hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

একজন ঈমানদার দা‘ঈর গুণাবলী

লেখকঃ মুহাম্মদ শাহিদুল ইসলাম

৩৯
মেহমানের সমাদর করা
৩৭. মেহমানের সমাদর করা: অতিথি নিকটাত্মীয় হোক কিংবা দূর সম্পর্কের আত্মীয় হোক তাদের মর্যাদানুসারে সাধ্যমত আদর-যতড়ব করা এবং যথাসাধ্য আপ্যায়ন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য একান্ত কর্তব্য। মেহমান আপ্যায়নের ব্যাপারে নারী-পুরুষ উভয়কেই সচেষ্ট হতে হবে।অতিথি আপ্যায়নের ব্যাপারে পুরুষের ভূমিকা সর্বাধিক। তারা প্রয়োজনীয় উপকরণ এনে দিলে ঘরের মহিলারা তা প্রস্তুত করে দিতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মহিলাদের সদিচ্ছার অভাবে ঘরে পর্যাপ্ত দ্রব্যাদি থাকার পরেও অতিথি আপ্যায়ন যথাযথ হয় না। তাই নর-নারী উভয়কেই অতিথি আপ্যায়নে সচেষ্ট হতে হবে। উভয়ের প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছায়ই অতিথি আপ্যায়ন যথোপযুক্ত হবে। তবে এক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা বেশী থাকা প্রয়োজন।

মেহমান আপ্যায়নের ব্যাপারে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন:

﴿هَلۡ أَتَىٰكَ حَدِيثُ ضَيۡفِ إِبۡرَٰهِيمَ ٱلۡمُكۡرَمِينَ ٢٤ إِذۡ دَخَلُواْ عَلَيۡهِ فَقَالُواْ سَلَٰمٗاۖ قَالَ سَلَٰمٞ قَوۡمٞ مُّنكَرُونَ ٢٥ فَرَاغَ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِۦ فَجَآءَ بِعِجۡلٖ سَمِينٖ ٢٦ فَقَرَّبَهُۥٓ إِلَيۡهِمۡ قَالَ أَلَا تَأۡكُلُونَ ٢٧ ﴾ [ الذاريات : ٢٤، ٢٧ ]

‘তোমাদের নিকট কি ইবরাহীমের সম্মানিত মেহমানের কথা পৌঁছেছে? যখন তারা তার নিকট প্রবেশ করল, তখন তারা বলল: সালাম। তিনিও বললেন: সালাম। তারা ছিল অপরিচিত ব্যক্তি। তিনি ঘরে গিয়ে ভুনাকৃত একটি বাছুর এনে তাদের সামনে রেখে দিলেন এবং বললেন: তোমরা খাচ্ছ না কেন’? [. সূরা আয-যারিয়াত ২৪-২৭]

ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর নিকট আগত মেহমানগণ ছিলেন ফেরেশতা। তারা মানুষের রূপ ধারণ করে এসেছিলেন। তারা ছিলেন অপরিচিত। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের জন্য দ্রুত খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যেক মুসলিমের জন্য যত দ্রুত সম্ভব অতিথিদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা জরূরী। মেহমানদের সমাদর করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতীব গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদীসে এসেছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন অবশ্যই তার মেহমানের সম্মান করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে নতুবা চুপ থাকে। অন্য বর্ণনায় প্রতিবেশীর স্থলে আছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন আত্মীয়ের সম্পর্ক বজায় রাখে’। [. বুখারী, হাদীস নং-৪০৫৯]

এ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনের চারটি গুণের কথা উল্লেখ করেছেন। যথা: (১) অতিথির সম্মান করা (২) প্রতিবেশীকে কোনভাবে কষ্ট না দেয়া (৩) সর্বদা ভাল কথা বলা। তা সম্ভব না হলে চুপ করে থাকা (৪) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। প্রত্যেক মু’মিনের উচিত এই অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বলল: আমি ক্ষুধার্ত। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে খাবারের খোঁজে লোক পাঠালে তিনি বললেন: যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! আমার নিকট পানি ছাড়া কিছুই নেই। তারপর তিনি অন্য এক স্ত্রীর নিকট লোক পাঠালে তিনিও একই কথা বললেন। এভাবে তারা সকলেই একই কথা বললেন। তখন রাসূল বললেন: আজ রাতে কে লোকটির মেহমানদারী করবে? আল্লাহ তার উপর রহম করুন।এসময়ে জনৈক আনছার ব্যক্তি উঠে বলল: হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি। এরপর লোকটিকে নিয়ে আনছারী নিজ গৃহে গেলেন। তারপর স্ত্রীকে বললেন: তোমার কাছে কি কিছু আছে? সে বলল: না। শুধু বাচ্চাদের জন্য সামান্য কিছু খাবার আছে। তিনি বললেন: তুমি তাদেরকে কিছু দিয়ে ভুলিয়ে রাখ। আর যখন মেহমান প্রবেশ করবে,তখন আলোটা নিভিয়ে দিবে। তুমি তাকে দেখাবে যে আমরাও খাচ্ছি। সে যখন খাওয়া শুরু করবে, তখন আলোর নিকট গিয়ে তা নিভিয়ে দিবে। বর্ণনাকারী বলেন: এরপর তারা বসে রইল। আর মেহমান খেতে লাগল। সকালে আনছার লোকটি যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসল, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: আজ রাতে মেহমানের সাথে তোমরা দু’জনে যে আচরণ করেছে, তাতে আল্লাহ তোমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। [. মুসলিম, হাদীস নং-৫১৮৬]

অন্য আরেক বর্ণনায় আছে, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: জনৈক আনছার ব্যক্তির গৃহে এক মেহমান রাত যাপন করলেন। উক্ত আনছারের নিকট বাচ্চাদের জন্য সামান্য খাবার ছাড়া কিছু ছিল না। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন: বাচ্চাদের ঘুমিয়ে দাও এবং আলোটা নিভিয়ে দাও। আর তোমার কাছে যা আছে তাই মেহমানের জন্য উপস্থিত কর।

বর্ণনাকারী বলেন: অতঃপর এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়- ‘তারা নিজেদের উপরে অন্যকে প্রাধান্য দেয়, যদিও তাদের অভাব থাকে’। [. মুসলিম, হাদীস নং-৫১৮৭]

এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, রাসূলের স্ত্রীদের নিকটে কখনো কখনো পানি ব্যতীত কিছু থাকতো না। তবু অভাবের তাড়নায় কখনো তারা রাসূলকে ছেড়ে যাননি। অপরদিকে আনছার লোকটিও ছিল হতদরিদ্র। যার ঘরে বাচ্চাদের জন্য সামান্য খাবার ছাড়া কিছু ছিল না। তবু তারা নিজেরা না খেয়ে এবং বাচ্চাদের অভুক্ত রেখে মেহমানের আপ্যায়ন করেছেন। কতটা আল্লাহভীরু হলে এরূপ করা সম্ভব! এজন্যই তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়েছেন। আর তাদের সম্পর্কে কুরআনের আয়াতও অবতীর্ণ হয়েছে। তাদের মত অতিথিপরায়ণ মানুষের বর্তমানে খুব অভাব। ঐ ছাহাবীদের মত মানুষ বর্তমানে থাকলে এ সমাজও সোনার সমাজে পরিণত হত।আব্দুর রহমান ইবনু আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন: আছহাবে ছুফ্ফার লোকজন ছিল দরিদ্র। তাই একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: যার নিকট দু’জনের খাবার আছে সে যেন তৃতীয়জনকে নিয়ে যায়। আর যার নিকট চারজনে খাবার আছে, সে যেন পঞ্চম অথবা ষষ্ঠজনকে নিয়ে যায়। রাবী বলেন: আবু বকর তিনজনকে নিয়ে আসলেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দশজনকে নিয়ে গেলেন। আমাদের পরিবারে আমরা ছিলাম তিনজন। আমি, আমার পিতা ও মাতা। বর্ণনাকারী বলেন: আমি জানি না তিনি বলেছেন কি-না আমার স্ত্রী এবং আমার বাড়ীতে আবু বকরের খাদেম। রাবী বলেন:আবু বকর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গৃহে রাতের খাবার খেলেন। এরপর তিনি অপেক্ষা করলেন। অবশেষে এশার সালাত আদায় করা হল। সালাত শেষে প্রত্যাবর্তন করে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী রাত্রির কিয়দাংশ অতিবাহিত হলে তিনি গৃহে ফিরে আসলেন। তার স্ত্রী তাকে বললেন: মেহমান রেখে দেরী করে ফিরলে কেন? তিনি বললেন: কেন, তুমি কি তাদের রাতের খাবার খাওয়াওনি? তার স্ত্রী বললেন: তুমি না আসা পর্যন্ত তারা আহার করতে অস্বীকার করেছে। কয়েকবারই খাবার পেশ করা হয়েছে। কিন্তু মেহমানরা তাদের কথা পরিবর্তন করেনি। আব্দুর রহমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি লুকিয়ে রইলাম। তিনি বলেন: হে নির্বোধ! তারপর তিনি আমাকে বকাবকি করলেন। আর মেহমানদের বললেন: ভাল হল না, আপনারা খাবার খেয়ে নিন। তিনি আরো বললেন: আল্লাহর কসম! আমি আহার করব না (কারণ খাবার ছিল কম)। আব্দুর রহমান বলেন: আল্লাহর শপথ! আমরা যে লোকমাই গ্রহণ করছিলাম। তার চেয়ে অধিক পরিমাণে বেড়ে যেত। এমনকি আমরা পরিতৃপ্ত হয়েও আমাদের খাদ্য পূর্বে যা ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশী হয়ে গেল। আবু বকর খাবারের প্রতি লক্ষ্য করলেন, তা যেমন ছিল তেমনি আছে বা তার চেয়েও অধিক হয়েছে। তিনি তার স্ত্রীকে বললেন: হে বনি ফিরাসের বোন! এ কি ব্যাপার? তিনি বললেন: কিছু না, আমার চোখের প্রশান্তি। এগুলি যা ছিল, তার চেয়ে তিনগুণ বেড়ে গেছে। আব্দুর রহমান বলেন: এরপর আবু বকর কিছু খেলেন এবং বললেন: কসমটা ছিল শয়তানের। অতঃপর তিনি আরো এক লোকমা খেলেন। তারপর সেগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিয়ে গেলেন। আব্দুর রহমান বলেন: আমিও তার কাছে সকাল পর্যন্ত থাকলাম। তিনি বলেন: আমাদের ও কোন এক সম্প্রদায়ের মাঝে একটি চুক্তি ছিল।চুক্তি শেষ হয়ে গেলে আমরা বারজন লোক নিযুক্ত করলাম। প্রত্যেক লোকের সাথে অনেক লোক ছিল। আল্লাহই ভাল জানেন প্রত্যেক লোকের সাথে কত লোক ছিল।তাদের প্রত্যেকের নিকট এ খাবার পাঠান হল। তারা সকলেই সে খাবার খেল। [. মুসলিম, হাদীস নং-৫১৯২]

জাবের ইবনু আবদিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন: পরিখা খননের সময় আমি রাসূলের শরীরে ক্ষুধার লক্ষণ দেখতে পেলাম। তারপর আমার স্ত্রীর নিকট ফিরে এসে তাকে বললাম, তোমার নিকট কিছু আছে কি? কেননা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখেছি। সে একটি চামড়ার থলে বের করল, যাতে এক ছা‘ পরিমাণ যব ছিল।আর আমাদের গৃহপালিত একটি মেষ (ভেড়ার বাচ্চা) ছিল। আমি সেটা যবেহ করলাম এবং আমার স্ত্রী যবগুলো পিষে নিল। আমার কাজ সমাধার সাথে সাথে সেও তার কাজ শেষ করল। আমি রান্নার জন্য গোশত কেটে ডেকচিতে রাখলাম। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলাম। যাওয়ার সময় স্ত্রী আমাকে বলল: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদের দ্বারা তুমি আমাকে লজ্জিত কর না। অতঃপর আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে চুপে চুপে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমরা একটি মেষ যবেহ করেছি এবং আমার স্ত্রী আমাদের এক ছা‘ (প্রায় আড়াই কেজি) পরিমাণ যব ছিল, তাই পিষে নিয়েছে। কাজেই আপনি কয়েক জনকে সঙ্গে নিয়ে আসুন। এটা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উচ্চকণ্ঠে বললেন: ওহে খন্দকবাসি! জাবের তোমাদের জন্য কিছু খাবার প্রস্তুত করেছে,তোমরা সকলে চল। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: আমি না আসা পর্যন্ত তোমাদের ডেক চুলা থেকে নামাবে না এবং খামীর দিয়ে রুটি বানাবে না। আমি আসলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের আগে আগে আসলেন। আমি আমার স্ত্রীর কাছে এলে সে আমাকে বলল: তোমার সর্বনাশ হোক! তোমার সর্বনাশ হোক! আমি বললাম, আমি তাই করেছি, তুমি যা আমাকে বলেছিলে। অতঃপর সে খামীরগুলি বের করল। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাতে একটু লালা (থু) লাগিয়ে দিলেন এবং বরকতের দো‘আ করলেন। অতঃপর তিনি ডেকের কাছে গিয়ে তাতেও একটু লালা দিলেন এবং বরকতের দো‘আ করলেন। তারপর তিনি বললেন: রুটি প্রস্তুতকারিণীকে ডাক, তোমার সাথে রুটি প্রস্তুত করবে। আর তুমি ডেক থেকে পেয়ালা ভরে ভরে নিবে। আর ডেক চুলা থেকে নামাবে না। তারা ছিলেন এক হাজার লোক। আল্লাহর নামের কসম! তারা সকলেই আহার করলেন। অবশেষে তারা তা ছেড়ে এমন অবস্থায় ফিরে গেলেন যে, আমাদের ডেগ পূর্বের মত উথলাচ্ছিল। আর আমাদের খামীর হতে আগের মত রুটি বানানো হচ্ছিল’। [. মুসলিম, হাদীস নং-৫১৪২]

আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু উম্মু সুলাইমকে বললেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দুর্বল কণ্ঠস্বর শুনে বুঝতে পারলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। তোমার নিকট কি কিছু আছে? তখন উম্মু সুলাইম কয়েকটি যবের রুটি বের করলেন।তারপর তার ওড়না বের করে এর একাংশ দ্বারা রুটিগুলো পেচিয়ে আমার কাপড়ের মধ্যে গুজে দিলেন এবং অন্য অংশ আমার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট পাঠালেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি এগুলো নিয়ে গেলাম এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মসজিদে পেলাম। তাঁর সঙ্গে অনেক লোক। আমি তাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আবু তালহা তোমাকে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন: খাওয়ার জন্য? আমি বললাম, হ্যাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাথীদেরকে বললেন: ওঠ। তারপর তিনি চললেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:আমিও তাদের আগে আগে চলতে লাগলাম। অবশেষে আবু তালহার কাছে এসে পৌঁছলাম। আবু তালহা বললেন: হে উম্মু সুলাইম! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো অনেক লোক নিয়ে এসেছেন। অথচ আমাদের কাছে এ পরিমাণ খাবার নেই, যা তাদের খাওয়াব। উম্মু সুলাইম বললেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: তারপর আবু তালহা গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন। তারপর আবু তালহা ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে ঘরে প্রবেশ করলেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মু সুলাইমকে ডেকে বললেন: তোমার কাছে যা আছে তা নিয়ে আস। উম্মু সুলাইম ঐ রুটি নিয়ে আসলেন।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদেশ করলে তা টুকরা টুকরা করা হল। উম্মু সুলাইম (ঘি বা মধুর) পাত্র নিংড়িয়ে ব্যাঞ্জন বানালেন (এক ধরনের খাবার)। মাশাআল্লাহ তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এতে (কিছু বরকতের দো‘আ) যা পড়ার তা পড়লেন। এরপর বললেন: দশজনকে আসতে অনুমতি দাও। তাদের আসতে বলা হলে তারা তৃপ্তিসহ আহার করে বেরিয়ে গেলেন। আবার বললেন: দশজনকে আসতে অনুমতি দাও। তাদের অনুমতি দেয়া হলে তারা আহার করে তৃপ্ত হয়ে চলে গেলেন। এভাবে দলের যারা ছিলেন সবাই দশ দশজন করে আসলেন এবং খেয়ে তৃপ্ত হলেন। তারা মোট আশিজন ছিলেন। [. মুসলিম, হাদীস নং-৫১৪২]

উপরোল্লেখিত হাদীস সমূহ দ্বারা বুঝা যায় মেহমানদারীতে পুরুষের ভূমিকা অধিক। সেই সাথে নারীর সহযোগিতাও একান্ত যরূরী। আর মেহমানদারীতে রয়েছে ঈমানের পূর্ণতা, আয়ুবৃদ্ধি ও রুযিতে বরকত। এছাড়া অনাহারীকে খাদ্য খাওয়ানোর মাধ্যমে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করা যাবে। এ প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত হাদীসটি বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি পীড়িত ছিলাম, তুমি আমাকে দেখতে আসনি। তখন মানুষ বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি কিভাবে তোমাকে দেখতে আসব, অথচ তুমি বিশ্ব জগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে,আমার বান্দা অমুক অসুস্থ হয়েছিল? তুমি তাকে দেখতে যাওনি। তুমি কি জানতে না যে, তুমি যদি তাকে দেখতে যেতে নিশ্চয়ই আমাকে তার নিকট পেতে। আল্লাহ আবার বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট খানা চেয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমাকে খানা দাওনি। সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমাকে কিভাবে খাদ্য দিতাম? অথচ তুমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি কি জানতে না যে, আমার বান্দা অমুক তোমার নিকট খানা চেয়েছিল। তুমি তাকে খানা দাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে খানা দিতে নিশ্চয়ই তার নিকটে আমাকে পেতে। আল্লাহ আবার বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি তোমার নিকট পানি চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আমাকে পানি পান করাওনি। মানুষ বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমি তোমাকে কিভাবে পানি পান করাতাম? অথচ তুমি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, আমার অমুক বান্দা তোমার নিকট পানি চেয়েছিল, তুমি তাকে পানি পান করাওনি। তুমি কি জানতে না যে, যদি তুমি তাকে পানি পান করাতে তাহলে তুমি তা আমার নিকট পেতে। [. মুসলিম, হাদীস নং-১৪৪২]

উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, পার্থিব জগতের কোন কাজই অনর্থক নয়। তা যতই ক্ষুদ্র বা নগণ্য হোক না কেন। অতি সামান্য কাজের বিনিময়ও ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে পাওয়া যাবে। তাছাড়া দুনিয়াতে ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত মানুষকে পানাহার করানো আমাদের অবশ্য করণীয়। তেমনি পীড়িত ব্যক্তির সেবা-শুশ্রূষা করা ও তাকে দেখতে যাওয়া প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য করণীয়। এর বিনিময় পরকালে আল্লাহ দান করবেন।

এখানে একজন প্রকৃত ও পরিপূর্ণ মু’মিন এবং যিনি দাওয়াতের কাজ ব্রতী হবেন তার কিছু গুরুত্বপূর্ণ গুণ-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। সুতরাং প্রতিটি মু’মিনের উচিত এ সকল গুণাবলী অর্জন করে সে অনুযায়ী নিজের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক জীবন এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবনে বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা করা। তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ্।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন