মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা
লেখকঃ আহমদ দীদাত
৫
অধ্যায় তিনঃ আল-কুরআনঃ অভূতপূর্ব সংরক্ষণ পদ্ধতি
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/5
বিশ্বের পুরাতন ধর্মীয় গ্রন্থগুলোর মধ্যে যেগুলো আজও বিদ্যমান তার মধ্যে পবিত্র কুরআন সম্পূর্ণরূপে বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। এর লিপিবদ্ধকরণ ও সংরক্ষণ প্রকৃতই অলৌকিক। সাধারণভাবে মানুষ যা কিছু বর্ণনা করে তা থেকে এর বর্ণনা সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী। স্বল্পদৃষ্টি সম্পন্ন ও বৈরিভাবাপন্ন অনেকেই এই মহাগ্রন্থকে সামস্যহীন বা অসম্বন্ধ বলে থাকেন। এই মহাগ্রন্থের সজ্জিতকরণ রীতি অবশ্যই সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির। এর কোন তুলনা নেই। এটিই এর বিশেষত্ব। এটি অলৌকিক, আমার বক্তব্যকে উপমা দ্বারা প্রমাণ করতে চেষ্টা করব।
মানবিক পদ্ধতি
অন্যান্য প্রতিটি ধর্মীয় গ্রন্থ এক বিশেষ গতানুগতিক ধারায় বর্ণিত, অনেকটা ‘একদা এক শিয়াল... অথবা এক মেষ শাবক..... ইত্যাদির মত যেমন,
১। আদিতে (একদা) ঈশ্বর আকাশমণ্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করলেন।
– আদি পুস্তক ১: ১
২। আদিতে (একদা) বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন।
৪। সদাপ্রভুর দাস, মোশির মৃত্যু হলে পর সদাপ্রভুর নূনের পুত্র যিহোশূয় নামে মোশির পরিচারককে বললেন।
—যোসুয়া ১: ১
৫। যিহোশূয়র মৃত্যুর পর ইস্রায়েল সন্তাগণ সদাপ্রভুর কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করলেন।
— বিচারকগণ ১: ১
৬। আর বিচারককর্তৃকগণের কর্তৃত্বকালে দেশে একবার দুর্ভিক্ষ হয়।
—রূত ১: ১
৭। পর্বতময় ইফ্যয়িম প্রদেশস্থ রামার্থিমসোফীম নিবাসী ইলআকানা নামে একজন ইফ্রয়িমী ছিলেন।
—১ স্যামুয়েল ১: ১
৮। শৌলের মৃত্যুর পরে এই ঘটনা হল।
—২ স্যামুয়েল ১: ১
৯। দায়ূদ রাজা বৃদ্ধগত বয়স্ক হয়েছিলেন; এবং লোকেরা তার গাত্রে অনেক বস্ত্র দিলেও তা উষ্ণ হত না।
—১ রাজা
১০। পারস্য-রাজা কোরসের প্রথম বছর যিরমিয় দ্বারা কথিত সদাপ্রভুর বাক্যসিদ্ধির নিমিত্ত।
—ইষ্রা ১: ১
১১। অহশ্বরশের সময়ে এই ঘটনা হল।
—ইষ্টেরের ১: ১
১২। ত্রিংশ বৎসরের চতুর্থ মাসে, মাসের পঞ্চম দিবসে, যখন আমি কবার নদীর তীরে।
— যিহিঙ্কেল ১: ১
এসব উদাহরণ আমাদের যদি দিশেহারানা করে তাহলে আর কি আছে যা আমাদের দিশেহারা করবে?
আমরা নিশ্চয়ই ‘একদা এক’ অস্বাভাবিক অবস্থা নির্দেশক লক্ষণসমষ্টি দ্বারা আক্রান্ত। মানুষের তৈরি কাহিনীর প্রতি আমাদের এক প্রকার পক্ষপাত সৃষ্টি হয়েছে। এসব কাহিনী যদি সত্যিও হয় বর্ণনাভঙ্গি, বিন্যাসধারা, সজ্জিতকরণ প্রক্রিয়া সবই এক প্রকার। এভাবেই মানুষ চিন্তা করে, কথা বলে, লেখে সেইজন্য তাকে দোষ দেয়া যায় না। মানুষ মানুষই।
উপরে যেসব উদাহরণ দেওয়া হল এ সবগুলো খ্রিস্টান জগতের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় সংস্করণের বাইবেল গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। লক্ষণীয় যে, উপরের উদ্ধৃতিগুলো বাইবেলের প্রতিটি বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের প্রথম পঙক্তি। প্রতিটি আরম্ভে বলা হয়েছে এখন অর্থাৎ ‘একদা’। যে কেউ বাইবেলের পুস্তকগুলোর মধ্যে এই প্রকার আরম্ভ আরও খুঁজে পেতে পারেন তবে বাইবেলে ব্যবহৃত শব্দাবলির বর্ণনা ক্রমিক সূচি দেখলে কোন সাহায্য পাওয়া যাবে না। আমি যেভাবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা পাঠ করে অগ্রসর হয়েছি সেভাবেই অগ্রসর হতে হবে।
বাইবেলের বর্ণনাক্রমিক শব্দসূচির সাহায্যে নয়
আমি বাইবেলের দুটি বর্ণনাক্রমিক শব্দসূচি পরীক্ষা করে দেখেছি। একটির প্রকাশক খ্রিস্টানদের মধ্যে জিহোভার সাক্ষী নামক শাখা (Jehova's witnesses) অপরটির প্রকাশক ইয়োংস এনালিটিকাল কোনকরডেন্স (Young's Analytical Concordance to the Bible)। দুটিতেই ৩,০০,০০০ শব্দসূচি রয়েছে। সেখানে ২৭ টা ‘এখন’ বা 'Now' রয়েছে, কিন্তু আমি যে উদ্ধৃতিগুলো দিলাম তার একটিও সেখানে নেই। এর কারণ সহজেই অনুমেয়।
আমি আপনাদের ধৈর্যের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চাই না। আমি বুঝতে পারছি আপনারা চাচ্ছেন আমি অগ্রসর হই। আপনারা বলবেন, “ঠিক আছে, এখন মেহেরবানী করে আপনি আপনার কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার গল্প বলুন।”
আমি বলতে আরম্ভ করি, “সেদিন রমযান মাসের ২৭ তারিখের রাত। ইসলামের পয়গম্বর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মক্কা শহরের বাইরে হেরা গুহায় অবস্থান নিয়েছেন। প্রায়ই তিনি হেরা গুহা পর্বতের গুহায় শান্তি, নীরবতা ও ধ্যান করার জন্য অবস্থান নিতেন। তার দেশবাসীর মাতলামী, বদমায়েশী, পৌত্তলিকতা, বিবাদ-বিসংবাদ, অবিচার, নিষ্ঠুরতা ইত্যাদি সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তামগ্ন হয়ে সমাধানের উপায় অনুসন্ধান করতেন। এমন অবস্থা যে প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক গীবন তার Decline and Fall of the Roman Empire গ্রন্থে বলেছেনঃ আরবরা মানুষরূপী পশু। অন্যান্য প্রাণীজগত হতে তাদের পার্থক্য খুব কম। কোন প্রকার বিবেচনাবোধ তাদের নেই।”
“হেরা পর্বতে নির্জনে সমস্যা সমাধানের গভীর চিন্তায় মগ্ন। প্রায়ই একাকী সেখানে যান। কিন্তু কখনো কখনো প্রিয়তম স্ত্রী উম্মুল মুমেনিন খাদিজাতুল কোবরা সঙ্গে থাকেন।
প্রথম আহ্বান
এক রাত লায়লাতুল কদরের রাত। যখন আল্লাহর অনাবিল শান্তি সমস্ত সৃষ্টি জগতের উপর নেমে আসে এবং সমস্ত প্রকৃতি আল্লাহর দিকে উর্ধ্বমুখী হয় সেই রাতের মধ্যপ্রহরে আল্লাহর কিতাব তৃষ্ণার্ত আত্মার নিকট উন্মুক্ত হল। আল্লাহর ফেরেশতা জিবরাঈল (আ) তার নিকট উপস্থিত হলেন এবং তার মাতৃভাষায় তাকে নির্দেশ করলেনঃ “ইকরা” অর্থ ‘পাঠ কর’ অথবা ‘উচ্চারণ কর’ অথবা ‘ঘোষণা কর’। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এতে ভয় পেলেন এবং সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেন। এটা কোন ডিগ্রী প্রদান বা কনভোকেশন অনুষ্ঠান নয়। তিনি ভয়ে সচকিতভাবে চিৎকার করে বলে উঠলেনঃ “মা আনা বেকারিন” যার অর্থ “আমি শিক্ষিত নই।” ফেরেশতা পুনরায় আহবান করলেন, ‘ইকরা’। দ্বিতীয় বার একই ভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম জবাব দিলেন। জিবরাঈল (আ) তাকে দৃঢ়ভাবে আলিঙ্গন করে তৃতীয়বার আহবান করলেনঃ “ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজী খলাক্।” মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এখন অনুধাবন করলেন তাকে কি করতে হবে, যা বলা হয়েছে তাই পুনরায় উচ্চারণ করতে হবে। যেহেতু আরবি শব্দ “ইকরা' অর্থাৎ ‘পড়’, ‘উচ্চারণ কর’, ‘আবৃত্তি কর’। সূরা আলাক-এর উপরোক্ত প্রথম আয়াতের পর আরও চারটি আয়াত পুনরায় বলা হয় এবং পাঠ করা হল যেগুলো এভাবেই এলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর উপর প্রথম প্রত্যাদেশ। অবশেষে পবিত্র কুরআন লিখিত হল।
“জনাব দীদাত, থামুন” আমি যেন আপনার চিৎকার শুনতে পাচ্ছি। আপনার কুরআন নাযিল সম্পর্কিত যে বর্ণনা সেগুলো আপনি বলছেন, যে অসংখ্য উদাহরণ দিয়েছেন তা থেকে এটিও ভিন্ন নয়। সেগুলো মানুষের হাতে তৈরি। সেগুলো কি ঐশ্বরিক নয়? ভ্ৰম প্রবণ? ঠিক! আমি আনন্দিত যে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন কিভাবে মানুষের আত্মগত মন চিন্তা করে কথা বলে এবং লিপিবদ্ধ করে। যখন হতে আপনি আমাকে বললেন, কুরআন প্রত্যাদেশ সম্পর্কিত কাহিনী বলুন এবং আমি বলতে শুরু করলাম, “ সেদিন রমযান মাসের ২৭ তারিখের রাত। ...... অতঃ পর পবিত্র কুরআন লিখিত হল।” এগুলো ছিল আমার কথা, পবিত্র কুরআন থেকে, হাদীস থেকে, ইতিহাস থেকে এবং জ্ঞানী ব্যক্তিদের কাছ থেকে ধার করা কথা; এগুলো আমি দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি। পবিত্র কুরআনের ধর্মগ্রন্থে মানুষের হাত আছে। তেমন কোন ছায়া সেখানে নেই। এটিই যেভাবে এসেছে সেইভাবেই সংরক্ষিত হয়েছে। নিম্নে আমি আপনাদের পরীক্ষার জন্য নাযিলকৃত প্রথম পাঁচ আয়াত দিলাম,
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন – সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক' হতে। পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন - শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।
— কুরআন ৯৬: ১-৫
অদ্বিতীয় লিপিবদ্ধকরণ
পবিত্র কুরআনের বাণী নিবন্ধন, সে আরবি অথবা অন্য কোন ভাষায় অনূদিত হলেও একই ধারাক্রমে লিপিবদ্ধ করা হয়ে.ছে। সেখানে কোন ‘যদি’ এবং ‘কিন্তু’ নেই।
এই বাণী নিবন্ধনে অথবা তার অনুবাদে কোথাও পাওয়া যাবে না যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম “চল্লিশ বছর বয়সে তার প্রথম আহবান লাভ করেছিলেন।” কোথাও পাওয়া যাবে না “তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ছিলেন।” কোথাও পাওয়া যাবে না যে “তিনি জিবরাঈল (আ)-কে দেখলেন,” অথবা “তিনি ভীত হলেন”, অথবা ‘ইকরা' শোনার পর তার কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। প্রথম পাঁচ আয়াত শোনানোর পর ফেরেশতা যখন চলে গিয়েছিলেন তখন, “মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম তিন মাইল দূরে মক্কা শহরে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজার নিকট দৌড়ে গিয়েছিলেন এবং তার উপর কি ঘটেছে তা বর্ণনা করেছিলেন ও তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে বলেছিলেন।” এভাবে যে বর্ণনার ধারা তাকে আমি বলি আমাদের পদ্ধতি, মানুষের পদ্ধতি, অথবা “একদা এক সময়ে” পদ্ধতি। পবিত্র কুরআনে এভাবে কোন কিছুই বর্ণিত হয়নি। এর বর্ণনা ও সংরক্ষণ সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রকৃতির, বলা চলে অদ্বিতীয় পদ্ধতি। সংক্ষেপে অলৌকিক।
তাছাড়া মানুষের সৃষ্ট যে কোন সাহিত্যকর্ম আরম্ভের একটি সূচনা থাকে। কিন্তু পবিত্র কুরআনের প্রথম শব্দ ও প্রথম আয়াত এই মহাগ্রন্থের প্রথম অধ্যায় অথবা প্রথম আয়াত নয়। এই আয়াতটি পবিত্র কুরআনের ৯৬তম অধ্যায়ে রয়েছে। কারণ এর স্রষ্টা মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর প্রিয়তম রাসূলকে সেইভাবেই নির্দেশ করেছিলেন। পৃথিবীর কোন ধর্মগ্রন্থ এরূপ নয় অথবা এরূপ পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বা লিপিবদ্ধ হয়নি। কারণ এই প্রত্যাদেশ আদি অকৃত্রিম বিশুদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত হয়েছে।
একজন কানাডিয়ান মনস্তত্ত্ববিদ
কানাডা থেকে আগত এক যুবকের সঙ্গে, সূরা “আল আলাক”এর প্রথম পাঁচ আয়াত যেটি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট সর্বপ্রথম অবতীর্ণ হয়েছিল, সেই বিষয়ে আলোচনা করার সুযোগ হয়েছিল আমার। আমি তাকে দক্ষিণ ভূমণ্ডলের সর্ববৃহৎ মসজিদ দেখাতে গিয়েছিলাম। কথা প্রসঙ্গে জানতে পারলাম তিনি মনস্তত্ত্ব বিষয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সে অধ্যয়ন করেছেন। আমি তাকে এই পাঁচটি আয়াতে করীমার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। বললাম, ‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম যে অভিজ্ঞতা ও বাণী লাভ করেছিলেন সেই ক্ষেত্রে পড়া, লেখা এবং শিক্ষা গ্রহণ যা তার নিকট সম্পূর্ণ অপরিচিত ছিল এই বিষয়টি তিনি কিভাবে দেখছেন। লেখা বা পড়ার বিষয়ে তার কোন পূর্বাভিজ্ঞতা ছিল না, অথচ তাকে যখন পড়তে বলা হল এ অবস্থায় তার মধ্যে কিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, যে অভিজ্ঞতার অস্তিত্ব ছিল না সেই শব্দগুলো পড়তে বলা হল, এই বিষয়টি আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন।’ তিনি বললেন, ‘তিনি বুঝতে পারছেন না।’ স্বীকার করলেন যে বিষয়টির সমস্যা নিয়ে তিনি চিন্তা করছেন। আমি বললাম তাহলে তিনি যেভাবে বলেছেন, আমাদের সেটাই মেনে নেওয়া উচিত। তারপর আমি সূরা “নাজম” থেকে পাঠ করলামঃ
শপথ নক্ষত্রের, যখন সেটি হয় অস্তমিত, তোমাদের সঙ্গী বিভ্রান্ত নয়, বিপথগামীও নয়, এবং সে মনগড়া কথাও বলে না; এটা তো ওহী, যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়, তাকে শিক্ষাদান করে শক্তিশালী।
– কুরআন ৫৩: ১-৫
তার দেশবাসীকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বলতে হয়েছে—
বল, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই , আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে তোমাদের ইলাহ একমাত্র ইলাহ।
—কুরআন ১৮: ১১০
তরুণ কানাডিয়ান বিনয়ের সঙ্গে বললেন, “বিষয়টি নিয়ে আমাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে।” আমরা যদি কুরআন শরীফ ভালভাবে পাঠ করি এবং সচেতন হই তাহলে বিজ্ঞানের যে কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ পেতে পারি।
অলৌকিক সাংবাদিকতা
আইপিসিআই সেন্টারে সর্বক্ষণ মৌমাছির চাকের মত নানা লোক নানা কর্মে ব্যস্ত, সেখানে আলোচনা ও বক্তৃতা শোনার জন্য বহু লোকের সমাগম ঘটত। সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের অনেক প্রতিনিধিও উপস্থিত হত। একবার আমি আমার সাক্ষাতকার গ্রহণকারী একজন সাংবাদিককে বললাম, আমি তাকে দেখাব পবিত্র কুরআনের সাংবাদিকতার অলৌকিকতা।
শুনতে কেউ অস্বীকার করে না। আমি মহান পয়গম্বর হযরত মূসা (আ)-এর গল্প দিয়ে শুরু করলাম। বলার ধরন সেই “কোন এক সময় এক”-এর মতো। কোন উপায় নেই। যা হোক মূসা (আ) এবং বালরুশ অথবা মূসা (আ) শৈশবকাল তাঁর মা ও বোন এসব বিস্তারিত বর্ণনা করার অবসর ছিল না। সেগুলো বাদ দিয়ে আমি আরম্ভ করলাম একদিন মূসা (আ) দেখতে পেলেন দুজন লোক ঝগড়া করছে। লোক দুজনের একজন তার গোত্রের, অপরজন শত্রুপক্ষের। একজন ইহুদী, অপরজন মিশরী। তিনি ইহুদীকে সাহায্য করতে গিয়ে এক পর্যায়ে তর্কের মাঝে মিশরীকে এমন এক থাপ্পর মারলেন যে মিশরী তৎক্ষণাৎ মৃত্যুবরণ করল।
হযরত মূসা (আ) তখন দেশ ছেড়ে পালিয়ে সিনাই মরুভূমিতে আশ্রয় নিলেন। সেখানে মাইদানি গোত্রের লোক বাস করত। তাদের দুই সুন্দরী মেয়ে বিপদে পড়েছিল। তাদেরকে সাহায্যে করলেন, তখন তাদের বাবা তাকে চাকুরী দিলেন। এখানে আট বছর অতিবাহিত হল। হযরত মূসা (আ) এই নিম্নমানের জীবনযাপন করতে করতে অস্থির হয়ে উঠলেন। যে মানুষ নগরজীবনে রাজকীয়ভাবে বড় হয়েছেন তার পক্ষে এ জীবন আর ভাল লাগছিল না। তিনি তার শ্বশুরের নিকট হতে মুক্তির জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলেন। সেই লোক বিবেচনা সম্পন্ন ও বাস্তববাদী বিধায় হযরত মূসাকে (আ) চলে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। হযরত মূসা (আ) তাঁর স্ত্রী ও সন্তানদেরসহ তার অংশের প্রাপ্য ভেড়া ও ছাগলের পাল নিয়ে রওয়ানা দিলেন। কিছুকাল পর দেখলেন তিনি তখনও তার সিনাই অঞ্চলেই আছেন। পথের দিক হারিয়ে ফেলেছিলেন। সঙ্গে যে খাদ্য হিসাবে মাংস ছিল সেগুলো শেষ হয়ে গিয়েছে। অবশ্য তখনও যথেষ্ট ইহুদীদের রুটি ‘মাদজো’ ছিল। কিন্তু সমস্যা হল মাংসের। সেজন্য একটি গরু বা ছাগলকে জবাই করতে হয়। জবাই করা সহজ কিন্তু আগুন জ্বালানো কঠিন পরিশ্রমের কাজ। দুখণ্ড ভিন্ন প্রকৃতির বস্তু আধাদিন ঘর্ষণ করলে আগুন জ্বালানো সম্ভব। সেকালে তো আর দেশলাই বা লাইটার ছিল না। তাই তিনি গড়িমসি করতে লাগলেন, আজ করবেন না কাল করবেন। তারপর মাংসের সমস্যা দূর হবে .........”
-“মিস্টার দীদাত আপনার অলৌকিক ঘটনা কোথায়?”
-এতক্ষণ আমি গল্পের পশ্চাদভূমি বর্ণনা করছিলাম। অলৌকিকতা রয়েছে অন্যত্র। উপরের সমস্ত ঘটনা সেই সঙ্গে আরও কিছু ঘটনা মাত্র চার লাইনের বাক্যে রয়েছে। সেই চার লাইন অতি সুন্দর বাক্য। কিন্তু সেই সৌন্দর্য অনুধাবন করতে হলে আপনাকে আরেকটি জিনিস লক্ষ্য করতে হবে। সেটি আমার নিকট সাংবাদিকতার সর্বোচ্চ নিদর্শন ডারবান শহর থেকে ত্রিশ কিলোমিটার উত্তরে আমার বাসা। অফিস শহরে। এন-২ ফ্রি ওয়ে (N-2 Freeway) তৈরি হওয়ার আগে আমি সমুদ্র পারের রাস্তা দিয়ে ডারহামে আসতাম। এই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় এমটি থিয়েটার অতিক্রম করতে হয়। এমপি থিয়েটারের সংযোগস্থলে নিয়মিত দেখতাম হকাররা দি নাটাল মারকারি নামে খবরের কাগজ বিক্রি করছে। তারা ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার জন্য কাগজের হেড লাইন সম্বলিত প্লাকার্ড রাখে। বারবার ঐ প্লাকার্ড পড়ার পর একদিন স্থির করলাম ওখান থেকে সেদিন কাগজ কিনব না। তার পরিবর্তে সেন্ট্রাল ডারবানে গাড়ি রাখতে গিয়ে অন্য হকারের কাছ থেকে কাগজ কিনেছিলাম। এই রকম বহু সিদ্ধান্ত আমরা পরিবর্তন করি। আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কারণ কি, আবিষ্কার করলাম একই খবরের কাগজ কিনেছিলাম কিন্তু তার প্লাকার্ড ছিল ভিন্নধর্মী-সমুদ্রপারে ইউরোপীয়দের আকৃষ্ট করে এমন প্লাকার্ড ছিল। কিন্তু পরে আমি যেখান থেকে কাগজ কিনেছিলাম সেখানে প্লাকার্ড ছিল এশীয়দের আকৃষ্ট করার জন্য। যেখানে আফ্রিকান এবং যেখানে কালোরা বসবাস করে সেখানে ভিন্ন রকমের প্লাকার্ড রেখে একই কাগজ বিক্রি করা সম্ভব।
অতএব ওস্তাদ সাংবাদিক তাকেই বলব যিনি একটি প্লাকার্ড দিয়ে চার জাতের মানুষকে প্রতিদিন আকৃষ্ট করতে পারবেন, সেটাই হবে সাংবাদিকতার চরম উৎকর্ষ। যাহোক সাংবাদিকেরা সকলেই আমার যুক্তি সমর্থন করল। এখন পবিত্র কুরআনকে এর ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করা যাক।
সার্বজনীন আহবান
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মদিনা শহরে চারপাশে ইহুদী, খ্রিস্টান, মুসলমান, মুশরিক ও মুনাফিকদের নিয়ে বসবাস করতেন। মহানবীকে তাঁর সংবাদ (প্রত্যাদেশ) এসব নানা জাতের লোকের নিকট প্রচার করতে হত। এই নানা জাতির লোককে আকৃষ্ট করার জন্য তাঁর প্লাকার্ডে কি লিখবেন? তাকে ঘোষণা করতে বলা হল, মূসার (আ) কাহিনী তোমাদের নিকট কি পৌঁছেছে?
কল্পনা করা যায় কি উত্তেজনাকর অবস্থা? খ্রিস্টান ও ইহুদী আরো কিছু শোনার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা ভাবছে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম নিজেকে এবার বোবা বানানো যাবে, কারণ তারা জানে এই উম্মি আরব আর মূসা (আ) সম্পর্কে কি জানবে? সে তো উম্মি অশিক্ষিত মুসলমানরা জ্ঞানের জন্য তৃষ্ণার্ত, তারা চাচ্ছে -মূসা (আ) সম্পর্কে আমাদেরকে বলুন। মুশরিক ও মুনাফিকরা জিহ্বা নাড়ছে মূসা (আ) সম্পর্কিত তিন পক্ষের বিতর্ক তারা উপভোগ করবে। তিন পক্ষ হচ্ছে মুসলমান, খ্রিস্টান ও ইহুদী। সবাই কান খাড়া করে অপেক্ষা করে আছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বলতে লাগলেন, লক্ষ্য কর, তিনি দেখলেন আগুন।
চরম নাটকীয়তা! চোখের সামনে যেন এই দৃশ্য ভেসে উঠছে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম টেলিগ্রাফের ভাষায় কথা বলছেন। ঈসা (আ) বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে স্লোগান তৈরির উৎকর্ষ ভঙ্গি নির্মাণ করতে। সেই উৎকর্ষে পৌঁছাতে বিশ্বে সর্বাধিক সংখ্যক খ্রিস্টান ও ইহুদী জাতিকে খ্রিস্টের জন্মের পর দুই হাজার বছর লেগেছে। ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ান টেলিগ্রাফের ভাষায় (Western Union Telegraph Company) "Don't Write-Telegraph!" oncaftan ওস্তাদ সাংবাদিকরা যা করতে পারেননি সেই দক্ষতা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কোন বিদ্যালয় থেকে অর্জন করেছিলেন? তাকে উচ্চারণ করতে হল,
তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, ‘তোমরা এখানে থাক’ আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারব অথবা আমি এর নিকটে কোন পথপ্রদর্শক পাব।'
– কুরআন ২০: ১০
সাংকেতিক শ্রুতলিপি
উপরের আয়াতটি যে কোন অনূদিত পবিত্র কুরআনের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, সেই অনুবাদ শত্রু বা মিত্র যেই করুক না কেন সেখানে দেখা যাবে একই সংক্ষিপ্ত ও স্বল্পমাত্রার শব্দ ব্যবহার। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কোন প্রকার সারসংক্ষেপ অনুশীলন করেননি। তিনি কেবল আল্লাহর বাণী উচ্চারণ করেছিলেন। এই বাণী জিবরাঈল (আ)-এর মাধ্যমে তার অন্তরে ও মনে শুনিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ কথা স্মরণ রাখতে হবে যে সেই ষষ্ঠ শতকে যখন মহানবী কুরআন উচ্চারণ করছিলেন তখন কোন আরবি ভাষায় বাইবেল ছিল না। পবিত্র বাইবেলে দ্বিতীয় পুস্তক, যাত্রা পুস্তক, অধ্যায় ১,২,৩ যেখানে এই বিষয়টি অর্থাৎ পয়গম্বর মূসার (আ) জীবনী বর্ণিত হয়েছে। সেই কাহিনী পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত প্রত্যাদেশের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
ইস্রায়েলের পুত্রগণ, যারা মিসর দেশে গিয়েছিলেন, সপরিবারে যাকোবের সঙ্গে গিয়েছিলেন, তাঁদের নাম এই এই; রূবেণ, শিমিয়োন, লেবি ও যিহূদা, ইষাখর, সবূনূন ও বিন্যামীন দান ও নপ্তালি, গাদ ও আশের। যাকোবের কটি হতে উৎপন্ন প্রাণী সবসুদ্ধ সত্তর জন ছিল; আর যোষেফ মিসরের ছিলেন।
— যাত্রা পুস্তক ১: ১-৫
এটি শুধু সামান্য তুলনা। এভাবে কি আল্লাহ্ কথা বলেন? বাইবেলের এই পাঁচটি বাক্যের সঙ্গে নিম্নে বর্ণিত একই বিষয়ের চারটি পবিত্র কুরআনের আয়াত তুলনীয়। পূর্বের বর্ণনার সূত্র ধরে বলা যেতে পারে মূসা (আ) তার পরিবার-পরিজন ভেড়া ছাগলের পাল নিয়ে সিনাই মরুভূমিতে ঘুরতে ঘুরতে দু’টি জিনিসের জন্য ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েছিলেন। একঃ আগুন, দুই ও দিকনির্দেশনা। আগুন চাচ্ছিলেন তিনি মাংস রান্নার জন্য এবং মরুভূমিতে কোন অতিথিবৎসল জনগোষ্ঠীর নিকট যাওয়ার জন্য দিক নির্দেশনা চাচ্ছিলেন। আল্লাহ্ তার পরিকল্পনা উন্মোচন করার জন্য হযরত মূসা (আ)-কে ঠিক করেছিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য কয়লা জ্বালানোর স্বপ্ন থেকে প্রকৃত মানুষের আত্মার মধ্যে আধ্যাত্মিক আগুন জ্বালানোর দিকে। আধ্যাত্বিক আগুন জ্বলছে হাজার বছর ধরে মানবতার পথনির্দেশনার জন্য প্রকৃত দিক নির্দেশনা হয়ে।
হযরত মূসা (আ) যে আগুন দেখেছিলেন, সেই আগুন সাধারণ আগুন নয়। বাহ্যত তার নিকট এর অর্থ ছিল নিজের জন্য সহজে আগুন জ্বালানোর ব্যবস্থা করা। আবার আগুন দেখে মানুষের উপস্থিতি বোঝা যায় এবং তার কাছ থেকে তথ্য ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
অতঃপর যখন সে আগুন নিকট আসল তখন আহবান করে বলা হল, ‘হে মূসা! আমিই তোমার প্রতিপালক। অতএব তোমার পাদুকা খুলে ফেল, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’ উপত্যকায় রয়েছ।’
– কুরআন ২০: ১১-১২
হযরত মূসা (আ)-এর আধ্যাত্মিক ইতিহাসের আরম্ভ এখানেই এবং এটাই তার আধ্যাত্মিক জন্ম। বাইবেলের ভাষায় ‘অদ্য আমি তোমাকে জন্ম দিয়েছি।’ (গীত সংহিতা ২: ৭) এই পুস্তকে কিরূপে দাউদ (আ) সঙ্গে তার নিযুক্তির বিষয়ে কথা বলেছিলেন, তা আছে। উপরোক্ত কুরআনের বাণী গভীর আধ্যাত্মিক অর্থে পরিপূর্ণ। সংক্ষিপ্ত ছন্দোবদ্ধ মূল পঙক্তিতে তার আভাস প্রতিফলিত হয়েছে। ছন্দ এবং অর্থ উভয়ই গভীর রহস্যময়তা প্রকাশ করে। নিচে তুলনা করার জন্য চারটি আয়াত একসঙ্গে দেওয়া গেল।
মূসার বৃত্তান্ত তোমার নিকট পৌঁছেছে কি? সে যখন আগুন দেখল তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারব অথবা আমি তার নিকটে কোন পথপ্রদর্শক পাব। অতঃপর যখন সে আগুনের নিকটে আসল তখন আহবান করে বলা হল, ‘হে মূসা! আমিই তোমার প্রতিপালক, অতএব তোমার পাদুকা খুলে ফেল, কারণ তুমি পবিত্র ‘তুওয়া’* উপত্যকায় রয়েছ।’
—কুরআন ২০: ৯-১২
(*তুওয়া হচ্ছে সিনাই পর্বতের পাদদেশের উপত্যকা। সেখানে পরবর্তীকালে তিনি প্রত্যাদেশ লাভ করতেন। সমান্তরালভাবে এর আধ্যাত্মিক অর্থ হচ্ছে এই সামান্য জীবনে পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদেরকে নির্বাচন করা হয়। যার উপত্যকা তেমনি পবিত্র এবং আল্লাহর সন্ধান লাভ করে যেমন উচ্চ তুর পাহাড়। তা যদি আমাদের বোধের মধ্যে আসে, সম্মান প্রদর্শনের জন্য জুতা খুলে ফেলতে হবে। অপর অর্থ মূসা (আ) এখন তাঁর পার্থিব প্রয়োজনীয় সবকিছু ত্যাগ করলেন, কারণ এখন মহামহিম আল্লাহ্ তা'আলা তাকে নির্বাচন করেছেন।)
এখন আপনার রায় কি?
যারা রূপকথা ও লোকগাঁথা শুনতে অভ্যস্ত তারা কিভাবে এই বিশুদ্ধ জান্নাতি নিয়ামত বিচার করবে? থমাস কার্লাইল, যিনি গত শতাব্দীর অন্যতম চিন্তাবিদ এবং সহানুভূতিশীল তার ন্যায় মহান ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত পবিত্র কুরআনের এই তীক্ষ্ম সংক্ষিপ্ততা অনুধাবন করতে পারেননি। তিনি পবিত্র কুরআনের পাঠকে কষ্টসাধ্য, বিভ্রান্তিকর, জগাখিচুড়ি, স্থূল অসমর্থনযোগ্য নির্বুদ্ধিতা ইত্যাদি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন অত্যন্ত খারাপভাবে সাহিত্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা মাত্র; অসমর্থনযোগ্য নির্বুদ্ধিতা। বাইবেলেও কুরআনের পাঠকে বিপরীতধর্মী তুলনার পর, অতঃপর আমরা কি রায় দেব? আমি আরেকজন সাংবাদিককে পেয়েছিলাম। তিনিও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর এ অসাধারণ ঔজ্জ্বল্য ও সরাসরি বক্তব্যকে বুঝতে পারেননি। অথচ আজকের দিনে সংবাদপত্র অথবা ম্যাগাজিনে তারা এভাবেই করে থাকে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/5
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।