারে আসা। তার সেখানে আসা যেন কবর প্রদক্ষিণের উদ্দেশ্যে না হয়, কারণ, তা হল এমন একটি অবস্থা, যার মধ্যে চতুষ্পদ জন্তুও অংশগ্রহণ করে থাকে; বরং যিয়ারতকারীর জন্য তা যিয়ারতের উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা, নিজেকে সংশোধন করা এবং তার অন্তরের রোগ নিরাময় করা।

আর কবরস্থানে প্রবেশের সময় কবরের উপর হাঁটা ও বসা থেকে বিরত থাকবে এবং তার জুতা জোড়া খুলে রাখবে, যেমনটি হাদিসের মধ্যে এসেছে, আর কবরবাসীদের উপর সালাম পেশ করবে, তাদেরকে উপস্থিত ব্যক্তিদেরকে সম্বোধন করার ন্যায় সম্বোধন করবে এবং বলবে:

«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ »

(তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হউক; এটা মুমিনদের ঘর); কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ বলতেন।

আর যখন সে মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছবে, তখন তার জন্য উচিত হবে তার নিকট তার চেহারার দিক দিয়ে আগমন করা এবং তার প্রতিও সালাম পেশ করা, কিন্তু যখন সে দো‘আ করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তখন সে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দো‘আ করবে; আর অনুরূপ কথাই হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারতের ব্যাপারে। তারপর যিয়ারতকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির নিকট থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে যে ব্যক্তি মাটির নীচে চলে গেছে এবং সঙ্গী-সাথী ও আপনজনদের সাথে প্রতিযোগিতা করার পর পরিবার-পরিজন ও প্রিয় ব্যক্তিদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; ধন-সম্পদ ও ধনভাণ্ডার সঞ্চয় করার পর তার নিকট মৃত্যু এসে হাজির হয়েছে এমন এক সময়, যা সে কল্পনাও করতে পারেনি এবং এমন এক অবস্থায়, যা সে প্রত্যাশা করেনি; সুতরাং সে যখন কবরে প্রবেশ করেছে এবং প্রশ্নের মাধ্যমে পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছে, তখন সে কি সঠিকভাবে জবাব দিতে পেরেছে এবং তার কবর কি জান্নাতের বাগানসমূহের মধ্য থেকে একটি বাগানে পরিণত হয়েছে? নাকি সে জবাব দানে ভুল করেছে? এবং তার কবর জাহান্নামের গর্তসমূহের মধ্য থেকে কোনো একটি গর্তে পরিণত হয়েছে!!

অতঃপর সে নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করবে যে, সে যেন মারা গেছে, কবরে প্রবেশ করেছে এবং তার নিকট থেকে দূরে সরে গেছে তার সম্পদ, পরিবার-পরিজন, সন্তান-সন্ততি ও তার পরিচিত লোকজন; আর সে একাই অবশিষ্ট রয়ে গেছে; এখন সে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে, সুতরাং সে কী জবাব দেবে? আর ঐ ব্যক্তিদের অবস্থা কী হয়েছে, তার ভাই ও বন্ধু-বান্ধবদের মধ্য থেকে যারা বহু আশা-আকাঙ্ক্ষা করেছে, সম্পদের পাহাড় গড়েছে, কিভাবে তাদের আশা-আকঙ্খাগুলো কর্তিত হয়ে গেছে? আর তাদের সম্পদগুলো তাদের কোনো উপকারে আসেনি। আর মাটি তাদের চেহারাগুলোর সৌন্দর্যসমূহ বিবর্তন করে দিয়েছে, কবরের মধ্যে তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গসমূহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, তাদের পরে তাদের রমনীগণ বিধবা হয়ে গেছে, তাদের সন্তানগণ এতিম হয়ে গেছে এবং তাদের ভিন্ন অন্যরা তাদের সম্পদসমূহ বণ্টন করে নিয়ে গেছে। আর তার জেনে রাখা উচিত, দুনিয়ার প্রতি তার আকৃষ্ট হওয়া তো তাদের আকৃষ্ট হওয়ার মতই! আর তার অবহেলা সে তো তাদের অবহেলার মতই! আর কোনো প্রকার সন্দেহ নেই যে, সে তাদের গন্তব্যস্থলেই উপনীত হবে; আর সে যেন ভালো করে বুঝে নেয় যে, তার অবস্থাও তাদের অবস্থার মতই হবে, আর মৃত্যু হচ্ছে সর্বসম্পর্কের কর্তনকারী এবং ধ্বংস দ্রুত আগমনকারী।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন