hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

তাওহীদ ও আকাইদ

লেখকঃ সানাউল্লাহ নজির আহমদ, কামালুদ্দিন মোল্লা, ইকবাল হোসাইন মাসুম

৩৮
যে সব কারণে কালেমায়ে শাহাদাতের মাধ্যমে আনীত ঈমান নষ্ট হয়ে যায় :
পূর্বের আলোচনা থেকে জানতে পারলাম যে لاإله إلا الله و أن محمد رسول الله এর সাক্ষ্য প্রদান ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পূর্ব শর্ত। যে ব্যক্তি এই কালেমাকে মৌখিকভাবে উচ্চারণ করবে, অর্থ ও তাৎপর্যের স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এর আবেদনের উপর আমল করবে, সে এ দুনিয়াতে সৌভাগ্যবান হবে, পরম আত্নপ্রাশান্তি লাভ করবে, অবিচ্ছেদ্যভাবে ইসলামের উপর বিদ্যমান আছে বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি তার অর্জিত হবে, ফলে সে জান্নাত লাভে ধন্য হবে। জাহান্নাম হতে নিস্কৃতি পাবে।

এতদা সত্বেও কখনো-কখনো বান্দার উপর এমন সব অবস্থার আবর্তন ঘটে, যা তার সাক্ষ্য ভঙ্গ ও বাতিল করে দেয়। ফলে এর সূত্র ধরে সৌভাগ্য রূপ নেয় দূর্ভাগ্যের, প্রশান্তি রূপ নেয় অশান্তি ও ভয়ের, স্থীতিশীলতা রূপ নেয় পদস্খলন ও পথভ্রষ্টতার। আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাত লাভ, জাহান্নাম হতে মুক্তির পরিবর্তে আল্লাহর ক্রোধ, চিরস্থায়ী জাহান্নাম ও ঘৃণিত বাসস্থানের যোগ্য বলে বিবেচিত হয়।

সাক্ষ্য ভঙ্গ ও ধর্মচ্যুত হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। বর্তমান যুগে যাতে মানুষ সচারাচর লিপ্ত হয়, তার মধ্য হতে গুরুত্বপূর্ণ কতিপয় কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল।

১. আল্লাহ তাআলার এবাদতে অন্য কাউকে শরীক করা : অর্থাৎ শিরকে আকবরের কোনো প্রকারে লিপ্ত হওয়া। যে কারণে সে দ্বীন হতে বের হয়ে যাবে। জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকবে। যেমন- আল্লাহর জন্য এবং মূর্তির জন্য সেজদাহ করা। আল্লাহ এবং তার সাথে অন্য কাউকে শরীক করে কুরবানী করা। মান্নত করা। খানায়ে কা’বা, কবর এবং মূর্তির চার পাশে তওয়াফ করা। এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّهُ مَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنْصَارٍ ﴿المائدة :৭২﴾

‘নিশ্চয় যে আল্লাহ তাআলার সাথে অংশিদার স্থির করে, আল্লাহ তাআলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।’ [সূরা : আল মায়েদা-৭২]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْمًا عَظِيمًا . ﴿النساء :৪৮)

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না, যে লোক তার সাথে কাউকে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক আল্লাহর সাথে অংশিদার সাব্যস্ত করল, সে মারাত্নক অপবাদ আরোপ করল।’ [সূরা : নিসা-৪৮]

২. শিরকে আকবার বা বড় ধরনের শিরক করা : যেমন- আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করা, অথবা তার কোন কাজ অস্বীকার করা। যেমন- সৃষ্টি করণ, মালিকানা, পরিকল্পনা করা, অথবা আল্লাহ তাআলার গুণাগুণের কোন একটিকে তার মাখলুকের সাথে সম্পৃক্ত করা। কিয়ামতের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। শরীয়ত ও রেসালতকে মিথ্যারোপ করা। আল্লাহ ও তার রসূল এর আদেশ প্রত্যাখ্যান করা ও অহমিকা প্রদর্শন করা। দ্বীনের জরুরী প্রমাণ্য বিষয়গুলো অস্বীকার করা। এরশাদ হচ্ছে-

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ أَبَى وَاسْتَكْبَرَ وَكَانَ مِنَ الْكَافِرِينَ ﴿البقرة :৩৪﴾

‘এবং যখন আমি আদমকে সেজদা করার জন্য ফেরেস্তাগণকে নির্দেশ দিলাম, তখনই ইবলিস ব্যতীত সবাই সিজদা করল। সে নির্দেশ পালন করতে অস্বীকার করল এবং অহংকার প্রদর্শন করল। ফলে সে কাফেরদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে গেল।’ [সূরা : বাক্বারা- ৩৪]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ آَمِنُوا بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ قَالُوا نُؤْمِنُ بِمَا أُنْزِلَ عَلَيْنَا وَيَكْفُرُونَ بِمَا وَرَاءَهُ وَهُوَ الْحَقُّ مُصَدِّقًا لِمَا مَعَهُمْ قُلْ فَلِمَ تَقْتُلُونَ أَنْبِيَاءَ اللَّهِ مِنْ قَبْلُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ ﴿البقرة :৯১﴾

‘যখন তাদেরকে বলা হয়, আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর, তখন তারা বলে- যা আমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে আমরা তাই বিশ্বাস করি, এবং তাছাড়া যা রয়েছে তা তারা অবিশবাস করে, অথচ তাদের কাছে যা আছে এ গ্রন্থ তার সত্যতা প্রমাণ করে। তুমি বল যদি তোমরা বিশ্বাসীই ছিলে, তবে ইতিপূর্বে আল্লাহর নবীগনকে হত্যা করেছিলে?’ [সূরা : আল বাক্বারা-৯১]

وَمَنْ يَرْتَدِدْ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُولَئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالْآَخِرَةِ وَأُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ ﴿البقررة : 217﴾

‘তোমাদের মধ্যে যে স্বধর্ম হতে ফিরে যায়, এবং কাফের অবস্থাতেই তার মৃত্যু ঘটে, দুনিয়া-আখেরাত উভয় জগতেই তাদের কর্ম ব্যর্থ। তারা জাহান্নামের অধিবাসি, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে। [সূরা বাকারা : ২১৭।]

৩. বড় ধরনের নেফাক্ব : যেমন বাহ্যিক ভাবে ইসলাম প্রকাশ করা, অন্তরে অস্বীকৃতি ও কুফরী গোপন করা। অথবা বাহ্যিক ভাবে ইসলামের প্রতি মহববত প্রকাশ করা, অন্তরে ইসলামকে ঘৃণা করা, অপছন্দ করা, এর বিলুপ্তি কামনা করা। অথবা বাহ্যিক ভাবে মুসলিম মুজাহিদদের পরাজয় এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্রের কারণে চিন্তিত হওয়া, আন্তরিক ভাবে এ জন্য খুশি হওয়া। অথবা বাহ্যিক ভাবে দ্বীনের কাজ করা। এর প্রতি আহবান জানানো, এ জন্য জেহাদ করা, ভিতরে ভিতরে এর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা। মুসলমানদের বিপক্ষে গোয়েন্দাগিরী করা। মুসলমানদের সমূলে নিঃশেষ করার ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করা। এরশাদ হচ্ছে-

وَإِذْ يَقُولُ الْمُنَافِقُونَ وَالَّذِينَ فِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ مَا وَعَدَنَا اللَّهُ وَرَسُولُهُ إِلَّا غُرُورًا ﴿12﴾. ( الأحزاب :12)

‘এবং মুনাফিরা ও যাদের অন্তরে ব্যধি ছিল তারা বলছিলঃ আল্লাহ এবং তাঁর রসূল আমাদেরকে যে প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই না।’ [সূরা : আহযাব : ১২।]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللَّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ . ( النساء :142)

‘অবশ্যই মুনাফেকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে।’ [সূরা : নিসা : ১৪২।]অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا . ﴿النساء : 145﴾

‘নিঃসন্দেহে মুনাফেকরা থাকবে দোযখের সর্ব নিম্ন স্তরে। আর তুমি তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী কখনও পাবে না।’ [সূরা : নিসা : ১৪৫।]

৪. আল্লাহ তাআলা এবং তার বান্দার মাঝখানে মাধ্যস্থতাকারী সাব্যস্ত করা : আল্লাহ ব্যতিত যাদেরকে তারা ডাকে তাদের কাছে শাফায়াত বা সুপারিশ প্রার্থনা করা। অথবা তাদের উপর তাওয়াক্বল বা ভরসা করা। অথবা এমন সব জিনিসের ব্যাপারে তাদের কল্যাণের আশা রাখা, তাদের অনিষ্টকে ভয় পাওয়া- যার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা রাখেন। এরশাদ হচ্ছে-

وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ ﴿18﴾. ( يونس :১৮)

‘আর তারা উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্ত্তর, যা না তাদের কোন ক্ষতি সাধন করতে পারে, না লাভ, এবং বলে এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বলে দাওঃ তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, না আকাশসমূহে আর না যমীনে? তিনি পবিত্র ও তারা যা শিরক করে তা থেকে অনেক উর্ধ্বে।’ [সূরা : ইউনুস-১৮] অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ ﴿5﴾ وَإِذَا حُشِرَ النَّاسُ كَانُوا لَهُمْ أَعْدَاءً وَكَانُوا بِعِبَادَتِهِمْ كَافِرِينَ ﴿6﴾. ( الأحقاف :৫-৬)

‘সে ব্যক্তি অপেক্ষা অধিক বিভ্রান্ত আর কে যে আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা কেয়ামত পর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিবে না? এবং এগুলো তাদের প্রার্থনা সম্বন্ধেও অবহিত নয়। যখন মানুষকে হাশরের ময়দানে একত্রিত করা হবে, তখন তারা তাদের শত্রু হয়ে দাড়াবে এবং তাদের এবাদত করা অস্বীকার করবে।’ [সূরা : আল আহক্বাফ- ৫-৬]

৫. মুশরিকদের কাফের না বলা : অথবা তাদের কুফরীর ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করা। অথবা তাদের ধর্মকে বৈধ স্বীকৃতি প্রদান করা বা তাদের ধর্মকে সম্মান করা :

কারণ আল্লাহ তাআলা তাদের কুফরীর চুরান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তাদের সাথে শত্রুতা ও সর্ম্পক ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন- যেহেতু তাদের ভিতর শিরক, কুফর ও স্পষ্ট গোমরাহী বিদ্যমান। এরশাদ হচ্ছে-

لَا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ إِلَّا أَنْ تَتَّقُوا مِنْهُمْ تُقَاةً ﴿أل عمران :২৮﴾

‘মুমিনগণ যেন অন্য মুমিনকে ছেড়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যারা এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক থাকবে না। তবে যদি তোমরা তাদের পক্ষ থেকে কোন অনিষ্টের আশঙ্কা কর, তবে তাদের সাথে সাবধানতার সাথে থাকবে।’ [সূরা : ইমরান-২৮] অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا ﴿150﴾ أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا ﴿النساء :১৫০-১৫১﴾

‘যারা আল্লাহ ও তার রসূল এর প্রতি অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে, তদুপরি আল্লাহ ও রসূলের প্রতি বিশ্বাসে তারতম্য করতে চায়, আর বলে যে, আমরা কতেককে বিশ্বাস করি, কিন্তু কতেককে বিশ্বাস করি না এবং এরই মধ্যবর্তী কোন পথ অবলম্বন করতে চায়। প্রকৃত পক্ষে এরাই সত্য প্রত্যাখ্যানকারী। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী তাদের জন্য তৈরী করে রেখেছি অপমানজনক আযাব।’ [সূরা : নিসা-১৫০-১৫১]

সুতরাং যে তাদের কুফরীর স্বীকৃতি দিবে না। অথবা তাতে সন্দেহ পোষণ করবে। অথবা তাদের ধর্মের বৈধতার স্বীকৃতি দিবে, সে বাস্তবে আল্লাহর মীমাংসিত বিষয়কে আল্লাহর উপর নিক্ষেপ করল এবং রসূল ও কুরআনকে মিথ্যারোপ করল। আর এটাই মুসলমানদের সর্ব সম্মত মতে কুফরী।

৬. নিম্নোক্ত বিশ্বাস পোষণ করা : আল্লাহ তাআলার ধর্ম ও তার রসূল সা. এর শিক্ষার তুলানায় অন্যদের ধর্ম ও শিক্ষা সয়ংসম্পূর্ণ অথবা রসূল সা. এর বিচারের তুলনায় অন্যদের বিচার ইনসাফপূর্ণ। অথবা ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বর্তমানে যুগোপযোগী নয়। অথবা ইসলাম ধর্ম নির্দিষ্ট এবাদত উৎযাপনের ভিতর সীমাবদ্ধ, মানুষের পার্থিব জীবনের বিভিন্ন শাখা প্রশাখার সাথে এর কোনো সর্ম্পক নেই। অথবা যে কোন ব্যক্তির আল্লাহর বিধানের বিরোধিতা করার নৈতিক অধিকার রয়েছে মনে করা। অথবা কুফরী ও মানব রচিত আইন-কানুনের মাধ্যমে বিচার করা। যদিও এ কাজগুলো সম্পাদনকারী ও বাস্তবায়নকারী ব্যক্তি, শরীয়তে মুহাম্মদীর উপর আমল করে, এ দ্বীন সয়ংসম্পূর্ণ এবং বাকীসব ধর্ম ও শিক্ষার উপর এর প্রাধান্য রয়েছে বলে স্বীকার করে। এরশাদ হচ্ছে-

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آَمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا ﴿النساء :৬০﴾.

‘আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও। তারা বিরোধীয় বিষয়কে শয়তানের দিকে নিয়ে যেতে চায়। অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে,যেন তারা তাকে অমান্য করে। আর শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।’ [সূরা : নিসা-৬০]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿65﴾ . ( سورة النساء :৬৫)

‘অতএব তোমার পালনকর্তার শপথ! তারা কখনো ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে না নেয়। তৎপর তুমি যে বিচার করবে তা দ্বিধাহীন অন্তরে গ্রহণ না করে এবং ওটা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে।’ [সূরা : আন নিসা-৬৫]

৭. রসূল সা. বা তার আনীত বিধানের প্রতি বিদ্বেষ পোষন করা : বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি উক্ত বিধান পালন করুক বা না করুক উভয় সমান অপরাধ। এরশাদ হচ্ছে:

ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَرِهُوا مَا أَنْزَلَ اللَّهُ فَأَحْبَطَ أَعْمَالَهُمْ ﴿ سورة محمد : 9﴾

‘এটা এজন্য যে, আল্লাহ যা নাযেল করেছেন তারা তা পছন্দ করে না, অতএব আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন।’ [সূরা : মুহাম্মদ-৮]

ঈমানের বিপরীত কুফরীই একমাত্র আমল নস্যাৎ করে। এখানে তারা আল্লাহ তাআলার বিধানকে অপছন্দ করে কুফরি করেছে, তাই তাদের আমল আল্লাহ তাআলা বাতিল করে দিয়েছেন।

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

وَلَوْ أَشْرَكُوا لَحَبِطَ عَنْهُمْ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ ﴿ سورة الأنعام :৮৮﴾

‘যদি তারা শিরক করতো, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্য ব্যর্থ হয়ে যেত।’ [সূরা : আনআম-৮৮]

৮. উপহাস করা : আল্লাহ, রসূল, কুরআন, শরীয়ত, শরীয়তের কোনো নিদর্শন, সওয়াব, শাস্তি অথবা দ্বীনের উপর অবিচল ও দ্বীনের প্রতি আহবান কারীদের সাথে- দ্বীনের উপর অবিচল থাকার কারণে, দ্বীনের প্রতি আহবান জানানোর কারণে- উপহাস করা। এরশাদ হচ্ছে-

قُلْ أَبِاللَّهِ وَآَيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ ﴿65﴾ لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ . ( سورة التوبة :65-66)

‘আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তার হুকুম-আহকামের সাথে এবং তার রসূলের সাথে ঠাট্রা করছিলে? ছলনা করো না, ঈমান গ্রহণের পরও তোমরা কাফের হয়ে গেছ।’ [সূরা : তওবাহ-৬৫-৬৬]

৯. বন্ধুত্ব স্থাপন করা : মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, তাদের মহববত করা এবং মুসলমানদের বিপরীত তাদের সাহায্য করা। এরশাদ হচ্ছে-

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ ﴿51﴾. ( سورة المائدة :51)

‘হে মুমিনগণ, তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে সে তাদেরই অর্ন্তভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে সুপথ প্রদর্শন করেন না।’ [সূরা : মায়েদা-৫১]

১০. যাদু : যার একটি শাখা কাল চক্র : অর্থাৎ যাদুর একটি আমল যার মাধ্যমে মানুষকে তার মানবপ্রকৃতি হতে ফেরানো হয়, যেমন- স্বামীকে স্ত্রীর বিপরীত অথবা স্ত্রীকে স্বামীর বিপরীত মহববতের পরিবর্তে শক্রতা করা।

আরেকটি শাখা সহানুভুতি: যাদুর এমন একটি দিক আছে যার মাধ্যমে মানুষকে তার অভিষ্ট জিনিসের প্রতি শিরকের পদ্ধতিতে আকষর্ণীয় করে তোলা হয়। যে এ কাজ করল বা এতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল সে মূলত কুফরী করল। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَا يُعَلِّمَانِ مِنْ أَحَدٍ حَتَّى يَقُولَا إِنَّمَا نَحْنُ فِتْنَةٌ فَلَا تَكْفُرْ . ( سورة البقرة :১০২)

‘তারা উভয়ে একথা না বলে কাউকে বলে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরিক্ষার জন্য, কাজেই তুমি কাফের হয়ো না।’ [সূরা : বাক্বারা-১০২]

১১.আল্লাহর শরীয়ত এবং তার দিক নির্দেশনা হতে অন্তর-কর্ণ সহ পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা : যদিও সে শরীয়তকে সত্যারোপ কিংবা মিথ্যারোপ কোনটাই করে না। এর সাথে বন্ধুত্ব কিংবা শত্রুতাও পোষণ করে না। এবং কোনো ভাবে এর প্রতি কর্ণপাতও করে না। এরশাদ হচ্ছে-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذُكِّرَ بِآَيَاتِ رَبِّهِ ثُمَّ أَعْرَضَ عَنْهَا إِنَّا مِنَ الْمُجْرِمِينَ مُنْتَقِمُونَ ﴿22﴾. ( سورة السجدة :২২)

‘যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়। অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে বড় যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব [সূরা : সাজদাহ- ২২]

অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-

وَالَّذِينَ كَفَرُوا عَمَّا أُنْذِرُوا مُعْرِضُونَ ﴿3﴾. ( سورة الأحقاف :৩)

‘আর কাফেররা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।’ [সূরা : আল আহক্বাফ-৩]

উল্লেখিত সমস্ত বিষয় ঈমান বিনষ্টকারী। উপহাস, ঠাট্রা, ইচ্ছা কিংবা ভয় যেভাবেই করুক সর্বাবস্থায় তা কুফরী। তবে জবরদস্তিমুলক কাউকে কুফরী করতে বাধ্য করা হলে তার বিষয়টি আলাদা। এরশাদ হচ্ছে-

إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ ﴿106﴾. ( سورة النحل :১০৬)

‘যার উপর জবর দস্তি করা হয় এবং তার অন্তর ঈমানের উপর অটল থাকে সে ব্যতীত।’ [সূরা : নাহল-১০৬]

চাপ প্রয়োগকৃত ব্যক্তির কুফরীকথা বা কাজের সাথে শর্ত হলো তার অন্তর ঈমানের ব্যাপারে আস্থাশীল থাকতে হবে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন