hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুক্তবাসিনী-২

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

৩২
বিবর্তনে বিপর্যয়
আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সুন্দর অবয়ব দিয়ে, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ স্বতন্ত্র মাখলুক ‘মানুষ’ হিসেবেই দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। তাই মানুষ কোনো ভিন্ন শ্রেণী বা প্রাণী থেকে বিবর্তন হয়ে এই পর্যায়ে পৌঁছেনি। অতএব, আজকে যারা মানুষ আগেও তারা মানুষ ছিল, তাদের পূর্বপুরুষ কখনও বাঁদর ছিল না। এমনকি যারা নিজেদের পূর্বপুরুষ বাঁদর ছিল বলে দাবি করে তাদের পূর্বপুরুষরাও ‘স্বভাবগতভাবে’ বাঁদর থাকলেও সৃষ্টিগতভাবে বাঁদর ছিল না।

কথাটি এজন্য বললাম যে, বিবর্তনবাদের প্রবক্তা বিজ্ঞানী আইনস্টাইন একজন ইহুদী এবং সবাই জানেন যে, পৃথিবীতে ইহুদীদের মতো এমন বাঁদরামো স্বভাবের কোনো জাতি আসেনি। আইনস্টাইন হয়ত পূর্বপুরুষদের এমন স্বভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এই তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছেন এবং মানুষের মধ্যে প্রচার করে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তার পূর্বপুরুষদের অনেককে বাঁদর, শূকর ও গুঁইসাপ ইত্যাদি প্রাণীতে বিকৃত করলেও তাদের বংশ বিস্তৃত হয়নি। কেননা, বিকৃত হওয়া কোনো জীব থেকে বংশ বিস্তার হয়নি। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-

وَعَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا ، قَالَتْ : سَأَلُتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم عَمَّنْ مُسِخَ أَيَكُونُ لَهُ نَسْلٌ ؟ قَالَ : مَا مُسِخَ أَحَدٌ قَطُّ فَكَانَ لَهُ نَسلٌ ، وَلاَ عَقِبَ رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى الْمَوْصِلِيُّ

‘উম্মে সালামা রাদিআল্লাহ তা‘আলা আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, যে সব প্রাণীর চেহারা বিকৃতি ঘটেছে তাদের কি বংশ বিস্তার ঘটেছে? জবাবে তিনি বললেন, যারা বিকৃতির শিকার হয়েছে তাদের বংশ বিস্তার ঘটেনি এবং তাদের কোনো উত্তরসূরীও নেই।’ [মুসনাদ আবী ইয়ালা : ৬৯৬৭, যঈফ।]

কিন্তু মানুষ নির্বোধের মতো তার এই তত্ত্বকে পৃথিবীর সুন্দরতম তত্ত্ব বলে আখ্যায়িত করেছে! অবশ্য সৃষ্টিগতভাবে মানুষের দেহাবয়বের বিবর্তন ঘটে না বটে কিন্তু মানসিকতায় বিবতর্ন ঘটে অতি অবশ্যই। সেই বিবর্তন থেকেই বহুমাত্রিক পরিবর্তন ঘটে, বিপ্লব ঘটে, ইতিহাস রচিত হয়, ট্রাজেডি ঘটে, মর্মান্তিক আখ্যান রচিত হয়, স্বাধীনতা অর্জিত হয়, স্বাধীনতা বিপন্ন হয়, জাতির অগ্রগতি সাধিত হয়, জাতি পশ্চাদপদতার সমুদ্রে নিমজ্জিত হয়।

মোটকথা, মানসিক বিবর্তন ও চিন্তাগত পার্থক্যের কারণেই জাতির সফলতা ও ব্যর্থতার গতিপথ নিরূপিত হয়। ইতিহাসের বড় বড় ট্রাজেডি আর মর্মান্তিক ঘটনার জনক কিন্তু এই মানসিক বিবর্তন। বিবর্তিত মানসিকতাই ঠিক করে এই জাতি কোন পথে চলবে এবং জাতির মানসিকতায় যখন স্বাধীনতার মর্যাদা সমুন্নত থাকে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে পছন্দ করে তখন তারা স্বাধীন জাতি হিসেবেই বাঁচতে পারে। আর যখন গোলাম জিঞ্জির থোরাই কেয়ার করে তখন পরাধীনতা তার ভাগ্যলিখন হয়ে যায়।

মানসিক বিকৃতির কারণেই আমরা আমাদের অনেক সম্পদ হারিয়েছি, পৃথিবীর জান্নাত বহু দেশ হারিয়েছি, ঐতিহ্যমণ্ডিত অনেক জনপদ হাতছাড়া করেছি। যে স্পেন মুসলিমদের রত্ম আর গৌরবের প্রাণকেন্দ্র ছিল আজ তা কেবলই স্মৃতি। স্পেনের আজকের পরিস্থিতি দেখে মনেই হয় না যে এই দেশটি দীর্ঘ আটশত বছর মুসলিমরা শাসন করেছিলেন। এখানে জন্ম নিয়েছিলেন ইমাম কুরতুবী, ইমাম ইবন আব্দুল বার রহ., ইমাম ইবন হাযম রহ., বিখ্যাত কবি মুহাম্মাদ ইবন কিন্দী প্রমুখের মতো ইতিহাসখ্যাত ব্যক্তিবর্গ।

আলহামরা রাজপ্রাসাদ আজ হাজার ক্রুসের মধ্যেও ইসলামী কারুকার্য ও স্থাপত্যশিল্পের ভূবন মাতানো নিদর্শনের রাজসাক্ষী হয়ে সমহিমায় দণ্ডায়মান। কিন্তু এর এই নিরহ ও নিষ্প্রাণ অস্তিত্ব হৃদয়ের রক্তক্ষরণের কারণ বৈকি। আজ সেখানকর মিনারগুলো থেকে আযানের মধুর ধ্বনি উচ্চকিত হয় না, মসজিদগুলো মুখরিত হয় না মুসল্লিদের আনাগোনায়। এক সময় এখানে কুরআন, হাদীস, তাফসীর, ফিকহ এবং হাজার রকমের ইলম ও দ্বীনচর্চার মেলা বসত। ইলমী নববীর বাজার গরম থাকত। কিন্তু আজ! আজ সেখানে বসে জুয়ার মেলা, খেল-তামাশার মেলা!

শুধু স্পেন নয় এবং স্পেনের দুয়েকটি উপমা নয়। এরূপ আরো অনেক রাষ্ট্র হাতছাড়া হওয়ার এবং বহু ইসলামী ঐতিহ্য ম্লান হওয়ার দুঃখজনক ইতিহাস আছে। সেগুলো স্মরণ করতে চাই না, স্মরণ করতে গেলে বুক ফেটে কান্না আসে।

এই বিপর্যয় কিন্তু মানুষ বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয়নি। বরং মানসিকতার বিলুপ্তির কারণে সংঘটিত হয়েছে। মানসিকতায় যখন পরিবর্তন এসেছে, মানসিকতার বিকৃতি ঘটেছে, সুন্দর মানসিকতায় কুৎসিতরূপ বাসা বেঁধেছে তখন একে একে বিপর্যয় নেমে এসেছে। আজ আমরা সেই মানসিক বিকৃতির শিকার। বিভিন্ন স্থান থেকে ভয়ানক সব তথ্য আসছে আমাদের কাছে। বিস্মিত হচ্ছি আর ভয়ে শিউরে উঠছি।

আচ্ছা বলুন তো, আজকাল কি আমাদের এই মুসলিম দেশটিতে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার লোকের অভাব আছে? নাস্তিক-মুরতাদ আর পশ্চিমাদের দালালরা জাহান্নামটাকে বলতে গেলে পুরোটাই বুকিং দিয়ে রেখেছে! জাহান্নামে জায়গারও অভাব নেই, যাওয়ার লোকেরও অভাব নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

﴿ وَتَمَّتۡ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَأَمۡلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنَ ٱلۡجِنَّةِ وَٱلنَّاسِ أَجۡمَعِينَ ١١٩ ﴾ [ هود : ١١٩ ]

‘আল্লাহ তা‘আলার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হবে। জাহান্নাম পূর্ণ হবে জিন এবং ইনসান দ্বারা।’ {সূরা হূদ, আয়াত : ১১৯}

কিন্তু একজন নামাযী ব্যক্তি হয়ে, ‘ইসলামী মাইন্ডের’ লোক হয়ে জোর করে সেখানে যাওয়ার এত গরজ কেন? কেন আমাদের তৎপরতা থেমে নেই? আল্লাহর সাথে, আল্লাহর বিধানের সাথে নাফরমানী করে, ধৃষ্টতা দেখিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত জাহান্নামে যাওয়ার পথ প্রশস্ত করছি! তবে আমরাও কি আমাদের প্রিয়ভূমি বাংলাদেশটাকে হারানো ঐতিহ্যের দেশে পরিণত করতে চলেছি? আমাদের মানসিক বিকৃতি ও পরিবর্তন কি তবে আমাদের স্বকীয়তা ও ঐতিহ্য ধ্বংস করে দেবে? নাস্তিক-মুরতাদদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরাও আমাদের দেশটাকে ইসলাম শূন্য করতে মরিয়া হয়ে উঠেছি?

ঘটনাটা উত্তরা মডেল কলেজের। এটি ঢাকার নামকরা কলেজের একটি। আমেরিকানরা সেই ১৯৪২ সালে জাপানের ওপর আণবিক বোমা নিক্ষেপ করে চলে গিয়েছিল। কিন্তু জাপানীরা আজও তার দায় চুকাচ্ছে। এখনও অনেক শিশু বোমার প্রভাবে বিকলাঙ্গ কিংবা প্রতিবন্ধি হয়ে জন্মগ্রহণ করে। এতদিন পরেও আমেরিকানদের ছোঁড়া বোমার বিষক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটেনি। কিন্তু আমেরিকা জাপানের যে ক্ষতি না করতে পেরেছে বৃটিশরা ভারত উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময় তার চেয়েও বড় ক্ষতি করে গেছে আমাদের।

সহশিক্ষা নামের যে বিষবৃক্ষ তারা এখানে রোপণ করে গেছে হয়ত কেয়ামত পর্যন্তও তার ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে না। এই একটিমাত্র বিষের আঘাতে চূর্ণবিচূর্ণ হবে আমাদের দেশের ধর্মীয় ঐতিহ্য, নিজস্ব সংস্কৃতি, আচার-আচরণ এবং হাজারও অনাচার। একে কেন্দ্র করে ভেঙে চূরমার হয়ে যাবে আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য, বাড়তে থাকবে যেনা-ব্যভিচার, সংঘটিত হবে নারীঘটিত নানা রকম অপরাধ। এই বাস্তবতা আমাদের সামনে, নিজ চোখে আমরা দেখতি পাচ্ছি এসবের আলামত।

তো সহশিক্ষার বিষে এমনিতেই যেখানে আমাদের ঐতিহ্য বেদনায় নীল হয়ে আছে সেখানে কাঁটা গায়ের ওপর নূনের ছিঁটার মতো কাজ করছে পর্দাবিরোধী নানা তৎপরতা। এই কলেজের অধ্যক্ষ সাহেব বোরকা পরিহিত ছাত্রীদেরকে কলেজে আসার পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। ঘটনাটি ২৯ ফেব্রুয়ারির। কয়েকজন ছাত্রী বোরকা পরে কলেজে যাওয়ায় তিনি তাদেরকে ডেকে বোরকা পরতে বারণ করেছেন এবং কলেজের দারোয়ানদের আদেশ দিয়েছেন যাতে বোরকা পরিহিত কোনো ছাত্রী কলেজে ঢুকতে না পারে।

এ বিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে অধ্যক্ষ বিগ্রেডিয়ার গোলাম হোসেন বলেন, স্কুলের একটা ড্রেসকোড আছে। এটা সবাইকে মানতে হবে। এর সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বোরকা অ্যালাউ করা সম্ভব নয়।’ তিনি লম্বা বোরকাকে ‘অড’ বা দৃষ্টিকটু ড্রেস হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, একটি মেয়ে এ বিষয়ে জোরালো আপত্তি করেছে। সে পায়ের নখ পর্যন্ত বোরকা পরে এসেছে। এটা দৃষ্টিকটু। তার বোন এসেছিল সঙ্গে, সে খুব গোঁড়া। সে বলছে তার বোন এই বোরকা পরেই পরে আসবে। আমরা এটা অ্যালাউ করতে পারি না। তাই তাকে ক্লাসে ঢুকতে দেয়া হয় নি।’

শুধু এখানেই থামেন নি তিনি। সামনের ভর্তির মৌসুমে বোরকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নির্দেশনা জারি করবেন বলে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন! কী ভয়ানক ব্যাপার! একটি মুসলিম দেশের একজন মুসলিম নারী বোরকা পরে কলেজে আসবে সেই সুযোগও নাকি তাকে দেয়া হবে না! বোরকা নাকি দেখতে দৃষ্টিকটু!

অধ্যক্ষ সাহেবকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, এই স্কুলের অন্য একছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ছেড়ে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তো যে ছাত্রীর অশ্লীল ভিডিও ছেড়ে তার সম্ভ্রমহানী করা হয়েছে তার সম্ভ্রম রক্ষায় আপনি কী করেছিলেন? নাকি সেটা খুব দৃষ্টিমধুর ছিল? পর্দা করা দৃষ্টিকটু, আর পর্দা না করার কারণে সম্ভ্রমহানী হওয়া দৃষ্টিমধুর! একটি ছাত্রীর ইজ্জত আর সম্ভ্রম রক্ষা করতে পারেন না, কিন্তু কেউ নিজ থেকে সম্ভ্রম রক্ষার চেষ্টা করলে তাতে বাধ সাধেন? বুঝি একেই বলে ‘ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিলের বেলায় গোঁসাই!

আপনি বলেছেন, মাথা থেকে পা পর্যন্ত বোরকা দৃষ্টিকটু লাগে তাই কোটের মতো বোরকা পরার অনুমতি দিয়েছি! নারীরা কোন ধরনের বোরকা পরবে সেটা নিরূপণ করার আপনি কে? স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলাই তো সেটা কুরআনে বাতলে দিয়েছেন! তিনি আদেশ দিয়েছেন-

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّبِيُّ قُل لِّأَزۡوَٰجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَآءِ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ يُدۡنِينَ عَلَيۡهِنَّ مِن جَلَٰبِيبِهِنَّۚ ٥٩ ﴾ [ الاحزاب : ٥٩ ]

‘হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণ, কন্যাগণ এবং মুমিন নারীগণকে বলুন, তারা যেন চাদর তাদের ওপরে টানিয়ে দেয়।’ {সূরা আল-আহযাব, আয়াত : ৫৯}

চাদর বা বোরকায় দেহের কতটুকু আবৃত করতে হবে তা মুফাসসির, ফকীহ ও ইসলামী মনীষাগণ স্পষ্টাকারে উল্লেখ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু বলেন-

أَمَرَ اللَّهُ نِسَاءَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا خَرَجْنَ مِنْ بُيُوتِهِنَّ فِي حَاجَةٍ أَنْ يُغَطِّينَ وُجُوهَهُنَّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِنَّ بِالْجَلاَبِيبِ ، وَيُبْدِينَ عَيْنًا وَاحِدَةً .

‘আল্লাহ তা‘আলা আলোচ্য আয়াতে নারীদেরকে চাদর বা বোরকার মাধ্যমে সারা শরীর এবং মুখমণ্ডল ঢেকে রাখার আদেশ দিয়েছেন। আর দেখার জন্য একটিমাত্র চোখ খোলা রাখার অবকাশ আছে।’ [তাফসীরে তাবারী : ১৯/১৮১]

তাঁকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি মোটা একটি চাদর নিয়ে বাম চোখ ছাড়া সারা শরীর আবৃত করে বললেন, কুরআনে এভাবে চাদর টেনে দেয়ার কথ বলা হয়েছে। আবূ বকর ইবনুল আরাবী রহ. বলেন-

تُغَطِّي بِهِ وَجْهَهَا حَتَّى لَا يَظْهَرَ مِنْهَا إلَّا عَيْنُهَا الْيُسْرَى

অর্থাৎ সারাশরীর তো আছেই, বাম চোখ ছাড়া গোটা মুখও ঢেকে রাখতে হবে। [আহকামুল কুরআন ইবন আরাবী : ৬/৪৪৪]

অধ্যক্ষ সাহেব মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত বোরকাবৃত করাকে দৃষ্টিকটু বলেন, অথচ কুরআনের বিধানই হচ্ছে এরূপ-

ومن الأدلّة القرءانيّة على احتجاب المرأة وسترها جميع بدنها حتى وجهها، قوله تعالى : { يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ } ، فقد قال غير واحد من أهل العلم : إن معنى : { يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ }: أنهن يسترن بها جميع وجوههن، ولا يظهر منهن شىء إلا عين واحدة تبصر بها، وممن قال به : ابن مسعود، وابن عباس، وعبيدة السلماني وغيرهم

‘নারীদের সমস্ত শরীর এবং মুখমণ্ডল ঢেকে রাখা ফরজ হওয়ার স্বপক্ষে প্রমাণ হচ্ছে আলোচ্য আয়াত। আহলে ইলম বলেন, নারীরা চাদর টেনে দেবে কথাটির অর্থ হচ্ছে তারা সমস্ত দেহ এবং পুরো মুখ আবৃত করবে এবং দেখার জন্য একটিমাত্র চোখ ছাড়া আর কোনো অংশ উন্মুক্ত রাখবে না। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু, উবায়দা সালমানী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু প্রমূখ বিখ্যাত সাহাবী ও ফকীহগণ এরূপ বলেছেন। [আজওয়াউল বায়ান ফী ইযাহিল কুরআন : ৬/২৪৩]

আয়ছারুত তাফাসীর গ্রন্থে বলা হয়েছে-

الغَايَةُ مِنْ ذَلِكَ التَّسَتُّرُ

‘এই নির্দেশের আসল কথা হচ্ছে, পূর্ণরুপে পর্দা করা।’

তো কুরআন যেখানে সারা শরীর আবৃত করার আদেশ দিয়েছে সেখানে অধ্যক্ষ সাহেবের কাছে তা দৃষ্টিকটু লাগে! তিনি কোটের মতো বোরকা পরার অনুমতি দেন? আল্লাহর ওপর খোদকারী করে তিনি এখন পর্দার মাপকাঠি বাতলাচ্ছেন? এই কোটের মতো বোরকা পরে লাভ কী? তাতে তো নারীদেহ আরও স্ফীত দেখায়, পুরুষদের লালসা তীব্র করে! তিনি কি তবে নিজের অগোচরেই নারীদেহকে পুরুষদের লালসা বৃদ্ধিতে উস্কে দিতে চান?

এ পর্যন্ত এসে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু নিজের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে অধ্যক্ষ সাহেব যে কথাটা বলেছেন তা শুনে হোঁচট খাওয়া নয়, যেন ভিমরিই খেলাম! তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পর্দার বিরুদ্ধে যাবো কেন? আমি হাজী সাহেব মানুষ, পাঁচওয়াক্ত সালাত পড়ি, বাড়িতে নারীরা বোরকা পরিধান করে।’

হাজী সাহেব! হজ্জ্ব করতে গিয়ে ইহরামের যে সাদা কাপড় পরিধান করেছিলেন সেটা কার নির্দেশে পরেছিলেন? যিনি ইহরামের কাপড় পরিধান করার আদেশ দিয়েছেন তিনিই কি পর্দা করার আদেশ দেননি? ওই নির্দেশ পালন করতে পারলে এই নির্দেশের অসম্মানী করলেন কেন? আল্লাহ তা‘আলার সব বিধান মনেপ্রাণে সম্মান ও পালন না করা ছাড়া কি কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারে?

﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱدۡخُلُواْ فِي ٱلسِّلۡمِ كَآفَّةٗ ٢٠٨ ﴾ [ البقرة : ٢٠٨ ]

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণরুপে ইসলামে প্রবেশ করো।’ {সূরা আল-বাকারা, আয়াত : ২০৮}

একজন নামাযী ব্যক্তি আর হাজী সাহেবের মানসিক এই বিবর্তন কিন্তু আমাদের জন্য কম আতংকের কারণ নয়। লেবাস-পোশাকে ঠিক থেকে মানসিকতায় পরিবর্তন হওয়াই কিন্তু বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। বাইরে ইসলামের রূপ ধারণ করে ভেতরে ভেতরে ইসলামের প্রতি অসম্মান আর অশ্রদ্ধা করার কারণেই অতীত যুগে মুসলিম বিশ্বে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। আমাদের শিক্ষামহল থেকেই কি তবে সেই ধারার সূচনা হতে যাচ্ছে?

একজন নারী আল্লাহর বিধান পালন করলেই সে গোঁড়া আর আপনার চোখে ধিকৃত হয়ে গেল? একমাত্র সত্য দ্বীন ইসলাম ছাড়াও পৃথিবীতে আরও বহু ধর্মের অস্তিত্ব আছে এবং প্রায় প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব রীতিনীতি আছে। সে সব ধর্মাবালম্বীরা তাদের নিজস্ব রীতিনীতি পালন করে থাকে। কই, কেউ তো সেসব রীতিনীতি পালনের কারণে তাদেরকে গোঁড়া বলে না? শিখরা যে কোনো অনুষ্ঠানে তাদের ধর্মীয় প্রতীক পাগড়ি পরে হাজির হয়, এমনকি ভারতের শিখ ক্রিকেট খেলোয়াড় হরভজন সিং মাঠে ইয়া বড় পাগড়ি নিয়ে হাজির হয়, তাকে তো বলা হয় না যে, মাঠের পরিবেশের সাথে এই পোশাক মানানসই নয়, তাই তোমাকে মাঠে ঢুকতে দেয়া হবে না!

বৌদ্ধরা লালচাদর পরে সব জায়গায় চলাফেরা করে, তাদের তো তাদের ধর্মীয় পোশাক পরিধানের কারণে গোঁড়া বলা হয় না এবং তাদেরকে এই পোশাক পরিহিত অবস্থায় কোথাও ঢুকতে বাধা দেয়া হয় না! যত বাধা আর আপত্তি শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের জন্যই? তবে কি নিজদেশে মুসলিমরা পরদেশী হতে চলেছে? মাননীয় আদালত! স্বপ্রণোদিত হয়ে রায় দিয়েছিলেন কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না বলে। কিন্তু এর সাথে আরেকটু যোগ করেন না কেন যে, কেউ বোরকা পরতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া যাবে না?

কিছুদিনের জন্য ফয়সালা আর রায় দেয়ার ক্ষমতা পেলেন বলে আল্লাহর বিধানের বিরুদ্ধে রায় দিয়ে গেলেন। কিন্তু যেদিন আল্লাহ তা‘আলার আদালত ছাড়া অন্য কোনো আদালত থাকবে না এবং অপরাধ করে কেউ পার পাবে না সেদিন তার কাছ থেকে কীরূপ ফয়সালা আর রায় প্রত্যাশা করবেন আপনি? ভুলে যাবেন না যে, আর সব করা যায় কিন্তু আল্লাহর ওপর খোদকারী করে কখনও রেহাই পাওয়া যায় না!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন