মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা
লেখকঃ আহমদ দীদাত
২৮
অধ্যায় চারঃ ইহুদী সম্পর্কে আল কুরআন
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/28
তরুণ ইহুদীদের আহবান
১৯৬৭ সনে ইসরাইলের তথাকথিত ছয়দিনের যুদ্ধের পরের ঘটনা। তখন আমি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ প্রদেশে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছি। কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদী ছাত্ররা সম্ভবত বক্তৃতা সম্পর্কিত বিজ্ঞাপন দেখেছিল। বক্তৃতার বিষয়বস্তু ছিল বাইবেলে হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কি বলে, মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈসা (আ) স্বাভাবিক উত্তরাধিকারী, যিশু কি ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিলেন? ইত্যাদি। তারা উৎসাহিত হয়ে আমার বক্তৃতার সংগঠকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের মাঝে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য দাওয়াত করেছিল। রনডেবশ নামে একটা হল তারা খ্রিস্টানদের কাছ থেকে কিনেছিল। সেই হলে বক্তৃতার ব্যবস্থা হয়েছিল। সম্ভবত মরুভূমির যুদ্ধে পরাজয়ের পর মুসলমানরা কি চিন্তা করছে তা জানাই তাদের উদ্দেশ্য। “ও জেরুজালেম” গ্রন্থে ল্যারিকলিন্স ও ডোমেনিক লাপিয়ার আরব সৈন্য সম্পর্কে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছেন।
“বেনগুরিয়ান নাছোড়বান্দা। সে কখনও শত্রুকে খাটো করে দেখতো না। পাঁচ আরব বাহিনী মিলিত হয়ে তাদেরকে যদি আক্রমণ করে এই ভয় তাদের জন্য সর্বাপেক্ষা ভীতিকর ছিল। কিন্তু বেনগুরিয়ান যদি তার শত্রুকে খাটো করে না দেখতেন তিনি তাদের বাহুল্য গর্ব বিশ্বাস না করতেন কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করতে নিজেদেরকে ত্যাগের চেয়ে বক্তৃতার দ্বারা প্রস্তুত করতে চেষ্টা করতেন, তাদের আক্রমণের হুমকি তার জাতির জন্য এক মারাত্মক ভীতি ছিল। কিন্তু এখানে তাদের জন্য এক বিরাট সুযোগও ছিল।” অস্ত্র সজ্জায় সজ্জিত পয়গম্বর নামে বেনগুরিয়ানের জীবনী গ্রন্থের লেখক মাইকেল জোহা প্রধান মন্ত্রীর মুখ দিয়ে বলাচ্ছেন, সত্য কথা বলতে কি আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম সেটি কি অলৌকিক ঘটনা নয় কারণ আরব সৈন্য বাহিনী একেবারেই অপদার্থ।
তরুণ ইহুদী ছেলেমেয়েদের সামনে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য আমি নিজেকে উচ্চাসন থেকে নামিয়ে আনলাম! বিষয় হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছিল ইহুদী সম্পর্কে আল-কুরআন।
তরুণ সভাপতি কর্তৃক উৎসাহব্যঞ্জক ও আন্তরিক পরিচিতি পর্বের পর আমি বক্তৃতার জন্য দাঁড়ালাম। প্রথমে কুরআন শরিফ থেকে ২০: ২৫-২৮ আয়াত তিলাওয়াত করলাম। কোন অর্থ বললাম না।
সম্মোহনীয় প্রতিক্রিয়া
যখন আমি তিলাওয়াত করছিলাম মনে হল তরুণ চেহারাগুলিতে এক প্রকার বিস্ময় ও দিশেহারা ভাব। তারা আশা করছিল আমি ইংরেজিতে বলতে শুরু করব। কিন্তু এটি একটু ভিন্ন হল। আমি বললাম, “সম্মানিত সভাপতি ও আমার প্রিয় সন্তানগণ। এইমাত্র আমার মুখ থেকে যে কথাগুলি শুনলেন সেইগুলি মূসা (আ)-এর প্রার্থনা। যখন আল্লাহ্ তা'আলা মূসা (আ)-কে নির্দেশ দিলেন ফেরাউনের কাছে গিয়ে বনি ইসরাইলগণকে দাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য বলতে, তখন তিনি এই মোনাজাত করেছিলেন। আমি তোমাদেরকে কোন মন্ত্র পড়ে সম্মোহিত করতে চাইনি। মূসা (আ) বিচারের হাত থেকে শাস্তির ভয় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন কারণ তিনি একজন মিসরীয়কে হত্যা করে ফেলেছিলেন। তিনি ছিলেন তোতলা। এখন আল্লাহ্ তা'আলা যখন পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও অত্যাচারী রাজা ফেরাউনের কাছে যেতে বললেন তখন তিনি ভয়ে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন।
মূসা বলল, “হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও। এবং আমার কর্ম সহজ করে দাও। আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দাও। যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।
—কুরআন- ২০: ২৫-২৮
আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও। আমাকে সাহস দাও। আমাকে শক্তি দাও। আমরা বলি আমাদের বক্ষদেশ হচ্ছে জ্ঞান ও ভালবাসার পীঠস্থান। তিনি প্রথমে সেই দান প্রার্থনা করছেন যা আধ্যাত্মিক অন্তরদৃষ্টিতে শীর্ষস্থানীয়। অতঃপর তিনি আরো তিনটি জিনিস প্রার্থনা করেছেন।
(১) তার কাছে আল্লাহর সাহায্য, যে কাজ তার নিকট অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল।
(২) তিনি চাচ্ছিলেন জড়তামুক্ত ভাষা। কারণ তার জিহ্বায় জড়তা ছিল।
(৩) তার ভাই হারুনের সার্বক্ষণিক উপস্থিতি ও পরামর্শ। তাকে তিনি ভালবাসতেন ও বিশ্বাস করতেন। তাকে সঙ্গে না পেলে তিনি একাকী বোধ করতেন।
আমি তরুণ ইহুদীদের উদ্দেশ্য করে বললাম, “হযরত মূসা (আ) যে প্রার্থনা করেছিলেন আমার প্রয়োজন তার চেয়ে কিছু বেশি প্রার্থনা। আমার জিহ্বায় কোন জড়তা নেই। কিন্তু যোগাযোগ স্থাপনের জন্য প্রকৃত বাধা ভাষা ও মনস্তাত্ত্বিক বাধা। (১) ইংরেজি আমার মাতৃভাষা নয়। আমার মাতৃভাষা গুজরাটি। ভারতের বোম্বে শহরের ভাষা। (২) মনস্তাত্ত্বিকভাবে বক্তা ও শ্রোতা পরস্পর বিপরীতমুখী। আজকের আলোচ্য বিষয় অত্যন্ত আবেগজড়িত। মনস্তত্ত্ব অধ্যয়ন করে আমরা শিখেছি যে আমরা একজনকে থামতে বলতে পারি, তাকাতে বলতে পারি, শুনতেও বলতে পারি, কিন্তু আমার বক্তব্য গ্রহণ করতে অথবা প্রকৃত অর্থ অনুধাবন করতে বাধ্য করতে পারি না।
ইহুদী পয়গম্বরগণ সকলেই মুসলমানদের পয়গম্বর
শৈশবে আমি জানতাম না যে হযরত মূসা (আ) ইহুদীদের পয়গম্বর। আমার কাছে এবং সকল মুসলমান শিশুর কাছেই হযরত মূসা (আ) আমাদের পয়গম্বর তথা মুসলমানদের পয়গম্বর। আমাকে যদি প্রশ্ন করা হত হযরত মূসা (আ) কে ছিলেন? আমি বলতাম, আমাদের একজন পয়গম্বর। যদি প্রশ্ন করা হত দাউদ (আ) কে ছিলেন? আমি বলতাম, আমাদের পয়গম্বর। যদি প্রশ্ন করা হত হযরত সোলায়মান (আ) কে ছিলেন, তখনও বলতাম আমাদের পয়গম্বর। ডেভিডকে বলি দাউদ, মজেজকে বলি মূসা (আ), আইজেককে বলি ইসহাক, জেকবকে বলি ইয়াকুব। যখন তাদের অথবা এই সকল পয়গম্বরদের নাম উচ্চারণ করি তখন কোন মুসলমান তাদের নামের আগে হযরত যোগ না করে পারে না। হযরত অর্থাৎ সম্মানিত শ্রদ্ধেয়। আবার নামের শেষে বলতে হয় আলাইহিসসালাম। যদি কোন মৌলবী সাহেব বা ইমাম সাহেব এসব মহান পবিত্র ব্যক্তিদের নাম উচ্চারণ করার সময় সম্মানসূচক 'হযরত' যোগ না করে তাহলে তার চাকুরিই থাকবে না। বলা হবে সে অসভ্য, বর্বর, অশিক্ষিত।
মুসলিমগণ ইহুদীদের সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী
আমরা আমাদের শিশুদের ইহুদী নামকরণ করি তখন কখনই চিন্তা করি না এটি কোন জাতের নাম। আমার জ্যৈষ্ঠ পুত্রের নাম ইবরাহীম অর্থাৎ আব্রাহাম। আমার কনিষ্ঠ পুত্রের নাম ইউসুফ, তোমরা যাকে বল যোসেফ। আমার ভগ্নিপতির নাম মূসা, তোমরা যাকে বল মোশে অথবা মোজেজ। আমরা কখনই মনে করি না এগুলো ইহুদী নাম। বরং মনে করি এগুলো আল্লাহর প্রিয় বান্দার নাম। বাইবেলের ভাষায় ঈশ্বর পুত্র।
ধর্মের দিক দিয়ে বল, পূর্বপুরুষের দিক দিয়ে বল অথবা সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বল, মুসলমানরা ইহুদীদের সবচেয়ে কাছের। ইহুদীরা বিশ্বাস করে মহান মহামহিম আল্লাহ্ এক সম্পূর্ণ এক। তাকে দেখা যায় না। কোন মানুষ তাকে দেখতে পায় না। এক্ষেত্রে ইহুদীরা যে বিশ্বাস করে মুসলমানরা সর্বান্তকরণে তাই বিশ্বাস করে। ইহুদীরা বলে আমরা শূকরের মাংস খাই না। মুসলমানরাও বলে আমরা শূকর খাই না। ইহুদীরা বলে তারা রক্ত খায় না। মুসলমানরাও তাই করে। ইহুদীরা খাৎনা করে। মুসলমানরাও খাৎনা করে। তোমরা আর কি চাও? সংক্ষেপে বলা যায় মুসলমানরা বিশ্বাস করে হযরত মূসা (আ) যে দীন ধর্ম প্রচার করে গেছেন তা ইসলামের বাইরের কিছু নয়। তিনি যে ধর্ম প্রচার করে গেছেন হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেই ধর্মকে পরিপূর্ণ রূপ দিয়েছেন এবং তাকে সার্বজনীন করেছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস যদিও মুসলমানরা ইহুদীদের পয়গম্বরকে নিজেদের পয়গম্বর মনে করে তাদেরকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে কিন্তু ইহুদীরা মুসলমানদের মাত্র একজন পয়গম্বরকে স্বীকার করতে রাজি না। আমরা বাইবেলের সকল ইহুদীকে আমাদের নিজেদের বীর বলে মনে করি। তাদের আধুনিক বীর বেগিন স্বামীর শেরেন ও দায়াদের নিয়ে আমরা যুদ্ধে লিপ্ত। তাদের আধুনিককালের বীরেরা আমাদের দেশ ফিলিস্তিন জোর করে দখল করেছে।
চাচাতো ভাইয়ের ন্যায় আপন
Israel: Fight for survival গ্রন্থে লেখক রবার্ট জে উনভান বলেছেন ১৯৫৯ সালে প্রকাশিত Institute for the Middle East -এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ইহুদী ও আরব এই দুই জাতি সম্পর্কে দুই চাচাতো ভাইয়ের মত স্বাভাবিক ছিল। ততদিন ইহুদী-আরব সমস্যা বলে কিছু ছিল না। আশ্চর্যের বিষয় যেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল স্টাডিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর গোইটিয়েন তার বই Jews and Arabs গ্রন্থে একই মনোভাব ব্যক্ত করেছেন, “ইহুদী ও আরব জাতি নিকট-আত্মীয় তথা চাচাতো ভাই। কারণ তারা ইবরাহীমের পুত্র আইজাক ও ইসমাইল এই দুই ভাইয়ের বংশধর। এই বিশ্বাস যথেষ্ট প্রবল।”
কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদী ছাত্ররা যখন ১৯৬৭ সালে যুদ্ধের পর বিজয় গর্বে উজ্জ্বল তখন আমি তাদেরকে বোঝাচ্ছিলাম, আরব ও ইহুদী রক্তের সম্পর্কে যেখানে এত কাছাকাছি তা এখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে মারাত্মক তিক্ত শত্রুতায় পরিণত হয়েছে।
বন্দুক কোন উত্তর নয়
রক্তের সম্পর্কে চাচাতো ভাই তাদের মধ্যস্থতা করার জন্য কি বন্দুকের প্রয়োজন? শান্তির যুবরাজ মেরির পুত্র মহান ইহুদী যিশু যাকে কোটি কোটি অনুসারী অন্যায়ভাবে ঈশ্বর বলে পূজা করে তার কথা ও যুক্তিপূর্ণ উপদেশের প্রতি কর্ণপাত করা আবশ্যক। তিনি বলেছেন,
তোমরা খড়গ পুনরায় স্বস্থানে রাখ, কেননা যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হবে। - মথি ২৬: ৫২
হিটলার ও তার পদলেহী ভৃত্যবৃন্দ, মুসোলিনি ও তার ফ্যাসিস্ট দল ও জাপানের পার্ল হারবার খ্যাত নিকাদোকে স্মরণ করে দেখুন, তাদের কথা সকলেই শুনেছেন। তারা আজ কোথায়? নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। আর তোমরা ইহুদীরা তোমাদের নিজেদের ইতিহাস কি ভুলে গিয়েছ? সেই দাসত্ব, সেই গ্লানি, সেই গ্যাস চেম্বারের কথা ভুলে গিয়েছ? ইতিহাস বড় নিষ্ঠুর। সে তার নিষ্ঠুরতা নিয়ে বারবার ফিরে আসে। তোমাদের দস্যুতার বিজয়ে উৎফুল্ল হয়ো না। তোমরা উনিশশো আটচল্লিশ সালে আমার ভাইদেরকে ফেলে দিয়েছ। পুনরায় ১৯৫৬ সালে আবার ১৯৬৭ সালে তোমরা যাকে ছয়দিনের যুদ্ধ বল। আবার ১৯৮২ সালে লেবাননের চূড়ান্ত সমাধান আর এখন ‘ইনতিফাদা”। অর্থাৎ অভ্যুত্থান সবই তোমরা পরাভূত করেছ। সম্ভবত সূচনা ক্ষুদ্র কিন্তু গুরুত্ব বিশাল।
একটি মাত্র বিজয় প্রয়োজন
১৯৬৭ সালে আমার সম্ভান্ত ইহুদী ভাইপো ভগিনীকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলাম “তোমরা আমার ভাইদেরকে ইতিমধ্যে তিনবার ধরাশায়ী করেছ। তোমরা তাদেরকে আরো ত্রিশবার পরাজিত করতে পার। কিন্তু তাতে ইহুদী সমস্যার সমাধান হবে না। আমার আরব ভাইয়েরা একশত বার যুদ্ধে পরাজিত হতে পারেন। তোমাদের চতুম্পার্শ্বে একশত কোটির অধিক মুসলমান তোমাদের ঘিরে আছে। তারা বারবার এগিয়ে আসতে পারে। তারা বহুবার পরাজিত হতে পারে কিন্তু তোমাদের পক্ষে একবারও পরাজয় সহ্য করা সম্ভব নয়। মাত্র একটি পরাজয় তোমাদেরকে নির্মূল করে দেবে। নির্মূল করে দেবে তোমাদের শেষ আহবান। তোমাদের শেষ সময়। কেন সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছ? ডেভিড বেনগুরিয়ান প্রশ্ন করেছেন, “আমাদের কি হবে? যদি আরবদের মধ্যে কোন এক মোস্তাফা কামালের আবির্ভাব হয়। মাইকেল বার জোহার তার সম্ভ্রান্ত পয়গম্বরের গ্রন্থে এই কথা লিখেছেন। পাঁচটি আরব বাহিনী ভীতির সৃষ্টি করে তাদেরকে ঘিরে রেখেছিল। তারা দুই হাজার বছর অস্ত্র পরিচালনা করেনি। এ সম্পর্কে ইহুদী ঐতিহাসিক লিখেছেন, “আরবদের মধ্যে অসংখ্য বাহিনী সৃষ্টি হবার ভয়ে ব্রিটিশরা তাদেরকে ইহুদী সৈন্যবাহিনী গঠন করার ন্যূনতম সুযোগ দেয়নি। তথাপি ইহুদীরা বিরাট সংখ্যায় মিত্র বাহিনীতে যোগদান করে যুদ্ধ করেছে। একমাত্র আধুনিক ইতিহাসে একটি যুদ্ধে একপক্ষে তারা যুদ্ধ করেছে। তাদের সংখ্যা দশ লক্ষ হয়েছিল।”
তারা তাদের তথাকথিত স্বাধীনতা চাচাতো ভাই আরবদেরকে জনবলে, অর্থবলে ও অস্ত্রবলে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা তো কেবল সাজানো ছিলাম। ঘুমের মধ্যে আমাদেরকে ধরা হয়েছিল। ইহুদীদের ছিল অফুরন্ত সম্পদ, মিত্র বাহিনীতে যে ইহুদী সৈন্যরা কাজ করেছে সেইসব প্রাক্তন সৈন্য তাদের এক বিশাল সম্পদ। আমেরিকা, কানাডা, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, স্বাধীন ফরাসি বাহিনী ও আরো অনেক দেশে সৈন্য বাহিনীতে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে তারা এসেছে।
আরব পেট্রোডলার
অফুরন্ত অর্থ? কিসের অর্থ? হ্যাঁ আরব পেট্রোডলার। সে এক ধাপ্পা। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরব সবচেয়ে বেশি তেল উৎপাদন করে। ১৯৪৮ সালে তাদের তেল থেকে আয় ছিল বছরে ১৪ মিলিয়ন ডলার। তাদের সমস্ত তেল মাত্র প্রতি বেরেলে ৮ সেন্ট দরে শুষে নেওয়া হচ্ছিল, এই অর্থের সঙ্গে মিসেস গোল্ডময়ার যে অর্থ প্রতি মাসে আমেরিকার ইহুদীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন তার তুলনায় আরবদের অর্থ কিছুই না। ১৯৪৮ সালে ১৪ মে ইসরাইলের স্বাধীনতা ঘোষণার পর তদানীন্তন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেনগুরিয়ন প্রস্তাব করেছিলেন অর্থ সংগ্রহের জন্য তিনি যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। গোল্ডা বললেন “যে মুহূর্তে বেনগুরিয়ানের দেশে থাকা অধিকতর প্রয়োজন তার পরিবর্তে সে মুহূর্তে তিনি একজন দুঃখী মহিলা হিসাবে আমেরিকা গিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তাহলে অনেক বেশি ফলপ্রসূ হবে। তিনি একমাসের মধ্যে ৫১ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করে দেশে ফিরে আসলেন।
বর্তমান কালে ঐ অর্থ খুব বিরাট পরিমাণের মনে নাও হতে পারে। কিন্তু তখনকার দিনে মধ্যপ্রাচ্যের সর্ববৃহৎ তৈল উৎপাদনকারী সৌদি আরবের সমগ্র তেলের আয়ের তিন গুণ ছিল। ১৯৪৮ সালে হতভাগা আরব জাতি অস্ত্রে, জনশক্তিতে এবং অর্থশক্তিতে অনেক বেশি পিছিয়েছিল।
১৯৫৬ সাল পরবর্তী পরাজয়
“থ্রি মাসকেটিয়ার্স” আমেরিকার ফিল্ম ঐতিহ্যের মত সত্য। ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও ইসরাইল সম্মিলিতভাবে তাদের অপারেশন থ্রি মাসকেটিয়ার্স পরিচালনা করে ১৯৫৬ সালে আমাদের ইহুদী ভাইয়েরা আরব দেশের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মিসরকে পরাভূত করল।
সাকতাই তেভিত রচিত মোসে দায়ানের জীবনী গ্রন্থে লিখেছেন যে ১৯৫৬ সালের সিনাই অভিযানের পরিকল্পনা সৈন্যবাহিনীর প্রধান সেনাপতি হিসাবে তিনিই তৈরি করেছিলেন, আর বাস্তবায়নও তিনি করেছিলেন। ঐ বইয়ের ২৬৭ পৃষ্ঠায় দায়ান ইসরাইল বাহিনীর অভিযানের পরিকল্পিত মানচিত্র প্রকাশ করেছেন।
এই অভিযানের সফলতায় তিনি এতখানি গর্বিত যে বলেছেন প্রয়োজন হলে পুনরায় তিনি সেই পরিকল্পনা অনুসারেই আরব দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করবেন। সত্য কথা বলতে কি ১৯৬৭ সালে পাঠ্যপুস্তকের ছকমত তিনি মিসরীয় বাহিনীকে একইভাবে পর্যুদস্ত পরাভূত করেছিলেন। দায়ান নিশ্চিত জানতেন কোন আরব তার জীবনী গ্রন্থ পাঠ করবে না। এমন কি ইহুদীর লেখা ইহুদী সম্পর্কিত লেখা কোন বই তারা পড়বে না। অথচ এই বই পড়লে তারা জানতে পারত তাদের চাচাতো ভাইয়েরা তাদের সর্বনাশ করার জন্য কি পরিকল্পনা করেছে।
মুসলমানদের শিক্ষা হবে না
আল্লাহ তাআলা হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি কুরআনের প্রথম যে ওহী অবতীর্ণ করেছেন তা হচ্ছেঃ “ইকরা”। অর্থ পাঠ কর। তার মাধ্যমে মুসলমানদেরকে আদেশ করেছেন পড়তে। কিন্তু মুসলমানরা অনুশীলন করছে “লা ইকরা” অর্থাৎ আমরা পাঠ করব না। ইহুদীরা তাদের নিজেদের সাহিত্যে যে সকল গোপন তথ্য প্রকাশ করে দিচ্ছে সেগুলের খবর কি আমরা রাখি? তার অর্থ আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না।
ইহুদী কর্তৃক বারংবার আমরা পরাজিত হচ্ছি তার কারণ কি? এর জবাব অতি সহজ। তাদের উন্নততর পরিকল্পনা ও অস্ত্র। সংক্ষেপে বলা যায়- প্রকৌশল। প্রকৌশল কোন নিষিদ্ধ বিষয় নয়। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর রনডেবশ সভায় ইহুদী ছেলেমেয়েদের সামনে উপরের কথাগুলি বলেছিলাম।
সাত বছর পর মার্টিন যুকার তেলআবিব থেকে আমার কথারই প্রায় হুবহু পুনারাবৃত্তি করেছিলেন।
“ইসরাইলের জানা মতে প্রতিটি আরব সৈন্য সাধারণত কৃষক পরিবার থেকে আগত। তারা স্কুলে বড় জোর ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছে। অন্যদিকে ইসরাইলী যুবকদের বাধ্যতামূলকভাবে সৈনাবাহিনীতে একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত কাজ করতে হয়। তারা কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে। কিছু সংখ্যক দ্বাদশ শ্রেণী ও প্রকৌশল বিষয় পড়াশুনা সমাপ্ত করেছে। ইসরাইলীরা তাদের শত্রুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে উঁচু ধারণা রাখে। অর্থাৎ গড়পরতা আরব সৈন্যদের স্বাস্থ্য ইসরাইলীদের চেয়ে ভাল।
সেদিন আমি ইহুদী ছাত্রদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করেছিলাম যে ইহুদী আরব সংঘর্ষের সমাধান অস্ত্র দ্বারা সম্ভব নয়। একদিন হয়তো আরবরা ইহুদীদের অস্ত্রের চাইতে উন্নতর অস্ত্র লাভ করবে। একদিন ইসরাইলীদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, আর্থিক সহায়তাদানকারী, রক্ষক ও উৎসাহদাতা মহাপরাক্রমশালী আমেরিকা হয়তো ভিয়েতনামীদের যেমন ছেড়ে এসেছিল তেমনি ইহুদীদেরকেও ছেড়ে আসতে পারে। সকলের অনুধাবন করা উচিত বৃহৎ শক্তিবর্গের বন্ধুত্ব কখনই চিরস্থায়ী নয়। তারা যেমন নিজের নেতৃবৃন্দের প্রতি অস্থিরচিত্ত তেমনি অন্যান্য দেশের প্রতিও অস্থিরচিত্ত। যখন সময় আসবে তখন তারা তাদের গতকালের নেতাকে ফাঁসিতে লটকাবে অথবা পুড়িয়ে মারবে। এমতাবস্থায় তেমন পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়। এখনই তোমাদের আরব ভাইদের সঙ্গে সমঝোতা করা উচিত।
তোমাদের ইতিহাসে ভাইয়ে ভাইয়ে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে বহু ঘটনা রয়েছে। ইহুদী বাইবেলে এইরূপ সংঘর্ষ অসংখ্য। আদি পুস্তকে হাবিল ও কাবিল, ইসহাক ও ইসমাইল, ইয়াকুব ও যোসাও, সোলায়মান ও আদোনিজা যেমন সংঘর্ষ করেছিল, বর্তমানে আরব ও ইসরাইল সংঘর্ষ তেমনই।
লেবেলের পার্থক্য
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইহুদী ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলাম, ইহুদী ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ কোথায়? এই বিভেদ জাতিগত বিভেদ নয়, সাংস্কৃতিক বিভেদও নয়, ধর্মীয় পার্থক্যও নয়। কারণ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন মৌলিক বিভেদ নেই। পার্থক্য শুধু লেবেলের মধ্যে। ইসরাইলরা বলে তারা ইহুদী, ধর্মীয়ভাবে ইহুদী ধর্মে বিশ্বাস। অপরপক্ষে আরবরা নিজেদেরকে মুসলমান বলে অভিহিত করে, কারণ তারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী।
আল্লাহর কসম! ইহুদী-আরব সংঘাতের সমাধান অতি সহজ। কেবল তাদের লেবেল পরিবর্তন করলেই তাদের মধ্যে আর বিভেদ থাকে না। তোমরা ইহুদীরা আরব বিশ্বের রাজনীতির ক্ষেত্রে এক প্রচণ্ড জ্বর তৈরি করেছ। তোমরা প্রভাবক হিসাবে কাজ করেছ। তোমরা যদি না আসতে আরব বিশ্ব হয়তো হাজার বছর নিদ্রিত থাকতো। ইহুদী ঐতিহাসিক বলেন, “আজ আরব বিশ্ব তার নিদ্রা হতে জেগে উঠেছে। আরবরা যদি নিজেদেরকে পঙ্ক থেকে উদ্ধার কাজে ইহুদীদেরকে ব্যবহার করে তাহলে তাদেরকে দোষ দেওয়া যাবে না। যেমন অন্যান্য জাতি অনুরূপ ক্ষমতার রাজনীতি করেছিল। ইহুদী নেতাদের নিজেদের জাতীয় স্বার্থে আরব নেতাদেরকে বোঝানো প্রয়োজন যে, আরব বিশ্ব তাদের ন্যায়সঙ্গত লক্ষ্য অর্জন করতে পারে যদি আরব-ইহুদী বিরোধ দূর হয়ে যায়। কারণ এই বিরোধ কোন গভীরভাবে প্রোথিত জাতিগত বা ধর্মীয় বিরোধ নয় বরং এটি রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ভূত। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ইহুদী ও আরব কোন প্রকার ঝগড়া-বিবাদ ব্যতিরেকে পরস্পরের হিতার্থে বহুকাল একত্রে বসবাস করেছে।” (Max I.Dinont in Jews, God and History, Page 205)
এক ধর্ম
অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে সেমেটিক দুই ভাই আরব ও ইহুদী পরস্পরের প্রতি মারাত্মক মারমুখী হয়ে আছে। অথচ জাতিগত ও ধর্মীয়ভাবে তারা পরস্পরের অনেক নিকটবর্তী। একমাত্র ইসলাম তাদের মধ্যে সৌহার্দের সেতু নির্মাণ করতে পারে। আনতে পারে শান্তি ও সমৃদ্ধি। আশ্চর্যের বিষয় আরবি ‘সালাম’ ও হিব্রু ‘শালোম’ উভয়ের অর্থ শান্তি। এই শান্তির জন্য সবাই লালায়িত। ইসলাম ও ইহুদী ধর্মের মধ্যে কোন অলঙ্ঘনীয় প্রাচীর নেই। ইহুদী ধর্মকে আন্তর্জাতিক করেই হয়েছে ইসলাম। জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচ্যবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, সম্প্রতি ফরাসি আলজেরিও একটি প্রকাশনায় বলা হয়েছে যে ইসলাম ধর্ম প্রকৃতপক্ষে ইহুদী ধর্মের আন্তর্জাতিক প্রবণতা, এই কথার মধ্যে কিছুটা সত্য রয়েছে। আরবদের যতটুকু প্রয়োজন ইহুদীদের, ঠিক ততটুকু ইহুদীদের প্রয়োজন আরবদের। আরব বিশ্ব দেহে ইসরাইল একটি নতুন হৃৎপিণ্ড। কিন্তু দেহ হৃৎপিণ্ডকে চিনতে পারছে না। হৃৎপিণ্ড যে বস্তু দিয়ে গঠিত দেহ সেই বস্তু দিয়ে গঠিত নয়।
হৃৎপিণ্ড দেহে সংযোজন করার পর আরব দেহ সেটি গ্রহণ করতে চাচ্ছে না। এজন্য একজন ক্ষমতাবান ইহুদী বা আরব ডাক্তার বার্নার্ড প্রয়োজন। যিনি এই প্রত্যাখ্যান প্রতিহত করার জন্য ঔষধ দেবেন।
দক্ষিণ আফ্রিকায় কেপটাউন শহরে সর্বপ্রথম অস্ত্র প্রচারের মাধ্যমে ডাক্তার বার্নার্ড মানবদেহে হৃৎপিণ্ড সংযোজন করেছিলেন তখন তাকে দেহের প্রত্যাখ্যান সমস্যা সমাধান করতে হয়েছিল। দেহ জানে না এই নতুন হৃৎপিণ্ড গ্রহণ না করলে সে নিজেও বাঁচবে না। সেইজন্য দেহকে দীর্ঘকাল যাবত যতক্ষণ না সে নতুন হৃৎপিণ্ড গ্রহণ করতে সক্ষম হচ্ছে ততক্ষণ ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে বেঁচে থাকতে হয়; অর্থাৎ দেহকে বাচিয়ে রাখার জন্য ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়। হৃৎপিণ্ডের সেলুলার গঠনপ্রকৃতি দেহের গঠন প্রকৃতির সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত। তেমনি, ইহুদী/ইহুদী ইহুদী বনাম মুসলমান/মুসলমান/মুসলমান। লেবেল বদলে ফেলুন ইনশাল্লাহ্ আল্লাহ চাহে তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
পবিত্র কুরআনে ইহুদীদের প্রতি সুমার্জিত আচরণ
মহান আল্লাহ্ তা'আলা কি বলেছেন শুনুনঃ তিনি সর্বশেষ ও চূড়ান্ত প্রত্যাদেশের মাধ্যমে মানবতার প্রতি ইহুদীদের কিভাবে আচরণ করেছেন;
হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে তোমরা স্মরণ কর যার দ্বারা আমি তোমাদেকে অনুগৃহীত করেছি এবং আমার সঙ্গে তোমাদের অঙ্গীকার পূর্ণ কর, আমিও তোমাদের সঙ্গে আমার অঙ্গীকার পূর্ণ করব এবং তোমরা শুধু আমাকেই ভয় কর।
– কুরআন ২: ৪০
ইহুদী ও মুসলমানদের হাজার বছর যাবত যে মধুর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল তার ব্যাখ্যা উপরের আয়াতে পাওয়া যায়। কত সম্মানের সঙ্গে তিনি তোমাদেরকে সম্বোধন করছেন। আর বাইবেলে ইহুদীদের সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
এসব কথা তোমাদের নিজেদের ধর্মগ্রন্থে তোমাদের পয়গম্বররাই বলেছেন। কোন সেমেটিক বিরোধী কেউ বলেননি। তার বিপরীতে পবিত্র কুরআনে আমরা কি দেখি? সেখানে তোমাদেরকে ভালবাসার সঙ্গে সম্বোধন করা হচ্ছে। তোমরা এই সম্বোধনকেই আশা কর। “হে ইসরাইলের সন্তানবৃন্দ!” আবার অন্যত্র দেখুন—
হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ কর যার দ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছিলাম এবং বিশ্বে সবার উপরে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছিলাম।
– কুরআন- ২: ৪৭
উপরোক্ত আয়াতে এবং অন্যান্য আয়াতে একইভাবে ইহুদীদেরকে তাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সম্বোধন করা হয়েছে, আপন স্বজন হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তোমরা ইহুদীরা দাবি কর যে তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রাপ্ত জাতি। তোমরা কি আল্লাহর অনুগ্রহের কথা ভুলে গিয়েছ, তোমরা দাবি কর আল্লাহর সঙ্গে তোমাদের বিশেষ চুক্তি হয়েছিল। তিনি তোমাদেরকে দ্বিতীয় বারের মত ভূমি বন্ধন থেকে মুক্ত করে নিয়ে এসেছেন। তিনি তার চুক্তি পালন করেছেন। তোমরা তোমাদের চুক্তি কতখানি পালন করছ?
লেবেল পরিবর্তন কর
হে অনুগ্রহ প্রাপ্ত জনগণ! তোমরা পূর্বেও প্রত্যাদেশ পেয়েছিলে। সেই প্রত্যাদেশ সমর্থন করে পুনরায় প্রত্যাদেশ (পবিত্র কুরআন) প্রত্যাদেশ এসেছে। এর আহবান প্রথমেই তোমাদের প্রতি, তোমরা গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলে। এখন তোমরা সেই আহবান প্রথমে প্রত্যাখ্যান করতে যাচ্ছ? কিন্তু কেন?
সংক্ষেপে, তোমরা শান্তির পথ গ্রহণ কর, ইসলাম (শলোম) গ্রহণ কর। অর্থাৎ তোমাদের লেবেল ইহুদী বদলিয়ে কর মুসলমান। ফিরে যাও, প্রত্যাবর্তন কর, মহান আল্লাহ্ যে জন্য তোমাদেরকে নির্বাচিত করেছিলেন সেই মূল ভূমিকা পালন করতে ফিরে আস।
এখন যদি তোমরা আমার রবে অবধান কর ও আমার নিয়ম পালন কর। — যাত্রাপুস্তক ১৯:৫
আমার বক্তৃতার শেষ পর্বে প্রশ্নউত্তরের সময় আমার এক ভাইপো (কেপটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইহুদী ছাত্র) পাল্টা প্রশ্ন করল, “আপনি কেন আপনার লেবেল বদলাচ্ছেন না?” তার অর্থ ইহুদীরা মুসলমান না হয়ে মুসলমানরা কেন ইহুদী হবে না। এই ধরনের প্রশ্ন আমার ভাল লাগে। এই জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের নিকট বক্তব্য রাখতে ভালবাসি। তাদের মধ্যে একটা প্রাণ আছে। তারা তাদের পিতামাতার ন্যায় নতুন চিন্তা ভাবনা গ্রহণ করতে দ্বিধান্বিত নয়। আমি বললাম, লেবেল পরিবর্তন করতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমি যদি পরিবর্তন করি অর্থাৎ ইহুদী হই তাহলে তোমরাই আমার পথে বাধার সৃষ্টি করবে। প্রথমত তোমরা চাও না অন্য কেউ ইহুদী ধর্ম গ্রহণ করুক। তোমরা তোমাদের ধর্মকে জাতিগত ধর্মে পরিণত করেছ। ইহুদী হতে হলে ইহুদীর ঘরে জন্মগ্রহণ করতে হয়। এ প্রসঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে। একজন শ্বেত বা সাদা চামড়ার খ্রিস্টান ইহুদীর মেয়ের প্রেমে পড়েছিল। সেজন্য সে খ্রিস্ট ধর্ম ত্যাগও করেছিল। ২৩ বছর বয়সে খাৎনা করার কষ্টও সহ্য করেছিল। তবুও তাকে তৃতীয় শ্রেণীর ইহুদী হয়ে থাকতে হয়েছিল।
ইহুদীদের নাম পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন কেন
খ্রিস্টান অথবা ইহুদীদের মত মুসলমানদের খাৎনা কোন সমস্যা নয়। কারণ মুসলমানরাও খাৎনা করে। আমার মনিব মিস্টার বিয়ারের কথামত আমরা ইহুদীদের চাইতেও অধিকতর ইহুদী। কিন্তু বিতর্কের কারণে আমি যদি বলি, “হ্যাঁ, আমি আমার নামপত্র পরিবর্তন করে মুসলমান থেকে ইহুদী হতে চাই, তাহলে তোমাদের কি লাভ হবে?” আমি তরুণ ইহুদী শ্রোতৃবৃন্দকে প্রশ্ন করলাম, “পৃথিবীতে ইহুদীর সংখ্যা কত?” কেউ কেউ চিৎকার করে বলল বার মিলিয়ন। ১৯৬৭ সালে তেমনি ছিল। আজ তারা বলে তাদের সংখ্যা নাকি ১৫ মিলিয়ন। তখন আমি বললাম, আমার নামপত্র পরিবর্তনের ফলে তোমাদের সংখ্যা হবে বার মিলিয়ন এক। কিন্তু তুমি যদি নামপত্র পরিবর্তন কর তাহলে আমাদের সংখ্যা হবে সাতশো মিলিয়ন এক। (বর্তমানে মুসলমান জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার মিলিয়ন)। আমি আবার প্রশ্ন করলাম, তোমরা কি এর পার্থক্য বুঝতে পার? যে নির্বোধ সেই নামপত্র পরিবর্তন করতে অস্বীকার করবে। তোমরা তো ব্যবসায়ী জাত। অন্য সকলের চেয়ে তোমাদের বেশি বোঝা উচিত। কারণ ব্যবসায়ী হিসাবে তোমাদের কোন পণ্যের বার মিলিয়ন লোকের বাজার রয়েছে। কিন্তু শুধু নামপত্র বা লেবেল পরিবর্তন করলে তুমি সাতশো মিলিয়ন লোকের বাজার পাচ্ছ। গুয়ারতুমী করে লেবেল পরিবর্তন করতে অস্বীকার করলে তোমার জন্য দারুণ বোকামী হবে। বিশেষ করে মুসলিম নামপত্রের কোন কপিরাইট নেই।
সবশেষে একটি প্রকৃত সমস্যা রয়েছে। ধর্মীয়ভাবে ইসলামের বৃত্ত অনেক প্রশস্ত। ইসলাম ইহুদীদের অপেক্ষা সমগ্র মানবতাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত। একটি বৃহৎ বৃত্ত ক্ষুদ্র বৃত্তকে অঙ্গীভূত করতে পারে কিন্তু ক্ষুদ্র বৃত্ত বৃহৎকে পারে না।
কে এই কাজ করবে
উপরোক্ত সভার শেষে এক ইহুদী ছাত্র প্রশ্ন করল, ‘কে এই কাজ করবে?’ আমি বললাম, ‘তোমরা করবে। তোমাদের বুকের মাঝে তোমরা যে অন্যায়, অপরাধ ও পাপের বোঝা সঞ্চয় করেছ সেই বোঝা ঝেড়ে ফেলে দাও। আমাদের প্রতি যে অন্যায় করেছ তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। ফিলিস্তিনের জনসাধারণকে বল যে তাদের প্রতি তোমরা ঘোরতর অবিচার করেছ। তাদের বল, ভাই আমাদের ক্ষমা করে দাও। আমরা কোথায় যাব। আল্লাহর কসম, এই লোকেরা তোমাদের ক্ষমা করে দেবে। তারা অতি সহজ সরল মানুষ। তাদের হৃদয় অনেক প্রশস্ত। তাদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে সুযোগ নিও না।’
“আরব ইসরাইল সংঘর্ষ না সমঝোতা” বিষয়ের উপর যার সঙ্গে আমি বিতর্ক করেছিলাম তিনি স্বীকার করেছেন যে আরব ও ইহুদী যদি একটি সম্মানজনক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারত তাহলে হয়তো দ্বিতীয় স্বর্ণযুগের উদয় হতো। মুসলিম স্পেনে ইহুদীরা উন্নতির শীর্ষে পৌঁছেছিল সেটাই ছিল তাদের প্রথম স্বর্ণযুগ।
ঊনবিংশ শতকের ইহুদী ঐতিহাসিকগণ লিখেছেন, মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ইহুদীরা অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্টান ইউরোপের ইহুদী অধিবাসীদের থেকে স্পেনে মুসলমানদের অধীনে ইহুদীরা অনেক ভাল ছিল। সেখানে তারা আইনগতভাবেই উন্নত নাগরিক অধিকার ভোগ করত। মুসলিম স্পেনে ইহুদী যুগকে স্বর্ণযুগ আখ্যায়িত করা হয়েছে?”
যে ছেলেটি আমাকে প্রশ্ন করেছিল “কে এই কাজ করবে?” তার সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনার পর সে বলল, “ছয়দিন যুদ্ধের পর পড়াশুনা সমাপ্ত করে সবেমাত্র ইসরাইল থেকে এসেছি। আমি আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, ইসরাইলে ফিরে গিয়ে আপনার এই বাণী সেখানে পৌঁছে দেব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/28
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।