মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা
লেখকঃ আহমদ দীদাত
১৬
অধ্যায় আটঃ গাণিতিক অলৌকিকত্ব
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/16
পবিত্র কুরআনকে সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্যে পারস্পরিক বন্ধন পদ্ধতির এমনি জটিল প্রক্রিয়ায় অপ্রত্যাশিত ভাবে, হঠাৎ দৈবক্রমে বা ঘটনাচক্র হিসেবে সংঘটিত হওয়া কী সম্ভব? রেডারেন্ড বস্ওয়ার্থ যেমনটি মত প্রকাশ করেছেন, “বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রচনা শৈলীর বিশুদ্ধতা, জ্ঞান ও সত্যের, এই অলৌকিক নিদর্শন কী একটি অচেতন কম্পিউটার সৃষ্টি করতে সক্ষম? আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আল কুরআনের গ্রন্থকার দেখাতে চেয়েছেন, অপ্রত্যাশিতভাবে সৃষ্টি হয়নি তাঁর এই গ্রন্থ; দেখাতে চেয়েছেন, একজন সচেতন সত্তা বিজড়িত রয়েছেন এই গ্রন্থখানি প্রণয়নে। তাঁর অপরিসীম দক্ষতা ও অপূর্ব কর্ম সম্পাদন প্রণালী আবিষ্কারের জন্য গুপ্ত কথার ইঙ্গিতে অনেক রহস্যের সূত্র তিনি ছড়িয়ে রেখেছেন গ্রন্থখানিতে।
আল কুরআনের মত অতিপ্রাকৃত একখানি গ্রন্থ প্রণয়নের কাজ যদি কোন মানুষ গ্রহণ করতো, তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ অসম্ভব কাজটি সম্পাদনের প্রচেষ্টা দুরূহ বিবেচনায় তার মধ্যে অবশ্যই আসতো একটা দ্বিধান্বিত ভাব। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ তাঁর অনায়াস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাস্তব বা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সৃষ্ট এই সব সমস্যাসমূহের সার্থক সমাধান করতে পারতেন অত্যন্ত সহজে, আমাদের অগোচরেই। কিন্তু তার সচেতন কর্ম পদ্ধতির দিকে আকর্ষণ করেছেন আমাদের মনোযোগ। সুস্পষ্টভাবে তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন আমাদেরকে যে, কোন মানুষ যদি রচয়িতা হতো পবিত্র কুরআনের আর তাঁর সমস্ত কাজই যদি সম্পন্ন হতো সুচারুরূপে তবুও হয়তো তার কাছ থেকে বাদ পড়ে যেত একটি ق “ক্বাফ” অক্ষর। লক্ষ্য করুন, দুই ق বিশিষ্ট সূরা দুটি লেখার পর তিনি হয়তো পেয়ে গেলেন, ১১৫টি ق “ক্বাফ” অক্ষর এবং ১১৪টি নয় যেমনটি আমরা দেখছি। যদি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম- ই লেখক হতেন ওগুলির তাহলে তাঁর স্মৃতিতে সূরা দুটি প্রথমে বিন্যস্ত করার সময় তার অতিরিক্ত অসুবিধার কথা সহজেই আমরা অনুমান করতে পারি, কারণ তিনি পড়তেও জানতেন না, লিখতেও জানতেন না। একবার তার মস্তিষ্কে সেগুলো ধারণ করার পর তাঁকে মুখস্থ করে নিতে হতে সেগুলো। অলিখিত বাণীগুলো যা কখনো দেখা যায়নি বা শোনা যায়নি। তা মুখস্থ করে পুনাবৃত্তি করা অলীক কল্পনা মাত্র। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যখনি পবিত্র কুরআনের কোন অংশ আবৃত্তি করতে মনস্থ করতেন তখনি তিনি ডেকে নিতেন কুরআন লেখকদেরকে এবং স্রেফ আরম্ভ করে দিতেন পড়া যেন স্বাচ্ছন্দে গ্রন্থখানি তিনি পাঠ করে যাচ্ছেন। মনে হতো, সবই যেন তার মুখস্থ রয়েছে।
মুহূর্তের জন্যে হলেও অবিশ্বাসীদের মতো আমরাও যদি ধরে নিই যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (?) এই অসম্ভব কৃতিত্বপূর্ণ কাজটি সম্পন্ন করেছেন, এবং দুই ق “ক্বাফ” বিশিষ্ট সূরার ق “ক্বাফ” অক্ষরগুলো যোগ করে সর্বমোট সংখ্যা পেলেন ১১৫; তারপর সেগুলোকে ১৯ দিয়ে ভাগ করলেন তিনি এবং অবশিষ্ট পেলেন ১, যা বাদ দেওয়ার প্রয়োজন ছিলো শ্রুতি লেখকদের কাছে বলে যাবার আগেই। তার জন্যে সহজতর উপায় ছিল প্রথম ق “ক্বাফ” অক্ষরটি মুছে ফেলা, কিন্তু পূর্বে উল্লিখিত কারণসমূহের জন্যে (মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট সূরাসমূহ থেকে বাদ দিলে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে বলে) ওগুলোকে রাখাই ছিল যুক্তিযুক্ত। পরবর্তী ق “ক্বাফ” অক্ষরটি নিম্নোক্ত শব্দসমূহের মধ্যেই বিরাজিতঃ
والقران المجيد
“গৌরবময় কুরআনের শপথ”
‘কুরআন’ - এই একটি শব্দের আরও ত্রিশটি সমার্থক শব্দ রয়েছে আল কুরআনের আর সেই সমার্থক শব্দগুলো হলোঃ ‘আল্ কিতাব’, ‘আল ফুরকান’, ‘আল বুরহান’, ‘আজ জিকর’, ‘আত, তানজিল’ ইত্যাদি এবং আমরা কেউই এমন জ্ঞানী নই যে, মহান গ্রন্থকার কী করেছেন, তা আমরা অবহিত, শুধু বিষয়টি উত্তমরূপে উপলব্ধি করানোর জন্যেই তিনি আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করে বলতে চেয়েছেন, যে ق “ক্বাফ” কুরআনেরই প্রতীক, যেমন ‘আ’ আপেলের। তাছাড়া সংঘাতও এতে হ্রাস হওয়া সম্ভব। আমাদের এই গ্রন্থকার পূর্ণ নৈতিক বিশুদ্ধতা অর্জনে বিশ্বাসী! তাঁর সত্তায় রক্ষিত, ق “ক্বাফ” অক্ষরটি মুছে ফেলার জন্য তাই তিনি পুংখানুপুংখরূপে পরীক্ষা করবেন, এটাই স্বাভাবিক। বিরাট এক গুচ্ছ ق “ক্বাফ” অক্ষর তিনি লক্ষ্য করেন ১৩ নং আয়াত শরিফ-এর চতুর্দিকে। সংখ্যায় সেগুলো পুরো ৫টি; এর-ই একটিকে বর্জন বা অপসারণ করাই যুক্তিসঙ্গত নিশ্চয়ই। পরীক্ষার জন্যে চলুন না আমরা দৃষ্টি ফেরাই ১২ নম্বর নক্সাটির প্রতি এবং পাঠ করে যাই ১২, ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াত শরীফ। আয়াত ৩টিতে ق “ক্বাফ”এর সংখ্যা ৪। হ্যাঁঁ, কিন্তু থাকার কথা ৫টি। তাহলে কী আপনি বলতে চান, পরিবর্তিত হয়েছে আল কুরআন? আমি বলি, “না।” তাহলে এই অসঙ্গত বক্তব্যের অর্থ কি? দেখুন মহান গ্রন্থকার আল্লাহ্ অথবা ধরা যাক (অবিশ্বাসীদের কথায়) হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিকল্পনায় এই ৩টি আয়াতে ق “ক্বাফ” এর সংখ্যা ছিল ৫টিই। ১৩ নম্বর আয়াতেই রয়েছে রহস্য সমাধানের সূত্রটি। ঐ اخوان لوط শব্দটি লক্ষ্য করুন। এট হওয়া উচিত ছিল قوم لوط কিন্তু কেন قوم لوط “কাওমু লুত”? কারণ সমগ্র কুরআনুল করীমের বিভিন্ন স্থানে মহান গ্রন্থকার লুত আলায়হিস্ সালামের জাতিকে মোট ১২বার উল্লেখ করেছেন قوم لوط বলে। গ্রন্থকার, যিনি লূত আলাইস হিস সালামের সম্প্রদায়কে যারা তাদের কামনা চরিতার্থ করবার জন্যে অস্বাভাবিক ঘৃণ্য উপায় অবলম্বন করে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, তাদের বর্ণনার ক্ষেত্রে তার দৃঢ় অপরিবর্তনীয় নীতি অনুসরণ করেছেন, সেই তিনিই কেন ত্রয়োদশ বারে ত্রয়োদশ আয়াতে তাদেরকেই আবার বর্ণনা করলেন اخوان لوط “ইখওয়ানু লুত” বলে? একজন গ্রন্থকার, যিনি একদল লোকের বর্ণনা দিতে ১২ ও ১৩ নম্বর আয়াত শরীফের মত দুটি আয়াতে করীমার মধ্যে ৩টি প্রতিশব্দ ব্যবহার করতে পারেন এবং এমনকী একটি জাতির ধারণা দেন, কেন বিশেষণ ছাড়াই قوم لوط “কাওমু লুত” ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাঁর সেই অপরিবর্তনীয় একই নীতিতে দৃঢ় থাকাই তো স্বাভাবিক। কোন মনোযোগী পাঠক ১৩ নং আয়াত শরীফে নিশ্চয়ই হয়তো লক্ষ্য করে থাকবেন এই অপরিবর্তনীয় ধারাটি। দ্বাদশ বার পর্যন্ত এক-ই নীতিতে অবিচল থেকে ব্যবহৃত প্রতিশব্দের সৌন্দর্য মুগ্ধ কোন মনুষ্য রচয়িতা স্বাভাবিকভাবেই হয়তো বা قوم لوط “কাওমু লুৎ-ই” পুনরুক্ত করতেন এবং পূর্ণ করতেন ১৩টি! ঐরূপ অবস্থায় সূরা “ক্বাফ” এর ق ক্বাফ অক্ষরটি হয়তোবা হতো ৫৮; কিন্তু ৫৮ নয় ১৯-এর গুণীতক। তিনি কি বলেননি ১৯ গুণতে বাধ্য করবো আমি তোমাকে?
عليها تسعة عشره
এরও উপরে উনিশ।
কোন পরিবর্তন ব্যতিরেকে পবিত্র কুরআনে ১২ বার পুনরাবৃত্ত হয়েছে। লক্ষ্যনীয় একমাত্র ব্যতিক্রম ১৩ নম্বর আয়াতে,
কেবল একটি মাত্র সূরা রয়েছে, যার শুরু একটি মাত্র “মুকাত্তায়াত” দিয়ে, আর সেই সূরাটি হলো আল কুরআনের ৩৮ নম্বর সূরা “আস্ সাদ” ص লক্ষ্য করুন, যেমনটি ৫০ নম্বর ও ৬৮ নম্বর সূরা যথাক্রমে ق ও ن এর কোন অনুবাদ কখনোই হয়নি, ঠিক তেমনি “ছোয়দ” ছোয়াদই রয়ে গেছে ৬৮ নম্বর সূরাতে। কোন অনুবাদকই দুঃসাহস দেখাননি ঐগুলোর অর্থ করার। হ্যাঁঁ ব্যাখ্যা দিয়েছেন অনুমান সিদ্ধ ব্যাখ্যা। মহান আল্লাহ্ রাব্বল আলামীনের অনুগ্রহে আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি। দূষণ বা বিকৃতী থেকে স্বীয় পবিত্র বাণী সংরক্ষণের গ্যারেন্টি হিসেবে তাঁর এই গাণিতিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছেন আল্লাহ নিজেই। বিচার বা যাচাই-এর জন্যে এটা একটা সহজ পদ্ধতি—অত্যন্ত সহজ, যা যে কেউ এমন কি একটা শিশুও বুঝতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রখ্যাত টীকাকারগণ এরূপ স্পষ্ট ও অকাট্য ঘটনাসমূহ উপেক্ষা করলেন কিভাবে? জবাবটা সহজ সময়টা-পরিপক্ক ছিল না। ছিল অসময়োপযোগী।
৩৮ নম্বর সূরা সোয়াদ ছাড়াও অন্য আরো দুটো সূরা রয়েছে, অক্ষর সমষ্টির অংশ হিসেবে যেগুলোতে ব্যবহৃত হয়েছে একই সাধারণ বিভাজক। সেগুলো হচ্ছে ৭ ও ১৯ নম্বর সূরা। বিচিত্র অক্ষর বিন্যাস বা ‘মুকাত্তায়াত’ যেখানে একাধিক দৃষ্ট হয়, সেখানে সবগুলো অক্ষরই আমাদের গুণে দেখা উচিত এবং দেখা উচিত তা ১৯-এর গুণীতক কি না! কিন্তু এখানে উল্লেখিত ৩টি সূরার মধ্যে এক অক্ষর বিশিষ্ট ‘মুকাত্তায়াত’ ص “সোয়াদ” এর সাথেই আমরা সম্পৃক্ত; এই ৩টি সূরায় ص “সোয়াদ” এর মোট সংখ্যা হচ্ছে ১৫২। ১৫২ নিঃশেষে বিভাজ্য ১৯ দিয়ে (১৯x৮=১৫২)।
সাধারণ অক্ষর ص
সূরা ৭ — আ'রাফ — ব্যবহৃত অক্ষর ৯৮
সূরা ১৯ — মরিয়ম — ব্যবহৃত অক্ষর ২৬
সূরা ৩৮ — সোয়াদ — ব্যবহৃত অক্ষর ২৮
মোট অক্ষর ১৫২। ১৫২÷১৯= ৮ অর্থাৎ ৮x১৯ =১৫২
عَلَیۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ
এরও উপরে রয়েছে উনিশ
নক্সা-১৩
কিন্তু আপনাদের আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যে একটি মাত্র অক্ষর বিবেচনায় আনতে আদৌ অনুরাগী নন আমাদের গ্রন্থকার। ৭ নম্বর সূরাটি লক্ষ্য করুন, দেখবেন, মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট ৪টি অক্ষর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সেখানে, আর ৫টি রয়েছে ১৯ নম্বর সূরাতে। ৩৮ নম্বর সূরার সাথে এই অক্ষর সমষ্টির মধ্যে তিনি বিবেচনায় আনতে চান পুরো ১০ টি অক্ষরের দশটিকেই। গণনা করুন ওগুলো অথবা উপস্থাপন করুন কপিউটারে; দেখবেন, আশ্চর্যের আর সীমা-পরিসীমা রইবে না আমাদের। এর সবগুলোই কী ছিল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রার্থনার জবাব? সব সময়ই তো তিনি সাগ্রহে প্রার্থনা করেছেন তার প্রভূর কাছে, ‘ইয়া আল্লাহ্ বৃদ্ধি করে দাও আমাদের জ্ঞান। ইয়া আল্লাহ্ প্রসারিত করো আমার ধীশক্তি। ইয়া আল্লাহ্, অনন্ত বিস্ময়ে পরিপূর্ণ করে তোল আমাকে।’
৭ নম্বর সূরা المص “আলিফ” “লাম” “মীম” “সোয়াদ” এ “আলিফ” রয়েছে ২৫২৯ টি ,“লাম” রয়েছে ১৫৩০ টি, “মিম” রয়েছে ১১৬৪ টি আর “সোয়দ” রয়েছে ৯৭টি যার সর্বমোট যোগফল দাঁড়ায় ৫৩২০ অর্থাৎ ১৯x২৮০।
৭৯৮ (১৯x৪২) আলোচ্য সেটটির প্রথম সূরা অর্থাৎ ৭ নম্বর সূরায় মহান আল্লাহর তরফ থেকে আমরা পাই একটি চমকপ্রদ রহস্যময় ইঙ্গিত। ৬৯ নম্বর আয়াত শরীফে بَصۜۡطَة “বাসতাতান” শব্দটি পাঠ করুন, দেখবেন, “বাসতাতান” শব্দটির বানান লেখা রয়েছে “সোয়াদ” দিয়ে কিন্তু ঐ “সোয়াদ” এর ঠিক উপরে রয়েছে ছোট্ট একটা “সিন” আমাদেরকে জানিয়ে দেয় “সোয়াদ” দিয়ে শব্দটি লেখা হলেও অবশ্যই আমরা উচ্চারণ করবো “সিন” এর মতোই। একশ মিলিয়ন আরবী ভাষাভাষীদের মধ্যে অসংখ্য উপভাষায় “বাসতাতান” শব্দটি “সোয়াদ” দিয়ে লেখার কোন নজির দৃষ্ট (নক্সা ১৪ ও ১৫) হয় না।
নবী বললেন, আল্লাহ তাকে তোমাদের জন্যে মনোনীত করেছেন এবং তিনি তাকে জ্ঞানে ও দেহে সমৃদ্ধ করেছেন।
—কুরআন-২: ২৪৭
বানান এই রকম
تطسب
بَسۡطَة ࣰ
সুতরাং শ্রুতি লেখকরা বানানটি জানতেন। “س” বা “ص” যা দিয়েই বানানটি লেখা হোক না কেন। অর্থ কিন্তু থাকছে একই। যেমন দান, প্রদান। ইংরেজিতে Docile বা Doxile কিংবা Circle বা Sircle যাই লেখা হোক অর্থ একই। কিন্তু ৭: ৬৯ আয়াত শরীফে س “সীন” লেখা হতো তাহলে ص “সোয়াদ” -এর সংখ্যা হতো ১৫১
তাই
( عَلَیۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ )
এই সাবধান বাণীটির থাকত না কোন সার্থকতা।
(নক্সা - ১৫)
আরবী একটি উচ্চারণভিত্তিক ভাষা। ইংরেজীর মত উচ্চারণ যেখানে “nife” কিন্তু বানান "knife", উচ্চারণ “Filosofer” কিন্তু বানান Philosopher এর মত করে আমরা উচ্চারণ করি না, যেমন স্পষ্টভাবে আমরা উচ্চারণ করি, বানানও করি ঠিক তেমনিভাবেই। তাহলে بَصۜۡطَة ࣰ শব্দটিতে এই ভিন্নতা কেন?
বর্ণিত আছে যে, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপরোক্ত ৬৯ আয়াত শরীফটি তাঁর শ্রুতি লেখকদের কাছে বলে যাবার সময় যখন بَصۜۡطَة ࣰ শব্দটির কাছে এলেন, তখন তার শব্দটির বানান ص “সোয়াদ” দিয়ে লিখবার জন্যে জিবরাঈল আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক আদিষ্ট হলেছিলেন বলে তাঁদেরকে জানিয়েছিলেন, আর তাই তারা ص সোয়াদ দিয়েই শব্দটির বানান লিখেছিলেন এবং সেই কারণেই ১৪০০ বছর ধরে এই বানানেই লিখিত হয়ে আসছে শব্দটি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শ্রুতি লেখকগণ কী বানানটি জানতেন না? নিশ্চয়ই তারা অবহিত ছিলেন বানানটি; (অনুগ্রহপূর্বক ১৫ নম্বর নক্সাটি দেখুন) এবং ২: ২৪৭ আয়াত শরীফে আপনারা সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাবেন যে এই একই بَسۡطَة ࣰ “বাস্তাতান” শব্দটি س সীন বানানেই লেখা হয়েছে সেখানে। বানানটি যদি সেখানে তাঁরা শুদ্ধ করে লিখতে পারেন তবে ৭: ৬৯ আয়াত শরীফে এই ব্যতিক্রম কেন? আরো শব্দটির বানান س দিয়ে লেখাই হোক অথবা ص দিয়ে, অর্থের কোনই তারতম্য তো হচ্ছে না। সত্য বটে, ইংরেজি “docile" অথবা "doxile" যে বানানে লেখা হোক অর্থ থাকছে একই; অথবা “Circle” শব্দটি “Sircle” দিয়ে লিখলেও কোনই পরিবর্তন হচ্ছে না অর্থে। কিন্তু তাহলে জিবরাঈল আলাইহিস সাল্লাম কেনই বা তাদেরকে বলতে বললেন কোন বানানে লিখতে হবে শব্দটি?
প্রায় সহস্রাধিক বছর ধরে পবিত্র কুরআন কপি করা হতো হাতে লিখে আর এক জনের নিকট থেকে অন্যজনের নিকট করা হতো হস্তান্তর। কুরআন অবতীর্ণ হবার সহস্রাধিক বছর পর্যন্ত কোন ছাপাখানা ছিল না। প্রত্যেক বিজ্ঞ ব্যক্তিই কুরআন মজিদ হাতে লিখে নকল করার সময় ২: ২৪৭ নম্বর আয়াত শরীফের নিকট পৌঁছে আপনা আপনিই بَسۡطَة ࣰ শব্দটির বানান س সীন দিয়েই লিখে গেছেন; ভাষাটি উচ্চারণভিত্তিক বলে বানানের ব্যাপারে কোন প্রচেষ্টাই চালাতে হয়নি। কিন্তু একই নকলকারী ৭: ৬৯ আয়াত শরীফের নিকট পৌঁছে হয়তো নিশ্চয়ই হতচকিত হয়ে পড়তেন শব্দটির “ভুল” (?) বানান দেখে। তাঁর পিতা বা পিতামহ অবনধনতাবশত বানানটি ভুল করে যাননি তো? না, বানানটি পরিবর্তন করার সাহসই তাঁর ছিল না, কারণ আল্লাহর ফিরিশতা জিবরাঈল আলাইহিস্ সালাম এইভাবেই লিখতে নির্দেশ দিয়েছিলেন বানানটি। আর তাই এইভাবেই লিখিত হয়ে আসছে বানানটি। হস্তলিখিত অসংখ্য কপির মধ্যেই একটিতেও সংশোধন করা হয়নি বানানটি; কোন বিজ্ঞ ব্যক্তি যদি স্বাভাবিক প্রবণতাবশতঃ আল্লাহর পবিত্র বাণীর এই শব্দটি সংশোধন করে বসতেন তবে “ص” সোয়াদ চিহ্নিত এটি আদ্যাক্ষর বা মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট সূরায় ১টি “ص” ‘সোয়াদ’ কমে “ص” এর সংখ্যা দাঁড়াতো ১৫১ এবং ১৫১ বিভাজ্য নয় ১৯ দিয়ে।
যিনি তার অসীম শক্তি ও সীমাহীন গুণরাজার পরিচয় প্রদানের জন্যে মোযেজার পর মু'জিযা প্রদর্শন করে নিত্যনিয়ত আমাদেরকে চমৎকৃত করে চলেছেন, সেই মহান গ্রন্থকার, মহাবিশ্বের একচ্ছত্র মহান অধিপতি, সর্বজ্ঞ ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ জাল্লা শানহুর প্রতি অসীম শ্রদ্ধায় আপনার শিরনুনত হয়ে আসে নাকি? বস্তুত তাঁর প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করেছেন তিনি।
আমিই কুরআন অবতীর্ণ করেছি আর আমিই এর রক্ষক-হেফাজতকারী।
— আল কুরআন ১৫: ৯
আল কুরআনের প্রত্যেকটি অধ্যায় বা সূরার শুরুতে যেসব প্রারম্ভিক অক্ষরবিন্যাস বা মুকাত্তায়াত রয়েছে তার সবগুলোতেই অনুসরণ করা হয়েছে একই রকম বিস্ময়কর প্যাটার্ন বা আদর্শ সূরাসমূহে ব্যবহৃত প্রারম্ভিক সংক্ষিপ্ত অক্ষরসমূহ গণনা করে দেখুন এবং সেগুলো ভাগ করু ১৯ দিয়ে; দেখবেন অবিশ্বাস্যভাবে সংখ্যাটি ১৯ এর গুণীতক। কার এমন সময় এবং শক্তি রয়েছে, এই জটিল গাণিতিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করার? নিশ্চয়ই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নয়-ইতিহাসে যিনি ছিলেন একজন অতি ব্যস্ততম মানুষ। এর পরও কি ছিদ্রান্বেষীরা আমাদেরকে বিশ্বাস করাতে তৎপর হবেন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বালির অভ্যন্তরে লুকিয়ে রেখেছিলেন কিছু “কম্পিউটার” যার সাহায্যে তিনি এই জটিল গাণিতিক বন্ধনে বিন্যস্ত করেছিলেন পবিত্র কুরআনকে। আমি এখনি গ্রহণ করতে প্রস্তুত এই কম্পিউটার থিওরী; তবে আবিলতা থেকে আপন গ্রন্থখানিকে রক্ষা করার জন্যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মতো একজন রক্তমাংসের মানুষ এমনি এক অবিচ্ছেদ্য পারস্পরিক জটিল গাণিতিক বন্ধন পদ্ধতি অবলম্বন করবেন—এ বিশ্বাস করা কঠিন বৈকি।
এই নিবন্ধে বিস্ময়কর এই আবিষ্কারের বরফ স্তুপের প্রান্তবর্তী ক্ষুদ্র একটি অংশ আমি স্পর্শ করেছি মাত্র। বিয়ষটি আরো গভীরে যেতে যারা ইচ্ছে পোষণ করেন তাঁদের প্রতি আমার আন্তরিক আবেদন, তাঁরা যেন ইসলামিক টেপ লাইব্রেরী, ৩১৮ সায়ানী সেন্টার ১৬৫ স্রে স্টীট, ডারবান থেকে ডঃ রাশাদ খলিফা পি.এইচ.ডি বিরচিত পুস্তিকা ও টেপ সংগ্রহ করে পাঠ করেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি ডঃ খলিফার কাছে ঋণী এইজন্য যে, তিনিই আমার জ্ঞানচক্ষু উন্মীলনে সহায়তা করেছেন বিষয়টির উপর। নিঃস্বার্থভাবে ইসলামের খেদমত করার জন্য মহান আল্লাহ্ দীর্ঘজীবী করুন তাঁকে।
কিন্তু এই অলৌকিক গাণিতিক আলোচনা ছেড়ে যাবার পূর্বে الم “আলিফ”, “লাম”, “মিম” মুকাত্তায়াত বিশিষ্ট সূরাগুলির উপর আমার শেষ নক্সাটি আপনাদের সমীপে উপস্থাপন করার সুযোগ দিন আমাকে। একশটি কাগজে ছকাংকিত তথ্যটি শুধু কপি করুন আর মিলিয়ে নিন মোট সংখ্যাটি। তারপর স্বতন্ত্রভাবে অক্ষরগুলোর নিরূপিত সংখ্যা বিন্যস্ত করুন বৈদ্যুতিক ইন্দ্রজাল কমপিউটারে-সঙ্গে সঙ্গে আপনি অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন যে, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উপর কি দারুণ অন্যায়ভাবে আরোপিত করা হয়েছে এই বিরাট প্রকৃতির অতি মানবীয় কাজটি।
[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]
( عَلَیۡهَا تِسۡعَةَ عَشَرَ )
এরও উপরে রয়েছে উনিশ
(নক্সাঃ ১৬)
উল্লিখিত ৮টি সূরা ا ل م “আলিফ” “লাম” “মীম”-এর অক্ষর সংখ্যা হচ্ছে ২৬,৬৭৬। ধরা যাক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ২৩টি বছর ধরে গুণে গেছেন এবং এই বিস্ময়কর সংখ্যাটি ভাগ করেছেন তার মনন যন্ত্রে, আর সন্তুষ্ট হয়েছে এখনি যখন সংখ্যটির উত্তর এসেছে ১৯x১৪০৪; কিন্তু এটা অবিশ্বাস্য বৈকি। কিন্তু এর চেয়েও বিস্ময়কর ঘটনা এটাই যে, বিরাট গাণিতিক নৈপুণ্যের কথা তিনি প্রকাশ করেননি কারুর কাছেই—এমন কী তাঁর অন্তরঙ্গ বন্ধু ও সহচর আবু বকর রাজিআল্লাহু আনহুর কাছেও না, তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী বিবি আয়েশা সিদ্দীকা রাদিআল্লাহু আনহার কাছেও না। তাঁর ওফাতের দিন পর্যন্ত তিনি এর জন্য দাবী করেননি কোন কৃতিত্ব। এই নিঃসীয় নীরবতার কোন ব্যাখ্যা কী আপনি দিতে পারেন?
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/16
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।