hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুক্তবাসিনী-২

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

১২
বেনারশীতে আগমন কাফনে বিদায়
মানুষের স্মৃতিশক্তি খুবই দুর্বল। এক সময় যে ঘটনা সকলের আত্মা বিদীর্ণ করে, সময়ের আবর্তনে সে ঘটনাই মানুষ অবলীলায় ভুলে যেতে পারে। এক সময় এমনও আসে যে এরূপ ঘটনা সে কোনোদিন শুনেছে বলেই স্মরণ করতে পারে না। তাই আমরা স্থায়ী স্মৃতির পাতায় লিখে যাই এসব ঘটনা। বর্তমান, ভবিষ্যত সবসময় যেন এসব ঘটনা মানুষের হৃদয়ে নাড়া দেয়, তাদের ঘুমন্ত বিবেককে জাগ্রত করে তোলে- এই উদ্দেশ্যে।

সকাল থেকে একটা প্রাইভেটকার উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘোরাঘুরি করছে। কোথায় তার গন্তব্য তা কেউ জানে না। এমনকি জানে না গাড়ির চালকও। দামী গ্লাস ভেদ করে গাড়ির যাত্রী কে- তাও ঠিকমতো ঠাহর করা যায় না। উদ্ভ্রান্ত-বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরাঘুরি করে শেষ পর্যন্ত গাড়িটি মৎসভবনের সামনে গিয়ে থেমে গেল। পুলিশ ধাওয়া করে আটক করল চালককে। চালক ছাড়া মাত্র একজন যাত্রী গাড়িতে। গাড়ির ঝাঁকুনিতেও নিস্তব্ধ যাত্রী। নিষ্পলক নীরব হয়ে বসে আছে সে। সন্দেহ করার মতোই ব্যাপার। পুলিশ যাত্রীকে সম্বোধন করল। কিন্তু তবু তার সাড়া নেই। সন্দেহ বাড়ে পুলিশের। এবার যাত্রীকে নাড়া দেয় তারা। পুলিশের মৃদ ধাক্কায় বোঁটা ছিঁড়ে টুপ করে পড়া পাকা ফলের মতো গাড়ির সিটে পড়ে যায় যাত্রী। গাড়ির চালকের চেহারায় তখন রাজ্যের আতঙ্ক। পুলিশ দ্বিধা-সঙ্কোচে আড়ষ্ট। বাক্যহীন নীরবতায় কেটে গেল বেশকিছু সময়। পুলিশ তাদের দায়িত্ববোধে জেগে ওঠে।

যাত্রীর মুখ থেকে পর্দা সরিয়ে দেয় তারা। পুলিশের হাজারো বিভীষিকাময় অভিজ্ঞতা আছে। তাই তারা সহজে ভড়কায় না। কিন্তু আজকের এই দৃশ্যটা তাদেরকেও ভড়কে দিল। একটি গর্ভবতী নারীর গোটা দেহে ভয়ানক আঘাতের সব চিহ্ন! আঘাতে আঘাতে তার শরীর নীল হয়ে আছে। পেটের যে আকৃতি, তাতে গর্ভের বয়স নয় মাসের কম নয় কোনোমতেই। তবে বাচ্চাটার কী অবস্থা! সেও কি মায়ের সাথে পরপারের বাসিন্দা হয়েছে এতক্ষণে? নাহ্ আর বিলম্ব করা যায় না। থানায় নিয়ে সব রহস্য উন্মোচন করতে হবে।

পুলিশের কাছে দেয়া বিবরণ নিম্নরূপ :

সৈয়দ কামরুন্নাহার নাদিয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসনের ছাত্রী তিনি। মাস্টার্স পাশ করার পর তিনি বিজনেস এডমিনিস্ট্রে পড়ছিলেন। বাবা মৃত। পেশায় ছিলেন আইনজীবি। আর বরিশালের গৌরনদী থানার টরকীতে অবস্থিত মেঘনা পেট্রোলিয়ামের স্বত্ত্বাধিকারী শফিক। এক জিঘাংসু চরিত্রের মূর্তপ্রতীক। ২০০৩ ইং সালের ১লা এপ্রিল। সেদিন তার পিতা ছুরিকাঘাতে মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছিলেন। একজন আদম সন্তান তাকে এভাবে হত্যা করেছিল। জানেন কে সেই আদম সন্তান? এই শফিকই সেই আদম সন্তান! সেদিন নিজ পুত্রের হাতেই মর্মান্তিকভাবে নিহত হয়েছিলেন জন্মদাতা পিতা।

শফিকের রক্তে খুনের নেশার সাথে সাথে যৌবনে ছিল অনৈতিকার নেশা। নারী কেলেঙ্কারী এবং বিয়ে পাগলামো ছিল তার দুধেচিনির স্বভাব। ছাত্র জীবনেই মুক্তবাসের পুরোপুরি ফায়দা উঠিয়েছিলেন তিনি। বেপর্দা আর উচ্ছৃঙ্খল জীবনের গোটা রকমের সুবিধা আদায় করে নিয়েছিলেন। ছাত্রজীবনের সেই অভিজ্ঞতা ভোলেন নি। তাই সাংসারিক জীবনে এসে ঘটিয়েছেন এর পূর্ণ প্রয়োগ। প্রথমে বিয়ে করেছিলেন গাজীপুর জেলার নূরজাহানকে (ছদ্মনাম)। মন থেকে স্ত্রীর মর্যাদা না দিয়ে নুরজাহানকে তিনি অন্য দশটি ভোগ্যসামগ্রীর মতোই ব্যবহার করেন। আর ভোগ্য সামগ্রীর কপালে যা জোটে নুরজাহানের কপালেও তাই ঝুটেছিল।

একটিমাত্র সন্তান জন্ম দিতেই শফিকের দৃষ্টিতে সে ঝুড়িতে পড়ে থাকা পুরানো ক্যালেণ্ডার আর ফ্লাস্কে জমে থাকা ঠান্ডা চায়ের মতো বেকদর হয়ে যায়। ফলে তাকে ফেলে নতুন শিকারের নেশায় ছুটতে শুরু করে শফিক। এরপর মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলার ঠেঙ্গামারা গ্রামের আঃ খালেক হাওলাদারের মেয়ে সুবর্ণাকে বিয়ে করে। কিছুদিন পর তার কদরও কমে যায়। তাই শফিক আবার ছুটতে শুরু করে নতুন শিকারের আশায়। এবার তাকে বেশি দূর যেতে হয় না। নতুন ও তৃতীয় শিকার সুবর্ণারই ছোট বোন! বড়বোনকে তালাক না দিয়েই সে সুবর্ণার ছোট বোন সুজিতাকে ২০০৭ইং সালে বিয়ে করে।

শরীয়তের দৃষ্টিতে এরচেয়ে জঘন্য পাপকর্ম আর কী হতে পারে? কিন্তু মুক্তবাসের এই স্রোতে এই সমাজে পাপের অনুভূতিগুলোই ভোতা হয়ে এসেছে! শফিকরা কোনটা বড় পাপ, কোনটা ছোট পাপ সেসবের হিসেব কমই করে। কিন্তু হাজার হলেও মুসলিম দেশ। এদেশের মানুষের মনে এখনও ইসলামের মায়া আছে। তারা এখনও অনৈতিকার চরম অবস্থা দেখে ক্ষুদ্ধ হন, ব্যথিত হন এবং এধরনে দুরাচারদেরকে মাঝেমধ্যে কিছু দেখিয়ে দেন। তাই ঠেঙ্গামারা গ্রামের লোকেরা তাকে আচ্ছা মতো ঠেঙ্গানী দিয়েই গ্রাম থেকে বিতাড়িত করেন। ঠেঙ্গা খেয়ে, সে ঢাকায় চলে আসে এবং এক স্ত্রীকে ঢাকায় ও অপর স্ত্রীকে টরকীতে রাখে। এভাবে দুইবোনকে নিয়ে একসাথে সংসার করে শফিক। দিনেদুপুরে চালিয়ে যায় একটি জঘন্য অপরাধ।

এই শফিকেরই ৪র্থ স্ত্রী নাদিয়া। আজ এটাই তার বড় পরিচয় এবং এই পরিচয়ই তাকে এমন নিষ্ঠুর পরিণতির কাছে টেনে এনেছে। পুলিশের কাছে শফিকের বর্ণনা অনুযায়ী সে তাকে আগের দিন সারাদিন পিটিয়েছে। হাত, পা ও মুখ বেঁধে পেটানো হয়েছে নাদিয়াকে। হায় নিষ্ঠুরতা! স্বামীর এই নির্যাতনের সময় তিনি গর্ভবতী ছিলেন। শুনেছি পৃথিবীর সব পুরুষরাই নাকি এই সময়টাতে স্ত্রীর প্রতি অধিক পরিমাণ টান অনুভব করে। স্ত্রীর প্রতি সহমর্মিতা দেখায়। কিন্তু মুক্তবাসের ভয়ানক ছোবল শেষ পর্যন্ত আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক শিষ্টাচারগুলোকে এভাবে গ্রাস করে নিল যে, একজন অন্তঃসত্ত্বাকেও এখন অবলীলায় ও নির্মমভাবে প্রহার করা হয়?

প্রহারের আঘাত সইতে না পেরে নাদিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়েন। শফিক তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু জ্ঞান ফেরেনি তার। ফলে গভীর রাতে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে সে। হত্যা করার পর লাশ গুম করার প্রশ্ন। এ উদ্দেশ্যে সারাদিন লাশ নিয়ে গাড়িতে ঘোরাঘুরি করে শফিক। এসময় বারবার ফোন দিতে থাকেন নাদিয়ার মামা। একেক সময় একেক জবাব দেয় শফিক। শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে মৎসভবনের সামনে গিয়ে। [তথ্যসূত্র : দৈনিক আমার দেশ ২৫/০৪/২০১১]

নাদিয়ার কপালে এভাবে চরম দুর্ভোগ নেমে এলো। এমন একটি পরিণতির জন্য দায়ী কারা বা কী? মর্মান্তিক ঘটনাটা যেদিন পত্রিকায় আসে সেদিন হত্যাকাণ্ডের কোনো কারণ উল্লেখ ছিল না। কিন্তু ঘটনা পাঠ করেই আমার মনে সংশয় জেগেছিল হয়ত নারীঘটিত কোনো কারণ বা উচ্ছৃংখল জীবনের কোনো সূত্র এখানে থাকবেই। প্রথম দিকে হত্যাকাণ্ডের নানা রকম কারণ উল্লেখ করা হলেও পরে রিমান্ডে শফিক স্বীকার করেছে স্ত্রীর কিছু অনৈতিক আচরণের কারণেই সে এমন নিষ্ঠুর কাজ করেছে। সে আরও জানায়, নাদিয়া এক কলেজ ছাত্রের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ রাখতেন, তার সাথে মাঝেমধ্যে মোটরসাইকেলে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও বেড়াতেন।

মানুষের স্বভাবটা যে স্বৈরাচারী তার একটা প্রমাণ এসব ঘটনা। নিজে যে করছেন তা অন্যের বেলায় দেখলেই গা জ্বলে যায়। শফিক নিজেই যা করছেন স্ত্রীর কাছ থেকেও সে ধরনের আচরণ প্রকাশ পেতেই পারে। কিন্তু তা সহ্য করবেন কেন? তাই নিজে হাজারও অপরাধ করলেও ঠিকই স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন। সমাধানযোগ্য অপরাধের শাস্তি দিয়েছেন চরমভাবে।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করে প্রকাশ করেছেন পরম পৌরুষ! নারীর ভুলে আর পুরুষের পৌরুষে এভাবেই রচিত হচ্ছে নির্মম আখ্যান। সামাজিক ভারসাম্যহীনতা, নৈতিকাবোধের অভাব, পরস্পরে বোঝাপড়ার ঘাটতি ইত্যাদি কারণে আমরা নিত্যদিন মুখোমুখি হচ্ছি এসব বিব্রতকর পরিস্থিতির সামনে। কবে আমাদের সমাজ সংশোধনের পথে হাঁটবে, সামাজিক শান্তির পথে কদম ফেলবে? কাঙ্ক্ষিত সেই দিনের অপেক্ষা করা ছাড়া কীই বা করার আছে আমাদের? আর কতদিন আমাদের বাঙালী বধুরা এভাবে বেনারশীতে আগমন করে কাফন পরে বিদায় নিতে থাকবে? প্রগতির ধ্বজাধারীরা কি এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করে দেখবেন?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন