hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুখতাসার সহীহ আল-বুখারী

. কিতাবুল অহী

مختصر صحيح البخاري

/ পরিচ্ছেদঃ নবী (ﷺ)-এর নিকট কিভাবে অহী নাযিল শুরু হয়েছিল?

সহিহ হাদিস
عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ (ﷺ) يَقُولُ : (إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ أَمْرِي مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيا يُصِيبُهَا، أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا . فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ).

উমার বিন খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, প্রতিটি (আমল গ্রহণীয় না অগ্রহণীয় তা) নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য উহাই রয়েছে যার নিয়ত সে করে। সুতরাং কারো হিজরত যদি আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর উদ্দেশ্যে হিজরত বলে গণ্য হবে। আর কারো হিজরত যদি দুনিয়া অর্জন অথবা কোন নারীকে বিবাহের উদ্দেশ্যে হয়, তাহলে তার হিজরত সেভাবেই গৃহীত হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১)

সহিহ হাদিস
عَنْ عَائِشَةَ رَضِي اللَّهُ عَنْهَا : أَنَّ الحَارِثُ بْنَ هِشَامٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ سَأَلَ رَسُولَ اللهِ (ﷺ) فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، كَيْفَ يَأْتِيكَ الْوَحْرُ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) : (أَحْيَانًا يَأْتِينِي مِثْلَ صَلْصَلَةِ الْجَرَسِ، وَهُوَ أَشَدُّهُ عَلَيَّ، فَيَفْصِمُ عَنِّي وَقَدْ وَعَيْتُ عَنْهُ مَا قَالَ، وَأَحْيَانًا يَتَمَثَلُ لِيَ المَلَكُ رَجُلًا، فَيُكَلِّمُنِي فَأَعِي مَا يَقُولُ . قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : وَلَقَدْ رَأَيْتُهُ يَنْزِلُ عَلَيْهِ الْوَحْيُ فِي الْيَوْمِ الشَّدِيدِ الْبَرْدِ، فَيَفْصِمُ عَنْهُ وَإِنَّ جَبِينَهُ لَيَتَفَصَّدُ عَرَقًا .

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ হারিছ বিন হিশাম একদা নবী (ﷺ) কে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)! কিভাবে আপনার নিকট অহী নাযিল হয়? উত্তরে তিনি বললেনঃ কোন কোন সময় ঘন্টার আওয়াজের মত শব্দ করে আমার নিকট অহী আগমণ করে। এ প্রকারের অহী বুঝতে ও বহন করতে আমার খুব কষ্ট হয়। এভাবে অহী অবতরণ শেষ হলে আমি তা বুঝে নিতাম। অনেক সময় জিবরীল ফেরেশতা মানুষের আকৃতি ধারণ করে আমার সাথে কথা বলতেন। আর আমি তা হৃদয়ঙ্গম করে নিতাম। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ প্রচণ্ড শীতের সময়ও অহী নাযিলের মুহূর্তে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে দেখেছি। অহী নাযিল শেষ হলে তার কপাল থেকে ঘাম ঝড়ে পড়ত। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ২)

সহিহ হাদিস
عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْها قَالَتْ : أَوَّلُ مَا بُدِئَ بِهِ رَسُولُ اللَّهِ مِنَ الْوَحْيِ الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ فِي النَّوْم ، فَكَانَ لَا يَرَى رُؤْيَا إِلا جَاءَتْ مِثْلَ فَلَقِ الصُّبْحِ، ثُمَّ حُبِّبَ إِلَيْهِ الخَلاءُ، فَكَانَ يَخْلُو بِغَارِ حِرَاءٍ، فَيَتَحَنَّثُ فِيهِ - وَهُوَ التَّعَبدُ اللَّيَالِي ذَوَاتِ الْعَدَدِ قَبْلَ أَنْ يَنْزِعَ إِلَى أَهْلِهِ، وَيَتَزَوَّدُ لِذلِكَ، ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَى خَدِيجَةَ فَيَتَزَوَّدُ لِمِثْلِهَا، حَتَّى جَاءَهُ الْحَقُّ وَهُوَ فِي غَارِ حِرَاءٍ، فَجَاءَهُ المَلَكُ فَقَالَ : اقْرَأْ ، قَالَ: مَا أَنَا بِقَارِي). قَالَ: (فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ : اقرأ ، قُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِي، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّانِيَة حَتَّى بَلَغَ مِنِّي الْجَهْدَ ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ : اقْرَأْ، فَقُلْتُ: مَا أَنَا بِقَارِي، فَأَخَذَنِي فَغَطَّنِي الثَّالِثَةَ، ثُمَّ أَرْسَلَنِي فَقَالَ : أَقْرَأَ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ أَقْرَأْ وَرَبُّكَ الأَكْرَمُ . فَرَجَعَ بِهَا رَسُولُ اللَّهِ يَرْجُفُ فُؤَادُهُ، فَدَخَلَ عَلَى خَدِيجَةَ بِنْتِ خُوَيْلِد رَضِيَ اللَّهُ عَنْها فَقَالَ: زَمِّلُونِي زَمِّلُونِي). فَزَمَّلُوهُ حَتَّى ذَهَبَ عَنْهُ الرَّوْعُ، فَقَالَ لِخَدِيجَةَ وَأَخْبَرَهَا الْخَبَرَ: (لَقَدْ خَشِيتُ عَلَى نَفْسِي). فَقَالَتْ خَدِيجَةُ : كَلاً وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللهُ أَبَدًا إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ المَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ . فَانْطَلَقَتْ بِهِ خَدِيجَةُ حَتَّى أَتَتْ بِهِ وَرَقَةَ ابْنَ نَوْفَلِ بْنِ أَسَدِ بْنِ عَبْدِ الْعُزَّى أَبْنَ عَمٌ خَدِيجَةَ، وَكَانَ أَمْرَءًا تَنَصَّرَ في الْجَاهِلِيَّةِ، وَكَانَ يَكْتُبُ الْكِتَابَ الْعِبْرَانِيَّ، فَيَكْتُبُ مِنَ الْإِنْجِيلِ مَا شَاءَ اللهُ أَنْ يَكْتُبَ، وَكَانَ شَيْخًا كَبِيرًا قَدْ عَمِي، فَقَالَتْ خَدِيجَةُ : يَا ابْنَ عَمْ أَسْمَعْ مِن أبْن أَخِيكَ. فَقَالَ لَهُ وَرَقَةُ : يَا ابْنَ أَخِي مَاذَا تَرَى؟ فَأَخْبَرَهُ رَسُولُ اللَّهِ خَبَرَ مَا رَأَى، فَقَالَ لَهُ وَرَقَهُ : هَذَا النَّامُوسُ الَّذِي نَزَّلَ اللَّهُ عَلَى مُوسَى، يَا لَيْتَنِي فِيهَا جَذَعًا، لَيْتَنِي أَكُونُ حَيَّا إِذْ يُخْرِجُكَ قَوْمُكَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) : (أَوَ مُخْرِجيَّ هُمْ؟ قَالَ : نَعَمْ، لَمْ يَأْتِ رَجُلٌ قَطُّ بِمِثْلِ مَا جِئْتَ بِهِ إِلَّا عُودِيَ، وَإِنْ يُدْرِكْنِي يَوْمُكَ أَنْصُرْكَ نَصْرًا مُؤَخَّرًا . ثُمَّ لَمْ يَنشَبْ وَرَقَهُ أَنْ تُوُفِّيَ، وَفَتَرَ الْوَحْي.

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ সর্বপ্রথম নিদ্রায় সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর উপর অহী নাযিল শুরু হয়। তিনি যে স্বপ্ন দেখতেন তা দিবালোকের ন্যায় সত্য বলে প্রকাশিত হত। এক পর্যায়ে তাঁর কাছে নির্জনে সময় কাটানো প্রিয় হতে লাগল। তিনি হেরা গুহায় একাকী বাস করতে থাকলেন এবং পরিবারের নিকট ফেরত আসার পূর্ব পর্যন্ত কয়েক রাত্রি তথায় এবাদতে মগ্ন থাকতেন। অতঃপর তিনি তাঁর পরিবারের নিকট ফেরত আসতেন এবং প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী নিয়ে পুনরায় গমণ করতেন। খাদ্য সামগ্রী শেষ হয়ে গেলে তিনি খাদীজার কাছে এসে পুনরায় গমণ করতেন। হেরা গুহায় থাকাবস্থায় তাঁর নিকট অহী নিয়ে জিবরীল ফেরেশতা আগমণ করেন। ফেরেশতা নবী (ﷺ) কে বললেনঃ “আপনি পড়ুন”। উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি তো পড়তে জানিনা। নবী কারীম (ﷺ) বললেনঃ জিবরীল ফেরেশতা তখন আমাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরলেন যাতে আমার খুব কষ্ট অনুভব হল। অতঃপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বললেনঃ পড়ুন। উত্তরে আমি বললামঃ আমি তো পড়তে জানি না। অতঃপর আমাকে দ্বিতীয়বার জড়িয়ে ধরলেনঃ এতেও আমার কষ্ট অনুভব হল। ছেড়ে দিয়ে আমাকে বললেনঃ পড়ুন। আমি বললামঃ আমি পড়তে পারি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ এবার তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেনঃ

﴿إقرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ ، خَلَقَ الإنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ ، أقْرَأْ وَرَبُّكَ الأَكْرَمُ﴾

“আপনার রবের নামে পড়ুন, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে জমাট রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন। পড়ুন আপনার রব সবচেয়ে বেশী সম্মানিত”। (সূরা আলাকঃ ১-৩)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই আয়াতগুলো নিয়ে বাড়ী ফিরলেন। তাঁর হৃদয় তখন ভয়ে কাঁপছিল। তিনি খাদিজা বিনতে খোয়াইলিদ (রাঃ) এর নিকট এসে বললেনঃ “আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও। আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও”। তিনি তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। পরে ভয় কেটে গেলে তিনি খাদিজা (রাঃ) এর নিকট সমস্ত ঘটনা বললেনঃ আল্লাহর কসম! আমি আমার নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা বোধ করছি। খাদিজা (রাঃ) সান্তনা দিয়ে বললেনঃ না, ভয় নেই। আল্লাহর কসম! তিনি কখনই আপনাকে অপমানিত করবেন না। কারণ আপনি নিজ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন। দুর্বল ও দুঃখীদের খেদমত করেন। বঞ্চিত ও অভাবীগণের উপার্জনের ব্যবস্থা করেন। মেহমানদারী করেন এবং প্রকৃত বিপদগ্রস্তদেরকে সাহায্য করেন।

খাদিজা (রাঃ) তাঁকে সঙ্গে করে নিয়ে তাঁর চাচাত ভাই ওরাকা ইবনে নওফল ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উয্যার নিকট গেলেন। ওরাকা জাহেলী যুগে ঈসায়ী ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইবরানী ভাষায় কিতাব লিখতেন। তাই আল্লাহর ইচ্ছা ও তাওফীক অনুযায়ী তিনি ইঞ্জিলের অনেকাংশ ইবরানী ভাষায় রূপান্তরিত করেন। তিনি বৃদ্ধ ও অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদিজা (রাঃ) তাঁকে তার ভাতিজা অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর নিকট থেকে সব কথা শুনতে বললেন। ওরাকা তাঁর ভাতিজার ঘটনা শুনতে চাইলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তাকে তাঁর সব ঘটনা শুনালেন। ওরাকা তাঁকে বললেনঃ এ সেই ফেরেশতা (জিবরীল) যাকে মূসা (আঃ) এর নিকট আল্লাহ নাযিল করেছিলেন। আমি যদি তোমার নবুওয়াতের সময় বলবান যুবক থাকতাম! হায় আমি যদি সে সময় জীবিত থাকতাম যখন তোমার জাতি তোমাকে মক্কা থেকে বের করে দেবে! রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ওরাকাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি সত্যিই আমাকে বের করে দেবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছ, তদ্রুপ কোন কিছু নিয়ে যে ব্যক্তিই এসেছে, তার সাথে শত্রুতা করা হয়েছে। আমি তোমার যুগে বেঁচে থাকলে তোমাকে যথাসাধ্য সাহায্য করব। কিছু দিন পর ওরাকা ইন্তেকাল করলেন এবং অহী নাযিলও কিছু দিন পর্যন্ত স্থগিত রইল। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ৩)

সহিহ হাদিস
عَنْ جَابِرِ بْن عَبْدِ اللَّهِ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما : وَهُوَ يُحَدِّثُ عَنْ فَتْرَةِ الْوَحْى، فَقَالَ في حَدِيثِهِ : بَيْنَا أَنَا أَمْشِي إِذْ سَمِعْتُ صَوْتًا مِنَ السَّمَاءِ، فَرَفَعْتُ رَأْسِي، فَإِذَا المَلَكُ الذِي جَاءَنِي بِحِرَاءٍ جَالِسٌ عَلَى كُرْسِي بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، فَرُعِبْتُ مِنْهُ، فَرَجَعْتُ فَقُلْتُ: زَمِّلُونِي زَمُلُونِي، فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: ﴿يَا أَيُّهَا المُدَّثْرُ. قُم فَأَنْذِرْ وَرَبَّكَ فَكَبِّرُ . وَثِيَابَكَ فَطَهُرْ . وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ فَحَمِيَ الْوَحْيِ وَتتَابَعَ) .

জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি অহী বন্ধের সময়কাল সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আমি নবী (ﷺ) এর নিকট থেকে শুনেছি। তিনি বলেনঃ একদা আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় আকাশের দিক থেকে একটি আওয়াজ শুনতে পেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম যে, হেরা গুহায় আগমণকারী সেই ফেরেশতা আসমান ও যমীনের মাঝে একটি ঝুলন্ত আসনে বসে আছেন। ফেরেশতাকে এমতাবস্থায় দেখে আমি ভীত ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়লাম। গৃহে ফিরে গিয়ে বললামঃ আমাকে চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত কর! আমাকে চাদর দিয়ে আচ্ছাদিত কর! অতঃপর আল্লাহ তাআলা নাযিল করলেনঃ

﴿يَا أيُّهاَ الْمُدَّثِّرُ قُمْ فَأنْذِرْ وَ رَبَّكَ فَكَبِّرْ وَثِيَابَكَ فَطَهِّرْ وَالرُّجْزَ فَاهْجُرْ﴾

“হে বস্ত্রাবৃত ব্যক্তি! উঠ, সতর্ক কর। তোমার পালনকর্তার বড়ত্ব ঘোষণা কর। তোমার পোষাক পবিত্র কর এবং কদর্যতা পরিহার কর”। (সূরা মুদ্দাছছিরঃ ১-৫)

অতঃপর বিরতিহীনভাবে অহী আগমণ অব্যাহত থাকল। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ৪)

সহিহ হাদিস
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما في قَوْلِهِ تَعَالَى : لَا تُحَرِّكُ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ. قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) يُعَالِجُ مِنَ التَّنْزِيلِ شِدَّةٌ، وَكَانَ مِمَّا يُحَرِّكُ شَفَتَيْهِ - فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسِ : فَأَنَا أُحَرِّكُهُمَا كَمَا كَانَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) يُحَرِّكُهُمَا فَأَنْزَلَ اللهُ تَعَالَى: لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآنَهُ . قَالَ : جَمْعَهُ لَكَ في صَدْرِكَ وَتَقْرَأَهُ : فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآنَهُ) قَالَ: فَاسْتَمِعْ لَهُ وَأَنْصِتْ : ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا أَنْ تَقْرَأَهُ، فَكَانَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) بَعْدَ ذَلِكَ إِذَا أَتَاهُ جِبْرِيلُ اسْتَمَعَ ، فَإِذَا انْطَلَقَ جِبْرِيلُ قَرَأَهُ النَّبِيُّ (ﷺ) كَمَا قَرَأَهُ.

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আল্লাহর বাণীঃ “তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে তুমি দ্রুত অহী আবৃতি করবেনা”-এর ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ যখন কুরআন নাযিল হত তখন নবী (ﷺ) তা সাথে সাথে পাঠ করতেন এবং ঠোঁট নেড়ে দ্রুত উচ্চারণও করতেন। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) যেভাবে ঠোঁট নাড়াতেন আমি তোমাদেরকে সেভাবেই ঠোঁট নাড়িয়ে দেখাচ্ছি। নবী (ﷺ) এর কষ্ট দূর করার জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনের এই আয়াতগুলো নাযিল করলেনঃ

﴿لَا تُحَرِّكْ بِهِ لِسَانَكَ لِتَعْجَلَ بِهِ إِنَّ عَلَيْنَا جَمْعَهُ وَقُرْآَنَهُ﴾

“তাড়াতাড়ি শিখে নেয়ার জন্যে তুমি দ্রুত অহী উচ্চারণ করবেনা। এর সংরক্ষণ এবং পাঠ আমারই দায়িত্ব। (সূরা কিয়ামাহঃ ১৬-১৭) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ তোমার অন্তরে সংরক্ষণ করার দায়িত্ব আমার এবং তুমি তা পাঠ করবে।

﴿فَإِذَا قَرَأْنَاهُ فَاتَّبِعْ قُرْآَنَهُ ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ﴾

“অতঃপর যখন আমি তা পাঠ করি তখন তুমি সেই পাঠের অনুসরণ কর”। (সূরা কিয়ামাহঃ ১৮) অর্থাৎ তুমি তা শ্রবণ কর এবং চুপ থাক।

﴿ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ﴾

“এরপর বিষদ বর্ণনা আমারই দায়িত্ব”। (সূরা কিয়ামাহঃ ১৯)

অর্থাৎ আমি তোমাকে পড়াবো। এই আয়াতগুলো নাযিল হওয়ার পর যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট জিবরীল (আঃ) আগমণ করতেন তখন তিনি চুপ করে কুরআন শুনতেন। জিবরীল চলে যাওয়ার পর তিনি জিবরীলের পড়ার মত করেই পড়তেন। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ৫)

সহিহ হাদিস
وعَنه رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : كَانَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) أَجْوَدَ النَّاسِ، وَكَانَ أَجْوَدَ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جبْرِيلُ عليه السلام، وَكَانَ يَلْقَاهُ فِي كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْ رَمَضَانَ فَيُدَارِسُهُ الْقُرْآنَ، فَلَرَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) أَجْوَدُ بِالْخَيْرِ مِنَ الريح المُرْسَلَةِ .

ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) ছিলেন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী দানশীল। রামাযান মাসে জিবরীল ফেরেশতা যখন তাঁর নিকট আগমণ করতেন তখন তিনি সবচেয়ে বেশী দানশীল হতেন। জিবরীল ফেরেশতা রামাযান মাসের প্রতি রাতেই নবী (ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতেন এবং তাঁকে কুরআন পড়াতেন। এ কারণেই তিনি রামাযান মাসে কল্যাণকর কাজে প্রবাহিত বায়ুর চেয়েও বেশী বদান্যতা প্রদর্শন করতেন। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ৬)

সহিহ হাদিস
وعنه رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ أَبَا سُفْيانَ بْنَ حَرْبٍ، أَخْبَرَهُ: أَنَّ هِرَقْلَ أَرْسَلَ إِلَيْهِ فِي رَكْبٍ مِنْ قُرَيْشٍ، كَانُوا تجارًا بالشَّامِ، فِي المُدَّةِ الَّتِي كَانَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ) مَادَّ فِيهَا أَبَا سُفْيَانَ وَكُفَّارَ قُرَيْشٍ، فَأَتَوْهُ وَهُمْ بِإِيلِيَاءَ، فَدَعَاهُمْ وَحَوْلَهُ عُظَمَاءُ الرُّومِ، ثُمَّ دَعَاهُمْ فَدَعَا بِالتَّرْجُمَانِ، فَقَالَ: أَيُّكُمْ أَقْرَبُ نَسَبًا بِهذَا الرَّجُلِ الَّذِي يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِيٌّ؟ فَقَالَ أَبُو سُفْيانَ : فَقُلْتُ أَنَا أَقْرَبُهُمْ، فَقَالَ: أَدْنُوهُ مِنِّي، وَقَرْبُوا أَصْحَابَهُ فَاجْعَلُوهُمْ عِنْدَ ظَهْرِهِ، ثُمَّ قَالَ لِتَرْجُمَانِهِ : قُلْ لَهُمْ إِنِّي سَائِلٌ هَذَا عَنْ هَذَا الرَّجُلِ، فَإِنْ كَذَبَنِي فَكَذَّبُوهُ. فَوَاللَّهِ لَوْلَا الْحَيَاءُ مِنْ أَنْ يَأْتُرُوا عَلَيَّ كَذِبًا لَكَذَبْتُ عَنْهُ. ثُمَّ كَانَ أَوَّلَ مَا سَأَلَنِي عَنْهُ أَنْ قَالَ: كَيْفَ نَسَبُهُ فِيكُمْ؟ قُلْتُ : هُوَ فِينَا ذُو نَسَبٍ. قَالَ: فَهَلْ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ مِنْكُمْ أَحَدٌ قَدُّ قَبْلَهُ؟ قُلْتُ : لا . قَالَ : فَهَلْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكِ؟ قُلْتُ : لا . قَالَ : فَأَشْرَافُ النَّاسِ اتَّبَعُوهُ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ؟ فَقُلْتُ : ضُعَفَاؤُهُمْ قَالَ: أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ؟ قُلْتُ : بَلْ يَزِيدُونَ . قَالَ : فَهَلْ يَرْتَدُّ أَحَدٌ مِنْهُمْ سَخْطَةٌ لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُلَ فِيهِ؟ قُلْتُ : لا . قَالَ : فَهَلْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ؟ قُلْتُ : لا . قَالَ : فَهَلْ يَغْدِرُ؟ قُلْتُ : لا ، ونَحْنُ مِنْهُ فِي مُدَّةٍ لَا نَدْرِي مَا هُوَ فَاعِلٌ فِيهَا. قَالَ: وَلَمْ يُمْكِنِّي كَلِمَةٌ أُدْخِلُ فِيهَا شَيْئًا غَيْرُ هَذِهِ الْكَلِمَةِ . قَالَ : فَهَلْ قَاتَلْتُمُوهُ؟ قُلْتُ : نَعَمْ . قَالَ : فَكَيْفَ كَانَ قِتَالُكُمْ إِيَّاهُ؟ قُلْتُ: الْحَرْبُ بَيْنَنَا وَبَيْنَهُ سِجَالٌ، يَنَالُ مِنَّا وَنَنَالُ مِنْهُ . قَالَ : فَمَاذَا يَأْمُرُكُمْ؟ قُلْتُ : يَقُولُ : اعْبُدُوا اللهَ وَحْدَهُ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَاتْرُكُوا مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُكُمْ، وَيَأْمُرنَا بِالصَّلاَةِ وَالصِّدْقِ وَالْعَفَافِ وَالصَّلَةِ. فَقَالَ لِلتَّرْجُمَانِ : قُلْ لَهُ : إِنِّي سَأَلْتُكَ عَنْ نَسبِهِ فَذَكَرْتَ أَنَّهُ فِيكُمْ ذُو نَسَبٍ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ تُبْعَثُ فِي نَسَب قَوْمِهَا . وَسَأَلْتُكَ هَلْ قَالَ أَحَدٌ مِنْكُمْ هَذَا الْقَوْلَ قَبْلَهُ ، فَذَكَرْتَ أَنْ لَا، فَقُلْتُ لَوْ كَانَ أَحَدٌ قَالَ هَذَا الْقَوْلَ قَبْلَهُ، لَقُلْتُ رَجُلٌ يَتَأَتَى بِقَوْلٍ قِيلَ قَبْلَهُ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ كَانَ مِنْ آبائِهِ مِنْ مَلِكِ، فَذَكَرْتَ أَنْ لَا، قُلْتُ: لَوْ كَانَ مِنْ آبَائِهِ مِنْ مَلِكِ، قُلْتُ : رَجُلٌ يَطْلُبُ مُلْكَ أَبِيهِ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ كُنتُمْ تَتَّهِمُونَهُ بِالْكَذِبِ قَبْلَ أَنْ يَقُولَ مَا قَالَ، فَذَكَرْتَ أَنْ لَا ، فَقَدْ أَعْرِفُ أَنَّهُ لَمْ يَكُنْ لِيَذَرَ الْكَذِبَ عَلَى النَّاسِ وَيَكْذِبَ عَلَى اللهِ وَسَأَلْتُكَ أَشْرَافُ النَّاسِ اتَّبَعُوهُ أَمْ ضُعَفَاؤُهُمْ، فَذَكَرْتَ أَنَّ ضُعَفَاءَهُمُ اتَّبَعُوهُ وَهُمْ أَتْبَاعُ الرُّسُلِ. وَسَأَلْتُكَ أَيَزِيدُونَ أَمْ يَنْقُصُونَ، فَذَكَرْتَ أَنَّهُمْ يَزِيدُونَ، وَكَذَلِكَ أَمْرُ الإِيمَانِ حَتَّى يَتِمَّ وَسَأَلْتُكَ أَيَرْتَدُّ أَحَدٌ سَخْطَةٌ لِدِينِهِ بَعْدَ أَنْ يَدْخُل فِيهِ، فَذَكَرْتَ أَنْ لا، وَكَذَلِكَ الإِيمَانُ حِينَ تُخَالِطُ بَشَاشَتُهُ الْقُلُوبَ. وَسَأَلْتُكَ هَلْ يَغْدِرُ، فَذَكَرْتَ أَنْ لاَ، وَكَذَلِكَ الرُّسُلُ لاَ تَغْدِرُ. وَسَأَلْتُكَ بِمَا يَأْمُرُكُمْ، فَذَكَرْتَ أَنَّهُ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوا اللَّهَ وَحْدَه وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا، وَيَنْهَاكُمْ عَنْ عِبادَةِ الأَوْثَانِ، وَيَأْمُرُكُمْ بِالصَّلَاةِ وَالصِّدْقِ وَالعَفَافِ، فَإِنْ كَانَ مَا تَقُولُ حَقًّا فَسَيَمْلِكُ مَوْضِعَ قَدَمَيَّ هَاتَيْنِ، وَقَدْ كُنتُ أَعْلَمُ أَنَّهُ خَارِجٌ لَمْ أَكُنْ أَظُنُّ أَنَّهُ مِنْكُمْ، فَلَوْ أَعْلَمُ أَنِّي أَخْلُصُ إِلَيْهِ، لَتَجَشَّمْتُ لِقَاءَهُ، وَلَوْ كُنْتُ عِنْدَهُ لَغَسَلْتُ عَنْ قَدَمِهِ . ثُمَّ دَعَا بِكِتَابِ رَسُولِ اللهِ (ﷺ) الَّذِي بُعِثَ بِهِ دِحْيَةُ إِلَى عَظِيمٍ بُصْرَى، فَدَفَعَهُ إِلَى هِرَقْلَ، فَقَرَأَهُ، فَإِذَا فِيهِ : بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، مِنْ مُحَمَّدٍ عَبْدِ اللهِ وَرَسُولِهِ إِلَى هِرَقْلَ عَظِيمٍ الرُّوم: سَلامٌ عَلَى مَنِ اتَّبَعَ الْهُدَى، أَمَّا بَعْدُ، فَإِنِّي أَدْعُوكَ بِدِعَايَةِ الْإِسْلَامِ، أَسْلِمْ تَسْلَمْ، يُؤْتِكَ اللَّهُ أَجْرَكَ مَرَّتَيْنِ، فَإِنْ تَوَلَّيْتَ فَإِنَّ عَلَيْكَ إِثْمَ الأَرِيسِينَ، وَ : يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَنْ لَا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ. قَالَ أَبُو سُفْيانَ : فَلَمَّا قَالَ مَا قَالَ، وَفَرَغَ مِنْ قِرَاءَةِ الْكِتَابِ، كَثُرَ عِنْدَهُ الصَّحَبُ وَارْتَفَعَتِ الأَصْواتُ وَأُخْرِجْنَا، فَقُلْتُ لِأَصْحَابِي: لَقَدْ أَمِرَ أَمْرُ ابْنِ أَبِي كَبْشَةَ، إِنَّهُ يَخَافُهُ مَلِكُ بَنِي الأَصْفَرِ. فَما زِلْتُ مُوقِنًا أَنَّهُ سَيَظْهَرُ حَتَّى أَدْخَلَ اللَّهُ عَلَيَّ الإِسْلَامَ . وَكَانَ ابْنُ النَّاطُورِ، صَاحِبُ إِيلِيَاءَ وِهِرَقْلَ، أُسْقِفَ عَلَى نَصَارَى الشَّام، يُحَدِّثُ أَنَّ هِرَقْلَ حِينَ قَدِمَ إِيلِيَاءَ ، أَصْبَحَ خَبِيثَ النَّفْسِ، فَقَالَ له بَعْضُ بَطَارِقَتِهِ : قَدِ اسْتَنْكَرْنَا هَيْئَتَكَ، قَالَ ابْنُ النَّاطُورِ : وَكَانَ هِرَقْلُ حَزَّاءَ يَنْظُرُ فِي النُّجُوم، فَقَالَ لَهُمْ حِينَ سَأَلُوهُ : إِنِّي رَأَيْتُ اللَّيْلَةَ حِينَ نَظَرْتُ فِي النُّجُومِ أَنَّ مَلِكَ الْخِتَانِ قَدْ ظَهَرَ ، فَمَنْ يَخْتَتِنُ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ؟ قَالُوا : لَيْسَ يَخْتَتِنُ إِلا الْيَهُودُ، فَلاَ يُهِمَّنَّكَ شَأْنُهُمْ، وَاكْتُبْ إِلَى مَدَايِنِ مُلْكِكَ، فَيَقْتُلُوا مَنْ فِيهِمْ مِنَ الْيَهُودِ. فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى أَمْرِهِمْ، أُتِيَ هِرَقْلُ بِرَجُلٍ أَرْسَلَ بِهِ مَلِكُ غَسَّانَ يُخْبِرُ عَنْ خَبَرِ رَسُولِ اللهِ (ﷺ) فَلَمَّا اسْتَخْبَرَهُ هِرَقْلُ قَالَ : اذْهَبُوا فَانْظُرُوا أَمُخْتَتِنٌ هُوَ أَمْ لَا؟ فَنَظَرُوا إِلَيْهِ ، فَحَدَّثُوهُ أَنَّهُ مُخْتَتِنٌ، وَسَأَلَهُ عَنِ الْعَرَب، فَقَالَ: هُمْ يَخْتَتِنُونَ، فَقَالَ هِرَقُلُ : هَذَا مَلِكُ هَذِهِ الْأُمَّةِ قَدْ ظَهَرَ. ثُمَّ كَتَبَ هِرَقْلُ إِلَى صَاحِبٍ لَهُ بِرُومِيَةَ، وَكَانَ نَظِيرَهُ فِي الْعِلْمِ، وَسَارَ هِرَقْلُ إِلَى حِمْصَ، فَلَمْ يَرِمْ حِمْصَ حَتَّى أَتَاهُ كِتَابٌ مِنْ صَاحِبِهِ يُوَافِقُ رَأْيَ هِرَقْلَ عَلَى خُرُوج النَّبِيِّ (ﷺ) ، وَأَنَّهُ نَبِيُّ، فَأَذِنَ هِرَقْلُ لِعُظَمَاءِ الرُّومِ فِي دَسْكَرَةٍ لَهُ بِحِمْصَ، ثُمَّ أَمَرَ بِأَبْوَابِهَا فَخُلْقَتْ، ثُمَّ أطلَعَ فَقَالَ: يَا مَعْشَرَ الرُّومِ، هَلْ لَكُمْ فِي الْفَلَاح وَالرُّشْدِ، وَأَنْ يَثْبُتَ مُلكُكُمْ، فَتُبَايِعُوا هَذَا النَّبِيَّ؟ فَحَاصُوا حَيْصَةَ حُمُرِ الْوَحْشِ إِلَى الْأَبْوَابِ، فَوَجَدُوهَا قَدْ عُلِّقَتْ، فَلَمَّا رَأَى هِرَقْلُ نَفْرَتَهُمْ، وَأَيسَ مِنَ الإِيمَانِ، قَالَ: رُدُّوهُمْ عَلَيَّ، وَقَالَ: إِنِّي قُلْتُ مَقَالَتِي آنِفًا أَخْتَبِرُ بِهَا شِدَّتَكُمْ عَلَى دِينِكُمْ، فَقَدْ رَأَيْتُ، فَسَجَدُوا لَهُ وَرَضُوا عَنْهُ، فَكَانَ ذلِكَ آخِرَ شَأْنِ هِرَقْلَ .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আবু সুফিয়ান বিন হারব তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তারা এক সময় শাম (সিরিয়ায়) দেশে ব্যবসার উদ্দেশ্যে গমণ করেছিলেন। তখন রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস এক দল কুরাইশ লোকসহ তাকে ডেকে পাঠালেন৷ এই ঘটনা ঐ সময় সংঘটিত হয়েছিল যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং কুরাইশ কাফেরদের মধ্যে হোদায়বিয়ার সন্ধি চলছিল। তারা তাঁর নিকট উপস্থিত হলেন। তখন তারা ইলীয়া শহরে অবস্থান করছিলেন। তিনি তাদেরকে ডাকলেন। সেখানে তার চারপাশে রাজ্যের নেতৃবর্গও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাদেরকে ডাকলেন এবং দোভাষীকেও ডাকলেন। অতঃপর বাদশাহ বললেনঃ আরবের মধ্যে যে নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে তোমাদের মধ্যে কে সবচেয়ে তাঁর ঘনিষ্ট আত্মীয়? আবু সুফিয়ান বললেনঃ আমি তাঁর সবচেয়ে বেশী নিকটাত্মীয়। বাদশাহ বললেনঃ তোমরা তাঁকে এবং তাঁর সাথীদেরকে আমার নিকটে ডেকে নিয়ে আসো। অতঃপর সাথীদেরকে আবু সুফিয়ানের পিছনে বসানো হল। অতঃপর হিরাক্লিয়াস দোভাষীকে বললেনঃ তুমি তাদেরকে (আবু সুফিয়ানের সাথীদেরকে) বল যে, আমি ঐ ব্যক্তি (মুহাম্মাদ) সম্পর্কে তাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো। সে যদি আমার সাথে মিথ্যা বলে তবে তোমরাও তাকে মিথ্যাবাদী বলবে। আবু সুফিয়ান বলেনঃ সঙ্গীরা আমাকে মিথ্যাবাদী বলে অপবাদ দেয়ার লজ্জা আমাকে বাধা প্রদান না করলে আমি তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা বলতাম। অতঃপর তিনি প্রথমে আমাকে যে প্রশ্নটি করলেন তা হলঃ

হিরাক্লিয়াসঃ তোমাদের মধ্যে তাঁর বংশ মর্যাদা কেমন?
আবু সুফিয়ানঃ তিনি আমাদের মধ্যে উচ্চ মর্যাদাপূর্ণ বংশের লোক।

হিরাক্লিয়াসঃ তোমাদের মধ্যে তার পূর্বে অন্য কেউ এরূপ কথা বলেছেন কি?
আবু সুফিয়ানঃ না।

হিরাক্লিয়াসঃ তাঁর পূর্ব পুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কি?
আবু সুফিয়ানঃ না।

হিরাক্লিয়াসঃ নেতৃস্থানীয় ও প্রভাবশালী লোকেরা তাঁর অনুসরণ করেছে? না দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা?
আবু সুফিয়ানঃ দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা।

হিরাক্লিয়াসঃ তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে? না কমছে?
আবু সুফিয়ানঃ তাঁর অনুসারীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

হিরাক্লিয়াসঃ কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর দোষ-ত্রুটি দেখে পুনরায় দ্বীন পরিত্যাগ করে কি?
আবু সুফিয়ানঃ না।

হিরাক্লিয়াসঃ লোকটি বর্তমানে যা বলছে, তোমরা কি এর পূর্বে কখনো তাঁর প্রতি মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ করেছো?
আবু সুফিয়ানঃ না

হিরাক্লিয়াসঃ তিনি কি ওয়াদা ভঙ্গ করেন?
আবু সুফিয়ানঃ না। তবে বর্তমানে আমরা তাঁর সাথে একটি সন্ধিতে আবদ্ধ আছি। জানিনা তিনি এতে কি করবেন। আবু সুফিয়ান বলেনঃ একথাটি ব্যতীত আমি তাঁর বিরুদ্ধে অন্য কিছু বলার সাহস পেলাম না।

হিরাক্লিয়াসঃ তোমরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছো?
আবু সুফিয়ানঃ হ্যাঁ।

হিরাক্লিয়াসঃ তাঁর সাথে আপনাদের যুদ্ধের ফলাফল কী হয়েছে?
আবু সুফিয়ানঃ যুদ্ধের ফলাফল আমাদের ও তাঁর মধ্যে ঘূর্নয়মান। কখনও তিনি বিজয়ী হয়েছেন আবার কখনও আমরা বিজয়ী হয়েছি।

হিরাক্লিয়াসঃ তিনি তোমাদেরকে কিসের আদেশ দেন?
আবু সুফিয়ানঃ তিনি আমাদেরকে বলেনঃ এক আল্লাহর এবাদত কর। তাঁর সাথে অন্য কিছুকে শরীক করোনা। তোমাদের পূর্ব পুরুষরা যেসব বস্তুর উপাসনা করত তা ছেড়ে দাও। তিনি আমাদেরকে নামাযের আদেশ দেন। তিনি আরো আদেশ দেনঃ তোমরা সত্য বল, অন্যায় থেকে বিরত থাক এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ।

অতঃপর সম্রাট দোভাষীকে বললেনঃ তুমি আবু সুফিয়ানকে বলঃ আমি তোমাকে তাঁর বংশ মর্যাদা সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলাম। তুমি বলেছঃ তিনি তোমাদের মাঝে সম্ভ্রান্ত বংশের অন্তর্ভূক্ত। এমনিভাবে রাসূলগণ সম্ভ্রান্ত বংশেই জন্ম গ্রহণ করে থাকেন।

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমাদের মধ্যে ইতিপূর্বে অন্য কেউ এরূপ কথা বলেছে কি? তুমি বলেছঃ না। সুতরাং আমি বলছি, ইতিপূর্বে যদি কেউ এ ধরণের কথা বলত, তাহলে আমি বলতামঃ তিনি তাঁর পূর্বসূরি ব্যক্তির কথাই বলছেন।

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ রাজা-বাদশাহ ছিলেন কি? তুমি বলেছঃ না। তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে যদি কেউ রাজা-বাদশাহ থাকত, তাহলে আমি বলতামঃ তিনি এমন ব্যক্তি যিনি তাঁর পূর্বপুরুষদের রাজত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছেন।

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, বর্তমানে তিনি যা বলছেন, ইতিপূর্বে তোমরা কি কখনও তাঁর উপর মিথ্যাবাদীতার অভিযোগ করেছ? তুমি বলেছঃ না। তাই আমি বিশ্বাস করি যে, মানুষের সাথে মিথ্যা বলা ছেড়ে দিয়ে তিনি আল্লাহ সম্পর্কে কখনও মিথ্যা বলতে পারেন না।

তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, সম্মানিত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিগণ তাঁর অনুসরণ করেছে? না দরিদ্র শ্রেণীর লোকেরা? তুমি বলেছঃ দরিদ্র ও দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা তাঁর অনুসরণ করেছে। মূলতঃ দুর্বল ও অসহায়গণই নবী-রাসূলদের অনুসারী হয়ে থাকে।

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে? না কমছে? তুমি বলেছঃ তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। নিশ্চয়ই ঈমানের বিষয়টি এরূপই হয়ে থাকে, যতক্ষণ না তা পূর্ণতায় রূপ নেয়৷

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তাঁর দ্বীনে দিক্ষীত হওয়ার পর নাখোশ হয়ে কেউ ধর্মান্তরিত হয়েছে কি? তুমি বলেছঃ না। ঈমানের আলো যখন অন্তরে প্রবেশ করে তখন এরূপই হয়ে থাকে।

আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছিলাম, তিনি কি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন? তুমি বলেছোঃ না৷ প্রকৃতপক্ষে রাসূলগণ এরূপই হয়ে থাকেন। তারা কখনও অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না।
আমি তোমাকে আরও জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, তিনি তোমাদেরকে কিসের আদেশ দেন? তুমি বলেছো যে, তিনি তোমাদেরকে এক আল্লাহর এবাদতের আদেশ দেন এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করতে নিষেধ করেন এবং মূর্তি পূজা করতে নিষেধ করেন। তোমাদেরকে নামাযের আদেশ দেন, সত্য বলতে এবং পবিত্র থাকতে আদেশ করেন।

পরিশেষে হিরাক্লিয়াস বললেনঃ তুমি যা বললে তা যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে অচিরেই তিনি আমার এ দু'পা রাখার স্থানেরও মালিক হবেন।

আমি অবশ্যই জানতাম যে তিনি অচিরেই আবির্ভূত হবেন। তবে আমি জানতাম না যে, তিনি তোমাদের মধ্যে হতে বের হবেন। আমি যদি জানতাম যে, তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে সক্ষম হব, তাহলে অবশ্যই তাঁর সাথে দেখা করতে চেষ্টা করতাম। আমি যদি তাঁর কাছে থাকতাম তাহলে তাঁর পদযুগল ধৌত করে দিতাম।

অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)-এর পত্র আনতে বললেন। নবী (ﷺ)-এর পত্রটি দেহইয়া কালবী (রাঃ)-এর মাধ্যমে হিরাক্লিয়াসের পক্ষ থেকে নিয়োগ কৃত বুসরার শাসন কর্তার নিকট পাঠিয়েছিলেন। যাতে করে বুসরার শাসনকর্তা পত্রটি হিরাক্লিয়াসের নিকট পাঠিয়ে দেন। সম্রাট পত্রটি পাঠ করেন। তাতে যা লিখা ছিলঃ

“বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম”

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ-এর পক্ষ থেকে রোমের মহান সম্রাট হিরাক্লিয়াসের প্রতিঃ “হেদায়াতের পথের অনুসারীদের প্রতি আল্লাহর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি আপনাকে ইসলামের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তাহলে নিরাপদে থাকবেন। আপনি ইসলাম গ্রহণ করলে আল্লাহ আপনাকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবেন। আর যদি আপনি ইসলাম হতে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেন তাহলে প্রজাদের সকলের অপরাধও আপনার উপর বর্তাবে। পত্রে আল্লাহর এই বাণীটিও ছিলঃ

﴿يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْا إِلَى كَلِمَةٍ سَوَاءٍ بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلَّا نَعْبُدَ إِلَّا اللَّهَ وَلَا نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلَا يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضًا أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَقُولُوا اشْهَدُوا بِأَنَّا مُسْلِمُونَ﴾

“হে আহলে কিতাব! তোমরা এমন একটি কালেমার দিকে আস যা আমাদের ও তোমাদের মাঝে সমান। তা হল আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো এবাদত করবোনা এবং তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবোনা এবং আমাদের কেউ অন্য কাউকে পালনকর্তা হিসাবে গ্রহণ করবেনা। তোমরা যদি এটা গ্রহণ না কর তাহলে তোমরা বলে দাও, তোমরা এ মর্মে সাক্ষী থাক যে আমরা আল্লাহর অনুগত। (সূরা আল-ইমরানঃ ৬৪)

আবু সুফিয়ান বলেনঃ হিরাক্লিয়াস যা বলার বললেন এবং পত্র পাঠ থেকে অবসর হলেন। তখন তাঁর নিকট হৈ চৈ শুরু হয়ে গেল এবং আওয়াজ উঁচু হল। আমাদেরকে সেখান থেকে বের করে দেয়া হল। আমি আমার সাথীদেরকে বললামঃ আবু কাবশার ছেলের ব্যাপারটি তো অনেক বড় হয়ে গেছে। অর্থাৎ মুহাম্মাদের ব্যাপারটি অনেক বেড়ে গেছে। স্বয়ং রোম সম্রাটও তাঁকে ভয় করছেন।

আবু সুফিয়ান বলেনঃ এ ঘটনার পর থেকে আমার অন্তরে এরূপ বিশ্বাস জন্মেছিল যে, অবশ্যই রাসূল (ﷺ) বিজয়ী হবেন। ইতিমধ্যেই আল্লাহ তাআলা আমার ভিতরে ইসলামের মুহাব্বত ঢুকিয়ে দিলেন।

ইলিয়ার শাসনকর্তা ও হিরাক্লিয়াসের বন্ধু ইবনে নাতৃরা শামের (সিরিয়ার) খৃষ্টানদের সরদার ছিলেন। তিনি বর্ণনা করতেন যে, হিরাক্লিয়াস যখন শামে (সিরিয়ায়) আগমণ করার সময় বায়তুল মাকদিস আগমণ করেন তখন একদিন বিষন্ন মন নিয়ে ঘুম থেকে উঠলেন। তার এক সাথী বললেনঃ হে সম্রাট! আমরা আপনাকে আজ পেরেশান অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। এর কারণ কী?

ইবনে নাতূর বলেনঃ হিরাক্লিয়াস একজন গণকও ছিলেন। তিনি তারকার দিকে দৃষ্টি দিতেন৷ তারা যখন তাকে বিষন্ন থাকার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন তখন তিনি বললেনঃ আজ রাতে তারকার দিকে তাকিয়ে দেখলাম খতনাকারীদের বাদশাহ জয়যুক্ত হয়েছেন।[১] তোমরা বলতে পার কি বর্তমান সময়ে কারা খতনা করে? তারা বললঃ বর্তমান যামানায় ইহুদীরাই খতনা করে থাকে। সুতরাং তাদের ব্যাপারে পেরেশান হওয়ার কিছু নেই। সুতরাং আপনি রাজ্যের শহরে এ আদেশ লিখে পাঠান, যেখানে খতনাকারী ইহুদী বসবাস করছে লোকেরা যেন তাদের সবাইকে হত্যা করে। তারা যখন সম্রাটের সাথে এরূপ আলোচনায় রত ছিলেন তখন গাস্সানের শাসনকর্তার পক্ষ থেকে প্রেরিত এক লোককে হিরাক্লিয়াসের নিকট উপস্থিত করা হল। সে লোকটি রাসূল (ﷺ)-এর খবরাখবর বর্ণনা করতো। হিরাক্লিয়াস যখন তাকে রাসূল (ﷺ)-এর অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন তখন বললেনঃ তোমরা তাকে গোপন স্থানে নিয়ে যাও এবং দেখ তার খতনা করা হয়েছে কি না? অতঃপর তারা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখল এবং হিরাক্লিয়াসকে জানাল যে সে খাতনাকৃত। তারপর তাকে আরবদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে বললঃ আরবরা খতনা করে থাকে। তখন হিরাক্লিয়াস বললেনঃ এ ব্যক্তিই (মুহাম্মাদ) এ জাতির বাদশাহ। তিনি প্রকাশ পেয়েছেন।

অতঃপর হিরাক্লিয়াস তার এক বন্ধুর নিকট পত্র লিখে পাঠালেন। তিনিও জ্ঞান-বিজ্ঞানে হিরাক্লিয়াসের সমকক্ষ ছিলেন। তারপর তিনি হিমসে চলে গেলেন। হিমসে পৌঁছার পর তার বন্ধুর নিকট থেকে পত্রের জবাব এসে গেল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর আবির্ভাবের ব্যাপারে তার ধারণাও হিরাক্লিয়াসের ধারণার মতই ছিল। তিনি প্রকৃতপক্ষেই নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন।

অতঃপর সম্রাট হিরাক্লিয়াস রোমের গভর্ণরদেরকে হিমসের কোন একটি মহলে ডাকলেন। মহলের সমস্ত দরজা বন্ধ করে দেয়ার আদেশ করলেন। তারপর সম্রাট লোকদের সামনে হাজির হয়ে বললেনঃ হে রোম সম্প্রদায়! যদি তোমরা নিজেদের কল্যাণ চাও এবং সঠিক পথের সন্ধান কামনা কর এবং এটা চাও যে, তোমাদের রাজত্ব বহাল থাকুক, তাহলে এই নবীর হাতে বায়আত করে তাঁর অনুসরণ কর। সম্রাটের কথা শুনে উপস্থিত লোকেরা জংলী গাধার ন্যায় দরজার দিকে ছুটে অগ্রসর হল। কিন্তু তারা সমস্ত দরজা বন্ধ দেখতে পেল। রোমান সম্রাট যখন তাদের অনিচ্ছা দেখতে পেলেন এবং ঈমানের প্রতি তাদের কোন আগ্রহ দেখতে পেলেন না, তখন তিনি তাদেরকে দরবারে ফেরত আনতে বললেন। সম্রাট তাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ একটু পূর্বে তোমাদেরকে আমি যে কথাটি বলেছিলাম তা তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য এবং তোমাদের দ্বীনের উপরে তোমাদের দৃঢ়তা যাচাই করার জন্যই বলেছিলাম। সুতরাং আমি প্রত্যক্ষ করলাম যে, তোমরা তোমাদের দ্বীনের উপর অটল রয়েছ। এ কথা শুনে সকলেই বাদশাহকে সেজদাহ করল এবং তার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করল। এটিই ছিল সম্রাট হিরাক্লিয়াসের সর্বশেষ অবস্থা। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ৭)
[১] সেই যুগের সাধারণ অভ্যাস মুতাবেক হিরাক্লিয়াস এ কথা বলেছেন। সেকালে মহাশুণ্যের বিভিন্ন অবস্থা ও তারকাসমূহের চলাচলের মাধ্যমে যমীনের বিভিন্ন ঘটানার উপর দলীল গ্রহণ করা হত। ইসলাম এ কাজকে সম্পূর্ণ হারাম ঘোষণা করেছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন