hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুক্তবাসিনী-২

লেখকঃ আবু বকর সিরাজী

সন্দেহ ও অবিশ্বাস : উৎকর্ষিত বিজ্ঞানের অবাঞ্ছিত প্রসব
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ « خَلَقَ اللَّهُ مِائَةَ رَحْمَةٍ فَوَضَعَ رَحْمَةً وَاحِدَةً بَيْنَ خَلْقِهِ يَتَرَاحَمُونَ بِهَا وَعِنْدَ اللَّهِ تِسْعَةٌ وَتِسْعُونَ رَحْمَةً » .

‘আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- আল্লাহ তা‘আলা একশতটি রহমত সৃষ্টি করে মাত্র একভাগ মাখলূকের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এই একভাগ রহমত দিয়েই মাখলূক একে অপরের প্রতি রহম ও করুণা করে।’ [তিরমিযী : ৩৮৪৬]

বুখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় আছে, ‘এই একভাগ রহমতের বদৌলতেই মায়েরা তার বাচ্চার প্রতি স্নেহ করে...’ [দেখুন, বুখারী : ৬০০০; মুসলিম : ৭১৪৮]

বস্তুত মায়েদের মনে আল্লাহ তা‘আলা রহমতের সাগর তৈরি করে দিয়েছেন বলেই তারা সন্তানের প্রতি সীমাহীন করুণাময়ী হয়। দুঃখ-কষ্ট বরদাশত করে। যে কিশোরী কৈশোরে কোনো মাকে সন্তানের পেশাব সাফ করতে দেখে নাক চাপে সেই কিশোরীই যখন নিজ উদরে সন্তান ধারণ করে এবং মৃত্যুদুয়ার পেরিয়ে নিজের নতুন জীবনপ্রাপ্তির মধ্য দিয়ে জননী হয়, তখন তার সব ঘৃণা কোন্ দিগন্তে যেন হারিয়ে যায়। ফলে এক সময় পেশাবকে ঘৃণা করলেও এখন দুহাতে নিজ সন্তানের পায়খানা মলতেও বাধে না তার! যে অনূঢ়া অন্যের শিশুর কান্নায় ত্যক্ত-বিরক্ত হয় সেই ‘মহিলাই’ বিয়ের পিঁড়ি ভেঙে যখন মা হয় তখন গভীর রাতেও সন্তানের কান্নায় বিরক্ত হয় না। তার সত্তাটা সন্তানের চাহিদা পূরণে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই কাজ করে। স্নেহের আতিশয্যে কখন যে ঘুমের মধ্যে জামার বোতামটা খুলে সন্তানের মুখে স্তন্য পুরিয়ে দেয় সে নিজেও তা জানে না! ক্ষুধার্ত শিশু মায়ের স্তন্য গ্রহণ করে যতটুকু তৃপ্তি না পায়, ঘুম মার দিয়ে সন্তানকে স্তন্য দিয়ে তার চেয়ে বেশি তৃপ্তি পান ওই মা। এমনি সব স্নেহ, প্রীতি আর মায়ায় ঘেরা সন্তান আর মায়েদের জীবন!

কিন্তু স্নেহ-প্রীতি ও মায়ার বাঁধনটা ক্রমেই ঢিলে হয়ে আসছে। সময়ের পরিবর্তনে ঘটে চলেছে অস্বাভাবিক নানা ঘটনা। আজ অনেক মাকে নিজ হাতে সন্তান হত্যা করতে দেখা যায়। কখনও বা সে সন্তানকে করছে নিজের সাথে মৃত্যুপথ যাত্রী। আর এই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সন্দেহ ও অবিশ্বাস থেকে। এটাকে কেন্দ্র করে কত নারীপুরুষের যে কপাল পুড়ছে, ঘর ভাঙছে তার ইয়ত্তা নেই। বলাবাহুল্য এই অবিশ্বাস ও সন্দেহ জন্ম দেয়ার ক্ষেত্রে জনক-জননীর কাজ করছে প্রযুক্তিবিজ্ঞানের বিস্ময় মোবাইল!

বাংলাদেশে প্রথম যখন মোবাইল নামের ‘নিরীহ ঘাতকটা’ আগমন করে তখন তা ছিল এদেশের হতদরিদ্র, অশিক্ষিত মানুষের জন্য রীতিমতো বিস্ময়। দেড়লক্ষ টাকা খরচ করে একটা মোবাইল কেনার কয়জনই বা সাহস করত! তাই কারও হাতে মোবাইল থাকলে আশেপাশের লোকেরা তার দিকে ঈর্ষাভরে তাকাতো! আর মোবাইলধারী ওই ব্যক্তিও নিজের প্রতি অন্যের আক্ষেপের দৃষ্টি নিপতিত হতে দেখে চরম পুলক অনুভব করত। মোবাইলধারীকে দেখে কতজনকে আক্ষেপ করতে দেখেছি! লোকদেরকে ওমন একটা মোবাইলের মালিক হওয়ার স্বপ্ন বুনতে দেখেছি!

তবে চড়াদামের সাথে সাথে মোবাইলগুলোর সেবাও ছিল সীমিত। কেবল রাজধানী ও গোটা গোটা কয়েকটি শহরে এর কার্যকারিতা চোখে পড়ত। সেখানেও আবার ঠিকমতো সেবা পাওয়া যেত না। শুনেছি, জনৈক অভিনেতা নাকি গায়ক একবার মানিক মিয়া এভিনিউতে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েছিলেন। মোবাইল কোম্পানির পক্ষ থেকে ইমার্জেন্সি কারণে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়ার বিশেষ একটা নাম্বার দেয়া ছিল। এই ব্যক্তি বিপদে পড়ে খেই হারালেন না। মাথা ঠিক রেখে বুদ্ধি করে সেই জরুরী নাম্বারে কল দিলেন। কিন্তু তার মাথা ঠিক মতো কাজ করলেও মোবাইলটা ঠিক মতো কাজ করল না। যতবার কল দিলেন ততোবার ‘মোবাইল ওমেন’ বললেন, দুঃখিত, আপনার কাঙ্ক্ষিত নাম্বারে এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অনুগ্রহ করে কিছুক্ষণ পর আবার কল করুন...

মোবাইলওয়ালা মারাত্মক বিরক্ত ও ক্ষীপ্ত হলেন। ছিনতাইকারীরা তার সব নিয়ে যায় কিন্তু মোবাইলের ‘কিছুক্ষণ’ আর শেষ হয় না! ঠিক কতক্ষণ পর তাকে কল করতে বলা হচ্ছে তা তিনি ঠাহর করতে পারলেন না! আক্রান্ত হয়ে সর্বস্ব হারানোর পর মোবাইলটা কল গ্রহণ করবে? ছিনতাইকারী বাছাধন কি ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে?

মূল্যবান বস্তুটির প্রতি ভীষণ রাগ হলো তার। তাই তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করে মোবাইলটাকে পিচঢালা রাস্তার ওপর ছুঁড়ে মারলেন।

সেবা প্রদানে ত্রুটি করায় সেদিন মোবাইলটার কী অবস্থা হয়েছিল তা বলতে পারি না, তবে সেবা অবাধ হওয়ার পর মানুষের যে অবস্থা হয়েছে তার কিঞ্চিত ধারণা দিতে পারি এবং সেই ধারণা দেয়ার জন্যই আজকের ঘটনাটি উল্লেখ করব।

এর পর আসল গ্রামীণফোন। নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করে তারা ছড়িয়ে পড়তে থাকল সারাদেশে। এক সময় রাস্তার পাশে ছোট ছোট বিলবোর্ডে লেখা থাকত- জিপি এখন সিরাজগঞ্জে, জিপি এখন হবিগঞ্জে...

এরপর আসল আরেক পর্যায়। ঢাকার বাসিন্দাদের কি মনে পড়ে ফার্মগেটের ওভারব্রিজের দুই গায়ে জড়ানো ডিজিটাল সাইনের গ্রামীণফোনের চকচকে বিজ্ঞাপনগুলোর কথা, যাতে দিগন্তবিস্তৃত সবুজ মাঠে মাথাল মাথায় দেয়া কৃষক ও ছাগলের বাচ্চা কোলে নেয়া গৃহিণীর হাতে মোবাইল ধারণের দৃশ্য প্রতিভাত হতো? সে সময় কি এই দৃশ্যের বাস্তবতা কল্পনা করতে কষ্ট হতো না? বিজ্ঞাপন নির্মাতার কল্পনার দুঃসাহস বলে মনে হতো না?

কিন্তু সময়ের পরীক্ষায় এসব প্রশ্নের উত্তর কাটায় কাটায় মিলে গেছে। বিজ্ঞাপননির্মাতা এবং কোম্পানির কল্পনাকেও হার মানিয়েছে বাস্তবতা। আজ গৃহিণী আর কৃষাণের হাতেই মোবাইল সীমাবদ্ধ নয়। সমুদ্রের গভীরে অথৈ পানির কলকল ধ্বনির সাথে জেলের কোচড়াতেও প্রতি মুহূর্তে গর্জে উঠছে মোবাইল। মোবাইলের রিংটোনে কেঁপে উঠছে সমুদ্র, নদীর শান্ত পানিরাশি। আধুনিকতা আর উৎকর্ষের দখলে আজ স্থল ও জল উভয়ভাগ! এভাবে বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ কিন্তু কেড়ে নিয়েছে আবেগ। এই বেগের তোড়ে ভেসে যাচ্ছে আবেগ, উচ্ছ্বাস আর মমতা। নিচের ঘটনাটা দেখুন :

পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার পশ্চিম ধুলাসার গ্রাম। আধুনিকতা আর উৎকর্ষের ছোঁয়া লেগেছে এই প্রত্যন্ত গ্রামটিতেও। তাজেনুর রহমান (২৬) এর স্বামী কাওসার বিশ্বাস। পেশায় জেলে। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। নামের সাথে বিশ্বাস শব্দটা থাকলেও ‘বিশ্বাসে’ বিশ্বাসটার পরিমাণ কম। তাই তিনি স্ত্রীকে অবিশ্বাসের তীরে বিদ্ধ করেন। আর তা মোবাইলকে কেন্দ্র করেই। ঘরে রেখে যাওয়া মোবাইলে অপরিচিত নাম্বার থেকে মাঝেমধ্যেই কল আসত। উত্ত্যক্ত করত তাজেনুরকে। স্বামী নিজেও অনেক সময় কল দিয়ে স্ত্রীকে পরীক্ষা করতেন। আর সামান্যতেই সন্দেহের বিষ ঢেলে দিতেন স্ত্রীর ওপর। বিষে বিষে জর্জরিত হতো তাজেনুরের জীবন।

এরই মধ্যে গত ২৩-০৫-২০১১ইং তারিখ মঙ্গলবারে অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে কল আসে এবং কলদাতা তাকে গালিগালাজ করতে থাকে। এ নিয়ে স্ত্রীর সাথে তুমুল ঝগড়ায় লিপ্ত হন কাওসার বিশ্বাস। বিষাক্ত হয় তাজেনুরের মন। স্বামীর অবিশ্বাস, সন্দেহ আর গালিগালাজে অতিষ্ঠ হন তিনি। জীবনটা তার কাছে বোঝার মতো লাগে। হয়ে পড়ে অর্থহীন। তাই সিদ্ধান্ত নেন চরম কিছু করার। অজানা ও না ফিরে আসার পথের যাত্রী হওয়ার। এই পথের যাত্রী হিসেবে সাথে নেন আদরে, স্নেহে, মায়ায় লালিত তিনটি কন্যাসন্তানকে। রাগে অপমানে ঘরে থাকা কীটনাশক ঔষধ পান করে জীবননাশ করার চেষ্টা করেন তিনি।

‘মার কাছে পানি খাইতে চাইলে মা গুঁড়া গুঁড়া কি জানি পানিতে গুইললা আমাগো তিন বইনেরে খাওয়ায়। মায়ও খায় হেই পানি। পানি খাইয়াই ছোড বইন (জান্নাত) বমি করতে করতে ঘুমাইয়া পড়ে। আমাগোও খালি মাথা ঘুরায়। আর বমি বমি হয়। খালি প্যাডে ব্যথা করে। মায় খালি জোরে জোরে কান্দে। হেইর পর আর কিছু মনে নেই।’

হাসপাতালের বেডে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকা এই কথাগুলো বলছিল সাত বছরের তামেমা। তার অপর বোন রাবেয়াও মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। আর সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে মায়ার বোনটা তো যন্ত্রণা সইতে না পেরে আগেই পরকালের বাসিন্দা হয়েছে। [তথ্যসূত্র : দৈনিক আমার দেশ ২৭/০৫/২০১১ইং]

এই আমাদের দেশ! আমাদের সভ্যতা। এভাবে হাসপাতালের বেডেই ছটফট করতে থাকবে আমাদের সভ্যতা? সামাজিক ও পারিবারিক শৃঙ্খলা? হে বিজ্ঞান! তুমি তোমার প্রযুক্তি ও উৎকর্ষ তুলে নাও। আমাদেরকে ফিরিয়ে দাও গ্রামের সরল বধূটি। মাথায় মাথাল বাঁধা, গলায় গামছা ঝোলানো সরল কৃষকটি। যে উৎকর্ষ আমাদেরকে সভ্যতার কাঙাল বানিয়েছে আমরা সেই সভ্যতার ঋণে আবদ্ধ হতে চাই না!

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন