মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
এ কথা অজানা নয় যে, মক্কা ছিল, আরবদের ধর্ম পালনের প্রাণ কেন্দ্র ও উপযোগী ভূমি। এখানে ছিল আল্লাহর পবিত্র ঘর কা‘বার অবস্থান। আরবের সমগ্র মূর্তিপূজক ও পৌত্তলিকদের আবাসভূমি ও যাবতীয় কর্মের ঘাটিও ছিল, এ মক্কা নগরী। এ কথা আমাদের সবারই মনে রাখতে হবে, পাহাড় আর মরুভূমিতে ঘেরা পবিত্র এ মক্কা নগরীতে আল্লাহর দিকে মানুষকে দা‘ওয়াত দেওয়ার মিশনটিকে তার মনজিলে মাকসুদে পৌঁছানো ততটা সহজ ছিল না। বরং বলতে গেলে এটা ছিল অনেকটাই দুর্বোধ্য ও দুঃসাধ্য। একজন সাধারণ মানবের দ্বারা এ অসাধ্য কাজকে সাধ্য করা এবং সফলতায় পৌঁছানো কোনো ক্রমেই সম্ভব ছিল না। যদি দা‘ওয়াতের জন্য নির্বাচিত ভূমি মক্কা না হয়ে অন্য কোনো ভূমি হত বা তা মক্কা থেকে অনেক দূরে হত, তাহলে এতটা কষ্টকর হয়তো হত না। এ কারণেই বলা বাহুল্য, এ অনুপযোগী ও অনুর্বর ভূমিতে দা‘ওয়াতী কাজ পরিচালনার জন্য প্রয়োজন ছিল, এমন একজন মহা মানবের, যার দৃঢ়ত, আত্মপ্রত্যয় ও অবিচলতা হবে বিশ্বসেরা, যাতে কোনো ধরনের বিপদাপদ ও মুসীবত তাকে ও তার দা‘ওয়াতের মিশনটিকে কোনো রকম দুর্বল করতে না পারে। আরও প্রয়োজন ছিল, এমন সব হিকমত ও কৌশল অবলম্বন করা যেসব বুদ্ধিমত্তা, হিকমত ও কৌশল দিয়ে সে তার বিরুদ্ধে গৃহীত যাবতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে পারে এবং সব ধরনের বাধা বিঘ্ন দূর করে দা‘ওয়াতের মিশনটিকে সফলতার ধার প্রান্তে পৌঁছাতে পারে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, অনুগ্রহ ও দয়া মহান আল্লাহরই যিনি হলেন, আহাকামুল হাকেমীন। তিনি যাকে চান হিকমত দান করেন, যাকে চান না তাকে হিকমত দান করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“তিনি যাকে চান প্রজ্ঞা দান করেন। আর যাকে প্রজ্ঞা দেওয়া হয়, তাকে অনেক কল্যাণ দেওয়া হয়। আর বিবেক সম্পন্নগণই উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৬৯] আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রিসালাতের দায়িত্ব দেওয়ার মাধ্যমে হিকমত ও জ্ঞান দান করেছেন, ভালো কাজের তাওফীক দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাকে তার যাবতীয় কর্মে সাহায্য করেছেন।
এ কারণে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যখন তার স্বজাতিদের ইসলামের দা‘ওয়াত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তখন তিনি তাদের দা‘ওয়াত দেওয়ার জন্য বিভিন্ন কৌশল ও হিকমত অবলম্বন করেন। তিন প্রথমেই সবাইকে ডেকে একত্র করে ইসলামের দা‘ওয়াত দেওয়া শুরু করেন নি। প্রথমে দু একজনকে গোপনে গোপনে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে আরম্ভ করেন, তারা যেসব শির্ক, কুফুর ও ফিতনা-ফ্যাসাদে নিমগ্ন, তার পরিণতি সম্পর্কে তাদের সতর্ক ও ভয় প্রদর্শন করেন। শুরুতেই তাদের যাবতীয় অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আরম্ভ করেন নি, বরং প্রথমে তিনি তাদের তাওহীদের দা‘ওয়াত দেওয়া আরম্ভ করেন। তাওহীদের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার মাধ্যমেই তিনি তার মিশনটি আরম্ভ করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“হে বস্ত্রাবৃত! উঠ অতঃপর সতর্ক কর। আর তোমার রবের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর। আর তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র কর। আর অপবিত্রতা বর্জন কর। আর অধিক পাওয়ার আশায় দান করো না। আর তোমার রবের জন্যই ধৈর্যধারণ কর”। [সূরা আল-মুদ্দাসসির, আয়াত: ১-৭]
এখান থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের পক্ষ থেকে যে নাজুক পরিস্থিতির সম্মুখীন হন, তার সমাধানের লক্ষে হিকমত ও কৌশলের পথ চলা আরম্ভ করেন। তিনি এমন এক বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের পরিচয় দেন, যা এ যাবত-কাল পর্যন্ত দুনিয়াতে যত বড় বড় জ্ঞানীদের আবির্ভাব হয়েছে, তাদের সকলের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তাকে হার মানিয়ে দেয়। শুধু তাই নয়, বরং সমগ্র মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি এ যায়গায় এসে অক্ষম হয়ে যায়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে তার সব চেয়ে কাছের লোক ও আত্মীয় স্বজনদের নিকট ইসলামের দা‘ওয়াত পেশ করেন। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব এবং যাদের তিনি ভালো বলে জানতেন এবং তারাও তাকে ভালো জানত, তাদের দিয়েই তিনি তার দা‘ওয়াতের কাজ শুরু করেন। এছাড়াও যাদের মধ্যে সততা, ন্যায়-পরায়ণতা, কল্যাণ ও সংশোধন হওয়ার মতো যোগ্যতা ও গুণাগুণ লক্ষ্য করতেন, তাদের তিনি তার দা‘ওয়াতের আওতায় নিয়ে আসতেন এবং তাদের ইসলামের দা‘ওয়াত দিতেন। এভাবে অত্যন্ত সংগোপনে ও অত্যধিক বুদ্ধিমত্তা ও সাবধানতার সাথে তিনি দা‘ওয়াতের কাজ চালিয়ে যেতে লাগলেন। তার প্রাণপণ চেষ্টার ফসল হিসেবে দেখা গেল, অতি অল্প সময়ে তাদের মধ্যে একটি ক্ষুদ্র জামা‘আত ইসলামের ডাকে সাড়া দিল এবং তারা ইসলাম গ্রহণ করল। ইসলামের ইতিহাসে এদের সাবেকীনে আওয়ালীন বলা হয়ে থাকে। নারীদের মধ্যে সর্ব প্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী খাদিজা বিনতে খুয়াইলদ রাদিয়াল্লাহু আনহা ইসলাম গ্রহণ করেন। আর পুরুষদের মধ্যে আলী ইবন আবূ তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু, তারপর তার গোলাম যায়েদ ইবন হারেসা রাদিয়াল্লাহু আনহু, তারপর আবূ বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখ ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হন। আবূ বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজে ইসলাম গ্রহণ করার পর, নিজ উদ্যোগে আরও কতককে ইসলামের দা‘ওয়াত দেন, তার দা‘ওয়াতের ফলে এমন কিছু লোক ইসলাম গ্রহণ করে, যাদের অবদান ও ভূমিকা ইসলামের ইতিহাসে কিয়ামত অবধি অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং তাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। আর এসব মহা মনীষীরা হলো, উসমান ইবন আফ্ফান, যুবাইর ইবনুল আওয়াম, আব্দুর রহমান ইবন আওফ, সায়াদ ইবন আবি ওয়াক্কাস ও তালহা ইবন ওবায়দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তাঁরা সবাই আবূ বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে ইসলাম গ্রহণ করে। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু, যায়েদ ইবন হারেসা ও আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ মোট আটজন সাহাবী, যারা হলেন ইসলামের অগ্রপথিক ও প্রথম অতন্দ্র প্রহরী। এরা তারাই যারা সমস্ত মানুষের পূর্বে ইসলামের সুশীতল পতাকা তলে সমবেত হয়। সারা দুনিয়ার সমগ্র মানুষের বিরোধিতা স্বত্বেও তার কোনো প্রকার পরোয়া না করে আল্লাহর নবীর আনিত দীনের দা‘ওয়াতে সাড়া দেন। তাদের ইসলাম গ্রহণের পর আরব জাহানে ঈমানের আলোড়ন সৃষ্টি হয়, এক এক করে মানুষ ইসলামে প্রবেশ করতে আরম্ভ করে এবং ঈমানের পতাকা তলে তারা সমবেত হতে থাকে। রাসূল ও তাঁর সঙ্গীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও বিরামহীন দা‘ওয়াতের ফলে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং মক্কায় ইসলামের দা‘ওয়াত ছড়িয়ে পড়ল। সমগ্র মক্কায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইসলামের দিকে দা‘ওয়াত দেওয়া ও আল্লাহর তাওহীদের বিষয়টি তাদের আলোচনার প্রথম শিরোনামে পরিণত হলো। একমাত্র দা‘ওয়াতের আলোচনা ছাড়া আর কোনো আলোচনা তাদের মধ্যে স্থান পেল না। এভাবেই দা‘ওয়াতের প্রসার ঘটে এবং মুসলিমদের সংখ্যা দিন দিন আরও বাড়তে থাকে। যারা ইসলাম গ্রহণ করে ধন্য হয়, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিয়ে গোপনে বৈঠক করতেন, গোপনে তাদের তা‘লীম-তরবিয়ত ও গুরুত্বপূর্ণ দিক নির্দেশনা দিতেন, যাতে তারা আল্লাহর দীনের মহান গুরু দায়িত্ব পালনে সক্ষম একটি জামা‘আতে পরিণত হয় এবং কোনো প্রকার যুলুম নির্যাতন তাদের মনোবলকে দুর্বল করতে না পারে।
মোটকথা, দা‘ওয়াতের কাজটি ছিল তখনো ব্যক্তি পর্যায়ে ও গোপনে। প্রকাশ্যে দা‘ওয়াত দেওয়ার পরিবেশ তখনো তৈরি হয় নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মাঝে এখনো প্রকাশ্যে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে আরম্ভ করেন নি। তিনি তার দা‘ওয়াতের কাজটি গোপনে চালিয়ে যেতেন এবং যারা ইসলাম গ্রহণ করে তারা তাদের ইবাদত-বন্দেগী ও ইসলামের বিধানাবলি গোপনে পালন করত। ইসলামের প্রথম যুগে কুরাইশদের ভয়ে মুসলিমরা ইসলামকে প্রকাশ করা ও প্রকাশ্যে ইবাদত-বন্দেগী করার সাহস পেত না। ফলে তারা গোপনে ইবাদত-বন্দেগী করত। [সীরাতে ইবন হিশাম: ২৬৪/১; ইমাম শামছুদ্দিন আয-যাহবী রহ.-এর তারিখুল ইসলাম, সীরাত অধ্যায়: পৃ. ১২৭, বিদায়া ওয়ান নিহায়া: ২৪-৩৭, যাদুল মা‘আদ: ১৯/৩, মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওহাব রহ.-এর মুখতাছার সীরাত: পৃ. ৫৯, মাহমুদ শাকের রহ.-এর তারিখে ইসলামী: ৫৭/২,এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ. ৯১]
এভাবে দা‘ওয়াতের কাজ চলতে থাকলে ধীরে ধীরে মুসলিমদের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে লাগল এবং ক্রমপর্যায়ে মুসলিমদের সংখ্যা চল্লিশে উন্নীত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরাইশদের মাঝে প্রকাশ্যে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে আরম্ভ করেন নি। তিনি গোপনেই তাদের দা‘ওয়াত দিতে থাকেন। কারণ, বিজ্ঞ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কথা ভালো ভাবেই জানতেন, মুসলিমদের এ ক্ষুদ্র জামা‘আত কুরাইশদের তুলনায় এখনো নগণ্য। এ ক্ষুদ্র জামা‘আতকে কুরাইশদের পক্ষ থেকে যেসব বাধা-বিপত্তি, যুলুম নির্যাতন ও প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হবে, তা প্রতিহত করা সম্ভব হবে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দা‘ওয়াতে সাড়া দেওয়া মুসলিমদের নিয়ে তাদের দিক-নির্দেশনা ও তা‘লীম দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভব করেন। এ জন্য তিনি তাদের নিয়ে একত্রে এক জায়গায় বসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন, যাতে তাওহীদের ডাকে সাড়া দানকারী ঈমানদারদের মধ্যে পারস্পরিক সু-সম্পর্ক তৈরি হয় এবং তাদের মাধ্যমে আরও যারা তাওহীদের বাহিরে আছে, তাদের নিকট তাওহীদের দা‘ওয়াত পৌঁছে যায়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি নিরাপদ স্থান খুঁজতে থাকেন। সর্বশেষ তিনি এর জন্য সৌভাগ্যবান সাহাবী আবী আরকাম আল মাখযুমীর ঘরকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখানে মুসলিমদের একই পরিবারের সদস্যদের মতো করে একত্র করেন এবং এ ঘরের মধ্যে বসেই তিনি তাদের দীন শেখান, তা‘লীম-তরবিয়ত দেন এবং জীবন যাপনের যাবতীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। আপাতত এ ঘরকেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসলামের প্রধান কার্যালয় হিসেবে নির্ধারণ করেন। তবে এর পাশাপাশি আরও কিছু শাখা কার্যালয় ছিল, যেগুলোতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাঝে মাঝে গিয়ে সমবেত লোকদের তা‘লীম দিতেন অথবা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ঘরকে পছন্দ করতেন, সেখানে গিয়ে লোকজনদের একত্র করে তাদের তা‘লীম দিতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও যাদের ঘরকে পছন্দ করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, সাঈদ ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু আনহু। তবে দা‘ওয়াতের শুরু লগ্নে যখন মুসলিমরা দুর্বল ও সংখ্যালঘু ছিল। তারা তাদের ঈমান প্রকাশ করার কোনো ক্ষমতা রাখত না এবং গোপনে গোপনে তারা ইবাদত বন্দেগী করত এবং মানুষদের ইসলামের দিকে আহ্বান করতেন। তখন দারে আরকামই ছিল ইসলাম ও মুসলিমদের প্রথম প্রাণকেন্দ্র ও সুদৃঢ় দুর্গ। এখান থেকে ইসলামের দা‘ওয়াত পরিচালিত হত। একটি কথা মনে রাখতে হবে, তখন ইসলামের দা‘ওয়াত ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছিল। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া: ৩১/৩; মাহমুদ শাকের রহ.-এর তারিখে ইসলামী ৬২/২ এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ. ৯৭।]
এভাবে তিন বছর পর্যন্ত ইসলামের দা‘ওয়াত অত্যন্ত সংগোপন ও ব্যক্তি পর্যায়ে একেবারেই সীমিত আকারে চলছিল। ইসলামের দা‘ওয়াতকে প্রকাশ করার কোনো সুযোগ মুসলিমদের ছিল না। লোক চক্ষুর অন্তরালে ও অতি সংগোপনে পরিচালিত দা‘ওয়াতের কাজ ধীরে ধীরে গতি-লাভ করে এবং মুসলিমরা একটা জামা‘আতে পরিণত হয়। ইসলামের মতো নি‘আমতের ফলে মুসলিমরা পরস্পর ভাই ভাই পরিণত হয়, তারা একে অপরের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে এবং তারা একে অপরকে ইসলামের সুশীতল ছায়া তলে সমবেত হওয়ার দা‘ওয়াত দেয়।
তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা হামযা ইবন আব্দুল মুত্তালিবা রাদিয়াল্লাহু আনহু ও আরও কতক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ যেমন, উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের ইসলাম গ্রহণের ফলে মুসলিম জামা‘আত অনেকটা শক্তিশালী হয় এবং তাদের মধ্যে প্রাণের সঞ্চার হয়। তারপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াত নাযিল করেন,
“যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা ব্যাপকভাবে প্রচার কর এবং মুশরিকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। নিশ্চয় আমরা তোমার জন্য উপহাসকারীদেরে বিপক্ষে যথেষ্ট। যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহ নির্ধারণ করে। অতএব, তারা অচিরেই জানতে পারবে”। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯৪-৯৬]
এতে এ কথা স্পষ্ট হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার নবীকে প্রজ্ঞা ও হিকমতে পরিপূর্ণতা দান করেই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে যে উন্নত পদ্ধতি, হিকমত ও অভিজ্ঞতার সাক্ষর রাখেন, আল্লাহর দিকে আহ্বানকারী একজন দা‘ঈর জন্য তা কিয়ামত পর্যন্ত অনুকরণীয় আদর্শ হয়ে থাকবে। আর যে আহ্বানকারী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দা‘ওয়াতের পদ্ধতি ও হিকমত অবলম্বন করবে প্রকৃত পক্ষে সেই আল্লাহর রাসূলের অনুসৃত পথের অনুকরণকারী বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে পৌত্তলিক কাফিরদের দা‘ওয়াতের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শের বাইরে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, এ ক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উন্নত আদর্শ ও হিকমতের অনুকরণ করতে হবে। তবে বর্তমানে কোনো মুসলিম দেশে ইসলামের দা‘ওয়াতকে গোপনে দেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। কারণ, এখন ইসলামের দা‘ওয়াত সারা দুনিয়ার আনাচে-কানাচে পৌঁছে গেছে। ইসলামের দা‘ওয়াত পৌঁছে নি এমন দুর্গম এলাকা বর্তমান দুনিয়াতে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রথম যুগে গোপনে দা‘ওয়াত দেন। কারণ, তখন ইসলামের দা‘ওয়াত ছিল অংকুর সমতুল্য। যারা ইসলাম গ্রহণ করে তারা তাদের ইসলাম প্রকাশ করার মতো কোনো পরিবেশ ছিল না। অবস্থা এমন ছিল যে, ইসলামের প্রথম যুগে রাসূল ও তার সাথী-সঙ্গীরা প্রকাশ্যে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই) কথাটি বলতে পারত না, প্রকাশ্যে আযান দিতে ও সালাত আদায় করতে পারত না। তারপর যখন মুসলিমদের শক্তি, সামর্থ্য ও সাহস বৃদ্ধি পেল, আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলকে প্রকাশ্যে ইসলামের দা‘ওয়াত দেওয়ার আদেশ দেন। আল্লাহর আদেশ পেয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রকাশ্যে ইসলামের দা‘ওয়াত দিতে আরম্ভ করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে মুসলিমদের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। কিন্তু মুসলিমদের বৃদ্ধি পাওয়া কাফিরদের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়াল। কাফিররা মুসলিমদের কোনোক্রমেই সহ্য করতে পারল না। তাই কাফিরদের পক্ষ থেকে মুসলিমদের এমন নির্মম ও অমানবিক অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হলো, যার ইতিহাস আমাদের কারো অজানা নয়। [রাহীকুল মাখতুম: পৃ. ৭৫, মাহমুদ শাকের রহ.-এর তারিখে ইসলামী: ৬২/২ এবং হাযাল হাবীবু ইয়া মুহিব্ব: পৃ. ৯৯।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/454/6
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।