মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
স্মরণ কর, মরিয়ম-তনয় ঈসা বলেছিল, ‘হে বনী ইসরাইল! আমি তোমাদের নিকট আল্লাহর রাসূল এবং আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি তার সমর্থক এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবে। আমি তার সুসংবাদদাতা।”
– কুরআন ৬১: ৬
একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য
এক নজরে একবার উপরের আয়াতগুলো দ্রুত পাঠ করলেই যে কোন মুসলমান বিশ্বাস করবে যে ঈসা (আ) সত্যই আল্লাহর রাসূল হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন। খ্রিস্টানরা তাদের একচোখা দৃষ্টিভঙ্গি, গোয়ার্তুমি ও তথাকথিত আত্মশ্লাঘার জন্য আপন অন্তদৃষ্টি অনুধাবন করতে পারে না। এবং আপন বিবেকের কথা শ্রবণ করে না, যা একান্তই বাস্তব সত্য সেই সত্যকে সে দেখতে পায় না, তখন মুসলমানরা বিব্রত না হয়ে পারে না।
অপরপক্ষে, একজন খ্রিস্টান হতবাক হয়ে দেখে অসাধারণ সৃষ্টিশীল প্রতিভালব্ধ জাতি ইহুদীরা তাদের নিজেদের পুরাতন নিয়ম বাইবেলে মসিহর আগমনের এক হাজার একটা ভবিষ্যদ্বাণী থাকা সত্ত্বেও তাদের ত্রাণকর্তা মহাপ্রভুকে পাষাণ হৃদয়ের গোয়ার্তুমির জন্য অনুধাবন করতে অক্ষম। তারা উভয়েই কি কিছুটা অন্ধ নয়?
না, ইহুদী ও খ্রিস্টান উভয়ই সত্য অনুধাবন করতে অসমর্থ নয়। সমস্যা একটাই আমরা সকলেই শৈশবকাল হতেই পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অবিজ্ঞতা অর্জনের পূর্বেই মন স্থির করে ফেলি। আমেরিকানরা যাকে বলে প্রোগ্রামড (Programmed) হওয়া।
নিছক আয়াত পাঠ, ওয়াজ বা বক্তৃতা শোনার পর মনে মনে যেভাবে যথেষ্ট জেনেছি তার পক্ষে সত্য প্রচার সহায়ক হবে না। এই যুগটা হচ্ছে এভরিম্যান (Everyman) সিরিজের যুগ, যে সিরিজে ঘরে বসে সব কিছু শেখার বই প্রকাশিত হয়। পেশাদারী যুগের অবসান হয়েছে। উপরোক্ত আয়াতগুলো আগের ও পরের কোটেশনসহ মুখস্থ করতে হবে যাতে কোন অমুসলমানের সঙ্গে বাক্যালাপ কালে যথেষ্ট যৌক্তিকতার সঙ্গে বাক্যালাপ করা সম্ভব হয় এবং আমাদের দীনকে তাদের নিকট উপস্থাপন করা যায়, দাওয়াহর কোন সংক্ষিপ্ত পথ নেই।
প্রমাণ দেখাতে হবে
আপনি সম্ভবত এই প্রথম পাঠ করেছেন, তাই নয় এর আগেও হয়তো পাঠ করে থাকবেন যে ইহুদীদের ও খ্রিস্টানদের কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জিলে সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর আগমন সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। সম্ভবত এ কথা সত্য যে আপনি হয়তো কোন সময় বাইবেলে আমাদের নবী করীম কি বলেছেন তা জানতে কিছুটা চেষ্টাও করেছেন, কিন্তু যখন প্রমাণ চাওয়া হয়েছে, আপনি কোন তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। কারণ আপনি যথেষ্ট চেষ্টা করেন নি, কাজও করেননি। মনে রাখতে হবে, কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই। আমি যা বলি আমি তা বিশ্বাস করি এবং আমি যা প্রচার করি তা অনুশীলন করি।
ব্যক্তিগতভাবে বাইবেলের বিভিন্ন অংশ বাছাই করে বিভিন্ন ভাষায় তা মুখস্থ করেছি, এমন কি আরবি ও হিব্রু বাইবেল থেকেও মুখস্থ করেছি। লোক দেখানোর জন্য নয় বরং ধর্মের এই সব টুকিটাকি বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের নিকট আমার বিশ্বাসকে প্রচার করার সুযোগ করে দেয় বলে। মানুষের হৃদয় স্পর্শ করার জন্য ভাষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
ফেরাউনের দেশে
একবার অনেক আশ্বাস পাওয়া সত্ত্বেও কায়রো বিমান বন্দরে এসে প্রবেশ ভিসার অভাবে আটকা পড়ে রইলাম। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ভদ্রলোক দয়াপরবশ হয়ে আমার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রাপ্তির জন্য চেষ্টা চালিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রায় হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন এবং শুক্রবারের জুমার নামাজের সময় হয়ে পড়ায় আমাকে ও আমার পুত্র ইউসুফকে এক মিশরীয় অল্প বয়স্কা মহিলার হাওলা করে চলে গেলেন। মহিলা ইউরোপীয় পোশাকে শোভিত। বেশ কিছু সময় চেষ্টা তদ্বির করার পর মহিলা এসে বললেন, “দিন, চল্লিশটি ডলার দিন।” আমি প্রশ্ন করলাম ‘কেন?’ মহিলা উত্তর দিলেন, ‘ভিসার জন্য।’ আমার জন্য বিশ ডলার আর আমার পুত্রের জন্য বিশ ডলার দিতে হবে। আমি আপত্তি জানিয়ে বললাম, ‘আমি যেহেতু সরকারি দাওয়াতে সরকারি মেহমান হিসেবে এসেছি আমার কেন ফিস লাগবে?’ মহিলা জানালেন, ‘তিনি সেসব কিছু জানেন না, ভিসার জন্য এই ফিস আমাকে দিতে হবে।’ বাধ্য হয়ে স্মিত হাসি হেসে মহিলার হাতে চল্লিশটি ডলার তুলে দিলাম।
মহিলার কথাবার্তায় আচরণে আমি অনুধাবন করতে পেরেছিলাম, মহিলা উচ্চ শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান। তাই নির্ভয়ে আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা আরবি ভাষায় তার নাম জানতে চাইলাম। তার নামটি মনে রাখবার মতই নতুন। আবার জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আপনি কি মুসলমান?’ তিনি বললেন, ‘না, আমি মিশরীয় খ্রিস্টান।’ এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম। বললাম, ‘যীশু খ্রিস্ট ইহজগত পরিত্যাগের পূর্বে তার শিষ্যদের উদ্দেশ্য করে কি বলেছিলেন তা কি আপনি জানেন?’
এ কথা বলেই আমি চোস্ত আরবিতে বাইবেল থেকে উদ্ধৃতি মুখস্থ আবৃত্তি করে তাকে শুনালাম। এই প্রকার সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য আমি আরবি বাইবেলের বিশেষ বিশেষ অংশ আগে হতেই মুখস্থ করে রেখেছিলাম।
বাইবেলের যে অংশ তাঁকে পাঠ করে শুনালাম তার আর ইংরেজি অনুবাদ প্রয়োজন হলো না। কারণ, মহিলার মাতৃভাষা আরবি। আমার পাঠকদের সুবিধার্থে সেই অংশ ইংরেজি বাইবেল থেকে তুলে দিলাম। সেটিও আমি অবসর সময়ে কষ্ট করে মুখস্থ করে নিয়েছিলাম। পাঠক, আপনারও যদি আল্লাহর দীনের প্রতি ভালবাসা থাকে এবং আপনিও যদি মনে করেন অন্যরাও এই দীনের অংশীদার হোক তাহলে আপনিও এজন্য অবসর সময় বের করে নিতে পারেন।
তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকট আসবেন নাঃ কিন্তু আমি যদি যাই তবে তোমাদের নিকটে তাকে পাঠিয়ে দেব।
— যোহন (১৬: ৭)
আল মুউজ্জি অর্থাৎ সহায়
আমার মুসলমান ভাইদের নিকট অনুরোধ করছি তারা যেন উপরের উদ্ধৃতি আরবি ইংরেজি উভয়ই, সম্ভব হলে অন্য ভাষায় অনুবাদসহ মুখস্থ করে নেন। তাহলে ইসলাম প্রচারে সামগ্রিকভাবে সুবিধা হবে। ইংরেজিতে বলা হয়েছে কমফরটার (Comforter), বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে সহায় এবং আরবিতে = আল মুউজ্জি। আমি ভদ্র মহিলাকে প্রশ্ন করলাম, এই সহায় = আল মুউজ্জি কে যার সম্পর্কে বাইবেলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে? মহিলা অহেতুক সময় ক্ষেপণ না করে বললেন যে তিনি জানেন না। তখন আমি বললাম আমাদের কুরআন শরীফে বলা হয়েছে, যে ঈসা (আ) তাঁর শিষ্যদেরকে বলেছিলেনঃ
এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবে আমি তার সুসংবাদদাতা।
—কুরআন ৬১:৬
আমি আরো বললাম, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অপর নাম আহমদ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামই মুউজ্জি।
তখন তিনি বলে উঠলেন, 'ভারি আশ্চর্য! মিশরীয় কত মুসলমান আমাকে সিনেমায় নিয়ে যায়, নাচের পার্টিতে নিয়ে যায়, কিন্তু কেউ কখনো এই মুউজ্জি বিষয়ে কিছুই বলেনি।
অতঃপর কায়রো বিমান বন্দর ত্যাগ করার পূর্বেই মনে হলো আল্লাহ সুবহানা ওয়া তায়ালা আমাকে এই মহিলার মাধ্যমে সাত সের ওজনের হাতুড়ি দিয়েছেন যথাযোগ্য জায়গায় আঘাত করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ্! আমি সেই হাতুড়ি ঠিকই ব্যবহার করেছিলাম।
বাইবেলের যোহন অধ্যায়ের ১৬: ৭ সহায়/মুউজ্জি এবং কুরআন শরিফের ৬১: ৬ আহমাদ মুহাম্মদ -এর একটি সমন্বিত ব্যাখ্যা বর্তমান অধ্যায়ের প্রারম্ভে যে আয়াত দেয়া হয়েছে সেটি ব্যাখ্যা করার সময় উপযুক্ত স্থানে সন্নিবেশিত করা হবে।
বাইবেলের স্বীকৃতি
মনে রাখতে হবে যে, খ্রিস্ট ষষ্ঠ শতকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াস সালাম আল্লাহর বাণী যা ক্রমান্বয়ে তার মুখে দেওয়া হয়েছিল এবং তিনি তা উচ্চারণ করছিলেন তখন কোন আরবি বাইবেল ছিল না কারণ তখনও বাইবেল আরবি ভাষায় অনূদিত হয়নি। তাঁর পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না যে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী পূর্বসুরীর ঈসা (আ)-এর উচ্চারিত বাণী পরিপূর্ণ ও নিশ্চিতভাবে স্বীকৃতি জানাচ্ছেন।
যীশু কেবলমাত্র ইহুদীদের জন্য
এই বারোজনকে যীশু প্রেরণ করলেন, আর তাদেরকে এ আদেশ দিলেন তোমরা পরজাতির পথে যেয়ো না, এবং শমরীয়দের কোন নগরে প্রবেশ করো না; বরং ইসরাইল কুলের হারানো মেষদের কাছে যাও।
—মথি (১০: ৫-৬)
কুকুরের জন্য নয়
“আর দেখ কনানীয় একজন স্ত্রীলোক এসে বলে চেঁচাতে লাগল, ‘হে প্রভু! দাউদ সন্তান, আমার প্রতি দয়া করুন, আমার কন্যাটা ভূতগস্ত হয়ে অত্যন্ত ক্লেশ পাচ্ছে।’ কিন্তু তিনি তাকে কিছুই উত্তর দিলেন না। তখন তার শিষ্যেরা নিকটে এসে নিবেদন করলেন, ‘একে বিদায় করুন, কেননা এ আমাদের পেছনে পেছনে চেঁচাচ্ছে।’ তিনি উত্তর করে বললেন, ‘ইসরাইল কুলের হারানো মেষ ছাড়া আর কারো নিকটে আমি প্রেরিত হইনি।’ কিন্তু স্ত্রীলোকটি এসে তাকে প্রণাম করে বলল, ‘প্রভু আমার উপকার করুন।’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘সন্তানদের খাদ্য নিয়ে কুকুরদের কাছে ফেলে দেয়া ভাল নয়।”
– মথি (১৫: ২২-২৬)
এই ইহুদী পয়গম্বর অর্থাৎ ঈসা (আ)-এর বড় গুণ ছিল যে তিনি যা প্রচার করতেন তাই তিনি নিজে অনুশীলন করতেন। তাঁর জীবনকালে তিনি কখনও একটিও অইহুদীকে ধর্মান্তরিত করেন নি। বাছাই করে তিনি যে বারোজনকে তার শিষ্য করেছিলেন তিনি তাদের বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে নিয়েছিলেন তারা তার স্বজাতি, যেন তার অন্যান্য ভবিষ্যদ্বাণী সঠিক হয়।
“তোমরা যত জন আমার পশ্চাদগামী হয়েছ, পুনঃসৃষ্টিকালে যখন মনুষ্য পুত্র আপন প্রতাপে সিংহাসনে বসবেন, তখন তোমরাও দ্বাদশ সিংহাসনে বসে ইসরাইলদের দ্বাদশ বংশের বিচার করবে।”
– মথি ১৯: ২৮
নতুন কোন ধর্ম নয়
আমার পূর্বে আগত তাওরাত (আইন) নিশ্চিতকরণ
ইহুদীদের মধ্যে মসিহ মধুরভাষী পয়গম্বর ছিলেন না। তাঁর পূর্ববর্তী নবী আমস, জেইকল অথবা ঈসাইয়াহ্-র ন্যায় ইহুদীদের আনুষ্ঠানিকতা ও মোনাফেকির বিরুদ্ধে তাঁর ভাষা ছিল তীক্ষ্ম মর্মভেদী। তার প্রস্তাবনার অভিনবত্ব জঙ্গী প্রচারণা ধর্মীয় পৌরহিততন্ত্রের মধ্যে আশঙ্কার সৃষ্টি করেছিল। তাদের ধর্মীয় পুরোহিত ও উপ-পুরোহিতরা বারম্বার তার নিকট এসে তার যথার্থতা পরীক্ষা করে দেখেছে। তিনি বলেছেনঃ
মনে করো না যে আমি ব্যবস্থা ভাববাদি গ্রন্থ লোপ করতে এসেছি, আমি লোপ করতে আসিনি। কেননা আমি তোমাদেরকে সত্য বলছি, যে পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হবে, সে পর্যন্ত ব্যবস্থার এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হবে না, সমস্তই সফল হবে।
অতএব যে কেউ এসব ক্ষুদ্রতম আজ্ঞার মধ্যে কোন একটি লঙ্ঘন করে ও লোকদেরকে সেরূপ শিক্ষা দেয়, তাকে স্বর্গরাজ্যে অতি ক্ষুদ্র বলা যাবে; কিন্তু যে কেউ সেসব পালন করে ও শিক্ষা দেয় তাকে স্বর্গরাজ্যে মহান বলা যাবে।
— মথি ৫:১৭-১৯
বর্তমান অধ্যায়ের প্রারম্ভে কুরআন শরীফের আয়াতগুলোর মধ্যে আমার পূর্বে আগত তাওরাত (আইন) নিশ্চিতভাবে এই আয়াতটির সাতটি শব্দের সঙ্গে তুলনা করলে উপরোক্ত বাইবেলের মথি অধ্যায়ের তিনটি পঙক্তির শব্দগত সাযুজ্য লক্ষ্য না করে পারা যায় না। এখানে আল্লাহর বাণী অত্যন্ত সংক্ষেপ, স্পষ্ট ও তীক্ষ্ম।
সততার পিতা আপন পছন্দমত আপন পয়গম্বর নির্বাচন করেন এবং তিনি বজ্রের চাইতেও কঠিন কণ্ঠে তাদের নিকট তার বক্তব্য উপস্থাপন করেন (সততার পিতা কথাটি আল্লাহ সম্পর্কিত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে; কারণ খ্রিস্টানগণ এইরূপ বিকৃতভাবেই ব্যবহার করে থাকে)।
—সৈয়দ আমীর আলীঃ স্পিরিট অব ইসলাম
কুরআন এসেছে আসমানী প্রত্যাদেশ বা বিধান, যেগুলো অযোগ্য হাতে ছিল তাকে নিশ্চিত অথবা সংশোধন অথবা পরিপূর্ণ করার জন্য।
এই কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অপর কাহারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যাহা অবতীর্ণ হয়েছে এটি তার সমর্থন এবং এটি বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা; ইহাতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটি জগতসমূহের প্রতিপালকের পক্ষ হতে।
এবং আমার পরে আহমদ নামে যে রাসূল আসবে আমি তাঁর সুসংবাদদাতা।
—কুরআন ৬১: ৬
কোন প্রকার সংকোচ বা দ্বিধা না করে বলতে পারি যে, কুরআনের এই অনুবাদ আমি আবদুল্লাহ্ ইউসুফ আলীর ইংরেজি কুরআন শরীফের অনুবাদ থেকে আহমদ সম্পর্কিত তফসির হুবহু এখানে আমি নিয়েছি। তার পূর্বে বাদশাহ ফাহাদ কুরআন মুদ্রণ প্রকল্পকে যথাযোগ্য ধন্যবাদ ও প্রশংসা করা প্রয়োজন। কারণ, এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত কুরআন শরীফ হাজার হাজার কপি মুদ্রণ করছে।
তারাও ইংরেজি সংস্করণ হিসাবে ইউসুফ আলীর ইংরেজি কুরআনকেই গ্রহণ করেছে এবং তার কারণ হিসাবে বলেছেঃ
“অতীতে অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে কুরআনের অনুবাদ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাদের ওই সকল উদ্যোগ ছিল একান্ত ব্যক্তিগত এবং নিজস্ব চিন্তা ও মনোভাব দ্বারা প্রভাবান্বিত। সে কারণে ব্যক্তিগত চিন্তার প্রভাবমুক্ত নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত অনুবাদ প্রকাশ করার জন্য খাদিমুল হারামাইন বাদশাহ ফাহাদ ইবন আবদুল আজিজ এক বাদশাহী ফরমান জারি করেন। সেই সময় তিনি উপ প্রধানমন্ত্রী ......
মরহুম উস্তাদ আবদুল্লাহ ইউসুফ আলী কৃত ইংরেজি অনুবাদ গ্রহণ করা হয়েছিল কারণ এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য যেমন অতি উঁচুমান সম্পন্ন রুচিবান স্টাইল, বাছাইকৃত শব্দ ব্যবহার যা মূলের অধিকতর নিকটবর্তী এবং সেই সঙ্গে গবেষণমূলক টীকা রয়েছে।
আবদুল্লাহ্ ইউসুফ আলী কৃত অনুবাদে ছয় হাজারের অধিক গভীর ব্যাখ্যামূলক টীকা রয়েছে। আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আগমন সম্পর্কে ঈসা (আ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত তিনটি ব্যাখ্যামূলক টীকা এখানে দেয়া হলো।
টীকা ৫৪৩৮
গ্রিক শব্দ পেরিক্লিটস-এর প্রায় সঠিক বা যথাযথ অনুবাদ আহমদ বা মুহাম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত যিনি। বর্তমান ইংরেজি বাইবেলে যোহন অধ্যায়ে পেরাক্লিটস-এর প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ছে কমফরটর শব্দ। পেরাক্লিটস-এর ইংরেজি অর্থ ‘এডভোকেট’ ‘একজনের সাহায্যে আর একজনকে ডাকা হয় সে দয়াল বন্ধু তাকে ঠিক কমফরটর বা সান্ত্বনাদাতা বলা চলে না। আমাদের পণ্ডিতরা বলেন যে, পেরিক্লিটস -এর অশুদ্ধ উচ্চারণ পেরাক্লিটস এবং যিশুর মূল ভবিষ্যদ্বাণীতে আমাদের পয়গম্বর আহমদ নামই ছিল। যিনি সকল প্রাণীর জন্য করুণা (২১: ১০৭) এবং সকল বিশ্বাসীর জন্য অতি দয়ালু ও করুণাময় (৯: ১২৮)।
পরে সে যখন স্পষ্ট নিদর্শনসহ তাদের নিকট এলো তারা বলতে লাগল, এটা তো এক স্পষ্ট জাদু।
এমনিভাবে সূরা ৬১ আয়াত ৬ দ্বারা আলোচ্য বিষয়ের সমাপ্তি টানা হয়েছে। নানাবিধভাবে ইসলামের পয়গম্বর সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল অতঃপর যখন তিনি আসলেন তখন তিনি অনেক স্পষ্ট চিহ্ন প্রদর্শন করলেন। তার জীবন প্রথম হতে শেষ অবধি প্রকৃতপক্ষে এক বিশাল অলৌকিক ঘটনা। অসংখ্য প্রতিকূল অবস্থার সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন এবং জয়ী হয়েছেন। মানুষের নিকট হতে কোন কিছুই শিক্ষা লাভ না করেই তিনি সর্বোচ্চ জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছেন। পাষাণ হৃদয়কে তিনি দ্রবীভূত করেছেন, কোমল হৃদয় এবং যার জন্য প্রয়োজন ছিল সাহায্য তাকে করেছেন এবং শক্তিশালী। উপলব্ধি করার আগ্রহ যার আছে সে অনুধাবন করতে পারে যে তার সকল কর্মে ও কথায় আল্লাহর হাত রয়েছে, তথাপি সন্দেহবাদীরা বলে সবই নাকি যাদু, ভোজবাজি প্রহসন।
মিথ্যা ও জাদু! না, না, এই মহৎ প্রজ্বলিত হৃদয় চিন্তার এক বিশাল অগ্নিকুণ্ড সর্বক্ষণ টকবগ করে ফুটছে। এর মাঝে কোন জাদু নেই, ভোজবাজি নেই।
—টমাস কার্লাইল
তারা এই অলৌকিক ভবিষ্যদ্বাণীকে বলেছিল জাদু, ভোজবাজি, প্রহসন অথচ তাই পরবর্তীকালে মানব সভ্যতার ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা কঠিন বাস্তবে পরিণত হয়েছে আর তা হচ্ছে ইসলাম!
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/19
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।