hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আল আকসা মসজিদের ইতিকথা

লেখকঃ এ. এন. এম. সিরাজুল ইসলাম

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মে’রাজ
মে’রাজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জীবনের সবচাইতে বড় ঘটনা। মে’রাজ তার মক্কী জীবনে সংঘটিত হয়। এখন আমরা এ সম্পর্কে ‘The Prophet’s Meraj : Travel Notes’ এর সাহায্যে বিস্তারিত আলোচনা করবো। [By Sayyid Abul A’la Maudoodi, Radio Speeches, Islamic Publication, Lahore, p.62-71.]

রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মদীনায় হিজরাতের ১ বছর আগে মে’রাজ সংঘটিত হয়েছে। তবে তা ২৭শে রজব রাত্রে অনুষ্ঠিত হয়। (যদিও তারিখের ব্যাপারে বিভিন্ন রকম মতপার্থক্য আছে।) কুরআন এবং হাদীসে এই মে’রাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। কুরআন আমাদেরকে বলে, কেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বেহেশত-দোজখ দেখানো হয়েছে এবং তিনি আল্লাহর কাছ থেকে কি আদেশ-নিষেধ লাভ করেছেন। হাদীস পাঠে জানা যায় কিভাবে উক্ত সফর করানো হয়েছে।

মোট ২৮ জন সাহাবায়ে কেরাম মে’রাজ সম্পর্কিত হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাদের মধ্যে তখন মক্কায় ছিলেন ৭ জন সাহাবী এবং অবশিষ্টরা পরে রাসূলুল্লাহর কাছ থেকে তা শুনেছেন। বিভিন্ন বর্ণনায় সফরের বিভিন্ন দিক ফুটে উঠেছে। সবগুলো বর্ণনাকে একসাথে করলে আমরা মে’রাজের বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারি।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দীর্ঘ ১২ বছর পর্যন্ত মক্কায় আল্লাহর ওহী লাভ করছিলেন। তখন তার বয়স ৫২ বছর। তিনি কাবা শরীফের পাশে ঘুমিয়েছিলেন। জিবরীল (আঃ) হঠাৎ তাঁকে জাগান। আধাজাগ্রত অবস্থায় তাঁকে যমযম কূপের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। জিবরীল তার বুক চিরে ভেতরের অংশ যমযমের পানি দিয়ে ধুয়ে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, বিশ্বাস ও দূরদর্শিতা দিয়ে তা পুনরায় বুকের ভেতর স্থাপন করেন। তারপর তার কাছে একটি পশু আনা হয় যার রং সাদা এবং উচ্চতা খচ্চরের চাইতে একটু ছোট। এটি আলোর গতিসম্পন্ন ছিল বলে এর ‘বোরাক’ নামকরণ করা হয়। বোরাক শব্দের অর্থ ‘আলোর গতিসম্পন্ন’। নবী যখন বোরাকের উপর আরোহণ করতে গেলেন, তখন তা নিজেকে সংকুচিত করার চেষ্টা করে তাকে সওয়ার হতে বাধা দেয়। কিন্তু পরে জিবরীল (আঃ) বোরাককে কষে ধরে বলেন, সাবধান! ইতিপূর্বে মুহাম্মাদের চাইতে কোন শ্রেষ্ঠ মানুষ তোমার উপর আরোহণ করেনি। নবী (সাঃ) তাতে আরোহণ করেন এবং জিবরীলের সাথে একসঙ্গে সফর শুরু করেন।

মদীনায় তারা প্রথম যাত্রাবিরতি করেন এবং নামায পড়েন। জিবরীল বলেন, এটা তাঁর হিজরাতের স্থান। মক্কা ত্যাগ করে পরে তাকে মদীনায় আসতে হবে। ২য় বার যাত্রাবিরতি করেন সিনাই পাহাড়ে। মূসা (আঃ) আল্লাহর সাথে এই পাহাড়ে কথা বলেছেন। ৩য় বার যাত্রাবিরতি করেন হযরত ঈসার জন্মস্থান বেথেলহেমে। এটি পশ্চিম জেরুসালেমে অবস্থিত। ৪র্থ বার যাত্রাবিরতি করেন বাইতুল মাকদিস বা পূর্ব জেরুসালেমে। এখানেই বোরাকের সফরের ইতি হয়।

সফরকালে একজন তাকে ডেকে বলল, ‘এখানে আস’। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেদিকে নজর দিলেন না। জিবরীল বলেন, ঐ ব্যক্তি আপনাকে ইহুদীবাদের দিকে ডাকছে। অন্য দিক থেকে আরেকজন ডাকছে, এদিকে আস।’ কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এবারও সেই আওয়াজের দিকে দৃষ্টি দিলেন না। জিবরীল বলেন, ঐ ব্যক্তি আপনাকে খৃস্টবাদের দিকে ডাকছে। তারপর আকর্ষণীয় পোষাকে সুসজ্জিত একজন মহিলা তাঁকে নিজের দিকে ডাকে। নবী (সাঃ) সেই দিক থেকে নিজ চোখ ফিরিয়ে নিলেন। জিবরীল তা দেখে বলেন, এই স্ত্রীলোকটি হচ্ছে দুনিয়া, তারপর একজন বৃদ্ধা মহিলা তার সামনে উপস্থিত হয়। জিবরীল বলেন, এই বৃদ্ধার অবশিষ্ট বয়স থেকে আপনি এই দুনিয়ার বয়স আন্দাজ করতে পারেন। তারপর তারা আরেক ব্যক্তিকে দেখলেন যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেদিকে লক্ষ্য করলেন না। জিবরীল বলেন, এটি হচ্ছে শয়তান যে আপনাকে আপনার পথ থেকে বিচ্যুত করার চেষ্টা করছে।

বাইতুল মাকদিস পৌঁছার পর তিনি বোরাককে মসজিদে আকসার পশ্চিম দেয়ালের সাথে বাঁধেন। সেই দেয়ালের নাম হচ্ছে হায়েত আল-বোরাক বা বোরাক দেয়াল। তার আগের নবীরাও এই একই দেয়ালে সওয়ারী বাঁধেন। যখন তিনি হযরত সুলাইমান (আঃ)-এর তৈরী মসজিদে (আকসায়) প্রবেশ করেন তখন পৃথিবীর শুরু থেকে ঐ পর্যন্ত প্রেরিত সকল নবীকে উপস্থিত দেখতে পান। তার উপস্থিতি উপলক্ষে সবাই জামাতে নামায আদায় করেন। কে ইমামতি করবেন তা দেখার জন্য সবাই অপেক্ষা করছিলেন। জিবরীল (আঃ) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হাতে ধরে সামনে ইমামতির জন্য এগিয়ে দেন। তিনি সবাইকে নিয়ে নামায পড়েন।

নামায শেষে তাঁর কাছে তিনটি পান পাত্র হাজির করা হয়। একটাতে পানি, একটাতে দুধ এবং অন্যটিতে মদ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দুধ পাত্র নির্বাচন করায় জিবরীল তাঁকে স্বভাবজাত জিনিস পছন্দ করার জন্য অভিনন্দন জানান। তারপর একটি মই আনা হয়। জিবরীল (আঃ) তাকে উর্ধাকাশে নিয়ে যান। আরবীতে ‘মই’ কে মে’রাজ বলা হয়। তাই গোটা সফরের নামকরণ করা হয় মে’রাজ।

প্রথম আসমানে পৌঁছার পর তারা গেট বন্ধ দেখতে পেলেন। পাহারাদার ফেরেশতা জিজ্ঞেস করেন, কে? জিবরীল নিজের নাম বলেন। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হয়, সাথে কে? জিবরীল বলেন, ‘মুহাম্মাদ’। পুনরায় প্রশ্ন, ‘তিনি কি আমন্ত্রিত?’ জিবরীল বলেন ‘হাঁ’। তারপর গেট খুলে দেয়া হল এবং রাসূলুল্লাহকে স্বাগত জানানো হল। তাকে সেখানে উপস্থিত অন্যান্য ফেরেশতা এবং গুরুত্বপূর্ণ নেককার ব্যক্তিদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া হল। সেখানে উপস্থিত এমন এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছিলেন যার বাহ্যিক চেহারা ছিল পরিপক্ক। তার শরীর ও চেহারায় কোন ত্রুটি ছিল না। জিবরীল বলেন, তিনি হচ্ছেন আপনার পূর্বপুরুষ আদম (আঃ)। তাঁর ডানে-বামে বহু লোক উপস্থিত ছিল। তিনি ডানদিকে লক্ষ্য করে হাসেন এবং বামদিকে লক্ষ্য করে কাঁদেন। হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। উত্তরে বলা হল, তারা আদম সন্তান। ডানের নেক লোকদের দিকে তাকিয়ে আদম (আঃ) খুশী হন এবং বামের পাপী লোকদের দিকে তাকিয়ে দুঃখিত হন।

তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে চারদিকে ঘুরে-ফিরে বিস্তারিত দেখার সুযোগ দেয়া হয়। তিনি এক ময়দানে দেখতে পান, কিছু লোক ফসল কাটছে। যতই কাটছে, ততই ফসল জন্মাচ্ছে। তিনি জিজ্ঞেস করেন, তারা কারা? উত্তর দেয়া হল, তারা হচ্ছে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদকারী (মুজাহিদ) লোক’।

তিনি দেখলেন, কিছু লোক নিজেদের মাথায় পাথর দিয়ে অব্যাহতভাবে আঘাত করছে। তিনি তাদের বিষয়ে জানতে চাইলেন। তাকে বলা হল, তারা হচ্ছে ঐ সকল গোঁড়া লোক যারা নামাযের জন্য ঘুম থেকে উঠত না।

তিনি আরেক দল লোক দেখেন, যারা জামার সামনে ও পিছনে তালি লাগিয়েছে। তারা পশুর মত মাঠে চরে ঘাস খাচ্ছে। তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এরা কারা? তাঁকে জানানো হল, এরা নিজেদের সম্পদ থেকে যাকাত কিংবা ভিক্ষা দিত না’।

তিনি একজন লোককে দেখলেন, সে কাঠ যোগাড় করে বোঝা বাঁধছে। যখন তা ওজনে ভারী হয় সে তাতে আরো কাঠ যোগ করে বহন করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এ বোকা লোকটিকে তা জিজ্ঞেস করেন। তাকে বলা হল, সে হচ্ছে এমন ব্যক্তি যে নিজের শক্তি সামর্থ্যের বাইরে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিল এবং দায়িত্ব কমানোর পরিবর্তে তা আরো বাড়িয়ে নিয়েছিল। (ফলে সে দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করতে পারেনি।)

তিনি কিছু লোককে দেখলেন, তাদের ঠোঁট ও জিহ্বা কাঁচি দিয়ে কাটা হচ্ছে। তিনি তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তাকে জানানো হয় যে, এ সকল লোক দায়িত্বহীন কথা বলে লোকদের দুঃখ কষ্ট বাড়িয়েছিল।

তিনি এক জায়গায় দেখলেন, পাথরের ভেতর থেকে একটি ষাঁড় বেরিয়ে আসছে। তারপর ষাঁড়টি পুনরায় পাথরের ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর তাৎপর্য জিজ্ঞেস করায় জিবরীল (আঃ) ব্যাখ্যা করে বলেন, এটা হচ্ছে সেই ব্যক্তির উদাহরণ, যে ভেবে-চিন্তে কথা না বলে পরে ক্ষতি উপলব্ধি করে তা প্রত্যাহার করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালায়।

তিনি অন্য এক জায়গায় দেখেন, কিছু লোক নিজের শরীরের গোশত কেটে নিজে তা খাচ্ছে। তিনি তাদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারেন যে, তারা অন্যদের ব্যাপারে অপমানজনক মন্তব্য করত।

তিনি তাদের কাছে কিছু লোককে আঙ্গুলে তামার নখ পরে নিজেদের শরীরে অব্যাহত আঘাত করতে দেখে এর কারণ জিজ্ঞেস করেন। তাকে বলা হল, এরা হচ্ছে নিন্দুক। যারা মানুষের নিন্দা ও গীবত করে বেড়াত।

তিনি আরো দেখেন, কিছু লোকের ঠোঁট উটের মত বড়। তারা আগুন খাচ্ছে। তাকে বলা হল, এরা হচ্ছে ইয়াতীমের মাল ভোগকারী।

তিনি কিছুসংখ্যক লোক দেখলেন, যাদের সাপভর্তি বড় বড় পেট। তাদের পাশ দিয়ে অতিক্রমকারীরা তাদেরকে পদদলিত করে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের নড়াচড়া করার কোন শক্তি নেই। তাদের সম্পর্কে তাঁকে বলা হল যে, তারা হচ্ছে, সুদখোর।

তিনি আরো কিছু লোক দেখেন, যাদের একপাশে পরিষ্কার গোশত এবং অন্য পাশে পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত গোশত রয়েছে। তারা ভাল গোশতের দিকে কোন নজরই দিচ্ছে না, বরং পচা গোশতগুলো খাচ্ছে। তাদের সম্পর্কে জিবরীল বলেন, তারা হচ্ছে বিবাহিত যেনাকারী নারী ও পুরুষ।

তিনি কিছু মহিলাকে দেখলেন তাদেরকে তাদের স্তনের সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞেস করায় তাকে জানানো হল, তারা হচ্ছে সেই সব মহিলা যারা সন্তানকে তার আসল জন্মদাতা পিতার পরিবর্তে অন্য বাপের সন্তান বলে চালিয়ে দেয়।

ভ্রমণের এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একজন ফেরেশতাকে শান্তভাবে তাঁকে স্বাগত জানাতে দেখেন। পক্ষান্তরে অন্যান্য সকল ফেরেশতা তাঁকে অত্যন্ত আনন্দ ও খুশী সহকারে স্বাগত জানান। তিনি ঐ ফেরেশতার এ ধরনের ঠাণ্ডা আচরণের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। জিবরীল বলেন, সে হচ্ছে দোজখের রক্ষক ফেরেশতা।

দোজখের কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। জিবরীল রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর চোখের পর্দা তুলে দেন। ফলে, তিনি দোজখের ভয়াবহ বিশাল অবস্থা দেখেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যা যা দেখার তা দেখার পর দ্বিতীয় আসমানে ওঠেন। সেখানে তিনি যে সকল উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বকে দেখেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দুইজন যুবক। একজন হচ্ছেন হযরত ইয়াহইয়া (আঃ) এবং অন্যজন হচ্ছেন হযরত ঈসা (আঃ)।

তৃতীয় আসমানে যাওয়ার পর তিনি সেখানে সর্বাধিক সুন্দর একজন লোক দেখতে পান। জিজ্ঞেস করায় জানতে পারেন যে, তিনি হচ্ছে, হযরত ইউসূফ (আঃ)।

৪র্থ আসমানে তিনি হযরত ইদ্রিস (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ করেন। পঞ্চম আসমানে হযরত হারুন এবং ৬ষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা (আঃ)-এর সাক্ষাত পান।

৭ম আসমানে তিনি বিরাট এক প্রাসাদ এবং বাইতুল মামুর দেখতে পান। বাইতুল মামুরের চারদিকে অসংখ্য ফেরেশতা তাওয়াফ করছে। বিরাট প্রাসাদের কাছে তিনি নিজের মত এক ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি হচ্ছেন হযরত ইবরাহীম (আঃ)।

তারপর তাকে আরো উপরে নেয়া হয়। তিনি ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামক স্থানে পৌঁছেন। এই স্থানটিকে আল্লাহর আরশ ও তাঁর সৃষ্টিজগতের মধ্যে একটি শূন্য এলাকা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) লক্ষ্য করলেন, তাঁর সাথে আগত ফেরেশতারা এই পর্যন্ত পৌঁছে প্রয়োজনীয় বার্তা নিয়ে ফিরে আসেন। এর উপরে যাওয়ার অনুমতি নেই।

এই স্থানেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে নেক লোকদের উদ্দেশ্যে তৈরি বেহেশত ও প্রতিশ্রুত পুরস্কার দেখানো হয়। ঐ বেহেশতী নিয়ামাত সম্পর্কে ইতিপূর্বে কেউ কানে শুনেনি এবং চোখেও দেখেনি।

এই স্থানেই জিবরীল (আঃ) থেমে গেলেন। এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর একাকীই সামনে অগ্রসর হওয়ার পালা। যখন তিনি একটি উঁচু সমতল স্থানে পৌঁছেন, তখন তিনি নিজেকে মহান আল্লাহ রাব্বল আলামীনের দরবারে উপস্থিত দেখতে পান। তাকে আল্লাহর সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। আল্লাহর সাথে তার আলোচনার কয়েকটি বিষয় হল নিম্নরূপ :

১. দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামায বাধ্যতামূলক করা হয়।

২. কুরআনের সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত নাযিল হয়।

৩. শিরক্ গুনাহ ব্যতীত অন্যান্য সকল গুনাহ মাফের সম্ভাবনা ঘোষণা করা হয়।

৪. কোন ব্যক্তি নেক কাজের নিয়ত করা মাত্রই তার আমলনামায় ১ নেকি এবং কাজটি করার পর ১০ নেকি লেখা হবে। পক্ষান্তরে, কোন ব্যক্তি পাপ কাজ করার নিয়ত করা মাত্র তার আমলনামায় গোনাহ লেখা হবে না এবং গুনাহর কাজটি করার পর মাত্র ১টি গুনাহ লেখা হবে।

উপরোক্ত শিক্ষা ও বাণী লাভ করার পর তিনি মহান আল্লাহর দরবার থেকে বিদায় নিয়ে নিচে নেমে আসেন। পথে মূসা (আঃ)-এর সাক্ষাত ঘটে এবং তার কাছে তিনি আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষার বর্ণনা দেন। মূসা (আঃ) তাকে বলেন, বনি ইসরাইলের সাথে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে আমার পরামর্শ হল, আপনার উম্মাহ দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত নামাযের বোঝা বহন করতে পারবে না। তার পরামর্শ অনুযায়ী তিনি পুনরায় আল্লাহর কাছে ফিরে যান এবং নামাযের ওয়াক্তের সংখ্যা কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ করেন। আল্লাহ ১০ ওয়াক্ত নামায হ্রাস করেন। তিনি আবার ফিরে আসার পর হযরত মূসা (আঃ)-এর সাথে সাক্ষাত হয়। মূসা (আঃ) এবারও পরামর্শ দিলেন যে, এই সংখ্যাও অত্যধিক। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পুনরায় আল্লাহর দরবারে ফিরে যান এবং এভাবে বেশ কয়েক দফা উক্ত ঘটনা সংঘটিত হয় এবং প্রত্যেকবারই নামাযের সংখ্যা কিছু কমানো হয়। সর্বশেষে ৫ ওয়াক্ত নামায বাধ্যতামূলক করা হয় এবং ৫০ ওয়াক্ত নামাযের সাওয়াব দানের ওয়াদা দেয়া হবে।

ঊর্ধ্বাকাশ সফর শেষে নবী (সাঃ) একই মই দ্বারা মসজিদে আকসার আঙিনায় অবতরণ করেন। সকল আম্বিয়ায়ে কিরাম পুনরায় সেখানে সমবেত হন। তিনি সবাইকে নিয়ে নামায পড়েন এবং ইমামতি করেন। সম্ভবতঃ সেটি ছিল ফযরের নামায। তারপর তিনি একই বোরাকে চড়ে পুনরায় মক্কা ফিরে আসেন।

সকালবেলা তিনি সর্বপ্রথম নিজ চাচাতো বোন উম্মে হানির কাছে মে’রাজের ঘটনা বর্ণনা করেন এবং তা অন্যদের কাছে প্রকাশ করারও দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। কিন্তু উম্মে হানি তার জামার নিচের অংশ টেনে ধরেন এবং ঘটনাটি নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার অনুরোধ জানান। উম্মে হানি পরিষ্কার বুঝতে পারছিলেন, অন্যরা এই ঘটনা শুনে কৌতুক করবে। কিন্তু নবী (সাঃ) বললেন, আমি অবশ্যই তাদের কাছে এই ঘটনা বর্ণনা করবো। এই বলে তিনি রওনা করলেন।

হারাম শরীফে সর্বপ্রথম তার সাথে আবু জাহলের সাক্ষাত ঘটে। সে কৌতুক করে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে, নতুন কোন খবর আছে কি? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আগ্রহ-উদ্দীপনা নিয়ে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দেন এবং বলেন, গতরাত আমি জেরুসালেমে ছিলাম। আবু জাহল তা শুনে উত্তেজিত হয়ে বলল, আমি লোকদেরকে এখানে জড় করলে তুমি কি তাদের সামনে ঘটনাটি পুনরায় প্রকাশ করবে? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শান্তভাবে দৃঢ়চিত্তে জবাব দিলেন, ‘অবশ্যই’। আবু জাহল চিৎকার দিয়ে যাদেরকে সামনে পায়, তাদেরকেই হারাম শরীফে জড় হওয়ার আহ্বান জানায়।

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লোক উপস্থিত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের সামনে পুরা সফর কাহিনী বর্ণনা করেন। তারা সবাই কৌতুক করতে থাকে এবং বলে, দুই মাসের সফর মাত্র ১ রাত্রিতে? এটা অবিশ্বাস্য ঘটনা। আমরা আগে সন্দেহে ছিলাম যে, আপনি পাগল, কিন্তু এখন তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়ে গেল। বনে আগুন ধরার মত তার মে’রাজের ঘটনা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কিছুলোক হযরত আবু বাকর সিদ্দিকের কাছে গিয়ে বিষয়টির সত্যতা জানতে চায়। তাদের আশা ছিল, আবু বাকর (রাঃ) যদি তা প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে ইসলামী আন্দোলন মক্কা থেকে সমূলে উৎপাটিত হয়ে যাবে। হযরত আবু বাকর (রাঃ) পুরো ঘটনা শুনার পর মন্তব্য করেন, যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা বলে থাকেন, তাহলে তা অবশ্যই সত্য হবে। এতে আশ্চর্য হওয়ার নতুন কিছু নেই। আমি প্রতিদিনই তার কাছে ফেরেশতার আগমন ও আল্লাহর বার্তা নাযিলের খবর শুনি এবং তা বিশ্বাস করি।

আবু বাকর (রাঃ) হারাম শরীফের দিকে অগ্রসর হন। তখন পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আগত লোকদের দ্বারা পরিবেষ্টিত ছিলেন। তিনি যা শুনেছেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তা বলেছেন কিনা তা জিজ্ঞেস করেন। যখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ‘হাঁ’ সূচক জবাব দেন, তখন আবু বাকর (রাঃ) বলেন, আমি জেরুসালেম ও সেখানকার মসজিদ দেখেছি। আপনি দয়া করে বলুন, সেগুলো কি রকম? সবাই জানে যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইতিপূর্বে কখনও জেরুসালেম সফর করেননি। কিন্তু তিনি বিস্তারিত বর্ণনা দিতে থাকলেন যা শুধুমাত্র শুনে বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। তিনি এমনভাবে জীবন্ত বর্ণনা দেন যেন জেরুসালেম তার চোখের সামনে। এইভাবে আবু বাকর প্রশ্ন করতে থাকেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যথার্থ জবাব দিতে থাকেন। তখন সন্দেহকারীরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনা শুরু করে। তাদের অনেকেই জেরুসালেম দেখেছে। তাদের মন বলছিল, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বর্ণনা দিচ্ছেন তা সত্য, তথাপি তারা আরো বেশী প্রমাণ তালাশ করছিল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তরে বলেন, তিনি যাওয়ার পথে অমুক অমুক কাফেলাকে অমুক অমুক দ্রব্য সহকারে বোরাকের পাশে দেখেছেন। একটি উট উপত্যকায় দৌড়ে চলে গেল। তিনি কাফেলার লোকদেরকে সে বিষয়ে অবগত করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আরো বলেন, আমার প্রত্যাবর্তনের সময় আমি অমুক উপত্যকায় অমুক গোত্রের লোকদেরকে দেখতে পেয়েছি। তারা ঘুমাচ্ছিল। আমি তাদের একটি পাত্র থেকে পানি পান করে এর নমুনা রেখে এসেছি।

তিনি আরো কিছু ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দেন এবং আরো কিছু কাফেলা সম্পর্কে কথা বলেন। পরবর্তীতে ঐ সকল কাফেলা মক্কা ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর বক্তব্যের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়। ফলে সন্দেহকারীরা চুপ হয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই আশ্চর্য হয়ে যায় যে, কি করে এ ঘটনা ঘটল।

[Radio Speeches, Islamic Publications, Lahore]

এই ঘটনাতো অবশ্যই দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা ও আশ্চর্য বিষয়। এর উপর বড় কোন ঘটনা ঘটেনি এবং আর ঘটারও সম্ভাবনা নেই।

মে’রাজের ঘটনা কিভাবে বাইতুল মাকদিস ও মসজিদে আকসার সাথে জড়িত, উক্ত বর্ণনা দ্বারা তা আমাদের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল। তাই মুসলমানদের কাছে এই শহর ও মসজিদের গুরুত্ব অপরিসীম। এই মসজিদ ও শহরটিকে ভুলে থাকা মুসলমানদের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই এই পবিত্র শহরের উপর অন্য কোন অমুসলিম শক্তির জবরদখল, নিয়ন্ত্রণ কিংবা শাসন কোনটাই মুসলমানদের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলেই তাকে মুক্ত করার জন্য সালাহউদ্দিন আইউবীর মত বীরপুরুষের আবির্ভাব হয়েছিল। সকল যুগেই মসজিদে আকসার হেফাজতকারী ও উদ্ধারকারী সালাহউদ্দীনের প্রয়োজন। আল্লাহ মুসলমানদেরকে শক্তি দিন এবং তাদেরকে নিজেদের সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য জাগ্রত করুন।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন