hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

২০
অধ্যায় তিনঃ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামই পারাক্লেট (Paraclete)
প্রকৃত সত্যকেই যে অন্বেষণ করে তার নিকট হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রকৃতই সেই পারাক্লেট যার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল। পারাক্লেট বা কমফরটার বা সহায় অথবা সান্তনাদাতা যেভাবে সাধু যোহনের গসপেলে বলা হোক না কেন তিনি তাই। পূর্বে বর্ণিত কায়রোর সেই কপটিক খ্রিস্টান মহিলার ন্যায় আরো লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টান মহিলা ও পুরুষ আছেন। যারা এরূপ সহজ সরল বাণীর জন্য ক্ষুধার্ত। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমরা কেবল আমাদের অক্ষমতার জন্য এবং যীশুর জন্য ক্রন্দন করতে পারি।

শস্য প্রচুর বটে, কিন্তু কার্যকারী লোক অল্প।

—মথি (৯: ৩৭)

ঈসা (আ)-এর ভাষা

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ তা'আলা হযরত ঈসা (আ)-এর মুখে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপর নাম দিয়েছেন আহমদ। খ্রিস্টান তর্কবাগিশ বাইবেল নিয়ে যারা চিৎকার করে তারা এ কথাকে হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিতে চায়। তবে খ্রিস্টান মিশনারীরা অস্বীকার করে না যে যীশু তার পরে কোন একজনের আগমনের ভবিষ্যত বাণী করেছেন। কিন্তু আহমদ শব্দটি তাদের মনোপূত নয়।

সাধারণত খ্রিস্টান জগতে ইংরেজি ভাষায় কমফোরটার বলে তাকে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলতে চায় কমফোরটার আসবেন। এতে কিছু আসে যায় না। কমফোরটার অথবা তার পরিবর্তে সমমানের সমার্থবোধক যে-কোন নাম হতে পারে। বাইবেলের কিং জেমস সংস্করণের ইংরেজি অনুবাদ পরীক্ষা করে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

আমরা তাদের প্রশ্ন করতে পারি, যীশু অর্থাৎ ঈসা (আ) কি ইংরেজি ভাষায় কথা বলতেন? নিশ্চয়ই না। যে কোন খ্রিস্টানও আমার সঙ্গে একমত হবেন। একজন আরব খ্রিস্টানকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় যে, তিনি কি আরবি ভাষায় কথা বলতেন? তিনিও বলবেন, না। তিনি কি জুলু ভাষায় কথা বলতেন? তারাও বলবেন, না। আফ্রিকান ভাষায় বাইবেলে কমফোর্টারের পরিবর্তে ট্রুস্টার (Trooster) ব্যবহার করা হয়েছে। যীশু নিশ্চয়ই আফ্রিকানা ভাষায় কথা বলতেন না।

খ্রিস্টানরা বর্তমানে অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে দাবি করে যে তারা সম্পূর্ণ বাইবেল শত শত ভাষায় অনুবাদ করেছে। নিউ টেস্টামেন্ট (বাংলায় নতুন নিয়ম) এবং যেখানে ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে সেই বাইবেল দু'হাজারেরও বেশি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এর অর্থ ইংরেজিতে যে শব্দকে অনুবাদ করে কমফোরটার করা হয়েছে তার দু’হাজার বিভিন্ন ভাষার প্রতিশব্দ আছে।

নিউমাঃ ঘোস্ট বা আত্মা

চার্চের ফাদারদের বড় রোগ হচ্ছে মানুষের নামেরও অনুবাদ করা। মানুষের নামের অনুবাদ করার কোন অধিকার তাদের নেই। যেমন এসাউ-কে করেছে জেসাস, মসিহ হয়েছে খ্রাইস্ট, সেফাস হয়েছে পিটার ইত্যাদি।

খ্রিস্ট ধর্মগ্রন্থে ঈসা (আ) মূল যে শব্দটি উচ্চারণ করেছিলেন তার সবচেয়ে নিকটবর্তী প্রতিশব্দ আমরা পাই গ্রিক শব্দ প্যারাক্লিটাস। সেটিকেও বাতিল করতে হয় কারণ প্রভু যীশু তো গ্রিক ভাষায় কথা বলেননি। যা হোক সেজন্য আলোচনার জন্য বিষয়টিকে কঠিন করার প্রয়োজন নেই। আমরা গ্রীক পারাক্লিটাস ও তার সমান ইংরেজি শব্দ কমফরটার (Comforter)-কে আলোচনার জন্য গ্রহণ করতে পারি।

যে কোন জ্ঞানী খ্রিস্টান ব্যক্তিকে যদি প্রশ্ন করা যায়, যে কমফরটার কে ছিলেন। তিনি জবাবে বলবেন কমফরটর হচ্ছেন হলি ঘোস্ট (যোহন ১৪: ২৬)। এই বাক্যটি বারো নম্বর পঙক্তিমালার অংশ মাত্র। যথাসময়ে আমরা পূর্ণ পঙক্তিমালার আলোচনা করবো। কিন্তু প্রথমে খ্রিস্টানদের মনকে ‘হোলি ঘোস্ট' নামের অপব্যাখ্যা সম্পর্কে প্রস্তুত করিয়ে নিতে হবে। গ্রীক ভাষায় স্পিরিট শব্দের মূল ধাতু নিউমা। নতুন নিয়ম বাইবেলের পাণ্ডুলিপিতে ঘোস্টের জন্য কোন পৃথক শব্দ নেই। খ্রিস্টানরা গর্ব করে বলে তাদের নিকট ২৪,০০০ পাণ্ডুলিপি রয়েছে। সেগুলোর কোন দুটি এক প্রকার নয়।

গ্রিক হতে ইংরেজিতে বাইবেলে অনুবাদ করার সময় কিং জেমস সংস্করণের ও রোমান ক্যাথলিক সংস্করণের উভয়ের অনুবাদক সম্পাদক নিউমা শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে ইংরেজি ‘স্পিরিট’ ও ‘ঘোস্ট’ দুটি শব্দের মধ্যে ‘ঘোস্ট' শব্দকে অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন।

সর্বাধুনিক প্রমিত সংস্করণের বাইবেলের সম্পাদকবৃন্দ দাবি করেন যে তারা পেছন দিকে গিয়ে সবচেয়ে পুরাতন পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করেছেন। তারা বলেন যে, ‘সহযোগী পঞ্চাশ ফেকরার বত্রিশ জন সর্বোচ্চ সম্মানিত পণ্ডিতের সহায়তায় এই কাজ করা হয়েছে। তারা অনেক সাহসিকতার সঙ্গে অস্পষ্ট ঘোস্ট শব্দের পরিবর্তে স্পিরিট শব্দ ব্যবহার করেছেন। অতএব এখন থেকে সকল আধুনিক ইংরেজি বাইবেলে আপনি পাঠ করবেন, কমফরটর যিনি হোলি স্পিরিট'! তথাপি তথাকথিত গোড়া যুদ্ধংদেহী অনেক খ্রিস্টান গোয়ার্তুমি করে সেই পুরাতন ভূতুড়ে শব্দ ‘ঘোস্ট’ আকঁড়ে আছে। তারা আকঁড়ে থাকুক। তারা আধুনিক সংস্করণ গ্রহণ করতে রাজি নয়। তার চেয়ে ভাল আমরা পুরাতন বাইবেল ব্যবহার করি। তাহলে স্পিরিট শব্দ ব্যবহার করলে যা দাঁড়ায় (বাংলা অনুবাদে অবশ্য আত্মা ব্যবহার হয়েছে),

কিন্তু সেই সহায়, পবিত্র আত্মা, যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠাবেন তিনি সকল বিষয়ে তোমাদেরকে শিক্ষা দেবেন, এবং আমি তোমাদেরকে যা যা বলেছি, সে সকল স্মরণ করিয়ে দেবেন।

—যোহন ১৪: ২৬

পবিত্র আত্মা বা হোলি স্পিরিট বা হোলি ঘোস্ট এই বক্তব্য প্রকৃতপক্ষে একই কমফরটরই ভিন্ন নাম বা নামের প্রক্ষেপণ। কথাটি ব্রাকেটের মধ্যে থাকা উচিত ছিল। অবশ্য প্রমিত সংস্করণের সম্পাদকগণ এরূপ অনেক প্রক্ষেপণ বিলোপ করেছেন। এবং সেজন্য তারা গর্বিত। কিন্তু তারা বেখাপ্পা কথাটা রেখে দিয়েছে। তার ফলে ঈসা (আ)-এর স্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার করে যে শব্দ কমফরটর -সেটিকে রেখে দিয়েছে।।

হোলি স্পিরিট বা পবিত্র আত্মাই পবিত্র পয়গম্বর

একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, কোন বাইবেল বিশেষজ্ঞ আজ অবধি মূল গ্রিক বাইবেলের যোহন অধ্যায়ের পারাক্লেটস শব্দের সঙ্গে হোলি ঘোস্ট বা পবিত্র আত্মার সমন্বয় করেনি। এখন আমরা বলতে পারি কমফরটর অর্থ হোলি ঘোস্ট এবং হোলি ঘোস্ট অর্থ হোলি স্পিরিট বা পবিত্র আত্মা। তাহলে পবিত্র আত্মার অর্থ হোলি প্রফেট বা পবিত্র পয়গম্বর।

মুসলমান হিসেবে আমরা স্বীকার করি যে আল্লাহর সকল পয়গম্বরই পবিত্র বা পাপমুক্ত। কিন্তু যখনই মুসলমানদের মধ্যে হোলি প্রফেট বলা হয় তখনই আমরা ধরে নেই তিনি আল্লাহর রসূল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটা বিশ্বস্বীকৃত। বাইবেলে বর্ণিত যীশুর জীবন কাহিনীতে সেই অসঙ্গতিহীন বাক্য -“সেই সহায়, পবিত্র আত্মা-কে আমরা যদি সত্য বলে মেনেও নিই তাহলেও এই ভবিষ্যদ্বাণী হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর ক্ষেত্রে সামান্যতম অর্থের তারতম্য না ঘটিয়ে খাপ খাবে তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

সেই যোহন যাকে বলা হয় যীশুর জীবন কাহিনীর রচয়িতা (যোহন লিখিত সুসমাচার) তিনি বাইবেলের অন্তর্গত আরো তিনটি পত্রের রচয়িতা। আশ্চর্যের বিষয় যে তিনি সেখানে পবিত্র ভাববাদীর (পয়গম্বরের) পরিবর্তে লিখেছেন পবিত্র আত্মা।

প্রিয়তমেরা, তোমরা সব আত্মাকে বিশ্বাস করো না, বরং আত্মা সবার পরীক্ষা করে দেখ, তারা ঈশ্বর হতে কি না; কারণ অনেক ভণ্ড ভাববাদী জগতে বের হয়েছে।

—১ যোহন ৪: ১

লক্ষণীয় বিষয় যে, আত্মা শব্দটি ভাববাদী বা পয়গম্বরের প্রতিশব্দ হিসেবে এখানে ব্যবহৃত হয়েছে। সত্য আত্মা তাহলে সত্য পয়গম্বর বা ভাববাদী এবং ভণ্ড-আত্মা হচ্ছে ভণ্ড ভাববাদী। কিন্তু তখাকথিত পুনর্জন্ম -খ্রিস্টানগণ একমাত্র আবেগের দৃষ্টিতেই সব কিছু দেখে থাকে। তাদের উচিত সি আই কফিল্ড-এর অনুমোদিত কিং জেমস সংস্করণ বাইবেল পাঠ করা। সেখানে সম্পাদনা পরিষদের টীকা ও ভাষ্য রয়েছে। সেটি তাদের পাঠ করা প্রয়োজন। সেখানে তারা দেখবে উপরোক্ত পঙক্তিমালায় আত্মা শব্দটি মথি অধ্যায়ের ৭:১৫ বাক্যের স্পিরিট (Spirit) বা ভাববাদী অর্থ ভণ্ড পয়গম্বর। পবিত্র আত্মা অর্থাৎ পবিত্র ভাববাদী অর্থাৎ পবিত্র পয়গম্বর বা হোলি প্রেফেট। তার অর্থ আল্লাহর বাণী বাহক হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

যথার্থ পরীক্ষা

সাধু যোহন কোটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা অনুধাবন করার জন্য আমাদেরকে শূন্যে ছেড়ে দেননি। তিনি সত্য পয়গম্বর (True prophet) চেনার জন্য আমাদেরকে একটা পরীক্ষা পদ্ধতি দিয়ে গেছেন। তিনি বলেনঃ

এতে তোমরা ঈশ্বরের আত্মাকে জানতে পার; যে কোন আত্মা যীশু খ্রিস্টকে মাংসে আগত বলে স্বীকার করে, সে ঈশ্বর হতে

—১ যোহন (৪: ২)

যোহনের আপন ব্যাখ্যা অনুসারে উপরোক্ত পঙক্তিমালার আত্মা (Spirit) শব্দটি পয়গম্বরের বা ভাববাদীর পয়গম্বর প্রতিশব্দ অথবা একই অর্থবহ শব্দ। অতএব উপরোক্ত ঈশ্বরে আত্মা অর্থ ঈশ্বরের ভাববাদী অর্থাৎ আল্লাহর পয়গম্বর এবং সকল আত্মা অর্থ সকল পয়গম্বর। আপনার জানতে ইচ্ছা করে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসা সম্পর্কে কি বলেন। ‘ঈসা' কমপক্ষে ২৫ বার কুরআন শরীফে উল্লিখিত হয়েছে। তাকে সম্মান করে বলা হয়েছে।

ঈসা ইবনে মরিয়ম (মেরির পুত্র ঈসা)

আন্নবী (পয়গম্বর)

আস সালেহীন (সঠিক)

কালিমাতুল্লাহ (আল্লাহর বাণীবাহক)

রূহুল্লাহ (স্রষ্টার আত্মা)

মসিহউল্লাহ (আল্লাহ কর্তৃক, প্রেরিত মসীহ)

( إِذۡ قَالَتِ ٱلۡمَلَـٰۤىِٕكَةُ یَـٰمَرۡیَمُ إِنَّ ٱللَّهَ یُبَشِّرُكِ بِكَلِمَة مِّنۡهُ ٱسۡمُهُ ٱلۡمَسِیحُ عِیسَى ٱبۡنُ مَرۡیَمَ وَجِیه ا فِی ٱلدُّنۡیَا وَٱلۡـَٔاخِرَةِ وَمِنَ ٱلۡمُقَرَّبِینَ )

স্মরণ কর, যখন ফেরেশতারা বলল ‘হে মরিয়ম! আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ হতে একটি কালেমার সুসংবাদ দিয়েছেন। তার নাম মসীহ মরিয়াম তনয় ‘ঈসা’, সে ইহলোক ও পরলোকে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হবে।

—কুরআন ৩: ৪৫

অন্যজন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম

যোহন ১৪: ২৬-এ যে সহায়-এর কথা বলা হয়েছে তিনি কখনই হোলি ঘোস্ট বা পবিত্র আত্মা হতে পারেন না কারণ যীশু বলেনঃ

আর আমি পিতার নিকটে নিবেদন করব, এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদেরকে দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।

—যোহন ১৪: ১৬

এখানে জোর দেওয়া হয়েছে ‘আর এক’-এর উপর। অন্য একজন, ভিন্ন একজন কিন্তু একই প্রকৃতির, তথাপি প্রথম জন অপেক্ষা ভিন্ন, স্পষ্টরূপে ভিন্ন তাহলে প্রথম সহায় কে? খ্রিস্টান জগত সর্বসম্মতিক্রমে বলে থাকে যে তিনি বক্তা অর্থাৎ যীশু খ্রিস্ট প্রথম সহায়। তারপর একজন যিনি পরে আসবেন, তারও ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ক্লান্তি ও মৃত্যু থাকবে।

কিন্তু এই প্রতিশ্রুত সহায় চিরকাল তোমাদের সাথে থাকবে না। কেউই চিরকাল জীবিত থাকে না। হযরত ঈসা (আ) মরণশীল ছিলেন। অতএব যে সহায় (পয়গম্বর) পরবর্তীকালে আসবেন তিনিও মরণশীল হবেন।

( كُلُّ نَفۡس ذَاۤىِٕقَةُ ٱلۡمَوۡتِ )

জীবমাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে।

—কুরআন ৩: ১৮৫

তাঁদের শিক্ষার মধ্যেই তারা জীবিত

প্রকৃতপক্ষে আত্মার মৃত্যু নেই। দৈহিক মৃত্যুর পর আত্মা যখন শরীর হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন আত্মাও মৃত্যুর স্বাদ লাভ করে। কিন্তু আমাদের সহায়কে চিরকাল থাকতে হবে, আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। সকল সহায়কে অর্থাৎ সকল পয়গম্বর চিরকাল আমাদের সাথে রয়েছেন। মূসা (আ) তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে আজও আমাদের মধ্যে রয়েছেন। ঈসা (আ) তার শিক্ষার মাধ্যমে আজও আমাদের মধ্যে রয়েছেন, তেমনি মুহাম্মদ (সা) তাঁর শিক্ষার মাধ্যমে আজও আমাদের মাঝে জীবিত রয়েছেন। এটা আমার কোন অযৌক্তিক বিষয়কে ন্যায্যতা প্রতিপাদন করার নতুন কোন প্রচেষ্টা নয়। আমি এ কথা বলছি দৃঢ় বিশ্বাস থেকে এবং ঈসা (আ) সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে।

নতুন নিয়ম বাইবেলের ১৬ অধ্যায় লুক অধ্যায়ে ঈসা (আ) ধনী ও গরীব সম্পর্কে একটা কাহিনী বলেছেন। মৃত্যুর পর তারা দেখল একজন বেহেশতে আরেকজন দোযখে। ধনী দোযখের ফুটন্ত আগুনের মধ্যে থেকে চিৎকার করে পিতা ইবরাহীমকে অনুরোধ করছে দরিদ্র ভিক্ষুকের তৃষ্ণা প্রশমনের জন্য তার নিকট পাঠিয়ে দিতে। কিন্তু অনুরোধই যখন কার্যকর হল না তখন সে শেষ অনুরোধ হিসাবে পিতা ইবরাহীমকে বললো তিনি যেন দরিদ্র ভিক্ষুককে পৃথিবীতে ফেরত পাঠিয়ে দেন, যাতে তারা যদি আল্লাহর সাবধানবাণী গ্রাহ্য না করে তাহলে যে অবশ্যম্ভাবী ভয়াবহ পরিণতি সে সম্পর্কে তার ভাইদেরকে সাবধান করতে পারে।

কিন্তু তিনি বললেন, তারা যদি মোশির ও ভাববাদিগণের না শুনে, তবে মৃতগণের মধ্য হতে কেউ উঠলেও তারা মানবে না।

- লুক ১৬: ৩১

হযরত ঈসা (আ) উপরোক্ত কথাগুলো বলেছিলেন ইসরাইলী বা ইহুদীদের পয়গম্বর জেরেমিয়া, হোসিয়া, জাকারিয়া প্রমুখের কয়েকশত বছর পর এবং মূসা (আ)-এর ১৩শ বছর পর।

হযরত মূসা ও অন্যান্য পয়গম্বরদের বাণী হযরত ঈসা (আ)-এর সময়েই সেই সকল আচারনিষ্ঠ সম্প্রদায় শুনতে পেয়েছিল এবং আজও আমরা শুনতে পাই, কারণ তাদের শিক্ষার মাধ্যমে তাঁরা আমাদের মাঝে বসবাস করছেন এবং আজও তারা জীবন্ত।

সেই সময়ের ‘আপনি’

বলা হয়ে থাকে যে ঈসা (আ)-এর সরাসরি অনুসারীদেরকে সহায় পয়গম্বর সম্পর্কে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। ছয়শ’ বৎসরের পরবর্তী কালের মানুষকে নয়।

এবং তিনি আর এক সহায় তোমাদিগকে দেবেন, যেন তিনি চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকেন।

—যোহন ১৪: ১৬

আশ্চর্যের বিষয়, খ্রিস্টানগণ পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকে আরম্ভ করে এই ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নকে যুক্তি দিয়ে দাঁড় করতে কোন প্রকার কষ্ট বোধ করে না এবং প্রায় হাজার বছর পর যখন পিটার ইহুদীদের প্রতি তার দ্বিতীয় ভাষণে তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিলেনঃ

মোশি ত বলেছিলেন, “প্রভু ঈশ্বর তোমাদের জন্য তোমাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে আমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করবেন, তিনি তোমাদেরকে যা যা বলবেন, সেই সমস্ত বিষয়ে তোমরা কথা বলবে।”

- ৩: ২২

এই সকল ‘ওহে’, ‘তুমি’ ‘তোমরা’ শব্দগুলো রয়েছে দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ অধ্যায় পুস্তকে যখন মূসা (আ) তাঁর জনগণকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। তেরশ বছর পর পিটারের সময় এবং ইহুদীদেরকে উদ্দেশ্য করে নয়। গসপেল (যীশুর জীবন কথা) লেখকগণ সেই সমঝোতামূলক শব্দগুলো তাদের প্রভুর মুখে দিয়েছে যার বাস্তবায়নের জন্য তারা দুই হাজার বছর ধরে প্রার্থনা করছে। একটি উদাহরণ যথেষ্টঃ

আর তারা যখন তোমাদেরকে এক নগরে তাড়না করবে, তখন অন্য নগরে পলায়ন করো, কেননা আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, ইস্রায়েলের সকল নগরে তোমাদের কার্য শেষ হবে না, যে পর্যন্ত মনুষ্যপুত্র না আসেন।

– মথি ১০: ২৩

মেঘমালা অভিবীক্ষণ

নির্যাতনের ভয়ে নিঃসঙ্গ অবস্থায় মসিহের প্রথম অনুসারিগণকে চিরকাল পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। তাঁরা এক নগর থেকে ইসরাইলের আরেক নগরে গিয়েছেন। তাঁরা হযরত ঈসা (আ)-এর দ্বিতীয় আগমনের অপেক্ষায় আকাশের প্রতিটি ঘন মেঘ অভিবীক্ষণ করেছে। তবুও এই মিশনারীরা অপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণীর জন্য হাজার বছরে কোন বৈসাদৃশ্য দেখেনি। কিন্তু মহান আল্লাহ্ তা'আলা “পারাক্লেটসের” আগমনের জন্য তাদেরকে এক-চতুর্থাংশ সময়ও অপেক্ষমাণ রাখেননি; পারাক্লেটস অর্থাৎ কমফর্টার অথবা আহম্মদ যার আরেক নাম প্রশংসিত তাদের উচিত এই সর্বশেষ এবং চূড়ান্ত আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মেনে নেওয়া এবং আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করা।

সহায়-এর আগমন শর্তাধীন

সহায় নিশ্চয় পবিত্র আত্মা নন, কারণ সহায়ের প্রতিশ্রুত পয়গম্বর আগমন ছিল শর্তযুক্ত। অথচ ভবিষ্যদ্বাণীতে আমরা লক্ষ্য করি পবিত্র আত্মার আগমন শর্তযুক্ত নয়।

তথাপি আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকট আসবেন না; কিন্তু যদি যাই, তবে তোমাদের নিকট তাকে পাঠিয়ে দেব।

— যোহন ১৬: ৭

আমি যদি না যাই তিনি আসবেন না। কিন্তু যদি আমি যাই আমি তাকে পাঠিয়ে দেব। পবিত্র বাইবেলে মসিহের জন্মের পূর্বে এবং তাঁর অন্তর্ধানের পরে অসংখ্যবার পবিত্র আত্মার আসা-যাওয়ার উল্লেখ আছে। অনুগ্রহপূর্বক সেগুলো বাইবেলে দেখতে পারেন।

খ্রিস্টের জন্মের পূর্বে

১. ... “আর সে তার মাতার গর্ভ হতেই পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হবে।

— লূক ১: ১৫

২. .. “আর ইলিশাবেৎ (এলিজাবেথ) পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হবেন।”

— লূক ১: ৪১

৩. ...আর তার পিতা সকরিয় (জাকারিয়া) পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হবেন।”

— লূক ১: ৬৭

খ্রিস্টের জন্মের পরে

৪. ... “আর পবিত্র আত্মা তার উপরে ছিলেন।”

– লূক ২: ২৫

৫. “এর পবিত্র আত্মা দৈহিক আকারে কপোতের ন্যায় তার উপরে নেমে আসলেন।”

— লূক ৩: ২২

মনে হয় লুক পবিত্র আত্মা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। খ্রিস্টের জন্মের পূর্বের ও পরের উপরোক্ত উদ্ধৃতিগুলোর জন্য লূককে প্রশংসা না করে পারা যায় না। আমরা খ্রিস্টানদেরকে প্রশ্ন করতে পারি কবুতরের নেমে আসার পর হযরত ঈসা (আ) কার সাহায্যে অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন যদি না সেগুলো পবিত্র আত্মার সহায়তায় হয়ে থাকে? প্রভু নিজেই আমাদেরকে কি বলেছেন দেখা যাক। যখন তার নিজের লোকেরা অর্থাৎ ইহুদীরা তাঁকে অভিযুক্ত করে বলেছিল তিনি বীলযেবাব (শয়তানের সর্দার) এর সহযোগিতায় তার অলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন, তখন ঈসা (আ) তাদেরকে প্রশ্ন করেছিলেন “কেমন করে শয়তান শয়তানকে তাড়াতে পারে?’ ইহুদীরা দোষারোপ করে যে এই পবিত্র আত্মা-আল্লাহর আত্মা যা তাকে সাহায্য করেছিল। সে ছিল শয়তান প্রকৃতির। এ তো চরম বেয়াদবি! তাই তিনি তাদেরকে চরম সাবধান করেছিলেনঃ

কিন্তু পবিত্র আত্মার নিন্দার ক্ষমা হবে না।

– মথি ১২: ৩১

প্রভু কথা বলার পূর্বে মথি নিজেই তিনটি পঙক্তিতে পবিত্র আত্মা সম্পর্কে বলেন,

“কিন্তু আমি যদি ঈশ্বরের আত্মার দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে।”

— মথি ১২: ২৮

তুলনা করা যায়, এই একই বক্তব্য আরেকজন গসপেল রচয়িতার ভাষায়ঃ

কিন্তু যদি আমি ঈশ্বরের অঙ্গুলি দ্বারা ভূত ছাড়াই, তবে ঈশ্বরের রাজ্য তোমাদের কাছে এসে পড়েছে।

– লূক ১১: ২০

এই বক্তব্য অনুধাবন করার জন্য আপনাকে বাইবেল বিশেষজ্ঞ হতে হবে না।

ক. ঈশ্বরের আঙ্গুল খ. ঈশ্বরের আত্মা গ, পবিত্র আত্মা। এই সবগুলো কথাই একই অর্থ বহন করে। অর্থাৎ পবিত্র আত্মা ঈসা (আ)-কে সাহায্য করেছিল এবং এই পবিত্র আত্মা তাঁর শিষ্যদেরকে প্রচার কার্যে এবং রোগ নিরাময় কার্যে সাহায্য করেছিল। পবিত্র আত্মার কার্য সম্পর্কে আপনার মনে যদি কোন সন্দেহ থাকে তাহলে পাঠ করুনঃ

শূন্যগর্ভ প্রতিশ্রুতি

“পিতা যেমন আমাকে প্রেরণ করেছেন, তেমনি আমিও তোমাদেরকে (যীশুর শিষ্য) পাঠাই, একথা বলে তিনি তাদের উপরে ফু দিলেন, আর তাদেরকে বললেন, পবিত্র আত্মা গ্রহণ কর।”

— যোহন ২০: ২১-২২।

নিশ্চয়ই এটা কোন শূন্যগর্ভ প্রতিশ্রুতি ছিল না। শিষ্যরা নিশ্চয়ই পবিত্র আত্মার নিকট হতে উপহার লাভ করেছিল। তাই যদি হয় তাহলে পবিত্র আত্মা যাদের সঙ্গে ছিলেন তারাঃ (১) জন দি বাপ্তিস্ত (২) এলিজাবেথ (৩) জাকারিয়া (৪) সায়মন (৫) যীশু এবং (৬) যীশুর শিষ্যগণ। তাহলে “আমি যদি না যাই সহায় তোমাদের মধ্যে আসবে না” -এই কথা অর্থহীন হয়। অতএব সহায় পবিত্র আত্মা নয়।।

যোহন ১৬: ৭ পঙক্তিমালাই আমাদের আলোচ্য বিষয়। ফেরাউনের দেশে যখন আমি আরবি ভাষায় সেই কপটির খ্রিস্টান মহিলার নিকট উদ্ধৃতি দিচ্ছিলাম তখন আমার ভীষণ আনন্দ লাগছিল। আসলে বাইবেলের পঙক্তিগুলো যখন অন্যান্য স্থানীয় ভাষায় পাঠ করা যায় অথবা ব্যাখ্যা করা যায় তখন প্রচণ্ড আনন্দ লাগে। আমি প্রায়ই এক ডজন বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় এটা করেছি, আপনাদেরও উচিত ইসলামের মঙ্গলের জন্য অনুরূপ দুই একটি পঙক্তি স্থানীয় ভাষায় মুখস্থ করা।

‘আফ্রিকান’ এক চমৎকার ভাষা

আমি যত ভাষায় বাইবেলের এই সকল পঙক্তি মুখস্থ করেছি তার মধ্যে আফ্রিকান ভাষায় মুখস্থ করে সবচেয়ে বেশি আনন্দ ও উপকার লাভ করেছি। এই ভাষাটি দক্ষিণ আফ্রিকার শাসকগোষ্ঠীর ভাষা। এটি বিশ্বের সবচেয়ে নবীণ ভাষা। এর একটি বৈশিষ্ট্য আছে। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক ভাষাতেই কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। আফ্রিকান ভাষা নিজেই একটি শ্রেণী। ঘটনাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার মুসলমান জনগণের অর্ধেকের মাতৃভাষা আফ্রিকান। এরা যুদ্ধবন্দী হিসেবে এখানে এসে খ্রিস্টান কর্তৃক ক্রীতদাস হয়েছিল। সেটি হয়েছিল পারিপার্শ্বিক ঘটনার চাপে। তাদের উপকারের জন্য সেই ভাষায় একটি পঙক্তি এখানে দিলামঃ

[এখানে হার্ড কপি বইয়ে ছবি ছিল]

তথাপি আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি। আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকট আসবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকট তাকে পাঠিয়ে দেব।

আফ্রিকানা ভাষায় এখানে চারবার নাই (Nie) শব্দটি ব্যবহার হয়েছে। নাই শব্দটি হ্যাঁ-বাচক অর্থে ব্যবহার হয়েছে। বলা হচ্ছে সহায় (Trooster) -এর আগমন অবশ্যম্ভাবীভাবে যীশুর গমনের উপর নির্ভরশীল। আফ্রিকান ভাষার এই পঙক্তিটি আমার অনেক দুয়ার খুলে দিয়েছে, আবার ‘সহায় পবিত্র আত্মা’ এই ধারণার দুয়ার বন্ধ করে দিয়েছে।

অনুপযুক্ত শিষ্য

এখন আমরা বাইবেলের ১৬ অধ্যায় যোহনের চারটি সবচেয়ে ব্যাপক অর্থবোধক পঙক্তি নিয়ে আলোচনা করব যেখানে যীশুর উত্তরসূরি সম্পর্কিত ধাঁধার সমাধান রয়েছে। কারণ তিনি সত্যই বলেছেনঃ

তোমাদিগকে বলিবার আমার আরও অনেক কথা আছে, কিন্তু তোমরা এখন সেসকল সহ্য করিতে পার না।

– যোহন ১৬: ১২

উপরের ‘আরও অনেক কথা আছে' এই কথাটির সঙ্গে যোহন ১৬: ১৩ পঙক্তি তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইয়া যাবেন সংযুক্ত করে পরে আলোচনা করা হবে। এখন ‘তোমরা সে সকল সহ্য করিতে পার না' এই অংশটুকু আলোচনা করছি।

এই অংশটুকু অর্থাৎ ‘তোমরা এখন সেই সকল সহ্য করিতে পার না। নতুন নিয়ম গ্রন্থে বিভিন্ন পৃষ্ঠায় বারংবার এসেছে।

তিনি তাদেরকে বললেন, হে অবিশ্বাসীরা, কেন ভীরু হও?

—মথি ৮: ২৬

আর তাকে বললেন, হে অল্পবিশ্বাসী, কেন সন্দেহ করলে?

—মথি ১৪: ৩১

তা বুঝে যীশু বললেন, হে অল্পবিশ্বাসীরা,....... কেন পরস্পর তর্ক করছ?

—মথি ১৬: ৮

তাদেরকে বললেন, তোমাদের বিশ্বাস কোথায়?

—লূক ৮: ২৫

এখানে মনে রাখতে হবে এইগুলি ইহুদীদের উপর তাদের ইতস্তত ভাবের জন্য। হযরত ঈসা (আ)-এর অভিযোগ নয় বরং এইগুলি তার নিজের আপন শিষ্যদের জন্য। শিষ্যদের নিকট বিষয়কে অত্যন্ত সহজ সরল করার জন্য তিনি শিশুর পর্যায়ে নেমে এসেছিলেন। তিনি নেমে এসেছিলেন শেষ পর্যায়ে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হতাশ হয়ে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিনি বললেন, তোমরাও কি এখন পর্যন্ত অবোধ রয়েছ?

— মথি ১৫: ১৬

এবং যখন তাকে ধৈর্যের শেষ সীমায় নিয়ে যাওয়া হলো তিনি তখন তার শিষ্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সুরে বললেন -

হে অবিশ্বাসী ও বিপদগামী বংশ, কতকাল আমি তোমাদের নিকটে থাকব ও তোমাদের প্রতি সহিষ্ণুতা করব?

– লুক ৯: ৪১

তার আপন পরিজন তাকে উন্মাদ ভেবেছিলেন

হযরত ঈসা (আ) যদি ইহুদী না হয়ে জাপানী হতেন তাহলে হয়তো হাসতে হাসতে সম্মানের সঙ্গে হারিকিরি করে আত্মহত্যা করতেন। দুঃখের বিষয় আল্লাহর রাসূলদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে দুর্ভাগা তার আপন পরিবার-পরিজন তাকে অবিশ্বাস করেছিল। (যোহন ৭:৫)। প্রকৃতপক্ষে তারা এতদূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন যে তাকে উন্মাদ বলে বন্দী করতেও চেয়েছিল।

এটা শুনে তার আত্মীয়রা তাকে ধরে নিতে বের হল। কেননা তারা বলল, সে হতজ্ঞান হয়েছে।

—মার্ক ৩: ২১

হযরত ঈসা (আ)-এর আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুজনের মধ্যে কে বা কারা তার জ্ঞান নিয়ে চিন্তিত ছিল? শ্রদ্ধেয় ডুমেলো এম.এ. তার বাইবেল সম্পর্কে ভাষ্য এক খণ্ডের গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ৭২৬) বলেনঃ

মনে হয় তারা তার মা, ভাই ....তার পরিবার বলেছিল, “সে নিজের মধ্যে নেই।” অর্থাৎ তার মাথার ঠিক নেই। ইহুদীদের আইনি ব্যাখ্যাদাতারা বলেছিল, “তাকে শয়তানে ধরেছে”। অবশ্য তার অর্থ এই নয় তার পরিবার ব্যাখ্যাদাতাদের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত ছিল। তাদের ধারণা ছিল যে তার মন অস্থির এবং তাকে বিশ্রামে রাখা প্রয়োজন।”

যীশু-তার স্বজাতি কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত

সেটাই ছিল হযরত ঈসা (আ)-এর আত্মীয়-স্বজনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তাহলে তার স্বজাতি ইহুদীরা কি করল? তিনি যখন এত সুন্দর বাণী প্রচার করলেন, অলৌকিক কাণ্ড করে দেখালেন, তারপর তারা কি করল? তার শিষ্য কোমলভাবে বললেনঃ

তিনি নিজ অধিকারে এলেন আর যারা তাঁর নিজের, তারা তাকে গ্রহণ করল না।

– যোহন ১: ১১

প্রকৃতপক্ষে তার “আপনজনেরা তাকে ব্যঙ্গ করেছে, গালি দিয়েছে নিদারুণভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন কি ক্রুশবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছে। খ্রিস্টানরা দুই হাজার বছরের অত্যাচার ও নির্যাতন সত্ত্বেও আবার বর্তমানে তাদের প্রতি অসাধারণ ভালবাসা তাদের নিজের বিবেককে দাসত্বে পরিণত করেছে। ইহুদীরা কখনই যীশুকে তাদের মুক্তিদাতা, তাদের রক্ষক, তাদের ঈশ্বর, কোনভাবেই তাকে গ্রহণ করতে পারে না। তাদের ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা বলে,

“যে কোন ইহুদী অপর ইহুদীকে ঈশ্বর বলে মানতে পারে না।”

একমাত্র ইসলামের মধ্যেই ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান সকলেই একত্রিত হতে পারে। সবাই বিশ্বাস করতে পারে সত্যিকার অর্থে তিনি যা ছিলেন তাই আল্লাহর অন্যতম প্রধান রাসূল এবং না তিনি ঈশ্বর, না ঈশ্বর পুত্র।

শিষ্যরা তাকে পরিত্যাগ করেছে

তিনি যাদেরকে তার ‘মা এবং ভাইয়েরা” (মার্ক ৩: ৩৪) বলতেন সেই বারজন বাছাই করা শিষ্য, যখন তিনি তাদের আহবান করলেন তখন তাদের কি প্রতিক্রিয়া হল? প্রফেসর মোমেরি বলেনঃ

“তাঁর সর্বাধিক নিকটবর্তী শিষ্যগণ তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর কাজ সম্পর্কে সর্বদা ভুল বুঝেছে। তারা চাইত তিনি আকাশ থেকে আগুন নিয়ে আসবেন, তারা চাইত তিনি নিজেকে ইহুদীদের রাজা বলে ঘোষণা করবেন। তাঁর রাজত্বে একজন তাঁর ডান হাতে বসবে আরেকজন তাঁর বাঁ হাতে বসবে। তারা চাইত তিনি তাদেরকে পিতা দেখাবেন, ঈশ্বরকে দেখাবেন, তারা যেন শারীরিক চোখ দিয়ে ঈশ্বরকে দেখতে পায়, তারা কি না চাইত, তারা চাইত তিনি সব কিছু করে দিন, তারা সব কিছু করতে পারুক, যা কিছুসব, অথচ যা মহা পরিকল্পনায় অসম্ভব। এমনিভাবেই তারা শেষ অবধি তাঁর সঙ্গে ব্যবহার করেছে এবং যখন শেষ সময় এলো তারা সবাই তাকে পরিত্যাগ করল এবং পালালো।” (স্পিরিট অব ইসলাম, পৃষ্ঠা ৩১)

সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক, আপন শিষ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে হযরত ঈসা (আ)-এর নিজের কোন পছন্দ ছিল না। তারা তাকে পরিত্যাগ করেছে, এমনভাবে এর আগে কোন পয়গম্বরকে তার শিষ্যরা পরিত্যাগ করেনি। এজন্য তাকে দোষ দেওয়া যায় না। তিনি কেঁদে ফেলেছেন, বলেছেন- “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্বল।' – (মথি ২৬: ৪১) সত্যি কথা বলতে, এটা কোন মাটি নয়, যা দিয়ে নতুন আদম তৈরি হবে। তিনি তার দায়িত্ব উত্তরাধিকারীর নিকট দিয়ে গেছেন যাকে তিনি বলেছেন সততার আত্মা। অর্থাৎ সততার পয়গম্বর, ন্যায় আচরণের পয়গম্বর।

আত্মা এবং পয়গম্বর একই শব্দের একই অর্থবহ প্রতিশব্দ

পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসবেন তখন পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে সত্য নিয়ে যাবেন।

– যোহন ১৬:১৩

ইতিমধ্যে বাইবেলের ভাষায় এ কথা প্রমাণিত হয়েছে যে ‘আত্মা’ শব্দটি একই লেখক কর্তৃক পয়গম্বরের পরিবর্তে প্রতিশব্দ হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে। (দ্রষ্টব্য ১ যোহন ৪: ১)। তাহলে সত্য আত্মা অর্থ সত্য ‘পয়গম্বর, যে পয়গম্বর’ সত্যের মূর্ত প্রকাশ। তিনি সারাজীবন এমন সম্মানের সাথে, এমন পরিশ্রমের সাথে জীবন যাপন করেছেন যে তার বর্বর দেশবাসী পর্যন্ত তাকে সম্মানিত উপাধি দিয়েছিল আস্ সিদ্দিক- বিশ্বস্ত, আল আমিন -সত্যবাদী। তিনি এমন ব্যক্তি ছিলেন যার কথার বরখেলাফ কোনদিনই হয়নি। তার জীবন, তার ব্যক্তিত্ব এবং তার শিক্ষা সবকিছু প্রমাণ করে যে তিনি সত্যের প্রতিমূতি, মূর্ত সত্য। —দি স্পিরিট অব ট্রুথ।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন