মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বেশ কয়েক বছর ধরে দেশে সুশীল সমাজ নামের একটি বিশেষ গোষ্ঠীর অস্তিত্ব আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আসলে কোন্ সংজ্ঞার ভিত্তিতে এবং কোন দৃষ্টিাকোণে এই গোষ্ঠী নিজেদেরকে সুশীল হিসেবে নিজেদেরকে পরিচিত করেন, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে উপাধিটা যে শ্রদ্ধার পর্যায়ে থাকেনি সেটা বলাই বাহুল্য। অনেকেই এখন শব্দটার কথা শুনে মুখ টিপে হাসেন এবং বিদ্রূপ করেন।
তবে দেশের একটি শক্তিশালী মিডিয়াগোষ্ঠী যে সুশীল উপাধিটা ধারণ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে সেটা কারও অজানা নয়। এই গোষ্ঠী বেশকিছু দিন ধরে বদলে দাও বদলে যাও-এর স্লোগান দিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করার তৎপরতা দেখিয়ে যাচ্ছে। আসলে তারা কী বদলে দিতে বলে এবং বদলে গিয়ে কীসের রূপ ধারণ করতে হবে সেটা কখনও স্পষ্ট করে বলেনি। শ্লোগানের চাণক্যে তারা অনেক দিনই নিজেদের আসল চেহারাটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে।
কিন্তু শিয়াল যেমন অপর শিয়ালের হুক্কাহুয়া ডাক শুনলে আর স্থির থাকতে পারে না, গুহা থেকে বের হয়ে আসে, ঠিক তদ্রূপ এই গোষ্ঠীও বেশিদিন নিজেদের মুখোশটা আড়াল করে রাখতে পারেনি। কথায়, কর্মে তাদের উদ্দেশ্য ও আসল চরিত্র প্রকাশিত হয়েই গেছে। এই গোষ্ঠীর পথিকৃত মতিউর রহমান বিভিন্নভাবে ডিগবাজি খেয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথম আলোতে এসে থিতু হয়েছেন। প্রথম আলো পত্রিকাটির প্রথম কৌশল ছিল প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলা।
তারা বোধ হয় দেশের মানুষকে ঝালিয়ে নেয়ার জন্য জেনেশুনেই এই কৌশল অবলম্বন করে থাকবে। কিন্তু এদেশের ইসলামপ্রিয় মানুষ তাদের সেই ষড়যন্ত্র ধরে ফেলতে সময় নেয়নি। তাদের অপকৌশলেকে ধিক্কার জানিয়েছে, থুথু নিক্ষেপ করেছে। এরা সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেয়েছিল ফখরুদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে। জরুরী অবস্থার এই সময়ে লগি-বৈঠার বাহকরা যখন তাদের নেত্রীকে জেলখানায় যেতে দেখেও আর্মির রাইফেলের বাটের ভয়ে টু শব্দটিও করেনি সে সময় ইসলামের বাহকরা নবীর ভালোবাসায় কীভাবে উৎসর্গিত হতে হয় তা দেখিয়ে দিয়েছে।
তারা নবীর সম্মান রক্ষা এবং বেয়াদবদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে নিষিদ্ধ রাজপথে নবীপ্রেমের নযরানা পেশ করেছে। আর তা ঘটেছে এই মতিউর রহমান তথা সুশীল সমাজের লোকদেরকে কেন্দ্র করেই। সে সময় প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন আলপিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি প্রদর্শিত একটি ধৃষ্টতায় এদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ জরুরী অবস্থা থোরাই কেয়ার করে রাজপথে নেমে আসে এবং নবীপ্রেমের উত্তাল বিক্ষোভে রাজপথ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। প্রথম আলোরা ভাবতেই পারে নি যে, জরুরী অবস্থার এই নাযুক এবং ভীতিকর পরিস্থিতিতে মানুষ এভাবে রাজপথে নেমে আসতে পারে। কিন্তু ওরা তো আর জানে না, এটি নবীপ্রেমিকদের খুব সামান্যই নজরানা। তারা প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহপ্রেমে অকাতরে জীবন উৎসর্গ করতে পারে। ঘামে নয়, রক্তে রাজপথ সিক্ত করতে পারে।
নবীপ্রেমিকদের সেই অকুতোভয় দৃঢ়তা দেখে প্রথম আলো গোষ্ঠী ভড়কে যায় এবং প্রকাশ্যে বায়তুল মুকাররামের তৎকালীন খতীব মাওলানা উবায়দুল হক রহ.-এর হাতে ক্ষমা ভিক্ষা নিয়ে কোনো মতে জীবন বাঁচাতে সক্ষম হয়। সে সময় তারা প্রকাশ্যে এবং পত্রিকায় একথা ঘোষণা দেয় যে, ভবিষ্যতে আর কখনও তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু লিখবে না। কিন্তু যাদের লক্ষ্যই হচ্ছে এদেশ থেকে ইসলামী আদর্শের বিচ্যুতি ঘটানো তারা বসে থাকে কী করে? তাই সদর দরজা ছেড়ে এবার খিড়কী পথে অগ্রসর হয় তারা। সতর্ক হয়ে তারা ভিন্ন একটা কৌশল অবলম্বন করে।
বলতে গেলে তখন থেকেই ‘বদলে যাও, বদলে দাও-এর স্লোগানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সে সময় এর অন্তর্নিহিত অর্থ ততটা স্পষ্ট না হলেও ক্রমেই আজ তা প্রকাশিত হতে শুরু করেছে।
মিডিয়ার প্রভাব একটি অনস্বীকার্য বাস্তবতা। একটি অসত্য তথ্যকেও মিডিয়ার অব্যাহত প্রচারণায় সত্য হিসেবে গিলানো সম্ভব এবং বিশ্বজুড়ে এভাবেই মিডিয়ার অপব্যবহার দেখে আসছি আমরা। বিশ্বের ইহুদী-খ্রিস্টান গোষ্ঠী নিজেদের আদর্শ ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গলধঃকরণ করাতে অত্যন্ত সুক্ষ্মভাবে কাজ করা যাচ্ছে। আর এটা করতে গিয়ে মিডিয়ায় সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্য বলে চালিয়ে দিচ্ছে তারা। প্রথম আলোদের গোড়া ঠিক কোথায়, সেই তথ্য উদ্ধার করতে সাধারণ লোক তো দূরের কথা, স্বয়ং মিডিয়ার ঘাঘুজনেরাও হিমশিম খান।
কিন্তু গোড়াটা যে অনেক গভীরে প্রোথিত এবং সেখানকর রসে সিক্ত হয়েই তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও করে যাবে তাতে কারো সন্দেহ নেই। ফলে বায়তুল মুকাররামে সেই ঘোষণার পর তাদের প্রতিশোধপরায়ণতা এবং জিঘাংসা বেড়ে যায়। এই স্লোগানের অন্তরালে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং ইসলামের শাশ্বত আদর্শে ফাটল ধরানোর কাজ শুরু করে। এরই ফলশ্রুতিতে ইসলামের স্পষ্ট বিধানের বিরুদ্ধে সুক্ষ্মভাষায় তীর্যক মন্তব্য করতে থাকে। বিশেষ করে ফাতাওয়ার বিরুদ্ধে।
দেশের কোথাও গ্রাম্য মোড়ল বা সাধারণ মাতব্বরদের দ্বারা বিচার-আচার হলে সেটাকে ফাতাওয়াবাজি বলে প্রচারণা চালায় এবং এভাবে মানুষের মধ্যে ইসলামী বিধান ও ফাতাওয়ার প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে এবং মানুষকে ইসলামী আদর্শের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলে। অথচ ফাতাওয়া হচ্ছে ইসলামী আইন। আর ইসলামী আইনের প্রতি যদি মানুষের বীতশ্রদ্ধ ভাব সৃষ্টি হয় তবে এমনিতেই এক সময় ইসলামের প্রতি মানুষের অনীহা সৃষ্টি হবে।
শুধু এখানেই থেমে থাকেনি তারা। আমাদের দেশের মানুষের ইসলামী আদর্শ ও সামাজিক সাংস্কৃতির বিরুদ্ধে অতি সুক্ষ্মভাবে লড়াই শুরু করেছে তারা। ঘটনাটা হচ্ছে, দেশে হরহামেশা নারীঘটিত বিষয় নিয়ে নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে এবং গ্রাম্য মাতব্বর বা এলাকার গণমান্য বক্তিরা তাদের নিজস্ব বুঝ মোতাবেক এর বিচার-আচার করে থাকে। এমনি একটি ঘটনা। নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট উত্তরপাড়া গ্রামে গত ১৬ই ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে একই গ্রামের মেছের আলীর ছেলে আব্দুল মতীন (২৫) প্রতিবেশি ভ্যানচালক খোরশেদ আলমের অনুপস্থিতিতে তাদের শয়নকক্ষে ঢুকে খোরশেদের স্ত্রী আকলিমা (২৭) এর সাথে গল্পগুজবে লিপ্ত হয়। এক পর্যায়ে তাকে নির্জনে একা পেয়ে ধর্ষণের প্রয়াস চালায়। এ সময় গৃহবধূ চিৎকার দিলে বাড়ির আশেপাশের লোকজন আব্দুল মতীনকে আটক করে এবং রাতভর তাকে গাছের সাথে বেঁধে রাখে।’
এরূপ একটি ঘটনায় ওই নারীপুরুষের জন্য প্রথম আলোর দরদ উপচে ওঠে। কেন আব্দুল মতীন আকলিমার সাথে অবাধে মিলিত হতে পারবে না, গ্রাম্য লোকেরা তাদের বাধা দেবে এই প্রশ্নে তারা উদ্ভ্রান্ত হয়ে যায়। বিবাহিত নারীর সাথে একজন পুরুষ কেন অবাধে মিলতে পারবে না- এই প্রশ্নে এদেশের মানুষের প্রতি, মানুষের ইসলামী ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি তারা উষ্মা প্রকাশ করে। আর অতি সুক্ষ্মভাবে তারা ব্যভিচার ও পরকীয়াকে উৎসাহিত করে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৪ তারিখে ‘ফতোয়াবাজি অব্যাহত, পুলিশকে সংবেদনশীল হতে হবে’ শীর্ষক একটি সম্পাদকীয়তে তারা এই ঘটনার জের ধরে লেখে-‘এই ঘটনা এই বাস্তবতা সামনে আনে যে, বিবাহিত নারীদের সঙ্গে পরপুরুষের মেলামেশা সহজভাবে দেখা হয় না। এর মূলে রয়েছে কুসংস্কার, সামাজিক অনগ্রসরতা, অশিক্ষা এবং সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরায়িত বিদ্বেষ।
নারীকে মানুষ হিসেবে সম্মানের চোখে না দেখতে পারার যে সীমাবদ্ধতা, সেখান থেকেই এ ধরনের অনাচারের উদ্ভব ঘটেছে। অসামাজিকতার সংজ্ঞা অভিযুক্তরা ব্যক্তিরা নিজেরাই তাদের উর্বর মস্তিষ্ক দিয়ে নির্ধারণ করেন। ভদ্র মহিলার স্বামী যেখানে তাঁর বন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি তোলেননি, সেখানে তথাকথিত মাতবরেরা গায়ে পড়ে ঝামেলা পাকিয়েছেন, আইন হাতে তুলে নিয়েছেন।’ [সম্পাদকীয় দৈনিক প্রথম আলো ২৫/০২/১২ইং ও দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ০৭/০৩/১২ইং]
অর্থাৎ একজন পরপুরুষ বিবাহিত নারীর সাথে মেলামেশার কারণে গ্রামের মুরুব্বীরা কেন সেটার বিচার করল, তাদেরকে সতর্ক ও শাসন করল সেটা মতিউর রহমানরা মেনে নিতে পারছেন না। এজন্য রীতিমতো ক্ষোভ ও উষ্মা প্রকাশ করে সম্পাদকীয়র মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেই ক্ষোভ প্রকাশও করেছেন!
এই সম্পাদকীয়র মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে মতিউর রহমানরা ঘোষণা দিয়েই ব্যভিচারকে জাতীয়করণ করার কাজে নেমে গেল! এভাবে ইসলামের বিধানকে কুসংস্কার, সামাজিক অনগ্রসরতা, অশিক্ষা এবং সর্বোপরি নারীর প্রতি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের চিরায়িত বিদ্বেষ বলে জঘন্যতম মন্তব্য করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। প্রথম আলোর এই মন্তব্য পরকীয়াকে বৈধতা দেয়ার স্পষ্ট সাজেশন। নিজের স্ত্রীকে আরেক পুরুষের বাহুডোরে এগিয়ে দেয়ার উদাত্ত আহবান বৈ কিছু নয়।
বস্তুত ওরা নিজেদের স্ত্রীদেরকে অন্যের বাহুডোরে আবদ্ধ হতে দেখেও হয়ত চোখ বন্ধ করে থাকবে, তাদের আত্মমর্যাদাবোধ কাজ করবে না। কিন্তু একজন মুসলিম এবং আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন ব্যক্তি কখনই তা মেনে নিতে পারে না। তবে কি একেই বলে সুশীল সমাজ? এই কাপুরুষতা আমদানীর জন্যই তারা সুশীল তকমা গায়ে এঁটেছেন!
নির্লজ্জতা আর বেহায়াপনার সব স্তর অতিক্রম করে প্রথম আলো গোষ্ঠী। তারা সম্পূর্ণ মিথ্যাচার করে লিখেছে- ’ভদ্র মহিলার স্বামী যেখানে তাঁর বন্ধুর সঙ্গে আলোচনায় আপত্তি তোলেননি...’ বলে যে লোকটির পক্ষে সাফাই গেয়েছে তারা সেই লোকটিই কিন্তু সুযোগ বুঝে আকলিমাকে ধর্ষণ করার প্রয়াস পেয়েছে। নির্জনতার পরে ধর্ষণের প্রয়াস আসুক বা নাই আসুক সেটাকেই এভাবে প্রশ্রয় দিতে হবে! বন্ধুর আপত্তি না থাকলেই সেখানে এরূপ নির্জন অভিসার জায়েয হয়ে যায়? তবে কি তাদের ভিতরের পৃষ্ঠাগুলো এমনই। তারা তাদের নিজস্ব আচারকে ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চায়?
কী অদ্ভুত ও ভূতুড়ে ব্যাপার! একজন বিবাহিত নারীর সাথে পরপুরুষ অবাধে মেলামেশা করবে আর সেটা বাধা দেয়া যাবে না, শাসন করা যাবে না? শাসন করলে সেটা অসামাজিক কাজ হয়ে যায়? মানুষ এই অসামাজিকতা নির্ণয় করেছে নিজেদের মস্তিষ্ক দিয়ে? অথচ অশ্লীলতা আর পাপাচারের বিরুদ্ধে এ সমাজের এই অবস্থান কারো বিকল মস্তিষ্ক দিয়ে সৃষ্টি হয়নি। আবহমানকাল ধরে চলে আসা ইসলামী ঐতিহ্যে লালিত সভ্যসমাজেরই অপরিহার্য অংশ এই নৈতিকতা। এই আদর্শ এসেছে মানবতার মুক্তিরদূত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে। তিনিই স্পষ্ট ভাষায় বিবাহিত নারীদের সাথে এভাবে মেলামেশাকে চরম গর্হিত অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করেছেন-
সাহাবী আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু স্বীয় ভৃত্যকে আলী রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুর কাছে পাঠালেন তার স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস রাদিআল্লাহ তা‘আলা আনহার নিকট প্রবেশের অনুমতি লাভের জন্য। ভৃত্য প্রয়োজন পূর্ণ করে মুনিব আমর রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহুকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে স্বামীর অনুমতি ছাড়া তার স্ত্রীর নিকট যেতে বারণ করেছেন।’ [জামে তিরমিযী : ২/১০৬; মুসনাদে আহমাদ : ১৭৮৩৮; সুনানে কুবরা : ১৩৯০৩]
পরনারীর সাথে মেলামেশার নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে শরীয়তের বিধান স্পষ্ট। এক হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, ‘দুইজন গায়রে মাহরাম নারীপুরুষ যখন একত্রিত হয় তখন তাদের তৃতীয়জন থাকে শয়তান।’ অর্থাৎ শয়তান সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে পাপকর্মে উৎসাহিত করে। আর এটা অনস্বীকার্য বাস্তবতা যে, বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর অধিকাংশ নারী মুখরা ও প্রগলভ স্বভাবের হয়ে যায়। একান্ত ব্যক্তিগত ও দাম্পত্যসুলভ কথাও অন্যের কাছে অনায়াসে ব্যক্ত করে। ফলে এমন এক দুর্বলতম সময়ে দুইজন বেগানা নারী-পুরুষের পারস্পরিক মেলামেশা কখনই মেনে নেয়া যায় না। এর পরিণতি কখনই শুভ হয় না।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে পুরুষরা সাধারণত নারীদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে। আর খুব সাধারণভাবেই তখন পুরুষরা উক্ত নারীকে কৌশলে স্বামীর ব্যাপারে একটা নেতিবাচক ধারণা ঢুকিয়ে দেয়। কখনও স্বামীর কোনো দুর্বলতা থাকলে তা তার সামনে তুলে ধরে। এটা অত্যন্ত জঘন্য একটা প্রয়াস। এভাবে বহু সংসার ভাঙে, সমাজে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। ফেতনা-ফাসাদের সয়লাব হয়। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটাকে অত্যন্ত জঘন্য অপরাধ হিসেবে আখ্যায়িত করে এধরনের লোক তার উম্মত নয় বলে কঠোর ধমকি দিয়েছেন। আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
‘যে ব্যক্তি অপরের স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে বিগড়ে দেয় সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।’ [সহীহ ইবন হিব্বান : ৪৩৬৩]
যদি ধরেও নেয়া হয় যে, একজন বিবাহিত নারীর সাথে একজন পরপুরুষের অবাধ ও নিরিবিলিতে মেলামেশাতে খারাপ নিয়ত থাকে না (কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব নয়), তথাপি শরীয়ত তাদেরকে এভাবে মিলিত হওয়ার অধিকার দেয় নি। ইসলামী ইতিহাসের সর্বোচ্চ সুন্দর যুগের একটি ঘটনা বলি। ঘটনাটি মুসলিম জাতির মা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র দুই স্ত্রী এবং একজন অন্ধ সাহাবীর। ঘটনাটির ভাষা নিম্নরূপ :
উম্মে সালামা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিআল্লাহ তা‘আলা আনহু একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমন করছিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলেন সাহাবী উম্মে সালামা ও মায়মূনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতুম রাদিআল্লাহ তা‘আলা আনহু সেখানে আগমন করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে পর্দা করার আদেশ দিলেন। জবাবে উম্মে সালামা রাদিআল্লাহ তা‘আলা আনহা বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি কি অন্ধ নন? আমাদেরকে চেনেনও না দেখেনও না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাচ্ছো না? [মুসনাদ আহমাদ : ২৭০৭২; সুনানে আবূ দাউদ : ৪১১৪]
দেখুন, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী, উম্মতের মা জননী। যাদের মনে বিন্দু পরিমাণ পাপচিন্তার উদয় হওয়া এবং যাদের ব্যাপারে অণু পরিমাণ পাপচিন্তার উদ্রেক হওয়া সাহাবীর পক্ষে অসম্ভব এবং সেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত আর সাহাবীটিও অন্ধ, সেই পরিস্থিতিতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর নারীপুরুষের পারস্পরিক একত্রিত হওয়াকে কত কঠোর ভাবে নিষেধ করেছেন! কিন্তু মতিউর রহমানদের মুখে আজ এ কী শুনছি? তাদের দৃষ্টিতে অবাধে, নিরিবিলিতে পর নারী-পুরুষের মিলিত হওয়া অপরাধ নয়! বরং বাধা দেয়া অপরাধ! অনগ্রসরতা, অসামাজিকতা?
স্বীয় স্ত্রীর ব্যাপারে একজন পুরুষের কী পরিমাণ গায়রত ও আত্মমর্যাদাবোধ থাকা দরকার তার একটি দৃষ্টান্ত পেশ করি। ঘটনাটি আজ থেকে বহুদিন আগের। ৮৬ হিজরীর ঘটনা। আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ ইবন আহমাদ রহ. বলেন, আমি রায় এলাকায় কাজী মুসা ইবন ইসহাকের নিকট উপস্থিত হলাম। সে সময় জনৈক মহিলা আদালতে তার স্বামীর বিরুদ্ধে মহরের পরিমাণ নিয়ে মামলা দায়ের করল। মহিলার অভিভাবকরা স্বামীর কাছে পাঁচশত দিনার দাবি করছে আর স্বামী তা অস্বীকার করছে। বিচারক স্বাক্ষী হাজির করার আদেশ দিলেন। স্বাক্ষী হাজির হলে তিনি বাদী মহিলার চেহারা দেখে নেয়ার আদেশ দিলেন। স্বাক্ষীদাতা মহিলাকে দাঁড়াতে বললেন।
এসব দেখে স্বামী বললেন, কী হচ্ছে এসব? আদালতের উকিল বললেন, আপনার স্ত্রীর চেহারা খুলতে হবে, যাতে সাক্ষী তাকে যথাযথভাবে চিনে সাক্ষী দিতে পারে। স্বামী বললেন, অসম্ভব তা হতে পারে না। এই বলে তিনি কাজীর দিকে মনোনিবেশ করে বললেন, আমি কাজীকে সাক্ষী রেখে বলছি, আমার স্ত্রী যে পাঁচশত দিনার দাবি করেছে আমি তা তাকে পরিশোধ করব! তবু আমার স্ত্রীর চেহারা ভিন্ন পুরুষের সামনে প্রদর্শন করতে দেব না। মজলিসের সবাই স্বামীর এই দ্বীনি মর্যাদাবোধ দেখে অভিভূত হলেন। স্ত্রীও স্বামীর এই মর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে তার মহর মাপ করে দিলেন। বিচারক এই ঘটনাটিকে উত্তম আদর্শে অম্লান ও স্মরণীয় ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করে মজলিস শেষ করলেন।’ [আল-মুনতাজাম ফী তারিখিল মুলুকি ওয়াল-উমাম : ৬/১৮]
কিন্তু আজ আমরা কোথায় অবস্থান করছি? আসলে আমরা সময়ের বিচারে তাদের থেকে যত দূরে সরে গেছি আদর্শের বিচারে দূরে চলে গিয়েছি তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি।
স্ত্রীদেরকে যারা এভাবে পরপুরুষের সামনে পেশ করে তাদেরকে দায়ূস বলা হয়। এধরনের লোকের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
আল্লাহ তা‘আলা তিনটি জিনিস নিজ হাতে তৈরি করেছেন। আদম আলাইহিস সালামকে নিজ হাতে বানিয়েছেন। তাওরাত নিজ হাতে লিখেছেন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে নিজ হাতে গাছ রোপণ করেছেন। এরপর তিনি বললেন- আমার ইজ্জতের কসম! মদপানকারী এবং দায়ূসরা জান্নাতে বসবাস করতে পারবে না। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসূলালাল্লাহ! দায়ূস কারা? তিনি বললেন, যারা নিজ স্ত্রীদেরকে খারাপ কাজ করার পরামর্শ দেয়।’ [বাইহাকী, আল-আসমা ওয়াস-সিফাত : ৬৯২; কানযুল উম্মাল : ১৫১৩৭; আদ-দুররুল মানছূর, ইমাম সিয়ূতী রহ. : ১১/৩৭২]
অন্য বর্ণনায় দায়ুছের পরিচয় দেয়া হয়েছে এভাবে-
قيل ما الديوث يا رسول الله قال : الذى يرضى الفواحش لاهله
দায়ূস ওই ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর অশ্লীল কাজে সন্তুষ্ট থাকে।’ [তাফসীরে হাক্কী ৭/৪৫৯, রুহুল বয়ান : ৫/২৩৫]
আরেক বর্ণনায় এসেছে-
والديوث : الذى يقر السوء فى أهله
দায়ূছ ওই ব্যক্তি, যে নিজ স্ত্রীতে পাপাচার (বেপর্দা, অবাধ মেলামেশা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি) জিইয়ে রাখে।
বোন! মনে করো না মতিউররা এই দাবি জানিয়ে তোমার বিরাট উপকার করে ফেলেছে। বরং এজাতীয় কথা বলে তারা তোমার প্রতি করুণা প্রদর্শনের অন্তরালে অন্য কিছ হাসিল করতে চায়। কথাটি আল্লামা ইবন তায়মিয়া রহ.-এর ভাষাতেই ব্যক্ত করি। তিনি বলেন-
‘আল্লাহ তা‘আলা বনী আদমকে বিশেষ আত্মমর্যাবোধ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। একারণেই পুরুষেরা নিজেরা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে যতটা না দোষের চোখে দেখে স্ত্রীর ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়াকে তার চেয়ে ঢের বেশি দোষের চোখে দেখে। কিন্তু যার মধ্যে আত্মমর্যাদাবোধ নেই এবং সে স্বীয় স্ত্রীকে অপকর্মে লিপ্ত হতে দেখেও কিছু বলে না বা বলতে পছন্দ করে না তারা দায়ূছ। সে বাধা দেবে কেন? নিজেই তো ব্যভিচারি! একারণে দায়ূছরা ব্যভিচার থেকে হেফাযতে থাকে না।’ [ইবন তাইমিয়া, মাজমু‘ ফাতাওয়া : ১৫/৩২০]
আল্লামা ইবন তাইমিয়ার কথার সারমর্ম হচ্ছে, দায়ূছরা এভাবে নিজ স্ত্রীকে অন্যের বাহুলগ্না হওয়ার সুযোগ দিয়ে নিজেরা অন্য নারীকে বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে। আর এতে যেন বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় এজন্য নির্লজ্জভাবে নিজ স্ত্রীকে ব্যবহৃত হতে দেয়!
মতিউর রহমান! সামান্য রুটি-রোজগারের বিনিময়ে অদৃশ্য চক্রের যে এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করতে যাও না কেন, একটু ভেবে দেখো অতীতের কথা, ভবিষ্যতের কথা এবং পরকালেরও কথা। বহুকালের অতীত আমাদের সামনে। এভাবে সামান্য রুটি-রোজগারের জন্য যারা স্বদেশ, মাতৃভূমি, নিজস্ব সংস্কৃতি ও ইসলামের স্বার্থের বিরুদ্ধে ময়দানে নেমেছিল তারা হয়ত সামান্য কয়েক গ্রাস রুটি-গোশত যোগাড় করে নিতে পেরেছিল, কিন্তু ইতিহাস তাদেরকে ক্ষমা করেনি। যুগ পরম্পরায় মানুষ তাদের ওপর থুথু নিক্ষেপ করেছে, অভিসম্পাত দিয়েছে এবং ঘৃণার চোখে দেখে আসছে।
ইতিহাসের কালি তোমাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবে, ইতিহাসের পাতার ঠিক কোন জায়গাটায় তোমার ঠিকানা হবে সেটাও ভুলে যাওয়া কিন্তু সমীচীন হবে না। আর মনে রেখো, একদিন অবশ্যই মহা প্রতাপশালী প্রভুর সামনে তোমাকে আমাকে দণ্ডায়মান হতে হবে। সেদিন তোমার কী জবাব থাকবে সেটা একটু ভেবে তবেই মনে চাইলে ইসলামের বিরুদ্ধে কলম ধরো। মনে রেখো, পাপ ঠিক ততটুকুই করা উচিত, যতটুকুর শাস্তি ভোগ করা সম্ভব! এর বাইরে যাওয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এদেরকে সুশীল বলা যায় না। সুশীল তো সেই :
‘সুশীল সেই, যে নিজের প্রবৃত্তিকে দমন করে এবং মৃত্যুর পরের জন্য আমল করে।’ [তিরমিযী : ২৪৫৯; তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর : ৬৯৯৫; মুসতাদরাক আলাস-সাহীহ : ৭৬৩৯; ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটিকে হাসান সহীহ, তবে বুখারী ও মুসলিম এটি সংকলন করেন নি। মুস্তাদরাকের তালখীসে ইমাম যাহাবী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/657/33
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।