hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

আহমদ দীদাত রচনাবলি - ফজলে রাব্বী ও মুহাম্মদ গোলাম মোস্তাফা

লেখকঃ আহমদ দীদাত

২১
অধ্যায় চারঃ সার্বিক পথনির্দেশ
অনেক এবং সকল

ইতিপূর্বে বাইবেলের দুটি বাক্যাংশ উল্লেখ করেছিলাম “আমার এখনও তোমাদেরকে অনেক কিছু বলার আছে, এবং তিনি তোমাদেরকে সকল সত্যের পথ নির্দেশ করবেন।” – যোহন ১৬:১২ এবং ১৩

খ্রিস্টানগণ আজও দাবি করে এবং মনে করে, ভবিষ্যদ্বাণীতে যে সততার আত্মার কথা বলা হয়েছে তিনি পবিত্র আত্মা। তাই যদি হয় তাহলে প্রশ্ন করতে হয় তাদের ভাষায় অনেক অর্থ একাধিক এবং সকল শব্দের অর্থ একাধিক দুইটি শব্দের অর্থই কি একাধিক? তাই যদি কেউ মনে করে তাহলে তার সঙ্গে কোন কথা বলে লাভ নেই। সাধারণত এই প্রসঙ্গে যদি কোন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীকে জিজ্ঞাসা করা হয় তাহলে সে হয়তো ইতস্ততার সঙ্গে বলবে- “হ্যাঁ”।

অনেক কিছুর জটিলতা দূর হওয়া সম্পর্কে হযরত ঈসা (আ) ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। কারণ তার অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে গিয়েছিল। তদুপরি মানব জাতিকে সকল সত্যের প্রতি পথনির্দেশের জন্য তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। বর্তমান যুগে অনেক জাতি অসংখ্য সমস্যায় জর্জরিত। সেই সকল সমস্যার সমাধানের জন্য তারা জবাব খুঁজে বেড়াচ্ছে।

হযরত ঈসা (আ) যে সকল প্রশ্নের উত্তর তার নানা কথার মধ্য দিয়ে যাননি কি, পবিত্র আত্মা কি সেই সকল প্রশ্নের কোন একটিও জবাব এই দুই হাজার বছরেও দিতে পেরেছেন? আমি অনেক জানতে চাই না, আমি শুধু জানতে চাই আমার প্রশ্নের এই একটি মাত্র কথা।

হলি ঘোস্টের কাছে কোন সমাধান নেই

বিশ্বাস করুন চল্লিশ বছর যাবত আমি এই প্রশ্ন করছি। কিন্তু একজন খ্রিস্টানকে পাইনি যিনি বলেছেন যে “হলি ঘোস্ট” প্রদত্ত এটাই নতুন সত্য। তবুও প্রতিশ্রুতি রয়েই গিয়েছে, “যে সহায় এসে তোমাদিগকে সবর্সত্যে পথনির্দেশ করবে।” এই ভবিষ্যৎ বাণীর সত্য আত্মা যদি “হলি ঘোস্ট” হয় তাহলে সকল খ্রিস্টান সকল ফিরকার খ্রিস্টান এবং সকল হবু খ্রিস্টান তাহলে হলি ঘোস্ট-এর উপহার দাবি করবে। রোমান ক্যাথলিকরা দাবি করে যে তারা হলি ঘোস্টের মধ্যে তথাকথিত বসবাসকারী, সে কারণে তারা সমগ্র সত্য লাভ করেছে। এই একই দাবি করেছে এ্যাঙ্গিলিকান, মেথোডিস্ট, জিহোবার, সাক্ষী, সেভেন্থ ডে এডভেন্টিসট, ব্যাপটিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। তদুপরি আমেরিকার সাত কোটি (born again) খ্রিস্টান সবাই একই দাবি করে। তাহলে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলোর কি সমাধান হলি ঘোস্ট-এর মাধ্যমে হয়েছে? যেমন, ১. মদ্য পান, ২. ভাগ্য গণনা, ৩. মূর্তিপূজা, ৪.বর্ণবাদ, ৫. নারী জাতির সংখ্যাধিক্য।

মদ্যপান সমস্যা

দক্ষিণ আফ্রিকার মোট জনসংখ্যা তিন কোটি। তার মধ্যে চল্লিশ লক্ষ শ্বেতাঙ্গ, সেখানে তিনশত তিন লক্ষ মদ্যপানে আসক্ত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী জাম্বিয়ায় কেনিথ কাউভা এদেরকে মাতাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অশ্বেতাঙ্গরা অন্যান্য জাতি অপেক্ষা পাঁচগুণ মদ্যপানে আসক্ত। ভারতীয় ও আফ্রিকানদের মধ্যে কতজন মদ্যপানে আসক্ত তার কোন সঠিক হিসাব নেই।

জিমি সগটি (Jimmy Swaggart) তার ‘এলকোহল' নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটি দশ লক্ষ লোক মদ্যপান করে। এবং চার কোটি চল্লিশ লক্ষ লোক হেভি ড্রিংকার অর্থাৎ অত্যধিক মদ্যপান করে। তিনি একজন ভাল মুসলমানের মত বলেছেন, মদ্যপান কম আর বেশি একই কথা। এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এরা সবাই মাতাল। মদ্যপানের অবাধ ক্ষতিকারক ধারা বিশ্বের সর্বত্র স্বীকৃত। হলি ঘোস্ট কোন চার্চের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে কোন কথা আজ পর্যন্ত বলেননি। তারা পবিত্র বাইবেলের তিনটি বক্তব্যের ধোঁয়াটে যুক্তির ভিত্তিতে মদ্যপানকে দূষণীয়ভাবে না দেখার ভান করেন।

(ক) মৃতকল্প ব্যক্তিকে সুরা দাও, তিক্তপ্রাণ লোককে দ্রাক্ষারস দাও। সে পান করে দৈন্যদশা ভুলে যাক, আপন দুর্দশা আর মনে না করুক।

—প্রোভার্বস-৩১: ৬-৭

এটা কোন পরাধীন জাতিকে পদানত রাখার একটি উত্তম দর্শনই বটে।

তাঁর প্রথম অলৌকিক ঘটনা

(খ) ঈসা (আ) ‘খুন-পাগল’ ছিলেন না। আত্ম আস্বাদনকারীরা বলে, বাইবেলে তার যে অলৌকিক ঘটনার কথা আছে সেখানে তিনি পানিকে মদে পরিণত করেছিলেন।

যীশু তাহাদেরকে বললেন, ঐ সকল জালায় পানি ভর। তারা সেগুলো কানায় কানায় পূর্ণ করল। পরে তিনি তাদেরকে বললেন, এখন তা হতে কিছু তুলে নিয়ে যাও। ...... ভোজাধ্যক্ষ যখন সে পানি, যা দ্রাক্ষারস হয়ে গিয়েছিল, আস্বাদন করলেন ...... তুমি উত্তম দ্রাক্ষারস এখন পর্যন্ত রেখেছ।

—যোহন ২: ৭১০

এই অলৌকিক ঘটনার পর থেকে খ্রিস্টান জগতে মদ পানির মত বইতে শুরু করেছে।

শান্ত উপদেশ

(গ) সেন্ট পল যিশু খ্রিস্টের স্বনিয়োজিত শিষ্য, তিনিই প্রকৃতপক্ষে খ্রিস্ট ধর্মের প্রবর্তক। তিনি তার অনুগ্রহভাজন ধর্মান্তরিত শিষ্য টিমোথিকে বলেছিলেনঃ

এখন অবধি কেবল পানি পান করো না, কিন্তু তোমার উদরের জন্য ও তোমার বারবার অসুখ হয় বলে কিঞ্চিত দ্রাক্ষারস ব্যবহার করো।

— ১ টিমোথি ৫: ২৩

টিমোথির বাবা ছিলেন গ্রিক আর মা ছিলেন ইহুদী। খ্রিস্টানরা বাইবেলের এই সকল উদ্ধৃতিতে যেখানে উত্তেজক এবং নেশার পানীয় সম্পর্কে কথা রয়েছে সেগুলিকে ঈশ্বরের অভ্রান্ত বাক্য বলে গ্রহণ করেছে। তারা বিশ্বাস করে পবিত্র আত্মা এই সব বিপদজনক পরামর্শের জন্য রচয়িতাদেরকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। পাদ্রী “মেলো” এই পঙক্তি সম্পর্কে বিবেকের অস্বস্তিবোধের তাড়নায় বলেন, “স্বাস্থ্যগত কারণে যদি প্রয়োজন হয় তাহলে স্বল্প মাত্রায় মদ্যপানের কথা বলা হয়েছে।”

মদ্যপানে সম্পূর্ণ বিরতিই একমাত্র উত্তর

হাজার হাজার খ্রিস্টান পাদ্রী যখন প্রার্থনা সভা শেষে সন্ধ্যভোজপর্বে তথাকথিত এক চুমুক মদ পান করতে গিয়ে মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। সেখানে ইসলাম একমাত্র ধর্ম যেখানে নেশা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন “যে নেশার বস্তু অধিক মাত্রায় গ্রহণ নিষিদ্ধ তা স্বল্প মাত্রায়ও নিষিদ্ধ।” ইসলামে কোন রকম ছোটখাট বা স্বল্প মাত্রার সুযোগ নেই। কুরআন শরীফে কঠোর ভাষায় মদ্যপান সহ জুয়া, ভাগ্য গণনা ও পুতুল পূজা সবগুলিকেই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

( یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوۤا۟ إِنَّمَا ٱلۡخَمۡرُ وَٱلۡمَیۡسِرُ وَٱلۡأَنصَابُ وَٱلۡأَزۡلَـٰمُ رِجۡس مِّنۡ عَمَلِ ٱلشَّیۡطَـٰنِ فَٱجۡتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمۡ تُفۡلِحُونَ )

হে মুমিনগণ! মদ, জুয়া, মূর্তিপূজার বেদী ও ভাগ্য নির্ণায়ক শর ঘৃণ্য বস্তু, শয়তানের কার্য। সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

—কুরআন ৫: ৯০

যখন এই আয়াত নাযিল হয় তখন মদীনা শহরের রাস্তাঘাটে মদের পিপা খালি করে সমস্ত মদ ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই পাত্রে আর কোনদিন মদ রাখা হয়নি। এই সহজ সরল নির্দেশের দ্বারা বিশ্বে একমাত্র মুসলমানরাই মদ্যপান হতে বিরত সর্ববৃহৎ জাতি।

নিষিদ্ধকরণে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতা

প্রশ্ন উত্থাপিত হয়ে থাকেঃ মদ্যপান নিষিদ্ধকরণ আইন বাস্তবায়িত করতে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের মত মেধাশক্তি সম্পন্ন জাতি ও আর্থিক সচ্ছলতা সম্পন্ন সরকার তার অসাধারণ শক্তিশালী প্রচার মাধ্যমে যন্ত্রসহ ব্যর্থ সেখানে এই সত্য আত্মা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম একটি আয়াতের দ্বারা সফল হতে পেরেছিলেন?

আমেরিকান জাতিকে কে এই নিষিদ্ধকরণ আইন পাস করতে বাধ্য করেছিল? কোন আরব জাতি তোমাকে বলেছিল—তুমি যদি তোমার দেশে মদ্যপান নিষিদ্ধ না কর তাহলে তোমাকে তেল দেব না? বিশ শতকে যুক্তরাষ্ট্র যখন এই আইন পাস করে তখন আরবদের কোন তেল শক্তি ছিল না। আমেরিকান অভিভাবকদের অথবা এদেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের বিভিন্ন সমীক্ষা ও অধ্যয়নের ভিত্তিতে এই জ্ঞান লাভ হয়েছিল যে কারণে তারা মাদক দ্রব্য নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল। যদিও তারা জানত অধিকাংশ জনসাধারণ খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী এবং তারাই তাদেরকে নির্বাচন করে কংগ্রেসে পাঠিয়েছে। একথা সত্য যা মস্তিষ্ক থেকে আসে তা মস্তিষ্কেই নাড়া দেয়। কিন্তু যা মানুষের হৃদয় ও আত্মা থেকে তা হৃদয় ও আত্মাকে নাড়া দেয়। কুরআন শরীফে উপরোক্ত আয়াত যেখানে নিষিদ্ধকরণের কথা আছে তার পরিবর্তনের সেই শক্তিও আছে। এ প্রসঙ্গে থমাস কার্লাইলের বক্তব্য স্মরণযোগ্যঃ

“যদি কোন গ্রন্থ হৃদয় হতে নির্গত হয়, সে অপর হৃদয়কে স্পর্শ করবে। সকল শিল্পকলা প্রকৃতপক্ষে তারই স্বল্প মাত্রার প্রকাশ। যে কেউ স্বীকার করবে যে কুরআনের প্রাথমিক বৈশিষ্ট্য এর কৃত্রিমতা, এটি একটি বিশ্বস্ত গ্রন্থ।”

আধ্যাত্মিক উন্নতি শক্তির একটি উৎস

সকল সুন্দর চিন্তা, ভাষা ও প্রকাশ তা সে যতই শিল্পসম্মত হোক না কেন তার পশ্চাতে যদি উচ্চ আধ্যাত্মিক শান্তি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব না থাকে, তাহলে সেগুলো নিছক ঘন্টার ধ্বনি অথবা, মন্দিরায় করতাল হয়ে পড়ে। তেমনি ধরনের উচ্চ আধ্যাত্মিকতা আসতে পারে কেবলমাত্র “উপবাস ও প্রার্থনার’ (মথি ১৭: ২১) মাধ্যমে যেমন ঈসা (আ) বলেছিলেন।

হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে যা প্রচার করতেন জীবনে তা অনুশীলনও করতেন। তার ওফাতের পর আয়েশা সিদ্দিকা (রা)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল নবী করীম (সা)-এর জীবন আচরণ কেমন ছিল? তখন তিনি বলেছিলেন, “তিনি ছিলেন কুরআনের মূর্ত প্রতীক।”

“এই সকল পুরুষ ও মহিলা, ভদ্র ও বুদ্ধিমান এবং গ্যালিলি সাগরের জেলেদের চেয়ে কম শিক্ষিত নয় তারা যদি তাদের শিক্ষকের মধ্যে বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাসের ঘাটতি অথবা শঠতা অথবা সামান্যতম পার্থিব জগতের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করত তাহলে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম-এর সমাজ উন্নয়নে এবং নৈতিকতার পুনর্জাগরণের সকল প্রচেষ্টা মুহূর্তে ধূলোয় লুটিয়ে পড়ত।” (স্পিরিট অফ ইসলাম- সৈয়দ আমীর আলী)

সমালোচকের নায়ক

যদি কেউ বলে উপরের কথাগুলো একজন বিশ্বাসী তার প্রিয়জন সম্পর্কে বলেছেন, তাহলে অন্য একজন খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী সহানুভূতিশীল সমালোচক, তার নায়ক পয়গম্বর সম্পর্কে কি বলেন দেখা যাকঃ

এক জন দরিদ্র, কঠোর পরিশ্রমী, অর্ধভুক্ত মানুষ, ইতর ব্যক্তি কি জন্য পরিশ্রম করে সে বিষয়ে উদাসীন। আমি বলব, একেবারে খারাপ মানুষ নন। কোন ধরনের ক্ষুধার চাইতে ভাল কিছু তার মধ্যে রয়েছে অথবা বলা যায় যে এই সব বন্য আরব জাতি তেইশ বছর সর্বদা তার সঙ্গে থেকে যুদ্ধ করেছে। উদ্দীপ্ত হয়েছে, তাকে তারা তেমন শ্রদ্ধাও করত না!

“...... তাকে বলত পয়গম্বর। কেন তিনি তাদের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন শূন্য হাতে? তাকে ঘিরে কোন রহস্যও ছিল না। বাহ্যত সাদামাটা পোশাক, নিজের জুতো নিজেই সেলাই করছেন, আবার যুদ্ধ করছেন, পরামর্শ করছেন; তাদেরকে আদেশও দিচ্ছেন। তারা দেখেছে তিনি কেমন মানুষ। তাকে যা ইচ্ছা সেই নামেই ডাকা যায়। এই মানুষটি এমন আনুগত্য পেয়েছিলেন যে তেমন আনুগত্য কোন সম্রাট পায়নি। তেইশ বছর প্রকতৃপক্ষে ছিল একটা কঠিন পরীক্ষার কাল। আমি তার মধ্যেই এমন কিছু দেখতে পাই যা যথার্থ নায়কের মধ্যে বিদ্যমান থাকা প্রয়োজন।”

—হিরো এন্ড হিরো ওয়ার্শিপ, টমাস কার্লাইল, পৃঃ ৯৩

জাতি-বিদ্বেষ সমস্যা

তিনি (সত্যের আত্মা) তোমাদিগকে পরিপূর্ণ সততায় পথ নির্দেশ করিবেন।

যে কোন ধর্মের অনুসারিগণের পক্ষে ঈশ্বরের পিতৃত্ব এবং মানব জাতির ভ্রাতৃত্ব” সম্পর্কে সুললিত ও সুন্দর ভাষায় অনেক কিছু বলা সহজ। কিন্তু এই সুন্দর চিন্তা চেতনাকে বাস্তবায়িত করা কেমন করে সম্ভব? কেমন করে সম্ভব এমন এক পদ্ধতির উদ্ভাবন করা যার মাধ্যমে সকল মানুষ ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবেন? প্রতিটি মুসলমান আত্মার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য পাঁচবার স্থানীয় মসজিদে জামাতে শরীক হন। সেখানে সাদাকালো ধনী দরিদ্র নানা জাতের নানা মানুষ একত্র মিলিত হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিদিন নামাজ আদায় করেন। সপ্তাহে একদিন শুক্রবার জামে মসজিদে আরও একটু বৃহত্তর এলাকার সকল মুসলমান মিলিত হয়ে জুমআর নামাজ আদায় করেন। আবার বছরে দুই ঈদে আরও বড় এলাকার সবাই মিলে, সম্ভব হলে, খোলা ময়দানে মিলিত হন। তারপর কমপক্ষে জীবনে একবার কাবা শরীফে, মক্কার কেন্দ্রীয় মসজিদে আন্তর্জাতিক এক মহাসমাবেশে মিলিত হন। তুর্কী, ইথিওপীয়, চৈনিক, ভারতীয়, আমেরিকান, আফ্রিকান সবাই দুই টুকরা সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করে একত্রিত হয়। যেখানে সবাই সমান। অন্য কোন ধর্মে বা বিশ্বাসে কি এমন সাম্যবাদী আনুষ্ঠানিকতা আছে?

আল্লাহর কিতাবে যে অভ্রান্ত অনুশাসন বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে আল্লাহর নিকট একটি গ্রহণযোগ্য মানদণ্ড হলো একজন মানুষের প্রতি অপর একজন মানুষের আচার-আচরণ কেমন তার দ্বারা। এগুলি একমাত্র সত্যিকারের ভিত্তিভূমি যার উপর “আল্লাহর রাজ্য” প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। এর অর্থ এই নয় যে মুসলমানরা একেবারে নিষ্কলঙ্ক, তারা সকল প্রকার জাতিভেদের রোগ থেকে মুক্ত। কিন্তু দেখা গিয়েছে ধর্মীয়ভাবে মুসলমানরাই সর্বাপেক্ষা কম জাতি-বিদ্বেষী।

অধিক সংখ্যক নারী সমস্যা

মনে হয়, প্রকৃতি মানব জাতির সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। দেখা যাচ্ছে সে মানুষের চালাকির প্রতিশোধ নিতে চায়। মানুষ তার সমস্যার বাস্তব ও স্বাস্থ্যসম্মত সমাধান শুনতে রাজি নয়। অথচ তাকে মঙ্গলজনক ভবিষ্যৎ চিন্তা উপকারার্থে দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে “যাও তোমরা সুরুয়া জ্বাল দাও।”

একথা সর্বজনবিদিত যে পুরুষ ও মহিলার জন্মহার সর্বত্র প্রায় সমান, কিন্তু শিশু মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরুষ শিশুর মৃত্যুহার বেশি। আর ভাবাই যায় না। নারীরা কতো দুর্বল প্রজাতির? একটি কোন নির্দিষ্ট সময়ে দেখা যায় বিধবার সংখ্যা বিপত্নীকের সংখ্যার চাইতে অধিক। প্রত্যেক সভ্য জাতির নারীর সংখ্যা পুরুষের চাইতে অধিক। যুক্তরাজ্যে চল্লিশ (৪০) লক্ষ, জার্মানিতে পঞ্চাশ (৫০) লক্ষ, সোভিয়েট রাশিয়ায় সত্তর (৭০) লক্ষ্য ইত্যাদি। কিন্তু আমেরিকান যুক্তরাষ্ট্রে যে সমাধান গ্রহণযোগ্য পৃথিবীর অন্য সকল দেশে সেটাই গ্রহণযোগ্য। এদেশের সংখ্যা তত্ত্ব পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক বিজ্ঞান সম্মত এবং সহজেই পরীক্ষণীয়।

আমেরিকা! ওগো আমেরিকা!

আমরা জেনেছি যুক্তরাষ্ট্রের ৭,৮০০,০০০ সংখ্যক মহিলা উদ্বৃত্ত। এর অর্থ আমেরিকার প্রত্যেক পুরুষ যদি বিবাহ করে তাহলে ৭৮০০,০০০ জন মহিলা অবিবাহিত থাকে। তারা স্বামী পাবে না। আমরা জানি অনেক পুরুষ মানুষ নানা কারণে বিয়ে করে না। তারা নানা অজুহাতে বিয়ে করতে পারে না। অন্যদিকে একজন মহিলা সে যা-ই হোক না কেন বিয়েতে পরাঙ্মুখ হবে না। সে নিজের আশ্রয় অথবা নিরাপত্তার কথা ভেবে অন্তত বিয়েতে আগ্রহী। কিন্তু আমেরিকায় এই অতিরিক্ত সংখ্যক নারী থাকার যে সমস্যা তার কারণ বহুবিধ। এখানকার শতকরা ৯৮ ভাগ জেলখানার বাসিন্দা পুরুষ। তারপর সেখানে দুই কোটি পঞ্চাশ লাখ সমকামী রয়েছে। তারা তাদেরকে সুভাষিতভাবে আখ্যায়িত করে বলে, “গে”। যে সুন্দর শব্দের অর্থ ছিল ‘আনন্দ’ সেটাকে বিকৃত করে এই অর্থ দেওয়া হয়েছে। আমেরিকা যা করে সব কিছুই বড় করেই করে। তারা ঈশ্বরকে বড় করে যেমন তুলে ধরে তেমনি শয়তানকে তুলে ধরতেও পিছপা হয় না। জিমি সোয়াগাট নামে বিশেষ পাদ্রী সাহেব তার গবেষণা গ্রন্থ হোমো সেকসুয়ালিটি (সমকামী) গ্রন্থে লিখেছেন, “আমেরিকার! ঈশ্বর একদিন তোমার বিচার করবেন, (অর্থাৎ ঈশ্বর। তোমাকে ধ্বংস করবেন) তিনি যদি তোমার বিচার না করেন তবে তাঁকে সমকামী দুশ্চরিত্রবানদের নিকট ক্ষমা চাইতে হবে; কারণ তিনি বিকৃত রুচি ও সমকামিতার জন্য তাদেরকে ধ্বংস করেছিলেন।”

উদাহরণ হিসাবে নিউইয়র্ক

নিউইয়র্ক শহরে দশ লাখের বেশি নারী রয়েছে। যদি সাহস করে সেখানকার সমস্ত পুরুষ সবাই বিয়ে করতে রাজি হয় তাহলে দেখা যাবে দশ লাখ নারী স্বামী পাচ্ছে না। কিন্তু সমস্যা আরও জটিল, কারণ এই শহরের পুরুষ জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ সমকামী ‘গে’।

ইহুদীরা সদাসর্বদা সকল বিতর্কে উচ্চকণ্ঠ। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা ইঁদুরের মত চুপচাপ। কারণ তাদের ভয় তাদেরকে যদি পশ্চাত্মখী পূর্বদেশী বলে অভিহিত করা হয়। অন্যদিকে গির্জা তাদের লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টান (born again) যারা নিজেরা নাকি পবিত্র আত্মার আবাসস্থল, তারাও নিশ্চুপ মরমন চার্চের প্রতিষ্ঠাতা যোসেফ স্মিথ ও ব্রিঘহাম ইয়ং ১৮৩০ সালে দাবি করলেন যে, তারা প্রত্যাদিষ্ট হয়েছেন। তারা এই অতিরিক্ত নারী সমস্যা সমাধানের জন বহুপত্নিক বিবাহের প্রচার ও অনুশীলন করলেন। বর্তমানে মরমনদের পয়গম্বর আমেরিকান সংস্কারের সঙ্গে একাত্মবোধ করার উদ্দেশ্যে তাদের সেই বহুবিবাহের চিন্তাধারাকে বাতিল করেছে। এখন পশ্চিমা দেশের/আমেরিকার/ইউরোপের হতভাগ্য অতিরিক্ত মহিলারা কি করবেন? রসাতলে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় নেই।

একমাত্র সমাধান-নিয়ন্ত্রিত ও সীমিত বহুবিবাহ

আল আমিন সত্যের পয়গম্বর, সত্য আত্মা আল্লাহর নির্দেশে এসব হতভাগ্য মহিলার সমস্যার সমাধান দিয়েছেন। আল্লাহ বলেনঃ

( فَٱنكِحُوا۟ مَا طَابَ لَكُم مِّنَ ٱلنِّسَاۤءِ مَثۡنَىٰ وَثُلَـٰثَ وَرُبَـٰعَۖ فَإِنۡ خِفۡتُمۡ أَلَّا تَعۡدِلُوا۟ فَوَ  ٰ⁠ حِدَةً )

...তবে বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমাদের ভাল লাগে, দুই, তিন অথবা চার; আর যদি আশংকা কর যে সুবিচার করতে পারবে না তবে একজনকে ...

—কুরআন ৪: ৩

পাশ্চাত্য সভ্যতা হাজার হাজার লেসবিয়ান ও সমকামীকে তাদের মাঝে সহ্য করতে পারে। পশ্চিমে একটা হাস্যকর কথার চল আছে যে সেখানে একজন পুরুষ এক ডজন রক্ষিতা রাখতে পারে এবং এক ডজন জারজ সন্তানের জন্মও দিতে পারে। এসব পাশবিক প্রকৃতির বদমায়েশ লোকদের গর্বের সঙ্গে যে শব্দটি পশু চিকিৎসালয়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, সেই ‘স্টার্ড’ বা অশ্বপালের প্রজনন প্রতিষ্ঠান বলে আখ্যায়িত করা হয়। তারা বলে “তাকে বুনো যব বপন করতে দাও কিন্তু তাকে দায়ী করো না।”

ইসলামে বলে “আনন্দের জন্য মানুষকে দায়িত্বশীল হতে হবে।” এক শ্রেণীর পুরুষ আছে যারা অতিরিক্ত দায়িত্ব গ্রহণ করতে প্রস্তুত এবং এমন প্রকৃতির নারীও আছে যারা অপরের সঙ্গে স্বামীর অংশীদার হতে প্রস্তুত। তাহলে তাদের পথে বাধা সৃষ্টি করা কেন? তোমরা বহুবিবাহকে বিদ্রুপ কর, অথচ তোমাদের পবিত্র বাইবেলে অনেক পয়গম্বরের বহুবিবাহের কথা বিধৃত আছে। তোমরা ভুলে যাও জ্ঞানী সলোমনের এক হাজার স্ত্রী ও উপপত্নী ছিল। এর উল্লেখ আছে তোমাদের বাইবেলে। এটিই বিশাল সমস্যার একটি স্বাস্থ্যসম্মত সমাধান। অথচ তোমরা নারীর সঙ্গে নারীর, পুরুষের সঙ্গে পুরুষের-লেসবিয়ানদের ও সমকামীদের বিকৃত জীবন যাপনকে মহা আনন্দের সঙ্গে সহ্য করতে পার। কিন্তু একটা স্বাস্থ্যসম্মত সমাধান গ্রহণ করতে সম্মত নও। বিকৃতি আর কাকে বলে? হযরত ঈসা (আ)-এর সময় ইহুদী পৌত্তলিকদের মধ্যে বহুবিবাহের প্রচলন ছিল। তিনি এর বিপক্ষে একটি কথাও বলেননি। তাঁর কোন দোষ নেই। ইহুদীরা তো তাকে কোন সমাধান দেওয়ার সুযোগই দেয়নি। তাই তো তিনি কেঁদে কেঁদে বলেছিলেন, “তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসবেন তখন পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে সত্যে নিয়ে যাবেন।"

– যোহন ১৬: ১৩

সহায় একজন মানুষ

যে ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে আমরা আলোচনা করছি সেখানে ‘সে’ কথাটি জোর দিয়ে বলা হয়েছে। একটু চিন্তা করলেই আপনি স্বীকার করবেন যে সহায় যিনি আসবেন তিনি হবেন একজন মানুষ, কোন প্রেতাত্মা নয়।

পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা, যখন আসবেন তখন পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে সত্যে নিয়ে যাবেন। কারণ তিনি আপনা হতে কিছু বলবেন না, যা যা শশানেন তাই বলবেন, এবং আগামী ঘটনাও তোমাদেরকে জানাবেন।

— যোহন ১৬: ১৩

(howbeit when he, the Spirit of Truth, is come, He will guide you into all truth: for He shall not speak of himself; but whatsoever he shall hear, that shall he speak: and he will show you things to come. (John 16: 13)

উপরে ইংরেজি পঙক্তিতে he (তিনি) শব্দটি কতবার উল্লেখিত হয়েছে? সাতবার। একটি পঙক্তিতে সাতবার পুরুষবাচক সর্বনাম ব্যবহৃত হয়েছে। ৬৬টি অধ্যায়ের প্রোটেস্টান্ট বাইবেলে, ৭৩টি অধ্যায়ের ক্যাথলিক বাইবেলে কোথাও একত্রে এক পঙক্তিতে সাতবার পুরুষবাচক সর্বনাম অথবা স্ত্রীবাচক সর্বনাম উলেখ হয়নি। স্বীকার করতেই হয় যে, এতগুলি পুরুষবাচক সর্বনাম একটি মাত্র পঙক্তিতে (পবিত্র বা অপবিত্র ঘোস্ট বা) প্রেতাত্মার ক্ষেত্রে বেমানান।

অব্যাহত বিভ্রান্তিকর প্রক্ষেপণ

একবার ভারতবর্ষে খ্রিস্টান মিশনারীদের সঙ্গে মুসলমানদের একটা বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে বাইবেলের এই এক পঙক্তিতে সাতবার পুরুষ সর্বনাম ব্যবহারের উল্লেখ করা হয়েছিল, তারপর উর্দু বাইবেলে সেই সর্বনামটি বদলিয়ে স্ত্রীবাচক সর্বনাম ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে মুসলমানরা আর দাবি করতে না পারে যে বাইবেলের ভবিষ্যদ্বাণী যার সম্পর্কে করা হয়েছে তিনি একজন পুরুষ এবং তিনি হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। খ্রিস্টানদের এই ধোঁকাবাজি উর্দু বাইবেলে আমি নিজের চোখে দেখেছি। মিশনারীদের এই চালাকি করার অভ্যাস অত্যন্ত সাধারণ। বিশেষ করে স্থানীয় ভাষার ক্ষেত্রে এই চালাকি তাদের সর্বত্র। সম্প্রতি আফ্রিকান বাইবেলেও সেই একই চালাকী দেখেছি। যে পঙক্তিতে ছিল Trooster অর্থাৎ comforter সেটাকে voorspraak অর্থাৎ মধ্যস্থতাকারী বানানো হয়েছে। তেমনি আরেকটি কথা Die Heilige Gees অর্থাৎ হোলি ঘোস্ট এই ধরনের অর্থ পরিবর্তনের সাহস বিভিন্ন ইংরেজি সংস্করণে তারা করতে সাহস পায়নি। অথচ খ্রিস্টান মিশনারীরা ভিন্ন ভাষার ক্ষেত্রে এই ধরনের শব্দার্থ পরিবর্তন করে সৃষ্টিকর্তার কথাকেই বদলে দেয়।

নয়টি পুরুষ সর্বনাম

আরেক জায়গায় এক লেখক তার নিজের অজ্ঞাতসারে সম্ভবত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ক্ষেত্রে নয়, বার বার তার’ (His) শব্দটি ব্যবহার করেছেন।“ তাঁর বিনম্র ব্যবহার, আচরণে তার মিতব্যয়িতা, তাঁর জীবনে প্রচণ্ড শুদ্ধতা, তার সঠিক বিশুদ্ধতা, দরিদ্র ও দুর্বলের প্রতি তাঁর সাহায্যদানের সর্বক্ষণ প্রস্তুতি, তাঁর আত্মসম্মান বোধ, তাঁর অবিচল আনুগত্য, তার কঠোর কর্তব্যনিষ্ঠা তাঁকে তাঁর আপন জনের মধ্যে সর্ব উচ্চ ঈর্ষণীয় উপাধি “আল-আমিন-বিশ্বস্ত প্রদান করেছিল।”

আল-আমিন, বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য, সত্যের আত্মা (আস-সাদিক)-এই ধরনের আলঙ্কারিক অর্থবোধক প্রকাশের মাধ্যমে সত্য কথা বলার অর্থ দাঁড়ায় সত্যের মূর্ত প্রকাশ যেমন হযরত ঈসা (আ) নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি পথ, সততা এবং আমি জীবন।” (যোহন ১৪: ৬) তার অর্থ এই সকল মহৎ গুণ আমার মাঝে বিদ্যমান। আমাকে অনুসরণ কর। “কিন্তু, সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে নিয়ে যাবেন।” (যোহন ১৬: ১৩) “তখন তোমরা তাকে অনুসরণ কর।” কিন্তু পক্ষপাতদুষ্ট পূর্ব সংস্কার সম্পন্নরা সহজে বিচলিত হয় না। সেজন্য আমাদেরকে কঠোরতর পরিশ্রম করতে হবে। বিশ্বাস করুন, আল্লাহ আমাদের যে তীক্ষ্মধার সত্য দিয়েছেন তাই দিয়েই, খ্রিস্টানরা যে শ্রম নিয়োগ করছে তার তুলনায় অতি অল্প পরিশ্রমই আমরা বিশ্বে পরিবর্তন আনতে পারি।

প্রত্যাদেশের উৎস

পরন্তু তিনি, সত্যের আত্মা,যখন আসবেন তখন পথ দেখিয়ে তোমাদেরকে সত্যে নিয়ে যাবেন। কারণ তিনি আপনা হতে কিছু বলবেন না, কিন্তু যা যা শোনেন তাই বলবেন।

—যোহন ১৬: ১৩

বাইবেলের যে সকল উদ্ধৃতি ব্যবহার করছি সেইগুলি সবই কিং জেমস সংস্করণ থেকে। অধিকতর স্পষ্ট করার জন্য উপরের উদ্ধৃতি অন্য তিনটি ইংরেজি সংস্করণ থেকে উল্লেখ করলাম।

1. For he will not speak on his own Authority. But will tell only what he hears. (The New English Bible)

2. He will not speak On his Own; He will Speak Only What He Hears . (New International Version)

3. For he will not be presenting his own ideas. but he will be passing on to you what he has heard. (The Living Bible)

এই সত্য আত্মা, এই সততার পয়গম্বর, আল-আমিন নিজ হতেই কোন আধ্যাত্মিক সত্য উচ্চারণ করবেন না বরং তিনি তাঁর পূর্ববর্তী পয়গম্বর সহায় হযরত ঈসা (আ) যে ভিত্তিতে বাণী উচ্চারণ করেছিলেন সেইভাবে তিনি তাঁর কথা বলবেন।

কারণ আমি আপনা হতে বলিনি, কিভাবে কি বলব, তা আমার পিতা, যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তিনিই, আমাকে আজ্ঞা করেছেন। ..... পিতা আমাকে যেমন কহিয়াছেন তেমনি বলি।

—যোহন ১২: ৪৯-৫০

অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা)-এর নিকট যে প্রত্যাদেশ অবতীর্ণ করেছেন সেখানেও বলেনঃ

( وَمَا یَنطِقُ عَنِ ٱلۡهَوَىٰۤ ۝ إِنۡ هُوَ إِلَّا وَحۡی یُوحَىٰ ۝ عَلَّمَهُۥ شَدِیدُ ٱلۡقُوَىٰ )

এবং সে মনগড়া কথাও বলে না; এটা তো ওহী যা তার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় তাকে শিক্ষাদান করে শক্তিশালী।

—কুরআন ৫৩: ৩-৫

আল্লাহ্ তা'আলা এমনিভাবে তাঁর সকল প্রেরিত পুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। হযরত ইবরাহীম (আ) হযরত মূসা (আ) অথবা হযরত ঈসা (আ) সকলের সাথেই। এটি অবাস্তব চিন্তা যে, সত্য আত্মা হচ্ছে হোলি ঘোস্ট কারণ আমাদের বলা হচ্ছে “তিনি নিজ থেকে কিছু বলবেন না, তিনি যা শোনেন তাই বলেন।” তাহলে নিশ্চয় কথাগুলো নিজের থেকে বলেননি।

ঈশ্বর এক ত্রিত্ব (Trinity)

খ্রিস্টান জগতে এটা সর্বজনস্বীকৃত, সবল গোড়া খ্রিস্টান পবিত্র ত্রিত্বে বিশ্বাস করে অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করে যে, পিতা ঈশ্বর পুত্র ঈশ্বর এবং পবিত্র আত্মা ঈশ্বর, কিন্তু তিন ঈশ্বর নয়। বরং এক ঈশ্বর। রেভারেল্ড ডোমিলোর মত একজন পণ্ডিত খ্রিস্টান ধর্মতত্ত্ববিদ এই অবিভাজ্যতা সম্পর্কে কি বলেন, দেখা যাক। যোহন ১৪: ২৩ এর “আমরা আসব" সম্পর্কে তিনি বলেন -

“যেখানে পুত্র রয়েছে সেখানে পিতার প্রয়োজন, সঙ্গে আত্মারও প্রয়োজন। কারণ তিনি এক। এর মাধ্যমে একই ঐশ্বরিক সত্তার প্রকাশ ঘটেছে এবং তার বিভিন্ন আকৃতির অস্তিত্ব থাকছে। এর দ্বারা বর্ণিত হচ্ছে যে পবিত্র ত্রয়ীর সত্তা অচ্ছেদ্য এবং একে অপরের অন্তর্গত।”

অনুগ্রহ করে আপনারা ঘাবড়াবেন না। উপরোক্ত শাব্দিকতা সত্য সত্যই আপনাদের বুঝতে হবে না। সংক্ষেপে, খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করে যে, ‘তিন' (ক্ষমা করবেন, খ্রিস্টানরা বলে ‘এক’) সব তিনই সদা জাগ্রত সদা উপস্থিত। তার ফলে বিষয়টি আমাদের নিকট অবাস্তব এবং হাস্যকর মনে হয়। জেরুজালেমের উপকণ্ঠে ক্যালভেরি পাহাড়ে যীশুখ্রিস্ট ক্রুশারোপিত হয়ে যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েছিলেন। পবিত্র আত্মা পিতা অবিচ্ছেদ্য হবার কারণে পুত্রের সঙ্গে নিশ্চয়ই যন্ত্রণাদগ্ধ হয়েছিল। এবং পুত্রের যখন মৃত্যু হয় তারও মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। তাই হয়েছে, আজ যখন পাশ্চাত্য জগতে আমরা শুনতে পাই ঈশ্বর মৃত তখন আমরা অবাক হই না। হাসবার কথা নয়, খ্রিস্টান ভাইদেরকে এই আত্মিক আবর্জনা থেকে উদ্ধার করা আজ আমাদের পবিত্র দায়িত্ব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন