hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

১৫
অধ্যায় সাতঃ গ্রন্থকার কোন মানুষ নয়
২৭ নম্বর সূরা “আন্ নমল”-এর ২৯ নম্বর আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করুন মহান আল্লাহ্ কী সূক্ষ্মভাবে এখানে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বিজ্ঞ বাদশাহ সুলায়মান এবং শেষবার রানী বিলকীসের কাহিনী। হযরত সুলায়মান কেবল মাত্র দুনিয়ার একজন বিজ্ঞ বাদশাহই ছিলেন না, সৎপথ নিদের্শক আল্লাহর একজন নবীও ছিলেন তিনি। তাঁরই প্রতিবেশী রাষ্ট্রে সুশিক্ষিত প্রজাবৃন্দের শাসক ছিলেন এক হিতৈষী রানী। কিন্তু তিনিও তাঁর প্রজাবৃন্দ ছিলেন অগ্নি উপাসনায় বিশ্বাসী মুশরিক। বাদশাহ সুলায়মান একখানা পত্র লিখলেন রানী বিলকিসের নিকট-তাঁর এবং তার প্রজাবৃন্দের আধ্যাত্মিক মঙ্গলকামনা করে। দারুণ শ্রদ্ধায় পত্রখানি গ্রহণ করলেন রানী বিলকিস। কিন্তু আল্লাহর মনোনীত ধর্ম দীন ইসলাম গ্রহণের জন্য সুলায়মানের এই দাওয়াত কবুলের ব্যাপারে তাঁর প্রজাবৃন্দের ঐচ্ছিক অনুমোদন তিনি অর্জন করবেন কীভাবে? জাতীয় মনস্তত্ত্ব সম্বন্ধে তিনি তো পুরা মাত্রায়-ই ওয়াকিবহাল। প্রজা সাধারণের মধ্যে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা যদি সুলায়মানের এই দাওয়াত তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তাদের কাছ থেকে ‘হ্যাঁ’ করানোর সকল প্রচেষ্টাই নিষ্ফল হবে তার। তাই অমাত্যবর্গকে ডেকে বিষয়টি তাদের অবহিত করার জন্য তাদের উদ্দেশ্যে তিনি প্রদান করলেন একটি অভিভাষণঃ আল কুরআনে ঘটনাটি বিধৃত হয়েছে এভাবে,

( قَالَتۡ یَـٰۤأَیُّهَا ٱلۡمَلَؤُا۟ إِنِّیۤ أُلۡقِیَ إِلَیَّ كِتَـٰب كَرِیمٌ ۝ إِنَّهُۥ مِن سُلَیۡمَـٰنَ وَإِنَّهُۥ بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ ۝ أَلَّا تَعۡلُوا۟ عَلَیَّ وَأۡتُونِی مُسۡلِمِینَ )

২৯. সেই নারী (রানী বিকীস) বললো, হে পরিষদবর্গ আমাকে একটি সম্মানিত পত্র দেওয়া হয়েছে। ৩০. এটি সুলায়মানের নিকট হতে এবং তা এইঃ দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। ৩১. অহমিকাবশে আমাকে অমান্য করো না এবং আনুগত্য স্বীকার করে আমার নিকট উপস্থিত হও।

—কুরআন ২৭: ২৯- ৩১

অত্যন্ত কুশলতার সাথে আমাদের মহাবিজ্ঞ গ্রন্থকার সূরাটির মাঝখানে “বিসমিল্লাহ্” শরীফ অন্তর্ভুক্ত করে ১১৪টি সীল পূরণের কাজটি করেছেন সুসম্পন্ন; একই সাথে মাত্র ৩টি আয়াতে তিনি চরিতার্থ করেছেন তাঁর আরও বহুবিধ উদ্দেশ্য।

১. আল কুরআনের ১১৪টি সূরার প্রত্যেকটির হিসাব বিভাজনের জন্য তিনি প্রবর্তিত করেছেন তাঁর ১১৪ টি সীল।

২. পৃথিবীর রাজন্যবর্গকে অহংকারী ও উদ্ধত না হবার জন্য পুনরায় শিক্ষা প্রদান করেছেন তিনি এখানে। এমন কি শাসক হিসেবে পারস্পরিক আলোচনা, ভিত্তিতে তাদের কার্যাবলী সমাধা করার উপর আরোপ করেছেন গুরুত্ব। আর তাদের অধীনস্থদেরকে মানসিকভাবে উপযোগী করে তোলার তাকিদ প্রদান করেছেন এই দৈববাণী গ্রহণ করার জন্যে।

৩. লিখবার সময় এই কথা মনে করেই তোমরা লিখবে যে তোমার সম্মুখেই রয়েছে তোমার প্রভু পরম করুণাময় দয়ালু দাতা আল্লাহ্। যিনি তোমার সকল পোপন চিন্তা ও উদ্দেশ্য বা অভিপ্রায় এর চিরন্তন সাক্ষী।

৪. এমন কি দুনিয়ার একজন বাদশাহর তরফ থেকে আর এক বাদশাহর কাছে লিখবার সময় যত শক্তিশালী লোক-ই হোন না কেন তিনি, এবং তাঁর বাণী যত পবিত্রই হোক না কেন তার কাজটি সম্পন্ন করতে হবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে যেন আল্লাহর দৃষ্টিসীমার মধ্যেই সম্পন্ন হচ্ছে সেই কাজ।

৫. এবং আমাদের মহাগ্রন্থকার এগুলো করবার সময় আরও সম্পাদন করেছেনঃ

(ক) আল কুরআনের ১৯টি শব্দ اسم “ইসম” বা নাম।

(খ) আল কুরআনের ২৬৯৮ টি শব্দ الله “আল্লাহ”

(গ) আল কুরআনের ৫৭টি শব্দ الرحمن “আররাহমান”

(ঘ) আল কুরআনের ১১৪টি শব্দ الرحيم “আর রাহীম”

সূরাটির (আন্ নমল) মাঝখানে ৩০ নম্বর আয়াত শরীফে ঐ সীলটি ছাড়া উপরোক্ত ৪টি শব্দ সংখ্যার প্রত্যেকটিতে ১টি করে শব্দ কম হতো; আরও কম হতো ঐ নিরুদ্দিষ্ট ৯ নম্বর সূরার সম্পূর্ণ সীলটি।

এখন পর্যন্ত আমরা যা দেখছি তাতে কী ধারণা করা যায়, যে ১৪০০ বছর আগে মরুভূমির একজন অধিবাসী সব কিছু পাশ কাটিয়ে কোন বিদ্যা শিক্ষা ছাড়া কোন কাগজ ও কলম ব্যতিরেকে পবিত্র কুরআনের প্রতিটি “আল্লাহ্” শব্দ ২৩টি বছর ধরে ধারণ করে রেখেছিলেন তাঁর মস্তিষ্কে? এবং সপ্তম দিনে বিশ্রামের পর হিসেব মিলিয়ে দেখলেন যে, ২৬৯৮ প্রকৃতপক্ষেই ১৯-এর গুণীতক? এতে প্রতিভাত হয়, যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নামের এই মানুষটি যদি এটা করেই থাকেন তবে এ ছাড়া আর কোন কাজই ছিল না তার জীবনে এবং এই গাণিতিক সমাধান অনুশীলনের জন্য তাঁর ছিল অফুরন্ত অবসর। কিন্তু না তা নয়; ইতিহাসে তিনি ছিলেন অত্যন্ত ব্যস্ততম একজন মানুষ। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অযত্ন ক্রিয়া কর্ম সম্বন্ধে লা-মার্টিনের উদ্ধৃতি আরোপ করা যেতে পারে এখানে ও তাঁর পৌত্তলিক স্বদেশবাসী তীব্র বিরোধিতা করেছে তার সংস্কারমূলক কাজের জন্য। তাঁকে তাঁর ধর্মকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য মদিনার ইহুদী, খৃস্টান আর মুনাফিকবৃন্দ চালিয়েছে দারুণ তৎপরতা-অত্যধিক ব্যস্ততার মাঝে তিনি কি এতটুকু অবসর পেয়েছেন এসবের হিসেবে রাখতে? এত সহজ প্রাপ্তি কী কারুর পক্ষেই সম্ভব? এ সবই কী কেবল ঘটনাচক্র? হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গাণিতিক বিস্ময়ের সামান্যই কিছু উল্লেখ করেছি আমরা এ পর্যন্ত। তাঁর (?) গ্ৰন্থখানি আল কুরআন বহু দিক থেকে একটি অনুপম গ্রন্থ। সাধারণ একজন মানুষ হিসেবে আল্লাহর এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনের ডজনখানিক অনুপম গুণ উপস্থাপন করতে পারি আমি আপনাদের সমীপে। সন্দেহাতীতভাবে আরও বেশি দিতে সক্ষম হবেন সুশিনত পণ্ডিতবর্গ। উপরোল্লিখিত গাণিতিক বিষয়াদি নিয়ে যেহেতু আমরা কারবার করছি। সেহেতু এরই উপর আমরা বিস্তারিত আলোচনা করতে পারি।

দুনিয়ার বুকে পবিত্র কুরআন-ই একমাত্র গ্রন্থ, যার নির্দিষ্ট কতকগুলো সূরার প্রারম্ভে নির্দিষ্ট কতকগুলো আদ্যাক্ষর বা সাংকেতিক অক্ষর রয়েছে, আরবীতে যাকে বলা হয় “মুকাত্তায়াত” বা সংক্ষিপ্ত অক্ষর সম্মিলন। এই সব আদ্যাক্ষর বা সাংকেতিক অক্ষরসমূহের হয়তো বা সহজবোধ্য কোন অর্থ নেই।

আরবী বর্ণমালা মোট ২৮টি অক্ষরের মধ্যে আল কুরআনে শব্দের আদ্যাক্ষর হিসেবে রয়েছে ঠিক তার অর্ধেক (নক্সা ৬)

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

এই ১৪টি অক্ষর অবলম্বনে গঠিত হয়েছে ১৪টি বিভিন্ন সম্মিলন বা মুকাত্তায়াত ১৪ রকমের “সম্মিলনের” পুনরাবৃত্তি ঘটেছে আল কুরআনের ২৯টি সূরায়। আমরা যদি ১৪টি আদ্যাক্ষরের সাথে ১৪টি ‘সম্মিলন’ এবং ২৯টি সূরার যোগফল নির্ণয় করি তবে আমরা পাবো ৫৭ সংখ্যাটি (১৪+১৪+২৯=৫৭), যা প্রকৃতপক্ষেই ১৯-এর গুণীতক (১৯x৩=৫৭)। এটা সংঘটিত হলো কীভাবে? ঘটনার যুগপৎ সংঘটন বা “ঘটনাচক্র” তবে কী এখানেও? ......

নিচের ৭ নম্বর নক্সাটির দিকে দ্বিতীয় বারের জন্য যদি আমরা ক্ষণিক দৃষ্টি ফেরাই, তাহলে তৎক্ষণাৎ আমরা দেখতে পাবো যে, ওই ১৪টি অক্ষরের প্রত্যেকটি এক, দুই, তিন, চার এবং পাঁচটি অক্ষর সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে এক-একটি সম্মিলন বা “মুকাত্তায়াত”,

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

সূরা কলমঃ ৬৮ নং সূরা

( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ نۤۚ وَٱلۡقَلَمِ وَمَا یَسۡطُرُونَ ۝ مَاۤ أَنتَ بِنِعۡمَةِ رَبِّكَ بِمَجۡنُون ۝ وَإِنَّ لَكَ لَأَجۡرًا غَیۡرَ مَمۡنُون ۝ وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِیم ࣲ)

১. নূন, শপথ কলমের এবং ওরা যা লিপিবদ্ধ করে তার,

২. তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহে তুমি উন্মাদ নও।

৩. আর তোমার জন্য রয়েছে নিরবচ্ছিন্ন পুরস্কার,

৪. তুমি নিশ্চয়ই মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।

১৩৩ ن (নূন)

১৯x৭ = ১৩৩

عليها تسعة عشره

এরও উপরে রয়েছে উনিশ

নক্সাঃ ১০

পরীক্ষার জন্য এক অক্ষর বিশিষ্ট সূরা নিতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের নির্বাচনে আসবে ৬৮ নম্বর সূরাটি, ঐতিহ্যগত সংখ্যা ভিত্তিক ক্রমে যেটা সর্বশেষ সূরা হলেও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট নাযিলকৃত “মুকাত্তায়াত” বিশিষ্ট সূরাসমূহের মধ্যে এই সূরাটিই প্রথম, সূরা “আল্ কলম -এর প্রারম্ভেই এই ن অক্ষরটি দীব্যমান (নক্সা নং ১০)। “আল কুরআন-এর এরই প্রারম্ভিকতা সম্বন্ধে পণ্ডিতোচিত ব্যাখ্যার জন্য জনাব আব্দুল্লাহ ইউসুফ আলী বিরচিত “দি মিনিং অফ দি গ্লোরিয়াস্ কুরআন-এর ৫৫৯২ নম্বর টীকাটি অনুগ্রহ পূর্বক দেখা যেতে পারে। কিন্তু যেহেতু আল্ কুরআন-এর অত্যাশ্চর্য অকৃত্রিম গবেষণার জন্য ১৯ সংখ্যাটিকে আমরা যথোপযুক্ত কুঞ্জি হিসাবে গ্রহণ করেছি, তাই গণনা ও পরীক্ষার জন্য আমরা বেছে নিই না কেননা ن অক্ষরটি - যে অক্ষরটি সত্যিকার ভাবেই ৬৮ নম্বর সূরার সর্বপ্রথম অক্ষর। সূরাটির ن (নূন) অক্ষরগুলো গণনা করলেই দেখা যাবে, এখানে এই অক্ষর রয়েছে ১৩৩টি - ১৯দিয়ে যা নিঃশেষে বিভাজ্য। ক্যালকুলেটরে এর নির্ভুল জবাব হচ্ছে -৭ (১৯x৭-১৩৩)। কিন্তু এর জন্য বিশ্বাস করার প্রয়োজন নেই আমার কথায়। আপনি নিজেই গুণে-দেখুন না প্রত্যক্ষভাবে এই গণনার মাঝে একটি আত্মিক আনন্দও পাবেন, আপনি। এতে পাঁচ মিনিট সময়ও লাগবে না আপনার। ১৩৩টি ن “নূন” যে আবারও ১৯-এর গুণীতক, তা সম্ভব হলো কী করে? অবশ্যই আমি চাপ প্রয়োগ করবো আপনাকে, এই জবাবের জন্য।

৮ নম্বর নক্সার দিকে খেয়াল করলে আপনি পুনরায় দেখতে পাবেন যে, আরও দুটো সূরা রয়েছে একক অক্ষর হিসেবে যা তার সাথে সংযোজিত। সূরা দুটো হলো ৫০ নম্বর সূরা আল “কাফ” এবং ৪২ নম্বর সূরা “আস্ শুরা”। ৫০ নম্বর সূরাটির শুরু ق “ক্বাফ” দিয়ে; আর সূরাটির শিরোনামও “ক্বাফ”। পক্ষান্তরে ৪২ নম্বর সূরা ৫টি অক্ষর সমন্বয়ে, যার শেষ অক্ষরটি ق “ক্বাফ”। আমরা যদি এই ৫টি অক্ষর حم عسق সংশ্লিষ্ট ৪২ নম্বর সূরাটিতে যতবার আছে, সেই সংখ্যাগুলোকে যোগ করি তাহলে সর্বমোট সংখ্যা পাবো আমরা ৫৭০ (১৯x৩০= ৫৭০)। মহান গ্রন্থকার পুনরায় আঘাত হেনেছেন মোক্ষম জায়গাটিতেই। জটিল এই হিসেব আয়ত্তে আনা কঠিন বৈকি। ৫০ ও ৪২ নম্বর সূরায় সাধারণভাবে ব্যবহৃত ق “ক্বাফ”অক্ষরটি উপরেই আমাদের অবস্থান নেওয়া উচিত, কেননা একটি অক্ষরই যেখানে আমরা আয়ত্তে আনতে সক্ষম নই, সেখানে ৫টি অক্ষরের অশ্বারোহণে ফায়দা কী?

লক্ষ্য করলেই আপনি বুঝতে পারবেন, যে বাস্তব তথ্য নিয়ে আমরা আলোচনা করছি এখানে, তাতে দৃষ্টিসম্পন্ন এবং সংখ্যা নিরূপনে সক্ষম যে কোন ব্যক্তিই এটা যাচাই করে দেখতে পারেন। এইসব ‘মিরাকল’ বা “মোজেযা” ব্যক্তিগতভাবে তিনি পরীক্ষা করে প্রমাণও করে নিতে পারেন, যে পবিত্র এই গ্রন্থখানি মানব রচিত নয়। ভয়ংকর এই বাস্তবতাকে প্রত্যক্ষ করার জন্য আরবি ভাষায় ব্যুৎপত্তির কোন প্রয়োজন নেই আপনার। কোন অনুমান প্রসূত মত, কোন ধারণা বা কোন প্রকার বিশদ ব্যাখ্যাও প্রয়োজন নেই এখানে। কেবল দুই “নোকতা” বিশিষ্ট মাথার প্রতি লক্ষ্য করুন আর গুণে গুণে দেখুন সেগুলো। ৫০ নম্বর সূরায় রয়েছে ৫৭ টি মাথা (১৯x৩=৫৭), আর ৪২ নম্বর সূরায়েও ৫৭টি (১৯x৩=৫৭)। মনুষ্যোচিতভাবে বা যান্ত্রিক উপায়ে কী সম্ভব এটা? পরবর্তীতে এটাই আমরা জিজ্ঞাসা করবো ইলেট্রনিক কপিউটারকে।

সূরা ক্বাফঃ ৫০ নম্বর সূরা

ق

( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ قۤۚ وَٱلۡقُرۡءَانِ ٱلۡمَجِیدِ ۝ بَلۡ عَجِبُوۤا۟ أَن جَاۤءَهُم مُّنذِر مِّنۡهُمۡ فَقَالَ ٱلۡكَـٰفِرُونَ هَـٰذَا شَیۡءٌ عَجِیبٌ )

১. ক্বাফ শপথ সম্মানিত কুরআনের, (তুমি অবশ্যই সতর্কবাণী)।

২. এবং তারা বিস্ময়বোধ করবে যে, ওদের মধ্যে একজন সতর্ককারী আবির্ভূত হয়েছে, আর কাফিররা বলে এটা তো এক আশ্চর্য ব্যাপার।

দুই ক্বাফ বিশিষ্ট সূরা দুটির মধ্যে ق ‘ক্বাফ’ অক্ষর রয়েছে ১১৪ (১৯x৬)টি। এটা একটা যুক্তিযুক্ত ধারণা যে, কুরআনুল কারীমে ق অক্ষরটি যেহেতু সূরাসমূহের সমান, তাই ق (ক্বাফ) কুরআনের-ই প্রতীক। ১১৪টি ‘ক্বাফ’ বা ‘ক’ পবিত্র কুরআনের সূরা সংখ্যার সম্পূর্ণ সমান যেন প্রত্যেকটি সূরার জন্য একটি করে। আমাদের মহান গ্রন্থকার যেন বলতে চেয়েছেন, কুরআন মজিদের প্রত্যেকটি সূরাই এক একটি কুরআন, একটি সম্পূর্ণ কুরআন এবং কুরআন ছাড়া আর কিছুই নয়।

এই সূরা দুটোর ق ‘ক্বাফ’ অক্ষরগুলো গুণতে আপনার লাগবে মাত্র কয়েক মিনিট। আল কুরআনের এই অত্যাশ্চর্য প্রকৃতি বা মু'জিযা বাস্তবিকই অনুভব করতে পারবেন আপনি! যারা পবিত্র কুরআন কষ্ঠস্থ করে রেখেছেন, সেই হাফিযদের প্রতি আমার আর এই ق অক্ষরগুলো আপনাদের স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে চয়ন করুন এবং দেখুন মোট সংখ্যাটি সঠিক বের করতে পারেন কি না? বার বার যদি আপনারা অসমর্থ হন, একবার গুণে দেখুন তাহলে প্রত্যক্ষভাবে, তবেই বুঝবেন, কী বিস্ময়কর এই কৃতিত্ব। আমাদের রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এই ধরনের হিসেব যদি করেই থাকেন তাবে সেগুলোকে করতে হয়েছে স্মৃতির সাহায্যেই কারণ লেখা-পড়া তিনি জানতেন না।

এমনকি অতি প্রতিভাবান একজন ব্যক্তিত্ব এই ধরনের একটা কর্ম সম্পাদনকালে ঠিক এমনি একটা কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারেন। মহান গ্রন্থকার কিন্তু তা হননি, নিছক একটা দৈব ঘটনা বা একটা ভৌতিক কপিউটার-এর পেছনে কাজ করছে। এই সিদ্ধান্তে পৌঁছবার পূবেই সেই মহান সত্তা তাঁর নিজস্ব কায়দায় আমাদেরকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন যে, মানব হৃদয়ের চেয়েও এক মহা শক্তিশালী শক্তি জড়িত রয়েছেন এই কর্মকাণ্ডে। আমাদের গ্রন্থকার (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-ই যদি এটা করে থাকেন) যখন পরিকল্পিতভাবে ق “ক্বাফ” বিশিষ্ট সুরা তার মস্তিষ্কে ধারণ সম্পন্ন করলেন, তখন অবশ্যই তাকে গুণে দেখতে হয়েছিল ق “ক্বাফ” অক্ষরগুলো, এবং ১৯ দিয়ে তা ভাগ করার পরই সংখ্যাটি যখন ১৯ এর গুণীতক বলে প্রতীয়মান হয়েছিল, তখনি তাঁর শ্রুতি লেখকদের কাছে সেগুলো আবৃত্তি করেছিলেন তিনি, কারণ একবার আবৃত্তি করার পর তিনি আর তা প্রত্যাহার করতেন না কখনোই।

আমরা ধরে নিতে পারি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ৪২ নম্বর সূরায় ৫৭টি “ক্বাফ” অক্ষর সংযুক্ত করে বিরাট সাফল্য অজন করেছিলেন, কিন্তু ৫০ নম্বর সূরায় যখন তিনি ঐ ق ক্বাফ অক্ষরগুলো গুণে দেখলেন বিস্ময় ভাবে তখন পেলেন ৫৮টি এবং ৫৮ গুণীতক নয় ১৯-এর। ১৯ সংখ্যাটি পূরণের জন্য হয় তাঁকে আরও কিছু পঙতি যোগ করে ১৮টি ق “ক্বাফ” অক্ষর সংগ্রহ করতে হতো, নতুবা বাদ দিতে হতে একটি ق “ক্বাফ”। অবশ্যই শেষোক্তটি তাঁর জন্য ছিল সহজ পন্থা। কিন্তু বাদ দিতে হবে কোন ق “ক্বাফ” টি?

সূরাটি শুরুই করেছেন তিনি ق “ক্বাফ” অক্ষর দিয়ে। প্রথম ق “ক্বাফ” অক্ষরটি বাদ দেওয়াই তার জন্য ছিল সহজতর। আর তার সমস্যার সমাধানও হতো এতে। কিন্তু না। তার পুরো পরিকল্পনাটাই ছিল, কুরআনিক প্রারম্ভিকতা বা মুকাত্তায়াত সমূহ গণনা করে, ১৯ দিয়ে ভাগ করে সেই মহা পরাক্রমশালী সূক্ষ্ম গাণিতিক বৈশিষ্ট্য আমাদের কাছে তুলে ধরা। -বিগত চতুর্দশ শতাব্দিতে ১১৪ টি সূরার মধ্যে একটি সূরাও যদি হারিয়ে যেত তাহলে সূরার সংখ্যাও কখনোই বিভাজ্য হতো না ১৯ দিয়ে শুধু এমনিই নয়, আরবী বর্ণমালা ১৪টি অক্ষরের মধ্যে যদি একটি মাত্র অক্ষর যোগ করা হতো; মুছে দেওয়া বা পরিবর্তন করা হতো, তাহলে আল কুরআনের এই বিস্ময়কর গাণিতিক পদ্ধতি টুকরো টুকরো হয়ে যেত, আর কুরআন উল-করীম পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের ন্যায় যুক্ত হতো সংশোধনীর তালিকায়। পবিত্র গ্রন্থের প্রকৃত গ্রন্থকার সত্য সত্যই পালন করেছেন তার অঙ্গীকারঃ

( إِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا ٱلذِّكۡرَ وَإِنَّا لَهُۥ لَحَـٰفِظُونَ )

নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি কুরআন, আর তার হিফাজতকারী নিশ্চয়ই আমি।

– আল কুরআন ১৫: ৯

কুরআনুল কারীম এর প্রায় অর্ধাংশ ২৯টি মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট সূরা এই দুর্ভেদ্য গাণিতিক বুননের সাথে জাড়ি, যেমনি আপনি ৮ নম্বর নক্সায় লক্ষ্য করেছেন হয়তো। পরোক্ষভাবে ঠিক তেমনিই আল্লাহর এই মহাগ্রন্থের হেফাজত করা হয়েছে সুনিশ্চিত। নিশ্চয়ই আপনাদের স্মরণে আছে ২৬৯৮টি الله “আল্লাহ্” শব্দ রয়েছে কুরআনুল করীমে। গড়ে তাহলে প্রতি ২.৫টি আয়াতে রয়েছে ১টি করে الله “আল্লাহ” শব্দ। এমনি الله “আল্লাহ্” নাম যুক্ত একটি মাত্র বাক্য যদি সংযোজন বা বিযোজন হতো,তা হলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের নিজস্ব প্রতিরক্ষা পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে হতো ব্যর্থ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন