HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

সালাত আদায়ের পদ্ধতি

লেখকঃ ড. সায়িদ ইবন আলী ইবন ওহাফ আল-কাহতানী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সালাত আদায়ের পদ্ধতি

ড. সায়িদ ইবন আলী ইবন ওহাফ আল-কাহতানী

অনুবাদ: সানাউল্লাহ নজির আহমদ

সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া

ড. মোঃ আব্দুল কাদের

কভার পেইজ থেকে
প্রতিটি মুসলিম জানে যে, আল্লাহর দীন ইসলাম ও তাঁর শরী‘আতে সালাত বা নামাযে কী মর্যাদা রয়েছে। এটি ইসলামের মূল স্তম্ভ, ঈমান ও কুফুরীর মধ্যে পার্থক্যকারী। এ বইয়ে তাকবীর থেকে আরম্ভ করে সালাম পর্যন্ত সালাত আদায়ের সঠিক পদ্ধতি সংক্ষিপ্তভাবে কুরআন ও হাদীসের আলোকে বর্ণনা করা হয়েছে।

ভূমিকা
নিশ্চয় সকল প্রশংসার মালিক আল্লাহ তাআলা, আমরা তার প্রশংসা করি, তার নিকট সাহায্য চাই, তার নিকট ইস্তেগফার করি। আমরা আমাদের প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও কু-কর্মের বদ আছর থেকে তার নিকট চাই। তিনি যাকে হিদায়াত করেন, তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না, আর যাকে তিনি গোমরাহ করেন, তাকে কেউ সুপথ দেখাতে পারে না। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি এক-তার কোনো শরীক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ তার ওপর এবং তার বংশধর ও সাহাবীদের ওপর এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা তাদের সুন্দরভাবে অনুসরণ করবে, তাদের সকলের ওপর অসংখ্য-অগনন দরুদ ও সালাম বর্ষণ করুন।

অতঃপর.... ‘সিফাতুস সালাত’ তথা সালাতের নিয়ম-পদ্ধতি সংক্রান্ত এটা একটা ছোট পুস্তিকা, এতে আমি তাকবীর থেকে আরম্ভ করে সালাম পর্যন্ত কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে সালাতের নিয়ম-পদ্ধতি বর্ণনা করেছি। এ পুস্তিকা লেখার ক্ষেত্রে আমি আমাদের শাইখ আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায-এর দরস ও তাকরীর থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি। আল্লাহ তাকে জান্নাতে সুউচ্চ স্থান দান করুন।

দো‘আ করছি আল্লাহ আমাদের এ ক্ষুদ্র আমলকে বরকতময় করুন এবং একে একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্য কবুল করুন। এর দ্বারা আমাকে উপকৃত করুন জীবনে ও মরণে এবং প্রত্যেক পাঠককে। তিনি দো‘আ কবুলকারী ও মনোবাঞ্চনা পূর্ণকারী।

লেখক

শুক্রবারের প্রথম প্রহর

১৮/০৮/১৪২০হি.

সালাত আদায়ের পদ্ধতি
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে সালাত আদায় করেছেন ঠিক সেভাবে সালাত করাই সালাতের বিশুদ্ধ পদ্ধতি। মালেক ইবন হুয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

... صلوا كما رأيتموني أصلي .

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখ, সেভাবে সালাত আদায় কর”। [সহীহ বুখারী, কিতাবুল আযান, হাদীস নং ৬৩১)] তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ন্যায় যে সালাত আদায় করতে চায়, তার উচিৎ এ পুস্তকে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে সালাত আদায় করা:

১. পরিপূর্ণরূপে অযু করা, যেরূপ আল্লাহ তা‘আলা তার বাণীতে নির্দেশ দিয়েছেন:
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ إِذَا قُمۡتُمۡ إِلَى ٱلصَّلَوٰةِ فَٱغۡسِلُواْ وُجُوهَكُمۡ وَأَيۡدِيَكُمۡ إِلَى ٱلۡمَرَافِقِ وَٱمۡسَحُواْ بِرُءُوسِكُمۡ وَأَرۡجُلَكُمۡ إِلَى ٱلۡكَعۡبَيۡنِۚ وَإِن كُنتُمۡ جُنُبٗا فَٱطَّهَّرُواْۚ وَإِن كُنتُم مَّرۡضَىٰٓ أَوۡ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوۡ جَآءَ أَحَدٞ مِّنكُم مِّنَ ٱلۡغَآئِطِ أَوۡ لَٰمَسۡتُمُ ٱلنِّسَآءَ فَلَمۡ تَجِدُواْ مَآءٗ فَتَيَمَّمُواْ صَعِيدٗا طَيِّبٗا فَٱمۡسَحُواْ بِوُجُوهِكُمۡ وَأَيۡدِيكُم مِّنۡهُۚ مَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيَجۡعَلَ عَلَيۡكُم مِّنۡ حَرَجٖ وَلَٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمۡ وَلِيُتِمَّ نِعۡمَتَهُۥ عَلَيۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَشۡكُرُونَ ٦﴾ [ سورة المائدة : 6]

“হে মুমিগণ, যখন তোমরা সালাতে দণ্ডায়মান হতে চাও, তখন তোমাদের মুখ ও কনুই পর্যন্ত হাত ধৌত কর, মাথা মাসেহ কর এবং টাকনু পর্যন্ত পা (ধৌত কর)। আর যদি তোমরা অপবিত্র থাক, তবে ভালোভাবে পবিত্র হও। আর যদি অসুস্থ হও কিংবা সফরে থাক অথবা যদি তোমাদের কেউ পায়খানা থেকে আসে অথবা তোমরা স্ত্রী সহবাস কর অতঃপর পানি না পাও, তবে পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর। সুতরাং তোমাদের মুখ ও হাত দ্বারা মাসেহ কর। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সমস্যা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি চান তোমাদের পবিত্র করতে এবং তার নিআমত তোমাদের ওপর পূর্ণ করতে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন কর”। [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৬]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا تقبل صلاة بغير طهور، ولا صدقة من غلول»

“পবিত্রতা ব্যতীত সালাত কুবল করা হয় না এবং খিয়ানতের সদকাও কবুল করা হয় না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২২৪।] অতএব, সালাত আরম্ভ করার পূর্বে প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্য জরুরি পরিপূর্ণরূপে পবিত্রতা অর্জন করা।

২. কিবলার দিকে মুখ করে দাঁড়ানো, অর্থাৎ মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবা ঘর সম্মুখে রেখে দাঁড়াবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ ١٤٤﴾ [ البقرة :144]

“আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব, আমরা অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও। আর নিশ্চয় যারা কিতাবপ্রাপ্ত হয়েছে, তারা অবশ্যই জানে যে, তা তাদের রবের পক্ষ থেকে সত্য এবং তারা যা করে, সে ব্যাপারে আল্লাহ গাফিল নন”। [সূরা আর-বাকারাহ, আয়াত: ১৪৪]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, ভুল নিয়মে সালাত আদায়কারীর ঘটনায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إذا قمت إلى الصلاة فأسبغ الوضوء ثم استقبل القبلة ...».

“যখন তুমি সালাতের জন্য দণ্ডায়মান হও, পরিপূর্ণরূপে অযু কর অতঃপর কিবলা মুখী হও...”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭।]

৩. সালাত আদায়কারী ইমাম বা মুনফারেদ যেই হোক, সামনে সুতরা রেখে দাঁড়াবে।
সুবরা ইবন মা‍‘বাদ জুহানি রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«ليستترْ أحدُكم في الصلاة ولو بسهمٍ»

“তীর বা বর্শা দিয়ে হলেও তোমাদের প্রত্যেকে যেন সালাতে সুতরা কায়েম করে”। [হাকেম: (১/২৫২); তাবরানী ফিল কাবীর: (৭/১১৪), হাদীস নং ৬৫৩৯); আহমদ: (৩/৪০৪); “মাজমাউজ জাওয়াদে” লিল হায়সামী: (২/৫৮)।] আবু জর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إذا قام أحدُكم يصلي فإنه يستره إذا كان بين يديه مثل مؤخرة الرَّحل،فإذا لم يكن بين يديه مثل مؤخرة الرحل فإنه يقطع صلاته : الحمار، والمرأة، والكلب الأسود» .

“যখন তোমাদের কেউ সালাত আদায়ের জন্য দণ্ডায়মান হয়, তখন তার সামনে উটের উপর আরোহী ব্যক্তির হেলান দেওয়ার জন্য পিছনে রাখা ঠিকার ন্যায় কোনো কিছু সুতরা হিসেবে রাখাই যথেষ্ট। কারণ, যদি অনুরূপ ঠিকা না থাকে, তাহলে তার সালাত গাধা, নারী ও কালো কুকুর ভঙ্গ করে দিতে পারে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১০।] সুতরার কাছাকাছি দাঁড়াবে ও তার নিকটবর্তী হয়ে সালাত আদায় করবে। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إذا صلى أحدُكم فليصلِّ إلى سترةٍ، وليدنُ منها» .

“তোমাদের কেউ যখন সালাত আদায় করে, সে যেন সুতরার দিকে ফিরে সালাত আদায় করে ও তার নিকটবর্তী হয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৬৯৮, আলবানী সহীহ আবু দাউদে (১/১৩৫) বলেন, হাদীসটি হাসান ও সহীহ। লেখক বলেন: আমি শোনেছি শাইখ ইবন বায রহ. ‘বুলুগুল মারাম’ এর (২৪৪) নং হাদীসের টিকায় বলেন: “এ হাদীসের সনদ খুবই সুন্দর, এ হাদীস দ্বারা সুতরা ও তার নিকটবর্তী হয়ে সালাত আদায়ের গুরুত্ব প্রমাণি হয়”।] সুতরা ও তার মাঝখানে একটি বকরি অতিক্রম করার জায়গা ফাঁকা রাখবে অথবা সাজদাহ’র জায়গা পরিমাণ খালি রাখবে। তিন হাতের অতিরিক্ত ফাঁকা রাখবে না। অনুরূপ দুই কাতারের মাঝেও এর বেশি ফাঁকা রাখবে না। সাহাল ইবন সা‘দ সায়েদি বর্ণনা করেন:

«كان بين مصلى رسول الله وبين الجدار ممر الشاة» .

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের জায়গা ও দেয়ালের মাঝে একটি বকরি অতিক্রম করার পরিমাণ জায়গা ফাঁকা ছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৬); সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৮); “সুবুলুস সালাম” লি সানআনী : (২/১৪৫)।] যদি কেউ তার সামনে থেকে অতিক্রম করতে চায়, তাকে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করবে, সে বিরত না হলে শক্তি দ্বারা তাকে প্রতিহত করবে। আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি:

«إذا صلى أحدكم إلى شيء يستره من الناس، فأراد أحد أن يجتاز بين يديه فليدفعْه، فإن أبى فليقاتلْه؛ فإنما هو شيطان» .

“কোনো ব্যক্তি যখন সুতরা নিয়ে সালাত আদায় করে, যে তাকে মানুষ থেকে আড়াল করে রাখে, অতঃপর কেউ যদি তার সামনে থেকে যেতে চায়, সে তাকে প্রতিহত করবে, সে বিরত না হলে তার সাথে যুদ্ধ করবে। কারণ সে শয়তান”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫০৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৫)] মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে, “কারণ তার সাথে শয়তান রয়েছে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৬, লেখক বলেন: আল্লামা ইবন বাযকে আমি “বুলুগুল মারাম” এর (২৪৮) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যখন কোন ব্যক্তি মুসল্লি ও তার সুতরার মধ্য দিয়ে যেতে চায়, তখন মুসল্লির জন্য বৈধ রয়েছে তাকে প্রতিহত করা। অন্যান্য হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, মুসল্লি তার সামনে দিয়ে অতিক্রমকারীকে বাঁধা দিবে, তার সামনে সুতরাং থাক বা না থাক, তবে দূর দিয়ে অতিক্রম করলে ভিন্ন কথা। আর অতিক্রমকারীকে সহজতর পদ্ধতি দ্বারা প্রতিরোধ করবে, যেমন উটের বাচ্চাকে প্রতিরোধ করা হয়”।]

মুসল্লির সামনে দিয়ে যাওয়া বৈধ নয়। আবু জুহাইম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لو يعلمُ المارُّ بين يدي المصلي ماذا عليه لكان أن يقف أربعين خيرًا له من أن يمرَّ بين يديه»

“মুসল্লির সামনে থেকে অতিক্রকারী ব্যক্তি যদি জানত, তার ওপর কি পরিমাণ পাপ হচ্ছে, তাহলে সামনে দিয়ে যাওয়ার চেয়ে চল্লিশ পর্যন্ত অপেক্ষা করা তার জন্য উত্তম ছিল”। এ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু নাদর বলেন, আমার মনে নেই তিনি কি বলেছেন: চল্লিশ দিন, অথবা চল্লিশ মাস অথবা চল্লিশ বছর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫১০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫০৭।]

ইমামের সুতরা তার পিছনে অবস্থানরত সকলের সুতরা হিসেবে যথেষ্ট। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাসের হাদীসে রয়েছে, তিনি একটি মাদী গাধার পিঠে চড়ে আগমন করেন, তখন সবেমাত্র তিনি সাবালক হয়েছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজে মিনায় দাঁড়িয়ে দেয়াল ব্যতীত মানুষদের নিয়ে সালাত আদায় করতে ছিলেন, ইবন আব্বাস প্রথম কাতারের কতক মুসল্লির সামনে দিয়ে গাধার পিঠে আরোহণ অবস্থায় অতিক্রম করেন, অতঃপর গাধার পিঠ থেকে নেমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে অন্যদের সাথে কাতারে শামিল হয়ে সালাত আদায় করেন। তার এ আচরণকে কেউ তিরষ্কার বা অপছন্দ করে নি। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৪৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫১৪।] আমি আমাদের শাইখ ইবন বায রহ.-কে বলতে শোনেছি: “এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ইমামের সুতরা মুক্তাতিদের সুতরাং হিসেবে গণ্য, অতএব ইমামের সামনে সুতরাং থাকলে মুক্তাতিদের সামনে দিয়ে অতিক্রম করা দোষণীয় নয়”। [সহীহ বুখারীর (৪৯৩) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় রিয়াদে অবস্থিত ‘জামে সারা’য় ১০/০৬/১৪১৯ হি. তারিখে আমি তার এ বক্তব্য শ্রবণ করি।]

৪. দাঁড়ানো অবস্থায় তাকবীরে তাহরীমা বলা।
মুসল্লী আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য যে নফল অথবা ফরয সালাত আদায়ের ইচ্ছা করেছে, অন্তরে তার নিয়ত করবে ও মুখে الله أكبر “আল্লাহু আকবার” বলবে এবং সাজদাহ’র জায়গায় দৃষ্টি রেখে হাতের আঙ্গুলসমূহ মিলিয়ে উভয় হাত কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত হাত উঠাবে। কারণ, ভুল পদ্ধতিতে সালাত আদায়কারীর হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

» إذا قمت إلى الصلاة فكبر «

“যখন তুমি সালাতের জন্য দাঁড়াও, তাকবীর বল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭।]

আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿وَقُومُواْ لِلَّهِ قَٰنِتِينَ ٢٣٨﴾ [ البقرة :238 ]

“এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে”। [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ২৩৮]

ইমরান ইবন হাসিন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«صلِّ قائمًا، فإن لم تستطعْ فقاعداً، فإن لم تستطع فعلى جَنْبٍ»

“দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর, যদি না পাড় তবে বসে সালাত আদায় কর, যদি না পাড় তবে কাত শুয়ে সালাত আদায় কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১১৭।] উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: «إنما الأعمال بالنيات» “নিশ্চয় নিয়তের ওপর আমল নির্ভরশীল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯০৭।]

নিয়ত মুখে উচ্চারণ করবে না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবায়ে কেরাম নিয়ত মুখে উচ্চারণ করেন নি। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, সালাত আরম্ভ করার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁধ বরাবর উভয় হাত উঠাতেন, যখন তিনি রুকুর জন্য তাকবীর বলতেন ও রুকু থেকে মাথা উঠাতেন অনুরূপ হাত উঠাতেন, তবে সাজদাহ থেকে মাথা উঠানোর সময় তিনি অনুরূপ করতেন না। অন্য বর্ণনায় আছে:

« وإذا قام من الركعتين رفع يديه»

“যখন তিনি দু’রাকাত পূর্ণ করে উঠতেন, উভয় হাত উঠাতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৫, ৭৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।]

মালিক ইবন হুয়াইরিস রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকবীর বলতেন, তখন তিনি উভয় কান বরাবর হাত উঠাতেন, যখন তিনি রুকু করতেন তখনও তিনি উভয় কান বরারব হাত উঠাতেন, রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে তিনি বলতেন: «سمع الله لمن حمده মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে: «حتى يحاذي بهما فروع أذنيه “তিনি উভয় হাত দু’ কানের লতি বরাবর করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯১।]

কখন উভয় হাত কান বা কাঁধ পর্যন্ত উঠানো হবে এ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো তিন প্রকার:

প্রথম প্রকার: এ প্রকার হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আগে হাত উঠিয়ে তাকবীর বলেছেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত:

«كان رسول الله إذا قام للصلاة رفع يديه حتى تكونا حذو منكبيه، ثم كبر»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন, উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন অতঃপর তাকবীর বলতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।]

আবু হুমাইদ সায়েদী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত:

«كان رسول الله إذا قام إلى الصلاة يرفع يديه حتى يُحاذيَ بهما منكبيه ثم يُكبِّر»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন তিনি উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন, অতঃপর তাকবীর বলতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯১।]

দ্বিতীয় প্রকার: এ প্রকারের হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলার পর হাত উঠাতেন। আবু কালাবা থেকে বর্ণিত, তিনি মালেক ইবন হুয়াইরিসকে দেখেছেন, তিনি সালাত আদায়ের সময় তাকবীর বলে অতঃপর উভয় হাত উঠাতেন... তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুরূপ করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯১।]

তৃতীয় প্রকার: এ প্রকারের হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, তিনি তাকবীরের সাথে হাত উঠিয়েছেন, তাকবীর শেষ হাত উঠানোও শেষ। আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাতে তাকবীর আরম্ভ করতে দেখেছি, তিনি তাকবীর বলার সময় উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠিয়েছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।]

অতএব, যে ব্যক্তি এসব পদ্ধতির যে কোনো একটির অনুসরণ করল, সে সুন্নতের ওপর আমল করল। [দেখুন: ফাতহুল বারি লি ইবন হাজার: (২/৩২৮); সুবুলুস সালাম: (২/২১৭)]

আর সাজদাহ’র জায়গায় দৃষ্টি রাখা, মাথা ঝুকিয়ে রাখা ও যমীনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করার প্রমাণ হচ্ছে বায়হাকি ও হাকেম বর্ণিত হাদীস, যার স্বপক্ষে রাসূলের দশজন সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে। [সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: (২/২৮৩), (৫/১৫৮); হাকেম: (১/৪৭৯), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। আহমদ: (২/২৯৩), আলবানী তার “সিফাতুস সালাত” গ্রন্থে অনুরূপ হাদীসকে সহীহ বলেছেন।]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لينتهين أقوام يرفعون أبصارهم إلى السماء في صلاتهم، أو لتُخْطَفَنَّ أبصارُهم» .

“যারা তাদের সালাতে আসমানের দিকে দৃষ্টি উঠায়, তারা অবশ্যই বিরত থাকবে অথবা তাদের দৃষ্টি হরণ করা হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪২৯।]

৫. উভয় হাত নিচে নামিয়ে বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের পিঠ-কব্জি-বাহুর উপর রাখা।
ওয়ায়েল ইবন হুজর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করেছি, তিনি বুকের উপর বাম হাতের উপরে ডান হাত রেখেছেন”। [সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (১/২৪৩), হাদীস নং: (৪৭৯), লেখক বলেন: আমি আল্লামা ইবন বায রহ.-কে বুলুগুল মারামের (২৯৩) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “ইমাম আহমদও কুবাইসা সূত্রে তার পিতার সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উভয় হাত বুকের উপর রাখতেন, এ হাদীসের সনদ হাসান”।] এ হাদীস রুকু থেকে উঠার পর দাঁড়ানো অবস্থাকেও শামিল করে। কারণ, ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসের অপর শব্দে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি: “যখন তিনি সালাতে দণ্ডায়মান থাকতেন, ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করতেন”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৮৮৭, আলবানী সুনান নাসায়িতে হাদীসটি সহীহ বলেছেন: (১/১৯৩)।] এ হাদীসে ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করা রয়েছে। অন্যান্য হাদীসে বুকের উপর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা রয়েছে। ইবন উসাইমীন রহ. বলেন, “এ দু’ অবস্থায় বৈধ: প্রথমতঃ ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করা। দ্বিতীয়তঃ ডান হাত বাম হাতের উপর রাখা”। [“শারহুল মুমতি”: (৩/৪৪)] সাহাল ইবন সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “মানুষদেরকে বলা হত, পুরুষ যেন সালাতে তার ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখে”। আবু হাযেম বলেন, এখান থেকে আমি নিশ্চিত যে, এটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪০।] আল্লামা ইবন বায রহ.-কে বলতে শোনেছি: “হতে পারে এটা আরেক প্রকার, আবার হতে পারে এর উদ্দেশ্য ওয়ায়েলের হাদীস অনুরূপ”। [বুলুগুল মারামের (২৯৩) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় আমি এ কথা শোনেছি।]

১০
৬. সালাত শুরু করার দো‘আ দ্বারা সালাত আরম্ভ করা। সালাত শুরু করার অনেক দো‘আ রয়েছে, সেখান থেকে যে কোনো একটি দো‘আ পড়া, তবে একাধিক দো‘আ একসাথে না পড়া, বরং এক এক সময় এক এক দো‘আ পড়া। সালাত আরম্ভ করার কতক দো‘আ:
এক. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকবীর বলে কিরাত আরম্ভ করার আগে কিছু সময় চুপ থাকতেন। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা-মাতা আপনার ওপর উৎসর্গ! আপনি তাকবীর ও কিরাতের মধ্যবর্তী সময়ে চুপ থেকে কী বলেন? তিনি বললেন: “আমি বলি:

«اللهم باعِدْ بيني وبين خَطايايَ كما باعَدْتَ بين المشرق والمغرب، اللهم نَقِّني من خَطايايَ كما يُنقَّى الثوبُ الأبيضُ من الدَّنس، اللهم اغْسلْني من خَطايايَ بالثلج والماء والبَرَدِ» .

“হে আল্লাহ তুমি আমার ও আমার পাপের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি কর, যেমন দূরত্ব সৃষ্টি করে দিয়েছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে আমার পাপ থেকে পবিত্র কর, যেমন পবিত্র করা হয় সাদা কাপড় ময়লা থেকে। হে আল্লাহ আমাকে আমার পাপ থেকে ধৌত কর বরফ, পানি ও ডাণ্ডা দ্বারা”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৮।]

দুই. সালাত আদায়কারী ইচ্ছা করলে নিম্নের দো‘আও পড়তে পারে:

«سبحانك اللهم وبحمدك، وتبارك اسمك، وتعالى جدُّك، ولا إلهَ غيرُك» .

“হে আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ও প্রশংসার মাধ্যমে তোমার তাসবীহ পাঠ করছি, তোমার নাম বরকতময়, তোমার সম্মান সুমহান, তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৯; মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং ২৫৫৫-২৫৫৭; ইবন আবি শায়বাহ: (১/২৩০), (২/৫৩৬); ইবন খুজাইমাহ: (৪৭১); হাকেম: (১/২৩৫), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। ইবন তাইমিয়া বলেন: “উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এ দো‘আটি উচ্চস্বরে পড়ে মানুষদের শিক্ষা দিতেন। যদি এটা স্বীকৃত সুন্নত না হত, তিনি তা করতেন না, অন্যান্য মুসলিমরাও তা মেনে নিতেন না”। দেখুন: কায়েদা ফিল ইস্তেফতাহ: (পৃ. ৩১), যাদুল মায়াদ লি ইবন কাইয়্যেম: (১/২০২-২০৬), ইমাম আহমদ দশটি কারণে সালাতের শুরুতে উমার থেকে বর্ণিত হাদীসটি গ্রহণ করেছেন। দেখুন: যাদুল মা‘য়াদ: (১/২০৫), লেখক বলেন: আমি ইমাম আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে “রাওজুল মুরবি” (২/২৩) গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদীসটি এক দল সাহাবী থেকে বর্ণিত”। আমি (লেখক) বলছি: এ হাদীসটি আবু বকর, উমার, উসমান, আয়েশা, আনাস, আবু সাঈদ ও আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বর্ণনা করেছেন, এ দো‘আর মাধ্যমে ওমর, আবু বকর ও উসমান তাদের সালাত আরম্ভ করতেন। দেখুন: আল-মুনতাকা মা‘আ নাইলুল আওতার”: (১/৭৫৬)।]

তিন. সালাত আদায়কারী ইচ্ছা করলে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত দো‘আও পড়তে পারে, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, বলতেন:

«وجهت وجهي للذي فطر السموات والأرض حنيفًا مسلمًا وما أنا من المشركين، إن صلاتي ونُسُكي، ومحياي، ومماتي لله رب العالمين، لا شريك له وبذلك أمرت وأنا من المسلمين، اللهم أنت الملك لا إله إلا أنت، أنت ربي وأنا عبدك، ظلمت نفسي واعترفت بذنبي فاغفر لي ذنوبي جميعًا، إنه لا يغفر الذنوب إلا أنت، واهدني لأحسن الأخلاق لا يهدي لأحسنها إلا أنت، واصرف عني سيئها لا يصرف عني سيئها إلا أنت، لبيك، وسعديك، والخير كله بيديك، والشر ليس إليك، أنا بك وإليك، تباركت وتعاليت، أستغفرك وأتوب إليك» .

“আমি একনিষ্ঠভাবে আত্মসমর্পণ করলাম মহান আল্লাহর পানে, যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়। নিশ্চয় আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ একমাত্র দু’জাহানের রব আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিবেদিত, তার কোনো শরীক নেই, আমাকে এরই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত। হে আল্লাহ তুমিই মালিক, তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তুমি আমার রব, আমি তোমার বান্দা, আমি আমার নফসের ওপর যুলুম করেছি, আমি আমার অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব, আমার সকল পাপ মোচন কর। নিশ্চয় তুমি ব্যতীত কেউ পাপ মোচন করতে সক্ষম নয়। আমাকে উত্তম আদর্শের দীক্ষা দান কর, যার দীক্ষা একমাত্র তুমি ব্যতীত কেউ দিতে সক্ষম নয়। তুমি আমার নিকট থেকে বদ আখলাক দূরীভূত কর, তুমি ব্যতীত কেউ তা দূরীভূত করতে সক্ষম নয়। আমি তোমার দরবারে হাযির, তুমি কল্যাণময়, সকল কল্যাণ তোমার হাতে, অকল্যাণ তোমার পক্ষ থেকে নয়, আমি তোমার ওপর সোপর্দ এবং তোমার নিকটই প্রত্যাবর্তন করব। তুমি বরকতময় ও মহান। আমি তোমার নিকট ইস্তেগফার করছি এবং তোমার নিকটই তাওবা করছি”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭১।] সালাত আদায়কারী এ ছাড়া আরো অন্যান্য দো‘আ পড়তে পারেন, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। [ইবন তাইমিয়া রহ. “কায়েদাহ ফি আনওয়ায়িল ইস্তেফতাহ” (পৃ. ৩১) গ্রন্থে উল্লেখ করেন: সালাত আরম্ভ করার দো‘আ «سبحانك اللهم বা «وجهت وجهي বা এ ধরণের অন্য কোনো দো‘আর সাথে খাস নয়, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্নিত যে কোন দো‘আর মাধ্যমেই সালাত আরম্ভ করা যায়, তবে কোনটি পড়া বেশি উত্তম এটা প্রমাণিত হয় অন্য দলিলের ভিত্তিতে। আমি (লেখক) আল্লামা আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে “বুলুগুল মারাম” এর (২৮৭) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “সালাত আরম্ভ করার একটি দো‘আই যথেষ্ট, একাধিক দো‘আ এক সাথে পড়বে না, নফল সালাতে যে দো‘আ পড়া বৈধ, ফরয সালাতেও তা পড়া বৈধ, তবে যেসব দো‘আ লম্বা তা রাতের সালাতে পড়াই উত্তম”। আমরা এখানে সালাত আরম্ভ করার আরো কিছু দো‘আ উল্লেখ করছি:চার. আব্দুর রহমান ইবন আউফ বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করি, কোন দো‘আর মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত আরম্ভ করতেন? তিনি বলেন: তিনি যখন রাতে সালাতের জন্য উঠতেন, তখন তিনি নিম্নের দো‘আ দ্বারা সালাত আরম্ভ করতেন: «اللهم ربَّ جبرائيل وميكائيل وإسرافيل،فاطر السموات والأرض، عالم الغيب والشهادة، أنت تحكم بين عبادك فيما كانوا فيه يختلفون، اهدني لما اختلف فيه من الحق بإذنك إنك تهدي من تشاء إلى صراط مستقيم» .“হে আল্লাহ তুমি জিবরাঈল, মিকাঈল ও ইসলাফিলের রব, আসমান ও যমীন সৃষ্টিকারী, দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানের অধিকারী, তুমিই বান্দাদের বিতর্কিত বিষয়ে ফয়সালা প্রদানকারী। মানুষের বিতর্কিত বিষয়ে তুমি আমাকে সঠিক পথের দিশা দান করুন, নিশ্চয় তুমি যাকে ইচ্ছা কর সঠিক পথের দিশা প্রদান কর”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭১)।পাঁচ. আনাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি সালাতের কাতারে অনুপ্রবেশ করে, যখন নিশ্বাস তাকে কাবু করে ফেলেছিল, সে বলে: «الحمد لله حمدًا كثيرًا طيبًا مباركًا فيه» “আল্লাহর জন্য অধিক, পবিত্র ও বরকতময় প্রশংসা”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “আমি দেখেছি বারো জন ফেরেশতা এর সাওয়াব উঠিয়ে নেওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে”। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬০০)।ছয়. ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথে সালাত আদায় করতেছিলাম, আমাদের থেকে একজন বলল: «الله أكبر كبيرًا، والحمد لله كثيرًا، وسبحان الله بكرة وأصيلاً» “আল্লাহ মহান, তার জন্য অগণিত প্রশংসা এবং সকাল-সন্ধ্যায় তারই পবিত্রতা”। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন “এ দো‘আ শোনে আমি আশ্চর্য হলাম, এর জন্য আসমানের দ্বার খুলে দেওয়া হয়েছে”।সাত. আসেম ইবন হুমাইদ বলেন, আমি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে জিজ্ঞাসা করেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাত কিসের মাধ্যমে আরম্ভ করতেন? তিনি বলেন: তুমি আমাকে এমন একটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছ, যার সম্পর্কে তোমার পূর্বে কেউ আমাকে জিজ্ঞাসা করে নি, তার অভ্যাস ছিল দাঁড়িয়ে, “দশবার তাকবীর বলতেন, দশবার তাহমীদ তথা আল-হাদুল্লিাহ বলতেন, দশবার তাসবহ তথা সুবহানাল্লাহ বলতেন, দশবার তাহলীল তথা লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার বলতেন, দশবার ইস্তেগফার বলতেন, অতঃপর বলতেন: اللهم اغفر لي، واهدني، وارزقني، وعافني، أعوذ بالله من ضيق المقام يوم القيامة» .“হে আল্লাহ তুমি আমাকে ক্ষমা কর, আমাকে হিদায়াত কর, আমাকে রিযিক দান কর, আমাকে আফিয়াত তথা নিরাপত্তা দান কর, আমি আল্লাহর নিকট কিয়ামতের দিন সংকীর্ণতা থেকে পানাহ চাচ্ছি”। (আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৬৬; নাসাঈ, হাদীস নং ১৬১৭; আহমদ: (৬/১৪৩)। এ হাদীসটি আলবানী “সিফাতুস সালাত” (৮৯) ও “সহীহ আবু দাউদে” (১/১৪৬) সহীহ বলেছেন।আট. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুতের জন্য উঠে বলতেন: «اللهم لك الحمد، أنت نور السموات والأرض ومن فيهن، ولك الحمد أنت قيِّم السموات والأرض ومن فيهن [ ولك الحمد أنت رب السموات والأرض ومن فيهن ] [ ولك الحمد لك ملك السموات والأرض ومن فيهن ] [ ولك الحمد أنت ملك السموات والأرض ] [ ولك الحمد ] [ أنت الحقُّ، ووعدك الحق، وقولك الحق، ولقاؤك الحق، والجنة حق، والنار حق، والنبيون حق، ومحمد حق، والساعة حق ] [ اللهم لك أسلمت، وعليك توكلت، وبك آمنت، وإليك أنبت، وبك خاصمت، وإليك حاكمت، فاغفر لي ما قدَّمتُ، وما أخَّرْتُ، وما أسررْتُ، وما أعلنتُ ] [ أنت المقدِّم، وأنت المؤخِّر، لا إله إلا أنت ] [ أنت إلهي لا إله إلا أنت ]،“হে আল্লাহ সকল প্রশংসা তোমার জন্য, তুমি আসমান-যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী নূর, তোমার জন্যই সকল প্রশংসা, তুমি আসমান-যমীন ও উভয়ের মধ্যে বিদ্যমান সকল বস্তুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী, তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি আসমান-যমীন ও উভয়ের মধ্যবর্তী সব কিছুর মালিক, তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমি আসমান ও যমীনের রব, তোমার জন্য সকল প্রশংসা, তুমিই সত্য, তোমার ওয়াদা সত্য, তোমার কথা সত্য, তোমার সাক্ষাত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মাদ সত্য, কিয়ামত সত্য, হে আল্লাহ তোমার নিকট আত্ম সমর্পণ করলাম, তোমার উপর তাওয়াক্কুল করলাম, তোমার ওপরই ঈমান আনয়ন করলাম, তোমার দিকেই মনোনিবেশ করলাম, তোমার মাধ্যমেই আমি তর্ক করি এবং তোমার নিকটই আমি ফয়সালা চাই। অতএব, তুমি আমার অগ্র-পশ্চাৎ, দৃশ্য ও অদৃশ্য সকল পাপ মোচন কর, তুমিই আদি এবং তুমিই অন্ত। তুমি আমার ইলাহ, তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩১৭, ৭৩৮৫, ৭৪৪২, ৭৪৯৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৬৯। আরো দো‘আর জন্য দেখুন: “যাদুল মা‘য়াদ”: (১/২০২-২০৭)।]

১১
৭. অতঃপর সালাত আদায়কারী বলবে: «أعوذ بالله من الشيطان الرجيم»
কারণ, আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿َإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨﴾ [ النحل :98 ]

“সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাও”। [সূরা আন-নাহল, আয়াত: ৯৮] অথবা বলবে:

«أعوذ بالله السميع العليم من الشيطان الرجيم، من همزه، ونفخه، ونفثه» .

“আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান থেকে পানাহ চাই, তার আছর থেকে, তার অহঙ্কার থেকে ও তার খারাপ অনুভূতি থেকে”। [আহমদ: (৩/৫০); আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৭৫; তিরমিযী, হাদীস নং ২৪২, ইত্যাদি।]

১২
৮. আস্তে بسم الله الرحمن الرحيم বলা।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবু বকর, উমার ও উসমানের পিছনে সালাত আদায় করেছি, তাদের কেউ বিসমিল্লাহ জোরে বলেন নি”। [আহমদ: (৩/২৬৪); নাসাঈ, হাদীস নং ৯০৭; ইবন খুজাইমাহ: (১/২৪৯), হাদীস নং ৪৯৫। আলবানী “সহীহ নাসাঈতে”: (১/১৯৭) হাদীসটি সহীহ বলেছেন।] বিসমিল্লাহ একটি সম্পূর্ণ আয়াত। [লেখক বলেন : আমি আব্দুল আযীয ইবন বায রহ.-কে “বুলুগুল মারাম” গ্রন্থের (২৯৭-৩০০) নং হাদীসের ব্যাখ্যা প্রদানের সময় বলতে শোনেছি: “বিসমিল্লাহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আয়াত, এটা ফাতিহা কিংবা অন্য কোনো সূরার অংশ নয়, দুই সূরার মাঝখাকে পৃথক করার জন্য আল্লাহ এ সূরা আয়াত করেছেন, তবে এটা সূরা নামলের একটি আয়াত। এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। আর সূরা ফাতিহার সপ্তম আয়াত হচ্ছে: غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ]

১৩
৯. সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত করা:
﴿ٱلۡحَمۡدُ لِلَّهِ رَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ١ ٱلرَّحۡمَٰنِ ٱلرَّحِيمِ٢ مَٰلِكِ يَوۡمِ ٱلدِّينِ٣ إِيَّاكَ نَعۡبُدُ وَإِيَّاكَ نَسۡتَعِينُ٤ هۡدِنَا ٱلصِّرَٰطَ ٱلۡمُسۡتَقِيمَ٥ صِرَٰطَ ٱلَّذِينَ أَنۡعَمۡتَ عَلَيۡهِمۡ٦ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ٧﴾ [ الفاتحة :1-7 ]

কারণ, উবাদা ইবন সাবেদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لا صلاة لمن لم يقرأ بفاتحة الكتاب» .

“যে ফাতিহা পড়ল না, তার কোনো সালাত নেই”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৪।]

প্রত্যেক মুসল্লির সূরা ফাতিহা পড়া ওয়াজিব, জেহরী বা সিররী উভয় সালাতের মুক্তাদিগণ এ নিদের্শের অন্তর্ভুক্ত। কারণ, উবাদা থেকে বর্ণিত পূর্বের মারফূ হাদীসে রয়েছে:

«لعلكم تقرؤون خلف إمامكم ) قلنا : نعم، هذًّا يا رسول الله : ، قال : لا تفعلوا إلا بفاتحة الكتاب؛ فإنه لا صلاةَ لمن لم يقرأْ بها»

“হয়তো তোমরা ইমামের পিছনে তিলাওয়াত কর। আমরা বললাম: হ্যাঁ, দ্রুত পড়ি হে আল্লাহর রাসূল। তিনি বললেন: إلا بفاتحة الكتاب؛ فإنه لا صلاةَ لمن لم يقرأْ بها ফাতিহা ব্যতীত অন্য কিছু পড় না। কারণ, যে ফাতিহা পড়বে না তার কোনো সালাত নেই”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮২৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৩১১; আহমদ: (১/৩২২); ইবন হিব্বান: (৩/১৩৭)। হাফেয ইবন হাজার ‘তালখিসুল হাবির’ (১/২৩১) গ্রন্থে বলেন: “এ হাদীসটি আবু দাউদ, দারাকুতনী, তিরমিযী, ইবন হিব্বান, হাকেম ও বায়হাকী সহীহ বলেছেন”।]

মুহাম্মাদ ইবন আবি আয়েশা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জনৈক সাহাবী থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«لعلكم تقرؤون والإمام يقرأ»؟

“খুব সম্ভব ইমামের তিলাওয়াত করার সময় তোমরাও তিলাওয়াত কর”। তারা বলল: আমরা এরূপ করি। তিনি বললেন:

«لا، إلا أن يقرأ أحدكم بفاتحة الكتاب»

“এরূপ কর না, তবে তোমাদের কেউ ফাতিহা পড়লে ভিন্ন কথা”। [আমহদ: (৫/৪১০), ইবন হাজার ‘তালখিুসুল হাবির’: (১/২৩১) গ্রন্থে বলেন: “এ হাদীসের সনদ হাসান”।]

তবে যে মসবুক ইমামকে রুকু অবস্থায় পায় তার থেকে ফাতিহা পড়ার আবশ্যকতা উঠে যাবে। কারণ আবু বকরার হাদীসে রয়েছে, তিনি যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট পৌছেন, তখন তিনি রুকু অবস্থায় ছিলেন, আবু বকরা কাতারে শামিল না হয়েই রুকু করেন, এ ঘটনা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললে, তিনি বলেন, “আল্লাহ তোমার আগ্রহ বাড়িয়ে দিন, তবে এরূপ কখনো কর না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৩।] এখানে লক্ষ্য করছি, সে যে রাকাতের রুকু পেয়েছে, সে রাকাতের কিরাত তাকে কাজা করার নির্দেশ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দেন নি, যদি কিরাতবিহীন সে রাকাত অশুদ্ধ হত, তবে অবশ্যই রাসূলুল্লাহ তাকে পুনরায় তা আদায় করার নির্দেশ দিতেন।

মুক্তাদিরা যদি ভুলে যায় অথবা না জানে, তাহলে তাদের থেকে সূরা ফাতিহা পড়ার আবশ্যকতা রহিত হয়ে যাবে।

১৪
১০. সূরা ফাতিহার শেষে বলবে: آمين ‘আমীন’ যদি জেহরী সালাত হয় জোরে, আর সিররী সালাত হলে আস্তে বলব।
‘আমীন’ এর অর্থ হচ্ছে: হে আল্লাহ কবুল কর। কারণ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিহা শেষ করে উচ্চ স্বরে আমীন বলতেন”। [দারাকুতনী: (১/৩১১); হাকেম ফিল মুস্তাদরাক: (১/২২৩)। তিনি বলেন: এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও মুসলিমের র্শত মোতাবেক সহীহ, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন। ইমাম বায়হাকী হাদীসটি বর্ণনা করে বলেন: হাসান ও সহীহ। বায়হাকী: (২/৩২)] তার থেকে আরেকটি হাদীসে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইমাম যখন আমীন বলে, তোমরাও আমীন বল, কারণ যার আমীন ফিরিশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১০।] তার থেকে আরো বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইমাম যখন বলে, ﴿ غَيۡرِ ٱلۡمَغۡضُوبِ عَلَيۡهِمۡ وَلَا ٱلضَّآلِّينَ ﴾ তোমরা বল آمين । কারণ, যার আমীন ফিরিশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪১০।] যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়তে অক্ষম, সে কুরআনের অন্য কোথাও থেকে তিলাওয়াত করবে। যদি কুরআনের কিছুই না জানে, তাহলে বলবে:

«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم» .

কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন আবু আওফা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে: আমি কুরআনের কোনো অংশ গ্রহণ করতে সক্ষম নই। অতএব, আমাকে তার পরিবর্তে অন্য কিছু শিক্ষা দিন, তিনি বললেন: “তুমি বল [আহমদ: (৪/৩৫৩, ৩৫৬, ৩৮২); আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩২; নাসাঈ, হাদীস নং ৯২৪; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ১৮০৫-১৮০৭। তিনি হাদীসটি সহীহ বলেছেন। দারাকুতনী: (১/৩১৩)। তিনি হাদীসটি সহীহ বলেছেন। হাকেম: (১/২৪১), তিনি হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।]:

«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله، والله أكبر، ولا حول ولا قوة إلا بالله العلي العظيم» .

১৫
১১. সূরা ফাতিহার পর ফজর ও জুমু‘আর দুই রাকাতে এবং জোহর, আসর, মাগরিব ও এশার প্রথম দুই রাকাতে কোনো একটি সূরা মিলানো অথবা কুরআনের যেখান থেকে সহজ তিলাওয়াত করা। আর নফলের প্রত্যেক রাকাতে সূরা মিলানো।
আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের প্রথম দু’রাকাতে ফাতিহা পড়তেন ও তার সাথে দু’টি সূরা মিলাতেন। প্রথম রাকাত লম্বা করতেন এবং দ্বিতীয় রাকাত ছোট করতেন। কখনো কখনো আয়াত শোনাতেন। আর আসরের প্রথম দু’রাকাতে সূরা ফাতিহা ও দু’টি সূরা মিলাতেন, প্রথম রাকাত তিনি লম্বা করতেন। ফজরের প্রথম রাকা‘ত লম্বা করতেন, দ্বিতীয় রাকা‘ত ছোট করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫১।] এ হাদীসটি এভাবেও বর্ণিত আছে যে, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহর ও আসরের প্রথম দু’রাকাতে একটি করে সূরা মিলাতেন, কখনো তিনি আমাদেরকে আয়াত শোনাতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৬২।] বিশেষ করে জোহরের সালাত সম্পর্কে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় দু’রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অতিরিক্ত পড়েছেন। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমরা জোহর ও আসরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিয়ামের পরিমাপ করতাম, আমরা অনুমান করলাম জোহরের দু’রাকাতে তার দাঁড়ানোর পরিমাণ সূরা সাজদাহ’র অনুরূপ, দ্বিতীয় দু’রাকাতের অনুমান করলাম তার অর্ধেক। আর আসরের প্রথম দু’রাকাতের পরিমাপ করলাম তারও অর্ধেক”। অন্য শব্দে এরূপ এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের প্রথম দু’রাকাতে ত্রিশ আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, দ্বিতীয় দু’রাকাতে পনের আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, (প্রত্যেক রাকাতে)। অথবা বলেছেন: তার অর্ধেক। আর আসরের প্রথম দু’রাকাতে পনের আয়াত পরিমাণ পড়তেন, দ্বিতীয় দু’রাকাতে তার অর্ধেক পড়তেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫২; আহমদ: (৩/৮৫), বন্ধনীর অংশ মুসনাদে আহমদ থেকে নেওয়া: (৩/৮৫)।] এসব হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের দ্বিতীয় দু’রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে অতিরিক্ত পড়তেন। [দেখুন: নাইলুল আওতার: (১/৮০২)।]

সুলাইমান ইবন ইয়াসার বলেন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু মদিনার জনৈক ইমামের দিকে ইশারা করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের সাথে তার সালাতের চেয়ে বেশি মিল কারো সালাতে দেখি না। সুলাইমান বলেন, “আমি তার পিছনে সালাত আদায় করি, সে জোহরের প্রথম দু’রাকাত লম্বা করত ও দ্বিতীয় দু’রাকাত ছোট করত, অনুরূপ আসরের সালাতও ছোট করত, মাগরিবের প্রথম দু’রাকাতে কিসারে মুফাসসাল (মুফাস্‌সালের [সূরা ক্বাফ বা হুজুরাত থেকে সূরা নাস পর্যন্ত সূরাগুলোকে মুফাস্‌সাল বলে। -সম্পাদক] ছোট সূরাসমূহ) এবং এশার প্রথম দু’রাকাতে আওসাতে মুফাস্‌সাল (মুফাস্‌সালের মধ্যম সূরাসমূহ) পড়ত। সকালে পড়ত তিওয়ালে মুফাস্‌সাল (মুফাস্‌সালের বড় সূরাসমূহ)। [নাসাঈ, হাদীস নং ৯৮৩; আহমদ: (২/৩২৯), বুলুগুল মারাম ও ফাতহুল বারিতে এ সনদটি ইবন হাজার সহীহ বলেছেন। দেখুন: নাইলুল আওতার: (১/৮১৩), ইমাম ইবন বাজও এর সনদটি সহীহ বলেছেন, রওজুল মুরবি: (২/৩৪), সহীহ সুনান নাসাঈতে আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন: (১/২১২), হাদীস নং ৯৩৯।] অনেক সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের সালাত পূর্বে বর্ণিত পরিমাণের চেয়ে অধিক লম্বা করতেন। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “জোহরের সালাত এতটুকু লম্বা হত যে, কেউ ‘বাকি’তে প্রয়োজন সারতে যেত, অতঃপর অযু করে ফিরে এসে দেখত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথম রাকাতেই আছেন, কারণ তিনি প্রথম রাকাত লম্বা করতেন।” [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৪।]

আবু বারজা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত শেষ করতেন, অতঃপর লোকেরা ফিরে যাওয়ার সময় একে অপরকে চিনতে পারত। তিনি ফজরের দু’রাকাতে অথবা তার কোনো এক রাকাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পড়তেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৭।]

আমাদের শাইখ ইমাম ইবন বায রহ.কে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের কিরাতের ব্যাপারে বলতে শোনেছি: “ফজরে উত্তম হচ্ছে তিওয়ালে মুফাসসাল পড়া [মুফাসসাল হচ্ছে সূরা কাফ থেকে সূরা নাস পর্যন্ত। তিওয়ালে মুফাসসাল হচ্ছে সূরা কাফ থেকে সূরা নাবা পর্যন্ত, আওসাত হচ্ছে নাবা থেকে দোহা পর্যন্ত, তারপর থেকে শেষ পর্যন্ত কিসার। দেখুন: হাশিয়াহ রওজুল মুরবি লি ইবন কাসেম: (২/৩৪), তাফসীরে ইবন কাসীর। তিনি বলেন: “বিশুদ্ধ মতে এটাই মুফাসসালের আরম্ভ, কেউ বলেছেন সূরা হুজুরাত: (৪/২২১)।], জোহর, আসর ও এশায় আওসাতে মুফাসসাল এবং মাগরিবে কিসারে মুফাসসাল। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এরূপ কিরাত পড়তেন, তবে সফরে অথবা অসুস্থতার কারণে ফজরের সালাতে কিসার সূরা পড়া দোষণীয় নয়, তবে উত্তম হচ্ছে উল্লিখিত পরিমাপ অনুযায়ী সালাত পড়া। দলিল সুলাইমান ইবন ইয়াসার সূত্রে আবু হুরায়ারা [নাসাঈ, হাদীস নং ৯৮৩; আহমদ: (২/৩২৯)।] থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস”। [এ কথা আমি শাইখ ইবন বাযের মুখে ‘রওজুল মুরবি’র ব্যাখ্যার সময় বলতে শোনেছি: (২/৩৪)।]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. সূরা ফাতিহার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিরাতের ব্যাপারে বলেন, “তিনি সূরা ফাতিহা শেষ করে অন্য সূরা আরম্ভ করতেন, অধিকাংশ সময় দীর্ঘ কিরাত পড়তেন, তবে কোনো কারণে যেমন সফর অথবা অন্য প্রয়োজনে ছোট করতেন, তবে সাধারণত তিনি মধ্যম পন্থা অবলম্বন করতেন”। [যাদুল মায়াদ: (১/২০৯)।] আমি বলি: কিরাতের ব্যাপারে সকল সময়, সকল অবস্থা ও সর্বক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ করা উত্তম। [বিভিন্ন সালাতে পঠিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কতক কিরাত এখানে আমরা উল্লেখ করছি:এক. ফজরের সালাতে তিনি পড়েছেন: সূরা মুরসালাত, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৬৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬২; সূরা আরাফ, আয়াত: ৭৬৪; সূরা তুর, আয়াত: ৭৬৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৩। সূরা দুখান, নাসাঈ, হাদীস নং ৯৮৮, কিসারে মুফাস্‌সাল, নাসাঈ, হাদীস নং ৯৮৩। আলবানী বলেছেন, ইমাম তাবরানী তার ‘কাবীর’ গ্রন্থে একটি সহীহ সনদে উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দু’রাকাতে সূরা আনফাল পড়েছেন। সিফাতুস সালাত: (১১৫)।দুই. এশার সালাতে তিনি পড়েছেন: সূরা ইনশিকাক, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৬৬; সূরা আত-তিন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৬৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৪। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুয়াজকে এশার সালাতে পড়ার জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন সূরা আলা, সূরা লাইল, সূরা শামস, সূরা দোহা ও অনুরূপ সূরাসমূহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৫।তিন. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের দুই রাকাতে অথবা এক রাকাতে ষাট থেকে একশত আয়াত পর্যন্ত পড়তেন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৫৪৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৬৪৭। সূরা মুমিনুন পড়েছেন, সহীহ বুখারী কিতাবুল আযান, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৫; সূরা কাফ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৭; সূরা তাকবীর, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৬; সূরা রূম, আহমদ: (৩/৪৭২); নাসাঈ, হাদীস নং ২/১৫৬); সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়েছেন, নাসাঈ, হাদীস নং ৯৫২); বিদায় হজে তাওয়াফে বিদায় তিনি ফজরের সালাতে সূরা তুর পড়েছেন, সহীহ বুখারী। সূরা ওয়াকিয়া ও অনুরূপ সূরা পাঠ করেছেন, সহীহ ইবন খুজাইমাহ: (১/২৬৫), জুমু‘আর দিন ফজরের সালাতে সূরা আলিফ লাম মিম সাজদাহ ও সূরা দাহার পড়তেন, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৯১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭৯।চার. জোহরের সালাতে তিনি পড়তেন, সূরা লাইল, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৯; সূরা আলা, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬০); সূরা তারেক, সূরা বুরুজ ও অনুরূপ সূরা, আবু দাউদ, হাদীস নং ৮০৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৭; নাসাঈ: ২/১৬৬; জুমু‘আর সালাতে সূরা জুমু‘আ ও সূরা মুনাফিকুন পড়তেন, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭৯; অথবা সূরা আলা ও গাশিয়াহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭৮; অথবা সূরা জুমা ও গাশিয়াহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭৮।পাঁচ. আসরের সালাতে তিনি পড়তেন, সূরা তারেক, সূরা বুরুজ ও অনুরূপ সূরা, আবু দাউদ, হাদীস নং ৮০৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৩০৭; নাসাঈ, হাদীস নং ৯৭৯)ছয়. ঈদের সালাতসমূহে তিনি পড়তেন, সূরা কাফ ও সূরা কামার, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৯১ অথবা সূরা আলা ও গাশিয়াহ, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৮৭৮; এ হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত, এতদসত্বেও তিনি হালকা সালাত আয়াদের নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ, “মুসল্লিদের মাঝে ছোট, বড়, দুর্বল, অসুস্থ ও ব্যস্ত লোক রয়েছে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৬, “তবে যখন একাকি সালাত পড়বে, তখন যেভাবে ইচ্ছা পড়বে”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৬৭), নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি সালাতে থেকে তা লম্বা করতে ইচ্ছা করি, কিন্তু বাচ্চার কান্না শোনে তার মায়ের কষ্টের কথা মনে করে হালকা করে ফেলি”। সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭০। হালকা করা একটি তুলনামূলক বিষয়, এর পরিমাপ করতে হবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লামের কর্ম থেকেই, মুক্তাদিদের প্রবৃত্তির দিকে লক্ষ করে নয়, তার আদর্শই এ ব্যাপারে ফয়সালাকারী, যেমন নাসায়িতে ইবন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে হালকা সালাত আদায়ের নির্দেশ দিতেন, তিনি আমাদের সাথে সূরা সাফফাত দ্বারা ইমামতি করতেন”। (নাসাঈ ২/৯৫), হাদীস নং (৮২৬), ইবন কাইয়ূম রহ. বলেন: “সূরা সাফফাত পড়া হালকা সালাতের অন্তর্ভু্ত, যে হালকা সালাত তাকে পড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আল্লাহ ভালো জানেন”। (যাদুল মা‘আদ: ১/২১৪), “তিনি প্রত্যেক সালাতের প্রথম দু’রাকাত লম্বা করতেন ও শেষের দু’রাকাত ছোট করতেন”। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৩)।]

১৬
১২. সম্পূর্ণ কিরাত শেষ করে শ্বাষ ফিরে আসা পর্যন্ত সামান্য বিরতি নেবে যেন রুকুর সাথে কিরাত মিলে না যায়, সূরা ফাতিহার পূর্বের বিরতি এমন নয়। কারণ, সেখানে সালাত আরম্ভের দো‘আ পড়বে, তাই সেখানে দো‘আ পরিমাণ বিরতি নেবে।
হাসানের সূত্রে সামুরার সনদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত:

«أنه كان يسكت سكتتين : إذا استفتح الصلاة وإذا فرغ من القراءة كلها» .

“তিনি দু’টি বিরতি নিতেন, একটি যখন সালাত আরম্ভ করতেন অপরটি যখন তিনি সম্পূর্ণ কিরাত থেকে ফারেগ হতেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৭৮, তিরমিযী, হাদীস নং ২৫১, তিনি হাদীসটি হাসান বলেছেন। আহমদ: (৫/২৩), ইমাম তিরমিযী বলেন: মুহাম্মাদ বলেছেন: আলী ইবন আব্দুল্লাহ বলেছে: “সামুরা থেকে বর্ণিত হাসানের হাদীস সহীহ, হাসান থেকে শ্রবণ করেছে”। (১/৩৪২)] ইমাম তিরমিযি বলেন, “এটাই একাধিক আলিমের অভিমত, তারা মুস্তাহাব মনে করেন ইমাম সালাত আরাম্ভ করে ও কিরাত শেষ করে সামান্য বিরতি নেবে। ইমাম আহমদ, ইসহাক ও আমাদের সাথীবৃন্দ অনুরূপই বলেছেন।

১৭
১৩. কাঁধ অথবা কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠিয়ে রুকু করবে, মাথা পিঠ বরাবর রাখবে, উভয় হাত হাটুর উপরে রাখবে ও আঙুলগুলো ফাঁকা রাখবে।
কারণ, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ وَٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمۡ وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ۩ ٧٧﴾ [ الحج :77 ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা রুক কর, সাজদাহ কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভালো কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৭]

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারী ব্যক্তির হাদীসে রয়েছে:

«ثم اركع حتى تطمئنَّ راكعًا»

“অতঃপর তুমি রুকু কর এবং রুকু অবস্থায় স্থির হও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭।]

আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«كان رسول الله إذا قام إلى الصلاة يكبر حين يقوم، ثم يكبر حين يركع»، وفي لفظ : «إنه كان يصلي بهم فيكبر كلما خفض ورفع فإذا انصرف قال : إني لأشبهكم صلاة برسول الله ﷺ»؛

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন তাকবীর বলতেন, অতঃপর তাকবীর বলতেন যখন রুকু করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯২।] এভাবেও বর্ণিত আছে যে, “তিনি তাদের সাথে সালাত আদায় করতেন এবং প্রত্যেক উঠা ও নামার সময় তাকবীর বলতেন, অতঃপর বলতেন তোমাদের মধ্যে আমার সালাতই রাসূলের সালাতের সাথে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯২।]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার থেকে বর্ণিত:

«كان يرفع يديه حذو منكبيه إذا افتتح الصلاة، وإذا كبر للركوع ...»

“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আরম্ভ করতেন ও যখন রুকু করতেন উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাতেন...” [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৫; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।]

মালেক ইবন হুয়াইরিস থেকে বর্ণিত:

«كان إذا كبر رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيه وإذا ركع رفع يديه حتى يحاذي بهما أذنيه»؛

“যখন তিনি তাকবীর বলতেন, উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন এবং যখন রুকু করতেন উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯১।]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত:

«وكان إذا ركع لم يشخص رأسه ولم يصوِّبه ولكن بين ذلك»؛

“যখন তিনি রুকু করতেন মাথা উঁচু করে রাখতেন না আবার তাক করেও রাখতেন না, বরং মধ্যম পন্থায় রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৮।]

আবু হুমাইদ সায়েদি রাদিয়াল্লাহু আনহু কতক সাহাবিকে বলেন,

«أنا كنت أحفظكم لصلاة رسول الله ، رأيته إذا كبر جعل يديه حذو منكبيه، وإذا ركع أمكن يديه من ركبتيه [ وفرج بين أصابعه ] ثم هصرظهره ...». وفي لفظ : «ثم ركع فوضع يديه على ركبتيه،كأنه قابضٌ عليهما، ووتَّريديه فتجافى عن جنبيه ..».

“তোমাদের চেয়ে আমিই রাসূলের সালাত বিশুদ্ধভাবে সংরক্ষণ করেছি, আমি তাকে দেখেছি যখন তিনি তাকবীর বলতেন উভয় হাত কাঁধ বরাবর করতেন, যখন তিনি রুকু করতেন উভয় হাত দ্বারা হাটু ধরতেন, (আঙ্গুলগুলো ফাঁকা রাখতেন) অতঃপর মাটির দিকে পিঠ ঝুকান...”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮। বন্ধনীর অংশ আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩০ ও ৭৩১ থেকে সংগৃহীত। আলবানী হাদীসটি সহীহ বলেছেন: সহীহ আবু দাউদ: ১/১৪১)] এভাবেও বর্ণিত আছে, “অতঃপর তিনি রুকু করে উভয় হাত হাটুর ওপর এমনভাবে রাখেন, যেন তিনি হাটুদ্বয় পাকড়ে ছিলেন এবং উভয় হাত দুই পার্শ্ব থেকে পৃথক রাখেন...” [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩৪, সহীহ আবু দাউদ লিল আলবানী: (১/১৪১), তিরমিযী, হাদীস নং ২৬০; সহীহ সুনান তিরমিযী লিল আলবানী: (১/৮৩)।]

রিফাআ ইবন রাফে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:

«وإذا ركعت فضع راحتيك على ركبتيك وامدد ظهرك»،

“যখন তুমি রুকু কর, তোমার হাতের কব্জিদ্বয় হাটুর উপর রাখ এবং পিঠ লম্বা কর”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৫৯; সহীহ সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৬৫, (১/১৬২)]

ওবেসা ইবন মাবাদ বলেন,

«رأيت رسول الله يصلي، فكان إذا ركع سوَّى ظهره حتى لو صُبَّ عليه الماء لاستقرّ» .

“আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছি, তিনি যখন রুকু করতেন পিঠ বরাবর রাখতেন, এমনকি যদি তার উপর পানি রাখা হত তাও স্থির থাকত”। [সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৭২; মাজমাউ‘য যাওয়াদে: (২/১২৩)] রুকুতে স্থির অবস্থান করবে। কারণ, হুযায়ফা রাদিয়াল্লাহু আনহু জনৈক ব্যক্তিকে দেখে বলেন, যে রুকু সাজদাহ ঠিকভাবে করছিল না:

«ما صلَّيتَ، ولو مُتَّ مُتَّ على غير الفطرة التي فطر الله [ عليها ] محمدًا ﷺ»،

“তুমি সালাত আদায় কর নি, যদি তুমি মারা যাও তাহলে তুমি সে তরীকার ওপরই মারা যাবে, যার ওপর মুহাম্মাদকে সৃষ্টি করা হয় নি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯১, ৩৮৯, ৮০৮।]

বারা ইবন আযেব থেকে বর্ণিত:

«كان ركوع النبي ، وسجوده، وقعوده بين السجدتين، وإذا رفع رأسه من الركوع ما خلا القيام والقعود قريبًا من السواء» .

“রাসূলের রুকু, সাজদাহ ও দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বসা এবং রুকু থেকে উঠে সোজা দাঁড়ানো সব সমপরিমাণের ছিল, কিয়াম ও বৈঠক ব্যতীত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯২, ৮২০, ৮০১, ৮২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭১।]

১৮
১৪. রুকুতে বলা: «سبحان ربي العظيم» তিনবার বলা উত্তম।
হুজায়ফাতুল ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু বলতেন : سبحان ربي العظيم এবং সাজদাহ’য় বলতেন [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭২; আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭১।]: «سبحان ربي الأعلى» অপর বর্ণনায় আছে: سبحان ربي العظيم তিনবার এবং সাজদাহ’য় বলবে: «سبحان ربي الأعلى» তিনবার। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৮৮, সিফাতুস সালাত: (১৩৬); সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৪৭)] এ ছাড়া অন্যান্য দো‘আ পড়ারও অনুমতি রয়েছে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। যেমন,

এক. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সাজদাহ’য় বেশি বেশি বলতেন: [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৪, ৮১৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৪।]

«سبحانك اللهم ربنا وبحمدك، اللهم اغفر لي» .

দুই. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রুকতে বলতেন: [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৭।]

«سُبُّوحٌ قُدُّوسٌ، ربُّ الملائكة والروح» .

তিন. আউফ ইবন মালেক আশজায়ী থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে বলতেন:

«سبحان ذي الجبروت والملكوت والكبرياء والعظمة»،

অতঃপর তিনি দাঁড়ানোর সমপরিমাণ সাজদাহ করতেন এবং সাজদাহ’য় অনুরূপ বলতেন। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৮৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯; সহীহ সুনান আবু দাউদ: ১/১৬৬।]

চার. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু করতেন বলতেন: [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭১।]

«اللهم لك ركعتُ، وبك آمنتُ، ولك أسلمتُ، خشع لك سمعي وبصري ومُخّي وعظمي وعَصَبي» .

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সাজদাহ’য় কুরআন থেকে নিষেধ করে বলেন,

«ألا وإني نُهيت أن أقرأ القرآن راكعًا أو ساجدًا، وأما الركوع فعظِّموا فيه الرب ، وأما السجود فاجتهدوا في الدعاء فقَمِنٌ أن يُستجاب لكم» .

“আমি তোমাদেরকে রুকু ও সাজদাহ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত থেকে নিষেধ করছি, তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সাজদাহ’য় বেশি বেশি দো‘আ কর। এটা দো‘আ কবুলের উপযুক্ত সময়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।]

১৯
১৫. রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় উভয় কাঁধ অথবা উভয় কান পর্যন্ত উভয় হাত উঠিয়ে বলা: سمع الله لمن حمده ইমাম কিংবা মুনফারিদ উভয়ের বলা। অতঃপর উভয়ের বলা: ربنا ولك الحمد
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম «سمع الله لمن حمده» বলে, বলতেন [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৫।]: «اللهم ربنا ولك الحمد» . যদি মুক্তাদি হয়, তাহলে রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বলবে: ربنا ولك الحمد؛ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যখন ইমাম سمع الله لمن حمده বলে, তোমরা বলবে: اللهم ربَّنا لك الحمد؛ কারণ, যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেওয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৯।]

اللهم ربَّنا لك الحمد চারভাবে বর্ণিত আছে:

প্রথম প্রকার: ربنا لك الحمد আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে দাঁড়িয়ে তাকবীর বলতেন, অতঃপর তাকবীর বলতেন যখন তিনি রুকু করতেন। অতঃপর বলতেন: سمع الله لمن حمده যখন তিনি রুকু থেকে পিঠ সোজা করতেন, অতঃপর তিনি দাঁড়িয় বলতেন [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯২।]: ربنا لك الحمد .

দ্বিতীয় প্রকার: «ربنا ولك الحمد»؛ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন:

«إنما جُعل الإمام ليُؤتمَّ به، فإذا صلى قائمًا فصلوا قيامًا، وإذا ركع فاركعوا، وإذا رفع فارفعوا، وإذا سجد فاسجدوا، وإذا قال سمع الله لمن حمده فقولوا : ربنا ولك الحمد» .

“আনুগত্য করার জন্যই ইমাম নির্ধারণ করা হয়েছে, যখন সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তোমরাও দাঁড়িয়ে সালাত আদায় কর, যখন সে রুকু করে তোমরা রুকু কর, যখন সে উঠে তোমরাও উঠ, যখন সে সাজদাহ করে তোমরাও সাজদাহ কর, যখন সে বলে: سمع الله لمن حمده তোমরা বল [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯২।]: ربنا ولك الحمد .

তৃতীয় প্রকার: اللهم ربَّنا لك الحمد আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন ইমাম বলে: سمع الله لمن حمده তোমরা বল: اللهم ربَّنا لك الحمد، কারণ, যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করে দেওয়া হবে [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৯।]।

চতুর্থ প্রকার: «اللهم ربَّنا ولك الحمد»؛ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বলতেন: سمع الله لمن حمده، অতঃপর বলতেন: [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০৯।] «اللهم ربنا ولك الحمد»، সবগুলো যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত, তাই কখনো এটা কখনো ওটা পড়া উত্তম। ইমাম, মুক্তাদি ও একাকি সালাত আদায়কারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে: «ربنا ولك الحمد» পড়ার পর, অতিরিক্ত বলা:

«حمدًا كثيرًا طيبًا مُباركًا فيه» [দেখুন হাদীসে রিফাআ, সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৯।] «ملء السموات،وملء الأرض، [ وما بينهما ] وملء ما شئت من شيء بعد،أهل الثناء والمجد، أحقّ ما قال العبد،وكلنا لك عبد،اللهم لا مانع لما أعطيت،ولا مُعطي لما منعت،ولا ينفع ذا الجد منك الجد» «اللهم طهِّرْني بالثلج، والبَرَدِ، والماء البارد،اللهم طهِّرْني من الذنوب والخطايا كما يُنَقَّى الثوبُ الأبيضُ من الوسخ» [দেখুন হাদীসে আবু সাইদ খুদরী, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৭, ৪৭৮।] «لربي الحمد»؛

“লি রাব্বিল হামদ” বারবার বলবে। ইমাম, মুক্তাদি ও একাকি সালাত আদায়কারীর জন্য উত্তম হচ্ছে বুকে ডান হাতের উপর বাম হাত রাখা, যেরূপ রুকুর পূর্বে রেখেছিল। কারণ, ওয়ায়েল রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«رأيت رسول الله إذا كان قائمًا في الصلاة قبض بيمينه على شماله»

“আমি দেখেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়ানো থাকতেন, তখন তিনি ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করতেন”। [সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ৮৮৭।]

রুকু থেকে উঠে স্থির হয়ে দাঁড়াবে। সাবেত থেকে বর্ণিত, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি তোমাদের সাথে সেরূপ সালাত আদায় করতে কার্পণ্য করব না, যেরূপ আমাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করেছেন। তিনি বলেন, আনাস এমন কিছু কাজ করতেন, যা আমি তোমাদেরকে করতে দেখি না, তিনি যখন রুকু থেকে উঠতেন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন, কেউ বলতে পারত তিনি ভুলে গেছেন, অনুরূপ সাজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে তিনি সোজা বসতেন, কেউ বলতে পারত তিনি ভুলে গেছেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭২।] এসব স্থানে উল্লিখিত যিকির ব্যতীত অন্যান্য অনুমোদিত যিকির পড়াও বৈধ।

২০
১৬. তাকবীর বলে সাজদাহ করবে, সম্ভব হলে উভয় হাত হাটুর উপর রেখে, যদি কষ্ট হয় তাহলে হাটুর আগে হাত রাখবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱرۡكَعُواْ وَٱسۡجُدُواْۤ وَٱعۡبُدُواْ رَبَّكُمۡ وَٱفۡعَلُواْ ٱلۡخَيۡرَ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ۩ ٧٧﴾ [ الحج :77 ]

“হে মুমিনগণ, তোমরা রুক কর, সাজদাহ কর, তোমাদের রবের ইবাদাত কর এবং ভাল কাজ কর, আশা করা যায় তোমরা সফল হতে পারবে”। [সূরা আল-হাজ, আয়াত: ৭৭]

সালাতে ভুলকারীর হাদীসে আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত: “অতঃপর সাজদাহ কর, সাজদাহ’য় একেবারে স্থির হও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৫৭।] তার থেকে অপর হাদীসে রয়েছে: “সেজদার জন্য যখন ঝুকবে, তাকবীর বলবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯২।] ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে রয়েছে: “আমি দেখেছি, যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাজদাহ করেন, উভয় হাতের পূর্বে তিনি হাটু রেখেছেন, আর তার উঠার সময় হাটুর পূর্বে হাত উঠিয়েছেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩৮, ৮৩৯; তিরিমিযী, হাদীস নং ২৬৮; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৮৯; সুনান ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৮২; ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ২৬২ প্রমুখগণ।] হাত ও পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী রাখবে। আবু হুমাইদ সায়েদী থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে:

«فإذا سجد وضع يديه غير مفترشٍ ولا قابضهما، واستقبل بأطراف أصابع رجليه القبلة»

“যখন সাজদাহ করবে উভয় হাতকে বিছিয়ে রাখবে না, আবার মুষ্টিবদ্ধ করেও রাখবে না, পায়ের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী করে রাখবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮।] হাতের আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে কিবলামুখী রাখবে। কারণ, আলকামা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সাজদাহ করতেন, তখন তিনি আঙ্গুলগুলো মিলিয়ে রাখতেন”। [সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৪২।] আবু হুমাইদের হাদীসে রয়েছে: “হাতের আঙ্গুলগুলো কিবলামুখী রাখবে”। [সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৪৩।] পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে। কারণ, আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে: “অতঃপর দু’বাহুকে পার্শ্ব থেকে পৃথক রাখবে ও পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে”। [সহীহ ইবন খুযাইমা, হাদীস নং ৬৫১; আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩০।]

সাত অঙ্গের দ্বারা সাজদাহ করবে, কপালের সাথে নাক, দু’হাত, দু’হাটু, উভয় পায়ের আঙ্গুলের ভেতরের অংশ। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«أمرت أن أسجد على سبعة أعظم : على الجبهة وأشار بيده على أنفه واليدين، والركبتين، وأطراف القدمين، ولا نكفُت الثياب والشعر» وفي لفظ لمسلم : «ولا أكفّ ثوبًا ولا شعرًا»

“আমাকে সাত অঙ্গের উপর সাজদাহ করার নিদের্শ দেওয়া হয়েছে: কপাল- এর সাথে তিনি ইশারা করে নাকের দিকে ঈঙ্গিত করেছেন- দু’হাত, দু’হাটু, দু’পায়ের সন্মুখভাগ, আর আমরা কাপড় ও চুল আটকে রাখব না”। মুসলিমের বর্ণনায় আছে: “আমি যেন কাপড় ও চুল আটকে না রাখি”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮১২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯০।] পার্শ্বদ্বয় থেকে বাহুদ্বয় পৃথক রাখবে। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন মালেক ইবন বুহায়না বলেন,

«كان إذا صلَّى فرَّج بين يديه حتى يبدو بياض إبطيه»

“নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাত আদায় করতেন, তখন উভয় হাত এমনভাবে পৃথক রাখতেন যে, তার বোগল পর্যন্ত দেখা যেত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮০৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৫।] পেট রান থেকে ও রান পায়ের গোছা থেকে পৃথক রাখবে এবং উভয় রানের মধ্যে ফাঁকা রাখবে। আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “যখন সাজদাহ করে তখন যেন উভয় রান পৃথক রাখে, পেটের ভর যেন রানের উপর না দেয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩৫।] উভয় হাতের কব্জি কাঁধ বরাবর রাখবে। কারণ, আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “অতঃপর তিনি সাজদাহ করেছেন, যমীনের উপর নাক ও কপাল স্থির করেছেন, উভয় পার্শ্ব থেকে হাত পৃথক রেখেছেন ও উভয় হাতের কব্জিকে কাঁধ বরাবর রেখেছেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩৪; তিরমিযী, হাদীস নং ২৭০। তিনি হাদীসটি হাসান ও সহীহ বলেছেন। সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৪২)।] অথবা উভয় হাত কান বরাবর রাখবে। যেমন ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে এসেছে। “অতঃপর তিনি সাজদাহ করেছেন এবং উভয় হাতের কব্জি কান বরাবর রেখেছেন”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৮৮৯; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/১৯৪)।] এটা মূলত বারার হাদীসের অনুরূপ, যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, সাজদাহ’র সময় রাসূল কোথায় চেহারা রাখতেন? তিনি বলেছিলেন: “দুই হাতের কব্জির মাঝখানে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ২৭১; সহীহ সুনান তিরমিযী: (১/৮৬)।] উভয় হাতের বাহু যমীন থেকে আলাদা রাখবে। কারণ, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমরা সাজদাহ’র মধ্যে স্থির হও, তোমাদের কেউ তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে রাখবে না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৩।] বারা থেকে একটি মরফু‘ হাদীসে রয়েছে: “যখন তুমি সাজদাহ কর, তোমার হাত মাটিতে রাখ ও বাহুদ্বয় উপরে রাখ”। [সহীহ মুসিলম, হাদীস নং ৪৯৪।] উভয় পা মিলিয়ে রাখবে। আয়েশা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “আমি তাকে সাজদাহ অবস্থায় পেলাম, তার দু’নো গোড়ালি মিলানো ছিল এবং পায়ের আঙ্গুলগুলো ছিল কিবলামুখী”। [সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ৬৫৪; বায়হাকী (২/১১৬)।] উভয় পা খাড়া করে রাখবে। আয়েশার হাদীসে রয়েছে: “আমি তাকে তালাশ করলাম, আমার হাত তার পায়ের উপর পরল, তিনি তখন সাজদাহ’য় ছিলেন, তার পাগুলো ছিল খাড়া”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৬।]

২১
১৭. সাজদাহয় বলবে: «سبحان ربي الأعلى» তিনবার বলা উত্তম।
যেমন হুজায়ফার হাদীসে এসেছে। ইচ্ছা করলে অন্যান্য হাদীসে বর্ণিত দো‘আও পড়তে পারে। যেমন:

এক. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৪।]: «سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي»

দুই. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৭।]: «سُبُّوحٌ، قُدُّوسٌ، ربُّ الملائكة والروح»؛

তিন [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৮৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৪৯।]. «سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» .

চার. আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭১।]:

«اللهم لك سجدتُ، وبك آمنتُ، ولك أسلمتُ،سجد وجهي للذي خلقه وصوَّره،وشق سمعه وبصره،تبارك الله أحسن الخالقين»؛

পাঁচ. আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৬।]:

«اللهم إني أعوذ برضاك من سخطك، وبمعافاتك من عقوبتك،وأعوذ بك منك،لا أحصي ثناءً عليك أنت كما أثنيت على نفسك»؛

ছয়. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস মোতাবেক [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮৩।]:

«اللهم اغفر لي ذنبي كله، دقّه وجلّه، وأوّله وآخره، وعلانيته وسرّه»

সাজদাহ’য় খুব বেশি দো‘আ করবে এবং আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ কামনা করবে। হোক সালাত ফরজ কিংবা নফল। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সাজদাহ অবস্থায় বান্দাগণ তার রবের অতি নিকটবর্তী হয়। অতএব, তোমরা সেখানে খুব বেশি করে দো‘আ কর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।] ইবন আব্বাসের হাদীসে আছে: “আর তোমরা রুকুতে আল্লাহর খুব বড়ত্ব বর্ণনা কর এবং সাজদাহ’য় খুব দো‘আ কর, তাহলে তোমাদের দো‘আ কবুল করা হবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭৯।]

২২
১৮. তাকবীর বলে সাজদাহ থেকে মাথা উঠাবে এবং স্থির হয়ে বসবে।
আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদীসে আছে: “অতঃপর তুমি মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বস”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯, ৮০৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৬।] বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে, ডান পা খাড়া রাখবে এবং আঙ্গুলগুলো কিবলার দিকে রাখবে। কারণ আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “তিনি বাম পা বিছিয়ে রাখতেন ও ডান পা খাড়া রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৯৮।] উভয় হাত রানের উপর রাখবে। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়ের তার পিতা থেকে মারফূ‘ সনদে বর্ণনা করেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বসতেন তখন তিনি দো‘আ করতেন এবং ডান হাত ডান রানের উপর ও বাম হাত বাম রানের রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৩-৫৭৯।] অথবা উভয় হাত হাটুর উপর রাখবে। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন তিনি তার দু’হাত হাটুর উপরে রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৪-৫৮০।] অথবা ডান হাত ডান রানের উপর, বাম হাত বাম রানের উপর এবং বাম কব্জি দ্বারা হাটু পাকড়াও করে রাখবে। যেমন, আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে।

মুদ্দাকথা হাত রাখার তিনটি পদ্ধতি জানা গেল:

এক. ডান হাত ডান রানের উপর ও বাম হাত বাম রানের উপর।

দুই. ডান হাত ডান হাটুর ওপর ও বাম হাত বাম হাটুর ওপর।

তিন. ডান কব্জি ডান রানের উপর ও বাম কব্জি বাম রানের উপর এবং বাম কব্জি দ্বারা হাটু আঁকড়ে ধরবে। [আমাদের শাইখ ইবন বায রহ. বলেছেন: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি দু’হাত রানের উপর রেখেছেন, হাটুর উপর রেখেছেন এবং রানের উপর রেখে আঙুলগুলো হাটুর উপর রেখেছেন”। (৩/৮/১৪১৯ হি.) শনিবার, ফজরের সালাতে বড় মসজিদে এ ব্যাখ্যা শ্রবণ করি।]

উভয় হাতের কব্জি রাখার পদ্ধতি: মুসল্লি তার বাম হাত বিছিয়ে রাখবে। যেমন, ইবন উমার থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “তার বাম হাত ছিল হাটুর উপর বিছানো”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১২৬৯; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৭২)।] আর উভয় বাহু রানের উপর রাখবে। কারণ, ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে আছে: “তিনি তার দু’বাহু রানের উপর রেখেছেন”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১২৬৪), সহীহ সুনান নাসাঈ, হাদীস নং ১/২৭০)] আর ডান হাতের কনিষ্ঠাঙ্গুলি ও অনামিকা দ্বারা মুষ্ঠি বানাবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানাবে। অতঃপর ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখবে। ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে আছে: “অতঃপর কিবলা মুখী হয়ে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠান এবং ডান হাত দিয়ে বাম হাত পাকড়াও করেন। যখন তিনি রুকু করার ইচ্ছা করেন, অনুরূপ করেন এবং উভয় হাত হাটুর উপর রাখেন, যখন তিনি রুকু থেকে নিজ মাথা উঠান অনুরূপ হাত তোলেন। যখন তিনি সাজদাহ করেন, তখনও তিনি অনুরূপ করেন। অতঃপর বাম পা বিছিয়ে বসেন এবং তার বাম হাত বাম রানের উপর রাখেন। আর ডান হাতের কব্জি রাখেন ডান রানের উপর। দুই আঙ্গুল দ্বারা হালকা বানান। আমি তাকে বলতে দেখলাম: “এরূপ”, ‘বিশর’ (বর্ণনাকারী) বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানিয়ে ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করলেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭২৬), নাসাঈ, হাদীস নং ১২৬৫), আহমদ: (৪/৩১৮), ইবন হিব্বান: (৪৮৫), ইবন খুযাইমা: (১/৩৫৪), সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ১/১৪০) প্রমূখগণ।] ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম এটাই গ্রহণ করেছেন যে, মুসল্লি দুই সাজদাহ’র মাঝখানে অনুরূপ করবে”। [আল্লামা ইবন উসাইমিন রহ. বলেছেন: “সহীহ, দুর্বল কিংবা হাসান পর্যায়ের একটি হাদীসও নেই, যার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, ডান হাত ডান রানের উপর বিছানো থাকবে। বরং বর্ণিত আছে যে, মুষ্টি বানাবে: কনিষ্ঠা ও অনামিকা দ্বারা মুষ্ঠি বানাবে এবং বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙুল দ্বারা হালকা বানাবে..., যখন সালাতে বসবে, (মুসলিম, হাদীস নং ৫৮০) কোনো বর্ণনা আছে যখন তাশাহহুদে বসবে। (মুসলিম, হাদীস নং ৫৮০)। উভয় হাদীসই সহীহ মুসলিমে বিদ্যমান। এর দ্বারা বুঝা যায়, সকল বসাতেই অনুরূপ হালকা বানাবে। সংক্ষিপ্ত। শারহুল মুমতি: (৩/১৭৮)]

২৩
১৯. দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বলবে: ربِّ اغفرْ لي، ربِّ اغفر لي؛
হুজায়ফা থেকে একটি মারফূ‘ হাদীসে বর্ণিত: “তিনি দুই সাজদাহ’র মাঝখানে সাজদাহ’র সমান বসতেন এবং বলতেন [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৭৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭; সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৪৮)।]: «ربّ اغفر لي رب اغفر لي» এর চেয়ে অধিক পড়ারও অনুমতি রয়েছে, যেমন:

«اللهم اغفر لي، وارحمني [ وعافني، واهدني ] واجبرني، وارزقني، وارفعني»؛

কারণ, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বলতেন [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৫০।]:

«اللهم اغفر لي وارحمني وعافني واهدني وارزقني»

ইবন মাজাহ নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেছেন [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৯৭; সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৬০); সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/১৪৮)।]:

«ربِّ اغفر لي وارحمني، واجبرني، وارزقني، وارفعني» .

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ রুকনটি সাজদাহ পরিমাণ লম্বা করতেন। যেমন, বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রুকু, সাজদাহ, দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বসা এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে স্থির থাকা সমান ছিল, শুধু কিয়াম ও বৈঠক ব্যতীত”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৭১।]

২৪
২০. তাকবীর বলে দ্বিতীয় সাজদাহ করবে, যেমন প্রথম সাজদাহ’তে করেছিল।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদীসে রয়েছে: “অতঃপর তুমি সাজদাহ কর, সাজদাহ’রত অবস্থায় স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির চিত্তে বস, অতঃপর সাজদাহ কর এবং স্থির হও। অতঃপর তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৩।]

তার থেকে অপর হাদীসে আছে: “অতঃপর যখন সাজদাহ’য় ঝুকবে তাকবীর বলবে, অতঃপর সাজদাহ থেকে মাথা উঠিয়ে তাকবীর বলবে। অতঃপর সাজদাহ’র সময় তাকবীর বলবে। অতঃপর মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলবে, অতঃপর অনুরূপ করতে থাকবে অবশিষ্ট সালাতে এবং যখন দু’রাকাত শেষে বৈঠকের পর দাঁড়াবে তাকবীর বলবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৬।]

২৫
২১. তাকবীর বলে মাথা উঠাবে এবং সামান্য সময় বসবে, যেটাকে জালসায়ে ইস্তেরাহা বলে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, সালাতে ভুলকারীর হাদীসে রয়েছে:

«ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم اسجد حتى تطمئن ساجدًا، ثم ارفع حتى تطمئن جالسًا، ثم افعل ذلك في صلاتك كلها»، قال أبو أسامة في الأخير : «حتى تستوي قائمًا»؛

“অতঃপর স্থির হয়ে সাজদাহ কর, অতঃপর স্থির হয়ে বস, অতঃপর স্থির হয়ে সাজদাহ কর, অতঃপর মাথা উঠিয়ে স্থির হয়ে বস, তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক”। আবু উসামা বলেন, “অতঃপর মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াও”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৫১।] তার থেকে আরেকটি হাদীসে আছে:

«ثم يكبر حين يرفع رأسه ثم يفعل ذلك في الصلاة كلها حتى يقضيها، ويكبر حين يقوم من الثنتين بعد الجلوس»

“অতঃপর মাথা উঠানোর সময় তাকবীর বলবে, অতঃপর অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাকবে এবং দু’রাকাত পর যখন উঠবে তাকবীর বলবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৮৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৬।] জালসায়ে ইস্তেরাহার ব্যাপারে মালেক ইবন হুয়াইরিসের হাদীসে রয়েছে:

«أنه رأى النبي يصلّي فإذا كان في وتر من صلاته لم ينهض حتى يستويَ قاعدًا»

“তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সালাত আদায় করতে দেখেছেন, যখন তিনি বেজোড় রাকাতে থাকতেন, উঠতেন না যতক্ষণ না সোজা হয়ে বসতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৩।] অন্য শব্দে মালেকের হাদীসেও জালসায়ে ইস্তেরাহার কথা এসেছে:

«أنه صلى بأصحابه، فكان يجلس إذا رفع رأسه من السجود قبل أن ينهض في الركعة الأولى» .

“তিনি সাহাবীদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন, তিনি সাজদাহ থেকে বসতেন, প্রথম রাকাতের জন্য উঠে দাঁড়ানোর আগে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৭৭।] সালাতে ভুলকারীর হাদীসেও এ বসার কথা রয়েছে:

«ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفعْ حتى تطمئنَّ جالسًا، ثم اسجدْ حتى تطمئنَّ ساجدًا، ثم ارفعْ حتى تطمئنَّ جالسًا، ثم افعلْ ذلك في صلاتك كلها»،

“অতঃপর সাজদাহ কর, যতক্ষণ না সাজদাহয় গিয়ে স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠাও, স্থির হয়ে বস, অতঃপর সাজদাহ কর, সাজদাহ’য় গিয়ে স্থির হও, অতঃপর মাথা উঠাও, স্থির হয়ে দাঁড়াও অতঃপর তোমার অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাক”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৫।] আবু হুমাইদের হাদীসেও এ জলসার কথা এসেছে:

«ثم يهوي إلى الأرض فيجافي يديه عن جنبيه، ثم يرفع رأسه ويثني رجله اليسرى فيقعد عليها ويفتح أصابع رجليه إذا سجد، ثم يسجد، ثم يقول : الله أكبر، ويرفع رأسه ويثني رجله اليسرى فيقعد عليها حتى يرجع كل عظم إلى موضعه، ثم يصنع في الأخرى مثل ذلك» .

“অতঃপর যমীনের দিকে ঝুকবে এবং উভয় হাত পার্শ্ব থেকে আলাদা রাখবে, অতঃপর মাথা উঠাবে এবং বাম পা নরম করে তার ওপর বসবে, সাজদাহ’র সময় পায়ের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখবে, অতঃপর সাজদাহ করবে। অতঃপর বলবে: ‘আল্লাহু আকবার’ এবং মাথা উঠাবে ও বাম পা নরম করে তার ওপর বসবে, যেন প্রত্যেক হাড্ডি তার জায়গায় এসে পৌঁছে। [ইমাম আব্দুল আযীয ইবন আব্দুল্লাহ ইবন বায রহ. ‘বুলুগুল মারাম’ এর (৩২৩) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ ব্যাপারে লোকেরা বিস্তর মতবিরোধ করেছে, কেউ বলেছেন এটা তার শরীর ভারী যাওয়ার অবস্থা, কেউ বলেছেন অসুস্থার অবস্থা, আবার কেউ বলেছেন বরং এটা সুন্নত। কারণ হাদীস সহীহ, যার থেকে মুখ ফিরানোর কোনো কারণ নেই, এটাই স্পষ্ট। কারণ, নীতি এটাই যে, রাসূলের সালাতের যে অবস্থা বর্ণনা করা হবে সেটাই সালাতের সুন্নত, তা কোনো শর্তের সাথে নির্দিষ্ট করা যাবে না। অতএব, এটা শরীর ভারী হওয়ার অবস্থা বা অসুস্থতার অবস্থা বলা ঠিক নয়, এর জন্য দলীলের প্রয়োজন। জালসায়ে ইস্তেরাহার আরেকটি দলীল হচ্ছে আহমদ ও আবু দাউদ প্রমুখদের জাইয়্যেদ সনদে বর্ণিত হাদীস। আবু দাউদ থেকে বর্ণিত, তিনি কোনো একদিন দশজন সাহাবীর সামনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সালাতের পদ্ধতি বর্ণনা করেন, তাতে জালসায়ে ইস্তেরাহাও উল্লেখ করেন, সবাই তাকে সমর্থন জানান। অতএব, আবু হুমাইদকে এগারতম গণনা করলে বারোজন সাহাবি থেকে এটা বর্ণিত, আর যদি তাকে দশম গণনা করা হয়, তাহলে এগারজন সাহাবী থেকে বর্ণিত, আর মালেক ইবন হুয়াইরিসের হাদীস তো আছেই। জালসায়ে ইস্তেরাহা খুবই সংক্ষেপ: দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বসার ন্যায়, এতে কোনো যিকির ও দো‘আ নেই”। লেখক বলল: এ হাদীসটি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকেও বর্ণিত: সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬২৫।] অতঃপর দ্বিতীয় রাকাতেও অনুরূপ করবে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩০; সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/১৪০)।]

২৬
২২. যদি সম্ভব হয়, তাহলে পা, হাটু ও রানের উপর ভর দিয়ে দ্বিতীয় রাকা‘তের জন্য দাঁড়াবে।
কারণ, ওয়ায়েলের হাদীসে আছে: “যখন উঠবে হাটুর পূর্বে হাত উঠাবে”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৮; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৮৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৮২।] আর যদি কষ্ট হয়, তাহলে যমীনের উপর ভর দিবে। কারণ, মালেক ইবন হুয়াইরিসের হাদীসে আছে: “যখন দ্বিতীয় সাজদাহ থেকে মাথা উঠাবে, তখন বসবে ও যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৪।]

২৭
২৩. দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাতের ন্যায় পড়বে।
কারণ, সালাতে ভুলকারীর হাদীসে আছে: “অতঃপর এসব কাজ তোমার পুরো সালাতে কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৯৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭।] তবে পাঁচটি কাজ করবে না:

এক. তাকবীরে তাহরীমা। কারণ, তাকবীরে তাহরীমা হচ্ছে সালাতে প্রবেশ করার জন্য।

দু্ই. তাকবীরে তাহরীমার পর চুপ থাকা। দ্বিতীয় রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর চুপ থাকবে না। কারণ আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠতেন, তিনি সূরা ফাতিহা দ্বারা আরম্ভ করতেন, চুপ থাকতেন না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৯।]

তিন. তাকবীরে তাহরীমার পর দো‘আ পড়া। কারণ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন দ্বিতীয় রাকাতের জন্য উঠতেন, তিনি সূরা ফাতিহা দ্বারা আরম্ভ করতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৯।]

চার. প্রথম রাকাতের ন্যায় লম্বা করবে না বরং প্রত্যেক সালাতে দ্বিতীয় রাকাত প্রথম রাকাত থেকে ছোট হবে। কারণ, আবু কাতাদা থেকে বর্ণিত আছে: “প্রথম রাকাত লম্বা করবে ও দ্বিতীয় রাকাত ছোট করবে”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫১।] “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতে প্রথম দু’রাকাত লম্বা করতেন ও শেষের দু’রাকাত ছোট করতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৭০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫৩।]

পাঁচ. নতুন করে নিয়ত বাঁধবে না। কারণ, পূর্বের নিয়ত যথেষ্ট। দ্বিতীয়তঃ নতুন করে নিয়ত করলে প্রথম রাকাত বাতিল হয়ে যাবে। [হাশিয়া রওজুল মুরবি: (২/৬২)।]

দ্বিতীয় রাকাতে ‘আউযুবিল্লাহ’ সম্পর্কে কেউ বলেছেন: প্রত্যেক রাকাতেই তা বৈধ। কারণ, দুই কিরাতের মাঝখানে কিছু আযকার ও কর্মের ফলে বিচ্ছেদ সৃষ্টি হয়েছে, তাই প্রত্যেক রাকাতে শয়তান থেকে পানাহ চাইবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

﴿فَإِذَا قَرَأۡتَ ٱلۡقُرۡءَانَ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ ٱلرَّجِيمِ ٩٨﴾ [ النحل :98 ]

“সুতরাং যখন তুমি কুরআন পড়বে তখন আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান হতে পানাহ চাও”। [সূরা আন- নাহল, আয়াত: ৯৮] তাই আউযুবিল্লাহ পড়া উত্তম। কেউ বলেছেন: শুধু প্রথম রাকাতেই আউযুবিল্লাহ পড়বে। কারণ, পুরো সালাত মিলে একটি কর্ম, দুই কিরাতের মাঝখানে কোনো নিরবতা বিচ্ছেদ সৃষ্টি করে নি, বরং পুরোটা ছিল যিকির। অতএব, এতে প্রত্যেক কিরাত এক কিরাতের মত। সুতরাং সেখানে এক আউযুবিল্লাহ যথেষ্ট হবে। হ্যাঁ, যদি প্রথম রাকাতে আউযুবিল্লাহ পড়ে না থাকে, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতে পড়বে। [যাদুল মায়াদ: (১/২৪২)।]

আর প্রত্যেক রাকাতেই বিসমিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব। কারণ, এর মাধ্যমে সূরা আরম্ভ করা হয়। [হাশিয়া রওজুল মুরবি: (২/৬২)।]

২৮
২৪. যদি দুই রাকাত বিশিষ্ট সালাত হয়, যেমন ফজর, জুমু‘আ ও দুই ঈদের সালাত, তাহলে দ্বিতীয় রাকাতের দ্বিতীয় সাজদাহ থেকে ফারিগ হয়ে বসবে, ডান পা খাড়া রাখবে ও বাম পা বিছিয়ে দেবে।
কারণ, আবু হুমাইদের হাদীসে আছে: “যখন দু’রাকাতের মধ্যে বসবে, তখন বাম পায়ের উপর বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮।] এখানে ও দুই সাজদাহ’র মাঝখানে বসার নিয়ম এক। [যাদুল মা‘য়াদ: (১/২৪২)।] অর্থাৎ বাম হাত বাম রানের উপর রাখবে অথবা বাম হাটুর উপর রাখবে, আর ডান হাত ডান রানের উপর রাখবে। ডান হাতের সব আঙ্গুলগুলো মুষ্টি বদ্ধ করে রাখবে শুধু শাহাদাত আঙ্গুলি ব্যতীত, তার মাধ্যমে তাওহিদের প্রতি ইশারা করবে। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন উমারের হাদীসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে বসতেন, তখন তিনি ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখতেন। সকল আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে রাখতেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি সংলগ্ন আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন, আর বাম হাতের কব্জি বাম রানের উপর রাখতেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬৬-৫৮০ ও ১১৪-৫৮০।] অথবা বৃদ্ধাঙ্গুলি ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা হালকা বানাবে এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুল মুষ্টি বদ্ধ রেখে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে। কারণ ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে আছে: “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি তিনি বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানিয়েছেন এবং শাহাদাত আঙ্গুলি উপরে উঠিয়েছেন, এর দ্বারা তিনি তাশাহুদে দো‘আ করতেন”। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৯১২।] অথবা তিপ্পান্ন গণনার ন্যায় হাতের মুষ্টি বানাবে এবং শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করবে। কারণ, ইবন উমারের হাদীসে আছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদে বসতেন বাম হাত বাম রানের উপর ও ডান হাত ডান রানের উপর রাখতেন, তিপ্পান্ন গণনার ন্যায় হাতের মুষ্টি বানাতেন ও শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করতেন। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৫-৫৮০।]

এভাবে ডান হাতের তিনটি অবস্থা প্রকাশ পায়।

এক. সকল আঙ্গুল মুষ্টি বদ্ধ করে রেখে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা।

দুই. বৃদ্ধা ও মধ্যমা আঙ্গুলি দ্বারা হালকা বানানো এবং কনিষ্ঠা ও অনামিকা আঙ্গুলি মুষ্টিবদ্ধ করে শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা।

তিন. তিপ্পান্ন গণনার মতো হাত মুষ্টি বদ্ধ করা ও শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা। এসব পদ্ধতিই বৈধ। বসার সময় শাহাদাত আঙ্গুলির ইশারার দিকে দৃষ্টি রাখবে। কারণ আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহহুদে বসতেন বাম হাত বাম রানের উপর রাখতেন ও শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন। তার দৃষ্টি ইশারা অতিক্রম করত না”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১২৭৫; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৭২)।] আব্দুল্লাহ ইবন উমারের হাদীসে আছে: “তিনি ডান হাত ডান রানের উপর রাখেন ও বৃদ্ধাঙ্গুলি সংলগ্ন আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করেন, তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এরূপ করতে দেখেছি”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৬৬০; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৫০)।]

দোয়ার সময় আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করা সুন্নত, কিবলার দিকে নাড়াবে ও তার দ্বারা দো‘আ করবে, তবে দো‘আ ও যিকিরের স্থান ব্যতীত কোথাও নাড়াবে না, বরং স্থির রাখবে”। দো‘আর সময় আঙ্গুলি নাড়ানোর দলিল ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীস, তাতে আছে: “অতঃপর তিনি বসেন ও বাম পা বিছিয়ে রাখেন, তার বাম হাতের কব্জি বাম হাটুর উপর রাখেন এবং ডান হাতের কব্জি ডান রানের উপর রাখেন, অতঃপর দু’টি আঙ্গুল ধরে হালকা বানান, অতঃপর তার আঙ্গুলি উঠান, আমি তাকে তা নাড়াতে দেখেছি। [নাসাঈ, হাদীস নং ৮৯০; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/১৯৪)।] আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়ের থেকে বর্ণিত হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, তিনি সর্বদা আঙ্গুলি নাড়াতেন না। যেমন, “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো‘আর সময় তার আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করতেন কিন্তু তা নাড়াতেন না”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১২৭০; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৮৯।] দুই হাদীসের মধ্যে কোনো বৈপরিত্ব নেই। কারণ, না নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে সর্বদা নাড়াতেন না, আবার নাড়ানোর অর্থ হচ্ছে দো‘আর সময় নাড়াতেন। [বায়হাকী: (২/১৩২)।]

ইশারা হবে শুধু ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি দুই আঙ্গুলি দ্বারা দো‘আ করতে ছিল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন এক আঙ্গুলি দ্বারা দো‘আ কর। [তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৫৭; সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৭২)।] সাদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছ দিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিক্রম করেন, আমি তখন আমার আঙ্গুলিসমূহ দ্বারা দো‘আ করতে ছিলাম, তিনি বলেন এক আঙ্গুল দ্বারা, এক আঙ্গুল দ্বারা, তিনি শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন। শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার হিকমত হচ্ছে আল্লাহ এক, ইশারার সময় তাওহীদ ও তার ইখলাসের নিয়ত করবে, তাহলে কথা, কর্ম ও বিশ্বাসে তাওহিদের বর্হিঃপ্রকাশ ঘটবে। [নাইলুল আওতার: (২/৬৮)।] অতএব, প্রমাণিত হলো যে, শাহাদাত আঙ্গুলি দ্বারা ইশারা করবে এবং তার মাধ্যমেই দো‘আ করবে।

২৯
২৫. এ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়বে। যেমন, বলবে [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০২।]:
«التحيات لله، والصلوات، والطيبات، السلام عليك أيها النبي ورحمة الله وبركاته، السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين، أشهد أن لا إله إلا الله [ وحده لا شريك له ] وأشهد أن محمدًا عبده ورسوله»،

এটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ তাশাহুদ। [মুসল্লি চাইলে অন্যান্য তাশাহুদও পড়তে পারে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত।] অতঃপর পড়বে [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৩৩৭০।]:

«اللهم صلِّ على محمد وعلى آل محمد، كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد، اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد»،

এটা সবচেয়ে পরিপূর্ণ দুরূদ। [এ ছাড়াও আরো দুরুদ বর্ণিত আছে।] অতঃপর আল্লাহর নিকট চারটি বস্তু থেকে পানাহ চাইবে:

«اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال»؛

কারণ, আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ পড়ে, সে যেন চারটি জিনিস থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চায়। যেমন, বলে:

«اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم .. الحديث» .

ইমাম মুসলিম এভাবে বর্ণনা করেন, “যখন তোমাদের কেউ দ্বিতীয় তাশাহহুদ থেকে ফারেগ হয়, সে যেন চারটি বস্তু থেকে পানাহ চায়। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৩৭৭; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৮।] এবং যা ইচ্ছা দো‘আ করবে, যেমন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে বলতেন:

এক.

«اللهم إني أعوذ بك من عذاب القبر، وأعوذ بك من فتنة المسيح الدجال، وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات، اللهم إني أعوذ بك من المأثَم والمغرَم»

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, কেউ তাকে বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি মাগরাম তথা ঋণ থেকে খুব পানাহ চান! তিনি বললেন:

: «إن الرجل إذا غرم حدَّث فكذَب ووعدَ فأخلَف» .

“নিশ্চয় ব্যক্তি যখন ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তখন সে মিথ্যা বলে ও ওয়াদা ভঙ্গ করে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৯।]

দুই. আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, হে আল্লাহর রাসূল আমাকে একটি দো‘আ শিক্ষা দেন, যা দিয়ে আমি সালাতে দো‘আ করব, তিনি বলেন, তুমি বল: [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৭০৫।]

«اللهم إني ظلمت نفسي ظلمًا كثيرًا، ولا يغفر الذنوب إلا أنت، فاغفر لي مغفرة من عندك، وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم»؛

মুসলিমের বর্ণনায় আছে, আমাকে একটি দো‘আ শিক্ষা দেন, যা দিয়ে আমি আমার ঘরে ও সালাতে দো‘আ করব। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৮-২৭০৫।]

তিন. আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাশাহহুদ ও সালামের মাঝখানে বলতেন [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭৭১।]:

«اللهم اغفر لي ما قدَّمْتُ، وما أخَّرتُ، وما أسررْتُ، وما أعلنتُ، وما أنت أعلمُ به مني، أنت المقدِّم، وأنت المؤخِّر، لا إله إلا أنت»؛

চার.

«اللهم إني أعوذ بك من البخل، وأعوذ بك من الجبن، وأعوذ بك [ من ] أن أُردّ إلى أرذل العمر، وأعوذ بك من فتنة الدنيا، وأعوذ بك من عذاب القبر»؛

সাদ ইবন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নিজ বাচ্চাদের উপরোক্ত শব্দগুলো শিক্ষা দিতেন। যেমন, তাদেরকে লেখা পড়া শিখানো হয় এবং তিনি বলতেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের পর এসব জিনিস থেকে পানাহ চাইতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৮২২, ৬৩৬৫, ৬৩৭৪, ৬৩৯০।]

পাঁচ. মু‘য়ায রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার হাত ধরে বলেন, “হে মু‘য়ায আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে মহব্বত করি, আল্লাহর শপথ আমি তোমাকে মহব্বত করি”। তিনি বলেন : “আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক সালাতের শেষে এ দো‘আ পড়া ত্যাগ করবে না:

«اللهم أعني على ذكرك، وشكرك، وحسن عبادتك»

ছয়.

«اللهم إني أسألك الجنة وأعوذ بك من النار»؛

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তিকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তুমি সালাতে কী বল?” সে বলল: আমি তাশাহহুদ পড়ি, অতঃপর আল্লাহর নিকট জান্নাতের প্রার্থনা করি ও জাহান্নাম থেকে পানাহ চাই। তিনি বললেন: তোমার দো‘আ খুব সুন্দর। আমরাও অনুরূপ দো‘আ করব। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৪৭; সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (২/৩২৮); আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৯২।]

সাত.

«اللهم إني أسألك يا الله بأنك الواحد،الأحد، الصمد،الذي لم يلد ولم يولد،ولم يكن له كفوًا أحد،أن تغفر لي ذنوبي إنك أنت الغفور الرحيم»

মিহজান ইবন আদরা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করেন, অতঃপর এক ব্যক্তিকে দেখেন যে সালাত শেষ করে তাশাহহুদ পড়তে ছিল এবং উপরোক্ত দো‘আ বলেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে”, তিনবার বলেন। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৩০১; আবু দাউদ, হাদীস নং ৯৮৫; আহমদ: (৪/৩৩৮)।]

আট.

«اللهم إني أسألك بأن لك الحمد، لا إله إلا أنت وحدك لا شريك لك، المنان، بديع السموات والأرض، يا ذا الجلال والإكرام، يا حي يا قيوم إني أسألك ...»

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বসা ছিলেন আর অপর এক ব্যক্তি সালাত পড়তে ছিল, অতঃপর সে উপরোক্ত দো‘আ করে। ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “সে আল্লাহর ইসমে আযমের মাধ্যমে দো‘আ করেছে, যে নামের মাধ্যমে দো‘আ করলে কবুল করা হয়, যার প্রার্থনা করলে ডাকে সাড়া দেওয়া হয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৯৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৫৮; সহীহ আবু দাউদ: (১/২৭৯); আহমদ: (৩/১৫৮), (৩/২৪২)।]

নয়.

«اللهم إني أسألك بأني أشهد أنك أنت الله لا إله إلا أنت، الأحد، الصمد، الذي لم يلد ولم يولد، ولم يكن له كفوًا أحد»؛

বুরাইদাহ থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে উপরোক্ত দো‘আ বলতে শোনেন, অতঃপর তিনি বলেন, “যার হাতে আমার নফস তার শপথ, সে আল্লাহর ইসমে আযমের মাধ্যমে দো‘আ করেছে, যে নামের মাধ্যমে দো‘আ করলে কবুল করা হয় এবং যে নামের মাধ্যমে প্রার্থনা করলে প্রদান করা হয়”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৪৯৩; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৫; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৫৭।]

দশ.

«اللهم بعلمك الغيب، وقدرتك على الخلق، أحيني ما علمت الحياة خيرًا لي، وتوفني إذا علمت الوفاة خيرًا لي، اللهم إني أسألك خشيتك في الغيب والشهادة، وأسألك كلمة الحق في الرضى والغضب، وأسألك القصد في الغنى والفقر، وأسألك نعيمًا لا ينفدُ، وأسألك قرة عين لا تنقطع، وأسألك الرضا بعد القضاء، وأسألك بَرْدَ العيش بعد الموت، وأسألك لذة النظر إلى وجهك، والشوق إلى لقائك في غير ضراء مُضرَّة ولا فتنة مُضلَّة، اللهم زيِّنا بزينة الإيمان، واجعلنا هداةً مهتدين»

আম্মারের হাদীসে আছে, তিনি তার সাথীদের সাথে খুব সংক্ষেপে সালাত আদায় করেন। উপস্থিত কেউ তাকে বলল: আপনি সালাত খুব সংক্ষেপ করলেন অথবা হালকা সালাত আদায় করলেন। তিনি বললেন: কিন্তু আমি এখানে এমন শব্দ দ্বারা দো‘আ করেছি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছি, অতঃপর তিনি উপরোক্ত দো‘আ বলেন।

এখানে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ চেয়ে যা ইচ্ছা দো‘আ করবে। যদি কেউ পিতা-মাতা ও অন্যান্য মুসলিমদের জন্য দো‘আ করে, তাতেও কোনো সমস্যা নেই, হোক সালাত ফরয কিংবা নফল। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন মাসউদকে তাশাহুদ শিক্ষা দিয়ে বলেন, “অতঃপর পছন্দ মতো দো‘আ করবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৩১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪০২।] এর দ্বারা বুঝা যায়, দুনিয়া ও আখিরাতের সকল কল্যাণ সালাতে প্রার্থনা করা যায়। [সিফাতুস সালাত: ইমাম ইবন বায: (১৮)।]

৩০
২৬. অতঃপর ডান দিকে ও বাম দিকে সালাম ফিরাবে এ বলে:
«السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله»

জাবের ইবন সামুরা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, তিনি বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতাম বলতাম:

«السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله»

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “চতুর ঘোড়ার লেজের ন্যায় তোমরা হাত দ্বারা কিসের দিকে ইশারা কর, রানের উপর হাত রেখে ডানে ও বামে তোমাদের ভাইদের সালাম দেওয়াই যথেষ্ট”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩১।]

আমের ইবন সাদ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখতাম, তিনি ডানে ও বামে সালাম ফিরাতেন, এমন কি আমি তার গালের শুভ্রতা দেখতে পেতাম”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮২্] অতঃপর সে ডানে অথবা বামে যে কোনো দিকেই ঘুরতে পারে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৫২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৭ ও ৭০৮।]

৩১
২৭. সালাত যদি তিন রাকাত বিশিষ্ট হয় যেমন মাগরিব অথবা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় যেমন জোহর, আসর ও এশা। তাহলে শুধু প্রথম তাশাহুদ পড়বে, তবে উত্তম হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দুরূদ পড়া, যেমন ইতোপূর্বে বর্ণনা করেছি।
অতঃপর পা ও হাটুর সম্মুখভাগ এবং রানের উপর ভর দিয়ে তাকবীর বলে দাঁড়াবে, উভয় হাত কান অথবা কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে, যেমন পূর্বে বর্ণনা করা হয়েছে। [সুনান আবু দাউদ, হাদীস নং ৮৩৮; তিরমিযী, হাদীস নং ২৬৮; নাসাঈ, হাদীস নং ১০৮৯; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৮৮২।] দ্বিতীয়তঃ আব্দুল্লাহ ইবন উমারের হাদীসে আছে: “যখন দু’রাকাত থেকে উঠবে উভয় হাত উঠাবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৭৩৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯০।] আবু হুমাইদ থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “অতঃপর যখন দু’রাকাত থেকে উঠবে তাকবীর বলবে ও উভয় হাত কাঁধ পর্যন্ত উঠাবে যেমন সালাতের শুরুতে উঠিয়েছিল, অতঃপর অবশিষ্ট সালাতে অনুরূপ করতে থাকবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮), আবু দাউদ, হাদীস নং ৭৩০।] এবং উভয় হাত বুকের উপর রাখবে। কারণ, ওয়ায়েল ইবন হুজরের হাদীসে আছে: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি সালাতে দাঁড়ানো অবস্থায় থাকতেন ডান হাত দ্বারা বাম হাত পাকড়াও করতেন”। [নাসাঈ, হাদীস নং ৮৮৭।] অতঃপর আস্তে সূরা ফাতিহা পড়বে। যদি জোহরের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে কখনো ফাতের চেয়ে অতিরিক্ত পড়ে তবে কোনো সমস্যা নেই। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৫২।] মাগরিবের তৃতীয় রাকাত এবং জোহর, আসর ও এশার তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাত পূর্বে বর্ণিত দ্বিতীয় রাকাতের ন্যায় পড়বে। কারণ, সালাতে ভুলকারী ব্যক্তিকে প্রথম রাকাত শিক্ষা দিয়ে বলেন, “অতঃপর তুমি পূর্ণ সালাতে অনুরূপ কর”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৩৯৭।]

৩২
২৮. দ্বিতীয় তাশাহহুদে তাওয়াররুক করে বসবে।
আবু হুমাইদ সায়েদীর হাদীসে আছে: “যখন দ্বিতীয় রাকাতে বসবে, তখন বাম পায়ের ওপর বসবে ও ডান পা খাড়া রাখবে। যখন শেষ রাকাতে বসবে, বাম পা আগে বাড়িয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া রাখবে ও নিতম্বের উপর বসবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮২৮।] এটাই তাওয়াররুক বসা।

৩৩
২৯. মাগরিবের তৃতীয় রাকাতে এবং জোহর, আসর ও এশার চতুর্থ রাকাতে তাশাহহুদের সাথে দরূদ পড়বে, যেমন পূর্বে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ৩০. ডান দিকে ও বাম দিকে এ বলে সালাম দিবে:
«السلام عليكم ورحمة الله، السلام عليكم ورحمة الله» .

৩৪
৩১. সালাম শেষে নিম্ন বর্ণিত আযকার ও দো‘আ পড়বে:
এক.

«أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله، اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»

সাওবান থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে তিনবার ইস্তেগফার করতেন এবং বলতেন [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯১।]:

«اللهم أنت السلام ...» الحديث .

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে নিম্নের দো‘আ পরিমাণ বসতেন [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯২।]:

«اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»

এর দ্বারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি এ দো‘আ পরিমাণ কিবলামুখী থাকতেন, অতঃপর মানুষের দিকে চেহারা ফিরাতেন। যেমন সামুরা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে আমাদের দিকে তার চেহারা ঘুরাতেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৫।]

দুই.

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير»

তিনবার। কারণ মুগিরা থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে: মুয়াবিয়া মুগিরার নিকট এ মর্মে পত্র লেখেন যে, আমাকে এমন একটি হাদীস শোনান যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনেছেন, তিনি লিখেন: আমি তাকে সালাত শেষে বলতে শোনেছি:

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»

তিনবার। তিনি আরো বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, সম্পদ নষ্ট করা, মায়ের অবাধ্য হওয়া ও মেয়েদের জীবিত দাফন করা থেকে নিষেধ করতেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৩।]

তিন.

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد [ يحيي ويميت، وهو حي لا يموت، بيده الخير ] [বন্ধনির মাঝখানের অংশ মুজামে তাবরানি: (২০/৩৯২), হাদীস নং (৯২৬) থেকে নেওয়া।] وهو على كل شيء قدير، اللهم لا مانعَ لما أعطيتَ، ولا مُعطيَ لما منعتَ [ ولا رادّ لما قضيتَ ] [বন্ধনীর মাঝখানের অংশ মুসনাদে আবদ ইবন হুমাইদ: (১৫০-১৫১) হাদীস নং: (৩৯১) থেকে নেওয়া।] ولا ينفع ذا الجدِّ منك الجدُّ»؛

মুগিরা ইবন শোবা মুয়াবিয়া ইবন আবু সফিয়ানের নিকট লেখেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতের পর বলতেন [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩৩০; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৬৩।]: «لا إله إلا الله وحده لا شريك له ...»

চার.

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد وهو على كل شيء قدير، لا حول ولا قوة إلا بالله، لا إله إلا الله، ولا نعبد إلا إياه، له النعمة، وله الفضل، وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون»؛

আব্দুল্লাহ ইবন জুবায়েরের হাদীসে আছে, তিনি প্রত্যেক সালাতের সালাম শেষে এগুলো বলতেন, অতঃপর বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রত্যেক সালাতের পর তাহলিল পড়তেন”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৪।]

পাঁচ.

«سبحان الله، والحمد لله، والله أكبر ( ثلاثًا وثلاثين ) لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩বার আল্লাহর তাসবিহ পড়ে, ৩৩বার আল্লাহর তাহমীদ পড়ে, ৩৩বার আল্লাহর তাকবীর পড়ে, এ হচ্ছে ৯৯বার এবং একশত বারে বলে:

لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير،

তার সকল পাপ ক্ষমা করে দেওয়া হবে, যদিও সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭।]

বিভিন্ন প্রকারের তাসবিহ, তাহমীদ ও তাকবীর বর্ণিত আছে, মুসলিমদের উচিৎ সবগুলোই পড়া, এক সালাতের পর এটা পড়া, আবার অন্য সালাতের পর অন্যটা পড়া। কারণ এতে অনেক উপকার বিদ্যমান: সুন্নতের অনুসরণ, সুন্নত জীবিতকরণ ও অন্তরের উপস্থিতি। [দেখুন: শারহুল মুমতি: (৩/৩৭); ফতোয়া শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া: (২২/৩৫-৩৭)]

৩৫
নিম্নে কতক তাসবীহ, তাহমিদ ও তাকবীরের দেওয়া হল:
প্রথম প্রকার: সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আল-হামদুলিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৩বার এবং শেষে বলবে:

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير»

এভাবেই একশত পুরো হবে, যেমন পূর্বে আবু হুরায়রার হাদীসে রয়েছে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৭।]

দ্বিতীয় প্রকার: সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আল-হামদুলিল্লাহ ৩৩বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪বার, এভাবে একশত পুরো হবে। কাব ইবন আজুরা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সালাতের পর কিছু তাসবীহ আছে, যার পাঠকারীরা কখনো বঞ্চিত হয় না, ৩৩বার তাসবীহ, ৩৩বার তাহমীদ ও ৩৪বার তাকবীর”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৬।]

তৃতীয় প্রকার: “সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার ৩৩বার করে ৯৯বার”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, গরিব মুহাজিরগণ রাসূলের নিকট এসে বলে: সম্পদশালীরা তো তাদের সম্পদের মাধ্যমে মহান মর্যদা ও জান্নাতের মালিক হয়ে যাচ্ছে, তিনি বললেন: “কীভাবে?” তারা বলল: আমরা যেরূপ সালাত আদায় করি, তারাও সেরূপ সালাত আদায় করে, আমরা যেরূপ সিয়াম পালন করি, তারাও সেরূপ সিয়াম পালন করে, তাদের অতিরিক্ত ফযীলত হচ্ছে তারা তাদের সম্পদ দ্বারা হজ করে, উমরাহ করে, জিহাদ করে ও সদকা করে। তিনি বললেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব, যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের নাগাল পাবে ও পরবর্তীদের অতিক্রম করে যাবে, তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে না, তবে যারা তোমাদের ন্যায় আমল করে তারা ব্যতীত?” তারা বলল: অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন: “তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩বার তাসবীহ, ৩৩বার তাকবীর ও ৩৩বার তাহমীদ পড়বে”। গরিব মুহাজিরগণ ফিরে এসে বলে, আমাদের সম্পদশালী ভাইয়েরা আমাদের আমল জেনে তারাও অনুরূপ আমল আরম্ভ করেছে, তিনি বললেন: “এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৫।]

চতুর্থ প্রকার: সুবহানাল্লাহ ১০বার, আল-হামদুলিল্লাহ ১০বার এবং আল্লাহু আকবার ১০বার। আব্দুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দু’টি স্বভাব যে কোনো মুসলিম আয়ত্ব করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যা খুবই সহজ কিন্তু তার ওপর আমলকারীর সংখ্যা খুব কম”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, প্রত্যেক সালাতের পর ১০বার তাসবিহ, ১০বার তাহমীদ ও ১০বার তাকবীর বলবে। এভাবে মুখে ১৫০বার উচ্চারণ করা হবে, কিন্তু মিজানে তার ওজন হবে ১৫০০ বলার”। [এটা এ কারণে যে, প্রত্যেক নেকি দশগুন বৃদ্ধি পাবে।] আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাত দিয়ে গুনতে দেখি। “যখন তোমাদের কেউ শুতে বিছানায় যাবে ৩৩বার তাসবিহ পড়বে, ৩৩বার তাহমিদ পড়বে ও ৩৪বার তাকবীর পড়বে, এভাবে মুখে ১০০বার হলেও মিজানে তার ওজন হবে ১০০০বার”। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের এমন কে আছে, যে দিনে দুই হাজার পাঁচ শত পাপ করে?” তাকে বলা হলো: আমরা তাহলে এগুলো কেন পড়ব না? তিনি বললেন: “তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন শয়তান আগমন করে বলে: এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর এবং ঘুমের সময় আসে অতঃপর তাকে ঘুম পারিয়ে দেয়”। ইবন মাজাহ’র শব্দ এরূপ: “শয়তান তাকে ঘুম পারানো চেষ্টা করে, অবশেষে সে ঘুমিয়ে যায়”। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৪৮;ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৯২৬; আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৬৫; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪১০; আহমদ: (২/৫০২); সহীহ সুনান নাসাঈ: (১/২৯০); সহীহ ইবন মাজাহ: (১/১৫২), হাকেম হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমাম জাহাবি তার সমর্থন করেছেন, হাকেম: (১/২৫৫)।] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি মারফূ হাদীসে আছে: “প্রত্যেক সালাতের পর ১০বার তাসবিহ পড়বে, ১০বার তাহমিদ পড়বে ও ১০বার তাকবীর বলবে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩২৯।]

পঞ্চম প্রকার: ১১বার তাসবীহ, ১১বার তাহমীদ ও ১১বার তাকবীর। সুহাইল তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন: “১১, ১১ ও ১১ সব মিলে ৩৩বার”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৪৩-৫৯৫।]

ষষ্ট প্রকার:

«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله،والله أكبر»

সবগুলো তাসবীহ ২৫বার বলবে। যেমন, যায়েদ ইবন সাবেত ও ইবন উমারের হাদীসে এসেছে। [নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৫০, ১৩৫১; তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪১৩;ইবন খুজাইমাহ, হাদীস নং ৫৭২; আহমদ: (৫/১৮৪), দারামী: (১/৩১২); তাবরানি, হাদীস নং ৪৮৯৮; ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০১৭; হাকেম: (১/২৫৩), তিনি হাদীসটি সহীহ বলেছেন, ইমান যাহাবী তার সমর্থন করেছেন।]

সপ্তম প্রকার:

আয়াতুল কুরসী পড়বে:

﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا يَ‍ُٔودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾ [ البقرة :255 ]

আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পড়বে, মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কোনো বাঁধা তার থাকবে না”। তাবরানি এর সাথে সূরা ইখলাসকেও সংযুক্ত করেছেন। [নাসায়ি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১০০), ইবন সুন্নি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলা: (১২১), তাবরানি ফিল কাবির: (১/১১৪), হাদীস নং ৭৫৩২।]

অষ্টম প্রকার: প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে। কারণ, উকবা ইবন আমের বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর এগুলো পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন”। [আবু দাউদ, হাদীস নং ১৫২৩; নাসাঈ, হাদীস নং ১৩৩৬; তিরমিযী, হাদীস নং ২৯০৩; সহীহ সুনান আবু দাউদ: (১/২৮৪); সহীহ সুনান তিরমিযী: (২/৮)।]

নবম প্রকার: ফজর ও মাগরিবের সালাতের পর ১০বার করে পড়বে:

«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، يحيي ويميت [ بيده الخير ] [বন্ধনীর অংশের জন্য দেখুন কাশফুল আসতার: (৪/২৫), হাদীস নং ৩১০৬।] وهو على كل شيء قدير»

কারণ আবু জর, মু‘য়ায, আবু আইয়াশ জারকি, আবু আইয়ূব, আব্দুর রহমান ইবন গুনম আশ‘আরী, আবু দারদা, আবু উমামা ও উমারাহ ইবন শাবিব সাবায়ী থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। [দেখুন: আবু যর থেকে বর্ণিত হাদীস, তিরমিযী, হাদীস নং ৩৪৭৪। তিনি হাদীসটি হাসান, গরিব ও সহীহ বলেছেন। আহমদ: (৫/৪২০)। দেখুন: আব্দুর রহমান ইবন গুনম আশআরি থেকে বর্ণিত হাদীস, আহমদ: (৪/২২৭), দেখুন: আবু আইয়ূব থেকে বর্ণিত হাদীস, আহমদ: (৫/৪১৪), সহীহ ইবন হিব্বান, হাদীস নং ২০২৩, দেখুন: আবু আইয়াশ থেকে বর্ণিত হাদীস, আহমদ: (৪/৬০), আবু দাউদ, হাদীস নং ৫০৭৭, ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৩৮৬৭, দেখুন: মুয়াজ থেকে বর্ণিত হাদীস, নাসায়ি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১২৬), ইবন সুন্নি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১৩৯), তাবরানী, হাদীস নং ৭০৫, দেখুন: উমারা ইবন শাবিব থেকে বর্ণিত হাদীস, নাসাঈ আমালিল ইয়াওম ও লাইলা: (৫৭৭), তিরমিযী, হাদীস নং ৩৫৩৪, দেখুন: আবু উমামাহ থেকে বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে মুনজিরি বলেন, “তাবরানি তার আওসাত গ্রন্থে সুন্দর সনদে এটা বর্ণনা করেছেন”, তারগিব ও তারহিব: (১/৩৭৫) হায়সামি বলেন: (এ হাদীসটি তাবরানি তার আওসাত ও কাবির গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আওসাত গ্রন্থের বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরযোগ্য”। মাজমাউ‘য যাওয়ায়েদ: (১০/১১১), দেখুন: আবু দারদা থেকে বর্ণিত হাদীস, হায়সামি তা মাজমাউ‘য যাওয়ায়েদ গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, এ হাদীস তাবরানি তার কাবির ও আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (১০/১১১)।] এদের সকলের হাদীসের সারমর্ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি মাগরিব অথবা ফজর সালাতের পর দশবার বলবে, আল্লাহ তার জন্য এমন প্রহরী প্রেরণ করবেন, যে তাকে শয়তান থেকে হিফাযত করবে সকাল পর্যন্ত এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে, সে ঐ দিন সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে, আল্লাহ তার জন্য দশটি নেকী লিখবেন ও তার দশটি পাপ মোচন করবেন, এগুলো তার জন্য দশজন মুমিন দাসির বরাবর হবে, আল্লাহর সাথে শিরক ব্যতীত অন্য কোনো পাপ সে দিন তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। সেই সবচেয়ে উত্তম আমলকারী হিসেবে গণ্য হবে, যদি কেউ তার চেয়ে উত্তম বাক্য না বলে।

দশম প্রকার: ফজর সালাত শেষে বলবে:

اللهم إني أسألك علمًا نافعًا، ورزقًا طيبًا، وعملاً مُتَقَبَّلاً

উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর সালাতের সালাম শেষে উপরোক্ত দো‘আ পড়তেন। [ইবন মাজাহ, হাদীস নং ৯২৫; আহমদ: (৬/৩০৫); সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/১৫২), দেখুন: মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (১০/১১১)।]

এগারতম প্রকার: বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতাম, তখন তার ডান পাশে দাঁড়াতে পছন্দ করতাম, তিনি আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন। তিনি বলেন, আমি তাকে বলতে শোনেছি [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭০৯।]:

«ربِّ قني عذابك يوم تبعث عبادك أو تجمع عبادك» .

বারোতম প্রকার: ফরয সালাত শেষে উচ্চ স্বরে আযকার পড়া সুন্নত। কারণ, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: “তাকবীরের মাধ্যমেই আমরা জানতাম রাসূলুল্লাহ সালাত শেষ করেছেন”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪২; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৩।] বুখারী বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরয সালাত শেষে উচ্চ স্বরে যিকির করার নিয়ম ছিল”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৮৪১; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৮৩।] ইবন হাজার রহ. বলেন, “উচ্চ স্বরে যিকির এর উদ্দেশ্য তারা উচ্চ স্বরে তাকবীর বলতেন, অর্থাৎ তারা তাসবীহ ও তাহমীদের পূর্বে তাকবীর বলতেন”। [ফাতহুল বারি: (২/৩২৬)।] এ ব্যাখ্যাকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীস আরো স্পষ্ট করে যে, আবু সালেহ বলেছেন: “আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ সবগুলোই ৩৩বার করে পড়বে, [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৫৯৫।] তিনি তাকবীর দ্বারা আরম্ভ করেছেন।

৩৬
৩২. সুনানে রাওয়াতিবগুলো পড়বে।
কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও ফজরের পূর্বে দু’রাকাত কখনো ত্যাগ করতেন না”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮২।] উম্মুল মুমিনীন উম্মে হাবিবা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি: “যে ব্যক্তি দিন ও রাতে বার রাকাত সালাত পড়বে, এর পরিবর্তে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন”। অপর বর্ণনায় আছে: “এমন কোনো মুসলিম বান্দা নেই যে প্রতি দিন বার রাকাত নফল সালাত আদায় করে, কিন্তু আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন না, অথবা তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে না”। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২৮।] এর ব্যাখ্যায় ইমাম তিরমিযী বাড়িয়ে বলেন, “চার রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’রাকাত জোহরের পর, দু’রাকাত মাগরিবের পর, দু’রাকাত এশার পর ও দু’রাকাত ফজরের পূর্বে”। [তিরমিযী, হাদীস নং ৪১৫।]

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দশ রাকাত মুখাস্ত করেছি: দু’রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’রাকাত জোহরের পর, মাগরিবের পর দু’রাকাত তার ঘরে, এশার পর দু’রাকাত তার ঘরে এবং ফজরের পূর্বে দু’রাকাত”। অপর বর্ণনায় আছে: “জুমার পর দু’রাকাত তার ঘরে”। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১১৮; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ৭২৯।]

অতএব, সুনানে রাওয়াতেব দশ রাকাত, যেমন ইবন উমার বলেছেন, অথবা বার রাকাত যেমন উম্মে হাবিবা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন। আমাদের শাইখ আল্লামা ইবন বাযকে বলতে শোনেছি: “যারা ইবন উমারের হাদীস গ্রহণ করেছে, তারা বলে সুন্নত দশ রাকাত, আর যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীস গ্রহণ করে, তারা বলে সুন্নত বারো রাকাত। ইমাম তিরমিযীর ব্যাখ্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীসকে শক্তিশালী করে, আর উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদীস এসব সুন্নতের ফযীলত বর্ণনা করে। হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বার রাকাত পড়েছেন, যেমন আয়েশা ও উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার হাদীসে আছে, কখনো দশ রাকাত পড়েছেন, যেমন ইবন উমার থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে। যখন আগ্রহ ও স্পৃহা থাকে বারো রাকাত পড়বে, আর যখন ব্যস্ততা থাকে দশ রাকাত পড়বে। তবে সবগুলো সুন্নতে রাওয়াতেব, হ্যাঁ পূর্ণতা হচ্ছে আয়েশা ও উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার হাদীস মোতাবেক বারো রাকাত পড়া”। [বুলুগুল মারামের (৩৭৪) নং হাদীসের ব্যাখ্যার সময় তার মুখে এ কথাগুলো আমি শ্রবণ করি।]

যদি কোনো মুসলিম জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও জোহরের পর চার রাকাত পড়ার ইচ্ছা করে আল্লাহ তার ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। যেমন, উম্মে হাবীবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি, তিনি বলেন, “যে ব্যক্তি জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও জোহরের পর চার রাকাত নিয়মিত পড়বে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন”। [আহমদ: (৬/৩২৬), আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৬৯; তিরমিযী, হাদীস নং ৪২৭; নাসাঈ, হাদীস নং ১৮১৪; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ১১৬০; সহীহ সুনান ইবন মাজাহ: (১/১৯১)। আমি আল্লামা ইবন বাজ রহ. কে বুলুগুল মারামের (৩৮১) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদীসের সনদ খুব সুন্দর, তবে ইবন উমার ও আয়েশার হাদীসে যা রয়েছে, তার উপর রাসূলের নিয়মিত আমল ছিল”। আমি বলি: আমি তাকে জীবনের শেষ বয়সেও দেখেছি, তিনি বসে বসে জোহরের আগে চার রাকাত ও জোহরের পরে চার রাকাত পড়তেন, আল্লাহ তার ওপর রহম করুন।]

যদি কোনো মুসলিম আসরের পূর্বে চার রাকাত পড়ার ইচ্ছা করে, আল্লাহ তার ওপর রহম নাযিল করবেন। ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«رحم الله امرءًا صلى أربعًا قبل العصر»

“আল্লাহ সে ব্যক্তির ওপর রহম করুন, যে আসরের পূর্বে চার রাকাত সালাত আদায় করল”। [আহমাদ: (২/১১৭), আবু দাউদ, হাদীস নং ১২৭১; তিরমিযী, হাদীস নং ৪৩০; সহীহ ইবন খুজাইমা, হাদীস নং ১১৯৩), সহীহ সুনান আবু দাউদ: ১/২৩৭। আমি আল্লামা ইবন বায রহ.-কে বলতে বুলুগুল মারামের (৩৮২) নং হাদীসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদীসের সনদ গ্রহণ করাতে কোনো সমস্যা নেই, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আসরের পূর্বে চার রাকাত পড়া বৈধ ও সুন্নত, তবে এটা সুন্নতে রাতেব নয়, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো এটা নিয়মতি পড়েন নি। আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পূর্বে দু’রাকাত পড়তেন। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আসরের পূর্বে দু’রাকাত অথবা চার রাকাত পড়া মুসলিমদের জন্য মুস্তাহাব”।]

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন