hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

মুখতাসার সহীহ আল-বুখারী

৫৫. নবীদের অবস্থার বিবরণ

مختصر صحيح البخاري

৫৫/ পরিচ্ছেদঃ আদম ও তাঁর বংশধর সৃষ্টির কাহিনী

১৩৯৯

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ : (خَلَقَ اللهُ آدَمَ وَطُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، ثُمَّ قَالَ : اذْهَبْ فَسَلَّمْ عَلَى أُولئِكَ مِنَ المَلائِكَةِ ، فَاسْتَمِعْ ما يُحَبُّونَكَ، تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ، فَقَالَ : السَّلامُ عَلَيْكُمْ، فَقَالُوا : السَّلامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَزَادُوهُ : وَرَحْمَةُ اللَّهِ ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ ، فَلَمْ يَزَلْ الخَلْقُ يَنْقُصُ حَتَّى الآنَ).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন তখন তাঁর দৈর্ঘ ছিল ষাট হাত। অতঃপর তাঁকে বললেনঃ তুমি যাও এবং ঐ সমস্ত ফেরেশতাদেরকে সালাম কর। তাঁরা তোমার সালামের জবাবে যা বলে তা শুন। সেটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালামের রীতি। সুতরাং আদম (আঃ) তাদের নিকট গিয়ে বললেনঃ (السلام عليكم)। ফেরেশতাগণ জবাবে বললেনঃ আস্‌সালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ। জবাবে তারা ‘রাহমাতুল্লাহ্’ বৃদ্ধি করল। যিনিই জান্নাতে প্রবেশ করবেন, তিনিই আদমের আকার বিশিষ্ট হবেন। আদমের পর থেকে বনী আদমের দৈর্ঘ্য কমতে কমতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৬৮)

১৪০০

সহিহ হাদিস
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : بَلَغَ عَبْدَ اللهِ بْنَ سَلَام رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ مَقْدَمُ رَسُولِ اللهِ (ﷺ) المَدِينَةَ، فَأَتَاهُ فَقَالَ : إِنِّي سَائِلُكَ عَنْ ثَلاثٍ لَا يَعْلَمُهُنَّ إِلا نَبِيُّ : مَا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ، وَمَا أَوَّلُ طَعَام يَأْكُلُهُ أَهْلُ الجَنَّةِ، وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ الْوَلَدُ إِلَى أَبِيهِ، وَمِنْ أَيِّ شَيْءٍ يَنْزِعُ إِلَى أَخْوَالِهِ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) : خَبَّرَنِي بِهِنَّ آنِفًا جِبْرِيلُ). قالَ : فَقَالَ عَبْدُ اللَّهِ : ذَاكَ عَدُوُّ الْيَهُودِ مِنَ المَلائِكَةِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ): (أَمَّا أَوَّلُ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ فَنَارٌ تَحْشُرُ النَّاسَ مِنَ المَشْرِقِ إِلَى المَغْرِبِ، وَأَمَّا أَوَّلُ طَعَام يَأْكُلُهُ أَهْلُ الجَنَّةِ فَزِيَادَةُ كَبِدِ حُوتٍ، وَأَمَّا الشَّبَهُ في الْوَلَدِ : فَإِنَّ الرَّجُلَ إِذَا غَشِيَ المَرْأَةَ فَسَبَقَهَا مَاؤُهُ كانَ الشَّبَهُ لَهُ، وَإِذَا سَبَقَ مَاؤُها كانَ الشَّبَهُ لَهَا . قَالَ : أَشْهَدُ أَنَّكَ رَسُولُ اللهِ ، ثُمَّ قَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، اليَهُودَ قَوْمٌ بُهت ، إِنْ عَلِمُوا بِإِسْلامِي قَبْلَ أَنْ تَسْأَلَهُمْ بَهَتُونِي عِنْدَكَ، فَجَاءَتِ الْيَهُودُ وَدَخَلَ عَبْدُ اللَّهِ الْبَيْتَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ): (أَيُّ رَجُلٍ فِيكُمْ عَبْدُ اللَّهِ ابْنُ سَلام؟ قالُوا: أَعْلَمُنَا، وَابْنُ أَعْلَمِنَا، وَأَخْيَرُنَا، وَابْنُ أَخْيَرنا، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ (ﷺ): (أَفَرَأَيْتُمْ إِنْ أَسْلَمَ عَبْدُ الله؟ قالوا : أَعاذَهُ اللَّهُ مِنْ ذَلِكَ، فَخَرَجَ عَبْدُ اللَّهِ إِلَيْهِمْ فَقَالَ : أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إلا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، فَقَالُوا : شَرُّنَا ، وَابْنُ شَرْنَا ، وَوَقَعُوا فِيهِ .

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালামের নিকট যখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মদীনা আগমণের সংবাদ পৌছল তখন তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর খেদমতে এসে বললেনঃ আমি আপনাকে এমন তিনটি বিষয় সম্পর্কে প্রশ্ন করব, যা নবী ছাড়া অন্য কেউ অবগত নন। (১) কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত কোনটি? (২) জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য কি হবে? (৩) কি কারণে সন্তান পিতার সাদৃশ্য ও আকৃতি লাভ করে? আবার কি কারণে সন্তান কখনও মামাদের আকৃতি ধারণ করে?

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ জিবরীল এখনই এ বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাকে অবিহিত করলেন। আনাস বলেনঃ আব্দুল্লাহ্ ইবনে সালাম বললেনঃ সে তো ফেরেশতাদের মধ্যে ইহুদীদের শত্রু। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাব দিলেনঃ কিয়ামতের সর্বপ্রথম আলামত হচ্ছে এমন একটি আংশ, যা মানুষকে পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে একত্রিত করবে। জান্নাতীদের প্রথম খাদ্য হচ্ছে মাছের কলিজার বর্ধিত অংশ। আর সন্তানের আকৃতির ব্যাপারে কথা হচ্ছে, পুরুষ যখন আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন পুরুষের বীর্য স্ত্রীর বীর্যের উপর জয়লাভ করলে শিশু তার পিতার আকৃতি লাভ করে।

আর যদি স্ত্রীর বীর্য জয়লাভ করে তবে সন্তান মায়ের আকৃতি ধারণ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম বলেনঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি আল্লাহর রাসূল। অতঃপর তিনি বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! ইহুদীরা মিথ্যুক জাতি। তাদেরকে জিজ্ঞেস করার পূর্বে যদি তারা আমার ইসলাম সম্পর্কে জেনে যায়, তাহলে তারা আপনার কাছে আমার কুৎসা গাইবে।

অতঃপর ইহুদীরা এসে গেল। আব্দুল্লাহ ঘরে ঢুকে গেলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম কেমন লোক? তারা জবাব দিলঃ তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম জ্ঞানী এবং সর্বোত্তম জ্ঞানীর পুত্র। তিনি আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এবং সর্বোত্তম জ্ঞানী ব্যক্তির পুত্র। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ তিনি যদি ইসলাম গ্রহণ করেন তবে তোমাদের অভিমত কি হবে। তারা বললঃ আল্লাহ্ তাকে এ থেকে রক্ষা করুন। আব্দুল্লাহ হঠাৎ তাদের সামনে এসে গেলেন এবং ঘোষণা করলেনঃ

أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً رَسُوْلُ اللَّهِ

আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ﷺ) আল্লাহর রাসূল। এই ঘোষণা শুনে তারা তৎক্ষণাৎ বলে উঠলঃ সে আমাদের মধ্যে সর্বাধিক নিকৃষ্ট ব্যক্তি এবং নিকৃষ্টতম ব্যক্তির পুত্র। অতঃপর তারা তাঁর গীবত ও কুৎসা রটনায় লিপ্ত হল। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৬৯)

১৪০১

সহিহ হাদিস
وعَنْهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قال: (لَوْلاَ بَنُو إِسْرَائِيلَ لَمْ يَخْتَزِ اللَّحْمُ، وَلَوْلَا حَوَّاءُ لَمْ تَخُنْ أُنْثَى زَوْجَهَا ) .

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) বলেনঃ বনী ইসরাঈল না হলে গোশত পচন ধরত না। আর হাওয়া না হলে কোন মহিলাই তার স্বামীর খেয়ানত করত না। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭০)
টিকাঃ এখানে মূলতঃ দোষারোপ হিসাবে নয়; বরং একটি ইতিবৃত্ত ও সূত্র হিসাবে কথাটি বলা হয়েছে। কেননা মা হাওয়া খেয়ানত করেন নি; বরং তিনি প্রথম মহিলা মাত্র, হাঁ নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণে তিনি আদম (আঃ)কে উদ্বুদ্ধ করেছেন মাত্র। আর বনী ইসরাঈলকে 'মান ও সালওয়া' নামক জান্নাতী খাবার জমা রাখতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তারা জমা করে রাখায় তা বাসি হয়ে যায়।

১৪০২

সহিহ হাদিস
عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَرْفَعُهُ : أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ لِأَهْوَنِ أَهْلِ النَّارِ عَذَابًا : لَوْ أَنَّ لَكَ مَا فِي الْأَرْضِ مِنْ شَيْءٍ كُنْتَ تَفْتَدِي بِهِ؟ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : فَقَدْ سَأَلْتُكَ ما هُوَ أَهْوَنُ مِنْ هَذَا وَأَنْتَ في صُلْبِ آدَمَ : أَنْ لَا تُشْرِكَ بِي، فَأَبَيْتَإِلاَّ الشِّرْكَ ).

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

আনাস (রাঃ) মারফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ দোযখবাসীদের সবচেয়ে কম আযাব ভোগকারীকে জিজ্ঞেস করবেনঃ দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ যদি তোমাদের হাসিল হয়ে যায়, তবে এই আযাবের বিনিময়ে তুমি কি সব সম্পদ দিয়ে দিবে? সে বলবেঃ হ্যাঁ। আল্লাহ্ বলবেনঃ অথচ তুমি যখন আদমের পৃষ্ঠে ছিলে তখন আমি তোমার কাছে এর চেয়ে অতি সহজ একটি বিষয় কামনা করেছিলাম। তা হচ্ছে আমার সাথে কাউকে শরীক করোনা। কিন্তু তুমি তা মানতে অস্বীকার করলে এবং শির্কে লিপ্ত হলে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭১)

১৪০৩

সহিহ হাদিস
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) : (لَا تُقْتَلُ نَفْسٌ ظُلْمًا، إلا كانَ عَلَى ابْنِ آدَمَ الأَوَّلِ كِفْلٌ مِنْ دَمِهَا، لِأَنَّهُ أَوَّلُ مَنْ سَنَ الْقَتْلَ).

আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ যখনই কোন ব্যক্তিকে নাহকভাবে হত্যা করা হয়, তখনই তার এ খুনের গুনাহ্ এর একটি অংশ আদমের বড় ছেলের (কাবীলের) উপর বর্তায়। কেননা সেই সর্বপ্রথম খুনের প্রচলন করে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭২)
৫৫/ পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ “তারা তোমাকে যুল-কারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলঃ আমি অচিরেই তোমাদেরকে তাঁর কিছু অবস্থা জানাবো”।

১৪০৪

সহিহ হাদিস
عَنْ زَيْنَبَ ابْنَةِ جَحْشٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) دَخَلَ عَلَيْهَا فَزِعًا يَقُولُ: (لاَ إِلَهَ إِلا اللَّهُ، وَيْلٌ لِلْعَرَبِ مِنْ شَرٌ قَدِ اقْتَرَبَ، فُتِحَ الْيَوْمَ مِنْ رَدْمِ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ مِثْلُ هَذِهِ) وَحَلَّقَ بِإِصْبَعِهِ الإِبْهَامِ وَالَّتِي تَلِيهَا، قَالَتْ زَيْنَبُ بِنْتُ جَحْشٍ : فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، أَنَهْلِكُ وَفِينَا الصَّالِحُونَ؟ قَالَ: (نَعَمْ، إِذَا كَثُرَ الخَبَثُ).

যায়নাব বিনতে জাশ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

“একদা নবী (ﷺ) তাঁর নিকট ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেনঃ لَا إِلَهَ إِلَا اللَّهُ। আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুয-মা'জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাশ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী (ﷺ) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ বেড়ে যাবে”। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৩)

১৪০৫

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ : (يَقُولُ اللهُ تَعَالَى: يَا آدَمُ، فَيَقُولُ: لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ، وَالْخَيْرُ في يَدَيْكَ، فَيَقُولُ : أَخْرِجْ بَعْثَ النَّارِ، قَالَ : وَمَا بَعْثُ النَّارِ؟ قالَ : مِنْ كُلِّ أَلْفِ تِسْعَمِائَةٍ وَتِسْعَةً وَتِسْعِينَ، فَعِنْدَهُ يَشِيبُ الصَّغِيرُ، وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا، وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى، وَلَكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيدٌ). قالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَأَيُّنَا ذلِكَ الْوَاحِدُ؟ قالَ : (أَبْشِرُوا ، فَإِنَّ مِنْكُمْ رَجُلًا وَمِنْ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ أَلْفًا. ثُمَّ قالَ : وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، إِنِّي أَرْجُو أَنْ تكُونُوا رُبعَ أَهْل الجَنَّةِ . فَكَبَّرْنَا ، فَقَالَ: أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا ثُلُثَ أَهْلِ الجَنَّةِ). فَكَبَّرْنَا ، فَقَالَ : (أَرْجُو أَنْ تَكُونُوا نِصْفَ أَهْل الجَنَّةِ) فَكَبَّرْنَا، فَقَالَ: (مَا أَنْتُمْ في النَّاسِ إِلا كَالشَّعَرَةِ السَّوْدَاءِ فِي جِلْدِ ثَوْرِ أَبْيَضَ ، أَوْ كَشَعَرَةٍ بَيْضَاءَ فِي جِلْدِ ثَوْرِ أَسْوَدَ).

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি হাজির আছি, প্রস্তুত আছি। সব কল্যাণ আপনার হাতেই। আল্লাহ্ তাআলা নির্দেশ দিবেনঃ জাহান্নামী দলকে বের কর। আদম বলবেনঃ জাহান্নামী দলের সংখ্যা কত? আল্লাহ্ বলবেনঃ প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জন। সে সময় (চরম ভয়াবহ অবস্থার কারণে) শিশুরা বৃদ্ধ হয়ে যাবে, প্রত্যেক গর্ভবতীর গর্ভপাত হয়ে যাবে। তুমি মানুষকে মাতালের মত দেখতে পাবে। অথচ তারা মাতাল নয়। কিন্তু আল্লাহর আযাব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! সেই একজন আমাদের মধ্যে কে হবেন? তিনি বললেনঃ তোমরা আনন্দিত হও। তোমাদের মধ্যে থেকে হবে একজন এবং ইয়াজুজ-মাজুজ থেকে হবে বাকী নয়শত নিরানব্বই জন।

অতঃপর নবী (ﷺ) বললেনঃ যার হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ! আমি আশা করি জান্নাতবাসীর চারভাগের একভাগ হবে তোমরা। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর তিনভাগের একভাগ। একথা শুনে আমরা তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর তিনি বললেনঃ আমার আশা, তোমরাই হবে জান্নাতবাসীর অর্ধেক। এবারও আমরা উঁচু আওয়াজে তাকবীর ধ্বনি দিলাম। অতঃপর তিনি বললেনঃ তোমরা তো অন্যান্য লোকদের তুলনায় একটি সাদা বলদের চামড়ায় একটি কালো লোমের ন্যায় অথবা একটি কালো বলদের চামড়ায় একটি সাদা লোমের ন্যায়। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৪)
৫৫/ পরিচ্ছেদঃ

১৪০৬

সহিহ হাদিস
عَنِ ابْنِ عَبَّاس عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُما ، عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ: (إِنَّكُمْ تُحْشَرُونَ حُفَاةٌ عُرَاةٌ غُرْلًا، ثُمَّ قَرَأَ : كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ . وَأَوَّلُ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيامَةِ إِبْرَاهِيمُ، وَإِنَّ أُنَاسًا مِنْ أَصْحَابِي يُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ، فَأَقُولُ: أَصْحَابِي أَصْحَابِي، فَيُقَالُ: إِنَّهُمْ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ، فَأَقُولُ كما قالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ : وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ فِيهِمْ إِلَى قَوْلِهِ: فِيهِمْ) الحكيم).

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন খালি পা, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় তোমাদেরকে (কিয়ামতের দিন) উপস্থিত করা হবে। অতঃপর নবী (ﷺ) কুরআনের এই আয়াত পাঠ করলেনঃ

كَمَا بَدَأْنَآ أَوَّلَ خَلْقٍۢ نُّعِيدُهُۥ ۚ وَعْدًا عَلَيْنَآ ۚ إِنَّا كُنَّا فَـٰعِلِينَ

“আমি প্রথমবার যেভাবে সৃষ্টি করেছিলাম সেভাবেই পুনরায় সৃষ্টি করব। এটি আমার ওয়াদা। আমি তা অবশ্যই পূর্ণ করব। (সূরা আস্বীয়াঃ ১০৪)

কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম ইবরাহীম (আঃ) কে কাপড় পরিধান করানো হবে। আমার সাহাবীদের কতিপয় লোককে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবঃ এরা তো আমার সাহাবী, এরা তো আমার সাহাবী। তখন বলা হবেঃ আপনার মৃত্যুর পর এরা মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আমি তাই বলব যা বলেছিল আল্লাহর নেক বান্দা ঈসা (আঃ)।

وَكُنتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًۭا مَّا دُمْتُ فِيهِمْ ۖ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَنِى كُنتَ أَنتَ ٱلرَّقِيبَ عَلَيْهِمْ ۚ وَأَنتَ عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍۢ شَهِيدٌ ١١٧ إِن تُعَذِّبْهُمْ فَإِنَّهُمْ عِبَادُكَ ۖ وَإِن تَغْفِرْ لَهُمْ فَإِنَّكَ أَنتَ ٱلْعَزِيزُ ٱلْحَكِيمُ ١١٨

“আমি যতদিন তাদের মধ্যে ছিলাম, ততদিন তাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। অতঃপর আপনি যখন আমাকে লোকান্তরিত করলেন, তখন আপনিই ছিলেন তাদের পর্যবেক্ষক। আপনি সর্ববিষয়ে পূর্ণ অবগত। আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন তবে তারা তো আপনারই দাস। আর যদি আপনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তবে আপনিই পরাক্রান্ত ও মহাবিজ্ঞ। (সূরা মায়েদাঃ ১১৭-১১৮) (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৫)

১৪০৭

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، عَنِ النَّبِيِّ (ﷺ) قَالَ: (يَلْقَى إِبْرَاهِيمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيامَةِ، وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ، فَيَقُولُ لَهُ: إِبْرَاهِيمُ : أَلَمْ أَقُلْ لَكَ : لا تَعْصِنِي، فَيَقُولُ أَبُوهُ : فَالْيَوْمَ لاَ أَعْصِيكَ، فَيَقُولُ إِبْرَاهِيمُ : يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِي أَنْ لَا تُخْزِيَنِي يَوْمَ يُبْعَثُونَ، فَأَيُّ خِزْيِ أَخْزَى مِنْ أَبِي الْأَبْعَدِ؟ فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى : إِنِّي حَرَّمْتُ الجَنَّةَ عَلَى الْكافِرِينَ، ثُمَّ يُقَالُ: يَا إِبْرَاهِيمُ، مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ؟ فَيَنْظُرُ، فَإِذَا هُوَ بِذِيحٍ مُلْتَطِ، فَيُؤْخَذُ بِقَوائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) বলেনঃ কিয়ামতের দিন ইবরাহীম তাঁর পিতা আযরের সাক্ষাত পাবেন। তখন আযরের চেহারা মলিন ও ধূলাবালি মাখা থাকবে। ইবরাহীম তাঁর পিতাকে বলবেনঃ আমি কি আপনাকে একথা বলিনি যে, আমার নাফরমানী করবেন না? তাঁর পিতা বলবেঃ আজ আমি তোমার নাফরমানী করবনা। তখন ইবরাহীম বলবেনঃ হে আমার প্রভু! আপনি আমার সাথে ওয়াদা করেছেন যে, আপনি আমাকে হাশরের দিন লজ্জিত করবেন না। আপনার রহমত থেকে বঞ্চিত আমার পিতার অপমানের চেয়ে অধিক অপমান আমার জন্য আর কি হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেনঃ আমি চিরতরে কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। অতঃপর বলা হবেঃ হে ইবরাহীম! তোমার পদতলে কি? তখন তিনি নীচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন, সেখানে রয়েছে শরীরে ময়লা মাখা একটি মৃতখোর জানোয়ার। অতঃপর তার চার পা ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৬)

১৪০৮

সহিহ হাদিস
وعَنْهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) مَنْ أَكْرَمُ النَّاسِ؟ قالَ : (أَتْقَاهُمْ). فَقَالُوا: لَيْسَ عَنْ هَذَا نَسْأَلُكَ، قال: (فَيُوسُفُ نَبِيُّ اللَّهِ، ابْنُ نَبِيِّ اللهِ ، ابْنِ خَلِيلِ اللَّهِ) قَالُوا : لَيْسَ عَنْ هذَا نَسْأَلُكَ، قَالَ: (فَعَنْ مَعَادِنِ الْعَرَبِ تَسْأَلُونَ؟ خِيَارُهُمْ فِي الجَاهِلِيَّةِ خِيَارُهُمْ فِي الإِسْلَامِ، إِذَا فَقُهُوا).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

একদা জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! সবচেয়ে সম্মানী মানুষ কে? তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে বেশী ভয় করে। তারা বললেনঃ আমরা আপনাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করছি না। তিনি বললেনঃ আল্লাহর নবী ইউসুফ ইবনে ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে ইবরাহীম খলীলুল্লাহ। তারা বললেনঃ আমরা আপনাকে এবিষয়ে জিজ্ঞেস করছি না। তিনি বললেনঃ তাহলে তোমরা কি আমাকে আরব গোত্রসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছ? জাহেলীয়াতের মধ্যে তাদের মধ্যে যিনি সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন, ইসলামেও তিনি সর্বোত্তম। তবে শর্ত হল যখন তিনি দ্বীনের জ্ঞান অর্জন করেন। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৭)

১৪০৯

সহিহ হাদিস
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ رَضِيَ الله عَنهُ قالَ: قالَ : رَسُولُ اللهِ (ﷺ) : (أتاني اللَّيْلَةَ آتِيَانِ، فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ طَوِيلٍ، لا أَكادُ أَرَى رَأْسَهُ طُولًا، وَإِنَّهُ إِبْرَاهِيمُ عليه وسلم) .

সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আজ রাতে (স্বপ্নে) আমার কাছে দু'জন লোক আসলেন। তখন এ দু'জনসহ আমরা একজন দীর্ঘদেহী ব্যক্তির নিকট গেলাম। তাঁর দেহ দীর্ঘ হওয়ার কারণে আমি তাঁর মাথা দেখতে পাচ্ছিলাম না। তিনি হলেন ইবরাহীম (আঃ)। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৮)

১৪১০

সহিহ হাদিস
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قالَ: قالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ) : (أَمَّا إِبْرَاهِيمُ فَانْظُرُوا إِلَى صَاحِبِكُمْ، وَأَمَّا مُوسى فَجَعْدُ آدَمُ، عَلَى جَمَلٍ أَحْمَرَ، مخطوم بِحُلْبَةٍ، كَأَنِّي أَنْظُرُ إِلَيْهِ الْحَدَرَ في الْوَادِي).

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তোমরা যদি ইবরাহীম (আঃ) কে দেখতে চাও, তাহলে তোমাদের সাথীকে (আমাকে) দেখ। বাকী রইলেন মুসা (আঃ)। তাঁর দেহের গঠন ছিল দৃঢ় ও শরীরের রং ছিল গমের মত। তিনি লাল উটের উপর আরোহী ছিলেন। উটের নাকের রশি ছিল খেজুর গাছের ছালের তৈরী। আমি যেন সেই এখনও দেখছি। তিনি উপত্যকায় অবতরণ করছিলেন। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৭৯)

১৪১১

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قالَ: قالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ): (اخْتَتَنَ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، وَهُوَ ابْنُ ثَمَانِينَ سَنَةٌ بِالْقَدُّوم).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ আশি বছর বয়সে ইবরাহীম (আঃ) কুড়াল দিয়ে খাতনা করেছেন। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮০)

১৪১২

সহিহ হাদিস
وَعنْهُ في رواية: (بِالْقَدُومِ) مُخَفَّفَةً .
অপর একটি বর্ণনায় (আবু হুরায়রা রাঃ) বলেন, একটি কুড়াল দিয়ে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮০)

১৪১৩

সহিহ হাদিস
وعَنْهُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ: قالَ رَسُولُ اللَّهِ (ﷺ): (لَمْ يَكْذِبُ إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلامُ إِلا ثَلَاثَ كَذَبَاتٍ، ينتَينِ مِنْهُنَّ فِي ذَاتِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ. قَوْلَهُ : إِنِّي سَقِيمٌ﴾ . وَقَوْلُهُ : بَلْ فَعَلَهُ كَبِيرُهُمْ هَذَا . وَقَالَ : بَيْنَا هُوَ ذَاتَ يَوْمٍ وَسَارَّةُ، إِذْ أَتَى عَلَى جَبَّارٍ مِنَ الجَبَابِرَةِ، فَقِيلَ لَهُ : إِنَّ هَا هُنَا رَجُلًا مَعَهُ أَمْرَأَةٌ مِنْ أَحْسَنِ النَّاسِ، فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهَا ، فَقَالَ: مَنْ هَذِهِ؟ قَالَ: أُخْتِي، فَأَتَى سَارَّةَ وَذَكَرَ باقي الحديث .

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ ইবরাহীম (আঃ) জীবনে মাত্র তিনবার মিথ্যা কথা বলেছেন। তার মধ্যে দু'বার ছিল আল্লাহ্ তাআলার জন্য। তিনি বলেছিলেনঃ إِنِّى سَقِيمٌۭ “নিশ্চয়ই আমি অসুস্থ”। (সূরা আস্-সাফ্ফাতঃ ৮৯)

তারপরের কথাটি ছিল بَلْ فَعَلَهُۥ كَبِيرُهُمْ هَـٰذَا “বরং মূর্তিসমূহের মধ্যে বড় মূর্তিটিই এ কাজ করেছে”। (সূরা আম্বীয়াঃ ৬৩)

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ তৃতীয় মিথ্যাটি হল তিনি একদিন সারাকে সাথে নিয়ে চলছিলেন। এক পর্যায়ে তিনি কোন এক যালেম শাসকের এলাকায় এসে পৌঁছলেন। শাসককে বলা হলঃ এই এলাকায় একজন লোক এসে পৌঁছেছে। তার সাথে আছে একজন সুন্দরী রমণী। বাদশাহ তাকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমার সাথের রমণীটি কে? ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ সে আমার বোন। তারপর ইবরাহীম (আঃ) সারার কাছে গেলেন। হাদীছের বাকী অংশ পূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮১)
টিকাঃ এই হাদীছটির বাকী অংশ হচ্ছে অতঃপর তিনি সারার কাছে গিয়ে বললেনঃ হে সারা! আমি এবং ভুমি ব্যতীত এই সময়ে পৃথিবীতে অন্য কোন মু'মিন নেই। এই বাদশা তোমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছে। আমি তাদেরকে বলেছি যে, তুমি আমার বোন। সুতরাং আমার কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করো না। অতঃপর তিনি সারাকে তার নিকট পাঠালেন। বাদশাহ তাঁর নিকট গেলে তিনি দাঁড়িয়ে অযু করে নামায পড়তে লাগলেন। অতঃপর তিনি এই বলে দু'আ করতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ! আমি যদি আপনার প্রতি, আপনার রাসূলের প্রতি ঈমান এনে থাকি আর আমার স্বামী ব্যতীত অন্যান্য সকল মানুষ হতে আমার সতীত্ব হেফাজত করে থাকি তাহলে এই কাফেরকে আমার উপর সক্ষম করোনা। তৎক্ষণাৎ বাদশার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল এবং সে দ্রুত পেছনে সরে যেতে লাগল।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর সারা বললেনঃ হে আল্লাহ! সে যদি এখন মৃত্যু বরণ করে তাহলে বলা হবেঃ মহিলাটিই তাকে হত্যা করেছে। সুতরাং বাদশার উক্ত অবস্থা বিদূরিত হয়ে গেল। সে আবার তাঁর দিকে অগ্রসর হলে তিনি দাঁড়িয়ে অযু করে নামায পড়তে লাগলেন। অতঃপর তিনি এই বলে দু'আ করতে লাগলেনঃ হে আল্লাহ! আমি যদি আপনার প্রতি, আপনার রাসূলের প্রতি ঈমান এনে থাকি আর আমার স্বামী ব্যতীত অন্যান্য সকল মানুষ হতে আমার সতীত্ব হেফাজত করে থাকি তাহলে এই কাফেরকে আমার উপর সক্ষম করো না। তৎক্ষণাৎ বাদশার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হল এবং সে দ্রুত পেছনে সরে যেতে লাগল।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর সারা বললেনঃ হে আল্লাহ! সে যদি এখন মৃত্যু বরণ করে তাহলে বলা হবেঃ মহিলাটিই তাকে হত্যা করেছে। সুতরাং দ্বিতীয়বার অথবা তৃতীয়বারও বাদশার উক্ত অবস্থা বিদূরিত হল। বাদশাহ তখন বললঃ আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার নিকট একটি শয়তান (যাদুকর) ব্যতীত অন্য কিছু প্রেরণ কর নাই। তাকে ইবরাহীমের নিকট ফেরত দিয়ে আস এবং হাজার (হাজার নামক দাসীকে, যিনি লোকমুখে হাজেরা নামে পরিচিত) তাকে প্রদান কর। তিনি ইবরাহীমের কাছে ফেরত এসে বললেনঃ আপনি কি উপলদ্ধি করতে পেরেছেন যে, আল্লাহ তা'আলা কাফেরকে নিরাশ ও লাঞ্চিত করেছেন এবং একজন সেবিকা প্রদান করতে বাধ্য করেছেন?

১৪১৪

সহিহ হাদিস
وقَدْ تَقَدَّم حَديثُ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ (ﷺ) أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَعَ، وَقَدْ تَقَدَّم، وزادَ هُنا : (وكانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ عَلَيْهِ السَّلام) .
উম্মে শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছটি ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) গিরগিটী (রক্তচোষা বা কাঁকলাশ) মারার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরো বলেনঃ ইবরাহীম (আঃ) যখন অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তখন আগুনকে আরো প্রজ্জ্বলতি করার জন্য গিরগিট ফুঁ দিয়েছিল। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮২)

১৪১৫

সহিহ হাদিস
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قالَ : أَوَّلَ ما اتَّخَذَ النِّسَاءُ الْمِنْطَقَ مِنْ قِبَلِ أَمْ إِسْمَاعِيلَ اتَّخَذَتْ مِنْطَقًا لَتُعَفِّي أَثَرَهَا عَلَى سَارَةَ، ثُمَّ جَاءَ بِهَا إِبْرَاهِيمُ وَبِابْتِهَا إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُرْضِعُهُ، حَتَّى وَضَعَهُمَا عِنْدَ الْبَيْتِ، عِنْدَ دَوْحَةٍ فَوْقَ زَمْزَمَ في أَعْلَى المَسْجِدِ، وَلَيْسَ بِمَكَّةَ يَوْمَئِذٍ أَحَدٌ، وَلَيْسَ بِهَا مَاءٌ، فَوَضَعَهُمَا هُنَالِكَ ، وَوَضَعَ عِنْدَهُمَا جِرَابًا فِيهِ تَمْرُ، وَسِقَاءٌ فِيهِ ماءٌ ، ثُمَّ قَفَّى إِبْرَاهِيمُ مُنْطَلِقًا ، فَتَبِعَتْهُ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَقَالَتْ : يَا إِبْرَاهِيمُ، أَيْنَ تَذْهَبُ وَتَتْرُكُنَا بِهَذَا الْوَادِي، الَّذِي لَيْسَ فِيهِ إِنْسٌ وَلَا شَيْءٌ؟ فَقَالَتْ لَهُ ذُلِكَ مِرَارًا، وَجَعَلَ لَا يَلْتَفِتُ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ لَهُ اللهُ الَّذِي أَمَرَكَ بِهَذَا؟ قَالَ: نَعَمْ، قالَتْ: إِذَنْ لَا يُضَيِّعُنَا، ثُمَّ رَجَعَتْ، فَانْطَلَقَ إِبْرَاهِيمُ حَتَّى إِذَا كَانَ عِنْدَ الثَّنِيَّةِ حَيْثُ لا يَرَوْنَهُ، اسْتَقْبَلَ بِوَجْهِهِ الْبَيْتَ، ثُمَّ دَعَا بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ، وَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ : رَبَّنَا إِنِّي أَسْكَنْتُ مِنْ ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيْرِ ذِي زَرْعٍ..) حَتَّى بَلَغَ يَشْكُرُونَ) . وَجَعَلَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ تُرْضِعُ إِسْمَاعِيلَ وَتَشْرَبُ مِنْ ذُلِكَ المَاءِ، حَتَّى إِذَا نَفِدَ مَا فِي السَّقَاءِ عَطِشَتْ وَعَطِشَ ابْنُهَا، وَجَعَلَتْ تَنْظُرُ إِلَيْهِ يَتَلَوَّى، أَوْ قَالَ يَتَلَبَّطُ، فَانْطَلَقَتْ . كَرَاهِيَةَ أَنْ تَنْظُرَ إِلَيْهِ، فَوَجَدَتِ الصَّفَا أَقْرَبَ جَبَلٍ فِي الْأَرْضِ يَلِيهَا، فَقَامَتْ عَلَيْهِ، ثُمَّ اسْتَقْبَلَتِ الْوَادِي تَنْظُرُ هَلْ تَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَهَبَطَتْ مِنَ الصَّفَا حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْوَادِيَ رَفَعَتْ طَرَفَ دِرْعِهَا، ثُمَّ سَعَتْ سَعْيَ الإِنْسَانِ الْمَجْهُودِ حَتَّى جَاوَزَتِ الْوَادِي، ثُمَّ أَتَتِ المَرْوَةَ فَقَامَتْ عَلَيْهَا وَنَظَرَتْ هَلْ نَرَى أَحَدًا فَلَمْ تَرَ أَحَدًا، فَفَعَلَتْ ذَلِكَ سَبْعَ مَرَّاتٍ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : قَالَ النَّبِيُّ (ﷺ) . : (فَذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا ). فَلَمَّا أَشْرَفَتْ عَلَى المَرْوَةِ سَمِعَت صَوْتًا، فَقَالَتْ صَهِ - تُرِيدُ نَفْسَهَا - ثُمَّ تَسمَّعَتْ ، فَسَمِعَتْ أَيْضًا، فَقَالَتْ : قَدْ أَسْمَعْتَ إِنْ كانَ عِنْدَكَ غِوَاتٌ، فَإِذَا هِيَ بِالمَلَكِ عِنْدَ مَوْضِع زَمْزَمَ، فَبَحَثَ بِعَقِبِهِ، أَوْ قَالَ: بِجَنَاحِهِ، حَتَّى ظَهَرَ المَاءُ، فَجَعَلَتْ تُحَوِّضُهُ وَتَقُولُ بِيَدِهَا هَكَذَا، وَجَعَلَتْ تَغْرِفُ مِنَ المَاءِ فِي سِقَائِهَا وَهُوَ يَفُورُ بَعْدَ مَا تَغْرِفُ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ : قَالَ النبي (ﷺ): (يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ، لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ - أَوْ قَالَ : لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ المَاءِ - لَكَانَتْ زَمْزَمُ عَيْنًا مَعِينًا). قَالَ: فَشَرِبَتْ وَأَرْضَعَتْ وَلَدَهَا، فَقَالَ لَهَا المَلَكُ : لا تَخَافُوا الضَّيْعَةَ، فَإِنَّ هَا هُنَا بَيْتَ اللهِ ، يَبْنِي هَذَا الْغُلَامُ وَأَبُوهُ، وَإِنَّ الله لا يُضِيعُ أَهْلَهُ. وَكَانَ الْبَيْتُ مُرْتَفِعًا مِنَ الأَرْضِ كالرَّابِيَةِ، تَأْتِيهِ السُّيُولُ، فَتَأْخُذ عَنْ يَمِينِهِ وَشِمَالِهِ، فَكَانَتْ كَذَلِكَ حَتَّى مَرَّتْ بِهِمْ رُفْقَةٌ مِنْ جُرْهُمَ، أَوْ أَهْلُ بَيْتٍ مِنْ جُرْهُم ، مُقْبِلِينَ مِنْ طَرِيقِ كَدَاءٍ ، فَتَزَلُوا فِي أَسْفَلِ مَكَّةَ، فَرَأَوْا طَائِرًا عَائِفًا، فَقَالُوا : إِنَّ هَذَا الطَّائِرَ لَيَدُورُ عَلَى مَاءٍ، لَعَهْدُنَا بِهَذَا الْوَادِي وَمَا فِيهِ مَاءٌ، فَأَرْسَلُوا جَرِيًّا أَوْ جَرِيَّيْنِ فَإِذَا هُمْ بِالمَاءِ، فَرَجَعُوا فَأَخْبَرُوهُمْ بِالمَاءِ فَأَقْبَلُوا ، قالَ وَأُمُّ إِسْمَاعِيلَ عِنْدَ المَاءِ، فَقَالُوا : أَتَأْذَنِينَ لَنَا أَنْ نَنْزِلَ عِنْدَكِ؟ فَقَالَتْ : نَعَمْ، وَلكِنْ لَا حَقَّ لَكُمْ في المَاءِ، قَالُوا : نَعَمْ قالَ ابْنُ عَبَّاسِ : قالَ النَّبِيُّ (ﷺ): (فَأَلْقَى ذَلِكَ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ وَهِيَ تُحِبُّ الأُنْسَ). فَتَزَلُوا وَأَرْسَلُوا إِلَى أَهْلِيهِمْ فَنَزَلُوا مَعَهُمْ، حَتَّى إِذَا كَانَ بِهَا أَهْلُ أَبْيَاتٍ مِنْهُمْ، وَشَبَّ الْغُلامُ وَتَعَلَّمَ الْعَرَبِيَّةَ مِنْهُمْ، وَأَنْفُسَهُمْ وَأَعْجَبَهُمْ حِينَ شَبَّ، فَلَمَّا أَدْرَكَ الحُلُمَ زَوَّجُوهُ امْرَأَةٌ مِنْهُمْ، وَمَاتَتْ أُمُّ إِسْمَاعِيلَ، فَجَاءَ إِبْرَاهِيمُ بَعْدَ مَا تَزَوَّجَ إِسْمَاعِيلُ يُطَالِعُ تَرِكَتَهُ ، فَلَمْ يَجِدْ إِسْمَاعِيلَ، فَسَأَلَ امْرَأَتَهُ عَنْهُ فَقَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا ، ثُمَّ سَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِشَرٌ ، نَحْنُ فِي ضِيقٍ وَشِدَّةٍ، فَشَكَتْ إِلَيْهِ ، قَالَ : فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَأَقْرَئِي عَلَيْهِ السَّلاَمَ، وَقُولِي لَهُ يُغَيِّرُ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ كَأَنَّهُ آنَسَ شَيْئًا، فَقَالَ: هَلْ جَاءَكُمْ مِنْ أَحَدٍ؟ قَالَتْ: نَعَمْ، جَاءَنَا شَيْخُ كَذَا وَكَذَا، فَسَأَلَنَا عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، وَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا، فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا فِي جَهْدٍ وَشِدَّةٍ، قَالَ : فَهَلْ أَوْصَاكِ بِشَيْءٍ؟ قالَتْ : نَعَمْ، أَمَرَنِي أَنْ أَقْرَأَ عَلَيْكَ السَّلامَ، وَيَقُولُ : غَيْرُ عَتَبَةَ بَابِكَ، قالَ : ذَاكَ أَبِي، وَقَدْ أَمَرَنِي أَنْ أُفَارِقَكِ، الْحَقِي بِأَهْلِكِ، فَطَلَّقَهَا، وَتَزَوَّجَ مِنْهُمْ أُخْرَى، فَلَبِثَ عَنْهُمْ إِبْرَاهِيمُ مَا شَاءَ اللَّهَ ، ثُمَّ أَتَاهُمْ بَعْدُ فَلَمْ يَجِدْهُ، فَدَخَلَ عَلَى امْرَأَتِهِ فَسَأَلَهَا عَنْهُ، فَقَالَتْ : خَرَجَ يَبْتَغِي لَنَا، قَالَ: كَيْفَ أَنْتُمْ؟ وَسَأَلَهَا عَنْ عَيْشِهِمْ وَهَيْئَتِهِمْ، فَقَالَتْ : نَحْنُ بِخَيْرِ وَسَعَةٍ، وَأَثْنَتْ عَلَى اللَّهِ. فَقَالَ: مَا طَعَامُكُمْ؟ قالَتِ اللَّحْمُ قَالَ فَمَا شَرَابُكُمْ؟ قالَتِ المَاءُ. قالَ: اللَّهُمَّ بَارِكْ لَهُمْ في اللَّحْمِ وَالمَاءِ. قالَ النَّبِيُّ (ﷺ) : (وَلَمْ يَكُنْ لَهُمْ يَوْمَئِذٍ حَبُّ، وَلَوْ كانَ لَهُمْ دَعَا لَهُمْ فِيهِ) . قالَ : فَهُمَا لاَ يَخْلُو عَلَيْهِمَا أَحَدٌ بِغَيْرِ مَكَّةَ إِلا لَمْ يُوَافِقَاهُ قالَ : فَإِذَا جَاءَ زَوْجُكِ فَأَقْرَنِي عَلَيْهِ السَّلامُ، وَمُرِيهِ يُثْبِتُ عَتَبَةَ بَابِهِ، فَلَمَّا جَاءَ إِسْمَاعِيلُ قَالَ : هَلْ أَتَاكُمْ مِنْ أَحَدٍ ؟ قالَتْ: نَعَمْ، أَتَانَا شَيْخُ حَسَنُ الْهَيْئَةِ، وَأَثْنَتْ عَلَيْهِ، فَسَأَلَنِي عَنْكَ فَأَخْبَرْتُهُ، فَسَأَلَنِي كَيْفَ عَيْشُنَا فَأَخْبَرْتُهُ أَنَّا بِخَيْرِ، قَالَ : فَأَوْصَاكِ بِشَيْءٍ، قَالَتْ : نَعَمْ، هُوَ يَقْرَأُ عَلَيْكَ السَّلَامَ، وَيَأْمُرُكَ أَنْ تُثْبِتَ عَتَبَةَ بَابِكَ، قَالَ: ذَاكَ أَبِي وَأَنْتِ الْعَتَبَةُ، أَمَرَنِي أَنْ أُمْسِكَكِ، ثُمَّ لَبِثَ عَنْهُمْ مَا شَاءَ اللَّهُ، ثُمَّ جَاءَ بَعْدَ ذلِكَ، وَإِسْمَاعِيلُ يَبْرِي نَبُلًا لَهُ تَحْتَ دَوْحَةٍ قَرِيبًا مِنْ زَمْزَمَ، فَلَمَّا رَآهُ قَامَ إِلَيْهِ، فَصَنَعَا كَمَا يَصْنَعُ الْوَالِدُ بِالْوَلَدِ وَالْوَلَدُ بِالْوَالِدِ ، ثُمَّ قَالَ: يَا إِسْمَاعِيلُ، إِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي بِأَمْرِ، قَالَ: فَأَصْنَعْ مَا أَمَرَكَ رَبُّكَ، قالَ: وَتُعِيتُنِي؟ قَالَ: وَأُعِينُكَ، قالَ : فَإِنَّ اللَّهَ أَمَرَنِي أَنْ أَبْنِيَ هَا هُنَا بَيْتًا، وَأَشَارَ إِلَى أَكَمَةٍ مُرْتَفِعَةٍ عَلَى مَا حَوْلَهَا ، قالَ : فَعِنْدَ ذلِكَ رَفَعَا الْقَوَاعِدَ مِنَ الْبَيْتِ، فَجَعَلَ إِسْمَاعِيلُ يَأْتِي بِالْحِجَارَةِ وَإِبْرَاهِيمُ يَبْنِي، حَتَّى إِذَا ارْتَفَعَ الْبِنَاءُ، جَاءَ بِهَذَا الحَجَرِ فَوَضَعَهُ لَهُ فَقَامَ عَلَيْهِ، وَهُوَ يَبْنِي وَإِسْمَاعِيلُ يُنَاوِلُهُ الْحِجَارَةَ، وَهُمَا يَقُولان: (رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ .

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ নারীগণ সর্বপ্রথম ইসমাঈল (আঃ) এর মাতা থেকেই কোমরবন্দ বানানো শিখেছে। হাজেরা সারা থেকে আপন নিদর্শনাবলী গোপন করার উদ্দেশ্যেই কোমরবন্দ লাগাতেন। অতঃপর ইবরাহীম হাজেরা ও শিশু পুত্র ইসমাঈলকে সাথে নিয়ে বের হলেন। পথে হাজেরা শিশুকে দুধ পান করাতেন। শেষ পর্যন্ত তিনি উভয়কে কা'বা ঘরের নিকস্থ একটি বড় বৃক্ষের নীচে রেখে দিলেন। স্থানটি ছিল মসজিদের উঁচু অংশে যমযমের পাশে। সেসময় মক্কাতে কোন মানুষ ছিলনা এবং তাতে কোন পানিও ছিল না।

যাই হোক ইবরাহীম (আঃ) তাদের উভয়কে সেখানেই রেখে দিলেন এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর এবং আরেকটি মশকে কিছু পানি দিয়ে গেলেন। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ) গৃহের উদ্দেশ্যে চললেন। ইসমাঈলের মা হাজেরা ইবরাহীমের পিছু ছুটলেন এবং বলতে লাগলেনঃ কোথায় যাচ্ছেন? আর আমাদেরকে এমন উপত্যকায় রেখে যাচ্ছেন যেখানে না আছে কোন মানুষ ও না আছে কোন বস্তু। এ কথাটি তিনি কয়েকবার বললেন। ইবরাহীম (আঃ) সেদিকে ফিরেও তাকাচ্ছিলেন না। অতঃপর হাজেরা বললেনঃ আল্লাহ্ কি আপনাকে এই নির্বাসনের আদেশ দিয়েছেন? ইবরাহীম বললেনঃ হ্যাঁ। হাজেরা বললেনঃ তাহলে তিনি আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। ইবরাহীম চলতে লাগলেন। অতঃপর তিনি ছানিয়ার পাশে এসে পৌছলেন, যেখানে স্ত্রী-পুত্র আর তাকে দেখতে পাচ্ছিল না। তখন তিনি কাবা ঘরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং হাত তুলে এই দু'আ করলেনঃ

(رَّبَّنَآ إِنِّىٓ أَسْكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِى بِوَادٍ غَيْرِ ذِى زَرْعٍ عِندَ بَيْتِكَ ٱلْمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُوا۟ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجْعَلْ أَفْـِٔدَةًۭ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهْوِىٓ إِلَيْهِمْ وَٱرْزُقْهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمْ يَشْكُرُونَ)

“হে আমাদের প্রতিপালক! আপনার পবিত্র ঘরের নিকট এমন ময়দানে আমার সন্তান ও পরিবারকে রেখে যাচ্ছি, যা কৃষি অনুপযোগী (জন-মানব শুণ্য মরুভূমি)। হে আমাদের প্রভু! তারা সালাত কায়েম করবে। সুতরাং লোকদের অন্তরকে তাদের দিকে আকৃষ্ট করে দাও এবং বিভিন্ন ফলফলাদির মাধ্যমে তাদের রিযিকের ব্যবস্থা করে দাও। যাতে করে তারা শুকরিয়া আদায় করতে পারে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৩৭)

ইসমাঈলের মা ইসমাঈলকে দুধ পান করাচ্ছিলেন এবং নিজে ঐ মশক থেকে পানি পান করছিলেন। পরিশেষে মশকের পানি শেষ হয়ে গেল। তিনি পিপাসিত হলেন, ইসমাঈলও পিপাসিত হলেন। তিনি শিশুকে দেখতে লাগলেনঃ শিশুর বুক ধড়ফড় করছে কিংবা বলেছেনঃ সে যমীনে ছটফট করছে। শিশু পুত্রের এই অবস্থার দিকে তাকানো তাঁর পক্ষে অসহনীয় হয়ে উঠল। তাই তিনি চলে গেলেন। অন্যান্য পাহাড়ের তুলনায় তিনি সাফা পাহাড়কেই তাঁর অবস্থানের নিকটতম পেলেন। তিনি পাহাড়ের উপর উঠলেন। পাহাড়ের উপর উঠে উপত্যকার দিকে তাকাতে লাগলেন, কাউকে দেখতে পান কি না। কিন্তু কাউকে দেখলেন না। তখন সাফা পর্বত হতে দ্রুত নেমে আসলেন। উপত্যকায় নেমে এসে স্বীয় কাপড়ের একপ্রান্ত উঠিয়ে একজন ক্লান্ত ব্যক্তির ন্যায় দৌড়ে চললেন। শেষে ময়দান অতিক্রম করলেন। তারপর তিনি মারওয়া পাহাড়ের নিকট এসে গেলেন এবং তার উপর উঠে দাঁড়ালেন। অতঃপর চার দিকে নজর দিয়ে দেখলেন, কাউকে দেখতে গান কি না। এভাবে উভয় পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন।

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ মানুষেরা এ জন্যই হজ্জ ও উমরা করার সময় উক্ত পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাঈ করে থাকে। অতঃপর যখন তিনি সপ্তমবার মারওয়া পাহাড়ের উপর উঠলেন, তখন একটি আওয়াজ শুনলেন। তিনি তখন নিজেকেই সম্বোধন করে বললেনঃ একটু অপেক্ষা কর এবং মনদিয়ে শুন। এরপর তিনি মনোযোগ সহকারে সেই আওয়াজের দিকে কান দিলেন। আবারও তিনি আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেনঃ আওয়াজ তো শুনিয়ে দিলে। তবে তুমি আমাদেরকে কোন সাহায্য করতে পারবে কি? হঠাৎ তিনি যমযমের পাশে একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। সেই ফেরেশতা আপন পায়ের গোড়ালি দিয়ে বা ভানা দিয়ে যমীনে আঘাত করলেন। ফলে পানি বের হতে লাগল। হাজেরা স্বীয় হাত দ্বারা এর চার পাশে বাঁধ দিয়ে হাওযের আকার দিতে লাগলেন এবং অঞ্জলি ভরে তাঁর মশকটিতে পানি ভরতে লাগলেন। হাজেরা অঞ্জলি দিয়ে মশক ভর্তি করার পরও পানি উছলে উঠতে লাগল৷

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ আল্লাহ্ তাআলা ইসমাঈলের মাতাকে রহম করুন। যদি তিনি যমযমকে বাঁধ না দিয়ে ঐভাবে ছেড়ে দিতেন বা অঞ্জলি ভরে মশকে পানি না ভরতেন তাহলে যমযম পৃথিবীর উপরে হত একটি প্রবাহমান ঝরণা। বর্ণনাকারী বলেনঃ অতঃপর হাজেরা পানি পান করলেন এবং শিশুকে দুধ পান করালেন। ফেরেশতা তাঁকে বললেনঃ তোমরা ধ্বংসের আশঙ্কা কর না। কেননা এখানে আছে আল্লাহর ঘর। যা পুনঃ নির্মাণ করবে এই শিশু ও তাঁর পিতা। আর আল্লাহ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করবেন না। ঐ সময় কাবা ঘর যমীন থেকে টিলার ন্যায় উঁচু ছিল। বন্যার পানি এসে কাবা ঘরের ডান-বাম দিক থেকে ভেঙ্গে নিয়ে যেত। হাজেরা এভাবেই দিন যাপন করছিলেন। শেষ পর্যন্ত জুরহুম গোত্রের কিছু লোক তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন। অথবা বর্ণনাকারী বলেনঃ জুরহুমের কিছু লোক কাদা এর পথে আসছিল। তারা মক্কার নিম্নভূমিতে অবতরণ করল এবং দেখতে পেল একটি পাখি চক্রাকারে উড়ছে। তারা বললঃ নিশ্চয়ই এ পাখিটি পানির উপরই ঘুরছে। আমরা এই উপত্যকায় বহুকাল কাটিয়েছি। কিন্তু এখানে কখনও পানি দেখিনি। তারা সেখানে একজন বা দু'জন লোক পাঠাল৷ ভারা গিয়ে পানি দেখতে পেল। ফিরে এসে তারা পানির খবর দিল। ফলে তারা সবাই সেখানে গেল৷

নবী (ﷺ) বলেনঃ ইসমাঈলের মা পানির কাছেই ছিলেন। তারা বললঃ আমরা আপনার নিকটবর্তী স্থানে বসবাস করতে চাই। আপনি কি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। তবে এপানির উপর তোমাদের কোন কর্তৃত্ব থাকবে না। তারা বললঃ ঠিক আছে। ইবনে আব্বাস বলেনঃ নবী (ﷺ) বলেছেনঃ ঐ গোত্রের লোকেরা ইসমাঈলের মাতাকে মানুষের সাহচর্যপ্রিয় পেল। সুতরাং আগন্তুক দলটি সেখানে বসতি স্থাপন করল এবং তাদের পরিবারের লোকদের নিকটও খবর পাঠাল। তারাও এসে এদের সাথে বসবাস শুরু করল। শেষ পর্যন্ত সেখানে কয়েকটি ঘর তৈরী হয়ে গেল। এদিকে ইসমাঈলও বড় হলেন। তাদের নিকট থেকেই আরবী ভাষা শিখলেন। ইসমাঈল যুবক হলে তিনি তাদের অধিক প্রিয়পাত্র ও অধিক আগ্রহের বস্তুতে পরিণত হলেন।

যখন তিনি যৌবনপ্রাপ্ত হলেন, তখন তারা তাদেরই এক মেয়েকে তার সাথে বিয়ে দিল। বিয়ের পর ইসমাঈলের মাতা মৃত্যু বরণ করলেন ইসমাঈল (আঃ) বিয়ে করার পর ইবরাহীম (আঃ) তাঁর রেখে যাওয়া পরিজন দেখার জন্য এখানে আসলেন। কিন্তু ইসমাঈলকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর স্ত্রী বললঃ তিনি আমাদের জন্য রিযিকের সন্ধানে বের হয়েছেন। পরে তিনি পুত্র বধুকে তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। বধু বললঃ আমরা অতিশয় দূরবস্থা, টানাটানি ও ভীষণ কষ্টে আছি। সে ইবরাহীম (আঃ) এর কাছে অভাব-অনটনের অভিযোগ করল। ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ যখন তোমার স্বামী আসবে তখন তাকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবেঃ সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে নেয়।

ইসমাঈল বাড়িতে ফিরে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কাছে কেউ এসেছিল কি? সে বললঃ হ্যাঁ, এমন এমন আকৃতির একজন বৃদ্ধলোক এসেছিলেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে খবর জানালাম। তিনি আমাদের জীবণযাত্রা সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে সংবাদ দিয়েছি যে, আমরা খুব কষ্টে ও অভাবে আছি। ইসমাঈল জিজ্ঞেস করলেনঃ তিনি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়ে গেছেন? সে বললঃ হ্যাঁ, তিনি আমাকে বলেছেন যে, আপনি আসলে যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌছাই এবং তিনি বলে গেছেনঃ আপনি যেন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ বদলিয়ে ফেলেন।

ইসমাঈল বললেনঃ তিনি হলেন আমার পিতা। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে তালাক দিয়ে দেই। তুমি তোমার পরিবারের কাছে চলে যাও। সুতরাং তিনি তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দিলেন এবং জুরহুম গোত্রের অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। অতঃপর আল্লাহ্ যতদিন চাইলেন ইবরাহীম (আঃ) তাদের থেকে দূরে থাকলেন। ইবরাহীম (আঃ) পুনরায় তাদেরকে দেখতে আসলেন। কিন্তু ইসমাঈলকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর স্ত্রীর কাছে প্রবেশ করে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। তাঁর স্ত্রী বললঃ তিনি আমাদের জন্য রিযিকের সন্ধানে বের হয়েছেন। পরে তিনি পুত্র বধুকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমরা কেমন আছ? তিনি তাদের জীবনযাত্রা ও অবস্থা সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করলেন। বধু বললঃ আমরা খুব ভাল আছি, স্বচ্ছলতার মধ্যেই আছি। এ বলে তিনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন। ইবরাহীম (আঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের প্রধান খাদ্য কি? বধু জবাবে বললেনঃ গোশত। তিনি আবার জানতে চাইলেনঃ তোমাদের প্রধান পানীয় কি? জবাবে বললেনঃ পানি। ইবরাহীম (আঃ) তখন দুআ করলেনঃ হে আল্লাহ! তুমি তাদের গোশত ও পানিতে বরকত দাও। নবী (ﷺ) বলেনঃ সেই সময় তাদের খাদ্যশস্য উৎপন্ন হত না। যদি হত, তাহলে ইবরাহীম (আঃ) সে ব্যাপারেও তাদের জন্য দুআ করতেন।

বর্ণনাকারী বলেনঃ কোন লোকই মক্কা ছাড়া অন্য কোথাও শুধু গোশত ও পানি দ্বারা জীবণ যাপন করতে পারে না। কারণ এদু'টি তার প্রকৃতির অনুকূল হতে পারে না।
ইবরাহীম (আঃ) বধুকে বললেনঃ যখন তোমার স্বামী আসবে তখন তাকে আমার সালাম জানাবে এবং বলবেঃ সে যেন তার ঘরের দরজার চৌকাঠ না বদলায়।
ইসমাঈল বাড়িতে ফিরে এসে একজন মানুষের সম্পর্কে একটা কিছু অনুভব করলেন। তিনি বললেনঃ তোমাদের কাছে কেউ এসেছিল কি? সে বললঃ হ্যাঁ, সুন্দর আকৃতির একজন বৃদ্ধলোক এসেছিলেন। তিনি তাঁর প্রশংসা করলেন। তিনি আপনার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে খবর জানালাম। তিনি আমাদের জীবণযাত্রা সম্পর্কেও জিজ্ঞেস করেছেন। আমি তাঁকে সংবাদ দিয়েছি যে, আমরা খুব ভাল আছি। ইসমাঈল জিজ্ঞেস করলেনঃ তিনি তোমাকে কোন উপদেশ দিয়ে গেছেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, তিনি আমাকে বলেছেন যে, আপনি আসলে যেন আপনাকে তাঁর সালাম পৌছাই এবং তিনি বলে গেছেনঃ আপনি যেন আপনার ঘরের দরজার চৌকাঠ ঠিক রাখেন।

ইসমাঈল বললেনঃ তিনি হলেন আমার পিতা। তুমি হলে ঘরের দরজার চৌকাঠ। তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন আমি যেন তোমাকে বহাল রাখি। অতঃপর আল্লাহ্ যতদিন চাইলেন ইবরাহীম তাদের থেকে দূরে থাকলেন। ইবরাহীম (আঃ) পুনরায় তাদেরকে দেখতে আসলেন।এসে দেখলেনঃ ইসমাঈল যমযমের নিকটস্থ একটি বিশাল বৃক্ষের নীচে বসে স্বীয় তীর মেরামত করছেন। ইসমাঈল তাঁর পিতা ইবরাহীম (আঃ)কে দেখে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলেন। অতঃপর একজন পিতা পুত্রের সাথে এবং পুত্র পিতার সাথে সাক্ষাত হলে যা করে থাকে, তাঁরা উভয়ে তাই করলেন। অতঃপর ইবরাহীম বললেনঃ হে ইসমাঈল! আল্লাহ্ আমাকে একটি বিষয়ের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল বললেনঃ তাহলে আপনার প্রভুর নির্দেশ পালন করুন। তিনি বললেনঃ তুমি আমাকে সাহায্য করবে কি? ইসমাঈল বললেনঃ হ্যাঁ, আমি আপনাকে সাহায্য করব। ইবরাহীম (আঃ) বললেনঃ আল্লাহ্ আমাকে এখানে একটি ঘর নির্মাণ করার আদেশ দিয়েছেন। তিনি পার্শ্ববর্তী অন্যান্য বস্তুর চেয়ে উঁচু একটি টিলার দিকে ইঙ্গিত করলেন।

নবী (ﷺ) বলেনঃ তখন তারা কাবা ঘরের নির্মাণ কাজে লেগে গেলেন। ইসমাঈল পাথর এনে দিতে লাগলেন আর ইবরাহীম (আঃ) নির্মাণ করতে লাগলেন। প্রাচীর যখন উঁচু হয়ে গেল তখন ইসমাঈল (আঃ) এই পাথরটি (যাকে মাকামে ইবরাহীম বলা হয়) এনে ইবরাহীম (আঃ) এর জন্য রাখলেন। তিনি এটির উপর দাঁড়িয়ে নির্মাণ কাজ চালিয়ে গেলেন। আর ইসমাঈল পাথর দিতেই থাকলেন। তখন তারা উভয়েই এ দুআ করছিলেন।

رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ

“হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি আমাদের পক্ষ হতে এ খেদমত কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি শ্রবণকারী ও মহাজ্ঞানী”। (সূরা বাকারাঃ ১২৭) (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮৩)

১৪১৬

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي ذَرٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، أَيُّ مَسْجِدٍ وُضِعَ في الأَرْضِ أَوَّلُ؟ قَالَ: (المَسْجِدُ الحَرَامُ). قالَ: قُلْتُ : ثُمَّ أَيُّ؟ قال : (المَسْجِدُ الأَقْصَى). قُلْتُ: كَمْ كَانَ بَيْنَهُمَا؟ قَالَ : أَرْبَعُونَ سَنَةً، ثُمَّ أَيْنَمَا أَدْرَكَتْكَ الصَّلاةُ بَعْدُ فَصَلَّهُ، فَإِنَّ الْفَضْلَ فِيهِ).

আবু যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

তিনি বলেনঃ একদা আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেনঃ মসজিদুল হারাম। আমি বললামঃ তারপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মসজিদুল আকসা। আমি বললামঃ উভয় মসজিদ নির্মাণের মাঝখানে কতদিনের ব্যবধান ছিল? তিনি বললেনঃ চল্লিশ বছর। নবী (ﷺ) আরো বলেনঃ এরপর পৃথিবীর যেখানেই নামাযের সময় হবে সেখানেই নামায পড়ে নাও। কেননা নামাযের ঐ ফজীলত সেখানেই পাবে। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮৪)

১৪১৭

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيَّ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ ، أَنَّهُمْ قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ كَيْفَ نُصَلِّي عَلَيْكَ؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ قُولُوا : اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ) .

আবু হুমায়েদ আস্-সায়েদী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

সাহাবীগণ বললেনঃ হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ এবং তাঁর স্ত্রীদের উপর ও সন্তানদের উপর ঐ রূপ রহমত নাযিল করো যেরূপ রহমত নাযিল করেছিলে ইবরাহীম (আঃ) এর পরিবার বর্গের প্রতি। মুহাম্মাদ এবং তাঁর স্ত্রীদের ও সন্তানদের উপর বরকত নাযিল কর ঐ ভাবে যে ভাবে নাযিল করেছিলে ইবরাহীম (আঃ) এর প্রতি। নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসিত ও সম্মানিত। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮৫)

১৪১৮

সহিহ হাদিস
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنْهُمَا قالَ : كَانَ النَّبِيُّ (ﷺ) يُعَوِّذُ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ، وَيَقُولُ : (إِنَّ أَبَاكُمَا كانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَقَ : أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ) .

আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

নবী (ﷺ) হাসান ও হুসাইনের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং বলতেন তোমাদের পিতা ইবরাহীম এই কালেমাগুলো দিয়ে ইসমাঈল ও ইসহাকের জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন।

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ

“আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি আল্লাহ্ পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তানের অনিষ্ট হতে, বিষধর প্রানীর দংশন হতে এবং বদ নজরের অনিষ্ট হতে”। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮৬)
৫৫/ পরিচ্ছেদঃ আল্লাহর বাণীঃ “আপনি তাদেরকে ইবরাহীমের মেহমান সম্পর্কে সংবাদ দিন”

১৪১৯

সহিহ হাদিস
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ . أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ (ﷺ) قَالَ: (نَحْنُ أَحَقُّ مِنْ إِبْرَاهِيمَ إِذْ قالَ: رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي المَوْتَى قَالَ أَوَ لَمْ تُؤْمِنْ قالَ بَلَى وَلكِنْ لِيَطْمَئِنَّ قَلْبِي وَيَرْحَمُ اللَّهُ لُوطًا، لَقَدْ كَانَيَأْوِي إِلَى رُكْنٍ شَدِيدٍ، وَلَوْ لَبِثْتُ فِي السِّجْنِ طُولَ مَا لَبِثَ يُوسُفُ، لأَجَبْتُ الدَّاعِيَ).

আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ আমরা ইবরাহীমের ঐ কথার চেয়ে বেশী হকদার, যখন তিনি বলেছিলেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি মৃতকে কিভাবে পুনরায় জীবিত করেন, তা আমাকে একটু দেখিয়ে দিন। আল্লাহ্ বললেনঃ তুমি কি বিশ্বাস কর না? ইবরাহীম বললেনঃ হ্যাঁ, অবশ্যই বিশ্বাস করি। তবে আমার অন্তর যাতে প্রশান্তি লাভ করে। আল্লাহ্ তাআলা লুত (আঃ) এর উপর রহম করুন! তিনি একটি শক্ত খুঁটির আশ্রয় পেতে চেয়েছিলেন। আর ইউসুফ (আঃ) যত দীর্ঘ সময় জেলখানায় ছিলেন, এত দীর্ঘ সময় যদি আমিও কারাগারে থাকতাম, তাহলে সম্ভবত আহবানকারীর ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলতাম। (আলোকিত প্রকাশনীঃ ১৩৮৭)
টিকাঃ এটি প্রিয় নবী (ﷺ)-এর বিনয়ের বহিঃপ্রকাশ মাত্র। কেননা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসাবে আমাদের নবী (ﷺ) এ সব বিষয়েও তাদের উর্ধ্বে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন