মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
মুসলিম নারী এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য
লেখকঃ অধ্যাপক ড. ফালেহ ইবন মুহাম্মাদ আস-সুগাইর
৪
নারী এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আলোচনা কেন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/660/4
প্রথমত: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাকে পুরুষের স্বভাব-প্রকৃতি থেকে ভিন্ন বিশেষ স্বভাব ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, আর সে থেকেই তিনি তাকে এমন কতগুলো বিধিবিধানের সাথে বিশেষিত করেছেন, যেগুলো ঐ বিশেষ স্বভাব-প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। উদাহরণস্বরূপ হায়েয (ঋতুস্রাব), নিফাস, উভয় অবস্থা থেকে পবিত্রতা অর্জন, দুধ পান করানো এবং সালাত (নামায), সিয়াম (রোযা), হজ প্রভৃতি ধরনের ইবাদতের কিছু কিছু বিধানের সাথে যা সংশ্লিষ্ট। সুতরাং পুরুষ ও নারী গবেষকদের ওপর আবশ্যকীয় কর্তব্য হলো, তারা এ বিষয়ের প্রতি সংশ্লিষ্ট করে তাদের আলোচনা নির্দিষ্ট করবেন।
দ্বিতীয়ত: একজন নারীর ওপর কিছু আবশ্যকীয় দায়িত্ব ও মহান আমানত রয়েছে, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তার ওপর ন্যস্ত করেছেন। সে সাধারণভাবে আকীদা-বিশ্বাস, পবিত্রতা অর্জন, সালাত (নামায), সিয়াম (রোযা) প্রভৃতির মত শরী‘আতের সকল বিধিবিধানের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত। আর তার জন্য আরও কিছু নিয়ম-কানূন রয়েছে, একাধারে সে লালন-পালনকারিনী, মাতা ও স্ত্রী হওয়ার কারণে তাকে সেগুলোর সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কিত করা হয়েছে। সুতরাং প্রত্যেক অবস্থায় তার ওপর আবশ্যক হলো সে ঐ নিয়ম-কানূনসমূহ যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠিত করবে। অতএব তাকে নিয়ে মোটামুটিভাবে ও বিস্তারিতভাবে আলোচনা হওয়া আবশ্যক। আরও আবশ্যক সুস্পষ্টভাবে আলোচনা ও পর্যালোচনা করা, যাতে মুসলিম নারী তার মধ্য দিয়ে ঐসব দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানতে পারে।
তৃতীয়ত: প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যব্যাপী ইসলামের শত্রুগণের পক্ষ থেকে বিগত যুগে মুসলিম নারীরা ঐ নগ্ন হামলার শিকার হয়েছে এবং মুসলিম সন্তানদের কেউ কেউ সেই প্রয়াসকে গলধঃকরণ করেছে; ফলে তারা ঐ কলমসমূহ যা লিখেছে, তা-ই আওড়াতে থাকে এবং ঐ আওয়াজসমূহের প্রতিধ্বনি-ই করতে থাকে, যাতে নারী তার আপন গৃহ থেকে বেরিয়ে যায়, সে পুরুষের সাথে অবাধে মেলামেশা করতে পারে এবং তাকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে এবং তার শিশু সন্তানদের যত্ন নেয়ার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে পারে। ঐ আওয়াজসমূহ মুসলিম নারীকে নিয়ে চিৎকার করে বলে: “তুমি যে অবস্থানে রয়েছো, তা ভেঙ্গে চুরমার করে দাও; তোমার চতুর্পাশে বিস্তৃত পর্দাসমূহ ছিঁড়ে ফেল; আমাদের দিকে বের হয়ে আস, যাতে তুমি আলো দেখতে পাও, যে আলো থেকে তুমি আড়ালে ছিলে যুগ যুগ ধরে। পুরুষের কর্তৃত্ব থেকে স্বাধীনতা অর্জন কর, মর্যাদার শর্তসমূহ থেকে মুক্তি লাভ কর, তোমার পর্দা খুলে ফেলে দিয়ে বের হয়ে আস, ঘর থেকে বের হয়ে আসার মাধ্যমে তোমার অস্তিত্ব ও কণ্ঠস্বরের প্রমাণ দাও, জীবনের প্রতিটি লোভনীয় বস্তু থেকে তোমার অংশটুকু গ্রহণ করার মাধ্যমে তুমি নিজেকে উপভোগ কর, তোমার স্বাধীন রুচি ব্যতীত অন্য কিছু যাতে তোমাকে শাসন না করে এবং বই পুস্তকের প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় তোমার যাদুকরী কোমলতা ছাপিয়ে, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা ও রূপ-সৌন্দর্য প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুমি ব্যবসা চালিয়ে যাও!”
আরব তরুনী! তুমি কি দারিদ্রতা চাও, অথচ সৌন্দর্য একটি বড় গচ্ছিত সম্পদ,
তুমি কি পবিত্রতা চাও, অথচ এ যুগ হচ্ছে উপভোগের যুগ!
আগে অবশ্য মান-মর্যাদা রক্ষার যুগ ছিল, এখন সেটা তো শেষ হয়ে গেছে,
এ যুগ তো নতুন অনেক কিছু করেছে, সুতরাং তুমি চমৎকার কিছু কর! [দ্রষ্টব্য: সাকাফাতুল মুসলিমা ( ثقافة المسلمة ), পৃ. ১৭।]
এই নগ্ন হামলা এর বিরুদ্ধে দাবি করে জোটবদ্ধ পরিশ্রম বা চেষ্টা-সাধনা, যাতে মুসলিম নারী তার বিরুদ্ধে প্রণীত পরিকল্পনাকে পরিপূর্ণ মনোযোগের সাথে বুঝতে পারে। অতঃপর সে পর্যবেক্ষণ করবে এবং তার পথ সে সচেতন দৃষ্টিতে গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
চতুর্থত: আর তা তৃতীয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট। উল্লিখিত নগ্ন হামলার সাথে সাথে নারী বিষয় নিয়ে অনেক ফেতনা-ফাসাদ ও বিশৃঙ্খলার উদ্ভব সাধন করা হয়েছে। যেগুলো ইসলামী শরী‘আতের ব্যাপারে সচেতন মুসলিম নারীদের কারও কারও মধ্যেও দেখা যায়। বস্তুতঃ এ ফিতনা ও বিশৃঙ্খলা নিয়ে এমন কিছু লোক হাঁকডাক দিচ্ছে, যারা চায় নিজেকে প্রকাশ করতে, আরও চায় তার জন্য এমন একটি রায় বা মত হবে, যা তার সাথে সম্বন্ধযুক্ত হবে। অবশেষে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নারীর অনেক ব্যাপার নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে দু’ভাগে মানুষ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর বিষয়টি শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলো না। ফলে আমরা দৈনিক সংবাদপত্রগুলো এবং ম্যাগাজিনসমূহে বিখ্যাত ও অখ্যাত ব্যক্তিবর্গের হাতে লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধ অধ্যয়ন করি— কারণ, তারা দাবি করে যে, শরী‘আত কারও একান্ত বিষয় নয়, সবাই এতে মত প্রকাশ করার অধিকার রাখে। [এই উক্তিটি বর্তমানে খুব বেশি ধ্বনিত হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে যে ব্যক্তি বিশেষজ্ঞ না হওয়া সত্ত্বেও শরী‘আত সম্পর্কে কথা বলতে ইচ্ছা পোষণ করে সে এই গণ্ডিতে অনুপ্রবেশের সুযোগ পায় এবং যেকোনো কিছু দলিল থাকুক বা না থাকুক নিজের মর্জিমতো হারাম করতে কিংবা হালাল করতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা কোন প্রকার নিয়মনীতি বা বিধিবিধানের তোয়াক্কা না করেই যুক্তি দেখায়: ‘এটা আমার মত, আর ওটা তোমার মত’; ‘এটা আমার বুঝ, আর এটা তোমার বুঝ’।]
তারা চিকিৎসা, প্রকৌশল ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কোনো কথা বলতে রাজি নয়; কারণ, তারা সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়; কিন্তু তারা মূর্খতা ও অজ্ঞতা সত্ত্বেও আল্লাহর শরী‘আতের মধ্যে নাক গলানোটাকে গ্রহণ করেছে, আল্লাহ তুমি পবিত্র! এটা কত বড় অপবাদ!!
এটা বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের ওপর গুরু দায়িত্ব চাপিয়ে দেয় যে, সত্য বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা-প্রচেষ্টা ও গবেষণা চালিয়ে যাবেন, যতটুকু আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে বর্ণনা, দলীল-প্রমাণ ও জ্ঞানবুদ্ধির শক্তি থেকে দান করেছেন।
পঞ্চমত: মুসলিম নারী পরবর্তী যুগসমূহে কাফির ও মুনাফিকদের মধ্য থেকে প্রত্যেক হাঁকডাককারী ও হাঁকডাককারিনীর বাহন ও ফটক হিসেবে গৃহীত হয়েছে, যাতে তারা এই দীনের অস্তিত্বকে ধ্বংস করে দিতে পারে; কারণ, তারা জানে যে, নারী যখন তার ঘর থেকে বের হয়ে যাবে, তার শিশুসন্তানদেরকে মুরব্বী ও কাজের মহিলার নিকট রেখে যাবে, পুরুষদের ময়দানসমূহে অনুপ্রবেশ করবে ও তাদের সাথে মেলামেশা করবে, তাদের কাপড় পরিধান করবে, তার চেহারা ও শরীরের কোনো কোনো অংশ উন্মোচিত করবে, শিল্পকারখানার ধোঁয়ায় নিজেকে কলুষিত করবে এবং খরিদ্দার ও পর্যবেক্ষকদের জন্য তার দেহের বাহ্যিক দিকটিকে সুসজ্জিত করবে, আর এভাবে সে পুরুষের সাথে তার কর্মক্ষত্রে প্রতিযোগিতা করবে এবং তার প্রকৃত ময়দানকে সে উপেক্ষা করবে; তখনই সে বিকৃতির প্রথম পদক্ষেপটি গ্রহণ করবে এবং সঠিক পথ থেকে দূরে সরে যাবে; আর এভাবেই তারা নারীকে নষ্ট-ভ্রষ্ট করে দিবে এবং শিশু ও তার লালন-পালন ও আদব-কায়দার প্রশিক্ষণের ব্যাপারে অবহেলা করবে, আর তার পুরুষের অধিকারের দিকে মনোযোগ দিবে না, আর তা থেকেই পুরো সমাজে বিশৃঙ্খলা পুনঃপ্রবর্তিত হবে।
আমি এখানে বিস্তারিত আলোচনা করতে চাই না, কিন্তু এটা বিজ্ঞজনদের ওপর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও দৃঢ় অবস্থান গ্রহণকে বাধ্যতামূলক করে দেয়। কেননা প্রয়োজনের সময় থেকে আলোচনা বিলম্বিত করা বৈধ নয়।
ষষ্ঠত: দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন দিকে নারীর উদারতার বিষয়ে যা লক্ষ্য করা যায়, সেটি মোটেই সহজ ব্যাপার নয়, চাই তার আচার-আচরণগত দিক হউক অথবা তার কাজকর্মের দিক হউক অথবা পুরুষদের সাথে তার মেলামেশার ব্যাপারে বা তাদের সাথে নির্জনে সময় কাটানোর ব্যাপারে হউক অথবা তাদের সাথে কোনো প্রকার বাধ্য-বাধকতা ছাড়া অবাধ কথা-বার্তা বলার ব্যাপারে হউক অথবা তার সাজসজ্জা, পোশাক-পরিচ্ছদ, পর্দা ও শরী‘আতের সীমা থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে শৈথিল্য প্রদর্শনের ব্যাপারে হউক, অনুরূপভাবে তার নিজ গৃহে তার কাজকর্ম ও ঘর থেকে বেশি বেশি বাইরে গমন করা এবং প্রাচ্য অথবা পাশ্চাত্য থেকে আগত বিভিন্ন ফ্যাশান ও শ্লোগানে প্রভাবিত হওয়ার ক্ষেত্র্রে নমনীয়তার ব্যাপারে হউক। আমি বলব: এই উদারতা ও শৈথিল্য থেকে যা দেখা যাচ্ছে, তা অত্যন্ত যত্নসহকারে দাবি করে মুসলিম নারী বিপর্যয়ে পতিত হওয়ার পূর্বেই তাকে উদ্দেশ্য করে আবশ্যকীয় দায়িত্ব পালন করা, যেমনিভাবে অনেক দেশে বিপর্যয়ে পতিত হয়েছে তার বোন ও মুসলিম নারীসমাজ। সুতরাং সে এমন হয়ে গেছে যে, আপনি আকার-আকৃতি ও বেশভূশায় তার মাঝে ও কাফির নারীর মাঝে কোনো পার্থক্য করতে পারবেন না।
সপ্তমত: আজকের মুসলিম নারীর সাথে কয়েকটি প্রবণতার দ্বন্দ্ব চলছে, এগুলোকে মোটামুটি নিম্নলিখিতভাবে উল্লেখ করা যায়:
প্রাচীন সামাজিক প্রবণতা: নির্দিষ্ট প্রকৃতির লোক এবং প্রত্যেক প্রাচীন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরার প্রতি আহ্বানকারী ব্যক্তি; এগুলোর মধ্যে কোনোটি শরী‘আত স্বীকৃত আর কোনোটি শরী‘আত স্বীকৃত নয়, সে দিকে কোনো প্রকার দৃষ্টি দেওয়া ছাড়াই শুধুমাত্র প্রথার অনুসরণ ও অনুকরণের মাঝে সীমাবদ্ধ।
প্রত্যাখ্যানকারী প্রবণতা: আর তা এমন এক প্রবণতা, যা প্রতিটি প্রচীন বিষয়কেই প্রত্যাখ্যান করে, আর নারীকে অতীতের আড়াল ও শরী‘আতের শিক্ষাসমূহ থেকে বের হয়ে আসার জন্য আহ্বান করে এবং তাকে ছোট হউক বা বড় হউক, আকৃতিগত হউক বা বিষয়বস্তুগত হউক প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাফির নারীর অনুসরণের জন্য ডাকে।
মাঝামাঝি প্রবণতা: আর তা এমন এক প্রবণতা, যার প্রতি জাতির চিন্তাবিদগণ ও শরী‘আতের অনুসারী ব্যক্তিবর্গ আহ্বান করে এবং বলে: “হে নারী! তুমি বিবেক দিয়ে অনুধাবন কর। কেননা, তুমি মুসলিম নারী, তুমি জান যে, তোমার প্রতিপালকের নির্দেশ গ্রহণ করার মধ্যেই তোমার কল্যাণ; আর তিনিই সে সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন, যা তোমাকে উপকৃত করবে। আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য অনেক নির্দেশনা অবতীর্ণ করেছেন, তুমি সেগুলো গ্রহণ কর, কারণ তাতে তোমার মুক্তি নিহিত রয়েছে। আর এমন প্রত্যেকটি বিষয়, যেদিকে তারা তোমাকে পরিচালিত করে, চাই তা প্রাচীন প্রথা হউক অথবা আধুনিক ষড়যন্ত্র হউক, তোমার উচিৎ হলো, তুমি এগুলোকে এই পরিমাপক দ্বারা ওজন করে নেবে, অতঃপর তুমি গ্রহণ করবে অথবা প্রত্যাখ্যান করবে।” [দ্রষ্টব্য: সাকাফাতুল মুসলিমা ( ثقافة المسلمة ), পৃ. ১৭-১৮]
মুসলিম সমাজে অনেক নারী সে যে সমাজে বসবাস করে, সেই সমাজের প্রবাহের শক্তি বিবেচনায় বিভক্ত হয়ে গিয়েছে এবং নারীগণ এসব আওয়াজের ধাক্কাধাক্কির ফলে অনেক দলে পৃথক হয়ে গিয়েছে। ফলে মুসলিম নারীর সামনে বহু পথের উদ্ভব হলো, প্রত্যেকেই নারীর স্বার্থ ও কল্যাণ চিন্তা করার কথা বলে, তার অধিকার দাবি করে এবং তাকে নিয়ে কান্নাকাটি করে ও কান্নার ভান করে। তাই অনেক নারীর নিকটই মিথ্যার সাথে সত্যের মিশ্রণ হয়ে গেছে এবং দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও সিদ্ধান্তহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
একদিকে কারও ওপর কাফির ও ফাসিকদেরর আওয়াজ ও চেঁচামেচি প্রভাব বিস্তার করেছে এবং এই গোষ্ঠীর কলমের লেখালেখিতে প্রতারিত হয়ে ভ্রষ্ট এই ধারায় চলে গেছে। ফলে সে শরী‘আতের সীমালঙ্ঘন করে পর্দা খুলে ফেলেছে, পুরুষদের সাথে মেলামেশায় গিয়েছে এবং শিল্পকলা, অভিনয়, গান ও নৃত্যের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
আরেকদিকে কেউ কেউ আছে এক পা এগুলে দু‘পা পেছায়; সে দ্বিধাগ্রস্ত- একবার সে বস্তুবাদী চিন্তা করে, আরেকবার সে তার স্বভাবধর্ম ও স্রষ্টার শিক্ষাসমূহের দিকে ফিরে আসে।
অন্যদিকে আছেন রক্ষণশীল বুদ্ধিমান নারী, যিনি তার প্রতিপালকের শিক্ষা ও দর্শনসমূহ সংরক্ষণ করেন এবং ঈমান ও তুষ্টতা সহকারে সেই শিক্ষা অনুযায়ী কাজ করেন। তিনি এই দীনকে শক্তভাবে বহন ও আঁকড়ে ধরেছেন এবং বিজাতীয় বিনষ্ট বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করেছেন। আর তিনি তার প্রতিপালকের দিকে অন্যদেরকে মাথা উঁচু করে দৃঢ়তার সাথে আহ্বান করেন এবং তার ব্যক্তিত্ব, পর্দা ও পবিত্রতা রক্ষা করে চলেন। তার স্বামীর অধিকার বাস্তবায়নকারিনী হিসেবে এবং তার শিশুসন্তানদের লালনপালনকারিনী হিসেবে এই জীবনে তিনি তার প্রকৃত দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করেন।
এই প্রতিটি অবস্থাই আমাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে অন্ধকার দূর করার জন্য, যা মুসলিম নারীর বিষয়ে এই যুগ বা সময়কে প্রভাবিত করেছে, যাতে করে প্রত্যেক সত্যানুসন্ধানী মুক্তিকামী পুরুষ অথবা নারীর জন্য পথ স্পষ্ট হয় এবং তার মাইলফলকগুলো পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়ে উঠে।
অষ্টমত: মুসলিম সমাজ তথা মুসলিম জাতির পরিপূর্ণতার জন্য এমন রক্ষণশীল আদর্শ নারীর প্রয়োজন, যে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে জানে এবং তার ওপর অর্পিত আমানতকে অনুধাবন করে; যে নিজের পথ দেখতে পায় এবং তার নিজের অধিকার ও অন্যের অধিকার সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে।
আমাদের প্রয়োজন এমন মুসলিম মুমিন নারীর, যার রয়েছে তার প্রতিপালক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অগাধ বিশ্বাস। সুতরাং তিনি তাকে প্রতিপালক, স্রষ্টা ও মাবুদ বা উপাস্য বলে বিশ্বাস করেন; আরও বিশ্বাস করেন তাঁর ফিরিশতাগণের প্রতি, তাঁর কিতাবসমষ্টি ও রাসূলগণের প্রতি; আর পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো ও মন্দের প্রতি। অতঃপর এই ঈমান অনুযায়ী তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন তার এই জীবনের চিন্তাভাবনাগুলোকে; জগত, জীবন ও মানুষ সম্পর্কে।
আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রতিপালকের শরী‘আত তথা বিধিবিধানকে সংরক্ষণ করেন, অনুধাবন করেন তাঁর আদেশসমূহকে। অতঃপর সে অনুযায়ী কাজ করেন। আর অনুধাবন করেন তাঁর নিষেধসমূহকে, অতঃপর সেগুলো থেকে দূরে থাকেন। তার নিজের অধিকার এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে সম্যক জানেন, অতঃপর এর মাধ্যমে তার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেন।
আর আমাদের প্রয়োজন এমন সচেতন নারীর, যিনি তার প্রকৃত দায়িত্বের বিষয়গুলো এবং তার গৃহরাজ্যের বিষয়গুলো সম্পর্কে জ্ঞানলাভ করেন। অতঃপর এই ছোট্ট রাজ্যের অধিকার সংরক্ষণ করেন, যে রাজ্য পুরুষদের প্রস্তুত করে এবং শিশু-কিশোরদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসায় ও তাঁর দীনের সেবায় গঠন করে তোলে।
আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যার বাহ্যিক দিক তার অভ্যন্তর সম্পর্কে বলে দেয়। কারণ, তিনি প্রাচ্য বা পাশ্চাত্যের দ্বারা প্রভাবিত নন, প্রভাবিত নন কোনো প্রবণতা বা ফ্যাশন দ্বারা; যিনি প্রত্যেক ধ্বনি বা চীৎকারের অনুসরণ করেন না। তিনি তার বাহ্যিক ক্ষেত্রে মডেল বা আদর্শ, যেমনিভাবে অভ্যন্তরীণ দিকেও আদর্শ। তার শরীর সংরক্ষিত, আর তার হৃদয় ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ এবং তার পবিত্রতা ও সচ্চরিত্রতার দিকটি সুস্পষ্ট, আর তার পোষাক-পরিচ্ছদ ও অন্তরের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাই পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র। তিনি ঈমান এনেছেন, শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং আমল করেছেন।
আর আমাদের প্রয়োজন এমন আদর্শ আল্লাহ্র পথে আহ্বানকারী নারীর, যিনি তার কথার পূর্বে কাজের দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার দিকে আহ্বান করেন। তিনি মানুষের জন্য ভালো ও কল্যাণকে পছন্দ করেন, যেমনিভাবে তা তিনি নিজের জন্য পছন্দ করেন; তিনি একে উপদেশ দেন, ওকে নির্দেশনা প্রদান করেন আর আরেকজনের অন্যায় কাজের সমালোচনা করেন। তিনি লালন-পালন করেন, গঠন করেন, ভুলত্রুটি সংশোধন করেন, সমস্যা সমাধান করেন, তার সম্পদ দ্বারা দান-সাদকা করেন, তার সাধ্যানুসারে কর্মতৎপরতা পরিচালনা করেন, দাওয়াতী কাজ নিয়েই তিনি জীবনযাপন করেন, কি দাঁড়ানো অবস্থায়, কি তার বাসায় ঘুমন্ত অবস্থায়, কি তার কাজের মধ্যে- এককথায় যে কোনো স্থানে, যে অবস্থায়ই থাকেন।
আর আমাদের প্রয়োজন এমন নারীর, যিনি তার শত্রুদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সচেতন থাকেন, অতঃপর তাদের ফাঁদে পা দিয়ে তাদের আনুগত হওয়া থেকে, তাদের আহ্বানসমূহে সাড়া দেওয়া থেকে এবং তাদের জীবন-পদ্ধতি অনুসরণ থেকে সতর্ক থাকেন। তিনি সদা-সতর্কতা অবলম্বন করেন এবং ঐসব ভ্রান্ত প্রচার-প্রপাগান্ডা থেকে সতর্ক করেন, যেগুলো নারীকে তাদের প্রপাগান্ডার বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে— যার বিবরণ পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে।
এই প্রয়োজনীয়তাই বিজ্ঞজন ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে তাদের বক্তব্য-বিবৃতি ও লেখনীর মাধ্যমে তাদের চেষ্টা-সাধনা শুরু করতে বাধ্য করে। যাতে তারা মুসলিম নারী ও তার অভিভাবকের দৃষ্টি খুলে দেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন তার কাঁধের ওপর অর্পিত আমানতের কথা।
নবমত: পুরুষের ওপর প্রভাব সৃষ্টির ক্ষেত্রে নারীর বড় ধরনের ভূমিকা রয়েছে। তিনি যদি মা হন, তবে তার জন্য নির্দেশ দেওয়া ও নিষেধ করার বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আর তার (পুরুষের) ওপর আবশ্যক হলো তার আনুগত্য করা এবং সৎকাজের ব্যাপারে করা তার আদেশসমূহের বাস্তবায়ন করা।
আর সে যদি স্ত্রী হয়, তবে তার অধিকার আছে স্বামীকে আল্লাহ্র আনুগত্যের ব্যাপার উৎসাহিত ও প্রলুব্ধ করার এবং অন্যায় ও অবাধ্যতার ব্যাপারে সতর্ক করার। আর স্বামীর ক্ষেত্রে স্ত্রীর ভূমিকাকে গণ্ডমূর্খ ছাড়া অন্য কেউ অস্বীকার করে না। আর অনুরূপভাবে তার প্রভাব বিদ্যমান যদি সে বোন, কন্যা বা নিকটাত্মীয়ও হয়।
আর এই জন্য নারীর ওপর আবশ্যক হলো, সে এই মহান ভূমিকা অনুধাবন করবে, যাতে তার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালন করতে পারে।
দশমত: একজন নারী একজন পুরুষের চেয়ে নারী, নারীসমাজ ও নারীদের মাঝে প্রচলিত প্রবণতা সম্পর্কে বেশি ওয়াকিফহাল। তেমনিভাবে সে তাদের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ প্রভাব বিস্তারকারী বিষয়গুলো সম্পর্কে বেশি অবগত। সে-ই পুরুষের চেয়ে ক্ষমতাবান এই পথে চলতে।
পটভূমি হিসেবে উল্লেখিত বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিই নারী প্রসঙ্গে এবং নারীর দায়িত্ব, অধিকার, জবাবদিহিতা ও এই সামগ্রিক সীমারেখা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছে; যার মাধ্যমে একজন নারী তার ভূমিকা সুন্দরভাবে পালন এবং তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে আদায় করতে পারে।
নারীর দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং এগুলোর প্রকৃতি ও আদায়ের পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনার পূর্বে এ কথা বলে রাখা প্রয়োজন যে, আমাদের সঠিক দীনের সর্বজনস্বীকৃত ও নিশ্চিত বিধান হচ্ছে: আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা পুরুষ ও নারীর মধ্যে দায়িত্ব অর্পণের ক্ষেত্রে সমতা বিধান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“আমরা তো আসমান, জমিন ও পর্বতমালার প্রতি এই আমানত পেশ করেছিলাম, তারা তা বহন করতে অস্বীকার করল এবং তাতে শঙ্কিত হলো, কিন্তু মানুষ তা বহন করল। সে তো অতিশয় যালিম, অতিশয় অজ্ঞ।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭২]
ইবন আব্বাস, মুজাহিদ, সা‘ঈদ ইবন জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম প্রমুখ বলেন, আমানত হলো ফরযসমূহ।
আর কাতাদা রহ. বলেন, আমানত হলো দীন, ফরযসমূহ এবং শরী‘আতের সীমারেখা বা দণ্ডবিধিসমূহ।
আর উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমানতের মধ্যে অন্যতম হলো নারীকে তার লজ্জাস্থানের ব্যাপারে আমানত রাখা হয়েছে।
আর ইবন কাছীর রহ. বলেন, এসব কথার মধ্যে কেনো বিরোধ নেই। বরং এগুলো একই কথা প্রমাণ করছে যে, সেই আমানতটি হচ্ছে তাকলীফ তথা (শরী‘আতের বিধিবিধানের) দায়িত্ব-প্রদান। [তাফসীরু ইবন কাছীর, ৬/ ৪৮৮-৪৮৯]
আর এই কথাও সর্বস্বীকৃত যে, মুসলিম নারী তার দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করলে সেও পুরুষের মতোই প্রতিদান পাবে। আল্লাহ তা‘আলা কর্মসমূহের প্রতিদানের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন,
“অতঃপর তাদের রব তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমি তোমাদের মধ্যে কর্মনিষ্ঠ কোনো নর অথবা নারীর কর্ম বিফল করি না, তোমরা একে অপরের অংশ। সুতরাং যারা হিজরত করেছে, নিজ গৃহ থেকে উৎখাত হয়েছে, আমার পথে নির্যাতিত হয়েছে এবং যুদ্ধ করেছে ও নিহত হয়েছে, আমি তাদের পাপ কাজগুলো অবশ্যই দূরীভূত করব এবং অবশ্যই তাদেরকে দাখিল করব জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার; আর উত্তম পুরস্কার আল্লাহরই নিকট। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৫]
“মুমিন হয়ে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে কেউ সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয় পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৭]
“কেউ মন্দ কর্ম করলে সে কেবল তার কর্মের অনুরূপ শাস্তি পাবে এবং পুরুষ কিংবা নারীর মধ্যে যারা মুমিন হয়ে সৎকাজ করবে, তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, সেথায় তাদেরকে দেওয়া হবে অপরিমিত জীবনোপকরণ। [সূরা গাফির, আয়াত: ৪]
সুতরাং দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং প্রতিদানের ক্ষেত্রে তারা উভয়ে সমান।
আর এই বাস্তবতাটিও আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণীর মধ্যেও বিদ্যমান। তিনি বলেন,
“অবশ্যই আত্মসমর্পনকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পনকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও অনুগত নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, সাওম পালনকারী পুরুষ ও সাওম পালনকারী নারী, যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী পুরুষ ও যৌন অঙ্গ হিফাজতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখেছেন।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৩৫]
দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং প্রতিদানের ক্ষেত্রে সে পুরুষের মতোই- এটি নিশ্চিত ও সর্বস্বীকৃত বাস্তবতা।
এর ওপর ভিত্তি করে আমরা বলতে পারি যে, মুসলিম নারীর ওপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে, তাতে পুরুষ ব্যক্তিও অংশীদার। আর তা হচ্ছে: আমানত, দায়িত্ব ও কর্তব্যের বোঝা।
নারীর ওপর আবশ্যক হলো এই দায়িত্ব ও কর্তব্য যথাযথভাবে উপলব্ধি করা। সে তা উপলব্ধি করবে পূর্ণ অনুভূতিসহকারে, সে তা জেনে ও বুঝে উপলব্ধি করবে, সে তা প্রতিষ্ঠিত করে ও কাজে পরিণত করার মাধ্যমে স্মরণ রাখবে এবং সে অন্য নারীদের মাঝে তা প্রচার ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তার হিফাযত করবে। এ ব্যাপারটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংক্ষেপে বিভিন্ন হাদীসের মধ্যে উল্লেখ করেছেন; তন্মধ্যে আমরা নিম্নে কিছু উল্লেখ করছি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« لا تزول قدما عبد يوم القيامة حتى يسئل عن عمره فيم أفناه وعن علمه فيم فعل وعن ماله من أين اكتسبه وفيم أنفقه وعن جسمه فيم أبلا»
“কিয়ামতের দিন বান্দার দু‘পা একটুও নড়বে না যতক্ষণ না জিজ্ঞেস করা হবে তার জীবনকাল সম্পর্কে: সে তা কোনো পথে অতিবাহিত করেছে; জিজ্ঞেস করা হবে তার জ্ঞান সম্পর্কে, সে জ্ঞান অনুযায়ী কী কাজ করেছে; জিজ্ঞেস করা হবে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, সে তা কোথা থেকে উপার্জন করেছে এবং কোনো খাতে ব্যয় করেছে এবং জিজ্ঞেস করা হবে তার শরীর সম্পর্কে, কোথায় সে তা ক্ষয় করেছে।” [তিরমিযী, অধ্যায়: কিয়ামতের বিবরণ প্রসঙ্গে ( صفة القيامة والرقائق والورع ), পরিচ্ছেদ: কিয়ামত প্রসঙ্গে ( باب في القيامة ), বাব নং ২, হাদীস নং ২৪১৭]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إذا صلت المرأة خمسها وصامت شهرها وحفظت فرجها وأطاعت زوجها قيل لها : ادخلي الجنة من أي أبواب الجنة شئت»
“যখন নারী তার পাঁচ ওয়াক্তের সালাত আদায় করবে; তার (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে, তার লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে এবং তার স্বামীর আনুগত্য করবে, তখন তাকে বলা হবে: তুমি জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর, সে দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবশে কর।” [আহমদ, মুসানাদ, অধ্যায়: মুসনাদুল ‘আশরাতিল মুবাশশিরীনা বিল জান্নাহ ( مسند العشرة المبشرين بالجنة ), পরিচ্ছেদ: আবদুর রহমান ইবন ‘আউফ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীস ( حديث عبد الرحمن بن عوف الزهري رضي الله عنه ), হাদীস নং ১৬৬১।]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
«كلكم راع وكلكم مسؤول عن رعيته الإمام راع ومسؤول عن رعيته والرجل راع في أهله وهو مسؤول عن رعيته والمرأة راعية في بيت زوجها ومسؤولة عن رعيتها والخادم راع في مال سيده ومسؤول عن رعيته . قال وحسبت أن قد قال : والرجل راع في مال أبيه ومسؤول عن رعيته وكلكم راع ومسؤول عن رعيته»
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী), আর তোমাদের প্রত্যেককেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইমাম বা শাসক হলেন দায়িত্বশীল, আর তাকে তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর পুরুষ তার পরিবার ও সংসারের জন্য দায়িত্বশীল, আর তাকে তার পরিবারের রক্ষণাবেক্ষণ ও দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর নারী তার স্বামীর ঘর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর খাদেম (সেবক) তার মনিবের ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বর্ণনাকারী বলেন, আমি ধারণা করি যে, তিনি (রাসূল) আরও বলেছেন: পুরুষ ব্যক্তি তার পিতার ধন-সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর তোমাদের সকলেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের সকলকেই তার অধীনস্থদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [বুখারী, কিতাবুল জুম‘আ ( كتاب الجمعة ), পরিচ্ছেদ: গ্রাম ও শহরে জুম‘আ প্রসঙ্গে ( باب الجمعة في القرى و المدن ), বাব নং ১০, হাদীস নং ৮৫৩]
এছাড়াও এ ব্যাপারে কুরআন ও সুন্নাহর আরও অনেক বক্তব্য রয়েছে।
এসব দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে আমি নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা পেশ করছি:
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/660/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।