মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
দ্বাদশ-ইমামী শী‘আ ধর্মের মূলনীতিসমূহের সুস্পষ্ট রূপরেখা
লেখকঃ মুহিব্বুদ্দীন আল-খতিব
৫
আল-কুরআনুল করীমের উপর অপবাদ
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/701/5
এমন কি তারা আল-কুরআনুল করীমের উপর অপবাদ দেয়, যা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ও তাদের মূল প্রত্যাবর্তনস্থল হওয়া উচিত ছিল। কারণ, তাদের ধর্মীয় নীতিমালার শিকড়সমূহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যার ও বিকৃত অর্থের উপর; যার প্রকৃত ব্যাখ্যা ও অর্থ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে তাঁর সাহাবীগণ রাদিয়াল্লাহু আনহুম অনুধাবন করেছেন এবং যে প্রজন্মের উপর কুরআন নাযিল হয়েছে, তাঁদের নিকট থেকে ইসলাম ধর্মের প্রসিদ্ধ ইমামগণ উপলব্ধি করেছেন।
বরং নাজাফের বিজ্ঞ আলেমদের অন্যতম, আলহাজ মির্জা হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী আন-নুরী আত-তাবারসী; যাকে ১৩২০ হিজরিতে মৃত্যুর সময় তারা (শী‘আগণ) বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে এবং তারা তাকে নাজাফের আল-মুরতাজা মাশ্হাদের সুলতান নাসের লিদ্বীনিল্লাহ এর কন্যা মহামতি বানু এর কক্ষে অভ্যন্তরে দাফন করেছে; আর তা পবিত্র নাজাফের বাবুল কিবলার আল-মুরতাজা চত্বরের অভ্যন্তরভাগের ডান পার্শ্বের কিবলামুখী কক্ষের দফতরখানার পাশে; যা তাদের নিকট সর্বাধিক পবিত্র ভূমি বলে পরিচিত।
এই নাজাফী আলেম ১২৯২ হিজরিতে নাজাফে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর কথিত কবরের নিকটে বসে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার নাম দিয়েছেন ‘ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في إثبات تحريف كتاب رب الأرباب ) [শিরোনামের অর্থ: ‘প্রভুদের প্রভুর কিতাবের বিকৃতি প্রমাণে সুস্পষ্ট ভাষ্য’]। তিনি তাতে বিভিন্ন যুগের শী‘আ আলেম ও গবেষকদের নিকট থেকে শত-শত নস ও বর্ণনা একত্রিত করেছেন, যার মূলকথা হল, আল-কুরআনুল করীমের মধ্যে কম-বেশি করা হয়েছে।
তাবারসী’র এই কিতাবটি ১২৮৯ হিজরিতে ইরানে প্রকাশ করা হয়। আর তা মুদ্রণের সময় তার চতুর্দিকে তুমুল হৈচৈ ও গণ্ডগোল শুরু হয়। কারণ, তারা চাচ্ছিল যে, আল-কুরআনের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সন্দেহের বিষয়টি তাদের বিশেষ ব্যক্তিদের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকুক এবং তাদের নিকট গ্রহণযোগ্য শত শত কিতাবের মধ্যে বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্নভাবে তা বিদ্যমান থাকুক। তারা মোটেও চায় নি যে, এই সবগুলো বিষয়ই একই গ্রন্থে একত্রিত করে হাজার হাজার কপি প্রকাশ হোক এবং তাদের বিরোধীরা তা দেখুক; যার ফলে তা সকলের দৃষ্টিসম্মুখে তাদের বিরুদ্ধে একটা উজ্জ্বল প্রমাণ হয়ে থাকবে।
যখন এ ব্যাপারে তাদের পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গ লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করল, তখন লেখক তাদের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন এবং আরও একটি গ্রন্থ রচনা করেন; যার নাম দিয়েছেন ‘রাদ্দু বা‘আদিশ শুবহাত ‘আন ফাসলিল খিতাব ফি ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( رد بعض الشبهات عن فصل الخطاب في إثبات تحريف رب الأرباب ); [যার অর্থ হচ্ছে, ‘প্রভুদের প্রভুর কিতাব বিকৃতি প্রমাণে সুস্পষ্ট ভাষ্য’ গ্রন্থ সংক্রান্ত কিছু সন্দেহের অপনোদন’] তিনি তার এই প্রতিরোধমূলক গ্রন্থটি লিপিবব্ধ করেন তার শেষ জীবনে, মৃত্যুর আনুমানিক দুই বছর পূর্বে। ‘আল-কুরআন বিকৃত’—এই কথা প্রমাণের চেষ্টা-প্রচেষ্টার প্রতিদান স্বরূপ তারা তাকে নাজাফের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাপূর্ণ (তাদের ধারণা মতে) সমাধিস্থলে দাফন করে।
এই নাজাফী আলেম আল-কুরআনের মধ্যে যে কাটছাঁট করা হয়েছে, তার প্রমাণ হিসেবে তার কিতাবের ১৮০ পৃষ্ঠায় একটি সূরার উল্লেখ করেছেন; শী‘আগণ তার নাম রেখেছেন ‘সূরাতুল বেলায়াত’ ( سورة الولاية ); এর মধ্যে আলী রা. এর বেলায়াত প্রসঙ্গে আলোচনা রয়েছে:
" يا أيها الذين آمنوا : آمِنوا بالنبي والولي الذين بعثناهما يهديانكم إلى الصراط المستقيم ..." إلخ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী এবং ওলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যাদেরকে আমি প্রেরণ করেছি; তারা তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে...” শেষ পর্যন্ত। [এই সূরার পরিপূর্ণ রূপ আপনি সামনের পৃষ্ঠায় দেখতে পাবেন। তার বাকি অংশের বাংলা অনুবাদ হল: “নবী এবং ওলী; তারা একে অপরের অংশ, আর আমি মহাজ্ঞানী, সকল বিষয়ে অবহিত। নিশ্চয় যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত। আর যাদের নিকট যখন আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের মধ্যে মহান জায়গা। যখন কিয়ামতের দিন তাদেরকে ডাকা হবে, কোথায় সেই যালিমগণ, রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারীগণ। কিসে তাদেরকে রাসূলদের বিরোধিতায় লিপ্ত করেছে??? তবে যদি হয় সেটা যথাযথ সেটা ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি নিকটতম সময়ের মধ্যে তাদেরকে বিজয় দান করবেন। সুতরাং তুমি তোমার রবের গুণকীর্তন কর, আর আলী সাক্ষ্যদাতাদের একজন।”এটি শী‘আদের বানানো সূরা, যার গঠনরীতি বোকামীর পরিচয় দেয়, আর যা খুবই কুটিল এবং দুর্বল বিবেক উৎসারিত হওয়ার প্রমাণ বহন করে। আর যা ব্যাকরণগত বীভৎস ভুল-ত্রুটিতে ভরপুর। এ সবই প্রমাণ করে যে, তা নির্বোধ পারস্যবাসী অনারবদের দ্বারা রচিত এক অনারব বানোয়াট ‘সূরা’; যারা নিজেদেরকে এই সূরার সাথে সম্পৃক্ত করে নিজেরাই কলঙ্কিত হয়েছে!এই হলো শী‘আদের যা ত্রুটিপূর্ণ, বানোয়াট ও দুর্বল ‘কুরআন’! আর আমাদের আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কুরআন হল সুস্পষ্ট আরবি ভাষার কুরআন, সম্পূর্ণ জটিলতামুক্ত; তার মাঝে রয়েছে মধুরতা ও ধীরস্থিরতা; তার উপর ও নীচ লাভজনক ও প্রচুর গভীরতা সম্পন্ন; তা ঈমানদারদের জন্য পথপ্রদর্শক ও চিকিৎসা স্বরূপ। আর যারা ঈমান আনে না, তাদের কর্ণে বধিরতা ও তাদের উপরে অন্ধত্ব!!]
বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য উস্তাদ মুহাম্মদ আলী সাঊদী, যিনি মিসরের বিচার মন্ত্রণালয়ের বড় মাপের একজন বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং শাইখ মুহাম্মদ ‘আবদুহু’র বিশেষ ছাত্র ছিলেন, তিনি প্রাচ্যবিদ ব্রাইনের নিকট লিখিত একটি ইরানী মুসহাফ দেখতে সমর্থ হন; অতঃপর সেখান থেকে একটি প্রকাশিত সূরা ফটোগ্রাফের মাধ্যমে নকল করেন। তার লাইনের উপরের অংশ আরবি ভাষায়, আর তার নীচে ইরানী ভাষায় অনুবাদ। যা আল-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في إثبات تحريف رب الأرباب ) নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তাছাড়া এই সূরাটি মুহসিন ফানী আল-কাশ্মিরী কর্তৃক ইরানী ভাষায় লিখিত তাদের ‘দাবিস্তানে মাযাহিব’ ( دَبِستان مذاهب ) নামক কিতাবেও বিদ্যমান রয়েছে; যার অনেক সংস্করণ ইরানের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত। সেখান থেকে প্রাচ্যবিদ পণ্ডিত নুওয়ালদিক তার ‘তারীখুল মাসাহেফ’ ( تاريخ المصاحف ) নামক কিতাবের ২য় খণ্ডের ১০২ পৃষ্ঠায় আল্লাহর নামে মিথ্যারোপিত এই বানোয়াট সূরাটি সংকলন করেছেন এবং তা ১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে ( الجريدة ا ﻵ سيوية الفرنسية ) নামক এশীয়-ফ্রান্সীয় ম্যাগাজিনের ৪৩১-৪৩৯ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত হয়।
যেমনিভাবে নাজাফী আলেম ‘সূরাতুল বেলায়াত’ দ্বারা প্রমাণ পেশ করেছেন যে, ‘আল-কুরআন বিকৃত’; অনুরূপভাবে তিনি ১২৭৮ হিজরিতে ইরানে মুদ্রিত ‘আল-কাফী’ [তার পুরা নাম “আল-জামে‘ আল-কাফী”—আবু জাফর ইয়াকুব আল-কুলাইনী আল-রাযী।] নামক গ্রন্থের ২৮৯ পৃষ্ঠায় যা বর্ণিত আছে, তা দ্বারাও এ ব্যাপারে প্রমাণ পেশ করেছেন। আর এই কিতাবটির মর্যাদা তাদের নিকট তেমন পর্যায়ের, মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট সহীহ বুখারীর মর্যাদা যেমন। ‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থের ঐ পৃষ্ঠায় বর্ণিত নসটি হল:
“আমদের অনেক সঙ্গী সাহল ইবন যিয়াদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি মুহাম্মদ ইবন সুলায়মান থেকে বর্ণনা করেন। তিনি তার কিছুসংখ্যক সঙ্গী-সাথীর নিকট থেকে বর্ণনা করেন। তারা আবুল হাসান আ. থেকে বর্ণনা করেন। অর্থাৎ আবুল হাসান আস-সানী আলী ইবন মূসা আর-রেদা (মৃত্যু: ২০৬ হি.)। তিনি বলেন: “আমি তাকে বললাম, আপনার জন্য আমি উৎসর্গ, আমরা কুরআনের আয়াত শ্রবণ করি, কিন্তু আমরা যেমন শুনি তা তেমন নয়; আপনাদের নিকট থেকে আমাদের নিকট যেভাবে এসেছে, সেভাবে পাঠ করতে পারি না। সুতরাং তাতে আমরা গুনাহগার হব কিনা?” জওয়াবে সে বলল: “না, তোমরা যেমনিভাবে শিখেছ তেমনিভাবে পাঠ কর; অচিরেই সেই ব্যক্তির আগমন ঘটবে, যিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন।”
সন্দেহ নেই যে, এই বক্তব্যটি শী‘আগণ তাদের ইমাম আলী ইবন মূসা আর-রেদার নামে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে; কিন্তু তাদের নিকট এর মানে হল: এই ফতোয়া দেয়া যে, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করে এমনভাবে যেমনিভাবে মানুষ তা ‘মুসহাফে ওসমানী’-এর মধ্যে যেমনভাবে শিখে, তাতে ঐ ব্যক্তি গুনাহগার হবে না। অতঃপর শী‘আদের বিশেষ শ্রেণির ব্যক্তিবর্গ একে-অপরকে সেগুলোর বিপরীত অংশ শিক্ষা দিবে। আর তা তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী যে, এই ভিন্ন বিষয়গুলো আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত তাদের ইমামদের নিকট মওজুদ আছে বা ছিল।
এখানে শী‘আদের বানানো সূরা ‘সূরাতুল বেলায়াত’-এর উল্লেখ করা হল, যা ইরানের মুসহাফসমূহের কোন একটি থেকে ফটোগ্রাফ করে এই বইয়ে সংকলিত হয়েছেন এবং তাতে প্রত্যেকটি বাক্যের ফারসি অনুবাদও রয়েছে। সূরাটির পূর্ণাঙ্গ বক্তব্য নিম্নরূপ:
سورة الولاية سبع أيات
بسم الله الرحمن الرحيم
يا أيها الذين آمنوا : آمِنوا بالنبي والولي الذين بعثناهما يهديانكم إلى الصراط المستقيم . نبي و ولي بعضهما من بعض و أنا العليم الخبير . إن الذين يوفون بعهد الله لهم جنات النعيم . والذين إذا تُليت عليهم آياتنا كانوا بأياتنا مكذبين ! ؟؟ . إن لهم في جهنم مقاما عظيما، إذا نودي لهم يوم القيامة أين الظالمون المكذبون للمرسلين . ما خالفهم المرسلين ! ؟؟ إلا بالحق و ما كان الله ليظهرهم إلى أجل قريب . و سبح بحمد ربك و علي من الشاهدين .
বাংলা অনুবাদ
সূরাতুল বেলায়াহ্ – সাতটি আয়াত
(হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী এবং ওলীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, যাদেরকে আমি প্রেরণ করেছি; তারা দু’জনে তোমাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে। নবী এবং ওলী; তারা একে অপরের অংশ, আর আমি মহাজ্ঞানী, সকল বিষয়ে অবহিত। নিশ্চয় যারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে, তাদের জন্য রয়েছে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত। আর যাদের নিকট যখন আমাদের আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হয়, তখন তারা আমাদের আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; নিশ্চয় তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের মধ্যে মহান জায়গা!। যখন কিয়ামতের দিন তাদেরকে ডাকা হবে, কোথায় সেই যালিমগণ, রাসূলদের মিথ্যা প্রতিপন্নকারীগণ। কিসে তাদেরকে রাসূলগণের বিরোধিতায় লিপ্ত করেছে??? তবে যদি ন্যায়সঙ্গতভাবে করে থাকে সেটা ভিন্ন। আর আল্লাহ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে নিকটতম সময়ের মধ্যে বিজয়ী করবেন। আর তুমি তোমার রবের গুণকীর্তন কর, আর আলী সাক্ষ্যদাতাদের একজন।)
কল্পিত ও বানোয়াট কুরআন; তা তারা একে-অপরের নিকট গোপনে বর্ণনা করে এবং ‘তাকিয়্যা’র আকিদায় বিশ্বাসী হয়ে তারা তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করে না। আর শী‘আদের বড় মাপের সকল আলেম যদি কুরআন বিকৃতির আকিদায় বিশ্বাসী না হত, তবে যে লেখক একটি গ্রন্থ লিখে, যাতে কুরআন বিকৃতির প্রমাণস্বরূপ দুই হাজার হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে, তারা সেই লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করত না। যেমন তারা বলে: ‘আল্লাহ তার ভিতরটাকে পবিত্র করুন’, অথবা ‘তিনি মুহাদ্দিসগণের ইমাম’ ইত্যাদি। সুতরাং তারা যদি এর বিপরীত আকিদায় বিশ্বাসী হতেন, তবে ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এ কথা বলার পর তারা তা প্রত্যাখ্যান করতেন, অথবা তারা তাকে আক্রমন করতেন, অথবা তাকে বিদআতপন্থী বলে আখ্যায়িত করতেন, অথবা তাকে কাফির বলে মন্তব্য করতেন... কেননা, ‘কুরআন বিকৃত’— এ কথার পর আর কি থাকতে পারে!?
তাদের এই কল্পিত কুরআন এবং সর্বজনবিদিত কুরআন ‘মুসহাফে ওসমানী’তে লিখিত কুরআনের মধ্যে তুলনা প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই হোসাইন ইবন মুহাম্মদ তকী [শী‘আদের নিকট “তকী” নামটি খুব প্রসিদ্ধ। যেমন ‘ফাসলুল খিতাব’ কিতাবের লেখকের পিতা। তার নাম ছিল ‘তকী’ তারা এ নামটি “তাকিয়্যা” থেকে গ্রহণ করে, তাকওয়া থেকে নয়। সুতরাং কোন পিতা যদি তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ‘তকী’ নাম রাখে তারা এর দ্বারা সুলক্ষণ গ্রহণ করে। কারণ এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য এই থাকে যে, এ ব্যক্তি ‘তাকিয়্যা’ বা আসল তথ্য গোপন করে, মুসলিমদেরকে তার বিশ্বাসের বিপরীত অন্য কথা বলে বিভ্রান্ত করতে সবচেয়ে বেশী পারদর্শী বিবেচিত হবে।] আল-নুরী আল-তাবারসী তার ‘ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في إثبات تحريف رب الأرباب ) নামক গ্রন্থটি রচনা করেন। [শী‘আদের অন্যতম বিজ্ঞ ব্যক্তি, শী‘আদের প্রসিদ্ধ বিশ্বকোষ ‘আল-যারি‘আত ইলা তাসানীফ আল-শী‘আ’ ( الذريعة إلى تصانيف الشيعة )-এর লেখক শায়খ আগা বুযুর্গ তেহেরানী তার ‘তাবাকাত আ‘লাম আল-শী‘আ’ ( طبقات أعلام الشيعة ) নামক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডের দ্বিতীয় অংশ যা ‘নুকাবা আল-বাশার ফি আল-কারন আল-রাবে‘ ‘আশার’ ( نقباء البشر في القرن الرابع عشر ) নামে প্রসিদ্ধ এবং নাজাফের ‘আল-মাতবা‘আ আল-ইলমিয়া’ থেকে ১৩৭৫ হি./১৯৫৬ খ্রি. প্রকাশিত হয়; তিনি এই গ্রন্থের ৫৪৪ পৃষ্ঠায় আল-নুরী আল-তাবারসী প্রসঙ্গে বলেন: “তিনি মুতাআখ্খিরীন যুগের হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের ইমামদের ইমাম, শী‘আ আলেমদের মহান গুরু এবং এই যুগের ইসলামী ব্যক্তিত্বতের মধ্যে অন্যতম মহান ব্যক্তিত্ব।”যাই হোক, ‘হাদিস ও রিজাল শাস্ত্রের ইমামদের ইমাম’ আননুরী আত-তাবারসীই একমাত্র ব্যক্তিত্ব নন, যিনি আল-কুরআন বিকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন। এই মতের পক্ষে তার মত আরও অনেক বড় বড় ইমামও রয়েছে; যেমন: কাফী ও রওযা গ্রন্থকার আল-কুলাইনী; তাফসীর গ্রন্থকার আল-কুমী, যার ব্যাপারে নাজ্জাশী তার রিজাল গ্রন্থের ১৮৩ পৃষ্ঠায় বলেছেন: “তিনি হাদিসের বিষয়ে বিশ্বস্ত, গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও সহীহ মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত।”; অনুরূপভাবে শী‘আদের অন্যতম আলেম ‘শাইখ আল-মুফিদ’, যার ব্যাপারে নাজ্জাসী ২৮৪ পৃষ্ঠায় বলেছেন: “ফিকহ, রিওয়ায়েত, সিকাহ ও ইলমের ব্যাপারে তার গুণ বর্ণনার চেয়েও তিনি মর্যাদার ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রসিদ্ধ।”, আর তার প্রশংসা করেছেন সাইয়্যেদ মুহসীন আল-আমিন তার ‘আ‘ইয়ান আশ-শী‘আ’ ( أعيان الشيعة ) নামক গ্রন্থে; হা.১/২৩৭; তিনিও কুরআন বিকৃত হয়েছে বলে দাবী করে থাকেন। তদ্রূপ তাদের আলেম ‘আল-কাশী; আল-আরদাবিলী এবং আল-মাজলিসী প্রমূখরাও কুরআনের বিকৃত হওয়ার দাবী করেছে।আর শী‘আদের বড় মাপের সকল আলেম যদি কুরআন বিকৃতির আকিদায় বিশ্বাসী না হত, তবে যে লেখক একটি গ্রন্থ লিখেছে, - যাতে কুরআন বিকৃতির প্রমাণস্বরূপ দুই হাজার হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে- সেই লেখকের ভূয়সী প্রশংসা করত না। যেমন তারা বলে: ‘আল্লাহ তার ভিতরটাকে পবিত্র করুন’, অথবা ‘তিনি মুহাদ্দিসগণের ইমাম’ ইত্যাদি। সুতরাং তারা যদি এর বিপরীত আকিদায় বিশ্বাসী হতেন, তবে ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এ কথা বলার পর তারা তা প্রত্যাখ্যান করতেন, অথবা তারা তাকে আক্রমন করতেন, অথবা তাকে বিদআতপন্থী বলে আখ্যায়িত করতেন, অথবা তাকে কাফির বলে মন্তব্য করতেন... কেননা, ‘কুরআন বিকৃত’— এ কথার পর আর কি থাকতে পারে!?]
কখনও কখনও শী‘আরা ‘তাকিয়্যা’র আকিদায় বিশ্বাসী হয়ে আল-নুরী আল-তাবারসীর গ্রন্থের ব্যাপারে নিজেদের দায়মুক্তির ঘোষণা প্রদর্শন করে থাকে। কিন্তু, গ্রন্থটিতে তাদের বিশেষজ্ঞ আলেমদের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহ থেকে শত-শত দলীল-প্রমাণাদি সংকলিত আছে; যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, তারা ‘আল-কুরআন বিকৃত’-এ কথায় দৃঢ়-বিশ্বাসী। কিন্তু আল-কুরআনের ব্যাপারে তাদের আকিদাকে কেন্দ্র করে হৈচৈ ও গণ্ডগোল শুরু হউক, তারা তা পছন্দ করে না।
এর ফলে প্রতীয়মান যে, (তাদের মাঝে) দু’টি কুরআন বিদ্যমান রয়েছে: একটি হচ্ছে সাধারণ, সর্বজন-পরিচিত এবং অপরটি হল বিশেষ, গোপনীয়। আর তারই অংশবিশেষ হল ‘সূরাতুল বেলায়াত’ ( سورة الولاية )। আর এ ব্যাপারে তারা আমল করে তাদের ইমাম আলী ইবন মূসা আর-রেদার উপর আরোপিত বানোয়াট কথার দ্বারা। আর তা হল:
" اقرءوا كما تعلمتم , فسيجيئكم من يعلمكم "!
“তোমরা যেমনিভাবে শিখেছ তেমনিভাবে পাঠ কর; অচিরেই সেই ব্যক্তির আগমন ঘটবে, যিনি তোমাদেরকে শেখাবেন”!
আর শী‘আদের আরও একটি অন্যতম ধারণা হলো, আল-কুরআনের একটি আয়াতকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। তা হল: " و جعلنا عليا صهرك " (আর আমরা আলীকে তোমার জামাতা বানিয়েছি); তাদের ধারণা এই আয়াতটি সূরা ‘আলাম নাশরাহ’ ﴿أَلَمْ نَشْرَحْ﴾ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারা জানে, ‘আলাম নাশরাহ’ ﴿أَلَمْ نَشْرَحْ﴾ সূরাটি মাক্কী সূরা— তা সত্ত্বেও এ অযৌক্তিক ধারণার কারণে তারা লজ্জিতও হয় না! অথচ মক্কাতে তাঁর একমাত্র জামাতা ছিল আল-‘আস ইবন আর-রবী‘ আল-উমাওয়ী ( العاص بن الربيع الأموي )। যখন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা’র বর্তমানে আবূ জাহেলের কন্যাকে বিয়ে করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন এবং ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহা তাঁর পিতা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এ অভিযোগ করেন তখন মসজিদে নববীর মিম্বরে বসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল-আস ইবন আর-রবী এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। [সুতরাং কোনভাবেই মক্কী সূরাতে আলীকে জামাতা বানানোর ঘোষণা আসতে পারে না, কারণ ফাতেমা আলী রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে আলী রাদিয়াল্লাহ আনহুর বিয়ে মদীনাতে সংঘটিত হয়েছিল।]
আর যদি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যার জামাতা হন, তবে উসমান ইবন আফ্ফান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর দুই কন্যার জামাতা বানিয়ে দিয়েছেন এবং যখন দ্বিতীয় কন্যা ইন্তিকাল করে, তখন তাঁকে উদ্দেশ্য করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: " لو كانت لنا ثالثة لزوجناكها " অর্থাৎ “আমাদের তৃতীয় আরেকটি কন্যা থাকলে তাকে তোমার নিকট বিবাহ দিতাম।” [সুতরাং জামাতা হওয়ার ব্যাপারটি এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয় যে কুরআনে থাকতে হবে। অথচ এটা প্রমাণ করার জন্য তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমাম উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছে যে, তিনি ‘আলীকে তোমার জামাতা বানালাম’ এরকম একটি আয়াত ফেলে দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ]
আর তাদের আলেম আবূ মানসুর আহমদ ইবন আলী ইবন আবি তালিব আত-তাবারসী; মৃত্যু: ৫৮৮ হি. (যিনি ইবন শাহরআশূব এর অন্যতম আলেম) তার ‘আল-ইহতিজাজ ‘আলা আহলিল-লাজাজ’ ( الاحتجاج على أهل اللجاج ) নামক গ্রন্থে বলেন যে, আলী রা. কোন এক নাস্তিককে উদ্দেশ্য করে (তিনি তার নাম উল্লেখ করেন নি) বলেন: আর তুমি যে আল্লাহ তা‘আলার বাণী
“তোমরা যদি আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে।”—(সূরা আন-নিসা: ৩) এ বাণীকে অস্বীকার করে আমার উপর তোমার বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছ, একথা বলে যে, ‘নারীদেরকে বিবাহ করা ইয়াতীমের প্রতি ন্যায়পরায়ণতার লক্ষণ নয়; আর সকল নারী ইয়াতীমও নয়।’ তার উত্তর আমি পূর্বেই বর্ণনা করেছিলাম যে, ইয়াতীমদের ব্যাপারে সম্বোধন এবং নারীদের বিবাহের মাঝে যা বলা হয়েছে কাহিনী কিংবা সম্বোধনরূপে, মুনাফিকগণ [আবূ মানসুর আল-তাবারসী মুনাফিক দ্বারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐসব সাহবীদেরকে বুঝিয়েছে, যারা আল-কুরআন সংকলন করেছেন। আর আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু’র তাঁর খিলাফতকালে অর্থ দিয়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। সুতরাং যদি এই মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যটি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র ভাষায় ‘আল-ইহতিজাজ ‘আলা আহলে আল-লাজাজ’ ( الاختجاج على أهل اللجاج ) নামক গ্রন্থে সত্য সত্যই আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র নিকট থেকে প্রকাশ পায়, তবে তাঁর পক্ষ থেকে ইসলামের খিয়ানত করা হয়েছে এইভাবে যে, তাঁর নিকট আল-কুরআনের নষ্ট হয়ে যাওয়া এক তৃতীয়াংশ বিদ্যমান থাকার পরেও তিনি তা প্রকাশ করেন নি; তার উপর আমল করেন নি এবং কমপক্ষে তাঁর খিলাফতকালে এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময় করার জন্য জনগণকে কোন আদেশও প্রদান করেন নি। আর এই কাজটি করতে সেখানে তাঁর কোন প্রতিবন্ধকতাও ছিল না। যদি বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয় যে, তিনি এই অনর্থক কথাটি বলেছেন, তবে তাঁর পক্ষ থেকে স্বজ্ঞানে ও স্বইচ্ছায় আল-কুরআনের এই পরিমাণ অংশ গোপন করাটা স্পষ্ট কুফরী বলে গণ্য হবে (যা একবারেই অসম্ভব)। সুতরাং এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, ‘আল-ইহতিজাজ ‘আলা আহলে আল-লাজাজ’ ( الاختجاج على أهل اللجاج ) নামক গ্রন্থের লেখক আবূ মানসুর আল-তাবারসী তার এই গ্রন্থের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহবীদেরকে গালি দেয়া ও তাঁদেরকে মুনাফিক বলে সম্বোধন করার পূর্বে স্বয়ং আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গালি দিয়েছে এবং তাঁকে খেয়ানত ও কুফরী করার অপরাধে অপরাধী করেছে (না‘উযুবিল্লাহ)।] আল-কুরআন থেকে তা বিলুপ্ত করে দিয়েছে; আর তার পরিমাণ হল আল-কুরআনের এক তৃতীয়াংশের বেশি!?” [নাউযু বিল্লাহ]
[আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর মিথ্যারোপ] মূলত এটা হচ্ছে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র উপর তাদের মিথ্যারোপের অন্যতম উদাহরণ। কারণ; আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর খিলাফতকালে মুসলিম সম্প্রদায়ের নিকট আল-কুরআনের [তাদের ধারণামতে] বিলুপ্ত এক তৃতীয়াংশ এই স্থান থেকে বাদ দেয়া হয়েছে এমন কথা প্রকাশ করেন নি। আর তিনি মুসলিম সম্প্রদায়কে তা প্রতিস্থাপন, তার নির্দেশনার দ্বারা হিদায়াত গ্রহণ ও তার বিধানসমূহের উপর আমল করার নির্দেশও প্রদান করেন নি। [সুতরাং এভাবে তারা আলী রাদিয়াল্লাহুকেও দোষী সাব্যস্ত করেছে]
যখন ‘ফাসলুল খিতাব ফি ইসবাতে তাহরীফে কিতাবে রাব্বিল আরবাব’ ( فصل الخطاب في إثبات تحريف كتاب رب الأرباب ) নামক গ্রন্থটি আশি বছরেরও অধিককাল পূর্বে ইরান, নাজাফ ও অন্যান্য দেশের শী‘আ ও অন্যানদের মধ্যে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয়— আর তাতে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর বাছাইকৃত সৃষ্টির (বান্দাদের) উপর এই ধরনের মিথ্যারোপের শত শত দৃষ্টান্তে ভরা ছিল— তখন ইসলামের শত্রু মিশনারিরা একে সুসংবাদ মনে করে এবং তারা তাদের ভাষায় তা অনুবাদ করে। এই বিষয়টি মুহাম্মদ মাহাদী আল-আসফাহানী আল-কাযিমী তার ‘আহসানুল ওয়দি‘আহ’ ( أحسن الوديعة ) নামক গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৯০ পৃষ্ঠায় আলোচনা করেছেন। আর এই গ্রন্থটি তাদের ‘রওজাত আল-জান্নাত’ ( روضات الجنات ) নামক কিতাবের পরিশিষ্ট।
তাছাড়াও এ আল-কুরআনকে বিকৃত দাবী করে তাদের ‘বুখারী’ বলে খ্যাত আল-কুলাইনীর ‘আল-কাফী’ গ্রন্থে স্পষ্ট দু’টি বক্তব্য এসেছে, তন্মধ্যে ১২৭৮ হিজরিতে ইরান থেকে প্রকাশিত ঐ গ্রন্থের ৫৪ পৃষ্ঠায় প্রথম [১৩৮১ হি. এর সংস্করণে এর পৃষ্ঠা নং ২২৮।] বক্তব্যটি বিদ্যমান; তা হল:
“জাবির আল-জু‘ফী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ জাফর আ.-কে বলতে শুনেছি: কোন মিথ্যাবাদী ছাড়া মানুষের মধ্য থেকে কেউ দাবি করে বলতে পারবে না যে, কুরআন যেভাবে নাযিল হয়েছে, ঠিক সেভাবে সে তা সম্পূর্ণভাবে সংকলন করতে সক্ষম হয়েছে। কেবলমাত্র আলী ইবন আবি তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর পরবর্তী ইমামগণই শুধু কুরআন যেভাবে নাযিল হয়েছে, ঠিক সেভাবে তা সংকলন ও সংরক্ষণ (হিফ্য) করেছেন।”
প্রত্যেক শী‘আই ‘আল-কাফী’ নামক এই গ্রন্থটি পাঠ করে, যা তাদের নিকট তেমন মর্যাদাসম্পন্ন, আমাদের নিকট সহীহ বুখারীর মর্যাদা যেমন। আর তারা প্রত্যেকেই এই বক্তব্যটিতে বিশ্বাস করে।
আর আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীগণ বলি: নিশ্চয় শী‘আগণ আল-বাকের আবূ জাফর রাহেমাহুল্লাহ-এর উপর মিথ্যারোপ করেছে; তার দলীল হল, সাইয়্যেদুনা আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর খিলাফতকালীন সময়ে কুফাতে আল-কুরআনের ঐ মুসহাফ অনুযায়ীই আমল করতেন, যার সংকলন ও বিভিন্ন শহর-নগরে প্রচার আল্লাহর অনুগ্রহে তাঁর ভাই সাইয়্যেদুনা ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু সম্পন্ন করেছেন; আর যে কুরআনের উপর আমল করা সর্বযুগে, এখন পর্যন্ত; এমন কি কিয়ামত পর্যন্ত তিনি সার্বজনীন করেছেন। যদি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু’র নিকট মুসহাফে ওসমানী ছাড়া আরও কোন মুসহাফ থাকত— আর তিনি ছিলেন খলিফা, শাসক; তার প্রশাসনিক সীমানায় কেউ তার বিরোধিতাকারী নেই— তবে তিনি তার উপর আমল করতেন এবং মুসলিম সম্প্রদায়কেও তা সার্বজনীন করা ও তার উপর আমল করার নির্দেশ দিতেন। তাছাড়া যদি তাঁর নিকট মুসহাফে ওসমানী ছাড়া আরও কোন মুসহাফ থাকত এবং তিনি তা মুসলিম সম্প্রদায় থেকে গোপন করতেন, তবে তিনি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও ইসলামী দীনের খিয়ানতকারী বলে সাব্যস্ত হতেন (না‘উযুবিল্লাহ)!!
আর জাবির আল-জু‘ফী; যিনি বলেন যে, তিনি এই নোংরা কথাটি ইমাম আবূ জাফর মুহাম্মদ আল-বাকেরের নিকট থেকে শুনেছেন; যদিও এ জাবের আল-জু‘ফী লোকটি তাদের নিকট বিশ্বস্ত ব্যক্তি, তবে মুসলিম ইমামদের নিকট সে একজন মিথ্যাবাদী বলে পরিচিত। আবূ ইয়াহইয়া আল-হিম্মানী বলেন: আমি ইমাম আবূ হানিফা রাহেমাহুল্লাহ্-কে বলতে শুনেছি: “আমি যাদেরকে দেখেছি, তাদের মধ্যে ‘আতা’র চেয়ে উত্তম এবং জাবির আল-জু‘ফী’র চেয়ে মিথ্যাবাদী আর কাউকে দেখি নি।”—(দ্র. আল-আযহার ম্যাগাজিনে আমাদের প্রবন্ধ, ১৩৭২ হি., পৃ.৩০৭)।
‘আল-কাফী’ নামক গ্রন্থে আবূ জাফর থেকে বর্ণিত এই প্রথম বক্তব্যটির চেয়ে দ্বিতীয় বক্তব্যটি আরও বেশি মিথ্যা ও বানোয়াট, যা তার ছেলে জাফর আস-সাদিকের নামে মিথ্যারোপ করে বর্ণিত হয়েছে। আর এই বক্তব্যটিও ১২৭৮ হিজরিতে ইরান থেকে প্রকাশিত তাদের বুখারী ‘আল-কাফী’ গ্রন্থের ৫৭ পৃষ্ঠায় [১৩৮১ হি. সনের সংস্করণে যার পৃষ্ঠা নং ২৩৮।] বিদ্যমান আছে; আর তা হল:
“আবূ বাসির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি আবূ আবদুল্লাহর নিকট হাযির হলাম... আবূ আবদুল্লাহ আর্থাৎ জাফর আল-সাদিক বলেন: আমাদের নিকট মুসহাফে ফাতিমা আ. রয়েছে ... তিনি বলেন: আমি বললাম, মুসহাফে ফাতিমা কী? তিনি বলেন: এটা এমন এক মুসহাফ, যার মধ্যে তোমাদের এই কুরআনের মত তিনটি কুরআন রয়েছে; আল্লাহর কসম! এর মধ্যে তোমাদের কুরআন থেকে এক হরফও নেই।”
এই হল শী‘আদের মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যের নমুনা, যা প্রাচীনকাল থেকে আহলে বাইতের ইমামদের নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে; আর এগুলো এক হাজারেরও বেশি বছর পূর্বে মুহাম্মদ ইবন ইয়াকুব আল-কুলাইনী আর-রাযী “আল-কাফী” নামক কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর এই বক্তব্যগুলো আরও পুরানো। কারণ, কুলাইনী এগুলো তার পূর্ববর্তী শী‘আ মতবাদের কুশলী মিথ্যাবাদী পণ্ডিতদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছে!
আর যেদিন স্পেন আরব ও ইসলামী শক্তির অধীনে ছিল, তখনকার সময়ে আবূ মুহাম্মদ ইবন হায্ম সেখানকার পাদ্রীদের সাথে তাদের কিতাবে উল্লেখিত নস বা বক্তব্যগুলো নিয়ে বিতর্কে লিপ্ত হন এবং তিনি তাদের উদ্দেশ্য যুক্তি পেশ করেন যে, তাদের নসসমূহ বিকৃত, বরং সেগুলোর আসল সংস্করণ পর্যন্ত হারিয়ে-যাওয়া; তখন ঐসব পাদ্রীগণও যুক্তি পেশ করে বলেন যে, শী‘আগণ বলে আল-কুরআনও বিকৃত। ইবন হাযেম তাদেরকে জওয়াব দিয়ে বলেন যে, শী‘আদের দাবি আল-কুরআন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দলীল হতে পারে না। কারণ, শী‘আগণ মুসলিম সম্প্রদায়েরই অন্তর্ভুক্ত নয়।—দ্র. ইবন হায্ম, ‘আল-ফাসলু ফিল-মিলাল ওয়ান-নিহাল’ ( الفصل في الملل و النحل ), ২য় খণ্ড, পৃ.৭৮ এবং ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮২, প্রথম প্রকাশ, কায়রো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/701/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।