hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

আল-কুরআনঃ এক মহা বিস্ময়কর অলৌকিকতা অধ্যায় একঃ এক বিস্ময়কর অলৌকিতা
( قُل لَّىِٕنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰۤ أَن یَأۡتُوا۟ بِمِثۡلِ هَـٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا یَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡض ظَهِیر ࣰا)

বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনয়নের জন্য মানুষ ও জ্বিন সমবেত হয় এবং তারা পরস্পরকে সাহায্য করে তবুও তারা এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না। (কুরআন ১৭: ৮৮)

অলৌকিকতা কি?

অলৌকিকতা বলতে কি বোঝায় সে বিষয়ে একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। এ সম্পর্কে কয়েকটি সংজ্ঞা দেওয়া হলোঃ

১. প্রকৃতির বুকে সংঘটিত অতিপ্রাকৃত উৎস হতে বা আল্লাহ কর্তৃক সংঘটিত এমন এক বিষয় যা প্রকৃতির নিয়ম দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।

২. এমন কোন ব্যক্তি, বস্তু, যা বিস্ময়ের সৃষ্টি করে।

৩. এমন এক অসম্ভব ঘটনা, যা মানুষের ক্ষমতার অসাধ্য।

যুক্তিসঙ্গত কারণেই এমন অসম্ভব ঘটনা যত বড় হবে অলৌকিকত্বও হবে তত বড়। যেমন এক ব্যক্তির মৃত্যু হলো। চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করলেন। তারপর কোন একজন সাধু বা দরবেশ এসে মৃতদেহকে বললো, ‘ওঠ’। সবাইকে অবাক করে দিয়ে মৃত ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল এবং হাটতে হাটতে চলে গেল। আমরা এরূপ ঘটনাকেই অলৌকিক ঘটনা বলে আখ্যায়িত করব। কিন্তু মৃতদেহটি যদি জীবন লাভের পর তিনদিন বেঁচে থাকে তাহলে সেই ঘটনাকে আমরা বড় ধরনের অলৌকিকতা বলব। তারপর যখন মৃতদেহটি কয়েক বছর পর যখন পচে গলে গিয়েছে তখন যদি সেটি কবর থেকে উঠে আসে তাহলে এই অলৌকিক ঘটনাকে সর্বোচ্চ অলৌকিক ঘটনা বলব।

একটি সাধারণ ধারণা

অনাদিকাল হতে মানব জাতির মধ্যে একটি সাধারণ ধারণা বিদ্যমান যে আল্লাহর নিকট হতে যখনই কোন পথ প্রদর্শক আল্লাহর ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুসারে পথ নির্দেশ করতে আসেন, তাদেরকে অতিপ্রাকৃতিক কিছু প্রমাণ প্রদর্শন করতে হয়, এসব অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করে তাঁদের প্রমাণ করতে হয় যে, তারা আল্লাহর প্রেরিত মহামানব। সাধারণ মানুষ আল্লাহর প্রেরিত পুরুষের নিকট অলৌকিক ক্ষমতা প্রত্যাশা করে। আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ যখনই আল্লাহর ইচ্ছা এবং পরিকল্পনার দিকে সাধারণ মানুষকে পথ নির্দেশ করতে চেষ্টা করেন তখনই তারা তিনি যে বাণী নিয়ে এসেছেন সেটি সেইভাবে গ্রহণ না করে তার নিকট হতে অপ্রাকৃতিক প্রমাণ দাবি করে। যেমন, যখন ঈসা (আ) তার জনগণের নিকট প্রচার করতে আরম্ভ করলেন, যেন তারা নিছক আনুষ্ঠানিক বিধিবিধান থেকে সরে আসে এবং আল্লাহর আইন ও নির্দেশ যথাযথভাবে গ্রহণ করে, তখন তার জনগণ তার নিকট হতে তিনি যে সত্যই আল্লাহর রাসূল সেটা প্রমাণ করার জন্য তার অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের দাবি করল। এ সম্পর্কে বাইবেলে লেখা হয়েছে?

তখন কয়েকজন অধ্যাপক ও ফরীশী তাঁকে বলল, ‘হে গুরু, আমরা আপনার কাছে কোন চিহ্ন দেখতে ইচ্ছা করি।’ তিনি উত্তরে তাদের বললেন, ‘এই কালের দুষ্ট ও ব্যভিচারী লোকে চিহ্নের অন্বেষণ করে, কিন্তু যোনার ভাববাদীর চিহ্ন ছাড়া আর কোন চিহ্ন দেওয়া যাবে না। ’

- মথি ১২: ৩৮-৩৯

যদিও ঈসা (আ) ইহুদীদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য এরূপ অলৌকিক নিদর্শন প্রদর্শন করতে অস্বীকার করেছিলেন তবু আমরা তাঁর জীবনী গসপেলের বর্ণনা থেকে জানি তিনি বহু অলৌকিক কর্ম সাধন করেছিলেন। পবিত্র বাইবেলে তাদের পয়গম্বর যে অনেক অলৌকিক ঘটনা ঘটিয়েছেন তার বিবরণে পরিপূর্ণ। প্রকৃতপক্ষে এই সকল চিহ্ন, বিস্ময়কর ঘটনা এবং অলৌকিক কাণ্ড সবই আল্লাহ্ কর্তৃক সংঘটিত। কিন্তু এগুলো মানুষের মাধ্যমে সাধিত হয়েছিল। অথচ আমরা তাকে বলি নবী-রাসূলদের অলৌকিকতা। হযরত মূসা (আ) অথবা ঈসা (আ) এমনি অনেক অলৌকিক কার্য আল্লাহর ইচ্ছায় সংঘটিত করে দেখিয়েছিলেন।

হযরত ঈসা (আ)-এর জন্মের প্রায় ছয়শ বছর পর আরব-দেশের মক্কা নগরীতে হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর আবির্ভাব। চল্লিশ বছর বয়সে যখন তিনি তাঁর দেশবাসীর নিকট তাঁর মিশনের কথা ঘোষণা করলেন তখন মক্কার মুশরিকরাও অনুরূপ অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য তাঁকে অনুরোধ করেছিল। মনে হয়, পাঠ্য পুস্তকের মত, আরবরাও যেন খ্রিস্টানদের গ্রন্থ থেকে পাতা ছিড়ে নিয়েছে। ইতিহাস এমনিভাবেই বারবার ফিরে আসে।

( وَقَالُوا۟ لَوۡلَاۤ أُنزِلَ عَلَیۡهِ ءَایَـٰت مِّن رَّبِّهِ )

তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার কাছে নিদর্শন প্রেরণ করা হয় না কেন?’

- কুরআন ২৯: ৫০

চিহ্ন! কি চিহ্ন?

“অলৌকিকতা?” তিনি চিৎকার করে বলেন, “তোমরা কি অলৌকিকতা চাও? তবে তোমরা নিজেরা কি? আল্লাহ্ তোমাদেরকে মাটি থেকে পয়দা করেছেন। তোমরা একদিন ছিলে ছোট্ট। কয়েক বছর আগে তোমার জন্মও হয়নি। আজ তোমাদের মাঝে আছে সৌন্দর্য, শক্তি, চিন্তা। একের প্রতি অপরের ভালবাসা। তারপর যেদিন বার্ধক্য আসে তখন তোমাদের কেশ হয় শুভ্র, শরীর দুর্বল হয়, চলতে পার না, তোমরা থেমে পড় আর ওঠ না। তোমাদের একের প্রতি রয়েছে অপরের ভালবাসা। আমি অবাক হয়ে ভাবি আমাদের মধ্যে যদি ভালবাসা না থাকত, একের প্রতি অপরের করুণা না থাকত, তাহলে কি হতো! এ তো একটি অতি সহজ সরল চিন্তা.......।”

টমাস কার্লাইল এই কথাগুলো “তোমাদের একের প্রতি রয়েছে অপরের ভালবাসা” সম্ভবত তিনি পবিত্র কুরআনের কোন ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেই বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। যে আয়াতটি পাঠ করে তিনি এ কথা বলতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন সেটি সম্ভবতঃ

( وَمِنۡ ءَایَـٰتِهِۦۤ أَنۡ خَلَقَ لَكُم مِّنۡ أَنفُسِكُمۡ أَزۡوَ  ٰ⁠جࣰ ا لِّتَسۡكُنُوۤا۟ إِلَیۡهَا وَجَعَلَ بَیۡنَكُم مَّوَدَّة وَرَحۡمَةًۚ إِنَّ فِی ذَ  ٰ⁠ لِكَ لَـَٔایَـٰت لِّقَوۡم یَتَفَكَّرُونَ )

এবং তাঁর নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছেঃ তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হতে সৃষ্টি করেছেন তোমাদের সঙ্গিনীদেরকে, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও এবং তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য এতে অবশ্যই বহু নিদর্শন রয়েছে।

— কুরআন ৩০: ২১

1. And among His signs is this, that He created for you mates from among yourselves, That ye may dwell in TRANQUILLITY WITH and He has put love and mercy between your (hearts): Verily in that are signs for those who reflect — Translated by A. Yusuf Ali. ( Holy Quran 30: 21]

2. And one of his signs it is, that he hath created wives for your own species. That YE MAY DWELL WTTH THEM, and hath put love and tenderness between you. Herein truly are signs for those who reflect.

3. By another sign he gave you wives from among yourselves, that ye might LIVE IN JOY WTTH THEM, and planted love and kindness into your hearts. Surely there are signs in this for thinking men— Translated by N.J. Dawood

এখানে ইংরেজিতে একই আয়াতের তিনটি অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। প্রথমটি একজন মুসলমান, ইউসুফ আলী, কৃত। দ্বিতীয়টি একজন খ্রিস্টান পাদ্রী, রেভারেণ্ড রডওয়েল, কৃত এবং শেষটি একজন ইরাকি ইহুদী, এন.জে.দাউদ কর্তৃক অনূদিত।

দুর্ভাগ্য যে, টমাস কার্লাইল এই তিনটির কোনটিই পাঠ করার সুযোগ পাননি, কারণ তখন এই তিনটি ছিল না। ১৮৪০ সালে ৮৫ পৃষ্ঠার যেটি তিনি পেয়েছিলেন সেটি সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেন, “আমরা কুরআন পাঠ করতে পারি আমাদের নিকট সেল কর্তৃক যে অনুবাদ রয়েছে সেটি মোটামুটি ভাল।” তখন সেল কর্তৃক পবিত্র কুরআনের একমাত্র ইংরেজি অনুবাদটি ছিল।

উদ্দেশ্যের মাঝে খুঁত রয়েছে

কার্লাইল তাঁর দেশবাসীর প্রতি যথেষ্ট উদার ছিলেন। ইংরেজি ভাষায় প্রথম কুরআন শরীফ অনুবাদ করেন জর্জ সেল। তার অনুবাদের পেছনে অবশ্যই কোন উদ্দেশ্য ছিল। তিনি ইসলামের এই পবিত্র গ্রন্থের প্রতি যে মনোভাব পোষণ করতেন সেই বিষয়ে কোন গোপনীয়তা ছিল না। ১৭৩৪ সালে প্রকাশিত এই অনুবাদের মুখবন্ধে তিনি লিখেছেন যে তার উদ্দেশ্য ছিল “মানুষ মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এবং তার জালিয়াতি ধরার জন্য এই অনুবাদ করেছেন।” তিনি লিখেছেন “এমন প্রকাশ্য জালিয়াতি কে ধরতে পারে? একমাত্র প্রোটেস্টান্টরাই কুরআনকে যথাযথভাবে আক্রমণ করতে সক্ষম এবং আমি বিশ্বাস করি এদের উৎখাতের মধ্যে তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে ভাগ্যের আশীর্বাদ।”—জর্জ সেল।

পূর্ব ধারণার বশবর্তী হয়েই তিনি অনুবাদ কাজে হাত দিয়েছেন। আমরা এখন বিচার করে দেখতে পারি এই জর্জ সেলের পাণ্ডিত্যপূর্ণ অনুবাদ কতখানি নিখুঁত!

জর্জ সেলের এই বিশেষ পঙক্তিটি কার্লাইলকে যথেষ্ট আকৃষ্ট করেছিল। এর সঙ্গে পূর্বে উল্লিখিত একজন খ্রিস্টান এবং একজন ইহুদীর অনুবাদ তুলনীয়। আমি মনে করি জর্জ সেল তার সময়ে আমাদের সঙ্গিনী, স্ত্রী অথবা সহধর্মিণী সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে তাদেরকে নিছক যৌন বিষয় হিসাবে বর্ণনা করার মত “নারী অপেক্ষা পুরুষ শ্রেষ্ঠ এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী পুরুষ শূকর ছিলেন।”

তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেছিলেন মাত্র, যা কার্লাইল লক্ষ্য করেননি। আরবি শব্দ “লিতাস কুনূ” যার অর্থ শান্তি, সান্ত্বনা, খুঁজে পাওয়া, তাকে তিনি বিকৃত করে বলেছেন ‘কো হেবিট’ অর্থাৎ সহবাস অর্থাৎ বৈধভাবে বিবাহিত না হয়েও যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে একত্রে বসবাস করা।

আল্লাহ্ তা'আলা নিজে কুরআন শরীফের প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে বাছাই করে ব্যবহার করেছেন, সেখানে আল্লাহর কুদরতের ছাপ রয়েছে এবং সেগুলোই আল্লাহর শ্রেষ্ঠতুের মহিমা ঘোষণা করে।

একটি নিদর্শন প্রার্থনা করুন

কোন নিদর্শন? তাদের নির্বোধ মনমানসিকতা যেভাবে চায়, সেভাবেই তারা বিশেষ ধরনের নিদর্শন বা অলৌকিকতা আশা করে। আল্লাহর পক্ষে সবকিছুই সম্ভব; কিন্তু আল্লাহ্ যেমন খুশি তেমন যে কোন নির্বোধের মিথ্যা দাবি পূরণ করেন না। সেজন্য তিনি তাঁর নিদর্শনসমূহকে স্পষ্টরূপে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য নবী—রাসূল পাঠিয়েছেন এবং তাঁকে অস্বীকার করার ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। এটাই কি যথেষ্ট নয়? অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা যেসব দাবি উত্থাপন করে সেগুলো প্রধানত এইরূপ, যেমন—

নির্দিষ্টভাবে তারা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলেছিল, “আকাশ পর্যন্ত একটা সিড়ি বানিয়ে দাও, যাতে আল্লাহর কাছ থেকে তুমি যে গ্রন্থ পেয়েছ তা আমরা দেখতে পারি। তাহলে আমরা বিশ্বাস করব।” তারা আরও বলেছিল, “ঐ যে পাহাড় দেখা যাচ্ছে ঐ পাহাড়টাকে সোনার পাহাড় বানিয়ে দাও। তাহলে আমরা বিশ্বাস করব।” আরও বলেছিল “মরুভূমিতে পানির প্রস্রবণ বইয়ে দাও, তাহলে আমরা বিশ্বাস করব।”

তিনি মুশরিকদের এসব অযৌক্তিক ও উদ্ভট দাবির উত্তর অত্যন্ত বিনম্রভাবে দিয়েছিলেনঃ “আমি কি বলেছি আমি একজন ফেরেশতা? আমি কি বলেছি, আমার হাতে আল্লাহর ধনভাণ্ডার রয়েছে? শুধুমাত্র আমার নিকট যা প্রত্যাদেশ হয় আমি তাই প্রকাশ করি।”

অবিশ্বাসীদের প্রতিউত্তর দেয়ার জন্য আল্লাহ্ তা'আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে রুচিপূর্ণ জবান দিয়েছিলেন তার নমুনা হচ্ছে।

( قُلۡ إِنَّمَا ٱلۡـَٔایَـٰتُ عِندَ ٱللَّهِ وَإِنَّمَاۤ أَنَا۠ نَذِیر مُّبِینٌ )

বল, ‘নিদর্শন আল্লাহর ইখতিয়ারে। আমি তো একজন প্রকাশ্য সতর্ককারী মাত্র।

—কুরআন ২৯: ৫০

এই সকল অবিশ্বাসীগণের বিশেষ ধরনের চিহ্ন বা নিদর্শন দাবির প্রেক্ষিতে কুরআন শরীফে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিম্নে বর্ণিত আয়াতটিও দিয়েছেন। তবু পৌত্তলিক নির্বোধ মানসিকতা সম্পন্ন এই সকল মুশরিকরা তার কাছে অলৌকিক চিহ্ন প্রদর্শনের দাবি করেছিল। এটা সত্য যে তাদের সন্দেহপরায়ণ মানসিকতা ও দুর্বল বিশ্বাসের কারণে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছিল অলৌকিক চিহ্ন দেখার। তাদেরকে বলা হয়েছে কুরআনের প্রতি লক্ষ্য কর। বারবার বলা হয়েছে অলৌকিকতা যদি দেখতে চাও তবে কুরআনের প্রতি লক্ষ্য কর।

( أَوَلَمۡ یَكۡفِهِمۡ أَنَّاۤ أَنزَلۡنَا عَلَیۡكَ ٱلۡكِتَـٰبَ یُتۡلَىٰ عَلَیۡهِمۡۚ إِنَّ فِی ذَ  ٰ⁠ لِكَ لَرَحۡمَة وَذِكۡرَىٰ لِقَوۡم یُؤۡمِنُونَ )

এটা কি তাদের জন্য যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার নিকট কুরআন অবতীর্ণ করেছি, যা তাদের নিকট পাঠ করা হয়? এতে অবশ্যই মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্য অনুগ্রহ ও উপদেশ রয়েছে।

কুরআন ২৯: ৫১

দুইটি প্রমাণ

আল্লাহ্ তা'আলা নিজে কুরআন শরীফের অলৌকিক প্রকৃতি ও উধ্বজগতের রচনার প্রমাণস্বরূপ দুটি যুক্তি তুলে ধরেছেনঃ

১. “আমরা (আল্লাহ তা'আলা) উন্মোচন করেছি যে তোমার নিকট (হে হযরত মুহম্মদ সা) এই গ্রন্থ যে তুমি সম্পূর্ণ নিরক্ষর ও অশিক্ষিত ব্যক্তি।

একজন উম্মি রাসূল যিনি পড়তে ও লিখতে জানেন না। এ সম্পর্কে থমাস কার্লাইল বলেনঃ

“অপর একটি বিষয় আমাদের বিস্মরণ করা উচিত নয় যে, তিনি কোন বিদ্যালয়ে শিক্ষালাভের জন্য যাননি। যাকে আমরা বলি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তা তিনি একেবারেই লাভ করেননি।”

তদুপরি আল্লাহ তাআলা, যিনি এই গ্রন্থের রচয়িতা, তিনি নিজেই সাক্ষ্য দিয়েছেন, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাবি যে, তিনি এরূপ রচনা করতে সক্ষম নন। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই গ্রন্থের রচিয়তা হতে পারেন না। সেই সত্যপরায়ণতা সম্পর্কে বলেনঃ

( وَمَا كُنتَ تَتۡلُوا۟ مِن قَبۡلِهِۦ مِن كِتَـٰب وَلَا تَخُطُّهُۥ بِیَمِینِكَۖ إِذ ا لَّٱرۡتَابَ ٱلۡمُبۡطِلُونَ )

তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোন কিতাব লেখ নি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে।

—কুরআন ২৯: ৪৮

আমাদের কাছে পবিত্র কুরআন রচয়িতা মহান আল্লাহর যে যুক্তি রয়েছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যদি লেখাপড়া জানতেন তবে মিথ্যাচারীরা কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে সন্দেহ করত। তবে কুরআন সম্পর্কে এ অকাট্য যুক্তিটি থাকত না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যদি শিক্ষিত হতেন তাহলে তার শত্রুরা সম্ভবত অভিযোগ আনতে পারত যে তিনি খ্রিস্টান ও ইহুদীদের লেখা থেকে নকল করেছেন অথবা প্লেটো ও অ্যারিস্টোটল অধ্যয়ন করেছেন অথবা তাওরাত, যবুর বা ইঞ্জিল পাঠ করেছেন। তারপর সেগুলো সুন্দরভাবে মুখস্থ করে কুরআনকে আল্লাহর কিতাব বলে প্রচার করেছেন, তিনি লেখাপড়া জানলে তারা সম্ভবত এরূপ অভিযোগও উত্থাপন করতে পিছপা হতো না।

দশম শতাব্দীর পূর্বে বাইবেলের কোন আরবি অনুবাদ হয়নি। ফলে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর সময় কারো পক্ষে বা আরবদের পক্ষে বাইবেল আরবি ভাষায় পাঠ করা সম্ভব ছিল না। মিথ্যা দম্ভকারী বক্তাদের হয়তো যুক্তি থাকতে পারত; কিন্তু সেই সামান্য সুযোগও অবিশ্বাসীদের জন্য থাকল না।

২. “এই গ্রন্থ”? হ্যাঁ এই গ্রন্থ নিজেই প্রমাণ যে এটি আল্লাহর রচনা। যে-কোন দিক থেকে এই গ্রন্থ পাঠ করা যাক না কেন, যেভাবে পরীক্ষা করা হোক না কেন, আপনাদের যদি সত্যি সন্দেহ থাকে তাহলে এ গ্রন্থের সুমহান রচয়িতা যে চ্যালেঞ্জ করেছেন সেটি গ্রহণ করুনঃ

( أَفَلَا یَتَدَبَّرُونَ ٱلۡقُرۡءَانَۚ وَلَوۡ كَانَ مِنۡ عِندِ غَیۡرِ ٱللَّهِ لَوَجَدُوا۟ فِیهِ ٱخۡتِلَـٰف ا كَثِیر ࣰا)

তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অনুধাবন করে না? এটি যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও হত তবে তারা তাতে অনেক অসঙ্গতি দেখতে পেতো।

– কুরআন ৪: ৮২

পূর্বাপর সঙ্গতি

কোন মানুষ দশ বছরের অধিককাল প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন ও শিক্ষা দিচ্ছেন, তার পক্ষে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই ধারায় লিখে যাবেন এটা ভাবা যায় না। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চল্লিশ বছর বয়স কালে সর্বপ্রথম আল্লাহর ওহী প্রাপ্ত হন। তারপর তেষট্টি বছর বয়সে যখন তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এই ২৩ বছর ধরে তিনি একই ধারায় একইভাবে একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে ইসলাম প্রচার করেছেন ও অনুশীলন করেছেন। এই দীর্ঘ তেইশ বছর ধরে তিনি জীবনের বহু, ঘাত-প্রতিঘাতের সম্মুখীন হয়েছেন। যে কোন মানুষ অনুরূপ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকালে সম্মানজনক সমঝোতা করতে বাধ্য হতেন। অথবা নিজে কখন কখন অসঙ্গত কাজে বাধ্য হতেন। কোন মানুষ চিরকাল একই জিনিস একইভাবে লিখতে পারে না। কুরআন শরীফের বাণী সর্বত্র পূর্বাপর সঙ্গতিপূর্ণ, কোথাও অমিল নেই, অসঙ্গতি নেই। অবিশ্বাসীদের প্রতিবাদ কি আপন বিবেক, বিচার-বিবেচনার বিরুদ্ধে নিছক তর্কের জন্য তর্ক ও একগুয়েমী নয়?

তদুপরি পবিত্র কুরআনে এমন সকল বিষয় উল্লেখ আছে যেগুলো বিশ্বপ্রকৃতি সম্পর্কিত অথচ সেই যুগে বিষয়গুলি কারোই জানা ছিল না। পরবর্তীকালে বিবর্তনের মাধ্যমে এবং বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের ফলে সেইগুলো আবিষ্কৃত হয়েছে, স্বীকৃতি লাভ করেছে। এটি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে অশিক্ষিত মন অবশ্যই পরস্পর বিরোধী কল্পনা ও দিশেহারা ভাবনায় অস্থির হয়ে পড়ত।

সপ্রমাণিত সাক্ষ্য

বারবার যখন এই সকল বাতিলগ্রস্ত ও অস্থিরচিত্ত কিছু সংখ্যক ব্যক্তি, আল্লাহর নবীর কাছ থেকে অলৌকিক কিছু দেখাবার জন্য দাবি করতে লাগল তখন তাকে কুরআন প্রদর্শন করতে বলা হলো। বলা হলো যে, কুরআন আল্লাহর বাণী এবং সেটাই অলৌকিক -সর্বত্র অলৌকিক। যারা জ্ঞানী, শিক্ষিত এবং আত্মিক অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন এবং যারা নিজেদের প্রতি সৎ তারা আল কুরআনকে প্রকৃত অলৌকিকতা বলে চিনতে পেরেছিল এবং মেনেও নিয়েছিল।

( بَلۡ هُوَ ءَایَـٰتُۢ بَیِّنَـٰت فِی صُدُورِ ٱلَّذِینَ أُوتُوا۟ ٱلۡعِلۡمَۚ وَمَا یَجۡحَدُ بِـَٔایَـٰتِنَاۤ إِلَّا ٱلظَّـٰلِمُونَ )

বস্তুত যাদেরকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে তাদের অন্তরে এটি স্পষ্ট নিদর্শন। কেবল জালিমরাই আমার নিদর্শন অস্বীকার করে।

—কুরআন ২৯: ৪৯

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন