মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলিম নারী এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
লেখকঃ অধ্যাপক ড. ফালেহ ইবন মুহাম্মাদ আস-সুগাইর
১৯
তৃতীয় ক্ষেত্র: সমাজ ও জাতি কেন্দ্রিক একজন নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/660/19
নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যের পরিধি সমাজ ও পুরো জাতিকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর সে কর্তব্য হচ্ছে, তাদের মাঝে আল্লাহর দিকে আহ্বান, সৎকাজের আদেশ, অসৎকাজে নিষেধ, কল্যাণ কামনা ও সংস্কার করার মত কাজের আঞ্জাম দেওয়া।
আর এখানে আমি সাধারণভাবে এই দাওয়াতের গুরুত্ব, তার আবশ্যকতা ও ফলাফল, অতঃপর বিশেষকরে নারীর সাথে সংশ্লিষ্ট শরী‘আতের কিছু দলীল-প্রমাণাদি উল্লেখ করছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কথায় কে উত্তম ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা, যে আল্লাহর প্রতি মানুষকে আহ্বান করে, সৎকর্ম করে এবং বলে, ‘আমি তো অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত।’ ভালো ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত কর উৎকৃষ্ট দ্বারা। ফলে তোমার সাথে যার শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো।” [সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ৩৩-৩৪]
“তোমাদের মধ্যে এমন এক দল থাকা উচিৎ যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজের নিষেধ করবে, এরাই সফলকাম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪]
“তুমি মানুষকে তোমার প্রতিপালকের পথে আহ্বান কর হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবে উত্তম পন্থায়। তোমার প্রতিপালক সেই ব্যক্তি সম্পর্কে সবিশেষ অবহিত, যে ব্যক্তি তাঁর পথ ছেড়ে বিপথগামী হয় এবং কারা সৎপথে আছে, তাও তিনি সবিশেষ অবহিত।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ১২৫]
“তাদের প্রত্যেক দলের একটি অংশ কেন বের হয় না কেন, যাতে তারা দীন সম্বন্ধে জ্ঞান অনুশীলন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে; আশা করা যায় তারা সতর্ক হবে।” [সূরা আত-তাওবা, আয়াত: ১২২]
“বল, এটাই আমার পথ; আল্লাহর প্রতি মানুষকে আমি আহ্বান করি সজ্ঞানে-০ আমি এবং আমার অনুসারীগণও। আল্লাহ মহিমান্বিত এবং যারা আল্লাহর শরীক করে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।” [সূরা ইউসূফ, আয়াত: ১০৮]
“দীন হচ্ছে (জনগণের) কল্যাণ কামনা করা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন: আল্লাহ, তাঁর কিতাব, তাঁর রাসূল, মুসলিম নেতৃবৃন্দ ও সমস্ত মুসলিমের জন্য।” [মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: ‘দীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা’ –এর বর্ণনা ( باب بيان أن الدِّينُ النَّصِيحَةُ ), হাদীস নং ৫৫]
ইমাম মুসলিম আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অশ্লীল কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দ্বারা প্রতিরোধ করে, আর যদি তাতে সে অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার মুখ দ্বারা তার প্রতিবাদ করে; আর সে যদি তাতেও অক্ষম হয়, তবে সে যেন তার অন্তর দ্বারা তা প্রতিরোধের পরিকল্পনা করে; আর তা হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতা।” [সহীহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করা ঈমানের অন্তর্ভুক্ত ... ( باب بَيَانِ كَوْنِ النَّهْىِ عَنِ الْمُنْكَرِ مِنَ الإِيمَانِ وَأَنَّ الإِيمَانَ يَزِيدُ وَيَنْقُصُ وَأَنَّ الأَمْرَ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاجِبَانِ ), বাব নং ২২, হাদীস নং ১৮৬]( [এই হাদীসের বিস্তারিত পর্যালোচনা দেখুন আমার কিতাবে: ‘দিরাসাতু হাদীসে আবি সা‘ঈদ আল-খুদরী রিওয়াতান ওয়া দিরায়াহ্ ( دراسة حديث أبي سعيد الخدري رواية و دراية )])
ইমাম বুখারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু আবদুল্লাহ ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীস থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« بلغوا عني ولو آية »
“তোমরা আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হলেও পৌঁছে দাও।” [বুখারী, অধ্যায়: নবীগণ ( كتاب الأنبياء ), পরিচ্ছেদ: বনী ইসরাঈল সম্পর্কে যা আলোচনা করা হয়েছে, সে প্রসেঙ্গ ( باب ما ذكر عن بني إسرائيل ), বাব নং ৫১, হাদীস নং ৩২৭৪।]( [দাওয়াত ও সৎকাজের নির্দেশের ভাষ্যসমূহের ব্যাপারে জানার জন্য দেখুন: আবদুল গনী আল-মাকদেসী, কিতাবুল আমরি বিলমা‘রুফ ( كتاب الأمر بالمعروف )। এই গ্রন্থটির ভূমিকা ও পর্যালোচনা আমার দ্বারা সম্পাদিত।])
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«مثل القائم على حدود الله والواقع فيها كمثل قوم استهموا على سفينة فأصاب بعضهم أعلاها وبعضهم أسفلها فكان الذين في أسفلها إذا استقوا من الماء مروا على من فوقهم فقالوا لو أنا خرقنا في نصيبنا خرقا ولم نؤذ من فوقنا فإن يتركوهم وما أرادوا هلكوا جميعا وإن أخذوا على أيديهم نجوا ونجوا جميعا » .
“যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমালংঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মত, যারা কুর‘আ (লটারি)র মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল ওপর তলায়, আর কেউ নিচ তলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল ওপর তলায়); কাজেই নীচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহকালে ওপর তলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচ তলার লোকেরা বলল, ওপর তলার লোকদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভালো হত)। এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির ওপর ছেড়ে দেয়, তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে রাখে (বিরত রাখে), তবে তারা এবং এরা সকলেই রক্ষা পাবে।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: অংশীদারিত্ব ( كتاب الشركة ), পরিচ্ছেদ: লটারীর মাধ্যমে বণ্টন ও অংশ নির্ধারণ করা যাবে কি? ( باب هل يقرع في القسمة والاستهام فيه ), বাব নং ৬, হাদীস নং ২৩৬১।]
তাছাড়া সেখানে অনেক উপযুক্ত ও যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে, যা নারীর ওপর এই দায়িত্ব ও কর্তব্য অর্পণ করে, আর যা নিরবিচ্ছন্নভাবে তার ও তার পরিবারের জন্য এ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনকে বাধ্যতামূলক করে দেয়। সেসব যৌক্তিকতা হচ্ছে:
১. সমাজের সাথে নারীর সম্পর্ক:
আর এটা এমন সম্পর্ক, যা নারীকে সমাজের বিভিন্ন পক্ষের সাথে মজবুত সম্পর্ক তৈরির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে এবং তাকে আত্মীয়তার রূপ দান করে। সুতরাং নারী মা অথবা স্ত্রী অথবা কন্যা অথবা বোন অথবা খালা অথবা ফুফু ... ইত্যাদি হওয়া থেকে মুক্ত নয়, বা তার বাইরের কেউ নয়; আবার তার মধ্যে যুক্ত হয় বৈবাহিক সূত্রে আত্মীয়তার সম্পর্ক, প্রতিবেশিত্ব, বন্ধুত্ব ও সতীর্থ। অনুরূপভাবে নারী হচ্ছে সমাজ ও জাতির অঙ্গ এবং তার উপাদানসমূহের মধ্য থেকে অন্যতম উপাদান, সমাজের সাথে এই ধরনের প্রতিটি সম্পর্কই নারীকে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্যের অধিকারী বানিয়ে দেয়। আর আত্মীয়তা ও আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা বড় অধিকার (হক) ও দায়িত্ব; আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে সম্ভবত তোমরা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে।” [সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ২২]
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«من سره أن يبسط له في رزقه أو ينسأ له في أثره فليصل رحمه» .
“যে ব্যক্তি পছন্দ করে যে, তার জীবিকার মধ্যে প্রবৃদ্ধি হউক অথবা তার মৃত্যুর পরে সুনাম থাকুক, তবে সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে চলে।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ক্রয়-বিক্রয় ( كتاب البيوع ), পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি জীবিকায় বৃদ্ধি কামনা করে ( باب من أحب البسط في الرزق ), বাব নং ১৩, হাদীস নং ১৯৬১; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও আচার-ব্যবহার ( البر والصلة والآدب ), পরিচ্ছেদ: আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করা এবং তা বিচ্ছিন্ন করা হারাম হওয়া প্রসঙ্গে ( ِ باب صلة الرحم وتحريم قطيعتها ), বাব নং ৬, হাদীস নং ৬৬৮৭]
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন উত্তম কথা বলে অথবা চুপ থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে সম্মান করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: শিষ্টাচার ( كتاب الأدب ), পরিচ্ছেদ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয় ( باب من كان يؤمن بالله واليوم الآخر فلا يؤذ جاره ), বাব নং ৩১, হাদীস নং ৫৬৭২; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ঈমান ( الإيمان ), পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশী ও মেহমানকে সম্মান দানের ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান এবং কল্যাণকর কথা ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে চুপ থাকার আবশ্যকতা এবং এই সবগুলোই ঈমানের অন্তর্ভুক্ত হওয়া ( ِ باب الْحَثِّ عَلَى إِكْرَامِ الْجَارِ وَالضَّيْفِ وَلُزُومِ الصَّمْتِ إِلاَّ مِنَ الْخَيْرِ وَكَوْنِ ذَلِكَ كُلِّهِ مِنَ الإِيمَانِ ), বাব নং ২১, হাদীস নং ১৮২]
রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«ما زال يوصيني جبريل بالجار حتى ظننت أنه سيورثه» .
“আমাকে জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম সব সময় প্রতিবেশী সম্পর্কে অসীয়ত করে থাকেন। এমনকি, আমার মনে হলো যে, তিনি অচিরেই প্রতিবেশীকে ওয়ারিস (উত্তরাধিকারী) বানিয়ে দেবেন।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: শিষ্টাচার ( كتاب الأدب ), পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীর জন্য অসীয়ত ( باب الوصاءة بالجار ), বাব নং ২৮, হাদীস নং ৫৬৬৮; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও আচার-ব্যবহার ( البروالصلة والآدب ), পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত ও তার প্রতি সদ্ব্যবহার ( ِ باب الوصية بالجار والإحسان إليه ), বাব নং ৪২, হাদীস নং ৬৮৫২।]
আর বন্ধুর জন্য রয়েছে বন্ধুত্বের এবং সাধারণ ও বিশেষ ভ্রাতৃত্বের অধিকার।
আর প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তির জন্য রয়েছে ইসলাম সম্পর্কিত অধিকার, যেমনিভাবে এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা এসেছে। আর অমুসলিমদের জন্য রয়েছে তাদেরকে এই দীন তথা জীবনব্যবস্থার দিকে দাওয়াত পাওয়ার অধিকার। [সামগ্রিকভাবে এই অধিকারের বিষয়টি আমার “দুরুসুন ফিল হুকুক” ( دروس في الحقوق ) নামক গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সুতরাং তা অধ্যয়ন করা যেতে পারে।]
আর মুসলিম নারী হলেন এই সমাজের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াশীল মহিলা এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো এদের প্রত্যেককে তার মান অনুযায়ী মর্যাদাবান করে গড়ে তোলা।
২. মহিলাদের সাথে বিশেষ কিছু বিষয়ে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের গঠন সম্পর্কে বিশেষভাবে কথা বলার ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে নারীই অধিক উপযুক্ত। আরও উপযুক্ত এর ওপর ভিত্তি করে বিন্যস্থ ব্যক্তিগত ও সামাজিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে কথা বলতে। সুতরাং এখানে পুরুষের পক্ষে কোনো বিষয় প্রচার করতে যা অসম্ভব, নারীর পক্ষে তা প্রচার কারা সহজেই সম্ভব।
৩. অনুরূপভাবে নারী সংস্কারের সকল ক্ষেত্রে তার স্বজাতীয় মেয়েদের সাথে মেলামেশার মাধ্যমে, তাদের আচার-আচরণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে এবং তারা ভুল-ত্রুটিতে পতিত হলে তার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণের মাধ্যমে যথাযথ সংস্কার-পদ্ধতি প্রয়োগে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে পুরুষের কার্যক্রম তার বিপরীত, যিনি নকল বা মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল; আর যে স্বচক্ষে দেখে সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে অগ্রগামী, যে শুধু শ্রবণ করে।
৪. কল্যাণজনক ক্ষেত্রে এবং ইসলামের শিক্ষাসমূহের সমন্বয়সাধন, তার বিধাসমূহকে বাধ্যতামূলক দায়িত্বরূপে গ্রহণ এবং তার নিয়ম-পদ্ধতিসমূহের ওপর দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকার ক্ষেত্রে তার আদর্শিক প্রভাবের পরিধি মানুষের কথার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী। সুতরাং আহূত ব্যক্তিদের প্রাণের মধ্যে তার আদর্শের একটা বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।
৫. মহিলাদের মধ্যে ব্যক্তিগত নসিহত ও ব্যক্তিগত দাওয়াতী কাজ যথাযথভাবে পরিচালনা করা পুরুষের পক্ষে সম্ভব নয়। সুতরাং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য তাদের মধ্য থেকে নারীকে ভূমিকা রাখতে হবে; কেননা নারীদের ওপর তাদের অপরিচিত পুরুষদের থেকে পর্দা করা ফরয।
৬. মুসলিম নারী সমাজের মধ্যে কোনো ব্যর্থ সদস্য নন; বরং তিনি হলেন প্রভাব-প্রতিপত্তির পাত্র। আর মুসলিম নারী হলেন আল্লাহর পথের আহ্বানকারিনী ও উপদেষ্টা। সুতরাং তার জন্য আবশ্যক কর্তব্য হলো, সে সমাজ বিনির্মাণ, সংশোধন ও পরিচালনার কাজে অংশগ্রহণ করবে; আরও অংশগ্রহণ করবে কল্যাণের পথে দাওয়াতী কার্যক্রমে।
৭. আদর্শ নারীগণ এ রকমই হয়েছেন; আর তাদের শীর্ষে রয়েছেন সম্মানিত মহিলা সাহাবীগণ, আর যারা সংস্কার, সংশোধন ও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন, তাদের মধ্যে মুমিন-জননীগণ উল্লেখযোগ্য। সুতরাং তাদের মধ্যে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা উম্মতের জন্য কেননা রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন, তাঁর (রাসূলের) আবাসিক অবস্থার বিবরণ দিয়েছেন এবং সাহাবীদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে সংশোধন করেন। আর তাদেরই আরেক জন হলেন যয়নব বিনতে জাহাশ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মিসকীনদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাঁর নিকট কোনো কিছুই অবশিষ্ট ছিল না; আর এইভাবে অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। সুতরাং ঐসব মর্যদাবান নারীগণ হলেন আদর্শ নমুনা ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
৮. নারী কেন্দ্রীক ইসলামের শত্রুগণের চেষ্টা ও সাধনা দুইভাবে হয়ে থাকে:
প্রথমত: তারা নারীর জাতিসত্বাকে ধ্বংস ও বিপর্যস্ত করার জন্য তাদেরকে কেন্দ্রীভূত করে।
দ্বিতীয়ত: নারীদেরকে ধ্বংস ও বিপথগামী করার পর ঐ নারীদেরকে অন্যান্য নারীদের ধ্বংস ও বিপথগামী করার কাজে ব্যবহার করা, আর কাফির ও ষড়যন্ত্রকারীদের বাস্তবতা এই কথারই সাক্ষ্য দেয়। সুতরাং নারীর আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো এই বিপর্যয়ের পথ রুদ্ধ করার জন্য তার যথাযথ ভূমিকা পালন করা। মোটকথা, মেয়ে বা নারীজাতিকে সমাজ ও উম্মতের (জাতির) মধ্যে সংস্কারমূলক ভূমিকায় ব্যস্ত থাকতে হবে।
৯. মহান মর্যাদাপূর্ণ ও পর্যাপ্ত সাওয়াবের এই কাজে সে পুরুষের সহযোগিতা নেবে। কারণ, ভালো কাজসমূহের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ ও মুস্তাহাব কর্মসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ মানের কর্ম হলো সমাজের কল্যাণে সংস্কারমূলক কাজ ও দাওয়াতী কার্যক্রম প্রতিষ্ঠা করা, যেমন অচিরেই সেই ব্যাপারে বিস্তারিত বিবরণ আসছে।
৩. এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের প্রয়োজনীয় বিষয়াদি:
সংস্কারের ক্ষেত্রে ব্যাপক দায়-দায়িত্বের ব্যাপারে পূর্বে যে আলোচনা হয়েছে, তার সাথে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি নিম্নরূপে নির্ধারণ করা যায়:
(ক) আত্মীয়-স্বজন পক্ষ: নিকটতম ও দূরতম আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে নারী নিম্নলিখিতভাবে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে পারে:
তাদের অধিকারসমূহ আদায় করা।
তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, চুল প্রদর্শন ও কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে প্রকাশভঙ্গির শর‘ঈ দিক পর্যবেক্ষণ করা।
সময়ে সময়ে তাদের সাথে কথাবার্তা বলা, তাদের অবস্থাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা, বিশেষ করে তাদের মধ্যে যার কোনো বিশেষ সমস্যা রয়েছে। যেমন, রোগী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা এবং তার জন্য দো‘আ করা।
তাদের সমাবেশেকে ভালো কথা ও উত্তম উপদেশ দ্বারা ফলপ্রসূ করা। এই ক্ষেত্রে উত্তম হলো তাদেরকে উপদেশ দেওয়া, তাদের নিকট উপকারী বক্তব্য পেশ করা অথবা তাদেরকে প্রচলিত ভুলত্রুটি ও অন্যায়-অপরাধ সম্পর্কে সতর্ক করা অথবা তাদের জন্য মহিলা দা‘ঈকে মেহমান হিসেবে আনা অথবা বিভিন্ন বয়স অনুযায়ী তাদের মধ্যে সাধারণ প্রতিযোগিতা পরিচালনা করা অথবা তাদেরকে উপকারী ক্যাসেট-অডিও ইত্যাদি শুনানোর ব্যবস্থা করা অথবা উপকারী কিচ্ছা-কাহিনী আলোচনা করা এবং ইত্যাদি।
বিভিন্ন উপলক্ষকে কেন্দ্র করে উপহার সামগ্রী বিতরণ করা, তা অল্প দামের হউক না কেন। কারণ, উপহার উপঢৌকন মানব মনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। তা সকল প্রকার বিদ্বেষ দূর করে, অন্তরের কলুষতা ও অপবিত্রতাকে ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে দেয়, মন থেকে বিদ্বেষ ও শত্রুতাকে আস্তে আস্তে বের করে দেয়; সম্পর্ককে নির্ভেজাল করে, সকল প্রকার হিংসা-বিদ্বেষ দূর করে এবং মানুষের একে অপরকে কাছাকাছি করে।
তাদের দরিদ্রদেরকে (ফকীরকে) সহযোগিতা করা, মিসকীন তথা নিঃস্বদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, বিধবাদেরকে সাহায্য করা এবং তাদের অভাবীদের অভাব নিবারণ করা।
আরও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, তাদের অসুস্থকে সেবা করা, তাকে সান্তনা দেওয়া এবং তার সামনে শুভ সঙ্কেত মেলে ধরা, আর অনুরূপভাবে মৃত্যু ও অন্যান্য কারণে তাদের বিপদগ্রস্তকে সাহায্য-সহযোগিতা করা এবং তার জন্য দো‘আ করা, আর তারা যে কোনো প্রয়োজনের মুখোমুখি হলে, সে ক্ষেত্র তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া।
যৌথভাবে দাওয়াতীমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়া। যেমন, নিঃস্বদেরকে সহযোগিতার জন্য অনুদান সংগ্রহ করা অথবা বইপত্র ক্রয় করে বিতরণ প্রভৃতি।
(খ) প্রতিবেশীদের পক্ষ: আর প্রতিবেশীদের ক্ষেত্র্রে তাদের দাওয়াতী কার্যক্রমের মধ্যে যা অন্তর্ভুক্ত, তা নিম্নরূপ:
তাদের শরী‘আহ ভিত্তিক অধিকারসমূহ আদায় করা।
প্রতিবেশী সকল নারীর ব্যাপারে জানা এবং পৃথকভাবে নিকট ও সাংস্কৃতিক দিক বিবেচনা করে প্রত্যেক প্রতিবেশীর সাথে আচরণ করা।
সে নিজে যে খাবার খায়, তার থেকে তাদেরকে খাওয়াবে। বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নারীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সে তার প্রতিবেশীদেরকে খাবার দান করে, যদিও তা ছাগলের খুর হউক; আর তার ঝোল থেকে তাকে কিছু দান করতে বলেছেন। [হাদীসে আছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বলেন, «يَا نِسَاءَ الْمُسْلِمَاتِ لاَ تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ فِرْسِنَ شَاةٍ » “হে মুসলিম নারীগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশিনী যেন তার অপর মহিলা প্রতিবেশিনী (প্রদত্ত হাদিয়াকে) তুচ্ছ মনে না করে, এমনকি তা স্বল্প গোশত বিশিষ্ট বকরীর হাঁড় অথবা বকরীর খুর হলেও”। সহীহ বুখারী, অধ্যায়: হেবা ও তার ফযীলত ( كتاب الهبة وفضلها ), পরিচ্ছেদ: হেবার ফযীলত ও তার প্রতি উৎসাহ প্রদান ( باب فضلها والتحريض عليها ), হাদীস নং ২৪২৭; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত ( الزكاة ), পরিচ্ছেদ: পরিমাণ অল্প হলেও তা থেকে সাদকা দেওয়ার উৎসাহ দান এবং অল্প পরিমাণ দান তুচ্ছ মনে করে বিরত না থাকা ( باب الْحَثِّ عَلَى الصَّدَقَةِ وَلَوْ بِالْقَلِيلِ وَلاَ تُمْتَنَعُ مِنَ الْقَلِيلِ لاِحْتِقَارِهِ ) বাব নং ৩০, হাদীস নং ২৪২৬; অপর এক হাদীসে আছে, আবূ যর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «يَا أَبَا ذَرٍّ إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ جِيرَانَكَ» .“হে আবূ যর! যখন তুমি ঝোলবিশিষ্ট তরকারি রান্না করবে, তবে তার পানি বাড়িয়ে দাও এবং তোমার প্রতিবেশীদেরকে শামিল করে নাও”। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সদ্ব্যবহার, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও আচার-ব্যবহার ( البروالصلة والآدب ), পরিচ্ছেদ: প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত ও তার প্রতি সদ্ব্যবহার ( ِ باب الوصية بالجار والإحسان إليه ), বাব নং ৪২, হাদীস নং ৬৮৫৫।]
সময়ে সময়ে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং এই সাক্ষাতকে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ফলপ্রসূ করা (আত্মীয়-স্বজনদের সাথে আচরণে যেমনটি বলা হয়েছে
তাদেরকে কথা অথবা কাজের মাধ্যমে কোনো প্রকার কষ্ট না দেওয়া।
সময়ে সময়ে তাদেরকে ফোন করা এবং তাদের অবস্থাদি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা।
উপদেশ চাওয়ার সময়ে অথবা শর‘ঈ কোনো বিষয় দৃষ্টিগোচর হলে উপদেশ দেওয়া।
(গ) নারীদের সমাবেশে: নারীকে সামাজিক জীবনে বহু সমাবেশে হাজির থাকতে হয়- কখনও আবশ্যকভাবে, আবার কখনও ঐচ্ছিকভাবে। উভয় প্রকার সমাবেশেই নারীর ওপর দাওয়াতী দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে।
তন্মধ্যে আবশ্যিক সমাবেশসমূহে, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়: মানুষ এই জীবনের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-মুসিবতের মুখোমুখি হয়, অতঃপর সে সঠিক কারণ উদ্ঘাটন করে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের নিকট গমন করে। সুতরাং যখন কোনো নারী ডাক্তারের নিকট গমন করে, তখন সে মহিলা ডাক্তারের নিকট প্রবেশের অপেক্ষায় থাকে। অতএব, তার সাথে একত্রিত হয় অপেক্ষমান মহিলাদের কেউ কেউ, আর এটা জানা কথা যে, পুরুষদের চেয়ে নারীরাই অধিক সামাজিক। সুতরাং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তাদের কারও কারও সাথে আলাপ-আলোচনা ও কথাবার্তায় মেতে উঠে। সুতরাং তিনিই হলেন সৌভাগবান নারী, যিনি এই সমাবেশটিকে ব্যবহার করেন নিম্নরূপ কাজে:
উপহারস্বরূপ দেওয়ার জন্য কিছু বাছাই করা বইপত্র ও ক্যাসেট/সিডি সঙ্গে রাখা। অতঃপর তার সাথে অপেক্ষমান নারীকে তা উপহার দেবে, বিশেষ করে ঐ সিডিটি উপহার হিসেবে দিলেই ভালো হবে, যখন সিডিটি রোগীর অবস্থাদি সম্পর্কে এবং শরী‘আতের বিধিবিধান ও অন্যান্য বিষয়ে (রোগীর জন্য) যেসব করণীয় নিয়ে আলোচনা করে।
মহিলা ডাক্তার ও রোগীদের সাথে তার ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কাহিনী আকারে আলোচনা করা এবং তার থেকে উপকারী বিষয়গুলোকে শিক্ষা হিসেবে পেশ করা।
বিভিন্ন রোগ-বালাইর অবস্থা আলোচনা করা। আর এভাবেই সে উপস্থিত মহিলাদের মধ্যে আনন্দের উদ্রেক করতে পারবে এবং সেখান থেকে সে তার অর্থবহ কাঙ্খিত কথাবার্তা নিয়ে তাদের মধ্যে প্রবেশ করবে।
ভাল ভালো ইসলামী পত্রপত্রিকা ও ম্যাগাজিন সঙ্গে রাখবে সেগুলোর পরিচিতি তুলে ধরার জন্য এবং তার ইতিবাচক দিকগুলো এবং তার মধ্যে যেসব উপকারী বিষয় রয়েছে, তা আলোচনা করা।
যখন সে এমন কোনো অবস্থা বা অবস্থান লক্ষ্য করবে, যা উপদেশ দাবি করে, তখন সরাসরি নসীহত করা।
আর ঐচ্ছিক সমাবেশে, উদাহরণস্বরূপ মহিলাদের ‘হিফজুল কুরআনুল কারীম’ কোর্সে উপস্থিত হওয়া। আর তার এই উপস্থিতি হয় সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে অথবা উপকৃত হওয়ার জন্য ছাত্রী হিসেবে অথবা উৎসাহদানকারিনী দর্শক হিসেবে অথবা অন্যান্য কোনো উদ্দেশ্যে। আর সকল পরিবেশ-পরিস্থিতিতে উচিৎ কাজ হলো, সে তার উপস্থিতির সুবর্ণ সুযোগটি সঠিকভাবে কাজে লাগাবে। সুতরাং সে যদি শিক্ষকা বা ছাত্রী হয়, তবে তাদের পাঠ্যক্রম (সিলেবাস) সম্পর্কে কথাবার্তা বলবে ও এর বিস্তারিত আলোচনায় আসবে; আর সে যদি দা‘ঈ তথা আল্লাহর পথে আহ্বানকারিনী হয়, তবে এই ক্ষেত্রে তার দাওয়াতী দায়িত্ব প্রতিষ্ঠা করবে। আর সে যদি উৎসাহদানকারিনী দর্শক হয়, তবে সে পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও শিক্ষিকাদেরকে উৎসাহ দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করবে এবং তাদের জন্য দো‘আ করবে। কারণ, তাদের মহৎ কাজ অব্যাহত রাখা এবং এই ক্ষেত্রে তাদের মানকে সমুন্নত করার ব্যাপারে এটা একটা বড় ধরনের উদ্দীপক।
অনুরূপভাবে সে সমস্ত হিফজ প্রতিষ্ঠানসমূহে আর্থিকভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী যথাসম্ভব সাহায্য ও সহযোগিতা করা, যদিও তা সামান্য বস্তু হউক। কেননা কম কম করেই বেশি হয়, আর ফোটাগুলো একত্রিত হয়ে সৃষ্টি হয় বন্যার। আর যখন তারা তার নিকট কিছু জানতে বা পেতে চাইবে, তার পক্ষ থেকে সহযোগিতার কথা জানাবে এবং বলবে যে এ ব্যাপারে (সহযোগিতা করার জন্য) শুধু তার সাথে ফোনে কথা বললেই হবে।
আর এই সবই কল্যাণের দিকে আহ্বান এবং পুণ্য ও তাকওয়ার কাজে পারস্পরিক সহযোগিতার অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
আর এই দুই প্রকারের সমাবেশের দাওয়াতকে অন্য সব ধরনের নারী সমাবেশের জন্য মডেল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে।
(ঘ) ক্লাবসমূহ এবং সেগুলোর প্রতি মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য: আমরা যেই যুগে বসবাস করছি, তার অন্যতম দৃশ্য হলো বহু রকমের সাংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া, সাথে সাথে রয়েছে বহু সভা-সেমিনার, উৎসব-অনুষ্ঠান এবং এগুলোর মত করে আরও অন্যান্য বিবিধ নামের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীগণ ও তাদের অনুরূপ মতাদর্শের ব্যক্তিবর্গ যা নিয়ে অগ্রসর হয়েছে, তন্মধ্যে অন্যতম হলো তাদের নারী সমাজকে এসব ক্লাব বা সংঘের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ব্যাপারে উৎসাহিত করা এবং তাদের বিকৃত চিন্তাধারার মাধ্যমে সেগুলোর সুবিধা ভোগ করা। আর মুসলিম সংস্কৃতিমনা রক্ষণশীল আল্লাহর দীনের আহ্বায়ক নারী সমাজের এসব ক্লাবে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সময় হয়েছে। সুতরাং তারা এগুলোকে নিম্নলিখিতরূপে ব্যবহার করবে:
মৌলিকত্ব সহকারে সে সব সভা-সমিতিতে কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করা, যাতে সে সেখানে তার দ্বীন তথা আকীদা ও শরী‘আত, চরিত্র ও চাল-চলনে যে নির্দেশনা দেয় সেটা সেখানে স্পষ্টভাবে তুলে ধরবে। আর সকল প্রকার অনিষ্টতা ও খারাপী থেকে সতর্ক করবে।
সেমিনারসমূহে নিজের মতামত পেশ করার মাধ্যমে কল্যাণকর কাজে উৎসাহিত করা অথবা অপকর্ম থেকে সতর্ক করা।
শরী‘আতের দলীল-প্রমাণ ও বাস্তবভিত্তিক প্রমাণাদির মাধ্যমে সাহসিকতা ও সচেতনতার সাথে বাতিল যুক্তি-প্রমাণাদির বিরুদ্ধে সোচ্ছার থাকা।
ইসলামের বাস্তব ও কার্যকর চিত্র তুলে ধরা; ফলে তা উপস্থিত লোকদের মধ্যে মুসলিম নারী তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিণ গঠনে কেমন হওয়া আবশ্যক তার আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে।
সততা ও কল্যাণের অনুসারীদের সংখ্যাধিক্যকে আরও বৃদ্ধি করার মানসে এ সব সভা-সমিতিতে উপস্থিত হওয়া।
উপস্থিত সকল নারীর সাথে উত্তম আচার-আচরণের মাধ্যমে কাজ করা, চাই তারা উত্তম চরিত্রের অধিকারিনী হউক অথবা তারা পাপাচারিণী বা বিকৃত মানসিকতা সম্পন্না হউক। কেননা কথার চেয়ে চরিত্র ও নৈতিকতার প্রভাব অনেক বেশি; আর মুসলিম নারী তো পারস্পরিক উত্তম আচার-আচরণের জন্য আদিষ্ট।
এসব ক্লাবের মধ্যে যে সকল অসামাজিক ও খারাপ কাজ হয়ে থাকে সেগুলোর পরিসংখ্যান নেয়া এবং এ গুলো যাতে প্রসার লাভ করতে না পারে ও এগুলোর প্রভাব যাতে সীমাবদ্ধ করা যায় এ ব্যাপারে সহযোগিতার জন্য যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের গোচরীভূত করা।
(ঙ) কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব: এই যুগে নারীরা পুরুষের সাথে অনেক বিষয়ে অংশগ্রহণ করে থাকে, এখানে রয়েছে নারীদের অনেক কর্মক্ষেত্র। নারীরা এর এক বিরাট অংশ দখল করে আছে। সুতরাং তারা বিভিন্ন ময়দানে প্রবেশ করেছে; আমি এসব ময়দানের দু’টি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করছি, বাকি ময়দান বা ক্ষেত্রসমূহকে এই দু’টি দৃষ্টান্তের ওপর অনুমান করা হবে:
প্রথম দৃষ্টান্ত: শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দান।
একজন শিক্ষিকাকে তার মিশন সম্পাদন এবং দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে যে সকল উপদেশ দেওয়া যায় তা হচ্ছে,
তাকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মত দায়িত্ব ও কর্তব্যের মহত্ব ও গভীরতা অনুধাবন করতে হবে, আর তাকে বুঝতে হবে যে, তার ওপর অনেক বড় দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। আর এসব ছোট অথবা বড় নারীদের বিবেক-বুদ্ধি তার প্রভাবের অধীন। আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাকে এই দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। কারণ, তিনি যাকে দায়িত্বের জন্য মনোনীত করেছেন, এমন প্রত্যেক দায়িত্বশীলকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। আর শিক্ষার কাজটি খুবই মহৎ ও মহান গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তার মহত্ব প্রকাশ পায় এই কাজটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ কাজ হওয়ার কারণে। সুতরাং শিক্ষিকা নবুওয়তের উত্তরাধিকারের দায়িত্ব বহন করেছেন; আর তিনি হলেন আয়েশা ও ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা’র প্রতিনিধি এবং তিনি মহান প্রশিক্ষিকা, মায়ের দায়িত্ব অথবা তার চেয়ে অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেন, আর এটা এই জন্য যে, তার ছাত্রীদের ওপর তার একটা বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে। আর তিনি হলেন নির্দেশক ও পথপ্রদর্শক, তার নির্দেশনা ও পথপ্রদর্শন শ্রোতাদের পক্ষ থেকে গ্রহণীয় হয়ে থাকে। শিক্ষক ও শিক্ষিকার গুরুত্ব চিত্রিত করার ক্ষেত্রে সেই উক্তিটিই যথেষ্ট, যা কবি আহমাদ শাওকী ছন্দাকারে বলেন,
قم للمعلم وفِّه التبجيلاكاد المعلِّم أن يكون رسولاً
শিক্ষকের জন্য দাঁড়াও, শিক্ষককে কর সম্মান
শিক্ষকের ভূমিকা তো প্রায় রাসূলের সমমান
আর তাই তার ওপর ন্যাস্ত হয়ে পড়ে বড় মিশন ও ভারী দায়িত্ব, যা পালন করা তার ওপর আবশ্যক। আর এই দায়িত্বানুভূতির সূচনা হলো এর গুরুত্ব উপলব্ধি করা।
তার মূল কাজটিকে সুন্দরভাবে সম্পন্ন করা, যার ওপর সে বেতন নিচ্ছে এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ অর্জন করছে। অতঃপর তার দায়িত্ব হলো তার দারস বা পাঠ প্রস্তুত করা, তার পরিকল্পনা করা, ছাত্রীদের মাঝে তা পেশ করা এবং এই বিষয়ে আবশ্যকীয় উপায়-উপকরণ ও সরাঞ্জামাদি সংগ্রহের কাজে চেষ্টাসাধনা করা। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তোমাদের কাউকে তখন ভালোবাসেন, যখন সে কাজটি করে তার আস্থা, বিশ্বাস ও আন্তরিকতার সাথে।
তিনি হবেন তার প্রকাশ্যরূপে, কথাবার্তায়, সার্বিক তৎপরতায় ও নৈতিক চরিত্রের ক্ষেত্রে ছাত্রীদের কাছে আদর্শ নমুনা; কেননা আমরা পূর্বেই বর্ণনা করেছি যে, কর্মের প্রভাব কথার প্রভাবের চেয়ে অনেক বেশি ফলপ্রসূ। বিশেষ করে ছাত্রীরা সাধারণত: তার শিক্ষিকার সাথে সংশ্লিষ্ট হয়ে থাকে, তাকে মডেল (আদর্শ) হিসেবে গ্রহণ করে থাকে, এমনকি তারা সার্বিক কর্মতৎপরতা, পোষাক-পরিচ্ছদ এবং চেহারা-ছবিতেও শিক্ষিকার অনুসরণ করে থাকে। সুতরাং সম্মানিত শিক্ষিকার জেনে রাখা উচিৎ যে, তার প্রতিটি কর্মতৎপরতা, কথা, কাজ ও পোশাক-পরিচ্ছদ হলো তার ছাত্রীদের দৃষ্টির ক্ষেত্র এবং শিক্ষণীয় বিষয়। সুতরাং তা ভালো হলে, তারাও ভালো হবে আর মন্দ হলে তারাও মন্দ হবে, আর সৌভাগ্যবান বা আদর্শ শিক্ষিকা তিনিই হবেন, যিনি এই কাজের জন্য যথাযথ হিসাব-নিকাশ করেন এবং তার যথাযথ মূল্যায়ন করেন, যাতে করে তার কর্মকাণ্ড হয় প্রভাব বিস্তারকারী, যেমন প্রভাব বিস্তারকারী হয় তার কথাবার্তা; আর এতে করে সে কথা ও কাজ উভয়টির মাধ্যমেই প্রতিদান ও সাওয়াব প্রাপ্ত হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলার কাছে দো‘আ করছি, তিনি যেন এক্ষেত্রে শিক্ষিকাদের আগ্রহকে বাড়িয়ে দেন।
ছাত্রীদেরকে তার বান্ধবী হিসাবে বিবেচনা করা, বিশেষ করে তারা যখন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মত উপরের শ্রেণির ছাত্রী হবে, তবে তারা যখন প্রাথমিক স্তরের এবং তার পূর্বের স্তরের হবে, তখন শিক্ষিকা নিজেকে ঐসব মেয়েদের মা বলে বিবেচনা করবেন, যাদেরকে তাদের পরিবারের লোকজন তার দায়িত্বে অর্পণ করেছেন। আর পূর্বে আলোচনা হয়ে গেছে যে, মায়ের কর্মকাণ্ড কেমন হবে? আর যখনই তিনি এই বিরাট অর্থ ও তাৎপর্য অনুধাবন করবেন, তখনই তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি অনেক বড় ও মহান হবে।
ছাত্রীদের সাথে আচার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আচার-আচরণ ও লেনদেনের পরিচয় দেওয়া এবং তাদের সাথে এর দ্বারা সুন্দরভাবে মেলামেশা করা। কারণ, আচার-আচরণ ও লেনদেনের প্রভাব খুব বেশি। সুতরাং তিনি তাদের ওপর গর্ব, বড়ত্ব ও অহংকার প্রকাশ করবেন না। তার দায়িত্ব হলো, তিনি অধ্যবসায়ী ছাত্রীকে অনুপ্রাণিত করবেন, ছোট ও দুর্বল ছাত্রীদেরকে আদর-স্নেহ করবেন, ছাত্রীদের সমস্যাগুলো সমাধান করবেন এবং তাদের আবাসিক ও ব্যক্তিগত অবস্থাদির প্রতি সদয় দৃষ্টি দেবেন, আর তাদের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সামাজিক অথবা মানসিক সমস্যা এবং মাসিক শুরু জনিত পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত হওয়া ও তার যথাযথ সমাধান পেশ করা।
সিলেবাস বহির্ভূত কর্মতৎপরতায় অংশগ্রহণ করা, যার মাধ্যমে তিনি অত্যন্ত কাছে থেকে ছাত্রীদের সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং উপলব্ধি করতে পারবেন তাদের প্রবৃত্তি ও শক্তি-সামর্থ্যের ব্যাপারে। ফলে এর সাহায্যে তিনি তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে পারবেন।
তার হৃদয়কে ছাত্রীদের জন্য এমনভাবে উন্মুক্ত করে দেওয়া, যাতে তাদের আবাসিক সমস্যাসমূহ এবং তাদের ঘরের মধ্যে তারা যে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকে সেগুলো সম্পর্কে তিনি অবহিত হতে পারেন। বিশেষ করে ঐসব ছাত্রীদের ব্যাপারে অবহিত হতে পারেন, যাদের ব্যাপারে তাদের পরিবারের লোকজন অমনোযোগী এবং তারা ভালোভাবে তাদের খোঁজখবর রাখে না। সুতরাং এখানে ঐসব ছাত্রীদের নিকট প্রবেশ করে তাদেরকে উপদেশ দেওয়া এবং সঠিক হেদায়াত তথা দিক নির্দেশনা প্রদান করা, একজন সত্যিকারের কল্যাণকামী শিক্ষিকা হিসেবে তার বৃহৎ দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। আর তার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা একটি মেয়েকে হেদায়েত করাটা তারা জন্য একটি লালবর্ণের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা অনেক বেশি উত্তম, যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ হাদীসের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। [সুতরাং হাদীসের মধ্যে এসেছে, সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «فوالله لأن يهدي الله رجلا بك خير لك من أن يكون لك حمر النعم» “আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা‘আলা যদি তোমার মাধ্যমে এক ব্যক্তিকে হিদায়াত দান করেন, তবে তা তোমার জন্য লালবর্ণের উটের মালিক হওয়া অপেক্ষা উত্তম”। সহীহ বুখারী, অধ্যায়: জিহাদ ও যুদ্ধ জীবন ( كتاب الجهاد والسير ), পরিচ্ছেদ: যার হাতে কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করেছে, তার ফযীলত ( باب فضل من أسلم على يديه رجل ), বাব নং ১৪১, হাদীস নং ২৮৪৭; সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: সাহাবীদের ফযীলত ( فضائل الصحابة ), পরিচ্ছেদ: আলী ইবন আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু’র ফযীলত থেকে ( باب مِنْ فَضَائِلِ عَلِىِّ بْنِ أَبِى طَالِبٍ رضى الله عنه ), বাব নং ৪, হাদীস নং ৬৩৭৬।]
পাঠসূচীর প্রত্যেক জ্ঞানের বিষয় পাঠ দানের সময় সেটার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনে ভালো কাজ ও উন্নত ইসলামী চরিত্রের বিষয়ের প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদান; বিশেষ করে শরী‘আতের বিষয়, আরবি বিষয় ও সামাজিক বিষয়গুলোর পাঠ্যক্রম। এমনকি অন্যান্য শিক্ষার পাঠ্যক্রমেও আবশ্যক হলো অনুরূপ কল্যাণ ও সম্মানজনক শিক্ষণীয় বিষয়গুলোর দিকনির্দেশনা মুক্ত না হওয়া। এই দিকনির্দেশনা পেশ করা শুধু শরী‘আতের বিষয়সমূহের পাঠদানকারিনী শিক্ষিকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। নিঃসন্দেহে ছাত্রীদেরকে (পড়ানোর সময় পাঠের ভিতর থেকে) যাবতীয় কল্যাণ ও উত্তম চরিত্রের শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে শর‘ঈ বিষয়ের পাঠদানকারিনীর কর্তব্য অনেক বড়; কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, অপরাপর শিক্ষিকাগণ দায়িত্বশূন্য থাকবেন।
আর আমি এখানে কীভাবে এ সুযোগের সদ্ব্যাবহার করা যাবে তার কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করছি:
আল-কুরআনুল কারীমের শিক্ষিকা কর্তৃক ছাত্রীদেরকে সূরা আল-ক্বারি‘আর পাঠদান। আর এটা জানা কথা যে, সূরা আল-ক্বারি‘আ কিয়ামতের দিন ও তার মহাপ্রস্তুতি ও আয়োজন নিয়ে আলোচনা করেছে, যেমন, পৃথিবী ও পাহাড়সমূহের অবস্থার পরিবর্তন থেকে শুরু করে মানুষের জান্নাত অথবা জাহান্নামে অবস্থান করা এসবই এ সূরায় রয়েছে। সুতরাং এই অর্থ বা তাৎপর্য বর্ণনার পর তার জন্য সম্ভব হবে কতগুলো প্রশ্নের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা। যেমন, কীভাবে আমরা জান্নাতের অধিবাসী হব? জাহান্নামে প্রবেশের কারণগুলো কী কী? আর ছাত্রীদেরকে জবাব দেওয়ার পর তিনি মুমিনদের গুণাবলী ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করবেন। আরও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করবেন কাফির ও মুনাফিকদের গুণাবলী এবং এরূপভাবে ... অতঃপর এসব গুণাবলীকে মানুষের বাস্তবতার সাথে মিল করে দেখাবেন এবং মানব জীবনের ইতিবাচক ও নেতিবাচক স্থানগুলো বর্ণনা করবেন।
অপর একটি দৃষ্টান্ত হলো: শিক্ষিকা ফিকহ শাস্ত্রের পাঠদান করবেন। তিনি শিক্ষা দেবেন হায়েয (মাসিক ঋতুস্রাব) ও নিফাস (সন্তান প্রসবকালীন স্রাব) সম্পর্কে। সুতরাং প্রস্তাবিত জ্ঞানগত বিষয়টি বর্ণনার পর তিনি যথাযোগ্য নির্দেশনার মধ্যে প্রবেশ করবেন। অতঃপর তিনি ছাত্রীদেরকে লক্ষ্য করে স্পষ্টভাবে বলবেন যে, নিশ্চয় এই হায়েযের নিয়মটি পুরুষদেরকে বাদ দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা নারীদের জন্য নির্দিষ্ট করেছেন; আর এ জন্যই নারীর স্বভাব পুরুষের স্বভাব থেকে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে এবং তিনি স্বভাবের ভিন্নতার কিছু দিক উল্লেখ করবেন... শেষ পর্যন্ত তিনি উল্লেখ করবেন যে, নিশ্চয় নারীর জন্য এমন কতগুলো বিধান রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলা পুরুষদেরকে বাদ দিয়ে নারীর সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন; তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: হিজাব (পর্দা), পুরুষের স্থান থেকে দূরে থাকা... ইত্যাদি।
তৃতীয় দৃষ্টান্ত: শিক্ষিকা ব্যাকরণগত নিয়মাবলী মুবতাদা (উদ্দেশ্য) ও খবর (বিধেয়) শিক্ষা দেবেন। আর এখানে শিক্ষিকার জন্য সুন্দর হবে এমন কিছু যথাযথ উদাহরণ পেশ করা, যা ছাত্রীদের মধ্যে কল্যাণকর কিছু গুণাগুণ তৈরিতে সহায়ক হবে। যেমন উদাহরণস্বরূপ তিনি নিম্নোক্ত বাক্যগুলো নিয়ে আসতে পারেন: هند حفظت كتاب الله (হিন্দা আল্লাহর কিতাব মুখস্ত করেছে), فاطمة مجدة في دروسها (ফাতিমা তার পাঠে অধ্যবসায়ী), زينب ذكية فطنة (যয়নব মেধাবীনী, বুদ্ধিমতী) ইত্যাদি।
দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত: প্রশাসনিক মহিলা কর্মকর্তা, চাই তিনি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের; আর অনুরূপভাবে রোগীর সেবক, ডাক্তার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক মহিলা কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ; আর তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিম্নরূপ:
তাদেরকে অনুধাবন করতে হবে যে, নিশ্চয় এই কাজটি তাদের ওপর আবশ্যক, এই ব্যাপারে তারা আমানতদার, এর ওপর তারা একটা নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ গ্রহণ করেন এবং অচিরেই তাদেরকে সেই ব্যাপারে হিসাবের মুখোমুখি হতে হবে। সুতরাং তাদের ওপর আবশ্যক হলো, তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্বটি সুন্দরভাবে পালন করবেন। অতএব, তারা কোনো এক শহর বা ভূ-খণ্ডের সীমানা পাহারার দায়িত্বে নিয়োজিত। সুতরাং তাতে কোনো প্রকার অবহেলা তাদের জন্য বৈধ হবে না।
তাদের আত্মপ্রকাশ হবে ইসলামী বেশভূষার মাধ্যমে, যাদেরকে তাদের বান্ধবী অথবা ছাত্রীরাসহ অপরাপর নারীদের জন্য আদর্শ নমুনা হিসেবে পেশ করা যায়, যদি তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অথবা হাসপাতালের মহিলা কর্মকর্তা-কর্মচারী হন অথবা যদি হন নার্স বা সেবিকা অথবা মহিলা ডাক্তার অথবা অনুরূপ কেউ। আর তাদের জেনে রাখা উচিৎ, তাদের এই বাহ্যিক রূপ, যা নিয়ে তারা অপরাপর মহিলাদের সামনে আত্মপ্রকাশ করবেন, তারা জেনে বা না জেনে এর মাধ্যমে তাদের মাঝে ইতিবাচক অথবা নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলবেন।
নিজের পেশা ও চাকুরিকে অপরের সেবা, তাদের কল্যাণ কামনা এবং তাদেরকে কল্যাণকর ও মর্যাদাপূর্ণ কাজের দিকে পরিচালিত করা ও যাবতীয় অপকর্ম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কাজে সঠিকভাবে কাজে লাগানো; বিশেষ করে যখন তিনি হবেন রোগীর সেবিকা ও ডাক্তার কিংবা সামাজিক কনসালটেন্টের মত মানুষের সাথে সম্পর্কযুক্ত পেশার অধিকারিনী। উদাহরণস্বরূপ যখন তিনি হবেন ডাক্তার, তখন তার এ পেশা কতই না মহান! যার মাধ্যমে তিনি অন্যান্য মহিলাদের সেবা করবেন, তিনি তার নিজের মধ্যে এমন মহৎ গুণাবলী ধারণ করবেন, যা তিনি অপরের জন্য ছড়িয়ে দিবেন। যেমন, রুগ্ন নারীর মনে শান্তনা দান করা, তার জন্য রোগ নিরাময়ের দ্বার উন্মোচন ও আশাবাদ ব্যক্ত করা এবং হতাশাবাদ ব্যক্ত না করা অথবা রোগের ভয়াবহতা প্রকাশ না করা; অনুরূপভাবে রোগীদেরকে ভালো ভালো নসীহত করা, এবং পবিত্রতা ও সালাতের বিধিবিধানসমূহ থেকে কিছু কিছু দিক বর্ণনা করা।
যে বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন তন্মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো: রুগ্ন নারীকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পর্কযুক্ত করা এবং এই কথা বলা যে, রোগ নিরাময়কারী হলেন একমাত্র আল্লাহ, অন্য কেউ নন। আর মানুষের পক্ষ থেকে যা করা হয়, তা হলো শুধু উসিলা বা উপলক্ষ মাত্র, আল্লাহ উপকার চাইলে তা উপকার করে, আর তিনি না চাইলে তা উপকার করতে পারে না ইত্যাদি তার আরও গুণাবলী ও প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য থাকবে।
আর মহিলা ডাক্তারের মত অপরাপর যারা এ কাজটি করতে পারেন তারা হচ্ছেন: নার্স তথা রোগীর সেবিকা ও কিংবা সামাজিক কনসালটেন্ট।
আর তার দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক বড় মাপের হয়ে যাবে, যদি ঐ চাকরিজীবী নারী হন প্রশাসনিক দায়িত্বশীল, যেমন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান অথবা মহিলা বিভাগসমূহ বা পরিচালনা পরিষদের কোনো একটি বিভাগের প্রধান এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং তার ওপর আবশ্যক হয়ে পড়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণমূলক দায়িত্ব, দাওয়াতী তৎপরতামূলক এবং সামাজিক দায়-দায়িত্বসমূহ পালন, যেমনটি শিক্ষিকা ও প্রশাসনিক কর্মকর্তার সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
(চ) শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে দায়িত্ব:
কোন সন্দেহ নেই যে, আজকের দিনে মানুষের জীবন গত দিনের চেয়ে অনেক ভিন্ন, আর ভিন্নতার স্থানসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো মেয়েদের শিক্ষা, আর রাষ্ট্রসমূহের পক্ষ থেকে নারী শিক্ষার দায়িত্বগ্রহণ; বরং বর্তমান বিশ্বে ছেলেদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে প্রতিযোগিতা করে মেয়েদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি এমন অবস্থা খুব কমই পরিলক্ষিত হয়। আর পরিবারসমূহের পক্ষ থেকে কম পরিবারই আছে, যাতে মেয়ে আছে, অথচ সে বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সেখানকার ছাত্রী হয় না। আর এখান থেকেই ছাত্রীর ওপর আবশ্যক হলো তার সমাজ ও জাতির সম্মুখে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অংশ গ্রহণ করা, বিশেষ করে উচ্চ শ্রেণির ছাত্রীর ওপর এই দায়িত্ব আরও বেশি; আর আমি এখানে সংক্ষিপ্তভাবে এমন কিছু পয়েন্ট তুলে ধরছি, যার মাধ্যমে এই ছাত্রী তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে:
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সঠিক নিয়ত করা, অর্থাৎ তার নিয়ত হবে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার জন্য। সুতরাং সে জ্ঞান অন্বেষণ করবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার জন্য; আর এই জ্ঞান অর্জন দ্বারা সে তার দীন, আকীদা-বিশ্বাস ও নৈতিক চরিত্রকে প্রতিষ্ঠা করবে এবং আল্লাহর ইবাদত করবে সুস্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে।
ছাত্রী জ্ঞান অর্জনের আদব কায়েদা রপ্ত করার মাধ্যমে নৈতিক চরিত্র ও শিষ্টাচার অর্জন করবে। যেমন, অধ্যবসায়, উৎসাহ-উদ্দীপনা, পরস্পর পাঠক্রম আলোচনা, বারবার পাঠ ও সুন্দর চালচলন। বিশেষ করে তার শিক্ষিকাগণ ও বান্ধবীদের সাথে আচার-আচরণ ও লেনদেনের ক্ষেত্রে।
জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও চিন্তা-গবেষণা করা। সুতরাং সে পাঠ ব্যাখ্যা-বিশ্লষণের ক্ষেত্রে শিক্ষিকাকে অনুসরণ করবে, মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করবে, তিনি যা বলবেন সে দিকে সাবধানী হবে। অতঃপর তা তার বাসায় বার বার আলোচনা ও পর্যালোচনা করবে এবং সর্বোপরি তার সকল আবশ্যকীয় দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করবে।
সে তার শিক্ষিকাদের সম্মান ও মর্যাদা দেবে; আর শিক্ষা দানের ব্যাপারে তাদের অধিকারসমূহ যথাযথভাবে জানবে; আর এটাও উপলব্ধি করবে যে, তারা এক মহান ও সম্মানজনক কাজ করছেন। অতএব, ছাত্রীকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের ক্ষেত্রে, তার কল্যাণ কামনায় এবং তার জন্য আদর্শ হওয়ার ক্ষেত্রে শিক্ষিকা হলেন তার মায়ের অবস্থানে। সুতরাং তিনি তাকে উত্তম বিষয় সম্পর্কে পরিচিত করাবেন এবং মন্দ বিষয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন।
তার বান্ধবীদের সাথে কোনো প্রকার হিংসা, বিদ্বেষ, নিষ্ঠুরতা, কঠোরতা, কটু কথা বা কঠোর শব্দ উচ্চারণ না করেই সুন্দর ব্যবহার করা। কারণ, সে হলো তার বোন, বান্ধবী ও সহপাঠী।
প্রাতিষ্ঠানের নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা; বিশেষ করে যা উত্তম চরিত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, প্রকাশভঙ্গি, আকার-আকৃতি ও বেশ-ভূষার সাথে সম্পর্কিত। কারণ (যদি সে প্রতিষ্ঠানের নির্দেশ শরী‘আত বিরোধী না হয় তবে) প্রতিষ্ঠানের শৃংখলাজনিত এ নির্দেশগুলো ইসলামেরই নির্দেশ। সুতরাং সে সেগুলোকে দ্বীন ও চরিত্ররূপে বাস্তবায়ন করবে।
সিলেবাস বহির্ভূত তৎপরতায় অংশগ্রহণ করা, যাতে সে এমন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে, যে জ্ঞান পাঠকক্ষে অর্জন করা সম্ভব হয়ে উঠে না। আর এতে থাকবে তার কিছু উপকারী ইতিবাচক অংশগ্রহণ, সে ভালো কথা বলবে অথবা সুন্দরভাবে কুরআন তিলাওয়াত করবে অথবা হাদীস মুখস্ত করবে অথবা সেলাই করা, রান্না করা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করবে। বস্তুতঃ সিলেবাস বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে এমন অনেক উপকারিতা রয়েছে, যা পাঠকক্ষে অর্জন করা সম্ভব নয়।
তার সহপাঠী তথা বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে শ্রেণী কক্ষে বক্তব্য পেশের মাধ্যমে অথবা এমন কিছু তার দৃষ্টিগোচর হয়েছে, যা উপদেশ দাবি করে, এমন সব ক্ষেত্রে উপদেশ ও দিক নির্দেশনামূলক সাধারণ উপদেশ দেওয়ার অভ্যাস তৈরী করা।
তার মুখস্তকরণ, আলোচনা-পর্যালোচনা, অনুধাবন, শিক্ষা গ্রহণ ও শিক্ষা দানের ক্ষেত্রে তার সহপাঠী তথা বান্ধবীদের জন্য আদর্শ নমুনা হওয়া; বরং সে তার চেহারা-ছবিতে, প্রকাশভঙ্গি ও বেশ-ভূষার ক্ষেত্রে এবং তার কথাবার্তা, শব্দচয়ন ও অপরের সাথে তার আচার-আচরণের ক্ষেত্রে আদর্শ নমুনা হবে।
এগুলো শুধুমাত্র নারীর কর্মকাণ্ডের দৃষ্টান্ত এবং তার ওপর অর্পিত আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও কর্তব্যের কিছু দিকের আলোচনা, আর যেসব বিষয় আলোচনা হয় নি, তা পূর্বে আলোচিত বিষয়সমূহের ওপর আন্দাজ বা অনুমান করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/660/19
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।