hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

১৮
হযরত মুহাম্মদ (সা) হযরত ঈসা (আ)-এর স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী অধ্যায় এক
( وَمُبَشِّرَۢا بِرَسُول یَأۡتِی مِنۢ بَعۡدِی ٱسۡمُهُۥۤ أَحۡمَدُۖ )

এবং আমার পরে আহম্মদ নামে যে রাসূল আসিবে আমি তাহার সুসংবাদদাতা

– কুরআন ৬১: ৬

বহুমাত্রিক উত্তরাধিকার

উত্তরাধিকার বহুবিধ হতে পারে যেমন, ইহুদী আইনে উত্তরাধিকার প্রথম সন্তানের জন্মগত অধিকার; অথবা জ্যেষ্ঠ পুত্র বা কন্যার সিংহাসনে আরোহণের উত্তরাধিকার। অথবা একজন প্রার্থীকে অধিকাংশের ভোটে নির্বাচন; অথবা ধর্মীয়ভাবে স্রষ্টার পছন্দ মত তার নির্দেশে বার্তাবাহকের নিয়োগপ্রাপ্তি। যেমন ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা অথবা মুহাম্মদ (সকলের উপর আল্লাহর শান্তি ও করুণা বর্ষিত হোক) এদের সকলের আহ্বান। তাঁরা সকলেই দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। হযরত ঈসা (আ)-এর উত্তরাধিকারী হবার বহুমুখী দাবি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রয়েছেঃ

১. সময়ানুক্রমিকভাবে ঐতিহাসিক দিক থেকে ঘটনা পরম্পরা হিসেবে।

২. আল্লাহ্ কর্তৃক নির্বাচিত হয়ে।

৩. তার পূর্বসূরীগণের ভবিষ্যদ্বাণীকে পরিপূর্ণতা দানকারী হিসেবে।

৪. স্রষ্টার পথনির্দেশকে পরিপূর্ণতায় আনয়নের দ্বারা কারণ ‘তিনি পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে সত্যের পথে নিয়ে যাবেন।” (যীশু)

ঐতিহাসিকভাবে

হযরত মূসা (আ)-এর ১৩০০ বছর পর হযরত ঈসা (আ)-এর আগমন এবং তাঁর ছয় শতাব্দী পরে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর শূন্য স্থান পূর্ণ করার জন্য পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন।

১ম হস্তীবর্ষের ১২ই রবিউল আউয়াল, ২৯ আগস্ট ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র মক্কা নগরীতে বর্বর আরব জাতির মধ্যে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর গোত্রের লোকেরা তাঁর জন্মসাল হস্তীবর্ষকে স্মরণে রেখেছিল কারণ, শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্মের দুই মাস পূর্বে ইয়েমেনে নিযুক্ত আবিসিনিয়ার রাজপ্রতিনিধি আবরাহা আল আশরাম বিশাল সৈন্যবাহিনীর অগ্রভাগে এক বিরাট হাতির পিঠে আরোহণ করে পবিত্র কাবা শরীফ আক্রমণ করতে আসে। এই ভয়াবহ দৃশ্য, তদুপরি সেই আক্রমণের অধিকতর ভয়াবহ পরিণতি তাদের স্মৃতি থেকে সহজে মুছে যাবার নয়। অলৌকিকভাবে আবরাহা ও তার বাহিনী ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। এ বর্ণনা সূরা ফীলে রয়েছে।

( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ أَلَمۡ تَرَ كَیۡفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِأَصۡحَـٰبِ ٱلۡفِیلِ ۝ أَلَمۡ یَجۡعَلۡ كَیۡدَهُمۡ فِی تَضۡلِیل ۝ وَأَرۡسَلَ عَلَیۡهِمۡ طَیۡرًا أَبَابِیلَ ۝ تَرۡمِیهِم بِحِجَارَة مِّن سِجِّیل ۝ فَجَعَلَهُمۡ كَعَصۡف مَّأۡكُولِۭ )

তুমি কি দেখনি তোমার প্রতিপালক হস্তী -অধিপতিদের প্রতি কী করে ছিলেন? তিনি কি তাদের কৌশল ব্যর্থ করে দেননি? তাদের বিরুদ্ধে তিনি ঝাঁকে ঝাঁকে পক্ষী প্রেরণ করেন, যারা তাদের উপর প্রস্তর-কংকর নিক্ষেপ করে। অতঃপর তিনি তাদেরকে ভক্ষিত তৃণ সদৃশ করেন।

— কুরআন ১০৫: ১-৫

আল্লাহর মানদণ্ড

মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাঁর নিজের ইচ্ছামতো বার্তাবাহক নির্বাচন করেন।

তিনি তার নিজস্ব মানদণ্ডের ভিত্তিতে সে কাজ সম্পন্ন করেন। সেই মানদণ্ড সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নাও থাকতে পারে। এই অস্বাভাবিকতার জন্য সাধু পল ক্রন্দন করেছেনঃ

কেননা ইহুদীরা চিহ্ন চায় এবং গ্রিকেরা জ্ঞানের অন্বেষণ করে।

—১ করিন্থিয়ান ১: ২২

কিন্তু পার্থিব জ্ঞানে জ্ঞানী পল অনুধাবন করলেন যে ইহুদীদের নিকট তার জ্ঞান ‘এক অনতিক্রম্য পর্বত’ এবং গ্রিকদের নিকট নিছক ‘মূর্খতা’।

আল্লাহ্ হযরত মূসা (আ)-কে বেছে নিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ছিলেন পলায়নপর ও তোতলা। বাইবেলে তাকে বলা হয়েছে ‘অচ্ছিন্নত্বক ওষ্ঠ’ বিশিষ্ট একজন মানুষ।

সকল প্রকার অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও তাকে যখন পৃথিবীর নৃশংসতম জালিম ফেরআউনের সম্মুখীন হতে বলা হলো, তখন তিনি আল্লাহর নিকট করুণা প্রার্থনা করে বললেন,

( قَالَ رَبِّ ٱشۡرَحۡ لِی صَدۡرِی ۝ وَیَسِّرۡ لِیۤ أَمۡرِی ۝ وَٱحۡلُلۡ عُقۡدَة مِّن لِّسَانِی ۝ یَفۡقَهُوا۟ قَوۡلِی ۝ وَٱجۡعَل لِّی وَزِیر ا مِّنۡ أَهۡلِی ۝ هَـٰرُونَ أَخِی ۝ ٱشۡدُدۡ بِهِۦۤ أَزۡرِی ۝ وَأَشۡرِكۡهُ فِیۤ أَمۡرِی ۝ كَیۡ نُسَبِّحَكَ كَثِیر ا ۝ وَنَذۡكُرَكَ كَثِیرًا ۝ إِنَّكَ كُنتَ بِنَا بَصِیر ا ۝ قَالَ قَدۡ أُوتِیتَ سُؤۡلَكَ یَـٰمُوسَىٰ )

মূসা বলিল, হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার কর্ম সহজ করে দাও। আমার জিহবার জড়তা দূর করে দাও, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে। আমার জন্য করে দাও একজন সাহায্যকারী আমার স্বজনদের মধ্য হতে আমার ভাই হারূনকে; এর দ্বারা আমার শক্তি সুদৃঢ় কর ও তাকে আমার কর্মের অংশীদার কর। যাতে আমরা তোমার পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করতে পারি প্রচুর এবং তোমাকে স্মরণ করতে পারি অধিক। তুমিই তো আমাদের সম্যক দ্রষ্টা।' তিনি বললেন, ‘হে মূসা! তুমি যা চেয়েছ তা তোমাকে দেওয়া হল।’

—কুরআন ২০: ২৫-৩৬

যেমন ধরা হতো–কেন?

তারপর আল্লাহ্ তাঁর মনোনীত বান্দা হিসেবে প্রেরণ করলেন হযরত ঈসা (আ)-কে। তাঁর পেশা ছিল কাঠমিস্ত্রী, এ পেশা ছিল তার পিতারও। গসপেলে তাঁর যে বংশক্রম লিপিবদ্ধ হয়েছে তা সন্দেহজনক

“আর যীশু নিজে, যখন তিনি কার্য করেন, কমবেশ ত্রিশ বৎসর বয়স্ক ছিলেন, (যেমন ধরা হতো) [বাইবেল সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত পবিত্র বাইবেলঃ পুরাতন নিয়ম ও নূতন নিয়ম গ্রন্থে (যেমন ধরা হইত) এভাবেই আছে। কিং জেমস এর ইংরেজি অনুবাদে আছে as was supposed.] যোসেফের পুত্র”

—লুক ৩: ২৩

বিশ্বের কোটি কোটি মুসলমান বিশ্বাস করে যে হযরত ঈসা (আ)-এ জন্ম অলৌকিকভাবে হয়েছিল, যেখানে কোন পুরুষ মানুষের প্রয়োজন হয়নি। যার কোন পিতা পিতামহ বা পূর্বপুরুষ ছিল না অথচ ঈসা (আ)-এর অনুসারীরা তার পূর্বপুরুষের দুটি পৃথক বংশতালিকা প্রণয়ন করেছে। মথি ও লূক তাদের গসপেলে এই মহান পয়গম্বরের ছেষট্টি জন পিতৃপুরুষ ও পিতামহের নাম সংগ্রহ করেছে। একটি নাম ‘কাঠমিস্ত্রী জোসেফ’ এ নাম পৃথক দুটি তালিকাতেই স্থান পেয়েছে। অথচ এ নামটি কোথাও খাপ খায় না, কারণ তিনি ‘ধরা যেতে পারে’ যীশুর পিতা ছিলেন।

বিশপদেরও সন্দেহ রয়েছে

১৯৮৪ সালের জুন মাসে আয়োজিত এ্যঙ্গলিকান বিশপদের এক আকস্মিক জরিপে প্রকাশিত হয়েছে যে, ৩৯ জন বিশপের মধ্যে ৩১ জন মনে করেন ‘যিশুর অলৌকিক ক্রিয়াকর্ম, যীশুকে কুমারী মরিয়মের অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ এবং সমাধি থেকে যীশু খ্রিস্টের উত্থান বাইবেলে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে সেভাবে হয়ত তা ঘটেনি।’

স্কটল্যান্ডের চার্চ ইংল্যান্ডের চার্চের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তাঁদের সাম্প্রতিকতম প্রকাশিত “বিশ্বাসের বিবরণী” হতে কুমারী মরিয়মের যীশু অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ এই কথাটির কোন প্রকার উল্লেখ অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে বাদ দিয়েছে। কুমারী মরিয়মের যীশুকে অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ বিষয়টি পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান জগতে ক্রমশ উত্তপ্ত আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হচ্ছে।

দি ডেইলি নিউজ

ডারবান, মঙ্গলবার, মে ২২,১৯৯০

স্কটল্যান্ডের চার্চ কর্তৃক কুমারীর জন্মদানের বিষয়টি পরিত্যক্ত

লন্ডন ও চার্চের সদস্যদের মধ্যে সম্ভাব্য বিরোধ এড়াবার জন্য স্কটল্যান্ড চার্চ হতে সম্প্রতি প্রকাশিত ‘বিশ্বাসের বিবরণী’তে কুমারী মরিয়মের যীশুকে অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ বাদ দেয়া হয়েছে।

বিশেষ কার্যকর দলের সচিব শ্রদ্ধেয় ডেভিড বেকেট বলেন, এই বক্তব্য বাদ দেয়ার ফলে ঐতিহ্যবাহী এ্যাঙ্গলো ক্যাথলিক চার্চের ধর্মতত্ত্ব থেকে স্কটল্যান্ডের চার্চ দূরে সরে যাবে এবং ডারহামের বিশপ ডেভিড জেনকিনস যিনি ইংল্যান্ডের চার্চের উদার মতবাদের হোতা তার দিকে নিয়ে যাবে।

প্রকাশিত এই নতুন দলিলটি নিয়ে এডিনবরায় অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় স্কটল্যান্ডে চার্চের বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ১৬৪০ সালে রচিত ওয়েস্টমিনিস্টার স্বীকারোক্তির ভাষা আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে নির্বাচিত ধর্মবিশেষগণ এই সুযোগে যীশুকে কুমারী মরিয়মের অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ বিষয়টির সংস্কার সাধন করেন।

মি. বেকেট বলেন, আমরা এভাবে বিবৃতিটি প্রণয়ন করতে চেয়েছি যাতে সেটি সকলের গ্রহণযোগ্য হয় এবং বিভেদ সৃষ্টি না করে। কুমারী মরিয়মের যীশুকে অলৌকিকভাবে গর্ভে ধারণ বিষয়টি যারা ঐতিহাসিক সত্য হিসেবে গ্রহণ করেন, কেবল তারাই নয়, চার্চের অপর সকলেই যারা এই বিষয়টিকে প্রধানত ধর্মীয় চিত্রকল্প রূপে বিবেচনা করেন, তারাও যাতে গ্রহণ করেন আমরা সেভাবেই বিবৃতিটি প্রণয়ন করেছি। নেতৃস্থানীয় পুরোহিতগণ দাবি করেন যে, এর দ্বারা ওয়স্টেমিনিস্টার স্বীকারোক্তিকে পরিবর্তিত করা হয়নি, কেবল সংক্ষেপণ ও আধুনিকীকরণ করা হয়েছে।

আর আল্লাহ ঈসা (আ)-কে পছন্দ করলেন

হযরত ঈসা (আ) যদিও আধ্যাত্মিক দিক থেকে জ্ঞান, আলো ও সততায় অনেক ধনবান ছিলেন তথাপি বিশ্বের তাবত ভিক্ষুকদের সম্পর্কে হালকাভাবে যখন বলেনঃ

“তখন একটি স্ত্রীলোক শ্বেত প্রস্তরের পাত্রে বহুমূল্য সুগন্ধি তেল নিয়ে তার নিকট এলো, এবং তিনি ভোজনে বসলে তার মস্তকে ঢেলে দিল।

কিন্তু তা দেখে শিষ্যেরা বিরক্ত হয়ে বললেন এ অপব্যয় কেন? এগুলো তো অনেক টাকায় বিক্রয় করে তা দরিদ্রদের দিতে পারা যেত। কিন্তু যীশু তা বুঝে তাঁদেরকে বললেন,... কেননা দরিদ্ররা তোমাদের কাছে সর্বদাই আছে, কিন্তু তোমরা আমাকে সর্বদা পাবে না।”

—মথি (২৬: ৭-১১)

কিন্তু দুর্গতি যখন অপলক চোখে তার দিকে তাকিয়েছিল, যখন দারিদ্র্য, অর্থকষ্ট ও অভাব তাকে আষ্টেপৃষ্ঠ জড়িয়ে ধরেছিল তখন তিনি করুণ স্বরে আর্তনাদ করে বলেছিলেনঃ

যীশু তাকে বললেন, শৃগালের গর্ত আছে এবং আকাশের পক্ষীদের বাসা আছে, কিন্তু মনুষ্যপুত্রের মস্তক রাখবার স্থান নেই।

—মথি (৮: ২০) এবং লুক (৯: ৫৮)

তথাপি আল্লাহ তা'আলা তাকেই (ঈসা আ) মনোনীত করলেনঃ কী অসাধারণ রহস্যময় আল্লাহ তোমার মহিমা!

একজনকে মুস্তফা বা অনুগত মনোনীত করা

( هُوَ ٱلَّذِی بَعَثَ فِی ٱلۡأُمِّیِّـۧنَ رَسُول ا مِّنۡهُمۡ یَتۡلُوا۟ عَلَیۡهِمۡ ءَایَـٰتِهِۦ وَیُزَكِّیهِمۡ وَیُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَـٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَإِن كَانُوا۟ مِن قَبۡلُ لَفِی ضَلَـٰل مُّبِین ࣲ)

তিনি উম্মিদের মধ্যে তাদের একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূলরূপে, যে তাদের নিকট আবৃত্তি করে তার আয়াত, তাদের পবিত্র করে এবং শিক্ষা দেয় কিতাব ও হিকমত; ইতিপূর্বে তো তারা ছিল ঘোর বিভ্রান্তিতে।

—কুরআন ৬২: ২

মনে হতে পারে রহস্যময়, অতি আশ্চর্যজনক কিন্তু হতবাক হই না, বিস্মিত হই না; কারণ এটাই তাঁর পদ্ধতি। তিনি তাই নিরক্ষর উম্মি জাতির জন্য উম্মি (অক্ষরজ্ঞানহীন) পয়গম্বর মনোনীত করেন।

“এক দরিদ্র মেষ পালক জাতি সকলের অগোচরে সৃষ্টির প্রথম হইতে মরু প্রান্তরে ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল। যাহাকে কেহই চিনিত না সে সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করিল। একটি ক্ষুদ্র জাতি বিশ্বের মহত্তম জাতি হইল। মাত্র এক শতাব্দীকাল পরে আরব জাতি এক দিকে গ্রানাডা ও অপর দিকে দিল্লী পৌঁছাইল। শৌর্যে-বীর্যে, পরাক্রমে, সাহসে, দীপ্তিতে এবং জ্ঞানের গরিমার আলোক সহসা ঝলসাইয়া উঠিয়া বিশ্বের এক বিশাল ভূখণ্ড জুড়িয়া আরব সভ্যতা জ্বলজ্বল করিয়া জ্বলিতে লাগিল। বিশ্বাসই মহাশক্তি, প্রাণ সঞ্চারণী। একটি জাতির ইতিহাস তখনই ফলপ্রসূ হয়, যখন সে বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়। তখন সে জাতি মহাজাতি হয়, আত্মা উদ্দীপক হয়। এই আরব জাতি, একজন মানুষ মুহাম্মদ এবং একটি শতাব্দী-মনে কি হয় না যে একটি স্ফুলিঙ্গ আসিয়া পড়িল? একটি স্ফুলিঙ্গ কী কৃষ্ণকায় বালুকাময় পৃথিবীতে আসিয়া স্পর্শ করিল, এবং অকস্মাৎ সেই বালুকারাশি বিস্ফোরকে পরিণত হইল, আকাশ স্পর্শ করিল, দিল্লি হইতে গ্রানাডা পর্যন্ত জ্বলিয়া উঠিলো। আমি বলি, মহামানব সর্বদাই আকাশের বিদ্যুতের মত আর অপর সকল মানুষ জ্বালানির মত অপেক্ষমাণ তার স্পর্শে দাউ দউ করিয়া জ্বলিয়া ওঠে।”

বিগত শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিন্তাবিদ থমাস কার্লাইল এভাবেই তাঁর বক্তব্য সমাপ্ত করেন। সেদিন ছিল শুক্রবার ৮মে ১৮৪০। বক্তব্যের বিষয় ছিল মহানায়ক রাসূল। তাঁর শ্রোতারা ছিলেন ইংরেজ খ্রিস্টান।

মনোনীত জাতি

আল্লাহ্ তার বার্তাবাহককে বেছে নেন, বেছে নেন তার পছন্দমত কোন জাতিকে। হযরত মূসার সময়ে আধ্যাত্মিকভাবে ইহুদীদের উৎকর্ষ থাকা সত্ত্বেও হযরত মূসা (আ) তার স্বজাতির বিরুদ্ধে ক্রন্দন করে বলেছিলেন।

তোমাদের সাথে আমার পরিচয়-দিন অবধি তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হয়ে আসছ। দ্বিতীয় বিবরণ ৯: ২৪

হযরত মূসা (আ)-এর সর্বশেষ ইচ্ছাপত্রে ইসরাইলীগণ তাদের ‘দুর্বল ও ভদ্র’ পয়গম্বরকে হতাশ করেছিল এবং তাঁকে বাধ্য করেছিল আল্লাহর নির্দেশের প্রতি তাদের কঠোর ও জেদী মনোভাবের জন্য তীব্র নিন্দা করার–

সেই স্থানে থাকবে। কেননা তোমার বিরুদ্ধাচারিতা ও তোমার শক্তিশালী গ্রীবার কথা আমি জানি; দেখ, তোমাদের সাথে আমি জীবিত থাকতেই অদ্য তোমরা সদাপ্রভুর বিরুদ্ধাচারী হলে, তবে আমার মরণের পরে কিই বা না করবে?- দ্বিতীয় বিবরণ (৩১: ২৭)

কী আশ্চর্য সত্য! আল্লাহর ইচ্ছাকে আমি দার্শনিক তত্ত্ব দ্বারা আবৃত করতে চাই কিন্তু ঠিক তার পরের অনুচ্ছেদে ঈশ্বরের ক্রোধাগ্নি প্রজ্বলিত হয়ে দাউ দাউ করে জ্বলে উঠে। তিনি ইহুদীগণকে উচ্চকণ্ঠে তিরস্কার করে বলেন,

তারা অনীশ্বর দ্বারা আমার অন্তর্ধালা জন্মাল, স্ব-স্ব অসার বস্তু দ্বারা আমাকে অসন্তুষ্ট করল; আমিও নজাতি দ্বারা তাদের অন্তর্জালা জন্মাব, মূঢ় জাতি দ্বারা তাদেরকে অসন্তুষ্ট করব। দ্বিতীয় বিবরণ- (৩২: ২১)

ইহুদীগণের বিকল্প

যার সামান্যতম আধ্যাত্মিক জ্ঞান আছে, তিনি ধারণা করতে সক্ষম হবেন যে, কারা এই বর্ণবাদী, জাতি-বিদ্বেষী? জেদী ইহুদীদের দৃষ্টিতে ‘অমানুষ’ -যার কোন অস্তিত্ব নেই এবং নির্বোধ জাতি তারা কারা? তাদেরই ইসমাইলি চাচাতো ভাই? আরবরা? কার্লাইলের ভাষায়- “সৃষ্টির আদি কাল হতে মরুভূমিতে সবার অলক্ষ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিল?”

আরব জাতিঃ মহাবীর আলেকজান্ডার তাঁদেরকে উপেক্ষা করে চলে গেলেন, পারশিকরাও তাদেরকে উপেক্ষা করে চলে গেল, মিশরীয়রা তাদেরকে উপেক্ষা করে চলে গেল এবং রোমকরাও তাদেরকে লক্ষ্য না করে চলে গিয়েছিল। তাদেরকে জয় করা বা অধিকার করা হতো এক চরম বোঝা। কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা তাদেরকে উপেক্ষা করলেন না। তিনি তাদেরকে অন্ধকারের গভীরতম তলদেশ থেকে তুলে আনলেন এবং তাদেরকে বানালেন আলোকবর্তিকা বাহক, বিশ্বের জ্ঞানের দিশারী। ‘আমি তাদেরকে (ইহুদী) ঈর্ষাপরায়ণতায় নিয়ে যাব।’ এই ঈর্ষা এক প্রকার পরিমার্জিত রোগ। স্মরণ করুন আল্লাহর বন্ধু ইবরাহীমের দুই স্ত্রী ছিলেন - সারাহ ও হাজেরা। সারাহর ঈর্ষা তাঁর সন্তানদের মধ্যে প্রবাহিত হয়ে বংশানুক্রমে সমগ্র জাতির মধ্যে ও যাদের জন্ম হয়নি তাদের মধ্যেও সংক্রামিত হয়েছে।

অল্প কিছুদিন পূর্বে একজন ইহুদী চিকিৎসাবিজ্ঞানীর লেখা একটি বই পড়েছিলাম। দুঃখের বিষয় বইটির নাম ও লেখকের নাম কিছুই আজ আমার স্মরণে নেই। তবে মনে আছে তিনি যে ভাষায় তার সেমেটিক (আরব) চাচাতো ভাইদের প্রশংসা করেছিলেন, সে কথাগুলো ভুলবার নয়। তিনি বলেছিলেনঃ

ছাগলের পাল ও উট চালক, সিজারের সিংহাসনে আরোহণ করেছে।

কথাগুলোর মধ্যে রয়েছে চরম ঘৃণা, বিষাদগার ও ব্যঙ্গ! তথাপি কত সত্য কথা! আল্লাহ সত্যিই তাই করেছিলেন। আল্লাহ্ তাই করেন; তিনি যাকে ইচ্ছে সম্মানিত করেন। তিনি কি করতে পারেন তা দেখানোর জন্য করেন।

( وَإِن تَتَوَلَّوۡا۟ یَسۡتَبۡدِلۡ قَوۡمًا غَیۡرَكُمۡ ثُمَّ لَا یَكُونُوۤا۟ أَمۡثَـٰلَكُم )

যদি তোমরা বিমুখ হও তিনি অন্য জাতিকে তোমাদের স্থলবর্তী করবেন; তারা তোমাদের মত হবে না।

—কুরআন ৪৭: ৩৮

ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অলৌকিক ঘটনা সম্ভবত এটাই যে আরবের প্রতিকূল পরিস্থিতি লঙ্ঘন করে একদল লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সহচর, তার পর মাত্র কয়েক দশকের ব্যবধানে পিরেনিজ পর্বত হতে আরম্ভ করে চীন দেশের দোরগোড়া পর্যন্ত বিস্তৃত এক নতুন সভ্যতার সৃষ্টি করবে। (আবদুল ওয়াদুদ শালাবিঃ “ইসলাম জীবনের ধর্ম”)

সর্বশেষ সাবধান বাণী

মানব জাতিকে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার যোগ্যতা হতে ইহুদী জাতির অপসারণ সম্পর্কে যীশু খ্রিস্টের (ইহুদী জাতির সর্বশেষ পয়গম্বর) নিজের ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণ বাস্তবায়ন ছিল পূর্বোল্লিখিত সত্য। প্রভুর নিজের কথাঃ

এই জন্য আমি তোমাদিগকে (ইহুদী) বলছি, তোমাদের (ইহুদী) নিকট হতে ঈশ্বরের রাজ্য কেড়ে নেয়া যাবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হবে, যে জাতি তার ফল দেবে।

- মথি (২১:৪৩)

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন