hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

অধ্যায় চারঃ অলৌকিক গ্রন্থ যেন তারবার্তা
পবিত্র কুরআনকে যথাযথভাবে বর্ণনা করলে তাকে তারবার্তার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। তারবার্তার মতই অনেকটা প্রশ্ন-উত্তরের ন্যায় এই মহাগ্রন্থ উন্মোচিত হয়েছিল।

মদ ও জুয়া প্রসঙ্গ

( یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَیۡسِرِۖ قُلۡ فِیهِمَاۤ إِثۡم كَبِیر وَمَنَـٰفِعُ لِلنَّاسِ وَإِثۡمُهُمَاۤ أَكۡبَرُ مِن نَّفۡعِهِمَاۗ وَیَسۡـَٔلُونَكَ مَاذَا یُنفِقُونَۖ قُلِ ٱلۡعَفۡوَۗ كَذَ  ٰ⁠ لِكَ یُبَیِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡـَٔایَـٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَتَفَكَّرُونَ )

লোকে তোমাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল, ‘উভয়ের মধ্যে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও আছে; কিন্তু তাদের পাপ উপকার অপেক্ষা অধিক।’ লোকে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে, কি তারা ব্যয় করবে? বল, ‘যা উদ্বৃত্ত।’ এইভাবে আল্লাহ তাঁর বিধান তোমাদের জন্য সুস্পষ্টরূপে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর ....।

-কুরআন ২: ২১৯

কুরআন ও হাদীস

উপরে একটি উদাহরণ দেয়া গেল যে কিভাবে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বাণী প্রদান করেন। পরে আরো উদাহরণ দেয়া যাবে, এর চেয়ে আর কত সহজে বোঝানো সম্ভব, এর চেয়ে সহজভাবে একজন সত্য অন্বেষী বিজ্ঞানীকে কি বোঝানো যাবে? এর উত্তর “না”। তথাপি তিনি অবুঝদের সম্পর্কে বলেনঃ

( قُلۡ هَلۡ یَسۡتَوِی ٱلۡأَعۡمَىٰ وَٱلۡبَصِیرُ )

বল, ‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান?’

-কুরআন ১৩: ১৬

অবশ্যই না!

এখন মহান আল্লাহ তাআলার উপরোক্ত কথাগুলো “মদ” সম্পর্কিত বিষয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীসের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। হাদীস তাঁর সাহাবিগণ লিপিবদ্ধ করেছেনঃ হযরত ইবনে আনাস (রা) বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসূল তাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন যারা যে কোন ধরনের নেশা দ্রব্য তৈরি ও ব্যবহার করে। তিনি বলেছেন,

১. লানত তাদের যারা মদ চোলাইয়ের জন্য আঙুর উৎপাদন করে।

২. লানত তাদের যারা এসব বিক্রি করে।

৩. লানত তাদের যারা এগুলো মাড়াই করে।

৪. লানত তাদের যারা বোতলে ভরে।

৫. লানত তাদের যারা পান করে।

আল্লাহর রাসূল আরও বলেছেন নেশার দ্রব্য অল্প মাত্রায় গ্রহণ যেমন নিষিদ্ধ তেমনি বেশি পরিমাণ ব্যবহারও সমানভাবে নিষিদ্ধ। সাধু পল শিষ্য টিমোথিকে যেভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন ইসলামে সেভাবে স্বল্প মাত্রার মদ্য পানও নিষিদ্ধ।

এখন অবধি কেবল জল পান করো না, কিন্তু বার বার অসুখ হয় বলে কিঞ্চিৎ দ্রাক্ষারস ব্যবহার করো।

-১ তীমথিয় ৫: ২৩

অথবা সোলায়মান (আ) সুনিশ্চিতভাবে অথচ ঠাট্টার ছলে অধিকৃত জনসাধারণকে দাসত্বে আনয়নের জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেনঃ

মৃতকল্প ব্যক্তিকে সুরা দাও, তিক্তপ্রাণ লোককে দ্রাক্ষারস দাও, সে পান করে দৈন্যদশা ভুলে যাক, আপন দুর্দশা আর মনে না করুক।

– প্রোভার্বস ৩১: ৬৭

ভুলে যাওয়ার আগে পবিত্র কুরআনে এই বিষয়ে যা বলা হয়েছে তার সঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজের মুখে যা বলেছেন তা তুলনা করে দেখা যেতে পারে। অস্বীকার করার উপায় নেই দুটোর রীতি রচনাশৈলী লালিত্য সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, যদিও একই মুখ থেকে দুটো উচ্চারিত হয়েছে।

অপর একটি উদাহরণঃ প্রশ্নের জবাবে তারবার্তার মতো যে বাণী এসেছিলঃ

( یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡأَهِلَّةِۖ قُلۡ هِیَ مَوَ  ٰ⁠ قِیتُ لِلنَّاسِ وَٱلۡحَجِّۗ )

লোকে তোমাকে নতুন চাঁদ সম্বন্ধে প্রশ্ন করে। বল, ‘তা মানুষ এবং হজ্জের জন্য সময় নির্দেশক।’

– কুরআন ২: ১৮৯

“আজ পর্যন্ত নতুন চাঁদের সাথে অনেক কুসংস্কার জড়িত রয়েছে। এই সকল কুসংস্কার অস্বীকার করতে বলা হয়েছে। যেখানে চান্দ্রমাস ক্যালেন্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেখানে নতুন চাঁদ সময় নিরূপণের একটি মাপকাঠি মাত্র। নতুন চাঁদ দেখে মুসলমানদের অনেক অনুষ্ঠান উৎসব পালিত হয়। যেমন হজ্ব, রোযা ইত্যাদি।” – ইউসুফ আলী।

তারবার্তার ন্যায় পবিত্র কুরআনের আরেকটি উদাহরণ—

( یَسۡـَٔلُونَكَ مَاذَا یُنفِقُونَۖ قُلۡ مَاۤ أَنفَقۡتُم مِّنۡ خَیۡر فَلِلۡوَ  ٰ⁠ لِدَیۡنِ وَٱلۡأَقۡرَبِینَ وَٱلۡیَتَـٰمَىٰ وَٱلۡمَسَـٰكِینِ وَٱبۡنِ ٱلسَّبِیلِۗ وَمَا تَفۡعَلُوا۟ مِنۡ خَیۡر فَإِنَّ ٱللَّهَ بِهِۦ عَلِیم ࣱ)

লোকে কি ব্যয় করবে সে সম্বন্ধে তোমাকে প্রশ্ন করে। বল, যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় করবে তা পিতামাতা, আত্মীয়-স্বজন, এতিম, অভাবগ্রস্ত এবং মুসাফিরদের জন্য। উত্তম কাজের যা কিছু তোমরা কর না কেন আল্লাহ সে সম্বন্ধে অবহিত।

– কুরআন ২: ২১৫

দানের ক্ষেত্রে তিনটি প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছেঃ

ক) আমরা কি দান করব?

খ) কাকে দান করব?

গ) কিভাবে দান করব?

এখানেই উত্তর রয়েছে, যা কিছু ভাল, প্রয়োজনীয়, কাজে লাগে এবং মূল্যবান। হতে পারে সম্পত্তি অথবা অর্থ, হতে পারে সাহায্যের হাত; হতে পারে পরামর্শ, এমন কি হতে পারে সান্ত্বনার বাক্য, “তুমি যা কিছু কর তা যদি ভাল হয় তাহলে সেটাই দান’ অপর পক্ষে অপ্রয় োজনীয় কিছু যদি ফেলে দাও তার মধ্যে কোন দান নেই। অথবা অসৎ উদ্দেশ্যে কাউকে যদি কিছু দাও, যেমন পাগলের হাতে তরবারী অথবা নেশার দ্রব্য অথবা মিষ্টি অথবা অর্থ- সেগুলো যদি কাউকে ফাঁদে ফেলার জন্য অথবা পথভ্রষ্ট করার জন্য হয় তাহলে সেটা দান হবে না, হবে ধিক্কার।

কাকে দিতে হবে?

কোন কিছু দেওয়ার কারণে সারা দুনিয়া প্রশংসা করবে এ লোভে কাউকে কিছু দেওয়া চলবে না। তোমার উপর যার দাবি সবচেয়ে বেশি তার প্রয়োজন আগে মেটাতে হবে। যদি তা না মিটাও তাহলে তুমি একজন ধোঁকাবাজ পাওনাদার। প্রতিটি দানকে বিচার করা হবে তার পিছনে কতখানি নিঃস্বার্থ মনোভাব রয়েছে তার উপর। তোমাকে দেখতে হবে যে চাহিদা অথবা প্রয়োজনের মাত্রা কতখানি। তুমি যদি তা বিবেচনা না কর তাহলে বুঝতে হবে এর পিছনে স্বার্থ আছে।

কিভাবে দিতে হবে?

সমস্ত প্রকার ভনিতা প্রদর্শনী ও কৃত্রিমতা পরিহার করে আল্লাহ্ দেখছেন এভাবে দিতে হবে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আরেকটি প্রশ্নের জবাব পেয়েছিলেন তারবার্তার ন্যায়। এর বিষয় ছিল আত্মা।

( وَیَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلرُّوحِۖ قُلِ ٱلرُّوحُ مِنۡ أَمۡرِ رَبِّی وَمَاۤ أُوتِیتُم مِّنَ ٱلۡعِلۡمِ إِلَّا قَلِیل ࣰا)

তোমাকে তারা রূহ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল ‘রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশঘটিত।’ এবং তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দেওয়া হয়েছে।

—কুরআন ১৭: ৮৫

এ কথা গুরুত্ব সহকারে না বলে পারা যাচ্ছে না যে, পৃথিবীর অন্য কোন গ্রন্থ পাঠ করা পবিত্র কুরআন পাঠের মতো নয়। এখানে স্পষ্ট সোজা সরলভাবে বক্তব্য রাখা হচ্ছে। এখানে কোন 'যদি’ বা ‘কিন্তু’ নেই। কোন বাহানা বা অপ্রয়োজনীয় কথা নেই। এই বিশাল গ্রন্থে এমন কোন রচনা পাওয়া যাবে না, যা বক্স অফিস হিট করতে পারে। অথবা টেন কমান্ডমেন্ট অথবা স্যামসান ও ডেলিয়া অথবা ডেভিড ও বেথসেবা এর মত ফিল্ম তৈরি হতে পারে। সে রকম কিছু এখানে নেই। সেক্ষেত্রে পবিত্র বাইবেল এই প্রকার স্ক্রিপ্ট লেখার জন্য মহা আকর্ষণীয় গ্রন্থ। এখানে যা আছে তা সহজে স্বর্ণ পাত্রে রূপান্তরিত করা যায়।

প্রণিধানযোগ্য যে, এই গ্রন্থের দু’মলাটের মধ্যে তন্ন তন্ন করে অন্বেষণ করলেও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর পিতা বা মাতার নাম কোথাও পাওয়া যাবে না। কেউ তার স্ত্রীদের নাম এখানে আবিষ্কার করতে পারবে না। কেউ খুঁজে পাবে না তার মেয়েদের নাম। অথবা পাবে না প্রিয় সহচরদের নাম কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় একটি পূর্ণ অধ্যায় যিশু খ্রিস্টের মা মেরির নামে রয়েছে। এর নাম সূরা মরিয়ম। অধ্যায় ১৯, পবিত্র কুরআন। এই গ্রন্থে ঈসা (আ)-এর নাম কম হলেও পঁচিশবার উল্লিখিত হয়েছে অথচ পয়গম্বর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মাত্র পাঁচবার উল্লিখিত হয়েছে।

যীশু ও তাঁর মা কি এ মহাগ্রন্থ যার নিকট নাযিল হয়েছে সেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ও তার মা অপেক্ষা অধিক গুরুত্বপূর্ণ? না, তা মোটেই না। তাহলে এই অসাধারণ বর্ণনা কেন? কারণ সহজ, যীশু এবং তার মার চরিত্র বিপদের মধ্যে ছিল। মাতা ও পুত্রের উপর বিভিন্ন রকমের মিথ্যা অভিযোগ, চরিত্রের কালিমা লেপন ও কলঙ্ক আরোপিত হচ্ছিল। সেইজন্য মেরির গর্ভধারণ বিষয় কাহিনী কুমারি মেরির নিষ্কলঙ্ক গর্ভধারণ এবং যিশুর জন্ম বর্ণনা করা প্রয়োজন ছিল। ইসলামের পয়গম্বর-এর বংশ নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করেনি। তাই মহানবীর জন্ম এবং পিতৃকুল নিয়ে অযথা শব্দ ব্যয় করার প্রয়োজন পড়েনি। কুরআন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনীগ্রন্থ নয়। তবে অবিশ্বাসীদেরকে এ কথা বোঝানো বড় কঠিন।

শেষদিন সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে তারবার্তার ন্যায় যে বার্তা এসেছে সেটিই আরেকটি উদারহণ।

শেষ দিন

( یَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلسَّاعَةِ أَیَّانَ مُرۡسَىٰهَاۖ قُلۡ إِنَّمَا عِلۡمُهَا عِندَ رَبِّیۖ لَا یُجَلِّیهَا لِوَقۡتِهَاۤ إِلَّا هُوَۚ ثَقُلَتۡ فِی ٱلسَّمَـٰوَ  ٰ⁠ تِ وَٱلۡأَرۡضِۚ لَا تَأۡتِیكُمۡ إِلَّا بَغۡتَة ࣰۗ )

তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে। বল, ‘এ বিষয়ের জ্ঞান আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাকালে তা প্রকাশ করবেন, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে! আকস্মিকভাবেই তা তোমাদের উপর আসবে’।

-কুরআন ৭: ১৮৭

বাইবেলে সাধু মার্ককের গসপেলের ত্রয়োদশ অধ্যায় সম্পূর্ণ পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত একটি আয়াতের সঙ্গে তুলনীয় এই অধ্যায়ের ৩৭টি পঙক্তি ব্যবহৃত হয়েছে। উক্ত বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে। মানুষের তৈরি পুস্তকের সঙ্গে আল্লাহর বাণী পার্থক্য করার এটি সহজ উপায় পবিত্র কুরআনে দেখা যাবে কোনরূপ অতিকথন ও অনাবশ্যক অলংকরণ নেই। আল্লাহর কিতাব থেকে আরও অনেক উদাহরণ দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে, এর বর্ণনা পদ্ধতি মানুষের ব্যবহৃত রীতি নয়। এ পবিত্র কুরআন এক অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত গ্রন্থ। বস্তুতপক্ষে এ বিষয়ে সুবিশাল পৃথক গ্রন্থ রচিত হতে পারে। যা হোক সর্বশেষে আমরা পবিত্র কুরআন থেকে একটি মাত্র দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে এখানেই এ অধ্যায়ের আলোচনা সমাপ্ত করবো। আর তা হচ্ছে পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট মাত্র চারটি আয়াত সম্বলিত একটি সূরা ।

সূরা ইখলাস

(১) বলো, তিনিই আল্লাহু, এক, অদ্বিতীয়,

(২) আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী,

(৩) তিনি কাউকেই জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেওয়া হয়নি,

(৪) এবং তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।

এখানে আরবি অংশ আল্লাহর কথা। এ অংশের ইংরেজি অনুবাদ করেছেন মাওলানা ইউসুফ আলী। মানুষের পক্ষে যতখানি সম্ভব এ অনুবাদ তন্মধ্যে সর্বোত্তম বলে বিবেচিত হয়। আমরা এতক্ষণ কুরআনে অলৌকিকতা সম্বন্ধে যে আলোচনা করেছি সে বিষয়ে আমার নিজের পর্যবেক্ষণের আলোকে তা উপস্থাপন করছি।

ধর্ম ও তত্ত্বের অগ্নিপরীক্ষা

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর নির্দেশমতো বিশ্বের সকল মুসলমান বিশ্বাস করে যে উপরোক্ত চারটি আয়াত বিশিষ্ট এ সূরাটি তিনবার পাঠ করলে সম্পূর্ণ কুরআন শরীফ পাঠের আত্মিক কল্যাণ হাসিল হয়। কি কারণে এই ক্ষুদ্র সূরাটি এতখানি মূল্যবান। এখানে কোন শব্দের দ্যোতনা নেই, সঙ্গীত নেই, এমন কোন সুরের মূর্চ্ছনা নেই যা মানুষের মন আনন্দে পরিপূর্ণ করে দেবে। কিন্তু এখানে একটি বাণী রয়েছে যে বাণী দীনের চূড়ান্ত নির্যাস এবং সেই কারণেই এর মর্যাদা এত উঁচুতে। এই সংক্ষিপ্ত চার পঙক্তির মধ্যে রয়েছে ইসলামের সমস্ত তত্ত্ব, ইসলামে আল্লাহর যে ধারণা এই চারটি পর্ভূক্তির বাইরে নেই। এ চারটি পঙক্তিই হচ্ছে আল্লাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের কষ্টিপাথর। এরই মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্ সম্পর্ক কোন ধারণা গ্রহণ করতে পারি অথবা প্রত্যাখ্যান করতে পারি। ন্যায় অন্যায় পৃথক করতে পারি কষ্টিপাথরের সাহায্যে যেমন স্বর্ণকারের সোনার খাঁটিত্ব পরীক্ষা করা হয়, এ চারটি পঙক্তিও তেমনি কুরআন পরীক্ষার কষ্টিপাথর।

অজ্ঞতার অবসান

১৯৭৫ সালের মাঝামাঝি জাম্বিয়াতে বক্তৃতা দিতে যাওয়ার জন্য ব্যবস্থা হচ্ছিল লুসাকা থেকে টেলিফোনে জানানো হলো যে আমার বিমানের টিকিট ডারবানে পাঠানো হয়েছে। আমি যেন দক্ষিণ আফ্রিকা এয়ার ওয়েজের অফিস থেকে টিকিট সংগ্রহ করি। আমি এয়ার ওয়েজ অফিসে গিয়ে ইনফরমেশন কাউন্টারে যে লোকটি দায়িত্বে ছিল তাকে বললাম যে লুসাকা থেকে আমার নামে যে টিকিট পাঠানো হয়েছে সেটি নেওয়ার জন্য আমি এসেছি। তিনি আমাকে বললেন অপর একজন মহিলার নিকট যেতে। তিনি আরো কয়েকজন মহিলাসহ বৃত্তাকারে কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন। তাদের সকলের সামনেই গ্রাহকদের ভিড় ছিল। আমি বললাম, কার কাছে? ভদ্রলোক একটু বিরক্তি সহকারে হাত নেড়ে বললেন যে কোন একজনের কাছে। সেই মুহূর্তে আমি বুঝতে পারিনি আমার এই সাদামাটা প্রশ্নের উত্তরে একজন ভদ্রলোক কিভাবে বিরক্ত হলেন। আমি ভাবছিলাম বিমান ভ্রমণের টিকিটের একটা লম্বা খাম পাব। জীবনে বহুবার প্লেনে যাতায়াত করেছি। তাই সেইরকম একটা ইনভেলাপের আশা করছিলাম কিন্তু ঐ মহিলারা আমাকে কিভাবে টিকিট দেবে? আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সেই ভদ্রলোকের বিরক্তমাখা কণ্ঠস্বর আমাকে বাধ্য করল সেই অর্ধ বৃত্তাকার মহিলাদের দিকে অগ্রসর হতে ভয়ে ভয়ে এক মহিলার কাছে গিয়ে আমার এখানে আসার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করলাম। তিনি আমার নাম জিজ্ঞাসা করলে তাকে নাম বললাম। দেখলাম তিনি কম্পিউটারের পর্দার দিকে তাকিয়ে কি যেন টাইপ করলেন। আমি দেখতে পারছিলাম না তিনি কি টাইপ করছিলেন তারপর তিনি মাথা নেড়ে বললেন, হ্যাঁ অর্থাৎ তিনি পেয়েছেন। আমি বললাম যোহান্সবার্গের উদ্দেশ্যে আমি মঙ্গলবার ডারবান ত্যাগ করতে চাই। তিনি সন্ধ্যা ছয়টার ফ্লাইটের টিকিট দিতে চাইলে আমি রাজি হলাম। তিনি আরও কিছু টাইপ করলেন। আমি তাকে আরও বললাম যোহান্সবার্গ ত্যাগ করে পরের দিন বেলা তিনটার দিকে লুসাকা পৌঁছাতে চাই। আমাকে যারা দাওয়াত করেছিলেন তাঁরা সেই রকমই পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে আমার পৌঁছাবার সংবাদ টিভি ও অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা যায়। মহিলা আরো কিছু টাইপ করার পর প্রশ্ন করলেন, আমি গাররনে অথবা মোপুত হয়ে লুসাকা যেতে রাজি কিনা? আমি বললাম বুধবার বেলা তিনটার সময় আমি লুসাকা পৌঁছাতে চাই, কিভাবে সেটা কোন বিষয় নয়। মহিলা আবার কিছু টাইপ করে পর্দা দেখে বললেন, দুঃখিত, আপনি জাম্বিয়ান এয়ার লাইনে বুক হয়ে আছেন। আমরা আপনার টিকিট অন্য এয়ার লাইনে বদলি করতে পারব না। কারণ সেখানকার জাতীয় ছুটির দিন বলে জাম্বিয়ান এয়ার লাইন অফিস আজ বন্ধ। আমাকে পরদিন আবার আসতে বলা হলো। ভারি মজ তো, আমি ভাবলাম। আমি টিকিট প্রায় পেয়ে যাচ্ছিলাম অথচ পেলাম না। মনে হচ্ছিল টিকিটটা তার ড্রয়ারে আছে। রীতিমত বিভ্রান্ত হয়ে আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, এইসব তত্ত্ব পেলেন কোথা থেকে। তিনি বললেন, যোহান্সবার্গের প্রধান কম্পিউটার থেকে। তিনি দয়া করে আরও ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন যে, দেশের সবকটি টারমিনাল প্রধান কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত। যে কোন জায়গা থেকে বোতাম টিপলেই প্রধান কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। আমি প্রশ্ন করলাম তিনি যোহান্সবার্গের সন্ধ্যা ছয়টার ফ্লাইটের আমার সিটের জন্য চেষ্টা করছেন কিন্তু একটা মাত্র আসন খালি অথচ অন্যান্য টারমিনাল থেকে সবাই যদি এক সঙ্গে একটা সিটের জন্য চেষ্টা করে তাহলে কি হবে? তিনি বললেন, এক সেকেন্ড আগে প্রথমে যে আসবে সে সিট পাবে। বাকিরা শূন্য হাতে ফিরে যাবে। আমি ভদ্রমহিলাকে প্রচুর ধন্যবাদ দিয়ে বিমান অফিস ত্যাগ করলাম। ফিরে যেতে যেতে ভাবছিলাম এমনিভাবেই ওহী আল্লাহর কাছ থেকে তার রাসুলের কাছে এসে পৌঁছায় যেভাবে প্রধান কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্য এসে কম্পিউটারের পর্দায় বা ফলকে ভেসে উঠে।

( بَلۡ هُوَ قُرۡءَان مَّجِید ۝ فِی لَوۡح مَّحۡفُوظِۭ )

বস্তুত এটি সম্মানিত কুরআন, সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

– কুরআন ৮৫: ২১-২২

এই ফলক। হযরত মূসা (আ) যে দশটি নির্দেশ পাথরের উপর লিখেছিলেন সেরকম নয়। বিদ্যালয় শিক্ষক ব্লাকবোর্ডে যেভাবে দেখান তেমন নয়। বস্তুত, একে কম্পিউটারের পর্দার সাথেও তুলনা করা যায় না, এটি আল্লাহর নিজস্ব সংরক্ষিত ফলক। একে বাস্তব ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কারণ এ জিনিস কোন পাথর বা ধাতুর তৈরি নয়। এটা আধ্যাত্মিক। এ কিভাবে কাজ করে, আমরা শুধুমাত্র কল্পনা করতে পারি।

নাজরানের খ্রিস্টানগণ

মদিনাতে যখন ইসলাম দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিল তখন আল্লাহর রাসূলের খ্যাতি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছিল। ইয়েমেনের নিকট নাজরানের কিছু আরব খ্রিস্টান বসবাস করত, তারা শুনল যে আরব দেশে একজন আরব দাবি করছেন তিনি ওহী প্রাপ্ত হয়েছেন এবং নিজেকে আল্লাহর বাণীবাহক বলে দাবি করেছেন। এক প্রতিনিধিদল সেই রাসূলকে প্রশ্ন দ্বারা পরীক্ষা করার জন্য মদিনার পথে রওনা হল। তারা জানতে চাইবে যে আল্লাহ্ সম্পকে, দীন সম্পর্কে তিনি কি জানেন। তারা মদিনায় এসে মাটির দেয়াল খেজুর পাতার ছাদ দিয়ে নির্মিত মসজিদে নববীতে আশ্রয় নিল। খ্রিস্টানরা খাওয়া দাওয়া করল এবং এখানেই রাত্রি যাপন করল তিনদিন তিনরাত রাসূলের সঙ্গে আলোচনা করল। হাদীসে এই আলোচনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যাবে। আলোচনার এক পর্যায়ে খ্রিস্টানদের মধ্যে একজন প্রশ্ন করলঃ

“ওহে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম! আল্লাহ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি বলুন?” আল্লাহর রাসূল সামান্যতম বিচলিত না হয়ে অনেক কথার ব্যাখ্যা না করে শব্দ ও ভাষার জন্য চিন্তা না করে যেন আধ্যাত্মিক বোতাম টিপ দিলেন, যেন কম্পিউটারের টার্মিনাল থেকে টিপ দিয়ে প্রধান কম্পিউটার থেকে তথ্য আসে তেমনিভাবে উত্তর এল।

( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ قُلۡ هُوَ ٱللَّهُ أَحَدٌ ۝ ٱللَّهُ ٱلصَّمَدُ ۝ لَمۡ یَلِدۡ وَلَمۡ یُولَدۡ ۝ وَلَمۡ یَكُن لَّهُۥ كُفُوًا أَحَدُۢ )

“বল, ‘তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়, আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী; তিনি কাকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেওয়া হয়নি, এবং তাঁর সমতুল্য কেউই নেই।”

— কুরআন ১১২: ১-৪

আল্লাহর পবিত্রতা ও বিশুদ্ধতা সম্পর্কে উপরোক্ত আয়াত (একটি ফরমূলার মতো) উচ্চারণ করার পর তাদের আলোচনা পুনরায় স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে এল। আলোচনার মধ্যে এই দু'প্রকার ভঙ্গি কোন আরবের পক্ষেই লক্ষ্য না করার কারণ ছিল না। উপরের আয়াতগুলো ছিল আল্লাহর কথা। আল্লাহর কথা নবীজির মুখে তুলে দেওয়া হয়েছিল। তিনি যখন সেগুলো আবৃত্তি করছিলেন তখন তিনি আল্লাহর মুখপাত্র হিসাবে কাজ করেছিলেন, অনেকটা রেডিওর স্পীকারের মতো।

আল্লাহ প্রদত্ত এই তথ্য বস্তু কম্পিউটারের ন্যায় তার মধ্যে, তার হৃদয় ও মস্তিষ্কে দশ বছর পূর্বেই মক্কায় অবস্থানকালে অন্যরূপ পরিবেশে তার মধ্যে দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই সময় ইহুদীরা তাকে “আল্লাহর পরিচয় ও বংশ পরিচয়” জানার নাম করে তাকে প্ররোচিত করছিল।

এভাবে একটা তুলনা দেওয়া গেল যে, পরম পরাক্রমশালী আল্লাহ্ কিভাবে তার প্রত্যাদেশ তার মনোনীত রাসূলের নিকট অনুপ্রেণার মাধ্যমে তার বাণী প্রেরণ করেন, কিভাবে তার রাসূল সেই বাণীকে নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করেন এবং সঞ্চারিত করেন। তারপর মানবীয় মুখপাত্র সেই বাণীকে কীভাবে বারবার ব্যবহার করেন। তারপর তার অনুসারীগণ অর্থাৎ আমরা তার উম্মত সেই বাণীকে হৃদয়ে সংরক্ষিত করে যখন প্রয়োজন হয় তা ব্যবহার করি।

বিশ্বের কোন ধর্মগ্রন্থে বা ধর্মসাহিত্যে সূরা ইখলাসের ন্যায় সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নেই। এই অধ্যায়টি যদি ধর্মতত্ত্বের চূড়ান্ত নির্যাস হয় অর্থাৎ আল্লাহর কথার নির্যাস হয় তাহলে পবিত্র কুরআনের অবশিষ্ট অংশ তার ব্যাখ্যা। এর সাহায্যে আমরা আল্লাহর গুণাবলি আবিষ্কার করতে পারি। আল্লাহকে জানতে গিয়ে মানবজাতি বারবার পদস্খলিত হয়ে অন্ধকারে পতিত হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সাহায্যে সেই পতন থেকে আমরা রক্ষা পেতে পারি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন