HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

জান্নাতের পথ

লেখকঃ মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
সংকলনে

মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী

সম্পাদনা

শাইখ আবদুর রহমান বিন মুবারক আলী

মোহাম্মাদ ইমাম হোসাইন কামরুল

ইমাম পাবলিকেশন্স লিঃ, ঢাকা

ভূমিকা
জান্নাতের পথ কিতাবটি প্রকাশ করতে পেরে আমি মহান আল্লাহর কাছে অসংখ্য অগণিত শুকরিয়া আদায় করছি। আমি তাঁর একজন নগণ্য বান্দা। তিনি তৌফিক না দিলে আমার মত নগণ্য একজন বান্দার পক্ষে বিষয়টি সাজানো সম্ভব হতো না। মহান আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে কয়েক বছর থেকে কুরআন-হাদীস বুঝে বুঝে অধ্যয়ন করার চেষ্টা করছি মাত্র। এর পূর্বে জীবনের বেশ কয়েক বছর আমি কবিতা, গল্প, উপন্যাস পড়া ও লেখার কাজে ব্যয় করেছি। অতঃপর মহান আল্লাহ তা‘আলা অত্যন্ত মেহেরবানী করে সেই পথ থেকে আমাকে কুরআন-সুন্নাহর দিকে ধাবিত করেছেন।

কয়েক বছর থেকে কুরআন-হাদীস, বিষয়ভিত্তিক ইসলামী গ্রন্থ ও নির্ভরযোগ্য ইসলামী সাহিত্য অধ্যয়ন, বিভিন্ন ইসলামী ব্যক্তিত্বদের বক্তৃতা শোনার পাশাপাশি নিজের অযোগ্যতা সত্ত্বেও স্বল্প পরিসরে হলেও সুযোগ পেলে মসজিদে, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু মহলে কুরআন-হাদীসের বিষয় নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করছি। ইতিপূর্বে আনুমানিক ২০০৪ সাল থেকে স্বল্প পরিসরে বিভিন্ন আলেম-ওলামা ও ইসলামিক গবেষকদের বিভিন্ন দরস, ক্লাস, তাফসির, ইসলামিক আলোচনা ও ইসলামিক সেমিনারে অংশগ্রহণের মাধ্যমে কুরআন-হাদীসের দিকে ধাবিত হই। প্রথমে সেনাসদর প্রশাসনিক শাখার ঐতিহ্যবাহী লাল মসজিদের ও পরে ঢাকা সেনানিবাসের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুহতারাম মোঃ মাহমুদুল হক এবং দেশের মানুষদেরকে কুরআনের শিক্ষা প্রদান করার অভিপ্রায়ে মদীনা বিশ^বিদ্যালয়ের চাকুরী ছেড়ে চলে আসা এক মহান ব্যক্তির (যিনি বিভিন্ন মসজিদে কুরআনের শাব্দিক অনুবাদ শেখানোসহ কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করে শোনাতেন) নিকট আমার কুরআন শেখার হাতেখড়ি। প্রায় ৩/৪ বছর তাদের সংস্পর্শে থেকে আমার জীবন সাধারণ সাহিত্য থেকে কুরআন-হাদীস ও ইসলামিক সাহিত্যের দিকে মোড় নিতে থাকে। ২০১০ সালের দিকে কুরআনের আরেক মহান শিক্ষক মুহতারাম কাজী মোঃ রেজাউর রহমান যিনি সপ্তাহে আটটি ক্লাসে (প্রতিদিন মাগরিব থেকে এশা পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদে এবং শুক্রবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসের মসজিদে কুরআনের শাব্দিক অনুবাদ, সরল অনুবাদ শিখাতেন, উনার সাথে পরিচয় ঘটে। তারপর থেকে আনুমানিক এক-দেড় বৎসর প্রায় প্রতিদিনই আমি উনার ক্লাসে অংশগ্রহণ করতাম। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ঢাকা টিএন্ডটি ভবনে কুরআনের ব্যাকরণ বিশেষজ্ঞ মুহতারাম মুহাম্মদ ইয়াহইয়া স্যারের মাল্টিমিডিয়ার সাহায্যে পরিচালিত ‘‘কুরআনীয় আরবী শিক্ষা’’ কোর্সে (যিনি বিনামূল্যে দীর্ঘদিন থেকে কুরআনের ব্যাকরণের উপর কোর্স করাতেন) অংশগ্রহণ করতাম। সেই সুবাদে ২০১২ সালে জাতিসংঘ মিশনে কঙ্গোতে আমাকে মসজিদের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানে আমি ১৩ মাস ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে কুরআন ও কুতুবুস সিত্তার গ্রন্থগুলি সাধ্যমত অধ্যয়ন, লগ্নজ্ঞান খুতবা ও ক্লাসের মাধ্যমে অন্যদের মাঝে প্রচারের সুযোগ পেয়ে যাই।

কুরআনুল কারীম অধ্যয়নের এক পর্যায়ে মুত্তাকীদের জন্য মহান আল্লাহর ঘোষিত পুরস্কারের বিষয়টি আমার অন্তরে গভীরভাবে দাগ কাটে। কেননা মহান আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে মুত্তাকীদের জন্য অনেক পুরস্কারের কথা বলেছেন। বিষয়টা মাঝে মাঝেই আমি অন্যদের কাছে আলোচনা করি। কেননা পুরস্কার বা লাভের কথা জানলেই মানুষ আগ্রহী হয় এবং সেটা পাওয়ার জন্য চেষ্টা সাধনা করে। ২০১৬ সালে পবিত্র হজ্জ্বব্রত পালনের সময় মিনার শেষ দিনে আমার ছোট ভাই আবদুল মতিন আমাদের তাবুতে উপস্থিত হাজীদের উদ্দেশ্যে কিছু আলোচনা করার অনুরোধ করলে হামদ ও ছানার পর আমি এ বিষয়ে আলোচনা করতে শুরু করি। প্রায় তিনশত সম্মানিত হাজীদের সামনে আমি প্রায় দুই ঘণ্টা এ বিষয়ের উপর আলোচনা করি। বক্তৃতা শেষে অনেকেই প্রশংসা করলেন।

এরপর অনেকেই এ বিষয়ে বই লেখার অনুরোধ করলে তা আমাকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাই একদিন মনে হলো বিষয়টি সাজিয়ে কিতাব আকারে প্রকাশ করলে আগ্রহী ব্যক্তিরা পড়েও যেমন উপকৃত হতে পারবেন তেমনি খতিব ও দায়ীরা খুতবায়, দাওয়াতী আলোচনায় ও বক্তৃতায় বিষয়টি জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে পারবেন। এতে করে আমিও মহান আল্লাহর কাছে কিছু সওয়াব পাব ইন-শা-আল্লাহ। তাই কেবলমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তাঁরই কালাম মহাগ্রন্থ আল কুরআনের কিছু কথা মুত্তাকী হয়ে জান্নাত পেতে ইচ্ছুক মুসলিম ভাই/বোনদের উদ্দেশ্যে সাজিয়ে দিলাম মাত্র। এর যা কিছু ভাল তা আল্লাহর দান আর এর ভুল-ত্রুটি ও ঘাটতি তা আমার অপারগতা। তারপরও মহান আল্লাহর কাছে দু‘আ করি আল্লাহ যেন তাঁর এই নগণ্য বান্দার লেখাটাকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন। পড়ার সময় ভুল পেলে যে কেউ আমাকে ফোনে জানালে পরবর্তীতে সংশোধন করে দেয়ার চেষ্টা করব ইন-শা-আল্লাহ। মহান আল্লাহ যেন আমাদের পিতা-মাতা, স্ত্রী-সন্তান, ভাই-বোনসহ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়া সকল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও মুমিন নর-নারীদের জীবনের গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন এবং যারা এখনও বেঁচে আছে তাদেরকে জান্নাতের উপযুক্ত হওয়ার জন্য তৌফিক দান করেন। আমিন

* কুরআন, হাদীস ও নির্ভরযোগ্য ইসলামী বই পড়ুন- জ্ঞান ও নেকী দুটোই অর্জন করুন।

* প্রিয়জনকে ইসলামী বই পড়তে/উপহার দিয়ে দাওয়াতী কাজে অংশগ্রহণ করে মৃত্যুর পরও নেকী অর্জনের ব্যবস্থা করুন।

সকল মুসলিম ভাই-বোনের দু‘আপ্রার্থী

মুহাম্মাদ মুনিরুজ্জামান বিন আশরাফ আলী

গৌরীপুর, শেরপুর সদর, শেরপুর-২১০০।

মোবাইলঃ ০১৯১২-০৩১৮৪৭।

মৃত্যু ও তার পরবর্তী অবস্থা
মৃত্যু ও তার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন,

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَاِنَّمَا تُوَفَّوْنَ اُجُوْرَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِؕ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَاُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَؕ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الْغُرُوْرِ

প্রত্যেক জীবকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে, আর অবশ্যই কিয়ামতের দিন তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা লাভ করবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী মাত্র। (সূরা ৩/আলে ইমরানঃ ১৮৫)

اَيْنَمَا تَكُوْنُوْا يُدْرِكْكُّمُ الْمَوْتُ وَلَوْ كُنْتُمْ فِيْ بُرُوْجٍ مُّشَيَّدَةٍ

তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদেরকে পাকড়াও করবেই যদিও তোমরা সুদৃঢ় দূর্গের ভিতর অবস্থান কর তবুও। (সূরা ৪/নিসাঃ ৭৮)

كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِؕ وَنَبْلُوْكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةًؕ وَّاِلَيْنَا تُرْجَعُوْنَ

প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবেই, আর আমি তোমাদেরকে ভাল ও মন্দ দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে। (সূরা ২১/আম্বিয়াঃ ৩৫)

وَهُوَ الَّذِيْۤ اَحْيَاكُمْؗ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يُحْيِيْكُمْؕ اِنَّ الْاِنْسَانَ لَكَفُوْرٌ

আর তিনিই তোমাদেরকে জীবন দিয়েছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদেরকে মৃত্যু দেবেন, তারপর তিনিই তোমাদেরকে আবার জীবন দেবেন। নিশ্চয় মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ। (সূরা ২২/হাজ্জ্বঃ ৬৬)

সূরা নং ২৩, সূরা আল মুমিনুন এর ১২ থেকে ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْاِنْسَانَ مِنْ سُلَالَةٍ مِّنْ طِيْنٍ

আমি মানুষকে মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি করেছি।

ثُمَّ جَعَلْنَاهُ نُطْفَةً فِيْ قَرَارٍ مَّكِيْنٍ

অতঃপর আমি তাকে শুক্রবিন্দুরূপে সংরক্ষিত আধারে (মাতৃ জরায়ুতে) স্থাপন করেছি।

ثُمَّ خَلَقْنَا النُّطْفَةَ عَلَقَةً فَخَلَقْنَا الْعَلَقَةَ مُضْغَةً فَخَلَقْنَا الْمُضْغَةَ عِظَامًا فَكَسَوْنَا الْعِظَامَ لَحْمًا ثُمَّ اَنْشَأْنَاهُ خَلْقًا اٰخَرَؕ فَتَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

এরপর আমি শুক্রবিন্দুকে জমাট রক্তে পরিণত করেছি, অতঃপর জমাট রক্তকে মাংসপিন্ডে পরিণত করেছি। এরপর সেই মাংসপিন্ড থেকে হাড় সৃষ্টি করেছি, অতঃপর সেই হাড়কে মাংস দ্বারা আবৃত করেছি, অবশেষে তাকে নতুন রূপে দাঁড় করিয়েছি। নিপুণতম সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ কত কল্যাণময়।

ثُمَّ اِنَّكُمْ بَعْدَ ذٰلِكَ لَمَيِّتُوْنَ

এরপর অবশ্যই তোমরা মৃত্যুবরণ করবে।

ثُمَّ اِنَّكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تُبْعَثُوْنَ

অতঃপর কিয়ামতের দিন তোমরা অবশ্যই পুনরুত্থিত হবে।

اِنَّ اللهَ عِنْدَهٗ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْاَرْحَامِ وَمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَّمَا تَدْرِيْ نَفْسٌ ۢبِاَيِّ اَرْضٍ تَمُوْتُ اِنَّ اللهَ عَلِيْمٌ خَبِيْرٌ

নিশ্চয় আল্লাহর নিকট রয়েছে কিয়ামতের জ্ঞান। আর তিনি বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং জরায়ুতে যা আছে, তাও তিনি জানেন। আর কেউ জানে না আগামীকাল সে কী অর্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন স্থানে সে মারা যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। (সূরা ৩১/লোকমানঃ ৩৪)

قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِيْ وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ اِلٰى رَبِّكُمْ تُرْجَعُوْنَ

বলো, মৃত্যুর ফেরেশতা (যথাযথ সময়ে) তোমাদের মৃত্যু ঘটাবে যাকে তোমাদের মৃত্যুর জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। তারপর তোমাদেরকে তোমাদের রবের নিকট ফিরিয়ে আনা হবে। (সূরা ৩২/আস-সাজদাঃ ১১)

قُلْ لَّنْ يَّنْفَعَكُمُ الْفِرَارُ اِنْ فَرَرْتُمْ مِّنَ الْمَوْتِ اَوِ الْقَتْلِ وَاِذًا لَّا تُمَتَّعُوْنَ اِلَّا قَلِيْلًا

বলো, যদি তোমরা মৃত্যু অথবা হত্যার ভয়ে পালাতে চাও তবে সেই পালানো তোমাদের কোন উপকারে আসবে না। আর সে ক্ষেত্রে তোমাদের সামান্যই ভোগ করতে দেয়া হবে। (সূরা ৩৩/আহযাবঃ ১৬)

اَللهُ يَتَوَفَّى الْاَنْفُسَ حِيْنَ مَوْتِهَا وَالَّتِيْ لَمْ تَمُتْ فِيْ مَنَامِهَا فَيُمْسِكُ الَّتِيْ قَضٰى عَلَيْهَا الْمَوْتَ وَيُرْسِلُ الْاُخْرٰۤى اِلٰۤى اَجَلٍ مُّسَمًّى اِنَّ فِيْ ذٰلِكَ لَاٰيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَّتَفَكَّرُوْنَ

আল্লাহ জীবসমূহের প্রাণ হরণ করেন তাদের মৃত্যুর সময় এবং যারা মরেনি তাদের নিদ্রার সময়। তারপর যার জন্য তিনি মৃত্যুর ফয়সালা করেন তার প্রাণ তিনি রেখে দেন এবং অন্যগুলো ফিরিয়ে দেন একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল কওমের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (সূরা ৩৯/যুমারঃ ৪২)

قُلِ اللهُ يُحْيِيْكُمْ ثُمَّ يُمِيْتُكُمْ ثُمَّ يَجْمَعُكُمْ اِلٰى يَوْمِ الْقِيَامَةِ لَا رَيْبَ فِيْهِ وَلٰكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ

বলো, আল্লাহই তোমাদের জীবন দেন, তারপর তোমাদের মৃত্যু ঘটান। তারপর তিনি তোমাদেরকে কিয়ামতের দিন একত্রিত করবেন, যাতে কোন সন্দেহ নেই; কিন্তু অধিকাংশ লোকই জানে না। (সূরা ৪৫/জাসিয়াঃ ২৬)

وَجَآءَتْ سَكْرَةُ الْمَوْتِ بِالْحَقِّ ذٰلِكَ مَا كُنْتَ مِنْهُ تَحِيْدُ

আর মৃত্যু যন্ত্রণা সত্যি সত্যিই আসবে, যা থেকে তুমি পলায়ন করতে চাও।

(সূরা ৫০/ক্বাফঃ ১৯)

نَحْنُ قَدَّرْنَا بَيْنَكُمُ الْمَوْتَ وَمَا نَحْنُ بِمَسْبُوْقِيْنَ

আমি তোমাদের মধ্যে মৃত্যু নির্ধারণ করেছি এবং আমাকে অক্ষম করা যাবে না।

(সূরা ৫৬/ওয়াক্বিয়াঃ ৬০)

قُلْ اِنَّ الْمَوْتَ الَّذِيْ تَفِرُّوْنَ مِنْهُ فَاِنَّهٗ مُلَاقِيْكُمْ ثُمَّ تُرَدُّوْنَ اِلٰى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

বলো, যে মৃত্যু থেকে তোমরা পলায়ন করতে চাও তা অবশ্যই তোমাদের সাথে সাক্ষাৎ করবে। তারপর তোমাদেরকে অদৃশ্য ও দৃশ্য সম্পর্কে পরিজ্ঞাত আল্লাহর কাছে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তারপর তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করতে। (সূরা ৬২/জুমুআঃ ৮)

وَاَنْفِقُوا مِنْ مَّا رَزَقْنَاكُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ يَّأْتِيَ اَحَدَكُمُ الْمَوْتُ فَيَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَاۤ اَخَّرْتَنِيْۤ اِلٰى اَجَلٍ قَرِيْبٍ فَاَصَّدَّقَ وَاَكُنْ مِّنَ الصَّالِحِيْنَ

আর আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করো- তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বেই। কেননা তখন সে বলবে, হে আমার রব, যদি আপনি আমাকে আরো কিছুকাল অবকাশ দিতেন, তাহলে আমি দান-সদকা করতাম আর (তওবা ও নেককাজ করে) সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। (সূরা ৬৩/মুনাফিকুনঃ ১০)

এই আয়াতগুলো এবং আরো অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীসে মৃত্যু সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে যেগুলোর সারমর্ম হলো - সবাইকে একদিন মরতে হবে। মৃত্যু থেকে বাঁচার কোন পথ নেই এবং সবাইকে একদিন কিয়ামতের মাঠে বিচারের জন্য হাজির হতে হবে দুনিয়ার জীবনের সবকিছুর হিসাব দেয়ার জন্য এবং পুরস্কার লাভ অথবা শাস্তি ভোগ করার জন্য।

কিয়ামত দিবসের ভয়াবহতা
কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে তার মধ্যে এখানে কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَاتَّقُوْا يَوْمًا لَّا تَجْزِيْ نَفْسٌ عَنْ نَّفْسٍ شَيْئًا وَّلَا يُقْبَلُ مِنْهَا شَفَاعَةٌ وَّلَا يُؤْخَذُ مِنْهَا عَدْلٌ وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

তোমরা সেই দিনকে ভয় কর যেদিন কেউ কারোর কোন উপকারে আসবে না, কারোর পক্ষ থেকে কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কারোর পক্ষ থেকে কোন বিনিময় গ্রহণ করা হবে না, কাউকে কোন দিক থেকে সাহায্যও করা হবে না। (সূরা ২/বাকারাঃ ৪৮)

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْ وَاخْشَوْا يَوْمًا لَّا يَجْزِيْ وَالِدٌ عَنْ وَّلَدِه وَلَا مَوْلُوْدٌ هُوَ جَازٍ عَنْ وَّالِدِه شَيْئًا اِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلَا يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ

হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় করো এবং সেই দিনকে ভয় করো, যেদিন পিতা তার পুত্রের কোন কাজে আসবে না, পুত্রও পিতার কোন কাজে আসবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব দুনিয়ার জীবন যেন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে না দেয় আর মহাপ্রতারক (শয়তান)ও যেন তোমাকে প্রতারিত করতে না পারে। (সূরা ৩১/লোকমানঃ ৩৩)

সূরা নং ৮০, সূরা আবাসা এর ৩৩ থেকে ৩৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّةُ

অতঃপর যেদিন কান ফাটানো নাদ বাজবে,

يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ اَخِيْهِ

সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাই থেকে

وَاُمِّه وَاَبِيْهِ وَصَاحِبَتِه وَبَنِيْهِ

তার মা, তার পিতা, তার সাথী ও তার সন্তানদের কাছ থেকে।

لِكُلِّ امْرِئٍ مِّنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُّغْنِيْهِ

সেদিন প্রত্যেকেই নিজেকে নিয়ে এমনভাবে চিন্তায় আচ্ছন্ন থাকবে যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।

সূরা নং ৭০, সূরা মাআরিজ এর ৮ থেকে ১৬ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَوْمَ تَكُوْنُ السَّمَآءُ كَالْمُهْلِ وَتَكُوْنُ الْجِبَالُ كَالْعِهْنِ

যেদিন আকাশ হবে গলিত তামার মতো এবং পর্বতসমূহ হবে রঙ্গীন পশমের মতো।

وَلَا يَسْاَلُ حَمِيْمٌ حَمِيْمًا -- ‐ يُبَصَّرُوْنَهُمْ

অন্তরঙ্গ বন্ধুও তার প্রাণের বন্ধুকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না যদিও একে অপরকে দেখতে পাবে।

يَوَدُّ الْمُجْرِمُ لَوْ يَفْتَدِيْ مِنْ عَذَابِ يَوْمِئِذٍ ۢبِبَنِيْهِ وَصَاحِبَتِه وَاَخِيْهِ وَفَصِيْلَتِهِ الَّتِيْ تُؤْوِيْهِ

গোনাহগার ব্যক্তি সেদিন বিনিময়স্বরূপ দিতে চাইবে তার সন্তান-সন্ততিকে, তার স্ত্রীকে, তার ভাইকে, তার জাতি-গোষ্ঠীকে- যারা তাকে আশ্রয় দিত।

وَمَنْ فِي الْاَرْضِ جَمِيْعًا ثُمَّ يُنْجِيْهِ

এমনকি পৃথিবীর সবকিছু দিয়েও নিজেকে রক্ষা করতে চাইবে।

كَلَّاۤ اِنَّهَا لَظٰى نَزَّاعَةً لِّلشَّوٰى

কখনই নয়। নিশ্চয় এটা লেলিহান আগুন যা চামড়া তুলে দিবে।

সূরা নং ২২, সূরা আল হজ্জ এর ১ ও ২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيْمٌ

হে লোকসকল! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার।

يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارٰى وَمَا هُمْ بِسُكَارٰى وَلٰكِنَّ عَذَابَ اللهِ شَدِيْدٌ

যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে, সেদিন প্রত্যেক স্তনধাত্রী মা তার দুধের শিশুকে ভুলে যাবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী নারী তার গর্ভপাত করে ফেলবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতালের মত অথচ তারা মাতাল নয়, বস্তুতঃ আল্লাহর আযাবই অত্যন্ত কঠিন।

فَاِذَا نُفِخَ فِي الصُّوْرِ نَفْخَةٌ وَّاحِدَةٌ (১৩) وَحُمِلَتِ الْاَرْضُ وَالْجِبَالُ فَدُكَّتَا دَكَّةً وَّاحِدَةً (১৪) فَيَوْمَئِذٍ وَّقَعَتِ الْوَاقِعَةُ (১৫) وَانْشَقَّتِ السَّمَآءُ فَهِيَ يَوْمَئِذٍ وَّاهِيَةٌ (১৬) وَالْمَلَكُ عَلٰۤى اَرْجَآئِهَا وَيَحْمِلُ عَرْشَ رَبِّكَ فَوْقَهُمْ يَوْمَئِذٍ ثَمَانِيَةٌ (১৭)

যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, একটি মাত্র ফুৎকার, পৃথিবী ও পর্বতমালা উত্তোলিত হবে এবং এক ধাক্কায় সেগুলো চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে, সেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে। সেদিন আকাশ বিদীর্ণ হয়ে শক্তিহীন হয়ে পড়বে এবং ফেরেশতাগণ আকাশের প্রান্তদেশে থাকবে ও আটজন ফেরেশতা আপনার রবের আরশকে তাদের ঊর্ধ্বে বহন করবে। (সূরা ৬৯/আল হাক্কাহঃ ১৩-১৭)

فَاِذَا نُفِخَ فِي الصُّوْرِ فَلَاۤ اَنْسَابَ بَيْنَهُمْ يَوْمَئِذٍ وَّلَا يَتَسَآءَلُوْنَ

যখন শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে, সেদিন তাদের পারস্পরিক আত্মীয়তার বন্ধন থাকবে না এবং একে অপরকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে না।

(সূরা ২৩/মুমিনুনঃ১০১)।

সূরা নং ৭৫, সূরা আল কিয়ামাহ এর ৭ থেকে ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,

فَاِذَا بَرِقَ الْبَصَرُ - وَخَسَفَ الْقَمَرُ وَجُمِعَ الشَّمْسُ وَالْقَمَرُ

যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে।

يَقُوْلُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ اَيْنَ الْمَفَرُّ

সেদিন মানুষ বলবে, আজকে পলায়নের জায়গা কোথায়?

كَلَّا لَا وَزَرَ اِلٰى رَبِّكَ يَوْمَئِذِ الْمُسْتَقَرُّ

বলা হবে, না, কোথাও আশ্রয়স্থল নেই, আপনার পালনকর্তার কাছেই সেদিন ঠাই হবে।

يُنَبَّاُ الْاِنْسَانُ يَوْمَئِذٍ ۢبِمَا قَدَّمَ وَاَخَّرَ

সেদিন মানুষকে অবহিত করা হবে, সে যা সামনে প্রেরণ করেছে ও পিছনে কি ছেড়ে এসেছে।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَنَضَعُ الْمَوَازِيْنَ الْقِسْطَ لِيَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلَا تُظْلَمُ نَفْسٌ شَيْئًاؕ وَّاِنْ كَانَ مِثْقَالَ حَبَّةٍ مِّنْ خَرْدَلٍ اَتَيْنَا بِهَاؕ وَكَفٰى بِنَا حَاسِبِيْنَ

আমি কিয়ামতের দিন ন্যায় বিচারের মানদন্ড স্থাপন করব। সুতরাং কারও প্রতি সামান্যতমও যুলুম করা হবে না। যদি কোন আমল (ভাল ও মন্দ) সরিষার দানা পরিমাণও হয়, আমি তা উপস্থিত করব এবং হিসাব গ্রহণের জন্য আমিই যথেষ্ট। (সূরা ২১/আম্বিয়াঃ ৪৭)

সূরা নং ৪৪, সূরা দুখান এর ৪০ থেকে ৫০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ يَوْمَ الْفَصْلِ مِيْقَاتُهُمْ اَجْمَعِيْنَ

নিশ্চয় ফয়সালার দিনটি তাদের সকলের জন্যই নির্ধারিত সময়।

يَوْمَ لَا يُغْنِيْ مَوْلًى عَنْ مَّوْلًى شَيْئًا وَّلَا هُمْ يُنْصَرُوْنَ

সেদিন এক বন্ধু অপর বন্ধুর কোন কাজে আসবে না এবং তারা সাহায্যপ্রাপ্তও হবে না,

اِلَّا مَنْ رَّحِمَ اللهُ اِنَّهٗ هُوَ الْعَزِيْزُ الرَّحِيْمُ

সে ছাড়া যার প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেন। নিশ্চয় তিনিই মহাপরাক্রমশালী, পরম দয়ালু।

اِنَّ شَجَرَتَ الزَّقُّوْمِ طَعَامُ الْاَثِيْمِ

নিশ্চয় যাক্কুম বৃক্ষ, পাপীদের খাদ্য,

كَالْمُهْلِ يَغْلِيْ فِي الْبُطُوْنِ

গলিত তামার মতো, তাদের পেটসমূহে ফুটতে থাকবে

كَغَلْيِ الْحَمِيْمِ

ফুটন্ত পানির মত।

خُذُوْهُ فَاعْتِلُوْهُ اِلٰى سَوَآءِ الْجَحِيْمِ

(বলা হবে) ওকে ধর, অতঃপর তাকে জাহান্নামের মধ্যস্থলে টেনে নিয়ে যাও।

ثُمَّ صُبُّوْا فَوْقَ رَأْسِه مِنْ عَذَابِ الْحَمِيْمِ

তারপর তার মাথার উপর ফুটন্ত পানির আযাব ঢেলে দাও।

ذُقْ اِنَّكَ اَنْتَ الْعَزِيْزُ الْكَرِيْمُ

(বলা হবে) স্বাদ গ্রহণ কর, নিশ্চয় তুমিই সম্মানিত, অভিজাত।

اِنَّ هٰذَا مَا كُنْتُمْ بِه تَمْتَرُوْنَ

নিশ্চয় এটা তা-ই যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।

এই সকল আয়াত ছাড়াও কুরআনুল কারীমের আরো অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীসে কিয়ামতের ভয়াবহতা সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে যার সংক্ষিপ্ত সারমর্ম হলো - কিয়ামতের দিনটি এতটাই ভয়াবহ, ভয়ানক ও মারাত্মক দিন হবে যেদিন কেউ কাউকে চিনবে না। মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, নেতা-নেত্রী, পীর-মুরীদ, আলেম-ওলামা কেউ কারোর কোন কাজে আসবে না, সবাই পালিয়ে যাবে, কোন রকম সম্পর্ক রাখবে না। কোন সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না, কোন বিনিময়/ক্ষতিপূরণ নেয়া হবে না, কাউকে কোন দিক থেকেই সাহায্য করা হবে না। যার যার চিন্তায় সেই সেই ব্যস্ত থাকবে। জাহান্নামের আযাব আরো ভয়ংকর, আরো মারাত্মক যার অবস্থা বলে/লিখে বুঝানো সম্ভব নয়।

অপরাধী ও পাপীদের শাস্তি
কাফের, মুশরিক ও মুনাফেকদেরতো বটেই, কিয়ামতের দিন যারা অপরাধী ও পাপী হিসেবে উপস্থিত হবে কুরআন ও সহীহ হাদীসে তাদের জন্য অত্যন্ত মারাত্মক আযাবের কথা উল্লেখ্য করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا

আর অপরাধীদেরকে (কিয়ামতের দিন) তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। (সূরা ১৯/ মারইয়ামঃ ৮৬)

وَرَاَى الْمُجْرِمُوْنَ النَّارَ فَظَنُّوْاۤ اَنَّهُمْ مُّوَاقِعُوْهَا وَلَمْ يَجِدُوْا عَنْهَا مَصْرِفًا

আর অপরাধীরা আগুন দেখবে, অতঃপর তারা নিশ্চিতরূপে জানতে পারবে যে, নিশ্চয় তারা তাতে নিপতিত হবে এবং তারা তা থেকে বাঁচার কোন পথ খুঁজে পাবে না। (সূরা ১৮/কাহফঃ ৫৩)

بَلٰى مَنْ كَسَبَ سَيِّئَةً وَّاَحَاطَتْ بِه خَطِيْٓئَتُه فَاُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِ ۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

হ্যাঁ, যে মন্দ (পাপ) উপার্জন করবে এবং তার পাপ তাকে বেষ্টন করে নেবে, তারাই আগুনের অধিবাসী। তারা সেখানে স্থায়ী হবে। (সূরা ২/বাকারাঃ ৮১)

وَمَنْ يَّعْصِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهٗ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهٗ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ

আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করে এবং তাঁর সীমারেখা লঙ্ঘন করে, আল্লাহ তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। যেখানে সে স্থায়ী হবে। আর তার জন্যই রয়েছে অপমানজনক আযাব। (সূরা ৪/নিসাঃ ১৪)

وَالَّذِيْنَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَآءُ سَيِّئَةٍ ۢبِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌؕ مَّا لَهُمْ مِّنَ اللهِ مِنْ عَاصِمٍۚ كَاَنَّمَاۤ اُغْشِيَتْ وُجُوْهُهُمْ قِطَعًا مِّنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًاؕ اُولٰٓئِكَ اَصْحَابُ النَّارِۚ هُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

আর যারা মন্দ উপার্জন করবে, প্রতিটি মন্দের প্রতিদান হবে তারই অনুরূপ, আর লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তাদের কোন রক্ষাকারী নেই। যেন অন্ধকার রাতের এক অংশ দিয়ে তাদের চেহারাগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে। তারাই আগুনের অধিবাসী, তারা তাতে স্থায়ী হবে। (সূরা ১০/ইউনুসঃ ২৭)

وَمَنْ جَآءَ بِالسَّيِّئَةِ فَكُبَّتْ وُجُوْهُهُمْ فِي النَّارِ هَلْ تُجْزَوْنَ اِلَّا مَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

আর যারা মন্দ কাজ নিয়ে আসবে তাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে; (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা যে আমল করেছ তারই প্রতিদান তোমাদেরকে দেয়া হল। (সূরা ২৭/নামলঃ ৯০)

اِنَّ الْمُجْرِمِيْنَ فِيْ ضَلَالٍ وَّسُعُرٍ -يَوْمَ يُسْحَبُوْنَ فِي النَّارِ عَلٰى وُجُوْهِهِمْ ذُوْقُوْا مَسَّ سَقَرَ

নিশ্চয় অপরাধীরা রয়েছে ভ্রান্তপথে ও প্রজ্জ্বলিত আগুনে। সেদিন তাদেরকে উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নেয়া হবে। (বলা হবে) জাহান্নামের ছোঁয়া আস্বাদন কর। (সূরা ৫৪/ক্বামারঃ ৪৭-৪৮)

সূরা নং ১৪, সূরা ইব্রাহীম এর ৪৮ থেকে ৫২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَيْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ

যেদিন এ যমীন ভিন্ন যমীনে রূপান্তরিত হবে এবং আসমানসমূহও।

وَبَرَزُوْا لِلّٰهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

আর তারা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাযির হবে।

وَتَرَى الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ مُّقَرَّنِيْنَ فِي الْاَصْفَادِ

আর সেদিন তুমি অপরাধীদের দেখবে তারা শিকলে বাঁধা।

سَرَابِيْلُهُمْ مِّنْ قَطِرَانٍ وَّتَغْشٰى وُجُوْهَهُمُ النَّارُ

তাদের পোশাক হবে আলকাতরার এবং আগুন তাদের চেহারাসমূহকে ঢেকে ফেলবে।

لِيَجْزِيَ اللهُ كُلَّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْؕ اِنَّ اللهَ سَرِيْعُ الْحِسَابِ

এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রত্যেকের কৃতকর্মের প্রতিফল দিবেন, আল্লাহ হিসাব গ্রহণে তৎপর।

هٰذَا بَلَاغٌ لِّلنَّاسِ

এটা মানুষের জন্য পয়গাম।

وَلِيُنْذَرُوْا بِه وَلِيَعْلَمُوْاۤ اَنَّمَا هُوَ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ وَّلِيَذَّكَّرَ اُولُو الْاَلْبَابِ

আর যা দ্বারা তাদেরকে সতর্ক করা হয় এবং তারা জানতে পারে যে, তিনি কেবল এক ইলাহ, আর যাতে বুদ্ধিমান লোকেরা উপদেশ গ্রহণ করে।

সূরা নং ২০, সূরা ত্ব হা এর ৭৪ থেকে ৭৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّهٗ مَنْ يَّأْتِ رَبَّهٗ مُجْرِمًا فَاِنَّ لَهٗ جَهَنَّمَ

যে তার রবের নিকট অপরাধী অবস্থায় আসবে, তার জন্য রয়েছে জাহানণাম।

لَا يَمُوْتُ فِيْهَا وَلَا يَحْيٰى

সেখানে সে মরবেও না, বাঁচবেও না।

وَمَنْ يَّأْتِه مُؤْمِنًا قَدْ عَمِلَ الصَّالِحَاتِ فَاُولٰٓئِكَ لَهُمُ الدَّرَجَاتُ الْعُلٰى

আর যারা তাঁর নিকট আসবে মুমিন অবস্থায় সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই রয়েছে সুউচ্চ মর্যাদা।

جَنَّاتُ عَدْنٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ خَالِدِيْنَ فِيْهَا

স্থায়ী জান্নাত, যার পাদদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত, তারা সেখানে স্থায়ী হবে।

وَذٰلِكَ جَزَآءُ مَنْ تَزَكّٰى

আর এটা হল যারা পরিশুদ্ধ হয় তাদের পুরস্কার।

সূরা নং ২০, সূরা ত্ব হা এর ৯৯ থেকে ১০২ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

كَذٰلِكَ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ اَنْۢبَآءِ مَا قَدْ سَبَقَ

পূর্বে যা ঘটে গেছে তার কিছু সংবাদ এভাবেই আমি তোমার কাছে (ওহীর মাধ্যমে) বর্ণনা করি।

وَقَدْ اٰتَيْنَاكَ مِنْ لَّدُنَّا ذِكْرًا

আর আমি তোমাকে আমার পক্ষ থেকে (কুরআনের মাধ্যমে) উপদেশ দান করেছি।

مَنْ اَعْرَضَ عَنْهُ فَاِنَّهٗ يَحْمِلُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وِزْرًا

তা (কুরআন) থেকে যে বিমুখ হবে, অবশ্যই সে কিয়ামতের দিন পাপের বোঝা বহন করবে।

خَالِدِيْنَ فِيْهِؕ وَسَآءَ لَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حِمْلًا

সেখানে তারা স্থায়ী হবে এবং কিয়ামতের দিন এটা তাদের জন্য বোঝা হিসেবে কতই না মন্দ হবে।

يَوْمَ يُنْفَخُ فِي الصُّوْرِ وَنَحْشُرُ الْمُجْرِمِيْنَ يَوْمَئِذٍ زُرْقًا

যেদিন শিংগায় ফুঁক দেয়া হবে, আর সেদিন আমি অপরাধীদেরকে দৃষ্টিহীন/অন্ধ অবস্থায় সমবেত করব।

সূরা নং ২৫, সূরা ফুরকান এর ২২ থেকে ৩০ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَوْمَ يَرَوْنَ الْمَلَآئِكَةَ لَا بُشْرٰى

যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে, সেদিন অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদ থাকবে না।

يَوْمَئِذٍ لِّلْمُجْرِمِيْنَ وَيَقُوْلُوْنَ حِجْرًا مَّحْجُوْرًا

আর তারা বলবে, হায়! কোন বাধা যদি তা আটকে রাখত!

وَقَدِمْنَاۤ اِلٰى مَا عَمِلُوْا مِنْ عَمَلٍ

আর তারা যে কাজ করেছে আমি সেদিকে অগ্রসর হব।

فَجَعَلْنَاهُ هَبَآءً مَّنْثُوْرًا

অতঃপর তাকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।

اَصْحَابُ الْجَنَّةِ يَوْمَئِذٍ خَيْرٌ مُّسْتَقَرًّا وَّاَحْسَنُ مَقِيْلًا

সেদিন জান্নাতবাসীরা বাসস্থান হিসেবে উত্তম এবং বিশ্রামস্থল হিসেবে উৎকৃষ্ট অবস্থায় থাকবে।

وَيَوْمَ تَشَقَّقُ السَّمَآءُ بِالْغَمَامِ وَنُزِّلَ الْمَلَآئِكَةُ تَنْزِيْلًا

আর সেদিন মেঘমালা দ্বারা আকাশ বিদীর্ণ হবে এবং ফেরেশতাদেরকে দলে দলে অবতরণ করানো হবে।

اَلْمُلْكُ يَوْمَئِذِ الْحَقُّ لِلرَّحْمٰنِ

সেদিন প্রকৃত সার্বভৌমত্ব হবে পরম করুণাময়ের।

وَكَانَ يَوْمًا عَلَى الْكَافِرِيْنَ عَسِيْرًا

আর সেদিনটি কাফিরদের জন্য বড়ই কঠিন।

وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلٰى يَدَيْهِ يَقُوْلُ يَا لَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُوْلِ سَبِيْلًا

আর সেদিন যালিমরা নিজের হাত দুটো কামড়িয়ে বলবে, হায়! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ গ্রহণ করতাম!

يَا وَيْلَتٰى لَيْتَنِيْ لَمْ اَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيْلًا

হায় আমার দুর্ভোগ! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম!

لَقَدْ اَضَلَّنِيْ عَنِ الذِّكْرِ بَعْدَ اِذْ جَآءَنِيْ

অবশ্যই সে তো আমাকে উপদেশবাণী (কুরআন) থেকে বিভ্রান্ত করেছিল, আমার কাছে তা আসার পর।

وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْاِنْسَانِ خَذُوْلًا

আর শয়তান তো মানুষের জন্য চরম প্রতারক।

وَقَالَ الرَّسُوْلُ يَا رَبِّ اِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوْا هٰذَا الْقُرْاٰنَ مَهْجُوْرًا

আর রাসূল বলবে, হে আমার রব! নিশ্চয় আমার জাতি এই কুরআনকে পরিত্যাগ করেছে।

وَاَمَّا الَّذِيْنَ فَسَقُوْا فَمَأْوَاهُمُ النَّارُ كُلَّمَاۤ اَرَادُوْاۤ اَنْ يَّخْرُجُوْا مِنْهَاۤ اُعِيْدُوْا فِيْهَا وَقِيْلَ لَهُمْ ذُوْقُوْا عَذَابَ النَّارِ الَّذِيْ كُنْتُمْ بِه تُكَذِّبُوْنَ

আর যারা পাপকাজ করে, তাদের বাসস্থান হবে আগুন, যখনই তারা তা থেকে বের হতে চাইবে, তাদেরকে তাতেই ফিরিয়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে বলা হবে, তোমরা আগুনের শাস্তি ভোগ কর, যাকে তোমরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে। (সূরা ৩২/আস-সিজদাহঃ ২০)

مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَزِيْنَتَهَا نُوَفِّ اِلَيْهِمْ اَعْمَالَهُمْ فِيْهَا وَهُمْ فِيْهَا لَا يُبْخَسُوْنَ -اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ لَيْسَ لَهُمْ فِي الْاٰخِرَةِ اِلَّا النَّارُؗ وَحَبِطَ مَا صَنَعُوْا فِيْهَا وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوْا يَعْمَلُوْنَ

যে ব্যক্তি দুনিয়ার জীবন ও তার জৌলুস কামনা করে, আমি সেখানে তাদেরকে তাদের আমলের ফল পুরোপুরি দিয়ে দেই এবং সেখানে তাদেরকে কম দেয়া হবে না। এরাই তারা, আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া আর কিছুই নেই এবং তারা সেখানে যা করে তা বরবাদ হয়ে যাবে আর তারা যা করত, তা সম্পূর্ণ বাতিল। (সূরা ১১/হুদঃ ১৫-১৬)

وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِيْنُهٗ فَاُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ خَسِرُوْاۤ اَنْفُسَهُمْ فِيْ جَهَنَّمَ خَالِدُوْنَ -تَلْفَحُ وُجُوْهَهُمُ النَّارُ وَهُمْ فِيْهَا كَالِحُوْنَ

আর যাদের (নেকীর) পাল্লা হালকা হবে তারাই নিজেদের ক্ষতি করল, জাহান্নামে তারা হবে স্থায়ী। আগুন তাদের চেহারা দগ্ধ করবে, সেখানে তারা হবে বীভৎস চেহারা বিশিষ্ট। (সূরা ২৩/মুমিনুনঃ ১০৩-১০৪)

আরো অনেক আয়াত ও সহীহ হাদীসে অপরাধী ও পাপীদের জন্য ভয়ংকর ও মারাত্মক শাস্তি বা আযাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে যা থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো মুত্তাকী হওয়া।

মুত্তাকীদের পুরস্কার
কিয়ামতের সেই ভয়াবহ কঠিন দিনে আল্লাহ তার মুত্তাকী বানদাদের জন্য অনেক পুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অর্থাৎ আল্লাহ সেদিন তার মুত্তাকী বান্দাদেরকে অনেক পুরস্কারে ভূষিত করবেন এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআন মাজীদে বলেন,

يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِيْنَ اِلَى الرَّحْمٰنِ وَفْدًا

সেদিন মুত্তাকী বান্দাদেরকে দয়াময়ের কাছে সম্মানিত মেহমান হিসেবে একত্রিত করা হবে।

وَنَسُوْقُ الْمُجْرِمِيْنَ اِلٰى جَهَنَّمَ وِرْدًا

আর পাপীদেরকে পিপাসিত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। (সূরা১৯/মারিয়ামঃ ৮৫-৮৬)

সূরা নং ২৬, সূরা শু’আরা এর ৮৮-৯১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَوْمَ لَا يَنْفَعُ مَالٌ وَّلَا بَنُوْنَ

যেদিন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবে না।

اِلَّا مَنْ اَتَى اللهَ بِقَلْبٍ سَلِيْمٍ

তবে যে আল্লাহর কাছে আসবে সুস্থ্য অন্তর নিয়ে।

وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ

আর মুত্তাকীদের জন্য জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে

وَبُرِّزَتِ الْجَحِيْمُ لِلْغَاوِيْنَ

এবং পথভ্রষ্টদের জন্য জাহান্নামকে উন্মোচিত করা হবে।

সূরা নং ৪৩, সূরা যুখরুফ এর ৬১-৭৩ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

هَلْ يَنْظُرُوْنَ اِلَّا السَّاعَةَ اَنْ تَأْتِيَهُمْ بَغْتَةً وَّهُمْ لَا يَشْعُرُوْنَ

তারাতো তাদের অজ্ঞাতসারে অকস্মাৎ কিয়ামত আসার অপেক্ষা করছে।

اَلْاَخِلَّآءُ يَوْمَئِذٍ ۢبَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ اِلَّا الْمُتَّقِيْنَ

সেদিন বন্ধুরা একে অন্যের শত্রু হয়ে যাবে, মুত্তাকীরা ব্যতীত।

يَا عِبَادِ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ وَلَاۤ اَنْتُمْ تَحْزَنُوْنَ (৬৮) اَلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا بِاٰيَاتِنَا وَكَانُوْا مُسْلِمِيْنَ

(বলা হবে) হে আমার বান্দাগণ! আজ তোমাদের (মুত্তাকীদের) কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিতও হবে না যারা আমার আয়াতে ঈমান এনেছিলে এবং যারা ছিল মুসলিম।

اُدْخُلُوا الْجَنَّةَ اَنْتُمْ وَاَزْوَاجُكُمْ تُحْبَرُوْنَ

তোমরা সস্ত্রীক সানন্দে জান্নাতে প্রবেশ কর।

يُطَافُ عَلَيْهِمْ بِصِحَافٍ مِّنْ ذَهَبٍ وَّاَكْوَابٍ وَّفِيْهَا مَا تَشْتَهِيْهِ الْاَنْفُسُ وَتَلَذُّ الْاَعْيُنُ وَاَنْتُمْ فِيْهَا خَالِدُوْنَ

স্বর্ণখচিত থালা ও পানপাত্র নিয়ে তাদেরকে প্রদক্ষিণ করা হবে, সেখানে তাদের মন যা চায় আর যাতে চোখ তৃপ্ত হয় তা-ই থাকবে এবং সেখানে তোমরা হবে স্থায়ী।

وَتِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْۤ اُوْرِثْتُمُوْهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

আর এটিই সেই জান্নাত, নিজেদের আমলের ফলস্বরূপ তোমাদেরকে এর উত্তরাধিকারী করে দেয়া হয়েছে।

لَكُمْ فِيْهَا فَاكِهَةٌ كَثِيْرَةٌ مِّنْهَا تَأْكُلُوْنَ

সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে অনেক ফলমূল, যা থেকে তোমরা খাবে।

সূরা নং ৪৪, সূরা দুখান এর ৫১ থেকে ৫৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ مَقَامٍ اَمِيْنٍ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে।

يَلْبَسُوْنَ مِنْ سُنْدُسٍ وَّاِسْتَبْرَقٍ مُّتَقَابِلِيْنَ

তারা পরিধান করবে পাতলা ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং বসবে মুখোমুখী হয়ে।

كَذٰلِكَ وَزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ

এরূপই ঘটবে, আর আমি তাদেরকে বিয়ে দেব ডাগর নয়না হুরদের সাথে।

يَدْعُوْنَ فِيْهَا بِكُلِّ فَاكِهَةٍ اٰمِنِيْنَ

সেখানে তারা প্রশান্তচিত্তে সকল প্রকারের ফলমূল আনতে বলবে।

لَا يَذُوْقُوْنَ فِيْهَا الْمَوْتَ اِلَّا الْمَوْتَةَ الْاُوْلٰى

প্রথম মৃত্যুর পর সেখানে তারা আর মৃত্যুবরণ করবে না।

وَوَقَاهُمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ

আর তিনি তাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করবেন।

فَضْلًا مِّنْ رَّبِّكَ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

তোমার রবের অনুগ্রহস্বরূপ, এটাই তো মহা সাফল্য।

فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ

অতঃপর আমিতো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে তারা উপদেশ গ্রহণ করে।

فَارْتَقِبْ اِنَّهُمْ مُّرْتَقِبُوْنَ

অতএব তুমি অপেক্ষা কর, তারাও অপেক্ষাকারী।

সূরা নং ৫০, সূরা ক্বাফ এর ৩০-৩৫ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

يَوْمَ نَقُوْلُ لِجَهَنَّمَ هَلِ امْتَلَأْتِ

সেদিন আমি জাহান্নামকে বলব, তুমি কি পরিপূর্ণ হয়ে গেছ?

وَتَقُوْلُ هَلْ مِنْ مَّزِيْدٍ

আর সে বলবে, আরো আছে কি?

وَاُزْلِفَتِ الْجَنَّةُ لِلْمُتَّقِيْنَ غَيْرَ بَعِيْدٍ

আর জান্নাতকে মুত্তাকীদের অদূরে, কাছেই আনা হবে।

هٰذَا مَا تُوْعَدُوْنَ لِكُلِّ اَوَّابٍ حَفِيْظٍ مَنْ خَشِيَ الرَّحْمٰنَ بِالْغَيْبِ وَجَآءَ بِقَلْبٍ مُّنِيْبٍ

এটাই, যার ওয়াদা তোমাদেরকে দেয়া হয়েছিল, প্রত্যেক আল্লাহ অভিমুখী অধিক সংরক্ষণশীলদের জন্য, যে ব্যক্তি দয়াময়কে না দেখেই ভয় করত এবং বিনীত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হবে।

اُدْخُلُوْهَا بِسَلَامٍ ذٰلِكَ يَوْمُ الْخُلُوْدِ لَهُمْ مَّا يَشَآءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ

(বলা হবে) তোমরা তাতে শান্তির সাথে প্রবেশ কর, এটাই স্থায়িত্বের দিন। তারা যা চাইবে, সেখানে তাদের জন্য তাই থাকবে এবং আমার কাছে রয়েছে আরো অধিক।

وَاِنْ مِّنْكُمْ اِلَّا وَارِدُهَاۚ كَانَ عَلٰى رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا

আপনার রবের অনিবার্য সিদ্ধান্ত প্রত্যেককেই সেদিন সিরাতের কাছে যেতেই হবে।

ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَّنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا

আমি আমার মুত্তাকী বান্দাদেরকে উদ্ধার করব এবং অপরাধীদেরকে নতজানু অবস্থায় (জাহান্নামে) ফেলে দিব। (সূরা ১৯/ মারইয়ামঃ ৭১-৭২)

تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِيْ نُوْرِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَنْ كَانَ تَقِيًّا

এই সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী করে দিব আমার বান্দাদের মধ্যে যারা মুত্তাকী। (সূরা১৯/মারিয়ামঃ ৬৩)।

وَسَارِعُوْاۤ اِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَّبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَاوَاتُ وَالْاَرْضُ اُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِيْنَ

তোমরা (প্রতিযোগিতা করে) দৌড়ে আস তোমাদের রবের ক্ষমা আর সেই বিশাল জান্নাতের দিকে যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। (সূরা৩/আলে ইমরানঃ ১৩৩)

সূরা নং ১৫, সূরা আল হিজর এর ৪৫-৪৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও ঝর্ণাধারায়।

اُدْخُلُوْهَا بِسَلَامٍ اٰمِنِيْنَ

(তাদেরকে বলা হবে) তোমরা তাতে প্রবেশ কর শান্তির সাথে নিরাপদে।

وَنَزَعْنَا مَا فِيْ صُدُوْرِهِمْ مِّنْ غِلٍّ اِخْوَانًا عَلٰى سُرُرٍ مُّتَقَابِلِيْنَ

আর আমি তাদের অন্তর থেকে হিংসা বিদ্বেষ বের করে দেব, তারা সেখানে সুন্দর আসনে ভাই ভাই হয়ে মুখোমুখি বসবে।

لَا يَمَسُّهُمْ فِيْهَا نَصَبٌ وَّمَا هُمْ مِّنْهَا بِمُخْرَجِيْنَ

সেখানে তাদেরকে কোন রকম ক্লান্তি স্পর্শ করবে না এবং তারা সেখান থেকে বহিষ্কৃতও হবে না।

نَبِّئْ عِبَادِيْۤ اَنِّيْۤ اَنَا الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

আমার বান্দাদের জানিয়ে দাও যে, নিশ্চয় আমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।



সূরা নং ৫১, সূরা আয যারিয়াত এর ১৫-১৯ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতসমূহে ও ঝর্ণাধারায়,

اٰخِذِيْنَ مَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْ

তাদের রব তাদের যা দিবেন তা তারা খুশি মনে গ্রহণ করবে।

اِنَّهُمْ كَانُوْا قَبْلَ ذٰلِكَ مُحْسِنِيْنَ

ইতঃপূর্বে এরাই ছিল সৎকর্মশীল।

كَانُوْا قَلِيْلًا مِّنَ اللَّيْلِ مَا يَهْجَعُوْنَ وَبِالْاَسْحَارِ هُمْ يَسْتَغْفِرُوْنَ

রাতের সামান্য অংশই এরা ঘুমিয়ে কাটাতো আর রাতের শেষ প্রহরে এরা ক্ষমা প্রার্থনা করত।

وَفِيْۤ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّآئِلِ وَالْمَحْرُوْمِ

আর (খুশি মনে বিশ্বাস করত যে) তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের হক রয়েছে।

এই আয়াতগুলিতে মহান আল্লাহ তা‘আলা মুত্তাকীদের পুরস্কারের পাশাপাশি তাদের কয়েকটি গুণাবলীও বর্ণনা করেছেন। আর তা হলো-

(১) তারা সৎকর্মশীল অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিরকমুক্ত বিশুদ্ধ ঈমান আনার পাশাপাশি আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর প্রদর্শিত ও দিক নির্দেশনা অনুযায়ী নেক কাজ করা।

(২) রাতে বেশি না ঘুমিয়ে অর্ধ রাতের পর থেকে সালাত (তাহাজ্জুদ) আদায়, কুরআন পাঠ করা ইত্যাদি শেষে শেষ রাতে আন্তরিকভাবে দু‘আ প্রার্থনা ও তওবা এস্তেগফার করা।

(৩) উত্তরাধিকারীদের যথাযথভাবে ধন-সম্পদ দিয়ে দেয়া ও গরিব, এতিম, মিসকিনদেরকে দান করা।

সূরা নং ৫২, সূরা তূর এর ১৭-২৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّنَعِيْمٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা (থাকবে) জান্নাতে ও প্রচুর নিয়ামতের মধ্যে।

فَاكِهِيْنَ بِمَاۤ اٰتَاهُمْ رَبُّهُمْ وَوَقَاهُمْ رَبُّهُمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ

তাদের রব তাদেরকে যা দিয়েছেন তা উপভোগ করবে, আর তাদের রব তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের আযাব থেকে বাঁচাবেন।

كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

(বলা হবে) তোমরা তৃপ্তি সহকারে খাও ও পান কর, তোমরা যে আমল করতে তার বিনিময়ে।

مُتَّكِئِيْنَ عَلٰى سُرُرٍ مَّصْفُوْفَةٍ وَّزَوَّجْنَاهُمْ بِحُوْرٍ عِيْنٍ

সারিবদ্ধ পালঙ্কে তারা হেলান দিয়ে বসবে, আর আমি তাদেরকে ডাগরচোখা হুরদের সাথে মিলিয়ে দেব।

وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَاتَّبَعَتْهُمْ ذُرِّيَّتُهُمْ بِاِيْمَانٍ اَلْحَقْنَا بِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَمَاۤ اَلَتْنَاهُمْ مِّنْ عَمَلِهِمْ مِّنْ شَيْءٍ

আর যারা ঈমান আনে এবং তাদের সন্তান-সন্ততি ঈমানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আমি তাদের সাথে তাদের সন্তানদের মিলন ঘটাব এবং তাদের কর্মের কোন অংশই কমাব না।

كُلُّ امْرِئٍ ۢبِمَا كَسَبَ رَهِيْنٌ

প্রত্যেক ব্যক্তি তার কামাইয়ের ব্যাপারে দায়ী থাকবে।

وَاَمْدَدْنَاهُمْ بِفَاكِهَةٍ وَّلَحْمٍ مِّمَّا يَشْتَهُوْنَ

আর আমি তাদেরকে অতিরিক্ত ফলমূল ও গোশত দেব যা তারা কামনা করবে।

يَتَنَازَعُوْنَ فِيْهَا كَأْسًا لَّا لَغْوٌ فِيْهَا وَلَا تَأْثِيْمٌ

তারা পরস্পরের মধ্যে পানপাত্র বিনিময় করবে; সেখানে থাকবে না কোন বেহুদা কথাবার্তা এবং কোন পাপকাজ।

وَيَطُوْفُ عَلَيْهِمْ غِلْمَانٌ لَّهُمْ كَاَنَّهُمْ لُؤْلُؤٌ مَّكْنُوْنٌ

আর তাদের সেবায় চারপাশে ঘুরবে বালকদল, তারা যেন সুরক্ষিত মণিমুক্তা।

وَاَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلٰى بَعْضٍ يَّتَسَآءَلُوْنَ

আর তারা একে অপরের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।

قَالُوْاۤ اِنَّا كُنَّا قَبْلُ فِيْۤ اَهْلِنَا مُشْفِقِيْنَ

তারা বলবে, পূর্বে (দুনিয়াতে) আমরা পরিবারের মধ্যে শঙ্কিত ছিলাম।

فَمَنَّ اللهُ عَلَيْنَا وَوَقَانَا عَذَابَ السَّمُوْمِ

অতঃপর আল্লাহ আমাদের প্রতি দয়া করেছেন এবং আগুনের আযাব থেকে আমাদেরকে রক্ষা করেছেন।

اِنَّا كُنَّا مِنْ قَبْلُ نَدْعُوْهُ اِنَّهٗ هُوَ الْبَرُّ الرَّحِيْمُ

নিশ্চয় পূর্বে আমরা তাঁকে ডাকতাম, নিশ্চয় তিনি ইহসানকারী, পরম দয়ালু।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ جَنَّاتٍ وَّنَهَرٍ - فِيْ مَقْعَدِ صِدْقٍ عِنْدَ مَلِيْكٍ مُّقْتَدِرٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে বাগ-বাগিচা ও ঝর্ণাধারার মধ্যে। যথাযোগ্য আসনে, সর্বশক্তিমান মহাঅধিপতির নিকটে। (সূরা ৫৪/ক্বামারঃ ৫৪-৫৫)

اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ عِنْدَ رَبِّهِمْ جَنَّاتِ النَّعِيْم

নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য তাদের রবের কাছে রয়েছে নিয়ামতপূর্ণ জান্নাত।

(সূরা ৬৮/ক্বলামঃ ৩৪)



সূরা নং ৭৭, সূরা মুরসালাত এর ৪১-৪৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِيْ ظِلَالٍ وَّعُيُوْنٍ

নিশ্চয় মুত্তাকীরা থাকবে ছায়া ও ঝর্ণাবহুল স্থানে,

وَفَوَاكِهَ مِمَّا يَشْتَهُوْنَ

আর নিজেদের বাসনানুযায়ী ফলমূল-এর মধ্যে।

كُلُوْا وَاشْرَبُوْا هَنِيْٓئًا ۢبِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ

(বলা হবে) তোমরা যে আমল করতে তার প্রতিদানস্বরূপ তৃপ্তির সাথে পানাহার কর।

اِنَّا كَذٰلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِيْنَ

সৎকর্মশীলদেরকে আমি এমনই প্রতিদান দিয়ে থাকি।

সূরা নং ৭৮, সূরা নাবা এর ৩১-৩৬ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ لِلْمُتَّقِيْنَ مَفَازًا

নিশ্চয় মুত্তাকীদের জন্য রয়েছে সফলতা।

حَدَآئِقَ وَاَعْنَابًا

উদ্যানসমূহ ও আঙ্গুরসমূহ।

وَكَوَاعِبَ اَتْرَابًا وَكَأْسًا دِهَاقًا

আর সমবয়স্কা যৌবনা তরুণী আর পরিপূর্ণ পানপাত্র।

لَا يَسْمَعُوْنَ فِيْهَا لَغْوًا وَّلَا كِذَّابًا

তারা সেখানে কোন অসার ও মিথ্যা কথা শুনবে না।

جَزَآءً مِّنْ رَّبِّكَ عَطَآءً حِسَابًا

তোমার রবের পক্ষ থেকে প্রতিফল, যথোচিত দানস্বরূপ।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

مَثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِيْ وُعِدَ الْمُتَّقُوْنَ فِيْهَاۤ اَنْهَارٌ مِّنْ مَّآءٍ غَيْرِ اٰسِنٍ وَّاَنْهَارٌ مِّنْ لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهٗ وَاَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِيْنَ وَاَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى وَّلَهُمْ فِيْهَا مِنْ كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّنْ رَّبِّهِمْ كَمَنْ هُوَ خَالِدٌ فِي النَّارِ وَسُقُوْا مَآءً حَمِيْمًا فَقَطَّعَ اَمْعَآءَهُمْ

মুত্তাকীদের জন্য যে জান্নাত প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার উদাহরণ হলো, সেখানে আছে নির্মল (জীবাণুমুক্ত) বিশুদ্ধ পানির নহর, স্বাদ অপরিবর্তনীয় দুধের নহর, পানকারীদের জন্য সুস্বাদু শরবতের নহর, পরিশোধিত মধুর নহর। আরও আছে সব ধরনের ফলমূল ও তাদের রবের পক্ষ থেকে ক্ষমা (এসব কি ঐ রকম) যাকে পান করতে দেয়া হবে উত্তপ্ত গরম পানি আর সে চিরকাল থাকবে জাহান্নামের আগুনে। (সূরা মুহাম্মদ/৪৭ঃ ১৫)

وَقِيْلَ لِلَّذِيْنَ اتَّقَوْا مَاذَاۤ اَنْزَلَ رَبُّكُمْؕ قَالُوْا خَيْرًاؕ لِّلَّذِيْنَ اَحْسَنُوْا فِيْ هٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةٌؕ وَّلَدَارُ الْاٰخِرَةِ خَيْرٌؕ وَّلَنِعْمَ دَارُ الْمُتَّقِيْنَ

আর যারা তাকওয়া (আল্লাহভীতি/সচেতনতা) অবলম্বন করেছে, তাদের বলা হল, তোমাদের রব কী নাযিল করেছেন? তারা বলল, মহাকল্যাণ। যারা এই দুনিয়ায় উত্তম কাজ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে পুণ্য। আর নিশ্চয় আখিরাতের আবাসই উত্তম এবং মুত্তাকীদের বাসস্থান অবশ্যই চমৎকার।

(সূরা ১৬/নাহলঃ ৩০)

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَّدْخُلُوْنَهَا تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ لَهُمْ فِيْهَا مَا يَشَآءُوْنَؕ كَذٰلِكَ يَجْزِي اللهُ الْمُتَّقِيْنَ

স্থায়ী জান্নাতসমূহ যাতে তারা প্রবেশ করবে, যার তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকবে নহরসমূহ। তারা যা চাইবে, তাদের জন্য তার মধ্যে তাই থাকবে। এভাবেই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে পুরস্কার প্রদান করেন।

(সূরা ১৬/নাহলঃ ৩১)

এছাড়াও আরো অনেক আয়াতের শেষের অংশবিশেষসমূহে আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ

নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদেরকে ভালোবাসেন করেন। (সূরা ৯/তাওবাঃ ৭)

اِنَّ اللهَ مَعَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَالَّذِيْنَ هُمْ مُّحْسِنُوْنَ

আল্লাহ তাদেরই সঙ্গে আছেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মপরায়ণ। (সূরা ১৬/নাহলঃ ১২৮)

وَاَنْجَيْنَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَكَانُوْا يَتَّقُوْنَ

অতঃপর যারা মুমিন ও মুত্তাক্বী ছিল, তাদেরকে আমি উদ্ধার করেছি। সূরা নামল- ৫৩

وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مَخْرَجًا

যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার (সংকট থেকে বের হওয়ার) পথ বের করে দেন। (সূরা ৬৫/তবালাকঃ ২)

وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَّهٗ مِنْ اَمْرِهٖ يُسْرًا

যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার কাজকর্ম সহজ করে দেন।

(সূরা ৬৫/ত্বালাকঃ ৪)

وَمَنْ يَّتَّقِ اللهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهٖ وَيُعْظِمْ لَهٗۤ اَجْرًا

যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার পাপ মোচন করবেন এবং তাকে মহাপুরস্কারে ভূষিত করবেন। (সূরা ৬৫/ত্বালাকঃ ৫)

اِنَّ الْعَاقِبَةَ لِلْمُتَّقِيْنَ

নিশ্চয় শুভ পরিণাম মুত্তাক্বীদের জন্য। (সূরা ১১/হুদঃ ৪৯)

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ

যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হতে সাবধান থাকে তারাই সফলকাম। (সূরা ২৪/নূরঃ ৫২)

اِنَّ الْمُتَّقِيْنَ فِىْ جَنَّاتٍ وَّعُيُوْنٍ

সেদিন মুত্তাক্বীরা জান্নাত ও ঝর্ণার মধ্যে থাকবে। (সূরা ৫১/যারিয়াতঃ ১৫)

লক্ষ্য করুন! অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আল্লাহ (ইন্না)- নিশ্চয়/অবশ্যই শব্দ ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ এসব পুরস্কার পাওয়ার ব্যাপারে নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন যাতে কোন রকম সন্দেহ নাই।

কুরআন ও সহীহ হাদীসে মুত্তাকীদের জন্য এরকম আরো অনেক পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। প্রশ্ন হলো যে, আমরা মুত্তাকী হব কিভাবে বা একজন ব্যক্তি মুত্তাকীদের এতসব পুরস্কার জানার পর মুত্তাকী হতে চাইলে সে কিভাবে মুত্তাকী হবে?

মুত্তাকী হয়ে জান্নাত লাভের উপায়
১. জ্ঞান অর্জন।

জ্ঞান অর্জন করা ছাড়া কোন কাজই করা যায় না, কোন কিছুই হওয়া যায় না। এজন্য ইমাম বুখারী সহীহ বুখারীতে একটা অধ্যায় এনেছেন ‘‘কথা ও কাজের পূর্বে জ্ঞান’’ এবং এই জ্ঞান অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান। মুত্তাকী হতে হলে একজন ব্যক্তিকে প্রথমেই কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জন করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন,

يَرْفَعِ اللهُ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا مِنْكُمْ وَالَّذِيْنَ اُوْتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ

তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং যাদেরকে জ্ঞান দান করা হয়েছে, আল্লাহ তাদের মর্যাদা আরো উন্নত করে দেবেন। (সূরা ৫৮/মুজাদালাহঃ ১১)

قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَّذِيْنَ يَعْلَمُوْنَ وَالَّذِيْنَ لَا يَعْلَمُوْنَ اِنَّمَا يَتَذَكَّرُ اُولُو الْاَلْبَابِ

বল, যারা জানে আর যারা জানে না, তারা কি সমান হতে পারে? শুধুমাত্র জ্ঞানী লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে থাকে। (সূরা ৪৯/যুমারঃ ৯)

كَذٰلِكَ اِنَّمَا يَخْشَى اللهَ مِنْ عِبَادِهِ الْعُلَمَآءُ

নিশ্চয় আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানী ব্যক্তিরাই তাঁকে ভয় করে থাকে। (সূরা ৩৫/ ফাতিরঃ ২৮)

তবে সর্বপ্রথম কুরআনের জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের প্রথম দিকে বলেছেন,

ذٰلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَۚ فِيْهِۚ هُدًى لِّلْمُتَّقِيْنَ

এটা সেই কিতাব (আল কুরআন), যাতে কোন সন্দেহ নেই; এটা মুত্তাকীদের জন্য পথ প্রদর্শক। (সূরা২/বাকারাঃ২)

অন্যান্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

هٰذَا بَيَانٌ لِّلنَّاسِ وَهُدًى وَّمَوْعِظَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ

এটা (আল কুরআন) মানুষের জন্য স্পষ্ট বর্ণনা ও হিদায়াত এবং মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ। (সূরা ৩/আলে ইমরানঃ ১৩৮)

فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِه قَوْمًا لُّدًّا

আর আমি তো তোমার ভাষায় এটা (আল কুরআন)কে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং তর্কপ্রিয় জাতিদেরকে এর দ্বারা সতর্ক করতে পার। (সূরা ১৯/মারিয়ামঃ ৯৭)

وَلَقَدْ اَنْزَلْنَاۤ اِلَيْكُمْ اٰيَاتٍ مُّبَيِّنَاتٍ وَّمَثَلًا مِّنَ الَّذِيْنَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِيْنَ

আর নিশ্চয় আমি তোমাদের কাছে নাযিল করেছি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ এবং তোমাদের পূর্বে যারা চলে গেছে তাদের দৃষ্টান্ত ও মুত্তাকীদের জন্য উপদেশ।

(সূরা ২৪/নূরঃ ৩৪)

কুরআনুল কারীমের এসব আয়াত থেকে আমরা এটাই বুঝতে পারি যে- কোন ব্যক্তি, কোন মুমিন, কোন মুসলিমকে মুত্তাকী হতে হলে প্রথমেই আল্লাহ প্রদত্ত উপদেশমালা সম্বলিত সহায়িকা (Guideline/Syllabus) মহাগ্রন্থ আল কুরআনুল মাজীদ বুঝে বুঝে পড়তে হবে। একজন সার্জিক্যাল ডাক্তার সার্জিক্যালের বই যেভাবে বুঝে বুঝে পড়েন, একজন ইঞ্জিনিয়ার তার ইঞ্জিনিয়ারিং বই বা যে কোন পেশায় সফল হওয়া ব্যক্তিকে তার ব্যবহারিক পাঠ্যবই যেভাবে বুঝে বুঝে পড়তে হয়, একজন ব্যক্তিকে মুত্তাকী হতে হলে মহাগ্রন্থ আল কুরআন সেভাবে এমনকি তার চেয়েও ভালভাবে বুঝে বুঝে পড়তে হবে। পড়ার মাধ্যমে এই গ্রন্থের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আল কুরআনের আদেশ নিষেধ ভালভাবে মেনে চলার জন্য সহীহ হাদীসের কিতাবগুলোও বুঝে বুঝে পড়তে হবে। এভাবেও বলা যেতে পারে যে, একজন ডাক্তারের যেমন তার সিলেবাসের বই না বুঝে পড়ে ডাক্তার হওয়া সম্ভব নয়, তেমনি একজন ব্যক্তিকে আল কুরআনুল হাকীম না বুঝে পড়লে তার পক্ষে মুত্তাকী হওয়া সম্ভব নয়। বরং কেউ যদি কোন ব্যক্তি সম্পর্কে বলে যে, লোকটা মুত্তাকী কিন্তু সে কুরআন বুঝে না বা কুরআন বুঝে বুঝে পড়ে না, তাহলে সেটা কেবল হাস্যকর বলেই বিবেচিত হবে।

২. শিরকমুক্ত ঈমান ও বিশুদ্ধ আকীদার অধিকারী হওয়া।

কুরআন ও সহীহ হাদীসের কিতাব বুঝে বুঝে পড়ার মাধ্যমে ঈমান ও আকীদা পরিশুদ্ধ করতে হবে। শিরকমুক্ত ঈমানের অধিকারী হতে হবে। নির্ভরযোগ্য কিতাব এ ব্যাপারে আপনার সহায়ক হতে পারে। ‘ইমাম পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত ‘আকীদাহ’, ‘শিরক’ ও ‘যেসব কারণে ঈমান ক্ষতিগ্রস্থ হয়’ কিতাবসমূহ পড়া যেতে পারে।

৩. বিশুদ্ধ আমল করা।

কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে শিরকমুক্ত ঈমান ও বিশুদ্ধ আকীদার সাথে সাথে একজন ব্যক্তিকে মহান আল্লাহর ফরজ ইবাদতগুলো নিষ্ঠার সাথে, সময়মত ও রাসূল ﷺ এর প্রদর্শিত পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে। যেমন প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়, নেসাব পরিমাণ মালের অধিকারী হলে যাকাত প্রদান, রমজান মাসে সিয়াম পালন, হজ্জ করার সামর্থ থাকলে হজ্জ করা, পর্দা করা, পিতা-মাতার সেবা করা ইত্যাদি। এসব প্রতিটি বিষয়েই কুরআন-সুন্নাহ থেকে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে ‘ইমাম পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক কিতাবসমূহ পাঠ করা যেতে পারে।

৪. হারাম ছেড়ে দেয়া ও হালাল উপার্জন করা।

মুত্তাকী হওয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হলো হালাল ভক্ষণ। হারাম উপার্জন ও হারাম কাজ ছেড়ে দিতে হবে। হালাল উপার্জনের মাধ্যমে হালাল ভক্ষণ এবং হালাল কাজ কর্মে ব্যস্ত থাকতে হবে।

৫. গুনাহের কাজ ছেড়ে দেয়া, নেকীর কাজে অগ্রগামী হওয়া।

মুত্তাকী হওয়ার জন্য আরেকটি জরুরী বিষয় হলো গুনাহ তথা পাপের কাজ ছেড়ে দিতে হবে। খাটিভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। নেকীর কাজে অগ্রগামী হতে হবে। নেকীর কাজগুলো অবশ্যই কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত ও রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে হতে হবে।

৬. প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করা।

প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল অবস্থায় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। সব সময় মনে রাখতে হবে, আমি যা কিছু করছি, যা কিছু বলছি সকল অবস্থায় আল্লাহ আমাকে দেখছেন। এ বিষয়ে মুত্তাকীদের জন্য কুরআনে বর্ণিত আয়াতসমূহ অধ্যায়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

৭. নিয়মিত যিকির-আযকার করা, তওবা-ইস্তেগফার করা ও বিশুদ্ধ দু’আ-দরুদ পড়া।

সর্বদা রাসূল ﷺ এর দেখানো ও শেখানো পদ্ধতিতে যিকির করতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রচলিত, বিভিন্ন পীরের দেয়া পদ্ধতি, দলীলবিহীন পদ্ধতি, হালকায় জিকির ইত্যাদি বিদআতী যিকির পরিহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিদআত করলে নেকীতো হবেই না, বরং গুনাহ হবে। মুত্তাকী হওয়ার পরিবর্তে সে ব্যক্তি পাপী বলে সাব্যস্ত হবে। মুত্তাকী হওয়ার জন্য প্রতিদিন বেশি বেশি তওবা-এস্তেগফার করতে হবে। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় উল্লেখিত বিশুদ্ধ দু’আ-মুনাজাত করতে হবে। এক্ষেত্রেও দলীলবিহীন পদ্ধতি, মনগড়া পদ্ধতি, পীর-বুযুর্গ ও মুরুববীদের পদ্ধতি, বিদআতী পদ্ধতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে।

৮. নফল ইবাদত করা।

ফরজ ও সুন্নত ইবাদতসমূহ নিষ্ঠার সাথে সম্পন্ন করার পাশাপাশি কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত নফল ইবাদত তথা নফল সালাত, নফল সিয়াম পালন করতে হবে এবং নফল দান-সদকা করতে হবে। এক্ষেত্রেও দলীলবিহীন আমল পরিত্যাগ করতে হবে।

৯. বাইরে কম বের হওয়া, পরিবারকে সময় দেয়া।

চারদিকে অশ্লীলতা, পাপাচার ও নেশা ছড়িয়ে পড়েছে। চাকচিক্যতা আর কথার ফুলজুড়িতে শয়তান নিজে এবং তার অনুগত মানুষদের দ্বারা বাহারী সৌন্দর্য প্রদর্শন করে মানুষদেরকে পাপের দিকে টেনে নিচ্ছে। এমতাবস্থায় যত কম বাইরে বের হওয়া যায় ততই মঙ্গল। বরং পরিবারকে সময় দিন। এটাই রাসূল ﷺ এর সুন্নত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল ﷺ ঘরের কাজ করতেন, পরিবারকে সময় দিতেন, আযান হলে সালাতের জন্য চলে যেতেন।

১০. সাধ্যানুযায়ী নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে দাওয়াতী কাজ করা।

সাধ্যানুযায়ী নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশীদের মধ্যে কুরআন-সুন্নাহর দলীল ভিত্তিক দাওয়াতী কাজ করতে হবে। এ কাজ অবশ্যই রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে হতে হবে। দলীলবিহীন এবং ব্যক্তিবিশেষের তৈরি পদ্ধতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশী, ঘর-সংসার, পরিবার, চাকুরী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা ছেড়ে দূরে গিয়ে জাল জয়ীফ হাদীস আর বুযুর্গ মুরুববীদের মিথ্যা কাহিনী ও স্বপ্নের দাওয়াত দেয়া পরিত্যাগ করতে হবে। যখন যেখানে যেভাবে থাকেন সেখানেই আপনার আশেপাশের লোকজনদের মাঝে কুরআন ও সহীহ হাদীসের দলীল উল্লেখ করে দাওয়াত দিতে হবে। এজন্য প্রথমে নিজে কুরআন ও সহীহ হাদীস বুঝে বুঝে পড়ে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। যাচাই বাছাই না করে এবং সহীহ হাদীস অনুযায়ী দাওয়াত না দিলে, সওয়াব না হয়ে বরং গুনাহ হবে।

১১. আত্মশুদ্ধি অর্জন ও আত্মসমালোচনা করতে হবে।

মুত্তাকী হওয়ার জন্য এ দুটি কাজও অতীব জরুরী। আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে হবে এবং এক্ষেত্রে কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞানই আপনার আত্মশুদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে। আত্মশুদ্ধি অর্জনেও বিভিন্ন তরীকা ও পীর-বুযুর্গ-মুরুববীদের পদ্ধতি অবশ্যই পরিহার করতে হবে। অন্যের সমালোচনা না করে প্রথমে নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো খুঁজে বের করে সংশোধনের চেষ্টা করতে হবে। প্রথমে দেখতে হবে কুরআন ও সহীহ হাদীসের সাথে আমার কতটুকু সম্পর্ক আছে। আমি কুরআন হাদীস কতটুকু পড়ি, বুঝি, আমল করি; আগে নিজের হিসাব নিজে মিলাতে হবে।

১২. জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত থাকা।

সর্বোপরি এই ফিতনার যুগে মুত্তাকী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে অবশ্যই জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত থাকতে হবে। কেননা মুত্তাকী হওয়ার একটা বড় উপায় হলো নিজেকে জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত রাখা। দ্বীন ইসলামের সঠিক জ্ঞানই কেবল আপনাকে সকল প্রকার ফিতনা থেকে দূরে রাখতে পারে। তাই দুনিয়া যতটুকু না করলেই নয় ততটুকু করা এবং সকল প্রকার গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার পর যতটুকু অবসর পাওয়া যাবে ততটুকুই কুরআন, সহীহ হাদীস ও নির্ভরযোগ্য ইসলামী বই পড়ার মাধ্যমে নিজেকে কুরআন-সুন্নার জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে ‘ইমাম পাবলিকেশন্স’ থেকে প্রকাশিত কিতাবসমূহ আপনার জন্য অনেকখানি সহায়ক হবে।

মুত্তাকী হয়ে জান্নাত পেতে চাইলে কুরআন বুঝে পড়তে হবে
মুত্তাকী হতে চাইলে অবশ্যই আল কুরআন বুঝতে হবে বা বুঝে বুঝে পড়তে হবে। এছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। কেউ বলতে পারেন মুত্তাকী কারা? সহজ উত্তর হলো, যার ভিতরে তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) আছে সে-ই মুত্তাকী। তাই তাকওয়া (আল্লাহভীতি বা আল্লাহ সচেতনতা) থাকলেই মুত্তাকী হতে পারবে। তবে সঠিক ইলম (জ্ঞান) না থাকলে মুখে মুখে আল্লাহর ভয়ের কথা বলে বা পোশাকে মুত্তাকী ভাব প্রকাশ করলেই কোন লাভ নেই। ইলম আর তাকওয়া মূলত একে অপরের সম্পূরক। পরস্পরের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করে। আমল ছাড়া ঈমান বা ঈমান ছাড়া আমলের যেমন মূল্য নেই, তেমনি ইলম ছাড়া তাকওয়া আর তাকওয়া ছাড়া ইলমেরও কোন মূল্য নেই। আর এই ইলম মূলত শরিয়তের ইলম যার প্রধান উৎস আল কুরআন। মূলত বান্দাকে মুত্তাকী বানানোর জন্যই আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছেন। কুরআন দিয়েই তিনি সঠিক পথটি দেখিয়ে দিয়েছেন, কুরআনের মাধ্যমেই উপদেশ দিয়েছেন, দিয়েছেন আদেশ-নিষেধ। আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে সঠিক পথে চলা আর তাঁর আদেশ-নিষেধ মানার মাধ্যমেই বান্দা মুত্তাকী হতে পারে। আর তার আদেশ নিষেধ, উপদেশ জানার জন্য অবশ্যই বান্দাকে কুরআন বুঝে বুঝে পড়তে হবে। শুধু মুত্তাকী হতে চাইলে তাদের জন্যই নয় বরং আমরা নিচের আয়াতগুলোর মাধ্যমে জানবো যে, একজন ব্যক্তিকে প্রকৃত/সত্যিকারের ভালো মুমিন ও ভালো মুসলিম হওয়ার জন্য কুরআন বুঝে পড়া কতটা দরকার। এবিষয়ে মহান আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল হাকীমে নিজেই বলেছেনঃ

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْۤ اُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدٰى وَالْفُرْقَانِۚ

রমযান মাস, যে মাসে নাযিল করা হয়েছে কুরআন, যাতে আছে হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনা ও যা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী... (সূরা ২/বাকারাঃ১৮৫)।

اِنَّ هٰذَا الْقُرْاٰنَ يَهْدِيْ لِلَّتِيْ هِيَ اَقْوَمُ وَيُبَشِّرُ الْمُؤْمِنِيْنَ الَّذِيْنَ يَعْمَلُوْنَ الصَّالِحَاتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا كَبِيْرًا

নিশ্চয় এই কুরআন এমন একটা পথ দেখিয়ে দেয় যা সবচেয়ে সহজ এবং সৎকর্মশীল মুমিনদেরকে এই মর্মে সুসংবাদ দেয় যে, তাদের জন্য আছে মহা পুরস্কার। (সূরা ১৭/বনি ইসরাঈলঃ৯)

الٓرٰ۫ كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ اِلَيْكَ لِتُخْرِجَ النَّاسَ مِنَ الظُّلُمَاتِ اِلَى النُّوْرِ بِاِذْنِ رَبِّهِمْ اِلٰى صِرَاطِ الْعَزِيْزِ الْحَمِيْدِ

আলিফ লাম রা, আমিতো এই কিতাব এই জন্য নাযিল করেছি যাতে করে তুমি মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে আনতে পার তোমার রবের অনুমতিক্রমে যিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সূরা ১৪/ইবরাহিমঃ১৪)

اِنَّاۤ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لَّعَلَّكُمْ تَعْقِلُوْنَ

আমি একে আরবি ভাষায় কুরআন রূপে অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা বুঝতে পার। (সূরা ১২/ইউসুফঃ২)।

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ لِيَذَّكَّرُوْا

আমি এই কুরআনে নানানভাবে বুঝিয়েছি, যাতে তারা চিন্তা গবেষণা করে (সূরা ১৭/বনি ইসরাইলঃ৪১)।

وَلَقَدْ صَرَّفْنَا لِلنَّاسِ فِيْ هٰذَا الْقُرْاٰنِ مِنْ كُلِّ مَثَلٍ

আমি এই কুরআনে মানুষকে বিভিন্ন উপমা দিয়ে সব রকম বিষয়বস্তু বুঝিয়েছি (সূরা ১৭/বনি ইসরাইলঃ৮৯, সূরা ১৮/কাহাফঃ৫৪)।

وَقُرْاٰنًا فَرَقْنَاهُ لِتَقْرَاَهٗ عَلَى النَّاسِ عَلٰى مُكْثٍ وَّنَزَّلْنَاهُ تَنْزِيْلًا

আমি কুরআনকে থেমে থেমে পৃথক পৃথকভাবে পাঠের উপযোগী করেছি, যাতে আপনি একে লোকদের কাছে ধীরে ধীরে পাঠ করেন এবং আমি একে যথাযথভাবে অবতীর্ণ করেছি। (সূরা ১৭/বনি ইসরাইলঃ১০৬)।

শুধু উম্মতে মুহাম্মাদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্যও তাদেরকে মুত্তাকী হওয়ার জন্য এভাবে আল্লাহ হিদায়াত, আলো, উপদেশ পাঠিয়েছিলেন।

সুতরাং শুধু মুত্তাকীই নয় বরং একজন ভাল মুমিন, ভাল মুসলিম হতে হলে আল কুরআনুল কারীম বুঝে বুঝে পড়তেই হবে। আর কুরআন বুঝা বা কুরআন বুঝে বুঝে পড়া মোটেও কঠিন কোন কাজ নয়। বরং কুরআন বুঝা খুবই সহজ। বিশেষ করে যিনি মুত্তাকী হিসেবে কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে পুরস্কার পেতে আগ্রহী তাকে অবশ্যই কুরআন বুঝে পড়তে হবে। এক্ষেত্রে ইখলাসের সঠিক চেষ্টা করার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলে আল্লাহ অবশ্যই সহজ করে দিবেন ইন-শা-আল্লাহ।

কুরআন বুঝা খুবই সহজ
এখানে যে কথাটি আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই তা হলো, মহান আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দার প্রতি অত্যন্ত করুণাময় ও অসীম দয়াবান। সুতরাং যে শরিয়ত বুঝতে চায় সে একটু চেষ্টা করলেই সহজে বুঝতে পারবে এবং সহজে মানতে পারবে এবং যে শরিয়ত মানার মধ্যেই বান্দার দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ, সেই শরিয়তই আল্লাহ তা‘আলা আমাদের দিয়েছেন। আর আল কুরআন হলো আল্লাহর দেয়া শরিয়তের অন্যতম প্রধান উৎস। তাই কুরআন বুঝা সহজ হবে এটাই যুক্তিযুক্ত। কুরআন বুঝার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لِتُبَشِّرَ بِهِ الْمُتَّقِيْنَ وَتُنْذِرَ بِه قَوْمًا لُّدًّا

আর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তুমি এর দ্বারা মুত্তাকীদেরকে সুসংবাদ দিতে পার এবং কলহপ্রিয় কওমকে তাদ্বারা সতর্ক করতে পার। (সূরা ১৯/ মারইয়ামঃ ৯৭)

وَكَذٰلِكَ اَوْحَيْنَاۤ اِلَيْكَ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا لِّتُنْذِرَ اُمَّ الْقُرٰى وَمَنْ حَوْلَهَا وَتُنْذِرَ يَوْمَ الْجَمْعِ لَا رَيْبَ فِيْهِ فَرِيْقٌ فِي الْجَنَّةِ وَفَرِيْقٌ فِي السَّعِيْرِ

*আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে একত্রিত হওয়ার দিন এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, একদল থাকবে জান্নাতে আরেকদল থাকবে জ্বলন্ত আগুনে। (সূরা ৪২/আশ শুরাঃ৭)

فَاِنَّمَا يَسَّرْنَاهُ بِلِسَانِكَ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُوْنَ

অতঃপর আমি তো তোমার ভাষায় কুরআনকে সহজ করে দিয়েছি, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে। (সূরা ৪৪/দুখান ঃ ৫৮)

وَلَقَدْ يَسَّرْنَا الْقُرْاٰنَ لِلذِّكْرِ فَهَلْ مِنْ مُّدَّكِرٍ

আমি এই কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি, বুঝতে চাও এমন কেউ আছ কি? (সূরা ৫৪/ক্বামারঃ১৭, ২২, ৩২, ৪০)।

লক্ষ্য করুন এই একই কথা মহান আল্লাহ তা‘আলা একই সূরাতে চারবার বলেছেন, আমি এই কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি, বুঝতে চাও এমন কেউ আছ কি?

কুরআন নাযিল হয়েছে আরবি ভাষায়

وَهٰذَا كِتَابٌ مُّصَدِّقٌ لِّسَانًا عَرَبِيًّا

এ কিতাব (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের) সত্যতা প্রকাশকারী। এটা আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা আহকাফ- ১২)

وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا

এভাবেই আমি একে বিধানরূপে আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করেছি। (সূরা রা‘দ- ৩৭)

আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করার অর্থ এ নয় যে, এটা শুধু আরবরাই বুঝবে। অন্যরা বুঝতে পারবে না। মানবজাতির ব্যাপক ও সার্বজনীন হেদায়াতের জন্য যাই পেশ করা হবে তা অবশ্যই মানবসমাজে প্রচলিত ভাষাগুলোর যে কোন একটিতেই পেশ করা হবে। অতঃপর এর হেদায়াত পেশকারী এটিকে যে জাতির ভাষায় নাযিল করছেন প্রথমে সে জাতিকে এর শিক্ষা দ্বারা পুরোপুরি প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। তারপর এ জাতিই অন্যান্য জাতির কাছে এর শিক্ষা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে। কোন দাওয়াতকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সম্প্রসারিত করার জন্য এটি একটি বাস্তব ও স্বাভাবিক পদ্ধতি।

এখানে আমরা উপস্থাপন করব কুরআন বুঝাটা আসলেই কঠিন না সহজ। কুরআন গবেষকদের মতে পবিত্র কুরআনে ৭৮০০০ থেকে ৮০০০০ হাজার শব্দ আছে। যার অধিকাংশ শব্দই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। পুনরাবৃত্তি হয়নি এমন শব্দের সংখ্যা খুবই কম। মাত্র ১০০০ এর মত। আর পুনরাবৃত্তি হওয়া শব্দের সংখ্যা ২০০০ এর কিছু কম-বেশী। এই ২০০০ শব্দের পুনঃ পুনঃ ব্যবহারই মূলত মহাগ্রন্থ আল কুরআন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, পরম বিজ্ঞ। খুব কম শব্দের মাধ্যমেই আমাদেরকে মুত্তাকী হওয়ার মত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের মাধ্যমে সঠিক পথটি দেখিয়ে দিয়েছেন। যার মধ্যে ৩০০-৩৫০ শব্দ আমরা বাংলায় ব্যবহার করি। যেমন আল্লাহ, নাবী, রাসূল, দুনিয়া, আখেরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, হায়াত, মওত, ঈমান, ইসলাম, কুরআন, কিতাব ইত্যাদি। এই শব্দগুলো আমাদেরকে শিখতে হবে না। শুধু কুরআন পড়ার সময় আরবী রূপটা দেখে নিলেই চলবে। যেসব শব্দ আমরা বাংলায় ব্যবহার করি সেগুলো কুরআনে এসেছে প্রায় ২০০০০ বার।

আপনি যদি ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত সূরা বাকারা ও সূরা আলে ইমরান কিতাব দুটি মনোযোগ দিয়ে নিয়মিত পড়তে শুরু করেন তবে আপনার জন্য কুরআন বুঝাটা খুবই সহজ হয়ে যাবে ইন-শা-আল্লাহ। মুহতারাম আবদুর রহমান ভাই কিতাব দুটিতে মূল আরবী ইবারতের নিচে প্রতিটি শব্দের অর্থ, সরল অনুবাদ ও পরে আয়াতের শিক্ষা সংযোজন করেছেন যা অধ্যয়নের ফলে শব্দার্থ শেখার সাথে সাথে কুরআনের অনেক জ্ঞানও অর্জন করতে পারবেন। সূরা বাকারা থেকে শেখা অধিকাংশ শব্দই পরবর্তীতে পুনঃ পুনঃ পাবেন। তখন শুধু পুনরাবৃত্তি হয়নি এমন শব্দটা শিখে নিতে হবে। এরপর যদি ইমাম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক কুরআন বিল কুরআন কিতাবখানি পড়েন তবে অনেকখানি এগিয়ে যেতে পারবেন যা আপনাকে কুরআনের জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর উপদেশ গ্রহণের মাধ্যমে মুত্তাকী হতে সহায়তা করবে বলে আশা করি ইন-শা-আল্লাহ। কিতাবগুলো দ্বারা ঘরে বা মসজিদে তালিমের মাধ্যমে অন্যদেরকে কুরআনের জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত/সাহায্য করে যে কেউ সহজেই অসংখ্য নেকী অর্জনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

১০
মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্য
মুত্তাকী হতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে পুরো কুরআন ও সাধ্যমত সহীহ হাদীসের জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং কুরআন-সুন্নাহর নির্ভেজাল আদেশ-নিষেধগুলো আন্তরিকভাবে মেনে চলতে হবে। তথাপি কুরআনে স্পষ্টভাবে বর্ণিত কয়েকটি বৈশিষ্ট্য এখানে তুলে ধরা হলো। প্রথমেই সূরা ২/বাকারার প্রথমদিকেই যেখানে বলা হয়েছে, এই সেই কিতাব (আল কুরআন) যাতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের পথ প্রদর্শক। তারপরই মুত্তাকীদের কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছেঃ

اَلَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ

যারা অদৃশ্য বিষয়ের উপর ঈমান আনে এবং সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছে তা থেকে ব্যায় করে।

وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَاۤ اُنْزِلَ اِلَيْكَ وَمَاۤ اُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَۚ وَبِالْاٰخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ

আর যারা তোমার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান আনে এবং তোমার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার উপর ঈমান আনে এবং আখেরাতের উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে। (সূরা ২/বাকারাঃ ৩-৪)

আয়াত হতে প্রাপ্ত মুত্তাকীদের বৈশিষ্ট্যঃ

১। অদৃশ্যে বিশ্বাস করা অর্থাৎ মহান আল্লাহর একত্ববাদ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, নাবীগণ, কবরের আযাব, বিচারের দিবস, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদির উপর বিশ্বাস।

২। সালাতের আনুষ্ঠানিক নিয়ম কানুন মেনে নিষ্ঠার সাথে তা পালন করে প্রতিটি বিষয় থেকে শিক্ষা নিয়ে সে শিক্ষা ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠা করা।

৩। আল্লাহ দেয়া রিযিক (ধন-সম্পদ, শিক্ষা, ক্ষমতা এসব) থেকে অন্যের জন্য দান করা বা অন্যের কাজে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করা।

৪। মুহাম্মদ ﷺ এর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে (ওহী তথা কুরআন ও সহীহ হাদীস) এবং পূর্বের রাসূলগণের (যেমন দাউদ, মুসা, ঈসা (আঃ) এবং অন্যান্য রাসূলগণের) প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল (যেমন যাবুর, তাওরাত, ইঞ্জীল ইত্যাদি এবং অন্যান্য সহিফাসমূহ) সেগুলোর উপরও ঈমান আনা যে সেগুলোও মহান আল্লাহই নাযিল করেছিলেন।

৫। আখিরাত তথা বিচার দিবসের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা অর্থাৎ বিচার একদিন হবেই, দুনিয়ার জীবনে আমরা যা করছি তার সবকিছুর হিসাব হবে এবং নেককাররা জান্নাতে গমন করবে এবং পাপীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে এই বিশ্বাস রেখে সেভাবে আমল করা।

لَيْسَ الْبِرَّ اَنْ تُوَلُّوْا وُجُوْهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلٰكِنَّ الْبِرَّ مَنْ اٰمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْاٰخِرِ وَالْمَلَآئِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّيْنَۚ وَاٰتَى الْمَالَ عَلٰى حُبِّه ذَوِي الْقُرْبٰى وَالْيَتَامٰى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّآئِلِيْنَ وَفِي الرِّقَابِۚ وَاَقَامَ الصَّلَاةَ وَاٰتَى الزَّكَاةَۚ وَالْمُوْفُوْنَ بِعَهْدِهِمْ اِذَا عَاهَدُوْاۚ وَالصَّابِرِيْنَ فِي الْبَأْسَآءِ وَالضَّرَّآءِ وَحِيْنَ الْبَأْسِؕ اُولٰٓئِكَ الَّذِيْنَ صَدَقُوْاؕ وَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُتَّقُوْنَ

ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে, বরং ভালো কাজ হলো, যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নাবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ দান করে তার প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণ, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৭৭)

আয়াতের শিক্ষা। তারাই সত্যবাদী ও মুত্তাকী যারাঃ

১। আল্লাহ, পরকাল (আখেরাত), ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নাবীগণের প্রতি ঈমান আনে।

২। নিজেদের অভাব থাকার পরেও নিকটাত্মীয়গণ, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে দান করে এবং বন্দিমুক্তিতে অর্থ-সম্পদ ব্যায় করে।

৩। সালাত কায়েম করে (যথাযথভাবে সুনির্দিষ্ট সময়ে ইখলাসের সহিত বিনীতভাবে ধীরে-সুস্থে সহীহ হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে রসুল ﷺ এর পদ্ধতিতে নিজেও সালাত আদায় করে এবং অধীনস্তদের সালাত আদায় করতে বাধ্য করে)।

৪। নেসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে যাকাত দেয়।

৫। অঙ্গীকার পূর্ণ করে। (ব্যাখ্যার জন্য তাফসীরে ইবনে কাসির দেখুন)।

৬। দুঃখ-কষ্টে, অসুখ-বিসুখে ও জিহাদের সময় ধৈর্যধারণ করে।

১১
মুত্তাকীদের জন্য কুরআনে বর্ণিত বিশেষ আয়াতসমূহ
মহান আল্লাহ তা‘আলা মূলত পুরো কুরআনই মুত্তাকীদের লক্ষ্য করে নাযিল করেছেন। তার মধ্যে কিছু তাকওয়া (আল্লাহভীতি বা আল্লাহ সচেতনতা) সম্বলিত অনেক আয়াতও কুরআনে বর্ণিত হয়েছে। তবে তার সংখ্যা অনেক। আর সত্যি সত্যিই মুত্তাকীদেরকে পুরো কুরআনই বুঝে বুঝে পড়তে হবে। তাই এখানে আমরা কেবল সরল কিছু আয়াত উল্লেখ করব যা কুরআনের শব্দার্থ শেখা ও আয়াত বুঝার জন্য আপনাদের অনুপ্রাণিত করবে ঃ

يَاۤ اَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ

হে মানবজাতি, তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা ২/বাকারাঃ ২১)

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ

হে ঈমানদারগণ, তোমাদের উপর সিয়ামকে (রমযান মাসে) ফরয করা হয়েছে, যেভাবে ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর (আল্লাহভীতি অর্জন কর)। (সূরা ২/বাকারাঃ ১৮৩)

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَذَرُوْا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَاۤ اِنْ كُنْتُمْ مُّؤْمِنِيْنَ

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। (সূরা ২/বাকারাঃ ২৭৮)

اَلَّذِيْنَ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَاۤ اِنَّنَاۤ اٰمَنَّا فَاغْفِرْ لَنَا ذُنُوْبَنَا وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

যারা বলে, হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমরা ঈমান আনলাম। অতএব আমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সূরা ৩/আলি ইমরান ঃ ১৬)

بَلٰى مَنْ اَوْفٰى بِعَهْدِه وَاتَّقٰى فَاِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَّقِيْنَ

হ্যাঁ, অবশ্যই যে, নিজ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করে এবং তাকওয়া অবলম্বন করে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদের ভালবাসেন। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ ৭৬)

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِه وَلَا تَمُوْتُنَّ اِلَّا وَاَنْتُمْ مُّسْلِمُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর যথাযথভাবে। আর তোমরা মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা ৩/আলি ইমরানঃ১০২)

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تَأْكُلُوا الرِّبَاۤٓ اَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَّاتَّقُوا اللهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

হে মুমিনগণ! তোমরা সুদ খাবে না বহুগুণ বৃদ্ধি করে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও। সূরা ৩/আলি ইমরানঃ

وَكُلُوْا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللهُ حَلَالًا طَيِّبًا وَّاتَّقُوا اللهَ الَّذِيْۤ اَنْتُمْ بِه مُؤْمِنُوْنَ

আর খাও/আহার কর আল্লাহ যা তোমাদের রিযিক দিয়েছেন তা থেকে হালাল, পবিত্র বস্তু। আর আল্লাহকে ভয় কর যার প্রতি তোমরা ঈমান এনেছ। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ৮৮)

قُلْ لَّا يَسْتَوِي الْخَبِيْثُ وَالطَّيِّبُ وَلَوْ اَعْجَبَكَ كَثْرَةُ الْخَبِيْثِۚ فَاتَّقُوا اللهَ يَاۤ اُولِي الْاَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُوْنَ

বল, অপবিত্র ও পবিত্র সমান নয়, যদিও অপবিত্রের আধিক্য তোমাকে মুগ্ধ করে। অতএব হে বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা ৫/মায়িদাঃ ১০০)

وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَاۤ اِلَّا لَعِبٌ وَّلَهْوٌؕ وَّلَلدَّارُ الْاٰخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِيْنَ يَتَّقُوْنَؕ اَفَلَا تَعْقِلُوْنَ

আর দুনিয়ার জীবন খেলাধুলা ও তামাশা ছাড়া কিছুই নয়। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য আখেরাতের আবাস উত্তম। অতএব তোমরা কি বুঝবে না। (সূরা ৬/আনআমঃ৩২)

وَهٰذَا كِتَابٌ اَنْزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوْهُ وَاتَّقُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ

আর এটি কিতাব - যা আমি নাযিল করেছি - বরকতময়। সুতরাং তোমরা তার অনুসরণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর, যাতে তোমরা দয়াপ্রাপ্ত হও।

(সূরা ৬/আনআমঃ১৫৬)

يَاۤ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا قَاتِلُوا الَّذِيْنَ يَلُوْنَكُمْ مِّنَ الْكُفَّارِ وَلْيَجِدُوْا فِيْكُمْ غِلْظَةًؕ وَّاعْلَمُوْاۤ اَنَّ اللهَ مَعَ الْمُتَّقِيْنَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের নিকটবর্তী কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর এবং তারা যেন তোমাদের মধ্যে কঠোরতা দেখতে পায়। আর জেনে রাখ, আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন। (সূরা ৯/তাওবাঃ ১২৩)

وَكَذٰلِكَ اَنْزَلْنَاهُ قُرْاٰنًا عَرَبِيًّا وَّصَرَّفْنَا فِيْهِ مِنَ الْوَعِيْدِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُوْنَ اَوْ يُحْدِثُ لَهُمْ ذِكْرًا

আর এভাবেই আমি আরবি ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি এবং তাতে বিভিন্ন সতর্কবাণী বর্ণনা করেছি, যাতে করে তারা তাকওয়াবান/আল্লাহভীরু/আল্লাহ সচেতন হতে পারে অথবা তা হয় তাদের জন্য উপদেশ।

(সূরা ২০/ত্বাহাঃ ১১৩)

তোমাদের এই দীন তো একই দীন। আর আমি তোমাদের রব, অতএব তোমরা আমাকেই ভয় কর। (সূরা ২৩/মুমিনুনঃ ৫২)

وَمَنْ يُّطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهٗ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَاُولٰٓئِكَ هُمُ الْفَآئِزُوْنَ

আর যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে এবং তাঁর তাকওয়া অবলম্বন করে, তারাই কৃতকার্য। (সূরা ২৪/নূরঃ৫২)

تِلْكَ الدَّارُ الْاٰخِرَةُ نَجْعَلُهَا لِلَّذِيْنَ لَا يُرِيْدُوْنَ عُلُوًّا فِي الْاَرْضِ وَلَا فَسَادًا وَّالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِيْنَ

এই হচ্ছে আখিরাতের নিবাস, যা আমি তাদের জন্য নির্ধারিত করি, যারা যমীনে ঔদ্ধত্য দেখাতে চায় না এবং ফাসাদও চায় না। আর শুভ পরিণাম মুত্তাকীদের জন্য। (সূরা ২৮/ক্বাসাসঃ ৮৩)

লক্ষ্য করুন ইতোমধ্যেই পবিত্র কুরআনের অনেকগুলো আয়াত আপনার শেখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরো এক-দুবার বুঝে বুঝে পড়ুন। যতটুকু শিখেছেন অন্যকে শেখান। এখন থেকে নিয়মিতভাবে প্রতিদিন বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন।

১২
মুত্তাকীদের কতিপয় করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়
এখানে মুত্তাকী হবার প্রয়াসী ব্যক্তিদের জন্য প্রাথমিকভাবে করণীয় ও বর্জনীয় একটি তালিকা দেয়া হলো। নিয়মিত কুরআন ও সহীহ সুন্নার জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে দ্বীন ইসলামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে হবেঃ

১। বুঝে বুঝে আল কুরআন, সহীহ হাদীসের কিতাব (যেমন বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ইত্যাদি) এবং দলীলভিত্তিক নির্ভরযোগ্য ইসলামী বই পড়ে দ্বীন ইসলাম তথা কুরআন-সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান অর্জন করা।

২। ঈমান ও আকীদার উপর নির্ভরযোগ্য কিতাব পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে বিশুদ্ধ ঈমান ও আকীদার অধিকারী হওয়া। ভ্রান্ত আকীদা পরিত্যাগ করা।

৩। তাওহীদ ও সুন্নাতের উপর বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জনপূর্বক তাওহীদ ও সুন্নতকে আকড়ে ধরা। এক্ষেত্রে অন্য কারো পরোয়া না করা।

৪। শিরক ও বিদআতকে (যেমন তাবিজ-কবজ, ফরজ সালাতের পর সম্মিলিত মোনাজাত) পরিত্যাগ করা। এক্ষেত্রেও অন্য কারো পরোয়া না করা।

৫। সহীহ হাদীসের কিতাব ও সালাতের উপর রচিত নির্ভরযোগ্য দলীলভিত্তিক কিতাব পড়ার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করে সময়মত, নিষ্ঠার সাথে, রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে সালাত আদায় করা। এক্ষেত্রেও অন্য কারো পরোয়া না করা।

৬। যাকাতের উপর সঠিক জ্ঞান অর্জন করে সঠিকভাবে হিসাব করে যাকাত আদায় করা।

৭। সিয়ামের উপর সঠিক জ্ঞান অর্জন করে রমজান মাসে ফরজ সিয়াম ও অন্যান্য মাসের দলীল ভিত্তিক নফল সিয়াম পালন করা।

৮। হজ্জ করার সামর্থ হওয়ার সাথে সাথে হজ্জের উপর কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা রচিত নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে বিশুদ্ধ জ্ঞান অর্জন করে সঠিকভাবে হজ্জ সম্পাদন করা।

৯। হারাম উপার্জন (যথা সুদ, ঘুষ ইত্যাদি) পরিহার করা। হালাল উপার্জন করা। (এ বিষয়ে জানতে ‘‘হালাল রিযিকের সন্ধানে’’ বইটি পড়ুন)।

১০। গোপনে ও প্রকাশ্যে সকল প্রকার গুনাহ/পাপের কাজ পরিহার করা।

১১। তাহাজ্জুদের সালাতসহ সহীহ দলীল ভিত্তিক অন্যান্য সুন্নত ও নফল সালাত আদায় করা।

১২। দলীলবিহীন আমল, দু’আ-দরূদ পরিত্যাগ করা, দলীলনির্ভর আমল করা। (এ বিষয়ে জানতে সহীহ দু’আ ও কুরআন-সুন্নার চিকিৎসা বই পড়ুন)

১৩। আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর আদেশ-নিষেধ নিষ্ঠার সহিত অনুসরণর করা এবং অন্তর থেকে তাদের প্রতি ভালবাসা পোষণ করা।

১৪। সাহাবী, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও সকল ইমামদেরকে সম্মান করা। কোন ইমামকে ছোট করে না দেখা।

১৫। আল্লাহ যা দিয়েছেন তার উপরেই সন্তুষ্ট থাকা।

১৬। ধূমপান, বিশেষ করে জর্দাসহ পান-সুপারী এবং সকল প্রকার নেশাদ্রব্য পরিহার করা।

১৭। অল্প খাওয়া, অল্প ঘুমানো, অল্পতে সন্তুষ্ট থাকা।

১৮। দুনিয়ার চাকচিক্যে বিমোহিত না হয়ে বিলাসিতা পরিহার করা, অপচয়-অপব্যায় না করা।

১৯। অনুবাদসহ কুরআন, কুরআন বুঝার সহায়ক গ্রন্থ, তাফসীর, সহীহ হাদীসের কিতাব, দলীলভিত্তিক নির্ভরযোগ্য কিতাব ক্রয় করা, পড়া, জ্ঞান অর্জন করা। এক্ষেত্রে কার্পণ্যতা না করা।

২০। যাবতীয় খেল তামাশা, গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, বেহুদা আড্ডা, টিভি দেখা, অশ্লীল পত্রিকা, ম্যাগাজিন, বই ইত্যাদি পরিহার করে কুরআন, সহীহ হাদীস ও দলীলভিত্তিক নির্ভরযোগ্য ইসলামি বই পড়া। এভাবে জ্ঞান অর্জনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়া।

২১। নির্বিচারে বাপ-দাদা, পূর্বপুরুষ, অধিকাংশ লোকের মত, আলেম-ওলামা, মুরুববী-বুজুর্গদের মতামত, আমল পরিহার করে সহীহ দলীলভিত্তিক আমল করা।

২২। বিশেষ করে পীর-মুরিদী, বিভিন্ন তরীকা, দল-মত, ইজম, মাযহাব, ফাজায়েলের নামে ভূয়া কথা-বার্তা, স্বপ্নের কাহিনী, মুরুববী-বুজুর্গদের কিচ্ছা-কাহিনী, জাল-যঈফ হাদীস, দলীল ছাড়া ওয়াজ করা হুজুর ও তাদের মাহফিল এবং এসব প্রচার প্রসারে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।

২৩। সুন্নতে গাফেল, বিদআতে নিষ্ঠাবান, দুনিয়াদারী, পেটপূজারী, জর্দাখোর, খতম পড়ানী হুজুরদেরকে সর্বোতভাবে পরিহার করা।

২৪। কুরআন-হাদীস পড়তে ও বুঝতে, জ্ঞান অর্জন করতে নিষেধ করে, অন্ধভাবে পীর-বুজুর্গ, মুরুববী, আলেম-ওলামাদের মানতে বলে, কুরআন ও সহীহ হাদীস প্রচার করতে বাঁধা দেয়- এ ধরনের আলেম ও ব্যক্তিদেরকে ঘৃণার সহিত বর্জন করা।

২৫। দেশীয় ও উপমহাদেশীয় ইসলাম পরিহার করে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহভিত্তিক সার্বজনীন ইসলাম মেনে চলা।

২৬। আল্লাহ আমার রব, ইসলাম আমার দ্বীন, মুহাম্মদ ﷺ আমার রাসূল ও মুসলিম আমার পরিচয় এই নীতির উপর সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য এক ও অভিন্ন শরীয়ত প্রযোজ্য। এই নীতি মেনে চলা।

২৭। দ্বীন ইসলামের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ওহী তথা কুরআন-সুন্নার অনুসরণ করা এবং আল্লাহ ও রাসূল ﷺ এর আনুগত্য করা। অন্যসকল আনুগত্যের সম্পর্ক ছিন্ন করা।

২৮। অব্যহতভাবে কুরআন ও সহীহ হাদীসের জ্ঞান অর্জন করতে থাকা এবং সে অনুযায়ী নিয়ত, ঈমান, আমল, ইবাদত পরিশুদ্ধ করার মাধ্যমে আদেশগুলো পালন ও নিষেধগুলো পরিত্যাগ করা।

১৩
মুত্তাকী হতে না পারলে বড়ই আফসোস করতে হবে
এই আধুনিক যুগে জন্ম নিয়ে কোন শিক্ষিত ব্যক্তি যদি মুত্তাকী হতে না পারেন তাহলে তাকে দুনিয়া ও আখেরাত দুই জায়গাতেই বড়ই আফসোস করতে হবে। কারণ একদিকে যেমন পবিত্র কুরআন অক্ষরে অক্ষরে অবিকৃত আছে, তেমনি আল্লাহ তার যোগ্য বান্দাদের মাধ্যমে তাঁর কুরআনকে পৃথিবীর সব ভাষাতেই শাব্দিক ও সরল অনুবাদ করিয়ে দিয়েছেন। যাকে লম্বা হায়াত দেয়া হয়েছে, যার শেখার সুযোগ ছিল/আছে, যে খেল-তামাশা, গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা দেখে জীবনের অনেক সময় কাটিয়ে দিয়েছে তার ব্যাপারে কোন ওজরই গ্রহণ করা হবে না।

এ ব্যাপারে সূরা নং ৩৯, সূরা যুমার এর ৫৭-৬১ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

اَوْ تَقُوْلَ لَوْ اَنَّ اللهَ هَدَانِيْ لَكُنْتُ مِنَ الْمُتَّقِيْنَ

অথবা যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, আল্লাহ যদি আমাকে হিদায়াত দিতেন তাহলে আমি অবশ্যই মুত্তাকীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম।

اَوْ تَقُوْلَ حِيْنَ تَرَى الْعَذَابَ لَوْ اَنَّ لِيْ كَرَّةً فَاَكُوْنَ مِنَ الْمُحْسِنِيْنَ

অথবা আযাব প্রত্যক্ষ করার সময় যাতে কাউকে একথাও বলতে না হয়, যদি একবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ হত, তাহলে আমি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।

بَلٰى قَدْ جَآءَتْكَ اٰيَاتِيْ فَكَذَّبْتَ بِهَا

হ্যাঁ, অবশ্যই তোমার কাছে আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, অতঃপর তুমি সেগুলোকে অস্বীকার করেছিলে

وَاسْتَكْبَرْتَ وَكُنْتَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ

এবং তুমি অহঙ্কার করেছিলে আর তুমি কাফিরদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।

وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ تَرَى الَّذِيْنَ كَذَبُوْا عَلَى اللهِ وُجُوْهُهُمْ مُّسْوَدَّةٌ

আর যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করে কিয়ামতের দিন তুমি তাদের চেহারাগুলো কালো দেখতে পাবে।

اَلَيْسَ فِيْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْمُتَكَبِّرِيْنَ

অহঙ্কারীদের বাসস্থান জাহান্নামের মধ্যে নয় কি?

وَيُنَجِّي اللهُ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا بِمَفَازَتِهِمْ

আর আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে তাদের সাফল্যসহ নাজাত দেবেন।

لَا يَمَسُّهُمُ السُّوْٓءُ

কোন অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না।

وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ

আর তারা চিন্তিতও হবে না।

সূরা নং ৪৩, সূরা যুখরুফ এর ৩৪-৪৪ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

وَلِبُيُوْتِهِمْ اَبْوَابًا وَّسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُوْنَ

আর তাদেও গৃহসমূহের জন্য দরজা ও পালঙ্ক, যাতে তারা হেলান দেয়।

وَزُخْرُفًا وَّاِنْ كُلُّ ذٰلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا

আর তাদের জন্য স্বর্ণনির্মিত এর সবকয়টিই দুনিয়ার জীবনের ভোগ-সামগ্রী।

وَالْاٰخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِيْنَ

আর আখিরাত তো তোমার রবের কাছে মুত্তাকীদের জন্য।

وَمَنْ يَّعْشُ عَنْ ذِكْرِ الرَّحْمٰنِ نُقَيِّضْ لَهٗ شَيْطَانًا فَهُوَ لَهٗ قَرِيْنٌ

আর যে পরম করুণাময়ের যিকির (কুরআন) থেকে বিমুখ থাকে আমি তার জন্য এক শয়তানকে নিয়োজিত করি, ফলে সে হয়ে যায় তার সঙ্গী।

وَاِنَّهُمْ لَيَصُدُّوْنَهُمْ عَنِ السَّبِيْلِ

আর নিশ্চয় তারাই (শয়তান) মানুষদেরকে আল্লাহর পথ থেকে বাধা দেয়।

وَيَحْسَبُوْنَ اَنَّهُمْ مُّهْتَدُوْنَ

অথচ মানুষ মনে করে তারা হিদায়াতপ্রাপ্ত।

حَتّٰۤى اِذَا جَآءَنَا قَالَ يَا لَيْتَ بَيْنِيْ وَبَيْنَكَ بُعْدَ الْمَشْرِقَيْنِ فَبِئْسَ الْقَرِيْنُ

অবশেষে যখন সে আমার নিকট আসবে তখন সে বলবে, হায়, আমার ও তোমার মধ্যে যদি পূর্ব-পশ্চিমের ব্যবধান থাকত। সুতরাং কতইনা নিকৃষ্ট সে সঙ্গী!

وَلَنْ يَّنْفَعَكُمُ الْيَوْمَ

আর আজ তা (তাদের সেই অনুতাপ) তোমাদের কোন উপকারেই আসবে না।

اِذْ ظَّلَمْتُمْ

যেহেতু তোমরা যুলুম করেছিলে।

اَنَّكُمْ فِي الْعَذَابِ مُشْتَرِكُوْنَ

নিশ্চয় তোমরা আযাবে পরস্পর অংশীদার হয়ে থাকবে।

اَفَاَنْتَ تُسْمِعُ الصُّمَّ اَوْ تَهْدِي الْعُمْيَ وَمَنْ كَانَ فِيْ ضَلَالٍ مُّبِيْنٍ

তুমি কি বধিরকে শোনাতে পারবে অথবা হিদায়াত করতে পারবে অন্ধকে এবং যে স্পষ্ট পথভ্রষ্টতায় রয়েছে?

فَاِمَّا نَذْهَبَنَّ بِكَ فَاِنَّا مِنْهُمْ مُّنْتَقِمُوْنَ

অতঃপর যদি আমি তোমাকে নিয়ে যাই, তবে নিশ্চয় আমি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করব।

اَوْ نُرِيَنَّكَ الَّذِيْ وَعَدْنَاهُمْ فَاِنَّا عَلَيْهِمْ مُّقْتَدِرُوْنَ

অথবা আমি তাদের যে শাস্তির ওয়াদা দিয়েছি তা যদি তোমাকে প্রত্যক্ষ করাই, তবে নিশ্চয় আমি তাদের উপর পূর্ণ ক্ষমতাবান থাকব।

فَاسْتَمْسِكْ بِالَّذِيْۤ اُوْحِيَ اِلَيْكَ

অতএব তোমার প্রতি যা ওহী করা হয়েছে তাকে তুমি সুদৃঢ়ভাবে ধারণ কর।

اِنَّكَ عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيْمٍ

নিশ্চয় তুমি সরল পথের উপর রয়েছ।

وَاِنَّهٗ لَذِكْرٌ لَّكَ وَلِقَوْمِكَ

নিশ্চয় এ কুরআন তোমার জন্য এবং তোমার কওমের জন্য উপদেশ।

وَسَوْفَ تُسْاَلُوْنَ

আর অচিরেই তোমাদেরকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

১৪
কুরআনের সত্যতা সম্পর্কে আল্লাহর বক্তব্য
وَمَا كَانَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ اَنْ يُّفْتَرٰى مِنْ دُوْنِ اللهِ وَلٰكِنْ تَصْدِيْقَ الَّذِيْ بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيْلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيْهِ مِنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ

এ কুরআন তো এমন নয় যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ তা রচনা করতে পারবে; বরং এটি যা তার সামনে রয়েছে, তার সত্যায়ন এবং কিতাবের বিস্তারিত ব্যাখ্যা, যাতে কোন সন্দেহ নেই, যা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে।

(সূরা ১০/ইউনুসঃ৩৭)

وَاِنْ كُنْتُمْ فِيْ رَيْبٍ مِّمَّا نَزَّلْنَا عَلٰى عَبْدِنَا فَأْتُوْا بِسُوْرَةٍ مِّنْ مِّثْلِه وَادْعُوْا شُهَدَآءَكُمْ مِّنْ دُوْنِ اللهِ اِنْ كُنْتُمْ صَادِقِيْنَ

আর তোমরা যদি সে সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে থাক যা আল্লাহ নাযিল করেছেন তার বান্দার উপর, তবে তোমরা তার মত একটা সূরা বানিয়ে নিয়ে আস এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সাক্ষীদেরকে ডাক যদি তোমরা সত্যবাদী হও।

فَاِنْ لَّمْ تَفْعَلُوْا وَلَنْ تَفْعَلُوْا فَاتَّقُوا النَّارَ الَّتِيْ وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُۚ اُعِدَّتْ لِلْكَافِرِيْنَ

অতঃপর যদি তোমরা তা না পার আর কখনো তোমরা তা পারবে না তাহলে জাহান্নামের সেই আগুনকে ভয় কর যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর।

(সূরা ২/বাকারাঃ ২৩-২৪)

সূরা নং ৬৯, সূরা আল হাক্কাহ এর ৩৮-৪৮ আয়াতে আল্লাহ বলেন,

فَلَاۤ اُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُوْنَ

অতএব তোমরা যা দেখছ, আমি তার কসম করছি।

وَمَا لَا تُبْصِرُوْنَ

আর যা তোমরা দেখছ না তারও,

اِنَّهٗ لَقَوْلُ رَسُوْلٍ كَرِيْمٍ

নিশ্চয় এটি (কুরআন) এক সম্মানিত রাসূলের বাণী।

وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ قَلِيْلًا مَّا تُؤْمِنُوْنَ

আর এটি কোন কবির কথা নয়, তোমরা কমই বিশ্বাস কর।

وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ قَلِيْلًا مَّا تَذَكَّرُوْنَ

আর কোন গণকের কথাও নয়, তোমরা কমই উপদেশ গ্রহণ কর।

تَنْزِيْلٌ مِّنْ رَّبِّ الْعَالَمِيْنَ

এটি (কুরআন) সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।

وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِيْلِ

যদি সে আমার নামে কোন মিথ্যা রচনা করত,

لَاَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِيْنِ

তবে আমি তার ডান হাত পাকড়াও করতাম।

ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِيْنَ

তারপর অবশ্যই আমি তার হৃদপিন্ডের শিরা কেটে ফেলতাম।

فَمَا مِنْكُمْ مِّنْ اَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِيْنَ

অতঃপর তোমাদের মধ্যে কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না।

وَاِنَّهٗ لَتَذْكِرَةٌ لِّلْمُتَّقِيْنَ

আর এটিতো (কুরআন) মুত্তাকীদের জন্য এক নিশ্চিত উপদেশ।

সুতরাং আজ থেকেই মুত্তাকী হবার অভিপ্রায়ে কুরআন থেকে উপদেশ গ্রহণ ও কুরআন অনুযায়ী চলার জন্য কুরআন বুঝার ও মেনে চলার চেষ্টা করুন। মূলত আল্লাহ তার বান্দাদেরকে মুত্তাকী বানানোর জন্যই কুরআন নাযিল করেছেন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইমাম পাবলিকেশন্স এর সূরা বাকারা কিতাবটি সংগ্রহ করুন আর বুঝে বুঝে পড়তে থাকুন। আল্লাহ আমাদের জন্য কুরআন বুঝা, কুরআন অনুযায়ী চলা সহজ করে দিন, বেশি বেশি করে নেক কাজ করার তৌফিক দিন এবং আমাদের নেককাজগুলো কবুল করুন। আমীন।

১৫
কুরআন সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস
সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর কিতাবের (কুরআনের) কথা, সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হলো মুহাম্মদ ﷺ এর পদ্ধতি, সবচেয়ে নিকৃষ্ট হলো দ্বীনের ভিতর নতুন কিছু সৃষ্টি করা, এরকম প্রতিটি নতুন সৃষ্টিই হলো বিদআত, প্রতিটি বিদআতের পরিণতি হলো গোমরাহী আর প্রতিটি গোমরাহীর পরিণতি হলো জাহান্নাম। (নাসাঈ**)

আমি তোমাদের জন্য দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি, এই দুটিকে যতদিন তোমরা আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন পথভ্রষ্ট হবে না। একটি হলো আল্লাহর কিতাব (কুরআন) আর অন্যটি হলো রাসূল ﷺ এর সুন্নত। (মুয়াত্তা মালেক-১৫৯৫)।

তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে নিজে কুরআন শিখে ও অন্যকে কুরআন শিক্ষা দেয়। বুখারী, হা- ৫০২৭ (উদ্দেশ্য হলো কুরআনের জ্ঞান অর্জন করা, কুরআন দিয়ে জীবন গড়া ও অন্যকে বুঝানো)।

১৬
নামাযে আমরা কী পড়ি
আফসোস! জীবনে অনেক নামায পড়লাম, কিন্তু বুঝলাম না তাতে কী পড়লাম। নামাযে আমরা যেসব সূরা ও দু‘আ-দরূদ পড়ি এগুলোর অর্থ জানা জরুরি। কোন বাক্যের অর্থ বুঝার জন্য সেই ভাষা জানা আবশ্যক। আমরা নামাযের দু‘আ কালাম আরবি ভাষায় পাঠ করি, কিন্তু অধিকাংশই আরবি ভাষা জানি না; অথচ নবী ﷺ এর ভাষা আরবি, কুরআন-হাদীসের ভাষা আরবি এবং জান্নাতীদের ভাষাও হবে আরবি। তাই আমাদের আরবি ভাষা শিক্ষা করা উচিত। মনে রাখার জন্য শাব্দিক অর্থ জানা প্রয়োজন। শাব্দিক অর্থ জানা থাকলে পড়ার সময় মজা পাওয়া যায়। সেজন্য এ বইয়ে নামাযের প্রয়োজনীয় সূরা ও দু‘আসমূহের শাব্দিক অনুবাদ দেয়া হয়েছে।

নিচের অংশটি পড়ুন তাহলে বুঝতে পারবেন নামাযে আমরা কী পড়ি।

১৭
সানা পড়া
সানা পড়া- ১

اَللّٰهُمَّ بَاعِدْ بَيْنِيْ وَبَيْنَ خَطَايَايَ كَمَا بَاعَدْتَّ بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ اَللّٰهُمَّ نَقِّنِيْ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا يُنَقَّى الثَّوْبُ الْاَبْيَضُ مِنَ الدَّنَسِ اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ خَطَايَايَ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! بَاعِدْ দূরত্ব সৃষ্টি করে দাও بَيْنِيْ আমার (মধ্যে), وَبَيْنَ خَطَايَايَ এবং আমার গোনাহের মধ্যে, كَمَا بَاعَدْتَّ যেভাবে দূরত্ব সৃষ্টি করেছো, بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! نَقِّنِيْ আমাকে পবিত্র করে নাও, مِنَ الْخَطَايَا গোনাহসমূহ থেকে, كَمَا يُنَقَّى যেভাবে পবিত্র করা হয়, اَلثَّوْبُ الْاَبْيَضُ সাদা কাপড়, مِنَ الدَّنَسِ ময়লা থেকে। اَللّٰهُمَّ اغْسِلْ হে আল্লাহ! তুমি ধুয়ে দাও, خَطَايَايَ আমার গোনাহসমূহ, بِالْمَاءِ পানি দিয়ে, وَالثَّلْجِ এবং বরফ দিয়ে, وَالْبَرَدِ এবং শিশির দিয়ে।

অর্থ : হে আল্লাহ! তুমি আমার এবং আমার গোনাহগুলোর মধ্যে এমন ব্যবধান সৃষ্টি করে দাও যেরূপ ব্যবধান সৃষ্টি করেছ পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে এমনভাবে পাপমুক্ত করে দাও যেভাবে সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিষ্কার করা হয়। হে আল্লাহ! তুমি আমার পাপসমূহ পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও। (সহীহ বুখারী, হা/৭৪৪)

সানা পড়া- ২

আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত শুরু করলে এ দু‘আ পড়তেন :

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالٰى جَدُّكَ وَلَا اِلٰهَ غَيْرُكَ

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ وَبِحَمْدِكَ আপনার প্রশংসার সাথে। وَتَبَارَكَ আর বড়ই বরকতময়, اِسْمُكَ আপনার নাম। وَتَعَالٰى আর (সকলের) উপর, جَدُّكَ আপনার মর্যাদা, وَلَا اِلٰهَ আর কোন মাবুদ নেই, غَيْرُكَ আপনি ছাড়া।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমরা আপনার প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনার নাম বড়ই বরকতময়, আপনার মর্যাদা সকলের উপর। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। (তিরমিযী, হা/২৪২)

শয়তান হতে আশ্রয় চাওয়া

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ (১)

শাব্দিক অর্থ : اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই, بِاللهِ আল্লাহর কাছে, مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে।

অর্থ : আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।

(২) أَعُوْذُ بِاللهِ السَّمِيْعِ الْعَلِيْمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ مِنْ هَمْزِهٖ وَنَفْخِهٖ وَنَفْثِهٖ

শাব্দিক অর্থ : أَعُوْذُ আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি بِاللهِ আল্লাহর নিকট اَلسَّمِيْعِ যিনি সবকিছু শ্রবণ করেন اَلْعَلِيْمِ সবকিছু জানেন مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ বিতাড়িত শয়তান হতে مِنْ هَمْزِهٖ তার কুমন্ত্রণা হতে, وَنَفْخِهٖ তার ফুঁৎকার হতে وَنَفْثِهٖ এবং তার প্ররোচনা হতে।

অর্থ : আমি সর্বজ্ঞ ও সর্বশ্রোতা আল্লাহর নিকট শয়তানের কুমন্ত্রণা, ফুঁৎকার ও প্ররোচনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (আবু দাউদ, হা/৭৭৫)

আল্লাহর নামে শুরু

بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

শাব্দিক অর্থ : بِسْمِ اللهِ (শুরু করছি) আল্লাহর নামে, اَلرَّحْمٰنِ যিনি পরম করুণাময়, اَلرَّحِيْمِ অতি দয়ালু।

অর্থ : পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।

১৮
সূরা ফাতিহা
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَاِيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ اِهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ صِرَاطَ الَّذِيْنَ اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّآلِّيْنَ

শাব্দিক অর্থ : اَلْحَمْدُ সকল প্রশংসা لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য (যিনি), رَبِّ الْعَالَمِيْنَ বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। اَلرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ খুবই দয়ালু ও অতিশয় মেহেরবান। مَالِكِ মালিক, يَوْمِ الدِّيْنِ বিচার দিনের। اِيَّاكَ কেবল তোমারই, نَعْبُد আমরা ইবাদাত করি, وَاِيَّاكَ আর কেবল তোমারই কাছে نَسْتَعِيْنُ আমরা সাহায্য চাই। اِهْدِنَا আমাদেরকে দেখিয়ে দিন, اَلصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيْمَ সরল-সঠিক পথ, صِرَاطَ الَّذِيْنَ ওদের পথ, اَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন, غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ ওদের পথ নয়, যাদের প্রতি আপনি **রাগান্বিত হয়েছেন وَلَا الضَّالِّيْنَ এবং ওদের পথও নয় যারা বিপথগামী হয়েছে।

অর্থ : ১. পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

২. সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।

৩. যিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় দয়ালু। ৪. যিনি প্রতিফল দিবসের মালিক।

৫. আমরা শুধুমাত্র আপনারই ইবাদাত করি এবং আপনারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি।

৬. আমাদেরকে সরল-সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।

৭. তাদের পথ, যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের পথ নয় যাদের প্রতি আপনার গযব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট।

১৯
সূরা ফীল (হাতি)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ اَلَمْ تَرَ كَيْفَ فَعَلَ رَبُّكَ بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ اَلَمْ يَجْعَلْ كَيْدَهُمْ فِيْ تَضْلِيْلٍ وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ طَيْرًا اَبَابِيْلَ تَرْمِيْهِمْ بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ فَجَعَلَهُمْ كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ

শাব্দিক অর্থ : اَلَمْ تَرَ তুমি কি দেখনি, كَيْفَ কী রকম فَعَلَ ব্যবহার করেছেন رَبُّكَ তোমার প্রতিপালক بِاَصْحَابِ الْفِيْلِ হাতিওয়ালাদের সাথে? اَلَمْ يَجْعَلْ তিনি কি করেননি كَيْدَهُمْ তাদের ষড়যন্ত্রসমূহকে فِيْ تَضْلِيْلٍ ব্যর্থ? وَاَرْسَلَ عَلَيْهِمْ এবং তিনি তাদের উপর পাঠিয়েছেন طَيْرًا اَبَابِيْلَ আবাবীল পাখি। تَرْمِيْهِمْ তারা নিক্ষেপ করেছিল بِحِجَارَةٍ مِّنْ سِجِّيْلٍ পাথরের টুকরা। فَجَعَلَهُمْ অতঃপর তিনি তাদেরকে করে দিলেন كَعَصْفٍ مَّأْكُوْلٍ জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো।

অর্থ : ১. তুমি কি দেখনি, তোমার রব (কাবা ধ্বংসের জন্য আগত) হাতিওয়ালাদের সাথে কী রকম ব্যবহার করেছেন? ২. তিনি কি (সে সময়) তাদের যাবতীয় ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দেননি? ৩. এবং তিনি তাদের উপর আবাবীল নামক পাখি পাঠিয়েছেন। ৪. ঐ পাখিগুলো সেই সুসজ্জিত বাহিনীর উপর পাথরের টুকরা নিক্ষেপ করেছিল। ৫. অতঃপর তিনি তাদেরকে জন্তু-জানোয়ারের চর্বিত ঘাসের মতো করে দিলেন।

২০
সূরা কুরাইশ (কুরাইশ বংশ)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ لِاِيْلَافِ قُرَيْشٍ اِيْلَافِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ فَلْيَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ وَّاٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ

শাব্দিক অর্থ : لِاِيْلَافِ অনুকূল হওয়ার কারণে قُرَيْشٍ কুরাইশদের। اِيْلَافِهِمْ তাদের অনুকূল হওয়ার কারণে رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَالصَّيْفِ শীত ও গ্রীষ্ম কালের সফর। فَلْيَعْبُدُوْا অতএব তাদের ইবাদাত করা উচিত رَبَّ هٰذَا الْبَيْتِ এ ঘরের মালিকেরই। اَلَّذِيْۤ اَطْعَمَهُمْ যিনি তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন مِّنْ جُوْعٍ ক্ষুধার্ত অবস্থায় وَاٰمَنَهُمْ এবং যিনি তাদেরকে নিরাপদ রেখেছেন مّنْ خَوْفٍ ভয় থেকে।

অর্থ : ১. কুরাইশদের অনুকূল (ও নিরাপদ) হওয়ার কারণে। ২. অনুকূল হওয়ার কারণে তাদের শীত ও গ্রীষ্ম কালের (ব্যবসায়িক) সফর। ৩. অতএব তাদের এ ঘরের মালিকেরই ইবাদাত করা উচিত। ৪. যিনি ক্ষুধায় তাদের খাবার সরবরাহ করেছেন এবং তাদেরকে ভয়-ভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।

২১
সূরা মাউন (ছোটখাট জিনিস)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ اَرَاَيْتَ الَّذِيْ يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ فَذٰلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ وَلَا يَحُضُّ عَلٰى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ اَلَّذِيْنَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُوْنَ اَلَّذِيْنَ هُمْ يُرَآءُوْنَ وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ

শাব্দিক অর্থ : اَرَاَيْتَ তুমি কি দেখছ اَلَّذِيْ يُكَذِّبُ যে অস্বীকার করে بِالدِّيْنِ শেষ বিচারের দিনকে فَذٰلِكَ সে হচ্ছে সেই ব্যক্তি, اَلَّذِيْ يَدُعُّ যে গলা ধাক্কা দেয় اَلْيَتِيْمَ এতীমকে। وَلَا يَحُضُّ আর উৎসাহ দেয় না عَلٰى طَعَامِ খাবার দিতে اَلْمِسْكِيْنِ মিস্কীনদেরকে। فَوَيْلٌ দুর্ভোগ রয়েছে لِلْمُصَلِّيْنَ সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা عَنْ صَلَاتِهِمْ নিজেদের সালাত থেকে سَاهُوْنَ উদাসীন থাকে। اَلَّذِيْنَ هُمْ যারা يُرَآءُوْنَ লোক দেখানো আমল করে। وَيَمْنَعُوْنَ এবং তারা বিরত থাকে اَلْمَاعُوْنَ ছোটখাটো জিনিসপত্র দেয়া থেকে।

অর্থ : ১. তুমি কি সে ব্যক্তির কথা (কখনো) ভেবে দেখেছ! যে শেষ বিচারের দিনকে অস্বীকার করে। ২. সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তি, যে (নিরীহ) এতীমকে গলা ধাক্কা দেয়, ৩. মিস্কীনদের খাবার দিতে কখনো সে (অন্যদের) উৎসাহ দেয় না, ৪. (মর্মান্তিক) দুর্ভোগ রয়েছে সেসব সালাত আদায়কারীদের জন্য। ৫. যারা নিজেদের সালাত থেকে উদাসীন থাকে। ৬. তারা যাবতীয় কাজকর্ম শুধু প্রদর্শনীর জন্যই করে। ৭. এবং ছোটখাটো জিনিস পর্যন্ত (অন্যদেরকে) দেয়া থেকে বিরত থাকে।

২২
সূরা কাউসার (ঝর্ণা)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ اِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْاَبْتَرُ

শাব্দিক অর্থ : اِنَّاۤ اَعْطَيْنَاكَ (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে দান করেছি اَلْكَوْثَرَ কাওসার। فَصَلِّ অতএব তুমি সালাত কায়েম করো لِرَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে وَانْحَرْ এবং কুরবানী করো। اِنَّ شَانِئَكَ নিশ্চয় তোমার নিন্দাকারীরাই هُوَ الْاَبْتَرُ লেজকাটা (অসহায়)।

অর্থ : ১. (হে নবী!) আমি অবশ্যই তোমাকে (নিয়ামতের ভান্ডার) কাওসার দান করেছি। ২. অতএব, (আমার স্মরণের জন্য) তুমি সালাত কায়েম করো এবং (আমারই উদ্দেশ্যে) কুরবানী করো। ৩. নিশ্চয় (পরিশেষে) তোমার নিন্দাকারীরাই হবে লেজকাটা (অসহায়)।

হাশরের মাঠে যে ঝর্ণা থেকে রসুল ﷺ আল্লাহর প্রিয় বান্দা ও তার নাবীর প্রিয় উম্মতদেরকে পানি পান করাবেন। যেদিন এমন পিপাসা লাগবে যে সমস্ত সাগরের পানি পান করালেও পিপাসা মিটবে না এবং কাওসার ছাড়া আর কোন ঝর্ণাও থাকবে না এবং সেখান থেকে রসুল ﷺ এর হাতে এক গ্লাস পানি পান করার পর আর কোন পিপাসা লাগবে না। তবে কাফির, মুশরিক, মুনাফিকদের সাথে বিদআতী মুসলিমদেরকেও সেই ঝর্ণা থেকে পানি পান করতে দেয়া হবে না। সুতরাং বিদআত থেকে সাবধান।

২৩
সূরা কাফিরূন (কাফির সম্প্রদায়)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ قُلْ يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ لَاۤ اَعْبُدُ مَا تَعْبُدُوْنَ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ مَّا عَبَدْتُّمْ وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ مَاۤ اَعْبُدُ لَكُمْ دِيْنُكُمْ وَلِيَ دِيْنِ

শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী!) তুমি বলে দাও, يَاۤ اَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ হে কাফিররা! لَاۤ اَعْبُدُ আমি ইবাদাত করি না مَا تَعْبُدُوْنَ তোমরা যার ইবাদাত কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ আমি যার ইবাদাত করি। وَلَاۤ اَنَا عَابِدٌ এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই - مَا عَبَدْتُّمْ তোমরা যাদের ইবাদাত কর। وَلَاۤ اَنْتُمْ عَابِدُوْنَ আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও مَاۤ اَعْبُدُ আমি যার ইবাদাত করি। لَكُمْ دِيْنُكُمْ তোমাদের দ্বীন তোমাদের জন্য وَلِيَ دِيْنِ আর আমার দ্বীন আমার জন্য।

অর্থ : ১. (হে নবী!) তুমি বলে দাও, হে কাফিররা! ২. আমি তাদের ইবাদাত করি না তোমরা যাদের ইবাদাত কর। ৩. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও যার ইবাদাত আমি করি। ৪. এবং আমিও তাদের ইবাদাতকারী নই- যাদের ইবাদাত তোমরা কর। ৫. আর তোমরা তার ইবাদাতকারী নও আমি যার ইবাদাত করি। ৬. (এ দ্বীনের মধ্যে কোন মিশ্রণ সম্ভব নয়, অতএব) তোমাদের ধর্ম তোমাদের জন্য- আর আমার দ্বীন আমার জন্য।

২৪
সূরা নাসর (সাহায্য)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ اِذَا جَآءَ نَصْرُ اللهِ وَالْفَتْحُ وَرَاَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُوْنَ فِيْ دِيْنِ اللهِ اَفْوَاجًا فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ اِنَّهٗ كَانَ تَوَّابًا

শাব্দিক অর্থ : اِذَا جَآءَ যখন আসবে نَصْرُ اللهِ আল্লাহর সাহায্য وَالْفَتْحُ এবং বিজয় । وَرَاَيْتَ النَّاسَ আর তুমি মানুষদেরকে দেখবে, يَدْخُلُوْنَ প্রবেশ করছে فِيْ دِيْنِ اللهِ আল্লাহর দ্বীনে اَفْوَاجًا দলে দলে। فَسَبِّحْ অতএব তুমি তাসবীহ পাঠ করো بِحَمْدِ প্রশংসার সাথে رَبِّكَ তোমার প্রতিপালকের وَاسْتَغْفِرْهُ আর তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করো; اِنَّهٗ অবশ্যই তিনি كَانَ تَوَّابًا তাওবা কবুলকারী।

অর্থ : ১. যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য ও বিজয় আসবে। ২. তখন মানুষদেরকে তুমি দেখবে, তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করছে। ৩. অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করো; অবশ্যই তিনি তাওবা কবুলকারী।

২৫
সূরা লাহাব
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ تَبَّتْ يَدَاۤ اَبِيْ لَهَبٍ وَّتَبَّ مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ مَالُهٗ وَمَا كَسَبَ سَيَصْلٰى نَارًا ذَاتَ لَهَبٍ وَّامْرَاَتُهٗ حَمَّالَةَ الْحَطَبِ فِيْ جِيْدِهَا حَبْلٌ مِّنْ مَّسَدٍ

শাব্দিক অর্থ : تَبَّتْ ধ্বংস হয়ে যাক يَدَا দু’হাতই اَبِيْ لَهَبٍ আবু লাহাবের, وَتَبَّ আর সে নিজেও ধ্বংস হউক । مَاۤ اَغْنٰى عَنْهُ তার কোন কাজে আসেনি مَالُهٗ তার ধন-সম্পদ وَمَا كَسَبَ এবং যা সে উপার্জন করেছিল। سَيَصْلٰى সে অচিরেই প্রবেশ করবে نَارًا আগুনে ذَاتَ لَهَبٍ যা লেলিহান শিখা বিশিষ্ট। وَامْرَاَتُهٗ এবং তার স্ত্রীও حَمَّالَةَ যে বহন করত اَلْحَطَبِ কাঠের বোঝা। فِيْ جِيْدِهَا তার গলায় থাকবে حَبْلٌ রশি مِنْ مَّسَدٍ খেজুর পাতার পাকানো।

অর্থ : ১. আবু লাহাবের (দুনিয়া-আখিরাতে) দু’হাতই ধ্বংস হয়ে যাক, ধ্বংস হয়ে যাক সে নিজেও। ২. তার ধন-সম্পদ ও আয়-উপার্জন তার কোন কাজে আসেনি। ৩. অচিরেই সে লেলিহান শিখা বিশিষ্ট আগুনে প্রবেশ করবে। ৪. সাথে থাকবে জ্বালানি কাঠের বোঝা বহনকারিণী তার স্ত্রীও। ৫. (অবস্থা দেখে মনে হবে) তার গলায় যেন খেজুর পাতার পাকানো শক্ত কোন রশি জড়িয়ে আছে।

২৬
সূরা ইখলাস (নিষ্ঠা)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

قُلْ هُوَ اللهُ اَحَدٌ اَللهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ

শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, هُوَ اللهُ তিনি আল্লাহ, اَحَدٌ একক। اَللهُ আল্লাহ اَلصَّمَدُ অমুখাপেক্ষী لَمْ يَلِدْ তিনি কাউকে জন্ম দেননি وَلَمْ يُوْلَدْ এবং তিনিও কারো থেকে জন্মগ্রহণ করেননি। وَلَمْ يَكُنْ لَّهٗ আর তাঁর জন্য নেই كُفُوًا কোন সমতুল্য اَحَدٌ কেউ।

অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, তিনি আল্লাহ এক ও একক। ২. তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। ৩. তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কারো থেকে জন্মগ্রহণও করেননি। ৪. আর তাঁর সমতুল্য দ্বিতীয় কেউ নেই।

২৭
সূরা ফালাক (প্রভাত)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ وَمِنْ شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ

শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ الْفَلَقِ উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে। مِنْ شَرِّ অনিষ্ট থেকে مَا خَلَقَ তিনি যা সৃষ্টি করেছেন وَمِنْ شَرِّ এবং অনিষ্ট থেকে غَاسِقٍ যা রাতের অন্ধকারে সংঘটিত হয়, اِذَا وَقَبَ যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। وَمِنْ شَرِّ আর অনিষ্ট থেকে اَلنَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের। وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে اِذَا حَسَدَ যখন সে হিংসা করে।

অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি উজ্জ্বল প্রভাতের মালিকের কাছে আশ্রয় চাই। ২. (আশ্রয় চাই) তাঁর সৃষ্টি করা প্রতিটি জিনিসের অনিষ্ট থেকে ৩. আমি আশ্রয় চাই রাতের অন্ধকারে সংঘটিত অনিষ্ট থেকে, (বিশেষ করে) যখন রাত তার অন্ধকার বিছিয়ে দেয়। ৪. (আমি আশ্রয় চাই) গিরায় ফুঁক দিয়ে যাদুটোনাকারিণীদের অনিষ্ট থেকে। ৫. (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকেও যখন সে হিংসা করে।

২৮
সূরা নাস (মানুষ)
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ اِلٰهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ

শাব্দিক অর্থ : قُلْ (হে নবী) আপনি বলুন, اَعُوْذُ আমি আশ্রয় চাই بِرَبِّ النَّاسِ মানুষের প্রতিপালকের কাছে। مَلِكِ النَّاسِ মানুষের প্রকৃত মালিকের কাছে। اِلٰهِ النَّاسِ মানুষের মা‘বুদের কাছে। مِنْ شَرِّ অনিষ্ট থেকে اَلْوَسْوَاسِ কুমন্ত্রণাদানকারীর, اَلْخَنَّاسِ যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। اَلَّذِيْ يُوَسْوِسُ যে কুমন্ত্রণা দেয় فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ মানুষের অন্তরে। مِنَ الْجِنَّةِ জিনদের মধ্য থেকে وَالنَّاسِ এবং মানুষদের মধ্য থেকে।

অর্থ : ১. (হে নবী) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাই মানুষের মালিকের কাছে। ২. আশ্রয় চাই মানুষের প্রকৃত বাদশাহের কাছে। ৩. আশ্রয় চাই মানুষের একমাত্র মা‘বুদের কাছে। ৪. আশ্রয় চাই কুমন্ত্রণাদানকারীর অনিষ্ট থেকে, যে প্ররোচনা দিয়েই শরীর ঢাকা দেয়। ৫. যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়। ৬. জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষদের মধ্য থেকে হোক।

২৯
রুকূর তাসবীহসমূহ
রুকূর তাসবীহ- ১

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর।

অর্থ : আমার মহান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি (তিনবার)।

(সহীহ মুসলিম, হা/১৮৫০)

রুকূর তাসবীহ- ২

سُبْحَانَ رَبِّىَ الْعَظِيْمِ وَبِحَمْدِهٖ

سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْعَظِيْمِ আমার মহান প্রভুর। وَبِحَمْدِهٖ এবং তার প্রশংসার সাথে।

অর্থ : আমি আমার মহান প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আমি তার প্রশংসাও জ্ঞাপন করছি। ( আবু দাউদ, হা/৮৭০)

রুকূর তাসবীহ- ৩

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَكَ আমি তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক وَبِحَمْدِكَ এবং তোমার প্রশংসার সাথে, اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার প্রশংসার সাথে আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দাও।

(সহীহ মুসলিম, হা/১১১৩)

রুকূর তাসবীহ- ৪

سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ

শাব্দিক অর্থ : سُبُّوْحٌ (আল্লাহ) পবিত্র, قُدُّوْسٌ ত্রুটিমুক্ত, رَبُّ তিনি রব اَلْمَلَائِكَةِ ফেরেশতাদের وَ الْرُّوْحِ এবং রুহ এর তথা জিবরাঈল (আঃ) এর।

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, তিনি জিব্রাঈলসহ সকল ফেরেশতার প্রতিপালক। (মুসলিম, হা/১১১৯)

রুকূর তাসবীহ- ৫

سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি ذِى الْجَبَرُوْتِ যিনি প্রতাপের মালিক, وَالْمَلَكُوْتِ আর রাজত্বের, وَالْكِبْرِيَاءِ আর বড়ত্বের وَالْعَظْمَةِ এবং মহত্বের (মালিক)।

অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার, যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। (আবূ দাঊদ, হা/৮৭৩)

৩০
রুকূ হতে দাঁড়ানের সময়
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهٗ

শাব্দিক অর্থ : سَمِعَ اللهُ আল্লাহ শোনেন, لِمَنْ حَمِدَهٗ যে তার প্রশংসা করে (তার কথা)।

অর্থ : আল্লাহ সে ব্যক্তির কথা শোনেন, যে তাঁর প্রশংসা করে। (সহীহ বুখারী, হা/৭৮৯)

৩১
রুকু হতে দাঁড়িয়ে
রুকু হতে দাঁড়িয়ে প্রশংসা- ১

اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا হে আমাদের রব! وَلَكَ এবং আপনার জন্যই اَلْحَمْدُ সকল প্রশংসা।

অর্থ : হে আমাদের রব! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। (সহীহ বুখারী, হা/৭৯৫)

রুকু হতে দাঁড়িয়ে প্রশংসা- ২

رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُّبَارَكًا فِيْهِ

শাব্দিক অর্থ : رَبَّنَا হে আমাদের প্রভু, وَلَكَ الْحَمْدُ তোমার জন্য সকল প্রশংসা, حَمْدًا এমন প্রশংসা যা, كَثِيْرًا অনেক, طَيِّبًا পবিত্র, مُبَارَكًا فِيْهِ যাতে রয়েছে বরকত।

অর্থ : হে আমাদের রব! তোমার জন্যই সমস্ত প্রশংসা, অধিক প্রশংসা- যা পবিত্র ও বরকতপূর্ণ। (মুসলিম, হা/১৩৮৫)

রুকু হতে দাঁড়িয়ে প্রশংসা- ৩

اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمٰوَاتِ وَ مِلْءَ الْاَرْضِ وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ اَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ وَ كُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ - اَللّٰهُمَّ لَامَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ وَ لَامُعْطِىَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَالْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

শাব্দিক অর্থঃ اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! رَبَّنَا তুমি আমাদের প্রতিপালক لَكَ الْحَمْدُ তোমার প্রশংসায় مِلْءَ السَّمٰوَاتِ আসমানসমূহ পরিপূর্ণ, وَ مِلْءَ الْاَرْضِ এবং জমিনও পরিপূর্ণ, وَمِلْءَ مَاشِئْتَ مِنْ شَىْءٍ بَعْدُ এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ اَهْلَ الثَّنَاءِ وَ الْمَجْدِ আপনি প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী। اَحَقُّ তুমি বেশি হকদার مَا قَالَ الْعَبْدُ বান্দা যা বলে। وَ كُلُّنَا আর আমরা সকলেই لَكَ عَبْدٌ তোমার গোলাম। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَامَانِعَ বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দান কর তা। وَ لَامُعْطِىَ আর দেয়ার মতোও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ তুমি যা দিতে চাও না তা। وَلَا يَنْفَعُ আর কোন উপকারে আসবে না ذَالْجَدِّ কোন সম্পদশালী مِنْكَ তোমার (আযাব) হতে اَلْجَدُّ তার সম্পদ।

অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি আমাদের প্রতিপালক, আসমান এবং জমিন সবই তোমার প্রশংসায় পরিপূর্ণ, এরপর তুমি যা চাও তাও পরিপূর্ণ। তুমিই প্রশংসা ও মর্যাদা পাওয়ার অধিকারী। তোমার প্রশংসায় বান্দা যা বলবে তুমি তার চেয়ে বেশি পাওয়ার হকদার। আমরা সকলেই তোমার গোলাম। হে আল্লাহ! তুমি কাউকে যা দান কর তা বাধা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কাউকে যা দিতে চাও না তা দেয়ার মতো কেউ নেই। আর কোন সম্পদশালীর সম্পদ তোমার আযাব হতে তাকে রক্ষা করতে পারবে না।

(সহীহ মুসলিম, হা/১০৮৬)

৩২
সিজদার তাসবীহ
সিজদার তাসবীহ- ১

سُبْحَانَ رَبِّيَ الْاَعْلٰى

শাব্দিক অর্থ : سُبْحَانَ আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি, رَبِّيَ الْاَعْلٰى আমার মহান রবের।

অর্থ : আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করিছ।

(আবু দাউদ, হা/৮৭৪)

সিজদার তাসবীহ- ২

سُبْحَانَ رَبِّىَ الْاَعْلٰى وَبِحَمْدِهٖ

অর্থ : আমি আমার সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি এবং আমি তার প্রশংসাও জ্ঞাপন করছি। (আবু দাউদ, হা/৮৭০)

সিজদার তাসবীহ- ৩

سُبْحَانَكَ اَللّٰهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার প্রশংসার সহিত আমরা তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করছি। হে আল্লাহ! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। (সহীহ বুখারী, হা/৭৯৪)

সিজদার তাসবীহ- ৪

سُبُّوْحٌ قُدُّوْسٌ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَ الْرُّوْحِ

অর্থ : আল্লাহ পবিত্র, ত্রুটিমুক্ত, তিনি জিব্রাঈলসহ সকল ফেরেশতার রব।

(মুসলিম, হা/১১১৯)

সিজদার তাসবীহ- ৫

سُبْحَانَ ذِى الْجَبَرُوْتِ وَ الْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَ الْعَظْمَةِ

অর্থ : আমি পবিত্রতা বর্ণনা করছি সেই মহান সত্তার যিনি প্রতাপশালী, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্বের মালিক। (আবু দাঊদ, হা/৮৭৩)

সিজদার তাসবীহ- ৬

اَللّٰهُمَّ لَكَ سَجَدْتُّ وَبِكَ اٰمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ سَجَدَ وَجْهِىْ لِلَّذِىْ خَلَقَهٗ وَشَقَّ سَمْعَهٗ وَبَصَرَهٗ تَبَارَكَ اللهُ اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمّ হে আল্লাহ! لَكَ আপনার জন্য سَجَدْتُّ আমি সিজদা করছি। وَبِكَ আপনার প্রতি اٰمَنْتُ আমি ঈমান এনেছি وَلَكَ اَسْلَمْتُ এবং আমি আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। سَجَدَ সিজদা করছে وَجْهِىَ আমার চেহারা لِلَّذِىْ ঐ সত্তাকে যিনি خَلَقَهٗ তাকে সৃষ্টি করেছেন وَشَقَّ এবং তাতে স্থাপন করেছেন سَمْعَهٗ তার কান وَبَصَرَهٗ এবং তার চক্ষু । تَبَارَكَ اللهُ বরকতময় সেই মহান সত্তা, اَحْسَنُ الْخَالِقِيْنَ তিনি অনেক উত্তম সৃষ্টিকর্তা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য সিজদা করছি। আপনার প্রতি ঈমান এনেছি এবং আপনার কাছে আত্মসমর্পণ করেছি। আমার চেহারা সিজদা করছে ঐ সত্তাকে- যিনি তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুন্দর আকৃতি দান করেছেন এবং তাতে কান ও চক্ষু স্থাপন করেছেন। বরকতময় সেই মহান সত্তা, যিনি কত সুন্দর সৃষ্টিকর্তা। (সহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৮)

সিজদার তাসবীহ ও দু‘আ- ৭

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِىْ ذَنْبِىْ كُلَّهٗ دِقَّهٗ وَجِلَّهٗ وَاَوَّلَهٗ وَاٰخِرَهٗ وَعَلَانِيَتَهٗ وَسِرَّهٗ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِغْفِرْ لِىْ আমাকে ক্ষমা করে দাও ذَنْبِىْ كُلَّهٗ আমার সকল প্রকার গোনাহ دِقَّهٗ ছোট গোনাহ, وَجِلَّهٗ বড় গেনাহ وَاَوَّلَهٗ আগের গোনাহ وَاٰخِرَهٗ পরের গোনাহ, وَعَلَانِيَّتَهٗ প্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ وَسِرَّهٗ এবং অপ্রকাশ্যে সংঘটিত গোনাহ।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমার ছোট-বড়, আগের-পরের, প্রকাশ্য ও গোপন সকল প্রকার গোনাহ ক্ষমা করে দিন। (সহীহ মুসলিম, হা/১১১২)

৩৩
দুই সিজদার মধ্যখানে দু‘আ
দুই সিজদার মধ্যখানে দু‘আ- ১

اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ وَارْحَمْنِيْ وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

উচ্চারণ : আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়াহদিনী ওয়া‘আ-ফিনী ওয়ার যুক্বনী।

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اغْفِرْ لِيْ হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, وَارْحَمْنِيْ আমার প্রতি দয়া করুন, وَاهْدِنِيْ আর আমাকে সঠিক পথ দেখান, وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপদ রাখুন, وَارْزُقْنِيْ এবং আমাকে রিযিক দান করুন।

অর্থ : হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, আমার উপর রহম করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। (আবু দাউদ, হা/৮৫০)

দুই সিজদার মধ্যখানে দু‘আ- ২

رَبِّ اغْفِرْ لِيْ رَبِّ اغْفِرْ لِيْ

শাব্দিক অর্থ : رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন। رَبِّ হে আমার রব! اِغْفِرْ لِيْ আমাকে ক্ষমা করে দিন।

অর্থ : হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। হে আমার রব! আমাকে ক্ষমা করে দিন। (আবু দাউদ, হা/৮৭৪(

৩৪
তাশাহ্হুদ
اَلتَّحِيَّاتُ لِلّٰهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ اَيُّهَا النَّبِىُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهٗ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ اَشْهَدُ اَنْ لَّا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَاَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهٗ وَرَسُوْلُهٗ

শাব্দিক অর্থ : اَلتَّحِيَّاتُ সকল সম্মান, لِلّٰهِ আল্লাহর জন্য, وَالصَّلَوَاتُ আর সকল প্রার্থনা, وَالطَّيِّبَاتُ এবং সকল পবিত্র বাণীসমূহ (সবই আল্লাহর জন্য), اَلسَّلَامُ শান্তি, عَلَيْكَ আপনার প্রতি, اَيُّهَا النَّبِىُّ হে নবী! وَرَحْمَةُ اللهِ এবং আল্লাহর রহমত, وَبَرَكَاتُهٗ এবং তাঁর বরকত (আপনার উপর বর্ষিত হোক), اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا শান্তি বর্ষিত হোক আমাদের উপর, وَعَلٰى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ আর আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর, اَشْهَدُ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنْ لَّا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই, اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া, وَاَشْهَدُ আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, اَنَّ مُحَمَّدًا অবশ্যই মুহাম্মাদ, عَبْدُهٗ তাঁর বান্দা, وَرَسُوْلُهٗ এবং তাঁর রাসূল।

অর্থ : (আমার মৌখিক ও দৈহিক) সকল প্রশংসা, সালাত ও পবিত্র বাক্যসমূহ। হে নবী! আপনার উপর আল্লাহর শান্তি, রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হোক। আমাদের উপর এবং নেক বান্দাদের উপরও শান্তি অবতীর্ণ হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত মাবুদ নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ ﷺ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।

(সহীহ বুখারী, হা/৮৩১)

৩৫
দরূদে ইব্রাহীম
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ - اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ صَلِّ হে আল্লাহ! আপনি রহমত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا صَلَّيْتَ যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর, اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, حَمِيْدٌ প্রশংসিত, مَجِيْدٌ মহিমান্বিত, اَللّٰهُمَّ بَارِكْ হে আল্লাহ! আপনি বরকত নাযিল করুন, عَلٰى مُحَمَّدٍ মুহাম্মাদের উপর, وَعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ এবং মুহাম্মাদের পরিবারবর্গের উপর, كَمَا بَارَكْتَ যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন, عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ ইব্রাহীমের উপর, وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ এবং ইব্রাহীমের পরিবারের উপর। اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মাদ ও তাঁর পরিবারের প্রতি রহমত নাযিল করুন, যেভাবে রহমত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম এবং তাঁর পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! মুহাম্মাদ ও তাঁর বংশধরদের প্রতি বরকত নাযিল করুন, যেভাবে বরকত নাযিল করেছেন ইব্রাহীম ও তাঁর বংশধরদের প্রতি, নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।

(সহীহ বুখারী, হা/৩৩৭০)

৩৬
শেষ বৈঠকের দু‘আ
শেষ বৈঠকের দু‘আ- ১

اَللّٰهُمَّ اِنِّيْ ظَلَمْتُ نَفْسِيْ ظُلْمًا كَثِيْرًا وَّ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ اِلَّا اَنْتَ فَاغْفِرْ لِيْ مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِيْ اِنَّكَ اَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের উপর অনেক যুলুম করেছি, আর তুমি ছাড়া কেউ গোনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং তুমি নিজ ক্ষমা দ্বারা আমাকে ক্ষমা করে দাও এবং আমার প্রতি রহম করো। নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল ও অতি দয়ালু। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩৪)

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِنِّيْ নিশ্চয় আমি, ظَلَمْتُ অন্যায় করেছি, نَفْسِيْ আমার নিজের উপর, ظُلْمًا كَثِيْرًا অনেক অন্যায়, وَ لَا يَغْفِرُ আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না, اَلذُّنُوْبَ গোনাহসমূহ, اِلَّا اَنْتَ আপনি ছাড়া, فَاغْفِرْ لِيْ অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন, مَغْفِرَةً مِّنْ عِنْدِكَ নিজ ক্ষমা দ্বারা, وَارْحَمْنِيْ আর আমার উপর দয়া করুন, اَنْتَ اِنَّكَ নিশ্চয় আপনি, اَلْغَفُوْرُ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, اَلرَّحِيْمُ অত্যন্ত দয়ালু।

শেষ বৈঠকের দু‘আ- ২

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ (তাশাহ্হুদের পর) এ দু‘আ পাঠ করতেন।

اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ اِنِّىْ হে আল্লাহ! অবশ্যই আমি, اَعُوْذُ بِكَ আপনার কাছে আশ্রয় চাই, مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ জাহান্নামের শাস্তি হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ কবরের আযাব থেকে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ আশ্রয় চাই মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ আর আশ্রয় চাই জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা হতে, وَاَعُوْذُ بِكَ আর আশ্রয় চাই, مِنَ الْمَأْثَمِ পাপ থেকে, وَالْمَغْرَمِ এবং ঋণগ্রস্ত হওয়া থেকে।

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কবরের আযাব থেকে, মাসীহে দাজ্জালের ফিতনা হতে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি পাপ ও ঋণ হতে। (সহীহ বুখারী, হা/৮৩২)

৩৭
ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর দু‘আসমূহ
(১) একবার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) :

ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, আমি তাকবীর শুনে বুঝতাম যে, নবী ﷺ এর নামায শেষ হয়েছে। (সহীহ বুখারী, হা/৮৪২)

(২) তিনবার এ দু‘আ পাঠ করা :

اَسْتَغْفِرُ اللهَ

শাব্দিক অর্থ : اَسْتَغْفِرُ আমি ক্ষমা চাই اَللهَ আল্লাহর কাছে।

অর্থ : আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৬২)

(৩) একবার এ দু‘আটি পাঠ করা :

اَللّٰهُمَّ اَنْتَ السَّلَامُ - وَمِنْكَ السَّلَامُ - تَبَارَكْتَ يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَنْتَ السَّلَامُ আপনি শান্তি, - وَمِنْكَ السَّلَامُ আপনার থেকেই শান্তি আসে। تَبَارَكْتَ আপনি বরকতময় يَاذَا الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী!।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি শান্তি, আপনার থেকেই শান্তি আসে। হে সম্মান ও মহত্ত্বের অধিকারী! আপনি বরকতময়।

(৪) একবার নিচের দু‘আ পাঠ করা :

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ ، وَ لَا نَعْبُدُ اِلَّا اِيَّاهُ ، لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ ، لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ

শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। لَا حَوْلَ কোন ক্ষমতা নেই وَلَاقُوَّةَ এবং কোন শক্তিও নেই اِلَّا بِاللهِ আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত। لَا اِلٰهَ আর কোন প্রকৃত উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ব্যতীত। وَ لَا نَعْبُدُ আমরা আর কারো ইবাদাত করি না اِلَّا اِيَّاهُ আল্লাহ ছাড়া। لَهُ النِّعْمَةُ সকল নিয়ামত তাঁরই وَلَهُ الْفَضْلُ সকল অনুগ্রহ তাঁরই এবং وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। لَا اِلٰهَ কোন প্রকৃত মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই। রাজত্ব তাঁর জন্য, প্রশংসাও তাঁর জন্য। তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি ব্যতীত কোন শক্তি নেই। আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদাত করি না। সকল নিয়ামত ও অনুগ্রহ তাঁরই। সকল সুন্দর প্রশংসা তাঁর জন্যই। তিনি ব্যতীত আর কোন প্রকৃত মাবুদ নেই। আমরা একমাত্র তাঁরই জন্য দ্বীনকে নির্ধারিত করেছি, যদিও কাফিররা তা অপছন্দ করে।

(সহীহ মুসলিম, হা/১৩৭১)

(৫) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :

لَا اِلٰهَ اِلَا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ اَللّٰهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا اَعْطَيْتَ ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ

শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন মাবুদ নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তাঁর কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ রাজত্ব তাঁর জন্য, وَلَهُ الْحَمْدُ এবং প্রশংসাও তাঁর জন্য। وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ আর তিনি সকল বিষয়ের উপর ক্ষমতাবান। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! لَا مَانِعَ বাধা দেয়ার কেউ নেই لِمَا اَعْطَيْتَ তুমি যা দিতে চাও তা وَلَا مُعْطِيَ এবং তা দেয়ারও কেউ নেই لِمَا مَنَعْتَ যা তুমি বাধা দাও। وَلَا يَنْفَعُ প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই ذَا الْجَدِّ প্রচেষ্টাকারীর مِنْكَ الْجَدُّ তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্রকৃত ইলাহ (মাবুদ) নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরীক নেই, সার্বভৌমত্ব একমাত্র তাঁরই। সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, তিনি সবকিছুর ব্যাপারেই ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা দিতে চাও তা বাধা দেয়ার কেউ নেই এবং তুমি যা বাধা দাও তা দেয়ার কেউ নেই। আর তোমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রচেষ্টাকারীর প্রচেষ্টারও কোন মূল্য নেই।

(৬) একবার এ দু‘আ পাঠ করা :

اَللّٰهُمَّ اَعِنِّيْ عَلٰى ذِكْرِكَ ، وَشُكْرِكَ، وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اَعِنِّيْ আমাকে সাহায্য করো عَلٰى ذِكْرِكَ তোমার যিকিরের ক্ষেত্রে, وَشُكْرِكَ তোমার শুকরিয়া আদায় করার ক্ষেত্রে وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে।

অর্থ : হে আল্লাহ! তোমার যিকির করা, শুকরিয়া আদায় করা এবং উত্তম ইবাদাত করার ক্ষেত্রে আমাকে সাহায্য করো।

(৭) ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ), ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার নিচের দু‘আ..

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهٗ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

শাব্দিক অর্থ : لَا اِلٰهَ কোন উপাস্য নেই اِلَّا اللهُ আল্লাহ ছাড়া। وَحْدَهٗ তিনি একক, لَا شَرِيْكَ لَهٗ তার কোন শরীক নেই। لَهُ الْمُلْكُ সমস্ত রাজত্ব তার জন্য وَلَهُ الْحَمْدُ এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। وَهُوَ আর তিনি عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ সবকিছুর উপর قَدِيْرٌ ক্ষমতাবান।

অর্থ : আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব তার জন্য এবং সমস্ত প্রশংসাও তার জন্য। আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।

আবু হুরায়রা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর ৩৩ বার سُبْحَانَ اللهِ (সুবহানাল্লাহ), ৩৩ বার اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ (আলহামদু লিল্লাহ) ও ৩৩ বার اَللهُ اَكْبَرُ (আল্লা-হু আকবার) এবং একবার, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু........ এ দু‘আটি পড়ে একশ বার পূর্ণ করবে, তার সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে- যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মতো হয়। (সহীহ মুসলিম, হা/১৩৮০)

(৮) একবার আয়াতুল কুরসী পাঠ করা :

﴿اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ لَا تَأْخُذُهٗ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌؕ لَهٗ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْاَرْضِؕ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهٗۤ اِلَّا بِاِذْنِهٖؕ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَۚ وَلَا يَئُوْدُهٗ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ﴾

শাব্দিক অর্থ : اَللهُ আল্লাহ তিনি, لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। اَلْحَيُّ যিনি চিরঞ্জীব اَلْقَيُّوْمُ ও চিরস্থায়ী। لَا تَأْخُذُه  তাঁকে গ্রাস করতে পারে না سِنَةٌ وََّلَا نَوْمٌ তন্দ্রা এবং নিদ্রা কোন কিছুই। لَهٗ তাঁরই مَا فِي السَّمَاوَاتِ যা কিছু আছে আসমানসমূহে وَمَا فِي الْاَرْضِ ও যা কিছু আছে জমিনে। مَنْ ذَا الَّذِيْ এমন কে আছে, يَشْفَعُ সুপারিশ করতে পারে عِنْدَهٗ তাঁর নিকট اِلَّا بِاِذْنِه  তাঁর হুকুম ব্যতীত? يَعْلَمُ তিনি জানেন مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ যা কিছু আছে তাদের সম্মুখে وَمَا خَلْفَهُمْ আর যা কিছু আছে তাদের পেছনে। وَلَا يُحِيْطُوْنَ তারা আয়ত্ব করতে পারে না بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه  তাঁর জ্ঞান হতে কোন কিছুই اِلَّا بِمَا شَآءَ তবে তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া। وَسِعَ বেষ্টন করে আছে كُرْسِيُّهُ তার সিংহাসন اَلسَّمَاوَاتِ وَالْاَرْضَ আসমানসমূহ ও জমিনকে। وَلَا يَئُوْدُهٗ আর তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না حِفْظُهُمَا সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ। وَهُوَ আর তিনি اَلْعَلِيُّ সর্বোচ্চ اَلْعَظِيْمُ অতি মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)

অর্থ : আল্লাহ তিনি, যিনি ব্যতীত কোন (প্রকৃত) উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। তন্দ্রা এবং নিদ্রা কিছুই তাঁকে স্পর্শ করে না। আসমানসমূহ ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতীত এমন কে আছে, যে তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পেছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তিনি যতটুকু ইচ্ছা করেন ততটুকু ছাড়া তাঁর জ্ঞান হতে তারা কিছুই আয়ত্ব করতে পারে না। তার সিংহাসন আসমান ও জমিনকে বেষ্টন করে আছে। আর সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তাঁকে মোটেই ক্লান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও সর্বাপেক্ষা মহান। (সূরা বাকারা- ২৫৫)

আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া তার জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বাধা প্রদান করার মতো কোন কিছু থাকবে না। (সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৯৮৪৮)

৩৮
দু‘আ কুনূত
দু‘আ কুনূত- ১

اَللّٰهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ إنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ وَإنَّه لَا يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ وَ صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! اِهْدِنِيْ আমাকে হেদায়াত দান করুন فِيْمَنْ هَدَيْتَ যাদেরকে হেদায়াত দিয়েছেন তাদের সাথে। وَعَافِنِيْ আমাকে নিরাপত্তা দিন فِيْمَنْ عَافَيْتَ যাদেরকে নিরাপত্তা দিয়েছেন তাদের সাথে। وَتَوَلَّنِيْ আর আমাকে সাহায্য করুন فِيْمَنْ تَوَلَيْتَ যাদেরকে সাহায্য করেছেন তাদের সাথে। وَبَارِكْ لِيْ আমাকে বরকত দিন فِيْمَا أَعْطَيْتَ যা কিছু দান করেছেন তার মধ্যে। وَقِنِيْ আর আমাকে রক্ষা করুন شَرَّ مَا قَضَيْتَ আপনার ফায়সালাকৃত অমঙ্গল থেকে, إنَّكَ تَقْضِيْ নিশ্চয় আপনার ফায়সালা করেন, وَلَا يُقْضٰى عَلَيْكَ আপনার উপর কেউ ফায়সালা করে না। وَإنَّهٗ لَا يَذِلُّ আর অপমানিত হয় না مَنْ وَّالَيْتَ আপনি যাকে সহায়তা দিয়েছেন। وَلَا يَعِزُّ আর ঐ ব্যক্তি কখনো সম্মান পায় না مَنْ عَادَيْتَ আপনি যাকে ত্যাগ করেছেন। تَبَارَكْتَ رَبَّنَا হে আমাদের মালিক! আপনি বরকতময় وَتَعَالَيْتَ আর আপনি মহান, نَسْتَغْفِرُكَ আমরা আপনার কাছেই ক্ষমা চাই, وَ نَتُوْبُ اِلَيْكَ আর আপনার দিকেই ফিরে আসি, وَ صَلَّى اللهُ আল্লাহ রহমত নাযিল করুন عَلَى النَّبِىِّ নবীর প্রতি। (আবু দাউদ, হা/১৪২৭)

দু‘আ কুনূত- ২

اَللّٰهُمَّ إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ وَ نَسْتَغْفِرُكَ وَ نُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلَانَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ - اَللّٰهُمَّ إيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَإلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ إنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ

শাব্দিক অর্থ : اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إنَّا نَسْتَعِيْنُكَ আমরা আপনার সাহায্য চাই, وَ نَسْتَغْفِرُكَ আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, وَنُؤْمِنُ بِكَ আর আপনার প্রতি ঈমান রাখি, وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ আপনার উপর ভরসা করি, وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ আর আপনার উত্তম গুণগান করি, وَنَشْكُرُكَ আপনার শুকরিয়া আদায় করি, وَلَانَكْفُرُكَ আপনাকে অস্বীকার করি না, وَنَخْلَعُ আমরা ত্যাগ করি وَنَتْرُكُ এবং বর্জন করে চলি مَنْ يَّفْجُرُكَ যে আপনার নাফরমানী করে। اَللّٰهُمَّ হে আল্লাহ! إيَّاكَ نَعْبُدُ আমরা কেবল আপনারই ইবাদাত করি, وَلَكَ نُصَلِّىْ আপনার জন্যই সালাত পড়ি, وَنَسْجُدُ আপনাকেই সিজদা করি, وَإلَيْكَ نَسْعٰى আর আপনার সন্তুষ্টি তালাশের জন্য দ্রুত অগ্রসর হই, وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ আর আমরা আশা রাখি رَحْمَتَكَ আপনার রহমতের, وَنَخْشٰى আর আমরা ভয় করি عَذَابَكَ আপনার আযাবকে, إنَّ عَذَابَكَ নিশ্চয় আপনার আযাব بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ কাফিরদের জন্য অবধারিত। তাবারানী, হা/৭৫০; ।

৩৯
প্রাত্যহিক জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু সহীহ হাদীস
এই অধ্যায়ে প্রাত্যহিক জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সহীহ হাদীস উল্লেখ করা হলো। অনেকেই এই হাদীসগুলো জানা না থাকার কারণে আমল করতে পারেন না বা অন্য কোন মুসলিম ভাইকে এর উপর আমল করতে দেখে তাকে ভিন্ন চোখে দেখেন। তাই আপনাদের জানার ও আমলের সুবিধার্থে সহীহ বুখারী থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সহীহ হাদীস উল্লেখ করা হলো। উল্লেখ্য যে, সহীহ বুখারী হলো হাদীসের কিতাবসমূহের মধ্যে সবচেয়ে সহীহ কিতাব, যাতে কোন জয়ীফ ও জাল হাদীস নাই। তারপর মুসলিম শরীফ। আপনাদের সুবিধার্থে হাদীসগুলো ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত সহীহ বুখারী থেকে নেয়া হয়েছে। শীঘ্রই বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ এসব সহীহ হাদীসের কিতাব কিনুন।

১. আলকামা ইবনে ওয়াক্কাস (রঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি উমর (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন শুনেছিঃ প্রত্যেক কাজ নিয়তের সাথে সম্পর্কিত। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী ফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের জন্য অথবা কোন নারীকে বিয়ে করার উদ্দেশ্যে-সেই উদ্দেশ্যই হবে তার হিজরতের প্রাপ্য। বুখারী, ১ম খন্ড, হাদীস নং ১।

শিক্ষাঃ একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই নেকীর কাজ করুন। ঈমানসহ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে আমল করলেই কেবল তা কবুল হবে।

২. ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি- (১) আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নাই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ ﷺ আল্লাহর রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দেয়া, (২) সালাত কায়েম করা, (৩) যাকাত দেয়া, (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রমযান মাসে সিয়াম পালন করা।

বুখারী ১ম খন্ড, হাদীস নং ৭।

৩. আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহবা ও হাত থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে এবং প্রকৃত মুহাজির সে, যে আল্লাহ তা’আলার নিষিদ্ধ কাজ ত্যাগ করে।

বুখারী, ১ম খন্ড, হাদীস নং ৯।

৪. আবু মুসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলামে কোন্ কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, যার জিহবা ও হাত থেকে মুসলিমগণ নিরাপদ থাকে। বুখারী ১ম খন্ড, হাদীস নং ১০।

অন্য বর্ণনায়, তুমি খাবার খাওয়াবে ও পরিচিত অপরিচিত সবাইকে সালাম করবে। বুখারী, হাদীস নং ১১ ও ২৭

রাসূল ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা-ই পছন্দ করবে, যা নিজের জন্য পছন্দ করবে।

বুখারী, হাদীস নং ১২।

শিক্ষাঃ কাউকে কষ্ট দেয়া যাবে না। ইসলামে সন্ত্রাস, হরতাল, ভাংচুর, অন্যকে কষ্ট দেয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

৫. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, সেই পবিত্র সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা ও সন্তানের চেয়ে বেশী প্রিয় হই।

বুখারী হাদীস নং ১৩।

৬. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, তার সন্তান ও সব মানুষের চেয়ে বেশী প্রিয় হই। বুখারী, হাদীস নং ১৪।

৭. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে থাকে, সে ঈমানের স্বাদ পায়- ১। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয়, ২। কাউকে খালিসভাবে আল্লাহর জন্যই মুহববত করা, ৩। কুফরীতে ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা।

বুখারী, হাদীস নং ১৫ ও ২০।

জ্ঞাতব্যঃ রাসূল ﷺ এর প্রিয় হলো সে, যে সুন্নত অনুযায়ী আমল করে এবং বিদআতকে বর্জন করে।

৮. আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ সাহাবীদেরকে যখন কোন আমলের নির্দেশ দিতেন, তখন তাঁরা যতটুকুর সামর্থ রাখতেন ততটুকুরই নির্দেশ দিতেন। একবার তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো আপনার মত নই। আল্লাহ আপনার পূর্বের ও পরের সকল ত্রুটি মাফ করে দিয়েছেন। একথা শুনে তিনি রাগ করলেন, এমনকি তাঁর চেহারায় রাগের চিহ্ন প্রকাশ পেল। এরপর তিনি বললেন, তোমাদের চাইতে আল্লাহকে আমিই বেশি ভয় করি ও বেশি জানি। বুখারী, হাদীস নং ১৯।

৯. রাসূল ﷺ বলেন, কিয়ামতের কিছু নিদর্শন হল, ইলম (জ্ঞান) লোপ পাবে, অজ্ঞতার বিস্তৃতি ঘটবে, মদপান ব্যাপক হবে ও ব্যাভিচার ছড়িয়ে পড়বে। বুখারী, হাদীস নং ৮০।

জ্ঞাতব্যঃ চারিদিকে পাপাচার ছড়িয়ে পড়েছে। ইসলামের নামে শিরক-বিদআত বাড়ছে। অধিকাংশ লোক দ্বীনকে দুনিয়া লাভের জন্য ব্যবহার করছে। তাই যথাসম্ভব বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ঘরে বসে কুরআন-সুন্নাহ (বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ইত্যাদি) থেকে দ্বীন ইসলামের জ্ঞান অর্জন করুন। সেই অনুযায়ী আমল করুন।

১০. আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেন, তোমরা আমার উপর মিথ্যারোপ করো না, কারণ আমার উপর যে মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। বুখারী,১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭৭, হাদীস ১০৭।

তাই সাবধান, যাচাই বাচাই না করে জাল/জয়ীফ হাদীস প্রচার করা থেকে বিরত থাকুন। অনুবাদসহ কুরআন পড়ুন এবং বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ ও নাসাঈ থেকে সহীহ হাদীস পড়ুন। বিশুদ্ধভাবে নিজে আমল করুন। সহীহ হাদীস প্রচার করুন।

১১. হুযায়ফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি রুকু-সিজদা পুরোপুরি আদায় করছিল না। সে যখন সালাত শেষ করলো তখন তাকে হুযায়ফা (রাঃ) বললেন, তোমার সালাত ঠিক হয়নি। এ কথাও বলেন, এ অবস্থায় তোমার মৃত্যু হলে তা মুহাম্মদ ﷺ এর তরীকা অনুযায়ী হবে না।

১ম খন্ড, বুখারী, হাদীস নং ৩৮২।

তাই ধীরে সুস্থে রুকু-সিজদা আদায় করুন।

* কবর কেন্দ্রিক মসজিদে সালাত আদায় করা নিষেধ। ১ম খন্ড, পৃ ২৩৮-২৪০।

১২. আবু কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করে। পৃ-২৪৪, হাদীস ৪৩১। মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ এসব কিতাবেও হাদীসটি আছে।

এটি রাসূল ﷺ এর নির্দেশ যা অমান্য করা অন্যায়। মসজিদে গিয়ে বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করুন। সালাতের নেকীর সাথে সুন্নত জিন্দা করার সওয়াব পাবেন।

* মসজিদ নিয়ে গর্ব করা ও মসজিদ অতিরিক্ত সৌন্দর্যমন্ডিত করা ইয়াহুদী ও নাসারাদের কাজ। পৃ-২৪৪-২৫৫।

উল্লেখ্য যে, পরিস্কার রাখা আর সৌন্দর্যমন্ডিত করা এক নয়। মসজিদে অপ্রয়োজনীয় সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার চেয়ে বিদআত মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরী। সহীহ হাদীসের দলিলবিহীন, শিরক বিদআতে ভরা, মুরুবিব/বুজুর্গদের কিচ্ছা কাহিনী ও স্বপ্নের বিবরণ লেখা কিতাব পড়া ও শোনা থেকে বিরত থাকুন। মসজিদে কুরআন ও সহীহ হাদীসের (বুখারী, মুসলিম) তালিম চালু করুন। সাধারণ মুসলিম কুরআনের জ্ঞান শূণ্য। মসজিদে কুরআন বুঝার ক্লাশ ও তাফসীর পড়া চালু করুন। অনেক নেকী হবে।

১৩. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেছেন, আমি রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোন আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, যথাসময়ে সালাত আদায় করা। ইবনে মাসউদ (রাঃ) পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, পিতা-মাতার প্রতি সদ্বব্যবহার। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, এরপর কোনটি? রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৭, বুখারী, হাদীস নং ৫০২।

যথাসময়ে রাসূল ﷺ এর পদ্ধতিতে ধীরে-সুস্থ্যে সালাত আদায় করুন। বাবা-মাকে মান্য করুন।

১৪. আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল ﷺ কে বলতে শুনেছেন, বলত যদি তোমাদের কারো বাড়ীর সামনে একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রত্যহ পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার দেহে কোন ময়লা থাকবে? তারা বললেন, তার দেহে কোনরূপ ময়লা বাকী থাকবে না। রাসূল ﷺ বললেন ঃ এ হল পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের উদাহরণ। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলা (বান্দার) গুনাহসমূহ মিটিয়ে দেন। বুখারী, ২য় খন্ড, পষ্ঠা ৭, হাদীস ৫০৩।

* বিনয়/খুশু-খুযুর সাথে সালাত আদায় করুন।

১৫. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আজকাল কোন জিনিসই সে অবস্থায় পাই না, যেমন নবী ﷺ এর যুগে ছিল। প্রশ্ন করা হল, সালাতও কি? তিনি বললেন, সে ক্ষেত্রেও যা হক নষ্ট করার তা-কি তোমরা করনি।

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৮, হা ৫০৪ ও ৫০৫।

অন্য হাদীসে আছে, তোমাদের কেউ যখন সালাতে দাঁড়ায়, তখন সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে গোপনে কথা বলে (মুনাজাত করে)।

বুখারী,২য় খন্ড, পৃ-৮, হা-৫০৬।

উল্লেখ্য, ফরজ সালাতের পরে সম্মিলিতভাবে হাত তুলে মুনাজাত করার কথা কোন হাদীসে পাওয়া যায় না তাই এটা বিদআত। এটা বর্জন করুন। ফরজ সালাতের পর সহীহ হাদীসে উল্লেখিত মাসনুন দু‘আগুলো পড়ুন।

১৬. আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আসরের সালাত আদায় করতাম, তারপর আমাদের কোন গমনকারী কুবার দিকে যেত এবং সূর্য যথেষ্ট উপরে থাকতেই সে তাদের কাছে পৌঁছে যেত। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-১৫, হা-৫২৩।

১৭. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির আসরের সালাত ছুটে যায়, তাহলে যেন তার পরিবার-পরিজন ও মাল-সম্পদ সব কিছুই ধ্বংস হয়ে গেল। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-১৬, হা-৫২৫।

যে ব্যক্তি আসরের সালাত ছেড়ে দেয় তার আমল নষ্ট হয়ে যায়।

বুখারী, হা-৫২৬, ৫৬৭।

১৮. রাফি ইবনে খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমরা নবী ﷺ এর সঙ্গে মাগরিবের সালাত আদায় করে এমন সময় ফিরে আসতাম যে, আমাদের কেউ (তীর নিক্ষেপ করলে) নিক্ষিপ্ত তীর পতিত হওয়ার স্থান দেখতে পেত।

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-২০, হা-৫৩২।

* প্রথম ওয়াক্তে (আওয়াল ওয়াক্তে) সালাত আদায় করুন।

১৯. মুহাম্মদ ইবনে আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ যোহরের সালাত প্রচন্ড গরমের সময় আদায় করতেন। আর আসরের সালাত সূর্য উজ্জল থাকতে আদায় করতেন, মাগরিবের সালাত সূর্য অস্ত যেতেই আর ইশার সালাত বিভিন্ন সময়ে আদায় করতেন। যদি দেখতেন, সবাই সমবেত হয়েছেন, তাহলে তখনই আদায় করতেন। আর যদি দেখতেন লোকজন আসতে দেরী করছে তাহলে বিলম্ব করতেন। আর ফজরের সালাত রাসূল ﷺ অন্ধকার থাকতে আদায় করতেন। বুখারী, হা-৫৩৩।

অবশ্য প্রচন্ড গরমের সময় দেরী করে যোহরের সালাত আদায়েরও হাদীস আছে।

২০. আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মুসলিম মহিলাগণ সর্বাঙ্গ চাদরে ঢেকে রাসূল ﷺ এর সঙ্গে ফজরের জামা’আতে হাযির হতেন। তারপর সালাত আদায় করে তারা যার যার ঘরে ফিরে যেতেন। হালকা আঁধারের কারণে তাঁদেরকে চিনতে পারত না। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-২৮, হা-৫৫১।

২১. আবু বারযা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূল ﷺ ইশার পূর্বে নিদ্রা যাওয়া এবং পরে কথাবার্তা বলা অপছন্দ করতেন। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-২৪, হা-৫৪১ ও ৫৭২।

২২. রাসূল ﷺ বলেছেন, প্রত্যেক আযান ও ইকামাতের মধ্যে সালাত রয়েছে। একথা তিনি তিনবার বলেন, তারপর বলেন, যে চায় তার জন্য।

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৪৯, হা-৫৯৬, ৫৯৯।

২৩. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন বসার পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করে। বুখারী-৪৪৪, মুসলিম-৭১৪, আবু দাউদ-৪৬৭, তিরমিযি-৩১৬, নাসাঈ-৭৩০, ইবনে মাজাহ-৭৯৯।

২৪. রাসূল ﷺ বলেছেন, আযান ও ইকামাতের মাঝখানের দু‘আ কখনো ফেরত দেয়া হয় না। আবু দাউদ-৫২১, তিরমিযি, নাসাঈ।

২৫. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখেছ সেভাবে সালাত আদায় করবে। (শিক্ষনীয় অংশবিশেষ)

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫২, হা-৬০৩।

২৬. রাসূল ﷺ বলেছেন, যখন তোমরা ইকামাত শুনতে পাবে, তখন সালাতের দিকে চলে আসবে, তোমাদের উচিত ধীরস্থিরতা ও গাম্ভীর্য বজায় রাখা। তাড়াহুড়া করবে না। ইমামের সাথে যতটুকু পাও তা আদায় করবে, আর যা ছুটে যায় তা পুরা করে নিবে। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৪, হা-৬০৮, ৬১০।

২৭. রাসূল ﷺ বলেছেন, জামা’আতে সালাতের ফযীলত একাকী আদায়কৃত সালাতের থেকে সাতাশ গুন বেশী। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৫৮, হা-৬১৭।

২৮. অন্য হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি সকালে বা বিকালে যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর আয়োজন করেন।

বুখারী, হাদীস নং-৬২৯।

* সালাতের জন্য দৌড়ে আসা নিষেধ। ধীরে ধীরে আসুন।

২৯. রাসূল ﷺ এক ব্যক্তিকে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে দেখলেন তখন ইকামত হয়ে গেছে। সালাত শেষে লোকেরা তাকে ঘিরে ধরল, রাসূল ﷺ বললেন, ফজরের সালাত কি চার রাকাত? ফজরের সালাত কি চার রাকাত?

* ইকামাত হয়ে গেলে অন্য সালাত আদায় করা যাবে না।

(বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬৪, হা-৬৩০)

৩০. আয়িশা (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ ঘরে থাকা অবস্থায় কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকতেন, পরিবারকে সহায়তা করতেন আর সালাতের সময় হলে সালাতে চলে যেতেন। বুখারী, হাদীস নং ৬৪২।

৩১. একবার মালিক ইবনে হুওয়াইরিস (রাঃ) মসজিদে সালাত আদায় করে লোকদেরকে রাসূল ﷺ এর সালাত আদায়ের পদ্ধতি দেখালেন। তাতে তিনি প্রথম রাকাতের সিজদা শেষ করে যখন মাথা উঠাতেন, তখন দাঁড়াবার আগে একটু বসে নিতেন। (শিক্ষনীয় অংশবিশেষ)

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ৭০, হাদীস নং-৬৪৩।

৩২. আনাস (রাঃ) বলেন, নবী ﷺ সালাত সংক্ষেপে এবং (রুকু, দাড়ানো, সিজদা, বসা ইত্যাদি) পূর্ণভাবে (ধীরে-সুস্থে) আদায় করতেন।

২য় খন্ড, পৃ-৮৭, হা-৬৭১।

৩৩. নবী ﷺ বলেন, আমি অনেক সময় দীর্ঘ করে সালাত আদায়ের ইচ্ছা নিয়ে দাড়াই। পরে শিশুর কান্নাকাটি শুনে সালাত সংক্ষেপ করি।

২য় খন্ড, হা-৬৭২-৬৭৫।

শিক্ষাঃ মসজিদে মহিলাদের জন্য সালাতের ব্যবস্থা থাকা ভাল। মহিলারা পর্দার সাথে শিশুদের নিয়েও মসজিদে যেতে পারবে। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-১৬০-১৬৩ দেখুন।

মার্কেটে, পার্কে, পিকনিকে, বেহায়াপনায়, নাচ-গানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করুন।

৩৪. নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেন, তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা করে নিবে, তা না হলে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করে দিবেন। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৯৩, হা-৬৮২, ৬৮৩।

৩৫. আনাস (রাঃ) বলেন, সালাতের ইকামাত হচ্ছে, এমন সময় রাসূল ﷺ আমাদের দিকে মুখ করে তাকালেন এবং বললেন, তোমাদের কাতারগুলো সোজা করে নাও আর মিলে দাঁড়াও। বুখারী, পৃ-৯৩, হা ৬৮৪ (কাতার সোজা করার সময় মুক্তাদিদের প্রতি ইমামের ফিরে দেখা অনুচ্ছেদ)

কাতার সোজা করা সালাতের পূর্ণতার অঙ্গ। সালাতের সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।

তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রত্যেকেই তার পাশ^র্বর্তী ব্যক্তির কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের সাথে পা মিলাতাম। বুখারী, পৃ-৯৫, হা-৮৯। কাতারে কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মিলানো অনুচ্ছেদ।

বিস্তারিত জানার জন্য মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ ইত্যাদি কিতাবসমূহের ‘‘কাতার সোজা করা’’ অধ্যায় দেখুন।

শিক্ষাঃ ইমামকে ইকামাত হওয়ার পর মুসল্লিদের দিকে ফিরে বলতে হবে, ‘‘কাতার সোজা করে দাঁড়ান, মিলে মিশে দাঁড়ান, দুজনের মাঝখানে ফাঁকা বন্ধ করুন, ফাকা থাকলে সেখানে বকরীর বাচ্চার মত শয়তান প্রবেশ করে ওসওয়াসা দিয়ে সালাতের মনোযোগ নষ্ট করে।’’ আবু দাউদ। জামায়াতে সালাত আদায়ের সময় মুসল্লিদেরকে পরস্পরের কাঁধের সাথে কাঁধ ও পায়ের সাথে পা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে।

এটা নবীর নির্দেশ, সাহাবীদের আমল। ফাকা রাখা সুন্নতের খেলাফ। এজন্যই হয়ত আমাদের মাঝে এত মতবিরোধ। মতভেদ বাদ দিয়ে সুন্নতের উপর আমল করুন। সুন্নত জিন্দা করুন।

৩৬. তাউস (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ সালাতরত অবস্থায় ডান হাত বাম হাতের উপর স্থাপন করে তা নিজের বুকের উপর বেঁধে রাখতেন। সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, কিতাবুস সালাত অধ্যায়, পৃষ্ঠা নং ৪১১, বুখারী, হাদীস নং ৭৫৯। এই হাদীসটি সহীহ, সহীহ ইবনে খুযায়মাতে এর একটি সাহেদ (সমার্থক) হাদীস আছে, বুখারী, হাদীস নং ৪৫৯।

নাভীর নিচে হাত বাঁধার হাদীসগুলো সহীহ নয়। দেখুন আবু দাউদ, পৃষ্ঠা নং ৪১০।

দল-মত মতভেদ ভুলে নাবী ﷺ এর অনুরূপ আমল করাটাই (সালাতে বুকের উপর হাত বাঁধাটাই) মুসলিম উম্মাহর জন্য নিরাপদ ও সঠিক। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিকটা বুঝার ও আমল করার জন্য তৌফিক দান করুন। আমিন।

৩৭. সালিম ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বলেন, রাসূল ﷺ যখন সালাত শুরু করতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন। আর যখন রুকুতে যাওয়ার জন্য তাকবীর বলতেন এবং রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও অনুরূপভাবে দু’হাত উঠাতেন এবং সামিআ’ল্লাহু লি মান হামিদাহ ও রাববানা ওয়া লাকাল হামদ বলতেন। কিন্তু সিজদায় এরূপ করতেন না। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা নং ১০০, ৬৯৯। বর্ণনাকারী রাবীঃ আবদুল্লাহ ইবনে মাসলামা (রঃ)। এই হাদীস অনেক সনদে আছে।

৩৮. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আমি রাসূল ﷺ কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতের জন্য দাঁড়াতেন তখন উভয় হাত কাঁধ বরাবর উঠাতেন এবং যখন রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এরূপ করতেন এবং সামিআ’ল্লাহু লি মান হামিদাহ বলতেন। কিন্তু সিজদায় এরূপ করতেন না। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০০, হাদীস নং ৭০০, অনুচ্ছেদঃ তাকবীরে তাহরীমা, রুকুতে যাওয়া এবং রুকু থেকে উঠার সময় উভয় হাত উঠানো।

৩৯. আবু কিলাবা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি মালিক ইবনে হুওয়ায়রিস (রাঃ) কে দেখেছেন, তিনি যখন সালাত আদায় করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং তাঁর দু’হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করার ইচ্ছা করতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন, আবার যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখনও তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং তিনি বর্ণনা করেন যে, রাসূল ﷺ এরূপ করেছেন।

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০১, হাদীস ৭০১। বর্ণনাকারীঃ ইসহাক ওয়াসিতী (রঃ)। এই হাদীস অনেক সনদে আছে।

৪০. আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী ﷺ কে তাকবীর দিয়ে সালাত শুরু করতে দেখেছি, তিনি যখন তাকবীর বলতেন তখন তাঁর উভয় হাত উঠাতেন এবং কাঁধ বরাবর করতেন। আর যখন রুকুর তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন। আবার যখন সামিআ’ল্লাহু লি মান হামিদাহ বলতেন তখনও এরূপ করতেন এবং রাববানা ওয়া লাকাল হামদ বলতেন। কিন্তু সিজদায় যেতে এরূপ করতেন না।

বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০১, হাদীস ৭০২। বর্ণনাকারী ঃ আবুল ইয়ামান (রঃ)।

৪১. নাফি (রঃ) থেকে বর্ণিত। ইবনে উমর (রাঃ) যখন সালাত শুরু করতেন তখন তাকবীর বলতেন এবং দু’হাত উঠাতেন আর যখন রুকু করতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন। এর যখন সামিআ’ল্লাহু লিমান হামিদাহ বলতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন এবং দু’রাকাত আদায়ের পর যখন দাঁড়াতেন তখনও দু’হাত উঠাতেন।

এ সমস্ত রাসূল ﷺ থেকে বর্ণিত বলে ইবনে উমর (রাঃ) বলেছেন। এ হাদীসটি হাম্মাদ ইবনে সালামা ইবনে উমর (রাঃ) এর সূত্রে নবী ﷺ থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনে তাহমান, আইউব ও মূসা ইবনে উকরা (রঃ) থেকে এ হাদীসটি সংক্ষেপে বর্ণনা করেছেন। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১০২, হাদীস ৭০৩।

আরও জানার জন্য দেখুনঃ মুসলিম, ২য় খন্ড, হাঃ ৭৪৫-৭৫০, ৭৮০; আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৭২১-৭২৩, ৭২৬, ৭৩০, ৭৩৮-৭৪৫; তিরমিযি, ১ম খন্ড,২৫৫, নাসাঈ, ২য় খন্ড, হাঃ ৮৮০-৮৮৪ ও ৮৯২; ইবনে মাজাহ, ১ম খন্ড, হাঃ ৮৫৮-৮৬৮; মুয়াত্তা মালেক-১৬, ২০; মুসনাদে আহমাদ ৪৮৮,৪৯১,৪৯৩, ৪৯৪; মিশকাত, ২য় খন্ড, মাদ্রাসার পাঠ্য, হাঃ ৭৩৭-৭৪৫।

এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাতে রুকুতে যাওয়ার সময়, রুকু থেকে উঠার পর ও ৩/৪ রাকাতের সালাতের ২য় রাকাত থেকে উঠার পর দু’হাত কাধ পর্যন্ত উঠানো (রফউল ইয়াদাইন করা) রাসূল ﷺ এর একটি উত্তম সুন্নত- যা তাঁর সাহাবীগণ ও যুগে যুগে তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, ইমাম, মুহাদ্দিসগণ পালন করেছে এবং সর্বযুগের সুন্নতের অনুসারী মুসলিমগণ পালন করছেন। হাজীদের কাছে জেনে দেখুন মক্কা-মদিনা ও আরব বিশে^র বহু মুসল্লিরা এটা পালন করেন। ইমাম বুখারী এ ব্যাপারে ’’জুজউল রউফল ইয়াদাইন’’ নামে স্বতন্ত্র একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। সুতরাং রউফল ইয়াদাইনকে আহলে হাদীসদের রীতি বলে বিদ্বেষবশত পরিত্যাগ করা রীতিমত অন্যায়। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন, হাদীস সহীহ হলে সেটাই আমার মাযহাব। এর উপর আমল না করা সুন্নতের পরিপন্থী। আর রসুল ﷺ এর সুন্নতকে অপছন্দ করা ঈমান ভঙ্গের কারণ সমূহের একটি অন্যতম কারণ। সুতরাং সাবধান। রাফউল ইয়াদাইন না করলে আপনার সালাত রাসূল ﷺ এর সালাতের মত হলো না। আর রাসূল ﷺ কে আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাত শেখানো হয়েছে, জিবরাঈল (আঃ) ক্বাবা ঘরের পাশে নিজে নবী ﷺ কে সালাত আদায় করে শিখিয়েছেন। বুখারী, ২য় খন্ড, ৪৯৭; মুসলিম, ২য় খন্ড, ১২৫৪, ১২৫৫, তিরমিযি-১৪২, মিশকাত, আলীম ক্লাসে পাঠ্য, ২য় খন্ড ৫৩৭।

রাসূল ﷺ এর সুন্নতকে অনুসরণ করা সকল মুসলিমের জন্য অপরিহার্য আর রাসূল ﷺ এর সুন্নতের বিরুধীতা করা মারাত্মক গুনাহ। (আখেরাতে মুক্তি পাবার জন্য কুরআন ও সহীহ হাদীস বুঝে বুঝে পড়ে দেখুন)।

রাসূল ﷺ কে সত্যিই যদি ভালোবেসে থাকেন আর আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চান (সূরা আলে ইমরান ৩১) এবং আমল নষ্ট না করতে চান (সূরা মুহাম্মদ ৩৩) তবে সালাতে রফউল ইয়াদাইন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত অন্যান্য সুন্নতকে ভালবাসুন, আমল করুন এবং সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত সুন্নতকে নয় বরং সকল প্রকার শিরক-বিদআত পরিত্যাগ করুন। না জানার কারণে আমরাও আগে আমল করিনি। কিন্তু এখন করছি এবং আমাদের মত অনেকেই এখন আমল করছে। আপনিও করুন। সুন্নত জিন্দা করার দলে যোগ দিন। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করার জন্য তৌফিক দান করুন। আমিন।

সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া জরুরী, মুকীম অবস্থায় হোক বা সফরে, সশব্দ কিরাআতের সালাত হোক বা নিঃশব্দের, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদীর সূরা ফাতেহা পড়া জরুরী। বুখারী, ২য় খন্ড, পৃ-১০৮, অনুচ্ছেদ-৪৮৭।

৪৩. রাসূল ﷺ বলেছেন, যে ব্যক্তি সালাতে সূরা ফাতিহা পড়ল না তার সালাত হল না। বুখারী, হা-৭২০।

৪৪. ইমামের সশব্দে আমীন বলা। আতা (রঃ) বলেন, আমীন হল দু‘আ। তিনি আরও বলেন আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রাঃ) ও তাঁর পিছনের মুসুল্লীগণ এমনভাবে আমীন বলতেন যে, মসজিদে গুমগুম আওয়াজ হতো। (মক্কা-মদিনায় আজও হয়, হাজিদের জিজ্ঞাসা করুন) আবু হুরায়রা (রাঃ) ইমামকে ডেকে বলতেন আমাকে আমীন বলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না। নাফি (রঃ) বলেন, ইবনে উমর (রাঃ) কখনই আমীন বলা ছাড়তেন না এবং তিনি তাদেরকে আমীন বলার জন্য উৎসাহিত করতেন। বুখারী, পৃ-১২০।

রাসূল ﷺ বলেছেন, ইমাম যখন আমীন বলেন, তখন তোমরাও আমীন বল। কেননা, যার আমীন ও ফিরিশতাদের আমীন এক হয়, তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। ইবনে শিহাব (রঃ) বলেন, রাসূল ﷺ আমীন বলতেন। বুখারী, পৃ-১২১, হা-৭৪৪। মুক্তাদীর সশব্দে আমীন বলা। অনুচ্ছেদ ৫০৪।

মুসলিম, আবু দাউদ সহ অন্যান্য হাদীসের কিতাবেও দেখতে পারেন। অন্য কারো কথা মানবেন না, গুনাহ মাফের এত বড় সুযোগ ছাড়বেন না। জেহরী সালাতে উচ্চস্বরে আমিন বলুন। এটাই সঠিক। না জানার কারণে আমরাও এই হাদীসগুলোর উপর আমল করতাম না। এখন জানার পর আমল করছি। আপনারাও আমল করুন।

৪৫. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম যে নিজে কুরআন শিক্ষা করে ও অন্যকে কুরআন শিক্ষা দেয়। বুখারী, হা- ৫০২৭।

৪৬. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমরা কুরআন পাঠ কর, কুরআন কিয়ামতের দিন পাঠকারীর জন্য সুপারিশ করবে। মুসলিম, হা- ১৭৪৭,।

৪৭. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ কি পছন্দ করে বুহতান নামক জায়গা থেকে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করে দুইটি উট নিয়ে আসবে। সাহাবীরা বলছেন, আমরা সবাই পছন্দ করি। রাসূল ﷺ বললেন, তোমাদের কেউ সকালে মসজিদে গিয়ে কুরআন থেকে দুইটি বা তিনটি আয়াত শিখে বা অন্যকে শিখায় না কেন? মুসলিম, হা- ১৯০৯।

কুরআন পড়া, শিক্ষা দেয়া, অনুবাদসহ পড়ে শোনানোর জন্য উত্তম সময় হলো ফজরের সালাতের পর। দিনের অন্যান্য সময় সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই যারা কুরআন পড়তে পারেন তাদের কাছে অনুরোধ ফজরের সালাতের পর মাসনুন দু‘আগুলো শেষ করে যারা কুরআন পড়তে পারেন না তাদেরকে কুরআন শেখান, অনুবাদসহ পড়ে শোনান। আগ্রহী কেউ না থাকলে অন্তত নিজে কিছুক্ষণ কুরআন পাঠ করুন। তাহলে অন্যদের আগ্রহ বাড়বে। যারা পড়তে পারেন না তারা যারা পড়তে পারেন তাদের কাছে পড়তে শিখুন। ৩০/৪০ দিনের মধ্যেই কুরআন পড়া শিখতে পারবেন ইন-শা-আল্লাহ।

অনেকেই মসজিদে প্রবেশ করে সময় থাকলেও বসে পড়েন। এটা সুন্নতের বিরোধী। মসজিদে প্রবেশের পর সময় থাকলে বসার পূর্বে দুই রাকাত সালাত আদায় করুন, তারপর সময় থাকলে একা একা হাত তোলে চুপি চুপি দু‘আ করুন। (হাদীস উপরে উল্লেখ্য করা হয়েছে)। আমাদের দেশে অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে এমনিতেই বসে থাকেন। মক্কা মদীনায় দেখেছি সময় পেলেই লোকজন কুরআন পাঠ করছে। এটা খুবই ভাল অভ্যাস। তাই সময় থাকলে নিমণস্বরে কুরআন পাঠ করুন। একদিকে কুরআন পাঠ করার জন্য নেকী পাবেন অন্যদিকে আপনাকে দেখে প্রভাবিত হয়ে বা আপনার প্রচারে অন্য যারা আমল করবেন তাদের নেকীও আপনি পাবেন।

৪৮. রাসূল ﷺ বলেছেন, তোমাদের কেউ ফজরের সালাতের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মসজিদে বসে বসে আল্লাহর যিকির করে অতপর দুই রাকাত সালাত আদায় করে সে এক কবুল হজ্বের ও উমরার সওয়াব পাবে। তিরমিযী, হা- ৫০৮৬।

আল্লাহ আমাদের বুঝার ও আমল করার তৌফিক দিন। আমিন।

৪০
প্রয়োজন ইখলাস (নিষ্ঠা), আন্তরিক প্রচেষ্ঠা ও মুত্তাকী হবার আকাঙ্খা
কুরআন বুঝা ও মুত্তাকী হবার জন্য অগ্রগামী হওয়া মোটেও কঠিন কিছু নয়। এর জন্য প্রয়োজন ইখলাস (নিষ্ঠা), আন্তরিক প্রচেষ্টা ও আকাঙ্খা। এর পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে বিনয়ের সাথে দু‘আ করলেই আল্লাহ আপনার জন্য একাজ সহজ করে দিবেন ইন-শা-আল্লাহ। মনে রাখবেন দিন-রাত ২৪ ঘন্টা সময় আল্লাহ আপনাকে প্রতিদিন দান করেন। জীবনের এই দিনগুলো একদিন শেষ হয়ে যাবে, ধন-সম্পদ সব পৃথিবীতেই থেকে যাবে। সুতরাং সেখান থেকে যেটুকু অর্থ ও সময় কিতাব ক্রয়ের জন্য আর কুরআন বুঝার জন্য ব্যয় করব সেটাই আখেরাতে আমার কাজে আসবে। তাই আল্লাহ আমাকে যে সময় ও অর্থ দান করেছেন এর মধ্য থেকে দুনিয়া ও আখেরাতে চরম সাফল্য লাভের জন্য মুত্তাকী হবার অভিপ্রায়ে মহান আল্লাহর কালাম কুরআন মাজীদ বুঝার জন্য ৩০/৪০ মিনিট সময় প্রতিদিন ব্যয় করলেই ১/২ মাসের মধ্যেই আপনি কুরআনের অনেক আয়াত বুঝতে সক্ষম হবেন ইন-শা-আল্লাহ। এভাবে পরিকল্পনা করতে পারেন, ফজর সালাতের পর কিছু সময় কুরআন বুঝার কাজে ব্যয় করব ইন-শা-আল্লাহ। আর এর জন্য আল্লাহও আমার প্রতি দয়া করবেন এবং মুত্তাকী হিসাবে যে পুরস্কারের সুসংবাদ আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন তা দান করবেন। কোন কারণে সকালে না পারলে দুপুরে যোহরের পর বা আসরের পর, তাও না পারলে মাগরিবের পর বা এশার পর শোয়ার আগে কিছু সময় কুরআন বুঝার কাজে ব্যয় করব ইন-শা-আল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের প্রতি সহায় হোন। আমীন !

পরিশেষে আল্লাহর শিখানো পদ্ধতিতে একান্ত বিনয়ের সাথে আল্লাহর কাছে দু‘আ করতে হবে ঃ

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ اَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ اَعْيُنٍ وَّاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِيْنَ اِمَامًا

হে আমাদের রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। (সূরা ২৫/ফুরকানঃ ৭৪)।

আহবানঃ

১. তাওহীদ ও সুন্নাহ আঁকড়ে ধরুন।

২. শিরক-বিদআত বর্জন করুন।

৩. ঈমানটা শুদ্ধ করুন।

৪. বিদআতমুক্ত আমল করুন।

৫. সময় মত নামায পড়ুন।

৬. বুঝে বুঝে কুরআন পড়ুন।

৭. সহীহ দেখে হাদীস পড়ুন।

৮. জান্নাতের পথ চিনে নিন।

৯. দলিল দিয়ে দাওয়াত দিন।

১০. গুনাহর বিষয় ছেড়ে দিন।

১১. তওবা-যিকির সাথে নিন।

এই কাজগুলো করবেন যত

আল্লাহর প্রিয় হবেন তত,

মরার পরে শান্তি পাবেন

জান্নাত লাভে ধন্য হবেন।

শেষ অনুরোধঃ

কিতাবটি ভাল লাগলে দাওয়াতী কাজের জন্য সদকায়ে জারিয়ার নিয়তে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্দবদের উপহার দিন। কমপক্ষে অন্যের কাছে বিষয়টি আলোচনা করুন। আরো সুন্দর করার জন্য পরামর্শ থাকলে মোবাইলে জানান। আল্লাহ আমাদের সকলকে উত্তম পুরস্কার দান করুন। আমীন।

اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِي بِنِعْمَتِه تَتِمُّ الصَّالِحَاتُ

وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلٰى رَسُوْلِهٖ مُحَمَّدٍ وَّعَلٰى اٰلِهٖ وَصَحْبِهٖ اَجْمَعِيْنَ

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন