মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
লেখকঃ ইলমী গবেষণা ডীনশীপ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা
৪
প্রথম রুকন: মহান আল্লাহর ওপর ঈমান
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/21/4
(১) ঈমানের বাস্তবায়ন
নিম্নে বর্ণিত বিষয়সমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান আনা হয়।
প্রথমত: এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, এ বিশ্ব জগতের একজন প্রভু প্রতিপালক রয়েছেন। যিনি স্বীয় সৃষ্টি রাজত্ব, পরিচালনা ও কর্ম ব্যাবস্থাপনায় রুযীদাতা, জীবন দাতা, মৃত্যুদাতা, ক্ষমতাশীল এবং কল্যাণ ও অকল্যাণ সাধনকারী হিসেবে এক ও অদ্বিতীয়। তিনি ব্যতীত কোনো রব্ব প্রতিপালক নেই।
তিনি একাই যা ইচ্ছা তা করেন এবং যা চান তার হুকুম করেন। যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, আবার যাকে ইচ্ছা অপমানিত করেন। তাঁরই হাতে আসমান জমিনের রাজত্ব। তিনি সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাশীল ও জ্ঞাত রয়েছেন। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
সকল আদেশ তাঁরই এবং সর্বপ্রকার কল্যাণ তাঁরই হাতে, তাঁর কর্মসমূহে কোনো শরীক নেই। তাঁর কর্মে তাঁকে কেউ পরাজয়কারী নেই; বরং মানব জাতি, জিন্ন জাতি ও ফিরিশতামণ্ডলীসহ সকল সৃষ্টজীব তাঁরই দাস বা বান্দা। তারা তাঁর রাজত্ব, শক্তি ও ইচ্ছা হতে বের হতে পারেন না।
তাঁর কর্মসমূহ অগণিত; কোনো সংখ্যাই তা সীমাবদ্ধ করতে পারে না। এ সকল বৈশিষ্টের তিনিই একমাত্র অধিকারী, তাঁর কোনো শরীক নেই। তিনি ব্যতীত কেউ এ (বৈশিষ্ট্য)সমূহের অধিকার রাখে না। এসব আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে সম্পর্কিত ও সাব্যস্ত করা হারাম।
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি তোমাদিগকে এবং তোমাদের পূর্ববর্তীদিগকে সৃষ্টি করেছেন। তাতে আশা করা যায়, তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারবে। যে পবিত্রসত্তা তোমাদের জন্য যমীনকে বিছানা, আকাশকে ছাদস্বরূপ স্থাপন করে দিয়েছেন, আর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তোমাদের জন্য ফল-ফসল উৎপাদন করেছেন তোমাদের খাদ্য হিসাবে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১-২২]
“বলুন হে আল্লাহ! তুমিই সার্বভৌম শক্তির অধিকারী। তুমি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য ছিনিয়ে নাও এবং যাকে ইচ্ছা সম্মানিত কর, আর যাকে ইচ্ছা অপমানিত কর। তোমারই হাতে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। নিশ্চয় তুমি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ২৬]
“আর পৃথিবীতে বিচরণশীল মাত্রই সকলের জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা নিয়েছেন, তিনি জানেন তারা কোথায় থাকে এবং কোথায় সমাপিত হয়। সব কিছুই এক সুস্পষ্ট গ্রন্থে রয়েছে।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬]
“জেনে রেখ তাঁরই সৃষ্টি ও তাঁরই বিধান, আল্লাহ বরকতময় যিনি বিশ্ব জগতের রব।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৫৪]
দ্বিতীয়ত: এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সুন্দর নামসমূহ ও পবিত্র পূর্ণ গুণাবলীর ক্ষেত্রে এক ও অদ্বিতীয়। যে নাম ও গুণের কিছু কিছু তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য তাঁর পবিত্র গ্রন্থ ও শেষ নবী ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে বর্ণনা করা হয়েছে।
“আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সর্বউত্তম নামসমূহ। তাই সে নামসমূহ ধরেই তাঁকে ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নামের ব্যাপারে বাঁকা পথে চলে। তারা নিজেদের কৃত কর্মের ফল শীঘ্রই পাবে।” [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ১৮০]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إن لله تسعة وتسعين اسماً من أحصاها دخل الجنة، وهو وتر يحب الوتر»
“আল্লাহর নিরানবব-ইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি তা যথাযথ বাস্তবায়ণ তথা সংরক্ষন করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহ বেজোড়, তিনি বেজোড়কে ভালবাসেন।” (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)
আর এই আকীদা-বিশ্বাস দু’টি বড় মূলনীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত:
প্রথম: নিশ্চয় আল্লাহর সুন্দর নাম ও মহান গুণ রয়েছে, যা পরিপূর্ণ গুণাবলীর প্রমাণ করে, তাতে কোনো প্রকারের অপরিপূর্ণতা ও ত্রুটি নেই। সৃষ্টিজীবের কোনো কিছুই তার মতো ও তার অংশীদার হতে পারে না।
الحيّ (আল-হাইয়ু) তাঁর (আল্লাহর) নামসমূহের একটি নাম। الحياة (আল-হায়াত) তাঁর সিফাত বা গুণ যা মহান আল্লাহর জন্য সমুচিত সঠিক পন্থায় সাব্যস্ত করা ওয়াজিব। আর এ জীবন এক চিরস্থায়ী পরিপূর্ণ জীবন। তাতে জ্ঞান, শক্তি ইত্যাদি সর্বপ্রকার পূর্ণতার সমাবেশ রয়েছে। আল্লাহ চিরঞ্জীব তাঁর লয় ও ক্ষয় নাই।
“আল্লাহ ছাড়া কোনো সঠিক উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারেনা এবং নিদ্রাও নয়।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ২৫৫]
দ্বিতীয়: নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা সকল দোষ ও ত্রুটি যুক্ত গুণ থেকে সম্পুর্ণভাবে পবিত্র। যেমন, নিদ্রা, অপারগতা, মূর্খতা ও যুলুম-অত্যাচার ইত্যাদি।
তিনি আরো পবিত্র সৃষ্টিজীবের সাথে সাদৃশ্য রাখা হতে। আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর (আল্লাহর) জন্য যে সকল গুণ অস্বীকার করেছেন, তা অস্বীকার করা অপরিহার্য।
আল্লাহ তা‘আলা যে সকল গুণকে নিজের জন্য অস্বীকার করেছেন সে গুণের বিপরীত গুণে পরিপূর্ণভাবে গুণাম্বিত, এই বিশ্বাস রাখা।
সুতরাং যখন আল্লাহকে তন্দ্রা ও নিদ্রা থেকে মুক্ত করব, তখন তন্দ্রার বিপরীত চির জাগ্রত এবং নিদ্রার বিপরীত চিরঞ্জীব পরিপূর্ণ দু’টি গুণকে সাব্যস্ত করা হবে।
অনুরূপভাবে আল্লাহকে প্রতিটি অপরিপূর্ণ গুণ থেকে মুক্ত করলে সাথে সাথে তার বিপরীত পরিপূর্ণ গুণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। তিনিই একমাত্র পরিপূর্ণ আর তিনি ব্যতীত সবই অপরিপূর্ণ।
আল্লাহর নাম, তাঁর গুণ ও কর্মসমূহের ওপর ঈমান আনয়ন করাই মূলত আল্লাহ ও তাঁর ইবাদতকে জানার একমাত্র পথ।
কারণ আল্লাহ তা‘আলা এই পার্থিব জগতে তাঁর সরাসরি দর্শনকে সৃষ্টিজীব হতে গোপন রেখেছেন এবং তাদের জন্য এমন জ্ঞানের পথ খুলে দিয়েছেন, যার দ্বারা তারা তাদের প্রভু ইলাহ্-মা‘বুদকে জানবে এবং সঠিক জ্ঞান অনুযায়ী তাঁর ইবাদত করবে।
সুতরাং (আল্লাহর নাম ও গুণাবলী সাব্যস্তকারী) বান্দা তার গুণময় মা‘বুদের ইবাদত করে, পক্ষান্তরে মু‘আত্তিল (আল্লাহর নাম ও গুণাবলী অস্বীকারকারী) মূলত অস্তিত্বহীনের ইবাদত করে, আর মুমাচ্ছিল (আল্লাহর সাথে উপমা স্থাপনকারী) প্রতিমার ইবাদত করে। আর মুসলিম ব্যক্তি এক ও অমুখাপেক্ষী আল্লাহর ইবাদত করে, যিনি কাউকে জন্ম দেন নি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয় নি এবং তাঁর সমকক্ষও কেউ নয়।
আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে নিম্নে বর্ণিত বিষয়গুলোর লক্ষ্য রাখা উচিৎ:
(১) সংযোজন ও বিয়োজন ব্যতীত কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সকল সুন্দর নামসমূহ আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত রয়েছে তার ওপর ঈমান আনা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতীত সত্যিকার কোনো উপাস্য নেই। তিনি একমাত্র সব কিছুর মালিক, যাবতীয় দোষ-ত্রুটি হতে পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, পর্যবেক্ষক, পরাক্রান্ত, প্রতাপাম্বিত, মাহাত্ম্যশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে পবিত্র।” [সূরা আল-হাশর, আয়াত: ২৩]
হাদীসে এসেছে:
«وثبت في السنة أن النبي - - سمع رجلاً يقول : اللهم إني أسألك بأن لك الحمد لا إله إلا أنت المنان بديع السموات، والأرض يا ذا الجلال ،والإكرام يا الحي يا القيوم . فقال النبي - -: تدرون بما دعا الله؟ قالوا : الله، ورسوله أعلم، قال : والذي نفسي بيده لقد دعا الله باسمه الأعظم الذي إذا دعي به أجاب، وإذا سئل به أعطى» .
“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, কারণ সকল প্রশংসা তোমারই জন্য। তুমি ছাড়া কোনো সত্যিকার মা‘বুদ নেই। তুমি (মান্নান) অনুগ্রহকারী, আসমান জমিনের সৃষ্টিকারী। হে সম্মানিত ও মর্যাদাবান! হে চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক বাহক!
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমরা কি জান? সে কিসের (অসিলায়) আল্লাহকে আহ্বান করেছে? তারা বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জানেন। তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শপথ সেই সত্তার যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয় সে আল্লাহকে তাঁর এমন ইসমে আজমের (মহান নামের) অসিলায় আহ্বান করেছে, যার দ্বারা আল্লাহকে আহ্বান করলে আল্লাহ আহ্বানে সাড়া দেন এবং আবেদন করলে তিনি দান করেন।” (ইমাম আবূ দাউদ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেন)
(২) আল্লাহ নিজেই নিজের নাম রেখেছেন। সৃষ্টি জীবের কেউ তাঁর নাম রাখে নি এবং তিনি নিজেই এ সকল নাম দ্বারা স্বীয় প্রশংসা করেছেন। এগুলো সৃজিত ও নতুন নয়। এর ওপর ঈমান আনা।
(৩) আল্লাহর সুন্দর নামসমূহ এমন পরিপূর্ণ অর্থবোধক যাতে কোনো প্রকারের কোনো ত্রুটি নেই। তাই এ নামসমূহের ওপর ঈমান আনা যেমন ওয়াজিব, তেমনি এর অর্থের ওপর ঈমান আনাও ওয়াজিব।
(৪) এ সমস্ত নামের অর্থ অস্বীকার ও অপব্যাখ্যা না করে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা ওয়াজিব।
(৫) প্রতিটি নাম হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান ও ফলাফল এবং এর প্রভাবের ওপর ঈমান আনা।
এ পাঁচটি বিষয়কে আরো স্পষ্ট করার জন্য আমরা আল্লাহর নাম السميع আস-সামী‘ (শ্রবণকারী) দ্বারা উদাহরণ পেশ করবো।
السميع এতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা প্রত্যেকেরই কর্তব্য:
(ক) السميع (আস-সামী‘) আল্লাহর নামসমূহের একটি নাম। এ কথার ওপর ঈমান আনা। কারণ এর বর্ণনা কুরআন ও হাদীসে এসেছে।
(খ) আরো ঈমান আনা যে,আল্লাহ তা‘আলা নিজেই নিজেকে এ নামে নামকরণ করেছেন, এ নামে কথা বলেন এবং তা কুরআনে অবতীর্ণ করেছেন।
(গ) السميع (আস-সামী‘) আস-সাম‘উ বা (শোনা) অর্থকে শামিল করে। যা আল্লাহর গুণসমূহের একটি গুণ।
(ঘ) السميع (আস-সামী‘) নাম হতে উদ্ভূত ‘‘শ্রবণ করা বা শোনা’’ গুণটি অস্বীকার ও অপব্যাখা না করে সম্মানের সাথে গ্রহণ করা ওয়াজিব।
(ঙ) নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছু শুনেন এবং তাঁর শুনা সকল ধনিকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, এই বিশ্বাস রাখা। এ ঈমানের ফলাফল ও প্রভাব হলো আল্লাহর পর্যবেক্ষণ ও তাঁর ভয়-ভীতি আবশ্যক হয়ে যায় এবং এ দৃঢ় বিশ্বাস সৃষ্টি হয় যে,আল্লাহর কাছে কোনো কিছু গোপন থাকে না।
এমনিভাবে আল্লাহর গুণ العلي (আল-‘আলী) সাব্যস্ত করার সময় নিম্নের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা উচিৎ:
(১) কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত সকল সিফাত বা গুণ কোনো প্রকার অপব্যাখা ও সঠিক অর্থ ত্যাগ না করে প্রকৃতার্থে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা।
(২) দৃঢ় বিশ্বাস রাখা যে, আল্লাহ তা‘আলা যাবতীয় দোষ অসম্পূর্ণ গুণ থেকে মূক্ত, বরং তিনি সূ-পরিপূর্ণ গুণে গুণান্বিত।
(৩) আল্লাহর গুণাবলীর সাথে সৃষ্টিজীবের গুণসমূহের সাদৃশ্য না করা। কারণ আল্লাহর অনুরূপ কোনো কিছু নেই। না তাঁর গুণে এবং না তাঁর কর্মে।
“(সৃষ্টিজীবের) কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। আর তিনি সব শুনেন এবং সব দেখেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
(৪) এসব গুণের রূপ ও ধরণ-গঠন জানার কোনো প্রকার আশা আকাঙ্খা না করা। কেননা আল্লাহর গুণের রূপ ও ধরণ-গঠন তিনি ব্যতীত অন্য কেউ জানে না। ফলে সৃষ্টিজীবের তা জানার কোনো পথ নেই।
(৫) এসব গুণাবলী হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান এবং এর প্রভাব ও দাবীর ওপর ঈমান আনা। সুতরাং প্রতিটি গুণের সাথে ইবাদত সম্পৃক্ত।
এখন পাঁচটি বিষয় আরো স্পষ্ট হওয়ার জন্য ইস্তিওয়া ( الاستواء ) গুণটির উদাহরণ পেশ করব।
আল-ইস্তিওয়া ( الاستواء ) গুণটি সাব্যস্ত করতে নিম্নবর্ণিত বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখা অপরিহার্য:
(১) আল-ইস্তিওয়া (আল্লাহ তা‘আলা আরশের উপরে রয়েছেন) এ গুণটি আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা এবং এর ওপর ঈমান আনা; কেননা তা কুরআন ও হাদীসে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে।
(২) আল-ইস্তিওয়া ( الاستواء ) গুণটিকে যথাযোগ্য ও পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। আর এর প্রকৃত অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ‘আরশের উপরে রয়েছেন, যেমন তাঁর মহত্বের ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শোভা পায়।
এর অর্থ আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃতই তাঁর ‘আরশের উপরে রয়েছেন; তাঁর মর্যাদার জন্য যেভাবে শোভা পায়।
(৩) আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশের উপর থাকাকে সৃষ্টজীবের আসন গ্রহণের সাথে উপমা না দেওয়া। কেননা আল্লাহ ‘আরশের মুখাপেক্ষী নন। তিনি ‘আরশের মুখাপেক্ষী নন; কিন্তু সৃষ্টজীবের কোনো কিছুর উপরে উঠা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, সৃষ্টজীব এর মুখাপেক্ষী।
“(সৃষ্টজীবের) কোনো কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। আর তিনি সব শুনেন এবং সব দেখেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
(৪) আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশের উপর উঠার ধরণ ও পদ্ধতি নিয়ে তর্কে লিপ্ত না হওয়া। কেননা এটা গায়েবী বিষয়, যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ জানে না।
(৫) এ গুণটি হতে সাব্যস্ত বিধি-বিধান ও ফলাফল এবং এর প্রভাবের ওপর ঈমান আনা, আর তা হলো আল্লাহ তা‘আলার যথাযোগ্য মহত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব সাব্যস্ত করা, যা সমগ্র সৃষ্টি হতে তাঁর উর্ধ্বে ও সু-উচ্চে (‘আরশের উপর) থাকাই প্রমাণ করে।
আরো প্রমাণ করে, সকল আত্মার তাঁরই দিকে ঊর্ধ্বমূখী হওয়া, যেমন সাজদাকারী সাজদাহ’য় বলে, ( سبحان ربي الأعلى ) আমি আমার রবের পবিত্রতা বর্ণনা করি, যিনি সু-উচ্চ ও ঊর্ধ্বে।
তৃতীয়ত: এ বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র সত্যিকার মা‘বুদ বা উপাস্য এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য যাবতীয় ইবাদত পাওয়ার অধিকার রাখেন। তিনি এক ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোনো শরীক নেই।
“আমরা প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাগুত (আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করা অর্থাৎ শির্ক করা) থেকে নিরাপদ ও বিরত থাকবে।” [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৩৬]
“আর তাদেরকে এ ছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে (শির্কমুক্ত থেকে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে।” [সূরা আল-বাইয়্যেনাহ, আয়াত: ৫]
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে যে,
«أتدري ما حق الله على العباد وما حق العباد على الله؟ . قلت : الله ورسوله أعلم . قال : حق الله على العباد أن يعبدوه ولا يشركوا به شيئاً، وحق العباد على الله ألا يعذب من لا يشرك به شيئاً» .
“তুমি কি জান? বান্দার ওপর আল্লাহর হক্ব বা অধিকার কি? আর আল্লাহর ওপর বান্দার অধিকার কি?
আমি (মু‘আয) বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক্ব হলো: তাঁর (আল্লাহর) ইবাদত করা এবং তাঁর সাথে কাউকে অংশীদার না করা। আল্লাহর ওপর বান্দার হক্ব হলো: যারা তাওহীদের ওপর সুদৃঢ় থেকে শির্কমুক্ত থাকে তাদেরকে শাস্তি না দেওয়া।
সত্য মা‘বুদ: তিনিই সত্য মা‘বুদ, অন্তর যার ইবাদত করে, যার ভালোবাসায় অন্তর ভরে যায়, অন্যের ভালোবাসার প্রয়োজন পড়ে না। যার আশা আকাঙ্খাই অন্তরের জন্য যথেষ্ট, অন্যের কাছে আশা ও আকাংখার প্রয়োজন হয় না। যার নিকট চাওয়া পাওয়া, সাহায্য প্রার্থনা ও তাঁকে ভয়-ভীতি করাই অন্তরের জন্য যথেষ্ট। অন্য কারো কাছে চাওয়া পাওয়ার প্রার্থনা করা, কাউকে ভয়-ভীতি করার প্রয়োজন নেই।
“এটা একারণেও যে, আল্লাহই সত্য, আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান।” [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৬২]
আর এটাই বান্দার কর্মের দ্বারা আল্লাহর একত্ববাদ ঘোষণা করা। আর এটাই তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ বা ইবাদতে একত্ববাদ।
এ তাওহীদের গুরুত্ব
নিম্নের বিষয়গুলোর মাধ্যমে এ তাওহীদের গুরুত্ব ফুটে উঠে:
(১) এ তাওহীদই দীন ইসলামের শুরু ও শেষ, জাহেরী-বাতেনী এবং মুখ্য উদ্দেশ্য। আর তাই সকল রাসূল আলাইহিমুস সালামের দাওয়াত ছিল।
(২) এ তাওহীদ (কায়েম) এর লক্ষ্যে আল্লাহ তা‘আলা মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন, সকল নবী রাসূলদের প্রেরণ করেছেন এবং সব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। আর এ তাওহীদের কারণেই মানুষ মুমিন-কাফির, সৌভাগ্য দূর্ভাগ্যে বিভক্ত হয়েছে।
(৩) আর এ তাওহীদই বান্দাদের ওপর সর্বপ্রথম ফরয। সর্বপ্রথম এর মাধ্যমেই ইসলামে প্রবেশ করে এবং এ তাওহীদ নিয়েই দুনিয়া ত্যাগ করে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/21/4
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।