hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুসলিম নারী এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য

লেখকঃ অধ্যাপক ড. ফালেহ ইবন মুহাম্মাদ আস-সুগাইর

২০
চতুর্থ ক্ষেত্র: শত্রুদের ষড়যন্ত্রের বিপরীতে মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবী হিসেবে প্রেরিত হওয়ার পর থেকেই ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান ও সমগ্র কাফির গোষ্ঠীসহ ইসলামের শত্রুগণ ইসলাম ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে থাকে এবং তারা তাদের সকল শক্তি, সামর্থ্য, ষড়যন্ত্র ও অপকৌশল এই ক্ষেত্রে নিয়োজিত করে; এমনকি এই ব্যাপারে এমন কোনো চেষ্টা নেই, যা তারা প্রয়োগ করে নি এবং এমন কোনো পন্থা নেই, যা তারা অনুসরণ করে নি। আর এই ষড়যন্ত্রটি পরিচালনা করে মানুষ ও জিন সম্প্রদায়ের শয়তান গোষ্ঠী। আর এই ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পন্থা গ্রহণ করেছে। সুতরাং কখনও তারা সামরিক যুদ্ধের জন্য কেন্দ্রীভূত হয়ে, আবার কখনও কখনও তারা চিন্তা ও সংস্কৃতি এবং এই দ্বীনের ব্যাপারে সন্দেহ-সংশয় ছড়িয়ে দেওয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে; আবার কখনও কখনও তারা বেছে নিয়েছে তথ্য ও প্রযুক্তি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করে শিশু ও নারীসহ উম্মতের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকারী বলয়গুলো ধ্বংস করার জন্য।

আর এই যুগে তথা বিগত শতাব্দির শুরুর দিকে মুসলিম নারীর ব্যাপারে তার স্বাধীনতার নামে অথবা পুরুষের সাথে তার সমতার বিষয় নিয়ে অথবা তার অধিকারসমূহের জন্য মায়াকান্না করার দিকে অধিক পরিমাণে জোর দিয়ে চলেছে।

আর আমরা মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পনাকে সংক্ষিপ্তভাবে নিম্নলিখিতরূপে উপস্থাপন করতে পারি:

১. নারীকে নষ্ট-ভ্রষ্ট করার জন্য তারা বিভিন্ন প্রকার পথ ও আলাপ-আলোচনা সূত্রপাত করেছে। যেমন,

(ক) নারীকে বিতর্কিত বিষয় হিসেবে প্রকাশ করা: আর এর সপক্ষে কিছু লোক নারীর হিতাকাঙ্খী হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়া। যেমন, নারী নির্যাতিত অথবা সমাজ শুধু (পুরুষের মাধ্যমে) এক অন্ত্রে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে বা একপেশে আচরণ করছে, নারী অধিকার বঞ্চিত অথবা আমরা জীবনযাপন করছি প্রাচীন উত্তরাধিকারের তলানির মধ্যে; আর আমাদেরকে সিদ্ধান্ত দেয় প্রাচীন প্রথা ও সনাতন ঐতিহ্য, যার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে বহু সময় এবং ইতিহাস তাকে মুছে দিয়েছে; এভাবেই এসকল কথা দ্বারাই তারা চিল্লাচিল্লি করে, সংবাদপত্রে লেখালেখি করে, টেলিভিশনের ধারাবাহিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বর্ণনা করে এবং মাঝে মাঝে লেখার মাধ্যমে বর্ণনা করে। আর আশ্চর্যের বিষয় হলো, তাদের নির্দিষ্ট কিছু দিন রয়েছে, যাতে তারা আত্মপ্রকাশ করে আর বিশেষ করে উম্মতের ওপর দিয়ে কোনো কোনো নাজুক সময়ে। অথবা দায়িত্বশীলের কথা রেকর্ড করে তারা তা টুকরা টুকরা করে এবং খণ্ড-বিখণ্ড উত্থাপন করে নতুন করে নারীর বিষয়টি ইস্যুর আকার দেয়। আর এভাবেই এ সব কথা জনগণ বিশেষ করে নারীর স্মৃতিতে সুদৃঢ় ভিত্তির জন্ম দেয় যে নারীর রয়েছে মারাত্মক সমস্যা, যা সংস্কার ও সমাধান করা আবশ্যক।

(খ) মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে নোংরামি ও বিকৃত চিন্তাধারার বিস্তার করা:

তারা তা বিভিন্ন দর্শনযোগ্য মিডিয়ার মাধ্যমে বিস্তার করে, তন্মধ্যে কিছু পঠিত এবং কিছু শ্রুত। আর এটা জানা কথা যে, সমাজ বা ব্যক্তি প্রথম বারে সেই দৃশ্য দেখার সময় বা শুনার সময় প্রতিবাদ বা নিন্দা করে; কিন্তু এই ঘৃণা বা নিন্দার মাত্রা একটু একটু করে হালকা হতে থাকে, এমনকি শেষ পর্যন্ত তা প্রচলিত বিষয়ে পরিণত হয়।

সুতরাং মিডিয়া বা তথ্য-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ: পর্দার বিধান ধ্বংস এবং তাকে উপহাস করে নিষিদ্ধ ও আকৃষ্টকারী ছবির বিস্তার ও প্রসার ঘটানো; আর এসব দৃশ্য বারবার প্রদর্শন করানো হয় এমন সব চ্যানেলে যেগুলো এসব খারাপ জিনিস দেখানোর কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। এমনকি শেষ পর্যন্ত তা মুসলিম নারী সমাজের মধ্যে প্রচলিত ও পছন্দনীয় এবং অনিন্দনীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছে; আর অনুরূপভাবে নোংরামি চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত তা প্রচণ্ড কুৎসিত আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

অনুরূপভাবে তা ছড়িয়ে পড়ে সংবাদপত্র ও সাময়িকী বা ম্যাগাজিনে; আর খুব কম ম্যাগাজিনই আছে, যার প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় নারীর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য প্রকাশক ও বেপর্দা ছবি ছাপানো হয় না।

অপরদিকে আরও আধুনিক প্রযুক্তি ও উপায়-উপকরণ রয়েছে, যা আমাদের নিকট নাস্তিক্যবাদী বিশ্বে প্রচলিত অপসংস্কৃতি সঞ্চালন করে, যেমন, আকাশ সংস্কৃতি ও ইন্টারনেট জগৎ।

আর চিন্তা-গবেষণা, সে তো নিজেই নিজেকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে; যেমন, সংবাদপত্রের মধ্যে তাদের কলাম অথবা প্রবন্ধ লেখার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন চ্যানেলের মধ্যে তাদের টক শোর মাধ্যমে তারা তাদের (খারাপ) চিন্তাধারা পেশ করে থাকে।

আর খুবই দুঃখজনক ব্যাপার হলো, মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকাংশ ছেলে ও মেয়ে যারা ঐ সমস্ত লোকদের ভাষায় কথা বলে তারা এসব চিন্তা-দর্শন প্রচার করে থাকে, বরং তারা এর জন্য উৎসাহিত ও প্রলুব্ধ হয়।

আর তারা নারীর সাথে সংশ্লিষ্ট তথাকথিত সন্দেহ-সংশয়গুলোকে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, তন্মধ্যে উদাহরণস্বরূ কিছু দিক হলো:

পুরুষের রক্তমূল্যের (Blood Money) অর্ধেক পরিমাণ হলো নারীর রক্তমূল্য (Blood Money

পুরুষের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের অর্ধেক পরিমাণ হলো তার সম্পদ।

দুই নারীর সাক্ষ্য সমান একজন পুরুষের সাক্ষ্য।

সে প্রশাসকও হতে পারবে না এবং বিচারকও হতে পারবে না।

একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী গ্রহণের সুযোগ।

তার ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব।

পর্দা।

(গ) তাদের ঘোষিত দুইটি মৌলিক দাবি:

- নারী স্বাধীনতার দাবি;

আর এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্যে হলো, সে আল্লাহর দাসত্ব করা থেকে মুক্ত হয়ে নিজের নফসের দাসত্ব করবে অথবা সৃষ্টির দাসত্ব করবে। সুতরাং তার জন্য প্রণীত ঐ আল্লাহ তা‘আলার শরী‘আত তথা বিধিবিধান তাদেরকে মুগ্ধ করতে পারেনি, যিনি তার ও গোটা সমাজের স্বার্থ ও কল্যাণের ব্যাপরে সবচেয়ে বেশি অবগত। কেন নয়, তিনিই তো তাকে সৃষ্টি ও উদ্ভাবন করেছেন। তার ব্যাপারে তাদের ইচ্ছা ও আকাঙ্খা হলো, সে যেন শরী‘আতের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনাসমূহ থেকে মুক্তি বা নিষ্কৃতি পায়। অর্থাৎ সে তার পর্দা, সচ্চরিত্রবান হওয়া ও লজ্জশীলতা থেকে নিষ্কৃতি পেতে চায়, যাতে সে হতে পারে এমন সস্তা পণ্য, যাকে প্রত্যেক লম্পট পেতে পারে।

“নারী স্বাধীনতা” নামক এই পরিভাষাটিকে তারা ব্যবহার করে পরিভাষাসমূহকে নিয়ে খেলাচ্ছলে বা কারচুপি করার ক্ষেত্রে; কিন্তু এর আড়াল থেকে তাদের লক্ষ্য হলো তাদের পরিকল্পিত চিন্তাধারার সম্প্রসারণ করা; আর এই পরিভাষাটি একটি ইয়াহূদী পরিভাষা। ইয়াহূদী দার্শনিকদের প্রণীত প্রটোকলসমূহের প্রথমটিতে এসেছে “আমরা হলাম প্রথম, যারা জাতির মধ্যে স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব ও সমতার ডাক দিয়েছে। এসব কথা, যা অজ্ঞরা সারা জগতে ছড়িয়ে দিয়েছে, এর পর তারা কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অথবা অসচেতনতা বশত এই কথাগুলোর বার বার প্রতিধ্বনিত করছে, আর স্বাধীনতা, ভ্রাতৃত্ব ও সমতা নিয়ে আমাদের আহ্বান ও আমাদের সহযোগীদের দ্বারা বিশ্বের সকল কর্ণার থেকে দলে দলে লোকদেরকে এক সারিতে টেনে নিয়ে এসেছে, আর তারাই আমাদের এ পতাকাকে বীরত্ব ও আত্মমর্যাদাবোধের সাথে বহন করে চলেছে।”

-পুরুষের সাথে সমতার দাবি:

আর এটাও তার পূর্ববর্তী বিষয়ের মতো, তার মাধ্যমে তারা আল্লাহ প্রদত্ত এমন স্বভাব-প্রকৃতির বিরোধিতা করে, যার ওপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহ তা‘আলা পুরুষ ও নারীকে দু’টি বিপরীতধর্মী স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন; আর এই সত্যকে ঐ ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ অস্বীকার করবে না, যার হৃদয় ও চক্ষুদ্বয়কে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং তারা চায় যে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ে সমান হউক। হ্যাঁ, এখানে শরী‘আতের সাধারণ নিয়ম-কানূনের ক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে সমতা রয়েছে। যেমন, দায়িত্ব অর্পণের নীতির ক্ষেত্রে সমতা, সাওয়াব ও শাস্তির মাধ্যমে প্রতিদানের ক্ষেত্রে সমতা, মালিকানা গ্রহণের ক্ষেত্রে সমতা, জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সমতা ইত্যাদি।

আর প্রত্যেক ক্ষেত্রে সমতার বিধান কায়েমের কথা যারা বলে, তাদের মধ্যে আল্লাহ কর্তৃক স্বভাব-প্রকৃতিই সেটার বিরোধিতা করে, যার ওপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন; আল্লাহর হিকমত ও শরী‘আত তো সেটা কখনও মেনে নেয় না; কিন্তু তারা এসব চাকচিক্যমান শ্লোগানসমূহ দ্বারা সাদাসিদে ও তাদের অনুরূপ লোকদেরকে প্রতারিত করে থাকে। আর বাস্তবেই তারা কিছু মানুষকে প্রতারিত করতে সক্ষম হয়েছে।

আর আমরা এখানে এসব ও অনুরূপ দাবি-দাওয়ার সমালোচনায় রত হতে চাই না, বরং আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এটা জানা যে, নারী ও সমাজের জন্য ষড়যন্ত্রমূলক পরিকল্পনা রয়েছে।

(ঘ) নারীর মূল কাজকে গুরুত্বহীন হিসেবে চিত্রিত করা:

তারা এই ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে তারা নারীকে তার আসল জগৎ বাড়ি-ঘর, পরিবার-পরিজন, শিশুদের লালন-পালন ও স্বামীর প্রতি মনোযোগ দেওয়ার মত কর্মকাণ্ড থেকে সরিয়ে দিয়ে এমন কাজে লিপ্ত করবে, যেখানে সে পুরুষের সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারে। সুতরাং সে শিল্পকারখানা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে, পুরুষের জন্য নির্দিষ্ট চাকরিতে ও যৌথভাবে নির্ধারিত চাকরিতে এবং এগুলো ছাড়া ও অন্যান্য পেশায় পুরুষের সহযোগী হবে।

(ঙ) পুরুষের কর্তৃত্বকে আধিপত্যবাদী ও বর্বর বলে চিত্রিত করা:

আর এখানে তাই বলা যায়, যা বলা হয়েছে “ঘ” অনুচ্ছেদে; অর্থাৎ এসব কথা তখনই কেউ বলতে পারে যখন কারও কাছে সৃষ্টিগত ও শরী‘আত তথা বিধানগত মানদণ্ডটি নষ্ট হয়ে পড়ে, যার ওপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন।

(চ) ‘বাস্তবতা অবশ্য পালনীয়’ নামক নীতির অনুসরণ:

আর এটা এইভাবে যে, তারা কতগুলো সুস্পষ্ট কাজ বা বিষয়কে গ্রহণ করে, অথচ তারা জনগণকে বলবে না যে, আমাদের উদ্দেশ্য এইরূপ অথবা আমরা এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত হতে চাই। আর তারা তাদের অভিপ্রায় বাস্তবায়নের জন্য একটি দীর্ঘ পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আর যখন তাদের ইচ্ছা-আকাঙ্খার সৌন্দর্যপূর্ণ বাহ্যিক রূপটি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন হবে, তখন তার সাথে নিষিদ্ধ কাজ জুড়ে দেবে; যেমন, নারীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ বিভাগ খোলা, অথচ বাস্তবে এসব বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। যেমন, নাট্য ও অনুরূপ অন্যান্য বিভাগসমূহ। সুতরাং যখন ছাত্রী পাশ করে বের হয়, তখন তার জন্য তার বিশেষ বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত চাকরি খোঁজা আবশ্যক হয়ে পড়ে, অতঃপর হারাম (নিষিদ্ধ) ও সংকটপূর্ণ কাজে নিপতিত হয়।

অপর আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো: অভ্যর্থনাকারিনী এবং হোটেলে কর্মরত নারী শ্রমিকদের প্রশিক্ষনের জন্য কিছু ইনস্টিটিউট অথবা প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করা। আর তারা এটিকে খুব গুরুত্বের সাথে ব্যক্ত করে; যাতে করে প্রথমেই বিরোধিতার সম্মুখীন না হয়, অতঃপর যখন তারা সনদ বা সার্টিফিকেট অর্জন করে, তখন তারা ঐ চাকুরির জন্য ইচ্ছা পোষণ করে। এভাবেই তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে থাকে। আল-কুরআনের ভাষায়:

﴿وَيَمۡكُرُونَ وَيَمۡكُرُ ٱللَّهُۖ وَٱللَّهُ خَيۡرُ ٱلۡمَٰكِرِينَ ٣٠﴾ [ سُورَةُ الأَنفَال : 30[

“আর তারা ষড়যন্ত্র করে, আর আল্লাহও কৌশল করেন; আর আল্লাহই সর্বশ্রেষ্ঠ কৌশলী।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ৩০]

বস্তুতঃ তারা এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্র, সমাজ ও অভিভাবকদেরকে এমনকি স্বয়ং নারীকেও তাদের নোংরা ষড়যন্ত্রের শিকারে নিপতিত করে।

(ছ) শিক্ষা:

আর ঐসব শত্রুগণ এবং তাদের দ্বারা প্রতারিত ব্যক্তিগণ শিক্ষাকে তাদের বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে, যাতে করে তারা এর আশ্রয়ে মুসলিম নারীর ধ্বংস ও বিপর্যয়ের জন্য তাদের চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিতে পারে। আর এর কারণ হলো, শিক্ষাপদ্ধতি তথা শিক্ষার সঠিক সিলেবাসের অনুপস্থিতি, যা নারী ও তার ভূমিকা সম্পর্কে সঠিক দিক-নির্দেশনা প্রদান করবে। যেমন, ইসলামে তার অধিকারসমূহ, তার ঘর ও শিশুদের প্রতি মাতৃত্বের দায়িত্বের বর্ণনা, তাদের লালন-পালনের পদ্ধতি বর্ণনা, মায়েদের প্রতি সন্তানরা তাদের কর্তব্য পালনের বিভিন্ন মাধ্যমসমূহের বর্ণনা এবং নারীকে তার দায়িত্ব পালনে সহযোগিতাকারী সিলেবাসের অনুপস্থিতি।

যেমনিভাবে তারা কৌশলে শিক্ষাকে কয়েকটি ক্ষেত্রে আক্রমন করেছে, যেমন, প্রথম শ্রেণীসমূহের মধ্যে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে মিশ্রিত শিক্ষার দিকে আহ্বান করা। বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে নারীদের জন্য এমন একাধিক বিভাগ ঢুকিয়ে দেওয়া নারীর জন্য যেসব বিভাগের কোনো প্রয়োজন নেই। ডাক্তারী ও অন্যান্য প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহ-শিক্ষার মাধ্যমে প্রাকটিক্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করা, বিদ্যালয় ও অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে শরীরচর্চা ও কসরৎ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করা।

(জ) পুরুষের কাজসমূহের মধ্যে নারীকে জোরপূর্বক ঢুকিয়ে দেওয়া:

আর এটা হলো গুরুত্বপূর্ণ ময়দানসমূহের মধ্যে অন্যতম, যাতে তারা প্রবেশ করেছে। অতঃপর তারা নারীকে এসব ময়দানে ঢুকানোর জন্য অনেক উপায়-উপকরণ ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে; অতঃপর তারা নিঃশর্তভাবে পুরুষদের প্রত্যেকটি ময়দানে তার অনুপ্রবেশ দাবি করেছে, অনুরূপভাবে হোটেল, বিমান ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক চেম্বার, কোম্পানি এবং এগুলো ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসমূহে, আর কান্না মিশ্রিত হাস্যকর ব্যাপার হলো, প্লাম্বারিং, বৈদ্যুতিক কাজ, কাঠমিস্ত্রীর পেশা, সৈনিক, পুলিশ ইত্যাদির মতো পেশাগত কর্মকাণ্ডে নারীদেরকে প্রবেশাধিকার দেওয়ার দাবি করা। আমাদের প্রতিপালক অতি মহান ও পবিত্রময়, এটা হলো বড় ধরনের অপবাদ [এসব বাক্য ঐসব পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত, যে ব্যক্তি এই ব্যাপারে আরও বিস্তারিত জানতে চাইবে, সে যেন “আউদাতুল হিজাব” ( عودة الحجاب ), কিতাবটি দেখে নেয়। তাতে আরও রয়েছে, আরব সমাজসমূহের মধ্যে মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে আক্রমনের সূচনা, বইটিকে সংক্ষেপ ও পরিমার্জন করেছেন ড. বকর আবূ যায়েদ “হিরাসাতুল ফদিলত” ( حراسة الفضيلة ), গ্রন্থে, আল্লাহ তাদের সকলকে তাওফীক দান করুন।]।

২. এই সম্মিলিত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য:

মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে এই চিন্তাধারা ও নিকৃষ্ট পদক্ষেপসমূহের বিপরীতে দায়িত্ব ও কর্তব্যটি প্রশাসনযন্ত্র, আলিম, ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ, দা‘ঈগণ ও নারীদের আইনানুগ অভিভাবকগণের মধ্যকার একটি যৌথ দায়িত্ব ও কর্তব্যপূর্ণ কাজ। আর এই দায়িত্ব ও কর্তব্যের মাঝে তাদের সাথে মুসলিম নারী আধাআধি ভাগে অংশীদার হবে। আর তাই আমরা এখানে মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্যকে সংক্ষেপে বর্ণনা করব; তবে তার অর্থ এই নয় যে, অন্যান্যদেরকে তাদের দায়িত্ব থেকে অবকাশ দেওয়া হয়েছে।

মুসলিম নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে:

(ক) নারী কর্তৃক নিজেকে জ্ঞানে, চিন্তায় ও কর্মে শক্তিশালীকরণ; আর এই শক্তিশালীকরণের সিলেবাস হলো তা, যা তার নিজের ব্যাপারে দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ বর্ণনা প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে; আর এখানে বিশেষ করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে, জ্ঞান অর্জন, পাঠ, ব্যাপকভাবে ইসলামিক সাংস্কৃতির জ্ঞান লাভের মাধ্যমে নিজের সংস্কৃতির ধারণ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি শক্তিশালী ঈমানসহ শরী‘আতের গুঢ়রহস্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে জানা। কেননা তিনি শরী‘আত হিসেবে যে কোনো বিষয়কে নির্দেশ ও অনুমোদন করেছেন, তা হিকমতের কারণেই করেছেন, তাতে সৃষ্টির কল্যাণ ও স্বার্থ জড়িত রয়েছে।

(খ) জ্ঞান অর্জন: কারণ, ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, মুনাফিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ইত্যাদি অনেক শত্রু রয়েছে, যারা বিভিন্ন বিভাগে তাকে (নারীকে) ঘায়েল করার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছে। আর তারা কখনও কখনও আমাদের গোষ্ঠীর সন্তানদের মধ্য থেকে হয়ে থাকে এবং তারা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করে; কিন্তু তারা হিদায়াত পাওয়ার পর পথভ্রষ্ট হতে চায়। ফলে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হয় এবং অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে, আর মানুষকে প্রথমই যা থেকে সতর্ক থাকতে হয়, তা হচ্ছে তার সবচেয়ে নিরাপদ স্থান, যাতে সে সেখান থেকে দংশিত না হয়। যেমন বলা হয়: “নিরাপদ স্থান নিয়েই সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়”। বস্তুতঃ ঐসব লোক তাদের নিজেদেরকে মুসলিম নারীর কল্যাণের জন্য একজন অশ্রুসিক্ত কল্যাণকামী হিসেবে প্রকাশ করে এবং তার স্বার্থ, কল্যাণ ও অধিকার প্রশ্নে কাঁদার ভান করে; কিন্তু তার কাপড়ের নীচে রয়েছে ষড়যন্ত্রকারী হায়েনা, যে এই নিঃস্ব নারীকে ধ্বংস করতে চায়। আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করুন, কোনো দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে!

(গ) আর এই জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি মুসলিম নারীকে উপরোক্ত শত্রুদের উপায়-উপকরণ, পরিকল্পনা, দাবি-দাওয়া, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহের ব্যাপারেও অবগত থাকতে হবে:

মন্দকে জান, নয় মন্দের জন্য,

বরং তা থেকে বেঁচে থাকার জন্য।

আর শত্রুদের এসব উপায়-উপকরণ জানার মাধ্যমে অতিরিক্ত সাবধানতা ও রক্ষণাবেক্ষন করা সম্ভব হবে।

(ঘ) উপায়-উপকরণের যতটুকু হাতে আছে, তার সবটুকু নিয়ে এবং প্রত্যেক নারী তার সামর্থ্য অনুযায়ী এই আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। সুতরাং এই ব্যাপারে একজন ছাত্রীর দায়িত্ব অন্যান্যদের চেয়ে অনেক বড়; আর শিক্ষিকা এবং ছোট শিশুদের লালনপালনকারী নারী ও অন্যান্যদের দায়িত্ব ও কর্তব্যও অনুরূপ। আরও উচিৎ এসব প্রতিরোধ কার্যক্রম সর্বদা চালিয়ে যাওয়া। কেননা বিষয়সমূহের মধ্যে এই বিষয়টি খুবই ভয়ঙ্কর, জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ। ভেবে দেখ, তোমাদের অবস্থা কেমন হবে, যখন এসব শত্রুরা তাদেরউদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে!! আর তখন,

নারী তার চেহারা থেকে পর্দা খুলে ফেলবে এবং তার চুলের ব্যাপারে (পর্দাকে) সে নিরর্থক মনে করবে।

সে অনাবৃত অথবা আংশিক আবৃত শরীরে ভ্রমণ করবে।

পুরুষের কর্মক্ষেত্রের দিকে বেরিয়ে যাবে।

পুরুষদের সাথে অবাধ মেলামেশা করবে।

একাকী গাড়ি চালাবে।

সে তার বাচ্ছাদেরকে লালন-পালনকারী সংস্থা কিংবা কাজের মেয়ের নিকট রেখে যাবে।

সে পুরুষদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তাদের সাথে বিনিদ্র রাত কাটাবে।

সে কলকারখানার ধোঁয়া দ্বারা দূষিত হবে।

সে দুষ্ট প্রকৃতির লোকদের জন্য সাজগোছ করবে এবং তার স্বামী ও সন্তানদের ছেড়ে যাবে।

এগুলো ছাড়া আরও অনেক কিছু। তাদের ইচ্ছা, উদ্দেশ্য ও দুরভিসন্ধির তো কোনো শেষ নেই।

সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির প্রত্যাশী একজন সফল মুসলিম নারীর কর্তব্য হলো, সে তার শ্রেণীভুক্ত মেয়েদেরেকে সাথে নিয়ে এই যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।

(ঙ) আরও যেসব জ্ঞান তাকে উপকৃত করবে, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: কাফির নারীদের অবস্থাদির ব্যাপারে জেনে রাখা; আর কাফের নারীরা নিজেদেরকে উজাড় করে দেওয়ার কারণে যে সকল ধ্বংস ও দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে সেটাও জানা। তারা মূলতঃ অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে জীবনযাপনে করছে। সে হয়ে গেছে অপমানিত ও তুচ্ছ এক নারী, যে তার কুকুর ও বিড়ালীকে কোলে নিয়ে মৃত্যুবরণ করে। তার যৌবন ও সৌন্দয্যের সময় তাকে নিয়ে খেলোয়াড়রা খেলে, তারপর সে হয়ে পড়ে সে টিস্যুর মত, যার দ্বারা মোছার কাজ করা হয় এবং কাজ শেষ হয়ে গেলে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। আর তাকে আরও তুলনা করা যায় রাস্তার উপরের শৌচাগারের মতো, যাতে প্রত্যেকেই তা প্রস্রাবের কাজ সেরে তার ভ্রমণ অব্যাহত রাখে। সুতরাং যখন মুসলিম নারী জানতে ও বুঝতে পারবে যে তার পরিণতি ঐসব কাফির নারীদের চেয়ে ভিন্ন হবে না, তখন সে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইবে এবং নিজেকে এই ধরনের পঙ্কিল কাজে জড়িয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করবে।

(চ) সে তার নিজের, ঘরের ও সমাজের সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্কারমূলক ভূমিকা পালন করবে, যা পূর্বে আমরা বর্ণনা করেছি। সুতরাং সে প্রভাব সৃষ্টি করবে, প্রভাবিত হবে না; সংস্কার করবে, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে না; কাজের হবে, অকর্মা হবে না; অনুসরণীয় হবে, অনুগামী হবে না এবং তার এই মিশন শেষ হবে জান্নাতে প্রবেশ ও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন