hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সৎব্যক্তিদের আসরসমূহ থেকে চার আসর

লেখকঃ শাইখ আহমদ আর-রুমী আল-হানাফী রহ.

কবর পূজারীদের বিভ্রান্তির প্রসারতা
ঐসব পথভ্রষ্টদের দ্বারা বিষয়টি এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে, তারা কবরকে হাজ্জের স্থানে (তীর্থস্থানে) পরিণত করল এবং তার জন্য নিয়মনীতি তৈরি করল, এমনকি তাদের মধ্যকার সীমালঙ্ঘনকারীদের কেউ কেউ কবরকে মক্কার সম্মানিত ঘর ‘বাইতুল্লাহর’ সাথে তুলনা করে এ ব্যাপারে গ্রন্থ রচনা করেছে এবং তার নাম দিয়েছে ‘মানাসিকু হাজ্জিল মাশাহেদ’ ( مناسك حج المشاهد ) [পবিত্র স্থানসমূহে হাজ্জের নিয়মনীতি]। আর এ কথা সুস্পষ্ট যে, এটা হলো দীন ইসলাম পরিত্যাগ এবং মূর্তিপূজারীগণের ধর্মে প্রবেশ করা! সুতরাং আপনি তুলনামূলকভাবে লক্ষ্য করুন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত যে শর‘য়ী বিধান দিয়েছেন তার প্রতি, যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে এবং সেসবের প্রতিও লক্ষ্য করুন, ঐসব ব্যক্তিগণ যেসব নিয়ম প্রণয়ন করেছে আপনি অবশ্যই এতদুভয়ের মধ্যে বিরাট পার্থক্য দেখতে পাবেন।

কোনো সন্দেহ নেই যে, এ কবরগুলোকে নিয়ে বাড়াবাড়ির মাধ্যমে এমন সব ফেতনা-ফাসাদের উৎপত্তি হয় যা বর্ণনা করে শেষ করতে মানুষ অপারগ; যেমন:

কবরের স্থানটিকে সম্মানিত মনে করা, যার ফলে সে তার সাথে ফিতনায় জড়িত হয়ে পড়ে।

কবরকে মসজিদসমূহের উপর মর্যাদা দেওয়া, অথচ মসজিদ হচ্ছে পৃথিবীর সর্বোত্তম স্থান ও আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় ভূমি। তারা যখন কবরের প্রতি মনোনিবেশ করে, তখন তারা এমন শ্রদ্ধা, সম্মান, বিনয়, নম্রতা, হৃদয়ের কোমলতা ইত্যাদি সহকারে তার প্রতি মনোনিবেশ করে, মসজিদসমূহের ইচ্ছা করলে সেরূপ কিছু বা তার কাছাকাছিও তাদের মধ্যে অর্জিত হয় না।

কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা এবং তার উপর প্রদীপ জ্বালানো।

কবরে অবস্থান করা, তার উপর পর্দা ঝুলিয়ে দেওয়া এবং তার জন্য সেবক ও রক্ষণাবেক্ষণকারী নিয়োজিত করা, এমনকি তার উপাসকগণ তার নিকটে অবস্থান করাটাকে মসজিদে হারামের নিকট অবস্থান করার উপর প্রধান্য দিয়ে থাকে এবং তারা তার খাদেমদেরকে মসজিদের খাদেমদের চেয়ে মর্যাদাবান মনে করে!

কবরের উদ্দেশ্যে ও তার খাদেমদের জন্য মানত করা!

কবরের নিকট সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তা যিয়ারত করা; আর তাকে প্রদক্ষিণ করা, চুম্বন করা, স্পর্শ করা, গালের মধ্যে তার মাটি লাগানো, তার বালি গ্রহণ করা, কবরবাসীকে ডাকা, তাদের মাধ্যমে উদ্ধার কামনা করা, তাদের নিকট সাহায্য-সহযোগিতা, রিযিক, ক্ষমা, সন্তান, ঋণ পরিশোধ, দুঃখ-কষ্ট লাঘব করা, চিন্তামুক্ত করা ইত্যাদি বিবিধ প্রয়োজন পূরণের জন্য সাহায্য চাওয়া, যা মূর্তিপূজারীগণ তাদের মূর্তিদের নিকট চেয়ে থাকে। অথচ এর কিছুই মুসলিম আলেমদের সর্বসম্মত মতে শরী‘আতসম্মত নয়; কেননা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবে‘য়ীন ও দীনের সকল ইমামগণের মধ্য থেকে কেউ তা থেকে কোনো কিছু করেননি।

