HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
কুরআন ও সুন্নাহের ওপর আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জাওয়াব
লেখকঃ শাইখ: আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ., শাইখ: মুহাম্মাদ বিন সালেহ বিন উসাইমীন রহ., শাইখ: আব্দুর রায্যাক আফীফি রহ., শাইখ: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জাবরীন রহ., শাইখ: সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
কুরআন ও সুন্নাহের ওপর আরোপিত বিভিন্ন প্রশ্নের জাওয়াব
শাইখ: আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
শাইখ: মুহাম্মাদ বিন সালেহ বিন উসাইমীন রহ.
শাইখ: আব্দুর রায্যাক আফীফি রহ.
শাইখ: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জাবরীন রহ
শাইখ: সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
শাইখ: আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
শাইখ: মুহাম্মাদ বিন সালেহ বিন উসাইমীন রহ.
শাইখ: আব্দুর রায্যাক আফীফি রহ.
শাইখ: আব্দুল্লাহ বিন আব্দুর রহমান আল-জাবরীন রহ
শাইখ: সালেহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান
অনুবাদক: জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
সম্পাদক: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আমরা তাঁরই প্রশংসা করি, তাঁর নিকটই সাহায্য প্রার্থনা করি এবং তাঁরই নিকট ক্ষমা চাই। আর আমরা আমাদের আত্মার অনিষ্ঠতা থেকে এবং আমাদের আমলসমূহের মন্দ পরিণতি থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি। আল্লাহ যাকে হিদায়াত দেন, তাকে গোমরাহ করার কেউ নেই এবং যাকে গোমরাহ করেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও কেউ নেই। আর আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্যিকার কোন ইলাহ নেই, তিনি একক, অদ্বিতীয় তার কোন শরীক নেই।
অতঃপর
ইসলাম একটি যৌক্তিক ও বাস্তবমুখী এবং নিঁখুত ধর্ম। কিন্তু ইসলামের দুশমণরা ইসলামের ওপর আপত্তি করতে এবং ইসলাম ও মুসলিমকে কলঙ্কিত একটুও কার্পণ্য করেনি। যখনই ইসলামের ওপর কোন আপত্তি বা প্রশ্ন আরোপ করা হয়েছে, তার যথাযথ ও যৌক্তিক উত্তর দিতে যুগে যুগে বিজ্ঞ আলেমগণ কোন প্রকার কার্পণ্য করেননি। এ বইটি ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের বিভিন্ন বাণীর ওপর আরোপিত প্রশ্নসমূহের উত্তর সম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। বইটিতে বিজ্ঞ আলেমগণ ইসলামের ওপর আরোপিত বিভিন্ন আপত্তির জওয়াব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে দিয়েছেন। এ ধরনের আপত্তিগুলোর সঠিক উত্তর ও সমাধান জেনে থাকা মুসলিম ভাইদের জন্য খুবই জরুরি। যাতে ইসলামের দুশমনরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও আপত্তি তুলে ধরে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। এ কারণেই বইটির অনুবাদ বাংলা ভাষা বাসি ভাইদের জন্য তুলে ধরাকে জরুরি মনে করি। আশা করি বইটি পাঠ করে আপনারা অনেক প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন এবং যারা ইসলাম ও মুসলিমদের কলঙ্কিত করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের সাহায্যকারী ও তাওফীক দাতা। আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য চাই এবং তার কাছেই প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
অনুবাদক
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
অতঃপর
ইসলাম একটি যৌক্তিক ও বাস্তবমুখী এবং নিঁখুত ধর্ম। কিন্তু ইসলামের দুশমণরা ইসলামের ওপর আপত্তি করতে এবং ইসলাম ও মুসলিমকে কলঙ্কিত একটুও কার্পণ্য করেনি। যখনই ইসলামের ওপর কোন আপত্তি বা প্রশ্ন আরোপ করা হয়েছে, তার যথাযথ ও যৌক্তিক উত্তর দিতে যুগে যুগে বিজ্ঞ আলেমগণ কোন প্রকার কার্পণ্য করেননি। এ বইটি ইসলামের দুশমনদের পক্ষ থেকে কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদীসের বিভিন্ন বাণীর ওপর আরোপিত প্রশ্নসমূহের উত্তর সম্বলিত একটি গুরুত্বপূর্ণ বই। বইটিতে বিজ্ঞ আলেমগণ ইসলামের ওপর আরোপিত বিভিন্ন আপত্তির জওয়াব কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে দিয়েছেন। এ ধরনের আপত্তিগুলোর সঠিক উত্তর ও সমাধান জেনে থাকা মুসলিম ভাইদের জন্য খুবই জরুরি। যাতে ইসলামের দুশমনরা বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন ও আপত্তি তুলে ধরে ইসলামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে। এ কারণেই বইটির অনুবাদ বাংলা ভাষা বাসি ভাইদের জন্য তুলে ধরাকে জরুরি মনে করি। আশা করি বইটি পাঠ করে আপনারা অনেক প্রশ্নের সমাধান পেয়ে যাবেন এবং যারা ইসলাম ও মুসলিমদের কলঙ্কিত করার হীন চেষ্টায় লিপ্ত তাদের উপযুক্ত জবাব দিতে সক্ষম হবেন। আল্লাহ তা‘আলাই আমাদের সাহায্যকারী ও তাওফীক দাতা। আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য চাই এবং তার কাছেই প্রার্থনা করি। আল্লাহ আমাদের এ প্রচেষ্টাকে কবুল করুন।
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
অনুবাদক
জাকেরুল্লাহ আবুল খায়ের
মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অপার অনুগ্রহ যে, তিনি তাদের দীনকে সর্বশেষ দীন বানিয়েছেন, তাদের নবীকে সর্বশেষ নবী বানিয়েছেন এবং তার উম্মতকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত বানিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তাদের দীনের হিফাযতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। যে দীনের উৎস হলো পবিত্র কুরআন এবং তারপর স্বীয় রাসূলের পবিত্র সুন্নাত। যে ব্যক্তি এ দু’টিকে আঁকড়ে ধরবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে যাবতীয় ফিতনা-ফ্যাসাদ ও অনিষ্ঠতা থেকে রক্ষা করবেন। এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক অসিয়তই আমাদের জন্য যথেষ্ট। তিনি বলেন, لقد تركت فيكم ما إن تمسكتم به لن بعدي أبدا كتاب الله و سنتي “আমি তোমাদের জন্য এমন কিছু রেখে যাচ্ছি যার প্রতি আনুগত্য-শীল হলে আমার পর তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। আর তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সুন্নাত [আবূ দাউদ, হাদীস নং ১৯০৭]।” মুসলিম উম্মাহর আকীদা ও বিশ্বাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষে ইসলামের শুরু থেকে নিয়ে সর্বশেষ কলম-ধারী পর্যন্ত অনেকেই কুরআনের বিভিন্ন আয়াত এবং হাদীসের বিভিন্ন বাণীর ওপর ইচ্ছাকৃত ভাবেই কিছু প্রশ্ন ও আপত্তি তুলে ধরে মুসলিমদের বিপক্ষে উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ইতিহাসে এদের মধ্যে যারা উল্লেখযোগ্য তারা হলেন, যানাদিকা সম্প্রদায় তথা নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসীরা, ধর্ম নিরপেক্ষতবাদীরা এবং প্রশ্চাত্যবাদীরা। তারা বিশেষ করে অমুসলিম সংখ্যা ঘরিষ্ট দেশে সরল প্রাণ মুসলিমদের বিভ্রান্তিতে ফেলার লক্ষে এ ধরনের প্রশ্ন ও আপত্তি আরোপ করে থাকে। অজ্ঞতা এবং কুরআন ও সুন্নাহের গভীর ইলম না থাকার কারণে অনেক সময় দেখা যায় কতক মুসলিম সন্তানরাও এ ধরনের প্রশ্ন ও আপত্তি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। ফলে তারা এ ধরনের প্রশ্ন ও আপত্তির মুখে নিজেদের দৃঢ়তা ও অবিচলত ধরে রাখতে না পেরে বিভ্রান্তির বেড়া জালে আঁটকে পড়ে। তখন তারাও এ ধারণার বশবর্তী হয়ে বলতে থাকে যে, হতে পারে কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে পরস্পরিক বিরোধ বিদ্যমান রয়েছে।
অপরদিকে অন্যান্য ভাইয়েরা এ কথা দৃঢ়ভাবে জানে এবং বিশ্বাস করে যে, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। তারা যদি এ ধরনের কোন কিছু তাদের কাছে প্রকাশ পায় তারা আলেমদের জিজ্ঞাসা করেন যাতে তাদের ঈমান ও বিচক্ষণতা আরও বৃদ্ধি পায়। তাদের সামনে যখন তুমি এ ধরনের প্রশ্ন বা আপত্তি তুলে ধরবে, তখন তারা হতচকিত হয় না এবং ঘাবড়ে যায় না। তারা নির্বিঘ্নে এ কথা বলে— ﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ] “তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
আমরা ‘ফতওয়ার ভাণ্ডার নামক’ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড পাঠকের সামনে তুলে ধরবো। কিতাবটিতে কুরআন ও হাদীসের ওপর যে সব আপত্তি ও প্রশ্ন আরোপ করা হয়েছে সে সব প্রশ্ন ও আপত্তি সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞ আলেমদের—যারা মারা গেছেন আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করুন আর যারা বেচে আল্লাহ তাদের হেফাযত করুন—ফতওয়াসমূহ এবং উত্তরসমূহ একত্র করা হয়েছে। এখানে যে উত্তর ও ফতওয়া তুলে ধরা হয়েছে আশা করি একজন পাঠক প্রশ্ন ও আপত্তিগুলো সন্তোষজনক ও যথেষ্ট উত্তর পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ তা’আলা তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। যারা আল্লাহর দীনের ভাণ্ডার থেকে আবর্জনা দূর করে তা পরিষ্কার করার জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাদের বৈশিষ্ট্য সে সব লোকদের বৈশিষ্ট্য যারা কুরআন ও সুন্নাহের ধারক বাহক হিসেবে জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাস রচনা করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧﴾ [ ال عمران : ٧ ] “তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৭]
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
অপরদিকে অন্যান্য ভাইয়েরা এ কথা দৃঢ়ভাবে জানে এবং বিশ্বাস করে যে, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। তারা যদি এ ধরনের কোন কিছু তাদের কাছে প্রকাশ পায় তারা আলেমদের জিজ্ঞাসা করেন যাতে তাদের ঈমান ও বিচক্ষণতা আরও বৃদ্ধি পায়। তাদের সামনে যখন তুমি এ ধরনের প্রশ্ন বা আপত্তি তুলে ধরবে, তখন তারা হতচকিত হয় না এবং ঘাবড়ে যায় না। তারা নির্বিঘ্নে এ কথা বলে— ﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ] “তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২]
আমরা ‘ফতওয়ার ভাণ্ডার নামক’ কিতাবের দ্বিতীয় খণ্ড পাঠকের সামনে তুলে ধরবো। কিতাবটিতে কুরআন ও হাদীসের ওপর যে সব আপত্তি ও প্রশ্ন আরোপ করা হয়েছে সে সব প্রশ্ন ও আপত্তি সম্পর্কে আমাদের বিজ্ঞ আলেমদের—যারা মারা গেছেন আল্লাহ তাদের প্রতি দয়া করুন আর যারা বেচে আল্লাহ তাদের হেফাযত করুন—ফতওয়াসমূহ এবং উত্তরসমূহ একত্র করা হয়েছে। এখানে যে উত্তর ও ফতওয়া তুলে ধরা হয়েছে আশা করি একজন পাঠক প্রশ্ন ও আপত্তিগুলো সন্তোষজনক ও যথেষ্ট উত্তর পেয়ে যাবেন। ইনশাআল্লাহ
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা এই যে, আল্লাহ তা’আলা তাদের উত্তম প্রতিদান দান করুন। যারা আল্লাহর দীনের ভাণ্ডার থেকে আবর্জনা দূর করে তা পরিষ্কার করার জন্য নিজেদের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তাদের বৈশিষ্ট্য সে সব লোকদের বৈশিষ্ট্য যারা কুরআন ও সুন্নাহের ধারক বাহক হিসেবে জীবন উৎসর্গ করে ইতিহাস রচনা করে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧﴾ [ ال عمران : ٧ ] “তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৭]
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ] “এবং জরায়ুতে যা আছে, তা তিনি জানেন” আর মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে সে সম্পর্কে ডাক্তারদের বলে দেয়া!।
প্রশ্ন: বর্তমানে মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে, সে সম্পর্কে ডাক্তারদের অবগত হওয়া আর আল্লাহর বাণী: ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ] “এবং জরায়ুতে যা আছে, তা কেবল তিনিই জানেন।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] উভয়ের মাঝে যে বৈপরীত্য ও বিরোধ লক্ষ্য করা যায় তা কীভাবে নিরসন করা যাবে? তা জানতে চাই। এ ছাড়াও ইবনে জারির রহ. স্বীয় তাফসীরে মুজাহিদ থেকে এবং একই বর্ণনা ক্বাতাদাহ থেকে নকল করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার গর্ভবতী স্ত্রীর গর্ভের সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলল, সে কন্যা সন্তান জন্ম দেবে নাকি ছেলে? এ জিজ্ঞাসার প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা‘আলা এ ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ] “এবং জরায়ুতে যা আছে, তা কেবল তিনিই জানেন” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] আয়াত নাযিল করেন।
উত্তর: মাস’আলাটি উত্তর দেওয়ার পূর্বে এ কথা জানিয়ে দেওয়া জরুরি মনে করছি যে, কুরআনের সু-স্পষ্ট আয়াত কখনোই বাস্তবতার পরিপন্থী বা বাস্তবতার সাথে বিরোধপূর্ণ হতে পারে না। যদিও বাহ্যিক অর্থে বিরোধ দেখা যায়, তবে তা নিছক জ্ঞানের অভাব বা অহেতুক দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। অথবা কুরআনের আয়াতের বর্ণনাটি তার কাছে অস্পষ্ট এবং সে বুঝতে অক্ষম। কারণ, কুরআনের স্পষ্ট বাণী ও বাস্তবতা উভয়টি অকাট্য সত্য। আর দু’টি অকাট্য সত্য বিপরীতমুখী বা পরস্পর বিরোধী হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।
বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর বলা যায় যে, বর্তমানে ডাক্তারগণ অত্যাধুনিক ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মাতৃগর্ভের সন্তান সম্পর্কে অবগত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছেন। মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে? সে সম্পর্কে তাদের অবগত হওয়ার দাবি যদি অসত্য হয়, তবে তাতে কোন প্রশ্ন থাকে না। (যেমনটি অনেক সময় হয়ে থাকে) আর যদি সত্য হয়, তবে তাও কুরআনের আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। কারণ, এ আয়াত পাঁচটি বিষয় গাইবী হওয়াকে প্রমাণ করে যার ইলম কেবল আল্লাহর ইলমের সাথে সম্পর্ক। এগুলো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আর মাতৃগর্ভের সন্তান বিষয়ে গাইবী বিষয়গুলো হলো, মায়ের পেটে তার অবস্থানের সময়ের পরিমাণ, হায়াত, কর্ম, রিযিক, সৎ হওয়া, অসৎ হওয়া এবং সৃষ্টির পূর্বে ছেলে বা মেয়ে হওয়া। (এ বিষয়গুলো কেবল আল্লাহ জানেন আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না) ফলে সৃষ্টির পর ছেলে বা মেয়ে হওয়া সম্পর্কে জানা কোন গাইবী বিষয় নয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না। কারণ, সৃষ্টির পর তা আর অদৃশ্য থাকে না বরং তা দৃশ্য, যা প্রত্যক্ষ জ্ঞানে পরিণত হয়। তবে সন্তানটি এমন তিনটি অন্ধকারের মধ্যে লুকায়িত ও গোপন যা দূর করা হলে তার বিষয়টি স্পষ্ট হয় যাবে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোন শক্তিশালী আলো বা যন্ত্র পাওয়া যাওয়া অসম্ভব নয়, যা এ তিন অন্ধকারকে ভেদ করে বাচ্চাটির ছেলে না মেয়ে তা প্রকাশ করে দিতে পারে। আর আয়াতে বা রাসূল থেকে বর্ণিত হাদীসে স্পষ্ট করে এ কথা বলা হয়নি যে, ছেলে হওয়া বা মেয়ে হওয়ার বিষয়টি গাইবী বিষয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।
প্রশ্নকারী ইবনে জারীর থেকে এবং তিনি মুজাহিদ থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন—এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, তার স্ত্রী কেমন সন্তান প্রসব করবেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াত নাযিল করেন—সে হাদীসটি মুনকাতে‘। কারণ, মুজাহিদ রহ. তাবে‘ঈনদের একজন ছিলেন সাহাবী ছিলেন না।
আর কাতাদাহ রহ. ‘কেবল আল্লাহ জানেন’ বলে হাদীসটির যে ব্যাখ্যা করেছেন, সে ব্যাখ্যার অর্থ, এ হতে পারে যে, বাচ্চাটি সৃষ্টির পূর্বের বিষয়গুলো কেবল আল্লাহ জানেন। আর সৃষ্টির পর তার সম্পর্কে অন্যরাও জানতে পারে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
আল্লামা ইবন কাসীর রহ. সূরা লুকমানের আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, ‘আর অনুরূপভাবে মাতৃগর্ভে যা রয়েছে সেটিকে তিনি কি সৃষ্টি করার ইচ্ছা করবেন, তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি ছেলে বা মেয়ে এবং নেককার বা বদকার হওয়ার নির্দেশ দেন তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ এবং অন্যান্য মাখলুক যাদেরকে তিনি জানান, তারা জানতে পারেন’।
আল্লাহর ব্যাপক বাণী— ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ]-“এবং জরায়ূতে যা আছে, তা কেবল তিনি জানেন” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] -তে খাস করা সম্পর্কে তোমাদের করা প্রশ্নের উত্তর হলো, সৃষ্টি করার পর যদি আয়াতটি ছেলে হওয়া বা কন্যা হওয়া বিষয়ে যদি জানা যায়, তখন খাসকারী হলো বাস্তবতা ও অনুধাবন। উসূলের ইমামগণ বলেছেন, কিতাব ও সূন্নাহের মুখাস্সিস হয়তো নস হবে অথবা ইজমা অথবা কিয়াস অথবা বাস্তবতা। এ বিষয়ে তাদের কথা অত্যন্ত সু-প্রসিদ্ধ।
আর যদি আয়াত সৃষ্টির পরকে অর্ন্তভুক্ত না করে এবং তার দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সৃষ্টির পূর্বের বিষয়গুলো হয়ে থাকে তাহলে গর্বের সন্তান ছেলে না মেয়ে সে সম্পর্কে কারো জানা না থাকা এবং তা কেবল আল্লাহর জানা থাকার সাথে তোমরা যা বলেছ তার সাথে আয়াতটি মোটেও বিরোধপূর্ণ নয়।
আলহামদু লিল্লাহ! বাস্তবে এমন কোন বিষয় কখনো পাওয়া যায়নি এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে না, যা কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে পরস্পর বিরোধী হবে।
কিছু বিষয় যেগুলো বাহ্যিক ভাবে কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে বিরোধ মনে হয় সেগুলোকে নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমের দুশমনরা যে সব কল্পকাহিনী, প্রশ্ন ও আপত্তি আরোপ করে, তা তাদের জ্ঞানের দুর্বলতা এবং আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার কারণে হয় অথবা তাদের খারাপ কোন উদ্দেশ্যের কারণে হয়ে থাকে।
কিন্তু যারা দীনদার ও আহলে ইলম তারা গবেষণা ও চিন্তা করে আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারেন, যা তাদের সন্দেহ-সংশয়কে দূর করে দেন। যাবতীয় প্রশংসা ও দয়া কেবলই আল্লাহর।
মনে রাখবে, এ মাস’আলাটির ক্ষেত্রে মানুষ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
প্রথম—এক শ্রেণী যারা কুরআনের বাহ্যিক অর্থ যা স্পষ্ট নয় তা গ্রহণ করেছে এবং কুরআনের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত যে বাস্তবতা ও অনিবার্য সত্য রয়েছে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে আপত্তিটি হয় তার নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে টেনে নিয়ে আসে অথবা কুরআনের প্রতি আপত্তিটি আরোপিত হয়। কারণ, তার দৃষ্টিতে কুরআনে এমন একটি বিষয় বলা হয়েছে যা অকাট্য একটি সত্যকে অস্বীকার করে এবং তা তার বিপরীত।
দ্বিতীয়— যারা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত বিষয়কে পুরোপুরি অস্বীকার করে এবং বস্তুবাদের দ্বারা সাব্যস্ত বাস্তব বিষয়টিকে গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে তারা নাস্তিকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয়— যারা মধ্যপন্থী। তারা কুরআনের দ্বারা প্রমাণিত বিষয়টিও জানেন এবং বাস্তবতাকে স্বীকার করেন। তারা এ কথা মেনে নেন যে, কুরআন ও বাস্তবতা উভয়টিই সত্য। কুরআনের কোন একটি স্পষ্ট বিষয় বাস্তব ও চাক্ষুষ কোন বিষয়ে সাথে সাংঘর্সিক হওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তারা আকল (জ্ঞান বা যুক্তি) ও নকল (কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা) উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য সাধন করেন। যার ফলে তাদের দীনদারি ও বাস্তবতা উভয়টি যথাস্থানে বহাল থাকে। আল্লাহ তা‘আলা যারা ঈমান এনেছেন তাদেরকে বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দেখান। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সঠিক পথের প্রতি হিদায়েত দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা এই যে, তিনি যেন আমাদের ও তোমাদের সবাইকে ভালো কর্মের তাওফীক দেন। হে আল্লাহ তুমিই একমাত্র তাওফীক দাতা, তোমার ওপরই ভরসা। আর তোমার দিকেই আমাদের ফিরে যাওয়া।
প্রশ্ন: বর্তমানে মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে, সে সম্পর্কে ডাক্তারদের অবগত হওয়া আর আল্লাহর বাণী: ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ] “এবং জরায়ুতে যা আছে, তা কেবল তিনিই জানেন।” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] উভয়ের মাঝে যে বৈপরীত্য ও বিরোধ লক্ষ্য করা যায় তা কীভাবে নিরসন করা যাবে? তা জানতে চাই। এ ছাড়াও ইবনে জারির রহ. স্বীয় তাফসীরে মুজাহিদ থেকে এবং একই বর্ণনা ক্বাতাদাহ থেকে নকল করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার গর্ভবতী স্ত্রীর গর্ভের সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে বলল, সে কন্যা সন্তান জন্ম দেবে নাকি ছেলে? এ জিজ্ঞাসার প্রেক্ষাপটে আল্লাহ তা‘আলা এ ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ] “এবং জরায়ুতে যা আছে, তা কেবল তিনিই জানেন” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] আয়াত নাযিল করেন।
উত্তর: মাস’আলাটি উত্তর দেওয়ার পূর্বে এ কথা জানিয়ে দেওয়া জরুরি মনে করছি যে, কুরআনের সু-স্পষ্ট আয়াত কখনোই বাস্তবতার পরিপন্থী বা বাস্তবতার সাথে বিরোধপূর্ণ হতে পারে না। যদিও বাহ্যিক অর্থে বিরোধ দেখা যায়, তবে তা নিছক জ্ঞানের অভাব বা অহেতুক দাবী ছাড়া আর কিছুই নয়। অথবা কুরআনের আয়াতের বর্ণনাটি তার কাছে অস্পষ্ট এবং সে বুঝতে অক্ষম। কারণ, কুরআনের স্পষ্ট বাণী ও বাস্তবতা উভয়টি অকাট্য সত্য। আর দু’টি অকাট্য সত্য বিপরীতমুখী বা পরস্পর বিরোধী হওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব।
বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পর বলা যায় যে, বর্তমানে ডাক্তারগণ অত্যাধুনিক ও সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির মাধ্যমে মাতৃগর্ভের সন্তান সম্পর্কে অবগত হওয়ার দক্ষতা অর্জন করেছেন। মাতৃগর্ভের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে হবে? সে সম্পর্কে তাদের অবগত হওয়ার দাবি যদি অসত্য হয়, তবে তাতে কোন প্রশ্ন থাকে না। (যেমনটি অনেক সময় হয়ে থাকে) আর যদি সত্য হয়, তবে তাও কুরআনের আয়াতের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। কারণ, এ আয়াত পাঁচটি বিষয় গাইবী হওয়াকে প্রমাণ করে যার ইলম কেবল আল্লাহর ইলমের সাথে সম্পর্ক। এগুলো একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আর মাতৃগর্ভের সন্তান বিষয়ে গাইবী বিষয়গুলো হলো, মায়ের পেটে তার অবস্থানের সময়ের পরিমাণ, হায়াত, কর্ম, রিযিক, সৎ হওয়া, অসৎ হওয়া এবং সৃষ্টির পূর্বে ছেলে বা মেয়ে হওয়া। (এ বিষয়গুলো কেবল আল্লাহ জানেন আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেন না) ফলে সৃষ্টির পর ছেলে বা মেয়ে হওয়া সম্পর্কে জানা কোন গাইবী বিষয় নয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না। কারণ, সৃষ্টির পর তা আর অদৃশ্য থাকে না বরং তা দৃশ্য, যা প্রত্যক্ষ জ্ঞানে পরিণত হয়। তবে সন্তানটি এমন তিনটি অন্ধকারের মধ্যে লুকায়িত ও গোপন যা দূর করা হলে তার বিষয়টি স্পষ্ট হয় যাবে। আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে এমন কোন শক্তিশালী আলো বা যন্ত্র পাওয়া যাওয়া অসম্ভব নয়, যা এ তিন অন্ধকারকে ভেদ করে বাচ্চাটির ছেলে না মেয়ে তা প্রকাশ করে দিতে পারে। আর আয়াতে বা রাসূল থেকে বর্ণিত হাদীসে স্পষ্ট করে এ কথা বলা হয়নি যে, ছেলে হওয়া বা মেয়ে হওয়ার বিষয়টি গাইবী বিষয় যা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানতে পারবে না।
প্রশ্নকারী ইবনে জারীর থেকে এবং তিনি মুজাহিদ থেকে যে হাদীস বর্ণনা করেছেন—এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন, তার স্ত্রী কেমন সন্তান প্রসব করবেন? তখন আল্লাহ তা‘আলা উল্লিখিত আয়াত নাযিল করেন—সে হাদীসটি মুনকাতে‘। কারণ, মুজাহিদ রহ. তাবে‘ঈনদের একজন ছিলেন সাহাবী ছিলেন না।
আর কাতাদাহ রহ. ‘কেবল আল্লাহ জানেন’ বলে হাদীসটির যে ব্যাখ্যা করেছেন, সে ব্যাখ্যার অর্থ, এ হতে পারে যে, বাচ্চাটি সৃষ্টির পূর্বের বিষয়গুলো কেবল আল্লাহ জানেন। আর সৃষ্টির পর তার সম্পর্কে অন্যরাও জানতে পারে তাতে কোন অসুবিধা নেই।
আল্লামা ইবন কাসীর রহ. সূরা লুকমানের আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, ‘আর অনুরূপভাবে মাতৃগর্ভে যা রয়েছে সেটিকে তিনি কি সৃষ্টি করার ইচ্ছা করবেন, তা তিনি ছাড়া আর কেউ জানেন না। কিন্তু যখন তিনি ছেলে বা মেয়ে এবং নেককার বা বদকার হওয়ার নির্দেশ দেন তখন দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতাগণ এবং অন্যান্য মাখলুক যাদেরকে তিনি জানান, তারা জানতে পারেন’।
আল্লাহর ব্যাপক বাণী— ﴿وَيَعۡلَمُ مَا فِي ٱلۡأَرۡحَامِۖ ٣٤﴾ [ لقمان : ٣٤ ]-“এবং জরায়ূতে যা আছে, তা কেবল তিনি জানেন” [সূরা লুকমান, আয়াত: ৩৪] -তে খাস করা সম্পর্কে তোমাদের করা প্রশ্নের উত্তর হলো, সৃষ্টি করার পর যদি আয়াতটি ছেলে হওয়া বা কন্যা হওয়া বিষয়ে যদি জানা যায়, তখন খাসকারী হলো বাস্তবতা ও অনুধাবন। উসূলের ইমামগণ বলেছেন, কিতাব ও সূন্নাহের মুখাস্সিস হয়তো নস হবে অথবা ইজমা অথবা কিয়াস অথবা বাস্তবতা। এ বিষয়ে তাদের কথা অত্যন্ত সু-প্রসিদ্ধ।
আর যদি আয়াত সৃষ্টির পরকে অর্ন্তভুক্ত না করে এবং তার দ্বারা উদ্দেশ্য শুধুমাত্র সৃষ্টির পূর্বের বিষয়গুলো হয়ে থাকে তাহলে গর্বের সন্তান ছেলে না মেয়ে সে সম্পর্কে কারো জানা না থাকা এবং তা কেবল আল্লাহর জানা থাকার সাথে তোমরা যা বলেছ তার সাথে আয়াতটি মোটেও বিরোধপূর্ণ নয়।
আলহামদু লিল্লাহ! বাস্তবে এমন কোন বিষয় কখনো পাওয়া যায়নি এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে না, যা কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে পরস্পর বিরোধী হবে।
কিছু বিষয় যেগুলো বাহ্যিক ভাবে কুরআনের স্পষ্ট বাণীর সাথে বিরোধ মনে হয় সেগুলোকে নিয়ে ইসলাম ও মুসলিমের দুশমনরা যে সব কল্পকাহিনী, প্রশ্ন ও আপত্তি আরোপ করে, তা তাদের জ্ঞানের দুর্বলতা এবং আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতার কারণে হয় অথবা তাদের খারাপ কোন উদ্দেশ্যের কারণে হয়ে থাকে।
কিন্তু যারা দীনদার ও আহলে ইলম তারা গবেষণা ও চিন্তা করে আসল রহস্য উদঘাটন করতে পারেন, যা তাদের সন্দেহ-সংশয়কে দূর করে দেন। যাবতীয় প্রশংসা ও দয়া কেবলই আল্লাহর।
মনে রাখবে, এ মাস’আলাটির ক্ষেত্রে মানুষ তিন শ্রেণিতে বিভক্ত:
প্রথম—এক শ্রেণী যারা কুরআনের বাহ্যিক অর্থ যা স্পষ্ট নয় তা গ্রহণ করেছে এবং কুরআনের বাহ্যিক অর্থের বিপরীত যে বাস্তবতা ও অনিবার্য সত্য রয়েছে তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলে আপত্তিটি হয় তার নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতাকে টেনে নিয়ে আসে অথবা কুরআনের প্রতি আপত্তিটি আরোপিত হয়। কারণ, তার দৃষ্টিতে কুরআনে এমন একটি বিষয় বলা হয়েছে যা অকাট্য একটি সত্যকে অস্বীকার করে এবং তা তার বিপরীত।
দ্বিতীয়— যারা কুরআন দ্বারা প্রমাণিত বিষয়কে পুরোপুরি অস্বীকার করে এবং বস্তুবাদের দ্বারা সাব্যস্ত বাস্তব বিষয়টিকে গ্রহণ করে থাকে। এর ফলে তারা নাস্তিকদের দলভুক্ত হয়ে পড়ে।
তৃতীয়— যারা মধ্যপন্থী। তারা কুরআনের দ্বারা প্রমাণিত বিষয়টিও জানেন এবং বাস্তবতাকে স্বীকার করেন। তারা এ কথা মেনে নেন যে, কুরআন ও বাস্তবতা উভয়টিই সত্য। কুরআনের কোন একটি স্পষ্ট বিষয় বাস্তব ও চাক্ষুষ কোন বিষয়ে সাথে সাংঘর্সিক হওয়া কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তারা আকল (জ্ঞান বা যুক্তি) ও নকল (কুরআন ও হাদীসের বর্ণনা) উভয়ের মাঝে সামঞ্জস্য সাধন করেন। যার ফলে তাদের দীনদারি ও বাস্তবতা উভয়টি যথাস্থানে বহাল থাকে। আল্লাহ তা‘আলা যারা ঈমান এনেছেন তাদেরকে বিরোধপূর্ণ বিষয়ে সঠিক পথ দেখান। আর আল্লাহ যাকে চান তাকে সঠিক পথের প্রতি হিদায়েত দিয়ে থাকেন। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা এই যে, তিনি যেন আমাদের ও তোমাদের সবাইকে ভালো কর্মের তাওফীক দেন। হে আল্লাহ তুমিই একমাত্র তাওফীক দাতা, তোমার ওপরই ভরসা। আর তোমার দিকেই আমাদের ফিরে যাওয়া।
নবীগণের শির্ক থেকে পবিত্র হওয়া ও আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ ١٠٦﴾ [ يونس : ١٠٦ ] ‘‘আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না।” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে এ কথা— ﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ ١٠٦﴾ [ يونس : ١٠٦ ] ‘‘আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬] কেন বলেছেন? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্ক থেকে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ এবং তার থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া অসম্ভব?
উত্তর: আয়াতের বাহ্যিক বর্ণনা ভঙ্গি দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই সম্বোধন করা হয়েছে। কোন কোন আলেম বলেন, রাসূলকে সম্বোধন করা হয়েছে, এ কথা বলা সঠিক নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শির্ক প্রকাশ পাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আয়াতের শুরুতে قل শব্দটি উহ্য আছে। (তখন অর্থ হবে হে রাসূল! আপনি বলুন)। এ ব্যাখ্যাটি দুর্বল কারণ, এ দ্বারা আয়াতকে তার বর্ণনা ভঙ্গি থেকে দূরে সরানো হয়।
সঠিক উত্তর: সম্বোধনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। কিন্তু বিধানটি তার জন্য ও অন্যদের জন্য ব্যাপক। অথবা সম্বোধনটি যাদের সম্বোধন করা যায় তাদের সবার জন্য ব্যাপক। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের সম্বোধন রাসূলুল্লাহের প্রতি নির্দেশিত হওয়া এ কথাকে বাধ্য করে না যে, তার থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ] “আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই।” [সূরা আয-যুমার আয়াত: ৬৪] ফলে সম্বোধনটি তার জন্য এবং সব নবী ও রাসূলদের জন্য যাদের থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া অসম্ভব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার অবস্থান বিবেচনায় শির্ক পাওয়া যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তারপরও তাকে নিষেধ করার হিকমত হলো, যাতে অন্যরা এ কথা দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করে এবং সতর্ক হয়, যাদের থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া তার অবস্থান বিবেচনায় অসম্ভব তার জন্য যদি এত বড় কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা হয়, তাহলে যারা তাদের মানের লোক নয়-নবী বা রাসূল নয়- তাদের জন্য কি ধরনের কড়াকড়ি হতে পারে?। ফলে তাদের সাবধান ও সতর্ক হওয়া তাদের তুলনায় আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেওয়ার মালিক এবং তিনিই অভিবাবক।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে এ কথা— ﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ ١٠٦﴾ [ يونس : ١٠٦ ] ‘‘আর আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুকে ডেকো না, যা তোমার উপকার করতে পারে না এবং তোমার ক্ষতিও করতে পারে না” [সূরা ইউনুস, আয়াত: ১০৬] কেন বলেছেন? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শির্ক থেকে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ এবং তার থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া অসম্ভব?
উত্তর: আয়াতের বাহ্যিক বর্ণনা ভঙ্গি দ্বারা বুঝা যায় যে, এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই সম্বোধন করা হয়েছে। কোন কোন আলেম বলেন, রাসূলকে সম্বোধন করা হয়েছে, এ কথা বলা সঠিক নয়। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শির্ক প্রকাশ পাওয়া সম্পূর্ণ অসম্ভব। আয়াতের শুরুতে قل শব্দটি উহ্য আছে। (তখন অর্থ হবে হে রাসূল! আপনি বলুন)। এ ব্যাখ্যাটি দুর্বল কারণ, এ দ্বারা আয়াতকে তার বর্ণনা ভঙ্গি থেকে দূরে সরানো হয়।
সঠিক উত্তর: সম্বোধনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য খাস। কিন্তু বিধানটি তার জন্য ও অন্যদের জন্য ব্যাপক। অথবা সম্বোধনটি যাদের সম্বোধন করা যায় তাদের সবার জন্য ব্যাপক। তাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও অন্তর্ভুক্ত। এ ধরনের সম্বোধন রাসূলুল্লাহের প্রতি নির্দেশিত হওয়া এ কথাকে বাধ্য করে না যে, তার থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ] “আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই।” [সূরা আয-যুমার আয়াত: ৬৪] ফলে সম্বোধনটি তার জন্য এবং সব নবী ও রাসূলদের জন্য যাদের থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া অসম্ভব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তার অবস্থান বিবেচনায় শির্ক পাওয়া যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। তারপরও তাকে নিষেধ করার হিকমত হলো, যাতে অন্যরা এ কথা দ্বারা উপদেশ গ্রহণ করে এবং সতর্ক হয়, যাদের থেকে শির্ক পাওয়া যাওয়া তার অবস্থান বিবেচনায় অসম্ভব তার জন্য যদি এত বড় কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা হয়, তাহলে যারা তাদের মানের লোক নয়-নবী বা রাসূল নয়- তাদের জন্য কি ধরনের কড়াকড়ি হতে পারে?। ফলে তাদের সাবধান ও সতর্ক হওয়া তাদের তুলনায় আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ ও শ্রেয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেওয়ার মালিক এবং তিনিই অভিবাবক।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫] এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ] “ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী— ﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ] “ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩] এবং অপর বাণী— ﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫] উভয় আয়াতের মাঝে পরিলক্ষিত বিরোধ কিভাবে দূর করব?
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ] “ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩] টি আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿وَلَقَدۡ فَضَّلۡنَا بَعۡضَ ٱلنَّبِيِّۧنَ عَلَىٰ بَعۡضٖۖ ٥٥﴾ [ الاسراء : ٥٥ ] “আর আমি তো কতক নবীকে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি” [সূরা আল-ইসরাহ, আয়াত: ৫৫]-এর মতো। নবী ও রাসূলগণ অবশ্যই একজন অপর জন অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ। রাসূলগণ নবীদের অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ। উলুল-আযম রাসূলগণ অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। উলুল-আযম রাসূলগণ হলেন পাঁচ জন যাদের আলোচনা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের দু’টি আয়াতে করেছেন।
প্রথম আয়াত সূরা আল-আহযাবে, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِذۡ أَخَذۡنَا مِنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ مِيثَٰقَهُمۡ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٖ وَإِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۖ وَأَخَذۡنَا مِنۡهُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٧﴾ [ الاحزاب : ٧ ] “আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭] মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূহ আলাইহিস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম এবং ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহাস সালাম প্রমূখদের কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় আয়াত সূরা আশ-শূরা, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ] “তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১৩] সুতরাং, উভয় আয়াতে পাঁচ জনের আলোচনা রয়েছে। আর এরা পাঁচজন অন্যদের তুলনায় উত্তম।
মু’মিনদের সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: ﴿كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫] এর অর্থ, ঈমান আনার বিষয়ে আমরা তাদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য বা ব্যবধান করব না। বরং আমরা ঈমান আনব যে, তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল, তারা কখনোই মিথ্যা বলেননি, তারা সত্যবাদী ও বিশ্বাস্য। আর এটি হলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]—এর মর্ম অর্থ। অর্থাৎ, ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন ব্যবধান করব না। বরং তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল এ কথার প্রতি ঈমান আনব এবং বিশ্বাস স্থাপন করব। কিন্তু ঈমানের দাবী অনুসরণ করা। যারা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর পরে দুনিয়াতে এসেছে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর অনুকরণই খাস বা নির্ধারিত। কারণ, তিনিই অনুকরণ যোগ্য। তার আনিত শরী‘আত পূর্বের সব শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছেন। এ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ঈমান হবে সব নবী ও রাসূলগণের প্রতি, আমরা তাদের সবাইকে বিশ্বাস করি, তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল এবং তারা যে শরী‘আত নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়াতে প্রেরণের পর পূর্বের সব দীন ও শরী‘আত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতের দ্বারা রহিত। বর্তমানে সমগ্র মানুষের ওপর ওয়াজিব হলো, কেবল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতের অনুকরণ করা এবং তার সাহায্য করা। আল্লাহর তার প্রজ্ঞা ও হিকমত দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ছাড়া পূর্বে নবী ও রাসূলদের সব দীন ও শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ] “বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১২] সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ছাড়া বাকী সব দীন রহিত। কিন্তু রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস করা ও ঈমান আনা এবং তাদের সত্য বলে জ্ঞান করা খুবই জরুরি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেয়ার মালিক ও অভিবাবক।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী— ﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ] “ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩] এবং অপর বাণী— ﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫] উভয় আয়াতের মাঝে পরিলক্ষিত বিরোধ কিভাবে দূর করব?
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿تِلۡكَ ٱلرُّسُلُ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۘ ٢٥٣﴾ [ البقرة : ٢٥٣ ] “ঐ রাসূলগণ, আমি তাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৩] টি আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿وَلَقَدۡ فَضَّلۡنَا بَعۡضَ ٱلنَّبِيِّۧنَ عَلَىٰ بَعۡضٖۖ ٥٥﴾ [ الاسراء : ٥٥ ] “আর আমি তো কতক নবীকে কতকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি” [সূরা আল-ইসরাহ, আয়াত: ৫৫]-এর মতো। নবী ও রাসূলগণ অবশ্যই একজন অপর জন অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ। রাসূলগণ নবীদের অপেক্ষায় শ্রেষ্ঠ। উলুল-আযম রাসূলগণ অন্যদের তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও উত্তম। উলুল-আযম রাসূলগণ হলেন পাঁচ জন যাদের আলোচনা আল্লাহ তা‘আলা কুরআনের দু’টি আয়াতে করেছেন।
প্রথম আয়াত সূরা আল-আহযাবে, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِذۡ أَخَذۡنَا مِنَ ٱلنَّبِيِّۧنَ مِيثَٰقَهُمۡ وَمِنكَ وَمِن نُّوحٖ وَإِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَى ٱبۡنِ مَرۡيَمَۖ وَأَخَذۡنَا مِنۡهُم مِّيثَٰقًا غَلِيظٗا ٧﴾ [ الاحزاب : ٧ ] “আর স্মরণ কর, যখন আমি অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম নবীদের থেকে এবং তোমার থেকে, নূহ, ইবরাহীম, মূসা ও মারইয়াম পুত্র ঈসা থেকে। আর আমি তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলাম।” [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৭] মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নূহ আলাইহিস সালাম ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মূসা আলাইহিস সালাম এবং ঈসা ইবন মারইয়াম আলাইহাস সালাম প্রমূখদের কথা এ আয়াতে বলা হয়েছে।
দ্বিতীয় আয়াত সূরা আশ-শূরা, যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿شَرَعَ لَكُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا وَصَّىٰ بِهِۦ نُوحٗا وَٱلَّذِيٓ أَوۡحَيۡنَآ إِلَيۡكَ وَمَا وَصَّيۡنَا بِهِۦٓ إِبۡرَٰهِيمَ وَمُوسَىٰ وَعِيسَىٰٓۖ ١٣﴾ [ الشورى : ١٣ ] “তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১৩] সুতরাং, উভয় আয়াতে পাঁচ জনের আলোচনা রয়েছে। আর এরা পাঁচজন অন্যদের তুলনায় উত্তম।
মু’মিনদের সম্পর্কে আল্লাহর বাণী: ﴿كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫] এর অর্থ, ঈমান আনার বিষয়ে আমরা তাদের মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য বা ব্যবধান করব না। বরং আমরা ঈমান আনব যে, তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল, তারা কখনোই মিথ্যা বলেননি, তারা সত্যবাদী ও বিশ্বাস্য। আর এটি হলো আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ ٢٨٥﴾ [ البقرة : ٢٨٥ ] “আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫]—এর মর্ম অর্থ। অর্থাৎ, ঈমানের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন ব্যবধান করব না। বরং তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল এ কথার প্রতি ঈমান আনব এবং বিশ্বাস স্থাপন করব। কিন্তু ঈমানের দাবী অনুসরণ করা। যারা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর পরে দুনিয়াতে এসেছে তাদের জন্য রাসূলুল্লাহর অনুকরণই খাস বা নির্ধারিত। কারণ, তিনিই অনুকরণ যোগ্য। তার আনিত শরী‘আত পূর্বের সব শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছেন। এ দ্বারা আমরা বুঝতে পারলাম যে, ঈমান হবে সব নবী ও রাসূলগণের প্রতি, আমরা তাদের সবাইকে বিশ্বাস করি, তারা সবাই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সত্য রাসূল এবং তারা যে শরী‘আত নিয়ে আগমন করেছেন তা সত্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দুনিয়াতে প্রেরণের পর পূর্বের সব দীন ও শরী‘আত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতের দ্বারা রহিত। বর্তমানে সমগ্র মানুষের ওপর ওয়াজিব হলো, কেবল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরী‘আতের অনুকরণ করা এবং তার সাহায্য করা। আল্লাহর তার প্রজ্ঞা ও হিকমত দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ছাড়া পূর্বে নবী ও রাসূলদের সব দীন ও শরী‘আতকে রহিত করে দিয়েছেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا ٱلَّذِي لَهُۥ مُلۡكُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِۖ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ يُحۡيِۦ وَيُمِيتُۖ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرَسُولِهِ ٱلنَّبِيِّ ٱلۡأُمِّيِّ ٱلَّذِي يُؤۡمِنُ بِٱللَّهِ وَكَلِمَٰتِهِۦ وَٱتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمۡ تَهۡتَدُونَ ١٥٨﴾ [ الاعراف : ١٥٧ ] “বল, ‘হে মানুষ, আমি তোমাদের সবার প্রতি আল্লাহর রাসূল, যার রয়েছে আসমানসমূহ ও জমিনের রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু দেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আন ও তাঁর প্রেরিত উম্মী নবীর প্রতি, যে আল্লাহ ও তাঁর বাণীসমূহের প্রতি ঈমান রাখে। আর তোমরা তার অনুসরণ কর, আশা করা যায়, তোমরা হিদায়াত লাভ করবে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১২] সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দীন ছাড়া বাকী সব দীন রহিত। কিন্তু রাসূলদের প্রতি বিশ্বাস করা ও ঈমান আনা এবং তাদের সত্য বলে জ্ঞান করা খুবই জরুরি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেয়ার মালিক ও অভিবাবক।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে” [সূরা তা-হা, আয়াত: ২৮৫] আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না।”[সূরা নিসা, আয়াত: ৪৮]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮] এবং আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] এ দু’টি আয়াতের মাঝে (একটিতে ক্ষমা করার ঘোষণা এবং অপটিতে শির্কের গুণাহ ক্ষমা না করার কথা বলা হয়েছে) কীভাবে একত্র করব এবং বিরোধ নিরসন করব। বাস্তবে উভয় আয়াতের মধ্যে কোন বৈপরীত্য বা বিরোধ আছে কি?
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ বা বৈপরীত্য নেই। প্রথম আয়াত ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে শির্কের ওপর তাওবা ছাড়া মারা গেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন না তার ঠিকানা জাহান্নাম। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ৮৮]
আর দ্বিতীয় আয়াত: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] (এ সম্পর্কীয় আয়াত কুরআনে কারীমে আরও অনেক রয়েছে।) দ্বিতীয় আয়াত যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তা হলো তাদের সম্পর্কে যারা তাওবা করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২] সমস্ত উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, এ আয়াতটি তাওবাকারীদের বিষয়ে অবতীর্ণ। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৪৮] এবং আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] এ দু’টি আয়াতের মাঝে (একটিতে ক্ষমা করার ঘোষণা এবং অপটিতে শির্কের গুণাহ ক্ষমা না করার কথা বলা হয়েছে) কীভাবে একত্র করব এবং বিরোধ নিরসন করব। বাস্তবে উভয় আয়াতের মধ্যে কোন বৈপরীত্য বা বিরোধ আছে কি?
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে কোন বিরোধ বা বৈপরীত্য নেই। প্রথম আয়াত ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে যে শির্কের ওপর তাওবা ছাড়া মারা গেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন না তার ঠিকানা জাহান্নাম। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ৮৮]
আর দ্বিতীয় আয়াত: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] (এ সম্পর্কীয় আয়াত কুরআনে কারীমে আরও অনেক রয়েছে।) দ্বিতীয় আয়াত যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তা হলো তাদের সম্পর্কে যারা তাওবা করেছেন। অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২] সমস্ত উম্মত এ বিষয়ে একমত যে, এ আয়াতটি তাওবাকারীদের বিষয়ে অবতীর্ণ। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহর বাণী: وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ “আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য...।” আল্লাহর বাণী: فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না...।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٤، ٦٥ ] “আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত। অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪, ৬৫] এখানে প্রশ্ন হলো কতক মুসলিম এ আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করে বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা এবং তার কবরে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করাতে কোন অসুবিধা নেই। এ আমলটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আর এর অর্থ অভিধানে বেঁচে থাকা অবস্থায় নাকি মারা যাওয়ার পর? যখন কোন মুসলিম আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতকে ফায়সালা কারী মনে না করে সে কি মুরতাদ হয়ে যাবে? আর বিবাদটি দুনিয়ার ওপর নাকি দীনের ওপর?
উত্তর: যখন কোন বান্দা গুনাহ করে তার নিজেদের ওপর জুলুম করে অথবা শির্কের চেয়েও কোন ভয়াবহ গুনাহ করে বসে, এ আয়াতটি সে বান্দাকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। যাতে সে তাওবা করে এবং লজ্জিত হয়ে আল্লাহর রাসূলের দিকে ফিরে আসে যাতে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আয়াতে ‘তার দিকে ফিরে আসা’ দ্বারা উদ্দেশ্য তার জীবদ্দশায় তার নিকট ফিরে আসা। তিনি মুনাফিক ও অন্যান্যদের তার নিকট ফিরে আসার ঘোষণা দিতেন যাতে তাদের তাওবা ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসার ঘোষণা দেন। তারা রাসূলুল্লাহ থেকে এ কামনা করতেন যে, তিনি যেন আল্লাহর কাছে তাদের তাওবা কবুল করার এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ] “আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪] সুতরাং, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যতা আল্লাহর অনুমতিতেই হয়। আল্লাহ যাকে অনুমতি দেন এবং যার হিদায়াতের ইচ্ছা করেন সে হিদায়েত লাভ করেন। আর যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়েত দেন না সে হিদায়েত প্রাপ্ত হয় না। ক্ষমতা আল্লাহরই হাতে। তিনি যা চান তা হয় আর তিনি যা চান না তা হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٩ ] “আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” [সূরা তাকবীর, আয়াত: ২৯]
আর শর‘য়ী অনুমতি আল্লাহ তা‘আলা জীন ও ইনসান সবার জন্যই দিয়ে রেখেছেন যাতে তারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে শর‘য়ীভাবে হিদায়েত প্রাপ্ত হওয়াকে চান এবং তাদের হিদায়েত গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٢١﴾ [ البقرة : ٢١ ] “হে মানব সকল, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمۡ وَيَهۡدِيَكُمۡ سُنَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَيَتُوبَ عَلَيۡكُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٢٦﴾ [ النساء : ٢٦ ] “আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ২৬] তারপর তিনি বলেন, ﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ] “আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪] অর্থাৎ, তাওবা করে ও লজ্জিত হয়, শুধু কথা নয়। وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ অর্থাৎ তিনি তাদের জন্য ক্ষমার দো‘আ করেন। لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا “তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।” তিনি স্বীয় বান্দাদের রাসূলের নিকট এসে তাদের তাওবার ঘোষণা দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দেন, যাতে তিনি আল্লাহর নিকট তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটি তাদের জীবদ্দশায়, মৃত্যুর পর নয়। যেমনটি কোন কোন মূর্খরা ধারণা করে থাকে। সুতরাং, তার মৃত্যুর পর এ ধরনের উদ্দেশ্যে তার কাছে ফিরে আসা শরী‘আত সম্মত নয়। যারা মদীনায় বসবাস করে বা মসজিদে নববীতে সালাত, যিকির বা কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে যে সব লোক মদীনায় গমন করল সে শুধু রাসূলের কবরে সালাম দেবে। যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে নববীতে আসবে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীদ্বয়ের কবরেও সালাম দেবে। কিন্তু শুধু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না বরং সফর করবে মসজিদের উদ্দেশ্যে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবরের যিয়ারত মসজিদের যিয়ারতের আওতাধীন হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِى هَذَا وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الأَقْصَى » .
“তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোন মসজিদের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা যাবে না। আমার এ মসজিদ, মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আকসা।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৫০]
মোট কথা, কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। তবে যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে নববীতে পৌঁছবে, তার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কবরে সালাম দেয়া বৈধ। কিন্তু শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। যেমনটি উল্লিখিত হাদীস তার প্রমাণ। আর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি জীবিত থাকার সাথে সম্পৃক্ত মৃত্যুর পর নয়। এর প্রমাণ— রাসূলের সাহাবীগণ দীন সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত হওয়া স্বত্বেও তারা এ ধরনের কর্ম করেননি। এ ছাড়াও মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ক্ষমতাই রাখেন না। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ » .
“যখন মানুষ মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া বাকী সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল হলো— সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যারা মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘য়া করে [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩১০]।”
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস— فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ “যে ব্যক্তি তার ওপর দরূদ পড়ে, সে দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়”— এটি শুধুমাত্র দরূদের সাথে খাস। অন্য হাদীসে এসেছে— من صلى علي واحدة صلى الله عليه عشرة “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত প্রেরণ করেন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ عَلَيْكَ صَلَاتُنَا وَقَدْ أَرِمْتَ يَعْنِي وَقَدْ بَلِيتَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ
“তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়, কারণ, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়, জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তা কীভাবে সম্ভব অথচ আপনি চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেছেন। তখন তিনি বললেন, মাটির জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” [মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৬১৬২] তার ওপর দুরূদের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ বিধান। অপর একটি হাদীসে তিনি বলেন, إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ سَيَّاحِينَ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ “আল্লাহর কিছু ভ্রমণকারী ফিরিশতা রয়েছে যারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছায়।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৩৬৬৬] এটি রাসূলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, উম্মতের সালাম তার নিকট পৌঁছানো হয়। গুনাহের থেকে তাওবা করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে রাসূলের কবরের নিকটে গমন করার কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি একেবারেই ঘৃণিত, নিন্দিত ও অগ্রাহ্য কর্ম যা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। এটি শির্কের পথকে উন্মুক্ত করে। এ ধরনের কর্ম— মৃত্যুর পর তার কাছে সাফা‘আত চাওয়া, সুস্থতা চাওয়া, দুশমনের ওপর বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করা, দো‘য়া করা ইত্যাদির মতোই শির্ক, যা কখনোই ক্ষমা যোগ্য নয়। কারণ, রাসূলের মৃত্যুর পর বা অন্য কারো মৃত্যুর পর এ ধরনের কোন কিছুই তারা করতে পারে না। তাদের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। যে কোন ব্যক্তিই হোক না কেন চাই সে নবী হোক বা অন্য কেউ যখন সে মারা যায় তার কাছে দো‘য়া চাওয়া যাবে না, সুপারিশ কামনা করা যাবে না। সুপারিশতো শুধু তার জীবিত থাকা অবস্থায় চাওয়া হবে। জীবিত থাকা অবস্থায় এ কথা বলা যাবে যে, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন সে জন্য আপনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন, আল্লাহ যেন আমার রোগকে ভালো করে দেন, আমার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দেন এবং আমাকে অমুক অমুক নে‘আমত দান করেন, সে জন্য আপনি আল্লাহর নিকট সুপারিশ করুন।
অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন হাসর-নসরের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। কারণ, সেদিন মু’মিনগণ আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবেন যাতে তিনি তাদের ফায়সালা করার জন্য আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করেন। তখন তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং নূহ আলাইহিস সালামের নিকট তাদের প্রেরণ করবেন। তারপর তারা তার নিকট আসলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর নূহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের মূসা আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করবেন তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর মূসা আলাইহিস সালাম তাদের ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করবেন। তারা সবাই অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রেরণ করবেন। তখন মু’মিনগণ তার নিকট আসবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, أنا لها أنا لها ‘আমিই তার জন্য, আমিই তার জন্য’। তারপর তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে আরশের নিচে সেজদায় পড়বেন। তিনি তার রবের গুরুত্বপূর্ণ প্রশংসা করবেন যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে শিখিয়েছেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ قُلْ تُسْمَعْ سَلْ تُعْطَهْ اشْفَعْ تُشَفَّعْ . “মাথা উঠাও, বল, তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে যা চাও দেওয়া হবে, সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৫]
ভয়াবহ কিয়ামতের মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদের জন্য সুপারিশ করবেন যাতে তাদের মাঝে ফায়সালা করা হয়। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য সুপারিশ করবেন। কারণ, তিনি তখন উপস্থিত থাকবেন এবং জীবিত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর যখন তিনি বরযখী জগতে রয়েছেন তখন তার নিকট সুপারিশ, রোগীর সুস্থতা, হারানো বস্তুর সন্ধান ইত্যাদি চাওয় যাবে না। অনুরূপভাবে অন্য কোন মাখলুকের নিকটও এ ধরনের কোন কিছু চাওয়া যাবে না। বরং তারা যদি মুসলিম হয়ে থাকে তাদের জন্য দো‘য়া করা ও ক্ষমা চাওয়া যাবে। আর উল্লিখিত বিষয়গুলো— সুপারিশ, রোগীর সুস্থতা, হারানো বস্তুর সন্ধান— কেবল আল্লাহর কাছে চাইবে। যেমন, আমরা বলব, হে আল্লাহ তুমি তোমার নবীকে আমার জন্য সুপারিশ-কারী বানাও, হে আল্লাহর তুমি আমার রোগকে ভালো করে দাও, হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমার দুশমনের ওপর বিজয় দাও ইত্যাদি। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠﴾ [ غافر : ٦٠ ] “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৬০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦﴾ [ البقرة : ١٨٦ ] “আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬]
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [ النساء : ٦٥ ] “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬০]
আয়াতটি বাহ্যিকের ভিত্তিতে ব্যাপক অর্থবোধক। সুতরাং আল্লাহর শরী‘আত থেকে বের হওয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। বরং ইবাদাত, মু‘আমালাতের সাথে সম্পৃক্ত এমনকি দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় সর্ব বিষয়ে মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো, আল্লাহর দেওয়া শরী‘আতকে বিধান হিসেবে মেনে নেওয়া। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ المائدة : ٥٠ ] “তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [ المائدة : ٤٤ ] “আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥﴾ [ المائدة : ٤٥ ] “আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤٧﴾ [ المائدة : ٤٧ ] “আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]
মানুষের বিবদমান ও মতানৈক্য বিষয়সমূহের মীমাংসা বিষয়ে আয়াতগুলো ব্যাপক। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ “তারা মুমিন হবে না” অর্থাৎ মুসলিম ও অন্যান্য লোকেরা حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ “যতক্ষণ না তারা তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে।” অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তা হলো, তার জীবদ্দশায় তাকে বিচারক মানার মাধ্যমে এবং তার মৃত্যুর পর তার সুন্নাতকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে। রাসূলের সুন্নাতকে হাকিম মানার অর্থ কুরআন ও সূন্নাহকেই হাকিম মানা। فِيمَا شَجَرَ “যে সব বিষয়ে তারা বিবাদ করে।” মুসলিমদের ওপর এটিই ওয়াজিব যে, তারা কুরআনকে এবং রাসূলের জীবদ্দশায় তাকে আর মৃত্যুর পর তার সুন্নাত যা কুরআনের বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও অর্থ তাকে অনুসরণের মাধ্যমে হাকিম- ফায়সালা দানকারী- মানা। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ] “তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬০] আয়াতের অর্থ, মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো, রাসূলের বিধানের প্রতি তাদের অন্তর সবসময় খুশি থাকা এবং রাসূলের বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের অন্তরে কোন প্রকার সংকীর্ণতা না থাকা। কারণ, নি:সন্দেহে বলা যায় যে, রাসূলের ফায়সালাই সত্য ও হক। এটিই আল্লাহর হুকুম। সুতরাং তা মানতেই হবে। এতে অন্তর খুশি থাকতে হবে এবং অন্তরে কোন প্রকার সংকীর্ণতা ও সংকোচ থাকা চলবে না। শুধু তাদের অন্তর খুশি নয় বরং আল্লাহর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট থেকে এবং তার প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য করে তাদের বিবদমান বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলের ফায়সালা পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া সমগ্র মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। চাই তা ইবাদাত হোক বা ধন-সম্পদ বিষয়ক হোক অথবা বিবাহ, তালাক ইত্যাদি জীবনের যে কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক না কেন। মুসলিম হিসেবে তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের ফায়সালা মানতে হবে।
শরী‘আতকে হাকিম মানার ক্ষেত্রে এ ধরনের নিরেট ঈমানই হলো, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আসল ঈমান ও তাদের প্রতি সন্তুষ্টি এবং এ কথা বিশ্বাস করা যে এটিই হলো মানুষের মাঝে সত্য ফায়সালা। আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে যে, শরী‘আতকে বাদ দিয়ে বিচার ফায়সালা করা যায়, অথবা এ কথা বলে যে, মানুষ তার বাব-দাদার কথা অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করতে পারে অথবা বলে যে, মানব রচিত কানুন অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করতে পারে চাই তা পশ্চিমাদের হোক অথবা ইউরোপিয়ানদের হোক, তা হলে তার ঈমান থাকবে না সে অবশ্যই বেঈমান—কাফের হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর শরী‘আত মানা ওয়াজিব নয় কিন্তু যদি করা হয় তা উত্তম হবে অথবা যদি মনে করে শরী‘আত অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা উত্তম অথবা এ কথা বলে মানব রচিত বিধান আর আল্লাহর বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাহলে সে অবশ্যই মুরতাদ। আর তা তিন প্রকার:
প্রথম প্রকার: এ কথা বলা যে, অবশ্যই শরী‘আত উত্তম, কিন্তু শরী‘আতকে বাদ দিয়ে অন্য কোন আইনে বিচার করাতে কোন বাধা নেই।
দ্বিতীয় প্রকার: এ কথা বলা যে, শরী‘আতের বিধান ও মানব রচিত বিধান একই উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
তৃতীয় প্রকার: মানব রচিত বিধান শরী‘আতের বিধান থেকে উত্তম ও অগ্রাধিকার। তিনটি প্রকারের মধ্যে এটিই হলো সর্বাধিক মারাত্মক ও ঘৃণিত। এ গুলো সবই কুফর ও ইসলাম থেকে মুরতাদ হওয়া।
আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে ওয়াজিব হলো, আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা এবং আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোন শরী‘আত বিরোধী আইন ও বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করা জায়েয নেই, কিন্তু সে প্রবৃত্তির অনুসরণে অথবা ঘোষ খেয়ে অথবা রাজনৈতিক ইত্যাদি বা এ ধরনের কোন কারণে আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে অথচ সে জানে যে, সে অন্যায়কারী, ভুলকারী ও শরী‘আতের বিরোধিতা-কারী, তা হলে এ ব্যক্তি হলো দুর্বল ঈমানদার ব্যক্তি। তাকে পরিপূর্ণ ঈমানদার বলা যাবে না, তার থেকে পরিপূর্ণ ঈমান না হয়ে গেছে। এ কারণে সে কাফের হবে তবে তা ছোট কাফির, যালেম হবে তবে ছোট যালেম এবং ফাসেক হবে তবে ছোট ফাসেক। এ ধরনের অর্থই বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এবং মুজাহিদ রহ. থেকে এবং সালফে সালেহীনদের একটি জামা‘আত থেকে। আর এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতামত। তবে খারেজী ও মু‘তাযিলা এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের মতামত ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলাই সাহায্যকারী।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٤، ٦٥ ] “আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়। আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত। অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪, ৬৫] এখানে প্রশ্ন হলো কতক মুসলিম এ আয়াত দ্বারা প্রমাণ পেশ করে বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা এবং তার কবরে গিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য তার কাছে প্রার্থনা করাতে কোন অসুবিধা নেই। এ আমলটি আল্লাহ তা‘আলার বাণী অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আর এর অর্থ অভিধানে বেঁচে থাকা অবস্থায় নাকি মারা যাওয়ার পর? যখন কোন মুসলিম আল্লাহর রাসূলের সুন্নাতকে ফায়সালা কারী মনে না করে সে কি মুরতাদ হয়ে যাবে? আর বিবাদটি দুনিয়ার ওপর নাকি দীনের ওপর?
উত্তর: যখন কোন বান্দা গুনাহ করে তার নিজেদের ওপর জুলুম করে অথবা শির্কের চেয়েও কোন ভয়াবহ গুনাহ করে বসে, এ আয়াতটি সে বান্দাকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। যাতে সে তাওবা করে এবং লজ্জিত হয়ে আল্লাহর রাসূলের দিকে ফিরে আসে যাতে তিনি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আয়াতে ‘তার দিকে ফিরে আসা’ দ্বারা উদ্দেশ্য তার জীবদ্দশায় তার নিকট ফিরে আসা। তিনি মুনাফিক ও অন্যান্যদের তার নিকট ফিরে আসার ঘোষণা দিতেন যাতে তাদের তাওবা ও আল্লাহর দিকে ফিরে আসার ঘোষণা দেন। তারা রাসূলুল্লাহ থেকে এ কামনা করতেন যে, তিনি যেন আল্লাহর কাছে তাদের তাওবা কবুল করার এবং তাদের অবস্থা সংশোধন করে দেয়ার জন্য প্রার্থনা করেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَرۡسَلۡنَا مِن رَّسُولٍ إِلَّا لِيُطَاعَ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ] “আর আমি যে কোন রাসূল প্রেরণ করেছি তা কেবল এ জন্য, যেন আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাদের আনুগত্য করা হয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪] সুতরাং, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্যতা আল্লাহর অনুমতিতেই হয়। আল্লাহ যাকে অনুমতি দেন এবং যার হিদায়াতের ইচ্ছা করেন সে হিদায়েত লাভ করেন। আর যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়েত দেন না সে হিদায়েত প্রাপ্ত হয় না। ক্ষমতা আল্লাহরই হাতে। তিনি যা চান তা হয় আর তিনি যা চান না তা হয় না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا تَشَآءُونَ إِلَّآ أَن يَشَآءَ ٱللَّهُ رَبُّ ٱلۡعَٰلَمِينَ ٢٩﴾ [ التكوير : ٢٩ ] “আর তোমরা ইচ্ছা করতে পার না, যদি না সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ ইচ্ছা করেন।” [সূরা তাকবীর, আয়াত: ২৯]
আর শর‘য়ী অনুমতি আল্লাহ তা‘আলা জীন ও ইনসান সবার জন্যই দিয়ে রেখেছেন যাতে তারা হিদায়াত প্রাপ্ত হয়। আল্লাহ তা‘আলা তাদের থেকে শর‘য়ীভাবে হিদায়েত প্রাপ্ত হওয়াকে চান এবং তাদের হিদায়েত গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمُ ٢١﴾ [ البقرة : ٢١ ] “হে মানব সকল, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُبَيِّنَ لَكُمۡ وَيَهۡدِيَكُمۡ سُنَنَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكُمۡ وَيَتُوبَ عَلَيۡكُمۡۗ وَٱللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٞ ٢٦﴾ [ النساء : ٢٦ ] “আল্লাহ চান তোমাদের জন্য বিস্তারিত বর্ণনা করতে, তোমাদেরকে তোমাদের পূর্ববর্তীদের আদর্শ প্রদর্শন করতে এবং তোমাদের তাওবা কবূল করতে। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ২৬] তারপর তিনি বলেন, ﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤﴾ [ النساء : ٦٤ ] “আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬৪] অর্থাৎ, তাওবা করে ও লজ্জিত হয়, শুধু কথা নয়। وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ অর্থাৎ তিনি তাদের জন্য ক্ষমার দো‘আ করেন। لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا “তারা আল্লাহকে তাওবা কবূলকারী, দয়ালু পেত।” তিনি স্বীয় বান্দাদের রাসূলের নিকট এসে তাদের তাওবার ঘোষণা দেওয়ার প্রতি উৎসাহ দেন, যাতে তিনি আল্লাহর নিকট তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটি তাদের জীবদ্দশায়, মৃত্যুর পর নয়। যেমনটি কোন কোন মূর্খরা ধারণা করে থাকে। সুতরাং, তার মৃত্যুর পর এ ধরনের উদ্দেশ্যে তার কাছে ফিরে আসা শরী‘আত সম্মত নয়। যারা মদীনায় বসবাস করে বা মসজিদে নববীতে সালাত, যিকির বা কুরআন তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে যে সব লোক মদীনায় গমন করল সে শুধু রাসূলের কবরে সালাম দেবে। যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে নববীতে আসবে সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাথীদ্বয়ের কবরেও সালাম দেবে। কিন্তু শুধু কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না বরং সফর করবে মসজিদের উদ্দেশ্যে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবর এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর কবরের যিয়ারত মসজিদের যিয়ারতের আওতাধীন হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ مَسْجِدِى هَذَا وَمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الأَقْصَى » .
“তিনটি মসজিদ ছাড়া আর কোন মসজিদের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা যাবে না। আমার এ মসজিদ, মসজিদে হারাম এবং মসজিদে আকসা।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ১১৮৯; সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৪৫০]
মোট কথা, কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। তবে যখন কোন ব্যক্তি মসজিদে নববীতে পৌঁছবে, তার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর ও উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কবরে সালাম দেয়া বৈধ। কিন্তু শুধু যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা যাবে না। যেমনটি উল্লিখিত হাদীস তার প্রমাণ। আর ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি জীবিত থাকার সাথে সম্পৃক্ত মৃত্যুর পর নয়। এর প্রমাণ— রাসূলের সাহাবীগণ দীন সম্পর্কে সবচেয়ে জ্ঞানী এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি অবগত হওয়া স্বত্বেও তারা এ ধরনের কর্ম করেননি। এ ছাড়াও মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ক্ষমতাই রাখেন না। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ » .
“যখন মানুষ মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া বাকী সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। তিনটি আমল হলো— সাদকায়ে জারিয়াহ, এমন ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান যারা মৃত্যুর পর তার জন্য দো‘য়া করে [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩১০]।”
আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস— فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ “যে ব্যক্তি তার ওপর দরূদ পড়ে, সে দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়”— এটি শুধুমাত্র দরূদের সাথে খাস। অন্য হাদীসে এসেছে— من صلى علي واحدة صلى الله عليه عشرة “যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার রহমত প্রেরণ করেন।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন,
فَأَكْثِرُوا عَلَيَّ مِنْ الصَّلَاةِ فِيهِ فَإِنَّ صَلَاتَكُمْ مَعْرُوضَةٌ عَلَيَّ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ تُعْرَضُ عَلَيْكَ صَلَاتُنَا وَقَدْ أَرِمْتَ يَعْنِي وَقَدْ بَلِيتَ قَالَ إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ صَلَوَاتُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ
“তোমরা জুমু‘আর দিন আমার ওপর বেশি বেশি দুরূদ পড়, কারণ, তোমাদের দরূদ আমার নিকট পেশ করা হয়, জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! তা কীভাবে সম্ভব অথচ আপনি চুর্ণ-বিচুর্ণ হয়ে গেছেন। তখন তিনি বললেন, মাটির জন্য আল্লাহ তা‘আলা নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” [মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৬১৬২] তার ওপর দুরূদের ক্ষেত্রে এটি একটি বিশেষ বিধান। অপর একটি হাদীসে তিনি বলেন, إِنَّ لِلَّهِ مَلَائِكَةً فِي الْأَرْضِ سَيَّاحِينَ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلَامَ “আল্লাহর কিছু ভ্রমণকারী ফিরিশতা রয়েছে যারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছায়।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৩৬৬৬] এটি রাসূলের বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে, উম্মতের সালাম তার নিকট পৌঁছানো হয়। গুনাহের থেকে তাওবা করা বা ক্ষমা প্রার্থনা করার উদ্দেশ্যে রাসূলের কবরের নিকটে গমন করার কোন ভিত্তি নেই। বরং এটি একেবারেই ঘৃণিত, নিন্দিত ও অগ্রাহ্য কর্ম যা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। এটি শির্কের পথকে উন্মুক্ত করে। এ ধরনের কর্ম— মৃত্যুর পর তার কাছে সাফা‘আত চাওয়া, সুস্থতা চাওয়া, দুশমনের ওপর বিজয়ের জন্য প্রার্থনা করা, দো‘য়া করা ইত্যাদির মতোই শির্ক, যা কখনোই ক্ষমা যোগ্য নয়। কারণ, রাসূলের মৃত্যুর পর বা অন্য কারো মৃত্যুর পর এ ধরনের কোন কিছুই তারা করতে পারে না। তাদের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। যে কোন ব্যক্তিই হোক না কেন চাই সে নবী হোক বা অন্য কেউ যখন সে মারা যায় তার কাছে দো‘য়া চাওয়া যাবে না, সুপারিশ কামনা করা যাবে না। সুপারিশতো শুধু তার জীবিত থাকা অবস্থায় চাওয়া হবে। জীবিত থাকা অবস্থায় এ কথা বলা যাবে যে, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ যেন আমাকে ক্ষমা করেন সে জন্য আপনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন, আল্লাহ যেন আমার রোগকে ভালো করে দেন, আমার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দেন এবং আমাকে অমুক অমুক নে‘আমত দান করেন, সে জন্য আপনি আল্লাহর নিকট সুপারিশ করুন।
অনুরূপভাবে কিয়ামতের দিন হাসর-নসরের পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জন্য সুপারিশ করবেন। কারণ, সেদিন মু’মিনগণ আদম আলাইহিস সালামের নিকট আসবেন যাতে তিনি তাদের ফায়সালা করার জন্য আল্লাহর নিকট তাদের জন্য সুপারিশ করেন। তখন তিনি অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং নূহ আলাইহিস সালামের নিকট তাদের প্রেরণ করবেন। তারপর তারা তার নিকট আসলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর নূহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে ইব্রাহীম আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করলে তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাদের মূসা আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করবেন তিনিও অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর মূসা আলাইহিস সালাম তাদের ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট প্রেরণ করবেন। তারা সবাই অপারগতা প্রকাশ করবেন। অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট প্রেরণ করবেন। তখন মু’মিনগণ তার নিকট আসবেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, أنا لها أنا لها ‘আমিই তার জন্য, আমিই তার জন্য’। তারপর তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে আরশের নিচে সেজদায় পড়বেন। তিনি তার রবের গুরুত্বপূর্ণ প্রশংসা করবেন যা আল্লাহ তা‘আলা তাকে শিখিয়েছেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, يَا مُحَمَّدُ ارْفَعْ رَأْسَكَ قُلْ تُسْمَعْ سَلْ تُعْطَهْ اشْفَعْ تُشَفَّعْ . “মাথা উঠাও, বল, তোমার কথা শোনা হবে, চাও তোমাকে যা চাও দেওয়া হবে, সুপারিশ কর, তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৫]
ভয়াবহ কিয়ামতের মাঠে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মু’মিনদের জন্য সুপারিশ করবেন যাতে তাদের মাঝে ফায়সালা করা হয়। অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশ করানোর জন্য সুপারিশ করবেন। কারণ, তিনি তখন উপস্থিত থাকবেন এবং জীবিত। কিন্তু তার মৃত্যুর পর যখন তিনি বরযখী জগতে রয়েছেন তখন তার নিকট সুপারিশ, রোগীর সুস্থতা, হারানো বস্তুর সন্ধান ইত্যাদি চাওয় যাবে না। অনুরূপভাবে অন্য কোন মাখলুকের নিকটও এ ধরনের কোন কিছু চাওয়া যাবে না। বরং তারা যদি মুসলিম হয়ে থাকে তাদের জন্য দো‘য়া করা ও ক্ষমা চাওয়া যাবে। আর উল্লিখিত বিষয়গুলো— সুপারিশ, রোগীর সুস্থতা, হারানো বস্তুর সন্ধান— কেবল আল্লাহর কাছে চাইবে। যেমন, আমরা বলব, হে আল্লাহ তুমি তোমার নবীকে আমার জন্য সুপারিশ-কারী বানাও, হে আল্লাহর তুমি আমার রোগকে ভালো করে দাও, হে আল্লাহ তুমি আমাকে আমার দুশমনের ওপর বিজয় দাও ইত্যাদি। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ ٦٠﴾ [ غافر : ٦٠ ] “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৬০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَإِذَا سَأَلَكَ عِبَادِي عَنِّي فَإِنِّي قَرِيبٌۖ أُجِيبُ دَعۡوَةَ ٱلدَّاعِ إِذَا دَعَانِۖ فَلۡيَسۡتَجِيبُواْ لِي وَلۡيُؤۡمِنُواْ بِي لَعَلَّهُمۡ يَرۡشُدُونَ ١٨٦﴾ [ البقرة : ١٨٦ ] “আর যখন আমার বান্দাগণ তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয় নিকটবর্তী। আমি আহবানকারীর ডাকে সাড়া দেই, যখন সে আমাকে ডাকে। সুতরাং তারা যেন আমার ডাকে সাড়া দেয় এবং আমার প্রতি ঈমান আনে। আশা করা যায় তারা সঠিক পথে চলবে।” [সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৮৬]
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيۡنَهُمۡ ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥ ﴾ [ النساء : ٦٥ ] “অতএব তোমার রবের কসম, তারা মুমিন হবে না যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬০]
আয়াতটি বাহ্যিকের ভিত্তিতে ব্যাপক অর্থবোধক। সুতরাং আল্লাহর শরী‘আত থেকে বের হওয়া মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। বরং ইবাদাত, মু‘আমালাতের সাথে সম্পৃক্ত এমনকি দুনিয়াও আখিরাতের যাবতীয় সর্ব বিষয়ে মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো, আল্লাহর দেওয়া শরী‘আতকে বিধান হিসেবে মেনে নেওয়া। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَحُكۡمَ ٱلۡجَٰهِلِيَّةِ يَبۡغُونَۚ وَمَنۡ أَحۡسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكۡمٗا لِّقَوۡمٖ يُوقِنُونَ ٥٠﴾ [ المائدة : ٥٠ ] “তারা কি তবে জাহিলিয়্যাতের বিধান চায়? আর নিশ্চিত বিশ্বাসী কওমের জন্য বিধান প্রদানে আল্লাহর চেয়ে কে অধিক উত্তম?।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৫০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ٤٤﴾ [ المائدة : ٤٤ ] “আর যারা আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে ফয়সালা করে না, তারাই কাফির।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٤٥﴾ [ المائدة : ٤٥ ] “আর আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করবে না, তারাই যালিম।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن لَّمۡ يَحۡكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡفَٰسِقُونَ ٤٧﴾ [ المائدة : ٤٧ ] “আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার মাধ্যমে যারা ফয়সালা করে না, তারাই ফাসিক।” [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৭]
মানুষের বিবদমান ও মতানৈক্য বিষয়সমূহের মীমাংসা বিষয়ে আয়াতগুলো ব্যাপক। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤۡمِنُونَ “তারা মুমিন হবে না” অর্থাৎ মুসলিম ও অন্যান্য লোকেরা حَتَّىٰ يُحَكِّمُوكَ “যতক্ষণ না তারা তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে।” অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর তা হলো, তার জীবদ্দশায় তাকে বিচারক মানার মাধ্যমে এবং তার মৃত্যুর পর তার সুন্নাতকে বিচারক হিসেবে গ্রহণ করার মাধ্যমে। রাসূলের সুন্নাতকে হাকিম মানার অর্থ কুরআন ও সূন্নাহকেই হাকিম মানা। فِيمَا شَجَرَ “যে সব বিষয়ে তারা বিবাদ করে।” মুসলিমদের ওপর এটিই ওয়াজিব যে, তারা কুরআনকে এবং রাসূলের জীবদ্দশায় তাকে আর মৃত্যুর পর তার সুন্নাত যা কুরআনের বর্ণনা, ব্যাখ্যা ও অর্থ তাকে অনুসরণের মাধ্যমে হাকিম- ফায়সালা দানকারী- মানা। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿ثُمَّ لَا يَجِدُواْ فِيٓ أَنفُسِهِمۡ حَرَجٗا مِّمَّا قَضَيۡتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسۡلِيمٗا ٦٥﴾ [ النساء : ٦٥ ] “তারপর তুমি যে ফয়সালা দেবে সে ব্যাপারে নিজদের অন্তরে কোন দ্বিধা অনুভব না করে এবং পূর্ণ সম্মতিতে মেনে নেয়।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৬০] আয়াতের অর্থ, মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো, রাসূলের বিধানের প্রতি তাদের অন্তর সবসময় খুশি থাকা এবং রাসূলের বিধান অনুযায়ী বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে তাদের অন্তরে কোন প্রকার সংকীর্ণতা না থাকা। কারণ, নি:সন্দেহে বলা যায় যে, রাসূলের ফায়সালাই সত্য ও হক। এটিই আল্লাহর হুকুম। সুতরাং তা মানতেই হবে। এতে অন্তর খুশি থাকতে হবে এবং অন্তরে কোন প্রকার সংকীর্ণতা ও সংকোচ থাকা চলবে না। শুধু তাদের অন্তর খুশি নয় বরং আল্লাহর হুকুমের প্রতি সন্তুষ্ট থেকে এবং তার প্রতি পুরোপুরি আনুগত্য করে তাদের বিবদমান বিষয়ে আল্লাহ ও রাসূলের ফায়সালা পরিপূর্ণভাবে মেনে নেয়া সমগ্র মুসলিমের ওপর ওয়াজিব। চাই তা ইবাদাত হোক বা ধন-সম্পদ বিষয়ক হোক অথবা বিবাহ, তালাক ইত্যাদি জীবনের যে কোন বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত হোক না কেন। মুসলিম হিসেবে তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের ফায়সালা মানতে হবে।
শরী‘আতকে হাকিম মানার ক্ষেত্রে এ ধরনের নিরেট ঈমানই হলো, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি আসল ঈমান ও তাদের প্রতি সন্তুষ্টি এবং এ কথা বিশ্বাস করা যে এটিই হলো মানুষের মাঝে সত্য ফায়সালা। আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে যে, শরী‘আতকে বাদ দিয়ে বিচার ফায়সালা করা যায়, অথবা এ কথা বলে যে, মানুষ তার বাব-দাদার কথা অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করতে পারে অথবা বলে যে, মানব রচিত কানুন অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করতে পারে চাই তা পশ্চিমাদের হোক অথবা ইউরোপিয়ানদের হোক, তা হলে তার ঈমান থাকবে না সে অবশ্যই বেঈমান—কাফের হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর শরী‘আত মানা ওয়াজিব নয় কিন্তু যদি করা হয় তা উত্তম হবে অথবা যদি মনে করে শরী‘আত অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা উত্তম অথবা এ কথা বলে মানব রচিত বিধান আর আল্লাহর বিধানের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তাহলে সে অবশ্যই মুরতাদ। আর তা তিন প্রকার:
প্রথম প্রকার: এ কথা বলা যে, অবশ্যই শরী‘আত উত্তম, কিন্তু শরী‘আতকে বাদ দিয়ে অন্য কোন আইনে বিচার করাতে কোন বাধা নেই।
দ্বিতীয় প্রকার: এ কথা বলা যে, শরী‘আতের বিধান ও মানব রচিত বিধান একই উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
তৃতীয় প্রকার: মানব রচিত বিধান শরী‘আতের বিধান থেকে উত্তম ও অগ্রাধিকার। তিনটি প্রকারের মধ্যে এটিই হলো সর্বাধিক মারাত্মক ও ঘৃণিত। এ গুলো সবই কুফর ও ইসলাম থেকে মুরতাদ হওয়া।
আর যে ব্যক্তি এ কথা বিশ্বাস করে ওয়াজিব হলো, আল্লাহর শরী‘আত অনুযায়ী বিচার ফায়সালা করা এবং আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোন শরী‘আত বিরোধী আইন ও বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করা জায়েয নেই, কিন্তু সে প্রবৃত্তির অনুসরণে অথবা ঘোষ খেয়ে অথবা রাজনৈতিক ইত্যাদি বা এ ধরনের কোন কারণে আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে অথচ সে জানে যে, সে অন্যায়কারী, ভুলকারী ও শরী‘আতের বিরোধিতা-কারী, তা হলে এ ব্যক্তি হলো দুর্বল ঈমানদার ব্যক্তি। তাকে পরিপূর্ণ ঈমানদার বলা যাবে না, তার থেকে পরিপূর্ণ ঈমান না হয়ে গেছে। এ কারণে সে কাফের হবে তবে তা ছোট কাফির, যালেম হবে তবে ছোট যালেম এবং ফাসেক হবে তবে ছোট ফাসেক। এ ধরনের অর্থই বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এবং মুজাহিদ রহ. থেকে এবং সালফে সালেহীনদের একটি জামা‘আত থেকে। আর এটিই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতামত। তবে খারেজী ও মু‘তাযিলা এবং যারা তাদের অনুসরণ করেছেন তাদের মতামত ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলাই সাহায্যকারী।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤﴾ [ الفرقان : ٧٤ ] “আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’’। [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪] তে দো‘য়া করা এবং রাসেূলের অপর বাণী: اللهم اجعلني عبدا خفيا غنيا تقيا “হে আল্লাহ তুমি আমাকে গোপন বান্দা বানিয়ে দাও” ‘তে যে দো‘য়া রয়েছে উভয়ের মধ্যে কোন বিরোধ ও অসঙ্গতি রয়েছে কিনা’?।
উত্তর: বিসমিল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ। আয়াত ও হাদীস উভয়ের মাঝে কোন বিরোধ ও অসঙ্গতি নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এমন বান্দাদের পছন্দ করেন যিনি মুত্তাকী, ধনী ও বিনয়ী। আল্লাহ তা‘আলা লৌকিকতা ও স্ব-প্রসংশাকে পছন্দ করেন না। যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্য আমল করে থাকে, আমল যাতে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় সে জন্য চেষ্টা করে এবং সে যদি মুত্তাকীদের ইমাম হয় তাহলে সে পরিপূর্ণ ঈমানদার হলো এবং সে মানুষের জন্য অধিক উপকারকারী হলো। সুতরাং, আল্লাহর নিকট মুত্তাকীদের ইমাম হওয়া কামনা করা, আল্লাহর কাছে দো‘য়া করা এবং মুহসীনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মধ্যে এবং আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকী, ধনী ও গোপনীয় ব্যক্তিকে ভালোবাসেন এ দুইয়োর মধ্যে কোন বিরোধ বা অসঙ্গতি নেই। গোপনীয় ব্যক্তি মানে হলো যার মধ্যে লৌকিকতা নেই। আর যে ব্যক্তি মুত্তাকীদের ইমাম হওয়া এ উদ্দেশ্যে কামনা করে, সে তাদের উপকার করার উদ্দেশ্যে এ দো‘আ করেন, লোক দেখানো উদ্দেশ্য নয়। সে ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহর নিকট প্রিয় এবং মুহসীন। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: বিসমিল্লাহ ওয়াল হামদু লিল্লাহ। আয়াত ও হাদীস উভয়ের মাঝে কোন বিরোধ ও অসঙ্গতি নেই। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এমন বান্দাদের পছন্দ করেন যিনি মুত্তাকী, ধনী ও বিনয়ী। আল্লাহ তা‘আলা লৌকিকতা ও স্ব-প্রসংশাকে পছন্দ করেন না। যে ব্যক্তি কেবল আল্লাহর জন্য আমল করে থাকে, আমল যাতে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হয় সে জন্য চেষ্টা করে এবং সে যদি মুত্তাকীদের ইমাম হয় তাহলে সে পরিপূর্ণ ঈমানদার হলো এবং সে মানুষের জন্য অধিক উপকারকারী হলো। সুতরাং, আল্লাহর নিকট মুত্তাকীদের ইমাম হওয়া কামনা করা, আল্লাহর কাছে দো‘য়া করা এবং মুহসীনদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মধ্যে এবং আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকী, ধনী ও গোপনীয় ব্যক্তিকে ভালোবাসেন এ দুইয়োর মধ্যে কোন বিরোধ বা অসঙ্গতি নেই। গোপনীয় ব্যক্তি মানে হলো যার মধ্যে লৌকিকতা নেই। আর যে ব্যক্তি মুত্তাকীদের ইমাম হওয়া এ উদ্দেশ্যে কামনা করে, সে তাদের উপকার করার উদ্দেশ্যে এ দো‘আ করেন, লোক দেখানো উদ্দেশ্য নয়। সে ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহর নিকট প্রিয় এবং মুহসীন। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
১০
আল্লাহ তা‘আলার প্রতিটি প্রাণীর রিযিকের দায়িত্ব গ্রহণ করা ও ক্ষুধা, দরিদ্রতা ও অভাব অনটন ইত্যাদির বিষয়ে আলোচনা।প্রশ্ন: একজন প্রশ্নকারী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا ٦﴾ [ هود : ٦ ] “আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬] অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা নিজেই তার নিজের ওপর বাধ্য করেছেন যে, জমিনের ওপর যা কিছু বিচরণ করে মানুষ, জীব-জন্তু ও পোকা-মাকড় সবকিছুর রিযিক ও খাওয়ানোর দায়িত্ব তার। তাহলে দুর্ভিক্ষ ও অভাব আফ্রিকা মহাদেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছে তার ব্যাখ্যা কি?
উত্তর: আয়াতটি তার বাহ্যিক অর্থে সঠিক। আল্লাহ তা‘আলা যে সব বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ জমিনে দিয়ে থাকেন তা কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না। তবে যার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং রিযিক বন্ধ হয়ে গেছে তার বিষয়টি ভিন্ন। আর যার হায়াত ও রিযিক বাকী আছে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই বিভিন্ন উপায়ে রিযিক পৌঁছাবে কখনো সে তা জানতে পারবে আবার কখনো সে তা জানতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ] “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২,৩]
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٖ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ يَرۡزُقُهَا وَإِيَّاكُمۡۚ ٦٠﴾ [ العنكبوت : ٦٠ ] “আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لا تموت نفس حتى تستكمل رزقها و أجلها “কোন প্রাণী তার রিযিক ও সময় পূর্ণ করা ছাড়া মৃত্যু বরণ করবে না [ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ২১৪৪]।” মানুষ তার স্বীয় কর্ম— অলসতা, যার ওপর তার ভাগ্য নির্ধারিত এ ধরনের কর্ম থেকে বিমুখ হওয়া, বেকার থাকা, আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া—ইত্যাদি কারণে অনেক সময় মানুষ অভাব-অনটনের শাস্তি ভোগ করে এবং রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ وَأَرۡسَلۡنَٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولٗاۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدٗا ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৩০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ “বান্দা তার গুনাহের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়” দো‘য়া ছাড়া আর কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না এবং মানুষের সৎ কর্ম ছাড়া আর কোন কিছু আয়ু বাড়াতে পারে না [বর্ণনায় আহমাদ, হাদীস নং ২২৩৮৬; ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ৪০২২।]।” আবার কোন সময় বান্দা তার শুকর ও সবরের পরীক্ষার কারণে দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি সহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবতে আক্রান্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [ البقرة : ١٥٥، ١٥٦ ] “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫, ১৫৬] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَبَلَوۡنَٰهُم بِٱلۡحَسَنَٰتِ وَٱلسَّئَِّاتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ١٦٨﴾ [ الاعراف : ١٦٧ ] “এবং আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দ দ্বারা, হয়তো তারা ফিরে আসবে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৬৭] এ আয়াতে হাসানাত দ্বারা উদ্দেশ্য নে‘আমতসমূহ। আর খারাপ কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য বিপদসমূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وليس ذالك لأحد إلا للمؤمن » . “মু’মিনের কর্মসমূহ কতই সুন্দর ও আশ্চর্যজনক। তার সব কর্মই তার জন্য কল্যাণকর। যদি সে কোন মুসিবতে পড়ে ধৈর্য ধারণ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয় আর যদি তার কোন খুশির সংবাদ হয় এবং শোনে সে শুকর আদায় করে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। এটি একমাত্র মু’মিন ছাড়া আর কারো জন্য নয় [বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীস নং ৭৬৯২]।” এ বিষয়ের ওপর কুরআন ও হাদীস অঢেল। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: আয়াতটি তার বাহ্যিক অর্থে সঠিক। আল্লাহ তা‘আলা যে সব বিপর্যয় ও দুর্ভিক্ষ জমিনে দিয়ে থাকেন তা কারো কোন ক্ষতি করতে পারে না। তবে যার সময় শেষ হয়ে গেছে এবং রিযিক বন্ধ হয়ে গেছে তার বিষয়টি ভিন্ন। আর যার হায়াত ও রিযিক বাকী আছে আল্লাহ তা‘আলা তাকে অবশ্যই বিভিন্ন উপায়ে রিযিক পৌঁছাবে কখনো সে তা জানতে পারবে আবার কখনো সে তা জানতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن يَتَّقِ ٱللَّهَ يَجۡعَل لَّهُۥ مَخۡرَجٗا ٢ وَيَرۡزُقۡهُ مِنۡ حَيۡثُ لَا يَحۡتَسِبُۚ ٣﴾ [ الطلاق : ٢، ٣ ] “যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।” [সূরা আত-তালাক, আয়াত: ২,৩]
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٖ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ يَرۡزُقُهَا وَإِيَّاكُمۡۚ ٦٠﴾ [ العنكبوت : ٦٠ ] “আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, لا تموت نفس حتى تستكمل رزقها و أجلها “কোন প্রাণী তার রিযিক ও সময় পূর্ণ করা ছাড়া মৃত্যু বরণ করবে না [ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ২১৪৪]।” মানুষ তার স্বীয় কর্ম— অলসতা, যার ওপর তার ভাগ্য নির্ধারিত এ ধরনের কর্ম থেকে বিমুখ হওয়া, বেকার থাকা, আল্লাহর নিষিদ্ধ কর্ম গুনাহের কাজে লিপ্ত হওয়া—ইত্যাদি কারণে অনেক সময় মানুষ অভাব-অনটনের শাস্তি ভোগ করে এবং রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ وَأَرۡسَلۡنَٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولٗاۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدٗا ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ৩০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, إِنَّ الرَّجُلَ لَيُحْرَمُ الرِّزْقَ بِالذَّنْبِ يُصِيبُهُ وَلَا يَرُدُّ الْقَدَرَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيدُ فِي الْعُمُرِ إِلَّا الْبِرُّ “বান্দা তার গুনাহের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত হয়” দো‘য়া ছাড়া আর কোন কিছুই ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে পারে না এবং মানুষের সৎ কর্ম ছাড়া আর কোন কিছু আয়ু বাড়াতে পারে না [বর্ণনায় আহমাদ, হাদীস নং ২২৩৮৬; ইবনু মাযাহ, হাদীস নং ৪০২২।]।” আবার কোন সময় বান্দা তার শুকর ও সবরের পরীক্ষার কারণে দরিদ্রতা, রোগ-ব্যাধি সহ ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবতে আক্রান্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ ١٥٥ ٱلَّذِينَ إِذَآ أَصَٰبَتۡهُم مُّصِيبَةٞ قَالُوٓاْ إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّآ إِلَيۡهِ رَٰجِعُونَ ١٥٦﴾ [ البقرة : ١٥٥، ١٥٦ ] “আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৫৫, ১৫৬] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَبَلَوۡنَٰهُم بِٱلۡحَسَنَٰتِ وَٱلسَّئَِّاتِ لَعَلَّهُمۡ يَرۡجِعُونَ ١٦٨﴾ [ الاعراف : ١٦٧ ] “এবং আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছি ভাল ও মন্দ দ্বারা, হয়তো তারা ফিরে আসবে।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৬৭] এ আয়াতে হাসানাত দ্বারা উদ্দেশ্য নে‘আমতসমূহ। আর খারাপ কর্ম দ্বারা উদ্দেশ্য বিপদসমূহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «عَجَبًا لأَمْرِ الْمُؤْمِنِ إِنَّ أَمْرَهُ كُلَّهُ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَاكَ لأَحَدٍ إِلاَّ لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وليس ذالك لأحد إلا للمؤمن » . “মু’মিনের কর্মসমূহ কতই সুন্দর ও আশ্চর্যজনক। তার সব কর্মই তার জন্য কল্যাণকর। যদি সে কোন মুসিবতে পড়ে ধৈর্য ধারণ করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয় আর যদি তার কোন খুশির সংবাদ হয় এবং শোনে সে শুকর আদায় করে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। এটি একমাত্র মু’মিন ছাড়া আর কারো জন্য নয় [বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহ গ্রন্থে হাদীস নং ৭৬৯২]।” এ বিষয়ের ওপর কুরআন ও হাদীস অঢেল। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: নিম্ন বর্ণিত দু’টি আয়াতের দ্বিতীয়টি প্রথমটির জন্য রহিতকারী কিনা জানতে চাই?
প্রথম আয়াত: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ ال عمران : ١٠٢ ] “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০২]
দ্বিতীয় আয়াত: ﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦﴾ [ التغابن : ١٦ ] “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় কর, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
উত্তর: সাহাবীগণ ও অন্যান্য তাফসীর-বিদগণ প্রথম আয়াতটি রহিত নাকি অকাট্য এ বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার অনুসারীরা বলেন, আয়াতটি অকাট্য রহিত নয়। আর তারা حَقَّ تُقَاتِهِۦ এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর রাস্তায় সত্যিকার জিহাদ করবেন আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দা তাদের প্রভাবিত করতে পারবে না। তারা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন যদিও তা তাদের নিজেদের, সন্তানদের এবং পিতা-মাতার বিপক্ষে যায়।
সা‘ঈদ ইবন জুবাইর, আবুল আলিয়াহ, রাবি‘ ইবন আনাস, ক্বাতাদাহ, মুকাতিল ইবন হাইয়ান, যায়েদ ইবন আসলাম, সুদ্দী রহ. এবং অন্যান্যরা বলেন, আয়াতটি فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর” দ্বারা রহিত। আয়াতের মধ্যে কোন রহিত-করণ নেই। উপরের আয়াতে ভয় করার মতো ভয় দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যেটা পরের আয়াতে فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর” বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহই তাওফীক দাতা।
ফতওয়া ও ইলমী গবেষণ বিষয়ক স্থায়ী সংস্থা
প্রথম আয়াত: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱتَّقُواْ ٱللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِۦ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ ١٠٢﴾ [ ال عمران : ١٠٢ ] “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয়। আর তোমরা মুসলমান হওয়া ছাড়া মারা যেও না।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১০২]
দ্বিতীয় আয়াত: ﴿فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ وَٱسۡمَعُواْ وَأَطِيعُواْ وَأَنفِقُواْ خَيۡرٗا لِّأَنفُسِكُمۡۗ وَمَن يُوقَ شُحَّ نَفۡسِهِۦ فَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٦﴾ [ التغابن : ١٦ ] “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর, শ্রবণ কর, আনুগত্য কর এবং তোমাদের নিজদের কল্যাণে ব্যয় কর, আর যাদেরকে অন্তরের কার্পণ্য থেকে রক্ষা করা হয়, তারাই মূলত সফলকাম।” [সূরা আত-তাগাবুন, আয়াত: ১৬]
উত্তর: সাহাবীগণ ও অন্যান্য তাফসীর-বিদগণ প্রথম আয়াতটি রহিত নাকি অকাট্য এ বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার অনুসারীরা বলেন, আয়াতটি অকাট্য রহিত নয়। আর তারা حَقَّ تُقَاتِهِۦ এর ব্যাখ্যায় বলেন, আল্লাহর রাস্তায় সত্যিকার জিহাদ করবেন আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দা তাদের প্রভাবিত করতে পারবে না। তারা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করবেন যদিও তা তাদের নিজেদের, সন্তানদের এবং পিতা-মাতার বিপক্ষে যায়।
সা‘ঈদ ইবন জুবাইর, আবুল আলিয়াহ, রাবি‘ ইবন আনাস, ক্বাতাদাহ, মুকাতিল ইবন হাইয়ান, যায়েদ ইবন আসলাম, সুদ্দী রহ. এবং অন্যান্যরা বলেন, আয়াতটি فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর” দ্বারা রহিত। আয়াতের মধ্যে কোন রহিত-করণ নেই। উপরের আয়াতে ভয় করার মতো ভয় দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যেটা পরের আয়াতে فَٱتَّقُواْ ٱللَّهَ مَا ٱسۡتَطَعۡتُمۡ “অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর” বলে ব্যক্ত করা হয়েছে। আল্লাহই তাওফীক দাতা।
ফতওয়া ও ইলমী গবেষণ বিষয়ক স্থায়ী সংস্থা
আল্লাহ তা‘আলার তিনটি বাণী: ﴿فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِ ... ٣٢﴾ [ فاطر : ٣٢ ] “তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী...” ﴿وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُ ... ١١٠﴾ [ النساء : ١١٠ ] “আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে...” এবং ﴿وَمَآ أُبَرِّئُ نَفۡسِيٓۚ إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ ... ٥٣﴾ [ يوسف : ٥٢ ] ‘‘আর আমি আমার নাফ্সকে পবিত্র মনে করি না...” সম্পর্কে আলোচন।
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আল বলেন, ﴿ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢﴾ [ فاطر : ٣٢ ] “অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২] আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠﴾ [ النساء : ١١٠ ] “আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১০] আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউসুফে আযীযে মিসরের স্ত্রী ভাষায় বলেন, ﴿وَمَآ أُبَرِّئُ نَفۡسِيٓۚ إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيٓۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥٣﴾ [ يوسف : ٥٢ ] ‘‘আর আমি আমার নাফ্সকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফ্স মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ وَأَرۡسَلۡنَٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولٗاۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدٗا ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯]
প্রথম দু’টি আয়াত প্রমাণ করে যে, মানুষ নিজেই তার নিজের ওপর অত্যাচারী। কারণ, সে নিজেই আল্লাহর আদেশসমূহ অমান্য করে। আর পরবর্তী আয়াত দু’টি বর্ণনা দেয়া হয় যে, মানবাত্মাই মানুষের জন্য অন্যায়কারী। কারণ, প্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অশ্লীল কর্মের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। উভয় প্রকার আয়াতসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যতা কীভাবে সাধন করা হবে। আমি এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, কুরআনের মধ্যে কোন বিরোধ বা অসঙ্গতি নেই। তবে আমি শুধু আয়াতসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান ও বিরোধ নিরসন চাচ্ছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: প্রশ্নকারী যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে এবং পরবর্তী আয়াতসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, প্রথম আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে আল্লাহর আযাবের সামনে নিজেকে পেশ করে মানুষ তার নিজের ওপর যুলম অত্যাচার করে। আর পরবর্তী আয়াতসমূহে বলা হয়েছে নিশ্চয় প্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায় কর্মের আদেশ দেয়। নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির টানে মানবাত্মা খারাপ কর্মের দিকে টেনে নেয়। ফলে মানুষ চাহিদা স্বত্বেও যখন তা ছেড়ে দেয় এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ গ্রহণ করার সুযোগ থাকা স্বত্বেও তা গ্রহণ না করে তখন সে তার ওপর যুলুম করে।
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর পাহারাদারি করে তার লাগাম টেনে ধরার, সংরক্ষণ করার এবং তা ছেড়ে না দেয়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَنَفۡسٖ وَمَا سَوَّىٰهَا ٧ فَأَلۡهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقۡوَىٰهَا ٨ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٧، ١٠ ] “কসম নাফ্সের এবং যিনি তা সুসম করেছেন। অতঃপর তিনি তাকে অবহিত করেছেন তার পাপসমূহ ও তার তাকওয়া সম্পর্কে। নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফ্স)-কে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শাম্স, আয়াত: ৭-১০]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আল বলেন, ﴿ثُمَّ أَوۡرَثۡنَا ٱلۡكِتَٰبَ ٱلَّذِينَ ٱصۡطَفَيۡنَا مِنۡ عِبَادِنَاۖ فَمِنۡهُمۡ ظَالِمٞ لِّنَفۡسِهِۦ وَمِنۡهُم مُّقۡتَصِدٞ وَمِنۡهُمۡ سَابِقُۢ بِٱلۡخَيۡرَٰتِ بِإِذۡنِ ٱللَّهِۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَضۡلُ ٱلۡكَبِيرُ ٣٢﴾ [ فاطر : ٣٢ ] “অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। তারপর তাদের কেউ কেউ নিজের প্রতি যুলুমকারী এবং কেউ কেউ মধ্যপন্থা অবলম্বনকারী।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩২] আবার তাদের কেউ কেউ আল্লাহর অনুমতি সাপেক্ষে কল্যাণকর কাজে অগ্রগামী। এটাই হলো মহাঅনুগ্রহ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَن يَعۡمَلۡ سُوٓءًا أَوۡ يَظۡلِمۡ نَفۡسَهُۥ ثُمَّ يَسۡتَغۡفِرِ ٱللَّهَ يَجِدِ ٱللَّهَ غَفُورٗا رَّحِيمٗا ١١٠﴾ [ النساء : ١١٠ ] “আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি যুলম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে, সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১০] আল্লাহ তা‘আলা সূরা ইউসুফে আযীযে মিসরের স্ত্রী ভাষায় বলেন, ﴿وَمَآ أُبَرِّئُ نَفۡسِيٓۚ إِنَّ ٱلنَّفۡسَ لَأَمَّارَةُۢ بِٱلسُّوٓءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّيٓۚ إِنَّ رَبِّي غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥٣﴾ [ يوسف : ٥٢ ] ‘‘আর আমি আমার নাফ্সকে পবিত্র মনে করি না, নিশ্চয় নাফ্স মন্দ কজের নির্দেশ দিয়ে থাকে, আমার রব যাকে দয়া করেন সে ছাড়া। নিশ্চয় আমার রব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা ইউসুফ, আয়াত: ৫২] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ وَأَرۡسَلۡنَٰكَ لِلنَّاسِ رَسُولٗاۚ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ شَهِيدٗا ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে। আর আমি তোমাকে মানুষের জন্য রাসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং সাক্ষী হিসেবে আল্লাহ যথেষ্ট।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯]
প্রথম দু’টি আয়াত প্রমাণ করে যে, মানুষ নিজেই তার নিজের ওপর অত্যাচারী। কারণ, সে নিজেই আল্লাহর আদেশসমূহ অমান্য করে। আর পরবর্তী আয়াত দু’টি বর্ণনা দেয়া হয় যে, মানবাত্মাই মানুষের জন্য অন্যায়কারী। কারণ, প্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায় কাজের আদেশ দেয়, অশ্লীল কর্মের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে। উভয় প্রকার আয়াতসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যতা কীভাবে সাধন করা হবে। আমি এ কথা অবশ্যই বিশ্বাস করি যে, কুরআনের মধ্যে কোন বিরোধ বা অসঙ্গতি নেই। তবে আমি শুধু আয়াতসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান ও বিরোধ নিরসন চাচ্ছি। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: প্রশ্নকারী যে আয়াতগুলো উল্লেখ করেছেন তার মধ্যে এবং পরবর্তী আয়াতসমূহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, প্রথম আয়াতগুলোতে বলা হয়েছে আল্লাহর আযাবের সামনে নিজেকে পেশ করে মানুষ তার নিজের ওপর যুলম অত্যাচার করে। আর পরবর্তী আয়াতসমূহে বলা হয়েছে নিশ্চয় প্রবৃত্তি মানুষকে অন্যায় কর্মের আদেশ দেয়। নিষিদ্ধ প্রবৃত্তির টানে মানবাত্মা খারাপ কর্মের দিকে টেনে নেয়। ফলে মানুষ চাহিদা স্বত্বেও যখন তা ছেড়ে দেয় এবং নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ গ্রহণ করার সুযোগ থাকা স্বত্বেও তা গ্রহণ না করে তখন সে তার ওপর যুলুম করে।
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর পাহারাদারি করে তার লাগাম টেনে ধরার, সংরক্ষণ করার এবং তা ছেড়ে না দেয়ার নির্দেশ দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَنَفۡسٖ وَمَا سَوَّىٰهَا ٧ فَأَلۡهَمَهَا فُجُورَهَا وَتَقۡوَىٰهَا ٨ قَدۡ أَفۡلَحَ مَن زَكَّىٰهَا ٩ وَقَدۡ خَابَ مَن دَسَّىٰهَا ١٠﴾ [ الشمس : ٧، ١٠ ] “কসম নাফ্সের এবং যিনি তা সুসম করেছেন। অতঃপর তিনি তাকে অবহিত করেছেন তার পাপসমূহ ও তার তাকওয়া সম্পর্কে। নিঃসন্দেহে সে সফলকাম হয়েছে, যে তকে পরিশুদ্ধ করেছে। এবং সে ব্যর্থ হয়েছে, যে তা (নাফ্স)-কে কলুষিত করেছে।” [সূরা আশ-শাম্স, আয়াত: ৭-১০]
প্রশ্ন: আল্লাহর তা‘আলার বাণী: ﴿وَقِيلَ ٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰكُمۡ كَمَا نَسِيتُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَا ٣٤﴾ [ الجاثية : ٣٤ ] “আর বলা হবে, ‘আজ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাব যেমন তোমরা তোমাদের এ দিনের সাক্ষাতের বিষয়টি ছেড়ে গিয়েছিলে।” [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ৩৪] আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قَالَ عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَٰبٖۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ٥٢﴾ [ طه : ٥٢ ] ‘‘এর জ্ঞান আমার রবের নিকট কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না’’। [সূরা তা-হা, আয়াত: ৫২]
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামী কাফিরদের সম্বোধন করে বলবেন, ﴿وَقِيلَ ٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰكُمۡ كَمَا نَسِيتُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَا ٣٤﴾ [ الجاثية : ٣٤ ] “আর বলা হবে, ‘আজ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাব যেমন তোমরা তোমাদের এ দিনের সাক্ষাতের বিষয়টি ছেড়ে গিয়েছিলে।” [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ৩৪]
আর আল্লাহ তা‘আলা অপর একটি আয়াতে বলেন, ﴿قَالَ عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَٰبٖۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ٥٢﴾ [ طه : ٥٢ ] “এর জ্ঞান আমার রবের নিকট কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৫২] উভয় আয়াতের মাঝে কিভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে?
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে ভুলে যাওয়ার অর্থ ভিন্ন। আয়াতে যে ভুলে যাওয়াকে আল্লাহ তা‘আলা না করেছেন সে ভুলে যাওয়ার অর্থ অলসতা ও অন্যমনস্ক হওয়া। আর আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। কারণ, এটি দুর্বলতা ও দোষ। যা আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আর আল্লাহর এ— ﴿نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ ١٩﴾ [ الحشر : ١٩ ] “যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন;” [সূরা আল-হাসর, আয়াত: ১৯] -বাণীতে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত কৃত ভুলে যাওয়ার অর্থ হলো, তাদের গোমরাহীতে ছেড়ে দেওয়া এবং তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এ শব্দটি এখানে ‘মোকাবেলা ও রূপক’ অধ্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা যখন তার আদেশসমূহ ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহও তাদের ছেড়ে দেন এবং তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ভুলে যাওয়া শব্দটি একাধিক অর্থ সম্বলিত শব্দ। প্রতিটি স্থানে তার ব্যবহার অনুযায়ী এবং অভিধান অনুযায়ী অর্থ হবে। এ শব্দটি আল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বিদ্রুপকারীদের বিদ্রূপের এবং ঠাট্টা-কারীদের ঠাট্টার জাওয়াব দেওয়ার মতো। এ গুলো সবই বদলা ও রূপক অর্থের অধ্যায়ের শব্দ। আর তাদের এ ধরনের শাস্তি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ইনসাফ ও পরিপূর্ণতা। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেওয়ার একমাত্র অভিভাবক।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান
আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামী কাফিরদের সম্বোধন করে বলবেন, ﴿وَقِيلَ ٱلۡيَوۡمَ نَنسَىٰكُمۡ كَمَا نَسِيتُمۡ لِقَآءَ يَوۡمِكُمۡ هَٰذَا ٣٤﴾ [ الجاثية : ٣٤ ] “আর বলা হবে, ‘আজ আমি তোমাদেরকে ছেড়ে যাব যেমন তোমরা তোমাদের এ দিনের সাক্ষাতের বিষয়টি ছেড়ে গিয়েছিলে।” [সূরা আল-জাসিয়াহ, আয়াত: ৩৪]
আর আল্লাহ তা‘আলা অপর একটি আয়াতে বলেন, ﴿قَالَ عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّي فِي كِتَٰبٖۖ لَّا يَضِلُّ رَبِّي وَلَا يَنسَى ٥٢﴾ [ طه : ٥٢ ] “এর জ্ঞান আমার রবের নিকট কিতাবে আছে। আমার রব বিভ্রান্ত হন না এবং ভুলেও যান না।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৫২] উভয় আয়াতের মাঝে কিভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে?
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে ভুলে যাওয়ার অর্থ ভিন্ন। আয়াতে যে ভুলে যাওয়াকে আল্লাহ তা‘আলা না করেছেন সে ভুলে যাওয়ার অর্থ অলসতা ও অন্যমনস্ক হওয়া। আর আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। কারণ, এটি দুর্বলতা ও দোষ। যা আল্লাহর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
আর আল্লাহর এ— ﴿نَسُواْ ٱللَّهَ فَأَنسَىٰهُمۡ أَنفُسَهُمۡۚ ١٩﴾ [ الحشر : ١٩ ] “যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছিল ফলে আল্লাহও তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছিলেন;” [সূরা আল-হাসর, আয়াত: ১৯] -বাণীতে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত কৃত ভুলে যাওয়ার অর্থ হলো, তাদের গোমরাহীতে ছেড়ে দেওয়া এবং তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া। এ শব্দটি এখানে ‘মোকাবেলা ও রূপক’ অধ্যায় থেকে নেওয়া হয়েছে। কারণ, তারা যখন তার আদেশসমূহ ছেড়ে দেয় এবং আল্লাহর দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আল্লাহও তাদের ছেড়ে দেন এবং তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। ভুলে যাওয়া শব্দটি একাধিক অর্থ সম্বলিত শব্দ। প্রতিটি স্থানে তার ব্যবহার অনুযায়ী এবং অভিধান অনুযায়ী অর্থ হবে। এ শব্দটি আল্লাহ ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রের বিদ্রুপকারীদের বিদ্রূপের এবং ঠাট্টা-কারীদের ঠাট্টার জাওয়াব দেওয়ার মতো। এ গুলো সবই বদলা ও রূপক অর্থের অধ্যায়ের শব্দ। আর তাদের এ ধরনের শাস্তি হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে ইনসাফ ও পরিপূর্ণতা। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দেওয়ার একমাত্র অভিভাবক।
শাইখ সালেহ আল-ফাওযান
আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ] আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ١٠٥﴾ [ المائدة : ١٠٥ ] যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ১০৫]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ] “আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪] এর মধ্যে এবং আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ١٠٥﴾ [ المائدة : ١٠٥ ] “যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।” [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ১০৫] ও হাদীস— «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ» : هَذَا حَدِيثٌ حَسَن —“ঐ স্বত্বার শপথ যার হাতে আমার জীবন তোমরা ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে মানুষকে বাধা প্রদান করবে অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের পক্ষ থেকে অচিরেই তোমাদের ওপর আযাব প্রেরণ করবে। অতঃপর তোমরা তাকে ডাকবে তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না [তিরমিযি হাদীস নং ২১৬৯]।” এবং অপর হাদীস— «مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ» “মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা-বার্তা ছেড়ে দেওয়া” [তিরমিযি, হাদীস নং ২৩১৮]—এর মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে? আপনার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আমি জানি আয়াতের অর্থের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অনুরূপভাবে বিশুদ্ধ সুন্নাতের মধ্যেও কোন বিরোধ নেই। এ কারণে আমি এ কথা বিশ্বাস করি যে, জ্ঞানের অভাব ও অক্ষম হওয়ার কারণে ভুল আমারই হয়ে থাকে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। এর উত্তর কি?
উত্তর— আয়াতে কোথাও শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়াকে ছেড়ে দেয়ার কথা নেই। আয়াতের বর্ণনা দ্বারা একজন বান্দাকে আত্মার পরিশুদ্ধির কথা বলা হয়েছে এবং ভালো কর্ম করার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। আর নিজেকে সংশোধন করা ও ভালো করার মধ্যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাধা দেওয়াও রয়েছে। যখন কোন বান্দা তার ওপর যা ওয়াজিব তা আদায় করবে তখন সে যদি আল্লাহ তাকে যা নির্দেশ দিয়েছে তা পালন করার পর যে গোমরাহ হবে সে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ইমাম আহমদ বিশুদ্ধ সনদে কাইস থেকে বর্ণনা করেছেন— قَالَ قَامَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الْآيَةَ { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ } وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُنْكِرُوهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ “আবূ বকর দাঁড়ালেন অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করলেন। তারপর বললেন, হে মানুষ! তোমরা অবশ্যই এ আয়াত তিলাওয়াত কর। আর তোমরা আয়াতটিকে এমন ক্ষেত্রে প্রয়োগ কর যেটি তার প্রয়োগের স্থান নয়। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মানুষ যখন কোন অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখে তা পরিবর্তন না করে, আল্লাহর শাস্তি তাদের গ্রাস করতে পারে [ইবনু মাযা, হাদীস নং ৪০৫]।” মনে রাখবে একজন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব—সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়া সাধ্য অনুযায়ী আদায় না করবে সে পরিপূর্ণ হিদায়াতপ্রাপ্ত হতে পারবে না। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দানকারী।
ফত্ওয়া ও ইলমী গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী সংস্থা।
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤﴾ [ ال عمران : ١٠٤ ] “আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহবান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১০৪] এর মধ্যে এবং আল্লাহ তা‘আলার অপর বাণী: ﴿لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَيۡتُمۡۚ ١٠٥﴾ [ المائدة : ١٠٥ ] “যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না।” [সূরা মায়েদাহ, আয়াত: ১০৫] ও হাদীস— «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ المُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللَّهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْهُ ثُمَّ تَدْعُونَهُ فَلَا يُسْتَجَابُ لَكُمْ» : هَذَا حَدِيثٌ حَسَن —“ঐ স্বত্বার শপথ যার হাতে আমার জীবন তোমরা ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজে মানুষকে বাধা প্রদান করবে অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের পক্ষ থেকে অচিরেই তোমাদের ওপর আযাব প্রেরণ করবে। অতঃপর তোমরা তাকে ডাকবে তখন তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না [তিরমিযি হাদীস নং ২১৬৯]।” এবং অপর হাদীস— «مِنْ حُسْنِ إِسْلَامِ المَرْءِ تَرْكُهُ مَا لَا يَعْنِيهِ» “মানুষের ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা-বার্তা ছেড়ে দেওয়া” [তিরমিযি, হাদীস নং ২৩১৮]—এর মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে? আপনার প্রতি আল্লাহ দয়া করুন। আমি জানি আয়াতের অর্থের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। অনুরূপভাবে বিশুদ্ধ সুন্নাতের মধ্যেও কোন বিরোধ নেই। এ কারণে আমি এ কথা বিশ্বাস করি যে, জ্ঞানের অভাব ও অক্ষম হওয়ার কারণে ভুল আমারই হয়ে থাকে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। এর উত্তর কি?
উত্তর— আয়াতে কোথাও শক্তি-সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়াকে ছেড়ে দেয়ার কথা নেই। আয়াতের বর্ণনা দ্বারা একজন বান্দাকে আত্মার পরিশুদ্ধির কথা বলা হয়েছে এবং ভালো কর্ম করার চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। আর নিজেকে সংশোধন করা ও ভালো করার মধ্যে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাধা দেওয়াও রয়েছে। যখন কোন বান্দা তার ওপর যা ওয়াজিব তা আদায় করবে তখন সে যদি আল্লাহ তাকে যা নির্দেশ দিয়েছে তা পালন করার পর যে গোমরাহ হবে সে তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। ইমাম আহমদ বিশুদ্ধ সনদে কাইস থেকে বর্ণনা করেছেন— قَالَ قَامَ أَبُو بَكْرٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَحَمِدَ اللَّهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَءُونَ هَذِهِ الْآيَةَ { يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ } وَإِنَّا سَمِعْنَا رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُنْكِرُوهُ أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمْ اللَّهُ بِعِقَابِهِ “আবূ বকর দাঁড়ালেন অতঃপর আল্লাহর প্রশংসা ও শুকরিয়া আদায় করলেন। তারপর বললেন, হে মানুষ! তোমরা অবশ্যই এ আয়াত তিলাওয়াত কর। আর তোমরা আয়াতটিকে এমন ক্ষেত্রে প্রয়োগ কর যেটি তার প্রয়োগের স্থান নয়। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, মানুষ যখন কোন অপকর্ম সংঘটিত হতে দেখে তা পরিবর্তন না করে, আল্লাহর শাস্তি তাদের গ্রাস করতে পারে [ইবনু মাযা, হাদীস নং ৪০৫]।” মনে রাখবে একজন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব—সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কর্মে বাঁধা দেওয়া সাধ্য অনুযায়ী আদায় না করবে সে পরিপূর্ণ হিদায়াতপ্রাপ্ত হতে পারবে না। আল্লাহই একমাত্র তাওফীক দানকারী।
ফত্ওয়া ও ইলমী গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী সংস্থা।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ ٩٠﴾ “নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ঈমান আনার পর...।” আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ ٥٣﴾ “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ...।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরানে বলেছেন— ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ ثُمَّ ٱزۡدَادُواْ كُفۡرٗا لَّن تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ٩٠﴾ [ ال عمران : ٩٠ ] “নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ঈমান আনার পর, তারপর তারা কুফরীতে বেড়ে গিয়েছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই পথভ্রষ্ট।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯০] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
আয়াত দু’টির অর্থ কি? কীভাবে আয়াত দু’টির বিরোধ নিষ্পত্তি করব? প্রথম আয়াতের অর্থ কি এই যে, কতক গুনাহ এমন রয়েছে যখনই কোন ব্যক্তি এ ধরনের গুনাহ করবে তার তাওবা কবুল করা হবে না, নাকি একটি আয়াত অপরটির জন্য রহিত কারী অথবা কি নিষ্পত্তি?
উত্তর: আয়াত দু’টির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, প্রথম আয়াত মুরতাদ সম্পর্কে যে তাওবা করা ছাড়া মুরতাদ অবস্থায় মারা গেছে। মৃত্যুর সময় যদি সে তাওবা করে তার তাওবা কবুল করা হবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ وَلَا ٱلَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمۡ كُفَّارٌۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٨﴾ [ النساء : ١٨ ]
“আর তাওবা নাই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবা করলাম, আর তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমি এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧﴾ [ البقرة : ٢١٧ ]
“আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২১৮]
মোট কথা প্রথম আয়াত যারা দীন থেকে মুরতাদ হয়ে গেছে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুরতাদ অবস্থায় ছিল তাওবা করেনি। কিন্তু যখন মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয় তখন সে তাওবা করে। তখন তার তাওবা কবুল করা হবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে— إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ “মৃত্যু গড়গড়া আসার আগ পর্যন্ত কবুল করা হবে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬১৬০]
কোন কোন আলেম বলেন, প্রথম আয়াতটি ঐ সব মুরতাদ সম্পর্কে যারা বার বার মুরতাদ হয়। তাদের তাওবা কবুল করা হবে না। বরং তাদের ওপর সর্বাবস্থায় মুরতাদের যে শাস্তি তা বাস্তবায়ন করা হবে।
আর দ্বিতীয় আয়াতটি অর্থাৎ ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
ঐ সব লোকদের সম্পর্কে যারা তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা আসার পূর্বে তাওবা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা অবশ্যই কবুল করবেন। এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, আয়াত দু’টির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আল্লাহই তাওফীক দাতা
শাই সালেহ আল-ফাওযান
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা সূরা আলে ইমরানে বলেছেন— ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بَعۡدَ إِيمَٰنِهِمۡ ثُمَّ ٱزۡدَادُواْ كُفۡرٗا لَّن تُقۡبَلَ تَوۡبَتُهُمۡ وَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلضَّآلُّونَ ٩٠﴾ [ ال عمران : ٩٠ ] “নিশ্চয় যারা কুফরী করেছে ঈমান আনার পর, তারপর তারা কুফরীতে বেড়ে গিয়েছে, তাদের তাওবা কখনো কবুল করা হবে না। আর তারাই পথভ্রষ্ট।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৯০] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’’। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
আয়াত দু’টির অর্থ কি? কীভাবে আয়াত দু’টির বিরোধ নিষ্পত্তি করব? প্রথম আয়াতের অর্থ কি এই যে, কতক গুনাহ এমন রয়েছে যখনই কোন ব্যক্তি এ ধরনের গুনাহ করবে তার তাওবা কবুল করা হবে না, নাকি একটি আয়াত অপরটির জন্য রহিত কারী অথবা কি নিষ্পত্তি?
উত্তর: আয়াত দু’টির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কারণ, প্রথম আয়াত মুরতাদ সম্পর্কে যে তাওবা করা ছাড়া মুরতাদ অবস্থায় মারা গেছে। মৃত্যুর সময় যদি সে তাওবা করে তার তাওবা কবুল করা হবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَيۡسَتِ ٱلتَّوۡبَةُ لِلَّذِينَ يَعۡمَلُونَ ٱلسَّئَِّاتِ حَتَّىٰٓ إِذَا حَضَرَ أَحَدَهُمُ ٱلۡمَوۡتُ قَالَ إِنِّي تُبۡتُ ٱلۡـَٰٔنَ وَلَا ٱلَّذِينَ يَمُوتُونَ وَهُمۡ كُفَّارٌۚ أُوْلَٰٓئِكَ أَعۡتَدۡنَا لَهُمۡ عَذَابًا أَلِيمٗا ١٨﴾ [ النساء : ١٨ ]
“আর তাওবা নাই তাদের, যারা অন্যায় কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু এসে যায়, তখন বলে, আমি এখন তাওবা করলাম, আর তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা কাফির অবস্থায় মারা যায়; আমি এদের জন্যই তৈরী করেছি যন্ত্রণাদায়ক আযাব।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢١٧﴾ [ البقرة : ٢١٧ ]
“আর যে তোমাদের মধ্য থেকে তাঁর দীন থেকে ফিরে যাবে, অতঃপর কাফির অবস্থায় মৃত্যু বরণ করবে, বস্তুত এদের আমলসমূহ দুনিয়া ও আখিরাতে বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২১৮]
মোট কথা প্রথম আয়াত যারা দীন থেকে মুরতাদ হয়ে গেছে এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মুরতাদ অবস্থায় ছিল তাওবা করেনি। কিন্তু যখন মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হয় তখন সে তাওবা করে। তখন তার তাওবা কবুল করা হবে না। যেমন, হাদীসে এসেছে— إِنَّ اللَّهَ يَقْبَلُ تَوْبَةَ الْعَبْدِ مَا لَمْ يُغَرْغِرْ “মৃত্যু গড়গড়া আসার আগ পর্যন্ত কবুল করা হবে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬১৬০]
কোন কোন আলেম বলেন, প্রথম আয়াতটি ঐ সব মুরতাদ সম্পর্কে যারা বার বার মুরতাদ হয়। তাদের তাওবা কবুল করা হবে না। বরং তাদের ওপর সর্বাবস্থায় মুরতাদের যে শাস্তি তা বাস্তবায়ন করা হবে।
আর দ্বিতীয় আয়াতটি অর্থাৎ ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
ঐ সব লোকদের সম্পর্কে যারা তাদের মৃত্যু যন্ত্রণা আসার পূর্বে তাওবা করে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের তাওবা অবশ্যই কবুল করবেন। এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, আয়াত দু’টির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আল্লাহই তাওফীক দাতা
শাই সালেহ আল-ফাওযান
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا﴾ “বলুন, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই আমাদের পৌঁছবে।” আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।”
প্রশ্ন: আল্লাহর তা‘আলা বলেন, ﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا﴾ “বলুন, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই আমাদের পৌঁছবে।” যে সব বিপদ-আপদ আসে তা কি আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী— ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯] —এর অর্থ কি?
উত্তর: বান্দা যে সব নেক ও বদ আমল করে থাকে সবই আল্লাহর কুদরতে হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ] “নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী।” [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ أَن نَّبۡرَأَهَآۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٢٢﴾ [ الحديد : ٢٢ ] “জমিনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا﴾ তারপরও নেক আমলসমূহ আল্লাহর করুণা। কারণ, আল্লাহই তা লিপিবদ্ধ করেছে এবং বান্দাকে তা করার তাওফীক দিয়েছেন। তাই এ সবের ওপর সকল প্রশংসা আল্লাহরই।
আর বদ আমলসমূহ আল্লাহরই নির্ধারণ। তবে তা সংঘটিত হওয়ার কারণ, বান্দার কর্ম ও গুনাহসমূহ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ ١١﴾ [ الرعد : ١١ ] “নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]
নেক আমল ও বদ আমল আল্লাহ তা‘আলারই নির্ধারণ। ভালো বান্দাদের ভালো কর্ম করার তাওফীক দিয়ে থাকেন। আর বিভিন্ন কারণ যে গুলো বান্দা নিজেই সৃষ্টি করেছেন এবং বিশেষ কোন হিকমতের কারণে অপরাধীদের অসৎ কর্ম ছাড়ার তাওফীক তিনি দেননি। আল্লাহ তা‘আলা তার পরিপূর্ণ ইলম, স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মহা প্রজ্ঞা-হিকমত ও ইনসাফের কারণে সর্বাবস্থায় প্রশংসিত। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহর তা‘আলা বলেন, ﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا﴾ “বলুন, আল্লাহ আমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই আমাদের পৌঁছবে।” যে সব বিপদ-আপদ আসে তা কি আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী— ﴿مَّآ أَصَابَكَ مِنۡ حَسَنَةٖ فَمِنَ ٱللَّهِۖ وَمَآ أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٖ فَمِن نَّفۡسِكَۚ ٧٩﴾ [ النساء : ٧٩ ] “তোমার কাছে যে কল্যাণ পৌঁছে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে, আর যে অকল্যাণ তোমার কাছে পৌঁছে তা তোমার নিজের পক্ষ থেকে।” [সূরা নিসা, আয়াত: ৭৯] —এর অর্থ কি?
উত্তর: বান্দা যে সব নেক ও বদ আমল করে থাকে সবই আল্লাহর কুদরতে হয়ে থাকে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّا كُلَّ شَيۡءٍ خَلَقۡنَٰهُ بِقَدَرٖ ٤٩﴾ [ القمر : ٤٩ ] “নিশ্চয় আমি সব কিছু সৃষ্টি করেছি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী।” [সূরা আল-কামার, আয়াত: ৪৯] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿مَآ أَصَابَ مِن مُّصِيبَةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ وَلَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ إِلَّا فِي كِتَٰبٖ مِّن قَبۡلِ أَن نَّبۡرَأَهَآۚ إِنَّ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرٞ ٢٢﴾ [ الحديد : ٢٢ ] “জমিনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।” [সূরা আল-হাদীদ, আয়াত: ২২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا﴾ তারপরও নেক আমলসমূহ আল্লাহর করুণা। কারণ, আল্লাহই তা লিপিবদ্ধ করেছে এবং বান্দাকে তা করার তাওফীক দিয়েছেন। তাই এ সবের ওপর সকল প্রশংসা আল্লাহরই।
আর বদ আমলসমূহ আল্লাহরই নির্ধারণ। তবে তা সংঘটিত হওয়ার কারণ, বান্দার কর্ম ও গুনাহসমূহ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩০] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ ١١﴾ [ الرعد : ١١ ] “নিশ্চয় আল্লাহ কোন কওমের অবস্থা ততক্ষণ পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” [সূরা আর-রা‘আদ, আয়াত: ১১]
নেক আমল ও বদ আমল আল্লাহ তা‘আলারই নির্ধারণ। ভালো বান্দাদের ভালো কর্ম করার তাওফীক দিয়ে থাকেন। আর বিভিন্ন কারণ যে গুলো বান্দা নিজেই সৃষ্টি করেছেন এবং বিশেষ কোন হিকমতের কারণে অপরাধীদের অসৎ কর্ম ছাড়ার তাওফীক তিনি দেননি। আল্লাহ তা‘আলা তার পরিপূর্ণ ইলম, স্বয়ংসম্পূর্ণতা, মহা প্রজ্ঞা-হিকমত ও ইনসাফের কারণে সর্বাবস্থায় প্রশংসিত। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহ তা’আলার বাণী: ﴿مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ ٢٩﴾ [ق: ٢٩ ] “আমার কাছে কথা রদবদল হয় না।” মিরাজের রাতে সালাত পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে পাঁচ ওয়াক্তে নামিয়ে নিয়ে আসা পরিবর্তন নয় কি?।
প্রশ্ন: আল্লাহ তা’আলার বাণী: ﴿مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ ٢٩﴾ [ق: ٢٩ ] ‘আমার কাছে কথা রদবদল হয় না, আর আমি বান্দার প্রতি যুলুমকারীও নই’। [সূরা আল-কাফ, আয়াত: ২৯] এবং মি‘রাজের হাদীসের মধ্যে বিরোধ কিভাবে নিরসন করব, যাতে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহর নিকট বার বার যাতায়াত করার মাধ্যমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ ٢٩﴾ [ق: ٢٩ ] ‘‘আমার কাছে কথা রদবদল হয় না, আর আমি বান্দার প্রতি যুলুমকারীও নই’।” [সূরা আল-কাফ, আয়াত: ২৯] এর মধ্যে এবং উল্লিখিত হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেছেন আমি কথা পরিবর্তন করি না? না, আল্লাহ এ কথা বলেননি। বরং আল্লাহ বলেছেন, مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ । কারণ, لا تبديل لكلمات الله কেউ আল্লাহর বাণীসমূহের পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। আমরা যখন এ কথা বলি যে, আয়াতের বর্ণনা হলো, এমন কর্মের যার কর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। আর তিনি যা বলেন, তা তিনি নিজে পরিবর্তন করেন না। তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, সালাত বিষয়ে রাসূলের বার বার যাতায়াতের যা সংঘটিত হয়েছে তা ছিল প্রথম থেকে যে কথার প্রতি তার সম্মতি ও সন্তুষ্টি ছিল অর্থাৎ সালাত পাঁচ ওয়াক্ত হওয়া তা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় নবীর জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন বিশেষ কোন হিকমত বা প্রজ্ঞার কারণে। বিশেষ কারণ একাধিক হতে পারে। যেমন—
প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলের ওপর যাই ফরয করেন তাই মানা ও কবুল করা।
দ্বিতীয় কারণ হলো, এ উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা। কারণ, বর্তমানে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি। কিন্তু আমরা সাওয়াব পাবো সে ব্যক্তি ন্যায় যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। এটি যে কোন নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার অধ্যায়ের নয়। বরং এ হলো এক ওয়াক্ত সালাতের অনুকূলে দশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা লিপিবদ্ধ হবে। এটি অনেক বড় নে‘আমত এবং আল্লাহ তা‘আলা বড় হিকমত ও অপার রহমত। সুতরাং আসল কারণ, প্রথম কারণ, অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি সন্তুষ্ট তিনি সেটাই ফায়সালা করেছেন যে, সালাত পাঁচ ওয়াক্তই হবে। তবে তিনি পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরয করেছেন হিকমতের কারণে।
প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলা যা ফরয করেন যদিও তাতে অনেক কষ্ট হয় তা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ফরযকে কবুল করেন এবং মেনে নেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা বাধ্য করা হয় তা মানা ও কবুল করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক আনুগত্য শীল ও অনুগামী ব্যক্তি।
দ্বিতীয়ত: উম্মতের জন্য বাস্তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সত্ত্বেও পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে। এটি এ উম্মতের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া রহমত। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা’আলার বাণী: ﴿مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ ٢٩﴾ [ق: ٢٩ ] ‘আমার কাছে কথা রদবদল হয় না, আর আমি বান্দার প্রতি যুলুমকারীও নই’। [সূরা আল-কাফ, আয়াত: ২৯] এবং মি‘রাজের হাদীসের মধ্যে বিরোধ কিভাবে নিরসন করব, যাতে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহর নিকট বার বার যাতায়াত করার মাধ্যমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে নিয়ে আসেন? আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ وَمَآ أَنَا۠ بِظَلَّٰمٖ لِّلۡعَبِيدِ ٢٩﴾ [ق: ٢٩ ] ‘‘আমার কাছে কথা রদবদল হয় না, আর আমি বান্দার প্রতি যুলুমকারীও নই’।” [সূরা আল-কাফ, আয়াত: ২৯] এর মধ্যে এবং উল্লিখিত হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আল্লাহ তা‘আলা কি এ কথা বলেছেন আমি কথা পরিবর্তন করি না? না, আল্লাহ এ কথা বলেননি। বরং আল্লাহ বলেছেন, مَا يُبَدَّلُ ٱلۡقَوۡلُ لَدَيَّ । কারণ, لا تبديل لكلمات الله কেউ আল্লাহর বাণীসমূহের পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। আমরা যখন এ কথা বলি যে, আয়াতের বর্ণনা হলো, এমন কর্মের যার কর্তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। আর তিনি যা বলেন, তা তিনি নিজে পরিবর্তন করেন না। তাহলে আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব, সালাত বিষয়ে রাসূলের বার বার যাতায়াতের যা সংঘটিত হয়েছে তা ছিল প্রথম থেকে যে কথার প্রতি তার সম্মতি ও সন্তুষ্টি ছিল অর্থাৎ সালাত পাঁচ ওয়াক্ত হওয়া তা পূর্ণ করার উদ্দেশ্যে ছিল। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় নবীর জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেন বিশেষ কোন হিকমত বা প্রজ্ঞার কারণে। বিশেষ কারণ একাধিক হতে পারে। যেমন—
প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলা তার রাসূলের ওপর যাই ফরয করেন তাই মানা ও কবুল করা।
দ্বিতীয় কারণ হলো, এ উম্মতের জন্য পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা। কারণ, বর্তমানে আমরা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করি। কিন্তু আমরা সাওয়াব পাবো সে ব্যক্তি ন্যায় যে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। এটি যে কোন নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার অধ্যায়ের নয়। বরং এ হলো এক ওয়াক্ত সালাতের অনুকূলে দশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা লিপিবদ্ধ হবে। এটি অনেক বড় নে‘আমত এবং আল্লাহ তা‘আলা বড় হিকমত ও অপার রহমত। সুতরাং আসল কারণ, প্রথম কারণ, অর্থাৎ, আল্লাহ তা‘আলা যার প্রতি সন্তুষ্ট তিনি সেটাই ফায়সালা করেছেন যে, সালাত পাঁচ ওয়াক্তই হবে। তবে তিনি পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরয করেছেন হিকমতের কারণে।
প্রথমত: আল্লাহ তা‘আলা যা ফরয করেন যদিও তাতে অনেক কষ্ট হয় তা সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর ফরযকে কবুল করেন এবং মেনে নেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা বাধ্য করা হয় তা মানা ও কবুল করার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বাধিক আনুগত্য শীল ও অনুগামী ব্যক্তি।
দ্বিতীয়ত: উম্মতের জন্য বাস্তবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা সত্ত্বেও পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার সাওয়াব লিপিবদ্ধ করার উদ্দেশ্যে। এটি এ উম্মতের প্রতি আল্লাহর বিশেষ দয়া রহমত। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ ١١٦﴾ [ النساء : ١١٦ ]“নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে...।” আল্লাহর বাণী: ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ١١٦﴾ [ النساء : ١١٦ ] “নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]
তিনি আরও বলেন, ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২]
উভয় আয়াতের মাঝে কি কোন বিরোধ আছে? আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ ١١٦﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে” দ্বারা কি উদ্দেশ্য? [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। প্রথম আয়াত যে ব্যক্তি তাওবা না করে শির্ক অবস্থায় মারা যায় তার সম্পর্কে। কারণ, তাকে ক্ষমা করা হবে না এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আন‘আম আয়াত: ৮৮] একই বিষয়ক আয়াত আরও অনেক রয়েছে।
আর দ্বিতীয় আয়াত যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] এটি তাওবাকারীদের বিষয়ে। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এ আয়াতটি তাওবাকারীদের সম্পর্কে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ١١٦﴾ [ النساء : ١١٦ ] “এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]—এ আয়াতটি যারা শির্ক করা ছাড়া অন্য কোন গুনাহ করে তাওবা করা ছাড়া মারা গিয়েছে তাদের সম্পর্কে। তার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ। তিনি যদি চান শাস্তি দেবেন যদি চান ক্ষমা করে দেবেন। যদি শাস্তি দেন তবে সে কাফিরদের মতো চির জাহান্নামী হবে না। যেমনটি বলে খারেজী, মু‘তাযিলা এবং তাদের অনুসারীরা। বরং গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়া ও শাস্তি ভোগ করার পর একদিন অবশ্যই সে জাহান্নাম থেকে বের হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতের হাদীস এবং উম্মতের সালাফদের ইজমা এ কথাটি প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ١١٦﴾ [ النساء : ١١٦ ] “নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন।” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]
তিনি আরও বলেন, ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২]
উভয় আয়াতের মাঝে কি কোন বিরোধ আছে? আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী: ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ ١١٦﴾ “নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে” দ্বারা কি উদ্দেশ্য? [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]
উত্তর: উভয় আয়াতের মধ্যে পরস্পর কোন বিরোধ নেই। প্রথম আয়াত যে ব্যক্তি তাওবা না করে শির্ক অবস্থায় মারা যায় তার সম্পর্কে। কারণ, তাকে ক্ষমা করা হবে না এবং তার ঠিকানা জাহান্নাম। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আন‘আম আয়াত: ৮৮] একই বিষয়ক আয়াত আরও অনেক রয়েছে।
আর দ্বিতীয় আয়াত যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِنِّي لَغَفَّارٞ لِّمَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ صَٰلِحٗا ثُمَّ ٱهۡتَدَىٰ ٨٢﴾ [ طه : ٨٢ ] “আর অবশ্যই আমি তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে অতঃপর সৎ পথে চলতে থাকে।” [সূরা তা-হা, আয়াত: ৮২] এটি তাওবাকারীদের বিষয়ে। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ ٥٣﴾ [ الزمر : ٥٢ ] “বল, ‘হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজদের উপর বাড়াবাড়ি করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। অবশ্যই আল্লাহ সকল পাপ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৫২]
উলামাগণ এ ব্যাপারে একমত যে, এ আয়াতটি তাওবাকারীদের সম্পর্কে। আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ١١٦﴾ [ النساء : ١١٦ ] “এবং এ ছাড়া যাকে চান ক্ষমা করেন” [সূরা নিসা, আয়াত: ১১৬]—এ আয়াতটি যারা শির্ক করা ছাড়া অন্য কোন গুনাহ করে তাওবা করা ছাড়া মারা গিয়েছে তাদের সম্পর্কে। তার বিষয়টি আল্লাহর নিকট সোপর্দ। তিনি যদি চান শাস্তি দেবেন যদি চান ক্ষমা করে দেবেন। যদি শাস্তি দেন তবে সে কাফিরদের মতো চির জাহান্নামী হবে না। যেমনটি বলে খারেজী, মু‘তাযিলা এবং তাদের অনুসারীরা। বরং গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়া ও শাস্তি ভোগ করার পর একদিন অবশ্যই সে জাহান্নাম থেকে বের হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত মুতাওয়াতের হাদীস এবং উম্মতের সালাফদের ইজমা এ কথাটি প্রমাণ করে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহর তা‘আলার বাণী: ﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ ٢﴾ [ الجمعة : ٢ ] “তিনিই উম্মীদের [উম্মী দ্বারা আরবের লোকদেরকে বুঝানো হয়েছে।] মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে” [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২] আয়াতে নিরক্ষর বলা হয়েছে। অথচ নিরক্ষর হওয়া অনগ্রসর ও অনুন্নত জাতির নিদর্শন।
প্রশ্ন: আমরা বিভিন্ন পেপার পত্রিকা অধিকাংশ সময় পড়ি এবং রাস্তায় বিল বোর্ডে নিরক্ষরতার প্রতি ভৎসনা ও তিরস্কার দেখতে পাই এবং নিরক্ষরতাকে পশ্চাদপদতার আলামত বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতকে নিরক্ষর উম্মাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ ٢﴾ [ الجمعة : ٢ ] “তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে।” [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২] আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।
উত্তর: আরব ও আজম থেকে নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ জানে যে, উম্মতে মুহাম্মদী লেখা-পড়া জানত না। এ কারণে তাদের নাম করণ করা হয়েছে উম্ম-নিরক্ষর উম্মত। তাদের মধ্যে যারা পড়া লেখা জানত অন্য জাতীদের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লেখা-পড়া জানতেন না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا كُنتَ تَتۡلُواْ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَٰبٖ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذٗا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٤٨﴾ [ العنكبوت : ٤٨ ] “আর তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৮] আর এটি ছিল তার নবুওয়াত ও রিসালাতের সত্য হওয়ার অপর একটি অকাট্য প্রমাণ। কারণ, তিনি এমন একটি কিতাব তাদের কাছে নিয়ে আসেন যে কিতাবটি আরব অনারব—সমগ্র বিশ্বকে অক্ষম ও স্তম্বিত করে দিয়েছে। আল্লাহ তা’আল এ কিতাবকে ওহী হিসেবে প্রেরণ করেন। জিবরীল আমীন কুরআন নিয়ে তার কাছে অবতরণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র সুন্নাত এবং পূর্বের লোকদের বিষয়ে অনেক জ্ঞানকে তার নিকট অহী হিসেবে প্রেরণ করেন। পূর্বে লোকদের অনেক অজানা ঘটনা এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে এ ধরনের অনেক জ্ঞানই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে জানিয়ে দেন। তিনি মানুষকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করেন জান্নাত জাহান্নাম যারা জান্নাতী হবে এবং যারা জাহান্নামী হবে তাদের সম্পর্কে জানিয়ে দেন। এ গুলো সবই ছিল এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করেন। আর তিনি এ দ্বারা মানুষকে উচ্চ মান-মর্যাদার প্রতি দিক নির্দেশনা দেন এবং তার রিসালাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। এ উম্মতকে নিরক্ষর আখ্যায়িত করা দ্বারা উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদেরকে নিরক্ষর থাকতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বরং উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের সময়ের অবস্থা তুলে ধরা এবং তখনকার সময়ের বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত করা। অন্যথায় নিরক্ষরতা থেকে বের হয়ে লেখা-পড়া করা ও জ্ঞান অর্জন করা বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যাতে নিরক্ষরতা থেকে বের হয়ে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ ٩﴾ [ الزمر : ٩ ] “বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَكُمۡ تَفَسَّحُواْ فِي ٱلۡمَجَٰلِسِ فَٱفۡسَحُواْ يَفۡسَحِ ٱللَّهُ لَكُمۡۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُواْ فَٱنشُزُواْ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [ المجادلة : ١١ ] “হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ ٢٨﴾ [ فاطر : ٢٨ ] “বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له طريقا إلى الجنة “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেয়।” [বর্ণনায় আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪৩; তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪৬] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ يُرِدْ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهُّ فِي الدِّين “আল্লাহ তা‘আলা যখন কারো প্রতি কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দীনের জ্ঞান দান করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৯।] এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাই আব্দুল আযীয বিন বায রহ.।
প্রশ্ন: আমরা বিভিন্ন পেপার পত্রিকা অধিকাংশ সময় পড়ি এবং রাস্তায় বিল বোর্ডে নিরক্ষরতার প্রতি ভৎসনা ও তিরস্কার দেখতে পাই এবং নিরক্ষরতাকে পশ্চাদপদতার আলামত বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ উম্মাতকে নিরক্ষর উম্মাত বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِي بَعَثَ فِي ٱلۡأُمِّيِّۧنَ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ ٢﴾ [ الجمعة : ٢ ] “তিনিই উম্মীদের মাঝে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন তাদের মধ্য থেকে।” [সূরা আল-জুমু‘আ, আয়াত: ২] আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।
উত্তর: আরব ও আজম থেকে নিয়ে সারা বিশ্বের মানুষ জানে যে, উম্মতে মুহাম্মদী লেখা-পড়া জানত না। এ কারণে তাদের নাম করণ করা হয়েছে উম্ম-নিরক্ষর উম্মত। তাদের মধ্যে যারা পড়া লেখা জানত অন্য জাতীদের তুলনায় তাদের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লেখা-পড়া জানতেন না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا كُنتَ تَتۡلُواْ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَٰبٖ وَلَا تَخُطُّهُۥ بِيَمِينِكَۖ إِذٗا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ ٤٨﴾ [ العنكبوت : ٤٨ ] “আর তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব তিলাওয়াত করনি এবং তোমার নিজের হাতে তা লিখনি যে, বাতিলপন্থীরা এতে সন্দেহ পোষণ করবে।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৪৮] আর এটি ছিল তার নবুওয়াত ও রিসালাতের সত্য হওয়ার অপর একটি অকাট্য প্রমাণ। কারণ, তিনি এমন একটি কিতাব তাদের কাছে নিয়ে আসেন যে কিতাবটি আরব অনারব—সমগ্র বিশ্বকে অক্ষম ও স্তম্বিত করে দিয়েছে। আল্লাহ তা’আল এ কিতাবকে ওহী হিসেবে প্রেরণ করেন। জিবরীল আমীন কুরআন নিয়ে তার কাছে অবতরণ করেন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র সুন্নাত এবং পূর্বের লোকদের বিষয়ে অনেক জ্ঞানকে তার নিকট অহী হিসেবে প্রেরণ করেন। পূর্বে লোকদের অনেক অজানা ঘটনা এবং ভবিষ্যতে যা ঘটবে এ ধরনের অনেক জ্ঞানই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে জানিয়ে দেন। তিনি মানুষকে কিয়ামত সম্পর্কে অবহিত করেন জান্নাত জাহান্নাম যারা জান্নাতী হবে এবং যারা জাহান্নামী হবে তাদের সম্পর্কে জানিয়ে দেন। এ গুলো সবই ছিল এমন বিষয় যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা দান করেন। আর তিনি এ দ্বারা মানুষকে উচ্চ মান-মর্যাদার প্রতি দিক নির্দেশনা দেন এবং তার রিসালাতের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেন। এ উম্মতকে নিরক্ষর আখ্যায়িত করা দ্বারা উদ্দেশ্য এ নয় যে, তাদেরকে নিরক্ষর থাকতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বরং উদ্দেশ্য হল, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগমনের সময়ের অবস্থা তুলে ধরা এবং তখনকার সময়ের বাস্তবতা সম্পর্কে অবগত করা। অন্যথায় নিরক্ষরতা থেকে বের হয়ে লেখা-পড়া করা ও জ্ঞান অর্জন করা বিষয়ে কুরআন ও হাদীসে অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে যাতে নিরক্ষরতা থেকে বের হয়ে জ্ঞান অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ هَلۡ يَسۡتَوِي ٱلَّذِينَ يَعۡلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لَا يَعۡلَمُونَۗ ٩﴾ [ الزمر : ٩ ] “বল, ‘যারা জানে আর যারা জানে না তারা কি সমান?’।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৯] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قِيلَ لَكُمۡ تَفَسَّحُواْ فِي ٱلۡمَجَٰلِسِ فَٱفۡسَحُواْ يَفۡسَحِ ٱللَّهُ لَكُمۡۖ وَإِذَا قِيلَ ٱنشُزُواْ فَٱنشُزُواْ يَرۡفَعِ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡعِلۡمَ دَرَجَٰتٖۚ وَٱللَّهُ بِمَا تَعۡمَلُونَ خَبِيرٞ ١١﴾ [ المجادلة : ١١ ] “হে মুমিনগণ, তোমাদেরকে যখন বলা হয়, ‘মজলিসে স্থান করে দাও’, তখন তোমরা স্থান করে দেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য স্থান করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, ‘তোমরা উঠে যাও’, তখন তোমরা উঠে যাবে। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে আল্লাহ তাদেরকে মর্যাদায় সমুন্নত করবেন। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-মুজাদালাহ, আয়াত: ১১] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّمَا يَخۡشَى ٱللَّهَ مِنۡ عِبَادِهِ ٱلۡعُلَمَٰٓؤُاْۗ ٢٨﴾ [ فاطر : ٢٨ ] “বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ২৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له طريقا إلى الجنة “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেয়।” [বর্ণনায় আবূ দাউদ, হাদীস নং ৩৬৪৩; তিরমিযি, হাদীস নং ২৬৪৬] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, مَنْ يُرِدْ اللَّهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهُّ فِي الدِّين “আল্লাহ তা‘আলা যখন কারো প্রতি কল্যাণ কামনা করেন তাকে তিনি দীনের জ্ঞান দান করেন।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৪৩৯।] এ বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য বর্ণনা বিদ্যমান। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাই আব্দুল আযীয বিন বায রহ.।
২০
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাতা-পিতা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবেন সে বিষয়ে আলোচনাআল্লাহর বাণী: ﴿ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামর বাণী: “আমার পিতা ও তোমার পিতা জাহান্নামে”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন ﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫] বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেনে যে, তার মাতা-পিতা জাহান্নামী। প্রশ্ন হলো, তারা কি ফিতরাতের যুগের ছিল না? যারা ফিতরাতের যুগে ছিল তাদের বিষয়ে কুরআন স্পষ্ট করেছেন যে, তারা নাজাত প্রাপ্ত। বিষয়টি স্পষ্ট করুন।
উত্তর: ফিতরাতের যুগের মানুষ নাজাত প্রাপ্ত নাকি ধ্বংসপ্রাপ্ত এ বিষয়টি কুরআন স্পষ্ট করেননি। আল্লাহ তা‘আলা শুধু এ কথা বলেছেন, ﴿ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥ ﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫]
আল্লাহ তা‘আলার স্বীয় ইনসাফের কারণে শুধু রাসূল প্রেরণের পরই কাউকে শাস্তি দেবেন। ফলে যাদের নিকট দাও‘আত পৌঁছে নাই তাদের ওপর দলীল প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া তিনি তাদের শাস্তি দেবেন না। আর দলীল প্রতিষ্ঠা কখনো কিয়ামতের দিন হবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে ফিতরাতের যুগের লোকদের কিয়ামদের দিন ঈমানের দাও‘আত দেয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। যারা সেদিনের পরীক্ষার উত্তীর্ণ হবে ঈমান গ্রহণ করবে এবং দাওয়া সাড়া দেবে তারা নাজাত পাবে আর যারা সেদিন দাও‘আত গ্রহণ করবে না এবং নাফরমানী করবে তারা জাহান্নামে যাবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন এক লোক বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমারা পিতা কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, « فِى النَّارِ » তোমার পিতা জাহান্নামী। এ কথা শোনে লোকটির চেহারার মলিনতা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, « إِنَّ أَبِى وَأَبَاكَ فِى النَّارِ » “আমার এবং তোমার পিতা জাহান্নামী।” [বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে হাদীস নং ৫২১।] এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলেছিলেন। তাকে এ কথা জানিয়ে দিলেন যে, তোমার পিতা একাই জাহান্নামী নয় এবং বিষয়টি তোমার পিতার জন্য খাস নয়। বরং আমার পিতারও একই হুকুম। হতে পারে এদের দুই জন অর্থাৎ লোকটির পিতা ও রাসূলের পিতা উভয়ের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল পৌঁছেছে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « إِنَّ أَبِى وَأَبَاكَ فِى النَّارِ » “আমার এবং তোমার পিতা জাহান্নামী।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেনেই কথাটি বলেছেন। কারণ, তিনি তার নিজের পক্ষ থেকে কখনো কথা বলেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ ١ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ ٢ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ النجم : ١، ٤ ] “কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১, ৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বীয় পিতা সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় যে রাসূলের পিতা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের নিকট দলীল পৌঁছেছে। আর তারা ছিল ঐ সব কুরাইশদের দলভুক্ত যারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দীন সম্পর্কে অবগত। কারণ, লুহাই ইবন আমর আল-খাযা‘ঈর মূর্তি পূজা আবিষ্কার করার পূর্ব পর্যন্ত কুরাইশরা মিল্লাতে ইবরাহীমির ওপর ছিল। কিন্তু যখন সে মক্কার গভর্নর হল এবং তখন তার আবিষ্কৃত নতুন বিষয়টি অর্থাৎ মূর্তি পূজা মক্কায় ছড়িয়ে পড়ল। এবং সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলো ইবাদতের দাওয়াত দেওয়ার কাজটি মক্কার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। তখন রাসূলের পিতা আব্দুল্লাহর নিকট এ কথা পৌঁছেছিল যে, কুরাইশদের মূর্তি পূজা করা এবং তাদের মধ্যে মূর্তিপূজার যে প্রচলন আরম্ভ হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাতিল। তা সত্ত্বেও তিনি তাদের বাতিল ইলাহদের অনুসরণ করেন। ফলে তার ওপর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, «رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ عَامِرٍ الْخُزَاعِىَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِى النَّارِ وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ سَيَّبَ السُّيُوبَ » . “আমি আমর ইবন লুহাইকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার নাড়ি-বুড়িকে টেনে হেঁচড়ে বের করা হচ্ছে। কারণ, সেই মক্কায় সর্ব প্রথম শির্কের প্রচলনের কারণ হয় এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের পরিবর্তন করে। অপর একটি হাদীসে এ বিষয়ে বর্ণিত আছে— . استأذن أن يستغفر لأمه فلم يؤذن، فاستأذن أن يزورها فأذن له “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে, তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপর তিনি যিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং]
এ কথা বলারও অবকাশ রয়েছে যে, দুনিয়াতে জাহিলিয়্যাতের যুগের মানুষের সাথে কাফেরদের মতোই আচরণ করা হবে। ফলে তাদের জন্য দো‘য়া করা হবে না, ক্ষমা চাওয়া হবে না। কারণ, তারা কাফেরদের মতোই কাজ-কর্ম করে থাকে। ফলে তাদের সাথে সেই আচরণ করা হবে যে আচরণ কাফেরদের সাথে করা হয়। আর আখিরাতে তাদের বিষয়টি আল্লাহর হাতে সোপর্দ।
আর দুনিয়াতে যার ক্ষেত্রে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় নাই তাকে কিয়ামতের দিন ঈমান পেশ করে পরীক্ষা করা ছাড়া শাস্তি দেওয়া হবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫] সুতরাং যারা ফিতরাতের যুগে বসবাস করছিল এবং তাদের নিকট তাওহীদের দা‘ওয়াত পৌঁছেনি, কিয়ামতের দিন তাওহীদের প্রতি দা‘ওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা হবে। যদি তারা দা‘ওয়াত গ্রহণ করে তারা জান্নাতে যাবে আর যদি গ্রহণ না করে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
অনুরূপভাবে অনুভূতিহীন বুড়ো, পাগল এবং তাদের মতো আরও যারা রয়েছে যেমন কাফেরদের বাচ্চা যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা গেছে— যাদের কাছে তাওহীদের দা‘ওয়াত পৌঁছেনি। কারণ, হাদীসে বর্ণিত— سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَرَارِيِّ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কাফেরদের বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তারা কি আমল করত সে সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন।”
কাফেরদের বাচ্চাদের কিয়ামতের দিন ফিতরাতের যুগের মানুষদের মতো পরীক্ষা করা হবে। যদি তারা সঠিক উত্তর দেয়, তবে তারা নাজাত পাবে অন্যথা তারা ধ্বংস-শীলদের সাথে হবে।
এক জামা‘আত আহলে ইলম বলেন, কাফেরদের বাচ্চারা নাজাত প্রাপ্ত—জান্নাতী। কারণ, তারা ফিতরাতের ওপর মারা গিয়েছে। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জান্নাতে প্রবেশ করেন তখন মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের বাচ্চাদের জান্নাতের বাগানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সাথে দেখেছেন।
দলীলের স্পষ্টতার কারণে এ মতামতটি অধিক শক্তিশালী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতৈক্যে মুসলিমদের বাচ্চারা অবশ্যই জান্নাতী হবে। আল্লাহ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত ও মহা প্রজ্ঞাবান।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন ﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫] বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেনে যে, তার মাতা-পিতা জাহান্নামী। প্রশ্ন হলো, তারা কি ফিতরাতের যুগের ছিল না? যারা ফিতরাতের যুগে ছিল তাদের বিষয়ে কুরআন স্পষ্ট করেছেন যে, তারা নাজাত প্রাপ্ত। বিষয়টি স্পষ্ট করুন।
উত্তর: ফিতরাতের যুগের মানুষ নাজাত প্রাপ্ত নাকি ধ্বংসপ্রাপ্ত এ বিষয়টি কুরআন স্পষ্ট করেননি। আল্লাহ তা‘আলা শুধু এ কথা বলেছেন, ﴿ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥ ﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫]
আল্লাহ তা‘আলার স্বীয় ইনসাফের কারণে শুধু রাসূল প্রেরণের পরই কাউকে শাস্তি দেবেন। ফলে যাদের নিকট দাও‘আত পৌঁছে নাই তাদের ওপর দলীল প্রতিষ্ঠা করা ছাড়া তিনি তাদের শাস্তি দেবেন না। আর দলীল প্রতিষ্ঠা কখনো কিয়ামতের দিন হবে। যেমন হাদীসে বর্ণিত আছে ফিতরাতের যুগের লোকদের কিয়ামদের দিন ঈমানের দাও‘আত দেয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। যারা সেদিনের পরীক্ষার উত্তীর্ণ হবে ঈমান গ্রহণ করবে এবং দাওয়া সাড়া দেবে তারা নাজাত পাবে আর যারা সেদিন দাও‘আত গ্রহণ করবে না এবং নাফরমানী করবে তারা জাহান্নামে যাবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত, তিনি বলেন এক লোক বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমারা পিতা কোথায়? উত্তরে তিনি বলেন, « فِى النَّارِ » তোমার পিতা জাহান্নামী। এ কথা শোনে লোকটির চেহারার মলিনতা দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে বললেন, « إِنَّ أَبِى وَأَبَاكَ فِى النَّارِ » “আমার এবং তোমার পিতা জাহান্নামী।” [বর্ণনায় ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে হাদীস নং ৫২১।] এ কথাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলেছিলেন। তাকে এ কথা জানিয়ে দিলেন যে, তোমার পিতা একাই জাহান্নামী নয় এবং বিষয়টি তোমার পিতার জন্য খাস নয়। বরং আমার পিতারও একই হুকুম। হতে পারে এদের দুই জন অর্থাৎ লোকটির পিতা ও রাসূলের পিতা উভয়ের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে দলীল পৌঁছেছে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « إِنَّ أَبِى وَأَبَاكَ فِى النَّارِ » “আমার এবং তোমার পিতা জাহান্নামী।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জেনেই কথাটি বলেছেন। কারণ, তিনি তার নিজের পক্ষ থেকে কখনো কথা বলেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلنَّجۡمِ إِذَا هَوَىٰ ١ مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمۡ وَمَا غَوَىٰ ٢ وَمَا يَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰٓ ٣ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡيٞ يُوحَىٰ ٤﴾ [ النجم : ١، ٤ ] “কসম নক্ষত্রের, যখন তা অস্ত যায়। তাতো কেবল ওহী, যা তার প্রতি ওহীরূপে প্রেরণ করা হয়। আর সে মনগড়া কথা বলে না। তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হয়নি এবং বিপথগামীও হয়নি।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ১, ৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্বীয় পিতা সম্পর্কে যা বলেছেন, তাতে প্রমাণিত হয় যে রাসূলের পিতা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের নিকট দলীল পৌঁছেছে। আর তারা ছিল ঐ সব কুরাইশদের দলভুক্ত যারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দীন সম্পর্কে অবগত। কারণ, লুহাই ইবন আমর আল-খাযা‘ঈর মূর্তি পূজা আবিষ্কার করার পূর্ব পর্যন্ত কুরাইশরা মিল্লাতে ইবরাহীমির ওপর ছিল। কিন্তু যখন সে মক্কার গভর্নর হল এবং তখন তার আবিষ্কৃত নতুন বিষয়টি অর্থাৎ মূর্তি পূজা মক্কায় ছড়িয়ে পড়ল। এবং সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে মূর্তিগুলো ইবাদতের দাওয়াত দেওয়ার কাজটি মক্কার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল। তখন রাসূলের পিতা আব্দুল্লাহর নিকট এ কথা পৌঁছেছিল যে, কুরাইশদের মূর্তি পূজা করা এবং তাদের মধ্যে মূর্তিপূজার যে প্রচলন আরম্ভ হয়েছে তা সম্পূর্ণ বাতিল। তা সত্ত্বেও তিনি তাদের বাতিল ইলাহদের অনুসরণ করেন। ফলে তার ওপর হুজ্জত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, «رَأَيْتُ عَمْرَو بْنَ عَامِرٍ الْخُزَاعِىَّ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِى النَّارِ وَكَانَ أَوَّلَ مَنْ سَيَّبَ السُّيُوبَ » . “আমি আমর ইবন লুহাইকে দেখেছি জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার নাড়ি-বুড়িকে টেনে হেঁচড়ে বের করা হচ্ছে। কারণ, সেই মক্কায় সর্ব প্রথম শির্কের প্রচলনের কারণ হয় এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের পরিবর্তন করে। অপর একটি হাদীসে এ বিষয়ে বর্ণিত আছে— . استأذن أن يستغفر لأمه فلم يؤذن، فاستأذن أن يزورها فأذن له “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি চাইলে, তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপর তিনি যিয়ারত করার অনুমতি চাইলে আল্লাহ তাকে যিয়ারতের অনুমতি দেওয়া হয়।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং]
এ কথা বলারও অবকাশ রয়েছে যে, দুনিয়াতে জাহিলিয়্যাতের যুগের মানুষের সাথে কাফেরদের মতোই আচরণ করা হবে। ফলে তাদের জন্য দো‘য়া করা হবে না, ক্ষমা চাওয়া হবে না। কারণ, তারা কাফেরদের মতোই কাজ-কর্ম করে থাকে। ফলে তাদের সাথে সেই আচরণ করা হবে যে আচরণ কাফেরদের সাথে করা হয়। আর আখিরাতে তাদের বিষয়টি আল্লাহর হাতে সোপর্দ।
আর দুনিয়াতে যার ক্ষেত্রে দলীল প্রতিষ্ঠিত হয় নাই তাকে কিয়ামতের দিন ঈমান পেশ করে পরীক্ষা করা ছাড়া শাস্তি দেওয়া হবে না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبۡعَثَ رَسُولٗا ١٥﴾ [ الاسراء : ١٥ ] “আর রাসূল প্রেরণ না করা পর্যন্ত আমি আযাবদাতা নই।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ১৫] সুতরাং যারা ফিতরাতের যুগে বসবাস করছিল এবং তাদের নিকট তাওহীদের দা‘ওয়াত পৌঁছেনি, কিয়ামতের দিন তাওহীদের প্রতি দা‘ওয়াত দেওয়ার মাধ্যমে তাদের পরীক্ষা করা হবে। যদি তারা দা‘ওয়াত গ্রহণ করে তারা জান্নাতে যাবে আর যদি গ্রহণ না করে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
অনুরূপভাবে অনুভূতিহীন বুড়ো, পাগল এবং তাদের মতো আরও যারা রয়েছে যেমন কাফেরদের বাচ্চা যারা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পূর্বে মারা গেছে— যাদের কাছে তাওহীদের দা‘ওয়াত পৌঁছেনি। কারণ, হাদীসে বর্ণিত— سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَرَارِيِّ الْمُشْرِكِينَ فَقَالَ اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন কাফেরদের বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়, তখন তিনি উত্তরে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তারা কি আমল করত সে সম্পর্কে অধিক অবগত আছেন।”
কাফেরদের বাচ্চাদের কিয়ামতের দিন ফিতরাতের যুগের মানুষদের মতো পরীক্ষা করা হবে। যদি তারা সঠিক উত্তর দেয়, তবে তারা নাজাত পাবে অন্যথা তারা ধ্বংস-শীলদের সাথে হবে।
এক জামা‘আত আহলে ইলম বলেন, কাফেরদের বাচ্চারা নাজাত প্রাপ্ত—জান্নাতী। কারণ, তারা ফিতরাতের ওপর মারা গিয়েছে। এ ছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জান্নাতে প্রবেশ করেন তখন মুসলিম ও অমুসলিম উভয়ের বাচ্চাদের জান্নাতের বাগানে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সাথে দেখেছেন।
দলীলের স্পষ্টতার কারণে এ মতামতটি অধিক শক্তিশালী। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মতৈক্যে মুসলিমদের বাচ্চারা অবশ্যই জান্নাতী হবে। আল্লাহ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত ও মহা প্রজ্ঞাবান।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহর বাণী: ﴿وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ ٢٨٤﴾ “আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদী থেকে তাদের অন্তরের গুনাহের উদ্রেক ও ইচ্ছাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন...।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ٢٨٤﴾ [ البقرة : ٢٨٤ ] এর অর্থ কি? আল্লাহর বাণীর মধ্যে এবং ঐ হাদীস যাতে বলা হয়েছে— إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ “আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদী থেকে তাদের অন্তরের গুনাহের উদ্রেক ও ইচ্ছাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না তা মুখে উচ্চারণ বা বাস্তবায়ন না করে।” উভয়ের মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: এ ﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤﴾ [ البقرة : ٢٨٤ ] আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে জমিনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৪] আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখন অনেক সাহাবীর কাছে বিষয়টি কঠিন ও দু:সাধ্য মনে হলো। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলো এবং বলল, এটি এমন একটি বিষয় যা পালন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বলেছিল আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম তোমরাও কি তাদের মতো বলতে চাও? তোমরা বরং এ কথা বল, আমরা শুনলাম ও মানলাম। এ কথা শোনে তারা বলল, আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য করলাম। তারা যখন এ কথা বলল এবং তাদের জবান এ কথার প্রতি অনুগত হলো, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াত নাযিল করে বলেন, ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ٢٨٦﴾ [ البقرة : ٢٨٥، ٢٨٦ ] “রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫, ২৮৬] আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি দয়া ও ক্ষমা করলেন এবং আয়াতের প্রতিপাদ্য মর্মটি রহিত করে দিলেন। কর্ম সম্পাদন ছাড়া অথবা কোন কর্ম বার বার করা ছাড়া অথবা অটুট থাকা ছাড়া কোন মানুষকে পাকড়াও করা হবে না। মানুষের অন্তর বা নফসের মধ্যে গুনাহের যে উদ্রেক বা চিন্তা আসে তা ক্ষমা। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ “আল্লাহ তা’আলা উম্মাতে মুহাম্মদীর অন্তরে গুনাহের যে উদ্রেক ও ইচ্ছা হয়, তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না তা মুখে উচ্চারণ বা বাস্তবায়ন না করে।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং 5269]
আলহামদু লিল্লাহ প্রশ্ন দূর হয়ে গেছে। একজন তার আমল, মুখের কথা বা প্রত্যয় ছাড়া পাকড়াও করা হবে না। অথবা তার অন্তরে বার বার এসে স্থায়ী হওয়া গুনাহ যেমন, লৌকিকতা, মুনাফেকী, অহংকার ইত্যাদি গুনাহ ছাড়া সে আল্লাহর দরবারে পাকড়া হবে না।
আর যে সব সন্দেহ সংশয় মানুষের অন্তরে মাঝে মধ্যে উদ্রেক হয় এবং ঈমান ও বিশ্বাসের কারণে তা চলে যায় তাতে কোন ক্ষতি নেই। এগুলো শয়তানেরই চক্রান্ত ও কু-মন্ত্রণা। এ কারণেই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে তিনি বললেন,— جاء ناس من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم فقالوا : إنا نجد في أنفسنا ما نتعاظم أن نتكلم به قال قد وجدتموه قالوا نعم قال ذلك صريح الإيمان “কতক লোক রাসূলের দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অন্তরে এমন এমন কঠিন কথার উদ্রেক হয়, তা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আসমান আমাদের ওপর ভেঙে পড়া অনেক সহজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি সু-স্পষ্ট ঈমান।” [নাসাঈ হাদীস নং 15000]
এটি শয়তানেরই কু-মন্ত্রণা, শয়তান যখন একজন মু’মিনের মধ্যে সততা ইখলাস বিশুদ্ধ ঈমান ও আখিরাতের প্রতি আগ্রহী দেখে তখন তাকে বিভিন্নভাবে কু-মন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তার অন্তরে বিভিন্ন খারাপ কথা ডেলে দেয়। তারপর যখন সে মুজাহাদা সংগ্রাম এবং শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে তখন শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে নিরাপদ থাকে। এ কারণেই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে এসেছে—রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق الله ؟ فمن وجد من ذلك شيئا فليقل آمنت بالله “মানুষ সর্বদা প্রশ্ন করতে থাকে এমনকি এক পর্যায়ে সে বলে, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন কারো অন্তরে এ ধরণের প্রশ্ন আসবে সে যে অনতি বিলম্বে এ কথা বলে, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করলাম” অপর বর্ণনায় এসেছে এ কথাও বলবে—“বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম। সে যেন তা থেকে ফিরে আসে এবং তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে।” এ ধরণের কু-মন্ত্রণা যা আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ ٢٨٤﴾ [ البقرة : ٢٨٤ ] এর অর্থ কি? আল্লাহর বাণীর মধ্যে এবং ঐ হাদীস যাতে বলা হয়েছে— إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ “আল্লাহ তা’আলা উম্মতে মুহাম্মদী থেকে তাদের অন্তরের গুনাহের উদ্রেক ও ইচ্ছাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না তা মুখে উচ্চারণ বা বাস্তবায়ন না করে।” উভয়ের মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: এ ﴿لِّلَّهِ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَإِن تُبۡدُواْ مَا فِيٓ أَنفُسِكُمۡ أَوۡ تُخۡفُوهُ يُحَاسِبۡكُم بِهِ ٱللَّهُۖ فَيَغۡفِرُ لِمَن يَشَآءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَآءُۗ وَٱللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٌ ٢٨٤﴾ [ البقرة : ٢٨٤ ] আল্লাহর জন্যই যা রয়েছে আসমানসমূহে এবং যা রয়েছে জমিনে। আর তোমরা যদি প্রকাশ কর যা তোমাদের অন্তরে রয়েছে অথবা গোপন কর, আল্লাহ সে বিষয়ে তোমাদের হিসাব নেবেন। অতঃপর তিনি যাকে চান ক্ষমা করবেন, আর যাকে চান আযাব দেবেন। আর আল্লাহ সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৪] আয়াতটি যখন নাযিল হয় তখন অনেক সাহাবীর কাছে বিষয়টি কঠিন ও দু:সাধ্য মনে হলো। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এলো এবং বলল, এটি এমন একটি বিষয় যা পালন করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা বলেছিল আমরা শুনলাম এবং অমান্য করলাম তোমরাও কি তাদের মতো বলতে চাও? তোমরা বরং এ কথা বল, আমরা শুনলাম ও মানলাম। এ কথা শোনে তারা বলল, আমরা শুনলাম এবং আনুগত্য করলাম। তারা যখন এ কথা বলল এবং তাদের জবান এ কথার প্রতি অনুগত হলো, আল্লাহ তা‘আলা পরবর্তী আয়াত নাযিল করে বলেন, ﴿ءَامَنَ ٱلرَّسُولُ بِمَآ أُنزِلَ إِلَيۡهِ مِن رَّبِّهِۦ وَٱلۡمُؤۡمِنُونَۚ كُلٌّ ءَامَنَ بِٱللَّهِ وَمَلَٰٓئِكَتِهِۦ وَكُتُبِهِۦ وَرُسُلِهِۦ لَا نُفَرِّقُ بَيۡنَ أَحَدٖ مِّن رُّسُلِهِۦۚ وَقَالُواْ سَمِعۡنَا وَأَطَعۡنَاۖ غُفۡرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيۡكَ ٱلۡمَصِيرُ ٢٨٥ لَا يُكَلِّفُ ٱللَّهُ نَفۡسًا إِلَّا وُسۡعَهَاۚ ٢٨٦﴾ [ البقرة : ٢٨٥، ٢٨٦ ] “রাসূল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসূলগণের উপর, আমরা তাঁর রাসূলগণের কারও মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল। আল্লাহ কোন ব্যক্তিকে তার সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব দেন না।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৮৫, ২৮৬] আল্লাহ তা‘আলা তাদের প্রতি দয়া ও ক্ষমা করলেন এবং আয়াতের প্রতিপাদ্য মর্মটি রহিত করে দিলেন। কর্ম সম্পাদন ছাড়া অথবা কোন কর্ম বার বার করা ছাড়া অথবা অটুট থাকা ছাড়া কোন মানুষকে পাকড়াও করা হবে না। মানুষের অন্তর বা নফসের মধ্যে গুনাহের যে উদ্রেক বা চিন্তা আসে তা ক্ষমা। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, إِنَّ اللَّهَ تَجَاوَزَ عَنْ أُمَّتِي مَا حَدَّثَتْ بِهِ أَنْفُسَهَا مَا لَمْ تَعْمَلْ أَوْ تَتَكَلَّمْ “আল্লাহ তা’আলা উম্মাতে মুহাম্মদীর অন্তরে গুনাহের যে উদ্রেক ও ইচ্ছা হয়, তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন যতক্ষণ না তা মুখে উচ্চারণ বা বাস্তবায়ন না করে।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং 5269]
আলহামদু লিল্লাহ প্রশ্ন দূর হয়ে গেছে। একজন তার আমল, মুখের কথা বা প্রত্যয় ছাড়া পাকড়াও করা হবে না। অথবা তার অন্তরে বার বার এসে স্থায়ী হওয়া গুনাহ যেমন, লৌকিকতা, মুনাফেকী, অহংকার ইত্যাদি গুনাহ ছাড়া সে আল্লাহর দরবারে পাকড়া হবে না।
আর যে সব সন্দেহ সংশয় মানুষের অন্তরে মাঝে মধ্যে উদ্রেক হয় এবং ঈমান ও বিশ্বাসের কারণে তা চলে যায় তাতে কোন ক্ষতি নেই। এগুলো শয়তানেরই চক্রান্ত ও কু-মন্ত্রণা। এ কারণেই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে তিনি বললেন,— جاء ناس من أصحاب النبي صلى الله عليه و سلم فقالوا : إنا نجد في أنفسنا ما نتعاظم أن نتكلم به قال قد وجدتموه قالوا نعم قال ذلك صريح الإيمان “কতক লোক রাসূলের দরবারে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের অন্তরে এমন এমন কঠিন কথার উদ্রেক হয়, তা মুখে উচ্চারণ করার চেয়ে আসমান আমাদের ওপর ভেঙে পড়া অনেক সহজ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি সু-স্পষ্ট ঈমান।” [নাসাঈ হাদীস নং 15000]
এটি শয়তানেরই কু-মন্ত্রণা, শয়তান যখন একজন মু’মিনের মধ্যে সততা ইখলাস বিশুদ্ধ ঈমান ও আখিরাতের প্রতি আগ্রহী দেখে তখন তাকে বিভিন্নভাবে কু-মন্ত্রণা দিয়ে থাকে। তার অন্তরে বিভিন্ন খারাপ কথা ডেলে দেয়। তারপর যখন সে মুজাহাদা সংগ্রাম এবং শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করে তখন শয়তানের অনিষ্ঠতা থেকে নিরাপদ থাকে। এ কারণেই আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত অপর হাদীসে এসেছে—রাসূলু্ল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لا يزال الناس يتساءلون حتى يقال هذا خلق الله الخلق فمن خلق الله ؟ فمن وجد من ذلك شيئا فليقل آمنت بالله “মানুষ সর্বদা প্রশ্ন করতে থাকে এমনকি এক পর্যায়ে সে বলে, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহকে কে সৃষ্টি করেছে? যখন কারো অন্তরে এ ধরণের প্রশ্ন আসবে সে যে অনতি বিলম্বে এ কথা বলে, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি বিশ্বাস করলাম” অপর বর্ণনায় এসেছে এ কথাও বলবে—“বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করলাম। সে যেন তা থেকে ফিরে আসে এবং তার প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে।” এ ধরণের কু-মন্ত্রণা যা আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী বলেন, সূরা আল-কাহ্ফে মূসা আলাইহিস সালামের সাথে একজন নেককার লোকের ঘটনায় লোকটি বলেন— ﴿أَمَّا ٱلسَّفِينَةُ فَكَانَتۡ لِمَسَٰكِينَ يَعۡمَلُونَ فِي ٱلۡبَحۡرِ فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا وَكَانَ وَرَآءَهُم مَّلِكٞ يَأۡخُذُ كُلَّ سَفِينَةٍ غَصۡبٗا ٧٩ وَأَمَّا ٱلۡغُلَٰمُ فَكَانَ أَبَوَاهُ مُؤۡمِنَيۡنِ فَخَشِينَآ أَن يُرۡهِقَهُمَا طُغۡيَٰنٗا وَكُفۡرٗا ٨٠ فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا خَيۡرٗا مِّنۡهُ زَكَوٰةٗ وَأَقۡرَبَ رُحۡمٗا ٨١ وَأَمَّا ٱلۡجِدَارُ فَكَانَ لِغُلَٰمَيۡنِ يَتِيمَيۡنِ فِي ٱلۡمَدِينَةِ وَكَانَ تَحۡتَهُۥ كَنزٞ لَّهُمَا وَكَانَ أَبُوهُمَا صَٰلِحٗا فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا وَيَسۡتَخۡرِجَا كَنزَهُمَا رَحۡمَةٗ مِّن رَّبِّكَۚ وَمَا فَعَلۡتُهُۥ عَنۡ أَمۡرِيۚ ذَٰلِكَ تَأۡوِيلُ مَا لَمۡ تَسۡطِع عَّلَيۡهِ صَبۡرٗا ٨٢﴾ [ الكهف : ٧٩، ٨٢ ] “নৌকাটির বিষয় হল, তা ছিল কিছু দরিদ্র লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত। আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি কারণ তাদের পেছনে ছিল এক রাজা, যে নৌকাগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিচ্ছিল’। ‘আর বালকটির বিষয় হল, তার পিতা-মাতা ছিল মুমিন। অতঃপর আমি আশংকা [. তাঁর আশংকা নিছক ধারণা ভিত্তিক ছিল না, বরং আল্লাহর পক্ষ থেকে তিনি নিশ্চিত জানতে পেরেছিলেন।] করলাম যে, সে সীমালংঘন ও কুফরী দ্বারা তাদেরকে অতিষ্ঠ করে তুলবে’। ‘তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ। ‘আর প্রাচীরটির বিষয় হল, তা ছিল শহরের দু’জন ইয়াতীম বালকের এবং তার নিচে ছিল তাদের গুপ্তধন। আর তাদের পিতা ছিল সৎকর্মপরায়ণ। তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে। এ সবই আপনার রবের রহমত স্বরূপ। আমি নিজ থেকে তা করিনি। এ হলো সে বিষয়ের ব্যাখ্যা, যে সম্পর্কে আপনি ধৈর্য ধারণ করতে পারেননি।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৭৯, ৮২]
আয়াতে দেখা যাচ্ছে, সে নৌকাটির নিকটে গিয়ে বলল, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর মু’মিন দুই মাতা-পিতার উল্লেখের সময় বলল, فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا ‘‘তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।” এবং প্রাসাদের মালিক দুই ইয়াতীমের আলোচনার সময় বলল, فَأَرَادَ رَبُّكَ ‘‘তাই আপনার রব চাইলেন” এ তিনটি অভিব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য কি? আল্লাহর ইচ্ছার সাথে এ নেককার লোকটিরও কি ইচ্ছা রয়েছে?
উত্তর: সহীহ কথা হলো, লোকটি মূসা আলাইহিস সালামের সাথী খিযির আলাইহিস সালাম। বিশুদ্ধ মতানুসারে তিনি কেবল একজন নেককার লোক নয় তিনি একজন নবী। এ কারণেই তিনি বলেন, وَمَا فَعَلۡتُهُۥ عَنۡ أَمۡرِيۚ ‘‘আমি নিজ থেকে তা করিনি” অর্থাৎ, বরং আল্লাহর নির্দেশেই আমি কাজটি করি। একই ঘটনায় বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত যে, তিনি মূসা আলাইহিস সালামকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এমন ইলম শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানেন তা আমি জানি না। আর আল্লাহ আমাকে এমন ইলম শিক্ষা দিয়েছেন যা আমি জানি তবে আপনি জানেন না। এ কথা দ্বারা প্রমাণিত হয়, নিশ্চয় তিনি একজন নবী ছিলেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا “তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে।” আর একজন রাসূল যেহেতু তার কাছে অহী আসে, সে অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে অবগত থাকেন।
আর নৌকার কাহিনীতে বিষয়টি সে তার নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি।” এর কারণ—আল্লাহই ভালো জানেন—ভালো কর্মগুলোই আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়। আর এখানে নৌকাটি নষ্ট করা স্পষ্টত কোন ভালো কর্ম নয়। তাই আল্লাহর সম্মানার্থে কর্মটিকে তিনি নিজের দিকে নিসবত-সম্বোধন করেন। ফলে তিনি বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি”এ খারাপ কর্মটির উদ্দেশ্য হলো, নৌকাটি নিরাপদ থাকা যাতে যালিম বাদশা জোর করে নিয়ে না যায়। কারণ, অত্যাচারী বাদশা সব ভালো, দোষ-ত্রুটি মুক্ত ও নিরাপদ নৌকাগুলো জোর করে নিয়ে যায়। তাই খিযির আলাইহিস সালাম যালিম বাদশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ভালো নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দেয়ার ইচ্ছা করলেন। যখন সে দেখতে পাবে নৌকাটি ত্রুটিযুক্ত ও ফাঁটা তখন যালিম বাদশার পাকড়াও, যুল্ম ও অনিষ্ঠতা থেকে নৌকাটি থেকে বেচে যাবে। যেহেতু বাহ্যিক বিষয়টি আল্লাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তাই তিনি কর্মটিকে তার নিজের দিকেই নিসবত-সম্বোধন করেন এবং বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর মু’মিন মাতা-পিতার উল্লেখের সময় বলেন, فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا ‘‘তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।” কর্মটি ভালো হওয়ার কারণে তিনি তার নিজের দিকে সম্বোধন করেন। কারণ, তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট। বহুবচন শব্দ ব্যবহার করার কারণ, তিনি নবী। আর নবীরা সাধারণ মানুষ নয় তারা মহান তাই তাদের ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহার করাই হলো শ্রেয়। এ ছাড়াও কর্মটি আল্লাহর আদেশে এবং তার দিক-নির্দেশনায় হয়েছে। ফলে বহুবচন ব্যবহার করে আল্লাহর দিকে কর্মের সম্বোধন করাটাই ছিল উত্তম। এ ছাড়াও কর্মটি ভালো, কল্যাণকর ও উপকারী। এ ধরনের কর্মের সম্বোধন আল্লাহর দিকেই হয়ে থাকে। ইয়াতীম বালক দু’টির বিষয়টিতে ছিল তাদের সংশোধন, উপকার ও মহা কল্যাণ। এ কারণেই তিনি বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ “তাই তোমার রব চাইলেন যে,” এখানে কল্যাণকে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। এটি সূরা আল-জ্বীনের মধ্যে আল্লাহর অপর একটি বাণীর মতো। যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَأَنَّا لَا نَدۡرِيٓ أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ أَمۡ أَرَادَ بِهِمۡ رَبُّهُمۡ رَشَدٗا ١٠﴾ [ الجن : ١٠ ] ‘‘আর নিশ্চয় আমরা জানি না, জমিনে যারা রয়েছে তাদের জন্য অকল্যাণ চাওয়া হয়েছে, নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন।” [সূরা আল-জীন, আয়াত: ১0] এ আয়াতে খারাপ কর্মটিকে আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়নি। কিন্তু যখন হিদায়াতের আলোচনা আসল, তারা বলল, أَمۡ أَرَادَ بِهِمۡ رَبُّهُمۡ رَشَدٗا “নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন।” হিদায়াত কল্যাণকর হওয়ার কারণে হিদায়েকে তারা আল্লাহর দিকে সম্বোধন করলেন। খারাপ কর্ম তার প্রতি সম্বোধন করা যাবে না। যেমন, বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, والشر ليس إليك “খারাপ কর্ম তোমার দিকে নয়।” এটি একটি ভালো শিষ্টাচার এবং মু’মিন জ্বীনদের আদব। আর খিযির আলাইহিস সালাম খারাপ কর্ম বিষয়ের সম্বোধনের শিষ্টাচার থেকে তিনি বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর দুই ইয়াতীমের বিষয়ে বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ “তাই তোমার রব চাইলেন” এ গুলো সবই আল্লাহ সুবহানাহুর সাথে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ
আয়াতে দেখা যাচ্ছে, সে নৌকাটির নিকটে গিয়ে বলল, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর মু’মিন দুই মাতা-পিতার উল্লেখের সময় বলল, فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا ‘‘তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।” এবং প্রাসাদের মালিক দুই ইয়াতীমের আলোচনার সময় বলল, فَأَرَادَ رَبُّكَ ‘‘তাই আপনার রব চাইলেন” এ তিনটি অভিব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য কি? আল্লাহর ইচ্ছার সাথে এ নেককার লোকটিরও কি ইচ্ছা রয়েছে?
উত্তর: সহীহ কথা হলো, লোকটি মূসা আলাইহিস সালামের সাথী খিযির আলাইহিস সালাম। বিশুদ্ধ মতানুসারে তিনি কেবল একজন নেককার লোক নয় তিনি একজন নবী। এ কারণেই তিনি বলেন, وَمَا فَعَلۡتُهُۥ عَنۡ أَمۡرِيۚ ‘‘আমি নিজ থেকে তা করিনি” অর্থাৎ, বরং আল্লাহর নির্দেশেই আমি কাজটি করি। একই ঘটনায় বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত যে, তিনি মূসা আলাইহিস সালামকে বলেন, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে এমন ইলম শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানেন তা আমি জানি না। আর আল্লাহ আমাকে এমন ইলম শিক্ষা দিয়েছেন যা আমি জানি তবে আপনি জানেন না। এ কথা দ্বারা প্রমাণিত হয়, নিশ্চয় তিনি একজন নবী ছিলেন। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ أَن يَبۡلُغَآ أَشُدَّهُمَا “তাই আপনার রব চাইলেন যে, তারা দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে তাদের গুপ্তধন বের করে নেবে।” আর একজন রাসূল যেহেতু তার কাছে অহী আসে, সে অবশ্যই আল্লাহর ইচ্ছা সম্পর্কে অবগত থাকেন।
আর নৌকার কাহিনীতে বিষয়টি সে তার নিজের দিকে সম্বোধন করে বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি।” এর কারণ—আল্লাহই ভালো জানেন—ভালো কর্মগুলোই আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়। আর এখানে নৌকাটি নষ্ট করা স্পষ্টত কোন ভালো কর্ম নয়। তাই আল্লাহর সম্মানার্থে কর্মটিকে তিনি নিজের দিকে নিসবত-সম্বোধন করেন। ফলে তিনি বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি”এ খারাপ কর্মটির উদ্দেশ্য হলো, নৌকাটি নিরাপদ থাকা যাতে যালিম বাদশা জোর করে নিয়ে না যায়। কারণ, অত্যাচারী বাদশা সব ভালো, দোষ-ত্রুটি মুক্ত ও নিরাপদ নৌকাগুলো জোর করে নিয়ে যায়। তাই খিযির আলাইহিস সালাম যালিম বাদশার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য ভালো নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করে দেয়ার ইচ্ছা করলেন। যখন সে দেখতে পাবে নৌকাটি ত্রুটিযুক্ত ও ফাঁটা তখন যালিম বাদশার পাকড়াও, যুল্ম ও অনিষ্ঠতা থেকে নৌকাটি থেকে বেচে যাবে। যেহেতু বাহ্যিক বিষয়টি আল্লাহর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় তাই তিনি কর্মটিকে তার নিজের দিকেই নিসবত-সম্বোধন করেন এবং বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর মু’মিন মাতা-পিতার উল্লেখের সময় বলেন, فَأَرَدۡنَآ أَن يُبۡدِلَهُمَا رَبُّهُمَا ‘‘তাই আমি চাইলাম, তাদের রব তাদেরকে তার পরিবর্তে এমন সন্তান দান করবেন, যে হবে তার চেয়ে পবিত্রতায় উত্তম এবং দয়ামায়ায় অধিক ঘনিষ্ঠ।” কর্মটি ভালো হওয়ার কারণে তিনি তার নিজের দিকে সম্বোধন করেন। কারণ, তিনি এ ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট। বহুবচন শব্দ ব্যবহার করার কারণ, তিনি নবী। আর নবীরা সাধারণ মানুষ নয় তারা মহান তাই তাদের ক্ষেত্রে বহুবচন ব্যবহার করাই হলো শ্রেয়। এ ছাড়াও কর্মটি আল্লাহর আদেশে এবং তার দিক-নির্দেশনায় হয়েছে। ফলে বহুবচন ব্যবহার করে আল্লাহর দিকে কর্মের সম্বোধন করাটাই ছিল উত্তম। এ ছাড়াও কর্মটি ভালো, কল্যাণকর ও উপকারী। এ ধরনের কর্মের সম্বোধন আল্লাহর দিকেই হয়ে থাকে। ইয়াতীম বালক দু’টির বিষয়টিতে ছিল তাদের সংশোধন, উপকার ও মহা কল্যাণ। এ কারণেই তিনি বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ “তাই তোমার রব চাইলেন যে,” এখানে কল্যাণকে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের দিকে সম্বোধন করেছেন। এটি সূরা আল-জ্বীনের মধ্যে আল্লাহর অপর একটি বাণীর মতো। যাতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَأَنَّا لَا نَدۡرِيٓ أَشَرٌّ أُرِيدَ بِمَن فِي ٱلۡأَرۡضِ أَمۡ أَرَادَ بِهِمۡ رَبُّهُمۡ رَشَدٗا ١٠﴾ [ الجن : ١٠ ] ‘‘আর নিশ্চয় আমরা জানি না, জমিনে যারা রয়েছে তাদের জন্য অকল্যাণ চাওয়া হয়েছে, নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন।” [সূরা আল-জীন, আয়াত: ১0] এ আয়াতে খারাপ কর্মটিকে আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা হয়নি। কিন্তু যখন হিদায়াতের আলোচনা আসল, তারা বলল, أَمۡ أَرَادَ بِهِمۡ رَبُّهُمۡ رَشَدٗا “নাকি তাদের রব তাদের ব্যাপারে মঙ্গল চেয়েছেন।” হিদায়াত কল্যাণকর হওয়ার কারণে হিদায়েকে তারা আল্লাহর দিকে সম্বোধন করলেন। খারাপ কর্ম তার প্রতি সম্বোধন করা যাবে না। যেমন, বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, والشر ليس إليك “খারাপ কর্ম তোমার দিকে নয়।” এটি একটি ভালো শিষ্টাচার এবং মু’মিন জ্বীনদের আদব। আর খিযির আলাইহিস সালাম খারাপ কর্ম বিষয়ের সম্বোধনের শিষ্টাচার থেকে তিনি বলেন, فَأَرَدتُّ أَنۡ أَعِيبَهَا “আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি” আর দুই ইয়াতীমের বিষয়ে বলেন, فَأَرَادَ رَبُّكَ “তাই তোমার রব চাইলেন” এ গুলো সবই আল্লাহ সুবহানাহুর সাথে যথাযথ সম্মান প্রদর্শন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ
আল্লাহর বাণী: ﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ ٢٤﴾ “জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।”
প্রশ্ন: একজন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেন যে, আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী: ﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ ٢٤﴾ [ الانفال : ٢٤ ] “জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৪] এর অর্থ কি?
উত্তর: আয়াতটির বাহ্যিক অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের যাবতীয় সবকিছুর পরিচালনা করেন। তিনি কাউকে ভালো কর্মের তাওফীক দেন, কারো অন্তরকে ঈমানের জন্য খুলে দেন এবং কাউকে তিনি ইসলামের দিকে হিদায়াত দেন। আবার কারো অন্তরে আল্লাহর দীনের প্রতি সংকীর্ণতা ও কাঠিণ্যতা ঢেলে দেন যা তার ও ইসলামের মাঝে এবং মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে আবরণ সৃষ্টি করেন। যেমন— আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهۡدِيَهُۥ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَٰمِۖ وَمَن يُرِدۡ أَن يُضِلَّهُۥ يَجۡعَلۡ صَدۡرَهُۥ ضَيِّقًا حَرَجٗا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي ٱلسَّمَآءِۚ ١٢٥﴾ [ الانعام : ١٢٥ ] “সুতরাং যাকে আল্লাহ হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে ভ্রষ্ট করতে চান, তার বুক সঙ্কীর্ণ-সঙ্কুচিত করে দেন, যেন সে আসমানে আরোহণ করছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৫] এমনিভাবে আল্লাহ অকল্যাণ দেন তাদের উপর, যারা ঈমান আনে না। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলাই তার বান্দাদের মধ্যে যেভাবে চান পরিবর্তন করেন। কারো অন্তরকে তিনি ঈমান ও হিদায়াতের জন্য খুলে দেন আবার কাইকে তিনি তাওফীক দেন না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
প্রশ্ন: একজন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেন যে, আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী: ﴿وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ ٢٤﴾ [ الانفال : ٢٤ ] “জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন। আর নিশ্চয় তাঁর নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে।” [সূরা আল-আনফাল, আয়াত: ২৪] এর অর্থ কি?
উত্তর: আয়াতটির বাহ্যিক অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের যাবতীয় সবকিছুর পরিচালনা করেন। তিনি কাউকে ভালো কর্মের তাওফীক দেন, কারো অন্তরকে ঈমানের জন্য খুলে দেন এবং কাউকে তিনি ইসলামের দিকে হিদায়াত দেন। আবার কারো অন্তরে আল্লাহর দীনের প্রতি সংকীর্ণতা ও কাঠিণ্যতা ঢেলে দেন যা তার ও ইসলামের মাঝে এবং মানুষ ও তার অন্তরের মাঝে আবরণ সৃষ্টি করেন। যেমন— আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهۡدِيَهُۥ يَشۡرَحۡ صَدۡرَهُۥ لِلۡإِسۡلَٰمِۖ وَمَن يُرِدۡ أَن يُضِلَّهُۥ يَجۡعَلۡ صَدۡرَهُۥ ضَيِّقًا حَرَجٗا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِي ٱلسَّمَآءِۚ ١٢٥﴾ [ الانعام : ١٢٥ ] “সুতরাং যাকে আল্লাহ হিদায়াত করতে চান, ইসলামের জন্য তার বুক উন্মুক্ত করে দেন। আর যাকে ভ্রষ্ট করতে চান, তার বুক সঙ্কীর্ণ-সঙ্কুচিত করে দেন, যেন সে আসমানে আরোহণ করছে।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৫] এমনিভাবে আল্লাহ অকল্যাণ দেন তাদের উপর, যারা ঈমান আনে না। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলাই তার বান্দাদের মধ্যে যেভাবে চান পরিবর্তন করেন। কারো অন্তরকে তিনি ঈমান ও হিদায়াতের জন্য খুলে দেন আবার কাইকে তিনি তাওফীক দেন না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَفَأَنتَ تُكۡرِهُ ٱلنَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُواْ مُؤۡمِنِينَ ٩٩﴾ [ يونس : ٩٩ ] তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয় ? আল্লাহ তা‘আলা বাণী. ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ٢٥٦﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]
প্রশ্ন: অনেক সাথীরা বলে, যে ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করেনি সে স্বাধীন। তাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। তারা তাদের পক্ষে আল্লাহর কথা দ্বারা প্রমাণ দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَأَنتَ تُكۡرِهُ ٱلنَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُواْ مُؤۡمِنِينَ ٩٩﴾ [ يونس : ٩٩ ] “তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয়?” [সূরা-ইউনুস, আয়াত: ৯৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ٢٥٦﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
উত্তর: উলামাগণ বলেন, এ দু’টি আয়াত এবং একই অর্থে আরো যে সব আয়াত রয়েছে এ গুলো ইয়াহুদী, নাসারা ও অগ্নিপূজক যাদের থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে তাদের সম্পর্কে। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা হবে না। তারা ইসলাম গ্রহণ ও ট্যাক্স পরিশোধ করা বিষয়ে স্বাধীন।
আবার কোন কোন আলেম বলেন, এ বিধানটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধ ও জিহাদের বিধানের কারণে তা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং যে ইসলামে প্রবেশ করতে অস্বীকার করবে তার সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদ করা ওয়াজিব। যাতে সে হয় ইসলামে প্রবেশ করবে না হয় ট্যাক্স দেবে— যদি তা প্রযোজ্য হয়।
সুতরাং, কাফেরদের থেকে যদি ট্যাক্স গ্রহণ করার সুযোগ না থাকে তাহলে ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করতে হবে। কারণ, ইসলামের প্রবেশ করার মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা, মুক্তি ও যাবতীয় কল্যাণ। একজন মানুষের জন্য হক বা সত্য গ্রহণ করা যাতে তার হিদায়াত ও কল্যাণ রয়েছে, তা তার জন্য বাতিলের ওপর থাকা থেকে উত্তম। যেমনি ভাবে আদম সন্তানকে সত্য মানতে বাধ্য করা হবে চাই তা বন্দি করে হোক বা শাস্তি দিয়ে হোক অনুরূপভাবে কাফেরদের আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করা হবে। যাতে তার কল্যাণ নিশ্চিত হয়। কারণ, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ইসলাম গ্রহণ করার মধ্যেই নিহিত। তবে আহলে কিতাব—ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এ তিনটি সম্প্রদায়ের লোকদের ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছেন। তারা চাইলে ইসলামে প্রবেশ করতে পারবে অন্যথায় তারা অপমান-অপদস্থ হয়ে নিজ হাতে ট্যাক্স প্রদান করবে।
কোন আলেম ট্যাক্স দেওয়া বা ইসলাম গ্রহণ করা উভয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার ব্যাপারে অন্যদেরও তাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তবে গ্রহণযোগ্য কথা হলো, অন্যদের তাদের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। শুধু এ তিন জাতিকেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাযীরা এলাকায় ট্যাক্স গ্রহণ করেননি। বরং তাদের ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করেছেন এবং ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু তিনি গ্রহণ করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ “তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৫] এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, অথবা তোমরা ট্যাক্স আদায় কর। ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজকদের ইসলাম গ্রহণ করতে বলা হবে। তবে যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে কর আদায় করবে। আর যদি তারা কর আদায় করতে অস্বীকার করে তবে মুসলিমদের ওপর ফরয হলো তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ্য অনুযায়ী যুদ্ধ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ٢٨ قَٰتِلُواْ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلۡحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حَتَّىٰ يُعۡطُواْ ٱلۡجِزۡيَةَ عَن يَدٖوَهُمۡ صَٰغِرُونَ ٢٩ “তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৯] এ ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি মুজুসদের থেকে কর গ্রহণ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের কারো থেকে প্রমাণিত নয় যে, তারা উল্লিখিত তিন সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কারো থেকে কখনো কর গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী, তিনি বলেন, ﴿وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ ١٩٣﴾ [ البقرة : ١٩٣ ] “আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৯৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ “অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫] এ আয়াতটিকে তরবারির আয়াত বলা হয়। এ আয়াত এবং এ ধরনের আরো যে সব আয়াত রয়েছে তা ঐ সব আয়াতের জন্য রহিতকারী যেগুলোতে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য না করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
প্রশ্ন: অনেক সাথীরা বলে, যে ব্যক্তি ইসলামে প্রবেশ করেনি সে স্বাধীন। তাকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না। তারা তাদের পক্ষে আল্লাহর কথা দ্বারা প্রমাণ দেয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَأَنتَ تُكۡرِهُ ٱلنَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُواْ مُؤۡمِنِينَ ٩٩﴾ [ يونس : ٩٩ ] “তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয়?” [সূরা-ইউনুস, আয়াত: ৯৯] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ٢٥٦﴾ [ البقرة : ٢٥٦ ]। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?
উত্তর: উলামাগণ বলেন, এ দু’টি আয়াত এবং একই অর্থে আরো যে সব আয়াত রয়েছে এ গুলো ইয়াহুদী, নাসারা ও অগ্নিপূজক যাদের থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করা হবে তাদের সম্পর্কে। তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করা হবে না। তারা ইসলাম গ্রহণ ও ট্যাক্স পরিশোধ করা বিষয়ে স্বাধীন।
আবার কোন কোন আলেম বলেন, এ বিধানটি ইসলামের প্রাথমিক যুগে ছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধ ও জিহাদের বিধানের কারণে তা রহিত হয়ে যায়। সুতরাং যে ইসলামে প্রবেশ করতে অস্বীকার করবে তার সাথে সামর্থ্য অনুযায়ী জিহাদ করা ওয়াজিব। যাতে সে হয় ইসলামে প্রবেশ করবে না হয় ট্যাক্স দেবে— যদি তা প্রযোজ্য হয়।
সুতরাং, কাফেরদের থেকে যদি ট্যাক্স গ্রহণ করার সুযোগ না থাকে তাহলে ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করতে হবে। কারণ, ইসলামের প্রবেশ করার মধ্যে তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা, মুক্তি ও যাবতীয় কল্যাণ। একজন মানুষের জন্য হক বা সত্য গ্রহণ করা যাতে তার হিদায়াত ও কল্যাণ রয়েছে, তা তার জন্য বাতিলের ওপর থাকা থেকে উত্তম। যেমনি ভাবে আদম সন্তানকে সত্য মানতে বাধ্য করা হবে চাই তা বন্দি করে হোক বা শাস্তি দিয়ে হোক অনুরূপভাবে কাফেরদের আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা এবং ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করা হবে। যাতে তার কল্যাণ নিশ্চিত হয়। কারণ, দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ ইসলাম গ্রহণ করার মধ্যেই নিহিত। তবে আহলে কিতাব—ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজক এ তিনটি সম্প্রদায়ের লোকদের ইসলাম স্বাধীনতা দিয়েছেন। তারা চাইলে ইসলামে প্রবেশ করতে পারবে অন্যথায় তারা অপমান-অপদস্থ হয়ে নিজ হাতে ট্যাক্স প্রদান করবে।
কোন আলেম ট্যাক্স দেওয়া বা ইসলাম গ্রহণ করা উভয়ের যে কোন একটি গ্রহণ করার ব্যাপারে অন্যদেরও তাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন। তবে গ্রহণযোগ্য কথা হলো, অন্যদের তাদের সাথে সম্পৃক্ত করা যাবে না। শুধু এ তিন জাতিকেই স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাযীরা এলাকায় ট্যাক্স গ্রহণ করেননি। বরং তাদের ইসলামে প্রবেশে বাধ্য করেছেন এবং ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু তিনি গ্রহণ করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ “তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল অতিশয় দয়ালু।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৫] এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, অথবা তোমরা ট্যাক্স আদায় কর। ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজকদের ইসলাম গ্রহণ করতে বলা হবে। তবে যদি তারা ইসলাম গ্রহণ না করে কর আদায় করবে। আর যদি তারা কর আদায় করতে অস্বীকার করে তবে মুসলিমদের ওপর ফরয হলো তাদের বিরুদ্ধে সামর্থ্য অনুযায়ী যুদ্ধ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ٢٨ قَٰتِلُواْ ٱلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَلَا بِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَلَا يُحَرِّمُونَ مَا حَرَّمَ ٱللَّهُ وَرَسُولُهُۥ وَلَا يَدِينُونَ دِينَ ٱلۡحَقِّ مِنَ ٱلَّذِينَ أُوتُواْ ٱلۡكِتَٰبَ حَتَّىٰ يُعۡطُواْ ٱلۡجِزۡيَةَ عَن يَدٖوَهُمۡ صَٰغِرُونَ ٢٩ “তোমরা লড়াই কর আহলে কিতাবের সে সব লোকের সাথে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে ঈমান রাখে না এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করেছেন তা হারাম মনে করে না, আর সত্য দীন গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না তারা স্বহস্তে নত হয়ে জিয্য়া দেয়।” [সূরা তাওবাহ, আয়াত: ২৯] এ ছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি মুজুসদের থেকে কর গ্রহণ করেছেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের কারো থেকে প্রমাণিত নয় যে, তারা উল্লিখিত তিন সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কারো থেকে কখনো কর গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো, আল্লাহ তা‘আলার বাণী, তিনি বলেন, ﴿وَقَٰتِلُوهُمۡ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتۡنَةٞ وَيَكُونَ ٱلدِّينُ لِلَّهِۖ ١٩٣﴾ [ البقرة : ١٩٣ ] “আর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা খতম হয়ে যায় এবং দীন আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ১৯৩] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٥ “অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে বসে থাক। তবে যদি তারা তাওবা করে এবং সালাত কায়েম করে, আর যাকাত দেয়, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ৫] এ আয়াতটিকে তরবারির আয়াত বলা হয়। এ আয়াত এবং এ ধরনের আরো যে সব আয়াত রয়েছে তা ঐ সব আয়াতের জন্য রহিতকারী যেগুলোতে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য না করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا “ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।”
প্রশ্ন: যারা এ আয়াত فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا “ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” দ্বারা দলীল পেশ করে বলে ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর ছেলে—অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে—তাদের কীভাবে উত্তর দেওয়া হবে?
উত্তর: আয়াতটি সূরা আত-তাইরীমের ১২ নং আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَرۡيَمَ ٱبۡنَتَ عِمۡرَٰنَ ٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا ١٢﴾ [ التحريم : ١٢ ] “ইমরান কন্যা মারয়াম-এর, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ২৯] সূরা আম্বিয়া ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا ٩١﴾ [ الانبياء : ٩١ ] “আর যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯১] উল্লিখিত আয়াতে এ কথা স্পষ্ট যে, মারইয়ামকে ফুঁ দেওয়া হয় এবং ফুঁটি তার লজ্জা-স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং সে ঈসা দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা মারইয়ামে বলেন, ﴿فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧﴾ [ مريم : ١٧ ] “তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল।” [সূরা মারিয়াম, আয়াত: ১৭] তিনি হলেন ফিরিশতা যার সম্পর্কে তিনি বলেন, ﴿قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمٗا زَكِيّٗا ١٩﴾ [ مريم : ١٩ ] “সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি।” তাফসীরে বর্ণিত আছে ফিরিশতা তার জামার আস্তিনে ফুঁ দেয় এবং ফুঁটি তার লজ্জা-স্থান পর্যন্ত পৌঁছে। তারপর সে ঈসা আলাইহিস সালাম দ্বারা গর্ব ধারণ করে।
রুহ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘লার সৃষ্ট রূহসমূহ যার দ্বারা মানুষের হায়াত লাভ হয়। যেমন হায়াত লাভ হয়েছিল আদম আলাইহিস সালামের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَإِذَا سَوَّيۡتُهُۥ وَنَفَخۡتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُۥ سَٰجِدِينَ ٢٩﴾ [ الحجر : ٢٩ ] ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ২৯]
আদম আলাইহিস সালামের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা রূহকে ডেলে দেন। অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সৃষ্ট রুহ দ্বারা সৃষ্টি করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا ٤ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, . ﴿يَوۡمَ يَقُومُ ٱلرُّوحُ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ صَفّٗاۖ ٣٨﴾ [ النبا : ٣٨ ] “সেদিন রূহ [জিবরীল (আঃ)।] ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে।” [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ২৯] সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালাম এই ফুঁ এর মাধ্যমে সৃষ্টি যে ফুঁটি হলো আল্লাহর রূহসমূহের একটি রূহ যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং যদ্বারা তিনি দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর সর্ব প্রথম মানুষ হলো, আদম আলাইহিস সালাম যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ثُمَّ سَوَّىٰهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِۦۖ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَٱلۡأَفِۡٔدَةَۚ قَلِيلٗا مَّا تَشۡكُرُونَ ٩﴾ [ السجدة : ٩ ] “তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৯] এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, এ ধরনের রূহের কারণে ঈসা আলাইহিস সালামের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। বরং তিনিও অন্যান্য মাখলুকের মতো রক্তে মাংসে ঘটিত একজন মাখলুক। দুনিয়ার জীবনে সে নড়-চড় করে, কথা বলে এবং খাওয়া দাওয়া করে ইত্যাদি।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: যারা এ আয়াত فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا “ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” দ্বারা দলীল পেশ করে বলে ঈসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর ছেলে—অথচ আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে অনেক ঊর্ধ্বে—তাদের কীভাবে উত্তর দেওয়া হবে?
উত্তর: আয়াতটি সূরা আত-তাইরীমের ১২ নং আয়াত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَرۡيَمَ ٱبۡنَتَ عِمۡرَٰنَ ٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهِ مِن رُّوحِنَا ١٢﴾ [ التحريم : ١٢ ] “ইমরান কন্যা মারয়াম-এর, যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” [সূরা আত-তাহরীম, আয়াত: ২৯] সূরা আম্বিয়া ৯১ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلَّتِيٓ أَحۡصَنَتۡ فَرۡجَهَا فَنَفَخۡنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا ٩١﴾ [ الانبياء : ٩١ ] “আর যে নিজের সতীত্ব রক্ষা করেছিল, ফলে আমি তাতে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছিলাম।” [সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত: ৯১] উল্লিখিত আয়াতে এ কথা স্পষ্ট যে, মারইয়ামকে ফুঁ দেওয়া হয় এবং ফুঁটি তার লজ্জা-স্থান পর্যন্ত পৌঁছে এবং সে ঈসা দ্বারা গর্ভবতী হয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা সূরা মারইয়ামে বলেন, ﴿فَأَرۡسَلۡنَآ إِلَيۡهَا رُوحَنَا فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرٗا سَوِيّٗا ١٧﴾ [ مريم : ١٧ ] “তখন আমি তার নিকট আমার রূহ (জিবরীল) কে প্রেরণ করলাম। অতঃপর সে তার সামনে পূর্ণ মানবের রূপ ধারণ করল।” [সূরা মারিয়াম, আয়াত: ১৭] তিনি হলেন ফিরিশতা যার সম্পর্কে তিনি বলেন, ﴿قَالَ إِنَّمَآ أَنَا۠ رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَٰمٗا زَكِيّٗا ١٩﴾ [ مريم : ١٩ ] “সে বলল, ‘আমি তো কেবল তোমার রবের বার্তাবাহক, তোমাকে একজন পবিত্র পুত্রসন্তান দান করার জন্য এসেছি।” তাফসীরে বর্ণিত আছে ফিরিশতা তার জামার আস্তিনে ফুঁ দেয় এবং ফুঁটি তার লজ্জা-স্থান পর্যন্ত পৌঁছে। তারপর সে ঈসা আলাইহিস সালাম দ্বারা গর্ব ধারণ করে।
রুহ দ্বারা উদ্দেশ্য আল্লাহ তা‘লার সৃষ্ট রূহসমূহ যার দ্বারা মানুষের হায়াত লাভ হয়। যেমন হায়াত লাভ হয়েছিল আদম আলাইহিস সালামের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَإِذَا سَوَّيۡتُهُۥ وَنَفَخۡتُ فِيهِ مِن رُّوحِي فَقَعُواْ لَهُۥ سَٰجِدِينَ ٢٩﴾ [ الحجر : ٢٩ ] ‘অতএব যখন আমি তাকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেব এবং তার মধ্যে আমার রূহ ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তার জন্য সিজদাবনত হও’। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ২৯]
আদম আলাইহিস সালামের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা রূহকে ডেলে দেন। অনুরূপভাবে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর সৃষ্ট রুহ দ্বারা সৃষ্টি করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, تَنَزَّلُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ فِيهَا ٤ আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, . ﴿يَوۡمَ يَقُومُ ٱلرُّوحُ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ صَفّٗاۖ ٣٨﴾ [ النبا : ٣٨ ] “সেদিন রূহ [জিবরীল (আঃ)।] ও ফিরিশতাগণ সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াবে।” [সূরা আন-নাবা, আয়াত: ২৯] সুতরাং ঈসা আলাইহিস সালাম এই ফুঁ এর মাধ্যমে সৃষ্টি যে ফুঁটি হলো আল্লাহর রূহসমূহের একটি রূহ যাকে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন এবং যদ্বারা তিনি দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত সমস্ত মানুষ সৃষ্টি করেছেন। আর সর্ব প্রথম মানুষ হলো, আদম আলাইহিস সালাম যার সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ثُمَّ سَوَّىٰهُ وَنَفَخَ فِيهِ مِن رُّوحِهِۦۖ وَجَعَلَ لَكُمُ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡأَبۡصَٰرَ وَٱلۡأَفِۡٔدَةَۚ قَلِيلٗا مَّا تَشۡكُرُونَ ٩﴾ [ السجدة : ٩ ] “তারপর তিনি তাকে সুঠাম করেছেন এবং তাতে নিজের রূহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আর তিনি তোমাদের জন্য কান, চোখ ও অন্তরসমূহ সৃষ্টি করেছেন। তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” [সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ৯] এ কথা দ্বারা বুঝা যায় যে, এ ধরনের রূহের কারণে ঈসা আলাইহিস সালামের বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। বরং তিনিও অন্যান্য মাখলুকের মতো রক্তে মাংসে ঘটিত একজন মাখলুক। দুনিয়ার জীবনে সে নড়-চড় করে, কথা বলে এবং খাওয়া দাওয়া করে ইত্যাদি।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿إِنِّي جَاعِلٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ ٣٠﴾ [ البقرة : ٣٠ ] “নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৩০]
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيهَا مَن يُفۡسِدُ فِيهَا وَيَسۡفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّيٓ أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ البقرة : ٣٠ ] “আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৩০] এ আয়াতের অর্থ এটা কি আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পূর্বে মানব সৃষ্টি করেছেন? অন্যথায় মানুষ জমিনে খুন-খারাবী করবে এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ করবে এ কথা ফিরিশতারা কীভাবে জানল? জমিনে খলীফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করা দ্বারা আল্লাহ তা‘লা উদ্দেশ্য কি? তারা কার প্রতিনিধি?
উত্তর: আয়াত দ্বার প্রতীয়মান যে, মানব অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা জমিনে তার পূর্বে কোন ফ্যাসাদ কারী বা অন্যায়কারীর খলীফা বা প্রতিনিধি বানিয়েছেন। ফিরিশতাদের কথা দ্বারা প্রমাণ হয়, যে জমিনে এমন এক সম্প্রদায় ছিল যারা ফিতনা ফ্যাসাদ করেছিল। ফলে তারা জমিনে যা সংঘটিত হয়েছিল তাই তুলে ধরছিল। অথবা যে কোন উপায়ে তারা বিষয়টি অবগত হয়েছিল। তাই তারা যা বলার বলছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জানিয়ে দেন যে, ফিরিশতারা যা জানে না আল্লাহ তা‘আলা তা জানেন— এই প্রতিনিধিরা আল্লাহর শরী‘আত ও আল্লাহর দীন অনুযায়ী জমিনে বিচার-ফায়সালা করবেন, তাওহীদের প্রতি মানুষকে দাও‘আত দেবেন, দীনকে কেবল আল্লাহর জন্যই পালন করবেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবেন।
অনুরূপভাবে তাদের সন্তানদের মাঝে নবী ও রাসূল হবেন। নেককার লোক, আলেম-উলামা, মুখলিস বান্দাগণ ইত্যাদির আবির্ভাব হবেন যারা কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তার শরী‘আত অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করবে, তিনি যা করতে বলেছেন তা করবেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবেন।
নবী, রাসূল, আলেম-উলামা ও মুখলিস বান্দাদের মধ্যে দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এমনই ধারাবাহিকতা সংঘটিত হয়ে আসছে। আল্লাহর নির্দেশ তাদের নিকট প্রাধান্য পেয়েছে। পরবর্তীতে ফিরিশতারা এ মহান সংবাদ জানতে পেরেছে। আদম আলাইহিস সালামের পূর্বের মাখলুক সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন তারা এক শ্রেণির মানুষ এবং প্রতিনিধি যাদের জ্বীন বলা হয়ে থাকে।
মোট কথা, আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর জমিনে তার পূর্বে অতিবাহিত কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি যাদের বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আদম আলাইহিস সালামের পূর্বে কারা ছিল তাদের গুনাগুণ ও বৈশিষ্ট্য বিষয় অকাট্য কোন প্রমাণ নেই। শুধু এ টুকু বলা যায় যে, আদম আলাইহিস সালামকে তার পূর্বে অতিবাহিত কোন এক সম্প্রদায়ে খলীফা বা প্রতিনিধি করা হয়েছে। ফলে তিনি হককে বিজয়ী করা, আল্লাহর বিধানকে তুলে ধরা, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উপায়গুলো বর্ণনা করার এবং মন্দ ও ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মানুষকে বিরত রাখায় তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তারপর তার সন্তানদের থেকে যে সব নবী রাসূল, সালোক, নেককার জমিনে আগমন করবে তারাও এ মহান গুরু দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মানুষকে হকের দাও‘আত দেবেন, সত্যকে স্পষ্ট করবেন এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের প্রতি পথ দেখাবেন। তারাও আল্লাহর বিধান, একত্ববাদ এবং তার শরী‘আতকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জমিনকে আবাদ করবেন। আর যারা আল্লাহর দীনের বিরোধিতা করবে তাদের প্রতিহত করবেন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَإِذۡ قَالَ رَبُّكَ لِلۡمَلَٰٓئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٞ فِي ٱلۡأَرۡضِ خَلِيفَةٗۖ قَالُوٓاْ أَتَجۡعَلُ فِيهَا مَن يُفۡسِدُ فِيهَا وَيَسۡفِكُ ٱلدِّمَآءَ وَنَحۡنُ نُسَبِّحُ بِحَمۡدِكَ وَنُقَدِّسُ لَكَۖ قَالَ إِنِّيٓ أَعۡلَمُ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٠﴾ [ البقرة : ٣٠ ] “আর স্মরণ কর, যখন তোমার রব ফেরেশতাদেরকে বললেন, ‘নিশ্চয় আমি জমিনে একজন খলীফা সৃষ্টি করছি’, তারা বলল, ‘আপনি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন, যে তাতে ফাসাদ করবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে? আর আমরা তো আপনার প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করছি এবং আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। তিনি বললেন, নিশ্চয় আমি জানি যা তোমরা জান না।” [সূরা বাকারাহ, আয়াত: ৩০] এ আয়াতের অর্থ এটা কি আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করার পূর্বে মানব সৃষ্টি করেছেন? অন্যথায় মানুষ জমিনে খুন-খারাবী করবে এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ করবে এ কথা ফিরিশতারা কীভাবে জানল? জমিনে খলীফা (প্রতিনিধি) সৃষ্টি করা দ্বারা আল্লাহ তা‘লা উদ্দেশ্য কি? তারা কার প্রতিনিধি?
উত্তর: আয়াত দ্বার প্রতীয়মান যে, মানব অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা জমিনে তার পূর্বে কোন ফ্যাসাদ কারী বা অন্যায়কারীর খলীফা বা প্রতিনিধি বানিয়েছেন। ফিরিশতাদের কথা দ্বারা প্রমাণ হয়, যে জমিনে এমন এক সম্প্রদায় ছিল যারা ফিতনা ফ্যাসাদ করেছিল। ফলে তারা জমিনে যা সংঘটিত হয়েছিল তাই তুলে ধরছিল। অথবা যে কোন উপায়ে তারা বিষয়টি অবগত হয়েছিল। তাই তারা যা বলার বলছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জানিয়ে দেন যে, ফিরিশতারা যা জানে না আল্লাহ তা‘আলা তা জানেন— এই প্রতিনিধিরা আল্লাহর শরী‘আত ও আল্লাহর দীন অনুযায়ী জমিনে বিচার-ফায়সালা করবেন, তাওহীদের প্রতি মানুষকে দাও‘আত দেবেন, দীনকে কেবল আল্লাহর জন্যই পালন করবেন এবং তারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবেন।
অনুরূপভাবে তাদের সন্তানদের মাঝে নবী ও রাসূল হবেন। নেককার লোক, আলেম-উলামা, মুখলিস বান্দাগণ ইত্যাদির আবির্ভাব হবেন যারা কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তার শরী‘আত অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করবে, তিনি যা করতে বলেছেন তা করবেন এবং যা করতে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকবেন।
নবী, রাসূল, আলেম-উলামা ও মুখলিস বান্দাদের মধ্যে দুনিয়ার শুরু থেকে আজ পর্যন্ত এমনই ধারাবাহিকতা সংঘটিত হয়ে আসছে। আল্লাহর নির্দেশ তাদের নিকট প্রাধান্য পেয়েছে। পরবর্তীতে ফিরিশতারা এ মহান সংবাদ জানতে পেরেছে। আদম আলাইহিস সালামের পূর্বের মাখলুক সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন তারা এক শ্রেণির মানুষ এবং প্রতিনিধি যাদের জ্বীন বলা হয়ে থাকে।
মোট কথা, আদম আলাইহিস সালাম আল্লাহর জমিনে তার পূর্বে অতিবাহিত কোন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি যাদের বিষয়ে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। আদম আলাইহিস সালামের পূর্বে কারা ছিল তাদের গুনাগুণ ও বৈশিষ্ট্য বিষয় অকাট্য কোন প্রমাণ নেই। শুধু এ টুকু বলা যায় যে, আদম আলাইহিস সালামকে তার পূর্বে অতিবাহিত কোন এক সম্প্রদায়ে খলীফা বা প্রতিনিধি করা হয়েছে। ফলে তিনি হককে বিজয়ী করা, আল্লাহর বিধানকে তুলে ধরা, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উপায়গুলো বর্ণনা করার এবং মন্দ ও ফিতনা-ফ্যাসাদ থেকে মানুষকে বিরত রাখায় তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তারপর তার সন্তানদের থেকে যে সব নবী রাসূল, সালোক, নেককার জমিনে আগমন করবে তারাও এ মহান গুরু দায়িত্ব পালন করবেন। তারাও মানুষকে হকের দাও‘আত দেবেন, সত্যকে স্পষ্ট করবেন এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের প্রতি পথ দেখাবেন। তারাও আল্লাহর বিধান, একত্ববাদ এবং তার শরী‘আতকে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জমিনকে আবাদ করবেন। আর যারা আল্লাহর দীনের বিরোধিতা করবে তাদের প্রতিহত করবেন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহর বাণী: إِنَّمَا ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ “মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১]
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন, ﴿إِنَّمَا ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلۡقَىٰهَآ إِلَىٰ مَرۡيَمَ وَرُوحٞ مِّنۡهُۖ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُواْ ثَلَٰثَةٌۚ ٱنتَهُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٞۘ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلٗا ١٧١﴾ [ النساء : ١٧١ ] “মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসমূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে জমিনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১] কতক খৃষ্টান বলে আমরা যে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করি এ আয়াতটি তার সমর্থন করে। অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালাম তিন জনের (পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা) একজন। -আল্লাহ তা‘আলা এ অপবাদ থেকে তোমাদের হিফাযত করুন- এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি?।
উত্তর: এ দাবি সম্পূর্ণ বাতিল। আয়াতটি তাদের দাবি সমর্থন করে না এবং বাহ্যিক অর্থের মধ্যে তাদের দাবির প্রতি কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে প্রথমে নাম নিয়েছেন তারপর তার নাম বদল হিসেবে তার আসল নাম অর্থাৎ ঈসা উল্লেখ করেছেন। তারপর তাকে তার মায়ের দিকে সম্বোধন করা হয়েছে যেমনি-ভাবে সন্তানকে তার পিতার দিক সম্বোধন করা হয়ে থাকে। তারপর তাকে রাসূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বনী ইসলাঈলদের নিকট প্রেরিত। তারপর তারপর ওপর আতফ করে বলা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর কালিমা। অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালামকে যেভাবে মাতা-পিতা ছাড়া সৃষ্টি করা হয়েছে তাকেও পিতা ছাড়া কালিমায়ে كن দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর তাকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্ট রুহসমূহের একটি রুহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালামের তিনটি নাম ও তিনটি সিফাত রয়েছে। ঈসা ইবন মারইয়াম বলে নাম রাখা দ্বারা তাকে আল্লাহর ছেলে বলা বাতিল গণ হলো। কারণ, তাকে তার মায়ের দিক সম্বোধন করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে তিনি অন্যান্য রাসূলদের মতো একজন রাসূল, যারা শরী‘আতের দায়িত্ব বহন করেছেন এবং আল্লাহর দিকে মানুষকে দাও‘আত দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন। তারপর বলা হয়েছে তিনি আল্লাহ কালিমা যে কালিমা নিয়ে আল্লাহ ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। ফিরিশতা তার জামার হাতায় ফুঁ দেয়াতে তা তার লজ্জা-স্থানে পৌঁছে যায় এবং তাতে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারপর বলা হয়েছে, তিনি তার থেকে রুহ। এখানে আল্লাহর দিকে সম্বোধনটি সম্মানজনক সম্বোধন যেমনটি সম্মানার্থে বলা হয়ে থাকে— আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উষ্ঠি। সুতরাং তিনি রুহ যা আল্লাহরই মাখলুক। আর আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَأَيَّدۡنَٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِۗ ٨٧﴾ [ البقرة : ٨٧ ] “আর তাকে শক্তিশালী করেছি ‘পবিত্র আত্মা’র [পবিত্র আত্মা অর্থ জিবরীল (আলাইহিস সালাম)] মাধ্যমে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮৭]-তে পবিত্র আত্মা দ্বারা উদ্দেশ্য জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি অহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা, যিনি নবীদের ওপর অহী নাযিল করেন। তিনি অন্যান্য ফিরিশতাদের মতোই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহই ভালো জানেন। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন জাবরীন।
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন, ﴿إِنَّمَا ٱلۡمَسِيحُ عِيسَى ٱبۡنُ مَرۡيَمَ رَسُولُ ٱللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلۡقَىٰهَآ إِلَىٰ مَرۡيَمَ وَرُوحٞ مِّنۡهُۖ فََٔامِنُواْ بِٱللَّهِ وَرُسُلِهِۦۖ وَلَا تَقُولُواْ ثَلَٰثَةٌۚ ٱنتَهُواْ خَيۡرٗا لَّكُمۡۚ إِنَّمَا ٱللَّهُ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ سُبۡحَٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٞۘ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ وَكِيلٗا ١٧١﴾ [ النساء : ١٧١ ] “মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসমূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে জমিনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১৭১] কতক খৃষ্টান বলে আমরা যে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাস করি এ আয়াতটি তার সমর্থন করে। অর্থাৎ ঈসা আলাইহিস সালাম তিন জনের (পিতা, পুত্র, পবিত্র আত্মা) একজন। -আল্লাহ তা‘আলা এ অপবাদ থেকে তোমাদের হিফাযত করুন- এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর কি?।
উত্তর: এ দাবি সম্পূর্ণ বাতিল। আয়াতটি তাদের দাবি সমর্থন করে না এবং বাহ্যিক অর্থের মধ্যে তাদের দাবির প্রতি কোন ইঙ্গিতও পাওয়া যায় না। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে প্রথমে নাম নিয়েছেন তারপর তার নাম বদল হিসেবে তার আসল নাম অর্থাৎ ঈসা উল্লেখ করেছেন। তারপর তাকে তার মায়ের দিকে সম্বোধন করা হয়েছে যেমনি-ভাবে সন্তানকে তার পিতার দিক সম্বোধন করা হয়ে থাকে। তারপর তাকে রাসূল বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অর্থাৎ তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে বনী ইসলাঈলদের নিকট প্রেরিত। তারপর তারপর ওপর আতফ করে বলা হয়েছে যে, তিনি আল্লাহর কালিমা। অর্থাৎ আদম আলাইহিস সালামকে যেভাবে মাতা-পিতা ছাড়া সৃষ্টি করা হয়েছে তাকেও পিতা ছাড়া কালিমায়ে كن দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর তাকে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্ট রুহসমূহের একটি রুহ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সুতরাং, আয়াতে ঈসা আলাইহিস সালামের তিনটি নাম ও তিনটি সিফাত রয়েছে। ঈসা ইবন মারইয়াম বলে নাম রাখা দ্বারা তাকে আল্লাহর ছেলে বলা বাতিল গণ হলো। কারণ, তাকে তার মায়ের দিক সম্বোধন করা হয়েছে। তারপর বলা হয়েছে তিনি অন্যান্য রাসূলদের মতো একজন রাসূল, যারা শরী‘আতের দায়িত্ব বহন করেছেন এবং আল্লাহর দিকে মানুষকে দাও‘আত দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছেন। তারপর বলা হয়েছে তিনি আল্লাহ কালিমা যে কালিমা নিয়ে আল্লাহ ফিরিশতাকে পাঠিয়েছেন। ফিরিশতা তার জামার হাতায় ফুঁ দেয়াতে তা তার লজ্জা-স্থানে পৌঁছে যায় এবং তাতে তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। তারপর বলা হয়েছে, তিনি তার থেকে রুহ। এখানে আল্লাহর দিকে সম্বোধনটি সম্মানজনক সম্বোধন যেমনটি সম্মানার্থে বলা হয়ে থাকে— আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উষ্ঠি। সুতরাং তিনি রুহ যা আল্লাহরই মাখলুক। আর আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَأَيَّدۡنَٰهُ بِرُوحِ ٱلۡقُدُسِۗ ٨٧﴾ [ البقرة : ٨٧ ] “আর তাকে শক্তিশালী করেছি ‘পবিত্র আত্মা’র [পবিত্র আত্মা অর্থ জিবরীল (আলাইহিস সালাম)] মাধ্যমে।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮৭]-তে পবিত্র আত্মা দ্বারা উদ্দেশ্য জিবরীল আলাইহিস সালাম। তিনি অহীর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফিরিশতা, যিনি নবীদের ওপর অহী নাযিল করেন। তিনি অন্যান্য ফিরিশতাদের মতোই আল্লাহর সৃষ্টি। আল্লাহই ভালো জানেন। শাইখ আব্দুল্লাহ বিন জাবরীন।
প্রশ্ন: একজন প্রশ্ন কারী প্রশ্নে বলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ﴿تَٱللَّهِ لَتُسَۡٔلُنَّ عَمَّا كُنتُمۡ تَفۡتَرُونَ ٥٦﴾ [ النحل : ٥٦ ] “আল্লাহর কসম! তোমাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসা করা হবে, তোমরা যে মিথ্যা রটাচ্ছ সে ব্যাপারে।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৫৬] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَتُسَۡٔلُنَّ عَمَّا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ ٩٣﴾ [ النحل : ٩٣ ] “তোমরা যা করতে সে সম্পর্কে অবশ্যই তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৯৩] কিন্তু সূরা আর-রহমানের একটি আয়াত পাওয়া যায়, যাতে কিয়ামতের দিন মানব ও দানবকে প্রশ্ন করার বিষয়টি না করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَيَوۡمَئِذٖ لَّا يُسَۡٔلُ عَن ذَنۢبِهِۦٓ إِنسٞ وَلَا جَآنّٞ ٣٩﴾ [ الرحمن : ٣٩ ] “সেদিন তার অপরাধ সম্পর্কে কোন মানব ও দানবকে জিজ্ঞাসা করা হবে না।” [সূরা আর রহমান, আয়াত: ৩৯] তাহলে উভয় আয়াতের বিরোধ কীভাবে নিরসন করা হবে, যেখানে একটি আয়াত হিসাব প্রমাণ করে অপরটি না করে?
উত্তর: হে প্রশ্নকারী ভাই! মনে রাখুন, কিয়ামতের দিন অত্যন্ত ভয়াবহ। ঐ দিনের অবস্থা অত্যন্ত করুন। সেদিনগুলো অনেক দীর্ঘ। এক একটি দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন, ﴿تَعۡرُجُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ إِلَيۡهِ فِي يَوۡمٖ كَانَ مِقۡدَارُهُۥ خَمۡسِينَ أَلۡفَ سَنَةٖ ٤ فَٱصۡبِرۡ صَبۡرٗا جَمِيلًا ٥ إِنَّهُمۡ يَرَوۡنَهُۥ بَعِيدٗا ٦ وَنَرَىٰهُ قَرِيبٗا ٧﴾ [ المعارج : ٤، ٧ ] “ফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ কর। তারা তো এটিকে সুদূরপরাহত মনে করে। আর আমি দেখছি তা আসন্ন।” [সূরা আল-মা‘আরেজ, আয়াত: ৪, ৭] সুতরাং, ঐ দিনের অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে, কখনো সময় জিজ্ঞাসা করা হবে আবার কখনো সময় জিজ্ঞাসা করা হবে না। কখনো সময় তাদের তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَوَرَبِّكَ لَنَسَۡٔلَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩٢ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٣﴾ [ الحجر : ٩٢، ٩٣ ] “অতএব তোমার রবের কসম, আমি তাদের সকলকে অবশ্যই জেরা করব, তারা যা করত, সে সম্পর্কে।” [সূরা আন-হিজর, আয়াত: ৯২, ৯৩] তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং বদলা দেয়া এবং তাদের আমলনামা তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। আবার অনেক সময় দেখা যাবে, সু-দীর্ঘ সময় তাদের কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। অনুরূপভাবে কুরআনে কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ثُمَّ لَمۡ تَكُن فِتۡنَتُهُمۡ إِلَّآ أَن قَالُواْ وَٱللَّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشۡرِكِينَ ٢٣﴾ [ الانعام : ٢٣ ] “অতঃপর তাদের পরীক্ষার জবাব শুধু এ হবে যে, তারপর তারা বলবে, ‘আমাদের রব আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৬] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَا يَكۡتُمُونَ ٱللَّهَ حَدِيثٗا ٤٢﴾ [ النساء : ٤٢ ] “আর তারা আল্লাহর কাছে কোন কথা গোপন করতে পারবে না।” এ ধরনের আরো আয়াত রয়েছে। মোট কথা, কিয়ামতের সময় অনেক দীর্ঘ অবস্থা খুবই করুন ও ভয়াবহ। সেদিন আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পৃক্ততা বড়ই মহান। তারা সেদিন কখনো স্বীকার করবে আবার কখনো অস্বীকার করবে। সুতরাং, সতর্কতা সাথে মন্তব্য করবে এসব কোন বিষয়ে তুমি সন্দেহ করবে না। সবই হক ও সত্য। আল্লাহই সাহায্যকারী এবং তিনিই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: হে প্রশ্নকারী ভাই! মনে রাখুন, কিয়ামতের দিন অত্যন্ত ভয়াবহ। ঐ দিনের অবস্থা অত্যন্ত করুন। সেদিনগুলো অনেক দীর্ঘ। এক একটি দিন পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে কারীমে বলেন, ﴿تَعۡرُجُ ٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ وَٱلرُّوحُ إِلَيۡهِ فِي يَوۡمٖ كَانَ مِقۡدَارُهُۥ خَمۡسِينَ أَلۡفَ سَنَةٖ ٤ فَٱصۡبِرۡ صَبۡرٗا جَمِيلًا ٥ إِنَّهُمۡ يَرَوۡنَهُۥ بَعِيدٗا ٦ وَنَرَىٰهُ قَرِيبٗا ٧﴾ [ المعارج : ٤، ٧ ] “ফেরেশতাগণ ও রূহ এমন এক দিনে আল্লাহর পানে ঊর্ধ্বগামী হয়, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছর। অতএব তুমি উত্তমরূপে ধৈর্যধারণ কর। তারা তো এটিকে সুদূরপরাহত মনে করে। আর আমি দেখছি তা আসন্ন।” [সূরা আল-মা‘আরেজ, আয়াত: ৪, ৭] সুতরাং, ঐ দিনের অবস্থা এত ভয়াবহ হবে যে, কখনো সময় জিজ্ঞাসা করা হবে আবার কখনো সময় জিজ্ঞাসা করা হবে না। কখনো সময় তাদের তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَوَرَبِّكَ لَنَسَۡٔلَنَّهُمۡ أَجۡمَعِينَ ٩٢ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٩٣﴾ [ الحجر : ٩٢، ٩٣ ] “অতএব তোমার রবের কসম, আমি তাদের সকলকে অবশ্যই জেরা করব, তারা যা করত, সে সম্পর্কে।” [সূরা আন-হিজর, আয়াত: ৯২, ৯৩] তাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং বদলা দেয়া এবং তাদের আমলনামা তাদের সামনে তুলে ধরা হবে। আবার অনেক সময় দেখা যাবে, সু-দীর্ঘ সময় তাদের কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে না। অনুরূপভাবে কুরআনে কাফেরদের সম্পর্কে বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ثُمَّ لَمۡ تَكُن فِتۡنَتُهُمۡ إِلَّآ أَن قَالُواْ وَٱللَّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشۡرِكِينَ ٢٣﴾ [ الانعام : ٢٣ ] “অতঃপর তাদের পরীক্ষার জবাব শুধু এ হবে যে, তারপর তারা বলবে, ‘আমাদের রব আল্লাহর কসম! আমরা মুশরিক ছিলাম না।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৫৬] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَا يَكۡتُمُونَ ٱللَّهَ حَدِيثٗا ٤٢﴾ [ النساء : ٤٢ ] “আর তারা আল্লাহর কাছে কোন কথা গোপন করতে পারবে না।” এ ধরনের আরো আয়াত রয়েছে। মোট কথা, কিয়ামতের সময় অনেক দীর্ঘ অবস্থা খুবই করুন ও ভয়াবহ। সেদিন আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পৃক্ততা বড়ই মহান। তারা সেদিন কখনো স্বীকার করবে আবার কখনো অস্বীকার করবে। সুতরাং, সতর্কতা সাথে মন্তব্য করবে এসব কোন বিষয়ে তুমি সন্দেহ করবে না। সবই হক ও সত্য। আল্লাহই সাহায্যকারী এবং তিনিই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ ٦٩﴾ [ الفرقان : ٦٨ ] “যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩﴾ [ الفرقان : ٦٨، ٦٩ ] “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮, ৬৯] এর অর্থ কি? উল্লিখিত তিনটি কবীরা গুনাহকারী জাহান্নামে চিরকাল থাকবে? নাকি যে কোন একটি কবীরাহ গুনাহকারী? আয়াতের উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: এ মহান আয়াতে শির্ক, হত্যা ও ব্যভিচার থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধী আল্লাহর বাণী: وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا “আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে।” দ্বারা হুমকী প্রাপ্ত। কেউ কেউ বলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। কেউ কেউ বলেন, এ দ্বারা উদ্দেশ্য মহা অন্যায় যা তিনি পরবর্তী আয়াত: يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا “কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। যে ব্যক্তি এ তিন শ্রেণির অপরাধ বা যে কোন একটি করবে তার জন্য শাস্তিকে দ্বিগুণ করা হবে এবং শাস্তির মধ্যে সর্বদা থাকবে। উল্লিখিত অপরাধগুলো বিভিন্ন স্তরের—
শির্কের গুনাহ সবচেয়ে বড় গুণাহ এবং মহা অন্যায়। শির্কের অপরাধে অপরাধী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে কখনোই তা থেকে বের হবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবাতে বলেন, مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِينَ أَن يَعۡمُرُواْ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ شَٰهِدِينَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِم بِٱلۡكُفۡرِۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ وَفِي ٱلنَّارِ هُمۡ خَٰلِدُونَ ١٧ “মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, নিজদের উপর কুফরীর সাক্ষ্য দেয়া অবস্থায়। এদেরই আমলসমূহ বরবাদ হয়েছে এবং আগুনেই তারা স্থায়ী হবে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১৭] আল্লাহ আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ] “আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُرِيدُونَ أَن يَخۡرُجُواْ مِنَ ٱلنَّارِ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنۡهَاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ ٣٧﴾ [ المائدة : ٣٧ ] “তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৭] এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত রয়েছে।
মুশরিক যখনই তাওবা ছাড়া মারা যাবে উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতে সে চির জাহান্নামী হবে এবং তার ওপর জান্নাত ও ক্ষমা হারাম। ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।” ক্ষমাকে মুশরিকের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। [সূরা আন নিসা, আয়াত: ৭২] শির্ক ছাড়া অন্য গুনাহ আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীন।
একজন মানুষের কাছে তাওহীদের দাও‘আত পৌঁছার পরও যখন সে শির্কের ওপর মারা যায় তখন সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। যে ধরনের শির্কের কারণে একজন মানুষ চির জাহান্নামী হবে তা হলো:—
—মৃত ব্যক্তি নবী-রাসূল, পীর-আওলীয়াদের কাছে কোন কিছু চাওয়া। ফিরিশতা জীন পাথর মূর্তি চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্র ইত্যাদি সৃষ্টির কাছে চাওয়া। যেমন, কেউ কেউ বলল, হে সর্দার আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি তোমার নিরাপত্তায়— আমাকে সাহায্য কর, আমার রোগ ভালো করে দাও এবং সাহায্য কর ইত্যাদি।
—তাদের জন্য জবেহ্ ও মান্নত ইত্যাদি ইবাদত করা যা কেবল আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ ছাড়া তার কোন মাখলুকের জন্য এ ধরনের ইবাদত সমর্পণ করা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ ٢٣﴾ [ الاسراء : ٢٣ ] “আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [ البينة : ٥ ] “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ] “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা আল-জীন, আয়াত: ১৮]
সূরা ফাতিহায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [ الفاتحة : ٥ ] “আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫] এ বিষয়ে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
দ্বিতীয় অপরাধ হত্যা করা আর তৃতীয় অপরাধ ব্যভিচার করা। এ দু’টি অন্যায় শির্কের তুলনায় ছোট অপরাধ যদি অন্যায়কারী হালাল মনে না করে এবং সে জানে যে, উভয়টি অবশ্যই নিষিদ্ধ। কিন্তু শয়তানের প্রবঞ্চনায় দুশমনি বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অথবা অন্য কোন কারণে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করে ফেলল বা শয়তানের ধোঁকায় ব্যভিচার করে বসল অথচ সে এ কথা বিশ্বাস করে যে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা বা ব্যভিচার করা হারাম তখন এ দু’টি অপরাধের কারণে সাময়িকভাবে সে জাহান্নামে যাবে। তবে তাতে চিরকাল থাকবে না। তবে যদি কোন নেক আমল, মৃত্যুর পূর্বে খাটি তাওবা করা, সুপারিশ-কারীর সুপারিশের বা মুসলিমদের দো‘য়া ইত্যাদি যে সব কারণগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ মাপের কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন, সে কারণে ক্ষমা করে দেন, তাহলে তার বিষয়টি ভিন্ন।
কখনো সময় আল্লাহ তা‘আলা হিকমত ও প্রজ্ঞার কারণে তাকে কিছু সময় শাস্তি দেবেন। এ ধরনে বাস্তবতা অনেকের ক্ষেত্রেই সংঘটিত হবে। তাদেরকে তাদের গুনাহের ওপর শাস্তি দেয়া হবে তারপর তাদের আল্লাহর রহমত বা সুপারিশকারীর সুপারিশ, বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ সুপারিশ, বা ফিরিশতা বা নবজাতকের সুপারিশ, বা মু’মিনদের সুপারিশ দ্বারা তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যে শাস্তি লিপিবদ্ধ করেছেন তা ভোগ করার পর উল্লিখিতদের সুপারিশের কারণে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপরও জাহান্নামী কতক ঈমানদার থেকে যাবে উল্লিখিতদের সুপারিশ তাদের অর্ন্তভুক্ত করেনি। তখন তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রহমত দ্বারা কারো সুপারিশ ছাড়া বের করে নিয়ে আসবেন। কারণ, তারা তাওহীদ ও ঈমানের ওপর মারা গেছে কিন্তু তাদের বদ-আমল ও গুনাহ তাদের জাহান্নামে প্রবেশে বাধ্য করেছে। যখন তারা তা থেকে পবিত্র হবে জাহান্নামে থাকার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রহমত দ্বারা তাদের জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তাদেরকে হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তা থেকে তারা এমনভাবে উঠবে যেমন বন্যায় ভাসমান কাঁদা থেকে অংকুর জন্মায়। তারপর যখন তারা পরিপূর্ণ মাখলুক হবে তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত একাধিক মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে।
এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, হত্যা ও ব্যভিচারের অপরাধে কোন অপরাধী কাফের মুশরিকদের মতো জাহান্নামের চিরদিন থাকবে না। তবে তারা বিশেষ জাহান্নামী হবে যার শেষ রয়েছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩﴾ [ الفرقان : ٦٩ ] “কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” এখানে চিরদিনের কথা বলা হয়েছে তা হলো সাময়িক মুশরিকদের মতো চিরদিন থাকা নয়। অনুরূপভাবে আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যে হুমকি এসেছে, তার বিধানও একই। আল্লাহর তা‘আলার নিকট এ থেকে পরিত্রাণ কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলা বাণী: ﴿وَٱلَّذِينَ لَا يَدۡعُونَ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ وَلَا يَقۡتُلُونَ ٱلنَّفۡسَ ٱلَّتِي حَرَّمَ ٱللَّهُ إِلَّا بِٱلۡحَقِّ وَلَا يَزۡنُونَۚ وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا ٦٨ يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩﴾ [ الفرقان : ٦٨، ٦٩ ] “আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে নাফ্সকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” [সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৬৮, ৬৯] এর অর্থ কি? উল্লিখিত তিনটি কবীরা গুনাহকারী জাহান্নামে চিরকাল থাকবে? নাকি যে কোন একটি কবীরাহ গুনাহকারী? আয়াতের উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: এ মহান আয়াতে শির্ক, হত্যা ও ব্যভিচার থেকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং এ ধরনের অপরাধী আল্লাহর বাণী: وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ يَلۡقَ أَثَامٗا “আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে।” দ্বারা হুমকী প্রাপ্ত। কেউ কেউ বলেন, জাহান্নামের একটি উপত্যকা। কেউ কেউ বলেন, এ দ্বারা উদ্দেশ্য মহা অন্যায় যা তিনি পরবর্তী আয়াত: يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا “কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” দ্বারা ব্যাখ্যা করেন। যে ব্যক্তি এ তিন শ্রেণির অপরাধ বা যে কোন একটি করবে তার জন্য শাস্তিকে দ্বিগুণ করা হবে এবং শাস্তির মধ্যে সর্বদা থাকবে। উল্লিখিত অপরাধগুলো বিভিন্ন স্তরের—
শির্কের গুনাহ সবচেয়ে বড় গুণাহ এবং মহা অন্যায়। শির্কের অপরাধে অপরাধী জাহান্নামে চিরদিন থাকবে কখনোই তা থেকে বের হবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবাতে বলেন, مَا كَانَ لِلۡمُشۡرِكِينَ أَن يَعۡمُرُواْ مَسَٰجِدَ ٱللَّهِ شَٰهِدِينَ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِم بِٱلۡكُفۡرِۚ أُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ وَفِي ٱلنَّارِ هُمۡ خَٰلِدُونَ ١٧ “মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদসমূহ আবাদ করবে, নিজদের উপর কুফরীর সাক্ষ্য দেয়া অবস্থায়। এদেরই আমলসমূহ বরবাদ হয়েছে এবং আগুনেই তারা স্থায়ী হবে।” [সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত: ১৭] আল্লাহ আরও বলেন, ﴿وَلَوۡ أَشۡرَكُواْ لَحَبِطَ عَنۡهُم مَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ٨٨﴾ [ الانعام : ٨٨ ] “আর যদি তারা শির্ক করত, তবে তারা যা আমল করছিল তা অবশ্যই বরবাদ হয়ে যেত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَقَدۡ أُوحِيَ إِلَيۡكَ وَإِلَى ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِكَ لَئِنۡ أَشۡرَكۡتَ لَيَحۡبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ ٦٥﴾ [ الزمر : ٦٤ ] “আর অবশ্যই তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে ওহী পাঠানো হয়েছে যে, তুমি শির্ক করলে তোমার কর্ম নিষ্ফল হবেই। আর অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُرِيدُونَ أَن يَخۡرُجُواْ مِنَ ٱلنَّارِ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنۡهَاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ ٣٧﴾ [ المائدة : ٣٧ ] “তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৭] এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত রয়েছে।
মুশরিক যখনই তাওবা ছাড়া মারা যাবে উম্মতে মুসলিমার ঐক্যমতে সে চির জাহান্নামী হবে এবং তার ওপর জান্নাত ও ক্ষমা হারাম। ﴿إِنَّهُۥ مَن يُشۡرِكۡ بِٱللَّهِ فَقَدۡ حَرَّمَ ٱللَّهُ عَلَيۡهِ ٱلۡجَنَّةَ وَمَأۡوَىٰهُ ٱلنَّارُۖ وَمَا لِلظَّٰلِمِينَ مِنۡ أَنصَارٖ ٧٢﴾ [ المائدة : ٧٢ ] “নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭২] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَغۡفِرُ أَن يُشۡرَكَ بِهِۦ وَيَغۡفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَن يَشَآءُۚ ٤٨﴾ [ النساء : ٤٨ ] “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরীক করাকে ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান।” ক্ষমাকে মুশরিকের ওপর হারাম করে দিয়েছেন। [সূরা আন নিসা, আয়াত: ৭২] শির্ক ছাড়া অন্য গুনাহ আল্লাহর ইচ্ছার আওতাধীন।
একজন মানুষের কাছে তাওহীদের দাও‘আত পৌঁছার পরও যখন সে শির্কের ওপর মারা যায় তখন সে অবশ্যই জাহান্নামী হবে। যে ধরনের শির্কের কারণে একজন মানুষ চির জাহান্নামী হবে তা হলো:—
—মৃত ব্যক্তি নবী-রাসূল, পীর-আওলীয়াদের কাছে কোন কিছু চাওয়া। ফিরিশতা জীন পাথর মূর্তি চন্দ্র সূর্য ও নক্ষত্র ইত্যাদি সৃষ্টির কাছে চাওয়া। যেমন, কেউ কেউ বলল, হে সর্দার আমি তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করি। আমি তোমার নিরাপত্তায়— আমাকে সাহায্য কর, আমার রোগ ভালো করে দাও এবং সাহায্য কর ইত্যাদি।
—তাদের জন্য জবেহ্ ও মান্নত ইত্যাদি ইবাদত করা যা কেবল আল্লাহর জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ ছাড়া তার কোন মাখলুকের জন্য এ ধরনের ইবাদত সমর্পণ করা বৈধ নয়। কারণ, আল্লাহ তা’আলা বলেন, ﴿وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ ٢٣﴾ [ الاسراء : ٢٣ ] “আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৭২]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أُمِرُوٓاْ إِلَّا لِيَعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَ حُنَفَآءَ وَيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَيُؤۡتُواْ ٱلزَّكَوٰةَۚ وَذَٰلِكَ دِينُ ٱلۡقَيِّمَةِ ٥﴾ [ البينة : ٥ ] “আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদাত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দীন।” [সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত: ৫]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨﴾ [ الجن : ١٨ ] “আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।” [সূরা আল-জীন, আয়াত: ১৮]
সূরা ফাতিহায় আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ ٥﴾ [ الفاتحة : ٥ ] “আপনারই আমরা ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট আমরা সাহায্য চাই।” [সূরা আল-ফাতিহা, আয়াত: ৫] এ বিষয়ে আরো অনেক আয়াত রয়েছে।
দ্বিতীয় অপরাধ হত্যা করা আর তৃতীয় অপরাধ ব্যভিচার করা। এ দু’টি অন্যায় শির্কের তুলনায় ছোট অপরাধ যদি অন্যায়কারী হালাল মনে না করে এবং সে জানে যে, উভয়টি অবশ্যই নিষিদ্ধ। কিন্তু শয়তানের প্রবঞ্চনায় দুশমনি বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে অথবা অন্য কোন কারণে হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ করে ফেলল বা শয়তানের ধোঁকায় ব্যভিচার করে বসল অথচ সে এ কথা বিশ্বাস করে যে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা বা ব্যভিচার করা হারাম তখন এ দু’টি অপরাধের কারণে সাময়িকভাবে সে জাহান্নামে যাবে। তবে তাতে চিরকাল থাকবে না। তবে যদি কোন নেক আমল, মৃত্যুর পূর্বে খাটি তাওবা করা, সুপারিশ-কারীর সুপারিশের বা মুসলিমদের দো‘য়া ইত্যাদি যে সব কারণগুলোকে আল্লাহ তা‘আলা গুনাহ মাপের কারণ বলে চিহ্নিত করেছেন, সে কারণে ক্ষমা করে দেন, তাহলে তার বিষয়টি ভিন্ন।
কখনো সময় আল্লাহ তা‘আলা হিকমত ও প্রজ্ঞার কারণে তাকে কিছু সময় শাস্তি দেবেন। এ ধরনে বাস্তবতা অনেকের ক্ষেত্রেই সংঘটিত হবে। তাদেরকে তাদের গুনাহের ওপর শাস্তি দেয়া হবে তারপর তাদের আল্লাহর রহমত বা সুপারিশকারীর সুপারিশ, বা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিশেষ সুপারিশ, বা ফিরিশতা বা নবজাতকের সুপারিশ, বা মু’মিনদের সুপারিশ দ্বারা তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য যে শাস্তি লিপিবদ্ধ করেছেন তা ভোগ করার পর উল্লিখিতদের সুপারিশের কারণে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তারপরও জাহান্নামী কতক ঈমানদার থেকে যাবে উল্লিখিতদের সুপারিশ তাদের অর্ন্তভুক্ত করেনি। তখন তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রহমত দ্বারা কারো সুপারিশ ছাড়া বের করে নিয়ে আসবেন। কারণ, তারা তাওহীদ ও ঈমানের ওপর মারা গেছে কিন্তু তাদের বদ-আমল ও গুনাহ তাদের জাহান্নামে প্রবেশে বাধ্য করেছে। যখন তারা তা থেকে পবিত্র হবে জাহান্নামে থাকার নির্ধারিত সময় শেষ হয়ে যাবে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় রহমত দ্বারা তাদের জাহান্নাম থেকে বের করবেন। তাদেরকে হায়াতের নদীতে নিক্ষেপ করা হবে। তখন তা থেকে তারা এমনভাবে উঠবে যেমন বন্যায় ভাসমান কাঁদা থেকে অংকুর জন্মায়। তারপর যখন তারা পরিপূর্ণ মাখলুক হবে তখন তাদের জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণিত একাধিক মুতাওয়াতির হাদীস রয়েছে।
এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, হত্যা ও ব্যভিচারের অপরাধে কোন অপরাধী কাফের মুশরিকদের মতো জাহান্নামের চিরদিন থাকবে না। তবে তারা বিশেষ জাহান্নামী হবে যার শেষ রয়েছে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿يُضَٰعَفۡ لَهُ ٱلۡعَذَابُ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَيَخۡلُدۡ فِيهِۦ مُهَانًا ٦٩﴾ [ الفرقان : ٦٩ ] “কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” এখানে চিরদিনের কথা বলা হয়েছে তা হলো সাময়িক মুশরিকদের মতো চিরদিন থাকা নয়। অনুরূপভাবে আত্মহত্যাকারী সম্পর্কে যে হুমকি এসেছে, তার বিধানও একই। আল্লাহর তা‘আলার নিকট এ থেকে পরিত্রাণ কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ ١٠٨﴾ “অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে।”
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَشَهِيقٌ ١٠٦ خَٰلِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٞ لِّمَا يُرِيدُ ١٠٧ ۞وَأَمَّا ٱلَّذِينَ سُعِدُواْ فَفِي ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَۖ عَطَآءً غَيۡرَ مَجۡذُوذٖ ١٠٨﴾ [ هود : ١٠٦، ١٠٨ ] “অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে থাকবে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে [‘যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে’- এ কথা দ্বারা আরবী ভাষায় চিরস্থায়ীত্বের উদাহরণ দেয়া হয়ে থাকে।], অবশ্য তোমার রব যা চান [অর্থাৎ শাস্তিভোগ শেষে জাহান্নাম থেকে যে গুনাহগার মুমিনদেরকে তিনি বের করে জান্নাতে নিতে চান তাদের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।]। নিশ্চয় তোমার রব তা-ই করে যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে, তারা জান্নাতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান, [অর্থাৎ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিতে পারেন। তবে তিনি তা করবেন না। কেননা তিনি নিজেই তাদের স্থায়ীত্বের ঘোষণা দিয়েছেন।] অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ।” [সূরা আল-হুদ, আয়াত: ১০৬, ১০৮ ] এর ব্যাখ্যা কি? এ আয়াত থেকে কি এ কথা বুঝা যায় যে, যখন কোন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ চাইলে সে জান্নাত থেকে বের হবে? নাকি কুরআনের অন্য আয়াত দ্বারা আয়াত দু’টি রহিত? কারণ, আয়াত দু’টি মক্কায় অবতীর্ণ।
উত্তর: আয়াত দু’টি রহিত নয় বরং আয়াত দু’টি মুহকাম—স্পষ্ট। তবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” —এর অর্থ কি? এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। যদিও তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, জান্নাতের নি‘আমত স্থায়ী তা কখনো বন্ধ ও শেষ হবে না এবং জান্নাতীরা জান্নাত থেকে কখনো বের হবে না। জান্নাত থেকে বের হওয়া বিষয়ে কতক মানুষের ধারণাকে দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ বলেন, ﴿عَطَآءً غَيۡرَ مَجۡذُوذٖ﴾ “অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ।” তার জান্নাতে চিরস্থায়ী হবেন—কখনোই বের হবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ٤٥ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٍ ءَامِنِينَ ٤٦﴾ [ الحجر : ٤٥، ٤٦ ] “নিশ্চয় মুত্তাকীগণ থাকবে জান্নাত ও ঝর্ণাধারাসমূহে।‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৬, ৪৫] অর্থাৎ মৃত্যু থেকে নিরাপদ, জান্নাত থেকে বের হওয়ার বিষয়ে নিরাপদ এবং অসুস্থতা থেকে নিরাপদ। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা এর পর বলেন, ﴿وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨﴾ [ الحجر : ٤٧، ٤٨ ] “আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে। সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না। তারা তাতে চিরস্থায়ী, তারা বের হবেন না এবং তাতে তারা মৃত্যু বরণ করবে না।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৭, ৪৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤ يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكَۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٥٧﴾ [ الدخان : ٥١، ٥٧ ] “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগ-বাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে, তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে। এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হূরদের সাথে। সেখানে তারা প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে। তোমার রবের অনুগ্রহস্বরূপ, এটাই তো মহা সাফল্য।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৫১, ৫৭] প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, জান্নাতীরা নিরাপদ স্থানে থাকবে— তাদের কোন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না, তাদের ক্ষয় হবে না এবং তারা পরিপূর্ণ নিরাপদ। তাদের মৃত্যু বরণ করা, রোগী হওয়া এবং জান্নাত থেকে বের হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। তারা কখনোই মৃত্যু বরণ করবে না।
আল্লাহর বাণী: ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” এর ব্যাখ্যায় কোন কোন আলেম বলেন, এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য জান্নাত নয় এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য কবরের অবস্থান। কবর যদিও জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান কিন্তু তা পুরোপুরি জান্নাত নয় জান্নাতের অংশ। মু‘মিন ব্যক্তি যখন কবরে অবস্থান করবে তখন তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। জান্নাতের সু-বাতাস, সু-ঘ্রাণ ও নি‘আমতসমূহে তার কবরে আসতে থাকবে। তারপর তাকে সাত আসমানের উপরে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ আসল জান্নাতে স্থানান্তর করা হবে।
কেউ কেউ বলেন এ ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” আয়াতটির দ্বারা কবর থেকে পুনরুত্থানের পর কিয়ামতের মাঠে হিসাব ও বিচারের জন্য অবস্থানের সময়কে বুঝানো হয়েছে। কারণ, তারপর মানুষকে জান্নাতে স্থানান্তর করানো হবে।
আবার কেউ কেউ বলেন, সামগ্রিকভাবে তাদের কবরের অবস্থান, হাশরের মাঠের অবস্থান এবং পুলসিরাতের উপর দিয়ে তাদের অতিক্রম করার সময় স্থায়ী নয় এবং তারা এ সময়টিতে জান্নাতে নয়। তবে তাদেরকে এ থেকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, এখান অবস্থান দ্বারা উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তাতে কোন সন্দেহ, সংশয় ও অবকাশ নেই। জান্নাতীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে তাতে তাদের কোন মৃত্যু হবে না, অসুস্থ হবে না, বের হবে না, মহিলাদের হায়েয-নিফাস হবে না, দুশ্চিন্তা থাকবে না। তারা স্থায়ী ও উত্তম নে‘আমতসমূহে অবস্থান করবে। অনুরূপভাবে জাহান্নামীরা জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে তা থেকে তারা কখনোই বের হবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিষয়ে বলেন, . ﴿ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦ ﴾ [ فاطر : ٣٦ ] “আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩৬] এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার বাণী একাধিক।
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” এর অর্থ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো যখন তারা কবরে অবস্থান করবে আবার কেউ কেউ বলেন, হাশরের মাঠ। তারপর তাদের জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে এবং তাতে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারায় বলেন, ﴿َذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ ١٦٧﴾ [ البقرة : ١٦٧ ] “এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ। আর তারা আগুন থেকে বের হতে পারবে না” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৭] এবং সূরা আল-মায়েদাতে বলেন, ﴿يُرِيدُونَ أَن يَخۡرُجُواْ مِنَ ٱلنَّارِ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنۡهَاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ ٣٧﴾ [ المائدة : ٣٧ ] “তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৭] এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿فَأَمَّا ٱلَّذِينَ شَقُواْ فَفِي ٱلنَّارِ لَهُمۡ فِيهَا زَفِيرٞ وَشَهِيقٌ ١٠٦ خَٰلِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَۚ إِنَّ رَبَّكَ فَعَّالٞ لِّمَا يُرِيدُ ١٠٧ ۞وَأَمَّا ٱلَّذِينَ سُعِدُواْ فَفِي ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا مَا دَامَتِ ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَۖ عَطَآءً غَيۡرَ مَجۡذُوذٖ ١٠٨﴾ [ هود : ١٠٦، ١٠٨ ] “অতঃপর যারা হয়েছে দুর্ভাগা, তারা থাকবে আগুনে। সেখানে থাকবে তাদের চীৎকার ও আর্তনাদ। সেখানে তারা স্থায়ী হবে, যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে [‘যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে’- এ কথা দ্বারা আরবী ভাষায় চিরস্থায়ীত্বের উদাহরণ দেয়া হয়ে থাকে।], অবশ্য তোমার রব যা চান [অর্থাৎ শাস্তিভোগ শেষে জাহান্নাম থেকে যে গুনাহগার মুমিনদেরকে তিনি বের করে জান্নাতে নিতে চান তাদের বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।]। নিশ্চয় তোমার রব তা-ই করে যা তিনি ইচ্ছা করেন। আর যারা ভাগ্যবান হয়েছে, তারা জান্নাতে থাকবে, সেখানে তারা স্থায়ী হবে যতদিন পর্যন্ত আসমানসমূহ ও জমিন থাকবে, অবশ্য তোমার রব যা চান, [অর্থাৎ আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে জান্নাত থেকে বের করে দিতে পারেন। তবে তিনি তা করবেন না। কেননা তিনি নিজেই তাদের স্থায়ীত্বের ঘোষণা দিয়েছেন।] অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ।” [সূরা আল-হুদ, আয়াত: ১০৬, ১০৮ ] এর ব্যাখ্যা কি? এ আয়াত থেকে কি এ কথা বুঝা যায় যে, যখন কোন মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে আল্লাহ চাইলে সে জান্নাত থেকে বের হবে? নাকি কুরআনের অন্য আয়াত দ্বারা আয়াত দু’টি রহিত? কারণ, আয়াত দু’টি মক্কায় অবতীর্ণ।
উত্তর: আয়াত দু’টি রহিত নয় বরং আয়াত দু’টি মুহকাম—স্পষ্ট। তবে আল্লাহ তা‘আলার বাণী— ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” —এর অর্থ কি? এ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। যদিও তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, জান্নাতের নি‘আমত স্থায়ী তা কখনো বন্ধ ও শেষ হবে না এবং জান্নাতীরা জান্নাত থেকে কখনো বের হবে না। জান্নাত থেকে বের হওয়া বিষয়ে কতক মানুষের ধারণাকে দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ বলেন, ﴿عَطَآءً غَيۡرَ مَجۡذُوذٖ﴾ “অব্যাহত প্রতিদানস্বরূপ।” তার জান্নাতে চিরস্থায়ী হবেন—কখনোই বের হবেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٍ ٤٥ ٱدۡخُلُوهَا بِسَلَٰمٍ ءَامِنِينَ ٤٦﴾ [ الحجر : ٤٥، ٤٦ ] “নিশ্চয় মুত্তাকীগণ থাকবে জান্নাত ও ঝর্ণাধারাসমূহে।‘তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তিতে, নিরাপদ হয়ে’।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৬, ৪৫] অর্থাৎ মৃত্যু থেকে নিরাপদ, জান্নাত থেকে বের হওয়ার বিষয়ে নিরাপদ এবং অসুস্থতা থেকে নিরাপদ। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা এর পর বলেন, ﴿وَنَزَعۡنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنۡ غِلٍّ إِخۡوَٰنًا عَلَىٰ سُرُرٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٤٧ لَا يَمَسُّهُمۡ فِيهَا نَصَبٞ وَمَا هُم مِّنۡهَا بِمُخۡرَجِينَ ٤٨﴾ [ الحجر : ٤٧، ٤٨ ] “আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে ফেলব, তারা সেখানে ভাই ভাই হয়ে আসনে মুখোমুখি বসবে। সেখানে তাদেরকে ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না। তারা তাতে চিরস্থায়ী, তারা বের হবেন না এবং তাতে তারা মৃত্যু বরণ করবে না।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৪৭, ৪৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤ يَدۡعُونَ فِيهَا بِكُلِّ فَٰكِهَةٍ ءَامِنِينَ ٥٥ لَا يَذُوقُونَ فِيهَا ٱلۡمَوۡتَ إِلَّا ٱلۡمَوۡتَةَ ٱلۡأُولَىٰۖ وَوَقَىٰهُمۡ عَذَابَ ٱلۡجَحِيمِ ٥٦ فَضۡلٗا مِّن رَّبِّكَۚ ذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ٥٧﴾ [ الدخان : ٥١، ٥٧ ] “নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগ-বাগিচা ও ঝর্নাধারার মধ্যে, তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে। এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হূরদের সাথে। সেখানে তারা প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে। তোমার রবের অনুগ্রহস্বরূপ, এটাই তো মহা সাফল্য।” [সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ৫১, ৫৭] প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যু আস্বাদন করবে না। আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন। আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দেন যে, জান্নাতীরা নিরাপদ স্থানে থাকবে— তাদের কোন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে না, তাদের ক্ষয় হবে না এবং তারা পরিপূর্ণ নিরাপদ। তাদের মৃত্যু বরণ করা, রোগী হওয়া এবং জান্নাত থেকে বের হওয়ার কোন আশঙ্কা নেই। তারা কখনোই মৃত্যু বরণ করবে না।
আল্লাহর বাণী: ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” এর ব্যাখ্যায় কোন কোন আলেম বলেন, এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য জান্নাত নয় এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য কবরের অবস্থান। কবর যদিও জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান কিন্তু তা পুরোপুরি জান্নাত নয় জান্নাতের অংশ। মু‘মিন ব্যক্তি যখন কবরে অবস্থান করবে তখন তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হবে। জান্নাতের সু-বাতাস, সু-ঘ্রাণ ও নি‘আমতসমূহে তার কবরে আসতে থাকবে। তারপর তাকে সাত আসমানের উপরে বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ আসল জান্নাতে স্থানান্তর করা হবে।
কেউ কেউ বলেন এ ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” আয়াতটির দ্বারা কবর থেকে পুনরুত্থানের পর কিয়ামতের মাঠে হিসাব ও বিচারের জন্য অবস্থানের সময়কে বুঝানো হয়েছে। কারণ, তারপর মানুষকে জান্নাতে স্থানান্তর করানো হবে।
আবার কেউ কেউ বলেন, সামগ্রিকভাবে তাদের কবরের অবস্থান, হাশরের মাঠের অবস্থান এবং পুলসিরাতের উপর দিয়ে তাদের অতিক্রম করার সময় স্থায়ী নয় এবং তারা এ সময়টিতে জান্নাতে নয়। তবে তাদেরকে এ থেকে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে।
এ থেকে এ কথা স্পষ্ট হয় যে, এখান অবস্থান দ্বারা উদ্দেশ্য স্পষ্ট। তাতে কোন সন্দেহ, সংশয় ও অবকাশ নেই। জান্নাতীরা জান্নাতে চিরকাল থাকবে তাতে তাদের কোন মৃত্যু হবে না, অসুস্থ হবে না, বের হবে না, মহিলাদের হায়েয-নিফাস হবে না, দুশ্চিন্তা থাকবে না। তারা স্থায়ী ও উত্তম নে‘আমতসমূহে অবস্থান করবে। অনুরূপভাবে জাহান্নামীরা জাহান্নামে চিরকাল অবস্থান করবে তা থেকে তারা কখনোই বের হবে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিষয়ে বলেন, . ﴿ وَٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَهُمۡ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقۡضَىٰ عَلَيۡهِمۡ فَيَمُوتُواْ وَلَا يُخَفَّفُ عَنۡهُم مِّنۡ عَذَابِهَاۚ كَذَٰلِكَ نَجۡزِي كُلَّ كَفُورٖ ٣٦ ﴾ [ فاطر : ٣٦ ] “আর যারা কুফরী করে, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাদের প্রতি এমন কোন ফয়সালা দেয়া হবে না যে, তারা মারা যাবে, এবং তাদের থেকে জাহান্নামের আযাবও লাঘব করা হবে না। এভাবেই আমি প্রত্যেক অকৃতজ্ঞকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ৩৬] এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার বাণী একাধিক।
তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿إِلَّا مَا شَآءَ رَبُّكَ﴾ “অবশ্য তোমার রব যা চান” এর অর্থ সম্পর্কে কেউ কেউ বলেন, এর অর্থ হলো যখন তারা কবরে অবস্থান করবে আবার কেউ কেউ বলেন, হাশরের মাঠ। তারপর তাদের জাহান্নামের দিকে টেনে নেয়া হবে এবং তাতে তারা চিরকাল অবস্থান করবে। যেমন তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা সূরা বাকারায় বলেন, ﴿َذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ ١٦٧﴾ [ البقرة : ١٦٧ ] “এভাবে আল্লাহ তাদেরকে তাদের আমলসমূহ দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ। আর তারা আগুন থেকে বের হতে পারবে না” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৬৭] এবং সূরা আল-মায়েদাতে বলেন, ﴿يُرِيدُونَ أَن يَخۡرُجُواْ مِنَ ٱلنَّارِ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنۡهَاۖ وَلَهُمۡ عَذَابٞ مُّقِيمٞ ٣٧﴾ [ المائدة : ٣٧ ] “তারা চাইবে আগুন থেকে বের হতে, কিন্তু তারা সেখান থেকে বের হবার নয় এবং তাদের জন্য রয়েছে স্থায়ী আযাব।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৩৭] এ বিষয়ে আরো বহু আয়াত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: ‘আমার রবের উভয় হাতই ডান’ অপর হাদীসে আল্লাহর একটি হাতকে বাম হাত বলে আখ্যায়িত করা বিষয়ে আলোচনা।
প্রশ্ন: দু’টি হাদীসের একটির মধ্যে আল্লাহর একটি হাতকে বাম হাত বলে আখ্যায়িত করা এবং অপর হাদীসে আল্লাহর উভয় হাতকে ডান বলে আখ্যায়িত করার মধ্যে যে বিরোধ দেখা যায় তা নিরসন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি।
উত্তর: শাইখ রহ. বলেন, ‘আমার রবের উভয় হাতই ডান’ এ হাদীসটি তাগলীব অধ্যায়ের হাদীস। এ দ্বারা উদ্দেশ্য অপর হাত থেকে দুর্বলতাকে না করা। কারণ, আদম সন্তানের মধ্যে সাধারণ নিয়ম হলো তাদের ডান হাত বাম হাতের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। তার উভয় হাতের শক্তি সমান। এ ধরনের বিরোধপূর্ণ হাদীস যেগুলো বিরোধ নিরসন করা জরুরি বিশেষ করে আকীদার ক্ষেত্রে, তার সমাধানের জন্য ইমাম ইবনে কুতাইবার ‘বিরোধপূর্ণ হাদীসের সমাধান’ নামক কিতাব দেখতে হবে। অনুরূপভাবে এ বিষয়ে ইবন আব্দুল্লাহ আল-কাসিমের রয়েছে ‘মুশকিলাতুল আহাদীস’ নামে গুরুত্বপূর্ণ ও মহা মূল্যবান কিতাব। এ কিতাবের সংকলন করা ছিল তার দীনের সাথে খেল-তামাশা ও দীন থেকে বের হওয়ার পূর্বে। আল্লাহই তাওফীক দাতা
শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আল-আফীফী রহ.
প্রশ্ন: দু’টি হাদীসের একটির মধ্যে আল্লাহর একটি হাতকে বাম হাত বলে আখ্যায়িত করা এবং অপর হাদীসে আল্লাহর উভয় হাতকে ডান বলে আখ্যায়িত করার মধ্যে যে বিরোধ দেখা যায় তা নিরসন করা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি।
উত্তর: শাইখ রহ. বলেন, ‘আমার রবের উভয় হাতই ডান’ এ হাদীসটি তাগলীব অধ্যায়ের হাদীস। এ দ্বারা উদ্দেশ্য অপর হাত থেকে দুর্বলতাকে না করা। কারণ, আদম সন্তানের মধ্যে সাধারণ নিয়ম হলো তাদের ডান হাত বাম হাতের তুলনায় শক্তিশালী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা এ থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। তার উভয় হাতের শক্তি সমান। এ ধরনের বিরোধপূর্ণ হাদীস যেগুলো বিরোধ নিরসন করা জরুরি বিশেষ করে আকীদার ক্ষেত্রে, তার সমাধানের জন্য ইমাম ইবনে কুতাইবার ‘বিরোধপূর্ণ হাদীসের সমাধান’ নামক কিতাব দেখতে হবে। অনুরূপভাবে এ বিষয়ে ইবন আব্দুল্লাহ আল-কাসিমের রয়েছে ‘মুশকিলাতুল আহাদীস’ নামে গুরুত্বপূর্ণ ও মহা মূল্যবান কিতাব। এ কিতাবের সংকলন করা ছিল তার দীনের সাথে খেল-তামাশা ও দীন থেকে বের হওয়ার পূর্বে। আল্লাহই তাওফীক দাতা
শাইখ আব্দুর রাজ্জাক আল-আফীফী রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ﴾ “বল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, فيه فإن صلاتكم معروضة علي “কারণ, আমার নিকট তোমাদের দরূদ পেশ করা হয়।”
প্রশ্ন: জুমু‘আর দিন জুমু‘আর ফযীলত সম্পর্কে রেডিওতে একজন ভাষ্যকারকে একটি হাদীস বলতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فأكثروا علي من الصلاة فيه فإن صلاتكم معروضة علي " قال فقالوا يارسول الله وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت ؟ قال يقولون بليت قال " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " . “তোমরা আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরূদ পড়। কারণ, আমার কাছে তোমাদের দরূদ পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমাদের দরূদ আপনার কাছে পেশ করা হয়? অথচ আপনার হাড্ডি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। উত্তরে তিনি বললেন, নবীদের দেহসমূহকে আল্লাহ তা‘আলা জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।” [বর্ণনায় তিরমিযী ছাড়া অপর পাঁচটি সুনান গ্রন্থ।] যে সব আয়াতে এ কথা ﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [ الكهف : ١١٠ ] “বল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’’ [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০] এবং এ কথা ﴿وَإِنَّا لَجَٰعِلُونَ مَا عَلَيۡهَا صَعِيدٗا جُرُزًا ٨﴾ [ الكهف : ٨ ]“আর নিশ্চয় তার উপর যা রয়েছে তাকে আমি উদ্ভিদহীন শুষ্ক মাটিতে পরিণত করব।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৮] বলা হয়েছে তার সাথে এ হাদীসটি বিরোধপূর্ণ নয় কি?
মৃত্যুর পর দাফনের পূর্বে হাত-দ্বয় নাকের উপর রাখা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন পড়ে থাকেন। তার চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিকট প্রবেশ করে এ অবস্থা দেখে বলেন, ‘তিনিও অন্যান্য মানুষের মতো দুর্গন্ধ হন’। এ হাদীসটি নাইলুল আওতার এবং শরহে মুনতাকাল আখবার কিতাবে বিদ্যমান। ইবন হিব্বান স্বীয় সহীহ্তে, হাকিম মুস্তাদরাকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধ। তবে তারা তাদের স্বীয় কিতাব-দ্বয়ে হাদীসটি উল্লেখ করেননি। ইবনু আবী হাতিম আল-‘ইলাল কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি তার পিতা থেকে হাদীসটি সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন হাদীসটি মুনকার। কারণ, আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ ইব জাবের হাদীসের সনদে বর্ণনাকারী। আর তিনি হলেন একজন মুনকারুল হাদীস। ইবনুল আরবী রহ. বলেন, হাদীসটি প্রমাণিত নয়। আল্লাহর নিকট আমার কামনা তিনি যেন আমাকে এবং তোমাদেরকে এমন কর্ম করার তাওফীক দেন যা তিনি পছন্দ করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট হন।
উত্তর: আহলে ইলমগণের নিকট উল্লিখিত হাদীসটি প্রসিদ্ধ। হাদীসটির মধ্যে কোন দুর্বলতা বা অসুবিধার কিছু নেই। আল্লাহ তা‘আলা জন্য ক্ষমতা রয়েছে যে, তিনি তার বান্দাদের থেকে যাকে চান যেভাবে চান বিশেষ গুনে গুণান্বিত করে থাকেন। জমিনের জন্য নবীদের দেহসমূহকে হারাম করার মাধ্যমে খাস করা কোন আশ্চর্য নয়। কারণ, আল্লাহর নিকট তাদের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া শরী‘আত অনুমোদিত। যদি আমরা ধরে নেই যে, জমিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীর খেয়ে ফেললেও তা হাদীসের বাণী অনুযায়ী তার ওপর জুমু‘আর দিন অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠের পরিপন্থী নয়। কারণ, জীবিত থাকা এবং মৃত্যু বরণ করা সর্বাবস্থায় তার ওপর দরূদ পড়ার বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ] “নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে [ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফিরিশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা এবং ফিরিশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফিয়ান সওরী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফিরিশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবন কাসীর)।]। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬] হে আল্লাহ আপনি তার ওপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সর্বদা দরূদ ও সালাম প্রেরণ করুন। ইমাম মুসলিম সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন « مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا » .“যে ব্যক্তি একবার আমার ওপর দুরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার দরূদ পড়ে।” সুতরাং, জীবিত থাকা, মৃত্যু বরণ করা এবং আলমে বরযখে থাকা সহ সর্বাবস্থায় তার ওপর দরূদ পড়া যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ অক্ষত থাকার কথাটি এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আহলে ইলমগণের নিকট হাদীসটি বিশুদ্ধ। আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তিটির বিশুদ্ধতা আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি এবং তার সনদটি অনুসন্ধান করেও দেখিনি। যদি কথাটি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়ও তাতেও কোন অসুবিধা নেই। যে কোন শরীরের জন্য যা হওয়ার তা হতেই পারে। তারপরও তা নিরাপদ ও অক্ষত থাকাতে কোন অসুবিধা নেই। জমিনের ওপর তা ভক্ষণ করা হারাম এবং নবীদের দেহ দুগর্ন্ধ হওয়া বা পচে যাওয়া থেকে নিরাপদ থাকাও অসম্ভব কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর ওপর ক্ষমতাশীল। নবীদের দেহ যখন কবরে রাখা হবে, তার দুর্গন্ধ ও পরিবর্তন দূর করে দেহকে নিরাপদ ও তাজা করে রাখা আল্লাহ তা‘আলার জন্য খুবই সহজ। শরী‘আত ও জ্ঞান কোন কিছুই এর পরিপন্থী নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ কবরে অক্ষত থাকুক বা নাই থাকুক তার জন্য সালাত ও সালাম পেশ করা শরী‘আত সম্মত। হাদীস যদি বিশুদ্ধ না হয়ে থাকে তবে তার দেহ কবরে অক্ষত না থাকা তার ওপর সালাত ও সালাম পেশ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ, ঊর্ধ্ব জগতে তার রূহ অবশ্যই রয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা অনুযায়ী নবীদের মত সমস্ত মানুষের রূহসমূহও অবশিষ্ট থাকে।
মু’মিনদের রূহ জান্নাতে আর কাফেরদের রূহ থাকে জাহান্নামে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ ঊর্ধ্ব জগতে। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, মু’মিনদের রূহ জান্নাতের গাছে জুলন্ত পাখির পেটে। শহীদদের রূহ জান্নাতের বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করতে থাকে। তারপর আরশের নিচে জুলন্ত প্রদীপের কাছে ফিরে আসে। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, শহীদের রূহ হলুদ পাখির পেটে।
রূহ অবশিষ্ট রয়েছে, ফলে সালাত ও সালাম প্রেরণ করা সম্ভব যদিও দেহ নষ্ট হয়ে যায়। তবে হাদীসটি— " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " “আল্লাহ তা‘আলা জমিনের জন্য নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” কোন অসুবিধার কারণ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশুদ্ধ দলীল এর পরিপন্থী বলে জানা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ হাদীসটি গ্রহণ করা ও তার ওপর অটুট থাকাই হলো মূলনীতি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " “আল্লাহ তা‘আলা জমিনের ওপর নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” যাকে তিনি আমাদের সংবাদ দিয়েছেন, নবীদের দেহ অক্ষত থাকে। আর এ কথা তিনি অবশ্যই নিজের পক্ষ থেকে বলেননি। তার এ কথা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি অহী। যখনই কোন হাদীস ক্রুটি মুক্ত হবে, তখন তা আহলে ইলমদের নিকট বিশুদ্ধ ও গ্রহণ যোগ্য হওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তি যদি বিশুদ্ধ প্রমাণিত হয়, তাতেও নবীদের দেহ কবরে অক্ষত ও তাজা থাকা তার উক্তির পরিপন্থী নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: জুমু‘আর দিন জুমু‘আর ফযীলত সম্পর্কে রেডিওতে একজন ভাষ্যকারকে একটি হাদীস বলতে শুনেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة فأكثروا علي من الصلاة فيه فإن صلاتكم معروضة علي " قال فقالوا يارسول الله وكيف تعرض صلاتنا عليك وقد أرمت ؟ قال يقولون بليت قال " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " . “তোমরা আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরূদ পড়। কারণ, আমার কাছে তোমাদের দরূদ পেশ করা হয়ে থাকে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমাদের দরূদ আপনার কাছে পেশ করা হয়? অথচ আপনার হাড্ডি চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেছে। উত্তরে তিনি বললেন, নবীদের দেহসমূহকে আল্লাহ তা‘আলা জমিনের জন্য হারাম করে দিয়েছেন।” [বর্ণনায় তিরমিযী ছাড়া অপর পাঁচটি সুনান গ্রন্থ।] যে সব আয়াতে এ কথা ﴿قُلۡ إِنَّمَآ أَنَا۠ بَشَرٞ مِّثۡلُكُمۡ يُوحَىٰٓ إِلَيَّ أَنَّمَآ إِلَٰهُكُمۡ إِلَٰهٞ وَٰحِدٞۖ فَمَن كَانَ يَرۡجُواْ لِقَآءَ رَبِّهِۦ فَلۡيَعۡمَلۡ عَمَلٗا صَٰلِحٗا وَلَا يُشۡرِكۡ بِعِبَادَةِ رَبِّهِۦٓ أَحَدَۢا ١١٠﴾ [ الكهف : ١١٠ ] “বল, ‘আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার নিকট ওহী প্রেরণ করা হয় যে, তোমাদের ইলাহই এক ইলাহ। সুতরাং যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার রবের ইবাদাতে কাউকে শরীক না করে।’’ [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ১১০] এবং এ কথা ﴿وَإِنَّا لَجَٰعِلُونَ مَا عَلَيۡهَا صَعِيدٗا جُرُزًا ٨﴾ [ الكهف : ٨ ]“আর নিশ্চয় তার উপর যা রয়েছে তাকে আমি উদ্ভিদহীন শুষ্ক মাটিতে পরিণত করব।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৮] বলা হয়েছে তার সাথে এ হাদীসটি বিরোধপূর্ণ নয় কি?
মৃত্যুর পর দাফনের পূর্বে হাত-দ্বয় নাকের উপর রাখা অবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনদিন পড়ে থাকেন। তার চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তার নিকট প্রবেশ করে এ অবস্থা দেখে বলেন, ‘তিনিও অন্যান্য মানুষের মতো দুর্গন্ধ হন’। এ হাদীসটি নাইলুল আওতার এবং শরহে মুনতাকাল আখবার কিতাবে বিদ্যমান। ইবন হিব্বান স্বীয় সহীহ্তে, হাকিম মুস্তাদরাকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী বিশুদ্ধ। তবে তারা তাদের স্বীয় কিতাব-দ্বয়ে হাদীসটি উল্লেখ করেননি। ইবনু আবী হাতিম আল-‘ইলাল কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং তিনি তার পিতা থেকে হাদীসটি সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেন হাদীসটি মুনকার। কারণ, আব্দুর রহমান ইবন ইয়াযীদ ইব জাবের হাদীসের সনদে বর্ণনাকারী। আর তিনি হলেন একজন মুনকারুল হাদীস। ইবনুল আরবী রহ. বলেন, হাদীসটি প্রমাণিত নয়। আল্লাহর নিকট আমার কামনা তিনি যেন আমাকে এবং তোমাদেরকে এমন কর্ম করার তাওফীক দেন যা তিনি পছন্দ করেন এবং যার প্রতি তিনি সন্তুষ্ট হন।
উত্তর: আহলে ইলমগণের নিকট উল্লিখিত হাদীসটি প্রসিদ্ধ। হাদীসটির মধ্যে কোন দুর্বলতা বা অসুবিধার কিছু নেই। আল্লাহ তা‘আলা জন্য ক্ষমতা রয়েছে যে, তিনি তার বান্দাদের থেকে যাকে চান যেভাবে চান বিশেষ গুনে গুণান্বিত করে থাকেন। জমিনের জন্য নবীদের দেহসমূহকে হারাম করার মাধ্যমে খাস করা কোন আশ্চর্য নয়। কারণ, আল্লাহর নিকট তাদের রয়েছে বিশেষ মর্যাদা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়া শরী‘আত অনুমোদিত। যদি আমরা ধরে নেই যে, জমিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীর খেয়ে ফেললেও তা হাদীসের বাণী অনুযায়ী তার ওপর জুমু‘আর দিন অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠের পরিপন্থী নয়। কারণ, জীবিত থাকা এবং মৃত্যু বরণ করা সর্বাবস্থায় তার ওপর দরূদ পড়ার বিধান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱللَّهَ وَمَلَٰٓئِكَتَهُۥ يُصَلُّونَ عَلَى ٱلنَّبِيِّۚ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ صَلُّواْ عَلَيۡهِ وَسَلِّمُواْ تَسۡلِيمًا ٥٦﴾ [ الاحزاب : ٥٦ ] “নিশ্চয় আল্লাহ (ঊর্ধ্ব জগতে ফেরেশতাদের মধ্যে) নবীর প্রশংসা করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর জন্য দো‘আ করে [ইমাম বুখারী আবুল ‘আলিয়া থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর আল্লাহর সালাত’ বলতে বুঝানো হয়েছে ফিরিশতাদের কাছে নবীর প্রশংসা এবং ফিরিশতাদের সালাত হলো দো‘আ। আর ইমাম তিরমিযী সুফিয়ান সওরী থেকে বর্ণনা করেন যে, এখানে আল্লাহর সালাত বলতে রহমত এবং ফিরিশতাদের সালাত বলতে ইস্তেগফার বুঝানো হয়েছে (তাফসীর ইবন কাসীর)।]। হে মুমিনগণ, তোমরাও নবীর উপর দরূদ পাঠ কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।[সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬] হে আল্লাহ আপনি তার ওপর কিয়ামতের দিন পর্যন্ত সর্বদা দরূদ ও সালাম প্রেরণ করুন। ইমাম মুসলিম সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন « مَنْ صَلَّى عَلَىَّ وَاحِدَةً صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ عَشْرًا » .“যে ব্যক্তি একবার আমার ওপর দুরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার ওপর দশবার দরূদ পড়ে।” সুতরাং, জীবিত থাকা, মৃত্যু বরণ করা এবং আলমে বরযখে থাকা সহ সর্বাবস্থায় তার ওপর দরূদ পড়া যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ অক্ষত থাকার কথাটি এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। আহলে ইলমগণের নিকট হাদীসটি বিশুদ্ধ। আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তিটির বিশুদ্ধতা আজ পর্যন্ত জানতে পারিনি এবং তার সনদটি অনুসন্ধান করেও দেখিনি। যদি কথাটি আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধ সনদে প্রমাণিত হয়ও তাতেও কোন অসুবিধা নেই। যে কোন শরীরের জন্য যা হওয়ার তা হতেই পারে। তারপরও তা নিরাপদ ও অক্ষত থাকাতে কোন অসুবিধা নেই। জমিনের ওপর তা ভক্ষণ করা হারাম এবং নবীদের দেহ দুগর্ন্ধ হওয়া বা পচে যাওয়া থেকে নিরাপদ থাকাও অসম্ভব কিছু নয়। আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর ওপর ক্ষমতাশীল। নবীদের দেহ যখন কবরে রাখা হবে, তার দুর্গন্ধ ও পরিবর্তন দূর করে দেহকে নিরাপদ ও তাজা করে রাখা আল্লাহ তা‘আলার জন্য খুবই সহজ। শরী‘আত ও জ্ঞান কোন কিছুই এর পরিপন্থী নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেহ কবরে অক্ষত থাকুক বা নাই থাকুক তার জন্য সালাত ও সালাম পেশ করা শরী‘আত সম্মত। হাদীস যদি বিশুদ্ধ না হয়ে থাকে তবে তার দেহ কবরে অক্ষত না থাকা তার ওপর সালাত ও সালাম পেশ করাতে কোন অসুবিধা নেই। কারণ, ঊর্ধ্ব জগতে তার রূহ অবশ্যই রয়েছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা অনুযায়ী নবীদের মত সমস্ত মানুষের রূহসমূহও অবশিষ্ট থাকে।
মু’মিনদের রূহ জান্নাতে আর কাফেরদের রূহ থাকে জাহান্নামে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রূহ ঊর্ধ্ব জগতে। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, মু’মিনদের রূহ জান্নাতের গাছে জুলন্ত পাখির পেটে। শহীদদের রূহ জান্নাতের বিভিন্ন স্থানে বিচরণ করতে থাকে। তারপর আরশের নিচে জুলন্ত প্রদীপের কাছে ফিরে আসে। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, শহীদের রূহ হলুদ পাখির পেটে।
রূহ অবশিষ্ট রয়েছে, ফলে সালাত ও সালাম প্রেরণ করা সম্ভব যদিও দেহ নষ্ট হয়ে যায়। তবে হাদীসটি— " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " “আল্লাহ তা‘আলা জমিনের জন্য নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” কোন অসুবিধার কারণ নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত বিশুদ্ধ দলীল এর পরিপন্থী বলে জানা না যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত এ হাদীসটি গ্রহণ করা ও তার ওপর অটুট থাকাই হলো মূলনীতি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: " إن الله [ عز و جل ] حرم على الأرض أجساد الأنبياء صلى الله عليهم " “আল্লাহ তা‘আলা জমিনের ওপর নবীদের দেহকে হারাম করে দিয়েছেন।” যাকে তিনি আমাদের সংবাদ দিয়েছেন, নবীদের দেহ অক্ষত থাকে। আর এ কথা তিনি অবশ্যই নিজের পক্ষ থেকে বলেননি। তার এ কথা অবশ্যই আল্লাহর পক্ষ থেকে তার প্রতি অহী। যখনই কোন হাদীস ক্রুটি মুক্ত হবে, তখন তা আহলে ইলমদের নিকট বিশুদ্ধ ও গ্রহণ যোগ্য হওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। আর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর উক্তি যদি বিশুদ্ধ প্রমাণিত হয়, তাতেও নবীদের দেহ কবরে অক্ষত ও তাজা থাকা তার উক্তির পরিপন্থী নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ عَنْ النَّائِمِ “তিন ব্যক্তি থেকে আল্লাহ তা‘আলা কলম উঠিয়ে নিয়েছেন” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— وما يدريك يا عائشة أنه في الجنة، لعل الله اطلع على ما كان يفعل؟ “হে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু! তোমাকে কে জানিয়েছে যে, সে জান্নাতী? হতে পারে লোকটি ভবিষ্যতে কি করত সে বিষয়ে আল্লাহ অবগত রয়েছেন!।”
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী বলেন, ‘শিফায়ুল আলীল’ নামক কিতাবে উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি হাদীস পড়েছি। যখন একজন বাচ্চা মারা গেল তখন তিনি বললেন, طوبى لك طيور من طيور الجنة فقال وما يدريك يا عائشة أنه في الجنة، لعل الله اطلع على ما كان يفعل؟ “সু-সংবাদ গ্রহণ কর, এ বাচ্চাটি তোমার জন্য জান্নাতের পাখিসমূহ থেকে একটি পাখি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা তোমাকে কে অবগত করছে যে, সে জান্নাতী? হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা অবগত রয়েছেন সে ভবিষ্যতে কি করত?।” অপর একটি হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ عَنْ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنْ الطِّفْلِ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنْ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَبْرَأَ “তিন ব্যক্তি থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের একজন হলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত।” উভয় বর্ণনাই বিশুদ্ধ জানি না উভয়ের বিরোধ নিরসন কীভাবে হবে?।
উত্তর: ইমাম বুখারী ও মুসলিমের নিকট উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। যাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ لَمْ يَعْمَلِ السُّوءَ وَلَمْ يُدْرِكْهُ قَالَ « أَوَغَيْرَ ذَلِكَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ لِلْجَنَّةِ أَهْلاً خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِى أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ وَخَلَقَ لِلنَّارِ أَهْلاً خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِى أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ » . “জান্নাতের চড়ই পাখিদের একটি চড়ই পাখি।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, না হে আয়েশা! বিষয়টি অন্য রকম, “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের জন্য অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টি করেছেন যখন তারা তাদের মাতা-পিতার বংশে। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য কিছু অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টি করেছেন যখন তারা তাদের মাতা-পিতার বংশে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৩৯]
হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য, কাউকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা। যদিও সে একজন নিষ্পাপ বাচ্চা হোক। কারণ, সে অনেক সময় তার মাতা-পিতার অনুসারী হয় আর পিতা-মুসলিম নয় যদিও বাহ্যিক-ভাবে ইসলাম প্রকাশ করে। মানুষ অনেক সময় মুনাফেক হয়ে থাকে। অনেক সময় মা মুনাফেক হয়ে থাকে। এ কারণে বাচ্চারা যেহেতু তার মাতা-পিতার অনুগত তাই যতক্ষণ পর্যন্ত তার মাতা-পিতার অবস্থা জানা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বলা যাবে না।
যখন কোন অমুসলিমের বাচ্চা মারা যাবে বিশুদ্ধ মত হলো তাকে কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। যখন সে পরীক্ষায় পাশ করবে তাকে জান্নাতে দেওয়া হবে আর যদি পরীক্ষায় ফেল করে তবে তাকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মুশরিকদের বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি বললেন, « اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» “ভবিষ্যতে তারা কি করত আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে ভালো জানেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৩৩] হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তাদের কিয়ামতের কোন একটি বিষয়ে আদেশ করা হবে তারা যদি আদেশটি মানে জান্নাতে প্রবেশ করবেন আর যদি আদেশটি অমান্য করেন তবে জাহান্নামে প্রবেশ করবেন। সুতরাং, কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাদের কথা ভিন্ন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতিসমূহ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। উল্লিখিত হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথায় আপত্তি জানানোর কারণ, তিনি একজনকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ, তিনি বলেন, عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ এ কারণেই এ ধরনের কথা বলতে তাকে না করা হয়েছে। কারণ, বিষয়টির পিছনে আরও একটি বিষয় রয়েছে যা তার জান্নাতে প্রবেশ না করার কারণ হতে পারে। তাকে কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। কারণ, তারা মাতা-পিতা মুসলিম নয়। মুসলিমদের বাচ্চারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মত অনুসারে তারা তাদের মাতা-পিতার সাথে জান্নাতে যাবে। আর কাফেরদের বাচ্চাদের কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। এ মতটিই সত্য বা হক। মুশরিকদের বাচ্চাদের যারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর নির্দেশ মানবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা মানবে না তারা জান্নামে প্রবেশ করবে। যেমনটি যাদের কাছে আদৌ কোন নবী রাসূল পৌঁছেনি। এটিই সঠিক উত্তর এবং হাদীসের ভাষ্য। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: প্রশ্নকারী বলেন, ‘শিফায়ুল আলীল’ নামক কিতাবে উম্মুল মু‘মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি হাদীস পড়েছি। যখন একজন বাচ্চা মারা গেল তখন তিনি বললেন, طوبى لك طيور من طيور الجنة فقال وما يدريك يا عائشة أنه في الجنة، لعل الله اطلع على ما كان يفعل؟ “সু-সংবাদ গ্রহণ কর, এ বাচ্চাটি তোমার জন্য জান্নাতের পাখিসমূহ থেকে একটি পাখি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আয়েশা তোমাকে কে অবগত করছে যে, সে জান্নাতী? হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা অবগত রয়েছেন সে ভবিষ্যতে কি করত?।” অপর একটি হাদীসে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, رُفِعَ الْقَلَمُ عَنْ ثَلَاثَةٍ عَنْ النَّائِمِ حَتَّى يَسْتَيْقِظَ وَعَنْ الطِّفْلِ حَتَّى يَحْتَلِمَ وَعَنْ الْمَجْنُونِ حَتَّى يَبْرَأَ “তিন ব্যক্তি থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। তাদের একজন হলো অপ্রাপ্ত বয়স্ক বাচ্চা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত।” উভয় বর্ণনাই বিশুদ্ধ জানি না উভয়ের বিরোধ নিরসন কীভাবে হবে?।
উত্তর: ইমাম বুখারী ও মুসলিমের নিকট উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। যাতে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ لَمْ يَعْمَلِ السُّوءَ وَلَمْ يُدْرِكْهُ قَالَ « أَوَغَيْرَ ذَلِكَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ لِلْجَنَّةِ أَهْلاً خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِى أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ وَخَلَقَ لِلنَّارِ أَهْلاً خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِى أَصْلاَبِ آبَائِهِمْ » . “জান্নাতের চড়ই পাখিদের একটি চড়ই পাখি।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, না হে আয়েশা! বিষয়টি অন্য রকম, “আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতের জন্য অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টি করেছেন যখন তারা তাদের মাতা-পিতার বংশে। আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামের জন্য কিছু অধিবাসী সৃষ্টি করেছেন। তাদের সৃষ্টি করেছেন যখন তারা তাদের মাতা-পিতার বংশে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৩৯]
হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য, কাউকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট করা। যদিও সে একজন নিষ্পাপ বাচ্চা হোক। কারণ, সে অনেক সময় তার মাতা-পিতার অনুসারী হয় আর পিতা-মুসলিম নয় যদিও বাহ্যিক-ভাবে ইসলাম প্রকাশ করে। মানুষ অনেক সময় মুনাফেক হয়ে থাকে। অনেক সময় মা মুনাফেক হয়ে থাকে। এ কারণে বাচ্চারা যেহেতু তার মাতা-পিতার অনুগত তাই যতক্ষণ পর্যন্ত তার মাতা-পিতার অবস্থা জানা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কাউকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বলা যাবে না।
যখন কোন অমুসলিমের বাচ্চা মারা যাবে বিশুদ্ধ মত হলো তাকে কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। যখন সে পরীক্ষায় পাশ করবে তাকে জান্নাতে দেওয়া হবে আর যদি পরীক্ষায় ফেল করে তবে তাকে জাহান্নামে দেওয়া হবে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যখন মুশরিকদের বাচ্চাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো তিনি বললেন, « اللَّهُ أَعْلَمُ بِمَا كَانُوا عَامِلِينَ» “ভবিষ্যতে তারা কি করত আল্লাহ তা‘আলা সে সম্পর্কে ভালো জানেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৩৩] হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, তাদের কিয়ামতের কোন একটি বিষয়ে আদেশ করা হবে তারা যদি আদেশটি মানে জান্নাতে প্রবেশ করবেন আর যদি আদেশটি অমান্য করেন তবে জাহান্নামে প্রবেশ করবেন। সুতরাং, কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বা জাহান্নামী বলা যাবে না। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাদের কথা ভিন্ন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মূলনীতিসমূহ থেকে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি। উল্লিখিত হাদীসে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথায় আপত্তি জানানোর কারণ, তিনি একজনকে নির্দিষ্টভাবে জান্নাতী বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কারণ, তিনি বলেন, عُصْفُورٌ مِنْ عَصَافِيرِ الْجَنَّةِ এ কারণেই এ ধরনের কথা বলতে তাকে না করা হয়েছে। কারণ, বিষয়টির পিছনে আরও একটি বিষয় রয়েছে যা তার জান্নাতে প্রবেশ না করার কারণ হতে পারে। তাকে কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। কারণ, তারা মাতা-পিতা মুসলিম নয়। মুসলিমদের বাচ্চারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের মত অনুসারে তারা তাদের মাতা-পিতার সাথে জান্নাতে যাবে। আর কাফেরদের বাচ্চাদের কিয়ামতের দিন পরীক্ষা করা হবে। এ মতটিই সত্য বা হক। মুশরিকদের বাচ্চাদের যারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর নির্দেশ মানবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যারা মানবে না তারা জান্নামে প্রবেশ করবে। যেমনটি যাদের কাছে আদৌ কোন নবী রাসূল পৌঁছেনি। এটিই সঠিক উত্তর এবং হাদীসের ভাষ্য। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
একটি হাদীসে ঈমানের ব্যাখ্যা— أن تؤمن بالله “আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা” দ্বারা করা এবং অপর হাদীসে ঈমানের ব্যাখ্যা— شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله “এ কথা সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই” দ্বারা করা।
প্রশ্ন: হাদীসে জিবরীল যাতে ঈমানের ব্যাখ্যা — أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره “আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তার ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস, এবং ভালো ও মন্দের ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা।” [সহীহ মুসলিাম, হাদীস নং ৮]- এ বলে দেওয়া হয়েছে। আর ওয়াফদে আবদে কাইসের হাদীসের যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে — شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة وصوم رمضان وأن تؤدوا خمسا من المغنم “এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার ইলাহ নেই তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, সালাত কায়েম করা, যাকাত পরিশোধ করা এবং গণিমতের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭]—ঈমানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা ও বিরোধ নিরসন কীভাবে করব?
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে একটি কথা জানিয়ে দিতে চাই যে, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে পারস্পরিক কখনোই কোন বিরোধ নেই। কুরআনের একটি অংশ অপর অংশের সাথে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের একটি অংশ অপর অংশের সাথে কোন বিরোধ নেই। কুরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নাহের মধ্যে এমন কোন কিছু পাওয়া যাবে না যা বাস্তবতার বিরোধী। কারণ বাস্তবতা সত্য এবং কুরআন ও সুন্নাহও সত্য। দু’টি সত্যের মধ্যে বিরোধ অসম্ভব। এ মূলনীতি যখন তুমি বুঝতে পারবে তখন তোমার অসংখ্য প্রশ্নের সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ] “তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২] যখন বিষয়টি এমনই, তখন মনে রাখবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে পারস্পরিক কোন বিরোধ নেই। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের একটি তাফসীর করেছেন এবং অপর যায়গায় ভিন্ন তাফসীর করেছেন, তখন বাহ্যিক দৃষ্টিতে তোমার কাছে মনে হবে বিরোধ। কিন্তু বাস্তবে যখন তুমি গভীরভাবে চিন্তা করবে, তখন তুমি কোন বিরোধ দেখতে পাবে না।
হাদীসে জিবরীলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে তিন ভাগ করেছেন।
প্রথম প্রকার: ইসলাম
দ্বিতীয় প্রকার: ঈমান
তৃতীয় প্রকার: ইহসান।
আর ওয়াফদে আবদে কাইসের হাদীসে শুধু এক প্রকার অর্থাৎ ইসলাম উল্লেখ করেছেন। আর যখন ইসলাম এককভাবে উল্লেখ করা হয়, তখন তার মধ্যে ঈমান অর্ন্তভুক্ত থাকে। কারণ, মু’মিন হওয়া ছাড়া ইসলামের বিধান মেনে চলা সম্ভব নয়। ফলে ইসলাম উল্লেখ করলে ঈমান তাতে অর্ন্তভুক্ত হয় এবং ঈমান উল্লেখ করলে ইসলাম তাতে এসে যায়। আর যখন ঈমান ও ইসলাম একত্রে উল্লেখ করা হয় তখন ঈমান বলা হয় অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়সমূহকে আর ইসলাম বলা হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারী নিয়ম ও মূলনীতি। যখন শুধু ইসলাম উল্লেখ করা হয়, তখন তার মধ্যে ঈমানও অর্ন্তভুক্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ ال عمران : ١٩ ] “আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দীন ইসলাম। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৯]
মনে রাখবে, দীন-ইসলাম হলো, আকীদা, ঈমান ও শরী‘আত—এর সমষ্টির নাম। যখন শুধু ঈমান উল্লেখ করা হয়, তখন তাতে ইসলামও অর্ন্তভুক্ত থাকে। আর যখন উভয়টি উল্লেখ করা হয় তখন ঈমান অন্ততের আমলকে বুঝায় আর ইসলাম দ্বারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলকে বুঝায়। এ কারণেই কোন কোন সালাফ রহ. বলেছেন, ‘ইসলাম হলো প্রকাশ্য আর ঈমান হলো গোপন’। কারণ, ঈমান অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই একজন মুনাফেককে দেখবে সে সালাত আদায় করে, সাদকা করে এবং সাওম আদায় করে। ফলে সে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম তবে সে মু’মিন নয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨﴾ [ البقرة : ٨ ] “আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮] আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: হাদীসে জিবরীল যাতে ঈমানের ব্যাখ্যা — أن تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الآخر وتؤمن بالقدر خيره “আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা, তার ফিরিশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস, এবং ভালো ও মন্দের ভাগ্যের প্রতি ঈমান আনা।” [সহীহ মুসলিাম, হাদীস নং ৮]- এ বলে দেওয়া হয়েছে। আর ওয়াফদে আবদে কাইসের হাদীসের যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বলে — شهادة أن لا إله إلا الله وأن محمدا رسول الله وإقام الصلاة وإيتاء الزكاة وصوم رمضان وأن تؤدوا خمسا من المغنم “এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার ইলাহ নেই তিনি একক, তার কোন শরীক নেই, সালাত কায়েম করা, যাকাত পরিশোধ করা এবং গণিমতের এক পঞ্চমাংশ আদায় করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭]—ঈমানের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা ও বিরোধ নিরসন কীভাবে করব?
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পূর্বে একটি কথা জানিয়ে দিতে চাই যে, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে পারস্পরিক কখনোই কোন বিরোধ নেই। কুরআনের একটি অংশ অপর অংশের সাথে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসের একটি অংশ অপর অংশের সাথে কোন বিরোধ নেই। কুরআন ও বিশুদ্ধ সুন্নাহের মধ্যে এমন কোন কিছু পাওয়া যাবে না যা বাস্তবতার বিরোধী। কারণ বাস্তবতা সত্য এবং কুরআন ও সুন্নাহও সত্য। দু’টি সত্যের মধ্যে বিরোধ অসম্ভব। এ মূলনীতি যখন তুমি বুঝতে পারবে তখন তোমার অসংখ্য প্রশ্নের সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَيۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُواْ فِيهِ ٱخۡتِلَٰفٗا كَثِيرٗا ٨٢﴾ [ النساء : ٨٢ ] “তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮২] যখন বিষয়টি এমনই, তখন মনে রাখবে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসে পারস্পরিক কোন বিরোধ নেই। যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈমানের একটি তাফসীর করেছেন এবং অপর যায়গায় ভিন্ন তাফসীর করেছেন, তখন বাহ্যিক দৃষ্টিতে তোমার কাছে মনে হবে বিরোধ। কিন্তু বাস্তবে যখন তুমি গভীরভাবে চিন্তা করবে, তখন তুমি কোন বিরোধ দেখতে পাবে না।
হাদীসে জিবরীলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনকে তিন ভাগ করেছেন।
প্রথম প্রকার: ইসলাম
দ্বিতীয় প্রকার: ঈমান
তৃতীয় প্রকার: ইহসান।
আর ওয়াফদে আবদে কাইসের হাদীসে শুধু এক প্রকার অর্থাৎ ইসলাম উল্লেখ করেছেন। আর যখন ইসলাম এককভাবে উল্লেখ করা হয়, তখন তার মধ্যে ঈমান অর্ন্তভুক্ত থাকে। কারণ, মু’মিন হওয়া ছাড়া ইসলামের বিধান মেনে চলা সম্ভব নয়। ফলে ইসলাম উল্লেখ করলে ঈমান তাতে অর্ন্তভুক্ত হয় এবং ঈমান উল্লেখ করলে ইসলাম তাতে এসে যায়। আর যখন ঈমান ও ইসলাম একত্রে উল্লেখ করা হয় তখন ঈমান বলা হয় অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়সমূহকে আর ইসলাম বলা হয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলোকে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকারী নিয়ম ও মূলনীতি। যখন শুধু ইসলাম উল্লেখ করা হয়, তখন তার মধ্যে ঈমানও অর্ন্তভুক্ত হয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّ ٱلدِّينَ عِندَ ٱللَّهِ ٱلۡإِسۡلَٰمُۗ ١٩﴾ [ ال عمران : ١٩ ] “আল্লাহর নিকট একমাত্র মনোনীত দীন ইসলাম। [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৯]
মনে রাখবে, দীন-ইসলাম হলো, আকীদা, ঈমান ও শরী‘আত—এর সমষ্টির নাম। যখন শুধু ঈমান উল্লেখ করা হয়, তখন তাতে ইসলামও অর্ন্তভুক্ত থাকে। আর যখন উভয়টি উল্লেখ করা হয় তখন ঈমান অন্ততের আমলকে বুঝায় আর ইসলাম দ্বারা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমলকে বুঝায়। এ কারণেই কোন কোন সালাফ রহ. বলেছেন, ‘ইসলাম হলো প্রকাশ্য আর ঈমান হলো গোপন’। কারণ, ঈমান অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। এ কারণেই একজন মুনাফেককে দেখবে সে সালাত আদায় করে, সাদকা করে এবং সাওম আদায় করে। ফলে সে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলিম তবে সে মু’মিন নয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَقُولُ ءَامَنَّا بِٱللَّهِ وَبِٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِ وَمَا هُم بِمُؤۡمِنِينَ ٨﴾ [ البقرة : ٨ ] “আর মানুষের মধ্যে কিছু এমন আছে, যারা বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিনের প্রতি’, অথচ তারা মুমিন নয়।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ৮] আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: «إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ » “নিশ্চয় ঝাড়-ফুঁক, তাবীয কবয শির্ক।” ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর বাণী: من استطاع منكم أن ينفع أخاه فليفعل “তোমাদের কেউ যদি উপকার করতে সক্ষম হয়, সে যেন তা করে...।”
প্রশ্ন: আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, নিশ্চয় ঝাড়-ফুঁক, তাবীয, কবয শির্ক। কিন্তু জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অপর একটি হাদীস বর্ণিত তিনি বলেন, كان لي خال يرقي من العقرب فنهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرقى قال فأتاه فقال يا رسول الله إنك نهيت عن الرقى وأنا أرقي من العقرب فقال من استطاع منكم أن ينفع أخاه فليفعل “আমার একজন সাপের কামড়ের জন্য ঝাড়-ফুক করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়-ফুক থেকে নিষেধ করলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনি ঝাড়-ফুঁক থেকে নিষেধ করেছেন। আর আমি সাপের কামড়ের থেকে ঝাড়-ফুঁক করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হয় তবে সে যেন তা করে।” ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে এক হাদীসে নিষেধ করা এবং অপর হাদীসে অনুমতি দেওয়া উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে? কুরআন ও হাদীস দ্বারা অসুস্থ ব্যক্তি গলায় তাবীয ঝুলানোর বিধান কি?
উত্তর: নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক হলো, যে ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে শির্ক অথবা গাইরুল্লাহর মাধ্যম চাওয়া হয়েছে অথবা এমন কোন শব্দ রয়েছে যেগুলোর অর্থ জানা যায় না। কিন্তু যে সব ঝাড়-ফুঁক এ সব থেকে মুক্ত তা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—. « اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ » . “তোমরা তোমাদের মন্ত্রককে আমার সামনে তুলে ধর। যতক্ষণ পর্যন্ত তা শির্ক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করাতে কোন ক্ষতি নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৬২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন— من استطاع منكم أن ينفع أخاه فليفعل “তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হয় তবে সে যেন তা করে।” হাদীস দু’টি ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে উল্লেখ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৬২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا رُقْيَةَ إِلَّا مِنْ عَيْنٍ أَوْ حُمَةٍ “বদ নযর ও বিষধর সাপের আক্রমণ ছাড়া অন্য কিছুতে ঝাড়-ফুঁক নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫] অর্থাৎ এ দু’টি রোগের মধ্যে ঝাড়-ফুঁক যতটা কার্যকর অন্য কোন রোগে এতটা কার্যকর নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ঝাড়-ফুঁক দিয়েছেন এবং নিয়েছেন। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি বা বাচ্চাদের গলায় তা‘বীয ঝুলানো সম্পূর্ণ অবৈধ। ঝাড়-ফুঁককে গলায় ঝুলানো হলে তাকে তাবীয বলা হয়। এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ কথা হলো এটি হারাম এবং শির্কের বিভিন্ন প্রকারের এটিও একটি প্রকার। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من تعلق تميمة فلا أتم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له “যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলায় আল্লাহ তা‘আলা তাকে পূর্ণতা দান করবে না আর যে ব্যক্তি..”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৪০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وقال من علق تميمة فقد اشرك “যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলায় সে শির্ক করল।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৫৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, « إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ » . “নিশ্চয় ঝাড়-ফুঁক, তাবীয-কবজ এবং যাদু শির্ক।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৫]
কুরআনের আয়াত হাদীসের বর্ণিত দো‘য়া দ্বারা লিখিত তাবীয নিষিদ্ধ না বৈধ? এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বিশুদ্ধ হলো দু’টি কারণে তা অবৈধ বা হারাম:
এক— উল্লিখিত হাদীসসমূহের ব্যাপকতা। কারণ, হাদীসসমূহ কুরআন ও অন্যান্য সবকিছুকেই সামিল করে।
দুই— শির্কে পথ বন্ধ করা। কারণ, কুরআন দ্বারা তা‘বীয দেওয়া বৈধ করা হলে তাতে অন্যান্য বস্তু দ্বারা তা‘বীয দেওয়ার পথ খুলে যাবে। একটি সাথে অপরটির সংমিশ্রণ হয়ে যাবে। তখন সবকিছু দিয়ে তা‘বীয দেওয়ার পথ খুলবে এবং সমাজে শির্কের প্রচলন ঘটবে। শির্ক ও গুনাহের সব ধরনের পথ বন্ধ করা শরী‘আতের অন্যতম মূলনীতি। আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘উদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, নিশ্চয় ঝাড়-ফুঁক, তাবীয, কবয শির্ক। কিন্তু জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অপর একটি হাদীস বর্ণিত তিনি বলেন, كان لي خال يرقي من العقرب فنهى رسول الله صلى الله عليه و سلم عن الرقى قال فأتاه فقال يا رسول الله إنك نهيت عن الرقى وأنا أرقي من العقرب فقال من استطاع منكم أن ينفع أخاه فليفعل “আমার একজন সাপের কামড়ের জন্য ঝাড়-ফুক করত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাড়-ফুক থেকে নিষেধ করলে তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল আপনি ঝাড়-ফুঁক থেকে নিষেধ করেছেন। আর আমি সাপের কামড়ের থেকে ঝাড়-ফুঁক করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমাদের কেউ তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হয় তবে সে যেন তা করে।” ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে এক হাদীসে নিষেধ করা এবং অপর হাদীসে অনুমতি দেওয়া উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে? কুরআন ও হাদীস দ্বারা অসুস্থ ব্যক্তি গলায় তাবীয ঝুলানোর বিধান কি?
উত্তর: নিষিদ্ধ ঝাড়-ফুঁক হলো, যে ঝাড়-ফুঁকের মধ্যে শির্ক অথবা গাইরুল্লাহর মাধ্যম চাওয়া হয়েছে অথবা এমন কোন শব্দ রয়েছে যেগুলোর অর্থ জানা যায় না। কিন্তু যে সব ঝাড়-ফুঁক এ সব থেকে মুক্ত তা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন—. « اعْرِضُوا عَلَىَّ رُقَاكُمْ لاَ بَأْسَ بِالرُّقَى مَا لَمْ يَكُنْ فِيهِ شِرْكٌ » . “তোমরা তোমাদের মন্ত্রককে আমার সামনে তুলে ধর। যতক্ষণ পর্যন্ত তা শির্ক না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করাতে কোন ক্ষতি নেই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৬২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন— من استطاع منكم أن ينفع أخاه فليفعل “তোমাদের কেউ যদি তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হয় তবে সে যেন তা করে।” হাদীস দু’টি ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে উল্লেখ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৬২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, لَا رُقْيَةَ إِلَّا مِنْ عَيْنٍ أَوْ حُمَةٍ “বদ নযর ও বিষধর সাপের আক্রমণ ছাড়া অন্য কিছুতে ঝাড়-ফুঁক নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭০৫] অর্থাৎ এ দু’টি রোগের মধ্যে ঝাড়-ফুঁক যতটা কার্যকর অন্য কোন রোগে এতটা কার্যকর নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ঝাড়-ফুঁক দিয়েছেন এবং নিয়েছেন। কিন্তু অসুস্থ ব্যক্তি বা বাচ্চাদের গলায় তা‘বীয ঝুলানো সম্পূর্ণ অবৈধ। ঝাড়-ফুঁককে গলায় ঝুলানো হলে তাকে তাবীয বলা হয়। এ সম্পর্কে বিশুদ্ধ কথা হলো এটি হারাম এবং শির্কের বিভিন্ন প্রকারের এটিও একটি প্রকার। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من تعلق تميمة فلا أتم الله له ومن تعلق ودعة فلا ودع الله له “যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলায় আল্লাহ তা‘আলা তাকে পূর্ণতা দান করবে না আর যে ব্যক্তি..”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৪০] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وقال من علق تميمة فقد اشرك “যে ব্যক্তি তাবীয ঝুলায় সে শির্ক করল।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭৪৫৮] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, « إِنَّ الرُّقَى وَالتَّمَائِمَ وَالتِّوَلَةَ شِرْكٌ » . “নিশ্চয় ঝাড়-ফুঁক, তাবীয-কবজ এবং যাদু শির্ক।” [আবু দাউদ, হাদীস নং ৩৮৮৫]
কুরআনের আয়াত হাদীসের বর্ণিত দো‘য়া দ্বারা লিখিত তাবীয নিষিদ্ধ না বৈধ? এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। বিশুদ্ধ হলো দু’টি কারণে তা অবৈধ বা হারাম:
এক— উল্লিখিত হাদীসসমূহের ব্যাপকতা। কারণ, হাদীসসমূহ কুরআন ও অন্যান্য সবকিছুকেই সামিল করে।
দুই— শির্কে পথ বন্ধ করা। কারণ, কুরআন দ্বারা তা‘বীয দেওয়া বৈধ করা হলে তাতে অন্যান্য বস্তু দ্বারা তা‘বীয দেওয়ার পথ খুলে যাবে। একটি সাথে অপরটির সংমিশ্রণ হয়ে যাবে। তখন সবকিছু দিয়ে তা‘বীয দেওয়ার পথ খুলবে এবং সমাজে শির্কের প্রচলন ঘটবে। শির্ক ও গুনাহের সব ধরনের পথ বন্ধ করা শরী‘আতের অন্যতম মূলনীতি। আল্লাহ তা‘আলা তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ “ইসলামে কোন সংক্রমণ নেই এবং পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করা নেই” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর বাণী: وَفِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الْأَسَدِ “তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে এমনভাবে পলায়ন কর যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর।”
প্রশ্ন: নিম্ন বর্ণিত দু’টি হাদীস— َ لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ “ইসলামে কোন সংক্রমণ নেই এবং পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করা নেই।” এবং وَفِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الْأَسَدِ “তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে পলায়ন কর যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর” এর মাঝে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: আহলে ইলমদের নিকট উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। উভয় হাদীসই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী। তিনি বলেন, « لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ » এ হাদীস দ্বারা জাহিলিয়্যাতের যুগের কু-সংস্কারকে না করা হয়েছে। তারা এ কথা বিশ্বাস করত যে, কিছু রোগ এমন রয়েছে যেগুলো নিজ ক্ষমতায় একজন থেকে অপর জনের দেহে বিস্তার করতে পারে এবং রোগীর সাথে উঠবস করলে তাতে সেও আক্রান্ত হবে। এ বিশ্বাস ছিল ভ্রান্ত ও কু-সংস্কার। মূলত: মানুষের রোগ-ব্যাধি আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় হয়ে থাকে। বাস্তবতা হলো অনেক সময় দেখা যায় একজন সুস্থ ব্যক্তি রোগীর সাথে উঠবস করার পরও সে আক্রান্ত হয় না। এ কারণে খুজলি পাঁচড়ায় আক্রান্ত উটের সাথে সুস্থ উট মেশা বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, فمن أجرب الأول “প্রথমটির মধ্যে কোথা থেকে সংক্রমণ ঘটল।” [ইবন মাযাহ, হাদীস নং ৩৫৪০] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— “তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে এমনভাবে পলায়ন কর যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২২] অপর হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— «لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ » . “অসুস্থ ব্যক্তি যেন সুস্থ ব্যক্তিদের নিকট গমন না করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২২] এর উত্তর হলো, রোগের মধ্যে সংক্রমণের ক্ষমতা আছে এ কথা বিশ্বাস না করা। কিন্তু একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য যে সব কারণগুলো দ্বারা রোগমুক্ত থাকা যায় সেগুলো গ্রহণ করা বৈধ। যেমন—আল্লাহর ইচ্ছায় রোগটি অসুস্থ ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রমণ হতে পারে এ আশঙ্কায় আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে খারাবীর কারণসমূহ থেকে সতর্ক থাকা ও শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকার লক্ষে সুস্থ উটগুলোকে খুজলি পাঁচড়া বা সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত উটগুলোর নিকট নিয়ে না যাওয়া এবং দূরে রাখা। অন্যথায় শয়তান মানুষকে এ বলে ধোঁকা দিতে পারে যে, নিশ্চয় সে সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা বা কুদরতের কারণে নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: নিম্ন বর্ণিত দু’টি হাদীস— َ لَا عَدْوَى وَلَا طِيَرَةَ “ইসলামে কোন সংক্রমণ নেই এবং পাখি উড়িয়ে ভাগ্য নির্ধারণ করা নেই।” এবং وَفِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الْأَسَدِ “তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে পলায়ন কর যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর” এর মাঝে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: আহলে ইলমদের নিকট উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। উভয় হাদীসই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী। তিনি বলেন, « لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ صَفَرَ وَلاَ هَامَةَ » এ হাদীস দ্বারা জাহিলিয়্যাতের যুগের কু-সংস্কারকে না করা হয়েছে। তারা এ কথা বিশ্বাস করত যে, কিছু রোগ এমন রয়েছে যেগুলো নিজ ক্ষমতায় একজন থেকে অপর জনের দেহে বিস্তার করতে পারে এবং রোগীর সাথে উঠবস করলে তাতে সেও আক্রান্ত হবে। এ বিশ্বাস ছিল ভ্রান্ত ও কু-সংস্কার। মূলত: মানুষের রোগ-ব্যাধি আল্লাহর কুদরত ও ইচ্ছায় হয়ে থাকে। বাস্তবতা হলো অনেক সময় দেখা যায় একজন সুস্থ ব্যক্তি রোগীর সাথে উঠবস করার পরও সে আক্রান্ত হয় না। এ কারণে খুজলি পাঁচড়ায় আক্রান্ত উটের সাথে সুস্থ উট মেশা বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, فمن أجرب الأول “প্রথমটির মধ্যে কোথা থেকে সংক্রমণ ঘটল।” [ইবন মাযাহ, হাদীস নং ৩৫৪০] আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— “তুমি কুষ্ঠ রোগ থেকে এমনভাবে পলায়ন কর যেমন তুমি বাঘ থেকে পলায়ন কর।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২২] অপর হাদীস রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— «لاَ يُورِدُ مُمْرِضٌ عَلَى مُصِحٍّ » . “অসুস্থ ব্যক্তি যেন সুস্থ ব্যক্তিদের নিকট গমন না করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২২] এর উত্তর হলো, রোগের মধ্যে সংক্রমণের ক্ষমতা আছে এ কথা বিশ্বাস না করা। কিন্তু একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য যে সব কারণগুলো দ্বারা রোগমুক্ত থাকা যায় সেগুলো গ্রহণ করা বৈধ। যেমন—আল্লাহর ইচ্ছায় রোগটি অসুস্থ ব্যক্তি থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে সংক্রমণ হতে পারে এ আশঙ্কায় আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকা। অনুরূপভাবে খারাবীর কারণসমূহ থেকে সতর্ক থাকা ও শয়তানের কু-মন্ত্রণা থেকে নিরাপদ থাকার লক্ষে সুস্থ উটগুলোকে খুজলি পাঁচড়া বা সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত উটগুলোর নিকট নিয়ে না যাওয়া এবং দূরে রাখা। অন্যথায় শয়তান মানুষকে এ বলে ধোঁকা দিতে পারে যে, নিশ্চয় সে সংক্রমণের কারণে আক্রান্ত হয়েছে। আল্লাহর ইচ্ছা বা কুদরতের কারণে নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— « إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৭০২] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ قَبْلَهُ “আল্লাহ ছিলেন তার পূর্বে কোন কিছুই ছিল না।”
প্রশ্ন: নিম্ন বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, . كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ قَبْلَهُ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ “আল্লাহ ছিলেন, তার পূর্বে আর কোন কিছু ছিল না। তার আরশ ছিল পানির ওপর। তিনি নিজ হাতে সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন তারপর তিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেন।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং 7418] মুসনাদে ইমাম আহমাদে লাকীত ইবনে সাবুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, قلت يا رسول الله أين كان ربنا قبل أن يخلق خلقه ؟ قال ( كان في عماء ما تحته هواء وما فوقه هواء وما ثم خلق عرشه على الماء ) “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মাখলুক সৃষ্টি করার পূর্বে আমাদের রব কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, মেঘের মধ্যে তার উপরেও পানি ছিল না এবং তার নিচেও পানি ছিল না এবং সেখানে কোন মাখলুক ছিল না, তার আরশ ছিল পানির উপর।” [ইবন মাযা, হাদীস নং 182 আলবানী হাদীসটিকে দূর্বল বলেছেন।] অপর হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন।” সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম মাখলুক কি এ বিষয়ে হাদীসগুলোর বাহ্যিক অর্থ বিরোধপূর্ণ। অনুরূপভাবে অপর একটি হাদীস রয়েছে যাতে বলা হয়েছে—“সর্ব প্রথম সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”। এ সব বিরোধপূর্ণ হাদীসের সমাধান কি?
উত্তর: হাদীসগুলো মীমাংসিত সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিরোধপূর্ণ নয়। আমাদের জানা সর্বপ্রথম তিনি আরশ সৃষ্টি করেছেন। আসমানসমূহ সৃষ্টির পর তিনি আরশে আরোহণ করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۗ ٧﴾ [ هود : ٧ ] “আর তিনিই আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৭] কলম সম্পর্কীয় হাদীসে এ কথার প্রমাণ নেই যে, সর্ব প্রথম কলমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। বরং হাদীসের অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা যখন কলম সৃষ্টি করেন তখন তাকে তিনি লিখতে নির্দেশ দেন। তখন প্রতিটি বস্তুর ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন মানুষ। তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের বীর্য থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির দিক বিবেচনায় অন্য মাখলুকের তুলনায় তার কোন ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য নেই। তিনি নিজেই তার নিজের সম্পর্কে বলেন, إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ . “নিশ্চয় আমি একজন মানুষ আমিও ভুল করি যেমন তোমরা ভুল কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪০১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্ত হন, তৃষ্ণার্ত হন, তার ঠাণ্ডা লাগে, গরম লাগে, অসুস্থ হয়, মৃত্যু বরণ করেন এবং মানুষ হিসেবে মানবিক যত দুর্বলতা অন্য মানুষের থাকে তাকেও তার সবকিছুরই সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন্যান্য মানুষের তুলনায় তার পার্থক্য হলো, তার কাছে অহী প্রেরণ করা হয়েছে অন্যদের কাছে নয়, তিনি রিসালাতের অধিকারী অন্যরা নয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ ١٢٤﴾ [ الانعام : ١٢٤ ] “আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪] আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: নিম্ন বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, . كَانَ اللَّهُ وَلَمْ يَكُنْ شَيْءٌ قَبْلَهُ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ ثُمَّ خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضَ “আল্লাহ ছিলেন, তার পূর্বে আর কোন কিছু ছিল না। তার আরশ ছিল পানির ওপর। তিনি নিজ হাতে সবকিছু লিপিবদ্ধ করেন তারপর তিনি আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেন।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং 7418] মুসনাদে ইমাম আহমাদে লাকীত ইবনে সাবুরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, قلت يا رسول الله أين كان ربنا قبل أن يخلق خلقه ؟ قال ( كان في عماء ما تحته هواء وما فوقه هواء وما ثم خلق عرشه على الماء ) “আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! মাখলুক সৃষ্টি করার পূর্বে আমাদের রব কোথায় ছিলেন? তিনি বললেন, মেঘের মধ্যে তার উপরেও পানি ছিল না এবং তার নিচেও পানি ছিল না এবং সেখানে কোন মাখলুক ছিল না, তার আরশ ছিল পানির উপর।” [ইবন মাযা, হাদীস নং 182 আলবানী হাদীসটিকে দূর্বল বলেছেন।] অপর হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِنَّ أَوَّلَ مَا خَلَقَ اللَّهُ الْقَلَمَ “আল্লাহ তা‘আলা সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন।” সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম মাখলুক কি এ বিষয়ে হাদীসগুলোর বাহ্যিক অর্থ বিরোধপূর্ণ। অনুরূপভাবে অপর একটি হাদীস রয়েছে যাতে বলা হয়েছে—“সর্ব প্রথম সৃষ্টি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”। এ সব বিরোধপূর্ণ হাদীসের সমাধান কি?
উত্তর: হাদীসগুলো মীমাংসিত সামঞ্জস্যপূর্ণ, বিরোধপূর্ণ নয়। আমাদের জানা সর্বপ্রথম তিনি আরশ সৃষ্টি করেছেন। আসমানসমূহ সৃষ্টির পর তিনি আরশে আরোহণ করেন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَهُوَ ٱلَّذِي خَلَقَ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٖ وَكَانَ عَرۡشُهُۥ عَلَى ٱلۡمَآءِ لِيَبۡلُوَكُمۡ أَيُّكُمۡ أَحۡسَنُ عَمَلٗاۗ ٧﴾ [ هود : ٧ ] “আর তিনিই আসমানসমূহ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন ছয় দিনে, আর তাঁর আরশ ছিল পানির উপর, যাতে তিনি পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে আমলে সর্বোত্তম।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৭] কলম সম্পর্কীয় হাদীসে এ কথার প্রমাণ নেই যে, সর্ব প্রথম কলমকে সৃষ্টি করা হয়েছে। বরং হাদীসের অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা যখন কলম সৃষ্টি করেন তখন তাকে তিনি লিখতে নির্দেশ দেন। তখন প্রতিটি বস্তুর ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনি অন্যান্য মানুষের মতোই একজন মানুষ। তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের বীর্য থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। সৃষ্টির দিক বিবেচনায় অন্য মাখলুকের তুলনায় তার কোন ব্যতিক্রম বৈশিষ্ট্য নেই। তিনি নিজেই তার নিজের সম্পর্কে বলেন, إِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ مِثْلُكُمْ أَنْسَى كَمَا تَنْسَوْنَ . “নিশ্চয় আমি একজন মানুষ আমিও ভুল করি যেমন তোমরা ভুল কর।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪০১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্ষুধার্ত হন, তৃষ্ণার্ত হন, তার ঠাণ্ডা লাগে, গরম লাগে, অসুস্থ হয়, মৃত্যু বরণ করেন এবং মানুষ হিসেবে মানবিক যত দুর্বলতা অন্য মানুষের থাকে তাকেও তার সবকিছুরই সম্মুখীন হতে হয়েছে। অন্যান্য মানুষের তুলনায় তার পার্থক্য হলো, তার কাছে অহী প্রেরণ করা হয়েছে অন্যদের কাছে নয়, তিনি রিসালাতের অধিকারী অন্যরা নয়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ٱللَّهُ أَعۡلَمُ حَيۡثُ يَجۡعَلُ رِسَالَتَهُۥۗ ١٢٤﴾ [ الانعام : ١٢٤ ] “আল্লাহ ভালো জানেন, তিনি কোথায় তাঁর রিসালাত অর্পণ করবেন।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ১২৪] আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: فَلاَ يَقُلِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى إِنْ شِئْتَ “হে আল্লাহ যদি তুমি চাও আমাকে ক্ষমা কর” এবং অপর বাণী - «وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ » “যদি আল্লাহ চান বিনিময় মিলবে”
প্রশ্ন: একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— « إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلاَ يَقُلِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى إِنْ شِئْتَ وَلَكِنْ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ وَلْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَتَعَاظَمُهُ شَىْءٌ أَعْطَاهُ » . “যখন তোমাদের কেউ দো‘য়া করে সে যেন এ কথা না বলে, হে আল্লাহ যদি চাও তুমি ক্ষমা কর। যদি তুমি চাও দয়া কর। তবে যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন দৃঢ়তার সাথে চাইবে এবং বড় গলায় চাইবে। কারণ, আল্লাহর নিকট কোন কিছুই মহান নয়।” [মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮৮] এবং হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ » . “তৃষ্ণা দূরীভুত হয়ে গেছে এবং রগগুলো শুকিয়ে গেছে এবং বিনিময়ও সাব্যস্ত হয়ে গেছে ইনশা আল্লাহ।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৯] উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উত্তর: প্রথম হাদীসটি বিশুদ্ধ। যে শব্দটি বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, তার কারণ, তাতে একাধিক ত্রুটি রয়েছে যা আকীদা ও বিশ্বাসের পরিপন্থী। যেমন—
১— কেই এমন আছে যে, আল্লাহকে বাধ্য করেন।
২— আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত এতো মহান যা তুমি পেতেই পারো না। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘লাআ যে জিনিষটি দিয়ে থাকেন তাকে মহান ভাবা যাবে না। যখন তুমি কোন মানুষকে বললে যদি চাও আমাকে এক মিলিয়ন ডলার দাও। সে একে বড় মনে করছ বলেই, তুমি বলছ, إِنْ شِئْتَ ‘যদি চাও’। আর অনুরূপভাবে তুমি তাকে এ কথাও জানিয়ে দিচ্ছ যে, তুমি তার অনুদানের প্রতি অমুখাপেক্ষি। যদি সে দেয় তাহলে ভালো আর যদি না দেয় তাতেও কোন অসুবিধা নেই। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে إِنْ شِئْتَ ‘যদি চাও’ এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
আর দ্বিতীয় হাদীসে إِنْ شَاءَ اللَّهُ ‘যদি আল্লাহ চান’ বলা আর প্রথম হাদীসের إِنْ شِئْتَ ‘যদি তুমি চাও’ উভয়টি এক নয়। কারণ, দ্বিতীয় হাদীসে إِنْ شَاءَ اللَّهُ ‘যদি আল্লাহ চান’ এ কথাটি প্রথমটি তুলনায় অনেকটা সহনীয় ও হালকা। আর এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য বরকত হাসিল করা, শর্ত যুক্ত করা নয়। সুতরাং উভয় হাদীসের বিরোধ নিরসন এভাবে করা যাবে যে, প্রথম হাদীসের তুলনায় দ্বিতীয় হাদীসের বিষয় সহনীয় পর্যায়ের।
এর ওপর প্রশ্ন হয় যে, যদি তিনি চান এ কথাটি বলাও নিষিদ্ধ। إِنْ شِئْتَ ‘যদি তুমি চাও’ এ কথার মতো এতটা জঘন্য নয়। তাহলে প্রশ্নকারী প্রশ্নে যে হাদীস উল্লেখ করেছেন, সে হাদীসে একটি নিষিদ্ধ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে বললেন?
হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কিন্তু বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, তখন তিনি বলতেন, قَالَ لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ “কোন অসুবিধা নেই ‘যদি আল্লাহ চান’ গুণাহ থেকে পবিত্রতা।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৬১৬] এ বাক্যটি নিয়মনীতি অনুযায়ী যদিও সংবাদ সুচক বাক্য কিন্তু মুলত বাক্যটি চাওয়া ও আকাঙ্খার অর্থে। এ কথাটির ভিত্তি হলো আল্লাহর নিকট আশা করা। অর্থাৎ এ আশা করা যে, তার অসুস্থতা যেন, গুনাহ থেকে তার পবিত্রতার কারণ হয়। একই অর্থ দ্বিতীয় হাদীসের মধেও যাতে বলা হয়েছে—তা আশা করার ওপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ সালেহ আল-উসাইমীন
প্রশ্ন: একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— « إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فَلاَ يَقُلِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى إِنْ شِئْتَ وَلَكِنْ لِيَعْزِمِ الْمَسْأَلَةَ وَلْيُعَظِّمِ الرَّغْبَةَ فَإِنَّ اللَّهَ لاَ يَتَعَاظَمُهُ شَىْءٌ أَعْطَاهُ » . “যখন তোমাদের কেউ দো‘য়া করে সে যেন এ কথা না বলে, হে আল্লাহ যদি চাও তুমি ক্ষমা কর। যদি তুমি চাও দয়া কর। তবে যখন আল্লাহর কাছে কোন কিছু চাইবে তখন দৃঢ়তার সাথে চাইবে এবং বড় গলায় চাইবে। কারণ, আল্লাহর নিকট কোন কিছুই মহান নয়।” [মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮৮] এবং হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— «ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ » . “তৃষ্ণা দূরীভুত হয়ে গেছে এবং রগগুলো শুকিয়ে গেছে এবং বিনিময়ও সাব্যস্ত হয়ে গেছে ইনশা আল্লাহ।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ২৩৫৯] উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উত্তর: প্রথম হাদীসটি বিশুদ্ধ। যে শব্দটি বলতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন, তার কারণ, তাতে একাধিক ত্রুটি রয়েছে যা আকীদা ও বিশ্বাসের পরিপন্থী। যেমন—
১— কেই এমন আছে যে, আল্লাহকে বাধ্য করেন।
২— আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত এতো মহান যা তুমি পেতেই পারো না। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তা‘লাআ যে জিনিষটি দিয়ে থাকেন তাকে মহান ভাবা যাবে না। যখন তুমি কোন মানুষকে বললে যদি চাও আমাকে এক মিলিয়ন ডলার দাও। সে একে বড় মনে করছ বলেই, তুমি বলছ, إِنْ شِئْتَ ‘যদি চাও’। আর অনুরূপভাবে তুমি তাকে এ কথাও জানিয়ে দিচ্ছ যে, তুমি তার অনুদানের প্রতি অমুখাপেক্ষি। যদি সে দেয় তাহলে ভালো আর যদি না দেয় তাতেও কোন অসুবিধা নেই। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট কোন কিছু চাওয়ার ক্ষেত্রে إِنْ شِئْتَ ‘যদি চাও’ এ কথা বলতে নিষেধ করেছেন।
আর দ্বিতীয় হাদীসে إِنْ شَاءَ اللَّهُ ‘যদি আল্লাহ চান’ বলা আর প্রথম হাদীসের إِنْ شِئْتَ ‘যদি তুমি চাও’ উভয়টি এক নয়। কারণ, দ্বিতীয় হাদীসে إِنْ شَاءَ اللَّهُ ‘যদি আল্লাহ চান’ এ কথাটি প্রথমটি তুলনায় অনেকটা সহনীয় ও হালকা। আর এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য বরকত হাসিল করা, শর্ত যুক্ত করা নয়। সুতরাং উভয় হাদীসের বিরোধ নিরসন এভাবে করা যাবে যে, প্রথম হাদীসের তুলনায় দ্বিতীয় হাদীসের বিষয় সহনীয় পর্যায়ের।
এর ওপর প্রশ্ন হয় যে, যদি তিনি চান এ কথাটি বলাও নিষিদ্ধ। إِنْ شِئْتَ ‘যদি তুমি চাও’ এ কথার মতো এতটা জঘন্য নয়। তাহলে প্রশ্নকারী প্রশ্নে যে হাদীস উল্লেখ করেছেন, সে হাদীসে একটি নিষিদ্ধ কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে বললেন?
হাদীসটির বিশুদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও কিন্তু বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যেতেন, তখন তিনি বলতেন, قَالَ لَا بَأْسَ طَهُورٌ إِنْ شَاءَ اللَّهُ “কোন অসুবিধা নেই ‘যদি আল্লাহ চান’ গুণাহ থেকে পবিত্রতা।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৬১৬] এ বাক্যটি নিয়মনীতি অনুযায়ী যদিও সংবাদ সুচক বাক্য কিন্তু মুলত বাক্যটি চাওয়া ও আকাঙ্খার অর্থে। এ কথাটির ভিত্তি হলো আল্লাহর নিকট আশা করা। অর্থাৎ এ আশা করা যে, তার অসুস্থতা যেন, গুনাহ থেকে তার পবিত্রতার কারণ হয়। একই অর্থ দ্বিতীয় হাদীসের মধেও যাতে বলা হয়েছে—তা আশা করার ওপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ সালেহ আল-উসাইমীন
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “তার দু’টি হাতই ডাম।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর বাণী: الْمُتَكَبِّرُونَ ثُمَّ يَطْوِى الأَرَضِينَ بِشِمَالِهِ “তারপর তিনি সাত স্তর জমিন গুটিয়ে দিবেন এবং স্বীয় বাম হাত দ্বারা সেগুলোকে পাকড়াও করবেন।”
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—তিনি বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশের নূরে মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। তার দুই হাতই ডান।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৪৯২] অপর হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « يَطْوِى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ ثُمَّ يَطْوِى الأَرَضِينَ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِشِمَالِهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ » . “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহকে গুটিয়ে দেবেন তারপর তিনি ডান হাতে নিয়ে বলবেন, আমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, অত্যাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়, তারপর তিনি সাত স্তর জমিন গুটিয়ে দিবেন এবং স্বীয় বাম হাত দ্বারা সেগুলোকে পাকড়াও করবেন এবং , আমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, অত্যাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২৮] হাদীস দু’টির মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করা হবে?
উত্তর: হাদীসে ‘ডান হাত দ্বারা’ বাক্যটি বিষয়ে বর্ণনাকারীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বাক্যটিকে সাব্যস্ত করেছেন আবার কেউ কেউ বাক্যটিকে অস্বীকার করে বলেছেন এ বাক্যটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়। এখানে বিভ্রান্তির মূলে রয়েছে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশে নূরের মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। আর তার দুই হাতই ডান।” এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহর ডান হাত ও বাম হাত বলতে কোন কিছু নেই। কিন্তু ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে অপর একটি হাদীস বর্ণনা করেন যাতে আল্লাহর জন্য বাম হাত সাব্যস্ত করা হয়। যদি হাদীসটি শুদ্ধ হয় তারপরও আমার মতে وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “উভয় হাতই ডান” এ হাদীসের সাথে কোন বিরোধ নেই। কারণ, হাদীসের অর্থ হলো, তার অপর হাত মানুষের বাম হাতের মতো নয়। কারণ, মানুষের বাম হাত ডান হাতের তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহর উভয় হাতই একই। উভয় হাতের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। এ কারণে তিনি বলেন, . وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “উভয় হাতই ডান” অর্থাৎ তার উভয় হাতে কোন দুর্বলতা নেই। বাম হাত সাব্যস্ত করা দ্বারা এ ধারণা জন্মিতে পারে যে, তার বাম হাত ডান হাতের তুলনায় দুর্বল এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “তার উভয় হাতই ডান।” এ কথা সমর্থনে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—তিনি বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশের নূরের মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। তার দুই হাতই ডান।” এখানে উদ্দেশ্য তাদের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করা আর তারা যে রহমানের ডান পাশে হবে সে কথা বলা।
মোট কথা, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলার ভিন্ন ভিন্ন দু’টি হাত রয়েছে। আমরা যদি একটি হাতকে বাম বলি, তবে তার অর্থ এ নয় যে, তার একটি হাত অপর হাতের তুলনায় দুর্বল। বরং তার উভয় হাতই ডান হাতের মতো শক্তিশালী। আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বাম হাত থাকা যদি প্রমাণিত হয়, তবে তার প্রতি ঈমান আনা। আর যদি বাম হাতের বিষয়টি প্রমাণিত না হয়, আমরা বলব, وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “তার উভয় হাতই ডান।” আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন।
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—তিনি বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশের নূরে মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। তার দুই হাতই ডান।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৬৪৯২] অপর হাদীস যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « يَطْوِى اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ السَّمَوَاتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِيَدِهِ الْيُمْنَى ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ ثُمَّ يَطْوِى الأَرَضِينَ ثُمَّ يَأْخُذُهُنَّ بِشِمَالِهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا الْمَلِكُ أَيْنَ الْجَبَّارُونَ أَيْنَ الْمُتَكَبِّرُونَ » . “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা আসমানসমূহকে গুটিয়ে দেবেন তারপর তিনি ডান হাতে নিয়ে বলবেন, আমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, অত্যাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়, তারপর তিনি সাত স্তর জমিন গুটিয়ে দিবেন এবং স্বীয় বাম হাত দ্বারা সেগুলোকে পাকড়াও করবেন এবং , আমি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, অত্যাচারীরা কোথায়? অহংকারীরা কোথায়।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২২৮] হাদীস দু’টির মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করা হবে?
উত্তর: হাদীসে ‘ডান হাত দ্বারা’ বাক্যটি বিষয়ে বর্ণনাকারীদের মধ্যে মত পার্থক্য রয়েছে। কেউ কেউ বাক্যটিকে সাব্যস্ত করেছেন আবার কেউ কেউ বাক্যটিকে অস্বীকার করে বলেছেন এ বাক্যটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুদ্ধ সনদে প্রমাণিত নয়। এখানে বিভ্রান্তির মূলে রয়েছে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ عَزَّ وَجَلَّ وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশে নূরের মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। আর তার দুই হাতই ডান।” এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, আল্লাহর ডান হাত ও বাম হাত বলতে কোন কিছু নেই। কিন্তু ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে অপর একটি হাদীস বর্ণনা করেন যাতে আল্লাহর জন্য বাম হাত সাব্যস্ত করা হয়। যদি হাদীসটি শুদ্ধ হয় তারপরও আমার মতে وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “উভয় হাতই ডান” এ হাদীসের সাথে কোন বিরোধ নেই। কারণ, হাদীসের অর্থ হলো, তার অপর হাত মানুষের বাম হাতের মতো নয়। কারণ, মানুষের বাম হাত ডান হাতের তুলনায় দুর্বল হয়ে থাকে। কিন্তু আল্লাহর উভয় হাতই একই। উভয় হাতের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। এ কারণে তিনি বলেন, . وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “উভয় হাতই ডান” অর্থাৎ তার উভয় হাতে কোন দুর্বলতা নেই। বাম হাত সাব্যস্ত করা দ্বারা এ ধারণা জন্মিতে পারে যে, তার বাম হাত ডান হাতের তুলনায় দুর্বল এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “তার উভয় হাতই ডান।” এ কথা সমর্থনে রয়েছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী—তিনি বলেন, الْمُقْسِطُونَ عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى مَنَابِرَ مِنْ نُورٍ عَنْ يَمِينِ الرَّحْمَنِ “ন্যায় বিচারকারীগণ রহমানের ডান পাশের নূরের মিম্বারের ওপর অধিষ্ঠিত হবে। তার দুই হাতই ডান।” এখানে উদ্দেশ্য তাদের মর্যাদা ও ফযীলত বর্ণনা করা আর তারা যে রহমানের ডান পাশে হবে সে কথা বলা।
মোট কথা, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলার ভিন্ন ভিন্ন দু’টি হাত রয়েছে। আমরা যদি একটি হাতকে বাম বলি, তবে তার অর্থ এ নয় যে, তার একটি হাত অপর হাতের তুলনায় দুর্বল। বরং তার উভয় হাতই ডান হাতের মতো শক্তিশালী। আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বাম হাত থাকা যদি প্রমাণিত হয়, তবে তার প্রতি ঈমান আনা। আর যদি বাম হাতের বিষয়টি প্রমাণিত না হয়, আমরা বলব, وَكِلْتَا يَدَيْهِ يَمِينٌ “তার উভয় হাতই ডান।” আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন।
হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِى ابْنُ آدَمَ “আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয়...।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: الدنيا ملعونة . ملعون مافيها “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং তাতে যা কিছু আছে তাও অভিশপ্ত।”
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা দিয়ে যে বাণী - « قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِى ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ » অর্থ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয় তারা যুগকে গাল দেয় অথচ আমিই যুগ আমি রাত দিনের পরিবর্তনকারী।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০০০] বলেছেন, তার মধ্যে এবং তার অপর বাণী «الدنيا ملعونة . ملعون مافيها إلا ذكر الله وما والاه أو عالما أو متعلما» “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং তাতে যা কিছু আছে তাও অভিশপ্ত তবে আল্লাহর যিকির ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ অথবা আলিম অথবা শিক্ষার্থী।” [ইবন মাযা, হাদীস নং ৪১১২] -এর মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: শাইখ রহ. এ কথা বলে উত্তর দেন যে, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং তাতে যা কিছু আছে তাও অভিশপ্ত” হাদীসটির বিশুদ্ধতা আমার জানা নেই। আমার জানা মতে হাদীসটি দুর্বল। কিন্তু যদি হাদীসটি বিশুদ্ধও ধরা হয়, তবে হাদীসটি গাল দেয়ার অধ্যায়ের হাদীস নয়। বরং হাদীসটি সংবাদ দেওয়া অধ্যায়ের। অর্থাৎ হাদীসে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাতে কোন কল্যাণ নেই কিন্তু যাবতীয় কল্যাণ আলেম, শিক্ষার্থী অথবা আল্লাহর যিকির এবং তার অর্ন্তভুক্ত বিষয়সমূহে নিহিত থাকবে। আর যুগকে গাল দেওয়ার অর্থ, তার মধ্যে সংঘটিত দোষ, ত্রুটি ও তাতে যা সংঘটিত হয় তার প্রতি অসন্তুষ্টি। আর এখানে বিষয়টিকে শুধু যুগের দিকে নিসবত করা হয়েছে। যদিও সবকিছুই আল্লাহর হাতে। যেমন একই হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিই যুগ আমার নিয়ন্ত্রণেই যাবতীয় সব বিষয়— আমিই রাত ও দিনকে পরিবর্তন করি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা দিয়ে যে বাণী - « قَالَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ يُؤْذِينِى ابْنُ آدَمَ يَسُبُّ الدَّهْرَ وَأَنَا الدَّهْرُ أُقَلِّبُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ » অর্থ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আদম সন্তান আমাকে কষ্ট দেয় তারা যুগকে গাল দেয় অথচ আমিই যুগ আমি রাত দিনের পরিবর্তনকারী।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০০০] বলেছেন, তার মধ্যে এবং তার অপর বাণী «الدنيا ملعونة . ملعون مافيها إلا ذكر الله وما والاه أو عالما أو متعلما» “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং তাতে যা কিছু আছে তাও অভিশপ্ত তবে আল্লাহর যিকির ও তার প্রাসঙ্গিক বিষয়সমূহ অথবা আলিম অথবা শিক্ষার্থী।” [ইবন মাযা, হাদীস নং ৪১১২] -এর মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: শাইখ রহ. এ কথা বলে উত্তর দেন যে, “দুনিয়া অভিশপ্ত এবং তাতে যা কিছু আছে তাও অভিশপ্ত” হাদীসটির বিশুদ্ধতা আমার জানা নেই। আমার জানা মতে হাদীসটি দুর্বল। কিন্তু যদি হাদীসটি বিশুদ্ধও ধরা হয়, তবে হাদীসটি গাল দেয়ার অধ্যায়ের হাদীস নয়। বরং হাদীসটি সংবাদ দেওয়া অধ্যায়ের। অর্থাৎ হাদীসে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, তাতে কোন কল্যাণ নেই কিন্তু যাবতীয় কল্যাণ আলেম, শিক্ষার্থী অথবা আল্লাহর যিকির এবং তার অর্ন্তভুক্ত বিষয়সমূহে নিহিত থাকবে। আর যুগকে গাল দেওয়ার অর্থ, তার মধ্যে সংঘটিত দোষ, ত্রুটি ও তাতে যা সংঘটিত হয় তার প্রতি অসন্তুষ্টি। আর এখানে বিষয়টিকে শুধু যুগের দিকে নিসবত করা হয়েছে। যদিও সবকিছুই আল্লাহর হাতে। যেমন একই হাদীসে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমিই যুগ আমার নিয়ন্ত্রণেই যাবতীয় সব বিষয়— আমিই রাত ও দিনকে পরিবর্তন করি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
আল্লাহর কথা ﴿ أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨ ﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] দ্বারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার প্রমাণ পেশ করা। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোক জনের কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।”
প্রশ্ন: ইমাম বুখারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোক জনের কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।” অপর একটি হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, যা এ হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করে যাতে তিনি বলেন, তোমাদের জন্য কুরআনই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] উভয়ের মধ্যে যে বিরোধ পরিলক্ষিত সে বিষয়ে আপনাদের উত্তর কি? মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনের কান্নার কারণে কি শাস্তি দেওয়া হবে? নাকি মানুষের জন্য তাই রয়েছে যা সে অর্জন করে। ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮]
উত্তর: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে আয়াত উল্লেখ করেছেন এবং উল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মুগীরা রা. সহ অন্যান্যদের থেকেও সহীহ বুখারী ও মুসলিমে একই হাদীস বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِمَا يُنَاحُ بِهِ عَلَيْهِ “মৃত ব্যক্তিকে তার ওপর উচ্চ আওয়াজে কান্না-কাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।” বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বর্ণিত, بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “তার ওপর তার পরিবারের কান্নার কারণে” নিয়াহা অর্থ উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু চোখের পানি ফেলানোতে কোন ক্ষতি নেই। ক্ষতি হলো উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাতে। আর উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাকেই নিয়াহা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষকে মৃত ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত রাখা এবং তারা যেন ধৈর্য অবলম্বন করে। তবে চোখের পানি বা অন্তরের ব্যথাতে কোন ক্ষতি নেই। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহীম মারা গেলে তিনি বলেন, إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ “চোখ অশ্রু শিক্ত হয়, অন্তর ব্যথিত হয় আল্লাহ তা‘আলা যে কথায় খুশি হন সে কথাই বলব। হে ইব্রাহীম আমি তোমার বিচ্ছেদে অত্যন্ত ব্যথিত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০৩] সুতরাং, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের উচ্চ আওয়াজে কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। কান্নাকাটি করার কারণে তার যে শাস্তি হয় তার ধরণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার এ ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] বিধান থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বরং একটি অপরটির সত্যায়ন ও ব্যাখ্যা। আয়াতটি এখানে ব্যাপক আর হাদীসটি খাস। সুন্নাহ সাধারণত কুরআনের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা হয়। সুতরাং পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তির শাস্তির আয়াত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আয়াতের মধ্যে এবং হাদীসগুলো মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথাটি তার ইজতিহাদ ও গবেষণা এবং ভালো কর্মের প্রতি তার অধির আগ্রহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা তার কথার ওপর এবং অন্যদের কথার ওপর অবশ্যই প্রাধান্য। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ ١٠﴾ [ الشورى : ١٠ ] “আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১০] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ] “অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯] একই অর্থে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: ইমাম বুখারী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “নিশ্চয় মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের লোক জনের কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।” অপর একটি হাদীস আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, যা এ হাদীসটিকে প্রত্যাখ্যান করে যাতে তিনি বলেন, তোমাদের জন্য কুরআনই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] উভয়ের মধ্যে যে বিরোধ পরিলক্ষিত সে বিষয়ে আপনাদের উত্তর কি? মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবার পরিজনের কান্নার কারণে কি শাস্তি দেওয়া হবে? নাকি মানুষের জন্য তাই রয়েছে যা সে অর্জন করে। ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮]
উত্তর: আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা যে আয়াত উল্লেখ করেছেন এবং উল্লিখিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু মুগীরা রা. সহ অন্যান্যদের থেকেও সহীহ বুখারী ও মুসলিমে একই হাদীস বর্ণিত রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْمَيِّتَ لَيُعَذَّبُ بِمَا يُنَاحُ بِهِ عَلَيْهِ “মৃত ব্যক্তিকে তার ওপর উচ্চ আওয়াজে কান্না-কাটির কারণে শাস্তি দেওয়া হয়।” বুখারীর অপর একটি বর্ণনায় বর্ণিত, بِبُكَاءِ أَهْلِهِ عَلَيْهِ “তার ওপর তার পরিবারের কান্নার কারণে” নিয়াহা অর্থ উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু চোখের পানি ফেলানোতে কোন ক্ষতি নেই। ক্ষতি হলো উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাতে। আর উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করাকেই নিয়াহা বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ কথা দ্বারা উদ্দেশ্য মানুষকে মৃত ব্যক্তিদের জন্য উচ্চ আওয়াজে কান্নাকাটি করা থেকে বিরত রাখা এবং তারা যেন ধৈর্য অবলম্বন করে। তবে চোখের পানি বা অন্তরের ব্যথাতে কোন ক্ষতি নেই। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ছেলে ইবরাহীম মারা গেলে তিনি বলেন, إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُونُونَ “চোখ অশ্রু শিক্ত হয়, অন্তর ব্যথিত হয় আল্লাহ তা‘আলা যে কথায় খুশি হন সে কথাই বলব। হে ইব্রাহীম আমি তোমার বিচ্ছেদে অত্যন্ত ব্যথিত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩০৩] সুতরাং, মৃত ব্যক্তিকে তার পরিবারের উচ্চ আওয়াজে কান্নার কারণে শাস্তি দেওয়া হয়। কান্নাকাটি করার কারণে তার যে শাস্তি হয় তার ধরণ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার এ ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৮] বিধান থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ, কুরআন ও সুন্নাহের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। বরং একটি অপরটির সত্যায়ন ও ব্যাখ্যা। আয়াতটি এখানে ব্যাপক আর হাদীসটি খাস। সুন্নাহ সাধারণত কুরআনের ব্যাখ্যা ও বর্ণনা হয়। সুতরাং পরিবারের লোকদের কান্নার কারণে মৃত ব্যক্তির শাস্তির আয়াত থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ফলে আয়াতের মধ্যে এবং হাদীসগুলো মধ্যে কোন বিরোধ নেই। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার কথাটি তার ইজতিহাদ ও গবেষণা এবং ভালো কর্মের প্রতি তার অধির আগ্রহ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা তার কথার ওপর এবং অন্যদের কথার ওপর অবশ্যই প্রাধান্য। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا ٱخۡتَلَفۡتُمۡ فِيهِ مِن شَيۡءٖ فَحُكۡمُهُۥٓ إِلَى ٱللَّهِۚ ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبِّي عَلَيۡهِ تَوَكَّلۡتُ وَإِلَيۡهِ أُنِيبُ ١٠﴾ [ الشورى : ١٠ ] “আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১০] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَإِن تَنَٰزَعۡتُمۡ فِي شَيۡءٖ فَرُدُّوهُ إِلَى ٱللَّهِ وَٱلرَّسُولِ إِن كُنتُمۡ تُؤۡمِنُونَ بِٱللَّهِ وَٱلۡيَوۡمِ ٱلۡأٓخِرِۚ ذَٰلِكَ خَيۡرٞ وَأَحۡسَنُ تَأۡوِيلًا ٥٩﴾ [ النساء : ٥٩ ] “অতঃপর কোন বিষয়ে যদি তোমরা মতবিরোধ কর তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের দিকে প্রত্যার্পণ করাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রাখ। এটি উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৫৯] একই অর্থে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: الذي يأتي بالشهادة قبل أن يسألها “সে সাক্ষ্য প্রদান করে তার কাছে সাক্ষ্য প্রদান তলব করার পূর্বে।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ “তোমাদের এমন এক সম্প্রদায়ের লোকদের আগমন ঘটবে যারা তাদের কাছে সাক্ষ্য তলব করার পূর্বে সাক্ষ্য প্রদান করবে।”
প্রশ্ন: হাফেয আল-মুনযিরী রহ. সংক্ষিপ্ত সহীহ মুসলিমে পৃষ্ঠা নং ২৮১, হাদীস নং ১০৫৯ যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قال ألا أخبركم بخير الشهداء ؟ الذي يأتي بالشهادة قبل أن يسألها “আমি কি তোমাদের সর্বোত্তম সাক্ষ্যগণ কারা সে বিষয়ে সংবাদ দেব? তারা হলো, যারা তাদের নিকট সাক্ষ্য তলব করার পূর্বে সাক্ষ্য প্রদান করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৯; তিরমিযি, হাদীস নং ২২৯৫] এ হাদীসটির মাঝে এবং পরবর্তী হাদীস— إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ “তোমাদের পর এমন এক সম্প্রদায়ে আগমন ঘটবে তারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হয়নি।” [বর্ণনায় সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৬৫০, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনু মাযাহ, মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমদেও হাদীসটি রয়েছে। যেমনটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় মিফতাহু কুনূযুস সূন্নাহ কিতাবে।] এর মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: যে সব হাদীসে আগে আগে সাক্ষ্য প্রদানকে নিন্দা করা হয়েছে, ঐ হাদীসগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সব যারা সাক্ষ্য প্রদানকে হালকা করে দেখে। তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই এবং ঈমানের দুর্বলতার কারণে যারা সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা বজায় রাখে না।
আর যে সব হাদীসে আগ বাড়িয়ে সাক্ষ্য প্রদানকে প্রশংসা করা হয়েছে তারা হলো ঐ সব লোক যারা সাক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত হয়েছেন। তারা ছাড়া আর কেউ সাক্ষ্য দেয়ার নেই এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো সত্যকে প্রমাণ করা যাতে সত্য চাপা পড়ে না যায়। এ বিষয়ে আরো জানার জন্য দেখুন—ফাতহুল বারী এবং ফাতহুল মাজীদ। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
প্রশ্ন: হাফেয আল-মুনযিরী রহ. সংক্ষিপ্ত সহীহ মুসলিমে পৃষ্ঠা নং ২৮১, হাদীস নং ১০৫৯ যায়েদ ইবন খালেদ আল-জুহানী থেকে হাদীস বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قال ألا أخبركم بخير الشهداء ؟ الذي يأتي بالشهادة قبل أن يسألها “আমি কি তোমাদের সর্বোত্তম সাক্ষ্যগণ কারা সে বিষয়ে সংবাদ দেব? তারা হলো, যারা তাদের নিকট সাক্ষ্য তলব করার পূর্বে সাক্ষ্য প্রদান করে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭১৯; তিরমিযি, হাদীস নং ২২৯৫] এ হাদীসটির মাঝে এবং পরবর্তী হাদীস— إِنَّ بَعْدَكُمْ قَوْمًا يَشْهَدُونَ وَلَا يُسْتَشْهَدُونَ “তোমাদের পর এমন এক সম্প্রদায়ে আগমন ঘটবে তারা সাক্ষ্য দেবে অথচ তাদের নিকট সাক্ষ্য চাওয়া হয়নি।” [বর্ণনায় সহীহ বুখারী হাদীস নং ৩৬৫০, মুসলিম, তিরমিযি, ইবনু মাযাহ, মুয়াত্তা মালেক, মুসনাদে আহমদেও হাদীসটি রয়েছে। যেমনটি ইঙ্গিত পাওয়া যায় মিফতাহু কুনূযুস সূন্নাহ কিতাবে।] এর মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: যে সব হাদীসে আগে আগে সাক্ষ্য প্রদানকে নিন্দা করা হয়েছে, ঐ হাদীসগুলো দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ সব যারা সাক্ষ্য প্রদানকে হালকা করে দেখে। তাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় নেই এবং ঈমানের দুর্বলতার কারণে যারা সাক্ষ্য প্রদানের ক্ষেত্রে সত্যবাদিতা বজায় রাখে না।
আর যে সব হাদীসে আগ বাড়িয়ে সাক্ষ্য প্রদানকে প্রশংসা করা হয়েছে তারা হলো ঐ সব লোক যারা সাক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত হয়েছেন। তারা ছাড়া আর কেউ সাক্ষ্য দেয়ার নেই এবং তাদের উদ্দেশ্য হলো সত্যকে প্রমাণ করা যাতে সত্য চাপা পড়ে না যায়। এ বিষয়ে আরো জানার জন্য দেখুন—ফাতহুল বারী এবং ফাতহুল মাজীদ। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— ولا طيرة ولا هامة “অলক্ষ্মী ও অযাত্রা বলতে কিছু নেই।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— إن كان في شيء ففي المرأة والفرس والمسكن “অযাত্রা বলতে যদি কোন কিছু থাকতো তবে তা ঘোড়া, নারী বা বাড়ীতে থাকত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৭০৪]
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— ولا طيرة ولا هامة “অলক্ষ্মী ও অযাত্রা বলতে কিছু নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৮০]—এর মধ্যে এবং অপর বাণী যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, — إن كان في شيء ففي المرأة والفرس والمسكن “অযাত্রা বলতে যদি কোন কিছু থাকতো তবে তা ঘোড়া, নারী ও ঘরের মধ্যে থাকতো” উভয় হাদীসের বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: ভাগ্য নিরূপণ দুই প্রকার। একটি হলো শির্ক দ্বারা। দৃশ্যমান ও শ্রবণযোগ্য বস্তু দ্বারা অযাত্রা বা যাত্রা ভঙ্গ বলে বিশ্বাস করা। একে তিয়ারাহ বলা হয়। এ ধরণের ভাগ্য নিরূপণ করা শির্ক যা সম্পূর্ণ হারাম।
দ্বিতীয় প্রকার হলো কিছু জিনিষকে উল্লিখিত বিষয়সমূহ থেকে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ধরনের বিষয়গুলো নিষিদ্ধ নয়। এ কারণেই বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, والشؤم في ثلاث في المرأة والدار والدابة “অযাত্রা তিনটি বস্তুর মধ্যে হয়। নারীর মধ্যে, ঘরের মধ্যে এবং বাহনের মধ্যে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪২১, ৫৭৫৩] এ ধরনের বিষয়ের মধ্যে বদ-ফালী গ্রহণ করা নিষিদ্ধ বদ-ফালী নয়। কারণ, অনেকে বলেন, কতক নারী, বাহন এমন আছে যাদের মধ্যে আল্লাহর হুকুমে অযাত্রা রয়েছে। এ হলো, কাদারী-ভাগ্যের অকল্যাণ। যখন কোন ব্যক্তি এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে তখন সে যদি অনুপযোগী ঘরকে ছেড়ে দেয়, স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং আরোহণকে ছেড়ে দেয় তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। এটি কোন বদ-ফালী বা অযাত্রা গ্রহণ করা নয়।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— ولا طيرة ولا هامة “অলক্ষ্মী ও অযাত্রা বলতে কিছু নেই।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৩৮০]—এর মধ্যে এবং অপর বাণী যাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, — إن كان في شيء ففي المرأة والفرس والمسكن “অযাত্রা বলতে যদি কোন কিছু থাকতো তবে তা ঘোড়া, নারী ও ঘরের মধ্যে থাকতো” উভয় হাদীসের বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: ভাগ্য নিরূপণ দুই প্রকার। একটি হলো শির্ক দ্বারা। দৃশ্যমান ও শ্রবণযোগ্য বস্তু দ্বারা অযাত্রা বা যাত্রা ভঙ্গ বলে বিশ্বাস করা। একে তিয়ারাহ বলা হয়। এ ধরণের ভাগ্য নিরূপণ করা শির্ক যা সম্পূর্ণ হারাম।
দ্বিতীয় প্রকার হলো কিছু জিনিষকে উল্লিখিত বিষয়সমূহ থেকে বাদ দিয়ে রাখা হয়েছে। এ ধরনের বিষয়গুলো নিষিদ্ধ নয়। এ কারণেই বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, والشؤم في ثلاث في المرأة والدار والدابة “অযাত্রা তিনটি বস্তুর মধ্যে হয়। নারীর মধ্যে, ঘরের মধ্যে এবং বাহনের মধ্যে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪২১, ৫৭৫৩] এ ধরনের বিষয়ের মধ্যে বদ-ফালী গ্রহণ করা নিষিদ্ধ বদ-ফালী নয়। কারণ, অনেকে বলেন, কতক নারী, বাহন এমন আছে যাদের মধ্যে আল্লাহর হুকুমে অযাত্রা রয়েছে। এ হলো, কাদারী-ভাগ্যের অকল্যাণ। যখন কোন ব্যক্তি এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হবে তখন সে যদি অনুপযোগী ঘরকে ছেড়ে দেয়, স্ত্রীকে তালাক দেয় এবং আরোহণকে ছেড়ে দেয় তাতে তার কোন গুনাহ হবে না। এটি কোন বদ-ফালী বা অযাত্রা গ্রহণ করা নয়।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ “আমাদের রব প্রতি রাতে অবতরণ করেন।” বাস্তবতা হলো, আমাদের এখানে যখন রাত তখন আমেরিকাতে দিন।
প্রশ্ন: আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অবতরণ বিষয়ক হাদীস এবং বাস্তবতা— আমাদের এখানে যখন রাত আমেরিকাতে তখন দিন—হাদীসের মধ্যে এবং বাস্তবতার মাঝে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
ইমাম বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমামগণ কর্তৃক আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। যাতে রাসূলুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ . “রাতের শেষাংশের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর বলে কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দিবো। কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫] ইমাম বুখারী দো‘য়া এবং শেষ রাতের সালাত পরিচ্ছেদে উল্লিখিত শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে প্রশ্ন হলো, এ হাদীস ও বাস্তবতা— অর্থাৎ আমাদের এখানে যখন রাত তখন আমেরিকাতে দিন —এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা কি?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তেমন কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ, হাদীসটি আল্লাহর কর্মগত সিফাতসমূহের অর্ন্তভুক্ত একটি হাদীস। আল্লাহর সিফাত বিষয়ে সত্বাগত হোক, যেমন—চেহারা, দুই হাত অথবা আধ্যাত্মিক হোক যেমন—হায়াত, ইলম অথবা কর্মগত হোক যেমন—আরশে আরোহন করা, দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করা ইত্যাদি সর্বাবস্থায় আমাদের ওপর নিম্ন বিষয়গুলো গুলো মেনে নেয়া ওয়াজিব।
এক— কুরআন ও সুন্নাহে এর বর্ণনা যেভাবে এসেছে, সেভাবে তার অর্থ ও যথাযোগ্য বাস্তবতার প্রতি ঈমান আনা।
দুই—অন্তরে বা মুখে কোন একটি ধরণ চিন্তা বা ব্যক্ত করে তার জন্য কোন আকৃতি বা ধরণ সাব্যস্ত করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। কারণ, এটি আল্লাহর ওপর এমন কথা বলা যে সম্পর্কে তার কোন ইলম বা জ্ঞান নেই। আল্লাহ তা‘আলা একে হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣﴾ [ الاعراف : ٣٣ ] “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উাপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৩৩] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦﴾ [ الاسراء : ٣٦ ] “আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
মাখলুকের জন্য আল্লাহর সিফাতের ধরণ জানা ও বাস্তবতা আয়ত্ত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে ও মহান। কোন কিছু হুবহু বা তার দৃষ্টান্ত দেখা ছাড়া অথবা যিনি দেখেছেন তার সত্য সংবাদ ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না। আর আল্লাহর সিফাতের ধরণ বিষয়ে এর কোনটিই আমাদের নিকট উপস্থিত নেই।
তিন—মাখলুকের সিফাতের সাথে দৃষ্টান্ত স্থাপন থেকে বিরত থাকা। চাই অন্তরে চিন্তা করে হোক অথবা মুখে উচ্চারণ করে হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহর সিফাত বিষয়ে আমাদের করনীয় কি তা জানার পর আল্লাহর সিফাত সম্পর্কীয় অবতরণের হাদীস ও অন্যান্য হাদীস বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন অবশিষ্ট থাকার কথা নয়।
পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত থেকে নিয়ে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র উম্মতকে সম্বোধন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। তার সংবাদ দেওয়াটি গাইবী বিষয়ে সংবাদ যা আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে প্রকাশ করেছেন। আর যিনি তাকে এ সংবাদ জানিয়েছেন তিনি মহান আল্লাহ যিনি সময়ের ব্যবধান অর্থাৎ এক দেশে দুপুর বারোটা হয়ে পৃথিবীর অন্য দেশে তখন রাত বারোটা—এ সম্পর্কে অবশ্যই অবগত রয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সমস্ত উম্মতকে সম্বোধন করে এ হাদীস বলেছেন, যাতে শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আল্লাহর অবতরণ করার কথা বিশেষভাবে রয়েছে, তাতে সমস্ত উম্মতকে এ হাদীসটি সামিল করেছে। ফলে যে উম্মতের মধ্যে রাতের এক তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত হবে তাদের কাছে আল্লাহর অবতরণও সাব্যস্ত হবে। আমরা তাদের বলব, তোমাদের ক্ষেত্রে এটিই হলো আল্লাহর অবতরণের সময় এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আর যাদের নিকট রাতের শেষাংশ এখনো আসেনি সেখানে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর অবতরণও সাব্যস্ত হয়নি। দুনিয়ার আকাশে আল্লাহর অবতরণের বিশেষ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্ধারণ করেছেন। যখন ঐ সময় আসবে তখন অবতরণ পাওয়া যাবে। আর যখন ঐ সময়টি শেষ হবে তখন আর অবতরণও অবশিষ্ট থাকবে না। এ বিষয়ে অস্পষ্টতা ও আপত্তির কোন সুযোগ নেই। মাখলুকের অবতরণের ক্ষেত্রে যদিও বিষয়টি চিন্তা করা বা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু আল্লাহর অবতরণ ও মাখলুকের অবতরণ এক নয়, যার ওপর কিয়াস করা যেতে পারে এবং বলা যায় যে, মাখলুকের ক্ষেত্রে যেটি অসম্ভব আল্লাহর ক্ষেত্রেও সেটি অসম্ভব।
যেমন—আমাদের দেশে যখন ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় তখন পশ্চিমাদের দেশে রাতের এক তৃতীয়াংশ শুরু হয়। তখন আমরা বলব, আল্লাহর অবতরণের সময় আমাদের ক্ষেত্রে শেষ হয়ে গেছে এবং তাদের ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এটি একেবারেই সাধারণ ব্যাপার মাত্র। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. অবতরণের হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য আল্লাহর অবতরণ তাদের দেশের রাতের পরিমাণ অনুযায়ী। পশ্চিম প্রান্ত ও পূর্ব প্রান্তের ন্যায় উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তেও রাতের পরিমাণ অনুযায়ী আল্লাহর অবতরণের নির্ধারিত সময়ের ব্যবধান হবে।
এ ছাড়াও যখন কোন সম্প্রদায়ে নিকট রাতের এক তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত হলো এবং তাদের নিকটবর্তী অন্য দেশে একটু পরেই রাতের এক তৃতীয়াংশ পাওয়া গেল, তখন তাদের নিকটও আল্লাহর অবতরণ সাব্যস্ত হবে, যে সম্পর্কে মহা সত্যবাদী আমাদের প্রিয় নবী সংবাদ দিয়েছেন। এভাবেই পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহর অবতরণ পাওয়া যাবে ও সাব্যস্ত হবে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আবু হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অবতরণ বিষয়ক হাদীস এবং বাস্তবতা— আমাদের এখানে যখন রাত আমেরিকাতে তখন দিন—হাদীসের মধ্যে এবং বাস্তবতার মাঝে কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
ইমাম বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য ইমামগণ কর্তৃক আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। যাতে রাসূলুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, يَنْزِلُ رَبُّنَا تَبَارَكَ وَتَعَالَى كُلَّ لَيْلَةٍ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا حِينَ يَبْقَى ثُلُثُ اللَّيْلِ الْآخِرُ يَقُولُ مَنْ يَدْعُونِي فَأَسْتَجِيبَ لَهُ مَنْ يَسْأَلُنِي فَأُعْطِيَهُ مَنْ يَسْتَغْفِرُنِي فَأَغْفِرَ لَهُ . “রাতের শেষাংশের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকা অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা প্রতি রাতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। অতঃপর বলে কে আছ আমার কাছে চাইবে আমি তাকে দিবো। কে আমাকে ডাকবে আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আমি তাকে ক্ষমা করব।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৪৫] ইমাম বুখারী দো‘য়া এবং শেষ রাতের সালাত পরিচ্ছেদে উল্লিখিত শব্দে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি সম্পর্কে প্রশ্ন হলো, এ হাদীস ও বাস্তবতা— অর্থাৎ আমাদের এখানে যখন রাত তখন আমেরিকাতে দিন —এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা কি?
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ, বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তেমন কোন প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। কারণ, হাদীসটি আল্লাহর কর্মগত সিফাতসমূহের অর্ন্তভুক্ত একটি হাদীস। আল্লাহর সিফাত বিষয়ে সত্বাগত হোক, যেমন—চেহারা, দুই হাত অথবা আধ্যাত্মিক হোক যেমন—হায়াত, ইলম অথবা কর্মগত হোক যেমন—আরশে আরোহন করা, দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করা ইত্যাদি সর্বাবস্থায় আমাদের ওপর নিম্ন বিষয়গুলো গুলো মেনে নেয়া ওয়াজিব।
এক— কুরআন ও সুন্নাহে এর বর্ণনা যেভাবে এসেছে, সেভাবে তার অর্থ ও যথাযোগ্য বাস্তবতার প্রতি ঈমান আনা।
দুই—অন্তরে বা মুখে কোন একটি ধরণ চিন্তা বা ব্যক্ত করে তার জন্য কোন আকৃতি বা ধরণ সাব্যস্ত করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। কারণ, এটি আল্লাহর ওপর এমন কথা বলা যে সম্পর্কে তার কোন ইলম বা জ্ঞান নেই। আল্লাহ তা‘আলা একে হারাম ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ ٣٣﴾ [ الاعراف : ٣٣ ] “বল, ‘আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোন প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উাপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ৩৩] অপর আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلَا تَقۡفُ مَا لَيۡسَ لَكَ بِهِۦ عِلۡمٌۚ إِنَّ ٱلسَّمۡعَ وَٱلۡبَصَرَ وَٱلۡفُؤَادَ كُلُّ أُوْلَٰٓئِكَ كَانَ عَنۡهُ مَسُۡٔولٗا ٣٦﴾ [ الاسراء : ٣٦ ] “আর যে বিষয় তোমার জানা নাই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ ও অন্তকরণ- এদের প্রতিটির ব্যাপারে সে জিজ্ঞাসিত হবে।” [সূরা আল-ইসরা, আয়াত: ৩৬]
মাখলুকের জন্য আল্লাহর সিফাতের ধরণ জানা ও বাস্তবতা আয়ত্ত করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়। তা থেকে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে ও মহান। কোন কিছু হুবহু বা তার দৃষ্টান্ত দেখা ছাড়া অথবা যিনি দেখেছেন তার সত্য সংবাদ ছাড়া আয়ত্ত করা যায় না। আর আল্লাহর সিফাতের ধরণ বিষয়ে এর কোনটিই আমাদের নিকট উপস্থিত নেই।
তিন—মাখলুকের সিফাতের সাথে দৃষ্টান্ত স্থাপন থেকে বিরত থাকা। চাই অন্তরে চিন্তা করে হোক অথবা মুখে উচ্চারণ করে হোক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
আল্লাহর সিফাত বিষয়ে আমাদের করনীয় কি তা জানার পর আল্লাহর সিফাত সম্পর্কীয় অবতরণের হাদীস ও অন্যান্য হাদীস বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন অবশিষ্ট থাকার কথা নয়।
পৃথিবীর পশ্চিম প্রান্ত থেকে নিয়ে পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র উম্মতকে সম্বোধন করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ সংবাদ দেন যে, আল্লাহ তা‘আলা রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে দুনিয়ার আকাশে নেমে আসেন। তার সংবাদ দেওয়াটি গাইবী বিষয়ে সংবাদ যা আল্লাহ তা‘আলা তার কাছে প্রকাশ করেছেন। আর যিনি তাকে এ সংবাদ জানিয়েছেন তিনি মহান আল্লাহ যিনি সময়ের ব্যবধান অর্থাৎ এক দেশে দুপুর বারোটা হয়ে পৃথিবীর অন্য দেশে তখন রাত বারোটা—এ সম্পর্কে অবশ্যই অবগত রয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সমস্ত উম্মতকে সম্বোধন করে এ হাদীস বলেছেন, যাতে শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে আল্লাহর অবতরণ করার কথা বিশেষভাবে রয়েছে, তাতে সমস্ত উম্মতকে এ হাদীসটি সামিল করেছে। ফলে যে উম্মতের মধ্যে রাতের এক তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত হবে তাদের কাছে আল্লাহর অবতরণও সাব্যস্ত হবে। আমরা তাদের বলব, তোমাদের ক্ষেত্রে এটিই হলো আল্লাহর অবতরণের সময় এবং গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আর যাদের নিকট রাতের শেষাংশ এখনো আসেনি সেখানে তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহর অবতরণও সাব্যস্ত হয়নি। দুনিয়ার আকাশে আল্লাহর অবতরণের বিশেষ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্ধারণ করেছেন। যখন ঐ সময় আসবে তখন অবতরণ পাওয়া যাবে। আর যখন ঐ সময়টি শেষ হবে তখন আর অবতরণও অবশিষ্ট থাকবে না। এ বিষয়ে অস্পষ্টতা ও আপত্তির কোন সুযোগ নেই। মাখলুকের অবতরণের ক্ষেত্রে যদিও বিষয়টি চিন্তা করা বা মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু আল্লাহর অবতরণ ও মাখলুকের অবতরণ এক নয়, যার ওপর কিয়াস করা যেতে পারে এবং বলা যায় যে, মাখলুকের ক্ষেত্রে যেটি অসম্ভব আল্লাহর ক্ষেত্রেও সেটি অসম্ভব।
যেমন—আমাদের দেশে যখন ফজরের ওয়াক্ত শুরু হয় তখন পশ্চিমাদের দেশে রাতের এক তৃতীয়াংশ শুরু হয়। তখন আমরা বলব, আল্লাহর অবতরণের সময় আমাদের ক্ষেত্রে শেষ হয়ে গেছে এবং তাদের ক্ষেত্রে শুরু হয়েছে। আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এটি একেবারেই সাধারণ ব্যাপার মাত্র। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শূরা, আয়াত: ১১]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. অবতরণের হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের লোকদের জন্য আল্লাহর অবতরণ তাদের দেশের রাতের পরিমাণ অনুযায়ী। পশ্চিম প্রান্ত ও পূর্ব প্রান্তের ন্যায় উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তেও রাতের পরিমাণ অনুযায়ী আল্লাহর অবতরণের নির্ধারিত সময়ের ব্যবধান হবে।
এ ছাড়াও যখন কোন সম্প্রদায়ে নিকট রাতের এক তৃতীয়াংশ সাব্যস্ত হলো এবং তাদের নিকটবর্তী অন্য দেশে একটু পরেই রাতের এক তৃতীয়াংশ পাওয়া গেল, তখন তাদের নিকটও আল্লাহর অবতরণ সাব্যস্ত হবে, যে সম্পর্কে মহা সত্যবাদী আমাদের প্রিয় নবী সংবাদ দিয়েছেন। এভাবেই পৃথিবীর সর্বত্র আল্লাহর অবতরণ পাওয়া যাবে ও সাব্যস্ত হবে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ “হিসাবে যাকে জেরা করা হবে, তাকেই আযাব দেয়া হবে।” হাদীসে কুদসীতে বলা হয়েছে سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا “দুনিয়াতে আমি তোমার গুনাহকে গোপন রেখেছিলাম...।”
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ “হিসাবে যাকে জেরা করা হবে, তাকেই আযাব দেওয়া হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩৬] ইমাম বুখারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন। এ হাদীস এবং অপর হাদীস - إِنَّ اللَّهَ يُدْنِي الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ فَيَقُولُ أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ أَيْ رَبِّ حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ “আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনের কাছাকাছি আসবে এবং তার উপর স্বীয় পর্দা রাখবে এবং তাকে গোপন করবে। এবং বলবে তুমি কি অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তুমি কি অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তখন সে উত্তরে বলবে হে আমার রব হ্যাঁ। এভাবে যখন সে তার সমস্ত গুনাহ স্বীকার করবে এবং সে মনে মনে চিন্তা করবে যে, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবে দুনিয়াতে আমি তোমার গুনাহগুলো গোপন রেখেছিলাম আজকের দিন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর তাকে তার নেক আমলের আমল নামা দেবে।” [বর্ণনায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪১] —যাতে মু’মিনদের সাথে জেরা করা হয়, কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ বা অসামঞ্জস্যতা নেই। কারণ, জেরার অর্থ হলো হিসাব গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা তাকে যত নি‘আমত দিয়েছেন তা চাওয়া। কারণ, যে হিসাবের মধ্যে জেরা থাকে তার অর্থ হলো তুমি যেমনি-ভাবে নিয়েছে তেমনিভাবে পরিশোধ করবে। কিন্তু কিয়ামতের মু’মিনদের থেকে আল্লাহর হিসাব এ পর্যায়ের বা এ ধরনের হবে না। বরং তা হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রাত অনুগ্রহ ও দয়া। যখন বান্দা তার অপরাধ স্বীকার করবে তখন আল্লাহ বলবে— سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ “দুনিয়াতে আমি তোমার জন্য গোপন করেছিলাম আর আজকের দিন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। এবং জেরা শব্দটি দ্বারা এ কথাই প্রমাণ করে। কারণ, কোন কিছু নিয়ে জেরা করার অর্থ গ্রহণ করা ও ফেরত দেওয়া এবং কোন বস্তুর সূক্ষ্ম বিষয়ে অনুসন্ধান করা। আল্লাহর ক্ষেত্রে মু’মিন বান্দাদের সাথে এ ধরনের হিসাব কখনোই হবে না। বরং মু‘মিনদের জন্য আল্লাহর হিসাব হবে দয়া, ইহসান ও অনুগ্রহের ভিত্তিতে। জেরা করা, দেওয়া-নেওয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: مَنْ نُوقِشَ الْحِسَابَ عُذِّبَ “হিসাবে যাকে জেরা করা হবে, তাকেই আযাব দেওয়া হবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩৬] ইমাম বুখারী আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণনা করেন। এ হাদীস এবং অপর হাদীস - إِنَّ اللَّهَ يُدْنِي الْمُؤْمِنَ فَيَضَعُ عَلَيْهِ كَنَفَهُ وَيَسْتُرُهُ فَيَقُولُ أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا أَتَعْرِفُ ذَنْبَ كَذَا فَيَقُولُ نَعَمْ أَيْ رَبِّ حَتَّى إِذَا قَرَّرَهُ بِذُنُوبِهِ وَرَأَى فِي نَفْسِهِ أَنَّهُ هَلَكَ قَالَ سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ فَيُعْطَى كِتَابَ حَسَنَاتِهِ “আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনের কাছাকাছি আসবে এবং তার উপর স্বীয় পর্দা রাখবে এবং তাকে গোপন করবে। এবং বলবে তুমি কি অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তুমি কি অমুক গুনাহ সম্পর্কে জান? তখন সে উত্তরে বলবে হে আমার রব হ্যাঁ। এভাবে যখন সে তার সমস্ত গুনাহ স্বীকার করবে এবং সে মনে মনে চিন্তা করবে যে, আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবে দুনিয়াতে আমি তোমার গুনাহগুলো গোপন রেখেছিলাম আজকের দিন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তারপর তাকে তার নেক আমলের আমল নামা দেবে।” [বর্ণনায় সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪১] —যাতে মু’মিনদের সাথে জেরা করা হয়, কীভাবে বিরোধ নিরসন করব?
উত্তর: উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ বা অসামঞ্জস্যতা নেই। কারণ, জেরার অর্থ হলো হিসাব গ্রহণ করা। আল্লাহ তা‘আলা তাকে যত নি‘আমত দিয়েছেন তা চাওয়া। কারণ, যে হিসাবের মধ্যে জেরা থাকে তার অর্থ হলো তুমি যেমনি-ভাবে নিয়েছে তেমনিভাবে পরিশোধ করবে। কিন্তু কিয়ামতের মু’মিনদের থেকে আল্লাহর হিসাব এ পর্যায়ের বা এ ধরনের হবে না। বরং তা হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রাত অনুগ্রহ ও দয়া। যখন বান্দা তার অপরাধ স্বীকার করবে তখন আল্লাহ বলবে— سَتَرْتُهَا عَلَيْكَ فِي الدُّنْيَا وَأَنَا أَغْفِرُهَا لَكَ الْيَوْمَ “দুনিয়াতে আমি তোমার জন্য গোপন করেছিলাম আর আজকের দিন আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। এবং জেরা শব্দটি দ্বারা এ কথাই প্রমাণ করে। কারণ, কোন কিছু নিয়ে জেরা করার অর্থ গ্রহণ করা ও ফেরত দেওয়া এবং কোন বস্তুর সূক্ষ্ম বিষয়ে অনুসন্ধান করা। আল্লাহর ক্ষেত্রে মু’মিন বান্দাদের সাথে এ ধরনের হিসাব কখনোই হবে না। বরং মু‘মিনদের জন্য আল্লাহর হিসাব হবে দয়া, ইহসান ও অনুগ্রহের ভিত্তিতে। জেরা করা, দেওয়া-নেওয়া ও ইনসাফের ভিত্তিতে নয়। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ أُحُدٍٍٍٍٍ “নিশ্চয় তা দাড়ি পাল্লায় ওহুদ পাহাড় থেকেও ভারি।” অপর উক্তি ‘কিয়ামতের দিন আমলকেই ওজন দেওয়া হবে’।
প্রশ্ন: কাজী আয়ায রহ. কথা— ‘কিয়ামতের দিন আমলকেই ওজন দেওয়া হবে’ এবং আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পায়ের নলা প্রকাশ পেল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُمَا أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ أُحُدٍٍٍٍٍ ََََ “ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার জান! নিশ্চয় কিয়ামতের দিন দাড়ি পাল্লায় তা ওহুদ পাহাড় থেকেও ভারি হবে” উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: উল্লিখিত প্রশ্নের এ বলে উত্তর দেওয়া হয় যে, হতে পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীটি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ সম্পর্কে খাস। অথবা বলা যায় যে, কতক মানুষের আমলের ওজন দেওয়া হবে আবার কতক মানুষের দেহের ওজন দেওয়া হবে। যখন কোন মানুষের দেহকে ওজন দেওয়া হবে তখন তার আমল অনুযায়ী সে ভারি হবে এবং তার প্রাধান্য হবে। আল্লাহই ভালো জানেন। তিনিই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন।
প্রশ্ন: কাজী আয়ায রহ. কথা— ‘কিয়ামতের দিন আমলকেই ওজন দেওয়া হবে’ এবং আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এর পায়ের নলা প্রকাশ পেল তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَهُمَا أَثْقَلُ فِي الْمِيزَانِ مِنْ أُحُدٍٍٍٍٍ ََََ “ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার জান! নিশ্চয় কিয়ামতের দিন দাড়ি পাল্লায় তা ওহুদ পাহাড় থেকেও ভারি হবে” উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিরসন কীভাবে?
উত্তর: উল্লিখিত প্রশ্নের এ বলে উত্তর দেওয়া হয় যে, হতে পারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীটি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ সম্পর্কে খাস। অথবা বলা যায় যে, কতক মানুষের আমলের ওজন দেওয়া হবে আবার কতক মানুষের দেহের ওজন দেওয়া হবে। যখন কোন মানুষের দেহকে ওজন দেওয়া হবে তখন তার আমল অনুযায়ী সে ভারি হবে এবং তার প্রাধান্য হবে। আল্লাহই ভালো জানেন। তিনিই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী— إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ “তার ওপর তার ভাগ্য জয়ী হয় ফলে সে জাহান্নামীদের আমল করে..।”
প্রশ্ন: শাইখ রহ. কে রাসূলের বাণী—
فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ أَوْ قِيدُ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ أَوْ قِيدُ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا » . “এক ব্যক্তি জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকে। এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতে প্রবেশের মাঝে কেবল এ বিঘাত পরিমাণ ব্যবধান থাকে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য জয়ী হয় এবং সে জাহান্নামী লোকের মতো কর্ম করে ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। এক ব্যক্তি জাহান্নামী মানুষের আমল করতে থাকে। এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামে প্রবেশের মাঝে কেবল এ বিঘাত পরিমাণ ব্যবধান থাকে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য জয়ী হয় এবং সে জান্নাতী লোকের মতো আমল করে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২০৮] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, এ বাণীটি আল্লাহর বাণীর: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا ٣٠﴾ [ الكهف : ٣٠ ] “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৩০] বিরোধী কিনা?
উত্তর: শাইখ রহ. উত্তর দেন যে, এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেন যে, এক ব্যক্তি জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকবে। তার সময় ফুরিয়ে যাওয়া ও মৃত্যু নিকটবর্তী হওয়ার কারণে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য যাতে তার জাহান্নামী হওয়ার কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল জয়ী হয় এবং সে জাহান্নামী লোকের মতো কর্ম করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। এ হলো মানুষের নিকট যা প্রকাশ পায় যেমনটি বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে— إن الرجل ليعمل عمل أهل الجنة فيما يبدو للناس وهو من أهل النار “এক ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকবে। অথচ সে জাহান্নামী।” -আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই- এ রকমভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তাই। একজন মানুষ জাহান্নামী মানুষের কর্ম করে। তারপর যখন তার মৃত্যু নিকটে এসে যায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাওবা করা ও ফিরে আসার সুযোগ দেন তখন সে জান্নাতীতের আমল করে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করে।
প্রশ্নকারী প্রশ্নে যে আয়াত উল্লেখ করেছে তা হাদীসের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভালো কর্ম করে বাহ্যিক ও অভ্যন্তর উভয় অবস্থায়, অবশ্যই তার বিনিময়কে আল্লাহ তা‘আলা নষ্ট করবেন না। কিন্তু প্রথম ব্যক্তি যিনি জান্নাতী লোকের আমল করে অতঃপর তার ওপর পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য জয়ী হয়, এ লোকটি মানুষের চোখে ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতী লোকের আমল করত বাস্তবে নয়। ফলে তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত ছিল সেটাই বিজয়ী হয়। এরই ভিত্তিতে বলা বাহুল্য যে, তার আমল প্রকৃত নেক আমল নয়। তখন হাদীসটির মাঝে ও আয়াতের মাঝে কোন বিরোধ আছে বলে বিবেচিত হবে না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: শাইখ রহ. কে রাসূলের বাণী—
فَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ أَوْ قِيدُ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ فَيَدْخُلُهَا وَإِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِ حَتَّى مَا يَكُونَ بَيْنَهُ وَبَيْنَهَا إِلاَّ ذِرَاعٌ أَوْ قِيدُ ذِرَاعٍ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيَدْخُلُهَا » . “এক ব্যক্তি জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকে। এমনকি তার মাঝে ও জান্নাতে প্রবেশের মাঝে কেবল এ বিঘাত পরিমাণ ব্যবধান থাকে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য জয়ী হয় এবং সে জাহান্নামী লোকের মতো কর্ম করে ফলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করে। এক ব্যক্তি জাহান্নামী মানুষের আমল করতে থাকে। এমনকি তার মাঝে ও জাহান্নামে প্রবেশের মাঝে কেবল এ বিঘাত পরিমাণ ব্যবধান থাকে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য জয়ী হয় এবং সে জান্নাতী লোকের মতো আমল করে। ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩২০৮] সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, এ বাণীটি আল্লাহর বাণীর: ﴿إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا ٣٠﴾ [ الكهف : ٣٠ ] “নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, নিশ্চয় আমি এমন কারো প্রতিদান নষ্ট করব না, যে সুকর্ম করেছে।” [সূরা আল-কাহাফ, আয়াত: ৩০] বিরোধী কিনা?
উত্তর: শাইখ রহ. উত্তর দেন যে, এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেন যে, এক ব্যক্তি জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকবে। তার সময় ফুরিয়ে যাওয়া ও মৃত্যু নিকটবর্তী হওয়ার কারণে। তারপর তার ওপর তার ভাগ্য যাতে তার জাহান্নামী হওয়ার কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ হয়েছিল জয়ী হয় এবং সে জাহান্নামী লোকের মতো কর্ম করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। এ হলো মানুষের নিকট যা প্রকাশ পায় যেমনটি বিশুদ্ধ হাদীসে এসেছে— إن الرجل ليعمل عمل أهل الجنة فيما يبدو للناس وهو من أهل النار “এক ব্যক্তি মানুষের বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতী মানুষের আমল করতে থাকবে। অথচ সে জাহান্নামী।” -আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই- এ রকমভাবে দ্বিতীয় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তাই। একজন মানুষ জাহান্নামী মানুষের কর্ম করে। তারপর যখন তার মৃত্যু নিকটে এসে যায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাওবা করা ও ফিরে আসার সুযোগ দেন তখন সে জান্নাতীতের আমল করে এবং সে জান্নাতে প্রবেশ করে।
প্রশ্নকারী প্রশ্নে যে আয়াত উল্লেখ করেছে তা হাদীসের সাথে বিরোধপূর্ণ নয়। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, أَجۡرَ مَنۡ أَحۡسَنَ عَمَلًا অর্থাৎ যে ব্যক্তি ভালো কর্ম করে বাহ্যিক ও অভ্যন্তর উভয় অবস্থায়, অবশ্যই তার বিনিময়কে আল্লাহ তা‘আলা নষ্ট করবেন না। কিন্তু প্রথম ব্যক্তি যিনি জান্নাতী লোকের আমল করে অতঃপর তার ওপর পূর্ব নির্ধারিত ভাগ্য জয়ী হয়, এ লোকটি মানুষের চোখে ও বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতী লোকের আমল করত বাস্তবে নয়। ফলে তার ভাগ্যে যা নির্ধারিত ছিল সেটাই বিজয়ী হয়। এরই ভিত্তিতে বলা বাহুল্য যে, তার আমল প্রকৃত নেক আমল নয়। তখন হাদীসটির মাঝে ও আয়াতের মাঝে কোন বিরোধ আছে বলে বিবেচিত হবে না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ ইবন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— أَنَّ الشَّيْطَانَ قَدْ يَئِسَ أَنْ يُعْبَدَ فِي جَزِيرَةِ الْعَرَبِ “জাযীরাতুল আরবে শয়তান হতাশ, তার ইবাদত করা থেকে।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ১৭১৪০] রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ عَلَى ذِي الْخَلَصَةِ “যীল খালাসার পাশে দাউস সম্প্রদায়ের নারীদের নিতম্বের দোলন সংঘটিত হওয়া ছাড়া কিয়ামত হবে না।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭১১৬]
প্রশ্ন: শাইখ রহ. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ عَلَى ذِي الْخَلَصَةِ “যীল খালাসার পাশে দাউস সম্প্রদায়ের নারীদের নিতম্বের দোলন সংঘটিত হওয়া ছাড়া কিয়ামত হবে না”। অনুরূপভাবে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওহাব রহ. আত্মপ্রকাশ কালে আরবে অবস্থা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী—“জাযীরাতুল আরবে শয়তান হতাশ, তার ইবাদত করা থেকে” উভয় হাদীসের বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো।
উত্তর: তিনি এ বলে উত্তর দেন যে, উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি এভাবে—“জাযীরাতুল আরবে শয়তান তার ইবাদত করা থেকে হতাশ” এ হাদীস এ কথা প্রমাণ করে না যে, এখানে কোন অপরাধ সংঘটিত হবে না। কারণ, শয়তানতো গাইব জানে না। শয়তান যখন আরব ভূ—খণ্ডকে শির্ক মুক্ত এবং তাওহীদের ঝাণ্ডা প্রতিস্থাপন দেখতে পেল, তখন সে ধারণা করল যে, এর পর হয়তো আর এখানে তার শয়তানী চলবে না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত অহীর দ্বারা কথা বলেন। ফলে তিনি জানেন যে, এখানে তা সংঘটিত হবে।
শাইখ আব্দুল ওহাব রহ. আত্মপ্রকাশ এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণ, এ হতে পারে যে, তখন আলেমদের সংখ্যা ছিল কম। জাহালাত ও বাতিলের প্রভাবের কারণে তারা মানুষকে সংশোধন করতে এবং সমাজকে কু-সংস্কার মুক্ত করতে ব্যর্থ হন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: শাইখ রহ. কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى تَضْطَرِبَ أَلَيَاتُ نِسَاءِ دَوْسٍ عَلَى ذِي الْخَلَصَةِ “যীল খালাসার পাশে দাউস সম্প্রদায়ের নারীদের নিতম্বের দোলন সংঘটিত হওয়া ছাড়া কিয়ামত হবে না”। অনুরূপভাবে শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওহাব রহ. আত্মপ্রকাশ কালে আরবে অবস্থা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী—“জাযীরাতুল আরবে শয়তান হতাশ, তার ইবাদত করা থেকে” উভয় হাদীসের বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো।
উত্তর: তিনি এ বলে উত্তর দেন যে, উভয় হাদীসের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি এভাবে—“জাযীরাতুল আরবে শয়তান তার ইবাদত করা থেকে হতাশ” এ হাদীস এ কথা প্রমাণ করে না যে, এখানে কোন অপরাধ সংঘটিত হবে না। কারণ, শয়তানতো গাইব জানে না। শয়তান যখন আরব ভূ—খণ্ডকে শির্ক মুক্ত এবং তাওহীদের ঝাণ্ডা প্রতিস্থাপন দেখতে পেল, তখন সে ধারণা করল যে, এর পর হয়তো আর এখানে তার শয়তানী চলবে না। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত অহীর দ্বারা কথা বলেন। ফলে তিনি জানেন যে, এখানে তা সংঘটিত হবে।
শাইখ আব্দুল ওহাব রহ. আত্মপ্রকাশ এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কারণ, এ হতে পারে যে, তখন আলেমদের সংখ্যা ছিল কম। জাহালাত ও বাতিলের প্রভাবের কারণে তারা মানুষকে সংশোধন করতে এবং সমাজকে কু-সংস্কার মুক্ত করতে ব্যর্থ হন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
কিয়ামতের দিন মুশরিক সমস্ত মানুষের তুলনায় কঠিন শাস্তির অধিকার হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে সর্বাধিক কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে যে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে।”
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে যে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৫৪] এর মধ্যে এবং কিয়ামতের দিন মুশরিক সমস্ত মানুষের তুলনায় সর্বাধিক কঠিন শাস্তির অধিকার হবে” উভয়ের মাঝে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উত্তর: শাইখ রহ. এ বলে উত্তর দেন যে, উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির একাধিক কারণ রয়েছে।
এক—হাদীসটিতে من শব্দটি উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ যাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে তাদের মধ্যে একজন হলো, যে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে। অর্থাৎ হাদীসটির অর্থ যেখানে উহ্য নেই তার ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হবে।
দুই— একজনকে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি দেয়ার অর্থ এ নয় যে, আর কাউকে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি দেয়া যাবে না। বরং সর্বাধিক কঠিন শাস্তি একের অধিককেও দেয়া যে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ] (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও।’[সূরা গাফের, আয়াত: ৪৬] সুতরাং সর্বাধিক কঠিন শাস্তিতে একাধিক অংশীদার হওয়াতে কোন বিরোধ থাকে না।
তবে এখানে একটি প্রশ্ন থাকে তা হলো, চিত্রাঙ্কনকারী একজন বড় গুনাহ-কারী মাত্র সে কীভাবে একজন কাফির হঠকারীর সমান হতে পারে?
তিন—সর্বাধিক কঠিন শাস্তি এ কথাটি আপেক্ষিক ও তুলনামূলক। অর্থাৎ যাদের অপরাধ বা অন্যায় কুফর পর্যন্ত পৌঁছেনি তাদের মধ্যে চিত্রাঙ্কনকারীর শাস্তি অন্যদের তুলনায় সর্বাধিক কঠিন হবে। সমগ্র মানুষের তুলনায় নয়। এ উত্তরটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও কাছাকাছি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُضَاهُونَ بِخَلْقِ اللَّهِ “কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে যে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৯৫৪] এর মধ্যে এবং কিয়ামতের দিন মুশরিক সমস্ত মানুষের তুলনায় সর্বাধিক কঠিন শাস্তির অধিকার হবে” উভয়ের মাঝে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উত্তর: শাইখ রহ. এ বলে উত্তর দেন যে, উভয়ের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির একাধিক কারণ রয়েছে।
এক—হাদীসটিতে من শব্দটি উহ্য রয়েছে। অর্থাৎ যাদের কঠিন শাস্তি দেয়া হবে তাদের মধ্যে একজন হলো, যে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করে। অর্থাৎ হাদীসটির অর্থ যেখানে উহ্য নেই তার ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারণ করা হবে।
দুই— একজনকে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি দেয়ার অর্থ এ নয় যে, আর কাউকে সর্বাধিক কঠিন শাস্তি দেয়া যাবে না। বরং সর্বাধিক কঠিন শাস্তি একের অধিককেও দেয়া যে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَدۡخِلُوٓاْ ءَالَ فِرۡعَوۡنَ أَشَدَّ ٱلۡعَذَابِ ٤٦﴾ [ غافر : ٤٦ ] (সেদিন ঘোষণা করা হবে), ‘ফির‘আউনের অনুসারীদেরকে কঠোরতম আযাবে প্রবেশ করাও।’[সূরা গাফের, আয়াত: ৪৬] সুতরাং সর্বাধিক কঠিন শাস্তিতে একাধিক অংশীদার হওয়াতে কোন বিরোধ থাকে না।
তবে এখানে একটি প্রশ্ন থাকে তা হলো, চিত্রাঙ্কনকারী একজন বড় গুনাহ-কারী মাত্র সে কীভাবে একজন কাফির হঠকারীর সমান হতে পারে?
তিন—সর্বাধিক কঠিন শাস্তি এ কথাটি আপেক্ষিক ও তুলনামূলক। অর্থাৎ যাদের অপরাধ বা অন্যায় কুফর পর্যন্ত পৌঁছেনি তাদের মধ্যে চিত্রাঙ্কনকারীর শাস্তি অন্যদের তুলনায় সর্বাধিক কঠিন হবে। সমগ্র মানুষের তুলনায় নয়। এ উত্তরটি সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও কাছাকাছি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة “চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— من أتى كاهنا أو عرافا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه و سلم “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ওপর যা নাযিল হয়েছে তা অস্বীকার করল।”
প্রশ্ন: من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট এসে তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩০] অনুরূপ হাদীস— من أتى كاهنا أو عرافا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه و سلم “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গণকের কাছে আসল, এবং তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরী করল।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৫৩২] বিশ্বাস মানুষের সাথে স্থায়ী হয় নাকি ক্ষণস্থায়ী অর্থাৎ এখন জিজ্ঞাসা করল কিছুসময় মানল, পরে আর তা মানল না। নাকি স্থায়ী হওয়া অর্থ এই যে, তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করল এবং সে তাকে পথ দেখালও এমন....?
উত্তর: প্রথম হাদীসের শব্দে ‘তাকে বিশ্বাস করল’ কথাটি নেই। তাতে রয়েছে— من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট এসে তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না” এখানে বিশ্বাস করা নেই। আর দ্বিতীয় হাদীসে বিশ্বাস করা কথাটি রয়েছে। এ ব্যক্তি কাফের হওয়ার কারণ, তার অন্তরে এ বিশ্বাস জন্মে যে, গণক বা জ্যোতিষী সত্যবাদী, তার কথা গাইবী কথা ও ভবিষ্যতবাণী। আর এগুলো সবই অর্ন্তভুক্ত করে আল্লাহর বাণীর প্রতি কুফরী করাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قل لا يعلم من في السموت و الأرض الغيب إلا الله “বলুন, আসমানসমূহ ও জমিনের গাইব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।” প্রথম অবস্থায় বিশ্বাস করাই যথেষ্ট। তার অর্থ এ নয় যে, বাস্তবের সাথে ঘটনা মিলে কিনা সে পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হবে। যদি মিলে বিশ্বাস করবে আর যদি না মিলে বিশ্বাস করবে না। যদি কোন ব্যক্তি এরকম অপেক্ষা করে এবং বলে আমি দেখব যে, গণক যা বলেছে সত্য হয় কিনা? এ ব্যক্তি বাস্তবে তাকে বিশ্বাস করল না। তবে গণকের কাছে গমনের কারণে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। বিশ্বাস বলা হয়, তার কথার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা ও তাকে সত্য বলে জানা এবং এ কথা বিশ্বাস করা যে, তার কথার বাস্তবায়ন হবেই। আর যদি এ কথা বলে, আমি দেখব লোকটি সত্যবাদী কিনা মিথ্যাবাদী— একে বিশ্বাস বলে না এবং লোকটি গণককে বিশ্বাস করছে এ কথা বলা যাবে না। অনুরূপভাবে কেউ যদি গণক ও জ্যোতিষীর কাছে তার মিথ্যুক হওয়া প্রমাণ করার জন্য আসে এবং কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে তাতে কোন গুনাহ হবে না। কারণ, ইবন সাইয়্যাদ যে গাইব জানে বলে দাবি করছিল তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পূর্ণ গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, «اخْسَأْ، فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ» ..“চুপ থাক, তুমি গণক ছাড়া আর কিছুই নয় এবং অহীর মাধ্যমে গাইবী বিষয় জানা পর্যন্ত কখনোই পৌছবে না।” [সহীহ বুখারী হাদীন নং ১৩৫৪] আল্লাহ তা‘আল্লাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট এসে তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৩০] অনুরূপ হাদীস— من أتى كاهنا أو عرافا فصدقه بما يقول فقد كفر بما أنزل على محمد صلى الله عليه و سلم “যে ব্যক্তি কোন জ্যোতিষী বা গণকের কাছে আসল, এবং তার কথায় বিশ্বাস করল, সে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর যা নাযিল হয়েছে তার প্রতি কুফরী করল।” [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ৯৫৩২] বিশ্বাস মানুষের সাথে স্থায়ী হয় নাকি ক্ষণস্থায়ী অর্থাৎ এখন জিজ্ঞাসা করল কিছুসময় মানল, পরে আর তা মানল না। নাকি স্থায়ী হওয়া অর্থ এই যে, তাকে কেউ জিজ্ঞাসা করল এবং সে তাকে পথ দেখালও এমন....?
উত্তর: প্রথম হাদীসের শব্দে ‘তাকে বিশ্বাস করল’ কথাটি নেই। তাতে রয়েছে— من أتى عرافا فسأله عن شيء لم تقبل له صلاة أربعين ليلة “যে ব্যক্তি কোন গণকের নিকট এসে তাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করল, তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল করা হবে না” এখানে বিশ্বাস করা নেই। আর দ্বিতীয় হাদীসে বিশ্বাস করা কথাটি রয়েছে। এ ব্যক্তি কাফের হওয়ার কারণ, তার অন্তরে এ বিশ্বাস জন্মে যে, গণক বা জ্যোতিষী সত্যবাদী, তার কথা গাইবী কথা ও ভবিষ্যতবাণী। আর এগুলো সবই অর্ন্তভুক্ত করে আল্লাহর বাণীর প্রতি কুফরী করাকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, قل لا يعلم من في السموت و الأرض الغيب إلا الله “বলুন, আসমানসমূহ ও জমিনের গাইব আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।” প্রথম অবস্থায় বিশ্বাস করাই যথেষ্ট। তার অর্থ এ নয় যে, বাস্তবের সাথে ঘটনা মিলে কিনা সে পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হবে। যদি মিলে বিশ্বাস করবে আর যদি না মিলে বিশ্বাস করবে না। যদি কোন ব্যক্তি এরকম অপেক্ষা করে এবং বলে আমি দেখব যে, গণক যা বলেছে সত্য হয় কিনা? এ ব্যক্তি বাস্তবে তাকে বিশ্বাস করল না। তবে গণকের কাছে গমনের কারণে তার চল্লিশ দিনের সালাত কবুল হবে না। বিশ্বাস বলা হয়, তার কথার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখা ও তাকে সত্য বলে জানা এবং এ কথা বিশ্বাস করা যে, তার কথার বাস্তবায়ন হবেই। আর যদি এ কথা বলে, আমি দেখব লোকটি সত্যবাদী কিনা মিথ্যাবাদী— একে বিশ্বাস বলে না এবং লোকটি গণককে বিশ্বাস করছে এ কথা বলা যাবে না। অনুরূপভাবে কেউ যদি গণক ও জ্যোতিষীর কাছে তার মিথ্যুক হওয়া প্রমাণ করার জন্য আসে এবং কোন কিছু জিজ্ঞাসা করে তাতে কোন গুনাহ হবে না। কারণ, ইবন সাইয়্যাদ যে গাইব জানে বলে দাবি করছিল তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পূর্ণ গোপনীয় বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, «اخْسَأْ، فَلَنْ تَعْدُوَ قَدْرَكَ» ..“চুপ থাক, তুমি গণক ছাড়া আর কিছুই নয় এবং অহীর মাধ্যমে গাইবী বিষয় জানা পর্যন্ত কখনোই পৌছবে না।” [সহীহ বুখারী হাদীন নং ১৩৫৪] আল্লাহ তা‘আল্লাই তাওফীক দাতা
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
সাহাবীগণের মধ্যে সংঘটি হতাহত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী— إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ “যখন দুইজন মুসলিম একে অপরকে তরবারি দ্বারা হত্যা করে, হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে”—এর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি।
প্রশ্ন: আমি একটি মাদরাসার ইতিহাসের শিক্ষক। মাধ্যমিকের প্রথম ক্লাসে আমি সিফ্ফীন ও জামাল দুই যুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর সময় ছাত্রদের থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তারা বলে কীভাবে সাহাবীগণ পরস্পর একে অপরকে হত্যা করল? তারা রাসূলের হাদীস— إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ “যখন দুইজন মুসলিম একে অপরকে তরবারি দ্বারা হত্যা করে, হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে।” [বুখারী হাদীস নং 31] তুলে ধরে। এ অবস্থায় আমাদের অবস্থান কি হবে?।
উত্তর: সাহাবীগণের মধ্যে সংঘটিত হতাহতের বিষয়ে আমাদের অবস্থান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতেরই অবস্থান। আর তা হলো আমরা এ বিষয়ে এ কথাই বলব যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তলোয়ারকে তা থেকে বিরত রেখেছেন আমারাও তাদের বিষয়ে মুখ খোল থেকে বিরত থাকব। এ বিষয়ে একজন কবি বলেন, ....................
সাহাবীগণ সবাই মুজতাহিদ। মুতাজাহিদ হলেই সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ অনেক সময় ইজতিহাদে ভুল করে। তাদের থেকে যে বিবাদ সংঘটিত হয়েছে নিঃসন্দেহে বলা যায় তা তাদের ইজতিহাদের ভুলের কারণেই সংঘটিত হয়েছে। তারা অবশ্যই ক্ষমা প্রাপ্ত। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ “যখন কোন বিচারক সঠিক রায় প্রদানের জন্য চেষ্টা করে তারপর সে সঠিক রায় প্রদান করে তখন তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়া মিলবে। আর যদি কোন বিচারক সঠিক ফায়সালা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করে কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সে ভূলও করে তারপরও সে একগুণ সাওয়াব পাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৫২]
ছাত্রদের থেকে যখন এ প্রশ্ন আসে যে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সাহাবীগণের থেকে সংঘটিত হয়? তখন তার উত্তর হলো—আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, আমরা আমাদের জবানকে এ থেকে বিরত রাখবো এবং কোন প্রশ্ন তুলবো না। আর আমরা এ কথা বলব, তারা প্রত্যেকেই মুজতাহিদ। যার ইজতিহাদ সঠিক ছিল তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব আর যার ইজতিহাদ সঠিক ছিল না সে এক গুণ সাওয়াব পাবে। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আমি একটি মাদরাসার ইতিহাসের শিক্ষক। মাধ্যমিকের প্রথম ক্লাসে আমি সিফ্ফীন ও জামাল দুই যুদ্ধের ইতিহাস পড়ানোর সময় ছাত্রদের থেকে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হই। তারা বলে কীভাবে সাহাবীগণ পরস্পর একে অপরকে হত্যা করল? তারা রাসূলের হাদীস— إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّارِ “যখন দুইজন মুসলিম একে অপরকে তরবারি দ্বারা হত্যা করে, হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামে যাবে।” [বুখারী হাদীস নং 31] তুলে ধরে। এ অবস্থায় আমাদের অবস্থান কি হবে?।
উত্তর: সাহাবীগণের মধ্যে সংঘটিত হতাহতের বিষয়ে আমাদের অবস্থান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতেরই অবস্থান। আর তা হলো আমরা এ বিষয়ে এ কথাই বলব যে, আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তলোয়ারকে তা থেকে বিরত রেখেছেন আমারাও তাদের বিষয়ে মুখ খোল থেকে বিরত থাকব। এ বিষয়ে একজন কবি বলেন, ....................
সাহাবীগণ সবাই মুজতাহিদ। মুতাজাহিদ হলেই সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত সঠিক হবে এমন কোন কথা নেই। মানুষ অনেক সময় ইজতিহাদে ভুল করে। তাদের থেকে যে বিবাদ সংঘটিত হয়েছে নিঃসন্দেহে বলা যায় তা তাদের ইজতিহাদের ভুলের কারণেই সংঘটিত হয়েছে। তারা অবশ্যই ক্ষমা প্রাপ্ত। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, إِذَا حَكَمَ الْحَاكِمُ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَصَابَ فَلَهُ أَجْرَانِ وَإِذَا حَكَمَ فَاجْتَهَدَ ثُمَّ أَخْطَأَ فَلَهُ أَجْرٌ “যখন কোন বিচারক সঠিক রায় প্রদানের জন্য চেষ্টা করে তারপর সে সঠিক রায় প্রদান করে তখন তার জন্য দ্বিগুণ সাওয়া মিলবে। আর যদি কোন বিচারক সঠিক ফায়সালা দেওয়ার উদ্দেশ্যে চেষ্টা করে কিন্তু রায় দেওয়ার ক্ষেত্রে সে ভূলও করে তারপরও সে একগুণ সাওয়াব পাবে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৫২]
ছাত্রদের থেকে যখন এ প্রশ্ন আসে যে এ ধরনের ঘটনা কীভাবে সাহাবীগণের থেকে সংঘটিত হয়? তখন তার উত্তর হলো—আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, আমরা আমাদের জবানকে এ থেকে বিরত রাখবো এবং কোন প্রশ্ন তুলবো না। আর আমরা এ কথা বলব, তারা প্রত্যেকেই মুজতাহিদ। যার ইজতিহাদ সঠিক ছিল তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ সাওয়াব আর যার ইজতিহাদ সঠিক ছিল না সে এক গুণ সাওয়াব পাবে। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
হাদীস: “জানাযার সালাতে তাড়াহুড়া করা” এবং “তিন সময়ে সালাত ও দাফন করা নিষিদ্ধ হওয়া” বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস।
প্রশ্ন: “তিন সময়ে সালাত ও দাফন করা নিষেধ করা” বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস এবং “জানাযার সালাতে তাড়াহুড়া করা” করার হাদীসের মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যাবে? আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। জানাযার সালাত ও দাফনে তাড়াহুড়া করা সময় ক্ষেপণ না করা সুন্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « أَسْرِعُوا بِالْجَنَازَةِ فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا إِلَيْهِ وَإِنْ تَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ » . “জানাযায় তোমরা তাড়াহুড়া কর। যদি ভালো হয় তাহলে উত্তমকে তোমরা যথাস্থানে পেশ করলে আর যদি খারাপ হয় তখন অকল্যাণকে তোমরা তোমাদের গাড়—দায়িত্ব থেকে সরালে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩১৫]
তবে যদি জানাযা হুবহু ঐ তিন মুহূর্তে উপস্থিত হয় তাহলে জানাযা ও দাফনে কিছু সময় অপেক্ষা করবে।
উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের কারণে। তিনি বলেন, . ثلاث ساعات كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ينهانا أن نصلي فيهن أو أن نقبر فيهن موتانا حين تطلع الشمس بازغة حتى ترتفع وحين يقوم قائم الظهيرة حتى تميل الشمس وحين تضيف الشمس للغروب حتى تغرب “তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের কবরস্ত করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিষেধ করেছেন। যখন সূর্য উদয় হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উপরে না উঠে। ঠিক দুপুরের সময় যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে এবং যখন সূর্য ডুবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩১]
এ তিনটি সময় খুবই অল্প সময়। এ তিন সময়ে জানাযার সালাত ও দাফন-কাফন সামান্য সময় দেরি করাতে কোন অসুবিধা নেই। এ সব বিষয়ে যাবতীয় হিকমাত ও প্রজ্ঞা কেবল আল্লাহরই। তিনিই পরম দয়ালু এবং আহকামুল হাকেমীন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: “তিন সময়ে সালাত ও দাফন করা নিষেধ করা” বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস এবং “জানাযার সালাতে তাড়াহুড়া করা” করার হাদীসের মধ্যে কীভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করা যাবে? আল্লাহ আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।
উত্তর: উভয় হাদীসের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। জানাযার সালাত ও দাফনে তাড়াহুড়া করা সময় ক্ষেপণ না করা সুন্নাত। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « أَسْرِعُوا بِالْجَنَازَةِ فَإِنْ تَكُ صَالِحَةً فَخَيْرٌ تُقَدِّمُونَهَا إِلَيْهِ وَإِنْ تَكُ سِوَى ذَلِكَ فَشَرٌّ تَضَعُونَهُ عَنْ رِقَابِكُمْ » . “জানাযায় তোমরা তাড়াহুড়া কর। যদি ভালো হয় তাহলে উত্তমকে তোমরা যথাস্থানে পেশ করলে আর যদি খারাপ হয় তখন অকল্যাণকে তোমরা তোমাদের গাড়—দায়িত্ব থেকে সরালে।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩১৫]
তবে যদি জানাযা হুবহু ঐ তিন মুহূর্তে উপস্থিত হয় তাহলে জানাযা ও দাফনে কিছু সময় অপেক্ষা করবে।
উকবা ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসের কারণে। তিনি বলেন, . ثلاث ساعات كان رسول الله صلى الله عليه و سلم ينهانا أن نصلي فيهن أو أن نقبر فيهن موتانا حين تطلع الشمس بازغة حتى ترتفع وحين يقوم قائم الظهيرة حتى تميل الشمس وحين تضيف الشمس للغروب حتى تغرب “তিন সময়ে সালাত আদায় করতে এবং মৃতদের কবরস্ত করতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিষেধ করেছেন। যখন সূর্য উদয় হয় যতক্ষণ পর্যন্ত সূর্য উপরে না উঠে। ঠিক দুপুরের সময় যতক্ষণ না সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ে এবং যখন সূর্য ডুবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৩১]
এ তিনটি সময় খুবই অল্প সময়। এ তিন সময়ে জানাযার সালাত ও দাফন-কাফন সামান্য সময় দেরি করাতে কোন অসুবিধা নেই। এ সব বিষয়ে যাবতীয় হিকমাত ও প্রজ্ঞা কেবল আল্লাহরই। তিনিই পরম দয়ালু এবং আহকামুল হাকেমীন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: “প্রথম ওয়াক্তের সালাত আদায় করা” এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ “তোমরা ফজরের সালাত আদায়ে দেরি কর কারণ, তা তোমাদের জন্য সাওয়াবে মহান।” [আহমদ, হাদীস নং ১৭২৮৬]
প্রশ্ন: ফজরের সালাতকে আকাশ হলুদ হওয়া পর্যন্ত দেরি করতে অনেককে দেখা যায়। তারা বলে যে, হাদীসে এসেছে—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ “তোমরা ফজরের সালাত আদায়ে দেরি কর, কারণ, তা তোমাদের জন্য সাওয়াবে মহান।” হাদীসটি বিশুদ্ধ কিনা? এ হাদীস এবং অপর হাদীস— الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا “প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭] এর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। ইমান আহমদ রহ. এবং সুনানে গ্রন্থকারগণ তাদের স্বীয় সুনানে হাদীসটি রাফে‘ ইবনে খুদাইজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধ সনদে উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত অন্ধকারে আদায় করেছেন বলে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের সাথে এ হাদীসের কোন বিরোধ নেই এবং “প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করার হাদীসের সাথেও কোন বিরোধ নেই। জামহুরে উলামাদের মতে এ হাদীসের অর্থ হলো, ফজরের সালাতকে ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত দেরি করা। তারপর অন্ধকার দূর হওয়ার আগে তা আদায় করা। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা ছাড়া অন্য সব জায়গায় নিজেই এরূপ করতেন। কারণ, মুযদালিফাতে উত্তম হলো, ফজর উদয় হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ফজরের সালাত আদায় করা। কারণ, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে এমনই করেছেন। এ দ্বারা ফজরের সালাত আদায়ের সময় বিষয়ক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সমস্ত বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যতা সাধন করা সম্ভব। আর এখানে সালাত আদায়ের উত্তম সময়ই আলোচ্য বিষয়। অন্যথায় ফজরের সালাতকে সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ووقت صلاة الصبح من طلوع الفجر ما لم تطلع الشمس “ফজরের ওয়াক্ত ফজর উদয় হওয়া থেকে নিয়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত।” হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম মুসলিম স্বীয় কিতাব সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: ফজরের সালাতকে আকাশ হলুদ হওয়া পর্যন্ত দেরি করতে অনেককে দেখা যায়। তারা বলে যে, হাদীসে এসেছে—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, أَسْفِرُوا بِالْفَجْرِ فَإِنَّهُ أَعْظَمُ لِلْأَجْرِ “তোমরা ফজরের সালাত আদায়ে দেরি কর, কারণ, তা তোমাদের জন্য সাওয়াবে মহান।” হাদীসটি বিশুদ্ধ কিনা? এ হাদীস এবং অপর হাদীস— الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا “প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫২৭] এর মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি কীভাবে?
উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। ইমান আহমদ রহ. এবং সুনানে গ্রন্থকারগণ তাদের স্বীয় সুনানে হাদীসটি রাফে‘ ইবনে খুদাইজ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বিশুদ্ধ সনদে উল্লেখ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত অন্ধকারে আদায় করেছেন বলে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের সাথে এ হাদীসের কোন বিরোধ নেই এবং “প্রথম ওয়াক্তের মধ্যে সালাত আদায় করার হাদীসের সাথেও কোন বিরোধ নেই। জামহুরে উলামাদের মতে এ হাদীসের অর্থ হলো, ফজরের সালাতকে ফজর স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত দেরি করা। তারপর অন্ধকার দূর হওয়ার আগে তা আদায় করা। যেমনটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফা ছাড়া অন্য সব জায়গায় নিজেই এরূপ করতেন। কারণ, মুযদালিফাতে উত্তম হলো, ফজর উদয় হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ফজরের সালাত আদায় করা। কারণ, রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে এমনই করেছেন। এ দ্বারা ফজরের সালাত আদায়ের সময় বিষয়ক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত সমস্ত বিশুদ্ধ হাদীসসমূহের মধ্যে সামঞ্জস্যতা সাধন করা সম্ভব। আর এখানে সালাত আদায়ের উত্তম সময়ই আলোচ্য বিষয়। অন্যথায় ফজরের সালাতকে সূর্য উদয়ের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা বৈধ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ووقت صلاة الصبح من طلوع الفجر ما لم تطلع الشمس “ফজরের ওয়াক্ত ফজর উদয় হওয়া থেকে নিয়ে সূর্য উদয়ের আগ পর্যন্ত।” হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে ইমাম মুসলিম স্বীয় কিতাব সহীহ মুসলিমে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
সালাত ত্যাগকারী কাফের হওয়া বিষয়ক হাদীসসমূহ এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী— أقوام يدخلون الجنة و لم يسجدوا لله سجدة “এমন সম্প্রদায়ের লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও কখনো করেনি।
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— إنهم يدخلون الجنة و لم يسجدوا لله سجدة “এমন সম্প্রদায়ের লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও কখনো করেনি” ঐ সব লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা সালাত ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, যদি কোন ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্র থেকে দূরবর্তী স্থানে অথবা প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে যেখানে সালাতের দাও‘আত পৌঁছেনি। অথবা বাণীটি ঐ সব লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা ইসলাম গ্রহণ করার পর সাথে সাথে মারা গেছেন- আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করতে পারেননি। এ কথাটি বলার কারণ, মূলত: হাদীসটি ঐ সব হাদীসের অর্ন্তভুক্ত যেগুলোকে মুতাসাবেহ বলা হয়। আর সালাত ত্যাগকারী হাদীস স্পষ্ট ও মুহকাম। কুরআন ও সুন্নাত দ্বারা দলীল দেয়ার ক্ষেত্রে একজন মু’মিনের ওপর ওয়াজিব হলো মুতাসাবেহকে মুহকামের ওপর প্রয়োগ করা। মুহকামকে বাদ দিয়ে মুতাশাবেহের অনুসরণ করা তাদের স্বভাব যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা ও কপটতা। আল্লাহ আমাদের তা থেকে হেফাযত করুন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧﴾ [ ال عمران : ٧ ] “তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮] আব্দুল আসহাল গোত্রের আসীরমের ঘটনা কারো অজানা নয়। তিনি ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন। তার স্বজাতি লোকেরা ময়দানের এক প্রান্তে সর্বশেষ শহীদদের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পান। তারা জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন তোমার স্বজাতির বিরুদ্ধে গেলে নাকি ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে? বলল, না বরং আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি অবহিত করলে, তিনি বললেন, নিশ্চয় তিনি জান্নাতী। অথচ লোকটি আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করেননি। কিন্তু তার উত্তম পরিণতি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দয়া করেছেন। আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য উত্তম পরিণতি কামনা করি।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী— إنهم يدخلون الجنة و لم يسجدوا لله سجدة “এমন সম্প্রদায়ের লোকেরা জান্নাতে প্রবেশ করবে যারা আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও কখনো করেনি” ঐ সব লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা সালাত ওয়াজিব হওয়া সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, যদি কোন ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্র থেকে দূরবর্তী স্থানে অথবা প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে যেখানে সালাতের দাও‘আত পৌঁছেনি। অথবা বাণীটি ঐ সব লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যারা ইসলাম গ্রহণ করার পর সাথে সাথে মারা গেছেন- আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করতে পারেননি। এ কথাটি বলার কারণ, মূলত: হাদীসটি ঐ সব হাদীসের অর্ন্তভুক্ত যেগুলোকে মুতাসাবেহ বলা হয়। আর সালাত ত্যাগকারী হাদীস স্পষ্ট ও মুহকাম। কুরআন ও সুন্নাত দ্বারা দলীল দেয়ার ক্ষেত্রে একজন মু’মিনের ওপর ওয়াজিব হলো মুতাসাবেহকে মুহকামের ওপর প্রয়োগ করা। মুহকামকে বাদ দিয়ে মুতাশাবেহের অনুসরণ করা তাদের স্বভাব যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা ও কপটতা। আল্লাহ আমাদের তা থেকে হেফাযত করুন। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿هُوَ ٱلَّذِيٓ أَنزَلَ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ مِنۡهُ ءَايَٰتٞ مُّحۡكَمَٰتٌ هُنَّ أُمُّ ٱلۡكِتَٰبِ وَأُخَرُ مُتَشَٰبِهَٰتٞۖ فَأَمَّا ٱلَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمۡ زَيۡغٞ فَيَتَّبِعُونَ مَا تَشَٰبَهَ مِنۡهُ ٱبۡتِغَآءَ ٱلۡفِتۡنَةِ وَٱبۡتِغَآءَ تَأۡوِيلِهِۦۖ وَمَا يَعۡلَمُ تَأۡوِيلَهُۥٓ إِلَّا ٱللَّهُۗ وَٱلرَّٰسِخُونَ فِي ٱلۡعِلۡمِ يَقُولُونَ ءَامَنَّا بِهِۦ كُلّٞ مِّنۡ عِندِ رَبِّنَاۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّآ أُوْلُواْ ٱلۡأَلۡبَٰبِ ٧﴾ [ ال عمران : ٧ ] “তিনিই তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছেন, তার মধ্যে আছে মুহকাম আয়াতসমূহ। সেগুলো কিতাবের মূল, আর অন্যগুলো মুতাশাবিহ্। ফলে যাদের অন্তরে রয়েছে সত্যবিমুখ প্রবণতা, তারা ফিতনার উদ্দেশ্যে এবং ভুল ব্যাখ্যার অনুসন্ধানে মুতাশাবিহ্ আয়াতগুলোর পেছনে লেগে থাকে। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউ এর ব্যাখ্যা জানে না। আর যারা জ্ঞানে পরিপক্ক, তারা বলে, আমরা এগুলোর প্রতি ঈমান আনলাম, সবগুলো আমাদের রবের পক্ষ থেকে। আর বিবেক সম্পন্নরাই উপদেশ গ্রহণ করে।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৮] আব্দুল আসহাল গোত্রের আসীরমের ঘটনা কারো অজানা নয়। তিনি ওহুদের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ হন। তার স্বজাতি লোকেরা ময়দানের এক প্রান্তে সর্বশেষ শহীদদের মধ্যে রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে পান। তারা জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন তোমার স্বজাতির বিরুদ্ধে গেলে নাকি ইসলামের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলে? বলল, না বরং আমি আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনলাম। তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বিষয়টি অবহিত করলে, তিনি বললেন, নিশ্চয় তিনি জান্নাতী। অথচ লোকটি আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করেননি। কিন্তু তার উত্তম পরিণতি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি দয়া করেছেন। আল্লাহর নিকট আমাদের ও তোমাদের জন্য উত্তম পরিণতি কামনা করি।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী: لا تقوم الساعة حتى يعم الإسلام الأرض “ইসলামের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা ছাড়া কিয়ামত হবে না।” রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অপর বাণী: إنها لا تقوم ويبقى من يقول لا إله الا الله في الأرض “যতক্ষণ পর্যন্ত জমিন লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার মত একজন লোকও অবশিষ্ট থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।”
প্রশ্ন: আমরা প্রায় এ কথা শুনে থাকি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা ছাড়া কিয়ামত হবে না। অপরদিকে আমরা অন্যদের কাছে শুনতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জমিন জমিনে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার মত একজন লোকও অবশিষ্ট থাকতে কিয়ামত কায়েম হবে না। উভয় বাণীর মধ্যে কিভাকে বিরোধ নিষ্পত্তি করব?
উত্তর: উভয় বাণীই বিশুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তিনি বলেন, ঈসা ইবন মারিয়ামের আগমন ছাড়া কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তিনি এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন, শুকর নিধন করবেন, সুলিক ভেঙ্গে দেবেন, সম্পদকে ব্যাপক করবেন এবং ট্যেক্স তুলে দেবেন। তিনি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু তিনি গ্রহণ করবেন না অন্যথায় যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের সাথে যুদ্ধ। তার আমলে আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ছাড়া সব ধর্মকে ধ্বংস করে দেবেন। তখন জমিনে সেজদা কেবল আল্লাহর জন্য হবে।
এ কথা স্পষ্ট যে, ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে ইসলাম সারা দুনিয়াতে বিজয়ী হবে এবং ইসলাম ছাড়া আর কোন দীন পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অসংখ্য হাদীস এ মর্মে বর্ণিত যে, কিয়ামত কেবল নিকৃষ্ট মানুষের ওপর কায়েম হবে। ঈসা আলাইহিস সালাম এ মৃত্যুর পর যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে তখন আল্লাহ তা‘আলা এক ধরনের পবিত্র বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস প্রতিটি মু’মিন বান্দা-বান্দির জীবনকে কবজ করে নিয় যাবে। জমিন খারাপ মানুষ ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না তখন তাদের ওপর কিয়মাত কায়েম হবে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: আমরা প্রায় এ কথা শুনে থাকি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ইসলামের পরিপূর্ণ প্রতিষ্ঠা ছাড়া কিয়ামত হবে না। অপরদিকে আমরা অন্যদের কাছে শুনতে পাই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জমিন জমিনে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলার মত একজন লোকও অবশিষ্ট থাকতে কিয়ামত কায়েম হবে না। উভয় বাণীর মধ্যে কিভাকে বিরোধ নিষ্পত্তি করব?
উত্তর: উভয় বাণীই বিশুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, তিনি বলেন, ঈসা ইবন মারিয়ামের আগমন ছাড়া কিয়ামত সংঘটিত হবে না। তিনি এসে দাজ্জালকে হত্যা করবেন, শুকর নিধন করবেন, সুলিক ভেঙ্গে দেবেন, সম্পদকে ব্যাপক করবেন এবং ট্যেক্স তুলে দেবেন। তিনি ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু তিনি গ্রহণ করবেন না অন্যথায় যারা ইসলাম গ্রহণ করবে তাদের সাথে যুদ্ধ। তার আমলে আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ছাড়া সব ধর্মকে ধ্বংস করে দেবেন। তখন জমিনে সেজদা কেবল আল্লাহর জন্য হবে।
এ কথা স্পষ্ট যে, ঈসা আলাইহিস সালামের যুগে ইসলাম সারা দুনিয়াতে বিজয়ী হবে এবং ইসলাম ছাড়া আর কোন দীন পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অসংখ্য হাদীস এ মর্মে বর্ণিত যে, কিয়ামত কেবল নিকৃষ্ট মানুষের ওপর কায়েম হবে। ঈসা আলাইহিস সালাম এ মৃত্যুর পর যখন সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদয় হবে তখন আল্লাহ তা‘আলা এক ধরনের পবিত্র বাতাস প্রেরণ করবেন। এ বাতাস প্রতিটি মু’মিন বান্দা-বান্দির জীবনকে কবজ করে নিয় যাবে। জমিন খারাপ মানুষ ছাড়া আর কেউ অবশিষ্ট থাকবে না তখন তাদের ওপর কিয়মাত কায়েম হবে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨ ﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৭] এবং অপর উক্তি عفوا تعف نساءكم “তোমরা পাক-পবিত্র থাক, তোমাদের নারীরাও পাক-পবিত্র থাকবে।”
প্রশ্ন: সালাফদের উক্তি عفوا تعف نساءكم “তোমরা পাক-পবিত্র থাক, তোমাদের নারীরাও পাক-পবিত্র থাকবে।” দ্বারা অনেকে এ কথা প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে তার ঘরের স্ত্রীও ব্যভিচার করবে। এ কথা কতটা বিশুদ্ধ? এ কথা এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৭] —এর মধ্যে যে বিরোধ তা কিভাবে নিরসন করব?
উত্তর: সর্ববস্থায় প্রসংশা কেবল আল্লাহরই। সালাফদের কথা ও কুরআনের বাণীর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। সালাফদের উক্তির অর্থ হলো, যখন কোন ব্যক্তি বার বার ব্যভিচার করে, তখন পরিবারের মধ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হওয়া দ্বারা তাকে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি হবেই এমন নয়। এটি কেবল আশঙ্কা। আল্লাহর বাণী— ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨ ﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৭] এর অর্থ কোন মানুষকে অপরের গুনাহের কারণে পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু একজন মানুষ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এটি তার পরিবারের জন্য নিরাপত্তা। যেমন কোন ব্যক্তি যখন অবাধ্য হয়, মদ পান করে বা অন্য কোন খারাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ে, তার প্রভাব তার পরিবার পরিজনের মধ্যেও পড়ে। ফলে দেখা যায় তারাও তার অনুকরণে খারাপ কর্মে লিপ্ত হয় এবং তার অনুসরণ করতে থাকে। অনুরূপভাবে যখন কোন ব্যক্তি ব্যভিচার করে –নাউযুবিল্লাহ- তখন তার ছেলে মেয়েরাও তার অনুকরণ করে। তার স্ত্রীও তার মতো যিনা- ব্যভিচার করে। সুতরাং আমাদের সবাইকে এ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু কাউকে অপরের গুনাহের কারণে কখনোই পাকড়াও করা হবে না। প্রত্যেককে তার নিজের অপরাধের কারণে পাকড়াও করা হবে। অভিভাবকের ব্যভিচার করা তার পরিবার ও ছেলে-মেয়েরা তার অনুসরণে ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ আশঙ্কাটি খুবই প্রকট। আল্লাহর নিকট আমরা নিরাপত্তা কামনা করি।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: সালাফদের উক্তি عفوا تعف نساءكم “তোমরা পাক-পবিত্র থাক, তোমাদের নারীরাও পাক-পবিত্র থাকবে।” দ্বারা অনেকে এ কথা প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি ব্যভিচার করে তার ঘরের স্ত্রীও ব্যভিচার করবে। এ কথা কতটা বিশুদ্ধ? এ কথা এবং আল্লাহ তা‘আলার বাণী: ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৭] —এর মধ্যে যে বিরোধ তা কিভাবে নিরসন করব?
উত্তর: সর্ববস্থায় প্রসংশা কেবল আল্লাহরই। সালাফদের কথা ও কুরআনের বাণীর মধ্যে কোন বিরোধ নেই। সালাফদের উক্তির অর্থ হলো, যখন কোন ব্যক্তি বার বার ব্যভিচার করে, তখন পরিবারের মধ্যে ব্যভিচার সংঘটিত হওয়া দ্বারা তাকে শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিষয়টি হবেই এমন নয়। এটি কেবল আশঙ্কা। আল্লাহর বাণী— ﴿أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٞ وِزۡرَ أُخۡرَىٰ ٣٨ ﴾ [ النجم : ٣٨ ] “তা এই যে, কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।” [সূরা আন-নাজম, আয়াত: ৩৭] এর অর্থ কোন মানুষকে অপরের গুনাহের কারণে পাকড়াও করা হবে না। কিন্তু একজন মানুষ গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এটি তার পরিবারের জন্য নিরাপত্তা। যেমন কোন ব্যক্তি যখন অবাধ্য হয়, মদ পান করে বা অন্য কোন খারাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ে, তার প্রভাব তার পরিবার পরিজনের মধ্যেও পড়ে। ফলে দেখা যায় তারাও তার অনুকরণে খারাপ কর্মে লিপ্ত হয় এবং তার অনুসরণ করতে থাকে। অনুরূপভাবে যখন কোন ব্যক্তি ব্যভিচার করে –নাউযুবিল্লাহ- তখন তার ছেলে মেয়েরাও তার অনুকরণ করে। তার স্ত্রীও তার মতো যিনা- ব্যভিচার করে। সুতরাং আমাদের সবাইকে এ থেকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু কাউকে অপরের গুনাহের কারণে কখনোই পাকড়াও করা হবে না। প্রত্যেককে তার নিজের অপরাধের কারণে পাকড়াও করা হবে। অভিভাবকের ব্যভিচার করা তার পরিবার ও ছেলে-মেয়েরা তার অনুসরণে ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ আশঙ্কাটি খুবই প্রকট। আল্লাহর নিকট আমরা নিরাপত্তা কামনা করি।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, فإن الله خلق آدم على صورته “আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।” এর অর্থ কি এই যে, আদম আলাইহিস সালামের যে সব গুণাগুণ রয়েছে তা আল্লাহর জন্যও হবে?
উত্তর: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - فإن الله خلق آدم على صورته “আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।” [মুসলিম হাদীস নং 2612] ইমাম আহমাদ ও এক জামাআত হাদীস বিশারদদের বর্ণনায় বর্ণিত, “রহমানের আকৃতিতে।” প্রথম হাদীসে সর্বনামটি আল্লাহর পরিবর্তে ব্যবহারিত। ইমাম আহমদ, ইসহাক ইবন রাহওয়াই ও পূর্বসূরী ইমামগণ বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের সে পথ চলাই ওয়াজিব যে পথ আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের ক্ষেত্রে আমরা চলে আসছি। কোন প্রকার সাদৃস্যতা, দৃষ্টান্ত ও অকার্যকরিতা স্থাপন করা ছাড়া আল্লাহর সাথে যা প্রযোজ্য তাই মানতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী এ কথা বাধ্য করে না যে, আল্লাহর আকৃতি আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি হতে হবে। যেমন, আল্লাহর জন্য হাত, পা, আঙ্গুল, খুশি হওয়া, রাগ হওয়া ইত্যাদি গুনাগুণ তার জন্য সাব্যস্ত করা এ কথাকে বাধ্য করে না যে, আল্লাহ তা‘আলাও মানুষের মতো। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সম্পর্কে তিনি নিজে বা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গুণ সম্পর্কে যে সংবাদ দিয়েছেন সে সব গুনে তিনি তার শান অনুযায়ী মাখলুকের সাথে কোন প্রকার সাদৃস ছাড়া গুনান্বিত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, . ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৭] সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হলো যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা মেনে নেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উদ্দেশ্য নিয়েছেন সে অনুযয়ী কোন প্রকার ধরণ, প্রকৃতি ও দৃষ্টান্ত ছাড়া গ্রহণ করা।
“আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন” এ হাদীসটির অর্থ-আল্লাহ ভালো জানেন- তিনি চেহারা, কান ও চোখ বিশিষ্ট। তিনি শোনেন, দেখেন, কথা বলেন এবং যা ইচ্ছা করেন। তবে এ অর্থ দ্বারা এ কথা মানাকে বাধ্য করে না যে, তার চেহারা মাখলুকের চেহারার মতো, তার কান মাখলুকের কানের মতো এবং চোখ মাখলুকের চোখের মতো...ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি আর আল্লাহর আকৃতি একই হবে তা মানাকেও এ হাদীস বাধ্য করে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নিকট আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এটি একটি সামগ্রিক ও সার্বজনিন মূলনীতি যে- আল্লাহর সিফাত সম্বোলিত কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে কোন প্রকার বিকৃতি, ধরণ বর্ণনা করা, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং বেকার মনে করা ছাড়া তার বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। এমনকি তারা আল্লাহর নামসমূহ ও সিফাতসমূহকে কোন প্রকার দৃষ্টান্ত ছাড়াই সাব্যস্ত করে থাকেন এবং তারা আল্লাহকে মাখলুকের সাথে সাদৃস্য হওয়া থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র সাব্যস্ত করেন। মুআত্তালা ও সাদৃস্যবাদী বিদআতীরা এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে।
সুতরাং, যদিও মাখলুক ও খালেক-আল্লাহ তা‘আলা উভয়েই ইলম, চোখ ও কান থাকা বিষয়ে একই এবং অভিন্ন। মনে রাখতে হবে, মাখলুকের কান, মাখলুকের চোখ এবং মাখলুকের ইলম আল্লাহ তা‘আলার চোখ, কান ও ইলমের মতো নয়। কিন্তু যে গুনাগুনটি নিতান্তই আল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, তার মাখলুকের কেউ তাতে আল্লাহর সাদৃস হতে পারে না। তার মতো কোন বস্তুই নেই। আল্লাহর গুনাগুন বা সিফাত অবশ্যই পরিপূর্ণ, স্থায়ী ও অক্ষয়। কোন ভাবেই তার কোন গুন বা সিফাতের মধ্যে কোন প্রকার অপূর্ণাঙ্গতা, দূর্বলতা বা খুঁত ও ক্ষয় পরিলক্ষিত হতে পারে না। প্রক্ষান্তরে মাখলুকের গুণাগুন অর্থাৎ শোনা, দেখা এবং জানা ইত্যাদি সব গুণই ত্রুটি যুক্ত, অসম্পূর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন - فإن الله خلق آدم على صورته “আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।” [মুসলিম হাদীস নং 2612] ইমাম আহমাদ ও এক জামাআত হাদীস বিশারদদের বর্ণনায় বর্ণিত, “রহমানের আকৃতিতে।” প্রথম হাদীসে সর্বনামটি আল্লাহর পরিবর্তে ব্যবহারিত। ইমাম আহমদ, ইসহাক ইবন রাহওয়াই ও পূর্বসূরী ইমামগণ বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের সে পথ চলাই ওয়াজিব যে পথ আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের ক্ষেত্রে আমরা চলে আসছি। কোন প্রকার সাদৃস্যতা, দৃষ্টান্ত ও অকার্যকরিতা স্থাপন করা ছাড়া আল্লাহর সাথে যা প্রযোজ্য তাই মানতে হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী এ কথা বাধ্য করে না যে, আল্লাহর আকৃতি আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি হতে হবে। যেমন, আল্লাহর জন্য হাত, পা, আঙ্গুল, খুশি হওয়া, রাগ হওয়া ইত্যাদি গুনাগুণ তার জন্য সাব্যস্ত করা এ কথাকে বাধ্য করে না যে, আল্লাহ তা‘আলাও মানুষের মতো। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সম্পর্কে তিনি নিজে বা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গুণ সম্পর্কে যে সংবাদ দিয়েছেন সে সব গুনে তিনি তার শান অনুযায়ী মাখলুকের সাথে কোন প্রকার সাদৃস ছাড়া গুনান্বিত। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, . ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৭] সুতরাং আমাদের দায়িত্ব হলো যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা মেনে নেয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে উদ্দেশ্য নিয়েছেন সে অনুযয়ী কোন প্রকার ধরণ, প্রকৃতি ও দৃষ্টান্ত ছাড়া গ্রহণ করা।
“আদম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা তার স্বীয় আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন” এ হাদীসটির অর্থ-আল্লাহ ভালো জানেন- তিনি চেহারা, কান ও চোখ বিশিষ্ট। তিনি শোনেন, দেখেন, কথা বলেন এবং যা ইচ্ছা করেন। তবে এ অর্থ দ্বারা এ কথা মানাকে বাধ্য করে না যে, তার চেহারা মাখলুকের চেহারার মতো, তার কান মাখলুকের কানের মতো এবং চোখ মাখলুকের চোখের মতো...ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আদম আলাইহিস সালামের আকৃতি আর আল্লাহর আকৃতি একই হবে তা মানাকেও এ হাদীস বাধ্য করে না। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের নিকট আল্লাহর সিফাতের ক্ষেত্রে এটি একটি সামগ্রিক ও সার্বজনিন মূলনীতি যে- আল্লাহর সিফাত সম্বোলিত কুরআনের আয়াত ও হাদীসসমূহকে কোন প্রকার বিকৃতি, ধরণ বর্ণনা করা, দৃষ্টান্ত স্থাপন করা এবং বেকার মনে করা ছাড়া তার বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করতে হবে। এমনকি তারা আল্লাহর নামসমূহ ও সিফাতসমূহকে কোন প্রকার দৃষ্টান্ত ছাড়াই সাব্যস্ত করে থাকেন এবং তারা আল্লাহকে মাখলুকের সাথে সাদৃস্য হওয়া থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র সাব্যস্ত করেন। মুআত্তালা ও সাদৃস্যবাদী বিদআতীরা এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষণ করে।
সুতরাং, যদিও মাখলুক ও খালেক-আল্লাহ তা‘আলা উভয়েই ইলম, চোখ ও কান থাকা বিষয়ে একই এবং অভিন্ন। মনে রাখতে হবে, মাখলুকের কান, মাখলুকের চোখ এবং মাখলুকের ইলম আল্লাহ তা‘আলার চোখ, কান ও ইলমের মতো নয়। কিন্তু যে গুনাগুনটি নিতান্তই আল্লাহর বিশেষ বৈশিষ্ট্য, তার মাখলুকের কেউ তাতে আল্লাহর সাদৃস হতে পারে না। তার মতো কোন বস্তুই নেই। আল্লাহর গুনাগুন বা সিফাত অবশ্যই পরিপূর্ণ, স্থায়ী ও অক্ষয়। কোন ভাবেই তার কোন গুন বা সিফাতের মধ্যে কোন প্রকার অপূর্ণাঙ্গতা, দূর্বলতা বা খুঁত ও ক্ষয় পরিলক্ষিত হতে পারে না। প্রক্ষান্তরে মাখলুকের গুণাগুন অর্থাৎ শোনা, দেখা এবং জানা ইত্যাদি সব গুণই ত্রুটি যুক্ত, অসম্পূর্ণ ও ক্ষণস্থায়ী। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
[বাহ্যিকভাবে মেয়েটি অবিবাহিত হওয়ার পরও তাকে কেন বিবাহ করেনি?]
প্রশ্ন: গুহার তিন জনের একজনের ঘটনা বিষয়ে প্রশ্ন জাগে যে, নির্জনে একাকী অবস্থায় স্বীয় চাচাতো বোনের সাথে ব্যভিচার করতে যখন আল্লাহ তা‘আলার ভয় বিরত রাখল, তখন অবিবাহিত হওয়া সত্বেও তাকে কেন বিবাহ করল না?। অপর জন সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে যে, দুধ দোহানোর পর স্বীয় মাতা-পিতাকে ঘুমে দেখে তাদের ঘুম থেকে জাগানোকে অপছন্দ করল এবং তার পরিবারের সদস্য ও নিষ্পাপ শিশুরা ক্ষুধার জালায় যখন কাঁদছিল এ অবস্থায় তাদের খেতে দেওয়া ওয়াজিব হওয়া সত্বেও তাদেরও পান করানোকে অপছন্দ করেন। অথচ এ অবস্থায় তাদের খেতে দেওয়া তার মাতা-পিতার সাথে ভালো আচরণের পরিপন্থী নয়। এটি কীভাবে সমর্থনযোগ্য?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ব্যক্তির থেকে প্রতি জনের ঘটনা আলোচনা করেছেন তাদের উন্নত আখলাক দ্বারা সর্বচ্চ সফলতা অর্জনের বিষয়টিকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। ফলে তিনি ঘটনার আনুসাঙ্গিক যে সব আপত্তিকর ও প্রশ্নাতীত বিষয়গুলো রয়েছে তার গভীরতায় না গিয়ে তাদের একজনের সবোর্চ্চ পুত-পবিত্র হওয়া, একজনের মাতা-পিতার জন্য সর্বচ্চো ত্যাগ স্বীকার করা এবং একজনের আমানত দারিতার সবোর্চচ্ গুরুত্ব প্রদান করাকে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছেন। কারণ, উদ্দেশ্য তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা আনুসাঙ্গিক বিধি-বিধান উল্লেখ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে জানা অজানা অনেক আপত্তিই থাকতে পারে যা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুর রহমান আস-সা ‘আদী রহ.
প্রশ্ন: গুহার তিন জনের একজনের ঘটনা বিষয়ে প্রশ্ন জাগে যে, নির্জনে একাকী অবস্থায় স্বীয় চাচাতো বোনের সাথে ব্যভিচার করতে যখন আল্লাহ তা‘আলার ভয় বিরত রাখল, তখন অবিবাহিত হওয়া সত্বেও তাকে কেন বিবাহ করল না?। অপর জন সম্পর্কে প্রশ্ন জাগে যে, দুধ দোহানোর পর স্বীয় মাতা-পিতাকে ঘুমে দেখে তাদের ঘুম থেকে জাগানোকে অপছন্দ করল এবং তার পরিবারের সদস্য ও নিষ্পাপ শিশুরা ক্ষুধার জালায় যখন কাঁদছিল এ অবস্থায় তাদের খেতে দেওয়া ওয়াজিব হওয়া সত্বেও তাদেরও পান করানোকে অপছন্দ করেন। অথচ এ অবস্থায় তাদের খেতে দেওয়া তার মাতা-পিতার সাথে ভালো আচরণের পরিপন্থী নয়। এটি কীভাবে সমর্থনযোগ্য?
উত্তর: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন ব্যক্তির থেকে প্রতি জনের ঘটনা আলোচনা করেছেন তাদের উন্নত আখলাক দ্বারা সর্বচ্চ সফলতা অর্জনের বিষয়টিকে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে। ফলে তিনি ঘটনার আনুসাঙ্গিক যে সব আপত্তিকর ও প্রশ্নাতীত বিষয়গুলো রয়েছে তার গভীরতায় না গিয়ে তাদের একজনের সবোর্চ্চ পুত-পবিত্র হওয়া, একজনের মাতা-পিতার জন্য সর্বচ্চো ত্যাগ স্বীকার করা এবং একজনের আমানত দারিতার সবোর্চচ্ গুরুত্ব প্রদান করাকে গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছেন। কারণ, উদ্দেশ্য তাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করা আনুসাঙ্গিক বিধি-বিধান উল্লেখ করা তার উদ্দেশ্য ছিল না। এখানে জানা অজানা অনেক আপত্তিই থাকতে পারে যা এখানে আলোচনার বিষয় নয়। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ আব্দুর রহমান আস-সা ‘আদী রহ.
৫৯
“আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন” এ কথা বলা এবং “আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও” এ কথা বলার মধ্যে প্রার্থক্যপ্রশ্ন: “আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন” ( واو দ্বারা عطف করা হয়েছে)সাহাবীদের কথাকে সমর্থন করা এবং “আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও” এ কথাকে প্রত্যাখ্যান করার মধ্যে কিভাবে বিরোধ নিরসন করব?।
উত্তর: “আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন” বলা বৈধ। কারণ, রাসূলের ইলম আল্লাহর আল্লাহর ইলম থেকে। কোন মানুষ যা জানতে পারে না তা আল্লাহ তা‘আলাই তাকে জানিয়ে দেন। এ কারণেই واو দ্বারা বাক্যটি বলা হয়। অনুরূপভাবে শরীআতের মাসায়েল বিষয়ে এ কথা বলা হয় যে, “আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।” কারণ, আল্লাহর শরীআত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মাখলুকের তুলনায় সর্বাধিক জ্ঞাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, .. ﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ وَكَانَ فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكَ عَظِيمٗا ١١٣﴾ [ النساء : ١١٣ ] “আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩] “আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও” কথাটি ঐ কথার মতো নয়। কারণ, এ কথাটি কুদরাত ও চাওয়া অধ্যায়ের কথা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কুদরাত ও চাওয়া বিষয়ে অংশিদা হতে পারেন না।
সুতরাং, শরীআতের বিষয়সমূহে এ কথা বলা যাবে “আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন।” কিন্তু আল্লাহর কুদরতী বিষয়সমূহে ঐ কথা বলা যাবে না।
এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যারা কোন কোন আমলের ক্ষেত্রে এ আয়াত... পেশ করে তাদের দাবি সঠিক নয় তারা বিভ্রান্ত ও মূর্খ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পর আমল দেখতে পায় না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
উত্তর: “আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন” বলা বৈধ। কারণ, রাসূলের ইলম আল্লাহর আল্লাহর ইলম থেকে। কোন মানুষ যা জানতে পারে না তা আল্লাহ তা‘আলাই তাকে জানিয়ে দেন। এ কারণেই واو দ্বারা বাক্যটি বলা হয়। অনুরূপভাবে শরীআতের মাসায়েল বিষয়ে এ কথা বলা হয় যে, “আল্লাহ ও তার রাসূল ভালো জানেন।” কারণ, আল্লাহর শরীআত বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মাখলুকের তুলনায় সর্বাধিক জ্ঞাত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, .. ﴿وَأَنزَلَ ٱللَّهُ عَلَيۡكَ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمۡ تَكُن تَعۡلَمُۚ وَكَانَ فَضۡلُ ٱللَّهِ عَلَيۡكَ عَظِيمٗا ١١٣﴾ [ النساء : ١١٣ ] “আর আল্লাহ তোমার প্রতি নাযিল করেছেন কিতাব ও হিকমাত এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। আর তোমার উপর আল্লাহর অনুগ্রহ রয়েছে মহান।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ১১৩] “আল্লাহ যা চান এবং তুমি যা চাও” কথাটি ঐ কথার মতো নয়। কারণ, এ কথাটি কুদরাত ও চাওয়া অধ্যায়ের কথা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর কুদরাত ও চাওয়া বিষয়ে অংশিদা হতে পারেন না।
সুতরাং, শরীআতের বিষয়সমূহে এ কথা বলা যাবে “আল্লাহ ও তার রাসূলই ভালো জানেন।” কিন্তু আল্লাহর কুদরতী বিষয়সমূহে ঐ কথা বলা যাবে না।
এ দ্বারা এ কথা স্পষ্ট হয় যে, যারা কোন কোন আমলের ক্ষেত্রে এ আয়াত... পেশ করে তাদের দাবি সঠিক নয় তারা বিভ্রান্ত ও মূর্খ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর পর আমল দেখতে পায় না। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী: «السَّيِّدُ اللَّهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى» “আল্লাহ তা‘আলা সাইয়্যেদ [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৮০৮]।” তাশাহুদ পাঠে এসেছে - “হে আল্লাহ তুমি রহমত বর্ষণ করা আমাদের সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর।”
প্রশ্ন: আব্দুল্লাহ বিন শিখ্খির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বনী আমেরের লোকদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাই এবং আমি বলি হে রাসূল আপনি আমাদের সরদার। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাইয়্যেদ কেবল আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা। অথচ তাশাহুদ বিষয়ে হাদীসে এসেছে- “হে আল্লাহ তুমি রহমত বর্ষণ করা আমাদের সাইয়্যেদ-সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং আমাদের সাইয়্যেদ মুহাম্মা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজনের ওপর।” এবং অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি আদম সন্তানের সাইয়্যেদ।” উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা কীভাবে নিরসন হবে?।
উত্তর: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী আদমের সরদার। প্রতিটি জ্ঞানী মু’মিন বলতেই এ কথা বিশ্বাস করেন যে, তিনি আমাদের সরদার। আর সরদার অর্থ হলো, সম্মানী, আনুগত্যশীল এবং ক্ষমতাবান। আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করা আল্লাহরই অনুসরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ] “যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০] আমরা মু’মিনগণ এ কথা বিশ্বাস করি যে, আমাদের নবীই আমাদের সরদার, সবার চেয়ে উত্তম মানব, সর্বচ্চো মার্যাদার অধিকারী এবং তিনিই একমাত্র অনুকরনীয় মহা মানব। তার প্রতি আমাদের বিশ্বাসের দাবি হলো, তিনি আমাদের জন্য কথা, কর্ম ও বিশ্বাসের বিষয়ে যে দীন বা শরীআত নিয়ে এসেছেন তার প্রতি পূর্ণাঙ্গ অনুকরণ ও বিশ্বাস করা। তিনি আমাদের সালাত আদায়ের প্রদ্ধতিতে তাশাহুদে এ কথা اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ গুলো বা এ ধরনের বিভিন্ন গুনাবলী যেগুলো হাদীসে বর্ণিত রয়েছে তা বলতে বলেছেন। তবে প্রশ্নকারীর প্রশ্নে বর্ণিত গুনটি উল্লিখিত শব্দে বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাৎ السَّيِّدُ । যদি এ শব্দাবলী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে প্রমাণিত না হয়, তবে উত্তম হলো আমরা উল্লিখিত শব্দাবলী দ্বারা সালাতে দুরূদ পড়ব না। আমরা ঐ সব শব্দ দ্বারা দরূদ পড়বো যে শব্দগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি আমাদের শিখিয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় একটি বিষয়ে সতর্ক করাকে পছন্দ করি, আর তা হলো, যে কোন ঈমানদার লোক এ কথা বিশ্বাস করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সরদার, তার এ বিশ্বাস ও ঈমানের দাবি হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীন বা শরীআতের প্রচলন করেছেন তা অতিক্রম না করা, তাতে কোন প্রকার বাড়ানো ও কমানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। সুতরাং সে আল্লাহর দীনের মধ্যে এমন কিছু বাড়াবে না যা দীনের বিষয় নয় এবং কোন কিছুকে কমাবে না যা দীনের অংশ। কারণ, এটিই হলো কাউকে সরদার হিসেবে মানার প্রকৃত বাস্তবায়ন যা কেবল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটি তাঁরই হক।
এরই ভিত্তিতে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে যে সব দুরূদ বা যিকির শরীআত হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা তার নবীর ওপর নাযিল করেননি সে সব দরূদ বা যিকিকের আবিষ্কার করা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সরদার বলে বিশ্বাস করার দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত ও পরিপন্থী। কারণ, এ বিশ্বাসের দাবি হলো শরীআতের অতিক্রম না করা এবং তার থেকে কোন কিছু বাদ না দেয়া। সুতরাং একজন মানুষকে অবশ্যই এ বিষয়ে চিন্ত ফিকির করতে হবে যাতে তার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, সে একজন অনুসারী মাত্র সে কোন শরীআতের প্রবর্তক নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত তিনি বলেন, ....তার এ বাণী এবং অপর বাণী...এর মধ্যে নিষ্পত্তি হলো, সামগ্রীক ক্ষমতাধর হওয়া বা সরদারী করা একমাত্র আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। কারণ, যাবতীয় বিষয় সমূহ কেবল আল্লাহর। তিনি হুকুমদাতা, বাকীরা সবাই তার হুকুমের গোলাম। তিনি হাকিম বাকীরা মাহকুম। আল্লাহর ছাড়া অন্যদের ক্ষমতা আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট বস্তুর মধ্যে, নির্দিষ্ট সময়ে জন্য, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এবং সৃষ্টি কোন শ্রেণির ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ।
প্রশ্ন: আব্দুল্লাহ বিন শিখ্খির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বনী আমেরের লোকদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট যাই এবং আমি বলি হে রাসূল আপনি আমাদের সরদার। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সাইয়্যেদ কেবল আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা। অথচ তাশাহুদ বিষয়ে হাদীসে এসেছে- “হে আল্লাহ তুমি রহমত বর্ষণ করা আমাদের সাইয়্যেদ-সরদার মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং আমাদের সাইয়্যেদ মুহাম্মা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবার পরিজনের ওপর।” এবং অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি আদম সন্তানের সাইয়্যেদ।” উভয় হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা কীভাবে নিরসন হবে?।
উত্তর: এতে কোন সন্দেহ নেই যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানী আদমের সরদার। প্রতিটি জ্ঞানী মু’মিন বলতেই এ কথা বিশ্বাস করেন যে, তিনি আমাদের সরদার। আর সরদার অর্থ হলো, সম্মানী, আনুগত্যশীল এবং ক্ষমতাবান। আল্লাহর রাসূলের অনুসরণ করা আল্লাহরই অনুসরণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَّن يُطِعِ ٱلرَّسُولَ فَقَدۡ أَطَاعَ ٱللَّهَۖ ٨٠﴾ [ النساء : ٨٠ ] “যে রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহরই আনুগত্য করল।” [সূরা আন-নিসা, আয়াত: ৮০] আমরা মু’মিনগণ এ কথা বিশ্বাস করি যে, আমাদের নবীই আমাদের সরদার, সবার চেয়ে উত্তম মানব, সর্বচ্চো মার্যাদার অধিকারী এবং তিনিই একমাত্র অনুকরনীয় মহা মানব। তার প্রতি আমাদের বিশ্বাসের দাবি হলো, তিনি আমাদের জন্য কথা, কর্ম ও বিশ্বাসের বিষয়ে যে দীন বা শরীআত নিয়ে এসেছেন তার প্রতি পূর্ণাঙ্গ অনুকরণ ও বিশ্বাস করা। তিনি আমাদের সালাত আদায়ের প্রদ্ধতিতে তাশাহুদে এ কথা اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ গুলো বা এ ধরনের বিভিন্ন গুনাবলী যেগুলো হাদীসে বর্ণিত রয়েছে তা বলতে বলেছেন। তবে প্রশ্নকারীর প্রশ্নে বর্ণিত গুনটি উল্লিখিত শব্দে বর্ণিত হয়েছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাৎ السَّيِّدُ । যদি এ শব্দাবলী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে বলে প্রমাণিত না হয়, তবে উত্তম হলো আমরা উল্লিখিত শব্দাবলী দ্বারা সালাতে দুরূদ পড়ব না। আমরা ঐ সব শব্দ দ্বারা দরূদ পড়বো যে শব্দগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে এবং তিনি আমাদের শিখিয়েছেন।
এরই ধারাবাহিকতায় একটি বিষয়ে সতর্ক করাকে পছন্দ করি, আর তা হলো, যে কোন ঈমানদার লোক এ কথা বিশ্বাস করে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সরদার, তার এ বিশ্বাস ও ঈমানের দাবি হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে দীন বা শরীআতের প্রচলন করেছেন তা অতিক্রম না করা, তাতে কোন প্রকার বাড়ানো ও কমানো থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকা। সুতরাং সে আল্লাহর দীনের মধ্যে এমন কিছু বাড়াবে না যা দীনের বিষয় নয় এবং কোন কিছুকে কমাবে না যা দীনের অংশ। কারণ, এটিই হলো কাউকে সরদার হিসেবে মানার প্রকৃত বাস্তবায়ন যা কেবল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং এটি তাঁরই হক।
এরই ভিত্তিতে বলা যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জবানে যে সব দুরূদ বা যিকির শরীআত হিসেবে আল্লাহ তা‘আলা তার নবীর ওপর নাযিল করেননি সে সব দরূদ বা যিকিকের আবিষ্কার করা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সরদার বলে বিশ্বাস করার দাবির সম্পূর্ণ বিপরীত ও পরিপন্থী। কারণ, এ বিশ্বাসের দাবি হলো শরীআতের অতিক্রম না করা এবং তার থেকে কোন কিছু বাদ না দেয়া। সুতরাং একজন মানুষকে অবশ্যই এ বিষয়ে চিন্ত ফিকির করতে হবে যাতে তার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে, সে একজন অনুসারী মাত্র সে কোন শরীআতের প্রবর্তক নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত তিনি বলেন, ....তার এ বাণী এবং অপর বাণী...এর মধ্যে নিষ্পত্তি হলো, সামগ্রীক ক্ষমতাধর হওয়া বা সরদারী করা একমাত্র আল্লাহর জন্যই প্রযোজ্য। কারণ, যাবতীয় বিষয় সমূহ কেবল আল্লাহর। তিনি হুকুমদাতা, বাকীরা সবাই তার হুকুমের গোলাম। তিনি হাকিম বাকীরা মাহকুম। আল্লাহর ছাড়া অন্যদের ক্ষমতা আপেক্ষিক। নির্দিষ্ট বস্তুর মধ্যে, নির্দিষ্ট সময়ে জন্য, নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এবং সৃষ্টি কোন শ্রেণির ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ।
প্রশ্ন: কিতাবুল ফাতওয়া পৃ: ১০৭, ১০৮ থেকে একটি ফাতওয়া নং ৪৬ সম্পর্কে শাইখ ইবন উসাইমীনের দৃষ্টি আর্কষণ করা হলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থু থু ছাড়া আর কারো থু থু দ্বারা বরকত হাসিল করা হারাম এবং এক প্রকারের শির্ক। তবে কুরআন দ্বারা ফুঁ দেয়ার কথাটি ভিন্ন। সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত একটি হাদীসের সাথে বিষয়টির অসঙ্গতি পরিলক্ষিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঝাঁড়-ফুঁকে বলতেন- . بِسْمِ اللَّهِ تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا يُشْفَى سَقِيمُنَا “বিছমিল্লাহী, আমাদের জমিনের মাটি দ্বারা, আমাদের অনেকের থু থু দ্বারা, আল্লাহর অনুমতিতে আমাদের রোগীদের সুস্থতা দান করা হোক।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৭৪৫] বিষয়টিকে স্পষ্ট করার জন্য আপনার নিকট আমরা আশাবাদী।
উত্তর: কোন কোন আলেমগণ বলেছেন, বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং মদীনার মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যদি বিষয়টি এমন হয়ে থাকে তাহলে কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু জামহুর আলেমগণ বলেন, বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বা মদীনার মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য কথাটি সঠিক নয়। বরং বিষয়টি প্রতিটি ঝাঁড়-ফুঁকদাতা এবং যে কোন জায়গার মাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও ব্যাপক। তবে বিষয়টি শুধু থু থু বা মাটি দ্বারা বরকত হাসিল করার বিষয় নয়। বরং বিষয়টি থু থু বা মাটির সাথে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আরোগ্য লাভ করার দো’য়ার সাথে সম্পৃক্ত। প্রশ্নে উল্লিখিত পূর্বের ফাতওয়ায় আমাদের উত্তর ছিল শুধু থু থু দ্বারা বরকত হাসিল করা প্রসঙ্গে। সুতরাং দু’টি উত্তরের ধরন দুই রকম হওয়ার কারণে এখন প্রশ্ন করার আর কোন সুযোগ নেই। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন রহ.
উত্তর: কোন কোন আলেমগণ বলেছেন, বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এবং মদীনার মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। যদি বিষয়টি এমন হয়ে থাকে তাহলে কোন প্রশ্ন নেই। কিন্তু জামহুর আলেমগণ বলেন, বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বা মদীনার মাটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য কথাটি সঠিক নয়। বরং বিষয়টি প্রতিটি ঝাঁড়-ফুঁকদাতা এবং যে কোন জায়গার মাটির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও ব্যাপক। তবে বিষয়টি শুধু থু থু বা মাটি দ্বারা বরকত হাসিল করার বিষয় নয়। বরং বিষয়টি থু থু বা মাটির সাথে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত আরোগ্য লাভ করার দো’য়ার সাথে সম্পৃক্ত। প্রশ্নে উল্লিখিত পূর্বের ফাতওয়ায় আমাদের উত্তর ছিল শুধু থু থু দ্বারা বরকত হাসিল করা প্রসঙ্গে। সুতরাং দু’টি উত্তরের ধরন দুই রকম হওয়ার কারণে এখন প্রশ্ন করার আর কোন সুযোগ নেই। আল্লাহই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মাদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, , « مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا إلى يوم القيامة» “যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো কোন আদর্শ স্থাপন করল, তার জন্য রয়েছে তার সাওয়াব এবং কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার ওপর আমল করবে তার সাওয়াব।” এটি কি হাদীস? যদি হাদীস হয় তাহলে ইসলামে কারো জন্য কোন একটি সুন্নাত চালু করার সুযোগ কি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রেখে গিয়েছেন? আশা করি বিষয়টি বিস্তারিত জানাবেন।
উত্তর: হাদীসটি বিশুদ্ধ। হাদীসটি সুন্নাতকে জীবিত করা, সুন্নাতের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেওয়া এবং বিদআত ও অন্যায়ের প্রচলন করা থেকে মানুষকে সতর্ক করার প্রমাণ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ » “যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো কোন আদর্শ স্থাপন করল, তার জন্য রয়েছে তার সাওয়াব এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার ওপর আমল করবে তার সাওয়াব। তাতে তার সাওয়াব থেকে কোন প্রকার ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ কর্ম চালু করল, তার জন্য রয়েছে তার কর্মে গুনাহ এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার ওপর আমল করবে তাদের গুনাহ। তাতে তাদের গুনাহে কোন ঘাটতি হবে না।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৯৮]
একই ধরনের হাদীস আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ومن سن سنة سيئة فعمل بها بعده كان عليه وزره ومثل أوزارهم من غير أن ينقص من أوزارهم شيئا» . “যে ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের প্রতি দাওয়াত দেয়, যে তার অনুসরণ করে তার সাওয়াবের মধ্যে কম করা ছাড়া তার সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর দিকে কাউকে আহ্বান করে, তার অনুসরণ কারীর গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহ হবে। তবে তার গুনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ কর্ম চালু করল, তার জন্য রয়েছে তার কর্মের গুনাহ এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার অনুসরণ করবে তাদের গুনাহ। তাতে তার গুনাহ একটুও কমানো হবে না।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮০]
অনুরূপভাবে আবু মাসউদ আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ » “যে ব্যক্তি কোন মানুষকে ভালো কর্মের প্রতি পথ দেখালো, তার জন্য ঐ ভালো কর্মটি করার সমপরিমাণ সাওয়াব মিলবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০০৭] এর অর্থ, যে সুন্নাতটি মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন একটি সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করলো, প্রচার করল এবং তুলে ধরল। সে মানুষকে তার প্রতি আহ্বান করতে থাকে, তার প্রচার করে, গুরুত্ব বর্ণনা করে। তখন যারা তার কথায় অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এর অর্থ এ নয় যে, কোন একটি সুন্নাতকে আবিষ্কার করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদআত থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, وان كل بدعة ضلالة “সব বিদআতই গোমরাহী।” [ইবনু মাযা, হাদীস নং ৪২] সমস্ত আহলে ইলমদের মতৈক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী একটি অপরটির সত্যায়ন কারী একটি অপরটির বিরোধী নয়। হাদীস দ্বারা জানা গেল হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য পুনর্জীবিত করা, প্রচার করা।
এর দৃষ্টান্ত: যে দেশে কুরআন বা হাদীসের শিক্ষা চালু নেই সে দেশে একজন আলেম কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা চালু করল, মানুষকে কুরআন ও হাদীস শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থান করল এবং দেশের মধ্যে শিক্ষার সুন্নাতটি চালু করল। অথবা এ দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষকদের উপস্থিত করে কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করল। অথবা কোন দেশের মানুষ তাদের দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে। তখন লোকটি ঐ দেশে গিয়ে দাড়ি লম্বা করা এবং দাড়ি না কাটার বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করল। দেশটির মানুষ যে সুন্নাত সম্পর্কে জানতো না লোকটি সে মহান সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করল। তার কারণে যে সব লোকেরা এ মহান সুন্নাতটির অনুসরণ করবে সে তাদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قُصُّوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ “তোমরা গোপ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা কর মুশরিকদের বিরোধিতা করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫] মানুষ যখন দেখল, লোকটি নিজে দাড়ি রেখেছে এবং মানুষকে দাড়ি রাখার প্রতি দাওয়াত দিয়েছে তখন তার অনুসরন করল। ফলে তাদের মাঝে সুন্নাতটি চালু করার কারণে তাদের আমল করার সাওয়াব তিনি পেয়ে যাবেন। ওপরে উল্লিখিত হাদীস এবং একই অর্থের আরো অন্যান্য হাদীসের কারণে সুন্নাতটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়াজিব যা ছেড়ে দেওয়া কোন ক্রমেই বৈধ নয়। অনুরূপভাকে কোন দেশের মানুষ জুমুআর সালাত আদায় করত না। একজন লোক সেখানে গিয়ে জুমু‘আর সালাত চালু করল। তাহলে তিনি তাদের জু‘মুআর সালাত আদায় করা সাওয়াব পেয়ে যাবেন। অনুরূপভাবে কোন এলাকার মানুষ সালাতুল ভিতির সম্পর্কে অজ্ঞ। তখন তিনি তাদের সালাতুল ভিতির শেখালেন এবং তার অনুসরণে সালাতুল ভিতির আদায় করল। অথবা এ ধরনের অন্য কোন ইবাদত বা শরী‘আতের জরুরী কোন বিধান কোন দেশে চালু করল। সুতরাং, যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে সুন্নাতটি প্রচার করল, পুনর্জীবিত করল এবং মানুষের মধ্যে তুলে ধরল, তাকে বলা হবে, ইসলামে সে একটি ভালো রীতি চালু করল। অর্থাৎ, ইসলামের বিধান প্রচার করল এবং সে এমন লোকদের অর্ন্তভুক্ত হবে যারা ইসলামের মধ্যে একটি ভালো রীতি চালু করলেন।
এ দ্বারা দীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করা উদ্দেশ্য নয়, যার অনুমতি আল্লাহ তা‘আলা দেননি। সব ধরনের বিদআতি গোমরাহী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে বলেছেন - وإياكم ومحدثات الأمور فان كل محدثة بدعة وان كل بدعة ضلالة “তোমরা নব আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাক। কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বস্তু বিদআত, আর প্রতিটি বিদআত গোমরাহী।” অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, . مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যার ওপর আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীন নং ৭২৫০] অপর শব্দে « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ » . “যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনের মধ্যে এমন কোন কর্ম আবিষ্কার করল যা এ দীনের বিষয় নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯]
জুমু‘আর সালাতের খুতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ » “অতঃপর সবোর্ত্তম কথা হলো, আল্লাহ কিতাব, আর সবোর্ত্তম আদর্শ হলো, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ । আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নব আবিষ্কৃত বিষয়। এবং প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহী।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৪২] যে ইবাদতের প্রচলন আল্লাহ তা‘আলা করেননি, তার প্রতি মানুষকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অবৈধ। এ ধরনের লোককে সাওয়াব দেওয়া হবে না বরং এ ধরনের কর্ম করা এবং তার প্রতি দাওয়াত দেওয়া সম্পূর্ণ বিদআত এবং আহ্বানকারী গোমরাহীর প্রতি দাওয়াত দাতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের লোকদের দুর্নাম করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ ٢١﴾ [ الشورى : ٢١ ] “তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি”? [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ২১] । আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: হাদীসটি বিশুদ্ধ। হাদীসটি সুন্নাতকে জীবিত করা, সুন্নাতের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেওয়া এবং বিদআত ও অন্যায়ের প্রচলন করা থেকে মানুষকে সতর্ক করার প্রমাণ। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, « مَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً حَسَنَةً فَلَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا بَعْدَهُ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَىْءٌ وَمَنْ سَنَّ فِى الإِسْلاَمِ سُنَّةً سَيِّئَةً كَانَ عَلَيْهِ وِزْرُهَا وَوِزْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهِ مِنْ غَيْرِ أَنْ يَنْقُصَ مِنْ أَوْزَارِهِمْ شَىْءٌ » “যে ব্যক্তি ইসলামে ভালো কোন আদর্শ স্থাপন করল, তার জন্য রয়েছে তার সাওয়াব এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার ওপর আমল করবে তার সাওয়াব। তাতে তার সাওয়াব থেকে কোন প্রকার ঘাটতি হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ কর্ম চালু করল, তার জন্য রয়েছে তার কর্মে গুনাহ এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার ওপর আমল করবে তাদের গুনাহ। তাতে তাদের গুনাহে কোন ঘাটতি হবে না।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৯৮]
একই ধরনের হাদীস আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, «مَنْ دَعَا إِلَى هُدًى كَانَ لَهُ مِنَ الأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا وَمَنْ دَعَا إِلَى ضَلاَلَةٍ كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ لاَ يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا ومن سن سنة سيئة فعمل بها بعده كان عليه وزره ومثل أوزارهم من غير أن ينقص من أوزارهم شيئا» . “যে ব্যক্তি কাউকে হিদায়াতের প্রতি দাওয়াত দেয়, যে তার অনুসরণ করে তার সাওয়াবের মধ্যে কম করা ছাড়া তার সমপরিমাণ সাওয়াব তাকে দেওয়া হবে। আর যে ব্যক্তি কোন গোমরাহীর দিকে কাউকে আহ্বান করে, তার অনুসরণ কারীর গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহ হবে। তবে তার গুনাহের মধ্যে কোন কমতি করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোন খারাপ কর্ম চালু করল, তার জন্য রয়েছে তার কর্মের গুনাহ এবং তার পরবর্তী কিয়ামত অবধি যত মানুষ তার অনুসরণ করবে তাদের গুনাহ। তাতে তার গুনাহ একটুও কমানো হবে না।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮০]
অনুরূপভাবে আবু মাসউদ আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, « مَنْ دَلَّ عَلَى خَيْرٍ فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِ فَاعِلِهِ » “যে ব্যক্তি কোন মানুষকে ভালো কর্মের প্রতি পথ দেখালো, তার জন্য ঐ ভালো কর্মটি করার সমপরিমাণ সাওয়াব মিলবে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০০৭] এর অর্থ, যে সুন্নাতটি মানুষের কাছ থেকে হারিয়ে বা বিলুপ্ত হয়ে গেছে এমন একটি সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করলো, প্রচার করল এবং তুলে ধরল। সে মানুষকে তার প্রতি আহ্বান করতে থাকে, তার প্রচার করে, গুরুত্ব বর্ণনা করে। তখন যারা তার কথায় অনুসরণ করবে তাদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। এর অর্থ এ নয় যে, কোন একটি সুন্নাতকে আবিষ্কার করা। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদআত থেকে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেন, وان كل بدعة ضلالة “সব বিদআতই গোমরাহী।” [ইবনু মাযা, হাদীস নং ৪২] সমস্ত আহলে ইলমদের মতৈক্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণী একটি অপরটির সত্যায়ন কারী একটি অপরটির বিরোধী নয়। হাদীস দ্বারা জানা গেল হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য পুনর্জীবিত করা, প্রচার করা।
এর দৃষ্টান্ত: যে দেশে কুরআন বা হাদীসের শিক্ষা চালু নেই সে দেশে একজন আলেম কুরআন ও হাদীসের শিক্ষা চালু করল, মানুষকে কুরআন ও হাদীস শিক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে অবস্থান করল এবং দেশের মধ্যে শিক্ষার সুন্নাতটি চালু করল। অথবা এ দেশে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষকদের উপস্থিত করে কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করল। অথবা কোন দেশের মানুষ তাদের দাড়ি মুন্ডায় বা ছোট করে। তখন লোকটি ঐ দেশে গিয়ে দাড়ি লম্বা করা এবং দাড়ি না কাটার বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করল। দেশটির মানুষ যে সুন্নাত সম্পর্কে জানতো না লোকটি সে মহান সুন্নাতকে পুনর্জীবিত করল। তার কারণে যে সব লোকেরা এ মহান সুন্নাতটির অনুসরণ করবে সে তাদের সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, قُصُّوا الشَّوَارِبَ وَأَعْفُوا اللِّحَى خَالِفُوا الْمُشْرِكِينَ “তোমরা গোপ ছোট কর এবং দাড়ি লম্বা কর মুশরিকদের বিরোধিতা করা।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৮৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬২৫] মানুষ যখন দেখল, লোকটি নিজে দাড়ি রেখেছে এবং মানুষকে দাড়ি রাখার প্রতি দাওয়াত দিয়েছে তখন তার অনুসরন করল। ফলে তাদের মাঝে সুন্নাতটি চালু করার কারণে তাদের আমল করার সাওয়াব তিনি পেয়ে যাবেন। ওপরে উল্লিখিত হাদীস এবং একই অর্থের আরো অন্যান্য হাদীসের কারণে সুন্নাতটি গুরুত্বপূর্ণ একটি ওয়াজিব যা ছেড়ে দেওয়া কোন ক্রমেই বৈধ নয়। অনুরূপভাকে কোন দেশের মানুষ জুমুআর সালাত আদায় করত না। একজন লোক সেখানে গিয়ে জুমু‘আর সালাত চালু করল। তাহলে তিনি তাদের জু‘মুআর সালাত আদায় করা সাওয়াব পেয়ে যাবেন। অনুরূপভাবে কোন এলাকার মানুষ সালাতুল ভিতির সম্পর্কে অজ্ঞ। তখন তিনি তাদের সালাতুল ভিতির শেখালেন এবং তার অনুসরণে সালাতুল ভিতির আদায় করল। অথবা এ ধরনের অন্য কোন ইবাদত বা শরী‘আতের জরুরী কোন বিধান কোন দেশে চালু করল। সুতরাং, যে ব্যক্তি তাদের মধ্যে সুন্নাতটি প্রচার করল, পুনর্জীবিত করল এবং মানুষের মধ্যে তুলে ধরল, তাকে বলা হবে, ইসলামে সে একটি ভালো রীতি চালু করল। অর্থাৎ, ইসলামের বিধান প্রচার করল এবং সে এমন লোকদের অর্ন্তভুক্ত হবে যারা ইসলামের মধ্যে একটি ভালো রীতি চালু করলেন।
এ দ্বারা দীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করা উদ্দেশ্য নয়, যার অনুমতি আল্লাহ তা‘আলা দেননি। সব ধরনের বিদআতি গোমরাহী। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশুদ্ধ হাদীসে বলেছেন - وإياكم ومحدثات الأمور فان كل محدثة بدعة وان كل بدعة ضلالة “তোমরা নব আবিষ্কৃত বিষয়সমূহ থেকে বেঁচে থাক। কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বস্তু বিদআত, আর প্রতিটি বিদআত গোমরাহী।” অপর একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, . مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدٌّ “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যার ওপর আমাদের কোন নির্দেশনা নেই তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীন নং ৭২৫০] অপর শব্দে « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ » . “যে ব্যক্তি আমাদের এ দীনের মধ্যে এমন কোন কর্ম আবিষ্কার করল যা এ দীনের বিষয় নয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৫৫০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৮৯]
জুমু‘আর সালাতের খুতবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ » “অতঃপর সবোর্ত্তম কথা হলো, আল্লাহ কিতাব, আর সবোর্ত্তম আদর্শ হলো, রাসূলুল্লা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ । আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো নব আবিষ্কৃত বিষয়। এবং প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বিষয় গোমরাহী।” [বর্ণনায় সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২০৪২] যে ইবাদতের প্রচলন আল্লাহ তা‘আলা করেননি, তার প্রতি মানুষকে আহ্বান করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও অবৈধ। এ ধরনের লোককে সাওয়াব দেওয়া হবে না বরং এ ধরনের কর্ম করা এবং তার প্রতি দাওয়াত দেওয়া সম্পূর্ণ বিদআত এবং আহ্বানকারী গোমরাহীর প্রতি দাওয়াত দাতা হিসেবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের লোকদের দুর্নাম করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَمۡ لَهُمۡ شُرَكَٰٓؤُاْ شَرَعُواْ لَهُم مِّنَ ٱلدِّينِ مَا لَمۡ يَأۡذَنۢ بِهِ ٱللَّهُۚ ٢١﴾ [ الشورى : ٢١ ] “তাদের জন্য কি এমন কিছু শরীক আছে, যারা তাদের জন্য দীনের বিধান দিয়েছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি”? [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ২১] । আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: সাইয়্যেদ আলোভী আল-মালেকী এবং মাহমুদ আমীন আন-নাবাবীর সম্পদনায় রচিত রিয়াদুস সালেহীন কিতাবে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে কুদসী পড়েছি, যাতে আল্লাহর দৌড়ে আসার কথা রয়েছে। হাদীসটি এই যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে বর্ণনা দিয়ে বলেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, إِذَا تَقَرَّبَ الْعَبْدُ إِلَيَّ شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِذَا تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِذَا أَتَانِي مَشْيًا أَتَيْتُهُ هَرْوَلَة “যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয় আমি তার দিক এক হাত অগ্রসর হই আর যখন কোন বান্দা আমার প্রতি এক বাহু পরিমাণ অগ্রসর হয় আমি তার প্রতি বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক পায়ে হেটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।” [সহীহ বুখারী হাদীস নং ৭৫৩৬]
উভয় সম্পাদনকারী তাদের সম্পাদনায় লিখেছেন- এটি একটি দৃষ্টান্ত অধ্যায়ের এবং বিষয়টিকে অধিক স্পষ্ট করার জন্য আধ্যাতিক বিষয়কে বস্তুবাদ দ্বারা চিত্রায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কোন নেক আমল করল তা যতই কম হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন এবং তার প্রতি অধিক অনুগ্রহ করবেন। অন্যথায় অকাট্য ও সু-স্পষ্ট প্রমাণাদি এ বিষয়ে বিদ্যমান যে, এখানে আল্লাহর কাছে আসা, হেটে আসা এবং দৌড়ে আসা বলতে কিছু নেই। কারণ, এ গুলো সবই হলো মাখলুকের গুন যা ক্ষণস্থায়ী। আর আল্লাহ তা‘আলা ক্ষণস্থায়ী মাখলুকের গুনে গুনান্বিত হওয়া থেকে পবিত্র ও উর্ধ্বে। এখানে যেহেতু অকাট্য ও সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে আল্লাহর হাঁটা বা দৌড় বলতে কিছু নেই, তাহলে আল্লাহর হাঁটা ও দৌড়া সম্পর্কে তারা উভয়জন যা বলেছেন তা কি আল্লাহর সিফাতকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে এবং সিফাতগুলো বর্ণনা যেভাবে এসেছে সে ভাবে বহাল রাখা সম্পর্কে সালাফদের মতের সাথে তাদের কথার মিল রয়েছে? আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করলে কৃতজ্ঞ হবো।
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ! সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্যই। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের ওপর এবং হিদায়াতের অনুসারীদের ওপর। অতঃপর: নি:সন্দেহে বলা যায় যে, প্রশ্ন উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
« يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى وَأَنَا مَعَهُ حِينَ يَذْكُرُنِى إِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى نَفْسِى وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلإٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلإٍ هُمْ خَيْرٌ مِنْهُمْ وَإِنْ تَقَرَّبَ مِنِّى شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِنْ أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً » .
“আমি আমার প্রতি আমার বান্দার ধারণার কাছাকাছি থাকি। যখন সে আমার যিকির করে আমি তার সাথেই থাকি। যখন সে আমাকে স্বীয় অন্তরে স্মরণ করে আমি স্বীয় অন্তরে তার স্মরণ করি। যখন সে কোন জামাতের মধ্যে আমার স্মরণ করে আমিও তার চেয়ে উত্তম জামাতে তার স্মরণ করি। আর যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয় আমি তার দিক এক হাত অগ্রসর হই আর যখন কোন বান্দা আমার প্রতি এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয় আমি তার প্রতি বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই। যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক পায়ে হেটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮১]
এ বিশুদ্ধ হাদীসটি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও মহত্বের প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের প্রতি কতনা কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্খি, তা এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। বান্দার আমল করা এবং নেক আমলের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হওয়া থেকেও আল্লাহর রহমত, দয়া ও অনুগ্রহ বহুগুণে অগ্রসরমান।
সালাফদের মত অনুযায়ী হাদীসটি বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ রাসূলের মুখ থেকে হাদীসটি শুনেছেন। তারা সর্বত্তোম উম্মত এবং উম্মতের কর্ণধার হওয়া সত্বেও হাদীসটি শোনার পর কোন প্রশ্ন বা আপত্তি করেননি এবং কোন ব্যাখ্যা করেননি। তারা আরবী ভাষা সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ। আল্লাহর জন্য যা প্রযোজ্য এবং যা প্রযোজ্য নয় এ সম্পর্কে সমগ্র মানুষের তুলনায় তারাই সর্বাধিক জ্ঞাত। সুতরাং, ওয়াজিব হলো যেভাবে বর্ণিত সেভাবে কবুল করা এবং উত্তম ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। এ ধরনের সিফাত আল্লাহর ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য। তবে তাতে তিনি তার সৃষ্টি বা মাখলুকের সদৃশ নয়। ফলে আল্লাহর নিকটে আসা একজন বান্দা অপর বান্দার নিকটে আসার মতো নয়। আল্লাহর হাঁটা বান্দার হাঁটার মতো নয় এবং আল্লাহর দৌড়ে আসা বান্দার দৌড়ে আসার মতো নয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর ক্ষুব্ধ হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আগমন, বান্দার মাঝে বিচার ফায়সালা করান জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপস্থিত হওয়া, প্রতি রাতের শেষাংশে আল্লাহর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ এবং আল্লাহর আরশের উপর উঠা ইত্যাদি। এ গুলো সবই আল্লাহর সিফাত যা তার শানের সাথে প্রযোজ্য। কোন মাখলুকের সাথে এর কোন সদৃশ নেই।
সুতরাং যেমনিভাবে আল্লাহর আরশের উপর উঠা, শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশে দুনিয়য়ার আকাশে অবতরণ করা, কিয়ামতের দিন আগমন করা মাখলুকের উঠা, আসা, অবতরণ করার সাথে সদৃশ নয় অনুরূপভাবে তার ইবাদত কারী আবেদ বান্দা এবং তার আনুগত্যের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হওয়া বান্দাদের নিকট হওয়া এবং তাদের কাছে হওয়া বান্দার কাছে হওয়ার সদৃশ নয়। আল্লাহর কাছে হওয়া বান্দাদের একে অপরের কাছে হওয়ার মতো নয়, আল্লাহর হেঁটে আসা তার বান্দাদের হেঁটে আসার মতো নয় এবং তার দৌড়ে আসা তার বান্দাদের দৌড় আসার মতো নয়। বরং এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহর শানের সাথে প্রযোজ্য। আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের মতো এ ক্ষেত্রেও কোন মাখলুক তার সাথে সদৃশ নয়। আর তিনি তার সিফাত সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত এবং তার ধরণ-প্রকৃতি সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ।
পূর্বসূরীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর সিফাত ও নাম সম্পর্কে আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, যেভাবে বর্ণনা এসেছে তার ওপর বহাল রাখা এবং তার শাব্দিক অর্থকে বিশ্বাস করা যে, তা অবশ্যই সত্য যা কেবল আল্লাহর শানের সাথে খাস। যেমনিভাবে তার সত্বা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না অনুরূপভাবে তার সিফাতসমূহের ধরণ প্রকৃতি সম্পর্কেও তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না। যেমনিভাবে কামিল ও পরিপূর্ণ সত্বাকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব অনুরূপভাবে আল্লাহর সিফাতসমূহ পরিপূর্ণ ও উন্নত এ কথা বিশ্বাস করে এবং এর প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর জন্য তার সিফাতসমূহ সাব্যস্ত করাও ওয়াজিব। আর আল্লাহর সিফাত মাখলুকের সিফাতের মতো নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤ ﴾ [ الاخلاص : ١، ٤ ] “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।” [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১, ৪]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧٤﴾ [ النحل : ٧٤ ] “সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য অন্য কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৭৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১১] সাদৃশ্যবাদীরা এ কথা لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ “তাঁর মত কিছু নেই” এবং فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ “সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য অন্য কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না।” দ্বারা প্রতিহত করেন।
মু‘আত্তালাদের এ কথা قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।” দ্বারা জবাব দেন। আলেম হোক বা সাধারণ মানুষ হোক প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ওয়াজিব হলো আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন তা কোন প্রকার দৃষ্টান্ত ছাড়া পরিপূর্ণ সাব্যস্ত করা এবং তিনি তার জন্য যা না করেছেন, তা না করা। আর যে সব থেকে তিনি তাকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন তা কোন প্রকার অকার্যকর করা ছাড়া তার জন্য হুবহু সাব্যস্ত করা।
এটিই রাসূলের সাহাবী এবং তাদের অনুসারি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা। এ ছাড়াও উম্মতের পূর্বসূরী ইমামগণ, যেমন সাতজন ফকীহ, মালেক বিন আনাস, আওযাঈ, সূরী, শাফেঈ, আহমদ ইবন হাম্বল, আবু হানীফা এবং অন্যান্য ইমামদের বিশ্বাস। তারা বলেন, কোন প্রকার বিকৃতি, অকার্যকর করা, ধরণ প্রকৃতি বর্ণনা করা এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া যেভাবে বর্ণনা এসেছে সেভাবে তা বহাল রাখা।
তবে প্রশ্নে বর্ণিত আলোভী ও তার সাথী মাহমুদ এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সঠিক নয়। কিন্তু এ হাদীসের দাবি হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের কল্যাণের প্রতি তাদের ছেয়ে অধিক দ্রুত এবং তাদের প্রতি দয়া ও রহমত করার দিকে তিনি অধিক অগ্রসরমান। কিন্তু এটি হাদীসের দাবি তবে এটি অর্থ নয়। অর্থ এক জিনিষ আর এটি আরেক জিনিষ। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি তাদের প্রতি খুব দ্রুত কিন্তু এটি হাদীসের অর্থ নয়। বরং অর্থ হলো আল্লাহর জন্য আল্লাহর মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য বা তুলনা না করে তার শান অনুযায়ী নিকট হওয়া, হাঁটা ও দৌড়কে সাব্যস্ত করা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য অনুযায়ী কোন প্রকার বিকৃতি, ধরণ প্রকৃতি এবং সাদৃশ্য বা তুলনা করা ছাড়া তার জন্য আমরা সিফাতগুলোকে সাব্যস্ত করব।
আর তাদের কথা সম্পূর্ণ ভুল। বিদআতীরা অসংখ্য বিষয়ে এ ধরনের কথা বলে থাকেন। তারা আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। অথচ মুলনীতি হলো, আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে কোন প্রকার ব্যাখ্যা না দেওয়া, ধরণ বর্ণনা না করা, তুলনা না করা এবং বিকৃতি না করা। সুতরাং সিফাত সম্বোলিত আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে যেভাবে বর্ণনা এসেছে তা বহাল রাখবে ব্যাখ্যা দেবে না। অর্থাৎ কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা না করা, তুলনা না করা এবং বিকৃতি না করা। বরং তার অর্থ আল্লাহর জন্য তার শান অনুযায়ী সাব্যস্থ করা যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন এবং সম্বোধন করেছেন। এ সব কোন কিছুতেই তিনি তার কোন মাখলুকের সদৃশ নয়। যেমন, আমরা আল্লাহর রাগ, হাত, চেহারা, আঙ্গুল, অপছন্দ, অবতরণ, উঠা ইত্যাদি সিফাত সম্পর্কে উল্লেখিত বিশ্বাস স্থাপন করে থাকি। অধ্যায়তো একই। আর মনে রাখবে সিফাতের অধ্যায় একই এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসের কোন তারতম্য নেই। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায।
উভয় সম্পাদনকারী তাদের সম্পাদনায় লিখেছেন- এটি একটি দৃষ্টান্ত অধ্যায়ের এবং বিষয়টিকে অধিক স্পষ্ট করার জন্য আধ্যাতিক বিষয়কে বস্তুবাদ দ্বারা চিত্রায়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি কোন নেক আমল করল তা যতই কম হোক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তার সাওয়াবকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেবেন এবং তার প্রতি অধিক অনুগ্রহ করবেন। অন্যথায় অকাট্য ও সু-স্পষ্ট প্রমাণাদি এ বিষয়ে বিদ্যমান যে, এখানে আল্লাহর কাছে আসা, হেটে আসা এবং দৌড়ে আসা বলতে কিছু নেই। কারণ, এ গুলো সবই হলো মাখলুকের গুন যা ক্ষণস্থায়ী। আর আল্লাহ তা‘আলা ক্ষণস্থায়ী মাখলুকের গুনে গুনান্বিত হওয়া থেকে পবিত্র ও উর্ধ্বে। এখানে যেহেতু অকাট্য ও সু-স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে আল্লাহর হাঁটা বা দৌড় বলতে কিছু নেই, তাহলে আল্লাহর হাঁটা ও দৌড়া সম্পর্কে তারা উভয়জন যা বলেছেন তা কি আল্লাহর সিফাতকে প্রমাণ করার ক্ষেত্রে এবং সিফাতগুলো বর্ণনা যেভাবে এসেছে সে ভাবে বহাল রাখা সম্পর্কে সালাফদের মতের সাথে তাদের কথার মিল রয়েছে? আশা করি বিষয়টি স্পষ্ট করলে কৃতজ্ঞ হবো।
উত্তর: আলহামদু লিল্লাহ! সমস্ত প্রসংশা আল্লাহর জন্যই। সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের ওপর এবং হিদায়াতের অনুসারীদের ওপর। অতঃপর: নি:সন্দেহে বলা যায় যে, প্রশ্ন উল্লিখিত হাদীসটি বিশুদ্ধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
« يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا عِنْدَ ظَنِّ عَبْدِى بِى وَأَنَا مَعَهُ حِينَ يَذْكُرُنِى إِنْ ذَكَرَنِى فِى نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِى نَفْسِى وَإِنْ ذَكَرَنِى فِى مَلإٍ ذَكَرْتُهُ فِى مَلإٍ هُمْ خَيْرٌ مِنْهُمْ وَإِنْ تَقَرَّبَ مِنِّى شِبْرًا تَقَرَّبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَإِنْ تَقَرَّبَ إِلَىَّ ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَإِنْ أَتَانِى يَمْشِى أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً » .
“আমি আমার প্রতি আমার বান্দার ধারণার কাছাকাছি থাকি। যখন সে আমার যিকির করে আমি তার সাথেই থাকি। যখন সে আমাকে স্বীয় অন্তরে স্মরণ করে আমি স্বীয় অন্তরে তার স্মরণ করি। যখন সে কোন জামাতের মধ্যে আমার স্মরণ করে আমিও তার চেয়ে উত্তম জামাতে তার স্মরণ করি। আর যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক এক বিঘাত অগ্রসর হয় আমি তার দিক এক হাত অগ্রসর হই আর যখন কোন বান্দা আমার প্রতি এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয় আমি তার প্রতি বাহু পরিমাণ অগ্রসর হই। যখন কোন ব্যক্তি আমার দিক পায়ে হেটে অগ্রসর হয় আমি তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৯৮১]
এ বিশুদ্ধ হাদীসটি আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও মহত্বের প্রমাণ। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের প্রতি কতনা কল্যাণকামী ও হিতাকাঙ্খি, তা এ হাদীস দ্বারা স্পষ্ট। বান্দার আমল করা এবং নেক আমলের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হওয়া থেকেও আল্লাহর রহমত, দয়া ও অনুগ্রহ বহুগুণে অগ্রসরমান।
সালাফদের মত অনুযায়ী হাদীসটি বাহ্যিক অর্থের ওপর প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাধা-বিপত্তি নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীগণ রাসূলের মুখ থেকে হাদীসটি শুনেছেন। তারা সর্বত্তোম উম্মত এবং উম্মতের কর্ণধার হওয়া সত্বেও হাদীসটি শোনার পর কোন প্রশ্ন বা আপত্তি করেননি এবং কোন ব্যাখ্যা করেননি। তারা আরবী ভাষা সম্পর্কে সর্বাধিক অভিজ্ঞ। আল্লাহর জন্য যা প্রযোজ্য এবং যা প্রযোজ্য নয় এ সম্পর্কে সমগ্র মানুষের তুলনায় তারাই সর্বাধিক জ্ঞাত। সুতরাং, ওয়াজিব হলো যেভাবে বর্ণিত সেভাবে কবুল করা এবং উত্তম ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। এ ধরনের সিফাত আল্লাহর ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রযোজ্য। তবে তাতে তিনি তার সৃষ্টি বা মাখলুকের সদৃশ নয়। ফলে আল্লাহর নিকটে আসা একজন বান্দা অপর বান্দার নিকটে আসার মতো নয়। আল্লাহর হাঁটা বান্দার হাঁটার মতো নয় এবং আল্লাহর দৌড়ে আসা বান্দার দৌড়ে আসার মতো নয়। অনুরূপভাবে আল্লাহর ক্ষুব্ধ হওয়া, সন্তুষ্ট হওয়া, কিয়ামত দিবসে আল্লাহর আগমন, বান্দার মাঝে বিচার ফায়সালা করান জন্য কিয়ামতের দিন আল্লাহর উপস্থিত হওয়া, প্রতি রাতের শেষাংশে আল্লাহর দুনিয়ার আকাশে অবতরণ এবং আল্লাহর আরশের উপর উঠা ইত্যাদি। এ গুলো সবই আল্লাহর সিফাত যা তার শানের সাথে প্রযোজ্য। কোন মাখলুকের সাথে এর কোন সদৃশ নেই।
সুতরাং যেমনিভাবে আল্লাহর আরশের উপর উঠা, শেষ রাতের এক তৃতীয়াংশে দুনিয়য়ার আকাশে অবতরণ করা, কিয়ামতের দিন আগমন করা মাখলুকের উঠা, আসা, অবতরণ করার সাথে সদৃশ নয় অনুরূপভাবে তার ইবাদত কারী আবেদ বান্দা এবং তার আনুগত্যের প্রতি দ্রুত অগ্রসর হওয়া বান্দাদের নিকট হওয়া এবং তাদের কাছে হওয়া বান্দার কাছে হওয়ার সদৃশ নয়। আল্লাহর কাছে হওয়া বান্দাদের একে অপরের কাছে হওয়ার মতো নয়, আল্লাহর হেঁটে আসা তার বান্দাদের হেঁটে আসার মতো নয় এবং তার দৌড়ে আসা তার বান্দাদের দৌড় আসার মতো নয়। বরং এটি এমন একটি বিষয় যা আল্লাহর শানের সাথে প্রযোজ্য। আল্লাহর অন্যান্য সিফাতের মতো এ ক্ষেত্রেও কোন মাখলুক তার সাথে সদৃশ নয়। আর তিনি তার সিফাত সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত এবং তার ধরণ-প্রকৃতি সম্পর্কে অধিক অভিজ্ঞ।
পূর্বসূরীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহর সিফাত ও নাম সম্পর্কে আমাদের ওপর ওয়াজিব হলো, যেভাবে বর্ণনা এসেছে তার ওপর বহাল রাখা এবং তার শাব্দিক অর্থকে বিশ্বাস করা যে, তা অবশ্যই সত্য যা কেবল আল্লাহর শানের সাথে খাস। যেমনিভাবে তার সত্বা সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না অনুরূপভাবে তার সিফাতসমূহের ধরণ প্রকৃতি সম্পর্কেও তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না। যেমনিভাবে কামিল ও পরিপূর্ণ সত্বাকে আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা ওয়াজিব অনুরূপভাবে আল্লাহর সিফাতসমূহ পরিপূর্ণ ও উন্নত এ কথা বিশ্বাস করে এবং এর প্রতি ঈমান রেখে আল্লাহর জন্য তার সিফাতসমূহ সাব্যস্ত করাও ওয়াজিব। আর আল্লাহর সিফাত মাখলুকের সিফাতের মতো নয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ١ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ٢ لَمۡ يَلِدۡ وَلَمۡ يُولَدۡ ٣ وَلَمۡ يَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ ٤ ﴾ [ الاخلاص : ١، ٤ ] “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। আর তাঁর কোন সমকক্ষও নেই। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি।” [সূরা আল-ইখলাস, আয়াত: ১, ৪]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ ٧٤﴾ [ النحل : ٧٤ ] “সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য অন্য কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ জানেন আর তোমরা জান না।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৭৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١١﴾ [ الشورى : ١١ ] “তাঁর মত কিছু নেই আর তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ১১] সাদৃশ্যবাদীরা এ কথা لَيۡسَ كَمِثۡلِهِۦ شَيۡءٞۖ “তাঁর মত কিছু নেই” এবং فَلَا تَضۡرِبُواْ لِلَّهِ ٱلۡأَمۡثَالَۚ إِنَّ ٱللَّهَ “সুতরাং তোমরা আল্লাহর জন্য অন্য কোন দৃষ্টান্ত স্থাপন করো না।” দ্বারা প্রতিহত করেন।
মু‘আত্তালাদের এ কথা قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ “বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়।” দ্বারা জবাব দেন। আলেম হোক বা সাধারণ মানুষ হোক প্রত্যেক মুসলিমের ওপর ওয়াজিব হলো আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের জন্য যা সাব্যস্ত করেছেন তা কোন প্রকার দৃষ্টান্ত ছাড়া পরিপূর্ণ সাব্যস্ত করা এবং তিনি তার জন্য যা না করেছেন, তা না করা। আর যে সব থেকে তিনি তাকে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন তা কোন প্রকার অকার্যকর করা ছাড়া তার জন্য হুবহু সাব্যস্ত করা।
এটিই রাসূলের সাহাবী এবং তাদের অনুসারি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা। এ ছাড়াও উম্মতের পূর্বসূরী ইমামগণ, যেমন সাতজন ফকীহ, মালেক বিন আনাস, আওযাঈ, সূরী, শাফেঈ, আহমদ ইবন হাম্বল, আবু হানীফা এবং অন্যান্য ইমামদের বিশ্বাস। তারা বলেন, কোন প্রকার বিকৃতি, অকার্যকর করা, ধরণ প্রকৃতি বর্ণনা করা এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন ছাড়া যেভাবে বর্ণনা এসেছে সেভাবে তা বহাল রাখা।
তবে প্রশ্নে বর্ণিত আলোভী ও তার সাথী মাহমুদ এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা সঠিক নয়। কিন্তু এ হাদীসের দাবি হলো আল্লাহ তা‘আলা তাদের কল্যাণের প্রতি তাদের ছেয়ে অধিক দ্রুত এবং তাদের প্রতি দয়া ও রহমত করার দিকে তিনি অধিক অগ্রসরমান। কিন্তু এটি হাদীসের দাবি তবে এটি অর্থ নয়। অর্থ এক জিনিষ আর এটি আরেক জিনিষ। হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, তিনি তাদের প্রতি খুব দ্রুত কিন্তু এটি হাদীসের অর্থ নয়। বরং অর্থ হলো আল্লাহর জন্য আল্লাহর মাখলুকের সাথে সাদৃশ্য বা তুলনা না করে তার শান অনুযায়ী নিকট হওয়া, হাঁটা ও দৌড়কে সাব্যস্ত করা। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য অনুযায়ী কোন প্রকার বিকৃতি, ধরণ প্রকৃতি এবং সাদৃশ্য বা তুলনা করা ছাড়া তার জন্য আমরা সিফাতগুলোকে সাব্যস্ত করব।
আর তাদের কথা সম্পূর্ণ ভুল। বিদআতীরা অসংখ্য বিষয়ে এ ধরনের কথা বলে থাকেন। তারা আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন। অথচ মুলনীতি হলো, আল্লাহর সিফাত সম্পর্কে কোন প্রকার ব্যাখ্যা না দেওয়া, ধরণ বর্ণনা না করা, তুলনা না করা এবং বিকৃতি না করা। সুতরাং সিফাত সম্বোলিত আয়াত ও হাদীসের ক্ষেত্রে যেভাবে বর্ণনা এসেছে তা বহাল রাখবে ব্যাখ্যা দেবে না। অর্থাৎ কোন প্রকার ধরণ বর্ণনা না করা, তুলনা না করা এবং বিকৃতি না করা। বরং তার অর্থ আল্লাহর জন্য তার শান অনুযায়ী সাব্যস্থ করা যেভাবে আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন এবং সম্বোধন করেছেন। এ সব কোন কিছুতেই তিনি তার কোন মাখলুকের সদৃশ নয়। যেমন, আমরা আল্লাহর রাগ, হাত, চেহারা, আঙ্গুল, অপছন্দ, অবতরণ, উঠা ইত্যাদি সিফাত সম্পর্কে উল্লেখিত বিশ্বাস স্থাপন করে থাকি। অধ্যায়তো একই। আর মনে রাখবে সিফাতের অধ্যায় একই এ ক্ষেত্রে বিশ্বাসের কোন তারতম্য নেই। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায।
হাদীস: لو دليتم بحبل من الأرض السابعة لوقع على الله “যদি তোমরা একটি রশিকে আকাশ থেকে জমিনে ছেড়ে দাও, তা আল্লাহর উপর গিয়ে পড়বে।”
হাদীস - لو دليتم بحبل من الأرض السابعة لوقع على الله “যদি তোমরা একটি রশিকে আকাশ থেকে জমিনে ছেড়ে দাও, তার আল্লাহর উপর গিয়ে পড়বে।” এর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। হাদীসটি শুদ্ধ কিনা? হাদীসটির অর্থ কি?
উত্তর: হাদীসটির শুদ্ধতা নিয়ে উলামাদের মধ্যে মত প্রার্থক্য রয়েছে। যারা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, তারা বলেছেন, হাদীটির অর্থ, যদি তোমরা রশি ছাড় তা আল্লাহর উপর পড়বে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। প্রতিটি বস্তু আল্লাহর হাতের মুঠে। কোন কিছুই আল্লাহ থেকে অনুপুস্থিত নয়। এমনকি সাত স্তর বিশিষ্ট আসমানসমূহ ও জমিন আল্লাহর কবযিতে একটি দানার মতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧﴾ [ الزمر : ٦٦ ] “আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৬] এ দ্বারা কোন অবস্থাতেই এ কথা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান, অথবা আল্লাহ তা‘আলা সপ্ত জমিনের নীচে আছে। কারণ, এটি শরীআত, যুক্তি ও ফিতরাতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত, ইজমা, যুক্তি ও মানব স্বভাব আল্লাহ তা‘আলা উপরে হওয়াকে প্রমাণ করে।
আল্লাহর কিতাব যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡخَبِيرُ ١٨﴾ [ الانعام : ١٨ ] “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿سَبِّحِ ٱسۡمَ رَبِّكَ ٱلۡأَعۡلَى ١﴾ [ الاعلى : ١ ]“তুমি তোমার সুমহান রবের নামের তাসবীহ পাঠ কর।” [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১] এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহর আয়াত অনেক। প্রতিটি আয়াত এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রতিটি বস্তু আল্লাহর দিকে ওঠে, বস্তুকে আল্লাহর দিকে তুলে নেওয়া হয় এবং আল্লাহ উপর থেকে নিচে অবতরণ করেন। ফলে আয়াতগুলো আল্লাহ তা‘আলার উপরে হওয়াকেই প্রমাণ করে। বিভিন্ন আয়াতের মর্মবাণীগুলো দ্বারা আল্লাহর উপরে হওয়াই প্রমাণিত।
আর সুন্নাত: আল্লাহ তা‘আলা যে, উপরে এ বিষয়ে সুন্নাতগুলো মুতাওয়াতের পর্যায়ের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম ও স্বীকৃতি আল্লাহর উপরে হওয়াকে প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ألا تأمنوني أنا أمين من في السماء “তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনো করো না, আমি যিনি আসমানে রয়েছেন তার পক্ষ থেকে আমানতদার।” এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখের কথা যদ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা উপরে। আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের মধ্যে ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন, ألا هل بلغت؟ “আমি কি তোমাদের নিকট পৌছিঁয়েছি”? উত্তরে তারা বললেন হ্যাঁ। তারপর আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠালেন এবং বললেন, اللهم اشهد “হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক” এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম যা আল্লাহর উপর হওয়াকে প্রমাণ করে। আর রাসূলের স্বীকৃতি সম্পর্কে হাদীস- বাদীর হাদীস, যখন বাদীকে জিজ্ঞাসা করা হলো أين الله আল্লাহ কোথায়? সে বলল, في السماء “আল্লাহ আসমানে।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أعتقها فإنها مؤمنة “তুমি তাকে আযাদ করে দাও কারণ সে মু’মিন।” [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১২২৭]
সাহাবীগণ এবং ইহসানের সাথে তাদের অনুসারী উম্মতের তাবেঈগণ এবং উলামায়ে কেরামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর। তাদের কারো থেকে এ বিষয়ে একটি শব্দও বর্ণিত নয় যে, তারা বলেছেন আল্লাহ তা‘আলা আসামানে নয়, অথবা তিনি মাখলুকের সাথে সংমিশ্রণ, অথবা তিনি জগতের ভিতরেও নয় বাহিরেও নয়, তিনি মিলিতও নয় এবং আলাদাও নয়, তিনি পৃথকও নয় কাছেও নয় ইত্যাদি। তাদের থেকে যত বর্ণনা এ পর্যন্ত পাওয়া যায়, তা থেকে জানা যায় যে, তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্বে এবং তিনি সবকিছুর উপর।
যুক্তি দ্বারা প্রমাণ: যুক্তিও এ কথা প্রমাণ করে যে আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর। যেমন আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি যে, উর্ধ্বে থাকা এ পরিপূর্ণতার সিফাত নাকি অপরিপূর্ণতার? তখন জাওয়াব হবে উর্ধ্বে থাকাই পরিপূর্ণতা। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন, ﴿وَلِلَّهِ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰۚ ٦٠﴾ [ النحل : ٦٠ ] “এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে মহান উদাহরণ।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৬০] যে সব সিফাত পূর্ণতার অর্থকে বহন করে, সে সব সিফাত আল্লাহর জন্য অবশ্যই সাব্যস্ত হবে। যখন উপরে বা উর্ধ্বে হওয়া পূর্ণতা বলে যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত, তখন তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করাই ওয়াজিব। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা হয়তো উপরে হবেন অথবা নীচে হবেন অথবা মাঝখানে হবেন। নীচে হওয়া অসম্ভব। কারণ, তাতে রয়েছে অসম্পূর্ণতা। আর মাঝখানে হওয়াও অসম্ভব। কারণ, এটিও একটি অসম্পূর্ণ সিফাত যাতে আল্লাহ তা‘আলা ও তার মাখলুক বরাবর হওয়াকে বাধ্য করে। দু’টি সিফাত যখন আল্লাহর জন্য হওয়া অসম্ভব হয়ে গিয়েছে বাকীটা অর্থাৎ উর্ধ্বে হওয়া তার জন্য অবধারিত। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্ব হওয়া প্রমাণিত, তিনি প্রতিটি বস্তুর উর্ধ্বে।
মানব স্বভাব দ্বারা প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্বের হওয়ার বিষয়টি প্রতিটি মানুষের স্বভাব ও সৃষ্টির সাথে জড়িত। প্রতিটি মানুষ যখন বলে ‘হে আল্লাহ’ তখন সে আকাশের দিক তাকায়। তার অন্তরে উপরের দিক মনোযোগী হয়, তার অন্তরে আর কোন দিক ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন অনুভুত হয় না। সুতরাং আমরা এ কথা নির্বিঘ্নে বলতে পারি যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি বস্তুর উপর। আল্লাহ তা‘আলা প্রতি বস্তুর উপর হওয়া প্রমাণিত হওয়ার পর হাদীস— لو دليتم بحبل من الأرض السابعة لوقع على الله —“যদি তোমরা একটি রশিকে আকাশ থেকে জমিনে ছেড়ে দাও, তার আল্লাহর উপর গিয়ে পড়বে।” -টি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা জমিনে এ কথা প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই।
যদি বলা হয়, আল্লাহ তা‘আলা এ বাণী: ﴿وَهُوَ ٱلَّذِي فِي ٱلسَّمَآءِ إِلَٰهٞ وَفِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَٰهٞۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡعَلِيمُ ٨٤﴾ [ الزخرف : ٨٤ ] “আর তিনিই আসমানে ইলাহ এবং তিনিই জমিনে ইলাহ; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে আসমানে এমনিভাবে তিনি জমিনেও।” [সূরা আয-যুখরফ, আয়াত: ৮৪]
উত্তর: না, আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজের ইলাহ হওয়া বিষয়ে সংবাদ দেন। তিনি আকাশ বা জমিনে তার অবস্থান জানানো সংবাদ দেননি। বরং তিনি বলছেন তিনি আসামানেও ইলাহ এবং জমিনেও ইলাহ। যেমন আমরা বলে থাকি অমুক মক্কায়ও গভর্নর এবং মদীনায়ও গভর্নর। এর অর্থ, তার কর্তৃত্ব মক্কা ও মদীনা উভয় শহরেই বিস্তৃত। যদিও সে যে কোন একটি শহরে সুনিদির্ষ্ট স্থানে বসবাস করে থাকে। দু’টি শহরে সে থাকে না। এ আয়াতটিও এ কথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহর উলুহিয়্যাত জমিন ও আসমান উভয় স্থানে বিস্তৃত। যদিও তিনি থাকেন আসমানে। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
হাদীস - لو دليتم بحبل من الأرض السابعة لوقع على الله “যদি তোমরা একটি রশিকে আকাশ থেকে জমিনে ছেড়ে দাও, তার আল্লাহর উপর গিয়ে পড়বে।” এর বিশুদ্ধতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলো। হাদীসটি শুদ্ধ কিনা? হাদীসটির অর্থ কি?
উত্তর: হাদীসটির শুদ্ধতা নিয়ে উলামাদের মধ্যে মত প্রার্থক্য রয়েছে। যারা হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, তারা বলেছেন, হাদীটির অর্থ, যদি তোমরা রশি ছাড় তা আল্লাহর উপর পড়বে। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছেন। প্রতিটি বস্তু আল্লাহর হাতের মুঠে। কোন কিছুই আল্লাহ থেকে অনুপুস্থিত নয়। এমনকি সাত স্তর বিশিষ্ট আসমানসমূহ ও জমিন আল্লাহর কবযিতে একটি দানার মতো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا قَدَرُواْ ٱللَّهَ حَقَّ قَدۡرِهِۦ وَٱلۡأَرۡضُ جَمِيعٗا قَبۡضَتُهُۥ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ وَٱلسَّمَٰوَٰتُ مَطۡوِيَّٰتُۢ بِيَمِينِهِۦۚ سُبۡحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ عَمَّا يُشۡرِكُونَ ٦٧﴾ [ الزمر : ٦٦ ] “আর তারা আল্লাহকে যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়নি। অথচ কিয়ামতের দিন গোটা পৃথিবীই থাকবে তাঁর মুষ্টিতে এবং আকাশসমূহ তাঁর ডান হাতে ভাঁজ করা থাকবে। তিনি পবিত্র, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের ঊর্ধ্বে।” [সূরা আয-যুমার, আয়াত: ৬৬] এ দ্বারা কোন অবস্থাতেই এ কথা প্রমাণ করা সম্ভব নয় যে, আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান, অথবা আল্লাহ তা‘আলা সপ্ত জমিনের নীচে আছে। কারণ, এটি শরীআত, যুক্তি ও ফিতরাতের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। আল্লাহর কিতাব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত, ইজমা, যুক্তি ও মানব স্বভাব আল্লাহ তা‘আলা উপরে হওয়াকে প্রমাণ করে।
আল্লাহর কিতাব যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَهُوَ ٱلۡقَاهِرُ فَوۡقَ عِبَادِهِۦۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡخَبِيرُ ١٨﴾ [ الانعام : ١٨ ] “আর তিনিই তাঁর বান্দাদের উপর ক্ষমতাবান; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সম্যক অবহিত।” [সূরা আল-আনআম, আয়াত: ১৮] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿سَبِّحِ ٱسۡمَ رَبِّكَ ٱلۡأَعۡلَى ١﴾ [ الاعلى : ١ ]“তুমি তোমার সুমহান রবের নামের তাসবীহ পাঠ কর।” [সূরা আল-আ‘লা, আয়াত: ১] এ বিষয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহর আয়াত অনেক। প্রতিটি আয়াত এ কথা প্রমাণ করে যে, প্রতিটি বস্তু আল্লাহর দিকে ওঠে, বস্তুকে আল্লাহর দিকে তুলে নেওয়া হয় এবং আল্লাহ উপর থেকে নিচে অবতরণ করেন। ফলে আয়াতগুলো আল্লাহ তা‘আলার উপরে হওয়াকেই প্রমাণ করে। বিভিন্ন আয়াতের মর্মবাণীগুলো দ্বারা আল্লাহর উপরে হওয়াই প্রমাণিত।
আর সুন্নাত: আল্লাহ তা‘আলা যে, উপরে এ বিষয়ে সুন্নাতগুলো মুতাওয়াতের পর্যায়ের। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম ও স্বীকৃতি আল্লাহর উপরে হওয়াকে প্রমাণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ألا تأمنوني أنا أمين من في السماء “তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনো করো না, আমি যিনি আসমানে রয়েছেন তার পক্ষ থেকে আমানতদার।” এ হাদীসটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখের কথা যদ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা উপরে। আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মাতের মধ্যে ভাষণ দেন। তাতে তিনি বলেন, ألا هل بلغت؟ “আমি কি তোমাদের নিকট পৌছিঁয়েছি”? উত্তরে তারা বললেন হ্যাঁ। তারপর আকাশের দিকে আঙ্গুল উঠালেন এবং বললেন, اللهم اشهد “হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাক” এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম যা আল্লাহর উপর হওয়াকে প্রমাণ করে। আর রাসূলের স্বীকৃতি সম্পর্কে হাদীস- বাদীর হাদীস, যখন বাদীকে জিজ্ঞাসা করা হলো أين الله আল্লাহ কোথায়? সে বলল, في السماء “আল্লাহ আসমানে।” তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, أعتقها فإنها مؤمنة “তুমি তাকে আযাদ করে দাও কারণ সে মু’মিন।” [সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১২২৭]
সাহাবীগণ এবং ইহসানের সাথে তাদের অনুসারী উম্মতের তাবেঈগণ এবং উলামায়ে কেরামগণ এ ব্যাপারে একমত যে, আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর। তাদের কারো থেকে এ বিষয়ে একটি শব্দও বর্ণিত নয় যে, তারা বলেছেন আল্লাহ তা‘আলা আসামানে নয়, অথবা তিনি মাখলুকের সাথে সংমিশ্রণ, অথবা তিনি জগতের ভিতরেও নয় বাহিরেও নয়, তিনি মিলিতও নয় এবং আলাদাও নয়, তিনি পৃথকও নয় কাছেও নয় ইত্যাদি। তাদের থেকে যত বর্ণনা এ পর্যন্ত পাওয়া যায়, তা থেকে জানা যায় যে, তারা সবাই এ বিষয়ে একমত যে, আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্বে এবং তিনি সবকিছুর উপর।
যুক্তি দ্বারা প্রমাণ: যুক্তিও এ কথা প্রমাণ করে যে আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুর উপর। যেমন আমরা যদি জিজ্ঞাসা করি যে, উর্ধ্বে থাকা এ পরিপূর্ণতার সিফাত নাকি অপরিপূর্ণতার? তখন জাওয়াব হবে উর্ধ্বে থাকাই পরিপূর্ণতা। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন, ﴿وَلِلَّهِ ٱلۡمَثَلُ ٱلۡأَعۡلَىٰۚ ٦٠﴾ [ النحل : ٦٠ ] “এবং আল্লাহর জন্য রয়েছে মহান উদাহরণ।” [সূরা আন-নাহাল, আয়াত: ৬০] যে সব সিফাত পূর্ণতার অর্থকে বহন করে, সে সব সিফাত আল্লাহর জন্য অবশ্যই সাব্যস্ত হবে। যখন উপরে বা উর্ধ্বে হওয়া পূর্ণতা বলে যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত, তখন তা আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করাই ওয়াজিব। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা হয়তো উপরে হবেন অথবা নীচে হবেন অথবা মাঝখানে হবেন। নীচে হওয়া অসম্ভব। কারণ, তাতে রয়েছে অসম্পূর্ণতা। আর মাঝখানে হওয়াও অসম্ভব। কারণ, এটিও একটি অসম্পূর্ণ সিফাত যাতে আল্লাহ তা‘আলা ও তার মাখলুক বরাবর হওয়াকে বাধ্য করে। দু’টি সিফাত যখন আল্লাহর জন্য হওয়া অসম্ভব হয়ে গিয়েছে বাকীটা অর্থাৎ উর্ধ্বে হওয়া তার জন্য অবধারিত। সুতরাং, আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্ব হওয়া প্রমাণিত, তিনি প্রতিটি বস্তুর উর্ধ্বে।
মানব স্বভাব দ্বারা প্রমাণ: আল্লাহ তা‘আলা উর্ধ্বের হওয়ার বিষয়টি প্রতিটি মানুষের স্বভাব ও সৃষ্টির সাথে জড়িত। প্রতিটি মানুষ যখন বলে ‘হে আল্লাহ’ তখন সে আকাশের দিক তাকায়। তার অন্তরে উপরের দিক মনোযোগী হয়, তার অন্তরে আর কোন দিক ভ্রুক্ষেপ করার প্রয়োজন অনুভুত হয় না। সুতরাং আমরা এ কথা নির্বিঘ্নে বলতে পারি যে, আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি বস্তুর উপর। আল্লাহ তা‘আলা প্রতি বস্তুর উপর হওয়া প্রমাণিত হওয়ার পর হাদীস— لو دليتم بحبل من الأرض السابعة لوقع على الله —“যদি তোমরা একটি রশিকে আকাশ থেকে জমিনে ছেড়ে দাও, তার আল্লাহর উপর গিয়ে পড়বে।” -টি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা জমিনে এ কথা প্রমাণ করার কোন সুযোগ নেই।
যদি বলা হয়, আল্লাহ তা‘আলা এ বাণী: ﴿وَهُوَ ٱلَّذِي فِي ٱلسَّمَآءِ إِلَٰهٞ وَفِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَٰهٞۚ وَهُوَ ٱلۡحَكِيمُ ٱلۡعَلِيمُ ٨٤﴾ [ الزخرف : ٨٤ ] “আর তিনিই আসমানে ইলাহ এবং তিনিই জমিনে ইলাহ; আর তিনি প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ। প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা যেমনিভাবে আসমানে এমনিভাবে তিনি জমিনেও।” [সূরা আয-যুখরফ, আয়াত: ৮৪]
উত্তর: না, আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা নিজের ইলাহ হওয়া বিষয়ে সংবাদ দেন। তিনি আকাশ বা জমিনে তার অবস্থান জানানো সংবাদ দেননি। বরং তিনি বলছেন তিনি আসামানেও ইলাহ এবং জমিনেও ইলাহ। যেমন আমরা বলে থাকি অমুক মক্কায়ও গভর্নর এবং মদীনায়ও গভর্নর। এর অর্থ, তার কর্তৃত্ব মক্কা ও মদীনা উভয় শহরেই বিস্তৃত। যদিও সে যে কোন একটি শহরে সুনিদির্ষ্ট স্থানে বসবাস করে থাকে। দু’টি শহরে সে থাকে না। এ আয়াতটিও এ কথা প্রমাণ করে যে, আল্লাহর উলুহিয়্যাত জমিন ও আসমান উভয় স্থানে বিস্তৃত। যদিও তিনি থাকেন আসমানে। আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, « إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا » . “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি শতাব্দির শুরুতে এ উম্মতের মধ্যে এমন একজনকে প্রেরণ করবেন, যিনি দীনের বিধানগুলো সংস্কার করবেন।” হাদীসটির বিশুদ্ধ সনদ, মতন কি এবং বর্ণনাকারী কে? আর দীনের বিধানগুলো সংস্কার করবেন” এ কথার অর্থ কি? অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সু-স্পষ্ট ও অকাট্য দলীল প্রমাণের ওপর রেখে গেছেন। এ ধরনের প্রশ্ন যারা করে আমরা তাদের কিভাবে জাওয়াব দেবো?
উত্তর: প্রথমত: ইমাম আবূ দাউদ স্বীয় সুনানে সালমান ইবন দাউদ আল-মাহরী থেকে, তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন ওহাব, তিনি বলেন, আমাকে সংবাদ দিয়েছেন সা‘ঈদ ইবন আবু আইউব এবং তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন শারাহীল ইবন ইয়াযীদ আল-মু‘আফিরী থেকে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন আবু আলকামা থেকে আর তিনি বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি বলেন, « إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا » . “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি শতাব্দির শুরুতে এ উম্মতের মধ্যে এমন একজনকে প্রেরণ করবেন, যিনি দীনের বিধানগুলো সংস্কার করবেন।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪২৯৩]
দ্বিতীয়ত: হাদীসটি বিশুদ্ধ এবং হাদীসটির প্রত্যেক বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
তৃতীয় ও চতুর্থত: “দীনকে সংস্কার করবেন” এ বাণীর অর্থ, যখন অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত দীন যে দীনকে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য পরিপূর্ণ করেছেন, যে দীনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর তার নি‘আমতকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং তাদের জন্যে ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনিত করেছেন, সে দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের নিকট ইসলাম বিষয়ে একজন বিচক্ষন আলেম বা দা‘ঈ প্রেরণ করবেন যিনি মানুষকে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল থেকে প্রমাণিত সুন্নাতের প্রতি পথ দেখাবেন এবং বিদ‘আত থেকে দূরে সরাবেন এবং নব আবিষ্কৃত বস্তু থেকে তাদের সতর্ক করবেন। সঠিক পথ—আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত থেকে যারা বিচ্যুত হবেন তাদেরকে তাদের বিচ্যুতি থেকে ফিরিয়ে রাখবেন। উম্মতের অবস্থার সংস্কার ও সংশোধন হিসেবে একে তাজদীদ বা সংস্কার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য যে দীনকে চালু করেছেন এবং পরিপূর্ণ করেছেন, সে দীনের সংস্কার বা সংশোধন হিসেবে একে সংস্কার বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। কারণ, একের একের পর পরিবর্তন, দূর্বলতা ও বিকৃতি উম্মাতের ওপরই চেপে বসে। অন্যথায় ইসলামের সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর হাতেই। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন ও সুন্নাতের হিফাযতের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে ইসলামকে হিফাযত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ] “নিশ্চয় আমি কুরআন [ الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।] নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
পঞ্চমত: সংস্কারকগণ বারো বছরের মাথায় আসবেন এ কথাটি হাদীসে নেই। রবং হাদীসে এসেছে আল্লাহর আদেশে এবং তার প্রজ্ঞা অনুযায়ী তারা আসবেন প্রতি হিজরী শতাব্দির মাথায়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া এবং তাদের বিপক্ষে সু-স্পষ্ট দলীল ও প্রমাণ, যাতে তাদের নিকট দলীল প্রমাণ স্পষ্ট হওয়ার পর অপারগতা প্রকাশ করার কোন সুযোগ না থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
উত্তর: প্রথমত: ইমাম আবূ দাউদ স্বীয় সুনানে সালমান ইবন দাউদ আল-মাহরী থেকে, তিনি বলেন, আমাদের নিকট হাদীস বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ বিন ওহাব, তিনি বলেন, আমাকে সংবাদ দিয়েছেন সা‘ঈদ ইবন আবু আইউব এবং তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন শারাহীল ইবন ইয়াযীদ আল-মু‘আফিরী থেকে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন আবু আলকামা থেকে আর তিনি বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে এবং তিনি বর্ণনা করেছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি বলেন, « إِنَّ اللَّهَ يَبْعَثُ لِهَذِهِ الأُمَّةِ عَلَى رَأْسِ كُلِّ مِائَةِ سَنَةٍ مَنْ يُجَدِّدُ لَهَا دِينَهَا » . “আল্লাহ তা‘আলা প্রতি শতাব্দির শুরুতে এ উম্মতের মধ্যে এমন একজনকে প্রেরণ করবেন, যিনি দীনের বিধানগুলো সংস্কার করবেন।” [আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪২৯৩]
দ্বিতীয়ত: হাদীসটি বিশুদ্ধ এবং হাদীসটির প্রত্যেক বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য।
তৃতীয় ও চতুর্থত: “দীনকে সংস্কার করবেন” এ বাণীর অর্থ, যখন অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত দীন যে দীনকে আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য পরিপূর্ণ করেছেন, যে দীনের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর তার নি‘আমতকে পরিপূর্ণ করেছেন এবং তাদের জন্যে ইসলামকে দীন হিসেবে মনোনিত করেছেন, সে দীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের নিকট ইসলাম বিষয়ে একজন বিচক্ষন আলেম বা দা‘ঈ প্রেরণ করবেন যিনি মানুষকে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূল থেকে প্রমাণিত সুন্নাতের প্রতি পথ দেখাবেন এবং বিদ‘আত থেকে দূরে সরাবেন এবং নব আবিষ্কৃত বস্তু থেকে তাদের সতর্ক করবেন। সঠিক পথ—আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাত থেকে যারা বিচ্যুত হবেন তাদেরকে তাদের বিচ্যুতি থেকে ফিরিয়ে রাখবেন। উম্মতের অবস্থার সংস্কার ও সংশোধন হিসেবে একে তাজদীদ বা সংস্কার বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদের জন্য যে দীনকে চালু করেছেন এবং পরিপূর্ণ করেছেন, সে দীনের সংস্কার বা সংশোধন হিসেবে একে সংস্কার বলে আখ্যায়িত করা হয়নি। কারণ, একের একের পর পরিবর্তন, দূর্বলতা ও বিকৃতি উম্মাতের ওপরই চেপে বসে। অন্যথায় ইসলামের সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর হাতেই। আল্লাহ তা‘আলা কুরআন ও সুন্নাতের হিফাযতের দায়িত্ব নেয়ার মাধ্যমে ইসলামকে হিফাযত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَٰفِظُونَ ٩﴾ [ الحجر : ٩ ] “নিশ্চয় আমি কুরআন [ الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।] নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী।” [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]
পঞ্চমত: সংস্কারকগণ বারো বছরের মাথায় আসবেন এ কথাটি হাদীসে নেই। রবং হাদীসে এসেছে আল্লাহর আদেশে এবং তার প্রজ্ঞা অনুযায়ী তারা আসবেন প্রতি হিজরী শতাব্দির মাথায়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার বান্দাদের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়া এবং তাদের বিপক্ষে সু-স্পষ্ট দলীল ও প্রমাণ, যাতে তাদের নিকট দলীল প্রমাণ স্পষ্ট হওয়ার পর অপারগতা প্রকাশ করার কোন সুযোগ না থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা।
হাদীস— « مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِى رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ » . “যে ব্যক্তি তার রিযিকের মধ্যে প্রসস্থতা এবং হায়াতের মধ্যে দীর্ঘতাকে পছন্দ করে”
প্রশ্ন: রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী— « مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِى رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ » . “যে ব্যক্তি তার রিযিকের মধ্যে প্রসস্থতা এবং হায়াতের মধ্যে দীর্ঘতাকে পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৮৮] এর অর্থ কি?। হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এ হাদীসের অর্থ কি এমন যে, মানুষ যখন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে তখন তার এক রকম বয়স হবে এবং যখন আত্মীয়তা বজায় না রাখে তখন তার অন্য রকম বয়স হবে?
উত্তর: এ হাদীসের অর্থ এমন নয় যে, মানুষের বয়স দুই ধরনের হবে। অর্থাৎ, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখলে এক রকম বয়স হবে এবং আত্মীয়তা বজায় না রাখলে অন্য রকম বয়স। মানুষের বয়স এক ও অভিন্ন এবং পরিমাণও এক। আল্লাহ তা‘আলা যাকে তাওফীক দেন সে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখেন আর যার ভাগ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করা রাখে তিনি ছিন্ন করেন। এটিই হলো বাস্তবতা। তবে হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য হলো, যে আমলে কল্যাণ রয়েছে তার প্রতি উম্মাতকে উৎসাহ প্রদান করা। যেমন, আমরা বলে থাকি, যে ব্যক্তি এ কথা পছন্দ করে যে, তার সন্তান হোক, সে যেন বিবাহ করে। অথচ বিবাহ ভাগ্যের ব্যাপার এবং সন্তান হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তা‘আলা যখন তোমার সন্তানের ইচ্ছা করবেন তখন তিনি তোমার বিবাহেরও ইচ্ছা করবেন। আর তা সত্ত্বেও বিবাহ ও সন্তান উভয়টি ভাগ্যের লিখন। অনুরূপভাবে মানুষের রিযিক এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি গোড়া থেকেই নির্ধারিত ও মীমাংসিত। কিন্তু বিষয়টি তুমি জানো না। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে বিষয়টি সম্পর্কে উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি বলছেন যে, যখন তুমি আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার রিযিক বৃদ্ধি করবেন, তোমার হায়াত বাড়িয়ে দেবেন ইত্যাদি। অন্যথায় সবকিছুই মীমাংসিত। তারপর মনে রাখতে হবে রিযিক ও হায়াত বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। অন্যথায় আমরা অনেক মানুষকে বাস্তবে দেখতে পাই সে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা সত্বেও এবং তার রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হলেও কিন্তু সে অল্প বয়সে মারা যায়। এ ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা বলব, লোকটি যদি আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষণাকারী না হতো তা হলে সে আরো আগেই মারা যেত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার ভাগ্যে এ কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করেছেন যে, সে আত্মীয়তা সম্পর্কে বজায় রাখবে এবং অমুক সময় তার জীবনের ইতি ঘটবে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: রাসূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাণী— « مَنْ أَحَبَّ أَنْ يُبْسَطَ لَهُ فِى رِزْقِهِ وَيُنْسَأَ لَهُ فِى أَثَرِهِ فَلْيَصِلْ رَحِمَهُ » . “যে ব্যক্তি তার রিযিকের মধ্যে প্রসস্থতা এবং হায়াতের মধ্যে দীর্ঘতাকে পছন্দ করে, সে যেন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৬৮৮] এর অর্থ কি?। হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। এ হাদীসের অর্থ কি এমন যে, মানুষ যখন আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখে তখন তার এক রকম বয়স হবে এবং যখন আত্মীয়তা বজায় না রাখে তখন তার অন্য রকম বয়স হবে?
উত্তর: এ হাদীসের অর্থ এমন নয় যে, মানুষের বয়স দুই ধরনের হবে। অর্থাৎ, আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখলে এক রকম বয়স হবে এবং আত্মীয়তা বজায় না রাখলে অন্য রকম বয়স। মানুষের বয়স এক ও অভিন্ন এবং পরিমাণও এক। আল্লাহ তা‘আলা যাকে তাওফীক দেন সে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখেন আর যার ভাগ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করা রাখে তিনি ছিন্ন করেন। এটিই হলো বাস্তবতা। তবে হাদীস দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্দেশ্য হলো, যে আমলে কল্যাণ রয়েছে তার প্রতি উম্মাতকে উৎসাহ প্রদান করা। যেমন, আমরা বলে থাকি, যে ব্যক্তি এ কথা পছন্দ করে যে, তার সন্তান হোক, সে যেন বিবাহ করে। অথচ বিবাহ ভাগ্যের ব্যাপার এবং সন্তান হওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ তা‘আলা যখন তোমার সন্তানের ইচ্ছা করবেন তখন তিনি তোমার বিবাহেরও ইচ্ছা করবেন। আর তা সত্ত্বেও বিবাহ ও সন্তান উভয়টি ভাগ্যের লিখন। অনুরূপভাবে মানুষের রিযিক এবং আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি গোড়া থেকেই নির্ধারিত ও মীমাংসিত। কিন্তু বিষয়টি তুমি জানো না। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাকে বিষয়টি সম্পর্কে উৎসাহ প্রদান করেন। তিনি বলছেন যে, যখন তুমি আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখবে তখন আল্লাহ তা‘আলা তোমার রিযিক বৃদ্ধি করবেন, তোমার হায়াত বাড়িয়ে দেবেন ইত্যাদি। অন্যথায় সবকিছুই মীমাংসিত। তারপর মনে রাখতে হবে রিযিক ও হায়াত বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি আপেক্ষিক। অন্যথায় আমরা অনেক মানুষকে বাস্তবে দেখতে পাই সে আত্মীয়তা সম্পর্ক বজায় রাখা সত্বেও এবং তার রিযিক বাড়িয়ে দেওয়া হলেও কিন্তু সে অল্প বয়সে মারা যায়। এ ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা বলব, লোকটি যদি আত্মীয়তা সম্পর্ক রক্ষণাকারী না হতো তা হলে সে আরো আগেই মারা যেত। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার ভাগ্যে এ কথা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করেছেন যে, সে আত্মীয়তা সম্পর্কে বজায় রাখবে এবং অমুক সময় তার জীবনের ইতি ঘটবে।
শাইখ মুহাম্মদ বিন উসাইমীন রহ.
প্রশ্ন: আমরা অধিকাংশই এ কথা শুনে থাকি যে, বৃষ্টি না হওয়া বা অনাবৃষ্টির কারণ বান্দার গুনাহ। যদি বিষয়টি এমনই হয়ে থাকে তাহলে যারা হিন্দুস্থান বা অমুসলিম দেশে রয়েছে দেখা যায় তাদের দেশে বৃষ্টি বন্যাতে পরিণত হয় অথচ আমাদের দেশে বৃষ্টি নেই। তবে তারা কি গুনাহ করে না এবং তারা কি আমাদের চেয়ে বেশি ইবাদত করে থাকে? নাকি বৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির বিষয়টি নির্ভর করে পৃথিবীর অবস্থানের ওপর? যেহেতু বিষয়টি নিয়ে মানুষ বলাবলি করে তাই বিষয়টিকে স্পষ্ট করলে কৃতজ্ঞ হবো।
উত্তর: প্রত্যেক মুসলিমকে এ কথা অবশ্যই জানতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন এবং মুসলিম অমুসলিম সবাই রিযিকের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ ٦﴾ [ هود : ٦ ] “আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল [এখানে مستقر বা আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর مستودع দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের পূর্বে পিতৃমেরুদন্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে।]।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٨ ] “আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। আমি তাদের কাছে কোন রিযিক চাই না; আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে। নিশ্চয় আল্লাহই রিযিকদাতা, তিনি শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬, ৫৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٖ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ يَرۡزُقُهَا وَإِيَّاكُمۡۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٦٠﴾ [ العنكبوت : ٦٠ ] “আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬০] আল্লাহ তা‘আলা জীন ইনসান কাফের মুশরিক মুসলিম অমুসলিম সবাইকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিযিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন নদী নালা সাগর সমুদ্র প্রবাহিত করেন। তিনি মুসলিম অমুসলিম সবাইকে রিযিক দেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার মুসলিম বান্দাগণ যখন শরী‘আত বিরোধী কোন কর্ম করেন এবং তার নির্দেশ অমান্য করেন, তখন তিনি তাদের শাস্তি দেন যাতে তারা তা থেকে বিরত থাকে এবং আযাব ও গযবের কারণসমূহ থেকে সতর্ক থাকে। শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। যেমন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বড় সংস্কারক, তার যুগ সবচেয়ে উত্তম যুগ, তার সাহাবীগণ নবীদের পর সবচেয়ে উত্তম মানব হওয়া স্বত্বেও তার যুগে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছিল, দুর্ভিক্ষ ও খরায় তারা আক্রান্ত হয়েছিল মানুষ। ফলে মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বৃষ্টির জন্য দো‘য়া কামনা করলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلا دخل المسجد ورسول الله صلى الله عليه و سلم قائم يخطب فاستقبل رسول الله صلى الله عليه و سلم قائما وقال يا رسول الله هلكت الأموال وانقطعت السبل فادع الله أن يغيثنا فرفع رسول الله صلى الله عليه و سلم يديه وقال اللهم أغثنا اللهم أغثنا اللهم أغثنا قال أنس ولا والله ما نرى في السماء سحابة ولا قزعة وما بيننا وبين سلع من بيت ولا دار قال فطلعت سحابة مثل الترس فلما توسطت السماء انتشرت ثم أمطرت قال أنس فلا والله ما رأينا الشمس ستا قال ثم دخل رجل من ذلك الباب في الجمعة المقبلة ورسول الله صلى الله عليه و سلم قائم يخطب فاستقبله قائما فقال يا رسول الله هلكت الأموال وانقطعت السبل فادع الله أن يمسكها عنا قال فرفع رسول الله صلى الله عليه و سلم يديه فقال اللهم حولنا ولا علينا اللهم على الآكام والظراب وبطون الأودية ومنابت الشجر قال فأقلعت وخرجنا نمشي في الشمس قال شريك سألت أنسا أهو الرجل الأول قال لا
“এক লোক মসজিদে প্রবেশ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, ধন-সম্পদ ধ্বংস প্রায়, রাস্তা-ঘাট বন্ধ আপনি আল্লাহকে ডাকেন যেন আমাদের বৃষ্টি দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতের খুতবায় দুই হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের বৃষ্টি দেন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের বৃষ্টি দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নামার আগেই বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা আকাশে মেঘমালা সৃষ্টি করলেন। তারপর তা আকাশে ছড়িয়ে দিলেন এবং বৃষ্টি নাযিল করলেন। লোকেরা মসজিদ থেকে বের হলে তারা সবাই বৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। এভাবে এক সপ্তাহ-পরবর্তী জুমু‘আর দিন পর্যন্ত লাগাতার মুশলধারে বৃষ্টি হতে লাগল। লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আবার এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ ধ্বংস প্রায়, রাস্তা-ঘাট বন্ধ। আপনি আল্লাহকে ডাকেন যেন বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম সন্তানের দূর্বলতার কথা চিন্তা করে মুচকি হাঁসি দিলেন এবং দুই হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ আমাদের আশ-পাশে, আমাদের ওপর নয়, হে আল্লাহ পাহাড়ে জঙ্গলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাথে সাথে আকাশে মেঘমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল এবং মদীনা আলোকিত হয়ে গেল।
মোট কথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তার সাহাবীগণ সর্ব উত্তম মানব হওয়া সত্ব্ওে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষা দেওয়া, তাদের ও অন্যান্যদের আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও তার রহমতের কামনা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং যাবতীয় অপকর্ম ও গুনাহ থেকে ফিরে এসে তার নিকট তাওবা করার দিক নির্দেশনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারাও মুসিবতে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ, বিভিন্ন বিপদ-আপদে তাদের আক্রান্ত হওয়াতে রয়েছে মুক্তির উপায় ও কারণসমূহের প্রতি দিক নির্দেশনা। যাতে তারা তার কাছে কান্না-কাটি করে এবং তারা এ কথা বিশ্বাস স্থাপন করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই রিযিক দাতা এবং তিনিই যা ইচ্ছা করে থাকেন।
যখন আল্লাহর নিকট ফিরে আসবে না আল্লাহ তা‘আলা তাদের মহামারি, দুর্ভিক্ষ, দুশমনদের চাপিয়ে দেওয়া, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবত দ্বারা শাস্তি দেবেন, যাতে তারা গুনাহ থেকে বিরত থাকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তার দিকে ফিরে যায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৭]
অহুদের যুদ্ধে মুসলিমগণ পরাজিত হলেন এবং তাদের কতক নিহত আবার কতক আহত হলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥﴾ [ ال عمران : ١٦٥ ] “আর যখন তোমাদের উপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটা কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আলে, ইমরান, আয়াত: ১৬৫]
পক্ষান্তরে বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় হলো এবং কাফেরদের পরাজয়। কাফেরদের সত্তুরজনকে হত্যা এবং সত্তুরজনকে বন্দি করা হলো। কিন্তু অহুদের যুদ্ধে মুসলিমগণ তাদের নিজেদের কর্মের কারণে মহা বিপর্যয়ের সম্মূখীন হলো। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন জুবাইরের নেতৃত্বে পঞ্চাশজন তীরান্দায যোদ্ধাকে মুসলিম বাহিনীর পেছনের পাহাড়ের উপর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদের বলেন, আমাদের যদি পাখি এসে নিয়েও যায় এবং বিজয়ী হই বা পরাজিত হই সর্ব অবস্থায় তোমরা তোমাদের জায়গা ছাড়বে না।
আল্লাহ তা‘আলা যখন মুসলিমদের বিজয়ী এবং কাফেরদের পরাজিত করলেন তীরান্দায সাহাবীগণ ভাবলেন যে যুদ্ধের নিষ্পতি ও মীমাংসা হয়ে গেছে। এবং ফলাফল মুসলিমদের অনুকুলে চলে এসেছে। এখন শুধু গণিমতের মাল একত্র করা অবশিষ্ট আছে। তারা তাদের অবস্থান ছেড়ে মাঠে গণিমতের মালা একত্র করার লক্ষে নেমে পড়লেন। তাদের আমীর আব্দুল্লাহ ইবন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাদের জায়গা না ছাড়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তারা তার কথা গুরুত্ব দেয়নি তারা বলল, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে কাফেররা পরাজিত হয়েছে। এ যখন অবস্থা ছিল, মুসলিমদের পেছন থেকে যে সুরঙ্গটি মুসলিমগণ ছেড়ে দিয়েছিল তার প্রবেশ পথ দিয়ে কাফের বাহিনী প্রবেশ করল। মুসলিমগণ তাদের নিজেদের ভুলের কারণে মহা বিপদে আক্রান্ত হলো।
মোট কথা, মুসলিমগণ অনেক সময় বিভিন্ন মুসিবতে আক্রান্ত হয়। তাতে তাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা ও সতর্কতা এবং তাদের গুনাহের মার্যনা। এ ছাড়াও রয়েছে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণ। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, বিজয় কেবল আল্লাহর হাতে। তাদের এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান তাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং তাদের অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্যতা ও বশ্বতা মেনে নিতে হবে। আল্লাহর আদেশ নিষেধের পাবন্দী করতে হবে। আল্লাহর দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এ কারণে এ কথা— ﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥﴾ [ ال عمران : ١٦٥ ] “আর যখন তোমাদের উপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটা কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৬৫] দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণকে যদি গুনাহের শাস্তি সম্মূখীন হতে হয় এবং অন্যান্যদের মতো তাদেরও আক্রান্ত হতে হয়, তাহলে অন্যদের অবস্থা কেমন হতে পারে?
প্রক্ষান্তরে কাফির, মুশরিকদের বিষয়ে আল্লাহর দুশমন শয়তান অবসর গ্রহণ করেছেন। কারণ, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ও দেশে তারা এমনিতেই শয়তানের অনুসরণ করে এবং আনুগত্যতা স্বীকার করে। তাদের ওপর আল্লাহর যে সব নি‘আমত—রিযিক ও বৃষ্টি ইত্যাদির ধারাবাহিকতা আদৌ বজায় রয়েছে তা হলো তাদের জন্য অবকাশ মাত্র। অন্যথায় তাদের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ أَبۡوَٰبَ كُلِّ شَيۡءٍ حَتَّىٰٓ إِذَا فَرِحُواْ بِمَآ أُوتُوٓاْ أَخَذۡنَٰهُم بَغۡتَةٗ فَإِذَا هُم مُّبۡلِسُونَ ٤٤﴾ [ الانعام : ٤٤ ] “অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱللَّهَ غَٰفِلًا عَمَّا يَعۡمَلُ ٱلظَّٰلِمُونَۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٖ تَشۡخَصُ فِيهِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ ٤٢﴾ [ ابراهيم : ٤٢ ] “আর যালিমরা যা করছে, আল্লাহকে তুমি সে বিষয়ে মোটেই গাফেল মনে করো না, আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪২] আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো সময় দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। যেমন, তাদের কুফরী ও গুনাহের কারণে তারা মহা যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছিল। অনুরূপভাবে বিভিন্ন প্রকার ব্যাধিতে দুনিয়াতে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা তা থেকে ফিরে আসেন। হিকমতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা কখনো সময় অবকাশ দেন। তবে তিনি একেবারে ছেড়ে দেন না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا يَعۡمَلُونَ ١٤٤﴾ [ البقرة : ١٤٤ ] “এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٢ وَأُمۡلِي لَهُمۡۚ إِنَّ كَيۡدِي مَتِينٌ ١٨٣﴾ [ الاعراف : ١٨١، ١٨٢ ] “আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কৌশল শক্তিশালী।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮১, ১৮২]
আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সুযোগ দেন এবং ফলফলাদি, রিযিক, নদীনালা বৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার নি‘আমতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে তাদের সময় দেন। তারপর তিনি যখন চান তাদের কঠিন পাকড়া করেন। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য অগণিত অপরাধ ও গুনাহ করা স্বত্বেও একজন মুসলিমকে সুযোগ ও অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তাকে শিক্ষা দেওয়া ও সতর্ক করার জন্য পাকড়াও করেন এবং শাস্তি দেন।
সুতরাং মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো সতর্ক হওয়া এবং আল্লাহর সুযোগ ও অবকাশ দেওয়াতে ধোঁকায় না পড়া। তারা যেন গুনাহের ওপর স্থায়ী না হয়ে খুব দ্রুত শাস্তি আসার পূর্বে খাটি তাওবাহ করে। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের ক্ষুব্ধতার কারণসমূহ এবং তার শাস্তির যন্ত্রণা থেকে নিরাপদ রাখেন। আল্লাহই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
উত্তর: প্রত্যেক মুসলিমকে এ কথা অবশ্যই জানতে হবে যে, আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত মাখলুক সৃষ্টি করেছেন এবং মুসলিম অমুসলিম সবাই রিযিকের দায়িত্ব তিনি নিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا مِن دَآبَّةٖ فِي ٱلۡأَرۡضِ إِلَّا عَلَى ٱللَّهِ رِزۡقُهَا وَيَعۡلَمُ مُسۡتَقَرَّهَا وَمُسۡتَوۡدَعَهَاۚ ٦﴾ [ هود : ٦ ] “আর জমিনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল [এখানে مستقر বা আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর مستودع দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের পূর্বে পিতৃমেরুদন্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে।]।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ ٥٦ مَآ أُرِيدُ مِنۡهُم مِّن رِّزۡقٖ وَمَآ أُرِيدُ أَن يُطۡعِمُونِ ٥٧ إِنَّ ٱللَّهَ هُوَ ٱلرَّزَّاقُ ذُو ٱلۡقُوَّةِ ٱلۡمَتِينُ ٥٨﴾ [ الذاريات : ٥٦، ٥٨ ] “আর জিন ও মানুষকে কেবল এজন্যই সৃষ্টি করেছি যে তারা আমার ইবাদাত করবে। আমি তাদের কাছে কোন রিযিক চাই না; আর আমি চাই না যে, তারা আমাকে খাবার দিবে। নিশ্চয় আল্লাহই রিযিকদাতা, তিনি শক্তিধর, পরাক্রমশালী।” [সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত: ৫৬, ৫৮]
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٖ لَّا تَحۡمِلُ رِزۡقَهَا ٱللَّهُ يَرۡزُقُهَا وَإِيَّاكُمۡۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٦٠﴾ [ العنكبوت : ٦٠ ] “আর এমন কত জীব-জন্তু রয়েছে, যারা নিজদের রিযিক নিজেরা সঞ্চয় করে না, আল্লাহই তাদের রিযিক দেন এবং তোমাদেরও। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।” [সূরা আল-আনকাবূত, আয়াত: ৬০] আল্লাহ তা‘আলা জীন ইনসান কাফের মুশরিক মুসলিম অমুসলিম সবাইকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের রিযিকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন নদী নালা সাগর সমুদ্র প্রবাহিত করেন। তিনি মুসলিম অমুসলিম সবাইকে রিযিক দেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার মুসলিম বান্দাগণ যখন শরী‘আত বিরোধী কোন কর্ম করেন এবং তার নির্দেশ অমান্য করেন, তখন তিনি তাদের শাস্তি দেন যাতে তারা তা থেকে বিরত থাকে এবং আযাব ও গযবের কারণসমূহ থেকে সতর্ক থাকে। শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। যেমন—রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সবচেয়ে বড় সংস্কারক, তার যুগ সবচেয়ে উত্তম যুগ, তার সাহাবীগণ নবীদের পর সবচেয়ে উত্তম মানব হওয়া স্বত্বেও তার যুগে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছিল, দুর্ভিক্ষ ও খরায় তারা আক্রান্ত হয়েছিল মানুষ। ফলে মুসলিমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বৃষ্টির জন্য দো‘য়া কামনা করলেন। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رجلا دخل المسجد ورسول الله صلى الله عليه و سلم قائم يخطب فاستقبل رسول الله صلى الله عليه و سلم قائما وقال يا رسول الله هلكت الأموال وانقطعت السبل فادع الله أن يغيثنا فرفع رسول الله صلى الله عليه و سلم يديه وقال اللهم أغثنا اللهم أغثنا اللهم أغثنا قال أنس ولا والله ما نرى في السماء سحابة ولا قزعة وما بيننا وبين سلع من بيت ولا دار قال فطلعت سحابة مثل الترس فلما توسطت السماء انتشرت ثم أمطرت قال أنس فلا والله ما رأينا الشمس ستا قال ثم دخل رجل من ذلك الباب في الجمعة المقبلة ورسول الله صلى الله عليه و سلم قائم يخطب فاستقبله قائما فقال يا رسول الله هلكت الأموال وانقطعت السبل فادع الله أن يمسكها عنا قال فرفع رسول الله صلى الله عليه و سلم يديه فقال اللهم حولنا ولا علينا اللهم على الآكام والظراب وبطون الأودية ومنابت الشجر قال فأقلعت وخرجنا نمشي في الشمس قال شريك سألت أنسا أهو الرجل الأول قال لا
“এক লোক মসজিদে প্রবেশ করে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, ধন-সম্পদ ধ্বংস প্রায়, রাস্তা-ঘাট বন্ধ আপনি আল্লাহকে ডাকেন যেন আমাদের বৃষ্টি দেয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু‘আর সালাতের খুতবায় দুই হাত তুলে বলেন, হে আল্লাহ আপনি আমাদের বৃষ্টি দেন। হে আল্লাহ আপনি আমাদের বৃষ্টি দেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বার থেকে নামার আগেই বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ তা‘আলা আকাশে মেঘমালা সৃষ্টি করলেন। তারপর তা আকাশে ছড়িয়ে দিলেন এবং বৃষ্টি নাযিল করলেন। লোকেরা মসজিদ থেকে বের হলে তারা সবাই বৃষ্টি থেকে নিজেদের বাঁচাতে চেষ্টা করছেন। এভাবে এক সপ্তাহ-পরবর্তী জুমু‘আর দিন পর্যন্ত লাগাতার মুশলধারে বৃষ্টি হতে লাগল। লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আবার এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ধন-সম্পদ ধ্বংস প্রায়, রাস্তা-ঘাট বন্ধ। আপনি আল্লাহকে ডাকেন যেন বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়। এ কথা শোনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আদম সন্তানের দূর্বলতার কথা চিন্তা করে মুচকি হাঁসি দিলেন এবং দুই হাত তুলে বললেন, হে আল্লাহ আমাদের আশ-পাশে, আমাদের ওপর নয়, হে আল্লাহ পাহাড়ে জঙ্গলে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। হাদীসের বর্ণনাকারী আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সাথে সাথে আকাশে মেঘমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল এবং মদীনা আলোকিত হয়ে গেল।
মোট কথা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং তার সাহাবীগণ সর্ব উত্তম মানব হওয়া সত্ব্ওে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের শিক্ষা দেওয়া, তাদের ও অন্যান্যদের আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি ও তার রহমতের কামনা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান এবং যাবতীয় অপকর্ম ও গুনাহ থেকে ফিরে এসে তার নিকট তাওবা করার দিক নির্দেশনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তারাও মুসিবতে আক্রান্ত হয়েছেন। কারণ, বিভিন্ন বিপদ-আপদে তাদের আক্রান্ত হওয়াতে রয়েছে মুক্তির উপায় ও কারণসমূহের প্রতি দিক নির্দেশনা। যাতে তারা তার কাছে কান্না-কাটি করে এবং তারা এ কথা বিশ্বাস স্থাপন করে যে, আল্লাহ তা‘আলাই রিযিক দাতা এবং তিনিই যা ইচ্ছা করে থাকেন।
যখন আল্লাহর নিকট ফিরে আসবে না আল্লাহ তা‘আলা তাদের মহামারি, দুর্ভিক্ষ, দুশমনদের চাপিয়ে দেওয়া, অনাবৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের মুসিবত দ্বারা শাস্তি দেবেন, যাতে তারা গুনাহ থেকে বিরত থাকে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং তার দিকে ফিরে যায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَآ أَصَٰبَكُم مِّن مُّصِيبَةٖ فَبِمَا كَسَبَتۡ أَيۡدِيكُمۡ وَيَعۡفُواْ عَن كَثِيرٖ ٣٠﴾ [ الشورى : ٣٠ ] “আর তোমাদের প্রতি যে মুসীবত আপতিত হয়, তা তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল। আর অনেক কিছুই তিনি ক্ষমা করে দেন।” [সূরা আশ-শুরা, আয়াত: ৩৭]
অহুদের যুদ্ধে মুসলিমগণ পরাজিত হলেন এবং তাদের কতক নিহত আবার কতক আহত হলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥﴾ [ ال عمران : ١٦٥ ] “আর যখন তোমাদের উপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটা কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আলে, ইমরান, আয়াত: ১৬৫]
পক্ষান্তরে বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের বিজয় হলো এবং কাফেরদের পরাজয়। কাফেরদের সত্তুরজনকে হত্যা এবং সত্তুরজনকে বন্দি করা হলো। কিন্তু অহুদের যুদ্ধে মুসলিমগণ তাদের নিজেদের কর্মের কারণে মহা বিপর্যয়ের সম্মূখীন হলো। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবন জুবাইরের নেতৃত্বে পঞ্চাশজন তীরান্দায যোদ্ধাকে মুসলিম বাহিনীর পেছনের পাহাড়ের উপর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি তাদের বলেন, আমাদের যদি পাখি এসে নিয়েও যায় এবং বিজয়ী হই বা পরাজিত হই সর্ব অবস্থায় তোমরা তোমাদের জায়গা ছাড়বে না।
আল্লাহ তা‘আলা যখন মুসলিমদের বিজয়ী এবং কাফেরদের পরাজিত করলেন তীরান্দায সাহাবীগণ ভাবলেন যে যুদ্ধের নিষ্পতি ও মীমাংসা হয়ে গেছে। এবং ফলাফল মুসলিমদের অনুকুলে চলে এসেছে। এখন শুধু গণিমতের মাল একত্র করা অবশিষ্ট আছে। তারা তাদের অবস্থান ছেড়ে মাঠে গণিমতের মালা একত্র করার লক্ষে নেমে পড়লেন। তাদের আমীর আব্দুল্লাহ ইবন জুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদের রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং তাদের জায়গা না ছাড়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু তারা তার কথা গুরুত্ব দেয়নি তারা বলল, যুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে কাফেররা পরাজিত হয়েছে। এ যখন অবস্থা ছিল, মুসলিমদের পেছন থেকে যে সুরঙ্গটি মুসলিমগণ ছেড়ে দিয়েছিল তার প্রবেশ পথ দিয়ে কাফের বাহিনী প্রবেশ করল। মুসলিমগণ তাদের নিজেদের ভুলের কারণে মহা বিপদে আক্রান্ত হলো।
মোট কথা, মুসলিমগণ অনেক সময় বিভিন্ন মুসিবতে আক্রান্ত হয়। তাতে তাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা ও সতর্কতা এবং তাদের গুনাহের মার্যনা। এ ছাড়াও রয়েছে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের কল্যাণ। যাতে তারা বুঝতে পারে যে, বিজয় কেবল আল্লাহর হাতে। তাদের এক আল্লাহর ইবাদত করা এবং তাদের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান তাদের মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। বরং তাদের অবশ্যই আল্লাহর আনুগত্যতা ও বশ্বতা মেনে নিতে হবে। আল্লাহর আদেশ নিষেধের পাবন্দী করতে হবে। আল্লাহর দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। এ কারণে এ কথা— ﴿أَوَلَمَّآ أَصَٰبَتۡكُم مُّصِيبَةٞ قَدۡ أَصَبۡتُم مِّثۡلَيۡهَا قُلۡتُمۡ أَنَّىٰ هَٰذَاۖ قُلۡ هُوَ مِنۡ عِندِ أَنفُسِكُمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيۡءٖ قَدِيرٞ ١٦٥﴾ [ ال عمران : ١٦٥ ] “আর যখন তোমাদের উপর বিপদ এল, (অথচ) তোমরা তো এর দ্বিগুণ বিপদে আক্রান্ত হলে (বদর যুদ্ধে)। তোমরা বলেছিলে এটা কোত্থেকে? বল, ‘তা তোমাদের নিজদের থেকে’। নিশ্চয় আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।” [সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৬৫] দ্বারা তাদের সতর্ক করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সাহাবীগণকে যদি গুনাহের শাস্তি সম্মূখীন হতে হয় এবং অন্যান্যদের মতো তাদেরও আক্রান্ত হতে হয়, তাহলে অন্যদের অবস্থা কেমন হতে পারে?
প্রক্ষান্তরে কাফির, মুশরিকদের বিষয়ে আল্লাহর দুশমন শয়তান অবসর গ্রহণ করেছেন। কারণ, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ও দেশে তারা এমনিতেই শয়তানের অনুসরণ করে এবং আনুগত্যতা স্বীকার করে। তাদের ওপর আল্লাহর যে সব নি‘আমত—রিযিক ও বৃষ্টি ইত্যাদির ধারাবাহিকতা আদৌ বজায় রয়েছে তা হলো তাদের জন্য অবকাশ মাত্র। অন্যথায় তাদের পরিণতি খুবই ভয়াবহ। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِۦ فَتَحۡنَا عَلَيۡهِمۡ أَبۡوَٰبَ كُلِّ شَيۡءٍ حَتَّىٰٓ إِذَا فَرِحُواْ بِمَآ أُوتُوٓاْ أَخَذۡنَٰهُم بَغۡتَةٗ فَإِذَا هُم مُّبۡلِسُونَ ٤٤﴾ [ الانعام : ٤٤ ] “অতঃপর তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা যখন তা ভুলে গেল, আমি তাদের উপর সব কিছুর দরজা খুলে দিলাম। অবশেষে যখন তাদেরকে যা প্রদান করা হয়েছিল তার কারণে তারা উৎফুল হল, আমি হঠাৎ তাদেরকে পাকড়াও করলাম। ফলে তখন তারা হতাশ হয়ে গেল।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৪৪] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱللَّهَ غَٰفِلًا عَمَّا يَعۡمَلُ ٱلظَّٰلِمُونَۚ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمۡ لِيَوۡمٖ تَشۡخَصُ فِيهِ ٱلۡأَبۡصَٰرُ ٤٢﴾ [ ابراهيم : ٤٢ ] “আর যালিমরা যা করছে, আল্লাহকে তুমি সে বিষয়ে মোটেই গাফেল মনে করো না, আল্লাহ তো তাদের অবকাশ দিচ্ছেন, ঐ দিন পর্যন্ত যে দিন চোখ পলকহীন তাকিয়ে থাকবে।” [সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৪২] আল্লাহ তা‘আলা কখনো কখনো সময় দুনিয়াতেই তাদের শাস্তি দিয়ে থাকেন। যেমন, তাদের কুফরী ও গুনাহের কারণে তারা মহা যুদ্ধে আক্রান্ত হয়েছিল। অনুরূপভাবে বিভিন্ন প্রকার ব্যাধিতে দুনিয়াতে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে যাতে তারা তা থেকে ফিরে আসেন। হিকমতের কারণে আল্লাহ তা‘আলা কখনো সময় অবকাশ দেন। তবে তিনি একেবারে ছেড়ে দেন না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَمَا ٱللَّهُ بِغَٰفِلٍ عَمَّا يَعۡمَلُونَ ١٤٤﴾ [ البقرة : ١٤٤ ] “এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৪] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بَِٔايَٰتِنَا سَنَسۡتَدۡرِجُهُم مِّنۡ حَيۡثُ لَا يَعۡلَمُونَ ١٨٢ وَأُمۡلِي لَهُمۡۚ إِنَّ كَيۡدِي مَتِينٌ ١٨٣﴾ [ الاعراف : ١٨١، ١٨٢ ] “আর যারা আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, অচিরেই আমি তাদেরকে ধীরে ধীরে এমনভাবে পাকড়াও করব যে, তারা জানতেও পারবে না। আর আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি। নিশ্চয় আমার কৌশল শক্তিশালী।” [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৮১, ১৮২]
আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের সুযোগ দেন এবং ফলফলাদি, রিযিক, নদীনালা বৃষ্টি ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার নি‘আমতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মাধ্যমে তাদের সময় দেন। তারপর তিনি যখন চান তাদের কঠিন পাকড়া করেন। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা অসংখ্য অগণিত অপরাধ ও গুনাহ করা স্বত্বেও একজন মুসলিমকে সুযোগ ও অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তাকে শিক্ষা দেওয়া ও সতর্ক করার জন্য পাকড়াও করেন এবং শাস্তি দেন।
সুতরাং মুসলিমদের ওপর ওয়াজিব হলো সতর্ক হওয়া এবং আল্লাহর সুযোগ ও অবকাশ দেওয়াতে ধোঁকায় না পড়া। তারা যেন গুনাহের ওপর স্থায়ী না হয়ে খুব দ্রুত শাস্তি আসার পূর্বে খাটি তাওবাহ করে। আল্লাহর নিকট আমাদের কামনা তিনি যেন আমাদের ক্ষুব্ধতার কারণসমূহ এবং তার শাস্তির যন্ত্রণা থেকে নিরাপদ রাখেন। আল্লাহই তাওফীক দাতা।
শাইখ আব্দুল আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
প্রশ্ন: হাদীস— « اثْنَتَانِ فِى النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرٌ الطَّعْنُ فِى النَّسَبِ وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ » . “মানুষের মধ্যে দুইটি বিষয় যা তাদের সাথে কুফর। এক, বংশ সম্পর্কে কটাক্ষ করা এবং মৃত ব্যক্তির ওপর উচ্চ স্বরে কান্নাকাটি করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৩৬] হাদীসে কুফরের অর্থ কি?
উত্তর: হাদীসটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
বংশ সম্পর্কে কটাক্ষ করার অর্থ, কাউকে ছোট করা বা তিরস্কার করার উদ্দেশ্যে কারো বংশের দোষ ধরা ও দুর্ণাম করা। আর তা যদি সংবাদ অধ্যায়ের হয়, যেমন বলল, অমুক তামীম গোত্রের লোক তারপর সে তাদের প্রকৃতি ও ধরনের বর্ণনা তুলে ধরল। অথবা বলল, অমুক কাহতান গোত্রের বা কুরাইশ গোত্রের বা বনী হাশেম গোত্রের লোক। তারপর সে তাদের হেয় বা খাট করার উদ্দেশ্য ছাড়া তাদের বংশের বাস্তব কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরল, তাতে সে বংশ সম্পর্কে কটাক্ষাকারী বলে পরিগণিত হবে না।
আর মৃত ব্যক্তির ওপর কান্নাকাটি করার অর্থ হলো, মৃত ব্যক্তির ওপর উচ্চ আওয়াজে কান্না করা। এটি সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
এখানে কুফর দ্বারা উদ্দেশ্য ছোট কুফর। এখানে কুফর দ্বারা সে কুফর উদ্দেশ্য নয় যার দ্বারা একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী সত্যিকার কুফর ও বড় কুফরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ » . “একজন মানুষ ও কুফর-শির্কের মাঝে প্রার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬] আলেমদের বিশুদ্ধ মতামত অনুযায়ী এটিই হলো বড় কুফর যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আলেমগণ বলেছেন, কুফর দুই প্রকার, যুলুম দুই প্রকার ফিস্ক দুই প্রকার। অনুরূপভাবে শির্ক দুই প্রকার—বড় শির্ক এবং ছোট শির্ক।
বড় শির্ক হলো, মৃত ব্যক্তির নিকট চাওয়া, তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া, তাদের জন্য মান্নত করা এবং মুর্তি, গাছপালা, পাথর, চন্দ্র সুর্য্য গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদির জন্য মান্নত করা।
আর ছোট শির্ক যেমন, এ ধরনের কথা বলা, যদি আল্লাহ না হতো এবং অমুক না হতো। আল্লাহ যা চেয়েছেন এবং অমুক যা চেয়েছেন ইত্যাদি। বলা উচিত হলো, যদি আল্লাহ না হতো অতঃপর অমুক এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর অমুক যা চেয়েছেন।
অনুরূপভাবে গাইরুল্লাহর নামে সপথ করা। যেমন, নবী রাসূলের নামে কসম করা অথবা কারো হায়াতের কসম করা অথবা আমানতের কসম করা ইত্যাদি। এ ধরনের কসম শির্কে আসগর বা ছোট শির্কের অর্ন্তভুক্ত। অনুরূপভাবে রিয়া বা লোকিকতা। যেমন, ক্ষমা চাইল মানুষকে শুনানো উদ্দেশ্যে অথবা কুরআন পড়লো যাতে মানুষ তাকে কারী বলে। যুলুম দুই প্রকার—বড় যুলুম, আল্লাহর সাথে শির্ক করা, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤﴾ [ البقرة : ٢٥٤ ] “আর কাফিররাই যালিম।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ يَلۡبِسُوٓاْ إِيمَٰنَهُم بِظُلۡمٍ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡأَمۡنُ وَهُم مُّهۡتَدُونَ ٨٢﴾ [ الانعام : ٨٢ ] “যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮২] ছোট যুলম হলো, একজন মানুষ অপর মানুষের জান ও মালের ক্ষেত্রে যুলুম—অত্যাচার করা এবং আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহ করার মাধ্যমে বান্দা তার নিজের ওপর যুলম করা। যেমন যিনা—ব্যভিচার করা, মদ পান করা ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা। শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
উত্তর: হাদীসটি সম্পূর্ণ বিশুদ্ধ। ইমাম মুসলিম স্বীয় সহীহতে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
বংশ সম্পর্কে কটাক্ষ করার অর্থ, কাউকে ছোট করা বা তিরস্কার করার উদ্দেশ্যে কারো বংশের দোষ ধরা ও দুর্ণাম করা। আর তা যদি সংবাদ অধ্যায়ের হয়, যেমন বলল, অমুক তামীম গোত্রের লোক তারপর সে তাদের প্রকৃতি ও ধরনের বর্ণনা তুলে ধরল। অথবা বলল, অমুক কাহতান গোত্রের বা কুরাইশ গোত্রের বা বনী হাশেম গোত্রের লোক। তারপর সে তাদের হেয় বা খাট করার উদ্দেশ্য ছাড়া তাদের বংশের বাস্তব কোন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরল, তাতে সে বংশ সম্পর্কে কটাক্ষাকারী বলে পরিগণিত হবে না।
আর মৃত ব্যক্তির ওপর কান্নাকাটি করার অর্থ হলো, মৃত ব্যক্তির ওপর উচ্চ আওয়াজে কান্না করা। এটি সম্পূর্ণ হারাম বা নিষিদ্ধ।
এখানে কুফর দ্বারা উদ্দেশ্য ছোট কুফর। এখানে কুফর দ্বারা সে কুফর উদ্দেশ্য নয় যার দ্বারা একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বের হয়ে যায়। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী সত্যিকার কুফর ও বড় কুফরের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, «إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلاَةِ » . “একজন মানুষ ও কুফর-শির্কের মাঝে প্রার্থক্য হলো সালাত ত্যাগ করা।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৫৬] আলেমদের বিশুদ্ধ মতামত অনুযায়ী এটিই হলো বড় কুফর যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আলেমগণ বলেছেন, কুফর দুই প্রকার, যুলুম দুই প্রকার ফিস্ক দুই প্রকার। অনুরূপভাবে শির্ক দুই প্রকার—বড় শির্ক এবং ছোট শির্ক।
বড় শির্ক হলো, মৃত ব্যক্তির নিকট চাওয়া, তাদের নিকট সাহায্য চাওয়া, তাদের জন্য মান্নত করা এবং মুর্তি, গাছপালা, পাথর, চন্দ্র সুর্য্য গ্রহ নক্ষত্র ইত্যাদির জন্য মান্নত করা।
আর ছোট শির্ক যেমন, এ ধরনের কথা বলা, যদি আল্লাহ না হতো এবং অমুক না হতো। আল্লাহ যা চেয়েছেন এবং অমুক যা চেয়েছেন ইত্যাদি। বলা উচিত হলো, যদি আল্লাহ না হতো অতঃপর অমুক এবং আল্লাহ যা চেয়েছেন অতঃপর অমুক যা চেয়েছেন।
অনুরূপভাবে গাইরুল্লাহর নামে সপথ করা। যেমন, নবী রাসূলের নামে কসম করা অথবা কারো হায়াতের কসম করা অথবা আমানতের কসম করা ইত্যাদি। এ ধরনের কসম শির্কে আসগর বা ছোট শির্কের অর্ন্তভুক্ত। অনুরূপভাবে রিয়া বা লোকিকতা। যেমন, ক্ষমা চাইল মানুষকে শুনানো উদ্দেশ্যে অথবা কুরআন পড়লো যাতে মানুষ তাকে কারী বলে। যুলুম দুই প্রকার—বড় যুলুম, আল্লাহর সাথে শির্ক করা, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَٱلۡكَٰفِرُونَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ ٢٥٤﴾ [ البقرة : ٢٥٤ ] “আর কাফিররাই যালিম।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৪৫] আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَلَمۡ يَلۡبِسُوٓاْ إِيمَٰنَهُم بِظُلۡمٍ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمُ ٱلۡأَمۡنُ وَهُم مُّهۡتَدُونَ ٨٢﴾ [ الانعام : ٨٢ ] “যারা ঈমান এনেছে এবং নিজ ঈমানকে যুলমের সাথে সংমিশ্রণ করেনি, তাদের জন্যই নিরাপত্তা এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।” [সূরা আল-আন‘আম, আয়াত: ৮২] ছোট যুলম হলো, একজন মানুষ অপর মানুষের জান ও মালের ক্ষেত্রে যুলুম—অত্যাচার করা এবং আল্লাহর নাফরমানী ও গুনাহ করার মাধ্যমে বান্দা তার নিজের ওপর যুলম করা। যেমন যিনা—ব্যভিচার করা, মদ পান করা ইত্যাদি। আল্লাহর কাছে এ থেকে আশ্রয় কামনা করি। আল্লাহ তা‘আলাই তাওফীক দাতা। শাইখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ.
وصلى الله وسلم على عبده ونبيه محمد ، وعلى آله وصحبه أجمعين
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন