hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

রাসূল যেভাবে রমজান যাপন করেছেন

লেখকঃ ফায়সাল বিন আলী আল বা’দানী

৪৮
লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানে উৎসাহ প্রদান
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করার জন্য উৎসাহ প্রদান করতেন। এ ব্যাপারে অনেক হাদিস রয়েছে। রাসূল এ মহান রাত্রিকে গনিমত মনে করে কাজে লাগাতে বলতেন, এর কল্যাণ অর্জনে উদ্বুদ্ধ করতেন সকলকে। একবার তিনি সাহাবিদেরকে এ রাতের ফজিলত বর্ণনা করে বলেন :—

من قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه .

যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাবের সাথে এ রাত্রি জাগরণ করবে, তার পূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [বোখারি : ১৮০২।]

ভিন্ন হাদিসে রাসূল এ রাতের সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন :—

تحروا ليلة القدر في العشر الأواخر من رمضان .

রমজানের শেষ দশ দিনে তোমরা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। [বোখারি : ২০২০।]

বেজোড় সংখ্যক রাত্রির প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখার নির্দেশ প্রদান করে বলেন :

تحروا ليلة القدر في الوتر من العشر الأواخر من رمضان .

রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় সংখ্যক রাতে তোমরা লাইলাতুর কদর অনুসন্ধান কর। [বোখারি : ২০১৭।]

তবে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যারা দুর্বল ও অসুস্থ, তাদের ক্ষেত্রে কেবল শেষ সাত রাত্রিতে অনুসন্ধানের আদেশ দিয়েছেন। এক হাদিসে রাসূল বলেছেন—

التمسوها في العشر الأواخر يعني ليلة القدر -، فإن ضعف أحدكم أو عجز فلا يغلبن على السبع البواقي .

তোমরা শেষ দশে তা, অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের অনুসন্ধান কর। যদি তোমাদের কেউ দুর্বল হয়, কিংবা অক্ষম হয়ে পড়ে, তবে শেষ সাতে যেন পরাভূত হয়ে না পড়ে ( শেষ সাত রাতে অবশ্যই যেন তালাশ করে)। [মুসলিম : ২৮২২।]

রাসূল, অত:পর শেষ সাত রাত্রির মাঝে লাইলাতুল কদরের জন্য সর্বাধিক সম্ভাবনাময় রাত্রি হিসেবে সাতাশের রাত্রিকে নির্ধারণ করেছেন, তিনি এক হাদিসে এরশাদ করেছেন—

من كان متحريها فليتحرها ليلة سبع وعشرين، وقال : تحروها ليلة سبع وعشرين، يعني : ليلة القدر .

যে তা (লাইলাতুল কদর) অনুসন্ধান করবে, সে যেন অনুসন্ধান করে সাতাশের রাতে। এবং তিনি বলেছেন—তোমরা তা অর্থাৎ লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর সাতাশের রাতে। [আহমদ : ৬৪৭৪।]

এ জাতীয় নানা হাদিস বর্ণিত হওয়ার কারণেই সাহাবি উবাই বিন কাব রা. শপথ করে বলতেন যে, তা সাতাশের রাত্রিতেই ঘটে। তিনি বলেন :—

والله إني لأعلمها، وأكثر علمي هي الليلة التي أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم بقيامها، هي ليلة سبع وعشرين .

আল্লাহর শপথ ! আমি তার ব্যাপারে অবগত। আমার দৃঢ় ধারণা হচ্ছে, তা হল, সেই রাত্রি, যাতে রাত যাপনের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। তা হচ্ছে সাতাশের রাত্রি। [মুসলিম : ১৮২২।]

মূলত: কিছু কিছু বছরে সাতাশের রাত্রিতে লাইলাতুল কদর ঘটেছিল, এবং সাহাবিগণ এ রাতের ব্যাপারে দৃঢ় ধারণা পোষণ করতেন। তবে, একুশের রাত ও তেইশের রাতেও লাইলাতুল কদর হয়েছে—এমন প্রমাণও হাদিসে পাওয়া যায়।

একুশের রাতের প্রমাণ হল :—আবু সাইদ খুদরি রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন—

إني اعتكفت العشر الأول ألتمس هذه الليلة، ثم اعتكفت العشر الأوسط، ثم أُتيت فقيل لي إنها في العشر الأواخر فمن أحب منكم أن يعتكف فليعتكف، فاعتكف الناس معه، قال : وإني أُريتها ليلة وتر وأني أسجد صبيحتها في طين وماء، فأصبح من ليلة إحدى وعشرين وقد قام إلى الصبح، فمطرت السماء فوكف المسجد، فأبصرت الطين والماء، فخرج حين فرغ من صلاة الصبح وجبينه وروثة أنفه فيهما الطين والماء، وإذا هي ليلة إحدى وعشرين .

আমি (প্রথমে) এ রাতের সন্ধানে প্রথম দশে এতেকাফ পালন করি। অত:পর এতেকাফ পালন করি মাঝের দশে। পরবর্তীতে ওহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হয় যে, এ রাত শেষ দশে রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে (এ দশে) এতেকাফ পালনে আগ্রহী, সে যেন তা পালন করে। লোকেরা তার সাথে এতেকাফ পালন কর। রাসূল বলেন—আমাকে তা এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং দেখানো হয়েছে যে, আমি সে ভোরে কাদা ও মাটিতে সেজদা দিচ্ছি। অত:পর রাসূল একুশের রাতের ভোর যাপন করলেন, ফজর পর্যন্ত তিনি কিয়ামুল্লাইল করেছিলেন। তিনি ফজর আদায়ের জন্য দন্ডায়মান হয়েছিলেন। তখন আকাশ ঝেপে বৃষ্টি নেমে এল, এবং মসজিদে চুঁইয়ে চুঁইয়ে পানি পড়ল। আমি কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। ফজর সালাত শেষে যখন তিনি বের হলেন, তখন তার কপাল ও নাকের পাশে ছিল পানি ও কাদা। সেটি ছিল একুশের রাত। [বোখারি : ২০১৮।]

আব্দুল্লাহ বিন আনিস বর্ণিত হাদিস দ্বারা আমরা তেইশের রাত্রি সম্পর্কে জানতে পারি, তাতে আছে—রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন :

أُريت ليلة القدر ثم أنسيتها، وأراني صبحها أسجد في ماء وطين، قال : فمطرنا ليلة ثلاث وعشرين فصلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم فانصرف، وإن أثر الماء والطين على جبهته وأنفه .

প্রথমে আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হলেও পরে আমি তা বিস্মৃত হয়ে যাই। আমাকে দেখানো হয়েছিল যে, সে ভোরে পানি ও কাদায় আমি সেজদা দিচ্ছি। রাবি বলেন, তেইশের রাতে আমরা বৃষ্টিস্নাত হলাম, রাসূল আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন এবং প্রস্থান করলেন। তার কপাল ও নাকে ছিল পানি ও কাদার চি ‎‎ হ্ন। [মুসলিম : ২৮৩২।]

এ সকল বর্ণনা ও বিভিন্ন মতের মাধ্যমে আমরা অবগত হই যে, লাইলাতুল কদরকে গোপন করা হয়েছে, এবং শেষ দশের বেজোড় রাতগুলোতে—নির্দিষ্ট এক রাতে নয়, ভিন্ন ভিন্ন রাতে উপস্থিত হয়। মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে রহমত ও এহসান স্বরূপ কখনো এক রাতে, কখনো ভিন্ন রাতে তা হাজির হয়। আমলে আকাঙ্ক্ষী ও উদাসীনদের মাঝে এক সরল পার্থক্য রেখা টেনে দেয়।

সাহাবিদের জীবনাচার যে পুঙ্খানুপুঙ্খ দৃষ্টিতে বিচার করবে, দেখতে পাবে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অনুসারীদেরকে যার মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের ব্যাপারে সর্বাধিক উৎসাহিত ও উদ্দীপিত করেছেন, তাহল, কর্মের মাধ্যমে মূর্ত আদর্শ সকলের সামনে তুলে ধরা। রাসূল যে রাতকে ভাবতেন লাইলাতুল কদর হিসেবে, তার কাছে মনে হত যে, এ রাতই প্রতিশ্রুত লাইলাতুল কদর, সে রাতে তিনি কঠিন পরিশ্রম করতেন, নানাভাবে এবাদতে কাটিয়ে দিতেন, তাই সাহাবিগণ সরাসরি রাসূলের সংস্পর্শে সে রাত যাপন করতেন এবং উৎসাহিত হতেন এ ব্যাপারে। প্রকাশ্যে রাসূলের এ পরিশ্রম ও মোজাহাদার কারণ হচ্ছে তিনি ছিলেন উম্মতের সকলের জন্য অনুসরণীয় ও ইমাম। লাইলাতুল কদর হচ্ছে এমন রাত, যাতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে এবং যে রাতের আমল হাজার বছরের আমলের তুলনায় অধিক সওয়াব আনয়নকারী। আল্লাহ তাআলা আমাদের জানিয়েছেন—এ রাতে আকাশের ফেরেশতা ও জিবরাইল আ: মর্ত্যলোকে নেমে আসেন, এবং তা শান্তি ও নিরাপত্তার রাত, বিপুলভাবে এ রাতে তিনি বান্দাদের মর্যাদা ও করুণায় ভূষিত করেন, ক্ষমা করেন তাদের, মুক্ত-বিধৌত করেন পাপ ও গোমরাহির ক্লেদাক্ততা হতে।

বর্তমান সময়ে এ রাত সংক্রান্ত মানুষের আবেগ ও অনুভূতি বিচার করলে আমরা দেখতে পাব যে, অধিকাংশ মানুষই এ রাতে নিজেকে কল্যাণ-কর্মে নিজেকে ব্যাপৃত রাখতে উদ্যমী হয়, আগ্রহ বোধ করে বিপুলভাবে, এ রাতের রহমত-বরকত ও করুণা লাভের মাধ্যমে নিজেকে ভূষিত-সুরভিত করতে প্রয়াস চালায়। তবে, সাধারণ মানুষের এ আবেগ ও অনুভূতি, সৎকাজে ক্রমাগত নিজেকে জড়িয়ে নেয়ার আগ্রহ তখনি সঠিক উপায়ে, বিশুদ্ধ গতিতে সুফল পরিণামে পর্যবসিত হবে, যখন আলেম ও মুসলিহ, এবং দায়িগণ তাদের জন্য উপস্থাপন করবেন কর্মের মূর্ত এক আদর্শ। রাসূল হতে বর্ণিত-সাব্যস্ত আমলগুলো তারা তাদের সামনে তুলে ধরবেন, এ অনুসারে আমলের জন্য উদ্বুদ্ধ করবেন সকলকে। বিচ্যুতি ও প্রমাদগুলো সংশোধন করে, এবং উত্তম-অনুত্তম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে যাতে মানুষ আমল করতে পারে—এ ব্যাপারে আলেমগণ সবিশেষ দৃষ্টি প্রদান করবেন।

যে পদ্ধতি ও নববি পন্থা অনুসরণ করে আমরা এ বিষয়ে নিজেদের ও সকলকে গড়ে তুলতে পারি, তা নিম্নরূপ :—

* যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ করে এ রাতের জন্য সার্বিক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা যায়, তার পূর্ণ রূপায়ণ : যেমন—দিবসে বিশ্রামে যাপন, অনর্থক সংশ্রব এড়িয়ে নীরবে সময়টি যাপনের প্রস্ত্ততি গ্রহণ, এতেকাফে না থাকলে দ্রুত মসজিদমুখী হওয়া, স্বল্পাহার, পারিবারিক প্রয়োজন পুরণ—যেমন শেষ দশ আগমনের পূর্বে ঈদ সংক্রান্ত যাবতীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করা ইত্যাদি।

* পাপ ও গোমরাহি হতে আত্মায় ও মননে পূর্ণ পরিচ্ছন্ন হওয়া। এ জন্য যাবতীয় কবিরা গোনাহ হতে পরিপূর্ণরূপে তওবা করে নিবে। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিস—

من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه، ومن قام ليلة القدر إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه .

যে ইমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজান যাপন করবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। আর যে ব্যক্তি ইমান ও ইততেসাবের সাথে লাইলাতুল কদরের রাত্রি যাপন করবে, তারও পূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। [আহমদ : ৯৪৫৯।]—বর্ণনার পাশাপাশি এও এরশাদ করেছেন যে—

الصلوات الخمس، والجمعة إلى الجمعة، ورمضان إلى رمضان مكفرات ما بينهن إذا اُجتُنب الكبائر .

পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা হতে অপর জুমা, এক রমজান হতে অপর রমজান মধ্যবর্তী সকল পাপের কাফ্ফারা—যদি কবিরা গোনাহ হতে বেঁচে থাকা হয়। [মুসলিম : ২৩৩।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসে কবিরা গোনাহ হতে বেচে থাকার উপর নির্ভরশীল রেখেছেন।

* আল্লাহ প্রেম, তার মহত্ত্ববোধ, আত্মিক ও বাহ্যিক জগতে তার কর্তৃত্বের বিস্তৃতি, তার ভীতি, তার ফজিলত ও এহসানের মাহাত্ম্য উপলব্ধি, নেয়ামতের বিপুলতা, শাস্তির ভয়াবহতা—ইত্যাদি বোধ ও চেতনার মাধ্যমে নিজেকে ভরিয়ে তোলা। আল্লাহই হচ্ছেন বান্দার শেষতম শরণ ও আশ্রয়। বান্দা যে পরিমাণ নিজেকে আল্লাহর তরে নতজানুরূপে পেশ করতে পারবে, উপলব্ধি করতে সক্ষম হবে তার মহত্ত্ব ও বড়ত্ব, জানতে পারবে তার পরিচয়, ঠিক সে পরিমাণেই তার আমল কবুল হওয়ার মত পরিবেশ সৃষ্টি হবে, এবং পুরস্কার লাভ করবে বহু গুণে। সুতরাং, যে ব্যক্তি বাহ্যিক আমলেই নিজেকে সন্তুষ্ট করে রেখেছে, আন্তর সম্পর্কিত আমলে নিজেকে বিন্দুমাত্র জড়াইনি, হে মুসলিম ভাই ! তার সমকাতারভুক্ত হওয়া থেকে নিজেকে বাঁচাও !

* কোন কোন আলেমের পক্ষ হতে গোসল করা, সাজ-সজ্জা ও সুগন্ধি ব্যবহার সংক্রান্ত যে বর্ণনা পাওয়া, তা অনুসরণ করা যেতে পারে। ইবনে জাওযি বলেন : সালফে সালিহীনগণ এ রাতের জন্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতেন। তামিম দারি যে রাতকে লাইলাতুল কদর মনে করতেন, সে রাতে এক হাজার দেরহামের পোশাক পরিধান করতেন। এমনিভাবে, সাবেত ও হামিদ এ রাতে গোসল করতেন, সুগন্ধি ব্যবহার করতেন ও উত্তম পোশাক পরিধান করতেন।

* নিজের জন্য এ রাতে সর্বোত্তম আমল নির্বাচন, যে আমল বান্দাকে ক্রমান্বয়ে বান্দাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে তোলে। আন্তর ও বাহ্যিক আমলগুলোর রয়েছে নানা স্তরক্রম—ভীতি, বিনয় বিনম্র আচরণ, আল্লাহর তরে নিজেকে বিলীন করে উপস্থাপন ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের কাছে এমন কিছু উন্মোচিত হয়, যা আমরা অন্য কোথাও পাই না।

* রমজানের পুরোটা সময়েই বান্দা রাত যাপনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে। কেবল লাইলাতুল কদরকে বিশেষভাবে নির্দিষ্ট করে নিবে না। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন—

من قام رمضان إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه .

যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতেসাবের সাথে রমজানে রাত যাপন করবে, আল্লাহ পাক তার পূর্বের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিবেন। [বোখারি : ৩৭।]

আমলের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের রাতগুলোতে তারতম্য করতেন—বিষয়টিকে আমরা কোনভাবেই অস্বীকার করি না ; কারণ আয়েশা রা. রাসূলের রমজানের রাত্রিকালীন আমলের বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন—

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد في العشر الأواخر ما لا يجتهد في غيره .

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানের শেষ দশে এতটা পরিশ্রম করতেন, যেমন করতেন না অন্য সময়ে। [মুসলিম : ২৮৪৫।]

—এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশের রাতগুলোতেও আমলের মাঝে তারতম্য করতেন ; আবু যর রা. হতে বর্ণিত হাদিসে বিষয়টি স্পষ্টরূপে ধরা দেয়। তিনি বর্ণনা করেন—

صمنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم رمضان فلم يقم بنا شيئا من الشهر حتى بقي سبع، فقام بنا حتى ذهب ثلث الليل، فلما كانت السادسة لم يقم بنا، فلما كانت الخامسة قام بنا حتى ذهب شطر الليل، فقلت يارسول الله : لو نفلتنا قيام هذه الليلة، قال : فقال : «إن الرجل إذا صلى مع الإمام حتى ينصرف حسب له قيام ليلة، قال : فلما كانت الرابعة لم يقم، فلما كانت الثالثة جمع أهله ونساءه والناس فقام بنا حتى خشينا أن يفوتنا الفلاح، قال : قلت : ما الفلاح؟، قال : السحور، ثم لم يقم بنا بقية الشهر .

আমরা রাসূলের সাথে রমজানে সিয়াম পালন করেছি, সাত দিবস অবশিষ্ট থাকা অবধি তিনি আমাদের নিয়ে রাত্রি জাগরণ করলেন না। (সপ্তম রাত্রিতে) তিনি আমাদের নিয়ে রাতের এক তৃতীয়াংশ অবধি রাত জাগরণ করলেন। ষষ্ঠ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে রাত যাপন করলেন না। পঞ্চম রাত্রিতে তিনি অর্ধ রাত্রি অবধি সালাতে কাটালেন। আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল ! পুরো রাতই যদি আপনি আমাদের নিয়ে নফল আদায় করতেন ! আবু যর বলেন, রাসূল বললেন : ইমাম প্রস্থান করা অবধি যে ব্যক্তি তার সালাত আদায় করে, তার জন্য পুরো রাত যাপনের সওয়াব লিখে দেয়া হয়। অত:পর চতুর্থ রাত্রিতে তিনি আমাদের নিয়ে যাপন করলেন না। তৃতীয় রাত্রিতে তিনি তার পরিবার-পরিজন, স্ত্রী-গণ ও লোকদের সকলকে একত্রিত করলেন এবং আমাদের নিয়ে এতটা সময় রাত্রি জাগরণ করলেন যে, সেহরির সময় অতিক্রান্তের ভয় হল। [আবু দাউদ : ১৩৭৭০, হাদিসটি সহি।]

কিন্তু মনে রাখতে হবে, সংখ্যা তারতম্যই এখানে মুখ্য বিষয় নয়। বরং, যাবতীয় কল্যাণ নিহিত সংখ্যায় ও পদ্ধতিতে পূর্ণাঙ্গরূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ ও অনুবর্তনে। মানুষ, বরং, হারাম কর্মে যোগদান এবং ওয়াজিব আমল বিনষ্টের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে বিপদে। জামাত ত্যাগ, অনর্থক কাজে সময় ব্যয়, সুন্নত ও সুন্নতে মোয়াক্কাদা পরিত্যাগ, কোরআন তেলাওয়াত ও তার অনুশীলন বর্জন, আত্মিক উন্নয়নে অবহেলা, জিকির, দোয়া, সদকা ও অন্যান্য সৎকাজে অবহেলা—মূলত: এগুলোই মানুষকে সত্য পথ বিচ্যুত করে নিপতিত করে অন্ধকারের গহিনে। এমনকি, কারো কারো রমজানে আসে কোন প্রকার বিশেষত্বহীনভাবে, অন্য কোন সময়ের সাথে কোন পার্থক্য বা তারতম্য নেই। এবং মানুষের এ সকল মনোবৃত্তির উপস্থিতি হয় সময়ের গুরুত্বহীনতা, সুযোগ হাতছাড়া করা, সালফে সালেহিনের বিরোধিতায় লিপ্ত হওয়া, সর্বোপরি, যারা রমজানের পুরো সময়টিকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে নিজের দ্বীনী জীবনকে পূর্ণাঙ্গ আলোকিত করে তুলতে চায়, তাদের বিরোধিতায় লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে। সন্দেহ নেই এ খুবই গর্হিত কর্ম।

যাদের মাঝে এ সকল মনোবৃত্তির উপস্থিতি দৃষ্টিগোচর হচ্ছে, তাদের মনে রাখতে হবে রাসূলের এক ভয়াবহ উক্তি তাদের সামনে খড়গ হয়ে ঝুলছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মিম্বরে আরোহণ করছিলেন। তিনি আপাত এক অদ্ভুত উক্তি করেন : হাদিসটিতে আছে—

فلما ارتقى درجة قال : آمين، فلما ارتقى الدرجة الثانية قال : آمين، فلما ارتقى الدرجة الثالثة قال : آمين، فلما نزل قلنا : يا رسول الله لقد سمعنا منك اليوم شيئا ما كنا نسمعه ! ، قال : إن جبريل عرض لي فقال : بُعْدا لمن أدرك رمضان فلم يغفر له، قلت : آمين . فلما رقيت الثانية قال : بُعْدا لمن ذكرت عنده فلم يصل عليك، قلت : آمين . فلما رقيت الثالثة قال : بُعْدا لمن أدرك أبواه الكبر عنده فلم يُدخلاه الجنة، قلت : آمين .

অত:পর যখন তিনি আরেকটি স্তরে উন্নীত হলেন, বললেন, আমিন! দ্বিতীয় স্তরে উন্নীত হয়ে বললেন, আমিন ! তৃতীয় স্তরে উন্নীত হয়েও বললেন আমিন ! যখন তিনি নেমে এলেন, আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল ! আজ আমরা আপনার কাছ থেকে এমন কিছু শ্রবণ করেছি, যা ইতিপূর্বে শ্রবণ করিনি। তিনি বললেন : জিবরাইল আমাকে বললেন : যে ব্যক্তি রমজান পেয়েছে অথচ তাকে ক্ষমা করা হয়নি, সে ধ্বংস হোক, আমি তার এ কথার প্রেক্ষিতে বলেছি আমিন। যখন দ্বিতীয় সিঁড়িতে উঠেছি, তখন সে বলল, ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি যার নিকট আপনার নাম উচ্চারিত হল, অথচ সে আপনার উপর সালাত পাঠ করল না। আমি উত্তরে বললাম আমিন। তৃতীয় সিঁড়িতে উঠলে জিবরাইল বললেন : ধ্বংস হোক সে ব্যক্তি পিতা-মাতাকে বৃদ্ধ বয়সে লাভ করেছে, অথচ তারা তার জান্নাত লাভের কারণ হয়নি। আমি বললাম, আমিন।

এ হাদিসটি রমজান অবহেলায় যাপনকারীদের জন্য এক অশনি সংকেত—সন্দেহ নেই। আমরা দেখতে পাই, কেউ কেউ লাইলাতুল কদর বলতে কেবল সাতাশের রাতকেই বুঝেন। বিশুদ্ধ মত অনুসারে, অথচ, লাইলাতুল কদর কেবল সাতাশের রাতেই সীমাবদ্ধ নয়। তবে, অন্যান্য রাতের তুলনায় এ রাতের ব্যাপারে প্রবল ধারণা পোষণ করা যায়।

আমরা দেখতে পাই, কেউ কেউ লাইলাতুল কদর হিসেবে সাতাশের রাতকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করেন, যা এক প্রকারে

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন