HADITH.One
HADITH.One
Bangla
System
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন
বিদআতের পরিচয়
লেখকঃ শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِه مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِه وَصَحْبِه اَجْمَعِيْنَ
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। যেখানেই বিদআত আসন গেঁড়ে বসেছে সেখান থেকেই সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। আমরা বিদআত করব না বরং সুন্নাতেরই অনুসরণ করব। আমাদের নবী ﷺ সেটাই আমাদেরকে বলে গেছেন।
আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার একটি সুন্নাতকে জীবিত করল এবং মানুষ এর উপর আমল করল, সে ব্যক্তি ঐরূপ সওয়াব পাবে, যেরূপ সওয়াব আমলকারীগণ পায়। আর তার পুরস্কার থেকে কিছুই কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো বিদআত চালু করল, অতঃপর লোকেরা এর উপর আমল করল, সে ব্যক্তির ঐরূপ পাপ হবে, যেরূপ আমলকারীর হয়। এ ক্ষেত্রে আমলকারীর পাপ থেকে বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। (ইবনে মাজাহ হা/২০৯; তিরমিযী হা/২৬৭৭)
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিখানো নিয়মানুযায়ী। শিরক-বিদআত করা যাবে না।
এ বইটিতে সংক্ষেপে বিদআতের পরিচয়, সমাজে প্রচলিত বিদআত ও কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি মুসলিম ভাই-বোন এ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজেদের ঈমান ও আমলকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক দান করুন, আমীন!
বইটি প্রকাশনার কাজে যাদের সহযোগিতা রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা যেন সকলকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ প্রচেষ্টাকে পরকালে মুক্তির ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বনবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর এবং তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) এর উপর।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের বিদআত ও কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে। যেখানেই বিদআত আসন গেঁড়ে বসেছে সেখান থেকেই সুন্নাত বিদায় নিয়েছে। আমরা বিদআত করব না বরং সুন্নাতেরই অনুসরণ করব। আমাদের নবী ﷺ সেটাই আমাদেরকে বলে গেছেন।
আওফ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার একটি সুন্নাতকে জীবিত করল এবং মানুষ এর উপর আমল করল, সে ব্যক্তি ঐরূপ সওয়াব পাবে, যেরূপ সওয়াব আমলকারীগণ পায়। আর তার পুরস্কার থেকে কিছুই কমানো হবে না। আর যে ব্যক্তি কোনো বিদআত চালু করল, অতঃপর লোকেরা এর উপর আমল করল, সে ব্যক্তির ঐরূপ পাপ হবে, যেরূপ আমলকারীর হয়। এ ক্ষেত্রে আমলকারীর পাপ থেকে বিন্দু পরিমাণ কমানো হবে না। (ইবনে মাজাহ হা/২০৯; তিরমিযী হা/২৬৭৭)
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
এ আয়াতের নির্দেশনা অনুযায়ী বুঝা যায় যে, আল্লাহর ইবাদাত করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের শিখানো নিয়মানুযায়ী। শিরক-বিদআত করা যাবে না।
এ বইটিতে সংক্ষেপে বিদআতের পরিচয়, সমাজে প্রচলিত বিদআত ও কুসংস্কার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি মুসলিম ভাই-বোন এ সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং নিজেদের ঈমান ও আমলকে হেফাযত করবেন। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে তাওফীক দান করুন, আমীন!
বইটি প্রকাশনার কাজে যাদের সহযোগিতা রয়েছে আল্লাহ তা‘আলা যেন সকলকে উত্তম বিনিময় দান করেন এবং এ প্রচেষ্টাকে পরকালে মুক্তির ওসীলা বানিয়ে দেন। আমীন
মা‘আস্সালাম
শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী
শাব্দিক অর্থ :
‘বিদআত’ শব্দটি আরবি মূল অক্ষর ب ‐ د ‐ ع থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, নব উদ্ভাবিত বস্তু বা নতুন কিছু আবিষ্কার করা। কুরআন মাজীদে ব্যবহৃত بَدِيعُ শব্দটি এই মূল অক্ষরসমূহ হতেই গঠিত। যেমন- বলা হয়েছে, بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ তিনি আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।
(সূরা বাকারা : ২/১১৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা بَدِيعُ শব্দটি এজন্যই ব্যবহার করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন পূর্বের কোনো নমুনা ছাড়াই সম্পূর্ণ নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন।
অতএব بِدْعَةٌ (বিদআত) বলা হয় ঐসব নব উদ্ভাবনকে, যার কোন নমুনা ইতিপূর্বে পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল না।
পারিভাষিক অর্থ :
শরীয়তের পরিভাষায় ‘বিদআত’ এর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি হলো :
كُلُّ مَا اَحْدَثَ فِي الدِّيْنِ مَا لَا اَصْلَ لَهُ فِي الشَّرْعِ
প্রত্যেক ঐ কর্মকে বিদআত বলা হয়, যা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত হয়েছে; অথচ শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
এ সংজ্ঞাটির সমর্থনে কুরআন মাজীদের আয়াতটি হলো :
﴿أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ﴾
তাদের কি এমন কতক শরীক আছে, যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা : ৪২/২১)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই- সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম হা/৪৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ হা/৪৬০৭।]
অপর একটি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে,
اَلْبِدْعَةُ شَرْعًا ضَابِطُهَا اَلتَّعَبُّدُ لِلّٰهِ بِمَا لَمْ يَشْرَعُهُ اللهُ، وَإِنْ شِئْتَ فَقُلْ : اَلتَّعَبُّدُ لِلّٰهِ تَعَالٰى بِمَا لَيْسَ عَلَيْهِ النَّبِيِّ وَلَا خُلَفَاؤُهُ الرَّاشِدُوْنَ
অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় বিদআতের অর্থ হলো- এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা, যা তিনি অনুমোদন করেননি। আর যদি তুমি চাও, তাহলে বলতে পার যে, এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল ﷺ ও তাঁর খলীফাগণ ইবাদাত করেন নাই।
এ সংজ্ঞাটির সমর্থনে হাদীস হলো :
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ
তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত (তরিকা) ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত (তরিকা) ধারণ করা। তোমরা ওটাকে শক্তভাবে ধারণ করো- এমনকি মাড়ির দাঁত দিয়ে হলেও। সাবধান! নবোদ্ভাবিত আমলসমূহ থেকে বিরত থাকো। [সহীহ মুসলিম হা/৪৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২; মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৫।]
ইমাম শাতেবী (রহ.) বলেন,
اَلْبِدْعَةُ طَرِيْقَةٌ فِي الدِّيْنِ مُخْتَرَعَةٌ تَضَاهِيْ الشَّرْعِيَّةِ يَقْصُدُ بِالسُّلُوْكِ عَلَيْهَامَا يَقْصُدُ بِالطَّرِيْقَةِ الشَّرِيْعَةِ
‘বিদআত’ হচ্ছে ইসলামের ভিতরে নব উদ্ভাবিত এমন সব ইবাদাত, যা শরীয়তে স্বীকৃত ইবাদাতের মতই সওয়াবের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। [ইমাম শাতেবী, আল-ইতিসাম, ১/৩৭ পৃঃ।]
‘বিদআত’ শব্দটি আরবি মূল অক্ষর ب ‐ د ‐ ع থেকে এসেছে। এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, নব উদ্ভাবিত বস্তু বা নতুন কিছু আবিষ্কার করা। কুরআন মাজীদে ব্যবহৃত بَدِيعُ শব্দটি এই মূল অক্ষরসমূহ হতেই গঠিত। যেমন- বলা হয়েছে, بَدِيعُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ তিনি আকাশ ও জমিন সৃষ্টি করেছেন।
(সূরা বাকারা : ২/১১৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা بَدِيعُ শব্দটি এজন্যই ব্যবহার করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলা আকাশ ও জমিন পূর্বের কোনো নমুনা ছাড়াই সম্পূর্ণ নতুনভাবে সৃষ্টি করেছেন।
অতএব بِدْعَةٌ (বিদআত) বলা হয় ঐসব নব উদ্ভাবনকে, যার কোন নমুনা ইতিপূর্বে পৃথিবীতে বিদ্যমান ছিল না।
পারিভাষিক অর্থ :
শরীয়তের পরিভাষায় ‘বিদআত’ এর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞাটি হলো :
كُلُّ مَا اَحْدَثَ فِي الدِّيْنِ مَا لَا اَصْلَ لَهُ فِي الشَّرْعِ
প্রত্যেক ঐ কর্মকে বিদআত বলা হয়, যা দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত হয়েছে; অথচ শরীয়তে এর কোনো ভিত্তি নেই।
এ সংজ্ঞাটির সমর্থনে কুরআন মাজীদের আয়াতটি হলো :
﴿أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللهُ﴾
তাদের কি এমন কতক শরীক আছে, যারা তাদের জন্য বিধান দিয়েছে এমন দ্বীনের, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা : ৪২/২১)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هٰذَا مَا لَيْسَ فِيْهِ فَهُوَ رَدٌّ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু সংযোজন করবে, যা মূলত তাতে নেই- সেটি পরিত্যাজ্য। [সহীহ বুখারী হা/২৬৯৭; সহীহ মুসলিম হা/৪৫৭৯; সুনানে আবু দাউদ হা/৪৬০৭।]
অপর একটি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে,
اَلْبِدْعَةُ شَرْعًا ضَابِطُهَا اَلتَّعَبُّدُ لِلّٰهِ بِمَا لَمْ يَشْرَعُهُ اللهُ، وَإِنْ شِئْتَ فَقُلْ : اَلتَّعَبُّدُ لِلّٰهِ تَعَالٰى بِمَا لَيْسَ عَلَيْهِ النَّبِيِّ وَلَا خُلَفَاؤُهُ الرَّاشِدُوْنَ
অর্থাৎ শরীয়তের পরিভাষায় বিদআতের অর্থ হলো- এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা, যা তিনি অনুমোদন করেননি। আর যদি তুমি চাও, তাহলে বলতে পার যে, এমন জিনিসের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা, যার মাধ্যমে আল্লাহর রাসূল ﷺ ও তাঁর খলীফাগণ ইবাদাত করেন নাই।
এ সংজ্ঞাটির সমর্থনে হাদীস হলো :
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِىْ وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الْمَهْدِيِّيْنَ الرَّاشِدِيْنَ تَمَسَّكُوْا بِهَا وَعَضُّوْا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُوْرِ
তোমাদের জন্য আবশ্যক হলো আমার সুন্নাত (তরিকা) ও আমার খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত (তরিকা) ধারণ করা। তোমরা ওটাকে শক্তভাবে ধারণ করো- এমনকি মাড়ির দাঁত দিয়ে হলেও। সাবধান! নবোদ্ভাবিত আমলসমূহ থেকে বিরত থাকো। [সহীহ মুসলিম হা/৪৬০৯; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২; মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৫।]
ইমাম শাতেবী (রহ.) বলেন,
اَلْبِدْعَةُ طَرِيْقَةٌ فِي الدِّيْنِ مُخْتَرَعَةٌ تَضَاهِيْ الشَّرْعِيَّةِ يَقْصُدُ بِالسُّلُوْكِ عَلَيْهَامَا يَقْصُدُ بِالطَّرِيْقَةِ الشَّرِيْعَةِ
‘বিদআত’ হচ্ছে ইসলামের ভিতরে নব উদ্ভাবিত এমন সব ইবাদাত, যা শরীয়তে স্বীকৃত ইবাদাতের মতই সওয়াবের উদ্দেশ্যে পালন করা হয়। [ইমাম শাতেবী, আল-ইতিসাম, ১/৩৭ পৃঃ।]
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) এ সম্পর্কে বলেন, ‘‘ইলম ও ইবাদাত বিষয়ক সর্বপ্রকার বিদআত খুলাফায়ে রাশেদীনের খিলাফতকালের শেষের দিকেই প্রকাশ পায়। যেমনিভাবে এ বিষয়ে সতর্ক করে নবী ﷺ বলেছিলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার পরে জীবিত থাকবে, অচিরেই সে অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে। সুতরাং তোমাদের জন্য আবশ্যক হচ্ছে, আমার ও আমার পর হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরা।’’ [ফতোওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়া ২/৩৭৮।]
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিদআত চালু হয়েছিল :
১. সর্বপ্রথম যে বিদআতটি চালু হয়েছিল, তা হলো কদর (ভাগ্য) সম্পর্কে অর্থাৎ এক দল লোক এরূপ বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছিল যে, তাকদীর বলতে কিছুই নেই। অথচ তাকদীর ঈমানের অন্যতম একটি বিষয়।
২. তারপর চালু হয়েছিল ইরজার বিদআত অর্থাৎ এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৩. তারপর চালু হয়েছিল তাশাইয়্যূর বিদআত অর্থাৎ এ ধারণা পোষণ করা যে, আলী (রাঃ) ছিলেন প্রথম খলিফা হওয়ার যোগ্য ও হকদার।
৪. তারপর চালু হয়েছিল খাওয়ারেজদের বিদআত, যারা ধারণা করত যে, কবীরা গুনাহকারী কাফির এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
৫. তারপর চালু হয় মুতাযিলা সম্প্রদায়ের বিদআত, যারা ধারণা করত যে, শরীয়ত বুঝতে হবে আকল বা জ্ঞান দ্বারা। এদের আবির্ভাব হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে; এমনকি কলহ-বিবাদ ও মারামারিতেও লিপ্ত হয়। তারপর যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিদআত চালু হতে থাকে।
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরনের বিদআত চালু হয়েছিল :
১. সর্বপ্রথম যে বিদআতটি চালু হয়েছিল, তা হলো কদর (ভাগ্য) সম্পর্কে অর্থাৎ এক দল লোক এরূপ বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছিল যে, তাকদীর বলতে কিছুই নেই। অথচ তাকদীর ঈমানের অন্যতম একটি বিষয়।
২. তারপর চালু হয়েছিল ইরজার বিদআত অর্থাৎ এ বিশ্বাস স্থাপন করা যে, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়।
৩. তারপর চালু হয়েছিল তাশাইয়্যূর বিদআত অর্থাৎ এ ধারণা পোষণ করা যে, আলী (রাঃ) ছিলেন প্রথম খলিফা হওয়ার যোগ্য ও হকদার।
৪. তারপর চালু হয়েছিল খাওয়ারেজদের বিদআত, যারা ধারণা করত যে, কবীরা গুনাহকারী কাফির এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
৫. তারপর চালু হয় মুতাযিলা সম্প্রদায়ের বিদআত, যারা ধারণা করত যে, শরীয়ত বুঝতে হবে আকল বা জ্ঞান দ্বারা। এদের আবির্ভাব হওয়ার মধ্য দিয়ে ইসলামে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও ফিতনা সৃষ্টি হয়। মানুষ ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের মতানৈক্যে জড়িয়ে পড়ে; এমনকি কলহ-বিবাদ ও মারামারিতেও লিপ্ত হয়। তারপর যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের বিদআত চালু হতে থাকে।
দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু প্রবেশ করানোর সুযোগ নেই। যদি করানো হয়, তবে এর অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আল্লাহ তা‘আলা যদিও দ্বীন পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, কিন্তু রাসূলুল্লাহ ﷺ সেগুলো আমাদের কাছে যথাযথভাবে পৌঁছাননি। সুতরাং এর মধ্যে কিছু ত্রুটি রয়ে গেছে (নাউযুবিল্লাহ)। অথচ রিসালাতের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে কুরআন মাজীদে কঠোরভাবে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে,
﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ﴾
হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও; আর যদি তুমি না কর, তবে তুমি যেন তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। (সূরা মায়েদা ৫:৬৭)
আল্লাহর এই কঠোর সতর্কবাণীর কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুর পূর্বে বিদায় হজ্জের ভাষণে সমগ্র জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন যে,
وَأَنْتُمْ تُسْأَلُوْنَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُوْنَ
অর্থাৎ যখন তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে (আমার দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করা হবে, তখন তোমরা (আমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে) কী উত্তর দিবে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন,
نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ . فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ . ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর দেয়া রিসালাত আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, (আপনার দায়িত্ব) আদায় করেছেন এবং উম্মতের জন্য কল্যাণ কামনা করেছেন। একথা শুনে তিনি শাহাদাত আঙ্গুলকে আসমানের দিকে উঠিয়ে লোকদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো! হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো- একথা তিনি তিনবার বললেন। [সহীহ মুসলিম হা/৩০০৯।]
এরপরই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন,
﴿اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণ করে দিলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা ৫:৩)
সুতরাং দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যারা বিদআতে হাসানা নামক ইবাদাতকে ইসলামের ভিতরে ঢুকাতে চায়, তারা মূলত পরোক্ষভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে খিয়ানতকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এ কারণেই ইমাম মালেক (রহ.) বলেছেন,
مَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةً فَيَرَاهَا حَسَنَةً فَقَدْ زَعَمَ اَنَّ مُحَمَّدًا خَانَ فِى الرِّسَالَةِ لِاَنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ ﴿ اَلْيَوْمُ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ﴾ فَمَا لَمْ يَكُنْ يَوْمَئِذٍ دِيْنًا فَلَيْسَ الْيَوْمَ دِيْنًا
যে ব্যক্তি কোনো বিদআত আবিষ্কার করল, অতঃপর তাতে কল্যাণ দেখতে পেল, সে যেন দাবী করল যে- মুহাম্মদ ﷺ রিসালাতের ব্যাপারে খিয়ানত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম’’। সুতরাং যেসব কাজ তখন দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তা বর্তমানেও দ্বীন নয়। [মুহাববাতুর রাসূল বাইনাল ইত্তিবায়ি ওয়াল ইবতিদায়ী ১/২৮৪।]
বিদআতের উদাহরণ হচ্ছে পানি ভর্তি একটি পাত্রের সাথে, যাতে অতিরিক্ত বিন্দু পরিমাণ পানি ধারণের ক্ষমতা নেই। কিন্তু এরপরও যদি তাতে আরো পানি দেয়া হয়, তাহলে যেমনিভাবে পাত্র থেকে পানি বাহিরে গড়িয়ে পড়ে যাবে, অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা দ্বীন ইসলামকে এমনই পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন যে, এতে নতুন কিছু প্রবেশ করানোর আর কোনো সুযোগ নেই। যদি এরূপ করা হয়, তাহলে তা অতিরিক্ত পানির মতো বাহিরে গড়িয়ে যাবে তথা বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর এর থেকে সামান্যতম কম করা হলে সেটি কুফর হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অতএব দ্বীনকে যথাযথভাবে পালন করাটাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদারের পরিচায়ক।
﴿ يَاۤ أَيُّهَا الرَّسُوْلُ بَلِّغْ مَاۤ أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَّبِّكَ وَإِنْ لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهٗ﴾
হে রাসূল! তোমার রবের পক্ষ থেকে তোমার নিকট যা নাযিল করা হয়েছে, তা পৌঁছে দাও; আর যদি তুমি না কর, তবে তুমি যেন তাঁর রিসালাত পৌঁছালে না। (সূরা মায়েদা ৫:৬৭)
আল্লাহর এই কঠোর সতর্কবাণীর কারণেই রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যুর পূর্বে বিদায় হজ্জের ভাষণে সমগ্র জনতার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছিলেন যে,
وَأَنْتُمْ تُسْأَلُوْنَ عَنِّىْ فَمَا أَنْتُمْ قَائِلُوْنَ
অর্থাৎ যখন তোমাদেরকে আমার সম্পর্কে (আমার দায়িত্ব পালন করার ব্যাপারে) জিজ্ঞেস করা হবে, তখন তোমরা (আমার ব্যাপারে আল্লাহর কাছে) কী উত্তর দিবে? সাহাবীগণ উত্তর দিলেন,
نَشْهَدُ أَنَّكَ قَدْ بَلَّغْتَ وَأَدَّيْتَ وَنَصَحْتَ . فَقَالَ بِإِصْبَعِهِ السَّبَّابَةِ يَرْفَعُهَا إِلَى السَّمَاءِ وَيَنْكُتُهَا إِلَى النَّاسِ اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ اَللّٰهُمَّ اشْهَدْ . ثَلَاثَ مَرَّاتٍ
আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় আপনি আল্লাহর দেয়া রিসালাত আমাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, (আপনার দায়িত্ব) আদায় করেছেন এবং উম্মতের জন্য কল্যাণ কামনা করেছেন। একথা শুনে তিনি শাহাদাত আঙ্গুলকে আসমানের দিকে উঠিয়ে লোকদের দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো! হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থাকো- একথা তিনি তিনবার বললেন। [সহীহ মুসলিম হা/৩০০৯।]
এরপরই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি নাযিল করলেন,
﴿اَلْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِيْنًا﴾
আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করলাম এবং আমার নিয়ামতকে তোমাদের উপর পূর্ণ করে দিলাম; আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদা ৫:৩)
সুতরাং দ্বীন পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরও যারা বিদআতে হাসানা নামক ইবাদাতকে ইসলামের ভিতরে ঢুকাতে চায়, তারা মূলত পরোক্ষভাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে খিয়ানতকারী হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। এ কারণেই ইমাম মালেক (রহ.) বলেছেন,
مَنِ ابْتَدَعَ بِدْعَةً فَيَرَاهَا حَسَنَةً فَقَدْ زَعَمَ اَنَّ مُحَمَّدًا خَانَ فِى الرِّسَالَةِ لِاَنَّ اللهَ تَعَالٰى يَقُوْلُ ﴿ اَلْيَوْمُ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِيْنَكُمْ﴾ فَمَا لَمْ يَكُنْ يَوْمَئِذٍ دِيْنًا فَلَيْسَ الْيَوْمَ دِيْنًا
যে ব্যক্তি কোনো বিদআত আবিষ্কার করল, অতঃপর তাতে কল্যাণ দেখতে পেল, সে যেন দাবী করল যে- মুহাম্মদ ﷺ রিসালাতের ব্যাপারে খিয়ানত করেছেন। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন- ‘‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম’’। সুতরাং যেসব কাজ তখন দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত ছিল না, তা বর্তমানেও দ্বীন নয়। [মুহাববাতুর রাসূল বাইনাল ইত্তিবায়ি ওয়াল ইবতিদায়ী ১/২৮৪।]
বিদআতের উদাহরণ হচ্ছে পানি ভর্তি একটি পাত্রের সাথে, যাতে অতিরিক্ত বিন্দু পরিমাণ পানি ধারণের ক্ষমতা নেই। কিন্তু এরপরও যদি তাতে আরো পানি দেয়া হয়, তাহলে যেমনিভাবে পাত্র থেকে পানি বাহিরে গড়িয়ে পড়ে যাবে, অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা দ্বীন ইসলামকে এমনই পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন যে, এতে নতুন কিছু প্রবেশ করানোর আর কোনো সুযোগ নেই। যদি এরূপ করা হয়, তাহলে তা অতিরিক্ত পানির মতো বাহিরে গড়িয়ে যাবে তথা বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত হবে। আর এর থেকে সামান্যতম কম করা হলে সেটি কুফর হিসেবে সাব্যস্ত হবে। অতএব দ্বীনকে যথাযথভাবে পালন করাটাই হচ্ছে প্রকৃত ঈমানদারের পরিচায়ক।
হুকুমগত দিক থেকে বিদআতকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় :
১. اَلْبِدْعَةُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী বিদআত :
যেসব বিদআতী কর্মের মাধ্যমে বিদআতকারী কাফির হিসেবে গণ্য হয়, সেগুলোকে اَلْبِدْعَةُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী বিদআত বলা হয়।
২. اَلْبِدْعَةُ غَيْرُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী নয় এমন বিদআত :
যেসব বিদআতী কর্মের মাধ্যমে বিদআতকারী কাফির হিসেবে গণ্য হয় না; বরং পাপী হিসেবে সাব্যস্ত হয়, সেগুলোকেই اَلْبِدْعَةُ غَيْرُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কুফর থেকে বাধাদানকারী বিদআত বলা হয়।
১. اَلْبِدْعَةُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী বিদআত :
যেসব বিদআতী কর্মের মাধ্যমে বিদআতকারী কাফির হিসেবে গণ্য হয়, সেগুলোকে اَلْبِدْعَةُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী বিদআত বলা হয়।
২. اَلْبِدْعَةُ غَيْرُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কাফির সাব্যস্তকারী নয় এমন বিদআত :
যেসব বিদআতী কর্মের মাধ্যমে বিদআতকারী কাফির হিসেবে গণ্য হয় না; বরং পাপী হিসেবে সাব্যস্ত হয়, সেগুলোকেই اَلْبِدْعَةُ غَيْرُ الْمُكَفِّرَاتُ তথা কুফর থেকে বাধাদানকারী বিদআত বলা হয়।
বর্তমান সমাজের অনেক আলেম বিদআতকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে থাকেন। তা হলো-
(১) اَلْبِدْعَةُ الْحَسَنَةُ তথা উত্তম বিদআত :
এগুলো এমন বিদআত, যা শরীয়তের কোনো সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে না; বরং তার দ্বারা শরীয়ত পালনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়।
(২) اَلْبِدْعَةُ السَّيِّئَةُ তথা খারাপ বিদআত :
এগুলো হচ্ছে এমন বিদআত, যা শরীয়তের কোনো সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে দেয়। সুতরাং এগুলো সম্পূর্ণরূপে হারাম।
পর্যালোচনা :
বিদআত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সতর্কবাণী রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ... وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা। কেননা প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহই হচ্ছে বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে গোমরাহী। [মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৪; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২।]
অত্র হাদীসে দ্বীনের মধ্যে যে কোনো প্রকার সংযোজন করাকেই বিদআত বলা হয়েছে। এখানে বিদআতকে ভালো অথবা মন্দ- এরূপ কোনো ভাগে বিভক্ত করা হয়নি। এমনকি অন্য কোনো সহীহ হাদীসেও এর স্বপক্ষে কোনো দলীল পাওয়া যায় না।
এরপরও অনেকে এর স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন। যেমন-
১. রমাযানের রাতে লোকেরা পৃথক পৃথকভাবে একা একা সালাত আদায় করতো। তখন উমর (রাঃ) তাদেরকে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর পিছনে জামাআতবন্দী করে দিলেন এবং বললেন, نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه এটি কতই না উত্তম ‘বিদ‘আত’ বা সুন্দর ব্যবস্থা। [সহীহ বুখারী হা/২০১০; বায়হাকী হা/৪৩৭৯।]
অত্র হাদীসে উমর (রাঃ) এর কথা نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه (এটি কতই না সুন্দর বিদআত) এর মধ্যে ব্যবহৃত اَلْبِدْعَةُ শব্দটির দ্বারা আভিধানিক অর্থ উদ্দেশ্য করা হয়েছে; শারঈ অর্থ নয়।
২. মুনযির ইবনে জারির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهٖ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْتَقَصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْءٌ
যে ব্যক্তি ইসলামে একটি ভালো সুন্নাত চালু করলো, সে ওটার সওয়াব পাবে এবং পরবর্তীতে যারা তার উপর আমল করবে সে তাদের সওয়াবও পাবে; আর এতে আমলকারীদের নেকী হতে কোনোরূপ কমতি করা হবে না। [সহীহ মুসলিম হা/২৩৯৮; সুনানে নাসায়ী হা/২৫৫৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২০৩; মুসনাদে আহমদ হা/১৯১৫৬।]
অত্র হাদীসটিতে বিদআতে হাসানা চালু করার কথা বলা হয়নি; বরং সুন্নাতে হাসানা চালু করার কথা বলা হয়েছে। কেননা হাদীসটিতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উদ্ধৃতিটি ছিল এমন একটি সুন্নাত কর্মের জন্য, যা প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রদর্শিত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
ঘটনাটি হচ্ছে, একদা একদল সাহাবী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে সাদাকা করার জন্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তখন প্রথমে একজন সাহাবী তাকে কিছু সাহায্য করলেন। অতঃপর অন্যান্য সাহাবীও সাহায্য করলেন। অবশেষে দেখা গেল যে, সাহায্যের বস্তুগুলো একটি বড় স্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ ﷺ খুশি হয়ে উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম হা/১০১৭; মুসনাদে আহমাদ হা/১৯১৯৭।]
যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল বিদআতকে গোমরাহী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, সেখানে বিদআতকে বিদআতে হাসানা ও বিদআতে সাইয়েআহ হিসেবে দুই ভাগে বিভক্ত করা উচিত নয়।
(১) اَلْبِدْعَةُ الْحَسَنَةُ তথা উত্তম বিদআত :
এগুলো এমন বিদআত, যা শরীয়তের কোনো সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে না; বরং তার দ্বারা শরীয়ত পালনের মাত্রা বৃদ্ধি করে দেয়।
(২) اَلْبِدْعَةُ السَّيِّئَةُ তথা খারাপ বিদআত :
এগুলো হচ্ছে এমন বিদআত, যা শরীয়তের কোনো সুন্নাতকে বিলুপ্ত করে দেয়। সুতরাং এগুলো সম্পূর্ণরূপে হারাম।
পর্যালোচনা :
বিদআত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সতর্কবাণী রয়েছে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عِرْبَاضِ بْنِ سَارِيَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ... وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُوْرِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
ইরবায ইবনে সারিয়াহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহ হতে বেঁচে থাকা। কেননা প্রত্যেক নব উদ্ভাবিত বিষয়সমূহই হচ্ছে বিদআত। আর প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে গোমরাহী। [মুসনাদে আহমদ হা/১৭১৪৪; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪২।]
অত্র হাদীসে দ্বীনের মধ্যে যে কোনো প্রকার সংযোজন করাকেই বিদআত বলা হয়েছে। এখানে বিদআতকে ভালো অথবা মন্দ- এরূপ কোনো ভাগে বিভক্ত করা হয়নি। এমনকি অন্য কোনো সহীহ হাদীসেও এর স্বপক্ষে কোনো দলীল পাওয়া যায় না।
এরপরও অনেকে এর স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন। যেমন-
১. রমাযানের রাতে লোকেরা পৃথক পৃথকভাবে একা একা সালাত আদায় করতো। তখন উমর (রাঃ) তাদেরকে উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)-এর পিছনে জামাআতবন্দী করে দিলেন এবং বললেন, نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه এটি কতই না উত্তম ‘বিদ‘আত’ বা সুন্দর ব্যবস্থা। [সহীহ বুখারী হা/২০১০; বায়হাকী হা/৪৩৭৯।]
অত্র হাদীসে উমর (রাঃ) এর কথা نِعْمَ الْبِدْعَةُ هٰذِه (এটি কতই না সুন্দর বিদআত) এর মধ্যে ব্যবহৃত اَلْبِدْعَةُ শব্দটির দ্বারা আভিধানিক অর্থ উদ্দেশ্য করা হয়েছে; শারঈ অর্থ নয়।
২. মুনযির ইবনে জারির (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ سَنَّ فِي الْإِسْلَامِ سُنَّةً حَسَنَةً كَانَ لَهُ أَجْرُهَا وَأَجْرُ مَنْ عَمِلَ بِهَا مِنْ بَعْدِهٖ مِنْ غَيْرِ أَنْ يُّنْتَقَصَ مِنْ أُجُوْرِهِمْ شَيْءٌ
যে ব্যক্তি ইসলামে একটি ভালো সুন্নাত চালু করলো, সে ওটার সওয়াব পাবে এবং পরবর্তীতে যারা তার উপর আমল করবে সে তাদের সওয়াবও পাবে; আর এতে আমলকারীদের নেকী হতে কোনোরূপ কমতি করা হবে না। [সহীহ মুসলিম হা/২৩৯৮; সুনানে নাসায়ী হা/২৫৫৩; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/২০৩; মুসনাদে আহমদ হা/১৯১৫৬।]
অত্র হাদীসটিতে বিদআতে হাসানা চালু করার কথা বলা হয়নি; বরং সুন্নাতে হাসানা চালু করার কথা বলা হয়েছে। কেননা হাদীসটিতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উদ্ধৃতিটি ছিল এমন একটি সুন্নাত কর্মের জন্য, যা প্রকৃতপক্ষে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রদর্শিত সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
ঘটনাটি হচ্ছে, একদা একদল সাহাবী ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে এলে তিনি তাদেরকে সাদাকা করার জন্য সাহাবীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তখন প্রথমে একজন সাহাবী তাকে কিছু সাহায্য করলেন। অতঃপর অন্যান্য সাহাবীও সাহায্য করলেন। অবশেষে দেখা গেল যে, সাহায্যের বস্তুগুলো একটি বড় স্তুপে পরিণত হয়েছে। এতে রাসূলুল্লাহ ﷺ খুশি হয়ে উপরোক্ত উদ্ধৃতিটি করেছিলেন। [সহীহ মুসলিম হা/১০১৭; মুসনাদে আহমাদ হা/১৯১৯৭।]
যেখানে রাসূলুল্লাহ ﷺ সকল বিদআতকে গোমরাহী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন, সেখানে বিদআতকে বিদআতে হাসানা ও বিদআতে সাইয়েআহ হিসেবে দুই ভাগে বিভক্ত করা উচিত নয়।
বিদআত নির্ণয়ের জন্য কিছু মূলনীতি রয়েছে। যেমন-
১. কুরআন ও হাদীসে এর পূর্ব কোনো নমুনা না থাকা :
নব উদ্ভাবিত কোনো আমলকে ‘বিদআত’ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য সর্বপ্রথম দেখতে হবে যে, কুরআন ও সহীহ হাদীসসমূহে এর কোনো নমুনা আছে কি না। যদি কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর কোনো নমুনা না থাকে, তাহলে সেটি বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে।
২. সওয়াবের উদ্দেশ্য থাকা :
যদি আমলটি করার পেছনে সওয়াবের উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে সেটি বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যদি কোনো ধরনের সওয়াবের উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে সেটি হয় অপচয় অথবা কুসংস্কার হিসেবে পরিগণিত হবে।
৩. ইসলামী বিধান পালনের পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া :
বিদআত কেবল ইসলামী বিধান পালনের পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত, উপকরণ অথবা মাধ্যমের সাথে নয়। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হজ্জ পালন করার পদ্ধতির মধ্যে নতুনত্ব আনয়ন করাটা বিদআত। কিন্তু হজ্জে যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজ কিংবা গাড়ি ব্যবহার করা বিদআত নয়।
যেসব ইবাদাত শরীয়ত সাধারণভাবে পালন করার হুকুম দিয়েছে, সেসব আমল কোনো স্থান, কাল, গুণ, নিয়ম-কানুন, সংখ্যা ইত্যাদির দ্বারা নির্দিষ্ট করে নিয়ে আমল করা বিদআত।
১. কুরআন ও হাদীসে এর পূর্ব কোনো নমুনা না থাকা :
নব উদ্ভাবিত কোনো আমলকে ‘বিদআত’ হিসেবে সাব্যস্ত করার জন্য সর্বপ্রথম দেখতে হবে যে, কুরআন ও সহীহ হাদীসসমূহে এর কোনো নমুনা আছে কি না। যদি কুরআন ও সহীহ হাদীসে এর কোনো নমুনা না থাকে, তাহলে সেটি বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে।
২. সওয়াবের উদ্দেশ্য থাকা :
যদি আমলটি করার পেছনে সওয়াবের উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে সেটি বিদআত হিসেবে পরিগণিত হবে। আর যদি কোনো ধরনের সওয়াবের উদ্দেশ্য না থাকে, তাহলে সেটি হয় অপচয় অথবা কুসংস্কার হিসেবে পরিগণিত হবে।
৩. ইসলামী বিধান পালনের পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত হওয়া :
বিদআত কেবল ইসলামী বিধান পালনের পদ্ধতির সাথে সম্পৃক্ত, উপকরণ অথবা মাধ্যমের সাথে নয়। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হজ্জ পালন করার পদ্ধতির মধ্যে নতুনত্ব আনয়ন করাটা বিদআত। কিন্তু হজ্জে যাওয়ার জন্য উড়োজাহাজ কিংবা গাড়ি ব্যবহার করা বিদআত নয়।
যেসব ইবাদাত শরীয়ত সাধারণভাবে পালন করার হুকুম দিয়েছে, সেসব আমল কোনো স্থান, কাল, গুণ, নিয়ম-কানুন, সংখ্যা ইত্যাদির দ্বারা নির্দিষ্ট করে নিয়ে আমল করা বিদআত।
১. অনুমানভিত্তিক কথা বলা :
অধিকাংশ বিদআতীরা কুরআন-হাদীসের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে নিজের অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা এদের ব্যাপারে বলেন,
﴿فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِه ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? (সূরা আরাফ ৭:৩৭)
আর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ - -- مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। [সহীহ মুসলিম হা/৪; আবু দাউদ হা/৩৬৫৩।]
২. কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা :
বিদআতীরা সর্বদা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। ফলে তারা ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো হিসেবে দেখে থাকে। এমতাবস্থায় সুন্নাত ও বিদআত সম্বন্ধে তাদের কোনো জ্ঞান থাকে না।
৩. ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ানো :
কখনো কখনো দেখা যায় যে, তারা তুচ্ছ একটি বিষয়কে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে। এমনকি তারা এ নিয়ে অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি-হানাহানিতেও জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো কখনো ইসলামের ফরয বিষয়কে তারা তুচ্ছজ্ঞান করে।
৪. হক ও বাতিলকে মিশ্রিত করে ফেলা :
বিদআতীরা হক ও বাতিলকে মিলিয়ে ফেলার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালায়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা নিষেধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা ২:৪২)
৫. সত্য গোপন করা :
বিদআতীরা নিজেদের মিথ্যা উক্তিকে সত্যে পরিণত করার জন্য নানা ধরনের ছল-চাতুরী ও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। আবার কখনো কখনো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে না জানার ভান করে। এটা বড় ধরনের পাপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللّٰهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ ﴾
আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে কিতাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়।
(সূরা বাকারা ২:১৫৯)
৬. যাদু ও শয়তানী কর্মকান্ডকে কারামত মনে করা :
দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকা এবং নিজেদের ঈমানী দুর্বলতার কারণে বিদআতীরা আল্লাহর কার্যাবলি এবং শয়তানের কার্যাবলির মধ্যে যথাযথভাবে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। ফলে তারা অনেক সময় যাদুমন্ত্র ও শয়তানী কর্মকান্ডকে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত কারামত মনে করে থাকে। অতঃপর এর ভিত্তিতে তারা অনেক বিদআতী কর্মের সূচনা করে থাকে।
৭. উপদেশ গ্রহণ না করা :
বিদআতীরা অপর কারো উপদেশ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে না। কেননা তারা সর্বদা নিজেদেরকেই সঠিক জ্ঞান করে থাকে। এজন্যই যখন তাদেরকে বিদআত পরিত্যাগ করার জন্য কোনো উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কোনো কোনো সময় তারা উপদেশদাতাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং তার বিরুদ্ধে চক্রান্তেও জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ﴾
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৪৯-৫১)
৮. বিদআতকে বৈধতা দান করা :
বিদআতীরা তাদের বিদআতী কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানের জন্য, কুরআন ও হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। তারা বিদআতকে উত্তম বিদআত এবং মন্দ বিদআত হিসেবে দুটি ভাগে বিভক্ত করে থাকে। অথচ কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে এরূপ বিভক্তি করার কোনো সুযোগ নেই।
অধিকাংশ বিদআতীরা কুরআন-হাদীসের সঠিক জ্ঞান না থাকার কারণে নিজের অনুমানের ভিত্তিতে কথা বলে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা এদের ব্যাপারে বলেন,
﴿فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرٰى عَلَى اللّٰهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِاٰيَاتِه ﴾
আর যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে কিংবা তাঁর নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? (সূরা আরাফ ৭:৩৭)
আর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ - -- مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করে, সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে বানিয়ে নেয়। [সহীহ মুসলিম হা/৪; আবু দাউদ হা/৩৬৫৩।]
২. কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করা :
বিদআতীরা সর্বদা নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করে থাকে। ফলে তারা ভালোকে মন্দ এবং মন্দকে ভালো হিসেবে দেখে থাকে। এমতাবস্থায় সুন্নাত ও বিদআত সম্বন্ধে তাদের কোনো জ্ঞান থাকে না।
৩. ফিতনা সৃষ্টি করে বেড়ানো :
কখনো কখনো দেখা যায় যে, তারা তুচ্ছ একটি বিষয়কে অত্যধিক গুরুত্বারোপ করে। এমনকি তারা এ নিয়ে অনেক সময় ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি-হানাহানিতেও জড়িয়ে পড়ে। আবার কখনো কখনো ইসলামের ফরয বিষয়কে তারা তুচ্ছজ্ঞান করে।
৪. হক ও বাতিলকে মিশ্রিত করে ফেলা :
বিদআতীরা হক ও বাতিলকে মিলিয়ে ফেলার ব্যর্থ অপচেষ্টা চালায়। অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এটা নিষেধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَلَا تَلْبِسُوا الْحَقَّ بِالْبَاطِلِ وَتَكْتُمُوا الْحَقَّ وَاَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ﴾
তোমরা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে বুঝে সত্যকে গোপন করো না। (সূরা বাক্বারা ২:৪২)
৫. সত্য গোপন করা :
বিদআতীরা নিজেদের মিথ্যা উক্তিকে সত্যে পরিণত করার জন্য নানা ধরনের ছল-চাতুরী ও মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। আবার কখনো কখনো নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে না জানার ভান করে। এটা বড় ধরনের পাপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْتُمُوْنَ مَاۤ أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدٰى مِنْۢ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولٰٓئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللّٰهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُوْنَ ﴾
আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি, মানুষের জন্য স্পষ্টভাবে কিতাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন রাখে, আল্লাহ তাদেরকে লানত করেন এবং লানতকারীরাও তাদেরকে অভিশাপ দেয়।
(সূরা বাকারা ২:১৫৯)
৬. যাদু ও শয়তানী কর্মকান্ডকে কারামত মনে করা :
দ্বীনের সঠিক জ্ঞান না থাকা এবং নিজেদের ঈমানী দুর্বলতার কারণে বিদআতীরা আল্লাহর কার্যাবলি এবং শয়তানের কার্যাবলির মধ্যে যথাযথভাবে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারে না। ফলে তারা অনেক সময় যাদুমন্ত্র ও শয়তানী কর্মকান্ডকে আল্লাহর পক্ষ হতে আগত কারামত মনে করে থাকে। অতঃপর এর ভিত্তিতে তারা অনেক বিদআতী কর্মের সূচনা করে থাকে।
৭. উপদেশ গ্রহণ না করা :
বিদআতীরা অপর কারো উপদেশ গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকে না। কেননা তারা সর্বদা নিজেদেরকেই সঠিক জ্ঞান করে থাকে। এজন্যই যখন তাদেরকে বিদআত পরিত্যাগ করার জন্য কোনো উপদেশ দেয়া হয়, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি কোনো কোনো সময় তারা উপদেশদাতাকে নানাভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং তার বিরুদ্ধে চক্রান্তেও জড়িয়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَمَا لَهُمْ عَنِ التَّذْكِرَةِ مُعْرِضِيْنَ ‐ - كَاَنَّهُمْ حُمُرٌ مُّسْتَنْفِرَةٌ ‐ - فَرَّتْ مِنْ قَسْوَرَةٍ﴾
তাদের কী হলো যে, তারা উপদেশবাণী (কুরআন) হতে মুখ ফিরিয়ে নেয়? তারা যেন পলায়নপর গাধা, যা সিংহের সম্মুখ হতে পলায়ন করে। (সূরা মুদ্দাসসির ৭৪:৪৯-৫১)
৮. বিদআতকে বৈধতা দান করা :
বিদআতীরা তাদের বিদআতী কার্যক্রমকে বৈধতা প্রদানের জন্য, কুরআন ও হাদীসের বিকৃত ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। তারা বিদআতকে উত্তম বিদআত এবং মন্দ বিদআত হিসেবে দুটি ভাগে বিভক্ত করে থাকে। অথচ কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে এরূপ বিভক্তি করার কোনো সুযোগ নেই।
সমাজে যেসব পদ্ধতিতে বিদআত প্রসার লাভ করে থাকে, তা হলো :
১. বিদআতী তা নিজের থেকে উদ্ভাবন করে সমাজে চালিয়ে দেয়। পরে তা সাধারণভাবে সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
২. কোনো আলেম হয়তো শরীয়ত বিরোধী একটা কাজ করেছেন; কিন্তু তা দেখে জাহেল লোকেরা মনে করতে শুরু করে যে, এ কাজ শরীয়তসম্মত না হয়ে পারে না। এভাবে এক ব্যক্তির কারণে গোটা সমাজেই বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
৩. মূর্খ লোকেরা শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ করতে শুরু করে। তখন সমাজের আলেমগণ সে ব্যাপারে নীরব হয়ে থাকেন। তারা এ কাজের কোনো প্রতিবাদ করেন না। এর ফলে সাধারণ লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, নিশ্চয় এ কাজ জায়েয হবে। নতুবা আলেম সাহেবরা তো এর প্রতিবাদ করতেন। এভাবে সমাজে বিদআত বা নাজায়েয কাজ শরীয়তসম্মত কাজরূপে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
৪. মানুষ স্বভাবতই চিরন্তন সুখ- জান্নাত লাভ করার আকাঙ্ক্ষী। এ কারণে সে বেশি বেশি নেক কাজ করতে উৎসাহী হয়ে থাকে। সহজসাধ্য সওয়াবের কাজ করার জন্য লালায়িত হয় খুব বেশি। কিন্তু এ কাজগুলো বাস্তবিকই সওয়াবের কাজ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো যোগ্যতা তাদের যেমন থাকে না, তেমনি সেটা জানার জন্যও তারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। এভাবে সমাজে বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
১. বিদআতী তা নিজের থেকে উদ্ভাবন করে সমাজে চালিয়ে দেয়। পরে তা সাধারণভাবে সমাজে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
২. কোনো আলেম হয়তো শরীয়ত বিরোধী একটা কাজ করেছেন; কিন্তু তা দেখে জাহেল লোকেরা মনে করতে শুরু করে যে, এ কাজ শরীয়তসম্মত না হয়ে পারে না। এভাবে এক ব্যক্তির কারণে গোটা সমাজেই বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
৩. মূর্খ লোকেরা শরীয়ত বিরোধী কোনো কাজ করতে শুরু করে। তখন সমাজের আলেমগণ সে ব্যাপারে নীরব হয়ে থাকেন। তারা এ কাজের কোনো প্রতিবাদ করেন না। এর ফলে সাধারণ লোকদের মনে ধারণা জন্মে যে, নিশ্চয় এ কাজ জায়েয হবে। নতুবা আলেম সাহেবরা তো এর প্রতিবাদ করতেন। এভাবে সমাজে বিদআত বা নাজায়েয কাজ শরীয়তসম্মত কাজরূপে প্রচলিত হয়ে পড়ে।
৪. মানুষ স্বভাবতই চিরন্তন সুখ- জান্নাত লাভ করার আকাঙ্ক্ষী। এ কারণে সে বেশি বেশি নেক কাজ করতে উৎসাহী হয়ে থাকে। সহজসাধ্য সওয়াবের কাজ করার জন্য লালায়িত হয় খুব বেশি। কিন্তু এ কাজগুলো বাস্তবিকই সওয়াবের কাজ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখার মতো যোগ্যতা তাদের যেমন থাকে না, তেমনি সেটা জানার জন্যও তারা বিশেষ গুরুত্ব দেয় না। এভাবে সমাজে বিদআতের প্রচলন হয়ে পড়ে।
বিদআত সৃষ্টির পেছনে অনেক কারণ বিদ্যমান রয়েছে। যেমন :
১. অজ্ঞতা।
২. প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করা।
৩. সন্দিহান উক্তির উপর নির্ভরতা।
৪. কেবল নিজের জ্ঞানের উপর ভরসা করা।
৫. ইমাম ও বুযুর্গদের অন্ধানুকরণ ও পক্ষপাতিত্ব করা।
৬. বিদআতীর সংসর্গে থাকা।
৭. উলামাদের নীরবতা ও স্বার্থান্বেষিতা।
৮. বিজাতির অনুসরণ।
৯. যঈফ ও জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করা।
১. অজ্ঞতা।
২. প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করা।
৩. সন্দিহান উক্তির উপর নির্ভরতা।
৪. কেবল নিজের জ্ঞানের উপর ভরসা করা।
৫. ইমাম ও বুযুর্গদের অন্ধানুকরণ ও পক্ষপাতিত্ব করা।
৬. বিদআতীর সংসর্গে থাকা।
৭. উলামাদের নীরবতা ও স্বার্থান্বেষিতা।
৮. বিজাতির অনুসরণ।
৯. যঈফ ও জাল হাদীসের উপর ভিত্তি করা।
বিদআতের ফলাফল ও পরিণতি অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিম্নে এর কিছু চিত্র তুলে ধরা হলো :
১. বিদআত হচ্ছে আমলের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন :
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর কোনো কিছু অস্বীকার করাটা হচ্ছে কুফরী। এর বিপরীত ইসলামের মধ্যে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটানোই হচ্ছে বিদআত। আর উভয় প্রকার কর্মের নামই হচ্ছে সীমালঙ্ঘন। এই সীমালঙ্ঘনের কারণেই আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আদ, সামুদ, নমরুদ, ফিরাউন- এরা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী জাতিসমূহেরই অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
﴿اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা ৫:৮৭)
২. বিদআত মানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে খিয়ানতের অভিযোগ :
কোনো ব্যক্তি বিদআত চালু করার মাধ্যমে অথবা বিদআতী আমল করার মাধ্যমে এটিই প্রমাণ করল যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর আমানত হিসেবে যে ইসলামকে দিয়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তা যথাযথভাবে উম্মতের নিকট পৌঁছে দেননি; বরং তিনি খিয়ানত করেছেন। এ জন্যই বিদআত চালু করতে হলো- (নাউযুবিল্লাহ)।
৩. বিদআত শয়তানের একটি বড় অস্ত্র :
শয়তান মানুষকে অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত করার তুলনায় খুব সহজেই বিদআতে লিপ্ত করে দেয়। কেননা বিদআতী কর্মসমূহ সাধারণ মুসলিমদের কাছে স্পষ্ট নয়, এমনকি তারা বিদআত সম্পর্কে তেমন সতর্কও নয়। ফলে দেখা যায় যে, বিদআতী আমলসমূহ এত বেশি উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়, যা কোনো ফরয ইবাদাতের ক্ষেত্রেও করা হয় না।
৪. বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে দেয় :
বিদআতকারী সহজেই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন, সেগুলোই হক্ব। এর বাহিরে যা কিছু আছে, সবই ভ্রান্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُ﴾
সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? (সূরা ইউনুস ১০:৩২)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - إِذَا خَطَبَ ... يَقُوْلُ : أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرُ الْهُدٰى هُدٰى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খুতবা দিতেন তখন বলতেন, নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব; সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মদ ﷺ এর হেদায়াত। আর সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয় বিদআত এবং এরূপ প্রতিটি বিদআত-ই পথভ্রষ্টতা। [সহীহ মুসলিম হা/২০৪২; সুনানে নাসায়ী হা/১৫৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪৫।]
৫. বিদআত সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করে :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন ফিতনা তোমাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেবে? যখন ফিতনা বা বিদআত অপসারিত করা হবে তখন লোকেরা বলবে, সুন্নাত অপসারিত হল। একজন জিজ্ঞেস করল, হে আবু আবদুর রহমান! এরূপ কখন হবে? তিনি বললেন, যখন তোমাদের ক্বারীর সংখ্যা অধিক হবে এবং ফকীহ (অভিজ্ঞ আলেমের) সংখ্যা কম হবে, তোমাদের নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে ও আখিরাতের কর্ম দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ অন্বেষণ করা হবে। [দারেমী ১/৬৪।]
৬. বিদআত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করে :
যেহেতু বিদআত সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম ও নেকীর কর্ম হিসেবেই মনে হয়। ফলে সাধারণ মানুষ প্রাথমিকভাবে এটিকে বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না। অতঃপর যখন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে এবং তিনি এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করতে চান, তখন কিছু লোক তার পক্ষাবলম্বন করে এবং কিছু লোক তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে। এভাবে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যায়।
৭. বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে দেয় :
ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর মধ্যে কোনোরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের সুযোগ নেই। কিন্তু বিদআতের অনুপ্রবেশ দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা বিকৃতি ঘটায়। অতঃপর দ্বীনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, ইসলামের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করা-ই কঠিন হয়ে পড়ে। যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতি ইয়াহুদি ও নাসারাগণ। তারা আল্লাহর বিধান পাওয়ার পরও দ্বীনকে বিকৃত করে ফেলেছিল।
৮. বিদআত সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায় :
যেখানে ভালো উপস্থিত থাকে না, সেখানে মন্দ এমনিতেই জায়গা করে নেয়। এজন্যই হাস্সান (রাঃ) বলেছিলেন,
قَالَ مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِى دِيْنِهِمْ إِلَّا نَزَعَ اللهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لَا يُعِيْدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
যখন কোনো জাতি তাদের দ্বীনের মধ্যে বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটায় তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পরিমাণ সুন্নাত তাদের থেকে তুলে নেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো তাদের নিকট ফিরে আসে না। [সুনানে দারেমী হা/৯৯; মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১৮৮।]
অনুরূপভাবে ইবনে সিরীন (রহ.) বলেন,
مَا اَخَذَ رَجُلٌ بِبِدْعَةٍ فَرَاجَعَ سُنَّةً
কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ বিদআত করে সেই পরিমাণ সুন্নাত তার থেকে বিলীন হয়ে যায়। [সুনানে দারেমী হা/২১৪।]
এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ফরয সালাতের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত হলো বিভিন্ন মাসনূন দু‘আ পৃথক পৃথকভাবে পাঠ করা। এখন যদি সালাতের পর ইমাম সাহেব হাত তুলে দু‘আ করেন এবং সকলে তার সাথে দু‘আয় শরীক হন, তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপরোক্ত সুন্নাতটির বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৯. বিদআতের কারণে আমল বিনষ্ট হয়ে যায় :
বিদআত মানুষের জন্য এতটাই মারাত্মক যে, এর কারণে ব্যক্তির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ مَا عِنْدَنَا شَيْءٌ إِلَّا كِتَابُ اللّٰهِ وَهٰذِهِ الصَّحِيْفَةُ عَنِ النَّبِيِّ الْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَائِرٍ إِلٰى كَذَا مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا أَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ও নাবী ﷺ এর পক্ষ থেকে এ সহীফা (পুস্তিকা) ছাড়া আর কিছুই নেই। এতে বর্ণিত আছে, মদীনার ‘আয়ির’ নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত হারাম বা সম্মানিত। এখানে যদি কেউ (কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী) নতুন কিছু (বিদআত) করে কিংবা বিদআত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় তবে তার প্রতি আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ বর্ষিত হবে। তার কোনো ফরয বা নফল ইবাদাত (আল্লাহর কাছে) কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী হা/১৮৭০, সহীহ মুসলিম হা/১৩৭০।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا﴾
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
অত্র আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন,
وَاِنَّمَا هِيَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ مَنْ عَبَدَ اللهَ عَلٰى غَيْرِ طَرِيْقَةٍ مَّرْضِيَّةٍ يَّحْسَبُ اَنَّه مُصِيْبٌ فِيْهَا، وَاِنَّ عَمَلُه مَقْبُوْلٌ، وَهُوَ مُخْطِئٌ، وَعَمَلُه مَرْدُوْدٌ
এ আয়াত সাধারণভাবে এমন সব লোকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থার বিপরীত পন্থায়। তারা যদিও মনে করছে যে, তারা ঠিক কাজই করছে এবং আশা করছে যে, তাদের আমল আল্লাহর নিকট স্বীকৃত ও গৃহীত হবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ভুল নীতির অনুসারী এবং তাদের আমল আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
১০. বিদআতী আমলকারীর পক্ষে তওবা করার সুযোগ হয় না :
যে কোনো পাপের ক্ষেত্রেই পাপী এটা জানে যে, সে যা করতে যাচ্ছে তা একটি অপরাধ। এর জন্য নিশ্চিত শাস্তির বিধান রয়েছে। পাপীর মধ্যে যখন এরূপ কোনো অনুভূতি জাগবে, ঠিক তখনই সে অনুতপ্ত হয়ে সৎপথে ফিরে আসার জন্য তওবার দিকে ধাবিত হবে। কিন্তু বিদআত হচ্ছে এমন একটি আমল, যা পালন করলে আমলকারীর মনে এ ধারণা কখনো জাগ্রত হয় না যে, সে যেটা করতে যাচ্ছে সেটি একটি অপরাধ। বরং সে উক্ত আমলটিকে অধিক সওয়াবের কাজ হিসেবেই মনে করে থাকে। অতঃপর তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও সে সেটিকে গুরুত্ব দেয় না। বরং এর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়ে যায়, দায়ীকে হেয় প্রতিপন্ন করে। আর এ অবস্থাতেই সে মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং তার পক্ষে তওবা করার কোনো সুযোগ হয়ে উঠে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ إنّ اللّٰهَ احْتَجَرَ التَّوْبَةَ عَلٰى كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদআতী হতে তওবা সরিয়ে নিয়েছেন। [সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬২০; জামেউল আহাদীস হা/৬৬১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৪৫৬; ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ হা/৩৯৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪২০২।]
১১. বিদআতীর উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অভিশাপ বর্ষিত হয় :
বিদআতীদের উপর স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ও সমগ্র ফেরেশতাও অভিশাপ বর্ষণ করেন। আর কিয়ামতের দিন সমগ্র মানবজাতিও তাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কোনো ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী হা/১৮৬৭, সহীহ মুসলিম হা/৩৩৮৯।]
১২. বিদআতীরা হাউজে কাউসারের পানি পান করা থেকে বঞ্চিত হবে :
কিয়ামতের দিন যখন সমস্ত মানুষ চরম পিপাসায় কাতরাতে থাকবে, তখন একমাত্র হাউজে কাউসারই হবে পিপাসা মিটানোর একমাত্র মাধ্যম। কেবল উম্মতে মুহাম্মাদীকেই এ পানি পান করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু বিদআতীদেরকে তা হতে তাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে; আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি (উম্মত হিসেবে) চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছ। [সহীহ বুখারী হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৫৮৮।]
১৩. বিদআতীদেরকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে :
কোনো বিদআতী আমলের উপর আমল করার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করা। আর তাদের বিরোধিতা করাই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا﴾
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা ৪:১১৫)
পরিশেষে বলা যায় যে, বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত মানুষের এমন ক্ষতি সাধন করে, যার শেষ পরিণতি হিসেবে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ গুনাহ থেকে সর্বদা সুরক্ষিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন
১. বিদআত হচ্ছে আমলের ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন :
ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর কোনো কিছু অস্বীকার করাটা হচ্ছে কুফরী। এর বিপরীত ইসলামের মধ্যে নতুন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটানোই হচ্ছে বিদআত। আর উভয় প্রকার কর্মের নামই হচ্ছে সীমালঙ্ঘন। এই সীমালঙ্ঘনের কারণেই আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী অনেক জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। আদ, সামুদ, নমরুদ, ফিরাউন- এরা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী জাতিসমূহেরই অন্তর্ভুক্ত।
কুরআন মাজীদে এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে।
﴿اِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِيْنَ﴾
নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সূরা মায়েদা ৫:৮৭)
২. বিদআত মানে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর বিরুদ্ধে খিয়ানতের অভিযোগ :
কোনো ব্যক্তি বিদআত চালু করার মাধ্যমে অথবা বিদআতী আমল করার মাধ্যমে এটিই প্রমাণ করল যে, আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলের উপর আমানত হিসেবে যে ইসলামকে দিয়েছিলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তা যথাযথভাবে উম্মতের নিকট পৌঁছে দেননি; বরং তিনি খিয়ানত করেছেন। এ জন্যই বিদআত চালু করতে হলো- (নাউযুবিল্লাহ)।
৩. বিদআত শয়তানের একটি বড় অস্ত্র :
শয়তান মানুষকে অন্যান্য নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত করার তুলনায় খুব সহজেই বিদআতে লিপ্ত করে দেয়। কেননা বিদআতী কর্মসমূহ সাধারণ মুসলিমদের কাছে স্পষ্ট নয়, এমনকি তারা বিদআত সম্পর্কে তেমন সতর্কও নয়। ফলে দেখা যায় যে, বিদআতী আমলসমূহ এত বেশি উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করা হয়, যা কোনো ফরয ইবাদাতের ক্ষেত্রেও করা হয় না।
৪. বিদআত মানুষকে পথভ্রষ্ট করে দেয় :
বিদআতকারী সহজেই পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন, সেগুলোই হক্ব। এর বাহিরে যা কিছু আছে, সবই ভ্রান্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ اِلَّا الضَّلَالُ﴾
সত্য ত্যাগ করার পর বিভ্রান্তি ব্যতীত আর কী বাকি থাকে? (সূরা ইউনুস ১০:৩২)
হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - - إِذَا خَطَبَ ... يَقُوْلُ : أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرُ الْهُدٰى هُدٰى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন খুতবা দিতেন তখন বলতেন, নিশ্চয় সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাব; সর্বোত্তম হেদায়াত হলো মুহাম্মদ ﷺ এর হেদায়াত। আর সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হলো মনগড়া নব প্রবর্তিত বিষয় বিদআত এবং এরূপ প্রতিটি বিদআত-ই পথভ্রষ্টতা। [সহীহ মুসলিম হা/২০৪২; সুনানে নাসায়ী হা/১৫৭৭; সুনানে ইবনে মাজাহ হা/৪৫।]
৫. বিদআত সমাজে ফিতনা সৃষ্টি করে :
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, তোমাদের তখন কী অবস্থা হবে, যখন ফিতনা তোমাদেরকে আচ্ছাদিত করে নেবে? যখন ফিতনা বা বিদআত অপসারিত করা হবে তখন লোকেরা বলবে, সুন্নাত অপসারিত হল। একজন জিজ্ঞেস করল, হে আবু আবদুর রহমান! এরূপ কখন হবে? তিনি বললেন, যখন তোমাদের ক্বারীর সংখ্যা অধিক হবে এবং ফকীহ (অভিজ্ঞ আলেমের) সংখ্যা কম হবে, তোমাদের নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং আমানতদারের সংখ্যা কমে যাবে ও আখিরাতের কর্ম দ্বারা দুনিয়ার সম্পদ অন্বেষণ করা হবে। [দারেমী ১/৬৪।]
৬. বিদআত মুসলিম উম্মাহর ঐক্য বিনষ্ট করে :
যেহেতু বিদআত সাধারণ দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম ও নেকীর কর্ম হিসেবেই মনে হয়। ফলে সাধারণ মানুষ প্রাথমিকভাবে এটিকে বিদআত হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে না। অতঃপর যখন কোনো জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে এবং তিনি এ ব্যাপারে জাতিকে সতর্ক করতে চান, তখন কিছু লোক তার পক্ষাবলম্বন করে এবং কিছু লোক তার বিরুদ্ধাচরণ শুরু করে। এভাবে মুসলিম উম্মাহ বিভক্ত হয়ে যায়।
৭. বিদআত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে দেয় :
ইসলাম হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এর মধ্যে কোনোরূপ পরিবর্তন বা পরিবর্ধনের সুযোগ নেই। কিন্তু বিদআতের অনুপ্রবেশ দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন-পরিবর্ধন বা বিকৃতি ঘটায়। অতঃপর দ্বীনকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যায় যে, ইসলামের প্রকৃত অবস্থা নির্ণয় করা-ই কঠিন হয়ে পড়ে। যেমনটি করেছিল পূর্ববর্তী পথভ্রষ্ট জাতি ইয়াহুদি ও নাসারাগণ। তারা আল্লাহর বিধান পাওয়ার পরও দ্বীনকে বিকৃত করে ফেলেছিল।
৮. বিদআত সুন্নাতের বিলুপ্তি ঘটায় :
যেখানে ভালো উপস্থিত থাকে না, সেখানে মন্দ এমনিতেই জায়গা করে নেয়। এজন্যই হাস্সান (রাঃ) বলেছিলেন,
قَالَ مَا ابْتَدَعَ قَوْمٌ بِدْعَةً فِى دِيْنِهِمْ إِلَّا نَزَعَ اللهُ مِنْ سُنَّتِهِمْ مِثْلَهَا ثُمَّ لَا يُعِيْدُهَا إِلَيْهِمْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
যখন কোনো জাতি তাদের দ্বীনের মধ্যে বিদআতের অনুপ্রবেশ ঘটায় তখন আল্লাহ তা‘আলা ঐ পরিমাণ সুন্নাত তাদের থেকে তুলে নেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত আর কখনো তাদের নিকট ফিরে আসে না। [সুনানে দারেমী হা/৯৯; মিশকাতুল মাসাবীহ হা/১৮৮।]
অনুরূপভাবে ইবনে সিরীন (রহ.) বলেন,
مَا اَخَذَ رَجُلٌ بِبِدْعَةٍ فَرَاجَعَ سُنَّةً
কোনো ব্যক্তি যে পরিমাণ বিদআত করে সেই পরিমাণ সুন্নাত তার থেকে বিলীন হয়ে যায়। [সুনানে দারেমী হা/২১৪।]
এর উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ফরয সালাতের পর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাত হলো বিভিন্ন মাসনূন দু‘আ পৃথক পৃথকভাবে পাঠ করা। এখন যদি সালাতের পর ইমাম সাহেব হাত তুলে দু‘আ করেন এবং সকলে তার সাথে দু‘আয় শরীক হন, তাহলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপরোক্ত সুন্নাতটির বিলুপ্ত হয়ে যায়।
৯. বিদআতের কারণে আমল বিনষ্ট হয়ে যায় :
বিদআত মানুষের জন্য এতটাই মারাত্মক যে, এর কারণে ব্যক্তির সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যাবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ مَا عِنْدَنَا شَيْءٌ إِلَّا كِتَابُ اللّٰهِ وَهٰذِهِ الصَّحِيْفَةُ عَنِ النَّبِيِّ الْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَائِرٍ إِلٰى كَذَا مَنْ أَحْدَثَ فِيْهَا حَدَثًا أَوْ اٰوٰى مُحْدِثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللّٰهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِيْنَ لَا يُقْبَلُ مِنْهُ صَرْفٌ وَلَا عَدْلٌ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আমাদের কাছে আল্লাহর কিতাব ও নাবী ﷺ এর পক্ষ থেকে এ সহীফা (পুস্তিকা) ছাড়া আর কিছুই নেই। এতে বর্ণিত আছে, মদীনার ‘আয়ির’ নামক স্থান থেকে অমুক স্থান পর্যন্ত হারাম বা সম্মানিত। এখানে যদি কেউ (কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী) নতুন কিছু (বিদআত) করে কিংবা বিদআত সৃষ্টিকারীকে আশ্রয় দেয় তবে তার প্রতি আল্লাহ, সকল ফেরেশতা ও মানবকুলের অভিশাপ বর্ষিত হবে। তার কোনো ফরয বা নফল ইবাদাত (আল্লাহর কাছে) কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী হা/১৮৭০, সহীহ মুসলিম হা/১৩৭০।]
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿قُلْ هَلْ نُنَبِّئُكُمْ بِالْاَخْسَرِيْنَ اَعْمَالًا – اَلَّذِيْنَ ضَلَّ سَعْيُهُمْ فِى الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ يَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ يُحْسِنُوْنَ صُنْعًا﴾
তাদেরকে বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে আমলের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সম্পর্কে সংবাদ দেব? তারা তো ঐসব লোক, পার্থিব জীবনে যাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেছে; অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্মই করছে। (সূরা কাহফ- ১০৩, ১০৪)
অত্র আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাসীর (রহ.) লিখেছেন,
وَاِنَّمَا هِيَ عَامَّةٌ فِيْ كُلِّ مَنْ عَبَدَ اللهَ عَلٰى غَيْرِ طَرِيْقَةٍ مَّرْضِيَّةٍ يَّحْسَبُ اَنَّه مُصِيْبٌ فِيْهَا، وَاِنَّ عَمَلُه مَقْبُوْلٌ، وَهُوَ مُخْطِئٌ، وَعَمَلُه مَرْدُوْدٌ
এ আয়াত সাধারণভাবে এমন সব লোকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর ইবাদাত করে আল্লাহর পছন্দনীয় পন্থার বিপরীত পন্থায়। তারা যদিও মনে করছে যে, তারা ঠিক কাজই করছে এবং আশা করছে যে, তাদের আমল আল্লাহর নিকট স্বীকৃত ও গৃহীত হবে। অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ভুল নীতির অনুসারী এবং তাদের আমল আল্লাহর নিকট প্রত্যাখ্যাত। [তাফসীরে ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য।]
১০. বিদআতী আমলকারীর পক্ষে তওবা করার সুযোগ হয় না :
যে কোনো পাপের ক্ষেত্রেই পাপী এটা জানে যে, সে যা করতে যাচ্ছে তা একটি অপরাধ। এর জন্য নিশ্চিত শাস্তির বিধান রয়েছে। পাপীর মধ্যে যখন এরূপ কোনো অনুভূতি জাগবে, ঠিক তখনই সে অনুতপ্ত হয়ে সৎপথে ফিরে আসার জন্য তওবার দিকে ধাবিত হবে। কিন্তু বিদআত হচ্ছে এমন একটি আমল, যা পালন করলে আমলকারীর মনে এ ধারণা কখনো জাগ্রত হয় না যে, সে যেটা করতে যাচ্ছে সেটি একটি অপরাধ। বরং সে উক্ত আমলটিকে অধিক সওয়াবের কাজ হিসেবেই মনে করে থাকে। অতঃপর তাকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা হলেও সে সেটিকে গুরুত্ব দেয় না। বরং এর বিরোধিতায় লিপ্ত হয়ে যায়, দায়ীকে হেয় প্রতিপন্ন করে। আর এ অবস্থাতেই সে মৃত্যুবরণ করে। সুতরাং তার পক্ষে তওবা করার কোনো সুযোগ হয়ে উঠে না। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ ا للهِ إنّ اللّٰهَ احْتَجَرَ التَّوْبَةَ عَلٰى كُلِّ صَاحِبِ بِدْعَةٍ
আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বিদআতী হতে তওবা সরিয়ে নিয়েছেন। [সিলসিলা সহীহাহ হা/১৬২০; জামেউল আহাদীস হা/৬৬১৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯৪৫৬; ইসহাক ইবনে রাহওয়াইহ হা/৩৯৮; মু‘জামুল আওসাত, হা/৪২০২।]
১১. বিদআতীর উপর আল্লাহ ও ফেরেশতাদের অভিশাপ বর্ষিত হয় :
বিদআতীদের উপর স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা ও সমগ্র ফেরেশতাও অভিশাপ বর্ষণ করেন। আর কিয়ামতের দিন সমগ্র মানবজাতিও তাদের উপর অভিশাপ বর্ষণ করবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَنَسٍ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : مَنْ اَحْدَثَ فِيهَا حَدَثًا فَعَلَيْهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالنَّاسِ اَجْمَعِيْنَ لَا يَقْبَلُ اللهُ مِنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَرْفًا وَلَا عَدْلًا
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে তার উপর আল্লাহ, তাঁর ফেরেশতা এবং সমগ্র মানবকুলের অভিশাপ পড়বে। কিয়ামতের দিন তার কোনো ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। [সহীহুল বুখারী হা/১৮৬৭, সহীহ মুসলিম হা/৩৩৮৯।]
১২. বিদআতীরা হাউজে কাউসারের পানি পান করা থেকে বঞ্চিত হবে :
কিয়ামতের দিন যখন সমস্ত মানুষ চরম পিপাসায় কাতরাতে থাকবে, তখন একমাত্র হাউজে কাউসারই হবে পিপাসা মিটানোর একমাত্র মাধ্যম। কেবল উম্মতে মুহাম্মাদীকেই এ পানি পান করার সুযোগ দেয়া হবে। কিন্তু বিদআতীদেরকে তা হতে তাড়িয়ে দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَهْلَ بْنَ سَعْد ، يَقُوْلُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُوْلُ : اَنَا فَرَطُكُمْ، عَلَى الْحَوْضِ، مَنْ وَرَدَهٗ شَرِبَ مِنْهُ، وَمَنْ شَرِبَ مِنْهُ لَمْ يَظْمَأْ بَعْدَهٗ اَبَدًا، لَيَرِدُ عَلَىَّ اَقْوَامٌ اَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُوْنِيْ، ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِيْ وَبَيْنَهُمْ . قَالَ اَبُوْ حَازِمٍ فَسَمِعَنِي النُّعْمَانُ بْنُ اَبِيْ عَيَّاشٍ، وَاَنَا اُحَدِّثُهُمْ، هٰذَا فَقَالَ هٰكَذَا سَمِعْتَ سَهْلًا، فَقُلْتُ نَعَمْ . قَالَ وَاَنَا اَشْهَدُ، عَلٰى اَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ لَسَمِعْتُهٗ يَزِيْدُ فِيْهِ قَالَ : اِنَّهُمْ مِنِّيْ . فَيُقَالُ اِنَّكَ لَا تَدْرِيْ مَا بَدَّلُوْا بَعْدَكَ فَاَقُوْلُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ بَدَّلَ بَعْدِيْ
সাহল ইবনে সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি, আমি হাউজে কাউসারে তোমাদের অগ্রগামী প্রতিনিধি হব। যে ব্যক্তি সেখানে উপস্থিত হবে সে তা হতে পানি পান করবে; আর যে পান করবে সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এমন সব লোকদেরকে আমার নিকট উপস্থিত করা হবে, যাদেরকে আমি (উম্মত হিসেবে) চিনতে পারব, আর তারাও আমাকে চিনতে পারবে। তারপর আমার এবং তাদের মাঝে পর্দা পড়ে যাবে। আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) অতিরিক্ত শব্দে বর্ণনা করেন, তখন নবী ﷺ বলবেন, তারা তো আমার (উম্মত)। বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার পর তারা (দ্বীনের বিষয়ে) কী কী পরিবর্তন করেছে। তখন আমি বলব, দূর হও দূর হও! যারা আমার পরে (দ্বীনের মধ্যে) পরিবর্তন এনেছ। [সহীহ বুখারী হা/৭০৫১; সহীহ মুসলিম হা/৬১০৮-৯; মুসনাদে আহমাদ হা/২৬৫৮৮।]
১৩. বিদআতীদেরকে কিয়ামতের দিন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে :
কোনো বিদআতী আমলের উপর আমল করার অর্থ হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করা। আর তাদের বিরোধিতা করাই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়ার একটি বড় কারণ। কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿وَمَنْ يُّشَاقِقِ الرَّسُوْلَ مِنْ ۢبَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدٰى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيْلِ الْمُؤْمِنِيْنَ نُوَلِّه مَا تَوَلّٰى وَنُصْلِه جَهَنَّمَؕ وَسَآءَتْ مَصِيْرًا﴾
কারো নিকট সৎপথ প্রকাশিত হওয়ার পর সে যদি রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে এবং মুমিনদের পথ ব্যতীত অন্য পথ অনুসরণ করে, তবে যেদিকে সে ফিরে যায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেব; অবশেষে তাকে জাহান্নামে দগ্ধ করব। আর তা কতই না মন্দ আবাস! (সূরা নিসা ৪:১১৫)
পরিশেষে বলা যায় যে, বিদআতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদআত মানুষের এমন ক্ষতি সাধন করে, যার শেষ পরিণতি হিসেবে জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এ গুনাহ থেকে সর্বদা সুরক্ষিত থাকার তাওফিক দান করুন। আমীন
সাহাবায়ে কেরাম থেকে নিয়ে পরবর্তী হকপন্থী আলেমগণ সবসময় বিদআতের বিরোধিতা করেছেন। নিচের ঘটনাসমূহ থেকে এর প্রমাণ পাওয়া যায় :
১. আমর ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের সালাতের পূর্বে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর দরজায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে হেঁটে বের হলেন। এমন সময় আবু মুসা আশআরী (রাঃ)ও আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান কি তোমাদের নিকট এসেছে? আমরা বললাম, না- আসেনি। অতঃপর তিনি আবু আবদুর রহমান না আসা পর্যন্ত আমাদের সাথে বসলেন। পরে যখন তিনি আসলেন তখন আমরা সকলে তার দিকে অগ্রসর হলাম। অতঃপর আবু মুসা (রাঃ) বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি এখনি মসজিদের মধ্যে এমন কিছু দেখতে পেলাম, যা আমি পছন্দ করিনি এবং ইতঃপূর্বে আমি তা কখনো দেখিনি। তবে আমি এর মধ্যে ভালো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটা কী? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, তুমি বেঁচে থাকলে দেখতে পাবে। এরপর বললেন, আমি মসজিদে দেখলাম যে, কিছু লোক একসাথে বসে আছে। তারা সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে আর তাদের প্রত্যেকের হাতে পাথরকণা রয়েছে এবং প্রত্যেক হালকাতে একজন লোক রয়েছে যে বলছে, তোমরা একশ’ বার সুবহানাল্লাহ, একশ’ বার আল্লাহু আকবার এবং একশ’ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ পড়ো। তাই তারা এ পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করছিল।
এটা শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাদেরকে কী বলেছ? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আপনার মতামত জানার আগে আমি কিছুই বলিনি। তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে এটা বলতে পারলে না যে, তারা যেন তাদের পাপসমূহ গণনা করে? আর তাদের নেক আমলসমূহ নষ্ট না হওয়ার জন্য তুমি জামিন হতে পারলে না? এরপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাদের সামনে আসলেন এবং আমরাও তার সাথে গেলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে এটা কী দেখতে পেলাম। তারা বলল,
يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ حَصًى نَعُدُّ بِهٖ التَّكْبِيْرَ وَالتَّهْلِيْلَ وَالتَّسْبِيْحَ
‘‘হে আবু আবদুর রহমান! এগুলো হলো পাথরকণা, যা দ্বারা আমরা তাসবীহ গণনা করি।’’ তারপর তিনি বললেন,
فَعُدُّوْا سَيِّئَاتِكُمْ فَاَنَا ضَامِنٌ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِكُمْ شَيْءٌ وَيْحَكُمْ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا اَسْرَعَ هَلَكَتَكُمْ هٰؤُلَاءِ صَحَابَةُ نَبِيِّكُمْ مُتَوَافِرُوْنَ وَهٰذِهٖ ثِيَابُهٗ لَمْ تَبْلَ وَاٰنِيَتُهٗ لَمْ تُكْسَرْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّكُمْ لَعَلٰى مِلَّةٍ هِيَ اَهْدٰى مِنْ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ اَوْ مُفْتَتِحُوْا بَابِ ضَلَالَةٍ قَالُوْا وَاللهِ يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ مَا اَرَدْنَا اِلَّا الْخَيْرَ قَالَ وَكَمْ مِنْ مُرِيْدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيْبَهٗ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَدَّثَنَا اَنَّ قَوْمًا يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ , وَايْمُ اللهِ مَا اَدْرِيْ لَعَلَّ اَكْثَرَهُمْ مِنْكُمْ ، ثُمَّ تَوَلّٰى عَنْهُمْ
তাহলে তোমরা তোমাদের পাপসমূহ গণনা করো। আমি জামিন হচ্ছি যে, তোমাদের কোনো নেক আমল নষ্ট হবে না। শোনো হে মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত! তোমরা এত দ্রুত কীভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। অথচ নবীর সাহাবীরা এখনো জীবিত, তাঁর পোষাকগুলো এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, তাঁর বাসনগুলো এখনো ভেঙ্গে যায়নি। আল্লাহর কসম! তোমরা মুহাম্মাদের আদর্শের চেয়ে উত্তম কোনো আদর্শ পেয়ে গেছো? নাকি তোমরা কোনো গোমরাহীর দরজা খুলে দিচ্ছ? তখন তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা তো এর দ্বারা ভালো ছাড়া অন্য কিছু চাইনি। তিনি বললেন, শোনো! অনেক কল্যাণকামী আছে কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা করে কিন্তু সে মূলত কল্যাণ পায় না। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় এমন একটি সম্প্রদায় আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছবে না। আল্লাহর কসম! আমি জানি না যে, তাদের মধ্যে তোমাদের সংখ্যা বেশি হয় কি না? এরপর তিনি তাদের থেকে সরে গেলেন। [মুসনাদে দারেমী হা/২১০।]
২. ক্বাইস ইবনু আবী হাযিম (রাঃ) বলেন, একদা হজ্জ উপলক্ষে আহমাস কবিলার যাইনাব নামক এক নারীর সাথে আবু বকর (রাঃ)-এর দেখা হলে তিনি দেখলেন, সে কথা বলছে না। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, তার কী হয়েছে, সে কথা বলছে না কেন? লোকেরা বলল, সে হজ্জ অবস্থায় কথা বলবে না বলে মানত করেছে । তখন আবু বকর (রাঃ) তাকে বললেন,
تَكَلَّمِي فَإِنَّ هَذَا لَا يَحِلُّ هَذَا مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ فَتَكَلَّمَتْ
তুমি নির্বাক না থেকে বরং কথা বলতে থাক। কারণ এরূপ চুপ থাকা বৈধ নয়। এটা জাহেলী যুগের নিয়ম। অতঃপর উক্ত নারী কথা বলা শুরু করলেন। [সহীহ বুখারী হা/৩৮৩৪; বায়হাকী হা/২০৫৯০; কানযুল ঊম্মাল হা/১৪০৪৭; জামেউল আহাদীস হা/২৭৫৮৯।]
৩. ইমাম মালেকের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ! কোত্থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, যুলহুলাইফা থেকে; যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বেঁধেছিলেন। লোকটি বলল, আমি মসজিদে নববী থেকে ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করছি। তিনি বললেন, এমনটি করো না। লোকটি বলল, আমি ইচ্ছা করছি যে, নবীর কবরের নিকট থেকে ইহরাম বাঁধব। তিনি বললেন, এমনটি কারো না- কারণ আমি তোমার উপর ফিতনার ভয় করি। লোকটি বলল, এটা আবার কোন্ ফিতনা? এতে কয়েকটা মাইল মাত্র বেশি করব! তিনি বললেন, কোনো ফিতনা এর চেয়ে অধিক বড় যে, তুমি মনে করছ এমন ফযীলতের প্রতি অগ্রগামী হয়েছ যা হতে রাসূলুল্লাহ ﷺ পিছে থেকে গেছেন? আমি শুনেছি আল্লাহ বলেছেন যে,
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِه ۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় (ফিতনা) অথবা কঠিন শাস্তি (আযাব) তাদেরকে গ্রাস করবে। (সূরা নূর- ৬৩)
১. আমর ইবনে ইয়াহইয়া (রহ.) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের সালাতের পূর্বে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর দরজায় বসা ছিলাম। অতঃপর তিনি মসজিদের দিকে হেঁটে বের হলেন। এমন সময় আবু মুসা আশআরী (রাঃ)ও আমাদের কাছে আসলেন এবং বললেন, আবু আবদুর রহমান কি তোমাদের নিকট এসেছে? আমরা বললাম, না- আসেনি। অতঃপর তিনি আবু আবদুর রহমান না আসা পর্যন্ত আমাদের সাথে বসলেন। পরে যখন তিনি আসলেন তখন আমরা সকলে তার দিকে অগ্রসর হলাম। অতঃপর আবু মুসা (রাঃ) বললেন, হে আবু আবদুর রহমান! আমি এখনি মসজিদের মধ্যে এমন কিছু দেখতে পেলাম, যা আমি পছন্দ করিনি এবং ইতঃপূর্বে আমি তা কখনো দেখিনি। তবে আমি এর মধ্যে ভালো ছাড়া আর কিছু দেখতে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, সেটা কী? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, তুমি বেঁচে থাকলে দেখতে পাবে। এরপর বললেন, আমি মসজিদে দেখলাম যে, কিছু লোক একসাথে বসে আছে। তারা সালাতের জন্য অপেক্ষা করছে আর তাদের প্রত্যেকের হাতে পাথরকণা রয়েছে এবং প্রত্যেক হালকাতে একজন লোক রয়েছে যে বলছে, তোমরা একশ’ বার সুবহানাল্লাহ, একশ’ বার আল্লাহু আকবার এবং একশ’ বার লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহ পড়ো। তাই তারা এ পাথর দ্বারা তাসবীহ পাঠ করছিল।
এটা শুনে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাদেরকে কী বলেছ? আবু মুসা (রাঃ) বললেন, আপনার মতামত জানার আগে আমি কিছুই বলিনি। তিনি বললেন, তুমি কি তাদেরকে এটা বলতে পারলে না যে, তারা যেন তাদের পাপসমূহ গণনা করে? আর তাদের নেক আমলসমূহ নষ্ট না হওয়ার জন্য তুমি জামিন হতে পারলে না? এরপর আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাদের সামনে আসলেন এবং আমরাও তার সাথে গেলাম। তিনি বললেন, আমি তোমাদের মধ্যে এটা কী দেখতে পেলাম। তারা বলল,
يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ حَصًى نَعُدُّ بِهٖ التَّكْبِيْرَ وَالتَّهْلِيْلَ وَالتَّسْبِيْحَ
‘‘হে আবু আবদুর রহমান! এগুলো হলো পাথরকণা, যা দ্বারা আমরা তাসবীহ গণনা করি।’’ তারপর তিনি বললেন,
فَعُدُّوْا سَيِّئَاتِكُمْ فَاَنَا ضَامِنٌ اَنْ لَا يَضِيْعَ مِنْ حَسَنَاتِكُمْ شَيْءٌ وَيْحَكُمْ يَا أُمَّةَ مُحَمَّدٍ مَا اَسْرَعَ هَلَكَتَكُمْ هٰؤُلَاءِ صَحَابَةُ نَبِيِّكُمْ مُتَوَافِرُوْنَ وَهٰذِهٖ ثِيَابُهٗ لَمْ تَبْلَ وَاٰنِيَتُهٗ لَمْ تُكْسَرْ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهٖ اِنَّكُمْ لَعَلٰى مِلَّةٍ هِيَ اَهْدٰى مِنْ مِلَّةِ مُحَمَّدٍ اَوْ مُفْتَتِحُوْا بَابِ ضَلَالَةٍ قَالُوْا وَاللهِ يَا اَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ مَا اَرَدْنَا اِلَّا الْخَيْرَ قَالَ وَكَمْ مِنْ مُرِيْدٍ لِلْخَيْرِ لَنْ يُصِيْبَهٗ اِنَّ رَسُوْلَ اللهِ حَدَّثَنَا اَنَّ قَوْمًا يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْاٰنَ لَا يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ , وَايْمُ اللهِ مَا اَدْرِيْ لَعَلَّ اَكْثَرَهُمْ مِنْكُمْ ، ثُمَّ تَوَلّٰى عَنْهُمْ
তাহলে তোমরা তোমাদের পাপসমূহ গণনা করো। আমি জামিন হচ্ছি যে, তোমাদের কোনো নেক আমল নষ্ট হবে না। শোনো হে মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত! তোমরা এত দ্রুত কীভাবে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছ। অথচ নবীর সাহাবীরা এখনো জীবিত, তাঁর পোষাকগুলো এখনো নষ্ট হয়ে যায়নি, তাঁর বাসনগুলো এখনো ভেঙ্গে যায়নি। আল্লাহর কসম! তোমরা মুহাম্মাদের আদর্শের চেয়ে উত্তম কোনো আদর্শ পেয়ে গেছো? নাকি তোমরা কোনো গোমরাহীর দরজা খুলে দিচ্ছ? তখন তারা বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আমরা তো এর দ্বারা ভালো ছাড়া অন্য কিছু চাইনি। তিনি বললেন, শোনো! অনেক কল্যাণকামী আছে কল্যাণের আকাঙ্ক্ষা করে কিন্তু সে মূলত কল্যাণ পায় না। নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যে, নিশ্চয় এমন একটি সম্প্রদায় আসবে, যারা কুরআন পাঠ করবে কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিচে পৌঁছবে না। আল্লাহর কসম! আমি জানি না যে, তাদের মধ্যে তোমাদের সংখ্যা বেশি হয় কি না? এরপর তিনি তাদের থেকে সরে গেলেন। [মুসনাদে দারেমী হা/২১০।]
২. ক্বাইস ইবনু আবী হাযিম (রাঃ) বলেন, একদা হজ্জ উপলক্ষে আহমাস কবিলার যাইনাব নামক এক নারীর সাথে আবু বকর (রাঃ)-এর দেখা হলে তিনি দেখলেন, সে কথা বলছে না। তখন তিনি প্রশ্ন করলেন, তার কী হয়েছে, সে কথা বলছে না কেন? লোকেরা বলল, সে হজ্জ অবস্থায় কথা বলবে না বলে মানত করেছে । তখন আবু বকর (রাঃ) তাকে বললেন,
تَكَلَّمِي فَإِنَّ هَذَا لَا يَحِلُّ هَذَا مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ فَتَكَلَّمَتْ
তুমি নির্বাক না থেকে বরং কথা বলতে থাক। কারণ এরূপ চুপ থাকা বৈধ নয়। এটা জাহেলী যুগের নিয়ম। অতঃপর উক্ত নারী কথা বলা শুরু করলেন। [সহীহ বুখারী হা/৩৮৩৪; বায়হাকী হা/২০৫৯০; কানযুল ঊম্মাল হা/১৪০৪৭; জামেউল আহাদীস হা/২৭৫৮৯।]
৩. ইমাম মালেকের নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আবু আব্দুল্লাহ! কোত্থেকে ইহরাম বাঁধব? তিনি বললেন, যুলহুলাইফা থেকে; যেখান থেকে রাসূলুল্লাহ ﷺ ইহরাম বেঁধেছিলেন। লোকটি বলল, আমি মসজিদে নববী থেকে ইহরাম বাঁধতে ইচ্ছা করছি। তিনি বললেন, এমনটি করো না। লোকটি বলল, আমি ইচ্ছা করছি যে, নবীর কবরের নিকট থেকে ইহরাম বাঁধব। তিনি বললেন, এমনটি কারো না- কারণ আমি তোমার উপর ফিতনার ভয় করি। লোকটি বলল, এটা আবার কোন্ ফিতনা? এতে কয়েকটা মাইল মাত্র বেশি করব! তিনি বললেন, কোনো ফিতনা এর চেয়ে অধিক বড় যে, তুমি মনে করছ এমন ফযীলতের প্রতি অগ্রগামী হয়েছ যা হতে রাসূলুল্লাহ ﷺ পিছে থেকে গেছেন? আমি শুনেছি আল্লাহ বলেছেন যে,
فَلْيَحْذَرِ الَّذِيْنَ يُخَالِفُوْنَ عَنْ اَمْرِه ۤ اَنْ تُصِيْبَهُمْ فِتْنَةٌ اَوْ يُصِيْبَهُمْ عَذَابٌ اَلِيْمٌ
সুতরাং যারা তার আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় (ফিতনা) অথবা কঠিন শাস্তি (আযাব) তাদেরকে গ্রাস করবে। (সূরা নূর- ৬৩)
ইসলামী শরীয়তে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ঘোষিত ঈদ হলো দু’টি- ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। তৃতীয় কোনো ঈদের কথা আল্লাহর রাসূল ﷺ এর পক্ষ হতে বর্ণিত হয়নি এবং ঐ দিন উদযাপন করার কোনো কথাও রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেননি। রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ নির্দিষ্ট করে উক্ত তারিখে প্রচলিত মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করা, জশনে জুলুস করা, ঐ দিনকে নির্দিষ্ট করে ফকির-মিসকীন এবং মানুষ একত্রিত করে খাওয়া-দাওয়া ইত্যাদির ব্যবস্থা করার কোনো রেওয়াজ নবী ﷺ ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে প্রমাণিত নয়।
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নবী ﷺ দীর্ঘ ২৩ বছর জীবিত ছিলেন। তারপর খুলাফায়ে রাশিদীনের সময়কাল ছিল ৩০ বছর। তারপর ১০০ বছর ছিল সাহাবায়ে কেরামের যুগ। আর কম বেশি ২২০ বছর পর্যন্ত ছিল তাবেয়ীগণের যুগ। আর তাদের মধ্যে নবী ﷺ এর পরিপূর্ণ ভালোবাসা ছিল; কিন্তু তাদের সময় মিলাদের কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল না।
মিলাদের সূচনা :
সর্বপ্রথম এ দিনটি উদযাপন করা হয় মিসরের কায়রোতে। ফাতেমী খলীফারা চতুর্থ শতাব্দীতে এর প্রচলন করে। তারা ছয়টি মীলাদ বা জন্ম উৎসব প্রবর্তন করে। আর তা হলো মিলাদুন্নবী, মিলাদে আলী, মিলাদে ফাতেমাতুজ জোহরা, মিলাদে হাসান, মিলাদে হুসাইন এবং তখনকার খলিফার মিলাদ। সপ্তম শতাব্দীতে ইরবিল শহরে সর্বপ্রথম এ মিলাদ আরম্ভ করে বাদশাহ আবু সাঈদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা চলে আসছে এবং তাতে আরো বৃদ্ধি ও সংযোজন ঘটেছে। তারা এতে তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু যোগ করেছে। [আল-ইবাদা ফি মাদাররিল ইবতেদা, পৃ: ২৫১।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, কতক লোক মিলাদুন্নবী আবিষ্কার করে তারা হয়তো নাসারাদের অনুকরণ করেছে। যেমন তারা ঈসা (আঃ) এর জন্মানুষ্ঠান পালন করে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিপূর্ণ মুহাববত ও সম্মানের পরিচয় হচ্ছে, তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তাঁর নির্দেশ পালন করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাঁর সুন্নাত জীবিত করা, তাঁর আনিত দ্বীন প্রচার করা এবং এজন্য অন্তর, হাত ও মুখ দ্বারা জিহাদ করা। কারণ এটাই আমাদের পূর্বসূরি মুহাজির, আনসার ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের নীতি ও আদর্শ ছিল। [ইকতেদাউস সিরাত : পৃ: ২৯৪-২৯৫।]
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর নবী ﷺ দীর্ঘ ২৩ বছর জীবিত ছিলেন। তারপর খুলাফায়ে রাশিদীনের সময়কাল ছিল ৩০ বছর। তারপর ১০০ বছর ছিল সাহাবায়ে কেরামের যুগ। আর কম বেশি ২২০ বছর পর্যন্ত ছিল তাবেয়ীগণের যুগ। আর তাদের মধ্যে নবী ﷺ এর পরিপূর্ণ ভালোবাসা ছিল; কিন্তু তাদের সময় মিলাদের কোনো অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল না।
মিলাদের সূচনা :
সর্বপ্রথম এ দিনটি উদযাপন করা হয় মিসরের কায়রোতে। ফাতেমী খলীফারা চতুর্থ শতাব্দীতে এর প্রচলন করে। তারা ছয়টি মীলাদ বা জন্ম উৎসব প্রবর্তন করে। আর তা হলো মিলাদুন্নবী, মিলাদে আলী, মিলাদে ফাতেমাতুজ জোহরা, মিলাদে হাসান, মিলাদে হুসাইন এবং তখনকার খলিফার মিলাদ। সপ্তম শতাব্দীতে ইরবিল শহরে সর্বপ্রথম এ মিলাদ আরম্ভ করে বাদশাহ আবু সাঈদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা চলে আসছে এবং তাতে আরো বৃদ্ধি ও সংযোজন ঘটেছে। তারা এতে তাদের প্রবৃত্তির চাহিদা অনুযায়ী সবকিছু যোগ করেছে। [আল-ইবাদা ফি মাদাররিল ইবতেদা, পৃ: ২৫১।]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেছেন, কতক লোক মিলাদুন্নবী আবিষ্কার করে তারা হয়তো নাসারাদের অনুকরণ করেছে। যেমন তারা ঈসা (আঃ) এর জন্মানুষ্ঠান পালন করে। বস্তুত রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পরিপূর্ণ মুহাববত ও সম্মানের পরিচয় হচ্ছে, তাঁর আনুগত্য ও অনুসরণ করা, তাঁর নির্দেশ পালন করা এবং প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তাঁর সুন্নাত জীবিত করা, তাঁর আনিত দ্বীন প্রচার করা এবং এজন্য অন্তর, হাত ও মুখ দ্বারা জিহাদ করা। কারণ এটাই আমাদের পূর্বসূরি মুহাজির, আনসার ও তাদের যথাযথ অনুসারীদের নীতি ও আদর্শ ছিল। [ইকতেদাউস সিরাত : পৃ: ২৯৪-২৯৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উপর সালাত ও সালাম পেশ করা একটি ইবাদাত। কিন্তু সালাত ও সালাম পেশ করার সময় দাঁড়ানো এবং ব্যক্তি বিশেষের রচিত সালাত ও সালাম পেশ করা বিদআত। এর মধ্যে দাঁড়ানোর কারণ যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে আল্লাহ তা‘আলার মতো উপস্থিত বা হাযির-নাযির মনে করা হয়, তবে তা সুস্পষ্ট শিরক। আর যদি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে হাযির-নাযির মনে না করে দাঁড়ানো হয়, তাহলে তা হবে সম্পূর্ণ বিদআত।
কিয়ামের প্রচলন :
৭৫১ হিজরী সনে খাজা তকীউদ্দীন সুবকী এর দরবারে একজন কবি রিসালাতের মাহাত্ম্য বর্ণনায় কবিতা পাঠ করে। এ সময় খাজা সাহেব আত্মহারা হওয়ার কারণে প্রভাবান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তার সম্মান রক্ষার্থে উপস্থিত সকলেই তার অনুসরণ করে। জানা আবশ্যক যে, যার থেকে মিলাদের প্রচলন হয়েছে তার থেকে কিয়াম প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ দুটিই সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার।
নবী ﷺ তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করতেন না :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ مَا كَانَ شَخْصٌ اَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ وَكَانُوْا اِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا لِمَا يَعْلَمُوْا مِنْ كَرَاهِيَتِه لِذٰلِكَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে অধিক ভালোবাসা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আর কারো ছিল না। তারপরও যখন তারা নবী ﷺ-কে দেখতেন, তখন দাঁড়াতেন না। কারণ তারা জানতেন যে, নবী ﷺ এটা পছন্দ করতেন না। [তিরমিযী হা/২৭৫৪; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৪৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ مِجْلَزٍ قَالَ : خَرَجَ مُعَاوِيَة فَقَامَ عَبْدُ الله بْنِ الزُّبَيْرِ وَابْنِ صَفْوَانَ حِيْنَ رَأَوْهُ فَقَالَ اِجْلِسَا , سَمِعْتُ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু মিজলায (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু সুফইয়ান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে দেখলেন তখন বললেন, তোমরা বসে পড়ো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ লাভ করে যে, লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক; সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। [তিরমিযী হা/২৭৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হা/২৬০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৯; মিশকাত হা/৪২৯৯।]
কিয়ামের প্রচলন :
৭৫১ হিজরী সনে খাজা তকীউদ্দীন সুবকী এর দরবারে একজন কবি রিসালাতের মাহাত্ম্য বর্ণনায় কবিতা পাঠ করে। এ সময় খাজা সাহেব আত্মহারা হওয়ার কারণে প্রভাবান্বিত হয়ে দাঁড়িয়ে যান এবং তার সম্মান রক্ষার্থে উপস্থিত সকলেই তার অনুসরণ করে। জানা আবশ্যক যে, যার থেকে মিলাদের প্রচলন হয়েছে তার থেকে কিয়াম প্রচলনের প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এ দুটিই সম্পূর্ণ নতুন আবিষ্কার।
নবী ﷺ তাঁর সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে থাকা পছন্দ করতেন না :
عَنْ اَنَسٍ قَالَ مَا كَانَ شَخْصٌ اَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنْ رَسُوْلِ وَكَانُوْا اِذَا رَأَوْهُ لَمْ يَقُوْمُوْا لِمَا يَعْلَمُوْا مِنْ كَرَاهِيَتِه لِذٰلِكَ
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে অধিক ভালোবাসা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য আর কারো ছিল না। তারপরও যখন তারা নবী ﷺ-কে দেখতেন, তখন দাঁড়াতেন না। কারণ তারা জানতেন যে, নবী ﷺ এটা পছন্দ করতেন না। [তিরমিযী হা/২৭৫৪; মুসনাদে আহমাদ হা/১২৩৪৫।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِيْ مِجْلَزٍ قَالَ : خَرَجَ مُعَاوِيَة فَقَامَ عَبْدُ الله بْنِ الزُّبَيْرِ وَابْنِ صَفْوَانَ حِيْنَ رَأَوْهُ فَقَالَ اِجْلِسَا , سَمِعْتُ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ مَنْ سَرَّهٗ اَنْ يَّتَمَثَّلَ لَهُ الرِّجَالُ قِيَامًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু মিজলায (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা মু‘আবিয়া (রাঃ) বের হলেন। তখন আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এবং আবু সুফইয়ান (রাঃ) দাঁড়িয়ে গেলেন। অতঃপর যখন তিনি তাদেরকে দেখলেন তখন বললেন, তোমরা বসে পড়ো। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, যে ব্যক্তি এতে আনন্দ লাভ করে যে, লোকেরা তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকুক; সে যেন তার ঠিকানা জাহান্নামে তৈরি করে নেয়। [তিরমিযী হা/২৭৫৫; মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা হা/২৬০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৮১৯; মিশকাত হা/৪২৯৯।]
অনেকে মনগড়া দরূদ বানিয়ে নিয়েছে। যেমন- ইয়া নবী সালামু আলাইকা, ইয়া রাসূল সালামু আলাইকা, মুস্তফা জানে রহমত পে লাখো সালাম, হাজারো সালাম, আসসালামাই নূরে চশমে আম্বিয়া, সালাতুন ইয়া রাসূলাল্লাহ্ আলাইকুম, সালামুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম, দরূদে লাখি, দরূদে তাজ, দরূদে হাজারী, দরূদে মুকাদ্দাস, দরূদে আকবর, দরূদে তুনাজ্জিনা, দরূদে ফুতুহাত, দরূদে মাহী, দরূদে মোজাদ্দেদিয়া, দরূদে কাদেরিয়া, দরূদে চিশতিয়া, দরূদে নকশবন্দিয়া ইত্যাদি।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসূলের উপর সেসব দরূদ ও সালাম পড়াই সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীসে তা বিদ্যমান। সহীহ হাদীসের সূত্রে যেসব দরূদ ও সালামের বই রচিত হয়েছে তা থেকেই শিখে দরূদ ও সালাম পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
সাহাবীগণ নবী ﷺ-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মিশকাত, হা/৯১৯।]
তাছাড়াও আরো যেসব সহীহ দরূদ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর উপরও আমল করা যাবে।
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর রাসূলের উপর সেসব দরূদ ও সালাম পড়াই সুন্নাত, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজেই শিক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন হাদীসে তা বিদ্যমান। সহীহ হাদীসের সূত্রে যেসব দরূদ ও সালামের বই রচিত হয়েছে তা থেকেই শিখে দরূদ ও সালাম পাঠ করা বাঞ্ছনীয়।
সাহাবীগণ নবী ﷺ-কে প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কীভাবে আমরা আপনার উপর দরূদ পাঠ করব? তখন নবী ﷺ বললেন, তোমরা বলো :
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ، اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
অর্থ : হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমনিভাবে আপনি রহমত বর্ষণ করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর, নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর বরকত নাযিল করুন যেমনিভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইবরাহীম ও তাঁর পরিবারবর্গের উপর। নিঃসন্দেহে আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। [সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮১৫৮; মিশকাত, হা/৯১৯।]
তাছাড়াও আরো যেসব সহীহ দরূদ হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে, সেগুলোর উপরও আমল করা যাবে।
বসবাসের জন্য কোনো নতুন বাসা-বাড়িতে ওঠার সময় অথবা অন্য যে কোনো সময় অনিষ্ট হতে বাঁচার নিয়তে অথবা দোকান, অফিস ইত্যাদি উদ্বোধন উপলক্ষে অথবা ব্যবসা-বাণিজ্যে বরকত লাভের উদ্দেশ্যে, বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার উদ্দেশ্যে, কোনো রোগ থেকে মুক্তি লাভের উদ্দেশ্যে, মৃত ব্যক্তির জন্য ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে, কারো মৃত্যুবার্ষিকী কেন্দ্র করে কুলখানি, পরিবহণ কিংবা গাড়ি চালু করার শুরুতে কিংবা শহীদ দিবস, জাতীয় দিবস ইত্যাদি পালন করা উপলক্ষে কুরআন পড়ার প্রচলিত রীতি জায়েয নয়। অনুরূপভাবে শবীনা খতমের নামে কুরআনের কোনো হাফেয দ্বারা সারা রাত জেগে অথবা দিনে মাইক দিয়ে কুরআন পড়াও বিদআত।
খতমে কুরআন একটি উত্তম ইবাদাত। এ ইবাদাত দৈহিকভাবে করা হয় বিধায় তা কারো জন্য বিনিময় করা যায় না।
কুরআন খতম করার নিয়ম হচ্ছে, এটি সর্বনিম্ন তিন দিনে পাঠ করে শেষ করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ - - اِقْرَإِ الْقُرْاٰنَ فِى شَهْرٍ . قَالَ إِنَّ بِىْ قُوَّةً . قَالَ : اِقْرَأْهُ فِى ثَلاَثٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তুমি এক মাসে কুরআন খতম করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বললেন, আমি এর চেয়েও দ্রুত খতম করতে সক্ষম। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তিন দিনে কুরআন খতম করবে। [আবু দাউদ হা/১৩৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে তিনি নিজে একাকীই কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং প্রায় সময়ই সাহাবীগণ তা শুনতে পেতেন। আর সাহাবীগণও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হুবহু অনুসরণ করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত কুরআন খতমের মতো করে তারা কখনো একই বৈঠকে এক বা একাধিক জন মিলে খতম করেছেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এরূপ করাটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর উপর আমল করা। আর এর উপর আমল করতে গেলে প্রয়োজন এর ভাষ্যসমূহ ভালোভাবে অনুধাবন করা, যা কুরআন মাজীদ অর্থসহ তিলাওয়াত করা ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং উচিত হবে, যথাসম্ভব অর্থসহ ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করা, যাতে করে এর ভাষ্যসমূহ যথাযথভাবে অনুধাবন করে আমল করা যায়।
খতমে কুরআন একটি উত্তম ইবাদাত। এ ইবাদাত দৈহিকভাবে করা হয় বিধায় তা কারো জন্য বিনিময় করা যায় না।
কুরআন খতম করার নিয়ম হচ্ছে, এটি সর্বনিম্ন তিন দিনে পাঠ করে শেষ করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ لِىْ رَسُوْلُ اللهِ - - اِقْرَإِ الْقُرْاٰنَ فِى شَهْرٍ . قَالَ إِنَّ بِىْ قُوَّةً . قَالَ : اِقْرَأْهُ فِى ثَلاَثٍ
আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, তুমি এক মাসে কুরআন খতম করবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বললেন, আমি এর চেয়েও দ্রুত খতম করতে সক্ষম। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তিন দিনে কুরআন খতম করবে। [আবু দাউদ হা/১৩৯৩।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে তিনি নিজে একাকীই কুরআন তিলাওয়াত করতেন এবং প্রায় সময়ই সাহাবীগণ তা শুনতে পেতেন। আর সাহাবীগণও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হুবহু অনুসরণ করতেন। কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত কুরআন খতমের মতো করে তারা কখনো একই বৈঠকে এক বা একাধিক জন মিলে খতম করেছেন বলে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং এরূপ করাটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
যেহেতু কুরআন নাযিলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, এর উপর আমল করা। আর এর উপর আমল করতে গেলে প্রয়োজন এর ভাষ্যসমূহ ভালোভাবে অনুধাবন করা, যা কুরআন মাজীদ অর্থসহ তিলাওয়াত করা ছাড়া সম্ভব নয়। সুতরাং উচিত হবে, যথাসম্ভব অর্থসহ ধীরে ধীরে তিলাওয়াত করা, যাতে করে এর ভাষ্যসমূহ যথাযথভাবে অনুধাবন করে আমল করা যায়।
ইসালে সওয়াবের নামে যেসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, সবগুলোই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। যেমন- মৃতদেহ সামনে রেখে কুরআন তিলাওয়াতের আয়োজন করা, কারো মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কুরআন খতম বা তিলাওয়াতের আয়োজন করা ইত্যাদি। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ থেকে এর কোনো দলীল পাওয়া যায় না।
কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে,
﴿وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًا﴾
আমার আয়াতসমূহ (কুরআন) অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রহ.) কৃত ও মহিউদ্দীন খান অনুদিত সৌদি আরব থেকে এক খন্ডে ছাপা সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মারেফুল কুরআনের ৩৫ পৃষ্ঠার ডানের কলামে লিখা আছে, ‘‘ইসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে নাজায়েয। আল্লামা শামী দুর্রে মুখতারের শরাহ এবং শিফাউল আলীল নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলসহ একথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষা দান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে। সুতরাং এ অনুমতি এসব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এজন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোনো দু‘আ-কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। কারণ এর উপর কোনো ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয়। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়াবে এবং যে পড়বে, তারা উভয়ই গোনাহগার হবে। বস্তুত যে পড়েছে সে-ই যখন কোনো সওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কী পৌঁছাবে? কবরের পাশে কুরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণ থেকে কোথাও প্রমাণিত নয়। সুতরাং এগুলো নিঃসন্দেহে বিদআত।’’
﴿وَلَا تَشْتَرُوْا بِاٰيَاتِيْ ثَمَنًا قَلِيْلًا﴾
আমার আয়াতসমূহ (কুরআন) অল্প মূল্যে বিক্রি করে দিও না। (সূরা বাক্বারা- ৪১)
মুফতি মুহাম্মাদ শফী (রহ.) কৃত ও মহিউদ্দীন খান অনুদিত সৌদি আরব থেকে এক খন্ডে ছাপা সংক্ষিপ্ত তাফসীরে মারেফুল কুরআনের ৩৫ পৃষ্ঠার ডানের কলামে লিখা আছে, ‘‘ইসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতভাবে নাজায়েয। আল্লামা শামী দুর্রে মুখতারের শরাহ এবং শিফাউল আলীল নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলসহ একথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষা দান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন, তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে। সুতরাং এ অনুমতি এসব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এজন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ইসালে সাওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোনো দু‘আ-কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। কারণ এর উপর কোনো ধর্মীয় মৌলিক প্রয়োজন নির্ভরশীল নয়। এখন যেহেতু পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন পড়া হারাম, সুতরাং যে পড়াবে এবং যে পড়বে, তারা উভয়ই গোনাহগার হবে। বস্তুত যে পড়েছে সে-ই যখন কোনো সওয়াব পাচ্ছে না, তখন মৃত আত্মার প্রতি সে কী পৌঁছাবে? কবরের পাশে কুরআন পড়ানো বা পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কুরআন খতম করানোর রীতি সাহাবী, তাবেয়ীন এবং প্রথম যুগের উম্মতগণ থেকে কোথাও প্রমাণিত নয়। সুতরাং এগুলো নিঃসন্দেহে বিদআত।’’
প্রতি সপ্তাহে একদিন কিংবা মাসের নির্দিষ্ট কোনো তারিখে অথবা কোনো কিছু লাভ করার নিয়তে যে কোনো দিন নির্দিষ্ট নিয়মে খতমে গাউছিয়া পড়াও বৈধ নয়। কেননা- এ ব্যাপারে কোনো হাদীসের দলীল নেই। এতে আরো বেশি বিদআতী আমলের মিশ্রণ ঘটে। যেমন- বানানো দরূদ পাঠ করা, নির্দিষ্ট নিয়মে বিভিন্ন দু‘আ ও কুরআনের কতিপয় সূরা পাঠ করা ইত্যাদি।
বর্তমানে মাঝে মাঝে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেখা যায় যে, তারা বিপদাপদ দূর করার জন্য বিশেষ পদ্ধতিতে বিশেষ দু‘আ পাঠ করে থাকে, যাকে তারা খতমে খাজেগান নামে অবহিত করে থাকে। অথচ এরূপ আমল রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবাগণ, তাবেঈ, তাবে-তাবেয়ীনদের কেউ পালন করেননি, এমনকি চার ইমামের কেউই পালন করেননি। এটি নিঃসন্দেহে বিদআত।
যে কোনো ধরনের বিপদাপদ ও দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য প্রচলিত নিয়মে খতমে ইউনুস তথা ১,২৫,০০০ অথবা অনুরূপ কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যা-লিমীন’’- এই দু‘আটি পাঠ করাও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কেননা উক্ত দু‘আটিকে এভাবে পাঠ করার কোনো নিয়ম রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবায়ে কেরাম এবং ইসলামের স্বর্ণযুগগুলোর কোথাও পাওয়া যায় না। তবে সহীহ হাদীস অনুযায়ী উক্ত দু‘আ যে কোনো ধরনের বিপদে পাঠ করার নিয়ম রয়েছে; কিন্তু সেটা নির্দিষ্ট সংখ্যায় বা পদ্ধতিতে নয়। যেমন- হাদীসে এসেছে,
সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যে দু‘আ করেছিলেন, কোনো মুসলিম যদি বিপদে পড়ে সে দু‘আ পড়ে, তবে তার দু‘আ কবুল করা হবে। [তিরমিযী হা/৩৫০৫; মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭৪৪; জামেউস সগীর, হা/৫৬৯৫; মিশকাত, হা/২২৯২।]
সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, ইউনুস (আঃ) মাছের পেটে যে দু‘আ করেছিলেন, কোনো মুসলিম যদি বিপদে পড়ে সে দু‘আ পড়ে, তবে তার দু‘আ কবুল করা হবে। [তিরমিযী হা/৩৫০৫; মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৬২; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৮৬৩; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮২৬; সিলসিলা সহীহাহ, হা/১৭৪৪; জামেউস সগীর, হা/৫৬৯৫; মিশকাত, হা/২২৯২।]
বর্তমানে দেখা যায় যে, মুহাররাম মাস আসার সাথে সাথে শিয়া সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের নানা ধরনের বিদআতী কার্যক্রম পরিচালনা করতে শুরু করে। আর তাদের অনুসরণ করে সুন্নী সম্প্রদায়ের অনেক লোকও নানা ধরনের বিদআতী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। যেমন- হুসাইন (রাঃ) এর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোযা রাখা, মাতম বা শোক প্রকাশ করা, তাজিয়া মিছিল করা, আলোচনা সভার আয়োজন করা, বিভিন্ন ধরনের খাবারের আয়োজন করা। মুহাররাম মাস উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন নিতান্তই বিদআতী কর্মের অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, মুহাররাম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোযা রাখা, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও করতে বলেছেন। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَهٗ
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; ইবনে খুযাইমা, হা/২০৮৭; ইবনে হিববান, হা/৩৬৩২; মিশকাত, হা/২০৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য মুহাররাম মাস উপলক্ষ্যে করণীয় এতটুকুই। এর বেশি যা কিছু করা হবে সবই বিদআত ও অপসংস্কৃতি।
এক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, মুহাররাম মাসের ৯ ও ১০ অথবা ১০ ও ১১ তারিখে রোযা রাখা, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে পালন করেছেন এবং সাহাবীদেরকেও করতে বলেছেন। যেমন- রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
صِيَامُ يَوْمِ عَاشُرَاءَ اَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ اَنْ يَّكَفِّرَ السَّنَةَ اللَّتِىْ قَبْلَهٗ
আমি আল্লাহর নিকট আশা রাখি যে, আশুরার রোযা বিগত এক বছরের গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবু দাউদ, হা/২৪২৭; তিরমিযী, হা/৭৫২; ইবনে মাজাহ, হা/১৭৩৮; ইবনে খুযাইমা, হা/২০৮৭; ইবনে হিববান, হা/৩৬৩২; মিশকাত, হা/২০৪৪; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১০১৭।]
একজন প্রকৃত মুমিনের জন্য মুহাররাম মাস উপলক্ষ্যে করণীয় এতটুকুই। এর বেশি যা কিছু করা হবে সবই বিদআত ও অপসংস্কৃতি।
বর্তমানে চন্দ্র মাসের ১১ই রবিউস সানী আসলেই অনেক লোক ফাতেহায়ে ইয়াজ দহম নামে আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.) এর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করে থাকে। এগুলো দ্বীনের নামে বিদআত ছাড়া আর কিছুই নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ স্বয়ং তাঁর স্ত্রী খাদীজাতুল কুবরা (রাঃ) কিংবা যে সব সাহাবী তার জীবদ্দশায় ইন্তেকাল করেছিলেন, তাদের স্মরণে ফাতেহা বা ইসালে সওয়াবের জন্য বার্ষিকী পালন করেছেন বলে কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
বর্তমানে অনেক সমাজে সফর মাসের শেষ বুধবারটিকে ‘আখেরী চাহার শোম্বা’ হিসেবে পালন করে থাকে। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর জীবনের শেষ পর্যায়ে সফর মাসের শেষ বুধবারে অসুস্থতা থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন। আর ঐ দিনটিকে কেন্দ্র করে তারা নানা ধরনের বিদআতী আক্বীদা পোষণ করে থাকে। যেমন- ঐ দিন কলাপাতা কিংবা কাগজে কোনো দু‘আ লিখে তা ভিজিয়ে ঐ পানি দিয়ে গোসল করা হলে এবং ঐ পানি পান করা হলে সারা বছর রোগমুক্ত থাকা যাবে ইত্যাদি। অথচ এসব প্রত্যেকটি আমলই দ্বীনের মধ্যে বিদআত।
বর্তমানে অনেক মুসলিম রজব মাসের ২৭ তারিখটিকে শবে মেরাজ হিসেবে মহা আয়োজনের মাধ্যমে পালন করে থাকে। যেমন- নফল নামায পড়া, রোযা রাখা, ওয়াজ মাহফিল করা ইত্যাদি। অথচ এ দিবসকে কেন্দ্র করে কোনো আমলের ইঙ্গিত শরীয়তে নেই। সুতরাং এ দিবসটিকে কেন্দ্র করে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যেকোন আমল করাই বিদআত।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মেরাজ নবুওয়াতের কোন বছর, কোন মাসে এবং কোন তারিখে সংঘটিত হয়েছে তা নিয়ে মুফাস্সিরগণের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। অথচ সারাদেশে রজব মাসের ২৭ তারিখ ‘শবে মেরাজ’ নামে একটি স্বতন্ত্র দিবস পালন করা হচ্ছে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মেরাজ নবুওয়াতের কোন বছর, কোন মাসে এবং কোন তারিখে সংঘটিত হয়েছে তা নিয়ে মুফাস্সিরগণের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। অথচ সারাদেশে রজব মাসের ২৭ তারিখ ‘শবে মেরাজ’ নামে একটি স্বতন্ত্র দিবস পালন করা হচ্ছে।
বর্তমানে শা‘বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত তথা ‘নিসফু শা‘বান’ এর রাতকে ‘শবে বরাত’ নামক একটি বিশেষ রাত হিসেবে পালন করতে দেখা যায়। আর ঐ রাতকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের আয়োজন লক্ষ্য করা যায়। যেমন- মসজিদ আলোকসজ্জা করা, শবে বরাতের নিয়তে ১২ রাক‘আত বা ১০০ রাক‘আত সালাত পড়া, মাহফিল করা, বিশেষ মুনাজাতের অনুষ্ঠান করা, ঐ দিন গরু-ছাগল বা মুরগী জবেহ করা, হালুয়া-রুটি পাকানো, বেশি করে বাতি জ্বালানো, আতশবাজী করা ইত্যাদি। অথচ উক্ত রাতে কোনো ধরনের বিশেষ আমলের কথা হাদীসে উল্লেখ নেই।
তবে এ রাত্রিটির ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ إِنَّ اللهَ لَيَطَّلِعُ فِيْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيْعِ خَلْقِه إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আললাহ তা‘আলা মধ্য শাবানের রাতে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে শিরককারী ও হিংসুককে ক্ষমা করেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯০; জামেউল আহাদীস, হা/৭০৮৫।]
عَنْ أَبِيْ ثَعْلَبَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اِطَّلَعَ اللهُ إِلٰى خَلْقِه فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَ يُمْلِيْ لِلْكَافِرِيْنَ وَ يَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتّٰى يَدَعُوْهُ
আবু সালাবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত এসে যায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করেন। অতঃপর তিনি মুমিনদেরকে ক্ষমা করেন, কাফিরদের শাস্তি বাড়িয়ে দেন এবং হিংসুকদের অবকাশ দেন, যেন তারা হিংসা ছেড়ে দেয়। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৮৩২; জামেউস সগীর, হা/৭৭১।]
উক্ত রাতটিকে কেন্দ্র করে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এদুটি হাদীসই সবচেয়ে বিশুদ্ধ। এছাড়া যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবগুলোর সনদে অথবা মতনে কোনো না কোনো ত্রুটি রয়েছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, উক্ত হাদীস দুটিতে কেবল ফযীলতের কথা বলা হয়েছে, কোনো ধরনের আমলের কথা বলা হয়নি। সুতরাং কোনোরূপ গ্রহণযোগ্য দলীল ছাড়া উক্ত রাত্রিকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের আমল করা অবশ্যই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হচ্ছে, এ রাত্রিটি অন্যান্য রাতের ন্যায় আমল করা। যেমন- কারো প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের অভ্যাস থাকলে সে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে। [দিবস সংক্রান্ত যে কোনো বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘আলোচিত রাত-দিন’’।]
তবে এ রাত্রিটির ব্যাপারে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
عَنْ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ قَالَ إِنَّ اللهَ لَيَطَّلِعُ فِيْ لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيْعِ خَلْقِه إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ
আবু মূসা আল-আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আললাহ তা‘আলা মধ্য শাবানের রাতে মনোনিবেশ করেন এবং তাঁর সমস্ত বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। তবে শিরককারী ও হিংসুককে ক্ষমা করেন না। [ইবনে মাজাহ, হা/১৩৯০; জামেউল আহাদীস, হা/৭০৮৫।]
عَنْ أَبِيْ ثَعْلَبَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا كَانَ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ اِطَّلَعَ اللهُ إِلٰى خَلْقِه فَيَغْفِرُ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَ يُمْلِيْ لِلْكَافِرِيْنَ وَ يَدَعُ أَهْلَ الْحِقْدِ بِحِقْدِهِمْ حَتّٰى يَدَعُوْهُ
আবু সালাবা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন মধ্য শাবানের রাত এসে যায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা তার সৃষ্টির দিকে মনোনিবেশ করেন। অতঃপর তিনি মুমিনদেরকে ক্ষমা করেন, কাফিরদের শাস্তি বাড়িয়ে দেন এবং হিংসুকদের অবকাশ দেন, যেন তারা হিংসা ছেড়ে দেয়। [শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৮৩২; জামেউস সগীর, হা/৭৭১।]
উক্ত রাতটিকে কেন্দ্র করে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে এদুটি হাদীসই সবচেয়ে বিশুদ্ধ। এছাড়া যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে, সবগুলোর সনদে অথবা মতনে কোনো না কোনো ত্রুটি রয়েছে। একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে যে, উক্ত হাদীস দুটিতে কেবল ফযীলতের কথা বলা হয়েছে, কোনো ধরনের আমলের কথা বলা হয়নি। সুতরাং কোনোরূপ গ্রহণযোগ্য দলীল ছাড়া উক্ত রাত্রিকে কেন্দ্র করে যে কোনো ধরনের আমল করা অবশ্যই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হচ্ছে, এ রাত্রিটি অন্যান্য রাতের ন্যায় আমল করা। যেমন- কারো প্রতিরাতে তাহাজ্জুদের অভ্যাস থাকলে সে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করবে। [দিবস সংক্রান্ত যে কোনো বিধান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন আমাদের বই ‘‘আলোচিত রাত-দিন’’।]
অনেক সমাজে দেখা যায় যে, তারা জানাযার সালাতের পর অথবা মৃত ব্যক্তির দাফনের পর সম্মিলিতভাবে উপস্থিত সকলে মিলে মুনাজাত করে থাকেন। অথচ এরূপ কোনো আমল নবী ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের যুগে ছিল না। সুতরাং প্রচলিত এ মুনাজাতসমূহ বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। জানাযার সালাতটাই হচ্ছে দু‘আ। এ কারণেই মিরকাত গ্রন্থ প্রণেতা বলেন,
لَا يَدْعُوْا لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ لِاَنَّهٗ يَشْبَهُ الزِّيَادَةَ فِىْ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ
জানাযার সালাতের পর দ্বিতীয়বার মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে না। কারণ এর দ্বারা জানাযার সালাতের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু প্রসার হওয়ার সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। [মিরকাত, ২/২১৯।]
তবে জানাযার সালাতের পর বা দাফনের পর এককভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা উত্তম।
لَا يَدْعُوْا لِلْمَيِّتِ بَعْدَ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ لِاَنَّهٗ يَشْبَهُ الزِّيَادَةَ فِىْ صَلٰوةِ الْجَنَازَةِ
জানাযার সালাতের পর দ্বিতীয়বার মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করবে না। কারণ এর দ্বারা জানাযার সালাতের মধ্যে অতিরিক্ত কিছু প্রসার হওয়ার সাথে সামঞ্জস্য হয়ে যায়। [মিরকাত, ২/২১৯।]
তবে জানাযার সালাতের পর বা দাফনের পর এককভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ বা ক্ষমাপ্রার্থনা করা উত্তম।
বর্তমানে আমাদের দেশের প্রায় অঞ্চলেই দেখা যায় যে, কারো বাপ-মা বা আত্মীয়স্বজন মারা গেলে তিনদিন, চল্লিশ দিন বা প্রতি বৎসর মৃত্যুর তারিখে বড় আকারে খাবারের আয়োজন করা হয় এবং মনে করা হয় যে, এর দ্বারা মৃত ব্যক্তির অনেক উপকার হবে। সমাজে এসব কাজ রেওয়াজ হিসেবে চালু থাকার কারণে অনেকে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত হয়ে কষ্ট করে হলেও খাবারের আয়োজন করে থাকে। অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এসব কাজ করা স্পষ্ট বিদআত। আর সাহাবীগণ এরূপ কর্মকে জাহেলী যুগের কর্মকান্ড হিসেবে মনে করতেন। যেমন- একটি আছারে এসেছে,
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ ، قَالَ : كُنَّا نَرَى الْاِجْتِمَاعَ اِلٰى اَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنْعَةَ الطَّعَامِ مِنَ النِّيَاحَةِ
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্রিত হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানা পাকানোর ব্যবস্থা করা উভয়টিকেই জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯০৫।]
عَنْ جَرِيْرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ الْبَجَلِيِّ ، قَالَ : كُنَّا نَرَى الْاِجْتِمَاعَ اِلٰى اَهْلِ الْمَيِّتِ وَصَنْعَةَ الطَّعَامِ مِنَ النِّيَاحَةِ
জারীর ইবনে আবদুল্লাহ আল বাজালী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা মৃত ব্যক্তির বাড়িতে মানুষ একত্রিত হওয়া এবং মৃত ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে খানা পাকানোর ব্যবস্থা করা উভয়টিকেই জাহেলিয়াতের অন্তর্ভুক্ত মনে করতাম। [ইবনে মাজাহ, হা/১৬১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৯০৫।]
কোনো ওলী বা বুযুর্গের কবরের উপর ছাউনি দিয়ে দরগাহ বা মাযার স্থাপন করা এবং তাতে আগরবাতি জ্বালানো ইত্যাদি কাজকর্ম শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে বিদআতী আমলের অন্তর্ভুক্ত এবং তা পরিত্যাজ্য। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَاَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَاَنْ يُبْنٰى عَلَيْهِ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কবর বড় করা, পাকা বানানো, এর উপর ঘর নির্মাণ করা এবং এর উপর বসা থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৯।]
عَنْ اَبِىْ الْهَيَّاجِ الْاَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ اَبِىْ طَالِبٍ اَ لَا اَبْعَثُكَ عَلٰى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا اِلَّا طَمَسْتَهٗ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا اِلَّا سَوَّيْتَهٗ
আবুল হাইয়াজ আল আসাদী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে ঐ কাজের জন্য প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? আর তা ছিল ছবি ও মূর্তিকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এসবের কোনো কিছু অবশিষ্ট না রাখা; আর সমস্ত উঁচু কবরকে মাটির সাথে সমান করে দেয়া। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৬৬।]
ইমাম নববী (রহ.) বলেন,
اَنَّ السُّنَّةَ اَنَّ الْقَبْرَ لَا يُرْفَعُ عَلَى الْاَرْضِ رَفْعًا كَثِيْرًا وَلَا يُسَنَّمُ بَلْ يُرْفَعُ نَحْوَ شِبْرٍ وَيُسَطَّحُ
কবরের সুন্নাত নিয়ম হলো, এটা জমিন থেকে অর্ধ হাতের চেয়ে বেশি উঁচু হবে না। বরং শুধু অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু হবে এবং উপরের দিকে সমান করে দেবে। [শরহে মুসলিম, ৩/৩৮৯।]
মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন,
وَيَجِبُ الْهَدْمُ وَلَوْ كَانَ مَسْجِدًا
কবরের উপর সৌধ তা মসজিদ হলেও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। [মিরকাত, ২/৩৭২।]
কবর কেন্দ্রিক এসব কাজ কেবল বিদআতই নয়, বরং অনেকগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
عَنْ جَابِرٍ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ يُجَصَّصَ الْقَبْرُ وَاَنْ يُقْعَدَ عَلَيْهِ وَاَنْ يُبْنٰى عَلَيْهِ
জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে কবর বড় করা, পাকা বানানো, এর উপর ঘর নির্মাণ করা এবং এর উপর বসা থেকে নিষেধ করেছেন। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৯।]
عَنْ اَبِىْ الْهَيَّاجِ الْاَسَدِىِّ قَالَ قَالَ لِىْ عَلِىُّ بْنُ اَبِىْ طَالِبٍ اَ لَا اَبْعَثُكَ عَلٰى مَا بَعَثَنِىْ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ - - اَنْ لَا تَدَعَ تِمْثَالًا اِلَّا طَمَسْتَهٗ وَلَا قَبْرًا مُشْرِفًا اِلَّا سَوَّيْتَهٗ
আবুল হাইয়াজ আল আসাদী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আলী (রাঃ) আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে ঐ কাজের জন্য প্রেরণ করব না, যে কাজের জন্য রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? আর তা ছিল ছবি ও মূর্তিকে ধ্বংস করে দেয়া এবং এসবের কোনো কিছু অবশিষ্ট না রাখা; আর সমস্ত উঁচু কবরকে মাটির সাথে সমান করে দেয়া। [সহীহ মুসলিম, হা/২২৮৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৪১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/১৩৬৬।]
ইমাম নববী (রহ.) বলেন,
اَنَّ السُّنَّةَ اَنَّ الْقَبْرَ لَا يُرْفَعُ عَلَى الْاَرْضِ رَفْعًا كَثِيْرًا وَلَا يُسَنَّمُ بَلْ يُرْفَعُ نَحْوَ شِبْرٍ وَيُسَطَّحُ
কবরের সুন্নাত নিয়ম হলো, এটা জমিন থেকে অর্ধ হাতের চেয়ে বেশি উঁচু হবে না। বরং শুধু অর্ধহাত পরিমাণ উঁচু হবে এবং উপরের দিকে সমান করে দেবে। [শরহে মুসলিম, ৩/৩৮৯।]
মোল্লা আলী কারী (রহ.) বলেন,
وَيَجِبُ الْهَدْمُ وَلَوْ كَانَ مَسْجِدًا
কবরের উপর সৌধ তা মসজিদ হলেও ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। [মিরকাত, ২/৩৭২।]
কবর কেন্দ্রিক এসব কাজ কেবল বিদআতই নয়, বরং অনেকগুলো শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
অনেকেই ওযু করার সময় এ দু‘আ পাঠ করে থাকে-
بِسْمِ اللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى دِيْنِ الْاِسْلَامِ ......
অথচ এটি পাঠ করার ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোনো দলীল নেই। অনুরূপভাবে ওযুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় দু‘আ হিসেবে যেসব বাক্য আছে, তাও কোনো হাদীসের কিতাবে নেই। বরং হাদীসে এসেছে যে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا مَسَّ طَهُوْرَهٗ يُسَمِّى اللهَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পবিত্রতা অর্জন করতেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন। [দার কুতনী, হা/২৩১।]
بِسْمِ اللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيْمِ وَالْحَمْدُ لِلّٰهِ عَلٰى دِيْنِ الْاِسْلَامِ ......
অথচ এটি পাঠ করার ব্যাপারে কুরআন ও সহীহ হাদীস থেকে কোনো দলীল নেই। অনুরূপভাবে ওযুর প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ধোয়ার সময় দু‘আ হিসেবে যেসব বাক্য আছে, তাও কোনো হাদীসের কিতাবে নেই। বরং হাদীসে এসেছে যে,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا مَسَّ طَهُوْرَهٗ يُسَمِّى اللهَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন পবিত্রতা অর্জন করতেন তখন তিনি বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতেন। [দার কুতনী, হা/২৩১।]
বর্তমানে অনেক অঞ্চলে দেখা যায় যে, মুয়াজ্জিন সাহেব আযান শুরু করার পূর্বে গজল, দরূদ ও সূরা-দু‘আ পাঠ করে থাকেন। অথচ এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কোনো দলীল পাওয়া যায় না। এমনকি সালফে সালেহীনদের থেকেও কোনো দলীল পাওয়া যায় না। সুতরাং আযানের পূর্বে এসব করা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। এক্ষেত্রে সুন্নাত নিয়ম হচ্ছে, আযানের পূর্বে কোনো প্রকার দু‘আ পাঠ না করে সরাসরি আযান শুরু করে দেয়া।
বর্তমানে অনেককেই দেখা যায় যে, আযান দেয়ার সময় মুয়াজ্জিন যখন ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার.....’ বাক্য উচ্চারণ করে, তখন তারা নিজেদের বৃদ্ধাঙ্গুল চুম্বন করে দু’চোখে লাগায়। এ ব্যাপারে সহীহ কোনো দলীল নেই। এসম্পর্কিত যেসব হাদীস রয়েছে, মুহাদ্দিসগণ সেগুলো জাল হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হচ্ছে, আযানের সময় মুয়াজ্জিন যা বলে তা মুখে উচ্চারণ করে উত্তর প্রদান করা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম শোনা মাত্রই তাঁর শিখানো দরূদ থেকে যে কোনো দরূদ পাঠ করা।
এক্ষেত্রে সঠিক নিয়ম হচ্ছে, আযানের সময় মুয়াজ্জিন যা বলে তা মুখে উচ্চারণ করে উত্তর প্রদান করা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নাম শোনা মাত্রই তাঁর শিখানো দরূদ থেকে যে কোনো দরূদ পাঠ করা।
বর্তমানে দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আযানের দু‘আ পাঠ করতে গিয়ে কিছু কিছু বাক্য অতিরিক্ত করে থাকে। যেমন- কেউ কেউ ‘ওয়াদদারাজাতার রাফীআহ’ অথবা ‘ওয়ারযুকনা শাফাআতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ’ ইত্যাদি বক্য অতিরিক্ত করে। আযানের মাসনূন দু‘আকে বিকৃত করে এভাবে অতিরিক্ত যে কোনো ধরনের বাক্য সংযুক্ত করা বিদআত। এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ আযানের দু‘আটি আমাদেরকে যেভাবে শিক্ষা দিয়েছেন, ঠিক সেভাবেই পাঠ করা এবং এর থেকে কোনো কিছু কম অথবা বৃদ্ধি না করা।
বর্তমানে অনেককেই দেখা যায় যে, তারা সালাত, রোযা, হজ্জ ইত্যাদি ইবাদাতের জন্য মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করে থাকে। অথচ এ ব্যাপারে কোনো দলীল নেই। সুতরাং এভাবে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করাটা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক নিয়ম হচ্ছে, যে কোনো আমল করার ক্ষেত্রে মনে মনে এ সংকল্প করা যে, যে আমলটি করা হবে সেটি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা হবে। অতঃপর উক্ত আমলটি যাতে রিয়ার অন্তর্ভুক্ত না হয়, সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আর এভাবে নিয়ত করাটা অত্যাবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوٰى
নিশ্চয় প্রত্যেক কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের ফলাফল তা-ই পাবে, যে উদ্দেশ্যে সে কাজটি করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/১।]
উল্লেখ্য যে, নিয়ত হচ্ছে সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। সুতরাং মুখে যতই বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা হোক না কেন, আমল কবুলের ক্ষেত্রে আমলকারীর অন্তরের দিকটিই দেখা হবে।
এক্ষেত্রে শরীয়তের সঠিক নিয়ম হচ্ছে, যে কোনো আমল করার ক্ষেত্রে মনে মনে এ সংকল্প করা যে, যে আমলটি করা হবে সেটি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই করা হবে। অতঃপর উক্ত আমলটি যাতে রিয়ার অন্তর্ভুক্ত না হয়, সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আর এভাবে নিয়ত করাটা অত্যাবশ্যক। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوٰى
নিশ্চয় প্রত্যেক কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের ফলাফল তা-ই পাবে, যে উদ্দেশ্যে সে কাজটি করেছে। [সহীহ বুখারী, হা/১।]
উল্লেখ্য যে, নিয়ত হচ্ছে সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। সুতরাং মুখে যতই বিশুদ্ধভাবে উচ্চারণ করে নিয়ত পাঠ করা হোক না কেন, আমল কবুলের ক্ষেত্রে আমলকারীর অন্তরের দিকটিই দেখা হবে।
বর্তমানে অনেককেই দেখা যায় যে, তারা জায়নামাযে তথা সালাত পড়ার জায়গায় দাঁড়িয়ে তাকবীরে তাহরীমার পূর্বে ইন্নী ওয়াজ্জাহতু.....পাঠ করে থাকেন। অথচ এটিও বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। কারণ জায়নামাযে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ অথবা সাহাবীগণ এরূপ কোনো দুআ পাঠ করেছেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যেসব দু‘আ পাঠ করা হয়, সেগুলো সহীহ সুন্নাহ দ্বারা অন্য কোনো আমলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বলে প্রমাণিত। যেমন হাদীসে এসেছে- আলী (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করার সময় তাকবীর বলতেন এবং এ দু‘আ পাঠ করতেন :
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ، قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ....
উচচারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন। ...
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন...। [মুসলিম, হা/১৮৪৮।]
وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِيْ فَطَرَ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ حَنِيْفًا وَّمَا اَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ، قُلْ اِنَّ صَلَاتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ ....
উচচারণ : ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী ফাত্বারাসসামা-ওয়া-তি ওয়াল আরযা হানীফাওওয়ামা-আনা মিনাল মুশরিকীন। কুল ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়া-ইয়া ওয়া মামা-তী লিল্লা-হি রাবিবল ‘আলামীন। ...
অর্থ : আমি একনিষ্ঠভাবে ঐ সত্তার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন; আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই। আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, আমার মরণ সবই বিশ্বজাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্য। তাঁর কোনো শরীক নেই। এসব কাজের জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি, আমি হলাম মুসলিমদের মধ্যে একজন...। [মুসলিম, হা/১৮৪৮।]
বর্তমানে অনেক মসজিদেই দেখা যায় যে, প্রত্যেক ফরয সালাতের পর সম্মিলিতভাবে হাত উত্তোলন করে দু‘আ করা হয়। অথচ ইসলামী শরীয়তে এরূপ আমলের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিশুদ্ধ হাদীস তো দূরের কথা, কোনো দুর্বল কিংবা জাল হাদীসে বা বানোয়াট হাদীসেও এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ আজ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, এমনকি ফিকহের কিতাবসমূহেও না।
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয়। কেননা দু‘আ করার সুন্নাতী নিয়ম হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরু করেই বলেন, ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষের বাক্য। এটা দু‘আ শুরু করার বাক্য নয়। তাই ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা আল্লাহুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ বলে শেষ করাও সুন্নাতের পরিপন্থী।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু‘হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু তারা না বুঝেই ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ: ৫৭৭।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনে ইযাম হতে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতের পরিপন্থী। [আহকামে দু‘আ, পৃ:১৩।]
অতএব যেসব আমলের কোনো অস্তিত্ব কুরআন ও হাদীসে নেই, সেগুলো অবশ্যই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে জামা‘আত শেষে সুন্নাত হলো- নিজে নিজে ঐসব দু‘আ পড়া, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের সালাম ফেরানোর পর পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। ফরয সালাতসমূহের পর নবী ﷺ যেসব তাসবীহ, হামদ, তাকবীর, তাহলীল, ইস্তেগফার, সূরা ও প্রাণ জুড়ানো যেসব অনুপম কালেমা ও দু‘আ পাঠ করেছেন তা-ই হচ্ছে উম্মতের জন্য অনুসরণীয় সুন্নাত ও আদর্শ। এসব দু‘আ আমাদের ‘‘কিতাবুস সালাত’’ ও ‘‘মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়’’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাছাড়া এ দু‘আর নিয়মটিও সহীহ নয়। কেননা দু‘আ করার সুন্নাতী নিয়ম হলো, দু‘আর শুরুতে প্রথমে আল্লাহ তা‘আলার হামদ তথা প্রশংসা জ্ঞাপন করবে। অতঃপর মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পড়বে। এরপর আল্লাহ তা‘আলার নিকট চাইবে। অতঃপর দু‘আর শেষেও আল্লাহর প্রশংসা ও মুহাম্মাদ ﷺ এর উপর দরূদ পাঠ করে ‘আমীন’ বলে দু‘আ শেষ করবে।
কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ফরয সালাতের পর যারা সম্মিলিতভাবে দু‘আ করেন তারা শুরু করেই বলেন, ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’। অথচ এটা হচ্ছে দু‘আর শেষের বাক্য। এটা দু‘আ শুরু করার বাক্য নয়। তাই ‘‘আল্লাহুম্মা আমীন’’ বলে দু‘আ শুরু করা সুন্নাতের খিলাফ। কেননা আল্লাহুম্মা আমীন অর্থ হচ্ছে, হে আল্লাহ! কবুল করুন। আর এটা তখনই বলা যুক্তিযুক্ত, যখন কিছু চাওয়া হয়। আর শেষে যেহেতু হামদ ও দরূদ পড়া সুন্নাত, তাই সেটা বাদ দিয়ে ‘‘বেহাক্কে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’’ বলে শেষ করাও সুন্নাতের পরিপন্থী।
মুফতী মুহাম্মাদ শফী (রহ.) বলেন, বর্তমানে অনেক মসজিদের ইমামদের অভ্যাস হয়ে গেছে যে, কিছু আরবি দু‘আ মুখস্থ করে নিয়ে সালাত শেষ করেই (দু‘হাত উঠিয়ে) ঐ মুখস্থ দু‘আগুলো পড়েন। কিন্তু যাচাই করলে দেখা যাবে যে, এ দু‘আগুলোর সারমর্ম তাদের অনেকেই বলতে পারেন না। আর ইমামগণ বলতে পারলেও এটা নিশ্চিত যে, অনেক মুক্তাদী এ সমস্ত দু‘আর অর্থ মোটেই বুঝে না। কিন্তু তারা না বুঝেই ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে। এ সমস্ত তামাশার সারমর্ম হচ্ছে কিছু শব্দ পাঠ করা মাত্র। প্রার্থনার যে রূপ বা প্রকৃতি, তা এখানে পাওয়া যায় না। [মা‘আরেফুল কুরআন, ৩য় খন্ড, পৃ: ৫৭৭।]
তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ এবং সাহাবায়ে কেরাম এবং তাবেয়ীনে ইযাম হতে এবং শরীয়তের চার মাযহাবের ইমামগণ হতে সালাতের পর এ ধরনের মুনাজাতের প্রমাণ পাওয়া যায় না। মূলকথা হলো এ প্রথা কুরআন ও সহীহ হাদীসের প্রদর্শিত পন্থা এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবায়ে কেরামের সুন্নাতের পরিপন্থী। [আহকামে দু‘আ, পৃ:১৩।]
অতএব যেসব আমলের কোনো অস্তিত্ব কুরআন ও হাদীসে নেই, সেগুলো অবশ্যই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
প্রকৃতপক্ষে জামা‘আত শেষে সুন্নাত হলো- নিজে নিজে ঐসব দু‘আ পড়া, যা রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতের সালাম ফেরানোর পর পড়ার জন্য শিক্ষা দিয়েছেন। ফরয সালাতসমূহের পর নবী ﷺ যেসব তাসবীহ, হামদ, তাকবীর, তাহলীল, ইস্তেগফার, সূরা ও প্রাণ জুড়ানো যেসব অনুপম কালেমা ও দু‘আ পাঠ করেছেন তা-ই হচ্ছে উম্মতের জন্য অনুসরণীয় সুন্নাত ও আদর্শ। এসব দু‘আ আমাদের ‘‘কিতাবুস সালাত’’ ও ‘‘মন দিয়ে নামায পড়ার উপায়’’ বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
মসজিদে জামাআত শুরু হওয়ার পূর্বে ‘সুন্নাত পড়ার সময় নেই’- এ কথা বুঝানোর জন্য ইকামাতের পূর্বে লালবাতি জ্বালানো সঠিক নয়। কারণ মসজিদে প্রবেশ করার পর সুন্নাত হলো- অন্তত তাহিয়্যাতুল মসজিদের দুই রাকআত সুন্নাত পড়া অথবা ওয়াক্তিয়া সালাতের সুন্নাত পড়া। এর পর ইকামাত শুরু হয়ে গেলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে ফরয সালাতে শরীক হয়ে যাবে।
কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত না পড়ে বসা শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো, মসজিদে প্রবেশ করেই প্রথমে দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত পড়া। এমনকি জুমু‘আর দিন কেউ মসজিদে প্রবেশ করার সময় যদি খুতবার আযান দেয়া হয় কিংবা ইমাম খুতবা দিতে থাকেন তাহলেও ঐ দুই রাকাত সালাত পড়েই সে খুতবা শোনার জন্য বসবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِىَّ - - خَطَبَ فَقَالَ « إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَقَدْ خَرَجَ الإِمَامُ فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ » .
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (রাঃ) খুতবা প্রদান করলেন। এতে তিনি বললেন, তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন ইমাম খুতবা দিতে বের হওয়ার সময়ও উপস্থিত হলে সে যেন দুই রাকআত সালাত পড়ে নেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২২]
عَنْ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ أَنَّ النَّبِىَّ - - خَطَبَ فَقَالَ « إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَقَدْ خَرَجَ الإِمَامُ فَلْيُصَلِّ رَكْعَتَيْنِ » .
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী (রাঃ) খুতবা প্রদান করলেন। এতে তিনি বললেন, তোমাদের কেউ জুমু‘আর দিন ইমাম খুতবা দিতে বের হওয়ার সময়ও উপস্থিত হলে সে যেন দুই রাকআত সালাত পড়ে নেয়। [সহীহ মুসলিম, হা/২০২২]
অনেক মসজিদেই দেখা যায় যে, ইকামত শেষ হয়ে যাওয়ার পরও কিছু কিছু মুসল্লি সুন্নাত সালাত আদায় করে যাচ্ছেন। এরূপ করা সুন্নাতের বিপরীত। সহীহ হাদীস অনুযায়ী বিশুদ্ধ নিয়ম হচ্ছে, ইকামত দেয়ার সাথে সাথেই জামাআতের জন্য কাতারবদ্ধ হওয়া। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ إِذَا أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلَّا الْمَكْتُوْبَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন সালাতের জন্য ইকামত দেয়া হয়, তখন কেবল ফরয সালাত ব্যতীত অন্য কোনো সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৪৭০; সুনানে সানাঈ, হা/৮৬৬; তিরমিযী, হা/৪২১; আবু দাউদ, হা/১২৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَالِكٍ ابْنِ بُحَيْنَةَ أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ -رَأَى رَجُلًا وَقَدْ أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ فَلَمَّا انْصَرَفَ رَسُولُ اللّٰهِ -لَاثَ بِهِ النَّاسُ وَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللّٰهِ - الصُّبْحَ أَرْبَعًا الصُّبْحَ أَرْبَعًا
আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা সালাতের ইকামাত দেয়ার পরও রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন সে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করছে। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সাহাবীদের দিকে ফিরে দাঁড়ালেন, তখন লোকেরা তাঁকে ঘিরে দাঁড়াল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ফজরের সালাত কি চার রাকআত? ফজরের সালাত কি চার রাকআত? [সহীহ বুখারী, হা/৬৬৩।]
কারো সুন্নাত পড়ার সময় যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। সালাত ছাড়ার সময় সালাম ফিরানোর প্রয়োজন নেই। বরং নিয়ত বাতিল করলেই সালাত থেকে বের হওয়া যাবে।
ফজরের সুন্নাত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া ঠিক নয়।
বিশুদ্ধমতে ফজরের ফরয আদায়ের পর পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা যাবে। এটা ফজরের পর সালাত আদায়ের নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সুযোগ থাকলে এবং ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে সূর্য উঠার পর আদায় করা উত্তম। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফাতওয়া নং/২৮৫।]
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ - - قَالَ إِذَا أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَلاَ صَلاَةَ إِلَّا الْمَكْتُوْبَةُ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন সালাতের জন্য ইকামত দেয়া হয়, তখন কেবল ফরয সালাত ব্যতীত অন্য কোনো সালাত নেই। [সহীহ মুসলিম, হা/৭১০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৪৭০; সুনানে সানাঈ, হা/৮৬৬; তিরমিযী, হা/৪২১; আবু দাউদ, হা/১২৬৮; ইবনে মাজাহ, হা/১১৫১।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللّٰهِ بْنِ مَالِكٍ ابْنِ بُحَيْنَةَ أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ -رَأَى رَجُلًا وَقَدْ أُقِيمَتْ الصَّلَاةُ يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ فَلَمَّا انْصَرَفَ رَسُولُ اللّٰهِ -لَاثَ بِهِ النَّاسُ وَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللّٰهِ - الصُّبْحَ أَرْبَعًا الصُّبْحَ أَرْبَعًا
আবদুল্লাহ ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা সালাতের ইকামাত দেয়ার পরও রাসূলুল্লাহ ﷺ এক ব্যক্তিকে দেখতে পেলেন সে দু’রাক‘আত সালাত আদায় করছে। সালাত শেষে রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন সাহাবীদের দিকে ফিরে দাঁড়ালেন, তখন লোকেরা তাঁকে ঘিরে দাঁড়াল। আর রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ফজরের সালাত কি চার রাকআত? ফজরের সালাত কি চার রাকআত? [সহীহ বুখারী, হা/৬৬৩।]
কারো সুন্নাত পড়ার সময় যদি ইকামত হয়ে যায়, তাহলে সুন্নাত ছেড়ে দিয়ে জামাআতে শামিল হয়ে যাবে। সালাত ছাড়ার সময় সালাম ফিরানোর প্রয়োজন নেই। বরং নিয়ত বাতিল করলেই সালাত থেকে বের হওয়া যাবে।
ফজরের সুন্নাত হলেও জামাআতের ইকামত শোনার পর তা আর পড়া ঠিক নয়।
বিশুদ্ধমতে ফজরের ফরয আদায়ের পর পূর্বের দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করা যাবে। এটা ফজরের পর সালাত আদায়ের নিষিদ্ধতার অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে সুযোগ থাকলে এবং ভুলে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে সূর্য উঠার পর আদায় করা উত্তম। [ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম, ফাতওয়া নং/২৮৫।]
অনেক মুসল্লিকে দেখা যায় যে, তারা মসজিদ, মিনার অথবা অন্য কোন চিত্রাঙ্কন সম্বলিত জায়ানামাযের উপর সালাত আদায় করে। আবার কোন কোন জায়নামাযে এমন কিছু চিত্রাঙ্কন থাকে, যেগুলো অংকন করাই ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম বা অবৈধ। অনুরূপভাবে বর্তমানে মসজিদগুলোতে ব্যবহৃত কার্পেটগুলোতেও এরূপ দেখা যায়। অথচ এটি রাসূলুললাহ ﷺ এর সুন্নাহর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ নয়। কেননা হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلّٰى فِي خَمِيْصَةٍ لَهَا أَعْلَامٌ فَنَظَرَ إِلٰى أَعْلَامِهَا نَظْرَةً فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ اذْهَبُوْا بِخَمِيْصَتِيْ هٰذِه إِلٰى أَبِيْ جَهْمٍ وَأْتُوْنِيْ بِأَنْبِجَانِيَّةِ أَبِيْ جَهْمٍ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِيْ اٰنِفًا عَنْ صَلَاتِيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ ‘খামিসাহ’ [এক ধরনের কালো পশমী চাদর।] নামক চাদর পরিধান করে সালাত আদায় করেন, যাতে কিছু নকশা ছিল। সালাতে হঠাৎ একবার তিনি নকশার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। তারপর সালাত শেষে তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা আমার এ কাপড়টি আবূ জাহ্মের নিকট নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে তার নিকট থেকে একটি ‘আম্বিজানী’ [এক প্রকার মোটা চাদর যাতে নকশা ছিল না।] চাদর নিয়ে এসো। কেননা এটি আমাকে সালাত হতে অমনযোগী করে দিয়েছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৩, ২৫২, ৫৮১৭; আবু দাউদ, হা/৪০৫৪।]
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ النَّبِيَّ صَلّٰى فِي خَمِيْصَةٍ لَهَا أَعْلَامٌ فَنَظَرَ إِلٰى أَعْلَامِهَا نَظْرَةً فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ اذْهَبُوْا بِخَمِيْصَتِيْ هٰذِه إِلٰى أَبِيْ جَهْمٍ وَأْتُوْنِيْ بِأَنْبِجَانِيَّةِ أَبِيْ جَهْمٍ فَإِنَّهَا أَلْهَتْنِيْ اٰنِفًا عَنْ صَلَاتِيْ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা নবী ﷺ ‘খামিসাহ’ [এক ধরনের কালো পশমী চাদর।] নামক চাদর পরিধান করে সালাত আদায় করেন, যাতে কিছু নকশা ছিল। সালাতে হঠাৎ একবার তিনি নকশার প্রতি দৃষ্টিপাত করেন। তারপর সালাত শেষে তিনি সাহাবাদেরকে বললেন, তোমরা আমার এ কাপড়টি আবূ জাহ্মের নিকট নিয়ে যাও এবং এর পরিবর্তে তার নিকট থেকে একটি ‘আম্বিজানী’ [এক প্রকার মোটা চাদর যাতে নকশা ছিল না।] চাদর নিয়ে এসো। কেননা এটি আমাকে সালাত হতে অমনযোগী করে দিয়েছিল। [সহীহ বুখারী, হা/৩৭৩, ২৫২, ৫৮১৭; আবু দাউদ, হা/৪০৫৪।]
জামাআতের সালাতে মুক্তাদী কাতার সোজা না করে দাঁড়ানো শুদ্ধ নয়। এজন্য জামআতে সালাতের ইকামত দেয়ার পর ইমাম সাহেব কাতার সোজা করতে ও দু’জনের মধ্যে ফাঁক না রাখতে বলবেন। এটাই সুন্নাত। এক্ষেত্রে ইমাম কিছু না বলেই সালাত শুরু করা ঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ কাতারের কথা না বলে তাকবীরে তাহরীমা বলতেন না।
কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই বার অথবা তিন বার বলতেন اِسْتَوُوْا (ইসতাউ) ‘কাতার সোজা করো’। [নাসাঈ, হা/৮১৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৬৫; মিশকাত, হা/১১০০।]
কোন কোন সময় বলতেন, أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا (আক্বীমূ সুফূফাকুম ওয়া তারাস্সূ) কাতার সোজা করো এবং মিলেমিশে দাঁড়াও। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৯; নাসাঈ, হা/৮১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৩০।]
কোন কোন সময় বলতেন, رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ (রুস্সূ সুফূফাকুম ওয়া ক্বারিবূ বাইনাহা ওয়া হা-যূ বিল আ‘নাক্ব।) তোমাদের কাতারসমূহ মিলিয়ে নাও এবং পাশাপাশি দাঁড়াও। আর তোমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৬৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬৬।]
কোন কোন সময় বলতেন, أَقِيْمُوْا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِىْ إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ (আক্বীমুস সুফূফা ওয়া হা-যূ বাইনাল মানা-কিবি ওয়া ছুদ্দুল খালালা ওয়া লীনূ বিআইদী ইখওয়ানিকুম ওয়ালা তাযারূ ফুরূজা-তিন লিশ শাইত্বান।)
তোমরা কাতারসমূহ সোজা করো, কাঁধে কাঁধ মিলাও এবং ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দাও এবং তোমার ভাইয়ের প্রতি বিনম্র হও। আর তোমরা শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/১১০২।]
কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো জরুরি। পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর অর্থ এ নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং পায়ের সাথে পা এবং বাহুর সাথে বাহু স্বাভাবিকভাবে মিলানোর চেষ্টা করতে হবে।
কোন কোন সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ দুই বার অথবা তিন বার বলতেন اِسْتَوُوْا (ইসতাউ) ‘কাতার সোজা করো’। [নাসাঈ, হা/৮১৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৩২৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৮৬৫; মিশকাত, হা/১১০০।]
কোন কোন সময় বলতেন, أَقِيْمُوْا صُفُوْفَكُمْ وَتَرَاصُّوْا (আক্বীমূ সুফূফাকুম ওয়া তারাস্সূ) কাতার সোজা করো এবং মিলেমিশে দাঁড়াও। [সহীহ বুখারী, হা/৭১৯; নাসাঈ, হা/৮১৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২০৩০।]
কোন কোন সময় বলতেন, رُصُّوْا صُفُوْفَكُمْ وَقَارِبُوْا بَيْنَهَا وَحَاذُوْا بِالْأَعْنَاقِ (রুস্সূ সুফূফাকুম ওয়া ক্বারিবূ বাইনাহা ওয়া হা-যূ বিল আ‘নাক্ব।) তোমাদের কাতারসমূহ মিলিয়ে নাও এবং পাশাপাশি দাঁড়াও। আর তোমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নাও। [আবু দাউদ, হা/৬৬৭; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৪৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২১৬৬।]
কোন কোন সময় বলতেন, أَقِيْمُوْا الصُّفُوْفَ وَحَاذُوْا بَيْنَ الْمَنَاكِبِ وَسُدُّوا الْخَلَلَ وَلِيْنُوْا بِأَيْدِىْ إِخْوَانِكُمْ وَلَا تَذَرُوْا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ (আক্বীমুস সুফূফা ওয়া হা-যূ বাইনাল মানা-কিবি ওয়া ছুদ্দুল খালালা ওয়া লীনূ বিআইদী ইখওয়ানিকুম ওয়ালা তাযারূ ফুরূজা-তিন লিশ শাইত্বান।)
তোমরা কাতারসমূহ সোজা করো, কাঁধে কাঁধ মিলাও এবং ফাঁকা জায়গা বন্ধ করে দাও এবং তোমার ভাইয়ের প্রতি বিনম্র হও। আর তোমরা শয়তানের জন্য ফাঁকা জায়গা রেখে দিও না। [আবু দাউদ, হা/৬৬৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৭২৪; বায়হাকী, হা/৪৯৬৭; সহীহ তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৪৯৫; মিশকাত, হা/১১০২।]
কাতারে দাঁড়ানোর সময় পায়ের সাথে পা এবং কাঁধের সাথে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানো জরুরি। পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়ানোর অর্থ এ নয় যে, পরস্পর ঠেলাঠেলি ও চাপাচাপি করে দাঁড়াতে হবে। বরং পায়ের সাথে পা এবং বাহুর সাথে বাহু স্বাভাবিকভাবে মিলানোর চেষ্টা করতে হবে।
ইমামের সাথে মাত্র একজন মুক্তাদী হলে উভয়ে একই সাথে সমানভাবে দাঁড়াবে; ইমাম বামে এবং মুক্তাদী হবে ডানে। এ ক্ষেত্রে ইমাম একটু আগে এবং মুক্তাদী একটু পেছনে আগপিছ হয়ে দাঁড়াবে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ ইবনে আববাস (রাঃ) কে নিজের বরাবর দাঁড় করিয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১১৭, ৬৯৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৭; নাসাঈ, হা/৪৪২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬০২; দারেমী, হা/১২৫৫; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২৬২৬।] তাই ইমাম বুখারী তাঁর সহীহ গ্রন্থে উক্ত বিষয়ক পরিচ্ছেদ রচনার সময় বলেন, দু’জন হলে ইমামের পাশাপাশি তার বরাবর ডান দিকে দাঁড়াবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৬৯, ১১৭; সহীহ মুসলিম, হা/১৮২৪; আবু দাউদ, হা/১৩৫৯; মিশকাত, হা/১১০৬।]
সূরা ফাতিহা প্রত্যেক সালাতের সুনির্দিষ্ট একটি অঙ্গ। তাই ইমামকে যেমন প্রতি রাকআতে তা পড়তে হয়, তেমনি মুক্তাদীকে তা পড়তে হয়। ইমাম সাহেব জোরে কিরাত পড়লেও অনেকের মতে সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। আর ইমাম যখন আস্তে পড়েন তখন মুক্তাদীরা কিছুই শুনতে পায় না। এমতাবস্থায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতে সমস্যা নেই। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فِى صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ - فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ : لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ . قُلْنَا نَعَمْ هٰذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهٗ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের জামাআতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে ছিলাম। এমন সময় মুক্তাদীদের কেউ সরবে কিছু পাঠ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কিরাআত পাঠ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে কিছু পড়ে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করো না। কেবল সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে না তার সালাত শুদ্ধ হয় না। [আবু দাউদ, হা/৮২৩; তিরমিযী, হা/৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭১; মিশকাত, হা/৮৫৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার ঐ সালাত বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে থাকি, তখন কীভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন, তুমি তা চুপে চুপে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগ করে নিয়েছি। আর আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন আল্লাহ তাকে দেবেন। আর আমরা সবাই জানি যে, সূরা ফাতিহা হচ্ছে দু‘আ। এখন বান্দা যদি দু‘আ না করে তাহলে আল্লাহ তাকে কীভাবে দেবেন!
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে যেসব দলীল পেশ করা হয় তা আম বা ব্যাপক হুকুম সম্বলিত। অন্য হাদীসের মাধ্যমে সূরা ফাতিহাকে খাস করা হয়েছে এবং চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
عَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ قَالَ كُنَّا خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فِى صَلَاةِ الْفَجْرِ فَقَرَأَ رَسُوْلُ اللهِ - فَثَقُلَتْ عَلَيْهِ الْقِرَاءَةُ فَلَمَّا فَرَغَ قَالَ : لَعَلَّكُمْ تَقْرَءُونَ خَلْفَ إِمَامِكُمْ . قُلْنَا نَعَمْ هٰذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ : لَا تَفْعَلُوْا إِلَّا بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَإِنَّهٗ لَا صَلَاةَ لِمَنْ لَمْ يَقْرَأْ بِهَا
উবাদা ইবনে সামেত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা ফজরের জামাআতে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে ছিলাম। এমন সময় মুক্তাদীদের কেউ সরবে কিছু পাঠ করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জন্য কিরাআত পাঠ করা কঠিন হয়ে পড়ে। সালাম ফিরানোর পর রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, সম্ভবত তোমরা তোমাদের ইমামের পেছনে কিছু পড়ে থাক? আমরা বললাম, হ্যাঁ। জবাবে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, এরূপ করো না। কেবল সূরা ফাতিহা ব্যতীত। কেননা যে ব্যক্তি এটা পাঠ করে না তার সালাত শুদ্ধ হয় না। [আবু দাউদ, হা/৮২৩; তিরমিযী, হা/৩১১; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৪৬; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮১; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৮৫; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৮৭১; মিশকাত, হা/৮৫৪।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাত আদায় করল, যার মধ্যে উম্মুল কুরআন অর্থাৎ সূরা ফাতিহা পাঠ করল না তার ঐ সালাত বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ, বিকলাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ। রাবী আবু হুরায়রা (রাঃ) কে বলা হলো, আমরা যখন ইমামের পেছনে থাকি, তখন কীভাবে পাঠ করব? তখন তিনি বললেন, তুমি তা চুপে চুপে পাঠ করবে। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি সূরা ফাতিহাকে আমার ও আমার বান্দার মাঝে দু’ভাগ করে নিয়েছি। আর আমার বান্দা যা চাইবে তাই পাবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৮৮; সহীহ মুসলিম, হা/৯০৪।]
এ হাদীসে বলা হয়েছে, বান্দা যখন আল্লাহর কাছে চাইবে তখন আল্লাহ তাকে দেবেন। আর আমরা সবাই জানি যে, সূরা ফাতিহা হচ্ছে দু‘আ। এখন বান্দা যদি দু‘আ না করে তাহলে আল্লাহ তাকে কীভাবে দেবেন!
ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে যেসব দলীল পেশ করা হয় তা আম বা ব্যাপক হুকুম সম্বলিত। অন্য হাদীসের মাধ্যমে সূরা ফাতিহাকে খাস করা হয়েছে এবং চুপে চুপে সূরা ফাতিহা পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সূরা ফাতিহা পড়ার সময় প্রতি আয়াতে বিরতি না দিয়ে পড়া শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো প্রতি আয়াতে বিরতি দিয়ে পড়া। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ ، اَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهٗ اٰيَةً اٰيَةً : ﴿بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক আয়াতে ওয়াক্ফ করতেন এবং লম্বা করে তারতীলের সাথে পড়তেন। যেমন ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন, তারপর ‘‘আলহামদুলিল্লা-হি রাবিবল আ-লামীন’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘আর রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ বলে থামতেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/ ২৬৬২৫, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১।]
عَنْ اُمِّ سَلَمَةَ ، اَنَّهَا سُئِلَتْ عَنْ قِرَاءَةِ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَتْ : كَانَ يُقَطِّعُ قِرَاءَتَهٗ اٰيَةً اٰيَةً : ﴿بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ﴾ ﴿اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ﴾ ﴿مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ﴾
উম্মে সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা তাঁকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কিরাআত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যেক আয়াতে ওয়াক্ফ করতেন এবং লম্বা করে তারতীলের সাথে পড়তেন। যেমন ‘‘বিসমিল্লা-হির রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন, তারপর ‘‘আলহামদুলিল্লা-হি রাবিবল আ-লামীন’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘আর রাহমা-নির রাহীম’’ বলে থামতেন। তারপর ‘‘মা-লিকি ইয়াওমিদ্দীন’’ বলে থামতেন। [মুসনাদে আহমাদ হা/ ২৬৬২৫, মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/২৯১০; জামেউস সগীর, হা/৯১৩১।]
জামাআতে সালাতে জোরে কিরাআত পড়ার সময় সূরা ফাতিহা পাঠ শেষে ইমাম ও মুক্তাদী ছোট করে আমীন বলার চেয়ে উত্তম হলো উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা। ইমাম বুখারী (রহ.) তার ‘‘সহীহ বুখারী’’ কিতাবে এভাবে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন,
بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ . وَقَالَ عَطَاءٌ : اٰمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ، وَمَنْ وَرَاءَهٗ حَتّٰى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً
ইমাম উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হলো দু‘আ। ইবনে যুবাইর এবং তার পেছনের লোকেরা এমন জোরে আমীন বলতেন যাতে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। [বুখারী তালীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী, হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ- ১১১।]
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا قَرَأَ ﴿ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ قَالَ ﴿ اٰمِينَ ﴾ . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ‘ওয়ালাদ্বোয়াল্লীন’ বলার পর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতে শুনেছি। [আবু দাউদ, হা/৯৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৫; নাসাঈ, হা/৯৩২; তিরমিযী, হা/২৪৮।]
এ হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শব্দ করে আমীন বলেছেন। ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। এর ফলে গুনাহ মাফ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলাটা ফেরেশতাদের আমীন-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪; আবু দাউদ, হা/৯৩৭; তিরমিযী, হা/ ২৫০; নাসাঈ, হা/৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮৩।]
بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ . وَقَالَ عَطَاءٌ : اٰمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ، وَمَنْ وَرَاءَهٗ حَتّٰى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً
ইমাম উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হলো দু‘আ। ইবনে যুবাইর এবং তার পেছনের লোকেরা এমন জোরে আমীন বলতেন যাতে মসজিদ গুঞ্জরিত হয়ে উঠত। [বুখারী তালীক্ব ১/১০৭ পৃঃ, হা/৭৮০; ফাৎহুল বারী, হা/৭৮০-৮১ ‘সশব্দে আমীন বলা’ অনুচ্ছেদ- ১১১।]
عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ - إِذَا قَرَأَ ﴿ وَلاَ الضَّآلِّينَ﴾ قَالَ ﴿ اٰمِينَ ﴾ . وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهٗ
ওয়ায়েল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে ‘ওয়ালাদ্বোয়াল্লীন’ বলার পর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলতে শুনেছি। [আবু দাউদ, হা/৯৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৮৬২; ইবনে মাজাহ, হা/৮৫৫; নাসাঈ, হা/৯৩২; তিরমিযী, হা/২৪৮।]
এ হাদীস থেকে এটা স্পষ্ট হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ নিজে শব্দ করে আমীন বলেছেন। ইমাম আমীন বলা শুরু করলে মুক্তাদীরাও আমীন বলবে। যাতে করে ইমাম-মুক্তাদীর আমীন ও ফেরেশতাদের আমীন এক সঙ্গে হয়। এর ফলে গুনাহ মাফ হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেন, যখন ইমাম আমীন বলে তখন তোমরাও আমীন বলবে। কেননা যার আমীন বলাটা ফেরেশতাদের আমীন-এর সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [সহীহ বুখারী, হা/৭৮০; সহীহ মুসলিম, হা/৯৪২; মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/১৯৪; আবু দাউদ, হা/৯৩৭; তিরমিযী, হা/ ২৫০; নাসাঈ, হা/৯২৮; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/১৫৮৩।]
অনেকে মনে করেন যে, সালাতের কিরাআত পাঠ করার ক্ষেত্রে কুরআনের সূরাসমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা আবশ্যক। আসলে এটা উত্তম। তাই পরের সূরা আগে পড়লেও সালাতের কোন ক্ষতি হয় না। শরীয়তে এ ব্যাপারে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ﴾
সুতরাং তোমরা কুরআনের যেখান থেকে পাঠ করা সহজ মনে কর সেখান থেকে পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
﴿فَاقْرَءُوْا مَا تَيَسَّرَ مِنَ الْقُرْاٰنِ﴾
সুতরাং তোমরা কুরআনের যেখান থেকে পাঠ করা সহজ মনে কর সেখান থেকে পাঠ করো। (সূরা মুয্যাম্মিল- ২০)
অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা সেখানে জামাআতের সাথে ফরয সালাত আদায় করেছে, পরে সেখানেই সুন্নাত সালাত আদায় করে থাকেন। এরূপ করাটা উত্তম নয়; সুন্নাত হচ্ছে কোন সমস্যা না থাকলে স্থান পরিবর্তন করে সুন্নাত সালাত আদায় করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ - عَنِ النَّبِيِّ قَالَ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ إِذَا صَلّٰى أَنْ يَّتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِيْنِه أَوْ عَنْ شِمَالِه يَعْنِيْ السُّبْحَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ কি (অর্থাৎ জামাআত শেষে সুন্নাত আদায়কালে) ডানে বা বামে আগে বা পিছে সরে যেতে অক্ষম হয়ে যাও? [ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৭।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ - عَنِ النَّبِيِّ قَالَ أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ إِذَا صَلّٰى أَنْ يَّتَقَدَّمَ أَوْ يَتَأَخَّرَ أَوْ عَنْ يَمِيْنِه أَوْ عَنْ شِمَالِه يَعْنِيْ السُّبْحَةِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ কি (অর্থাৎ জামাআত শেষে সুন্নাত আদায়কালে) ডানে বা বামে আগে বা পিছে সরে যেতে অক্ষম হয়ে যাও? [ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৭।]
অধিকাংশ মুসল্লিই ফরয সালাতের পরের সুন্নাতসমূহ মসজিদে পড়ে নেয়াকেই বেশি পছন্দ করেন। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অভ্যাস ছিল এসব সুন্নাত মসজিদে না পড়ে ঘরে গিয়ে পড়া। হাদীসে এসেছে, যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে একটি হুজরার ব্যবস্থা করেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা মতে রামাযান মাসে একটি চাটাই দিয়ে (রাসূলুল্লাহ ﷺ মসজিদে নববীতে) একটি হুজরার ব্যবস্থা করেন (সেখানে তিনি ইতিকাফ অবস্থায় ইবাদাত করতেন)। উক্ত হুজরায় তিনি কয়েক রাত সালাত আদায় করলেন। ফলে কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁর অনুসরণ করে সালাত আদায় করতে শুরু করেন। অতঃপর যখন তিনি বিষয়টি লক্ষ্য করলেন, তখন পুনরায় নিজের জায়গায় বসে থাকলেন (অর্থাৎ ইতিকাফ ছেড়ে দিয়ে নিজের ঘরে সুন্নাত আদায় করতে শুরু করলেন)। অতঃপর সাহাবাদের সামনে উপস্থিত হয়ে বললেন, আমি তোমাদের যেসব কার্যকলাপ দেখলাম, সেগুলো অনুধাবন করতে পেরেছি।
فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ الْمَرْءِ فِي بَيْتِه إِلاَّ الْمَكْتُوبَةَ
হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের (সুন্নাত-নফল) সালাতসমূহ তোমাদের ঘরে আদায় করো। কেননা ফরয সালাত ব্যতীত উত্তম সালাত হচ্ছে যা ঘরে আদায় করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩১।]
فَصَلُّوا أَيُّهَا النَّاسُ فِي بُيُوتِكُمْ، فَإِنَّ أَفْضَلَ الصَّلاَةِ صَلاَةُ الْمَرْءِ فِي بَيْتِه إِلاَّ الْمَكْتُوبَةَ
হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের (সুন্নাত-নফল) সালাতসমূহ তোমাদের ঘরে আদায় করো। কেননা ফরয সালাত ব্যতীত উত্তম সালাত হচ্ছে যা ঘরে আদায় করা হয়। [সহীহ বুখারী, হা/৭৩১।]
বর্তমানে অনেক মসজিদেই দেখা যায় যে, কোনো মুসল্লি যদি প্রথম জামাআত ধরতে না পারেন, তাহলে দুই বা ততোধিক মুসল্লি একত্রিত হলেও তারা জামাআত করে সালাত আদায় করেন না। বরং তারা একাকীই সালাত আদায় করে থাকেন। এটা সুন্নাতের বিপরীত। নিয়ম হলো জামাআত শেষ হওয়ার পর যারা আসবে দু‘জন হলেও জামাআতে সালাত আদায় করবে। তাহলে জামাআতের সওয়াব হবে। হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ - - أَبْصَرَ رَجُلًا يُصَلِّى وَحْدَهٗ فَقَالَ أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلٰى هٰذَا فَيُصَلِّىَ مَعَهٗ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা (জামাআত শেষ হওয়ার পর) রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি একাকী সালাত আদায় করছে। তখন তিনি বললেন, এই ব্যক্তিকে সাদাকা করার মতো কেউ নেই কি? এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে সালাত আদায় করল। [আবু দাউদ, হা/৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৮; দারেমী, হা/১৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/৪৪১৭; মিশকাত, হা/১১৪৬।]
عَنْ أَبِى سَعِيدٍ الْخُدْرِىِّ أَنَّ رَسُولَ اللّٰهِ - - أَبْصَرَ رَجُلًا يُصَلِّى وَحْدَهٗ فَقَالَ أَلَا رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلٰى هٰذَا فَيُصَلِّىَ مَعَهٗ
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদা (জামাআত শেষ হওয়ার পর) রাসূলুল্লাহ ﷺ দেখতে পেলেন যে, এক ব্যক্তি একাকী সালাত আদায় করছে। তখন তিনি বললেন, এই ব্যক্তিকে সাদাকা করার মতো কেউ নেই কি? এ কথা শুনে এক ব্যক্তি উঠে তার সাথে সালাত আদায় করল। [আবু দাউদ, হা/৫৭৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৬৩১; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৮; দারেমী, হা/১৩৬৮; জামেউস সগীর, হা/৪৪১৭; মিশকাত, হা/১১৪৬।]
দ্বিতীয় জামাআতে ইকামত দেয়া যাবে না মনে করা সুন্নাতের বিপরীত। সুন্নাত হচ্ছে, ফরয সালাতের পূর্বে ইকামত দেয়া। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ النَّبِىَّ - - قَالَ لَهُ أَوْ لِصَاحِبٍ لَهُ إِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَأَذِّنَا ثُمَّ أَقِيمَا ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا
মালেক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ তাকে অথবা তার সাহাবীদেরকে বললেন, যখন সালাতের সময় উপস্থিত হবে, তখন তোমরা আযান দেবে, তারপর ইকামত দেবে, তারপর তোমাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড়জন ইমামতি করবে। [আবু দাউদ, হা/৫৮৯; সুনানে নাসাঈ, হা/৬৬৭-৬৬৯।]
عَنْ مَالِكِ بْنِ الْحُوَيْرِثِ أَنَّ النَّبِىَّ - - قَالَ لَهُ أَوْ لِصَاحِبٍ لَهُ إِذَا حَضَرَتِ الصَّلاَةُ فَأَذِّنَا ثُمَّ أَقِيمَا ثُمَّ لْيَؤُمَّكُمَا أَكْبَرُكُمَا
মালেক ইবনে হুওয়াইরিছ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী ﷺ তাকে অথবা তার সাহাবীদেরকে বললেন, যখন সালাতের সময় উপস্থিত হবে, তখন তোমরা আযান দেবে, তারপর ইকামত দেবে, তারপর তোমাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত বড়জন ইমামতি করবে। [আবু দাউদ, হা/৫৮৯; সুনানে নাসাঈ, হা/৬৬৭-৬৬৯।]
অধিকাংশ মসজিদেই দেখা যায় যে, মাগরিবের ওয়াক্তে আযান দেয়ার পর পরই ফরয সালাত আদায়ের জন্য ইকামত দেয়া হয়। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে এরূপ করা হতো না; অন্ততপক্ষে দুই রাকআত সুন্নাত আদায় করার সময় পার্থক্য থাকত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ ثَلَاثًا لِمَنْ شَاءَ
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল আল-মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতি দুই আযান অর্থাৎ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে কিছু সালাত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তৃতীয়বারে তিনি বললেন, যে পড়তে চায়। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৪; সহীহ মুসলিম, হা/ আবু দাউদ, হা/১২৮৫।]
অতএব অন্যান্য সালাতের ন্যায় মাগরিবের সালাতেও আযানের পর অল্প সময় (অন্তত ৫ মিনিট) অপেক্ষা করা উচিত।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ الْمُزَنِيِّ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ بَيْنَ كُلِّ أَذَانَيْنِ صَلَاةٌ ثَلَاثًا لِمَنْ شَاءَ
আবদুল্লাহ ইবনে মুগাফফাল আল-মুযানী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, প্রতি দুই আযান অর্থাৎ আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ে কিছু সালাত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, তৃতীয়বারে তিনি বললেন, যে পড়তে চায়। [সহীহ বুখারী, হা/৬২৪; সহীহ মুসলিম, হা/ আবু দাউদ, হা/১২৮৫।]
অতএব অন্যান্য সালাতের ন্যায় মাগরিবের সালাতেও আযানের পর অল্প সময় (অন্তত ৫ মিনিট) অপেক্ষা করা উচিত।
অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা মসজিদে উপস্থিত হয়ে রাকআত ধরার জন্য খুব তাড়াহুড়া করে থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকেই সুন্দরভাবে অযু করারও সুযোগ পায় না। অথচ সুন্দরভাবে অযু করে ধীরে সুস্থে জামাআতের সাথে শরীক হওয়াই ছিল রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পক্ষ হতে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا سَمِعْتُمُ الإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلاَةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা ইকামত শ্রবণ করার সাথে সাথেই জামা‘আতে শরীক হতে চলে আসবে। সে সময় ধীরস্থিরতা এবং গাম্ভীর্যতা অবলম্বন করবে। আর এ ক্ষেত্রে তোমরা তাড়াহুড়া করবে না। তোমরা জামা‘আতে যে কয় রাক‘আত পাবে তা আদায় করবে, আর যে কয় রাক‘আত ছুটে যায় তা পরে পূর্ণ করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬।]
অতএব কোনরূপ তাড়াহুড়ার আশ্রয় না নিয়ে সম্পূর্ণ ধীরে-সুস্থে জামাআতে শরীক হওয়া উচিত। এতে করে সালাত আদায় করে প্রশান্তি লাভ করা যাবে এবং যথাযথভাবে সালাত আদায় করা হবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : إِذَا سَمِعْتُمُ الإِقَامَةَ فَامْشُوا إِلَى الصَّلاَةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ وَالْوَقَارِ وَلاَ تُسْرِعُوا، فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমরা ইকামত শ্রবণ করার সাথে সাথেই জামা‘আতে শরীক হতে চলে আসবে। সে সময় ধীরস্থিরতা এবং গাম্ভীর্যতা অবলম্বন করবে। আর এ ক্ষেত্রে তোমরা তাড়াহুড়া করবে না। তোমরা জামা‘আতে যে কয় রাক‘আত পাবে তা আদায় করবে, আর যে কয় রাক‘আত ছুটে যায় তা পরে পূর্ণ করে নিবে। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩৬।]
অতএব কোনরূপ তাড়াহুড়ার আশ্রয় না নিয়ে সম্পূর্ণ ধীরে-সুস্থে জামাআতে শরীক হওয়া উচিত। এতে করে সালাত আদায় করে প্রশান্তি লাভ করা যাবে এবং যথাযথভাবে সালাত আদায় করা হবে।
অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা মসজিদে এসে জামাআত শুরু হয়ে গেছে দেখেও সাথে সাথে জামাআতে শরীক হন না; ইমাম যদি সিজদার অবস্থায় থাকে অথবা প্রথম তাশাহ্হুদের জন্য বৈঠক অবস্থায় থাকে, তাহলে তারা ইমামের দাঁড়ানোর জন্য অপেক্ষা করেন। এসব কর্ম রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনার বিপরীত। হাদীসে এসেছে,
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ النَّبِيِّ إِذَا أَتٰى أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ وَالْإِمَامُ عَلٰى حَالٍ فَلِيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ
মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাতে এসে ইমামকে যে অবস্থায় দেখতে পায় তখন ইমাম যা করে সে-ও যেন তা করে অর্থাৎ সে অবস্থায় যেন ইক্তিদা করে। [তিরমিযী, হা/৫৯১।]
সুতরাং মসজিদে আগমন করে কোনরূপ অপেক্ষা না করে সাথে সাথেই জামাআতের সাথে শরীক হয়ে যাওয়া উচিত।
عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ قَالَ قَالَ النَّبِيِّ إِذَا أَتٰى أَحَدُكُمُ الصَّلَاةَ وَالْإِمَامُ عَلٰى حَالٍ فَلِيَصْنَعْ كَمَا يَصْنَعُ الْإِمَامُ
মুয়ায ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ সালাতে এসে ইমামকে যে অবস্থায় দেখতে পায় তখন ইমাম যা করে সে-ও যেন তা করে অর্থাৎ সে অবস্থায় যেন ইক্তিদা করে। [তিরমিযী, হা/৫৯১।]
সুতরাং মসজিদে আগমন করে কোনরূপ অপেক্ষা না করে সাথে সাথেই জামাআতের সাথে শরীক হয়ে যাওয়া উচিত।
অনেক মুসল্লিকেই ইমামের অনুসরণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী হতে দেখা যায়। তাকবীর বলা, রুকূতে যাওয়া, রুকূ থেকে উঠা, সিজদায় যাওয়া, সিজদা থেকে উঠা এবং সালাম ফেরানো এসব ক্ষেত্রে কোন অবস্থাতেই ইমামের অগ্রগামী হওয়া যাবে না। এটি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অবাধ্যতার শামিল। হাদীসে এসেছে,
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : أَمَا يَخْشَى أَحَدُكُمْ أَوْ لاَ يَخْشَى أَحَدُكُمْ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يَجْعَلَ اللهُ رَأْسَهٗ رَأْسَ حِمَارٍ؟ أَوْ يَجْعَلَ اللهُ صُورَتَهٗ صُورَةَ حِمَارٍ؟
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সালাতে ইমামের পূর্বেই মাথা উঠায় সে কি তার মাথাকে আল্লাহ গাধার মাথায় পরিণত করার অর্থাৎ তাকে গাধার আকৃতি দান করার ভয় করে না? [সহীহ বুখারী, হা/৬৯১।]
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ : أَمَا يَخْشَى أَحَدُكُمْ أَوْ لاَ يَخْشَى أَحَدُكُمْ إِذَا رَفَعَ رَأْسَهٗ قَبْلَ الْإِمَامِ أَنْ يَجْعَلَ اللهُ رَأْسَهٗ رَأْسَ حِمَارٍ؟ أَوْ يَجْعَلَ اللهُ صُورَتَهٗ صُورَةَ حِمَارٍ؟
আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সালাতে ইমামের পূর্বেই মাথা উঠায় সে কি তার মাথাকে আল্লাহ গাধার মাথায় পরিণত করার অর্থাৎ তাকে গাধার আকৃতি দান করার ভয় করে না? [সহীহ বুখারী, হা/৬৯১।]
অনেক মসজিদেই দেখা যায় যে, জুমু‘আর দিন মুয়াজ্জিন জুমু‘আর দ্বিতীয় আযান মিম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে নিম্নস্বরে দিয়ে থাকেন। এরূপ নিয়ম ইসলামে নেই। নিয়ম হচ্ছে আযান সর্বদা উচ্চৈঃস্বরে দেয়া, যাতে করে অধিক সংখ্যক লোক শুনতে পায়। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যুগে জুমু‘আর আযানের প্রচলন ছিল মাত্র একটি। অতঃপর উসমান (রাঃ) এর যুগে মানুষের প্রয়োজনের ভিত্তিতে দুই আযানের নিয়ম চালু হয়। সে সময় প্রথম আযানটি দেয়া হতো খুতবা শুরু হওয়ার বেশ কিছু সময় পূর্বে। আর দ্বিতীয় আযানটিই ছিল জুমু‘আর সালাত শুরু হওয়ার প্রকৃত আযান। আর সেটি দেয়া হতো মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে উচ্চৈঃস্বরে। অতএব জুমু‘আর দ্বিতীয় আযান মিম্বরের সামনে দাঁড়িয়ে নিম্নস্বরে দেয়াটা সুন্নাতের খেলাফ।
জুমু‘আর খুতবার সময় খতীব সাহেব মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রথমে সালাম না দেয়া শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো প্রথমে সালাম দেয়া তারপরে বসা। জুমু‘আর খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে ইমাম মিম্বরে দাঁড়িয়ে প্রথমে উপস্থিত মুসল্লীদেরকে সালাম দেয়া সুন্নাত। হাদীসে এসেছে, জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী ﷺ যখন (খুতবা দেয়ার উদ্দেশ্যে) মিম্বরে দাঁড়াতেন, তখন মুসল্লীদেরকে সালাম দিতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১১০৯।]
জুমু‘আর সালাতের প্রথম খুতবার সময় কিংবা দ্বিতীয় খুতবার সময়ও কোন চাঁদা ওঠানো কিংবা কাতারে কাতারে টাকা পয়সার জন্য কোন বক্স চালিয়ে দেয়া কোনটিই শুদ্ধ বা জায়েয নয়। খুতবা প্রদানকালীন সময় শুধু দুই রাকআত তাহিয়্যাতুল মসজিদের সালাত আদায় করা ব্যতীত আর কোন কাজ করা বৈধ নয়। [সহীহ বুখারী, হা/৯৩১, ৯৩৪; সহীহ মুসলিম, হা/২০২২।]
বর্তমানে অনেক ঈদের মাঠে দেখা যায় যে, ইমাম সাহেব খুতবা প্রদানের পর মুসল্লিদেরকে সাথে নিয়ে পৃথকভাবে হাত তুলে মুনাজাত করে থাকেন। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ অথবা সালফে সালেহীন থেকে এরূপ কোন নিয়ম প্রমাণিত নয়। সুতরাং শুদ্ধ হচ্ছে খুতবার শেষাংশে কোন হাত উত্তোলন না করে মুসলিমদের কল্যাণ কামনা করে দু‘আ করা এবং এর মাধ্যমেই খুতবার সমাপ্তি ঘোষণা করা।
অনেক অঞ্চলে দেখা যায় যে, জানাযার সালাত আদায় করার সময় ইমাম সাহেব সর্বদা লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়ান। এ ক্ষেত্রে পুরুষ লাশ অথবা মহিলা লাশের মধ্যে কোন পার্থক্য করেন না। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিয়ম ছিল, লাশটি যদি কোন পুরুষের হতো, তাহলে তিনি উক্ত লাশের মাথা বরাবর দাঁড়াতেন; আর লাশটি যদি কোন মহিলার হতো, তাহলে তিনি লাশের মাঝ বরাবর দাঁড়াতেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
وَعَن أبي غَالب نَافِع ، وَقيل رَافع ، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَلٰى جَنَازَةِ رَجُلٍ فَقَامَ حِيَالَ رَأسه
আবু গালিব নাফে‘ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সাথে একজন পুরুষের জানাযার সালাত আদায় করলাম। তখন তিনি তার মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। [ইবনে মাজাহ হা/১৪৯৪; তিরমিযী, হা/১০৩৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَمُرَةَ قَالَ صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ عَلَى امْرَأَةٍ مَاتَتْ فِي نِفَاسِهَا فَقَامَ عَلَيْهَا وَسَطَهَا
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর পেছনে প্রসূতি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী এক মহিলার জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। সে সময় তিনি তার মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়িয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩১-৩২।]
অতএব জানাযার সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এরূপ নিয়মই অনুসরণ করা উচিত।
وَعَن أبي غَالب نَافِع ، وَقيل رَافع ، قَالَ : صَلَّيْتُ مَعَ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ عَلٰى جَنَازَةِ رَجُلٍ فَقَامَ حِيَالَ رَأسه
আবু গালিব নাফে‘ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সাথে একজন পুরুষের জানাযার সালাত আদায় করলাম। তখন তিনি তার মাথা বরাবর দাঁড়ালেন। [ইবনে মাজাহ হা/১৪৯৪; তিরমিযী, হা/১০৩৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَمُرَةَ قَالَ صَلَّيْتُ وَرَاءَ النَّبِيِّ عَلَى امْرَأَةٍ مَاتَتْ فِي نِفَاسِهَا فَقَامَ عَلَيْهَا وَسَطَهَا
সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি নবী ﷺ এর পেছনে প্রসূতি অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী এক মহিলার জানাযায় শরীক হয়েছিলাম। সে সময় তিনি তার মাঝামাঝি স্থানে দাঁড়িয়েছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩১-৩২।]
অতএব জানাযার সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে এরূপ নিয়মই অনুসরণ করা উচিত।
জানাযার সালাত আদায় করার সময় অনেক মুসল্লিকে দেখা যায় যে, প্রথম তাকবীরের পর কেবল ছানা পাঠ করে থাকেন। অথচ সুন্নাত হচ্ছে ইমাম-মুক্তাদী উভয়ে সূরা ফাতিহা পাঠ করা। হাদীসে এসেছে,
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ
ত্বালহা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আউফ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এর পেছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম। তখন তিনি তাকবীরের পর (উচ্চৈঃস্বরে) সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। তারপর বললেন, (আমি এজন্য এরূপ করেছি-) যাতে তোমরা জানতে পার যে, এরূপ করাটা সুন্নাত। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৮৭; আবু দাউদ, হা/৩২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৭১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৪২৭; মিশকাত, হা/১৬৫৪।]
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ لِيَعْلَمُوا أَنَّهَا سُنَّةٌ
ত্বালহা ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আউফ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) এর পেছনে জানাযার সালাত আদায় করলাম। তখন তিনি তাকবীরের পর (উচ্চৈঃস্বরে) সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। তারপর বললেন, (আমি এজন্য এরূপ করেছি-) যাতে তোমরা জানতে পার যে, এরূপ করাটা সুন্নাত। [সহীহ বুখারী, হা/১৩৩৫; নাসাঈ, হা/১৯৮৭; আবু দাউদ, হা/৩২০০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩০৭১; মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/৬৪২৭; মিশকাত, হা/১৬৫৪।]
অনেক ইমাম ও মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা কেবল একদিকে সালাম ফিরিয়ে সাহু সিজদা দিয়ে থাকেন। তারপর নতুন করে তাশাহ্হুদ, দরূদ ও দু‘আ পাঠ করে থাকেন। অথচ এর স্বপক্ষে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সুন্নাহ হতে স্পষ্ট কোন দলীল নেই। ইমাম শাওকানী (রহ.) তার ফাতহুল কাদীর নামক গ্রন্থে এরূপ করাকে বিদআত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। [ফাতহুল কাদীর, ১/২২২ পৃঃ।] সুতরাং এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সহীহ সুন্নাহের অনুসরণ করা আবশ্যক। আর তা হলো-
১. সালাতের শেষ বৈঠকে সবকিছু পাঠ করার পর সালাম ফিরানোর আগে দুটি সিজদা করতে হবে, তারপর সালাম ফিরাতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত পড়ালেন এবং প্রথম দু’রাক‘আতের পর না বসেই অর্থাৎ তাশাহ্হুদ না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুক্তাদীগণও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি যখন সালাত প্রায় পূর্ণ করে ফেলেছেন আর মুক্তাদীগণও সালাম ফিরানোর জন্য অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন তিনি সালাম ফিরানোর আগে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম, হা/১২৯৭।]
২. সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত পড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? সাহাবী বললেন, আপনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সিজদা করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৬; আবু দাউদ, হা/১০২১; তিরমিযী, হা/৩৯২; নাসাঈ, হা/১২৫৫।]
১. সালাতের শেষ বৈঠকে সবকিছু পাঠ করার পর সালাম ফিরানোর আগে দুটি সিজদা করতে হবে, তারপর সালাম ফিরাতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে বুহায়না (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত পড়ালেন এবং প্রথম দু’রাক‘আতের পর না বসেই অর্থাৎ তাশাহ্হুদ না পড়েই দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুক্তাদীগণও তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে গেল। তিনি যখন সালাত প্রায় পূর্ণ করে ফেলেছেন আর মুক্তাদীগণও সালাম ফিরানোর জন্য অপেক্ষা করছিল, ঠিক তখন তিনি সালাম ফিরানোর আগে ‘‘আল্লা-হু আকবার’’ বলে বসা অবস্থায় দুটি সিজদা করলেন। তারপর সালাম ফিরালেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৪; সহীহ মুসলিম, হা/১২৯৭।]
২. সালাত শেষে সালাম ফিরানোর পর দুটি সিজদা করতে হবে। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ ﷺ যোহরের সালাত ৫ রাক‘আত পড়ে ফেললেন। অতঃপর তাকে বলা হলো, সালাত কি বৃদ্ধি করা হয়েছে? তিনি বললেন, কী হয়েছে? সাহাবী বললেন, আপনি পাঁচ রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। তারপর রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাম ফিরানোর পর দুটি সাহু সিজদা করলেন। [সহীহ বুখারী, হা/১২২৬; আবু দাউদ, হা/১০২১; তিরমিযী, হা/৩৯২; নাসাঈ, হা/১২৫৫।]
প্রচলিত নিয়মে বিতরের সালাত আদায় করা শুদ্ধ নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বিতরের সালাত আদায় করেছেন এক রাকআত কিংবা দুই নিয়মে তিন রাকআত বা তিনের অধিক সংখ্যক বেজোড় রাকাত। বিতরের সালাত ১, ৩, ৫, ৭ ও ৯ রাক‘আত পর্যন্ত পড়া যায়।
এক রাক‘আত বিতর :
এক রাক‘আত বিতর সাধারণ সালাতের মতোই। নিয়ত করে সানা এবং সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর সিজদা করতে হবে, এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
৩ রাক‘আত বিতর :
তিন রাক‘আত বিতর দু’ভাবে আদায় করা যায়। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৫।]
(এক) সাধারণ সালাতের মতো ২ রাক‘আত আদায় করে, ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। অতঃপর উঠে নতুন করে আরো এক রাক‘আত আদায় করে, আবার সালাম ফিরাতে হবে। [ফায়যুল বারী শরহুল বুখারী, ৩/১৮৮।]
(দুই) তিন রাক‘আত সালাত একটানা আদায় করে শেষ রাক‘আতে রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [নাসাঈ, হা/১৭০১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৪৬।]
৫ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৫ রাক‘আত পড়ে শেষ রাক‘আতে সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৭; আবু দাউদ, হা/১৩২৪; তিরমিযী, হা/৪৫৭।]
এক রাক‘আত বিতর :
এক রাক‘আত বিতর সাধারণ সালাতের মতোই। নিয়ত করে সানা এবং সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পড়তে হবে। রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর সিজদা করতে হবে, এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হা/২৬৭; সহীহ বুখারী, হা/৪৭৩; সহীহ মুসলিম, হা/১৭৮২।]
৩ রাক‘আত বিতর :
তিন রাক‘আত বিতর দু’ভাবে আদায় করা যায়। [সহীহ বুখারী, হা/৯৯৫।]
(এক) সাধারণ সালাতের মতো ২ রাক‘আত আদায় করে, ডানে-বামে সালাম ফিরাতে হবে। অতঃপর উঠে নতুন করে আরো এক রাক‘আত আদায় করে, আবার সালাম ফিরাতে হবে। [ফায়যুল বারী শরহুল বুখারী, ৩/১৮৮।]
(দুই) তিন রাক‘আত সালাত একটানা আদায় করে শেষ রাক‘আতে রুকূর আগে বা পরে দু‘আ কুনূত পড়তে হবে। এরপর তাশাহহুদ, দরূদ ও দু‘আ মাসূরা পড়ে সালাম ফিরাতে হবে। [নাসাঈ, হা/১৭০১; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৪৪৬।]
৫ রাক‘আত বিতর :
একটানা ৫ রাক‘আত পড়ে শেষ রাক‘আতে সালাম ফিরাবে। [সহীহ মুসলিম, হা/৭৩৭; আবু দাউদ, হা/১৩২৪; তিরমিযী, হা/৪৫৭।]
অনেক মুসল্লিকেই দেখা যায় যে, তারা বিশেষ কোন উজর দেখিয়ে বালিশ অথবা অনুরূপ উঁচু কিছুর উপর সিজদা করে থাকে। বিশেষ করে অধিকাংশ গর্ভবর্তী নারীরা এ কাজটি বেশি করে থাকে। অথচ হাদীসে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেমন-
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ : عَادَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِه مَرِيْضًا وَأَنَا مَعَهٗ فَدَخَلَ عَلَيْهِ وَهُوَ يُصَلِّيْ عَلٰى عَوْدٍ فَوَضَعَ جَبْهَتُهٗ عَلَى الْعَوْدِ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ فَطَرَحَ الْعَوْدَ وَأَخَذَ وِسَادَةً فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : دَعْهَا عَنْكَ إِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَسْجُدَ عَلَى الْأَرْضِ وَإِلَّا فَأَوْمِىءْ إِيْمَاءً وَاجْعَلْ سُجُوْدَكَ أَخْفَضَ مِنْ رُكُوْعِكَ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীদের মধ্যে এক রোগী ব্যক্তিকে দেখতে যান। তখন সাথে আমিও ছিলাম। তিনি তার নিকট প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, সে ব্যক্তি একখন্ড কাঠের উপর কপাল রেখে ইশারায় সালাত আদায় করছে। তিনি তা টেনে ফেলে দিলেন। অতঃপর সে ব্যক্তি একটি বালিশ নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি তোমার এ বালিশও বাদ দাও। যদি সম্ভব হয় মাটির উপর সালাত আদায় করো। আর তা না হলে ইশারায় সালাত আদায় করো এবং রুকূর তুলনায় সিজদায় মাথা একটু বেশি নিচু করবে। [সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ, হা/৩২৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩০৮২।]
অতএব যে কোন অবস্থাতেই হোক হয় বালিশ অথবা অনুরূপ কিছুর উপর সিজদা প্রদান করা বৈধ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, সক্ষম হলে সরাসরি জমিনে সিজদা দেয়া অথবা বসে বসে রুকূ থেকে সামান্য বেশি ঝুকে ইশারা করে সিজদা দেয়া।
عَنْ اِبْنِ عُمَرَ قَالَ : عَادَ رَسُوْلُ اللهِ رَجُلًا مِنْ أَصْحَابِه مَرِيْضًا وَأَنَا مَعَهٗ فَدَخَلَ عَلَيْهِ وَهُوَ يُصَلِّيْ عَلٰى عَوْدٍ فَوَضَعَ جَبْهَتُهٗ عَلَى الْعَوْدِ فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ فَطَرَحَ الْعَوْدَ وَأَخَذَ وِسَادَةً فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : دَعْهَا عَنْكَ إِنْ اسْتَطَعْتَ أَنْ تَسْجُدَ عَلَى الْأَرْضِ وَإِلَّا فَأَوْمِىءْ إِيْمَاءً وَاجْعَلْ سُجُوْدَكَ أَخْفَضَ مِنْ رُكُوْعِكَ
ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর সাহাবীদের মধ্যে এক রোগী ব্যক্তিকে দেখতে যান। তখন সাথে আমিও ছিলাম। তিনি তার নিকট প্রবেশ করে দেখতে পেলেন যে, সে ব্যক্তি একখন্ড কাঠের উপর কপাল রেখে ইশারায় সালাত আদায় করছে। তিনি তা টেনে ফেলে দিলেন। অতঃপর সে ব্যক্তি একটি বালিশ নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি তোমার এ বালিশও বাদ দাও। যদি সম্ভব হয় মাটির উপর সালাত আদায় করো। আর তা না হলে ইশারায় সালাত আদায় করো এবং রুকূর তুলনায় সিজদায় মাথা একটু বেশি নিচু করবে। [সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ, হা/৩২৩; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/১৩০৮২।]
অতএব যে কোন অবস্থাতেই হোক হয় বালিশ অথবা অনুরূপ কিছুর উপর সিজদা প্রদান করা বৈধ নয়। বরং এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, সক্ষম হলে সরাসরি জমিনে সিজদা দেয়া অথবা বসে বসে রুকূ থেকে সামান্য বেশি ঝুকে ইশারা করে সিজদা দেয়া।
পুরুষ ও মহিলাদের সালাতের মধ্যে পদ্ধতিগতভাবে কোন পার্থক্য নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ নারী-পুরুষ সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমরা সেভাবে সালাত আদায় করো, যেভাবে আমাকে সালাত আদায় করতে দেখেছ। [সহীহ বুখারী, হা/৬৩১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৬৩; সহীহ ইবনে খুযায়মা, হা/৩৯৭; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৬৫৮; মিশকাত হা/৬৮৩।]
মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আ আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত হা/৯৪৮, ১৪০৯।]
ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর সাহীহুল বুখারীতে উল্লেখ করেন,
وَكَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِيْ صَلَاتِهَا جَلْسَةً الرَّجُلِ وَكَانَتْ فَقِيْهَةً
উম্মুদ দারদা (রাঃ) সালাতে পুরুষদের ন্যায় বসতেন। আর তিনি ছিলেন একজন ফকীহা তথা মাসআলার ব্যাপারে অভিজ্ঞ মহিলা।
নারীদের রুকূ করার সময় মাথা সামান্য নীচু করা ও সিজদার সময় হাত ও পেট একত্রে জড়িয়ে রাখার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। [বায়হাকী, হা/৩০১৬; সিলসিলা যঈফাহ, হা/২৬৫২ পৃঃ।]
অনুরূপ নারীরা বুকে হাত বাঁধবে আর পুরুষরা নাভির নিচে হাত বাঁধবে- এভাবে হাদীসে ভাগ করা হয়নি।
অনেকের ধারণা পুরুষদের সালাত শেষ হওয়ার আগে ঘরে মহিলাদের সালাত হবে না। এ ধারণাও সঠিক নয়। সালাতের সময় হলেই মহিলারা সালাত আদায় করতে পারবেন।
মসজিদে নববীতে নারী-পুরুষ সকলে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পেছনে একই নিয়মে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ও জুমু‘আ আদায় করেছেন। [সহীহ বুখারী, হা/৮৬৬; নাসাঈ, হা/১৩৩৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৭৩০; সহীহ ইবনে হিববান, হা/২২৩৩; মিশকাত হা/৯৪৮, ১৪০৯।]
ইমাম বুখারী (রহ.) তাঁর সাহীহুল বুখারীতে উল্লেখ করেন,
وَكَانَتْ أُمُّ الدَّرْدَاءِ تَجْلِسُ فِيْ صَلَاتِهَا جَلْسَةً الرَّجُلِ وَكَانَتْ فَقِيْهَةً
উম্মুদ দারদা (রাঃ) সালাতে পুরুষদের ন্যায় বসতেন। আর তিনি ছিলেন একজন ফকীহা তথা মাসআলার ব্যাপারে অভিজ্ঞ মহিলা।
নারীদের রুকূ করার সময় মাথা সামান্য নীচু করা ও সিজদার সময় হাত ও পেট একত্রে জড়িয়ে রাখার হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। [বায়হাকী, হা/৩০১৬; সিলসিলা যঈফাহ, হা/২৬৫২ পৃঃ।]
অনুরূপ নারীরা বুকে হাত বাঁধবে আর পুরুষরা নাভির নিচে হাত বাঁধবে- এভাবে হাদীসে ভাগ করা হয়নি।
অনেকের ধারণা পুরুষদের সালাত শেষ হওয়ার আগে ঘরে মহিলাদের সালাত হবে না। এ ধারণাও সঠিক নয়। সালাতের সময় হলেই মহিলারা সালাত আদায় করতে পারবেন।
কোন মহিলা জামাআতে সালাতে শরীক হতে চাইলে তাকে বাধা দেয়া ঠিক নয়। সঠিক হলো তাকে যেতে দেয়া। সালেম (রাঃ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। নবী ﷺ বলেছেন, তোমাদের কারো স্ত্রী (সালাতের জন্য মসজিদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে তার স্বামী যেন তাকে বাধা না দেয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, যদি তোমাদের স্ত্রীরা তোমাদের কাছে রাত্রে মসজিদে আসার অনুমতি চায়, তাহলে তোমরা তাদেরকে অনুমতি দিয়ে দাও। [সহীহ বুখারী, অন্ধকার ও রাত্রে মহিলাদের মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সম্পর্কে অনুচ্ছেদ; সহীহ মুসলিম, হা/১০২০; আবু দাউদ, মুসনাদুল বাযযার, হা/৮৫৬৯।]
টুপি বা পাগড়ি পরে সালাত আদায় করা সালাতের সৌন্দর্য এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সালাত আদায় করতে গিয়ে টুপি না থাকলে মসজিদ থেকে প্লাস্টিকের টুপি কিংবা নিজের পকেটের রুমাল মাথায় দিয়ে সালাত আদায় করার প্রয়োজন নেই। কারণ সালাতের সময় এভাবে মাথা ঢাকার জন্য শরীয়তে বাধ্য করা হয়নি। আর মাথায় টুপি দেয়া সালাতের শর্তও নয়।
বর্তমানে অনেক মুসলিমকেই দেখা যায় যে, তারা উমরি কাযা নামে এক প্রকার কাযা সালাত আদায় করে থাকে। অথচ এ ধরনের কাযা সালাতের কথা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হচেছ, বালেগ হওয়র পর থেকে অজ্ঞাতসারে কিংবা অবেহলার কারণে যেসব সালাত দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কাযা হয়ে গেছে, সে কারণে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠভাবে তওবা করা এবং সাথে সাথেই পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায়ের সাথে বেশি বেশি নফল সালাত আদায় করা। আশা করা যায়- এসব করলে অনাদায়ের কারণে উপর্জিত পাপসমূহ থেকে ক্ষমা পাওয়া যাবে- ইনশাআল্লাহ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের দিন বান্দার সকল আমলের মধ্যে প্রথমে সালাতের হিসাব নেয়া হবে। যদি তার সালাত সঠিক হয়, তবে সে মুক্তি পাবে এবং সফলতা লাভ করবে। আর যদি তার সালাত সঠিক না হয়, তবে সে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যদি ফরয সালাতের মধ্যে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে বলবেন, দেখো! আমার বান্দার আমলের মধ্যে নফল সালাত আছে কি না, যদি থাকে তবে তা দিয়ে ফরযের ঘাটতি পূর্ণ করে দেয়া হবে। এরপর তার সকল আমলের হিসাব এভাবেই নেয়া হবে। [তিরমিযী হা/৪১৩, নাসাঈ, হা/৪৬৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৪২৬; জামেউস সগীর, হা/৩৭৮৩।]
বর্তমানে অনেক অঞ্চলেই দেখা যায় যে, কেউ যদি কাযা সালাত রেখেই মৃত্যুবরণ করে, তাহলে তার পরিবার অথবা আত্মীয়-স্বজনরা তার পক্ষ হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ সাদাকা করে দেয়। এর দ্বারা তারা ধারণা করে যে, এগুলো হচ্ছে মৃত ব্যক্তির কাযাকৃত সালাতের কাফফারা। অথচ হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَنَسٍِ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذٰلِكَ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে বক্তি সালাত আদায় করতে ভুলে যাবে, সে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই তা আদায় করে নেয়। উক্ত সালাতের এ ছাড়া আর কোন কাফ্ফারা নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭।]
অতএব সালাত আদায় না করার জন্য কোন ধরনে আর্থিক কাফফারা নেই।
عَنْ أَنَسٍِ عَنْ النَّبِيِّ قَالَ مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّ إِذَا ذَكَرَهَا لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذٰلِكَ
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে বক্তি সালাত আদায় করতে ভুলে যাবে, সে স্মরণ হওয়ার সাথে সাথেই তা আদায় করে নেয়। উক্ত সালাতের এ ছাড়া আর কোন কাফ্ফারা নেই। [সহীহ বুখারী, হা/৫৯৭।]
অতএব সালাত আদায় না করার জন্য কোন ধরনে আর্থিক কাফফারা নেই।
বর্তমানে অনেক মসজিদ, মাজার, খানকা ইত্যাদিতে দেখা যায় যে, হালকায়ে যিক্র তথা যিকিরের মাহফিলের নামে বেশ কিছু লোক এক জায়গায় বসে বিশেষ পদ্ধতিতে তালে তালে অথবা হেলে দুলে সমস্বরে একযোগে ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ অথবা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ ইত্যাদি বাক্য উচ্চারণ করে আল্লাহর যিক্র করে থাকে। ইসলামী শরীয়তে এভাবে যিক্র করা বিশুদ্ধ নয়; বরং তা বিদআত। কেননা সহীহ হাদীসসমূহে যিকিরের যেসব পদ্ধতি ও বাক্য পাওয়া যায়, সেগুলোর সাথে এগুলোর কোনো মিল নেই। যেমন হাদীসে এসেছে, خَيْرُ الذِّكْرِ اَلْخَفِىُّ
নীরব যিক্রই হলো উত্তম যিক্র। [মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭৭।]
কুরআনে রয়েছে,
﴿وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ﴾
আর তুমি তোমার প্রতিপালককে ভয় ও বিনয়ের সাথে মনে মনে ও অনুচ্চৈঃস্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় স্মরণ করো এবং তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আরাফ- ২০৫)
নীরব যিক্রই হলো উত্তম যিক্র। [মুসনাদে আহমাদ হা/১৪৭৭।]
কুরআনে রয়েছে,
﴿وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغَافِلِيْنَ﴾
আর তুমি তোমার প্রতিপালককে ভয় ও বিনয়ের সাথে মনে মনে ও অনুচ্চৈঃস্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় স্মরণ করো এবং তুমি উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না। (সূরা আরাফ- ২০৫)
ইসলামের একমাত্র হজ্জ হচ্ছে সেটিই, যেটি প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসে মক্কায় পালন করতে হয়। এছাড়া পৃথিবীতে হজ্জ নামে প্রচলিত বা হজ্জের সমমর্যাদা হিসেবে পরিজ্ঞাত সকল প্রকার কার্যক্রমই বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং বর্তমানে আমাদের দেশে টঙ্গীতে প্রতি বৎসর বিশ্ব ইজতেমা নামে যে মাহফিলের আয়োজন করা হয়, সেটিকে হজ্জ মনে করা অথবা হজ্জের সমমর্যাদা দান করা বিদআত।
আমাদের সমাজে দেখা যায় যে, অনেকেই সনদ না জেনে অথবা এর তাহক্বীক না জেনে লোক মুখে অনেক প্রচলিত কথা এবং যঈফ ও জাল হাদীসকে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীস নামে বর্ণনা করে থাকেন। ইসলামের দৃষ্টিতে একটি মারাত্মক অন্যায় কাজ। রাসূলুল্লাহ ﷺ এ ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। যেমন- হাদীসে এসেছে,
عَنْ سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُولُ مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنْ النَّارِ
সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কোন কথা বলল, যা আমি বলিনি- সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা ঠিক করে নিল। [সহীহ বুখারী, হা/১০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ - - مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার স্থানে জাহান্নামে নির্ধারিত করে নিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৩।]
অতএব এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, মানুষের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে কোন হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যে, সেটি আদৌ কোন হাদীস কিনা অথবা সেটির বর্ণনাসূত্র কতটুকু বিশুদ্ধ। যদি দেখা যায় যে, সেটির বর্ণনাসূত্র জাল এবং বানোয়াট, তাহলে সেটি প্রচার করা যাবে না। যদি কারো পক্ষে এসব নির্ণয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ ব্যাপারে হক্বপন্থী আলেমদের কাছে জেনে নেয়া আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
অতএব যদি তোমরা না জান, তাহালে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও।
(সূরা নাহল- ৪৩)
عَنْ سَلَمَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ يَقُولُ مَنْ يَقُلْ عَلَيَّ مَا لَمْ أَقُلْ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنْ النَّارِ
সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ-কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে এমন কোন কথা বলল, যা আমি বলিনি- সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা ঠিক করে নিল। [সহীহ বুখারী, হা/১০৯; ইবনে মাজাহ, হা/৩৪।]
অপর হাদীসে এসেছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ - - مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهٗ مِنَ النَّارِ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন তার স্থানে জাহান্নামে নির্ধারিত করে নিল। [সহীহ মুসলিম, হা/৩।]
অতএব এ ক্ষেত্রে করণীয় হচ্ছে, মানুষের কাছে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নামে কোন হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যে, সেটি আদৌ কোন হাদীস কিনা অথবা সেটির বর্ণনাসূত্র কতটুকু বিশুদ্ধ। যদি দেখা যায় যে, সেটির বর্ণনাসূত্র জাল এবং বানোয়াট, তাহলে সেটি প্রচার করা যাবে না। যদি কারো পক্ষে এসব নির্ণয় করা সম্ভব না হয়, তাহলে এ ব্যাপারে হক্বপন্থী আলেমদের কাছে জেনে নেয়া আবশ্যক। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
অতএব যদি তোমরা না জান, তাহালে জ্ঞানীদের কাছে জিজ্ঞেস করে নাও।
(সূরা নাহল- ৪৩)
আমাদের সমাজেই সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ -এ ৬টি কিতাবকে একসাথে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। কিন্তু এটি শুদ্ধ নয়। কেননা ‘সিহাহ সিত্তাহ’ এর অর্থ হচ্ছে, ছয়টি বিশুদ্ধ গ্রন্থ। অথচ কেবলমাত্র সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম ব্যতীত বাকি সকল কিতাবের মধ্যে অসংখ্য যঈফ হাদীস রয়েছে, যা কোনভাবেই সহীহ হিসেবে সাব্যস্ত নয়। তাছাড়া মুহাদ্দিসগণের কেউই কখনো এগুলোকে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ হিসেবে সাব্যস্ত করে নাই। তবে যেহেতু এগুলো হাদীসের সকল কিতাবের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশুদ্ধতার অধিক কাছাকাছি, সুতরাং তারা এক সাথে ‘কুতুবুস সিত্তাহ’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। অনুরূপভাবে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমকে বাদ দিয়ে বাকী চারটি গ্রন্থকে ‘সুনানুল আরবাআহ’ এবং কেবল সহীহ বুখারী ও মুসলিমকে ‘সহীহাইন’ তথা দুটি বিশুদ্ধ গ্রন্থ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। সুতরাং এসব হাদীসের গ্রন্থকে হাদীস বিশারদদের অনুরূপ নামেই আখ্যায়িত করা উচিত।
বর্তমানে অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা দেখা যায় যে, তারা শুধু কুরআন তিলাওয়াত করেই যাচ্ছেন। কিন্তু তারা এর ভাষ্য অনুধাবন করার কোন চেষ্টাই করছেন না। এ পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত করলে তিলাওয়াতের হক আদায় হয় না। কেননা কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, কুরআনের অর্থ বুঝে তার উপর আমল করা। যেমন- আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার। মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
অতএব কুরআন তিলাওয়াত করার সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, কুরআনের অর্থ অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা এবং এর উপর আমল করা। তাহলেই কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে এবং কুরআন থেকে হেদায়াত লাভ করা যাবে।
كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ
এ কিতাব তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি, যেন তুমি মানবজাতিকে তাদের প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে অন্ধকার হতে আলোর দিকে বের করে আনতে পার। মহাপরাক্রমশালী ও প্রশংসিত আল্লাহর পথে। (সূরা ইবরাহীম- ১)
অতএব কুরআন তিলাওয়াত করার সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে, কুরআনের অর্থ অনুধাবন করে তিলাওয়াত করা এবং এর উপর আমল করা। তাহলেই কুরআন নাযিলের মূল উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে এবং কুরআন থেকে হেদায়াত লাভ করা যাবে।
বর্তমানে অনেকে প্রসাব করার পর ঢিলা নিয়ে নির্দিষ্ট কদম হাঁটাহাঁটি করে। আর এসময় তারা আরো কিছু অদ্ভুত কার্যক্রমও করে থাকে, যেমন- কুত মারা, কাশি দেয়া ইত্যাদি। অথচ ইসলামে এরূপ কার্যাবলির কোনো ভিত্তি নেই। বরং ইসলামের নিয়ম হচ্ছে, যতদূর সম্ভব পানি দ্বারা ইস্তেঞ্জা করা। পানি না পাওয়া গেলে মাটির ঢিলা বা পাথর ব্যবহার করা। কেবলমাত্র পায়খানা থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য তিনটি ঢিলা ব্যবহার করা। ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্রতা অর্জনের জন্য এতটুকু কার্যক্রমই স্বীকৃত। তবে কারো যদি প্রস্রাবের ফোঁটা দেরিতেও বের হয়, তবে সে প্রয়োজনমত সময় নেবে। কিন্তু লজ্জাস্থান ধরে মানুষের সামনে হাঁটবে না। কারণ লজ্জা বজায় রাখা ঈমানের একটি অঙ্গ। [সহীহ মুসলিম, হা/১৬১; আবু দাউদ, হা/৪৬৭৮; সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৩৬১।]
পরনের প্যান্ট-পায়জামা, লুঙ্গি জুববা ইত্যাদি যে কোন সময় পায়ের টাখনোর নিচে পরা হারাম। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, পরনের লুঙ্গির (প্যান্ট-পায়জামা) যে অংশ দুই টাখনোর নিচে থাকবে তা জাহান্নামে যাবে। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৮৭।]
অপর হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি তার পরনের কাপড় অহংকার বা আভিজাত্যবশত ঝুলিয়ে পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৯১।]
অপর হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি তার পরনের কাপড় অহংকার বা আভিজাত্যবশত ঝুলিয়ে পরবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [সহীহ বুখারী, হা/৫৭৯১।]
শুদ্ধ হলো ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ইফতার শুরু করবে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাওয়া আরম্ভ করে তখন সে যেন বলে, بِسْمِ اللهِ (বিস্মিল্লা-হ) অর্থাৎ আল্লাহর নামে শুরু করছি। আর কেউ যদি খাবারের শুরুতে বিস্মিল্লা-হ বলতে ভুলে যায়, তাহলে সে যেন বলে بِسْمِ اللهِ اَوَّلَه وَاٰخِرَه (বিসমিল্লা-হি আওয়ালাহূ ওয়া আ-খিরাহূ) অর্থাৎ এই খাবারের প্রথমেও বিসমিল্লাহ এবং শেষেও বিসমিল্লাহ। [আবু দাউদ, হা/৩৭৬৯; তিরমিযী, হা/১৮৫৮; ইবনে মাজাহ, হা/৩২৬৪; মিশকাত, হা/৪২০২।]
আর ইফতারের পর এ দু‘আ পড়বে,
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْاَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : যাহাবায্ যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু।
অর্থ : পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং নেকী নির্ধারিত হলো যদি আল্লাহ চান। [আবু দাঊদ, হা/২৩৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৯৫; দার কুতনী, হা/২২৭৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৬; বায়হাকী, হা/৭৯২২; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৭; মিশকাত, হা/১৯৯৩।]
ইফতারের সময় ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু....’’ এ দু‘আর সনদ যয়ীফ।
আর ইফতারের পর এ দু‘আ পড়বে,
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوْقُ وَثَبَتَ الْاَجْرُ إِنْ شَاءَ اللهُ
উচ্চারণ : যাহাবায্ যামাউ, ওয়াবতাল্লাতিল ‘উরূকু, ওয়া ছাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লা-হু।
অর্থ : পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং নেকী নির্ধারিত হলো যদি আল্লাহ চান। [আবু দাঊদ, হা/২৩৫৯; মুসনাদুল বাযযার, হা/৫৩৯৫; দার কুতনী, হা/২২৭৯; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/১৫৩৬; বায়হাকী, হা/৭৯২২; জামেউস সগীর, হা/৮৮০৭; মিশকাত, হা/১৯৯৩।]
ইফতারের সময় ‘‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু....’’ এ দু‘আর সনদ যয়ীফ।
কুরবানী করার সামর্থের জন্য যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হতে হবে, তাহলেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে একথা শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো যে ব্যক্তি একটি ছাগল কিংবা একটি মেষ অথবা ভাগে একভাগ কুরবানী করলে তার কোন আর্থিক কষ্ট কিংবা জীবন যাত্রায় কোন সমস্যা হবে না, তার উপরই কুরবানী করা কর্তব্য।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ ، وَلَمْ يُضَحِّ ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য রাখে অথচ কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩১২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৫৬; দার কুতনী, হা/৪৭৬২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৬৬; জামেউস সগীর, হা/১১৪৩৬।]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : مَنْ كَانَ لَه سَعَةٌ ، وَلَمْ يُضَحِّ ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি কুরবানীর সামর্থ্য রাখে অথচ কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। [ইবনে মাজাহ, হা/৩১২৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/৮২৫৬; দার কুতনী, হা/৪৭৬২; মুসত্মাদরাকে হাকেম, হা/৭৫৬৬; জামেউস সগীর, হা/১১৪৩৬।]
কুরবানীদাতা কুরবানী করার সময় তার পরিবারের সাত ব্যক্তির পক্ষ হতে কুরবানী করা শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো যে কুরবানী করবে সে নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ হতে কুরবানী করবে। যেমন- কেউ একটি বা একাধিক গরু কুরবানী করলে তাতে প্রতি গরুর জন্য সাত জনের নাম দিতে হবে- এ কথা সঠিক নয়। বরং নিজের ও পরিবারের সবার পক্ষ থেকেই কুরবানী দিতে হবে। অনুরূপভাবে কেউ একটি ছাগল কুরবানী করলেও তা নিজের এবং পরিবারের সবার পক্ষ থেকে কুরবানী করা সুন্নাত। শুধুমাত্র কুরবানীদাতা কিংবা নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের নামে কুরবানী করা সঠিক নয়।
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ يَقُوْلُ : سَأَلْتُ أَبَا أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيَّ : كَيْفَ كَانَتِ الضَّحَايَا عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَ : كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّيْ بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ أَهْلِ بَيْتِه ، فَيَأْكُلُوْنَ وَيُطْعِمُوْنَ حَتّٰى تَبَاهَى النَّاسُ ، فَصَارَتْ كَمَا تَرٰى
আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু আইয়ূব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় কুরবানী কেমন ছিল? তিনি বললেন, একজন ব্যক্তি একটি ছাগল দ্বারা নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিত। অতঃপর তারা সকলে খেত ও অন্যকে খাওয়াত। এখন তো মানুষ কুরবানী নিয়ে বড়াই শুরু করে দিয়েছে। যার ফলে কুরবানী এমন পর্যায়ে গিয়েছে যা তুমি নিজে দেখছ। [তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৪৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৮২৩; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১১৪২।]
عَنْ عَطَاءِ بْنِ يَسَارٍ يَقُوْلُ : سَأَلْتُ أَبَا أَيُّوْبَ الْأَنْصَارِيَّ : كَيْفَ كَانَتِ الضَّحَايَا عَلٰى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقَالَ : كَانَ الرَّجُلُ يُضَحِّيْ بِالشَّاةِ عَنْهُ وَعَنْ أَهْلِ بَيْتِه ، فَيَأْكُلُوْنَ وَيُطْعِمُوْنَ حَتّٰى تَبَاهَى النَّاسُ ، فَصَارَتْ كَمَا تَرٰى
আতা ইবনে ইয়াসার (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি আবু আইয়ূব (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যামানায় কুরবানী কেমন ছিল? তিনি বললেন, একজন ব্যক্তি একটি ছাগল দ্বারা নিজের ও নিজ পরিবারের পক্ষ হতে কুরবানী দিত। অতঃপর তারা সকলে খেত ও অন্যকে খাওয়াত। এখন তো মানুষ কুরবানী নিয়ে বড়াই শুরু করে দিয়েছে। যার ফলে কুরবানী এমন পর্যায়ে গিয়েছে যা তুমি নিজে দেখছ। [তিরমিযী, হা/১৫০৫; ইবনে মাজাহ, হা/৩১৪৭; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী, হা/৩৮২৩; মুখতাসার ইরওয়ালুল গালীল, হা/১১৪২।]
কোন শিশু অর্থাৎ ছেলে মেয়ে জন্মের সাত দিনের দিন আক্বীক্বা না দিয়ে কুরবানীর সময় গরুর সাত ভাগের মধ্যে দুই ভাগ কিংবা এক ভাগে আক্বীক্বার নাম দেয়া শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো আক্বীক্বার নির্দিষ্ট সময়ে ছেলের জন্য দুটি আর মেয়ের একটি ছাগল দিয়ে আক্বীক্বা দেয়া। তার কারণ হলো কুরবানী এক বিষয়, আক্বীক্বা অন্য বিষয়। আকীকা হলো জানের বদলে জান দেয়া। একটি গরুতে শরীক হয়ে কেউ কুরবানীর নিয়ত করছে আর কেউ আকীকার নিয়ত করছে এটা কী করে হয়। আমাদের দেশে কুরবানীর সাথে আক্বীক্বা দেয়ার যে রেওয়াজটি চালু হয়েছে তা একেবারেই ভুল।
কারো জন্মদিন বা জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুদিবস বা মৃত্যুবার্ষিকী, কোন আওলিয়া-বুযুর্গের জন্ম ও মৃত্যুদিসব, কোন জাতীয় নেতা বা নেত্রীর জন্ম ও মৃত্যুদিবস, ম্যারেজ-ডে, মাতৃদিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এভাবে বিভিন্ন দিবস পালন করা অর্থাৎ এসব দিবসকে কেন্দ্র করে নানান রকমের অনুষ্ঠান করা, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্ধ পালন করা সঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ এ জাতয়ি কোন দিবস পালন করেননি। আর যে কাজ রাসূলুল্লাহ ﷺ করেননি সে কাজ তার কোন উম্মত অর্থাৎ অনুসারী করতে পারে না- যদি সে সত্যিকারের রাসূলুল্লাহ ﷺ এর উম্মত বা অনুসারী হয়। তাছাড়া এগুলো হচ্ছে অমুসলিমদের সংস্কৃতি। কোন মুসিলম অমুসলিমদের কোন সংস্কৃতি বা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের অনুসরণ বা অনুকরণ করতে পারে না। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন, যে ব্যক্তি ভিন্ন জাতির সাদৃশ্য বা অনুকরণের কিছু করে সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। [আবু দাউদ, হা/৪০৩১]
শবে কদর অর্থাৎ কদরের রাত শুধুমাত্র রামাযানের ২৬ তারিখ দিবাগত রাত ২৭ তারিখ একদিনই মনে করা শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো শবে কদর রমযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলো। এ ব্যাপারে হাদীসে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমাযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে খোঁজ করো। [সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৮৯; বায়হাকী, হা/৮৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮৩৪; জামেউস সগীর, হা/৫২৩৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৬; মিশকাত, হা/২০৮৩।]
এ হাদীস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ রাতটি রমাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোতে রয়েছে। আবার এ রাতটি পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ এ বেজোড় তারিখগুলোর মধ্যে একেক বছর একেক তারিখে হতে পারে।
عَنْ عَائِشَةَ ، رَضِيَ اللهُ عَنْهَا ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الْأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, লাইলাতুল কদরকে তোমরা রমাযানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে খোঁজ করো। [সহীহ বুখারী, হা/২০১৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪৮৯; বায়হাকী, হা/৮৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/১৮৩৪; জামেউস সগীর, হা/৫২৩৩; সিলসিলা সহীহাহ, হা/৩৬১৬; মিশকাত, হা/২০৮৩।]
এ হাদীস দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, এ রাতটি রমাযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতগুলোতে রয়েছে। আবার এ রাতটি পরিবর্তন হয়, অর্থাৎ এ বেজোড় তারিখগুলোর মধ্যে একেক বছর একেক তারিখে হতে পারে।
কালেমা তথা لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর অর্থ না জেনেই শুধু মুখে উচ্চারণ করে নিজেকে ঈমানদার দাবি করা ঠিক নয়। বরং কালিমার দাবি হচ্ছে, এর অর্থ অনুধাবন করেই তা পাঠ করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاعْلَمْ أَنَّهٗ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللهُ
জেনে রেখো! আল্লাহ ছাড়া কোন উপাসা্য নেই। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ঃ১৯)
সুতরাং ঈমানের প্রথম বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ আল্লাহ তাআলাই একমাত্র মাবুদ বা উপাস্য। তিনিই সকলের সৃষ্টিকর্তা, তিনিই সকলের রিযিকদাতা, তিনিই মানুষের জীবন যাপনের জন্য আইন ও বিধানদাতা। তিনিই সকল ক্ষমতার উৎস, তিনিই সকলের জীবন-মৃত্যুর মালিক, তিনিই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবকিছু জানার অধিকারী। তিনি সবকিছু শুনেন এবং সবকিছু দেখেন, তিনিই সবকিছু করতে পারেন। সৃষ্টিকুলের মধ্যে যা কিছু হয় সব তাঁর হুকুমেই হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। কালেমার এ প্রথমাংশই হলো তাওহীদের মূল ভিত্তি।
আর ঈমানের দ্বিতীয় বাক্য ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর অর্থ মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল। তিনিই মানুষকে সত্য ও শান্তির পথে আহবানকারী এবং মানুষের প্রকৃত নেতা। তিনিই মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যা বলেছেন, যা করেছেন এবং যা সমর্থন করেছেন তাই হলো দীনের একমাত্র আমল কিংবা ইবাদাত। তিনি ব্যতীত অন্য কারো কোন কথা বা কাজ- ইবাদাত নয়। কালেমার মর্মার্থ যদি এভাবেই মানা না হয়, তাহলে ঈমান আনার পরও মানুষ শিরকে লিপ্ত হওয়া সম্ভব। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا يُؤْمِنُ اَ كْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ﴾
তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ- ১০৬)
فَاعْلَمْ أَنَّهٗ لَاۤ إِلٰهَ إِلَّا اللهُ
জেনে রেখো! আল্লাহ ছাড়া কোন উপাসা্য নেই। (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭ঃ১৯)
সুতরাং ঈমানের প্রথম বাক্য ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর অর্থ আল্লাহ তাআলাই একমাত্র মাবুদ বা উপাস্য। তিনিই সকলের সৃষ্টিকর্তা, তিনিই সকলের রিযিকদাতা, তিনিই মানুষের জীবন যাপনের জন্য আইন ও বিধানদাতা। তিনিই সকল ক্ষমতার উৎস, তিনিই সকলের জীবন-মৃত্যুর মালিক, তিনিই প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সবকিছু জানার অধিকারী। তিনি সবকিছু শুনেন এবং সবকিছু দেখেন, তিনিই সবকিছু করতে পারেন। সৃষ্টিকুলের মধ্যে যা কিছু হয় সব তাঁর হুকুমেই হয়। এ ক্ষেত্রে তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই। কালেমার এ প্রথমাংশই হলো তাওহীদের মূল ভিত্তি।
আর ঈমানের দ্বিতীয় বাক্য ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এর অর্থ মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর রাসূল। তিনিই মানুষকে সত্য ও শান্তির পথে আহবানকারী এবং মানুষের প্রকৃত নেতা। তিনিই মানুষের ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের সর্বোত্তম আদর্শ। তিনি যা বলেছেন, যা করেছেন এবং যা সমর্থন করেছেন তাই হলো দীনের একমাত্র আমল কিংবা ইবাদাত। তিনি ব্যতীত অন্য কারো কোন কথা বা কাজ- ইবাদাত নয়। কালেমার মর্মার্থ যদি এভাবেই মানা না হয়, তাহলে ঈমান আনার পরও মানুষ শিরকে লিপ্ত হওয়া সম্ভব। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَمَا يُؤْمِنُ اَ كْثَرُهُمْ بِاللهِ اِلَّا وَهُمْ مُّشْرِكُوْنَ﴾
তাদের অধিকাংশ আল্লাহকে বিশ্বাস করে, কিন্তু তারা তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করে। (সূরা ইউসুফ- ১০৬)
আল্লাহ তা‘আলা সর্বত্র বিরাজমান- এ আক্বীদা শুদ্ধ নয়। এ ক্ষেত্রে শুদ্ধ হলো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর আরশের উপরেই সমুন্নত। তিনি তাঁর আরশ থেকেই সবকিছু পরিচালনা করেন। তিনি বলেন,
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
اَلرَّحْمٰنُ عَلَى الْعَرْشِ اسْتَوٰى
দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর সমাসীন। (সূরা ত্বা-হা- ৫)
هُوَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَ الْاَ رْضَ فِيْ سِتَّةِ اَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوٰى عَلَى الْعَرْشِ
তিনিই ছয় দিনে আকাশমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর আরশে সমাসীন হয়েছেন। (সূরা হাদীদ- ৪)
আল্লাহ তা‘আলাকে ‘খোদা’ বলে সম্বোধন করা কিংবা খোদা নামে ডাকা শুদ্ধ নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা কুরআন মাজীদে তাঁকে যেসব নামে ডাকতে বলেছেন ‘খোদা’ তার অন্তর্ভুক্ত নয়। আল্লাহর সিফাতী (গুণবাচক নামগুলোর মধ্যে ‘খোদা’ কোন নাম নেই। তিনি বলেছেন,
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا ‐ وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই আহবান করো। যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে।
(সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
তাই যেসব নাম কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে তা দিয়ে আল্লাহকে ডাকা কর্তব্য।
وَلِلّٰهِ الْاَ سْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا ‐ وَذَرُوا الَّذِيْنَ يُلْحِدُوْنَ فِۤي اَسْمَآئِهٖؕ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ
আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সেসব নামেই আহবান করো। যারা তাঁর নাম বিকৃত করে তাদেরকে বর্জন করো; অচিরেই তাদের কৃতকর্মের ফল তাদেরকে দিয়ে দেয়া হবে।
(সূরা আ‘রাফ- ১৮০)
তাই যেসব নাম কুরআন ও হাদীসে উল্লেখ আছে তা দিয়ে আল্লাহকে ডাকা কর্তব্য।
নারায়ে তাকবীর নয়। লিল্লাহি তাকবীর, আল্লাহ আকবার’ এ তাকবীর ধ্বনি ছাড়া অন্য কোন নামে যেমন- ‘নারায়ে রিসালাত, ইয়া রাসূলাল্লাহ’ ‘নারায়ে গাউছিয়া, ইয়া গাউছুল আজম দস্তগীর’, ‘নারায়ে অমুক’ ‘নারায়ে তমুক’ ইত্যাদি ধ্বনি দেয়া শুদ্ধ নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন তাকবীর ধ্বনি দিতেন তখন শুধু আল্লাহর নামেই দিতেন। এর সাথে আর কারো নামে ধ্বনি দিতেন না। খায়বার অভিযানের সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ খায়বারে গিয়ে পৌঁছলে তিনি ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর ধ্বনি দেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪১৯৮।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ নূরের সৃষ্টি এ আক্বীদা-বিশ্বাস শুদ্ধ নয়। এ ক্ষেত্রে সঠিক আক্বীদা হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ মানুষ হিসেবে আদম (আঃ) থেকে সৃষ্ট। আর আদমকে সৃষ্টি করা হয়েছে মাটি থেকে। তাই তিনিও মাটির মানুষ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি কাদামাটি থেকে একজন মানুষ সৃষ্টি করব। (সূরা সদ- ৭১)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ। (সূরা কাহফ- ১১০)
وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ
যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদেরকে বললেন, আমি কাদামাটি থেকে একজন মানুষ সৃষ্টি করব। (সূরা সদ- ৭১)
قُلْ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰۤى اِلَيَّ اَنَّمَاۤ اِلٰهُكُمْ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ
বলো, আমি তো তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহ্ একমাত্র ইলাহ। (সূরা কাহফ- ১১০)
রাসূলুল্লাহ ﷺ গায়েব জানেন- এ আক্বীদা শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো সমস্ত গায়েব সম্পর্কে জানার অধিকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। তিনি বলেছেন,
﴿قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ﴾
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
﴿وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ﴾
(বলো) আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তবে তো আমি প্রকৃতপক্ষে কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
তাছাড়া হাদীসেও এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّه يُخْبِرُ بِمَا يَكُوْنُ فِيْ غَدٍ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ وَاللهُ يَقُوْلُ ﴿قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ﴾
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর ওহী ব্যতীত আগামীকাল কী হবে- তা অবহিত করতে পারেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘বলো, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না’’- (সূরা নাম্ল- ৬৫)। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৭।]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস ছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ গায়েব সম্পর্কে কোনকিছু অবগত ছিলেন না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে গায়েবের বিষয়ে যা কিছু জানাতেন, তিনি কেবল তা-ই জানতে পারতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ اَحَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا﴾
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন। (সূরা জিন- ২৬, ২৭)
﴿قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِى السَّمَاوَاتِ وَالْاَ رْضِ الْغَيْبَ اِلَّا اللهُؕ وَمَا يَشْعُرُوْنَ اَيَّانَ يُبْعَثُوْنَ﴾
বলো, আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেউ অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন উত্থিত হবে। (সূরা নামল- ৬৫)
﴿وَلَوْ كُنْتُ اَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِۚ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوْٓءُۚ اِنْ اَنَا اِلَّا نَذِيْرٌ وَّبَشِيْرٌ لِّقَوْمٍ يُّؤْمِنُوْنَ﴾
(বলো) আমি যদি অদৃশ্যের খবর জানতাম, তবে তো আমি প্রকৃতপক্ষে কল্যাণই লাভ করতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা। (সূরা আ‘রাফ- ১৮৮)
তাছাড়া হাদীসেও এ বিষয়টি আরো স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যেমন-
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ وَمَنْ زَعَمَ أَنَّه يُخْبِرُ بِمَا يَكُوْنُ فِيْ غَدٍ فَقَدْ أَعْظَمَ عَلَى اللهِ الْفِرْيَةَ وَاللهُ يَقُوْلُ ﴿قُلْ لَّا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللهُ﴾
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা বলে যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর ওহী ব্যতীত আগামীকাল কী হবে- তা অবহিত করতে পারেন, সে আল্লাহর উপর ভীষণ অপবাদ দেয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘বলো, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত গায়েব সম্পর্কে কেউ জানে না’’- (সূরা নাম্ল- ৬৫)। [সহীহ মুসলিম, হা/৪৫৭।]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস ছাড়াও রাসূলুল্লাহ ﷺ এর জীবনে সংঘটিত অসংখ্য ঘটনার দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ গায়েব সম্পর্কে কোনকিছু অবগত ছিলেন না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে গায়েবের বিষয়ে যা কিছু জানাতেন, তিনি কেবল তা-ই জানতে পারতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلٰى غَيْبِهٖۤ اَحَدًا ‐ اِلَّا مَنِ ارْتَضٰى مِنْ رَّسُوْلٍ فَاِنَّهٗ يَسْلُكُ مِنْ ۢبَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهٖ رَصَدًا﴾
তিনি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী, তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো নিকট প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। নিশ্চয় তিনি তার সামনে এবং পেছনে প্রহরী নিয়োজিত করে রেখেছেন। (সূরা জিন- ২৬, ২৭)
নবুওয়াতের যুগ শেষ এবং খিলাফাতের যুগও শেষ। এখন আওলিয়া-বুযুর্গ ও পীর-মাশাইখদের আনুগত্য এবং অনুসরণেই মুক্তি এবং শান্তি রয়েছে- এ কথা আদৌ সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সবসময় আনুগত্য করতে বলেছেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
ঈমানদারের কাজকর্ম সফল হওয়া পূর্ণভাবে নির্ভর করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের উপর। তাঁর আনুগত্য ব্যতীত এমন কোন কাজই আর সৎকাজ থাকে না, যার জন্য মানুষ কোন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হতে পারে। সকল কাজের সফলতা হলো আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্যে।
﴿يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَاَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَلَا تُبْطِلُوْاۤ اَعْمَالَكُمْ﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো এবং নিজেদের আমলকে নষ্ট করে দিয়ো না। (সূরা মুহাম্মাদ- ৩৩)
ঈমানদারের কাজকর্ম সফল হওয়া পূর্ণভাবে নির্ভর করে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের উপর। তাঁর আনুগত্য ব্যতীত এমন কোন কাজই আর সৎকাজ থাকে না, যার জন্য মানুষ কোন পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য বলে গণ্য হতে পারে। সকল কাজের সফলতা হলো আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যের মধ্যে।
‘আওলিয়া’ অলী শব্দের বহু বচন। এর ফার্সী প্রতিশব্দ হলেন বুযুর্গ। ইসলামে আওলিয়া-বুযুর্গ বলতে কিছুই নেই- এমন কথা সঠিক নয়। সঠিক হলো ইসলামে আওলিয়া-বুযুর্গ আছেন, বরং মহান মর্যাদা নিয়েই আছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস- ৬২, ৬৩)
উক্ত আয়াতে অলীর মর্যাদা এবং পরিচয় দুটিই বর্ণনা করা হয়েছে। অলী অর্থ বন্ধু, প্রিয়। যারা আল্লাহর প্রিয় হতে পারবে তাদের যেমন ভয় নেই, থাকবে না কোন দুশ্চিন্তা। এটা হলো আল্লাহর অলীদের মর্যাদা। আর অলীদের পরিচয় বলা হয়েছে, যারা ঈমান আনার পর তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে থাকেন। অর্থাৎ যারা বাস্তব জীবনে আল্লাহপ্রদত্ত ও তাঁর রাসূলের প্রদর্শিত আদেশ-নিষেধ সম্পূর্ণ মেনে চলেন। যাদের জীবনে কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভুত কোন আমল পরিলক্ষিত হয় না। তাকওয়ার এ নীতি অবলম্বনকারীগণই হলেন প্রকৃত অলী। কিন্তু তাদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বা তারা কারো উপকার ও ক্ষতি করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা ঠিক নয়।
اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِيَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ ‐ اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ
জেনে রেখো! নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না। (তারা হচ্ছে ঐসব ব্যক্তি) যারা ঈমান আনয়ন করে এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করে। (সূরা ইউনুস- ৬২, ৬৩)
উক্ত আয়াতে অলীর মর্যাদা এবং পরিচয় দুটিই বর্ণনা করা হয়েছে। অলী অর্থ বন্ধু, প্রিয়। যারা আল্লাহর প্রিয় হতে পারবে তাদের যেমন ভয় নেই, থাকবে না কোন দুশ্চিন্তা। এটা হলো আল্লাহর অলীদের মর্যাদা। আর অলীদের পরিচয় বলা হয়েছে, যারা ঈমান আনার পর তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করে থাকেন। অর্থাৎ যারা বাস্তব জীবনে আল্লাহপ্রদত্ত ও তাঁর রাসূলের প্রদর্শিত আদেশ-নিষেধ সম্পূর্ণ মেনে চলেন। যাদের জীবনে কুরআন-সুন্নাহ বহির্ভুত কোন আমল পরিলক্ষিত হয় না। তাকওয়ার এ নীতি অবলম্বনকারীগণই হলেন প্রকৃত অলী। কিন্তু তাদের নিয়ে বাড়াবাড়ি করা বা তারা কারো উপকার ও ক্ষতি করতে পারেন বলে বিশ্বাস করা ঠিক নয়।
পরকালে নাজাতের জন্য পীর-মুরশিদগণ আল্লাহর কাছে সুপারিশ করতে পারবে বলে তাদের হাতে বাইআত হতে হবে এ আক্বীদা-বিশ্বাস শুদ্ধ নয়। কারণ পরকালে আল্লাহর দরবারে তাঁর অনুমতি ছাড়া কেউ কোন সুপারিশ করতে পারবে না। তিনি বলেছেন,
مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
তিনি আরো বলেন,
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
আল্লাহর সমকক্ষ হওয়া, তাঁর মালিকানায় শরীক হওয়া অথবা তাঁর সাহায্যকারী হওয়া তো দূরের কথা সমগ্র বিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই, যে আল্লাহর সামনে কারো পক্ষে নিজ ইচ্ছায় সুপারিশ করতে পারবে। অথচ পৃথিবীতে কতক মানুষ এমন ভুল ধারণাও নিয়ে বসে আছে যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়জন আছে যাদের সুপারিশ আল্লাহকে মানতে হবে। মায়াযাল্লাহ!
مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖ
আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? (সূরা বাক্বারা- ২৫৫)
তিনি আরো বলেন,
يَوْمَئِذٍ لَّا تَنْفَعُ الشَّفَاعَةُ اِلَّا مَنْ اَذِنَ لَهُ الرَّحْمٰنُ وَرَضِيَ لَهٗ قَوْلًا
সেদিন দয়াময় যাকে অনুমতি দেবেন এবং যার কথা তিনি পছন্দ করবেন সে ব্যতীত অন্য কারো সুপারিশ কোন কাজে আসবে না। (সূরা ত্বা-হা- ১০৯)
আল্লাহর সমকক্ষ হওয়া, তাঁর মালিকানায় শরীক হওয়া অথবা তাঁর সাহায্যকারী হওয়া তো দূরের কথা সমগ্র বিশ্বে এমন কোন সত্তা নেই, যে আল্লাহর সামনে কারো পক্ষে নিজ ইচ্ছায় সুপারিশ করতে পারবে। অথচ পৃথিবীতে কতক মানুষ এমন ভুল ধারণাও নিয়ে বসে আছে যে, আল্লাহর এমন কিছু প্রিয়জন আছে যাদের সুপারিশ আল্লাহকে মানতে হবে। মায়াযাল্লাহ!
বেলায়ত অর্থাৎ আওলিয়া বুযুর্গদের পথের অনুসরণকে কেন্দ্র করে কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মুজাদ্দেদিয়া ও নকশবন্দিয়া এ চার তরীকার কোন এক তরীকার অনুসরণ করতে হবে এ কথা বিশ্বাস করা শুদ্ধ নয়। কারণ ইসলাম মানার ক্ষেত্রে এসব তরীকা অনুসরণের কথা কুরআন-সুন্নায় কোথাও বলা হয়নি। কুরআন-সুন্নায় যা বলা হয়েছে তা হলো আল্লাহর আনুগত্য ও রাসূলের আনুগত্য করতে হবে।
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। যখন তোমরা তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ اَطِيْعُوا اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَاَنْتُمْ تَسْمَعُوْنَ
হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো। যখন তোমরা তাঁর কথা শ্রবণ কর তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। (সূরা আনফাল- ২০)
কোন আলেমের কথা শুনে কিংবা শুধু তাদেরকে আমল করতে দেখে নিজে কোন আমল বা ইবাদাত করা সঠিক নয়। কারণ সব আলেম হকের উপর থাকবেন কিংবা সহীহ আমল করবেন এমনটি মনে করা যাবে না। তাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ইসলামের ব্যাপারে সঠিক তথ্য নাও পেতে পারেন। আবার অনেকেই বৈষয়িক স্বার্থে ইসলামকে ব্যবহার করতে পারেন, কিংবা অভাব-অনটনের কারণেও কেউ ইসলামের বিপরীত আমল করতে পারেন।
তাই যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের উচিত কোন আমল বা ইবাদাত করার সময় কুরআন কিংবা সহীহ হাদীসের সাথে তা মিল আছে কিনা যাচাই করে দেখা। যদি বলা হয়, সাধারণ মানুষের সেই সময়-সুযোগ কোথায়? তারা জবাব হলো, দুনিয়ার কাজের ব্যাপারে কোন মানুষ সহজে ঠকতে চায় না। তাহলে আখিরাতের ব্যাপারে সে ঠকবে কেন? আমলের জন্য সঠিক ইলমের প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে প্রথম কাজ দিয়েছেন পড়া অর্থাৎ ইলম অর্জন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾ -
পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
অনুরূপভাবে দ্বীনের কোন বিষয়ে মুরববীদের কথা অন্ধভাবে মানা সঠিক নয়। কারণ কোন ব্যক্তি মুফতী, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ হয়ে থাকলেই যে তিনি সবকিছু সঠিকভাবে জানবেন এমনটি নয়। আলেমগণ সম্মানের পাত্র ঠিক। তবে তাদের করো কোন কথা বা আমল কুরআন কিংবা সহীহ হাদীসের সাথে যদি না মিলে তাহলে শুধু সম্মানের খাতিরে তাদের ঐ কথা মানা যাবে না। এ ক্ষেত্রে এমন কথা সম্পূর্ণ জাহেলী বা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয় যে, আমাদের বুযুর্গ, মুরববী ও বাপদাদারা কি কম বুঝেছেন? আমরা তাদের বাইরে যাবো কেন? এসব কথা কাফের মুশরিকদের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না (তবুওকি তারা তাদের অনুসরণ করবে)।
(সূরা বাক্বারা- ১৭০)
আমরা হানাফী মাজহাবের অনুসারী, অনুরূপভাবে আমরা হাম্বলী কিংবা মালেকী অথবা শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী বলাও শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসারী বলা। যে কোন মুসলিমকে হতে হবে একমাত্র আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার (নবীর) অনুসরণ করো। (যদি কর) তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
ইলমের দিক দিয়ে মানুষ তিন ধরনের-
প্রথম শ্রেণি : প্রকৃত আলেম- যাকে আল্লাহ ইলম ও উপলব্ধি দুটোই দান করেছেন। এ প্রকার ব্যক্তি শরয়ী বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারেন এবং মত পেশ করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَعَلِمَهُ الَّذِيْنَ يَسْتَنْۢبِطُوْنَهٗ مِنْهُمْ﴾
যারা অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারে। (সূরা নিসা- ৮৩)
মূলত এ শ্রেণির আলেমগণই কুরআন ও সুন্নাহ থেকে হুকুম-আহকাম উদঘাটনের অধিকারী।
দ্বিতীয় শ্রেণি : জ্ঞান পিপাসু- যাকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান দিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। যদি তিনি সাধারণ বিষয়গুলো এবং তার কাছে যে জ্ঞানটুকু পৌঁছেছে তার অনুসরণ করেন, তার জন্য কোন দোষ নেই। তবে তিনি তার চেয়ে বড় আলেমকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবেন না।
তৃতীয় শ্রেণি : যার কোন ইলম নেই। তার জন্য আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। যেসব সাধারণ মানুষ পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে না তাদের দায়িত্ব হলো, তাদের যতটুকু জ্ঞান আছে সে অনুযায়ী আমল করা, সত্যকে মেনে নেয়ার জন্য নিজেদের মন উন্মুক্ত রাখা এবং যতদূর সম্ভব নির্ভরযোগ্য আলেমদের কাছে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاسْأَلُوْاۤ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ ﴾
অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো, যদি তোমাদের জানা না থাকে।
(সূরা নাহল- ৪৩, ৪৪)
মাসআলা কার কাছে জিজ্ঞেস করবে :
যারা ইসলাম সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে না, তারা এ সম্পর্কে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নেবে। কিন্তু আলেম তো অনেক আছেন- তাদের মধ্যে কাকে জিজ্ঞেস করবে?
সাধারণ ব্যক্তির উপর তার কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত আলেমকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। কেননা মানুষের শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেমন সে সবচেয়ে ভালো ডাক্তার খুঁজে। তেমনি এ ক্ষেত্রেও তাই করবে। কারণ জ্ঞান হলো অজ্ঞতার ঔষধ। মানুষের শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেমন ভালো ডাক্তার নির্ণয় করতে হয়, তেমনি অজ্ঞতার অসুস্থতার জন্য ভালো আলেম নির্ণয় করতে হবে।
তবে অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন মাসআলায় ভুল করতে পারেন এবং তুলনামূলক কম জ্ঞানী ব্যক্তি সঠিক ফতওয়া দিতে পারেন। সুতরাং জ্ঞান, আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতায় অধিকতর সঠিকতার নিকটবর্তী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা উচিত।
যে আলেম নির্দিষ্ট কোন দল বা মাযহাবের অনুসরণ করেন, কোনভাবেই মাযহাব কর্তৃক গ্রহণীয় মতামতের বাইরে যেতে রাজি নন, তাদের কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হলে অনেক সময় সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না। কারণ, মূলনীতি হচ্ছে, যদি কোন মাসআলায় মতভেদ দেখা দেয় তবে অধিকতর সহীহ দলীলের ভিত্তিতে গৃহীত মতটি গ্রহণ করতে হবে।
মানুষ কি কোন ইমামের এমন অনুসরণ করবে যে, তার কথার বাইরে যাবে না, যদিও হক অন্যের সাথে থাকে? নাকি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দলীলের অনুসরণ করবে, যদিও তা তার অনুসারী ইমামের মতের বিরোধী হয়?
দ্বিতীয়টিই এর সঠিক জবাব। সেজন্য যিনি দলীল জানতে পারবেন তার উপর সেই দলীলের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও তা ইমামের বিরোধী হয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বাবস্থায় এবং সব সময় অবশ্য পালনীয়, সে মূলত অন্য কারো জন্য রিসালাতের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করল। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বদা অনুসরণীয় হতে পারে না।
এজন্য সকল মুজতাহিদ ইমামের কথাগুলো পর্যালোচনা করে যার কথা অধিক শুদ্ধ হবে এবং সহীহ দলীলের কাছাকাছি হবে তার কথা মেনে নেয়ার মানসিকতা যাদের রয়েছে তারাই কেবল সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।
তাই যারা সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের উচিত কোন আমল বা ইবাদাত করার সময় কুরআন কিংবা সহীহ হাদীসের সাথে তা মিল আছে কিনা যাচাই করে দেখা। যদি বলা হয়, সাধারণ মানুষের সেই সময়-সুযোগ কোথায়? তারা জবাব হলো, দুনিয়ার কাজের ব্যাপারে কোন মানুষ সহজে ঠকতে চায় না। তাহলে আখিরাতের ব্যাপারে সে ঠকবে কেন? আমলের জন্য সঠিক ইলমের প্রয়োজন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে প্রথম কাজ দিয়েছেন পড়া অর্থাৎ ইলম অর্জন করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿اِقْرَاْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِيْ خَلَقَ﴾ -
পড়ো, তোমার পালনকর্তার নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। (সূরা আলাক্ব, ১-৫)
অনুরূপভাবে দ্বীনের কোন বিষয়ে মুরববীদের কথা অন্ধভাবে মানা সঠিক নয়। কারণ কোন ব্যক্তি মুফতী, মুফাসসির, মুহাদ্দিস, ফকীহ হয়ে থাকলেই যে তিনি সবকিছু সঠিকভাবে জানবেন এমনটি নয়। আলেমগণ সম্মানের পাত্র ঠিক। তবে তাদের করো কোন কথা বা আমল কুরআন কিংবা সহীহ হাদীসের সাথে যদি না মিলে তাহলে শুধু সম্মানের খাতিরে তাদের ঐ কথা মানা যাবে না। এ ক্ষেত্রে এমন কথা সম্পূর্ণ জাহেলী বা মূর্খতা ছাড়া আর কিছু নয় যে, আমাদের বুযুর্গ, মুরববী ও বাপদাদারা কি কম বুঝেছেন? আমরা তাদের বাইরে যাবো কেন? এসব কথা কাফের মুশরিকদের। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاِذَا قِيْلَ لَهُمُ اتَّبِعُوْا مَاۤ اَنْزَلَ اللهُ قَالُوْا بَلْ نَتَّبِعُ مَاۤ اَلْفَيْنَا عَلَيْهِ اٰبَآءَنَا ؕ اَوَلَوْ كَانَ اٰبَآؤُهُمْ لَا يَعْقِلُوْنَ شَيْئًا وَّلَا يَهْتَدُوْنَ
যখন তাদেরকে বলা হয় যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার অনুসরণ করো তখন তারা বলে, বরং আমরা তাঁরই অনুসরণ করব যার উপর আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে পেয়েছি। যদিও তাদের পিতৃপুরুষদের কোন জ্ঞান ছিল না এবং তারা হেদায়াতপ্রাপ্তও ছিল না (তবুওকি তারা তাদের অনুসরণ করবে)।
(সূরা বাক্বারা- ১৭০)
আমরা হানাফী মাজহাবের অনুসারী, অনুরূপভাবে আমরা হাম্বলী কিংবা মালেকী অথবা শাফেয়ী মাজহাবের অনুসারী বলাও শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর অনুসারী বলা। যে কোন মুসলিমকে হতে হবে একমাত্র আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ এর অনুসারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللهَ فَاتَّبِعُوْنِيْ يُحْبِبْكُمُ اللهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ
তাদেরকে বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার (নবীর) অনুসরণ করো। (যদি কর) তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন এবং তোমাদের গোনাহসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। (সূরা আলে ইমরান- ৩১)
وَمَاۤ اٰتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُۗ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْاۚ وَاتَّقُوا اللهَؕ اِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ
রাসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাকো। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর- ৭)
ইলমের দিক দিয়ে মানুষ তিন ধরনের-
প্রথম শ্রেণি : প্রকৃত আলেম- যাকে আল্লাহ ইলম ও উপলব্ধি দুটোই দান করেছেন। এ প্রকার ব্যক্তি শরয়ী বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারেন এবং মত পেশ করতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَعَلِمَهُ الَّذِيْنَ يَسْتَنْۢبِطُوْنَهٗ مِنْهُمْ﴾
যারা অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারে। (সূরা নিসা- ৮৩)
মূলত এ শ্রেণির আলেমগণই কুরআন ও সুন্নাহ থেকে হুকুম-আহকাম উদঘাটনের অধিকারী।
দ্বিতীয় শ্রেণি : জ্ঞান পিপাসু- যাকে আল্লাহ তা‘আলা জ্ঞান দিয়েছেন, কিন্তু তিনি প্রথম শ্রেণি পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি। যদি তিনি সাধারণ বিষয়গুলো এবং তার কাছে যে জ্ঞানটুকু পৌঁছেছে তার অনুসরণ করেন, তার জন্য কোন দোষ নেই। তবে তিনি তার চেয়ে বড় আলেমকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে শিথিলতা প্রদর্শন করবেন না।
তৃতীয় শ্রেণি : যার কোন ইলম নেই। তার জন্য আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। যেসব সাধারণ মানুষ পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে না তাদের দায়িত্ব হলো, তাদের যতটুকু জ্ঞান আছে সে অনুযায়ী আমল করা, সত্যকে মেনে নেয়ার জন্য নিজেদের মন উন্মুক্ত রাখা এবং যতদূর সম্ভব নির্ভরযোগ্য আলেমদের কাছে দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞেস করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿فَاسْأَلُوْاۤ أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُوْنَ ﴾
অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো, যদি তোমাদের জানা না থাকে।
(সূরা নাহল- ৪৩, ৪৪)
মাসআলা কার কাছে জিজ্ঞেস করবে :
যারা ইসলাম সম্পর্কে বেশি জ্ঞান রাখে না, তারা এ সম্পর্কে যারা জানে তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞেস করে নেবে। কিন্তু আলেম তো অনেক আছেন- তাদের মধ্যে কাকে জিজ্ঞেস করবে?
সাধারণ ব্যক্তির উপর তার কাছে সবচেয়ে বিশ্বস্ত আলেমকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। কেননা মানুষের শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেমন সে সবচেয়ে ভালো ডাক্তার খুঁজে। তেমনি এ ক্ষেত্রেও তাই করবে। কারণ জ্ঞান হলো অজ্ঞতার ঔষধ। মানুষের শারীরিক অসুস্থতার জন্য যেমন ভালো ডাক্তার নির্ণয় করতে হয়, তেমনি অজ্ঞতার অসুস্থতার জন্য ভালো আলেম নির্ণয় করতে হবে।
তবে অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি জ্ঞানী ব্যক্তি নির্দিষ্ট কোন মাসআলায় ভুল করতে পারেন এবং তুলনামূলক কম জ্ঞানী ব্যক্তি সঠিক ফতওয়া দিতে পারেন। সুতরাং জ্ঞান, আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতায় অধিকতর সঠিকতার নিকটবর্তী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা উচিত।
যে আলেম নির্দিষ্ট কোন দল বা মাযহাবের অনুসরণ করেন, কোনভাবেই মাযহাব কর্তৃক গ্রহণীয় মতামতের বাইরে যেতে রাজি নন, তাদের কাছে মাসআলা জিজ্ঞেস করা হলে অনেক সময় সঠিক উত্তর পাওয়া যাবে না। কারণ, মূলনীতি হচ্ছে, যদি কোন মাসআলায় মতভেদ দেখা দেয় তবে অধিকতর সহীহ দলীলের ভিত্তিতে গৃহীত মতটি গ্রহণ করতে হবে।
মানুষ কি কোন ইমামের এমন অনুসরণ করবে যে, তার কথার বাইরে যাবে না, যদিও হক অন্যের সাথে থাকে? নাকি অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত দলীলের অনুসরণ করবে, যদিও তা তার অনুসারী ইমামের মতের বিরোধী হয়?
দ্বিতীয়টিই এর সঠিক জবাব। সেজন্য যিনি দলীল জানতে পারবেন তার উপর সেই দলীলের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও তা ইমামের বিরোধী হয়। যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বাবস্থায় এবং সব সময় অবশ্য পালনীয়, সে মূলত অন্য কারো জন্য রিসালাতের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করল। অথচ রাসূলুল্লাহ ﷺ ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বদা অনুসরণীয় হতে পারে না।
এজন্য সকল মুজতাহিদ ইমামের কথাগুলো পর্যালোচনা করে যার কথা অধিক শুদ্ধ হবে এবং সহীহ দলীলের কাছাকাছি হবে তার কথা মেনে নেয়ার মানসিকতা যাদের রয়েছে তারাই কেবল সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।
কেউ সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করলে তাকে লা মাযহাবী বলে নিন্দা করা ঠিক নয়। কারণ সহীহ হাদীস অনুযায়ী আমল করলে যদি তিরস্কার কিংবা নিন্দার পাত্র হন, তাহলে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ইন্তেকালের পর থেকে সকল সাহাবা, তাবেয়ী, তাবে তাবেঈ সকল মুসলমানই তো হাদীস অনুযায়ী আমল করেছেন। তারাও কি তিরস্কারের যোগ্য? তারাও কি লা মাযহাবী বলে দোষী?
জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস- এ কথা সঠিক নয়। এ কথা ইসলামী আক্বীদা-বিশ্বাসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴾ ﴿اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا وَّاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعَذَابِ
সমস্ত শক্তি আল্লাহরই এবং আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। সূরা বাকারা- ১৬৫
আল্লাহ তা‘আলার উক্ত কথা নিমেণাক্ত আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে সবাইকে বলতে বলেছেন,
﴿قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ﴾
(হে নবী!) বলো, রাজত্বের মালিক হে আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। আর আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপদস্থ করেন। (মূলত) সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয় আপনিই সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
(সূরা আলে ইমরান- ৬৫)
﴾ ﴿اَنَّ الْقُوَّةَ لِلّٰهِ جَمِيْعًا وَّاَنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعَذَابِ
সমস্ত শক্তি আল্লাহরই এবং আল্লাহ শাস্তিদানে অত্যন্ত কঠোর। সূরা বাকারা- ১৬৫
আল্লাহ তা‘আলার উক্ত কথা নিমেণাক্ত আয়াতে আরো স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ তাঁর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে সবাইকে বলতে বলেছেন,
﴿قُلِ اللّٰهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَآءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَآءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَآءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَآءُؕ بِيَدِكَ الْخَيْرُؕ اِنَّكَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ﴾
(হে নবী!) বলো, রাজত্বের মালিক হে আল্লাহ! আপনি যাকে ইচ্ছা রাজত্ব দান করেন এবং যার থেকে ইচ্ছা রাজত্ব কেড়ে নেন। আর আপনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা অপদস্থ করেন। (মূলত) সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। নিশ্চয় আপনিই সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
(সূরা আলে ইমরান- ৬৫)
রাষ্ট্র পরিচালনার মূলতন্ত্র হিসেবে প্রচলিত গণতন্ত্রকে বৈধ বা জায়েয মনে করা সঠিক নয়। কারণ - ইসলাম ও গণতন্ত্রের মধ্যে অসংখ্য মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। ইসলাম ও গণতন্ত্রের কতিপয় মৌলিক পার্থক্য হলো :
গণতন্ত্র
ইসলাম
১. গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি জনগণের অভিপ্রায় (জনমত)।
১. ইসলামের মূল ভিত্তি আল্লাহ্র অভিপ্রায়।
২. গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণের নাম।
২. ইসলাম আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণের নাম ।
৩. সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ।
৩. সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ।
৪. সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ।
৪. সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ্।
৫. মানব রচিত সংবিধানেই রয়েছে মানবতার মুক্তি।
৫. আল্লাহ্ প্রদত্ত সংবিধানেই রয়েছে মানবতার মুক্তি।
৬. মত প্রকাশে, ভোট দানে ও নির্বাচনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার স্বীকৃত।
৬. যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, ও তাকওয়ার ভিত্তিতে গুণীজনেরা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হবেন।
৭. উত্তরাধিকার ও নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান বিবেচিত।
৭. উত্তরাধিকার ও নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে প্রভেদ বিদ্যমান।
৮. নারী ও সংখ্যালঘুরা সাধারণ সমাধিকার ভোগ করবে।
৮. শক্তি ও মেধায় তারতম্যের কারণে নারী ও সংখ্যালঘুরা সংরক্ষণ নীতির অধীনে বিশেষ অধিকার ভোগ করবে ।
৯. পরমত সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের এক বিশেষ আদর্শ। গণতন্ত্রে নৈতিকতার কোন বালাই নেই। যেমন- জরায়ুর স্বাধীনতা বা সমকামিতা কোন মতামতকেই বর্জন করতে বাধ্য নয় গণতন্ত্র।
৯. শাশ্বত আদর্শ ও নৈতিক মানসম্পন্ন পরমত সমাদৃত। অনৈতিক পরমত ইসলামে বর্জনীয়।
১০. সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন সকল বৈধতার মানদন্ড।
১০. শাশ্বত বা প্রত্যাদিষ্ট বিধান সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ছাড়াই বৈধ।
১১. জাগতিক উন্নয়নেই সকল চেতনা সীমিত, এই অর্থে প্রগতি।
১১. জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে চেতনা পরিব্যপ্ত, এই অর্থে প্রগতি।
১২. জবাবদিহিমূলক সরকার পদ্ধতি।
১২. চরম জবাবদিহিমূলক সরকার পদ্ধতি।
১৩. মানব রচিত আইন দ্বারা বিচারকার্য নিয়ন্ত্রিত।
১৩. আল্লাহ্ প্রদত্ত আইন দ্বারা বিচারকার্য নিয়ন্ত্রিত।
১৪. সংবিধান কর্তৃক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত।
১৪. ওহীর বিধান কর্তৃক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত।
১৫. জীবনের সর্বস্তরে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচায়ক।
১৫. জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোই ইসলামী মূল্যবোধের পরিচায়ক।
১৬. গণতান্ত্রিক বিশ্বাসে ধর্ম অবশ্যই রাজনীতি বিবর্জিত।
১৬. ইসলামী বিশবাসে মানুষের প্রথম উপাধি খলীফা/প্রতিনিধি; কাজেই ইসলাম ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্য।
প্রচলিত গণতন্ত্রে সংসদ বা জাতীয় পরিষদে সংখ্যাধিক্যের মত বা রায়ের ভিত্তিতে আইন পাশ করা হয়। এতে সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে কোন হালালকে হারামে পরিণত করা কিংবা কোন হারামকে হালালে পরিণত করা যায়। অথচ মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তা সংখ্যাধিক্যের বলে হালাল করা যায় না। আবার কোন হালাল জিনিসকেও সংখ্যাধিক্যের দ্বারা হারাম করা যায় না।
গণতন্ত্র
ইসলাম
১. গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি জনগণের অভিপ্রায় (জনমত)।
১. ইসলামের মূল ভিত্তি আল্লাহ্র অভিপ্রায়।
২. গণতন্ত্র সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণের নাম।
২. ইসলাম আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতি আত্মসমর্পণের নাম ।
৩. সকল ক্ষমতার উৎস জনগণ।
৩. সকল ক্ষমতার উৎস আল্লাহ।
৪. সার্বভৌমত্বের মালিক জনগণ।
৪. সার্বভৌমত্বের মালিক আল্লাহ্।
৫. মানব রচিত সংবিধানেই রয়েছে মানবতার মুক্তি।
৫. আল্লাহ্ প্রদত্ত সংবিধানেই রয়েছে মানবতার মুক্তি।
৬. মত প্রকাশে, ভোট দানে ও নির্বাচনে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সকলের সমান অধিকার স্বীকৃত।
৬. যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, ও তাকওয়ার ভিত্তিতে গুণীজনেরা বিশেষভাবে মূল্যায়িত হবেন।
৭. উত্তরাধিকার ও নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ উভয়ই সমান বিবেচিত।
৭. উত্তরাধিকার ও নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে নারী-পুরুষে প্রভেদ বিদ্যমান।
৮. নারী ও সংখ্যালঘুরা সাধারণ সমাধিকার ভোগ করবে।
৮. শক্তি ও মেধায় তারতম্যের কারণে নারী ও সংখ্যালঘুরা সংরক্ষণ নীতির অধীনে বিশেষ অধিকার ভোগ করবে ।
৯. পরমত সহিষ্ণুতা গণতন্ত্রের এক বিশেষ আদর্শ। গণতন্ত্রে নৈতিকতার কোন বালাই নেই। যেমন- জরায়ুর স্বাধীনতা বা সমকামিতা কোন মতামতকেই বর্জন করতে বাধ্য নয় গণতন্ত্র।
৯. শাশ্বত আদর্শ ও নৈতিক মানসম্পন্ন পরমত সমাদৃত। অনৈতিক পরমত ইসলামে বর্জনীয়।
১০. সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন সকল বৈধতার মানদন্ড।
১০. শাশ্বত বা প্রত্যাদিষ্ট বিধান সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন ছাড়াই বৈধ।
১১. জাগতিক উন্নয়নেই সকল চেতনা সীমিত, এই অর্থে প্রগতি।
১১. জাগতিক ও আধ্যাত্মিক উভয় ক্ষেত্রে চেতনা পরিব্যপ্ত, এই অর্থে প্রগতি।
১২. জবাবদিহিমূলক সরকার পদ্ধতি।
১২. চরম জবাবদিহিমূলক সরকার পদ্ধতি।
১৩. মানব রচিত আইন দ্বারা বিচারকার্য নিয়ন্ত্রিত।
১৩. আল্লাহ্ প্রদত্ত আইন দ্বারা বিচারকার্য নিয়ন্ত্রিত।
১৪. সংবিধান কর্তৃক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত।
১৪. ওহীর বিধান কর্তৃক মৌলিক অধিকার সংরক্ষিত।
১৫. জীবনের সর্বস্তরে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচায়ক।
১৫. জীবনের সর্বস্তরে আল্লাহ্র ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোই ইসলামী মূল্যবোধের পরিচায়ক।
১৬. গণতান্ত্রিক বিশ্বাসে ধর্ম অবশ্যই রাজনীতি বিবর্জিত।
১৬. ইসলামী বিশবাসে মানুষের প্রথম উপাধি খলীফা/প্রতিনিধি; কাজেই ইসলাম ও রাজনীতি অবিচ্ছেদ্য।
প্রচলিত গণতন্ত্রে সংসদ বা জাতীয় পরিষদে সংখ্যাধিক্যের মত বা রায়ের ভিত্তিতে আইন পাশ করা হয়। এতে সংখ্যাধিক্যের ভিত্তিতে কোন হালালকে হারামে পরিণত করা কিংবা কোন হারামকে হালালে পরিণত করা যায়। অথচ মানবজাতির জন্য আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তা সংখ্যাধিক্যের বলে হালাল করা যায় না। আবার কোন হালাল জিনিসকেও সংখ্যাধিক্যের দ্বারা হারাম করা যায় না।
খ্রিস্টধর্ম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এভাবে ইসলামকেও কোন নিছক পবিত্র ধর্ম মনে করা শুদ্ধ নয়। এভাবে কেউ মনে করে থাকলে সে ঈমানদার বা মুসলমান বলেও গণ্য হবে না। কারণ ইসলামকে অন্যান্য ধর্মের ন্যায় কেউ শুধু পবিত্র ধর্ম মনে করে থাকলে কিতাব অর্থাৎ কুরআনের উপর তার ঈমান আনাও শুদ্ধ হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা ইসলামকে ধর্ম বলেননি। তিনি ইসলামকে বলেছেন দ্বীন।
ইসলামের ব্যাপারে আমাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ইসলামকে নিজের পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা, অনুসরণ করা ও মানা। ইসলামের কিছু অংশ মানা ও কিছু অংশ বর্জন করা চলবে না এবং আমরণ ইসলামের উপর টিকে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন-
يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’’ (সূরা বাক্বারাহ- ২০৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ ‘‘তোমরা মুসলিম থাকাকালীন অবস্থা ছাড়া মৃত্যুবরণ করো না।’’(সূরা আল ইমরান ৩:১০২)
ইসলামের ব্যাপারে আমাদের প্রতি নির্দেশ হচ্ছে ইসলামকে নিজের পরিপূর্ণ দ্বীন বা জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করা, পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করা, অনুসরণ করা ও মানা। ইসলামের কিছু অংশ মানা ও কিছু অংশ বর্জন করা চলবে না এবং আমরণ ইসলামের উপর টিকে থাকতে হবে। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন-
يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا ادْخُلُوْا فِي السِّلْمِ كَآفَّةً
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো।’’ (সূরা বাক্বারাহ- ২০৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَلَا تَمُوْتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ ‘‘তোমরা মুসলিম থাকাকালীন অবস্থা ছাড়া মৃত্যুবরণ করো না।’’(সূরা আল ইমরান ৩:১০২)
কোন মুসলমান ব্যক্তিগতভাবে কিংবা রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। অনুরূপভাবে কোন মুসলিম রাষ্ট্রও ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। কারণ ধর্মনিরপেক্ষের মূল অর্থ হলো, ধর্মকে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে, রাষ্ট্রীয় প্রশাসনকে ধর্মীয় প্রভাব কিংবা তার বিধান থেকে মুক্ত রাখা। এ রীতি কোন অমুসলিম রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য হলেও হতে পারে। যেহেতু তাদের ধর্মে রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনের কোন বিধান নেই। পক্ষান্তরে এ নীতি কোন মুসলিম রাষ্ট্রের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ এ নীতি মুসলমানদের ঈমান ও আমলের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। তার কারণ হলো, মানুষের ব্যক্তিজীবন, দাম্পত্যজীবন, পরিবারিকজীবন, সামাজিকজীবন, রাষ্ট্রীয়জীবন ও আন্তর্জাতিকজীবন ইত্যাদি প্রত্যেক জীবনের জন্য ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান দেয়া হয়েছে। এসব বিধান মানা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক। ইসলামের রাষ্ট্রীয় বিধানগুলো কার্যকর করা রাষ্ট্র বা সরকারের উপর ফরয। যারা এ বিধান কার্যকর করবে না তাদের কঠোর পরিণামের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-মিমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-মিমাংসা করে না তারা যালিম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী যারা বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক (অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য থেকে বহিষ্কৃত, পাপাচারী ও অপরাধী)।
(সূরা মায়েদা- ৪৭)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-মিমাংসা করে না তারা কাফির। (সূরা মায়েদা- ৪৪)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ
আল্লাহ যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী যারা বিচার-মিমাংসা করে না তারা যালিম (অন্যায়কারী)। (সূরা মায়েদা- ৪৫)
وَمَنْ لَّمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী যারা বিচার-ফায়াসালা করে না তারা ফাসিক (অর্থাৎ আল্লাহর আনুগত্য থেকে বহিষ্কৃত, পাপাচারী ও অপরাধী)।
(সূরা মায়েদা- ৪৭)
ধর্মীয় উৎসব যার যার, আনন্দ সবার এ শ্লোগান সবার জন্য সঠিক নয়। কারণ উৎসবের মূলভিত্তি হলো ধর্ম। আর ধর্মভিত্তিক উৎসব হলো যার যার ধর্মীয় সংস্কৃতি। যার যার ধর্মীয় উৎসব নিয়ে সে আনন্দ উপভোগ করলে তাতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু কোন মুসলিম অমুসলিমের কোন ধর্মীয় উৎসবের আনন্দে অংশগ্রহণ করতে পারে না। কেননা এতে তাদের ধর্মের সত্যতার স্বীকৃতি দেয়া বুঝায়। অথচ মুসলিমদের সঠিক আক্বীদা-বিশ্বাস হলো ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্ম সত্য নয়। যদিও ইয়াহুদি এবং খ্রিস্টানদের ধর্ম আল্লাহপ্রদত্ত ও নবী-রাসূল প্রদর্শিত ছিলো, কিন্তু তা এখন সম্পূর্ণ বিকৃত। তাই তাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় উৎসবও সত্যাশ্রিত নয়। ধর্মীয় উৎসব যার যার আনন্দ সবার এ জাতীয় দাবি কুরআন যখন নাযিল হচ্ছিল তখনও কাফের মুশরিকদের মধ্যে ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতিবাদ করে তার রাসূলকে বলতে বলেছেন,
﴿قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ ﴾
(হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য- আর আমার কর্মফল আমার জন্য। (সূরা কাফিরুন)
বস্তুত এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্মের আনন্দ উৎসবে অংশগ্রণ করা মানে তার অনুকরণ করা।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ - - - مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন: যে কেউ অন্য কোন (জাতীর) লোকের সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৩৩)
﴿قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ ‐ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ ‐ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ ‐ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ ﴾
(হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য- আর আমার কর্মফল আমার জন্য। (সূরা কাফিরুন)
বস্তুত এক ধর্মের অনুসারী অন্য ধর্মের আনন্দ উৎসবে অংশগ্রণ করা মানে তার অনুকরণ করা।
عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ - - - مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
ইবনে উমর (রা.) রাসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণনা করেন: যে কেউ অন্য কোন (জাতীর) লোকের সাথে সাদৃশ্যতা রাখবে সে তাদেরই একজন হিসেবে গণ্য হবে। (সুনানে আবু দাউদ ৪০৩৩)
জাতীয় সংসদের অধিবেশনের শুরুতে কিংবা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, দলীয়, সাংস্কৃতিক ও রেডিও-টিভি ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে কার্যক্রমের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করে অনুষ্ঠান শুরু করা কোন শরয়ী বিধান নয়। তবুও কোন অনুষ্ঠানের শুরুতে যদি কুরআন তিলাওয়াত করা হয় তবে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অন্য কোন ধর্মীয় গ্রন্থ যেমন- গীতা, বাইবেল ও ত্রিপিটক ইত্যাদি পাঠ করা শুদ্ধ নয়। তার কারণ হলো :
১. যেখানে কুরআন মাজীদ পাঠ করা হয়েছে সেখানে যদি অন্য কোন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়, তাহলে কুরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের মান একই বুঝা যায়। অথচ তা বাস্তব সত্য নয়। এ ক্ষেত্রে কোন মানবরচিত ধর্মীয় গ্রন্থ তো দূরের কথা, কুরআন মাজীদের উপস্থিতিতে আল্লাহর প্রেরিত পূর্বের কোন কিতাব পাঠ করাও জায়েয নয়।
২. যদি বলা হয় রাষ্ট্রে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের যে অধিকার তাও তো তাদের দিতে হবে। এ জবাব হলো, কারো অধিকার দিতে গিয়ে যদি কোন ধর্মের মান ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে কুরআন তিলাওয়াত না করাই উচিত। কুরআন মাজীদের মান যদি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত নয়। কারণ অধিবেশন বা অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা শরীয়তের কোন বিধান নয়। শরীয়তের বিধান হলো রাষ্ট্র, সংসদ, দল ও সংস্কৃতি সবকিছু কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া এবং তদানুসারে পরিচালনা করা। তা না করে শুধু কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে অতিভক্তি দেখানো রীতিমত হাস্যকর।
১. যেখানে কুরআন মাজীদ পাঠ করা হয়েছে সেখানে যদি অন্য কোন ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠ করা হয়, তাহলে কুরআন ও অন্যান্য ধর্মীয় গ্রন্থের মান একই বুঝা যায়। অথচ তা বাস্তব সত্য নয়। এ ক্ষেত্রে কোন মানবরচিত ধর্মীয় গ্রন্থ তো দূরের কথা, কুরআন মাজীদের উপস্থিতিতে আল্লাহর প্রেরিত পূর্বের কোন কিতাব পাঠ করাও জায়েয নয়।
২. যদি বলা হয় রাষ্ট্রে ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের যে অধিকার তাও তো তাদের দিতে হবে। এ জবাব হলো, কারো অধিকার দিতে গিয়ে যদি কোন ধর্মের মান ক্ষুণ্ণ হয়, তাহলে কুরআন তিলাওয়াত না করাই উচিত। কুরআন মাজীদের মান যদি অক্ষুণ্ণ রাখা সম্ভব না হয়, তাহলে কুরআন তিলাওয়াত করা উচিত নয়। কারণ অধিবেশন বা অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত করা শরীয়তের কোন বিধান নয়। শরীয়তের বিধান হলো রাষ্ট্র, সংসদ, দল ও সংস্কৃতি সবকিছু কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী হওয়া এবং তদানুসারে পরিচালনা করা। তা না করে শুধু কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে অতিভক্তি দেখানো রীতিমত হাস্যকর।
কাউকে সালাম দেয়ার সময় কদমবুচি করা ঠিক নয়। কারণ কদমবুচি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর শেখানো কোন আদব বা শিষ্টাচার নয়। বরং তা হলো হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের একটি অঙ্গ। কারো হাত কারো পায়ের সমান হবে কিংবা কারো চরণধূলি কারো হাতে নিতে হবে এমন বৈষম্যমূলক কোন আচরণ ইসলামে নেই। এ ক্ষেত্রে ইসলামের সাম্যের শিক্ষায় রাসূলুল্লাহ ﷺ যে শিক্ষা দিয়েছে তা হলো মুসাফাহা। অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় একে অপরের ডান হাত মিলানো। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, দুই মুসলমান পরস্পর সাক্ষাৎকালে যখন মুসাফাহা করে তখন তারা দুজন একে অপর থেকে পৃথক হওয়ার পূর্বেই ক্ষমা করে দেয়া হয়। [আবু দাউদ- ৫২১৪।]
কোন মাহফিল বা অনুষ্ঠানে বা সভা সমিতিতে আলোচনা ও বক্তৃতার শুরুতে সালাম না দিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুদ্ধ নয়। শুদ্ধ হলো প্রথমেই সালাম দেয়া। আবার অনেকে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম বলে বক্তৃতা শুরু করেন। কেউ কেউ প্রথমে খুতবা পাঠ করেন অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার হামদ ও রাসূল ﷺ এর উপর দরূদ ও সালাম পাঠ করে উপস্থিত লোকদের বিভিন্নভাবে সম্বোধন করে তারপরেই সালাম প্রদান করেন, অতঃপর বক্তৃতা করেন। এর মধ্যে কোনটিই শুদ্ধ নয়। নবী ﷺ যখন মিম্বরে (মঞ্চে) ওঠে দাঁড়াতেন তখন প্রথমে সালাম দিতেন। [ইবনে মাজাহ, হা/১১০৯।]
কোন ব্যক্তি হজ্জ করে আসার পর তাকে আলহাজ্জ বলা কিংবা তার নামের আগে আলহাজ্জ উপাধি লেখা সঠিক নয়। কারণ হজ্জ একটি ফরয ইবাদাত। যেভাবে সালাত, রোযা ও যাকাত ফরয ইবাদাত। কোন ইবাদাতকে উপাধিতে ভূষিত করা কিংবা নিজেই ঐ ইবাদাতের উপাধি ব্যবহার করা কিছুতেই শোভনীয় নয়। আর তা যুক্তিযুক্ত হলে হজ্জের ন্যায় সালাত আদায়কারী তার নামের আগে ‘আল-মুসাল্লী’ লেখতে পারতো এবং রোযা পালনকারী তার নামের আগে ‘আসসায়েম’ লেখতে পারতো। অথচ তা লেখে না। না লেখার কারণ হলো, এটা রিয়া বা লোক দেখানো এবং প্রদর্শনীর অন্তর্ভুক্ত হবে বলে। অনুরূপভাবে হজ্জকারীও যদি তার নামের আগে হাজী বা আলহাজ্জ লেখে, তাহলে তাও হবে তার ঐ লোক দেখানো বা প্রদর্শনীর অন্তর্ভুক্ত।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهٖ سَمَّعَ اللهُ بِهٖ سَامِعَ خَلْقِهٖ وَحَقَّرَهٗ وَصَغَّرَهٗ
আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা বিচার দিবসে তাঁর সকল সৃষ্টিলোকের সম্মুখে তাকে হীন ও অপদস্থ করবেন। [মুসনাদে আহমদ হা/৭০৮৫।]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ مَنْ سَمَّعَ النَّاسَ بِعَمَلِهٖ سَمَّعَ اللهُ بِهٖ سَامِعَ خَلْقِهٖ وَحَقَّرَهٗ وَصَغَّرَهٗ
আবদুল্লাহ ইবন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করে, আল্লাহ তা‘আলা বিচার দিবসে তাঁর সকল সৃষ্টিলোকের সম্মুখে তাকে হীন ও অপদস্থ করবেন। [মুসনাদে আহমদ হা/৭০৮৫।]
বিয়ে উপলক্ষে বরপক্ষ কনে পক্ষের কাছে বরযাত্রীর ভোজ খাওয়া শরীয়তসম্মত নয়। সঠিক ও সুন্নাত হলো বরপক্ষেরই ওলিমা খাওয়ানো। কারণ মানব জীবনে বিয়ের ব্যবস্থা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে এক বড় নিয়ামত। আর যে নিয়ামত লাভ করবে সেই ওলিমা অনুষ্ঠান করে শুকরিয়া আদায় করবে এটাই স্বাভাবিক। তাই রাসূলুল্লাহ ﷺ বরপক্ষকেই শুকরিয়া স্বরূপ ওয়ালিমা অনুষ্ঠান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) বিয়ে করলে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, আল্লাহ তোমার বিয়েতে বরকত দান করুন। এখন তুমি একটি ছাগল দিয়ে হলেও ওলিমার অনুষ্ঠান করো। [সহীহ বুখারী, হা/৫১৫৫।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন যয়নাব বিনতে জাহাশকে বিয়ে করে ঘর বাঁধলেন, তখন তিনি লোকদের পরিতৃপ্ত করে রুটি ও গোশত খাইয়ে ওয়ালিমা অনুষ্ঠান করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৯৪।]
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন যয়নাব বিনতে জাহাশকে বিয়ে করে ঘর বাঁধলেন, তখন তিনি লোকদের পরিতৃপ্ত করে রুটি ও গোশত খাইয়ে ওয়ালিমা অনুষ্ঠান করেছিলেন। [সহীহ বুখারী, হা/৪৭৯৪।]
১. মসজিদে জায়নামায বা মুসল্লা বিছিয়ে স্থান দখল করা।
২. খতীবের ‘লা ইলাহা....’ পাঠ শুনে সকলে উচ্চৈঃস্বরে ঐ কালেমা পাঠ করা।
৩. নবীর নাম শুনে আঙ্গুলে চুম্বন করে তা চোখে লাগানো।
৪. দুই খুতবার কোন একটিকে নসীহত থেকে বাদ দেয়া।
৫. ইন্নাল্লাহ ইয়া‘মুরু বিল আদলি...... আয়াত দ্বারা খুতবা শেষ করাকে অভ্যাসে পরিণত করা।
৬. খুতবা লম্বা ও সালাত সংক্ষিপ্ত করা।
৭. কাতার সোজা হওয়ার পূর্বেই সালাত শুরু করে দেয়া।
৮. মসজিদের গেটে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে মুসল্লিদের ফুঁক নেয়া ও রোগ মুক্তির আশা করা।
২. খতীবের ‘লা ইলাহা....’ পাঠ শুনে সকলে উচ্চৈঃস্বরে ঐ কালেমা পাঠ করা।
৩. নবীর নাম শুনে আঙ্গুলে চুম্বন করে তা চোখে লাগানো।
৪. দুই খুতবার কোন একটিকে নসীহত থেকে বাদ দেয়া।
৫. ইন্নাল্লাহ ইয়া‘মুরু বিল আদলি...... আয়াত দ্বারা খুতবা শেষ করাকে অভ্যাসে পরিণত করা।
৬. খুতবা লম্বা ও সালাত সংক্ষিপ্ত করা।
৭. কাতার সোজা হওয়ার পূর্বেই সালাত শুরু করে দেয়া।
৮. মসজিদের গেটে পানি হাতে দাঁড়িয়ে থেকে মুসল্লিদের ফুঁক নেয়া ও রোগ মুক্তির আশা করা।
১. সম্বল ছাড়া হজ্জে বের হওয়া।
২. মসজিদে আয়েশায় সওয়াবের উদ্দ্যেশে সালাত আদায় করতে যাওয়া।
৩. হজ্জ বা ওমরাহকারীর মসজিদে হারামে প্রবেশ করে তাওয়াফ না করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া।
৪. নামাযে হাত তোলার মত হাত তুলে হাজরে আসওয়াদের প্রতি ইশারা করা।
৫. পাথর চুম্বনের জন্য বেশি ভিড় করা।
৬. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার জন্য ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে পাথরের নিকট যাওয়া।
৭. রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা এবং স্পর্শ করতে না পারলে অন্তত ইশারা করা।
৮. কাবার রুকনে শামী বা অন্যান্য দেয়ালের গেলাফ, মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ করে বরকত লাভ করা।
৯. বরকতের আশায় যমযমের পানিতে টাকা পয়সা ভিজানো।
১০. যমযমের পানি পান করার সময় কেবলার দিকে মুখ করা।
১১. মুযদালিফায় পৌঁছে প্রথমে সালাত আদায় না করে পাথর সংগ্রহ করা।
১২. মুযদালিফায় রাত্রি জাগরণ না করা।
১৩. পাথর মারার পূর্বে পাথর ধৌত করা।
১৪. পাথর মারার সময় তাকবীরের সাথে অন্যান্য দু‘আ যেমন- ‘রাজমাল লিশশায়াত্বীন’ ইত্যাদি পাঠ করা।
১৫. পাথর মারার জন্য হাত বা আঙ্গুলের নির্দিষ্ট আকার বা ভঙ্গিমা করা।
১৬. পাথর মারার পর জুতা-স্যান্ডেল ইত্যাদি মারা।
১৭. যে হজ্জ আদায় করে আসে তাকে আলহাজ্জ বলা।
১৮. তাওয়াফে বিদার পর মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।
১৯. একই সফরে বার বার ওমরা করা।
২০. বরকতের আশায় মক্কার মাটি সঙ্গে নিয়ে আসা।
২. মসজিদে আয়েশায় সওয়াবের উদ্দ্যেশে সালাত আদায় করতে যাওয়া।
৩. হজ্জ বা ওমরাহকারীর মসজিদে হারামে প্রবেশ করে তাওয়াফ না করে তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়া।
৪. নামাযে হাত তোলার মত হাত তুলে হাজরে আসওয়াদের প্রতি ইশারা করা।
৫. পাথর চুম্বনের জন্য বেশি ভিড় করা।
৬. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার জন্য ইমামের সালাম ফিরানোর পূর্বেই সালাম ফিরিয়ে পাথরের নিকট যাওয়া।
৭. রুকনে ইয়ামানী চুম্বন করা এবং স্পর্শ করতে না পারলে অন্তত ইশারা করা।
৮. কাবার রুকনে শামী বা অন্যান্য দেয়ালের গেলাফ, মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ করে বরকত লাভ করা।
৯. বরকতের আশায় যমযমের পানিতে টাকা পয়সা ভিজানো।
১০. যমযমের পানি পান করার সময় কেবলার দিকে মুখ করা।
১১. মুযদালিফায় পৌঁছে প্রথমে সালাত আদায় না করে পাথর সংগ্রহ করা।
১২. মুযদালিফায় রাত্রি জাগরণ না করা।
১৩. পাথর মারার পূর্বে পাথর ধৌত করা।
১৪. পাথর মারার সময় তাকবীরের সাথে অন্যান্য দু‘আ যেমন- ‘রাজমাল লিশশায়াত্বীন’ ইত্যাদি পাঠ করা।
১৫. পাথর মারার জন্য হাত বা আঙ্গুলের নির্দিষ্ট আকার বা ভঙ্গিমা করা।
১৬. পাথর মারার পর জুতা-স্যান্ডেল ইত্যাদি মারা।
১৭. যে হজ্জ আদায় করে আসে তাকে আলহাজ্জ বলা।
১৮. তাওয়াফে বিদার পর মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।
১৯. একই সফরে বার বার ওমরা করা।
২০. বরকতের আশায় মক্কার মাটি সঙ্গে নিয়ে আসা।
১. শরীয়তের নির্দিষ্ট সময় ও নির্দিষ্ট সংখ্যা ছাড়া নিজের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যায় যিকির করা।
২. ‘হু-হু’ বা ‘হুয়া-হুয়া’ অথবা কেবল ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলে যিকির করা।
৩. কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে ভেঙ্গে যিকির করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘লা ইলাহা’ বলা এবং পরে আবার নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা বা ‘ইল-ইল’ বলে যিকির করা।
৪. ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী বলে যিকির করা।
৫. উচ্চৈঃস্বরে যিকির করা।
৬. হেলে-দুলে যিকির করা।
৭. নেচে বা হাত তালি দিয়ে যিকির করা।
৮. কোনো ওলীর নামে যিকির করা।
৯. কিছু লিখার পূর্বে বিসমিল্লাহ এর পরিবর্তে এলাহি ভরসা অথবা ৭৮৬ ইত্যাদি লিখা।
২. ‘হু-হু’ বা ‘হুয়া-হুয়া’ অথবা কেবল ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলে যিকির করা।
৩. কালিমা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-কে ভেঙ্গে যিকির করা অর্থাৎ নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘লা ইলাহা’ বলা এবং পরে আবার নির্দিষ্ট সংখ্যায় ‘ইল্লাল্লাহ’ বলা বা ‘ইল-ইল’ বলে যিকির করা।
৪. ইয়া মুহাম্মাদ, ইয়া আলী বলে যিকির করা।
৫. উচ্চৈঃস্বরে যিকির করা।
৬. হেলে-দুলে যিকির করা।
৭. নেচে বা হাত তালি দিয়ে যিকির করা।
৮. কোনো ওলীর নামে যিকির করা।
৯. কিছু লিখার পূর্বে বিসমিল্লাহ এর পরিবর্তে এলাহি ভরসা অথবা ৭৮৬ ইত্যাদি লিখা।
১. ওলীরা পার্থিব জীবনের ন্যায় জীবিত আছেন বলে মনে করা।
২. ওলীরা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেন বলে মনে করা।
৩. ওলীরা জীবিতদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন বলে মনে করা।
৪. ওলীরা কোন মানুষকে বিপদমুক্ত করতে পারেন বলে মনে করা।
৫. ওলীরা গায়েবের সংবাদ জানেন বলে মনে করা।
৬. ওলীদের ব্যবহৃত কোনো বস্তুকে বরকতের মাধ্যম মনে করা।
৭. ওলীদের মাযারে সিজদা করা ইত্যাদি।
২. ওলীরা আহবানকারীর আহবানে সাড়া দেন বলে মনে করা।
৩. ওলীরা জীবিতদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারেন বলে মনে করা।
৪. ওলীরা কোন মানুষকে বিপদমুক্ত করতে পারেন বলে মনে করা।
৫. ওলীরা গায়েবের সংবাদ জানেন বলে মনে করা।
৬. ওলীদের ব্যবহৃত কোনো বস্তুকে বরকতের মাধ্যম মনে করা।
৭. ওলীদের মাযারে সিজদা করা ইত্যাদি।
১. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে মানুষ মনে না করা।
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে নূরের তৈরি মনে করা।
৩. রাসূলুল্লাহ ﷺ গায়েব জানতেন বলে মনে করা।
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহের ওজন ও ছায়া ছিল না বলে মনে করা।
৫. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মল-মূত্র পবিত্র ছিল বলে মনে করা।
৬. রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি এবং তাঁর নূর থেকে জগৎ সৃষ্টি বলে মনে করা।
৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সর্বত্র হাযির-নাযির মনে করা।
৮. রাসূলুল্লাহ ﷺ মিলাদ মাহফিলে হাযির হন বলে মনে করা।
৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তা দিতে পারেন বলে মনে করা।
১০. নবী ﷺ এর নামে কসম খাওয়া।
২. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে নূরের তৈরি মনে করা।
৩. রাসূলুল্লাহ ﷺ গায়েব জানতেন বলে মনে করা।
৪. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেহের ওজন ও ছায়া ছিল না বলে মনে করা।
৫. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মল-মূত্র পবিত্র ছিল বলে মনে করা।
৬. রাসূলুল্লাহ ﷺ আল্লাহর নূর থেকে সৃষ্টি এবং তাঁর নূর থেকে জগৎ সৃষ্টি বলে মনে করা।
৭. রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে সর্বত্র হাযির-নাযির মনে করা।
৮. রাসূলুল্লাহ ﷺ মিলাদ মাহফিলে হাযির হন বলে মনে করা।
৯. রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নিকট কিছু চাইলে তিনি তা দিতে পারেন বলে মনে করা।
১০. নবী ﷺ এর নামে কসম খাওয়া।
১. মসজিদে নববীতে প্রবেশকালে প্রত্যেকবার নবীর কবর যিয়ারত করা।
২. কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় সফর করা।
৩. নামাযীর মতো বিনয় সহকারে কবরের প্রতি মুখ করে দাঁড়িয়ে দরূদ ও দু‘আ পাঠ করা।
৪. নবী ﷺ এর নিকট ইস্তেগফার করা।
৫. নবী ﷺ এর নিকট সাহায্য চওয়া।
৬. নবী ﷺ এর কবরের উপর আতর ছড়ানো।
৭. নবী ﷺ এর কবরের দিকে মুখ করে দু‘আ করা।
৮. নবী ﷺ যিয়ারতকারীর সব প্রয়োজন জানেন বলে মনে করা।
৯. মসজিদে নববী ও মসজিদে কুবা ছাড়া মদিনার অন্যান্য মসজিদে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা।
১০. মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর, হুজরার রেলিং ইত্যাদি স্পর্শ করে বরকত গ্রহণ করা।
১১. মদীনা যিয়ারতের সময় মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায পড়তেই হয় বলে মনে করা।
১২. সবুজ গম্বুজ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা।
১৩. মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।
১৪. রিয়াজুল জান্নায় নামায পড়ার জন্য ভীড় করা। সেখানে নামায পড়লে বেশি সওয়াব হবে বলে মনে করা।
২. কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে মদীনায় সফর করা।
৩. নামাযীর মতো বিনয় সহকারে কবরের প্রতি মুখ করে দাঁড়িয়ে দরূদ ও দু‘আ পাঠ করা।
৪. নবী ﷺ এর নিকট ইস্তেগফার করা।
৫. নবী ﷺ এর নিকট সাহায্য চওয়া।
৬. নবী ﷺ এর কবরের উপর আতর ছড়ানো।
৭. নবী ﷺ এর কবরের দিকে মুখ করে দু‘আ করা।
৮. নবী ﷺ যিয়ারতকারীর সব প্রয়োজন জানেন বলে মনে করা।
৯. মসজিদে নববী ও মসজিদে কুবা ছাড়া মদিনার অন্যান্য মসজিদে সওয়াবের উদ্দেশ্যে যিয়ারত করা।
১০. মসজিদে নববীর মেহরাব, মিম্বর, হুজরার রেলিং ইত্যাদি স্পর্শ করে বরকত গ্রহণ করা।
১১. মদীনা যিয়ারতের সময় মসজিদে নববীতে চল্লিশ ওয়াক্ত নামায পড়তেই হয় বলে মনে করা।
১২. সবুজ গম্বুজ থেকে গড়িয়ে পড়া পানি দ্বারা বরকত গ্রহণ করা।
১৩. মসজিদ থেকে উল্টা পায়ে বের হওয়া।
১৪. রিয়াজুল জান্নায় নামায পড়ার জন্য ভীড় করা। সেখানে নামায পড়লে বেশি সওয়াব হবে বলে মনে করা।
১. বর কর্তৃক কনেকে পয়গামের আঙ্গুরী পরানো এবং তা তাদের দাম্পত্য জীবনে সুখের কারণ মনে করা ও খুলে ফেললে অমঙ্গল হবে মনে করা।
২. কোন নির্দিষ্ট দিনে বা মাসে বিবাহ শুভ বা অশুভ মনে করা।
৩. নিজ পিতা, ভাই বা আপনজন থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে উকিল বানানো।
৪. বরকে কেবলামুখী করে বসানো।
৫. কনের বিদায়কালে বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা এবং মিষ্টান্ন বিতরণ করা।
২. কোন নির্দিষ্ট দিনে বা মাসে বিবাহ শুভ বা অশুভ মনে করা।
৩. নিজ পিতা, ভাই বা আপনজন থাকা সত্ত্বেও অন্য কাউকে উকিল বানানো।
৪. বরকে কেবলামুখী করে বসানো।
৫. কনের বিদায়কালে বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা এবং মিষ্টান্ন বিতরণ করা।
১. মৃত ব্যক্তির গোসল না দেয়া পর্যন্ত তার চারপাশে বসে কুরআন পাঠ করা।
২. মুমূর্ষ রোগীর সামনে কুরআন রেখে দেয়া।
৩. মুমূর্ষ রোগীর নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করা।
৪. মুমূর্ষকে কিবলামুখী করা।
৫. মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট হতে ঋতুবতী, অপবিত্রা প্রসূতি ও অন্যান্য অপবিত্র মানুষদেরকে দূরে রাখা।
৬. মৃত ব্যক্তির পাশে রাত হতে সকাল পর্যন্ত বাতি রাখা।
৭. ধূপ-আগর ইত্যাদি দিয়ে সুগন্ধময় করে রাখা।
৮. দাফন না হওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির ঘরের কোন খাবার না খাওয়া।
৯. মৃত্যুর খবর প্রচারে বাড়াবাড়ি করা। তবে আশেপাশের লোককে মৃত্যুর খবর জানিয়ে জানাযার প্রস্তুতির কথা বলা দোষণীয় নয়।
১০. মৃত ব্যক্তির পবিত্রতার জন্য ব্যবহৃত খিরকা (বস্ত্রখন্ড) ইত্যাদি দূরে ফেলতে গিয়ে (কোন বিপদের আশঙ্কায়) সঙ্গে লোহা রাখা।
১১. মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা অন্যকিছু পাঠ করা।
১২. লাশ উঠানো ও নামানোর সময় এবং পথে নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করা।
১৩. মহিলার চুল ঝুটি না বেধে বুকের উপর খোলা ফেলে রাখা।
১৪. বরকতের আশায় বা আযাব মাফ হওয়ার আশায় কোন পীর বা ওলীর সুপারিশনামা বা শাজারানামা অথবা অন্য কিছু আয়াত বা দু‘আ কাফনের ভিতরে রাখা।
১৫. কোন ওলীর কবরের পাশে কবর দেয়ার জন্য দূর থেকে লাশ আনা।
১৬. কাফনের উপর কোন আয়াত বা দু‘আ লিখা।
১৭. জানাযার খাটকে ফুল বা অন্যকিছু দিয়ে সজ্জিত করা।
১৮. সৌন্দর্যখচিত কালিমা অথবা আয়াত লিখিত মখমলের চাদর দ্বারা লাশ ঢাকা।
১৯. লাশের উপর বা কবরের উপর ফুল দেয়া।
২০. পুষ্পস্তবক দ্বারা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া।
২১. জানাযার সাথে পতাকা বহন করা।
২২. কোন খাদ্যদ্রব্য বা পয়সা ছিটানো।
২৩. এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত ব্যক্তি নেক হলে তার লাশ হাল্কা হয়।
২৪. জানাযা বের হওয়ার সাথে সাথে সাদাকা করা।
২৫. চল্লিশ কদম মাত্র জানাযা বহন করে নির্দিষ্ট সওয়াবের আশা করা।
২৬. লাশের উপর ভিড় জমানো।
২৭. কোন বিশ্বাসে জানাযার নিকটবর্তী বা সম্মুখবর্তী না হওয়া।
২৮. কোন ওলীর কবর তাওয়াফ করা।
২৯. মৃতের উপর জানাযা পড়া হয়েছে তা জানা সত্ত্বেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া।
৩০. জানাযার নামাযের কাতারে গোলাপ জল ছিটানো।
৩১. জুতায় ময়লা নেই জানা সত্ত্বেও জানাযার নামাযের জন্য জুতা খুলে ফেলা অথবা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা।
৩২. সালাত শেষে হাত তুলে জামা‘আতী দু‘আ করা।
৩৩. দাফন করার সময় জোরে জোরে যিকির পড়া।
৩৪. মুর্দার জন্য কবরে বালিশ তৈরি করা।
৩৫. কবরকে সুগন্ধিময় করা।
৩৬. মাটি দেয়ার সময় ‘মিনহা খালাকনাকুম’ আয়াতটি পাঠ করা।
৩৭. কবরে যে লাশ রাখে সে ছাড়া সকলের ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ দু‘আ পাঠ করা।
৩৮. লাশের বুকে মাটি রাখা।
৩৯. কবর অধিক উঁচু করা।
৪০. কবরের চার কোণে ও মাঝে খেজুরের ডাল গাঁড়া। [তবে কোন জন্তু-জানোয়ার নষ্ট করে ফেলবে এ আশঙ্কা থাকলে কবরকে রক্ষা করতে কাঁটা ইত্যাদি রাখা দোষণীয় নয়।]
৪১. মৃত ব্যক্তির মাথার দিকে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাকারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে সূরা বাকারার শেষাংশ পাঠ করা।
৪২. দাফনের পর তালকীন দেয়া।
৪৩. অমাবশ্যার রাতে মৃত্যুবরণ করা খারাপ বা অশুভ মনে করা।
৪৪. দাফনকর্ম শেষ করে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে বা কাউকে স্পর্শ করতে হয় না বলে বিশ্বাস করা।
৪৫. কবরের পাশে কোন খাদ্য বিতরণ বা পশু যবেহ করা।
৪৬. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফত গ্রহণ করা।
৪৭. মৃত ব্যক্তির ঘরে ভোজ করা।
৪৮. কেবল শোক পালনের উদ্দেশ্যে দাড়ি-গোঁফ লম্বা করা।
৪৯. মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারো শোক পালনের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য ত্যাগ করা।
৫০. মৃত্যু অবধি বিধবার সৌন্দর্য ত্যাগ করা।
৫১. মৃতের নামে কুরআনখানি, ফাতেহাখানি ও চল্লিশার আয়োজন করা।
৫২. মুর্দার দম যাওয়ার স্থানে কয়েকদিন যাবত বাতি ও ধুপ জ্বালিয়ে রাখা।
৫৩. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে রুহ আসে বলে মনে করা।
৫৪. মৃত ব্যক্তি যা খেতে ভালোবাসতো তা সাদকা করা।
৫৫. কারো মরার পূর্বেই কবর খনন করে রাখা।
৫৬. দাফনের পর কয়েকদিন সকাল সকাল কবর যিয়ারত করা।
৫৭. যিয়ারতের জন্য কোন দিন নির্ধারণ করা।
৫৮. কারো কবর যিয়ারতের মাধ্যমে বরকত লাভ হবে মনে করা।
৫৯. কবরের সামনে মুসল্লির মতো খাড়া হওয়া।
৬০. যিয়ারতকারীর মাধ্যমে সালাম পাঠানো।
৬১. লোক ডেকে এনে সালাত ও তিলাওয়াত ইত্যাদি দ্বারা ইসালে সওয়াব করা।
৬২. ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৬৩. কবরস্থানের গাছপালাকে পবিত্র মনে করা এবং তা কাটা অনুচিত মনে করা।
৬৪. কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে দূর থেকে সফর করা এবং তাতে এত এত নেকী আছে বলে মনে করা।
৬৫. গোসলের পানি গরম করার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে পানি গরম করা।
৬৬. মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।
৬৭. কাফন পরানোর সময় নির্ধারিত পরিমাণের চাউল, বিস্কুট ও ফলের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো কবরস্থানে আগত ফকিরদের মাঝে বিলি করা।
৬৮. জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু রাববী, মুহাম্মাদ নবী’ কিংবা ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করা।
৬৯. জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগরবাতি জ্বালানো।
৭০. জানাযা শেষে ‘‘লোকটি কেমন ছিল?’’ উপস্থিত সবাই ‘‘বেশ ভালো ছিল’’ এরকম প্রশ্নোত্তর করা।
৭১. জানাযা পড়ানোর সময় ইমাম একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা, যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।
৭২. কোন কাপড়খন্ডের উপর কালিমা লিখে ঐ কাপড়খন্ড কবরের ভেতর মৃতের ডান পাশে মুখ বরাবর কবরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া।
৭৩. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো ও খানা পাক না করা।
৭৪. মৃত ব্যক্তির কাযা সালাত থাকলে কিংবা মৃত ব্যক্তি বেনামাযী হলে তার নামাযের আর্থিক কাফফারা হিসাব করে কাফফারা আদায় করা এবং মৃত ব্যক্তি গরীব হলে কাফফারার হিসেবে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদিয়া প্রদান করা।
৭৫. মৃতব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা।
৭৬. কবরের উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা।
৭৭. মৃত ব্যক্তির জন্য শোকসভা করা।
৭৮. দুই ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাকে জরুরি মনে করা।
৭৯. নেককার মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দু‘আ করা হলে দু‘আ কবুল হবে মনে করা।
৮০. মৃত ব্যক্তিকে তার কোন আত্মীয়স্বজন স্বপ্নে দেখলে তার জন্য যেকোন খতম পড়ানো বা কোন অনুষ্ঠান করা।
সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হোক কিংবা বরকত লাভের নিয়তে- এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা কুরআন-হাদীস ও সালাফে সালেহীন থেকে এসব কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না।
২. মুমূর্ষ রোগীর সামনে কুরআন রেখে দেয়া।
৩. মুমূর্ষ রোগীর নিকট সূরা ইয়াসিন পাঠ করা।
৪. মুমূর্ষকে কিবলামুখী করা।
৫. মুমূর্ষ ব্যক্তির নিকট হতে ঋতুবতী, অপবিত্রা প্রসূতি ও অন্যান্য অপবিত্র মানুষদেরকে দূরে রাখা।
৬. মৃত ব্যক্তির পাশে রাত হতে সকাল পর্যন্ত বাতি রাখা।
৭. ধূপ-আগর ইত্যাদি দিয়ে সুগন্ধময় করে রাখা।
৮. দাফন না হওয়া পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির ঘরের কোন খাবার না খাওয়া।
৯. মৃত্যুর খবর প্রচারে বাড়াবাড়ি করা। তবে আশেপাশের লোককে মৃত্যুর খবর জানিয়ে জানাযার প্রস্তুতির কথা বলা দোষণীয় নয়।
১০. মৃত ব্যক্তির পবিত্রতার জন্য ব্যবহৃত খিরকা (বস্ত্রখন্ড) ইত্যাদি দূরে ফেলতে গিয়ে (কোন বিপদের আশঙ্কায়) সঙ্গে লোহা রাখা।
১১. মৃতব্যক্তিকে গোসল দেয়ার সময় প্রত্যেক অঙ্গে পানি ঢালতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বা অন্যকিছু পাঠ করা।
১২. লাশ উঠানো ও নামানোর সময় এবং পথে নিয়ে যাওয়ার সময় উচ্চৈঃস্বরে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এর যিকির করা।
১৩. মহিলার চুল ঝুটি না বেধে বুকের উপর খোলা ফেলে রাখা।
১৪. বরকতের আশায় বা আযাব মাফ হওয়ার আশায় কোন পীর বা ওলীর সুপারিশনামা বা শাজারানামা অথবা অন্য কিছু আয়াত বা দু‘আ কাফনের ভিতরে রাখা।
১৫. কোন ওলীর কবরের পাশে কবর দেয়ার জন্য দূর থেকে লাশ আনা।
১৬. কাফনের উপর কোন আয়াত বা দু‘আ লিখা।
১৭. জানাযার খাটকে ফুল বা অন্যকিছু দিয়ে সজ্জিত করা।
১৮. সৌন্দর্যখচিত কালিমা অথবা আয়াত লিখিত মখমলের চাদর দ্বারা লাশ ঢাকা।
১৯. লাশের উপর বা কবরের উপর ফুল দেয়া।
২০. পুষ্পস্তবক দ্বারা শ্রদ্ধাঞ্জলি দেয়া।
২১. জানাযার সাথে পতাকা বহন করা।
২২. কোন খাদ্যদ্রব্য বা পয়সা ছিটানো।
২৩. এই বিশ্বাস রাখা যে, মৃত ব্যক্তি নেক হলে তার লাশ হাল্কা হয়।
২৪. জানাযা বের হওয়ার সাথে সাথে সাদাকা করা।
২৫. চল্লিশ কদম মাত্র জানাযা বহন করে নির্দিষ্ট সওয়াবের আশা করা।
২৬. লাশের উপর ভিড় জমানো।
২৭. কোন বিশ্বাসে জানাযার নিকটবর্তী বা সম্মুখবর্তী না হওয়া।
২৮. কোন ওলীর কবর তাওয়াফ করা।
২৯. মৃতের উপর জানাযা পড়া হয়েছে তা জানা সত্ত্বেও পুনরায় গায়েবানা জানাযা পড়া।
৩০. জানাযার নামাযের কাতারে গোলাপ জল ছিটানো।
৩১. জুতায় ময়লা নেই জানা সত্ত্বেও জানাযার নামাযের জন্য জুতা খুলে ফেলা অথবা খুলে তার উপর দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করা।
৩২. সালাত শেষে হাত তুলে জামা‘আতী দু‘আ করা।
৩৩. দাফন করার সময় জোরে জোরে যিকির পড়া।
৩৪. মুর্দার জন্য কবরে বালিশ তৈরি করা।
৩৫. কবরকে সুগন্ধিময় করা।
৩৬. মাটি দেয়ার সময় ‘মিনহা খালাকনাকুম’ আয়াতটি পাঠ করা।
৩৭. কবরে যে লাশ রাখে সে ছাড়া সকলের ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ’ দু‘আ পাঠ করা।
৩৮. লাশের বুকে মাটি রাখা।
৩৯. কবর অধিক উঁচু করা।
৪০. কবরের চার কোণে ও মাঝে খেজুরের ডাল গাঁড়া। [তবে কোন জন্তু-জানোয়ার নষ্ট করে ফেলবে এ আশঙ্কা থাকলে কবরকে রক্ষা করতে কাঁটা ইত্যাদি রাখা দোষণীয় নয়।]
৪১. মৃত ব্যক্তির মাথার দিকে সূরা ফাতিহা বা সূরা বাকারার প্রথমাংশ এবং পায়ের দিকে সূরা বাকারার শেষাংশ পাঠ করা।
৪২. দাফনের পর তালকীন দেয়া।
৪৩. অমাবশ্যার রাতে মৃত্যুবরণ করা খারাপ বা অশুভ মনে করা।
৪৪. দাফনকর্ম শেষ করে এসে হাত-মুখ না ধুয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতে বা কাউকে স্পর্শ করতে হয় না বলে বিশ্বাস করা।
৪৫. কবরের পাশে কোন খাদ্য বিতরণ বা পশু যবেহ করা।
৪৬. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে যিয়াফত গ্রহণ করা।
৪৭. মৃত ব্যক্তির ঘরে ভোজ করা।
৪৮. কেবল শোক পালনের উদ্দেশ্যে দাড়ি-গোঁফ লম্বা করা।
৪৯. মৃত ব্যক্তির স্ত্রী ব্যতীত অন্য কারো শোক পালনের উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য ত্যাগ করা।
৫০. মৃত্যু অবধি বিধবার সৌন্দর্য ত্যাগ করা।
৫১. মৃতের নামে কুরআনখানি, ফাতেহাখানি ও চল্লিশার আয়োজন করা।
৫২. মুর্দার দম যাওয়ার স্থানে কয়েকদিন যাবত বাতি ও ধুপ জ্বালিয়ে রাখা।
৫৩. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে রুহ আসে বলে মনে করা।
৫৪. মৃত ব্যক্তি যা খেতে ভালোবাসতো তা সাদকা করা।
৫৫. কারো মরার পূর্বেই কবর খনন করে রাখা।
৫৬. দাফনের পর কয়েকদিন সকাল সকাল কবর যিয়ারত করা।
৫৭. যিয়ারতের জন্য কোন দিন নির্ধারণ করা।
৫৮. কারো কবর যিয়ারতের মাধ্যমে বরকত লাভ হবে মনে করা।
৫৯. কবরের সামনে মুসল্লির মতো খাড়া হওয়া।
৬০. যিয়ারতকারীর মাধ্যমে সালাম পাঠানো।
৬১. লোক ডেকে এনে সালাত ও তিলাওয়াত ইত্যাদি দ্বারা ইসালে সওয়াব করা।
৬২. ইসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৬৩. কবরস্থানের গাছপালাকে পবিত্র মনে করা এবং তা কাটা অনুচিত মনে করা।
৬৪. কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে দূর থেকে সফর করা এবং তাতে এত এত নেকী আছে বলে মনে করা।
৬৫. গোসলের পানি গরম করার জন্য পাক ঘরের চুলা বাদ দিয়ে বাইরে চুলা বানিয়ে পানি গরম করা।
৬৬. মৃত ব্যক্তিকে যেখানে গোসল দেয়া হয় সে স্থান ৪ দিন কিংবা ৪০ দিন পর্যন্ত বেড়া দিয়ে সংরক্ষণ করা এবং রাতের বেলায় সেখানে মোম, হারিকেন বা বৈদ্যুতিক বাতি দিয়ে আলোকিত করে রাখা।
৬৭. কাফন পরানোর সময় নির্ধারিত পরিমাণের চাউল, বিস্কুট ও ফলের ব্যবস্থা করা এবং সেগুলো কবরস্থানে আগত ফকিরদের মাঝে বিলি করা।
৬৮. জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় ‘আল্লাহু রাববী, মুহাম্মাদ নবী’ কিংবা ‘কালিমা শাহাদাত’ পাঠ করা।
৬৯. জানাযা নেয়ার সময় খাটিয়ার উপর আগরবাতি জ্বালানো।
৭০. জানাযা শেষে ‘‘লোকটি কেমন ছিল?’’ উপস্থিত সবাই ‘‘বেশ ভালো ছিল’’ এরকম প্রশ্নোত্তর করা।
৭১. জানাযা পড়ানোর সময় ইমাম একখন্ড সাদা কাপড় জায়নামায হিসেবে ব্যবহার করা, যা মূলত কাফনের কাপড়ের অংশ বিশেষ।
৭২. কোন কাপড়খন্ডের উপর কালিমা লিখে ঐ কাপড়খন্ড কবরের ভেতর মৃতের ডান পাশে মুখ বরাবর কবরের দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া।
৭৩. মৃত ব্যক্তির বাড়িতে তিন দিন পর্যন্ত চুলা না জ্বালানো ও খানা পাক না করা।
৭৪. মৃত ব্যক্তির কাযা সালাত থাকলে কিংবা মৃত ব্যক্তি বেনামাযী হলে তার নামাযের আর্থিক কাফফারা হিসাব করে কাফফারা আদায় করা এবং মৃত ব্যক্তি গরীব হলে কাফফারার হিসেবে একটি কুরআন মাজীদ কাউকে হাদিয়া প্রদান করা।
৭৫. মৃতব্যক্তির আত্মার শান্তি কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন করা।
৭৬. কবরের উপর পুষ্পস্তবক অর্পণ করা।
৭৭. মৃত ব্যক্তির জন্য শোকসভা করা।
৭৮. দুই ঈদের দিন কবর যিয়ারত করাকে জরুরি মনে করা।
৭৯. নেককার মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারতের মাধ্যমে দু‘আ করা হলে দু‘আ কবুল হবে মনে করা।
৮০. মৃত ব্যক্তিকে তার কোন আত্মীয়স্বজন স্বপ্নে দেখলে তার জন্য যেকোন খতম পড়ানো বা কোন অনুষ্ঠান করা।
সওয়াব পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে হোক কিংবা বরকত লাভের নিয়তে- এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা কুরআন-হাদীস ও সালাফে সালেহীন থেকে এসব কাজের সমর্থন পাওয়া যায় না।
১. কবর বাঁধানো।
২. পাথরের উপর নাম খুদাই করা বা কোন আয়াত লিখা অথবা জান্নাতী লিখা।
৩. কবরের উপর দর্গা ও মাযার তৈরি করা।
৪. কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণ করা।
৫. কবরে বাতি জ্বালানো।
৬. কবরে ধূপ-ধুনা দেয়া।
৭. কবরে পশু যবাই করা।
৮. কবরে সিজদা করা।
৯. কবর তওয়াফ করা।
১০. কবর বা মাযার চুম্বন বা স্পর্শ করে গায়ে মাখা।
১১. কবরের দেয়ালে বা মাযারে কপাল, গাল পিঠ বা পেট লাগিয়ে দু‘আ করা।
১২. তা‘যীম করে কবরের দিকে পিঠ না করা।
১৩. কবরের সম্মুখে নামায পড়া।
১৪. কবরবাসীকে নাজাতের ওসীলা বা বিপদে সুপারিশকারী মানা এবং তাদের ওসীলায় দু‘আ করা।
১৫. কবরবাসীর নামে কসম খাওয়া।
১৬. মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য, সন্তান, সম্পদ, সুখ ও বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া।
১৭. কবর যিয়ারতের পর উল্টা পায়ে ও কবরকে সামনে করেই ফিরে আসা।
২. পাথরের উপর নাম খুদাই করা বা কোন আয়াত লিখা অথবা জান্নাতী লিখা।
৩. কবরের উপর দর্গা ও মাযার তৈরি করা।
৪. কবরকে কেন্দ্র করে মসজিদ ও গম্বুজ নির্মাণ করা।
৫. কবরে বাতি জ্বালানো।
৬. কবরে ধূপ-ধুনা দেয়া।
৭. কবরে পশু যবাই করা।
৮. কবরে সিজদা করা।
৯. কবর তওয়াফ করা।
১০. কবর বা মাযার চুম্বন বা স্পর্শ করে গায়ে মাখা।
১১. কবরের দেয়ালে বা মাযারে কপাল, গাল পিঠ বা পেট লাগিয়ে দু‘আ করা।
১২. তা‘যীম করে কবরের দিকে পিঠ না করা।
১৩. কবরের সম্মুখে নামায পড়া।
১৪. কবরবাসীকে নাজাতের ওসীলা বা বিপদে সুপারিশকারী মানা এবং তাদের ওসীলায় দু‘আ করা।
১৫. কবরবাসীর নামে কসম খাওয়া।
১৬. মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য, সন্তান, সম্পদ, সুখ ও বিপদ থেকে মুক্তি চাওয়া।
১৭. কবর যিয়ারতের পর উল্টা পায়ে ও কবরকে সামনে করেই ফিরে আসা।
আমাদের মুসলিম সমাজে এমন অনেক কাজকর্ম হতে দেখা যায়, যা মূলত কল্পনাপ্রসুত অথবা অন্য কোন ধর্ম থেকে আমদানীকৃত। সমাজে এমন অনেক কুসংস্কার প্রচলিত আছে, যা অনেকটাই হিন্দুদের কাজকর্মের সাথে মিলে যায়। এসব কুসংস্কারমূলক কথা ও কাজ থেকে অবশ্যই আমাদেরকে বেরিয়ে আসতে হবে। নিচে কিছু কুসংস্কার সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. সন্ধ্যায় ঘরে আলো না জ্বালালে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
২. কুকুর কাঁদলে বিপদ আসবে বলে মনে করা।
৩. কাক ডাকলে কেউ মারা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৪. ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দেখলে অমঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস করা।
৫. বাম চোখ ফরকালে বিপদ, ডান চোখ ফরকালে সৌভাগ্য বলে মনে করা।
৬. ডান হাতের তালু চুলকালে পয়সা আসে বলে মনে করা।
৭. বাম হাতের তালু চুলকালে পয়সা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৮. নাক ও কপালে ফোঁড়া হলে ধনসম্পদ আসবে বলে মনে করা।
৯. ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে/গালে হাত দিয়ে বসাকে কুলক্ষণ মনে করা।
১০. জন্মগ্রহণের মাসে বিয়ে করলে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
১১. জোড় কলা খেলে জোড়া বাচ্চা হবে বলে ধারণা করা।
১২. ফাঁটা বা ভাঙ্গা প্লেটে খেলে অলক্ষ্মী ঘরে আসে বলে মনে করা।
১৩. পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম না খাওয়া।
১৪. পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছরই ভালো খাবার জুটবে বলে মনে করা।
১৫. যাত্রার সময় কেউ হাঁচি দিলে/পেছন থেকে ডাকলে কুলক্ষণ মনে করা।
১৬. যাত্রাকালে কিছুতে হোঁচট খেলে অমঙ্গল হয় মনে করে একটু বসে পুনরায় যাত্রা করা।
১৭. শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলে যাত্রা অশুভ হবে বলে মনে করা।
১৮. শনি, মঙ্গল ও আমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করে শুভ কাজ না করা।
১৯. সকাল বেলা দোকান খোলার পর বাকিতে বিক্রি করলে সারাদিন বাকি বা ফাঁকি যাবে বলে মনে করা।
২০. ১ম বিক্রির বা ১ম ভাড়ার টাকা পেলে বরকতের আশায় চুমু খাওয়া, কপালে লাগানো।
২১. জামাকাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় সেলাই করা কুলক্ষণ মনে করা।
২২. বন্ধ্যা মহিলা ধরলে বা তাকালে অশুভ বা অমঙ্গল হবে বলে মনে করা।
২৩. পরপর সন্তান মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সন্তান জন্ম নিলে কান ছিদ্র করে দেয়া বা বাজে নাম রাখা। যেমন- হেঁজা, মরা, মরণ ইত্যাদি।
২৪. চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় যদি কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোক কিছু কাটাকাটি করে তাহলে তার সন্তানের অঙ্গহানি ঘটবে বলে মনে করা।
২৫. কারও আলোচনা চলছে, ইতোমধ্যে সে এসে পড়লে বা ফোন করলে তার দীর্ঘজীবী হওয়ার আলামত বলে মনে করা।
২৬. নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, মডেলিং, ফ্যাশন, নাটক, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, রাখিবন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি প্রয়োজন মনে করা।
২৭. শনিবার দিন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, তাতে অকল্যাণ হবে মনে করা।
২৮. মৃত ব্যক্তির জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা।
২৯. পেঁচা ডাকলে বিপদ আসন্ন মনে করা।
৩০. পায়ে তিল থাকলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না মনে করা।
৩১. ঠোঁটের নিচে তিল, কানের নিচে তিল থাকলে অকল্যাণ হয় মনে করা।
৩২. চোখ টেরা থাকলে ভাগ্যবান হওয়া মনে করা।
৩৩. নাক বোঁচা থাকলে বেশি করে বিয়ের প্রস্তাব আসে মনে করা।
৩৪. বাজি ধরা।
৩৫. নজর লাগবে মনে করে খাবার ফেলে দিয়ে খাবার শুরু করা।
৩৬. খাবার সময় সালাম না দেয়া।
৩৭. প্লেটের সম্পূর্ণ খাবার শেষ না করে কিছু রেখে দেয়া।
৩৮. সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাজার থেকে মাছ আনলে মাছের সাথে দুষ্ট জিন আসে মনে করা।
৩৯. খাবার সময় জিহবায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিয়েছে ও কাশি দিলে কেউ তাকে স্মরণ করেছে বলে মনে করা।
৪০. কপালে টিপ লাগানো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করা।
৪১. প্রথম যৌবনে মেয়েদের পর্দা করা জরুরি নয় মনে করা।
৪২. প্রথম সন্তান মেয়ে হলে মন খারাপ করা।
৪৩. অভাবী মেয়েদের অলক্ষ্মী ও পোড়া কপালী বলা।
৪৪. প্রথম সন্তান গর্ভধারণের সপ্তম মাসে সাতাশা করা, কোন কোন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে গর্ভধারণের পর মেয়েদের বাড়ি থেকে ছেলেদের বাড়িতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পাঠানো।
৪৫. গর্ভাবস্থায় সুন্দর বাচ্চার ছবি দেখলে বাচ্চা সুন্দর হবে বলে ধারণা করা।
৪৬. গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খেতে ইচ্ছা হলে তা না খেলে বাচ্চার লালা পড়বে বলে ধারণা করা।
৪৭. গর্ভাবস্থায় সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ লাগা দেখলে সন্তান পঙ্গু হবে বলে মনে করা।
৪৮. কোন মাসে বা দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে অমঙ্গল মনে করা।
৪৯. বিয়ের লগন অনুষ্ঠানে কুলাতে প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে কনের চেহারার সামনে দিয়ে ঘুরানো।
৫০. সবার সামনে বর কনেকে সালাত আদায় করানো।
৫১. কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বর-কনে পরস্পর পরস্পরকে ভাতের দানা খাওয়ানো, জামাইয়ের ঝুঁটা ভাত নিয়ে কনেকে খাওয়ানো।
৫২. গেট ধরে বর পক্ষ থেকে টাকা-পয়সা নেয়া।
৫৩. গায়ে হলুদের দিন নারী-পুরুষ একসঙ্গে গায়ে হলুদ মাখানো।
৫৪. বরকে ভাবীদের দ্বারা হলুদ মাখানো ও গোসল দেয়া।
৫৫. গায়ে হলুদের নামে অনুষ্ঠান করে বরের কপালে নারীরা, কনের কপালে পুরুষরা হলুদ লাগানো ও মিষ্টি খাওয়ানো।
৫৬. জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস, ম্যারিজ ডে (বিয়ে দিবস), ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, বসন্ত দিবস, এপ্রিল ফুল দিবস উদযাপন করা।
৫৭. বিভিন্ন দিবসে কবরে ও স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া, খালি পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়ে নীরবতা পালন করা ও শপথ নেয়া।
৫৮. নতুন বর্ষ শুরু উপলক্ষে বোমা ফাটানো ও আতশবাজি করা।
৫৯. বছরের প্রথম দিন ক্রেতাকে বাকি না দেয়া।
৬০. সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিতভাবে দোকানে আগরবাতি জ্বালানো ও পানি ছিটানো।
৬১. সবসময় ক্যাশ খালি না রেখে কিছু না কিছু টাকা পয়সা রাখা।
৬২. ছেলেদের কান ছিদ্র করা ও তাতে দুল পরিধান করা।
৬৩. ছেলেদের গলায় চেইন পরিধান করা।
৬৪. শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তনের নামে প্রজ্জ্বলিত আগুনে সালাম দেয়া ও ফুল দেয়া।
৬৫. ছোট বাচ্চারা নতুন হাঁটা শুরু করলে তার উপর দিয়ে বিভিন্ন ফল, পিঠা ছোট ছোট টুকরো করে ঘরে বা বারান্দায় ফেলা। এরূপ করলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারবে বলে মনে করা।
৬৬. নজর লাগবে মনে করে বাচ্চাদের কপালে কাজলের ফোঁটা দেয়া।
৬৭. বাচ্চাদের নতুন দাঁত উঠলে যে প্রথমে দেখবে তার সবাইকে পায়েস বা মিষ্টি খাওয়াতে হবে মনে করা।
৬৮. বাচ্চাদের লাঠি বা ঝাড়ুর ছোঁয়া লাগলে জ্বর আসবে বলে মনে করা এবং পানি ছিটিয়ে দেয়া।
৬৯. বাচ্চাদের উপর দিয়ে টপকিয়ে গেলে আর বড় হবে না মনে করা।
৭০. বাচ্চাদের মন ভোলানোর জন্য মিথ্যা বলা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া।
৭১. নারী-পুরুষ দুজন মিলে জবাই করা যাবে না বলে মনে করা।
৭২. বাচ্চাদের আজেবাজে নাম রাখা : অনেকে অর্থের দিকে খেয়াল না করে নায়ক-নায়িকা বা সমাজে প্রচলিত নাম অনুসারে সন্তানদের আজেবাজে নাম রেখে থাকে। যেমন, সান্টু, মন্টু, মিন্টু, হ্যাপি, বাপ্পি, প্রিন্স, জেমস ইত্যাদি। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে চম্পা, ডেজী, মিমি, মায়া, দিয়া, আখি, শিল্পী, পপি, পুতুল, ডলি, বেবী, ডায়না, প্রিয়াঙ্কা, বন্যা, বাসন্তী ইত্যাদি।
৭৩. কদমবুসী করা : অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় ভক্তি-শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পা স্পর্শ করে সালাম করা তা মা-বাপ, উস্তাদ, কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি যে কেউ হোক না কেন।
১. সন্ধ্যায় ঘরে আলো না জ্বালালে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
২. কুকুর কাঁদলে বিপদ আসবে বলে মনে করা।
৩. কাক ডাকলে কেউ মারা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৪. ভাঙ্গা আয়নায় চেহারা দেখলে অমঙ্গল হয় বলে বিশ্বাস করা।
৫. বাম চোখ ফরকালে বিপদ, ডান চোখ ফরকালে সৌভাগ্য বলে মনে করা।
৬. ডান হাতের তালু চুলকালে পয়সা আসে বলে মনে করা।
৭. বাম হাতের তালু চুলকালে পয়সা যাবে বলে বিশ্বাস করা।
৮. নাক ও কপালে ফোঁড়া হলে ধনসম্পদ আসবে বলে মনে করা।
৯. ঘরের দরজায় হেলান দিয়ে/গালে হাত দিয়ে বসাকে কুলক্ষণ মনে করা।
১০. জন্মগ্রহণের মাসে বিয়ে করলে অমঙ্গল হয় বলে মনে করা।
১১. জোড় কলা খেলে জোড়া বাচ্চা হবে বলে ধারণা করা।
১২. ফাঁটা বা ভাঙ্গা প্লেটে খেলে অলক্ষ্মী ঘরে আসে বলে মনে করা।
১৩. পরীক্ষায় শূন্য পাওয়ার ভয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার পূর্বে ডিম না খাওয়া।
১৪. পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষের দিন ভালো খাবার খেলে সারা বছরই ভালো খাবার জুটবে বলে মনে করা।
১৫. যাত্রার সময় কেউ হাঁচি দিলে/পেছন থেকে ডাকলে কুলক্ষণ মনে করা।
১৬. যাত্রাকালে কিছুতে হোঁচট খেলে অমঙ্গল হয় মনে করে একটু বসে পুনরায় যাত্রা করা।
১৭. শুরুতে বাধাগ্রস্ত হলে যাত্রা অশুভ হবে বলে মনে করা।
১৮. শনি, মঙ্গল ও আমাবশ্যার দিনকে অশুভ মনে করে শুভ কাজ না করা।
১৯. সকাল বেলা দোকান খোলার পর বাকিতে বিক্রি করলে সারাদিন বাকি বা ফাঁকি যাবে বলে মনে করা।
২০. ১ম বিক্রির বা ১ম ভাড়ার টাকা পেলে বরকতের আশায় চুমু খাওয়া, কপালে লাগানো।
২১. জামাকাপড় গায়ে থাকা অবস্থায় সেলাই করা কুলক্ষণ মনে করা।
২২. বন্ধ্যা মহিলা ধরলে বা তাকালে অশুভ বা অমঙ্গল হবে বলে মনে করা।
২৩. পরপর সন্তান মারা যাওয়ার পর পরবর্তী সন্তান জন্ম নিলে কান ছিদ্র করে দেয়া বা বাজে নাম রাখা। যেমন- হেঁজা, মরা, মরণ ইত্যাদি।
২৪. চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের সময় যদি কোন গর্ভবতী স্ত্রীলোক কিছু কাটাকাটি করে তাহলে তার সন্তানের অঙ্গহানি ঘটবে বলে মনে করা।
২৫. কারও আলোচনা চলছে, ইতোমধ্যে সে এসে পড়লে বা ফোন করলে তার দীর্ঘজীবী হওয়ার আলামত বলে মনে করা।
২৬. নাচ-গান, বাদ্য-বাজনা, মডেলিং, ফ্যাশন, নাটক, বর্ষবরণ, বসন্তবরণ, রাখিবন্ধন, মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো ইত্যাদি প্রয়োজন মনে করা।
২৭. শনিবার দিন কোথাও যাওয়া ঠিক নয়, তাতে অকল্যাণ হবে মনে করা।
২৮. মৃত ব্যক্তির জন্য কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা।
২৯. পেঁচা ডাকলে বিপদ আসন্ন মনে করা।
৩০. পায়ে তিল থাকলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ হয় না মনে করা।
৩১. ঠোঁটের নিচে তিল, কানের নিচে তিল থাকলে অকল্যাণ হয় মনে করা।
৩২. চোখ টেরা থাকলে ভাগ্যবান হওয়া মনে করা।
৩৩. নাক বোঁচা থাকলে বেশি করে বিয়ের প্রস্তাব আসে মনে করা।
৩৪. বাজি ধরা।
৩৫. নজর লাগবে মনে করে খাবার ফেলে দিয়ে খাবার শুরু করা।
৩৬. খাবার সময় সালাম না দেয়া।
৩৭. প্লেটের সম্পূর্ণ খাবার শেষ না করে কিছু রেখে দেয়া।
৩৮. সন্ধ্যার পর বাড়িতে বাজার থেকে মাছ আনলে মাছের সাথে দুষ্ট জিন আসে মনে করা।
৩৯. খাবার সময় জিহবায় কামড় লাগলে কেউ তাকে গালি দিয়েছে ও কাশি দিলে কেউ তাকে স্মরণ করেছে বলে মনে করা।
৪০. কপালে টিপ লাগানো ও পায়ে আলতা ব্যবহার করা।
৪১. প্রথম যৌবনে মেয়েদের পর্দা করা জরুরি নয় মনে করা।
৪২. প্রথম সন্তান মেয়ে হলে মন খারাপ করা।
৪৩. অভাবী মেয়েদের অলক্ষ্মী ও পোড়া কপালী বলা।
৪৪. প্রথম সন্তান গর্ভধারণের সপ্তম মাসে সাতাশা করা, কোন কোন এলাকায় বাধ্যতামূলকভাবে গর্ভধারণের পর মেয়েদের বাড়ি থেকে ছেলেদের বাড়িতে বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী পাঠানো।
৪৫. গর্ভাবস্থায় সুন্দর বাচ্চার ছবি দেখলে বাচ্চা সুন্দর হবে বলে ধারণা করা।
৪৬. গর্ভাবস্থায় কোন কিছু খেতে ইচ্ছা হলে তা না খেলে বাচ্চার লালা পড়বে বলে ধারণা করা।
৪৭. গর্ভাবস্থায় সূর্য-চন্দ্র গ্রহণ লাগা দেখলে সন্তান পঙ্গু হবে বলে মনে করা।
৪৮. কোন মাসে বা দিনে বিয়ে অনুষ্ঠান করাকে অমঙ্গল মনে করা।
৪৯. বিয়ের লগন অনুষ্ঠানে কুলাতে প্রদ্বীপ জ্বালিয়ে কনের চেহারার সামনে দিয়ে ঘুরানো।
৫০. সবার সামনে বর কনেকে সালাত আদায় করানো।
৫১. কনিষ্ঠা অঙ্গুলি দ্বারা বর-কনে পরস্পর পরস্পরকে ভাতের দানা খাওয়ানো, জামাইয়ের ঝুঁটা ভাত নিয়ে কনেকে খাওয়ানো।
৫২. গেট ধরে বর পক্ষ থেকে টাকা-পয়সা নেয়া।
৫৩. গায়ে হলুদের দিন নারী-পুরুষ একসঙ্গে গায়ে হলুদ মাখানো।
৫৪. বরকে ভাবীদের দ্বারা হলুদ মাখানো ও গোসল দেয়া।
৫৫. গায়ে হলুদের নামে অনুষ্ঠান করে বরের কপালে নারীরা, কনের কপালে পুরুষরা হলুদ লাগানো ও মিষ্টি খাওয়ানো।
৫৬. জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস, ম্যারিজ ডে (বিয়ে দিবস), ভালোবাসা দিবস, পহেলা বৈশাখ, বসন্ত দিবস, এপ্রিল ফুল দিবস উদযাপন করা।
৫৭. বিভিন্ন দিবসে কবরে ও স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দেয়া, খালি পায়ে হেঁটে সেখানে গিয়ে নীরবতা পালন করা ও শপথ নেয়া।
৫৮. নতুন বর্ষ শুরু উপলক্ষে বোমা ফাটানো ও আতশবাজি করা।
৫৯. বছরের প্রথম দিন ক্রেতাকে বাকি না দেয়া।
৬০. সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিতভাবে দোকানে আগরবাতি জ্বালানো ও পানি ছিটানো।
৬১. সবসময় ক্যাশ খালি না রেখে কিছু না কিছু টাকা পয়সা রাখা।
৬২. ছেলেদের কান ছিদ্র করা ও তাতে দুল পরিধান করা।
৬৩. ছেলেদের গলায় চেইন পরিধান করা।
৬৪. শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তনের নামে প্রজ্জ্বলিত আগুনে সালাম দেয়া ও ফুল দেয়া।
৬৫. ছোট বাচ্চারা নতুন হাঁটা শুরু করলে তার উপর দিয়ে বিভিন্ন ফল, পিঠা ছোট ছোট টুকরো করে ঘরে বা বারান্দায় ফেলা। এরূপ করলে বাচ্চারা তাড়াতাড়ি হাঁটতে পারবে বলে মনে করা।
৬৬. নজর লাগবে মনে করে বাচ্চাদের কপালে কাজলের ফোঁটা দেয়া।
৬৭. বাচ্চাদের নতুন দাঁত উঠলে যে প্রথমে দেখবে তার সবাইকে পায়েস বা মিষ্টি খাওয়াতে হবে মনে করা।
৬৮. বাচ্চাদের লাঠি বা ঝাড়ুর ছোঁয়া লাগলে জ্বর আসবে বলে মনে করা এবং পানি ছিটিয়ে দেয়া।
৬৯. বাচ্চাদের উপর দিয়ে টপকিয়ে গেলে আর বড় হবে না মনে করা।
৭০. বাচ্চাদের মন ভোলানোর জন্য মিথ্যা বলা বা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া।
৭১. নারী-পুরুষ দুজন মিলে জবাই করা যাবে না বলে মনে করা।
৭২. বাচ্চাদের আজেবাজে নাম রাখা : অনেকে অর্থের দিকে খেয়াল না করে নায়ক-নায়িকা বা সমাজে প্রচলিত নাম অনুসারে সন্তানদের আজেবাজে নাম রেখে থাকে। যেমন, সান্টু, মন্টু, মিন্টু, হ্যাপি, বাপ্পি, প্রিন্স, জেমস ইত্যাদি। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে চম্পা, ডেজী, মিমি, মায়া, দিয়া, আখি, শিল্পী, পপি, পুতুল, ডলি, বেবী, ডায়না, প্রিয়াঙ্কা, বন্যা, বাসন্তী ইত্যাদি।
৭৩. কদমবুসী করা : অর্থাৎ সালাম দেয়ার সময় ভক্তি-শ্রদ্ধার নিদর্শনস্বরূপ পা স্পর্শ করে সালাম করা তা মা-বাপ, উস্তাদ, কিংবা শ্বশুর-শাশুড়ি যে কেউ হোক না কেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদআত থেকে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। এরপরও বিদআত থেকে বেঁচে থাকাটা খুবই জরুরি। নিম্নে বিদআত থেকে বেঁচে থাকার কতিপয় উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ أَطِيْعُوا اللّٰهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের এবং তাদের- যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী (তথা আমীর ও ওলামা); কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা- ৫৯)
আবার হাদীসেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ مَالِكٍ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি সংবাদ পৌঁছিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি হলো- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত। [মুয়াত্তায়ে মালেক ১৫৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৮৬।]
অতএব যে ব্যক্তি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে যত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার পক্ষে বিদআতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা তত কম থাকবে।
২. সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বিরত থাকা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষ ইসলামের সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই বিভ্রান্তিতে পতিত হয়।
﴿وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا﴾
আর এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; সত্যের মোকাবিলায় অনুমানের কোন মূল্য নেই। (সূরা নাজম-২৮)
৩. সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা :
বিদআতীদের কর্মসমূহের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে, বিভিন্ন প্রকার বিদআত সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের ওপর তোমার কোনো দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।
(সূরা আন‘আম- ১৫৯)
সুতরাং বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই মুসলিম উম্মাহর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। যার ভিত্তি হবে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ।
৪. বিদআতীদের সাথে চলাফেরা না করা :
বিদআতীদের সাথে চলাফেরা করাটা একজন মুমিনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। কেননা বিদআতীরা মাঝে মধ্যে এমন কথা বা কাজ করে ফেলতে পারে, যা তার ঈমান ও আমলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্যই কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْۗ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا﴾
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে মর্মস্পর্শী কথা বলো। (সূরা নিসা- ৬৩)
﴿وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِيْنَ يَخُوْضُوْنَ فِيْۤ اٰيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِه وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ﴾
তুমি যখন দেখবে যে, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে নিরর্থক আলোচনায় মগ্ন, তখন তুমি দূরে সরে পড়বে যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পরে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আনআম- ৬৮)
৫. মানুষকে সহীহ সুন্নার প্রতি দাওয়াত দেয়া :
বিদআত থেকে শুধু নিজে নয়, বরং সমাজের সকলকে বাঁচানোর চেষ্টা করাও মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং সমাজ থেকে বিদআতকে দূরীভূত করার জন্য অবশ্যই বেশি বেশি করে সহীহ সুন্নার প্রতি দাওয়াত দিতে হবে। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ﴾
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎ কর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কর্মে বাধা দান করবে। আর এরাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
৬. বিদআতী কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা :
বিদআত নিঃসন্দেহে একটি ঘৃণিত কাজ। আর যে কোনো প্রকার ঘৃণিত ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করা একজন মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অসৎ কাজ দেখলে তা স্বহস্ত দ্বারা অপসারিত করবে, যদি সক্ষম না হয় তবে মুখ দ্বারা, তাতেও যদি সক্ষম না হয়, তবে তার অন্তর দ্বারা এবং এটা সবচেয়ে দুর্বলতম ঈমান (এর পরিচায়ক)। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬।]
অতএব বিদআতকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে উচ্ছেদ করতে হলে বিদআতী কর্ম দেখা মাত্রই যথাসম্ভব প্রতিবাদ করতে হবে।
৭. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি :
যেহেতু বিদআতী কর্ম সামাজিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, সেহেতু বিদআতের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। অপরদিকে সমাজের অধিকাংশ মানুষ বিদআত সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও উদাসীন থাকে। তাদের অজ্ঞতার কারণেই সমাজে এসব বিদআত জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু খুতবা, সেমিনার অথবা সমালোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাজের মানুষকে সচেতন করে তোলা অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিদআতী আমল করে থাকে, তার সমালোচনা করাতেও দোষের কিছু নেই। আর বৃহত্তম কল্যাণের স্বার্থে ফাসেক ব্যক্তির গীবত করাও বৈধ।
৮. দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা যে কোনো সমাজে দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবেই বিদআতের প্রচলন ঘটে থাকে। কিন্তু যে সমাজে লোকেরা দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে, সেখানে যে কোনো প্রকার বিদআতী কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটা সম্ভব নয়।
৯. আল্লাহভীতি অর্জন করা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই আল্লাহভীতি অর্জন করতে হবে। কেননা একমাত্র আল্লাহভীতি অর্জনকারী লোকেরাই বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য আগ্রহী থাকে। তাছাড়া আল্লাহভীতি হচ্ছে মানুষের জন্য এমন একটি গুণ, যা মানুষকে সকল প্রকার বিভ্রান্তি থেকে সুরক্ষা করে এবং তাদেরকে সর্বদা সত্যের উপর অটল রাখে।
১০. মূর্খদের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস না করা :
মূর্খদের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করাটা হচ্ছে আরেক ধরনের মূর্খতা। কেননা কোনো মূর্খ ব্যক্তির কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে, সে তো উক্ত বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবেই না, বরং উল্টো তাকে আরো বিভ্রান্ত করবে। এক সময় সেটিই সমাজে বিদআতী আমল হিসেবে চালু হয়ে যাবে। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই মূর্খ ব্যক্তিদের কাছ থেকে ফতোয়া নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং ফতোয়া গ্রহণ করতে হবে কেবলমাত্র সেসব আলেমের কাছ থেকে, যারা প্রকৃতপক্ষেই আলেম এবং মুত্তাকী।
১১. কারো অন্ধ অনুসরণ না করা :
কারো অন্ধ অনুসরণ করা বিদআত সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যে কোনো প্রকার লোকের অন্ধ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যদি কারো কোনো কথা বা নির্দেশনা গ্রহণ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে যাচাই করতে হবে যে, সেটির পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোনো দলীল আছে কি না। যদি থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে গ্রহণ করতে হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় তা বর্জন করতে হবে।
১২. জাল হাদীসের উপর আমল না করা :
বিদআতী আমলসমূহের মূল উৎস হচ্ছে জাল হাদীসসমূহ। অনেক মানুষ সহীহ হাদীসের কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে নির্দ্বিধায় এসব হাদীসের উপর আমল করে যাচ্ছে। আর এরূপ হাদীসের উপর আমল করাটাও হচ্ছে বিদআতের একটি অন্যতম অংশ। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে জাল হাদীসের উপর আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৩. অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুসরণ না করা :
অনেক বিদআত অমুসলিম সংস্কৃতি থেকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে থাকে। আর মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইসলামের শত্রুরা অনেক সময় এ পথকেই বেছে নেয়। এ জন্যই কুরআন-হাদীসে তাদের অনুসরণের ব্যাপারে বার বার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৪. বেশি বেশি দু‘আ করা :
সর্বোপরি বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে। কেননা বিদআত সমাজ জীবনে এতটাই কঠিন বিষয় যে, আল্লাহর সাহায্য না থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকা যে কোনো বান্দার জন্য অত্যন্ত কঠিন বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ঈমান ও আমলকে হেফাযত করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
১. কুরআন ও হাদীসকে আঁকড়ে ধরা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে সর্বপ্রথম করণীয় হচ্ছে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿يَاۤ أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْاۤ أَطِيْعُوا اللّٰهَ وَأَطِيْعُوا الرَّسُوْلَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِيْ شَيْءٍ فَرُدُّوْهُ إِلَى اللّٰهِ وَالرَّسُوْلِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللّٰهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ ذٰلِكَ خَيْرٌ وَّأَحْسَنُ تَأْوِيْلًا﴾
হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসূলের এবং তাদের- যারা তোমাদের মধ্যে ক্ষমতার অধিকারী (তথা আমীর ও ওলামা); কোনো বিষয়ে তোমাদের মধ্যে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। এটাই উত্তম এবং পরিণামে উৎকৃষ্টতর। (সূরা নিসা- ৫৯)
আবার হাদীসেও অনুরূপ নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। যেমন-
عَنْ مَالِكٍ اَنَّهٗ بَلَغَهٗ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ : تَرَكْتُ فِيْكُمْ أَمْرَيْنِ لَنْ تَضِلُّوْا مَا تَمَسَّكْتُمْ بِهِمَا كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ نَبِيِّهٖ
মালেক (রহ.) থেকে বর্ণিত। তিনি সংবাদ পৌঁছিয়েছেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আমি তোমাদের মাঝে দুটি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা সে দুটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সে দুটি হলো- আল্লাহর কিতাব ও তাঁর নবীর সুন্নাত। [মুয়াত্তায়ে মালেক ১৫৯৪; মিশকাতুল মাসাবীহ ১৮৬।]
অতএব যে ব্যক্তি কুরআন ও সহীহ সুন্নাহকে যত শক্তভাবে আঁকড়ে ধরবে, তার পক্ষে বিদআতে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা তত কম থাকবে।
২. সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বিরত থাকা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ হতে বিরত থাকতে হবে। কেননা অধিকাংশ মানুষ ইসলামের সন্দেহযুক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার কারণেই বিভ্রান্তিতে পতিত হয়।
﴿وَمَا لَهُمْ بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا﴾
আর এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে; সত্যের মোকাবিলায় অনুমানের কোন মূল্য নেই। (সূরা নাজম-২৮)
৩. সর্বদা কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ থাকা :
বিদআতীদের কর্মসমূহের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে, বিভিন্ন প্রকার বিদআত সৃষ্টির মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের মধ্যে ফাটল ধরানো। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿اِنَّ الَّذِيْنَ فَرَّقُوْا دِيْنَهُمْ وَكَانُوْا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِيْ شَيْءٍؕ اِنَّمَاۤ اَمْرُهُمْ اِلَى اللهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوْا يَفْعَلُوْنَ﴾
নিশ্চয় যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের ওপর তোমার কোনো দায়িত্ব নেই; তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছাধীন। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।
(সূরা আন‘আম- ১৫৯)
সুতরাং বিদআত থেকে বেঁচে থাকতে হলে অবশ্যই মুসলিম উম্মাহর সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে হবে। যার ভিত্তি হবে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ।
৪. বিদআতীদের সাথে চলাফেরা না করা :
বিদআতীদের সাথে চলাফেরা করাটা একজন মুমিনের জন্য খুবই বিপজ্জনক। কেননা বিদআতীরা মাঝে মধ্যে এমন কথা বা কাজ করে ফেলতে পারে, যা তার ঈমান ও আমলের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এজন্যই কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ يَعْلَمُ اللهُ مَا فِيْ قُلُوْبِهِمْۗ فَاَعْرِضْ عَنْهُمْ وَعِظْهُمْ وَقُلْ لَّهُمْ فِۤيْ اَنْفُسِهِمْ قَوْلًا ۢبَلِيْغًا﴾
এরাই তারা, যাদের অন্তরে কী আছে আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তুমি তাদেরকে উপেক্ষা করো, তাদেরকে উপদেশ দাও এবং তাদেরকে মর্মস্পর্শী কথা বলো। (সূরা নিসা- ৬৩)
﴿وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِيْنَ يَخُوْضُوْنَ فِيْۤ اٰيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتّٰى يَخُوْضُوْا فِيْ حَدِيْثٍ غَيْرِه وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِيْنَ﴾
তুমি যখন দেখবে যে, তারা আমার নিদর্শন সম্বন্ধে নিরর্থক আলোচনায় মগ্ন, তখন তুমি দূরে সরে পড়বে যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে চলে যায় এবং শয়তান যদি তোমাকে ভ্রমে ফেলে দেয়, তবে স্মরণ হওয়ার পরে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না। (সূরা আনআম- ৬৮)
৫. মানুষকে সহীহ সুন্নার প্রতি দাওয়াত দেয়া :
বিদআত থেকে শুধু নিজে নয়, বরং সমাজের সকলকে বাঁচানোর চেষ্টা করাও মুমিনের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সুতরাং সমাজ থেকে বিদআতকে দূরীভূত করার জন্য অবশ্যই বেশি বেশি করে সহীহ সুন্নার প্রতি দাওয়াত দিতে হবে। কুরআন মাজীদে এসেছে,
﴿وَلْتَكُنْ مِّنْكُمْ أُمَّةٌ يَّدْعُوْنَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ﴾
তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং সৎ কর্মের নির্দেশ দিবে ও অসৎ কর্মে বাধা দান করবে। আর এরাই হবে সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান- ১০৪)
৬. বিদআতী কর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা :
বিদআত নিঃসন্দেহে একটি ঘৃণিত কাজ। আর যে কোনো প্রকার ঘৃণিত ও অবৈধ কাজের প্রতিবাদ করা একজন মুমিনের ঈমানী দায়িত্ব। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কোনো অসৎ কাজ দেখলে তা স্বহস্ত দ্বারা অপসারিত করবে, যদি সক্ষম না হয় তবে মুখ দ্বারা, তাতেও যদি সক্ষম না হয়, তবে তার অন্তর দ্বারা এবং এটা সবচেয়ে দুর্বলতম ঈমান (এর পরিচায়ক)। [সহীহ মুসলিম, হা/১৮৬।]
অতএব বিদআতকে সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে উচ্ছেদ করতে হলে বিদআতী কর্ম দেখা মাত্রই যথাসম্ভব প্রতিবাদ করতে হবে।
৭. সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি :
যেহেতু বিদআতী কর্ম সামাজিকভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে, সেহেতু বিদআতের ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি। অপরদিকে সমাজের অধিকাংশ মানুষ বিদআত সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও উদাসীন থাকে। তাদের অজ্ঞতার কারণেই সমাজে এসব বিদআত জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়। কিন্তু খুতবা, সেমিনার অথবা সমালোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সমাজের মানুষকে সচেতন করে তোলা অত্যাবশ্যক। এ ক্ষেত্রে যে ব্যক্তি বিদআতী আমল করে থাকে, তার সমালোচনা করাতেও দোষের কিছু নেই। আর বৃহত্তম কল্যাণের স্বার্থে ফাসেক ব্যক্তির গীবত করাও বৈধ।
৮. দ্বীন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান অর্জন করা অত্যন্ত জরুরি। কেননা যে কোনো সমাজে দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাবেই বিদআতের প্রচলন ঘটে থাকে। কিন্তু যে সমাজে লোকেরা দ্বীন সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখে, সেখানে যে কোনো প্রকার বিদআতী কর্মের অনুপ্রবেশ ঘটা সম্ভব নয়।
৯. আল্লাহভীতি অর্জন করা :
বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য অবশ্যই আল্লাহভীতি অর্জন করতে হবে। কেননা একমাত্র আল্লাহভীতি অর্জনকারী লোকেরাই বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য আগ্রহী থাকে। তাছাড়া আল্লাহভীতি হচ্ছে মানুষের জন্য এমন একটি গুণ, যা মানুষকে সকল প্রকার বিভ্রান্তি থেকে সুরক্ষা করে এবং তাদেরকে সর্বদা সত্যের উপর অটল রাখে।
১০. মূর্খদের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস না করা :
মূর্খদের কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করাটা হচ্ছে আরেক ধরনের মূর্খতা। কেননা কোনো মূর্খ ব্যক্তির কাছে ফতোয়া জিজ্ঞেস করলে, সে তো উক্ত বিষয়ে সঠিক উত্তর দিতে পারবেই না, বরং উল্টো তাকে আরো বিভ্রান্ত করবে। এক সময় সেটিই সমাজে বিদআতী আমল হিসেবে চালু হয়ে যাবে। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই মূর্খ ব্যক্তিদের কাছ থেকে ফতোয়া নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। বরং ফতোয়া গ্রহণ করতে হবে কেবলমাত্র সেসব আলেমের কাছ থেকে, যারা প্রকৃতপক্ষেই আলেম এবং মুত্তাকী।
১১. কারো অন্ধ অনুসরণ না করা :
কারো অন্ধ অনুসরণ করা বিদআত সৃষ্টির অন্যতম কারণ। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই যে কোনো প্রকার লোকের অন্ধ অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। আর যদি কারো কোনো কথা বা নির্দেশনা গ্রহণ করতেই হয়, তাহলে প্রথমে যাচাই করতে হবে যে, সেটির পক্ষে কুরআন ও সহীহ হাদীসের কোনো দলীল আছে কি না। যদি থাকে তাহলে নিঃসন্দেহে গ্রহণ করতে হবে। আর যদি না থাকে, তাহলে নির্দ্বিধায় তা বর্জন করতে হবে।
১২. জাল হাদীসের উপর আমল না করা :
বিদআতী আমলসমূহের মূল উৎস হচ্ছে জাল হাদীসসমূহ। অনেক মানুষ সহীহ হাদীসের কোনোরূপ তোয়াক্কা না করে নির্দ্বিধায় এসব হাদীসের উপর আমল করে যাচ্ছে। আর এরূপ হাদীসের উপর আমল করাটাও হচ্ছে বিদআতের একটি অন্যতম অংশ। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে জাল হাদীসের উপর আমল করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৩. অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুসরণ না করা :
অনেক বিদআত অমুসলিম সংস্কৃতি থেকে মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে থাকে। আর মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য ইসলামের শত্রুরা অনেক সময় এ পথকেই বেছে নেয়। এ জন্যই কুরআন-হাদীসে তাদের অনুসরণের ব্যাপারে বার বার সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং বিদআত থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুসরণ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
১৪. বেশি বেশি দু‘আ করা :
সর্বোপরি বিদআত থেকে বেঁচে থাকার জন্য মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে। কেননা বিদআত সমাজ জীবনে এতটাই কঠিন বিষয় যে, আল্লাহর সাহায্য না থাকলে তা থেকে বেঁচে থাকা যে কোনো বান্দার জন্য অত্যন্ত কঠিন বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের ঈমান ও আমলকে হেফাযত করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
রিডিং সেটিংস
Bangla
System
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
সাপোর্ট করুন