মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
রমজানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নানা সমস্যার শরয়ি সমাধান বাতলে দিতেন, সাহাবিদের কেউ প্রশ্ন করলে তার স্পষ্ট উত্তর দিয়েছেন, পাপ ঘটে যাওয়ার পরও, তওবা করে যে ব্যক্তি তার কাছে সমাধানের জন্য এসেছে, তাকেও ভৎর্সনা করেননি তিনি।
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত : এক ব্যক্তি রমজানে স্ত্রীর সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছিল। সে রাসূলকে এ বিষয়ে সমাধান জিজ্ঞেস করলে, তিনি বললেন, তোমার কি দাস রয়েছে ? সে বলল, না। তিনি পুনরায় বললেন : তুমি কি দু মাস রোজা রাখতে পারবে ? সে বলল : না। রাসূল বললেন : তাহলে তুমি ষাট জন মিসকিনকে খাবার দিয়ে দিয়ো। [মুসলিম : ১১১১।]
এক রেওয়ায়েতে আয়েশা রা. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন : রমজানে এক ব্যক্তি মসজিদে রাসূলের নিকট আগমন করে বলল : হে আল্লাহর রাসূল ! আমি বরবাদ হয়ে গেলাম ! রাসূল বললেন : কি ব্যাপার? তিনি বললেন, আমি স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছি। রাসূল বললেন : তুমি সদকা কর। সাহাবি বললেন, হে আল্লাহর নবি ! আল্লাহর শপথ, আমার কিছুই নেই, আমি কিছুরই মালিক নই। তিনি বললেন, তুমি বস। সে বসে পড়ল। ইত্যবসরে এক লোক গাধার পিঠে খাবার বোঝাই করে নিয়ে উপস্থিত হল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কিছুক্ষণ পূর্বের বরবাদ হওয়া সে লোকটি কোথায় ? লোকটি দন্ডায়মান হলে রাসূল বললেন, তুমি এগুলো দিয়ে সদকা আদায় কর। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ! আমি ব্যতীত অন্য কাউকে দেব ? আল্লাহর শপথ ! আমরা ক্ষুধার্ত, আমাদের কিছুই নেই। রাসূল বললেন, তবে তোমরাই সেগুলো খাও। [বোখারি : ১৯৩৫, মুসলিম : ১১১২।]
সালাম বিন ছাখার আল আনসারি হতে বর্ণিত, তিনি বলেন—
كنت رجلاً قد أوتيت من جماع النساء ما لم يؤتَ غيري، فلما دخل رمضان تظاهرت من امرأتي حتى ينسلخ رمضان، فَرَقاً من أن أصيب منها في ليلتي فأتتابع في ذلك إلى أن يدركني النهار وأنا لا أقدر أن أنزع، فبينما هي تخدمني ذات ليلة إذ تكشف لي منها شيء فوثبت عليها، فلما أصبحت غدوت على قومي فأخبرتهم خبري فقلت : انطلقوا معي إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم فأخبره بأمري، فقالوا : لا والله لا نفعل، نتخوف أن ينزل فينا قرآن أو يقول فينا رسول الله صلى الله عليه و سلم مقالة يبقى علينا عارها، ولكن اذهب أنت فاصنع ما بدا لك، قال : فخرجت فأتيت رسول الله صلى الله عليه و سلم فأخبرته خبري، فقال : أنت بذاك؟، قلت : أنا بذاك، قال : أنت بذاك؟، قلت : أنا بذاك، قال : أنت بذاك؟، قلت : أنا بذاك، وها أنا ذا، فأمْضِ فيَّ حكم الله فإني صابر لذلك، قال : أعتق رقبة، قال : فضربت صفحة عنقي بيدي فقلت : لا، والذي بعثك بالحق لا أملك غيرها، قال : صم شهرين، قلت : يا رسول الله، وهل أصابني ما أصابني إلا في الصيام؟، قال : فأطعم ستين مسكيناً، قلت : والذي بعثك بالحق لقد بتنا ليلتنا هذه وحْشَى، ما لنا عشاء ! ، قال : اذهب إلى صاحب صدقة بني زُرَيق فقل له : فليدفعها إليك، فأطعم عنك منها وسقاً ستين مسكيناً، ثم استعن بسائره عليك وعلى عيالك، قال : فرجعت إلى قومي فقلت : وجدت عندكم الضيق وسوء الرأي، ووجدت عند رسول الله صلى الله عليه و سلم السعة والبركة؛ أمر لي بصدقتكم فادفعوها إليَّ، فدفعوها إلي .
তিনি বলেন : আমাকে সহবাসের এমন শক্তি দান করা হয়েছিল, যা অপর কাউকে প্রদান করা হয়নি। রমজান এলে আমি রমজান শেষ অবধি আমার স্ত্রীর সাথে জেহার [ ظهر শব্দের অর্থ পৃষ্ঠদেশ। জাহেলি যুগে আরব সমাজে কোন ব্যক্তি যদি তার স্ত্রীকে বলত, তুমি আমার জন্য আমার মাতার পৃষ্ঠসদৃশ, তাহলে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যেত, তারা এভাবে বিবাহ বন্ধনকে ছিন্ন করাকে জেহার বলত। ইসলামে এর দ্বারা বিবাহ বন্ধন ছিন্ন হয় না, তবে কাফ্ফারা আদায় করতে হয়।] করলাম। কারণ, আমার ভয় ছিল রাতে তার সাথে আমি সহবাসে লিপ্ত হব, দিবস আগমন পর্যন্ত আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে সচেষ্ট হতাম কিন্তু আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হতাম না। এক রাতে আমার স্ত্রী আমার সেবা করছিল, হঠাৎ তার দেহের কিছু প্রকাশিত হয়ে গেল, আমি তার উপর ঝাপিয়ে পড়লাম। ভোর হলে আমি আমার গোত্রের কাছে গিয়ে বললাম : আমার সাথে রাসূলের নিকট চল, আমি তাকে আমার বিষয়টি (রাতের ঘটনা) জানাই। তারা উত্তর দিল, আমরা কোনভাবেই তোমার সাথে যাব না। আমরা আশঙ্কা করছি যে, আমাদের ব্যাপারে কোরআন নাজিল হবে কিংবা রাসূল আমাদের এমন কিছু বলবেন, যার কলঙ্ক আমাদের জন্য স্থায়ী হয়ে যাবে। বরং, তুমিই যাও, এবং যা ভালো মনে কর তাই কর। তিনি বলেন : অত:পর আমি একাই বের হলাম এবং রাসূলের দরবারে এসে তাকে বিষয়টি খুলে বললাম। রাসূল বললেন : তুমিই সেই ব্যক্তি ? আমি বললাম, হ্যা, আমিই। রাসূল বললেন : তুমিই সেই ব্যক্তি ? আমি বললাম, হ্যা, আমিই। রাসূল বললেন : তুমিই সেই ব্যক্তি ? আমি বললাম, হ্যা, আমিই। আমিই তো। আপনি আমার ব্যাপারে আল্লাহর হুকুম কার্যকর করুন। আমি এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরব। তিনি বললেন : তুমি একজন দাসী আজাদ কর।
তিনি বলেন : আমি হাত দ্বারা আমার ঘাড়ে চাপড় মেরে বললাম, যে সত্ত্বা আপনাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তার শপথ ! আমি (আমার ঘাড় ব্যতীত) কিছুরই মালিক নই। রাসূল বললেন, তবে দু মাস রোজা রাখ। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! রোজা রাখতে গিয়েই তো আজ আমার এ দশা। তিনি বললেন, তবে ষাটজন মিসকিনকে খাইয়ে দাও। আমি বললাম, সে সত্ত্বার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন গত রাত শূন্য অবস্থাতে আমরা কাটিয়েছি রাতের খাদ্য হিসেবে কিছুই ছিল না।
রাসূল বললেন, তুমি বনি জুরাইকের সদকা উসূলকারীর নিকট যাও, এবং বল। সে তোমাকে সদকার পণ্য প্রদান করবে। তুমি সেই পণ্য হতে নিজের পক্ষ হতে ষাটজন মিসকিনকে এক ওসাক [ত্রিশ কেজি ছয় শত গ্রাম সমপরিমাণ।] পরিমাণ
প্রদান করবে, বাকি সব দিয়ে তোমার ও তোমার পরিবারের প্রয়োজন পুরণ করবে। তিনি বলেন, আমি অত:পর আমার গোত্রের নিকট আগমন করে বললাম, আমি তোমাদের কাছ থেকে পেয়েছি সঙ্কীর্ণতা আর ভুল মত। আর রাসূলের নিকট পেয়েছি প্রশস্ততা ও বরকত। আমাকে তোমাদের সদকা গ্রহণের আদেশ দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা তা আমার কাছে হস্তান্তর কর। অত:পর তারা তাই করল। [তিরমিজি : ৩২৯৯।]
বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে লোকেরা তার নিকট আগমন করত, তাকে প্রশ্ন করে আলোচনায় অংশ নিত। তাদের স্থির বিশ্বাস ছিল যে, তারা একজন সম্মানিত দয়ার্দ্র শিক্ষকের আশ্রয়ে আছে।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে তিনি সকলের সমাধান হাজির করতেন, কখনো রসিকতা করতেন, ঠাট্রাচ্ছলে তাদের সংশয় দূর করতেন। আদি বিন হাতেম রা. হতে বর্ণিত এক হাদিসে আমরা এর উত্তম উদাহরণ পাই। তিনি বলেন :—
لما نزلت هذه الآية :{ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ } ، قال : أخذت عقالا أبيض وعقالا أسود فوضعتهما تحت وسادتي، فنظرت فلم أتبين، فذكرت ذلك لرسول الله صلي الله عليه و سلم فضحك، فقال : إن وسادك إذن لعريض طويل، إنما هو الليل والنهار .
যখন কোরআনের এ আয়াত নাজিল হল—যতক্ষণ না সাদা সুতো কাল সুতো হতে পৃথক হবে—আমি একটি সাদা এবং একটি কাল সুতো নিলাম, (রাতে) বালিশের নীচে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর সেগুলোর দিকে তাকিয়ে তাকে পৃথক-স্পষ্ট দেখতে পেলাম না। আমি বিষয়টি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অবগত করালে তিনি হেসে ফেললেন। বললেন : তবে তো তোমার বালিশ খুবই লম্বা ও প্রশস্ত ! (কোরআনে বর্ণিত) এর মর্ম হচ্ছে রাত ও দিন। [বোখারি : ১৮১৭, আবু দাউদ : ২৩৪৯।]
রাসূল, উক্ত হাদিসে, তাকে কাজা করার আদেশ প্রদান করেননি। সুতরাং এতে প্রমাণ হয়, হুকুম সম্পর্কে অনবগতি কাজার ওয়াজিবকে তুলে নেয়। [শরিয়তের নুসুসের প্রতি লক্ষ্যকারী মাত্রই জানবেন, তিন শর্ত ব্যতীত রোজা বিনষ্ট হয় না : প্রথমত, জানা। সুতরাং কোন ব্যক্তি যদি রোজা ভঙ্গের কারণ ভুলে সংঘটিত করে, তবে তার উপর কিছু ওয়াজিব হবে না। রোজা বিনষ্টের কারণটি সম্পর্কে সে অনবগত থাকুক, কিংবা অবগত হয়েও যদি তার সময় জ্ঞান না থাকে— যেমন, সময় ভুলে ফজরের পরও সে খাবার গ্রহণ করল।দ্বিতীয়ত, রোজা বিষয়ে স্মরণ থাকা। সুতরাং, যদি কেউ বিস্মৃত হয় যে, সে রোজাদার, রোজা ভঙ্গের কারণ ঘটলে তার রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে, তার আশেপাশে সংশ্লিষ্ট লোকদের দায়িত্ব তাকে জানিয়ে দেয়া।তৃতীয়ত, স্বেচ্ছায় রোজা ভঙ্গের কারণ ঘটানো। যাকে বাধ্য করা হবে, তার রোজা ভাঙবে না। দ্র : মাজমুউ ফাতাওয়ায়ে ইবনে উসাইমিন : খন্ড : ১৯, পৃষ্ঠা : ২৭৭-২৮১।]
রাসূলের জীবনের এ ঘটনা প্রবাহ, কর্মপন্থায় এমন ভারসাম্য আচরণ ও নীতি অবলম্বন, সন্দেহ নেই, সকলের কাছে রেসালাতকে করে তুলেছে আন্তরিক, সৌহার্দ্যময়, তাদের হৃদয়কে ভরিয়ে দিয়েছে দয়ার্দ্রতায়। দাওয়াতি জনগোষ্ঠীদের সাথে আচরণে তাদের করে তুলেছে সতত করুণাময়, সহিষ্ণু ; প্রশ্নের ব্যাপারে সহনশীল, অপরাধের ক্ষেত্রে রহম-দিল।
এ এমন এক গুণ ও আচরণ, বর্তমান সময়ে ইলম, দাওয়াত, ও ইসলাহের সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকের মাঝে যার দুর্বলতা খুবই প্রতীয়মান। অপরাধী ও পাপে নিমজ্জিতদের ক্ষেত্রে যাদের ধারণা ও ভাবনা হল, ভৎর্সনা, লাঞ্ছনা, ও ক্রমাগত কোণঠাসা করে ফেলাই হচ্ছে তাদের পাপ স্খলনের একমাত্র উপায় ও প্রতিকার, রাসূলের এ আচরণ তাদের চোখে আঙুল দিয়ে শিক্ষা দেয়। বিস্মৃত হয় তারা রাসূলের হেদায়েতের আলোকময় পথ ও পদ্ধতি ;—রমজানে স্ত্রী সহবাসে আক্রান্ত সাহাবির সাথে আচরণ [বোখারি : ৬৮২২।] ; যে ব্যক্তি মসজিদে মূত্র ত্যাগ করেছিল [বোখারি : ২২০।], কিংবা যে কথা বলে উঠেছিল সালাত আদায়কালীন [মুসলিম : ৫৩৭।], এমনকি যে ব্যক্তি যিনার অনুমতি চেয়ে রাসূলের কাছে আবেদন করেছিল [আহম : খন্ড : ১, পৃষ্ঠা : ২২২, তার সূত্রটি শুদ্ধ।] তাদেরকে সুপথ বাতলে দেয়ার যে পদ্ধতি তিনি অবলম্বন করেছিলেন, তা তারা ভুলে যায়, এবং কঠোরতা আরোপের ফলে দাওয়াতি জনগোষ্ঠীকে ক্রমে দূরে ঠেলে দেয় ইসলাম ও ইসলামি বিশ্বাস হতে।
অপরের সাথে বন্ধুভাব বজায় রাখা, করুণা, ব্যক্তির কাছে স্বত:স্ফূর্তভাবে এগিয়ে যাওয়া, মনোযোগ সহকারে তার বক্তব্য শ্রবণ, উত্তর প্রদানে সহনশীল হওয়া, সহাস্যমুখে কথোপকথন...মানুষের অন্তর জয় ও তাতে প্রভাব বিস্তারের প্রাথমিক ও অব্যর্থ মাধ্যম, এভাবে মানুষের অনুভূতিতে নিজের কথা-বক্তব্য ও ভাবনা অনায়াসে সঞ্চার করে দেয়া যায়।
মানুষের মুক্তি, তাদের জ্ঞানগত প্রবৃদ্ধি, আল্লাহর দ্বীনের প্রতি তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অভিবাসন—ইত্যাদি ক্ষেত্রে আলেম সমাজ, দায়ি ও মুসলিহদের এর প্রতি লক্ষ্য বৈ পথ নেই। বিশেষত, দাওয়াতের এক গুরুত্বপূর্ণ কাল হওয়ার ফলে বরকতময় রমজান মাসে এর প্রতি সবিশেষ লক্ষ্য রাখা কর্তব্য বলেই আমার বিশ্বাস। এ সময় মানুষ দলে দলে মসজিদে সমবেত হয়, দ্বীনের কাজে অংশগ্রহণের তাড়না বোধ করে আন্তরিকভাবে, সিয়াম, জাকাত ও এতেকাফ বিষয়ে তারা নানাভাবে প্রশ্ন করে জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, শরিয়তের অন্যান্য হুকুম-আহকাম, জান্নাত-জাহান্নাম, সওয়াব ও গোনাহ বিষয়ে তাদের নানা প্রশ্ন থাকে, সুতরাং, এ সময়টি দায়িদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়, ইসলামি ধ্যান-ধারণা, বিশ্বাস ও আচার পদ্ধতি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার এক উত্তম সময় রমজান মাস।
দ্বীনের এ প্রার্থীদের জন্য প্রয়োজন আন্তরিক ও করুণাময় দায়ির, যারা ক্ষতে হাত বুলিয়ে দেবে পরম মমতায়, তার চিকিৎসা করবে সৌহার্দ্য ও আন্তরিকতাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে, পাপক্ষালন করবে ধীরে ধীরে, এভাবে একসময় পাপীর সামনে বিষয়টির মন্দত্ব ফুটে উঠবে, সে এতে প্রত্যাবর্তনকে ঘৃণা করবে চূড়ান্তভাবে। সৎ ও সঠিক পথকে চেনে নিবে, তাকে আঁকড়ে ধরবে চিরকালীন আবেগে।
বিভিন্নভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের রমজান ও রোজা বিষয়ে সমাধান দিয়েছেন। উমর বিন আবি সালামা হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলকে প্রশ্ন করলেন, রোজাদার কি চুম্বন করতে পারবে ? রাসূল তাকে বললেন, তুমি উম্মে সালামাকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে জেনে নাও। উম্মে সালামা তাকে জানালেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরূপ (চুম্বন) করতেন। উমর রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আল্লাহ পাক তো আপনার পূর্বাপর যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন ! রাসূল বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম তাকওয়া অবলম্বনকারী ও আল্লাহ ভীরু। [মুসলিম : ১১০৮।]
যামারা বিন আব্দুল্লাহ বিন আনিস তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন : আমি বনি সালামার এক মজলিশে ছিলাম। আমি ছিলাম তাদের সর্বকনিষ্ঠ। তারা বলাবলি করল, আমাদের হয়ে কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর বিষয়ে জিজ্ঞেস করবে ? এ ছিল রমজানের একুশ তারিখের ভোরবেলার ঘটনা। আমি বেরুলাম, মাগরিবের সালাতকালীন রাসূলের সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। আমি তার গৃহের দরজায় দন্ডায়মান হলে তিনি আমার পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন ; বললেন, প্রবেশ কর ! আমি প্রবেশ করলে আমাকে তার রাতের খাবার দেয়া হল, তিনি দেখতে পেলেন খাবার স্বল্পতার কারণে আমি আহার হতে বিরত থাকছি। আহার শেষে তিনি আমাকে বললেন, আমার জুতো এনে দাও। তিনি দন্ডায়মান হলে আমিও তার সাথে দাঁড়ালাম। তিনি বললেন, তোমার কি কোন প্রয়োজন ছিল? আমি বললাম, হ্যা। বনি সালামার একদল লোক আমাকে আপনার কাছে লাইলাতুল কদর বিষয়ে জিজ্ঞেস করার জন্য প্রেরণ করেছে। তিনি বললেন, (আজ) কততম রাত্রি ? বললাম, বাইশতম রাত্রি,—বর্ণনাকারী পরবর্তীতে তার মত পাল্টে বলতেন, না বরং পরের রাত্রি, অর্থাৎ তেইশতম রাত্রি। [আবু দাউদ : ১৩৭৯, হাদিসটি সহি।]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : উবাই বিন কা’ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আজ রাতে একটি ঘটনা ঘটেছে। তিনি বললেন, উবাই, কি ঘটেছে ? উবাই বললেন, আমার গৃহের কয়েকজন নারী বলল : আমরা কোরআন তেলাওয়াত করব না, বরং, আপনার সাথে সালাত আদায় করব। তিনি বলেন, আমি তাদের নিয়ে আট রাকাত সালাত আদায় করলাম, অত:পর বিতির পড়ে নিলাম। তিনি বলেন, মনে হল, রাসূল অনেকটা সম্মত, কিন্তু তিনি কিছু বললেন না। [ইবনে হিববান : ২৫৪৯।]
নানা বিভ্রান্তিতে আক্রান্ত হলেও, দ্বীন ও দ্বীনাচারে উম্মত খুবই আগ্রহী, এ ব্যাপারে কেউ কেউ ঘোর অলসতা ও অন্ধকারে নিমজ্জিত হলেও, অধিকাংশের মাঝেই আমরা এই প্রবণতা ও আগ্রহ দেখতে পাই। সুতরাং, উম্মতের দায়িত্বশীল আলেম সমাজের কর্তব্য ও পালনীয় হল : মানুষের কাছে দ্বীনের পরিপূর্ণ উন্মোচন, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য জ্ঞাপন করে, বিস্তৃত আকারে শরিয়তের যাবতীয় আহকাম সম্পর্কে তাদেরকে জ্ঞাত করা, স্বতঃস্ফূর্ততা ও উত্তম উত্তর প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে ধর্মাচার প্রবণ করে তোলা। যারা বেদআতে আক্রান্ত, প্রবৃত্তির পূজায় নিবিষ্ট, বিচ্ছিন্নভাবে উম্মতকে নতুন জাহেলি দীক্ষায় দীক্ষিত করবার পাঁয়তারায় লিপ্ত, তাদেরকে সুযোগগুলো গ্রহণে বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। উম্মতের সাধারণ জনগোষ্ঠী জ্ঞান ও মূর্খতা নির্ধারণে হয়ে পড়েছে অপরাগ, তাদের সামনে জাহেল ও আলেম একই রূপে প্রতিভাত হচ্ছে। সৎ-অসতের মাঝের পার্থক্য নিরূপণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে নিদারুণভাবে। এমন করুন পরিস্থিতি, সন্দেহ নেই, সময়কে করে তুলছে আরো বিপদাক্রান্ত ও সংকটাপন্ন।
ইলমের প্রসার ও বিস্তার, অসৎ কাজে বাধা প্রদান করে সৎকাজের প্রতি সকলকে আগ্রহী ও বেগবান করে তোলায় আলেমদের ভূমিকার নবায়ন কি আমরা দেখতে পাব ? দায়ি ও মুখলিসগণ কি তাদের শ্রম উজাড় করে এ পথে সফল হওয়ার জন্য নিজেকে নিয়োজিত করবেন ? কাটিয়ে দিবেন আলস্য ও মূর্খতার ঘোর অমানিশা ? তারা কি সতর্ক হবেন ? হয়তো, কিন্তু সময় ততদিনে অতিবাহিত হয়ে যাবে, হাতছাড়া হয়ে যাবে যাবতীয় সহায়-সুযোগ, আমরা ব্যর্থ হব পতনোন্মুখ একটি জাতিকে রক্ষা করতে।
পাশাপাশি, তালিবুল ইলমদের যে বিষয়ে সতর্ক থাকা একান্ত কর্তব্য, তা হচ্ছে কঠোরতা ও সহজতা আরোপের মাঝে সরল ভারসাম্য বজায় রাখা। অতি রক্ষণশীলতা আরোপ করে জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে সকলকে অনাগ্রহী করে তুলবে না। কারণ, যা হারাম, তাকে হালাল করা যেমন পাপের, তেমনি পাপের যা হালাল, তাকে হারাম করা। এবং যা ওয়াজিব নয়, তাকে ওয়াজিব করাও ওজুব ভাঙ্গার নামান্তর। কিংবা সহজতা ও সারল্য আরোপ করবে না, এবং করুণা-পরবশ হয়ে শরিয়তের হুকুম লঙ্ঘনও করবে না। কোরআন ও সুন্নাহ যে বিষয়ে স্পষ্ট বর্ণনা উপস্থাপন করেছে, রক্ষণশীলতা ও সহজতার যে মানদন্ড নির্ধারণ করেছে, কঠোর মনে হোক কিংবা সহজ, তাতে নিজেকে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থানে উন্নীত করা সকলের কর্তব্য ও দায়িত্ব।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/130/44
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।