আর এটাও অসম্ভব যে, এগুলো থেকে কোনো কিছু শরী‘য়তসম্মত ও ভাল কাজ বলে গণ্য হওয়া সত্বেও পূর্ববর্তী সোনালী তিন যুগের ঐসব ব্যক্তিবর্গ তার থেকে বিরত থাকবেন যাঁদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাক্ষ্য দিয়েছেন, অথচ সেটা পেয়ে ধন্য হবে সেসব পশ্চাতে আগমনকারী ব্যক্তিবর্গ যাদের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষ্য দিয়েছেন যে তাদের মধ্যে মিথ্যা ও পাপাচার বেড়ে যাবে।

সুতরাং এ ব্যাপারে কোনো ব্যক্তি সন্দেহের মধ্যে থাকলে সে যেন লক্ষ্য করে, যমীনের উপরে বসবাসকারী কারও পক্ষে পূর্বোক্ত সাহাবা, তাবেঈন ও ইমামদের কোনো একজন থেকেও কি একটি সহীহ অথবা দুর্বল বর্ণনা নিয়ে আসতে পারবে যাতে দেখা যায় যে, যখন তাদের কোনো প্রয়োজন দেখা দিত তখন তারা কবরের প্রতি মনোনিবেশ করে কবরবাসীর নিকট প্রার্থনা করেছেন? তা মাসেহ করেছেন? সেখানে সালাত আদায় করা কিংবা সেগুলোর নিকট তাদের প্রয়োজন পূরণের জন্য আবেদন করার মত কিছু তো অনেক দূরের ব্যাপার। কখনও নয়, এ জাতীয় কোনো কিছু তারা কখনও আনয়ন করতে সক্ষম হবে না। অবশ্য তারা পরবর্তী লোকদের থেকে এ ধরনের বহু কাজের দৃষ্টান্ত নিয়ে আসতে পারবে। অতঃপর কাল যত প্রলম্বিত হচ্ছে এবং সময় যত দীর্ঘায়িত হচ্ছে, এ জাতীয় গর্হিত কর্মকাণ্ড পরবর্তী লোকদের থেকে ততই বেশি পরিমানে যোগ হচ্ছে। এমনকি (পরবর্তীদের দাবী অনুযায়ী কবরের সাথে বাড়াবাড়ির) এ বিষয়ে বেশ কিছু গ্রন্থ আমি পেয়েছে যাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, তাঁর খোলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী ও তাবে‘য়ীগণের নিকট থেকে একটি বর্ণও বর্ণিত নেই।

বরং এ বিষয়ে তাদের দাবীর বিপরীতে অনেক মারফু‘ হাদিসের বর্ণনা রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী:

«كنت نهيتكم عن زيارة القبور فمن أراد أن يزور فليزر ولا تقولوا هجرا» . ( أخرجه أحمد والنسائي بتمامه ).

“আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম, সুতরাং যে ব্যক্তি (বর্তমানে) কবর যিয়ারত করতে চায়, সে যেন যিয়ারত করে এবং তোমরা খারাপ (বাজে) কথা বলবে না।” [আহমদ (৩/৩৮) মারফু‘ সনদে মুহাম্মদ ইবন ইয়াহইয়া ইবন হাব্বান থেকে হাদিসটি বর্ণনা করেন, তিনি তার চাচা থেকে, তার চাচা আবূ সা‘য়ীদ রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তার শব্দগুলো হল: « إِنِّي نَهَيْتُكُمْ عَنْ زِيَارَةِ الْقُبُورِ فَزُورُوهَا فَإِنَّ فِيهَا عِبْرَةً» (আমি তোমাদেরকে কবর যিয়ারত করা থেকে নিষেধ করেছিলাম, সুতরাং তোমরা তা যিয়ারত কর; কারণ, তাতে শিক্ষা বা উপদেশ রয়েছে)। হাইসামী র. ‘আল-মাজমা‘’ [ المجمع ] (৩/৫৭) গ্রন্থের মধ্যে বলেন: ইমাম আহমদ র. হাদিসখানা বর্ণনা করেছেন, তার বর্ণনাকারী ব্যক্তিগণ সকলেই বিশুদ্ধ হাদিসের বর্ণনাকারী। আর ইমাম নাসায়ী র. (৪/৮৯) জানাযা অধ্যায়ের ‘কবর যিয়ারতের পরিচ্ছেদে ( باب زِيَارَةِ الْقُبُورِ ) মারফু‘ সনদে (ইবনু বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে) হাদিসখানা সম্পূর্ণভাবে বর্ণনা করেছেন।] আর কবরের নিকট শির্কের চেয়ে বড় ধরনের বাজে কথা ও কাজ কোনটি!

আর সাহাবীদের নিকট থেকে আগত বর্ণনার সংখ্যা অনেক, যা গণনায় সীমাবদ্ধ করাটা দূরূহ ব্যাপার, তন্মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, যা সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে: ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে কোনো এক কবরের নিকট সালাত আদায় করতে দেখে বললেন, কবর! কবর [বুখারী, অধ্যায়: মাসজিদ ( أبواب المساجد ), পরিচ্ছেদ: জাহেলী যুগের মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলে তদস্থলে মাসজিদ নির্মাণ করা প্রসঙ্গে ( باب هل تنبش قبور مشركي الجاهلية ويتخذ مكانها مساجد ), তা‘লীক।]! ইবনুল কায়্যিম র. তার ‘আল-ইগাসা’ গ্রন্থে বলেন: “এটা প্রমাণ করে যে, সাহাবীদের নিকট এটা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল যে, কবরের কাছে সালাত আদায় করা যায় না। কারণ তাদের নবী তাদেরকে কবরের নিকট সালাত আদায় করা থেকে নিষেধ করেছেন; আর আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র কাজ প্রমাণ করে না যে, তিনি কবরের নিকট সালাত আদায় করাকে বৈধ বলে বিশ্বাস করতেন; কারণ, হতে পারে তিনি তা দেখেননি অথবা তিনি জানতেন না যে, তা কবর, অতঃপর যখন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাকে সতর্ক করলেন, তখন তিনি সতর্ক হয়ে গেছেন।

কবর কেন্দ্রিক ফেতনা-ফাসাদের অন্যতম একটি বড় ফেতনা হচ্ছে, কবরকে উৎসবের স্থানে পরিণত করা, যেমনিভাবে আহলে কিতাবদের মুশরিকগোষ্ঠী তাদের নবী ও সৎব্যক্তিদের কবরসমূহকে উৎসবের স্থানে পরিণত করেছে! কেননা তারা তাদের কবরসমূহ যিয়ারত করার উদ্দেশ্যে একত্রিত হত এবং তারা সেখানে খেল-তামাশা ও আনন্দ-উল্লাস, গান-বাদ্যে মগ্ন থাকত; তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতকে এর থেকে নিষেধ করেছেন। যেমন আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لاَ تَجْعَلُوا قَبْرِى عِيدًا وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِى حَيْثُ كُنْتُمْ » . ( أخرجه أبو داود ) .

“তোমরা আমার কবরকে উৎসবের জায়গায় পরিণত করো না; আর তোমরা আমার উপর দুরূদ পাঠ কর; কেননা তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের দুরূদ আমার নিকট পৌঁছানো হয়ে থাকে।” [আবূ দাউদ (২/৫৩৪), হাদিস নং- ২০৪২, অধ্যায়: হজ্জের কাজসমূহ ( كتاب المناسك ), পরিচ্ছেদ: কবর যিয়ারত প্রসঙ্গে ( باب زِيَارَةِ الْقُبُورِ ), হাদিসটি সা‘ঈদ ইবন আবি সা‘ঈদ আল-মাকবেরী আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন; আলবানী ‘সহীহ আল-জামে‘ আস-সাগীর’ [ صحيح الجامع الصغير ] (২/১২১১), হাদিস নং- ৭২২৬]

সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যমীনের উপরে সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোত্তম কবর হওয়া সত্ত্বেও যখন তাকে উৎসবের জায়গায় পরিণত করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছে, তখন অন্যের কবরকে উৎসবের জায়গায় পরিণত করা নিষিদ্ধ হওয়া আরও বেশি যুক্তিযু্ক্ত। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বাণী “তোমরা আমার উপর সালাত (দুরূদ) পাঠ কর; কারণ, তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমাদের সালাত আামার নিকটে পৌঁছানো হয়” এর দ্বারা ইঙ্গিত করেছেন যে, তাঁর উম্মতের মধ্য থেকে যে কেউ তাঁর নিকট সালাত ও সালাম (দুরূদ) পাঠানোর ইচ্ছা পোষণ করে, তাঁর কবর থেকে তাদের অবস্থান নিকটে ও দূরে হওয়া সত্ত্বেও তার উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে; সুতরাং তাদের জন্য তার কবরকে উৎসবের জায়গায় পরিণত করার কোনো প্রয়োজন নেই; কেননা কবরকে উৎসবের জায়গায় পরিণত করার মধ্যে এমন অনেক ফেতনা ও সমস্যা রয়েছে যা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। কারণ; যারা কবরকে ঈদ বা উৎসবস্থল বানায় তাদের মধ্যে সীমালঙ্গনকারীদের দেখা যায় যে তারা যখন তাকে দূরবর্তী স্থান থেকে দেখে, তখন তারা তাদের বাহন থেকে নেমে পড়ে, তাদের মাথাসমূহ উন্মুক্ত করে, তাদের কপালসমূহ যমীনের উপর রাখে এবং যমীনকে চুম্বন করে, অতঃপর তারা যখন সমাধিস্থলে পৌঁছে, তখন তারা তার নিকটে দুই রাকাত সালাত আদায় করে; অতঃপর তারা সম্মানিত কা‘বা ঘর -যাকে আল্লাহ তা‘আলা মানবজাতির জন্য বরকত ও হিদায়াতের কেন্দ্র বানিয়েছেন- তাকে তাওয়াফ করার মত সে কবরের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তাকে প্রদক্ষিণ করে করে থাকে। অতঃপর তারা তাকে এমনভাবে চুম্বন ও স্পর্শ করতে শুরু করে, যেমনটি হাজীগণ মসজিদে হারামে করে থাকে। অতঃপর তারা তাদের কপালে ও গালে মাটি মেখে নেয়, অতঃপর তারা মাথা মুণ্ডন অথবা মাথার চুল কাটার মাধ্যমে কবরের হজ্জের যাবতীয় কাজের পরিপূর্ণ সমাপ্তি ঘটায়। অতঃপর তারা সেই কবর নামক মূর্তির জন্য কুরবানী পেশ করে। তাদের সালাতসমূহ, যাবতীয় উপাসনা, কুরবানী, বিসর্জিত অশ্রু, উচ্চ আহ্বান, প্রয়োজন পূরণের আবেদন, দুঃখ-কষ্ট লাঘব ও অভাবীদেরকে অভাবমুক্ত করার জন্য এবং রোগাক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত ব্যক্তিদের নিষ্কৃতি দানের জন্য প্রার্থনা করা ইত্যাদি কোনোটিই আল্লাহ তা‘আলা’র জন্য নিবেদিত হয় না, বরং তা নিবেদিত হয় শয়তানের জন্য। কারণ শয়তান হচ্ছে আদম সন্তানদের জন্য প্রকাশ্য শত্রু, সে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাদেরকে সঠিক পথে চলা থেকে বাধা প্রদান করে।

বস্তুত শয়তানের ষড়যন্ত্রের অন্যতম বড় ফাঁদ হলো, মূর্তিপূজার বেদীসমূহ থেকে মানুষের জন্য কোনো বেদী স্থাপন করা [কবরপূজা করাটা দেব-দেবী ও মূর্তিপূজারীদের কাজ বলে প্রমাণিত; কারণ, যখন কবরের উপাসনা করা হয়, তখন তা প্রতিমা ও মূর্তি হয়ে যায়।], যা অপবিত্র-ঘৃণিত, শয়তানী কর্মকাণ্ডের শামিল; আর আল্লাহ তা‘আলা মুমিনদেরকে তা বর্জন করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই বর্জন করার সাথে তাদের সফলতাকে শর্তযুক্ত করেছেন; তিনি বলেন:

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَيۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَٰمُ رِجۡسٞ مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّيۡطَٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ ٩٠ ﴾ [ المائ‍دة : ٩٠ ]

“হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণয় করার শর তো কেবল অপবিত্র-ঘৃণিত বস্তু, শয়তানের কাজ। কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন কর- যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।” [সূরা আল-মায়িদাহ্‌, আয়াত: ৯০]

আয়াতে বর্ণিত " الأنصاب " শব্দটি " نُصُب "(প্রথম দুই বর্ণে পেশসহ) শব্দের বহুবচন, অথবা " نَصْب "(প্রথম বর্ণে যবর ও দ্বিতীয় বর্ণে সাকিনসহ) শব্দের বহুবচন, আর তা হল এমন প্রতিটি বস্তু, আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যার পূজা ও উপাসনা করা হয়, যেমন: গাছপালা অথবা পাথর অথবা কবর অথবা এগুলো ব্যতীত অন্য কিছু। তাই এসব কিছুকে ধ্বংস করে ফেলা এবং তার চিহ্ন মুছে ফেলা ফরয [এর মধ্যে ঐসব কবরগুলো ধ্বংস করা ফরয হওয়ার নির্দেশনা রয়েছে, যেগুলোর উপাসনা বা পূজা করা হয় এবং ঐসব কবরের উপর যা নির্মাণ করা হয়েছে, তাও ধ্বংস করা ফরয।], যেমনভিাবে ওমর র. নিকট যখন সংবাদ পৌঁছল যে, লোকজন ঐ গাছটিকে (বরকত হিসেবে) গ্রহণ করছে, যার নীচে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে বাই‘আত (শপথ) অনুষ্ঠান করেছেন, তখন তিনি ঐ গাছের নিকট লোক পাঠালেন, অতঃপর তা কেটে ফেলা হয়। [ঘটনাটি ইবনু সা‘দ তার ‘আত-তাবাকাত’ ( الطبقات ) –এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন, ২/১০০; আর ইমাম মুহাম্মদ ইবন ওয়াদ্দাহ ‘আল-বিদা‘উ’ ওয়ান নাহইয়ু ‘আনহা’ ( البدع و النهي عنها ) নামক গ্রন্থের মধ্যে তা বর্ণনা করেছেন: ৪২ – ৪৩; ইবনু আবি শায়বা, আল-মুসান্নাফ: ২/৩৭৫; আর হাফেজ ইবনু হাজার ‘আসকালানী র. (৭/৪৪৮) সনদটিকে বিশুদ্ধ বলেছেন।] সুতরাং ওমর রা. যখন সে গাছটির সাথে এ আচরণ করেছিলেন, যার নীচে সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন এবং যার আলোচনা আল্লাহ তা‘আলা আল-কুরআনের মধ্যে করেছেন, যেমন তিনি বলেন:

﴿ لَّقَدۡ رَضِيَ ٱللَّهُ عَنِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ إِذۡ يُبَايِعُونَكَ تَحۡتَ ٱلشَّجَرَةِ ... [ الفتح : ١٨ ]

“অবশ্যই আল্লাহ মুমিনগণের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন, যখন তারা গাছের নীচে আপনার কাছে বাই‘আত গ্রহণ করেছিল, ...।” [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ১৮] তাহলে এসব (কবর নামক) মূর্তি বা উপাসনার বেদীসমূহের ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবে, যেগুলোর ফিতনা বড় আকার ধারণ করে এবং যার কারণে ঈমান বিপর্যস্ত ও বিপদগ্রস্ত হয়।

আর এর চেয়ে আরও উৎকৃষ্ট উদাহরণ হল, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে দিরারকে (ক্ষতির উদ্দেশ্যে নির্মিত মসজিদ) ধ্বংস করে দিয়েছিলেন [দেখুন: সীরাতু ইবনে হিশাম (২/৫২৯, ৫৩০)।]; যা প্রমাণ করে যে, মসজিদে দ্বিরার থেকেও বেশি ও বড় ফিতনা ফাসাদের বস্তু বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী জিনিস ধ্বংস করা আবশ্যক; যেমন কবরের উপর নির্মিত মসজিদসমূহ, কারণ-

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন