মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বল, তোমরা ভেবে দেখেছ কি যদি এই কুরআন আল্লাহর নিকট হতে অবতীর্ণ হয়ে থাকে আর তোমরা এতে অবিশ্বাস কর অথচ বনী ইসরাইলের একজন এর অনুরূপ কিতাব সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছে এবং এতে বিশ্বাস স্থাপন করল, আর তোমরা ঔদ্ধত্ব প্রকাশ কর, তাহলে তোমাদের কি পরিণাম হবে?"
— কুরআন ৪৬: ১০
সম্মানিত সভাপতি, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ,
আজকের সন্ধ্যায় আমরা যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি সেটি হচ্ছে ‘হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বাইবেলের ভাষ্য’। আপনাদের অনেকের নিকট আশ্চর্য মনে হচ্ছে কারণ বক্তা একজন মুসলমান এবং তিনি বাইবেল ও ইহুদী ধর্মগ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যাখ্যা করছেন।
চল্লিশ বছর আগের কথা, তখন আমি অল্পবয়স্ক এক যুবক হিসেবে ডারবান শহরের রয়াল থিয়েটার মঞ্চে অনুষ্ঠিত রেভারেণ্ড হিটেন নামের এক খ্রিস্টান ধর্মযাজকের ধারাবাহিক বক্তৃতা শুনছিলাম।
পোপ না, কিসিঞ্জার?
সেই রেভারেন্ড ভদ্রলোক বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণীগুলি ব্যাখ্যা করছিলেন। তিনি এমন কথাও বলেছিলেন যে, খ্রিস্টান বাইবেলে নাকি সোভিয়েট রাশিয়ার উত্থান সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এমনকি তাদের পরিণতির দিনগুলো সম্পর্কেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। বলতে বলতে এক পর্যায়ে তিনি বলতে লাগলেন যে, বাইবেলে নাকি পোপ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করতে বাকি রাখেনি। শ্রোতামণ্ডলীকে সন্তুষ্ট করার জন্য তিনি দারুণ উৎসাহের সঙ্গে ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, প্রত্যাদেশ অধ্যায় (নিউ টেস্টামেন্টের সর্বশেষ অধ্যায়) যে পণ্ড—৬৬৬–এর উল্লেখ রয়েছে তিনি হচ্ছেন পোপ অথচ যিনি পৃথিবীতে খ্রিস্টের ভিকার বা প্রতিভূ। খ্রিস্টান রোমান ক্যাথলিক ও খ্রিস্টান প্রোটেস্ট্যান্টদের ঝগড়ার মধ্যে আমাদের মুসলমানদের প্রবেশ করা শোভা পায় না। তবু প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয় যে, এ সম্পর্কে প্রোটেস্ট্যান্টদের সর্বশেষ ব্যাখ্যা হচ্ছে খ্রিস্টান বাইবেলের ‘পণ্ড-৬৬৬ তিনি হচ্ছেন হেনরী কিসিঞ্জার। খ্রিস্টান পণ্ডিতেরা তাদের কোন বিষয় প্রমাণ করার জন্য অসাধারণ উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিতে পারে।
রেভারেণ্ড হিটেনের বক্তৃতা আমাকে প্রশ্ন করতে উদ্বুদ্ধ করছিল যে, বাইবেলে যখন এত ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে— এমনকি ‘পোপ’, ‘ইসরাইল’ও বাদ যায়নি তখন মানবকুলের সর্বশ্রেষ্ঠ হিতৈষী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে অবশ্যই কিছু ভবিষ্যদ্বাণী থাকবে।
যুবক বয়সেই এই প্রশ্নের জবাব অন্বেষণে ব্রতী হলাম। একের পর এক খ্রিস্টান ধর্মযাযকদের সাথে সাক্ষাৎ করতাম, তাদের বক্তৃতা শুনতাম এবং বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কিত যা কিছু হাতের কাছে পেতাম তাই পাঠ করতাম।
আজ রাতে আপনাদেরকে এমনি এক পাদ্রীর সঙ্গে যে কথোপকথন হয়েছিল তা বর্ণনা করবো। এই পাদ্রী ছিলেন ওলন্দাজ সংস্কারবাদী চার্চের সদস্য।
শুভ ত্রয়োদশ
একবার ট্রান্সভাল ‘শহরে ঈদ-ই মিলাদুন্নবী’ উপলক্ষে সেখানে বক্তৃতা দেবার জন্য আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি জানতাম সে অঞ্চলের অধিবাসীরা অধিকাংশই আফ্রিকান ভাষায় কথা বলে, এমনকি আমার জ্ঞাতি ভাইয়েরাও সে ভাষায় কথা বলে। তাই ভাবলাম আমিও যদি ওই ভাষায় ভাঙা ভাঙা কথা বলতে পারি তাহলে আমার কাজ অনেকটা সহজ হবে। আমি টেলিফোন নির্দেশিকা দেখে আফ্রিকানাভাষী বেশ কয়েকটি গির্জার পাদ্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বললাম যে, আমি তাদের সঙ্গে আলাপ করতে ইচ্ছুক। কিন্তু তারা সকলেই একে একে আপাতদৃষ্টিতে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখিয়ে আমার অনুরোধ রক্ষায় তাদের অক্ষমতার কথা তুলে ধরল। এয়োদশ আমার শুভ সংখ্যা। তের বারের বার টেলিফোন করতেই স্বস্তি ও আনন্দ বোধ করলাম। শনিবার দিন বিকেল বেলা যেদিন ট্রান্সলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবার কথা তখন ফন ভীরদেন নামে এক পাদ্রী তার বাসগৃহে আমাকে সাক্ষাতকার দিতে সম্মত হলেন।
বন্ধুত্বপূর্ণ সাদর সম্ভাষণ করে তিনি তাঁর বাসগৃহের বারান্দায় আমাকে অভ্যর্থনা জানিয়ে বললেন, আমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে তিনি তাঁর শ্বশুর সাহেবকে আমাদের আলাপচারিতায় অংশগ্রহণের জন্য বলবেন। তার শ্বশুর সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ। ফ্রি স্টেটে বাস করেন। আমি সম্মত হলাম, তারপর আমরা তিনজন পাদ্রী গ্রন্থাগারে আসন গ্রহণ করলাম।
কেন নেই?
আমি প্রশ্ন উত্থাপন করলাম, “বাইবেল গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কি আছে?’ বিনা দ্বিধায় তিনি উত্তর দিলেন, “কিছুই নেই।” আমি বললাম, “কিছুই নেই কেন? আপনার নিজের ব্যাখ্যা অনুসারে আমরা জানতে পারি যে, বাইবেলে অনেক বিষয় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে; যেমন সোভিয়েত রাশিয়া সম্পর্কে বলা হয়েছে, তাদের পরিণতির দিন সম্পর্কে বলা হয়েছে, এমনকি রোমান ক্যাথলিক পোপ সম্পর্কেও বলা হয়েছে।” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, কিন্তু মুহাম্মদ সম্পর্কে তো কিছু নেই।” আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম, “কেন নেই? এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, এই মানুষটি অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এক বিশ্বাসী জনগোষ্ঠীতে পরিণত করেছেন। যে জনগোষ্ঠী বিশ্বাস করেঃ
১. যীশুর জন্ম অলৌকিক,
২. যীশু একজন মসীয়া ছিলেন।
৩. তিনি ঈশ্বরের নির্দেশে মৃতকে জীবন দান করতে পারতেন, জন্মান্ধকে দৃষ্টি দান করতে পারতেন এবং কুষ্ঠ রোগীর রোগ নিরাময় করতে পারতেন।
নিশ্চয়ই এই গ্রন্থে অর্থাৎ বাইবেল গ্রন্থে এমন একজন মহৎ ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বর্ণিত আছে, কারণ তিনি যীশু এবং তার মাতা মেরি সম্পর্কে অনেক ভাল কথা বলেছেন।”
ফ্রি স্টেট থেকে আগত বৃদ্ধ প্রতিউত্তরে বললেন, “বৎস, আমি বিগত পঞ্চাশ বছর যাবত বাইবেল পাঠ করছি, যদি তার সম্পর্কে সত্যিই কিছু থাকত, আমি অবশ্যই জানতাম।”
নাম দিয়ে কারো পরিচয় নেই!
আমি জানতে চাইলাম, “আপনার কথামত ওল্ড টেস্টামেন্টে যীশুর আগমন সম্পর্কে শত শত ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে।” তিনি যোগ করলেন, “শত শত নয়, হাজার হাজার।” আমি বললাম, “যীশুর আগমন সম্পর্কে ওল্ড টেস্টামেন্টে সহস্রবার না একবার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে সে বিষয়ে কোন বিতর্ক করতে যাচ্ছি না। কারণ বিশ্বের সকল মুসলমান বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী ব্যতিরেকেই তাকে স্বীকার করে নিয়েছে। আমরা মুসলমানরা কেবলমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর কথাতেই তাকে যীশু হিসাবে মেনে নিয়েছি। বর্তমান বিশ্বে কমপক্ষে একশ কোটি মুসলমান রয়েছে যারা হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর অনুসারী এবং যারা যীশু খ্রিস্টকে ভালবাসে, শ্রদ্ধা করে এবং মনে করে তিনি আল্লাহর একজন রসূল এবং সেজন্য তাঁকে বাইবেলের দোহাই দিয়ে কোন খ্রিস্টানকে উদ্যোগী হতে হয় না। সে নিজেই মুসলমান হিসাবে এটা মেনে নিয়েছে। আপনি বলছেন, যীশুর আগমন সম্পর্কে হাজার হাজার ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, আপনি হাজার নয়, মাত্র একটি ভবিষ্যদ্বাণীর উল্লেখ করুন যেখানে যীশুর নাম ধরে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। মসীয়া’র অনুবাদ করে হয়েছে যীশু, এটি কোন নাম নয়, এটি হচ্ছে একটি পদবী। এমন কোন ভবিষ্যদ্বাণী আছে যেখানে বলা হয়েছে, মসীয়ার নাম হবে যীশু আর তার মায়ের নাম হবে মেরী, তার পিতার নাম হবে যোশেফ দি কার্পেন্টার, তার জন্ম হবে রাজা হেরোডের রাজত্বকালে ইত্যাদি ইত্যাদি? না এমন কোন বিস্তারিত তথ্য বাইবেলে নেই। তাহলে আপনি কি করে বলছেন যে, যীশু সম্পর্কে হাজার হাজার ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে?”
ভবিষ্যদ্বাণী কি?
পাদ্রী আমার প্রশ্নের উত্তরে বললেন, “দেখ, ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে শব্দচিত্র, ভবিষ্যতে কোন কিছু ঘটতে যাচ্ছে এমন বিষয়ের একটি শব্দচিত্র। যখন সেই ঘটনা ঘটে যায়, তখন আমরা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারি বা দেখতে পাই যে অতীতে যে কথা বলা হয়েছিল তাই সংঘটিত হয়েছে।”
আমি বললাম, “অর্থাৎ আপনারা অনুমান করেন অথবা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, যাকে বলা যায় দুই আর দুইকে এক সঙ্গে রাখেন।” তিনি বললেন, “হ্যাঁ” আমি বললাম, “তাই যদি হয় তাহলে আপনারা যীশুর ক্ষেত্রে যে হাজার হাজার ভবিষ্যদ্বাণীকে তুলে এনেছেন বা প্রয়োগ করেছেন সেগুলিকে মুহাম্মদ (সা.)-এর ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে পারেন। তাহলে কি দাঁড়ায়?” পাদ্রী আমার কথায় রাজী হলেন। এটি একটি যুক্তিসঙ্গত প্রস্তাব। এ সমস্যাকে এইভাবে বিচার করে দেখা যেতে পারে।
আমি তাকে বাইবেলের দ্বিতীয় বিবরণ আঠার অধ্যায়ের আঠার নম্বর পঙক্তি দেখার জন্য বললাম, তিনি তাই করলেন। আমি স্মৃতি থেকে সেই অংশটি আফ্রিকানা ভাষায় মুখস্থ তাকে পাঠ করে শুনালাম কারণ, আমার উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার শাসকগোষ্ঠির ভাষা অনুশীলন করেন নেওয়া।
পঙক্তিটি ছিল এরূপ ‘আমি তাদের জন্য তাদের ভাইদের মধ্য হতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করব, ও তাঁর মুখে আমার বাক্য দিব; আর আমি তাকে যা আজ্ঞা করব, তা তিনি তাদেরকে বলবেন।
মূসা (আ)-এর ন্যায় নবী
আফ্রিকানা ভাষায় বাইবেলের এই পঙক্তি স্মৃতি থেকে পাঠ করে আমার অশুদ্ধ উচ্চারণের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলাম। পাদ্রী আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, আমি নাকি ভালই উচ্চারণ করছি। আমি বললাম, “এই পঙক্তি বা বাক্যে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে সেটি কাকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে?”
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে তিনি বললেন, “যীশু”।
আমি বললাম, “যীশু কেন-তার নাম তো কোথাও এখানে উল্লেখ করা হয়নি?”
পাদ্রী উত্তর দিলেন, “ভবিষ্যদ্বাণী হচ্ছে ভবিষ্যতে কোন কিছু ঘটতে যাচ্ছে তার শব্দচিত্র সে কারণে আমরা লক্ষ্য করি যে বাক্যের শব্দগুলি তাঁর সম্পর্কে যথেষ্ট ব্যাখ্যা করছে। তুমি দেখেছ এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুচ্ছ হচ্ছে ‘সুস জাই ইস’ (তোমার সদৃশ)-মূসার সদৃশ এবং যীশু হচ্ছেন মূসার সদৃশ”।
আমি প্রশ্ন করলাম, “কি প্রকারে যীশু মূসার সদৃশ?”
উত্তর হলো, প্রথমত মূসা ছিলেন ইহুদী এবং যীশুও ছিলেন ইহুদী ; দ্বিতীয়ত মূসা একজন নবী ছিলেন, ঈসাও নবী ছিলেন-অতএব যীশু মূসার সদৃশ”-যা ঈশ্বর পূর্বেই মূসাকে বলে দিয়েছেন-“সুস জাই ইস”।
“আপনি মূসা ও যীশুর মধ্যে আর কোন সাযুজ্য বা সাদৃশ্যের কথা মনে করতে পারেন কি?’ তাঁকে প্রশ্ন করলাম। পাদ্রী মহোদয় আর কোন সাদৃশ্য স্মরণ করতে পারলেন না। তখন আমি বললাম, বাইবেলের ডিউটারোনমি বা দ্বিতীয় বিবরণ অধ্যায়ে ১৮: ১৮ এই দুটি মানদণ্ড ব্যতীত আর কোন মানদণ্ড যদি না থাকে তাহলে এই মানদণ্ড দ্বারা মূসার পরবর্তীকালে আগত অন্যান্য নবীকেও মূসার অনুরূপ বলা যেতে পারে। তাদের মধ্যে রয়েছেন সোলায়মান, ইসাইয়াহ এজেইকেল, ডানিয়াল, হোসিয়া, জোয়েল, মালাচি, বাপতিস্ত জন প্রভৃতি, কারণ তারা সকলেই ছিলেন ইহুদী এবং সকলেই ছিলেন নবী। তাহলে আমরা এ মানদণ্ড এই সকল নবীদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করবো না, কেবল যীশুর ক্ষেত্রে কেন প্রয়োগ করব? এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?
পাদ্রী আমার প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারলেন না। নিরুত্তর থাকলেন। আমি বলতে লাগলাম, দেখুন, আমার বিবেচনায় যীশু সব দিক হতে মুসার বিসদৃশ। আমি যদি ভুল বলি, দয়া করে আমাকে সংশোধন করে দেবেন।
তিনটি বৈসাদৃশ্য
এই কথা বলে আমি আরম্ভ করলামঃ সর্বপ্রথম যীশু কোন প্রকারেই মূসার সদৃশ নন কারণ আপনারাই বলেন যীশুই ঈশ্বর অথচ মূসা ঈশ্বর নন, এই কথা কি সত্য নয়? তিনি বললেন, “হ্যাঁ। আমি বললাম, “তাহলে যীশু মূসার সদৃশ নন!
দ্বিতীয়ত, আপনার বক্তব্য অনুসারে যীশু বিশ্বের পাপ মোচনের জন্য দেহ ত্যাগ করেছিলেন কিন্তু মূসাকে বিশ্ববাসীর পাপ স্খলনের জন্য মৃত্যু বরণ করতে হয়নি। সত্য নয় কি?
পাদ্রী পুনরায় বলরেন, “হ্যাঁ। আমি বললাম, “তাহলে যীশু মূসার সদৃশ নন।”
তৃতীয়ত, আপনার বক্তব্য অনুসারে যীশুকে তিন দিনের জন্য নরক বাস করতে হয়েছিল, কিন্তু মূসাকে নরকে যেতে হয়নি। সত্য নয় কি?
তিনি ক্ষীণ কণ্ঠে উত্তর দিলেন, “হ্যাঁ-হ্যাঁ”।
আমি পরিশেষে বললাম, “তাহলে এ কথা সত্য যে যীশু মূসার সদৃশ নন!”
আমি আমার বক্তব্যের রেশ ধরে বলতে লাগলাম, “যাহোক, পাদ্রী সাহেব এসব কঠিন সত্য নয়, বাস্তব সত্য নয়, যাকে আমরা বলি ধরা ছোঁয়া যায় এমন সত্য নয়, এগুলো কেবল বিশ্বাসের বিষয়, এখানে যে কেউ হোঁচট খেয়ে ধরাশায়ী হতে পারে। তার চেয়ে সহজ কিছু আলোচনা করা যেতে পারে যা কিনা একটি ছোট শিশুও বুঝতে পারে। আমরা কি সেভাবেই অগ্রসর হতে পারি?” পাদ্রী আমার এ প্রস্তাবে খুশি হলেন।
পিতা এবং মাতা
(১) “হযরত মূসার একজন পিতা ছিলেন এবং একজন মাতা ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা)-এরও একজন পিতা ছিলেন এবং মাতা ছিলেন। কিন্তু যীশুর কেবলমাত্র একজন মাতা ছিলেন। তার কোন মানব পিতা ছিল না। এ কথা কি সত্য?” পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ।” আমি বললাম, “তাহলে যীশু হযরত মূসার সদৃশ নন, বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসার সদৃশ।”
অলৌকিক জন্ম
(২) হযরত মূসা এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উভয়ের জন্ম স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক নিয়মে ঘটেছে। অর্থাৎ পুরুষ এবং স্ত্রীর স্বাভাবিক মিলনের ফলে তাঁদের জন্ম। কিন্তু যীশু সৃষ্ট হয়েছিলেন বিশেষ অলৌকিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। আপনার যদি স্মরণ থাকে তাহলে সেন্ট মেথুর গসপেলে দেখতে পারেন। সেখানে বলা হয়েছে, “তাহাদের (কারপেন্টার জোসেফ এবং মেরি) সহবাসের পূর্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ভ হইয়াছে।” তারপর যখন পবিত্র পুত্রের জন্মের সুসংবাদ মেরিকে দেওয়া হল সেন্ট লিউক আমাদেরকে বলেন, “তখন মরিয়ম দূতকে বললেন, এটা কিরূপে হবে? আমি ত পুরুষকে জানি না। দূত উত্তর করিয়া তাঁকে বললেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসবেন, এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপর ছায়া করবে.....” (লুক ১: ৩৫)। পবিত্র কোরআন শরীফে যীশুর অলৌকিক জন্মকে স্বীকার করছে। সেখানে মেরির যুক্তিসঙ্গত প্রশ্ন “এটা কিরূপে হবে? আমি ত পুরুষকে জানি না।”-এর উত্তরে আরও অধিক শ্রদ্ধা সহকারে এবং সুন্দরভাবে বলা হয়েছে, “আল্লাহ্ যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন। তিনি যখন কিছু স্থির করেন তখন বলেন, 'হও' এবং তা হয়ে যায়” (কুরআন, ৩: ৪৭)। কোন মানুষ অথবা প্রাণীর মধ্যে স্রষ্টাকে বীজ বপন করতে হয় না। তিনি কেবল ইচ্ছা করলেই সেটি হয়ে যায়। মুসলমানগণ যীশুর জন্মকে এভাবে বিশ্বাস করে। যখন আমি কুরআন এবং বাইবেলে যীশুর জন্ম বৃত্তান্ত তুলনা করি এবং বলি, “আপনি যখন আপনার কন্যার নিকট এই দুটি বর্ণনা অর্থাৎ কুরআনের বর্ণনা এবং বাইবেলের বর্ণনা বলবেন তখন কোনটি বলতে আপনি অধিকতর সুবিধাজনক মনে করবেন?” ভদ্রলোক মাথা নিচু করে বললেন, “কুরআনের বর্ণনা।” সংক্ষেপে আমি পাদ্রীকে বললাম, “একথা কি সত্য যে হযরত মূসা এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্বাভাবিক জন্মের বিপরীত যীশুর জন্ম অলৌকিকভাবে হয়েছিল?” পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ”। তখন আমি বললাম, “অতএব, যীশু হযরত মূসার সদৃশ নন। বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসার সদৃশ।”
বিবাহ বন্ধন
(৩) “হযরত মূসা (আ) এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিবাহ করেছিলেন এবং তাদের সন্তান হয়েছিল। কিন্তু যীশু সারা জীবন অবিবাহিত ছিলেন। এ কথা কি সত্য?”
পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ।”
আমি বললাম, “অতএব, যীশু হযরত মুসার সদৃশ নন। বরং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসার সদৃশ।”
যীশু তার গোত্র কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন
(৪) “হযরত মূসা (আ) এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জীবনকালেই স্বজাতি কর্তৃক নবী হিসেবে স্বীকৃত হয়েছিলেন।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ইহুদীরা মূসা (আ)-কে সীমাহীন যন্ত্রণা এবং কষ্ট দিয়েছিল এবং তারা গৃহহারা হয়ে দেশে দেশে ঘুরে বেড়িয়েছিল। তথাপি তারা মূসা (আ)-কে তাদের নবী হিসেবে স্বীকার করেছিল। আরবরাও অনুরূপভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছিল, তাদের হাতে তিনি নিদারুণ যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন। দীর্ঘ তের বছর মক্কায় দীন প্রচার করার পর তাঁকে তাঁর জন্মভূমি মক্কা নগর ত্যাগ করে যেতে হয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে সমগ্র আরব জাতি তাঁকে আল্লাহর প্রেরিত রসূল হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছিল। কিন্তু বাইবেলে কি বলে তিনি নিজ অধিকারে এলেন, আর যারা তার নিজের, তাঁরা তাকে গ্রহণ করল না’ (জন ১: ১১)। এমন কি হাজার বছর পর বর্তমান কালেও তার স্বজাতি ইহুদীরা সামগ্রিকভাবে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছে। একথা কি সত্য নয়?”
পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ। তখন আমি পুনরায় বললাম, “অতএব যীশু হযরত মূসার সদৃশ নন, বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসার সদৃশ।”
‘ভিন্ন জগৎ' রাজত্ব
(৫) “হযরত মূসা এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উভয়েই ছিলেন নবী আবার তারা রাষ্ট্র পরিচালানও করেছেন। নবী বলতে আমি তাকেই বুঝি যিনি তার জাতিকে পথনির্দেশের জন্য স্রষ্টার নিকট হতে বাণী লাভ করেন এবং তিনি সেই বাণী কোন প্রকার সংযোজন, পরিমার্জন, পরিবর্তন বা পরিবর্ধন ব্যতিরেকে যথাযথভাবে তাঁর জাতির নিকট প্রকাশ করেন। একজন রাষ্ট্র পরিচালক তাকেই বলি যিনি তার জাতির ভাগ্য নিয়ন্তা হন, তাদের জীবন-মৃত্যু তার উপর নির্ভর করে। এখানে তিনি কি বস্ত্র পরিধান করেন অথবা মস্তকে কি মুকুট পরিধান করেন অথবা আদৌ কোন রাজমুকুট পরিধান করেন কি করেন না সেটি কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। অথবা তাকে রাজা বলে সম্বোধন করা হয়েছে কি হয়নি সেটা কোন বড় কথা নয়। কিন্তু বড় কথা হচ্ছে যিনি কোন ব্যক্তিকে চরম শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করবার অধিকার রাখেন তিনিই শাসক বা মূসার সেই ক্ষমতা ও অধিকার ছিল। আপনি কি বাইবেলের সেই ঘটনার কথা স্মরণ করতে পারেন যেখানে বলা হয়েছে, সাবাত দিনে কোন ইসরাইলী যদি কাঠ কুড়াতে যায় তাকে মূসা প্রস্তর নিক্ষেপ করে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন? (গণনাপুস্তক ১৫: ৩৬) বাইবেলে আরো অনেক অপরাধের কথা উল্লেখ আছে যে ক্ষেত্রে মূসা অনেক ইহুদীকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেছিলেন। তার সম্প্রদায়ের জনগণের জীবন ও মৃত্যুর উপর হযরত মুহাম্মদেরও সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্ষমতা এবং অধিকার ছিল। বাইবেলে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে যেখানে কোন কোন ব্যক্তিকে কেবল নবুয়ত দান করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের নির্দেশ কার্যকর করতে সক্ষম ছিলেন না। এমন অনেক আল্লাহর নবী তাঁদের উপদেশ কঠোরভাবে উপেক্ষিত হতে দেখেছেন। এমন নবী ছিলেন লুত, ডানিয়েল, এজরা, ব্যাপ্টিস্ট জন। তারা কেবল বাণী পৌঁছে দিতে পেরেছিলেন, কিন্তু আইন প্রয়োগ করতে সক্ষম হননি। হযরত ঈসা (আ) দুর্ভাগ্যক্রমে এদের শ্রেণীভুক্ত ছিলেন। যীশুর জীবন কাহিনী সম্বলিত বাইবেলে এই বক্তব্যর স্পষ্ট সমর্থন পাওয়া যায়ঃ যখন যীশুকে টেনে হিচড়ে রোমান শাসনকর্তা পনটিয়াস পাইলেটের সম্মুখে আনয়ন করা হলো এবং তার বিরুদ্ধে রাজদ্রোহের অভিযোগ আনা হলো। তখন যীশু তার বিরুদ্ধে আনীত মিথ্যা অভিযোগ খণ্ডনের জন্য যুক্তিসঙ্গত বক্তব্য পেশ করেছিলেনঃ যীশু উত্তর করলেন, আমার রাজ্য এ জগতের নয়; যদি আমার রাজ্য এ জগতের হত, তবে আমার অনুচরেরা প্রাণপণ চেষ্টা করত, যেন আমি ইহুদীদের হস্তে সমর্পিত না হই; কিন্তু আমার রাজ্য ত এখানকার নয়। (যোহন ১৮: ৩৬) এই বক্তব্য শুনে পাইলেট সম্মত হয়েছিলেন যে যদিও যীশুও মানসিক দিক হতে সম্পূর্ণ নয়। তিনি তাকে তার শাসনের ক্ষেত্রে বিপজ্জনক মনে করেননি। যীশু তো কেবল আধ্যাত্মিক জগতের অধিকার দাবী করেছেন; অন্যভাবে বলতে গেলে বলতে হয় তিনি নিজেকে কেবল নবী হিসেবে দাবী করেছিলেন, এ কথা কি সত্য?” পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ।”
আমি তখন বললাম, “অতএব, যীশু হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ নন, কিন্তু হযরত মুহাম্মদ মূসা (আ)-এর সদৃশ।”
নতুন কোন বিধি বিধান নয়
(৬) হযরত মূসা (আ) ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের জনগণের জন্য নতুন আইন ও নতুন বিধান এনেছিলেন। মূসা (আ) কেবল তার ইসরাইলী জনগোষ্ঠীর জন্য দশটি নির্দেশ এনেছিলেন, শুধু তাই নয় বরং তাদের সঠিক পথে চলার জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধি বিধান এনেছিলেন। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন এক জনগোষ্ঠীর মাঝে আবির্ভূত হলেন যারা অসভ্যতা ও অজ্ঞতায় সম্পূর্ণ নিমজ্জিত। তারা তাদের বিমাতাকে বিবাহ করতো, কন্যাকে জীবন্ত সমাধিস্থ করতো, মদ্যপান, জুয়া খেলা, ব্যভিচার, পুতুল পূজা ছিল তাদের নিত্য সহচর। ইসলামপূর্ব যুগের আরব সম্পর্কে গীবন তার ‘রোমান সম্রাজ্যের অবক্ষয় ও পতন’ গ্রন্থে আরবদেরকে নরপশু বলে আখ্যায়িত করেছেন, বলেছেন যে তাদের কোন বোধ শক্তি ছিল না, তাদেরকে অপরাপর জন্তু জানোয়ার হতে প্রায় পার্থক্য করা যেতো না। সে যুগে বলতে গেলে এমন কিছুই ছিল না যা দিয়ে মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা যায়। তারা মানবরূপী পশু ছিল।
হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এইরূপ চরম শোচনীয় দুর্দশাগ্রস্ত বর্বরতা থেকে উত্থিত করে আরব জাতিকে, কার্লাইলের ভাষায় ‘জ্ঞান ও আলোর দিশারী’ করেছিলেন। আরব জাতির নিকট তা হয়েছিল অন্ধকার হতে আলোক পদার্পণ। এর দ্বারা সর্বপ্রথম আরব জাতি প্রাণ লাভ করল। এক দরিদ্র মেষ পালক জাতি সকলের অগোচরে সৃষ্টির প্রথম হতে মরু প্রান্তরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। যাকে কেউই চিনত না সে সকলের দৃষ্টি আকৃষ্ট করল। একটি ক্ষুদ্র জাতি বিশ্বের মহত্তম হল। মাত্র এক শতাদ্বিকাল পরে আরব জাতি একদিকে গ্রানাডা ও অপর দিকে দিল্লী পৌঁছালো। শৌর্যে বীর্যে পরাক্রমে সাহসে দীপ্তিতে এবং জ্ঞানের গরিমার আলোক সহসা ঝলসে উঠল, বিশ্বের এক বিশাল ভূখন্ড জুড়ে আরব সভ্যতা জ্বলজ্বল করে জ্বলতে লাগল....” সত্যই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জাতিকে এমন আইন শৃঙ্খলার মধ্যে আনয়ন করলেন, যা কখনোই তাদের মধ্যে ছিল না।
যীশুর ক্ষেত্রে কি হয়েছিল? যখন ইহুদীদের সন্দেহ হলো যে তিনি একজন প্রতারক, তাদের ধর্মকে বিকৃত করবেন, তিনি কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে তাদেরকে বোঝাতে সচেষ্ট হলেন যে তিনি কোন নতুন ধর্ম নিয়ে আসেননি-নতুন কোন বিধি বিধান নয়। তার কথায় “মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদিগ্রস্ত লোপ করিতে আসিয়াছি; আমি লোপ করিতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, যে পর্যন্ত আকাশ ও পৃথিবী লুপ্ত না হইবে, সে পর্যন্ত ব্যবস্থার এক মাত্রা কি এক বিন্দুও লুপ্ত হইবে না, সমস্তই সফল হইবে।” অর্থাৎ তিনি কোন নতুন আইন ও বিধি বিধান নিয়ে আসেন নি; তিনি কেবল পুরাতন বিধি বিধানকে বাস্তবায়িত করতে এসেছেন। তিনি একথাই ইহুদীদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন- যদি না তিনি হালকাভাবে তাঁকে আল্লাহ্র মানুষ হিসেবে গ্রহণ করতে ইহুদীদেরকে ধোকা দিতে চেষ্টা করতেন এবং ছলনা করে যে কোন উপায়ে একটি নতুন ধর্মকে তাদের উপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। না, আল্লাহর এই রসূল কখনোই এমন জঘন্য পন্থা অবলম্বন করে আল্লাহর ধর্মকে বিকৃত করতে পারেন না। তিনি নিজে আল্লাহর বিধানকে পরিপূর্ণ করেছিলেন। হযরত মূসা (আ)-এর নির্দেশগুলি পালন করতেন, সাবাতকে শ্রদ্ধা করতেন। কখনোই কোন ইহুদী তার দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেনি, ‘তুমি কেন রোজা রাখ না’ অথবা ‘রুটি টুকরো করার পূর্বে কেন তুমি হাত ধৌত করনি’? যে অভিযোগ প্রায়শই তার শিষ্যদের প্রতি করা হতো কিন্তু কখনোই যীশুর বিরুদ্ধে করা হয়নি। কারণ একজন খাঁটি ইহুদী হিসেবে তিনি তাঁর পূর্ববর্তী রসূলের নির্দেশকে যথাযথভাবে মান্য করতেন। সংক্ষেপে বলতে হয় যে, যীশু কোন নতুন ধর্ম প্রবর্তন করেননি; হযরত মূসা (আ.) এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ন্যায় নতুন কোন আইন বা বিধি বিধান প্রদানও করেন নি। একথা কি সত্য?” পাদ্রী বললেন, “হ্যাঁ”।
আমি বললাম, “অতএব যীশু হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ নন; বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ।”
তাদের তিরোধান কিরূপ হয়েছিল
(৭) “মূসা এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উভয়েরই স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল কিন্তু খ্রিস্ট ধর্ম মতে যীশু নৃশংসভাবে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেন, এ কথা কি সত্য?” পাদ্রী স্বীকার করলেন। আমি বললাম, “তাহলে যীশু হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ নন; বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ।”
বেহেশতি আবাস
(৮) “হযরত মূসা (আ) এবং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম উভয়ই এই পৃথিবীতে মাটির নিচে সমাধিস্থ হয়ে আছেন, কিন্তু আপনার মতে যীশু বেহেশতে বিশ্রাম করছেন। এ কথা কি সত্য?” পাদ্রী আমার সঙ্গে একমত হলেন। আমি বললাম, “তাহলে যীশু হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ নন; বরং হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ।”
ইসমাইল প্রথম সন্তান
পাদ্রী সাহবে অসহায় ভাবে যেহেতু প্রতিটি ক্ষেত্রে আমার সঙ্গে একমত হচ্ছিলেন তাই আমি বললাম, “পাদ্রী সাহেব এতক্ষণ পর্যন্ত আমি কেবল সমগ্র ভবিষ্যদ্বাণীর একটি ক্ষেত্র প্রমাণ করার চেষ্টা করছি-সেটি ছিল তোমার সদৃশ-তোমার মত’-মূসার মত'- এই বাক্যটি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু ভবিষ্যদ্বাণীর বাক্যটিতে আরো কিছু কথা রয়েছে, সেগুলো সহ পাঠ করলে দাঁড়ায়ঃ “আমি তাদের জন্য তাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে তোমার সদৃশ এক ভাববাদী উৎপন্ন করব, ও তাঁর মুখে আমার বাক্য দেব; আর আমি তাঁকে যা আজ্ঞা করব, তা তিনি তাদেরকে বলবেন।” এখানে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে তাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে কথার উপর। এ স্থলে মূসা এবং তার জনগণ, অর্থাৎ ইহুদীদেরকে একটি জাতিসত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, ফলে আরবগণ তাদের ভ্রাতা সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। আপনি লক্ষ্য করে থাকবেন যে বাইবেলে আবরাহামকে ঈশ্বরের বন্ধু বলা হয়েছে। আবরাহামের দুই স্ত্রী ছিল। সারাহ ও হাজারা। হাজারার গর্ভে আবরাহামের যে পুত্র জন্ম গ্রহণ করেছিল তিনি তার নামকরণ করেছিলেন ইসমাইল “হাগার আবরাহামের নিমিত্তে পুত্র প্রসব করল; আর আবরাহাম হাগারের গর্ভজাত আপনার সেই পুত্রের নাম ইশ্মায়েল রাখলেন। (আদি পুস্তক ১৬: ১৫) “পরে আবরাহাম আপন পুত্র ইশ্মায়েলকে..... (আদি পুস্তক ১৭: ২৩) “ইশায়েলের লিঙ্গাঘের ত্বকছেদন কালে তাঁর বয়স তের বৎসর (আদি পুস্তক ১৭: ২৫)। তের বৎসর বয়সকাল পর্যন্ত ইম্মায়েলই ছিল আবরাহামের একমাত্র পুত্র, একমাত্র বংশধর; অতঃপর আল্লাহ্ এবং আবরাহামের মধ্যে চুক্তি দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহতায়ালা আব্রাহামকে সারাহর মাধ্যমে আর একটি পুত্রসন্তান দান করেন যার নাম রাখা হয়েছিল, আইজাক। যিনি ইশ্মায়েল অপেক্ষা অনেক ছোট ছিলেন।
আরব এবং ইহুদী
যদি ইম্মায়েল (ইসমাইল) ও আইজাক (ইসরাইল) এক পিতা আব্রাহামের সন্তান হন তাহলে তারা দুজন ভাই। আর একজনের বংশধর অপরজনের বংশধরের ভাই। আইজাকের বংশধরই ইহুদী এবং ইম্মায়েলের বংশধর আরব-অতএব একে অপরের ভাই। বাইবেলেও সেকথাই বলে, “সে তার সকল ভ্রাতার সম্মুখে বসতি করবে” (আদি পুস্তক ১৬: ১২)। “এবং তিনি তাঁর সকল ভ্রাতার সম্মুখে বসতিস্থান (সমাধিস্থ) পেলেন (আদি পুস্তক ৫: ১৮)। আইজাকের বংশধররা ইশ্মায়েলের বংশধরদের ভ্রাতা। সে হিসেবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈলদের ভাইদের একজন কারণ তিনি আব্রাহামের পুত্র ইম্মায়েলের বংশধর। ভবিষ্যবাণীও ঠিক সে কথাই বলছে-তাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে সেখানে স্পষ্টই উল্লেখ করা হয়েছে যে আগামীতে যে পয়গম্বর আসবেন তিনি হযরত মূসা (আ)-এর সদৃশ, আইজাকের বংশোদ্ভূত নন অথবা তাদের মধ্য হতে নয়, বরং তাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে। হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অতএব তাদের ভ্রাতৃগণের মধ্য হতে এসেছেন।
তার মুখে আমার বাক্য দেব
ভবিষ্যদ্বাণী আরো বলছে যে, তাঁর মুখে আমার বাক্য দেব'। এ কথার অর্থ কি, বিশেষ করে যখন বলা হচ্ছেঃ তাঁর মুখে আমার বাক্য দিব? দেখুন যখন আমি প্রথমে আপনাকে বাইবেল খুলে দ্বিতীয় বিবরণ, ১৮ অধ্যায় ১৮ পঙক্তি দেখতে বলেছিলাম, তখন যদি প্রথমে আপনাকে পাঠ করতে বলতাম এবং আপনি যদি পাঠ করতেনঃ তাহলে আমি কি আপনার মুখে আমার বাক্য দিতাম? পাদ্রী সাহেব বললেন, “না”। আমি আবার বললাম, যদি আপনাকে আরবির মত কোন ভাষা শেখাতাম, যে ভাষা সম্পর্কে আপনার কোনরূপ ধারণাই নেই; তারপর বলতাম আমার সঙ্গে আমি যা বলি তা বলুন, যেমনঃ
বল, তিনিই আল্লাহ, একক ও অদ্বিতীয়। আল্লাহ কাহারও মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাকেও জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই।
তাহলে আমি কি আপনার মুখে এমন বাক্য দিব না আপনি কোন দিন শোনেন নি? এবং সেই বাক্য আপনি উচ্চারণ করছেন, তাহলে কি সেই বাক্য আপনার মুখে দেয়া হল না।
পাদ্রী সাহেব আমার সঙ্গে একমত হলেন। আমি বললাম, এমনিভাবেই পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
ইতিহাস থেকে আমরা জানি যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বয়স তখন চল্লিশ বৎসর, রমজান মাসের ২৭ তারিখের রাত, হেরা পাহাড়ের গুহার মধ্যে জিবরাঈল (আ) তাকে তার মাতৃভাষায় নির্দেশ করলেন-'ইকরা' অর্থাৎ পাঠ করুন বা বলুন! হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভয়ে দিশাহারা অবস্থায় উত্তর করলেন, ‘মা আনা বেকারে এন’ অর্থাৎ আমি শিক্ষিত নই! ফিরিশতা দ্বিতীয় বার তাকে একই নির্দেশ দিয়ে একই উত্তর পেলেন। তৃতীয়বার ফেরেশতা তাকে একই নির্দেশ দিয়ে বললেন “পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে।” তখন তিনি অনুধাবন কররেন যে তাকে কি করতে হবে। অতঃপর তিনি সেই বাক্য উচ্চারণ করলেন যা তার মুখে দেয়া হলো......
( ٱقۡرَأۡ بِٱسۡمِ رَبِّكَ ٱلَّذِی خَلَقَ )
পাঠ কর তোমার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন।
( خَلَقَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مِنۡ عَلَقٍ )
সৃষ্টি করেছেন মানুষকে আলাক হতে।
( ٱقۡرَأۡ وَرَبُّكَ ٱلۡأَكۡرَمُ )
পাঠ কর, আর তোমার প্রতিপালক মহা মহিমান্বিত,
( ٱلَّذِی عَلَّمَ بِٱلۡقَلَمِ )
যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন।
( عَلَّمَ ٱلۡإِنسَـٰنَ مَا لَمۡ یَعۡلَمۡ )
শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না
—কুরআন ৯৬: ১-৫
এই পাঁচটি আয়াত সর্বপ্রথম তার নিকট প্রকাশ করা হলো। এ আয়াতগুলে পবিত্র কুরআন ৯৬ অধ্যায়ের বা সূরার প্রথমে রয়েছে।
বিশ্বাসী সাক্ষী
ফেরেশতা চলে যাবার পর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম দৌড়ে গৃহে প্রত্যাবর্তন করতেন। ভীত-সন্ত্রস্ত ও ঘর্মাক্ত কলেবরে প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজাকে বললেন “শরীর ঢেকে দিতে।” তিনি শুয়ে পড়লেন। বিবি খাদিজা পাশে বসে তাঁকে দেখতে লাগলেন। সুস্থির হয়ে তিনি বিবি খাদিজাকে বললেন, কি হয়েছে, তিনি কি দেখেছেন ও কি শুনেছেন। বিবি খাদিজা তাকে আশ্বস্ত করে বললেন তার উপর তাঁর পূর্ণ আস্থা আছে এবং আল্লাহ্ এমন কিছু ঘটাবেন না যা তার জন্য ক্ষতিকর। কোন প্রতারক এরূপ স্বীকারোক্তি করতে পারে না। কোন প্রতারক কি বলবে যে আল্লাহর তরফ হতে যখন কোন ফেরেশতা কোন বাণী নিয়ে তার নিকট উপস্থিত হয় তখন সে ভীত-সন্ত্রস্ত ঘর্মাক্ত কলেবরে গৃহে প্রত্যাবর্তনে করে? তার স্বীকারোক্তি এবং প্রতিক্রিয়া দেখে যে কোন সমালোচক অনুধাবন করতে পারেন যে, তাঁর স্বীকারোক্তি ও প্রতিক্রিয়া প্রকৃতপক্ষে একজন প্রকৃত সৎ, স্পষ্টবাদী এবং আল-আমিন ব্যক্তির পক্ষেই সম্ভব।
পরবর্তী তেইশ বছর কাল ধরে তার মুখে বাক্য দেয়া হয়েছিল এবং তিনি তা উচ্চারণ করেছিলেন। সেই শব্দাবলি তাঁর হৃদয়ে ও মনে অমোচনীয়ভাবে চিরকালের জন্য অংকিত হয়ে গিয়েছিল। পবিত্র গ্রন্থের কলেবর যতই বৃদ্ধি পেতে থাকে সেগুলো তাঁর সাহাবাগণ বৃক্ষপত্রে, ছালে বা হাড়ের উপর লিখে রাখতেন। তাঁর মৃত্যুর পূর্বেই এসব বাক্য বর্তমানে কুরআনুল করীম আমরা যে অবস্থায় পাচ্ছি সে অবস্থায় সংকলিত করা হয়েছিল।
অতএব প্রকৃতই আল্লাহ তাঁর বাণীকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর মুখে বাক্য আকারে দিয়েছিল।
আলোচ্য ভবিষ্যদ্বাণীতে ঠিক সেভাবেই বলা হয়েছে; তাঁহার মুখে আমার বাক্য দেব। (দ্বিতীয় বিবরণ -১৮: ১৮)
নিরক্ষর পয়গম্বর
বাইবেলের অপর আর একটি ভবিষ্যদ্বাণীর যথাযথ বাস্তবায়ন দেখতে পাই, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম হেরা পর্বত গুহায় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন এবং প্রত্যাদেশের ফলে যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল তার মধ্যে। যিশাইয় ২৯ অধ্যায় ১১২ পঙক্তিতে বলা হয়েছে... যে লেখাপড়া জানে না, তাকে যদি সে পুস্তক দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, তবে সে উত্তর করিবে আমি লেখাপড়া জানি না (পুস্তক, আল কিতাব আর কুরআন-পাঠ, আবৃত্তি) নিরক্ষর পয়গম্বর আন্নবী আল উম্মি অনুগ্রহ করিয়া ইহা পাঠ কর, হিব্রু গ্রন্থে কথাটি নেই; ক্যাথলিকদের ডোয় পাঠে এবং রিভাইজড স্ট্যান্ডার্ড ভারশনে আছে এবং তিনি বলিলেন, আমি নিরক্ষর আরবী মাআনা বেকারিও-এর সঠিক অনুবাদ। এই বাক্য হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুবার জিবরাঈল ফেরেশতার নিকট উচ্চারণ করেছিলেন যখন ফেরেশতা তাঁকে পাঠ করতে নির্দেশ করেছিলেন।
কিং জেমস সংস্করণ অথবা যে কোন অনুমোদিত সংস্করণে দেখতে পাই কি লেখা আছে,.. যে লেখাপড়া জানে না, তাহাকে যদি সে পুস্তক দিয়া বলে, অনুগ্রহ করিয়া এটা পাঠ কর, তবে সে উত্তর করিবে আমি লেখাপড়া জানি না। (যিশাইয় ১৯: ১২) প্রসঙ্গত বলা যায় ষষ্ঠ শতকে যখন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত ছিলেন এবং ইসলাম প্রচার করছিলেন তখন বাইবেলের কোন আরবি অনুবাদ ছিল না। তাছাড়া তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নিরক্ষর ও অক্ষরজ্ঞানহীন। কোন মানুষ তাঁকে একটি অক্ষরও শেখায়নি। তাঁর স্রষ্টাই ছিলেন তাঁর শিক্ষক —
সে মনগড়া কথাও বলে না; ইহা তো ওহী, যাহা তাহার প্রতি প্রত্যাদেশ হয়, তাহাকে শিক্ষা দান করে শক্তিশালী।
— কুরআন ৫৩:৩-৫
কোন প্রকার মানবিক জ্ঞান ব্যতিরেকেই তিনি সকল জ্ঞানবানের মাথা নত করে দিয়েছেন।
মহা সাবধানবাণী
আমি পাদ্রী সাহেবকে বললাম, “দেখুন পাদ্রী সাহেব, বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী কেমন চমৎকার ভাবে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর ক্ষেত্রে খাপে খাপে মিলে গিয়েছে। সেজন্য ভবিষ্যদ্বাণীকে সম্প্রসারিত করতেও হয়নি।
পাদ্রী বললেন, তোমার সকল ব্যাখ্যাই শুনতে যুক্তিসঙ্গত মনে হয়, কিন্তু তাতে কিছু আসে যায় না, কারণ আমাদের খ্রিস্টানদের নিকট যীশু বাস্তব ঈশ্বর। তিনি আমাদের পাপমোচনের জন্য এসেছিলেন।
আমি বললাম, কিছু আসে যায় না? কিন্তু ঈশ্বর সম্ভবত তা মনে করেননি। তিনি তাই সে বিষয়েও কথা রেখেছেন। তিনি জানতেন আপনাদের মত লোক আসবেন যারা তাঁর বাণীকে গভীরভাবে অনুধাবন করবেন না। তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের সাথে সমস্ত কিছু গ্রহণ করবেন। তাই তিনি দ্বিতীয় বিবরণে ১৮: ১৮-তে মহা সতর্কবাণী করেছেনঃ আর আমার নামে তিনি আমার যে সকল বাক্য বলবেন, তাতে যে কেউ কর্ণপাত না করবে, তার কাছে আমি প্রতিশোধ লইব।' ক্যাথলিক বাইবেলে শেষ বাক্যটি হচ্ছে I will be the revenger- ‘আমি হব প্রতিশোধ গ্রহণকারী’ আমি প্রতিশোধ গ্রহণ করব- এই কথাগুলো কি আপনার অন্তরে ভীতির সঞ্চার করে না? মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ ভীতি প্রদর্শন করছেন, প্রতিশোধ গ্রহণের আর সে ভীতি হচ্ছে সামান্য পথের মাস্তান যখন ভীতি প্রদর্শন করে তখন ভয়ে আমরা কম্পমান হই, আর যখন খোদ স্রষ্টা সতর্ক করছেন তখন আপনি ভীত হচ্ছেন না?
দ্বিতীয় বিবরণের একই অধ্যায়ে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নে আরো যে কথা বলা হয়েছে তা লক্ষণীয় “আমার নামে তিনি আমার যে সব বাক্য বলবেন” মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কার নামে বলবেন? আমি কুরআন পাকের সূরা নাস খুলে দেখালাম, প্রতিটি সূরার প্রথমে রয়েছেন।
( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ )
দয়াময় পরম পরম দয়ালু আল্লাহর নামে, অতঃপর সূরা ১১০, ১১১, ১১২, ১১৩ দেখালাম, প্রতিটি সূরার প্রথমে বলা হচ্ছেঃ-
( بِسۡمِ ٱللَّهِ ٱلرَّحۡمَـٰنِ ٱلرَّحِیمِ )
দয়াময় পরম দয়ালু আল্লাহর নামে। প্রতিটি মুসলমান সকল বিধিসম্মত কাজ এ আয়াত দিয়ে আরম্ভ করে। কিন্তু একজন খ্রিস্টান আরম্ভ করে, পিতা, পুত্র এবং পবিত্র আত্মার নামে। ডিউটেরোনমি অধ্যায়-১৫তে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীতে যীশুকে নয়, বরং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেই যে বোঝানো হয়েছে সে বিষয়ে আমি ১৫টি প্রমাণ উপস্থাপন করেছি।
ব্যাপ্টিস্ট কর্তৃক যীশুকে অস্বীকার
নতুন নিয়ম-এর (খ্রিস্টান বাইবেল) কালে আমরা লক্ষ্য করি যে ইহুদীরা এখনও “মুসার সদৃশ” শীর্ষক ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবায়নের আশা করছে। যখন যীশু নিজেকে ইহুদীদের মসিহা বলে দাবী করলেন এবং ইহুদীরা ইলিয়াসকে অন্বেষণ করতে আরম্ভ করল। ইহুদীদের নিকট দুটি সমান্তরাল ভবিষ্যদ্বাণী ছিল, যে মেসিহাব আগমনের পূর্বে ইলিয়াসকে অবশ্যই দ্বিতীয়বার আসতে হবে। যীশুও এই ইহুদী বিশ্বাসকে সমর্থন করেছেনঃ সত্য বটে এলিয় আসিবেন, এবং সকলই পুনঃস্থাপন করিবেন; কিন্তু আমি তোমাদিগকে কহিতেছি, ইলিয় আসিয়া গিয়াছেন, এবং লোকেরা তাহাকে চিনে নাই... তখন শিষ্যেরা বুঝিলেন যে, তিনি তাহাদিগকে যোহন বাপ্তাইজকের বিষয় বলিয়াছেন। (মথি ১৭: ১১-১৩)
নতুন নিয়ম অনুসারে ইহুদীরা ভবিষ্যতে আগমন করবেন এমন মসিহের কথা শুনতে রাজী না। তাদের অনুসন্ধান কাজে তারা তাদের প্রকৃত মসিহকে পেতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। যোহন লিখিত সুসমাচারে এর সমর্থন রয়েছে আর যোহনের সাক্ষ্য এই-, যখন ইহুদীগণ কয়েকজন যাজক ও লেবীয়কে দিয়ে জেরুজালেম হইতে তাঁহার কাছে এই কথা জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইল, আপনি কে? তখন তিনি স্বীকার করিলেন, অস্বীকার করিলেন না; তিনি স্বীকার করিলেন যে, আমি সেই খ্রিস্ট নই। তাঁহারা তাহাকে জিজ্ঞাসা করিল, তবে কি? আপনি কি এলিয়? তিনি বলিলেন, আমি নই। আপনি কি সেই ভাববাদী? তিনি উত্তর করিলেন, না। (এ স্থলে যোহন দি বাপ্তিস্ত যীশুকে অস্বীকার করছেন! যীশু বলছেন যে যোহনই ইলিয়স এবং যোহন অস্বীকার করছেন যে যীশু তাকে যা বলছেন তিনি তা।) দু’জনের একজন, আল্লাহ না করুন, নিশ্চিতভাবে সত্য বলছেন না। যীশুর নিজ সাক্ষ্য অনুযায়ী ইসরাইলী পয়গম্বরদের মধ্যে জন দি বাপ্তিস্ত মহত্তম পয়গম্বরঃ আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, স্ত্রী-লোকের গর্ভজাত সকলের মধ্যে যোহন বাপ্তাইজক হইতে মহান কেহই উৎপন্ন হয় নাই, (মথি ১১: ১১)।
মুসলমানের নিকট যোহন বাপ্তাইজক হচ্ছেন হযরত ইয়াহইয়া (আ)। তাকে আমরা প্রকৃত নবী বলে মান্য করি। আমাদের নিকট যীশু হচ্ছেন ঈসা (আ)। তাঁকেও আমরা পয়গম্বরদের মধ্যে অন্যতম মহৎ পয়গম্বর বলে সম্মান করি। তাদের মধ্যে একজনের উপর মিথ্যার দোষারোপ আমরা কেমন করে আনতে পারি? যোহন ও যীশুর এই সমস্যা খ্রিস্টান ও ইহুদীরাই সমাধান করুক। কারণ তাদের এই পবিত্র ধর্মগ্রন্থে অসংখ্য বৈপরিত্য রয়েছে যেগুলিকে তারা ঘষামাজা করছে আর বলছে এগুলি ‘যীশুর অন্ধকার বাণী'। আমাদের প্রশ্ন একট বিষয়ে, যখন যোহন বাপ্তিস্তকে প্রশ্ন করা হলো আপনি কি সেই ভাববাদী? তিনি উত্তর করিলেন, না। (যোহন ১: ২১)
তিনটি প্রশ্ন
অনুগ্রহ করে লক্ষ্য করুন যোহন বাপ্তিস্তকে তিনটি স্পষ্ট ও পৃথক প্রশ্ন করা হলে তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, না।
পুনরায় পরীক্ষা করা যাকঃ ১. আপনি কি যীশু, ২ আপনি কি ইলিয়াস? ৩. আপনি কি সেই পয়গম্বর?
কিন্তু খ্রিস্টান জগতের মহা পণ্ডিতবর্গ কেবল দুটি প্রশ্ন বিবেচনার মধ্যে আনয়ন করেন।
অধিকতর স্পষ্ট করার জন্য যে ইহুদীদের মনে নিশ্চয়ই তিনটি পৃথক ও স্পষ্ট ভবিষ্যৎবাণী ছিল যে কারণে তারা যোহন বাপ্তিস্তকে তিনটি প্রশ্ন করেছিল; আর তাহারা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি যদি সেই খ্রিস্টও নহেন, এলিয়ও নহেন, সেই ভাববাদীও নহেন, তবে বাপ্তাইজ করিতেছেন কেন?
১. সেই খ্রিস্ট নহেন, ২. এলিয়ও নহেন, ৩. সেই ভাববাদীও নহেন।
ইহুদীরা তিনটি পৃথক ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়নের অপেক্ষা করছিলঃ এক যীশুর আগমন; দুই. ইলিয়াসের আগমন, এবং তিন সেই পয়গম্বরের আগমন।
সেই পয়গম্বর
আমরা যদি কোন বাইবেল খুলে দেখি যে বাইবেলে ব্যবহৃত শব্দাবলি বা বিষয়সমূহের বর্ণনাক্রমিক সূচি রয়েছে তাহলে আমরা পার্শ্বদেশের টীকায় জন ১: ২৫-এ “পয়গম্বর”, অথবা “সেই পয়গম্বর” কথাটি দেখতে পাব বা ডিউটারোনমি ১৮: ১৫ ও ১৮-এর ভবিষ্যদ্বাণী নির্দেশ করে। আর আমরা “সেই পয়গম্বর”-“মূসার সদৃশ সেই পয়গম্বর”-“তোমার সদৃশ” ইত্যাদি ভবিষ্যদ্বাণী যে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশিত, যীশুকে নির্দেশিত নয় সে বিষয়ে যথেষ্ট সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করেছি।
আমরা যারা মুসলমান তারা কখনোই অস্বীকার করি না যে যীশু একজন “মসিহ” ছিলেন, মসিহ শব্দের অর্থ করা হছে “যীশু”। (১৬)।
মসিহ-এর আগমন সম্পর্কে খ্রিস্টানদের দাবীমতে ওল্ড টেস্টামেন্টে সহস্রবার না একবার ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে তা নিয়ে আমরা বিবাদ করছি না। আমরা যা বলতে চাই তা হলো- ডিটটেরোনোমি ১৮: ১৮ তে যীশু সম্পর্কে কিছুই বলা হয় নি বরং তাতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে বিশদভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। আমার কথা শুনে পাদ্রী বললেন আলোচনা খুবই চিত্তাকর্ষক। একদিন এসে এ, বিষয়ে সম্মিলিত জনতার উদ্দেশ্যে বক্তৃতা করলে তিনি খুব খুশি হতেন- দ্রতার সাথে এই বলে পাদ্রী সাহেব আমার কাছ থেকে বিদায় নিলেন। কিন্তু দেড় দশক ধরে আমি সে সুযোগের অপেক্ষায়-ই থেকেছি। সুযোগ মেলেনি। আমার বিশ্বাস আমাকে এরূপ আমন্ত্রণ জানানোর সময় পাদ্রী আন্তরিক ছিলেন, কিন্তু পূর্বসংস্কার এতই দুর্মর যে বিশ্বাসের অবস্থান হতে কেউ নড়তে চায় না।
এ্যাসিড টেস্ট বা অগ্নি পরীক্ষা
যীশুর মেষ শাবকদেরকে বলি, তোমরা কেন যারা নবী দাবি করবে তাদের ক্ষেত্রে সেই পরীক্ষা পদ্ধতি প্রয়োগ কর না যা তোমাদের প্রভু তোমাদেরকে প্রয়োগ করতে নির্দেশ করেছিলেন? তিনি বলেছিলেনঃ “তোমরা তাহাদের ফল দ্বারাই তাহাদিগকে চিনতে পারিবে। লোকে কি কাঁটাগাছ হইতে দ্রাক্ষাফল, কিম্বা শিয়াল কাটা হইতে ডুমুরফল সংগ্রহ করে? সেই প্রকারে প্রত্যেক ভাল গাছে ভাল ফল ধরে, কিন্তু মন্দ গাছে মন্দ ফল ধরে... উহাদের ফল দ্বারাই উহাদিগকে চিনিতে পারিবে।” (মথি ৭:১৬-২৯)
তোমার এই পরীক্ষা পদ্ধতি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রদত্ত শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে দেখতে ভীত কেন? আল্লাহর প্রেরিত শেষ গ্রন্থ পবিত্র কুরআনে তোমরা দেখতে পাবে- মূসা এবং যীশুর প্রকৃত শিক্ষার পূর্ণতা প্রাপ্তির মধ্যেই নিহিত রয়েছে বিশ্বের বহুল প্রত্যাশিত প্রকৃত শান্তি ও সুখ। “আধুনিক জগতের শাসক যদি হতেন মুহাম্মদ তবে তিনি সকল সমস্যার সমাধান আনতে সক্ষম হতেন, পারতেন আনতে শান্তি ও সুখ”। (জর্জ বার্নার্ড শ)
মহত্তম মানব
১৫ জুলাই ১৯৭৪ সাপ্তাহিক টাইম ম্যাগাজিনে “কে ইতিহাসে মহত্তম নেতা ছিলেন” এ বিষয়ে বিশ্বের খ্যাতনামা বিভিন্ন ঐতিহাসিক, লেখক, ব্যবসায়ী, সামরিক ব্যক্তিত্বের মতামত সংকলিত হয়েছিল। কেউ বলেছিলেন হিটলার, কেউ বলেছিলেন গান্ধি, বুদ্ধ, লিনকন ইত্যাদি। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের একজন মনোবিজ্ঞানী মি. মাজারমান বিষয়টি বিবেচনার জন্য একটি মানদণ্ড নির্ধারণ করে বলেছিলেন যে “নেতাকে তিনটি বিষয়ে পূর্ণতা অর্জন করতে হবেঃ
১. তার জনগণের মঙ্গলের ব্যবস্থা করতে হবে,
২. এমন এক সামাজিক সংগঠনের ব্যবস্থা করতে হবে যেখানে জনগণ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এবং
৩. তাদেরকে তিনি এক গুচ্ছ বিশ্বাস প্রদান করবেন।
“পাস্তুর ও সালক প্রথম বিষয়ের নেতা, হিটলার ও আলেকজান্ডার দ্বিতীয় বিষয়ের নেতা এবং গান্ধি ও কনফুসিয়াস তৃতীয় বিষয়ের নেতা। সম্ভবত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মহত্তম নেতা কারণ তিনি সকল তিনটি বিষয়ে সফলতা লাভ করেছিলেন। কিছুটা কম হলেও মূসা (আ) তদ্রুপ সফলতা লাভ করেছিলেন।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক, আমার বিশ্বাস তিনি ইহুদী, যে মানদণ্ড স্থির করেছিলেন সেই মানদণ্ড অনুসারে মানব জাতির মহান নেতাদের মধ্যে যীশু বা বুদ্ধ কারো স্থান হয়নি; তবে আশ্চর্যের বিষয় যে মূসা ও মুহাম্মদকে একই দলভুক্ত করে মুহাম্মদ যে মূসার সদৃশ এই বক্তব্যকে আরো শক্তিশালী করেছেন। ডিউট ১৮: ১৮ তোমার সদৃশ “মূসার সদৃশ”।
পরিসংহারে বাইবেলের একজন সম্মানিত ব্যাখ্যাকার পাদ্রীর মন্তব্য ও তার শিক্ষকের মন্তব্য দিয়ে পরিসমাপ্তি টানছিঃ
১. কোরআন শরিফে সূরা আহকাফ আয়াত ১০-এ যে বনী ইসরাইলের একজন উল্লেখ করা হয়েছে তিনি মূসা (আ)
২. খ্রিস্টান বাইবেল ব্যাখ্যাকারকগণ ইংরেজি বর্ণমালার মান অগ্রসরমান সংখ্যা দ্বারা নিরূপণ করে যোগফল ৬৬৬ লাভ করেন। যেমন এ=৬, বি১২, সি=১৮ ইত্যাদি। এমনিভাবে ইংরেজি প্রতিটি বর্ণের একটি মান নির্ণয় করা যায়। অতঃপর কিসিনজার নামের সবগুলি বর্ণের যোগফল সম্ভবত দাঁড়ায় ৬৬৬। পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে।
৩. দক্ষিণ আফ্রিকার একটি প্রদেশের নাম ট্রান্সভাল।
৪. সলমন সংগীত ৫: ১৬-তে মুহাম্মদ নামের উল্লেখ রয়েছে। হিব্রু ভাষায় উল্লেখ হয়েছে মহাম্মাদিম বলে। ইম বহুবচনে, সম্মানের ক্ষেত্রে যুক্ত হয়ে থাকে। ইম ব্যতিরেকে হবে মহাম্মুদ্দ, যার অর্থ সামগ্রিকভাবে প্রিয় সত্যায়িত বাইবেলের অনুবাদ দ্রষ্টব্য অর্থাৎ সম্মানিত অর্থাৎ মুহাম্মদ।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/599/24
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।