HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

যা হবে মরণের পরে

লেখকঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী

কিতাবের নাম/ লেখক/ অনুবাদক/ সম্পাদক
যা হবে মরণের পরে

আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী

ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা আকাশ-যমিনের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর জন্যে যিনি জীবন-মরণের একমাত্র মালিক। সৎ কর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করার জন্যে এবং সীমা লংঘণকারীদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্যে তিনি সমস্ত মাখলুকের উপর মৃত্যু ও পুনরুত্থান অবধারিত করেছেন। সৎ কর্মশীলদেরকে আল্লাহ তাঁর দরবারে সম্মানিত মেহমান হিসেবে উপস্থিত করবেন এবং গুনাহগারদেরকে জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়ার আদেশ দিবেন। মহাপবিত্র ঐ সত্বা যিনি জান্নাতুল ফেরদাউসকে মুমিনদের জন্য আপ্যায়ন হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং সীমালংঘণকারীদের জন্যে জাহান্নামকে আবাসস্থল হিসেবে তৈরী করেছেন। দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর বংশধর ও তাঁর সৎকর্মশীল সাথীদের উপর।

আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি জীবকে অযথা সৃষ্টি করেননি এবং তাদেরকে দায়িত্বহীনভাবে ছেড়ে দেননি; বরং তিনি তাদের উপর এক মহান দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছেন। যে দায়িত্ব পেশ করা হয়েছিল আকাশ-যমিনের কাছে, কিন্তু আকাশ-যমিন ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। অথচ মানুষ অত্যন্ত দুর্বল হওয়া সত্ত্বেও সে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। অধিকাংশ মানুষই এ মহান দায়িত্ব পালন না করে গাফেল হয়ে জীবন যাপন করছে। তাদের সৃষ্টিকর্তার পরিচয় সম্পর্কে এবং তাদেরকে এই পৃথিবীতে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করছেনা। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়াতে তাদের অবস্থান এবং দীর্ঘস্থায়ী আখেরাতের দিকে দ্রুত প্রস্থান সম্পর্কে তাদের কোন চিন্তা-ভাবনা নেই।

মানুষ এ পৃথিবীতে স্বল্প সময় অবস্থান করলেও তার যাত্রা সীমাহীন। ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই পার্থিব জীবনের বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। কিন্তু চিরস্থায়ী জীবন তথা পরকালীন জীবন ও তার বিষয়াদি সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অজ্ঞ। তাই বলে পরজগতের ব্যাপারে এবং আত্মার যাত্রা সম্পর্কে তার জানার আগ্রহ শেষ হয়ে যায়নি। আখেরাত সম্পর্কে জ্ঞানের সল্পতার কারণেই মানুষ আল্লাহর পথ হতে অনেক দূরে। দুনিয়ার কোন সম্পদ দেখতে পেলে সেদিকে দ্রুত অগ্রসর হয় এবং পরকালের নেয়ামত ও আল্লাহর সন্তুষ্টির উপর উহাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَعْلَمُونَ ظَاهِرًا مِنْ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَهُمْ عَنْ الْآخِرَةِ هُمْ غَافِلُونَ

অর্থঃ তারা কেবলমাত্র পার্থিব জীবনের প্রকাশ্য বিষয়সমূহ সম্পর্কে অবগত আছে এবং তারা পরকালের বিষয় সম্পর্কে কোন খবরই রাখেনা। (সূরা রূমঃ ৭) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَلاَتَكُوْنُوْا كَالَّذِيْنَ نَسُوْا اللّهَ فَأنْسَاهُمْ أَنْفسَهُمْ أوُلَئِكَ هُمُ الفَاسٍقُوْنَ

অর্থঃ তোমরা তাদের মত হয়োনা যারা আল্লাহ তাআলাকে ভুলে গেছে। ফলে তিনি তাদেরকে আত্মবিস্মৃত করে দিয়েছেন। মূলতঃ তারাই অবাধ্য। (সূরা হাশরঃ ১৯)

যখন অধিকাংশ মানুষের অবস্থা এরকমই ছিল তখন এমন বিষয়সমূহের অনুসন্ধান করতে থাকলাম যা অন্তরে ভয়ের সঞ্চার ও চোখের অশ্রু প্রবাহিত করবে এবং পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে।

এ লক্ষ্যে আমি আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাত এবং অতীত জাতির অবস্থা ও তাদের উপদেশ সমূহের উপর গভীরভাবে দৃষ্টি দিয়ে কিছু শিক্ষণীয় বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করলাম। এ বিষয়গুলো সামনে রেখে এমন একটি কিতাব রচনা করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম যা আমার নিজের জন্য জীবন চলার পাথেয় হয়ে থাকবে এবং পরকালে আমার জন্য আমলে সালেহ বা সৎকর্ম হিসাবে পরিগণিত হবে। কুরআন ও সুন্নাহর পাশাপাশি এ লক্ষ্যে আমি নির্ভরযোগ্য আলেমদের কিতাব থেকেও কিছু উক্তি সংগ্রহ করলাম। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন এর মাধ্যমে পাঠকদের উপকার সাধন করেন।

এটি একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা যাতে রূহ কবজ করার জন্যে ফেরেশতার আগমণ থেকে শুরু করে জান্নাতীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নামীদের জাহান্নামে প্রবেশ পর্যন্ত অধিকাংশ অবস্থার বিবরণ পেশ করা হয়েছে।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন পুস্তিকাটিকে তাঁর সন্তুষ্টি জন্য কবূল করেন এবং তা রচনা ও প্রকাশে যারা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন তাদের সবাইকে জান্নাতবাসী করেন।

বিনীতঃ

আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী

মরণের সময় মুমিনের অবস্থাঃ
বারাহ বিন আহযিব (রাঃ)এর হাদীছে মানুষের মৃত্যুকালীন অবস্থার পূর্ণ বিবরণ এসেছে। এতে মুমিন, কাফের এবং পাপী সকল মানুষের অবস্থাই বর্ণিত হয়েছে। পাঠক ভাই-বোনদের কাছে হাদীছের ভাষ্যটি তুলে ধরছি।

বারাহ বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সাথে জনৈক আনসারী সাহাবীর জানাযায় শরীক হওয়ার জন্যে বের হলাম। তখনও কবরের খনন কাজ শেষ হয়নি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিবলামুখী হয়ে বসে পড়লেন। আমরাও তাঁর চারপাশে বসে গেলাম। তাঁর হাতে ছিল একটি কাঠি। তা দিয়ে তিনি মাটিতে খুঁচাতে ছিলেন এবং একবার আকাশের দিকে তাকাচ্ছিলেন আর একবার যমিনের দিকে মাথা অবনত করছিলেন। তিনবার তিনি দৃষ্টি উঁচু করলেন এবং নীচু করলেন। অতঃপর বললেনঃ তোমরা আল্লাহর কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাও। কথাটি তিনি দুহবার অথবা তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি এই দুহআ করলেনঃ

أَللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوْذُبِكَ مِنْ عَذاَبِ الْقَبْرِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কবরের আযাব থেকে আশ্রয় চাই।

তারপর তিনি বললেনঃ মুমিন বান্দার নিকট যখন দুনিয়ার শেষ দিন এবং আখেরাতের প্রথম দিন উপস্থিত হয় তখন আকাশ থেকে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট একদল ফেরেশতা উপস্থিত হন। তাদের সাথে থাকে জান্নাতের পোষাক এবং জান্নাতের সুঘ্রাণ। মুমিন ব্যক্তির চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় তারা ততদূরে বসে থাকেন। এমন সময় মালাকুল মাউত উপস্থিত হন এবং তার মাথার পাশে বসে বলতে থাকেনঃ হে পবিত্র আত্মা! তুমি আপন প্রভুর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে বের হয়ে আস। একথা শুনার পর মুমিন ব্যক্তির রূহ্‌ অতি সহজেই বের হয়ে আসে। যেমনভাবে কলসীর মুখ দিয়ে পানি বের হয়ে থাকে। রূহ বের হওয়ার সাথে সাথে ফেরশতাগণ তাঁকে জান্নাতী পোষাক পরিয়ে দেন এবং জান্নাতী সুঘ্রাণে তাকে সুরভিত করেন। তার দেহ থেকে এমন সুঘ্রাণ বের হতে থাকে যার চেয়ে উত্তম সুঘ্রাণ আর হতে পারেনা। তাকে নিয়ে ফেরেশতাগণ আকাশের দিকে উঠে যান। যেখান দিয়েই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানেই ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেনঃ এটা কার পবিত্র আত্মা? উত্তরে অতি উত্তম নাম উচ্চারণ করে বলা হয় অমুকের পুত্র অমুকের। আকাশে পৌঁছে গিয়ে দরজা খুলতে বলা হলে তা খুলে দেয়া হয়। তাঁর সাথে প্রথম আকাশের ফেরেশতাগণ দ্বিতীয় আকাশ পর্যন্ত গমণ করেন। এভাবেই এক এক করে সপ্তম আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে যান। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ আমার বান্দার নামটি ইল্লিয়ীনের তালিকায় লিপিবদ্ধ করে দাও। অতঃপর তাকে নিয়ে যমিনে ফিরে যাও। কেননা আমি তাকে মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছি। মাটির মধ্যেই তাকে ফিরিয়ে দিব এবং সেখান থেকেই তাকে পুনরায় জীবিত করব।

তখন কবরে তার আত্মা ফেরত দেয়া হয়। ওখানে দুহজন ফেরেশতা আগমণ করেন এবং তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ তোমার প্রতিপালক কে? তিনি উত্তরে বলেনঃ আমার প্রতিপালক হচ্ছেন আল্লাহ। আবার জিজ্ঞেস করেনঃ দুনিয়াতে তোমার দ্বীন কি ছিল? তিনি উত্তর দেনঃ আমার দ্বীন হচ্ছে ইসলাম। পুনরায় তাকে প্রশ্ন করেনঃ তোমাদের কাছে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তিনি কে? জবাবে তিনি বলেনঃ তিনি হলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। তখন আকাশ থেকে মহান আল্লাহ ঘোষণা করতে থাকেনঃ আমার বান্দা সত্য বলেছে। তাঁর জন্যে জান্নাতের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তাকে জান্নাতের পোষাক পরিয়ে দাও। আর তাঁর জন্যে জান্নাতের একটি দরজা খুলে দাও, যেন সে জান্নাতের বাতাস ও সুঘ্রাণ পেতে পারে। তার কবরটি দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হয়। একজন সুন্দর আকৃতি ও উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট লোক উত্তম পোষাক পরিহিত হয়ে এবং সুঘ্রাণে সুরভিত অবস্থায় তার কাছে আগমণ করেন এবং বলেনঃ তুমি খুশী হয়ে যাও। তোমার সাথে যে ওয়াদা করা হয়েছিল তা আজ পূর্ণ করা হবে। মুমিন ব্যক্তি লোকটিকে জিজ্ঞেস করেনঃ আপনি কে? তিনি বলেন, আমি তোমার সৎ আমল। তখন মুমিন ব্যক্তি বলেনঃ হে আল্লাহ! আপনি এখনই কিয়ামত সংঘটিত করুন। আমি আমার পরিবারের সাথে মিলিত হবো। তখন তাকে বলা হয় তুমি এখানে আরামে ও স্বাছন্দে বসবাস করতে থাক। তোমার কোন চিন্তা ও ভয় নেই।

মৃত্যুর সময় কাফেরদের করুণ অবস্থাঃ
অপর পক্ষে কাফের ব্যক্তির যখন দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণের সময় হয় তখন কালো বর্ণের একদল ফেরেশতা এসে উপস্থিত হন। তাদের সাথে থাকে দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়। চোখের দৃষ্টি যতদূর যায় তথায় তারা বসে থাকেন। তারপর মৃত্যুর ফেরেশতা এসে তাকে বলেনঃ ওহে অপবিত্র আত্মা! বেরিয়ে আয় আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির দিকে। কাফের বা পাপীর আত্মা তখন দেহের মাঝে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ফেরেশতা তাকে এমনভাবে টেনে বের করেন যেমনভাবে লোহার পেরেককে ভিজা পশমের মধ্য থেকে টেনে বের করা হয়। তার রূহ্‌ বের হওয়ার সময় শরীরের রগসমূহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার উপর আকাশ ও যমিনের মধ্যকার সকল ফেরেশতা লাহনত করতে থাকেন। আকাশের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রত্যেক দরজার ফেরেশতাগণ আল্লাহর কাছে দুহআ ক‎রেন যাতে ঐ ব্যক্তির রূহ তাদের দরজা দিয়ে না উঠানো হয়। তার রূহকে দুর্গন্ধযুক্ত কাপড়ে রাখা হয়। তা থেকে মরা-পঁচা মৃত দেহের দুর্গন্ধের ন্যায় দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। ফেরেশতাগণ তাকে আকাশের দিকে উঠাতে থাকেন। যেখান দিয়েই গমণ করেন সেখানের ফেরেশতাগণ জিজ্ঞেস করেনঃ এই অপবিত্র আত্মা কার? উত্তরে ফেরেশতাগণ অতি মন্দ নাম উচ্চারণ করে বলতে থাকেনঃ অমুকের পুত্র অমুকের। আকাশে পৌঁছে তার জন্যে আকাশের দরজা খুলতে বলা হলে আকাশের দরজা খোলা হয় না। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّى يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ

অর্র্থঃ তাদের জন্য আকাশের দরজাসমূহ খোলা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পরবেনা যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে। (সূরা আহরাফঃ ৪০) তারপর বলা হয় সাত যমিনের নীচে সিজ্জীনে তার নাম লিখে দাও এবং তার রূহ যমিনের যেখানে দাফন করা হয়েছে সেখানে ফেরত দাও। কেননা আমি যমিন থেকে মানুষকে সৃষ্টি করেছি, যমিনেই ফিরিয়ে দিব এবং কিয়ামতের দিন যমিন থেকেই আবার বের করবো। তারপর তার রূহকে যমিনের দিকে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর কাফেরের দেহ যেখানে দাফন করা হয়েছে রূহটি সেখানে গিয়ে পতিত হয়। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এই আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَكَأَنَّمَا خَرَّ مِنْ السَّمَاءِ فَتَخْطَفُهُ الطَّيْرُ أَوْ تَهْوِي بِهِ الرِّيحُ فِي مَكَانٍ سَحِيقٍ

অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরীক করল সে যেন আকাশ থেকে ছিটকে পড়ল। অতঃপর মৃতভোজী পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে গেল অথবা বাতাস তাকে উড়িয়ে নিয়ে কোন দূরবর্তী স্থানে নিক্ষেপ করল। (সূরা হজ্জঃ ৩১)

কবরে কাফের ও মুনাফেকের করুণ অবস্থাঃ
অতঃপর তার রূহকে দেহে ফেরত দেয়া হয়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তাকে দাফন করে যখন লোকেরা চলে যায় তখন দুহজন ফেরেশতা আগমণ করেন এবং কঠিনভাবে ধমকাতে থাকেন। অতঃপর তাকে বসিয়ে জিজ্ঞেস করেনঃ তোর প্রভু কে? সে উত্তর দেয়ঃ আফসোস! আমি জানিনা। আবার জিজ্ঞেস করেনঃ তোর দ্বীন কি? জবাবে সে বলেঃ হায়! আমি তো এটা অবগত নই। তারপর জিজ্ঞেস করেনঃ তোদের কাছে যে লোকটিকে পাঠানো হয়েছিল তাঁর সম্পর্কে তোর ধারণা কি? সে উত্তরে বলেঃ হায় আফসোস! আমি তা জানিনা। তার সম্পর্কে মানুষ যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন আকাশ থেকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেনঃ এই লোক মিথ্যা বলছে। তাকে জাহান্নামের পোষাক পরিয়ে দাও, তার জন্য জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দাও এবং তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দাও। যাতে তার কাছে জাহান্নামের গরম বাতাসও তাপ পৌঁছতে পারে। তার কবর অতি সংকীর্ণ করে দেয়া হয়। মাটি তাকে এমনভাবে চেপে ধরে যাতে তার এক পার্শ্বের হাড় অপর পার্শ্বে ঢুকে যায়।

অতঃপর কালো চেহারা বিশিষ্ট, কালো পোষাক পরিহিত ও দুর্গন্ধযুক্ত এক ভয়ানক আকারের লোক এসে বলতে থাকেঃ তুই দুঃখের সংবাদ গ্রহণ কর। ধংস হোক তোর! আজ তোর সেই দিন যার অঙ্গিকার তোর সাথে করা হয়েছিল। তখন কাফের বা মুনাফিক ব্যক্তি বলেঃ তোমার পরিচয় কি? তোমার চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে তুমি কোন দুঃখের সংবাদ নিয়ে এসেছো। উত্তরে লোকটি বলেঃ আমি তোর সেই খারাপ আমল যা তুই দুনিয়াতে করেছিলে। আল্লাহর শপথ করে বলছিঃ তুই ছিলে আল্লাহর আনুগত্যের কাজে গাফেল এবং আল্লাহর নাফরমানীতে ছিলে তুই অগ্রগামী।

অতঃপর তার কবরে একজন বোবা ও বধির ফেরেশতা পাঠানো হয়। তার হাতে থাকে লোহার এমন একটি হাতুড়ি, তা দিয়ে যদি কোন কঠিন পাহাড়ে আঘাত করা হতো তাহলে উক্ত পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধূলায় পরিণত হয়ে যেত। তা দিয়ে তাকে এমন জোরে প্রহার করা হয় যাতে সে মাটির সাথে মিশে যায়। আল্লাহ তাকে পুনরায় জীবিত করেন। ফেরেশতা আবার তাকে আঘাত করেন। সে এমন প্রকটভাবে চিৎকার করতে থাকে যার আওয়াজ জিন-ইনসান ব্যতীত সকল সৃষ্টিজীবই শুনতে পায়। অতঃপর তার জন্যে জাহান্নামের দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হয়। কিয়ামতের দিন যেহেতু তার জন্যে আরো কঠিন আযাব রয়েছে তাই সে বলবেঃ হে আল্লাহ! কিয়ামত যেন না হয়।

আল্লাহর কাছে প্রার্থনা, তিনি যেন আমাদেরকে কবরের এই ভয়াবহ আযাব থেকে হেফাযত করেন।

কাফেরদের মৃত্যু যন্ত্রনাঃ
মৃত্যুর সময় কাফেরেরা খুবই কঠিন ও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَوْ تَرَى إِذْ الظَّالِمُونَ فِي غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَالْمَلَائِكَةُ بَاسِطُوا أَيْدِيهِمْ أَخْرِجُوا أَنفُسَكُمْ الْيَوْمَ تُجْزَوْنَ عَذَابَ الْهُونِ بِمَا كُنتُمْ تَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ غَيْرَ الْحَقِّ وَكُنتُمْ عَنْ آيَاتِهِ تَسْتَكْبِرُونَ

অর্র্থঃ আপনি যদি জালিমদেরকে ঐ সময়ে দেখতে পেতেন যখন তারা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফেরেশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবেনঃ তোরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আন। তোদের আমলের কারণে আজ তোদেরকে অবমাননাকর আযাব দেয়া হবে। কারণ তোরা আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ করেছিলে এবং তোরা তাঁর আয়াতের বিরুদ্ধে অহংকার করেছিলে। (সূরা আনআমঃ ৯৩) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা আব্দুর রাহমান আস-সাহদী (রঃ) বলেনঃ আপনি যদি কাফেরদের মৃত্যুকালীন কঠিন অবস্থা প্রত্যক্ষ করতেন তাহলে অবশ্যই এমন ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যক্ষ করতেন যা কারও পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। কাফেরদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ তাদেরকে আঘাত করতে থাকেন এবং বলতে থাকেনঃ তোরা নিজেরাই নিজেদের প্রাণ বের করে আন। আজ তোদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। আল্লাহর উপর মিথ্যারোপ, রাসূলগণ কর্তৃক আনীত সত্য প্রত্যাখ্যান ও আল্লাহর আয়াতের সাথে অহংকার করার কারণে তোদের এই শাস্তি। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَوْ تَرَى إِذْ يَتَوَفَّى الَّذِينَ كَفَرُوا الْمَلَائِكَةُ يَضْرِبُونَ وُجُوهَهُمْ وَأَدْبَارَهُمْ وَذُوقُوا عَذَابَ الْحَرِيقِ

অর্থঃ আর যদি আপনি দেখেন যখন ফেরেশতারা কাফেরদের জান কবজ করার সময় তাদের মুখে এবং তাদের পশ্চাদদেশে প্রহার করতে করতে বলবেনঃ তোরা জ্বলন্ত আগুনের আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর। (সূরা আনফালঃ ৫০)

বারাহ বিন আযিব (রাঃ)এর হাদীছে এসেছে, কাফেরের মৃত্যুর সময় মালাকুল মাউতের সাথে কুৎসিত চেহারা বিশিষ্ট একদল কঠিন প্রকৃতির ফেরেশতা আগমণ করেন। কাফেরের রূহকে বলা হয়, হে অপবিত্র আত্মা! আগুন ও গরম পানির আযাবের দিকে বের হয়ে আয়। একথা শুনে তার রূহ্‌ শরীরের বিভিন্ন স্থানে পালাতে চেষ্টা করে। কিন্তু ফেরেশতাগণ অত্যন্ত কঠিনভাবে তার রূহকে টেনে বের করেন।

কবর থেকে উঠার সময় তারা ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকবেঃ
কবর থেকে উঠার সময় কাফেরদের অবস্থা কেমন হবে তা বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَوْمَ يَخْرُجُونَ مِنْ الْأَجْدَاثِ سِرَاعًا كَأَنَّهُمْ إِلَى نُصُبٍ يُوفِضُونَ خَاشِعَةً أَبْصَارُهُمْ تَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ ذَلِكَ الْيَوْمُ الَّذِي كَانُوا يُوعَدُونَ

অর্থঃ সেদিন তারা কবর থেকে দ্রুতবেগে বের হবে যেন তারা কোন এক লক্ষ্যস্থলের দিকে ছুটে যাচ্ছে। তাদের দৃষ্টি থাকবে অবনমিত, লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। এটাই সেই দিন, যার প্রতিশ্রুতি এদেরকে দেয়া হয়েছিল। (সূরা মাআরেজঃ ৪৩-৪৪) আহবানকারীর আহবানে সাড়া দিয়ে অবনত মস্তকে তারা কবর থেকে দ্রুত বের হয়ে আসবে। যেন তারা কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুর দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। কোন ক্রমেই আহবানকারীর কথা অমান্য করার শক্তি তাদের থাকবেনা। তারা পরাজিত ও লাঞ্ছিত অবস্থায় বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে হাজির হবে। তাদের চক্ষু অবনমিত থাকবে, লজ্জা ও অপমান তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে, আওয়াজ নীচু হয়ে যাবে এবং চলার গতি থেমে যাবে। সে দিন তাদের সাথে আল্লাহর কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করা হবে। নিম্নের আয়াতটি পাঠ করলে অতি সহজেই কিয়ামতের মাঠে কাফেরদের অন্তরের ভীতিকর অবস্থার সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْآزِفَةِ إِذْ الْقُلُوبُ لَدَى الْحَنَاجِرِ كَاظِمِينَ مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلَا شَفِيعٍ يُطَاعُ

অর্থঃ আপনি তাদেরকে আসন্ন দিন সম্পর্কে সতর্ক করুন। যখন প্রাণ ওষ্ঠাগত হবে, দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হবে। পাপীদের জন্য এমন কোন বন্ধু এবং সুপারিশকারী থাকবেনা, যার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। (সূরা গাফেরঃ ১৮)

হাশরের মাঠের দৃশ্যঃ
হাশরের মাঠে সমস্ত মাখলুককে হিসাব এবং তাদের মাঝে সুবিচারের জন্যে একত্রিত করা হবে। এদিন হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। কুরআন ও হাদীছে এদিনের ভয়াবহতা বর্ণনা করা হয়েছে। নিম্নে কুরআন ও সুন্নার আলোকে কিয়ামত ও হাশরের মাঠের আংশিক চিত্র তুলে ধরা হল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ

অর্থঃ সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এপৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমানসমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮) হাশরের নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ نَقِيٍّ لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لِأَحَدٍ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মত চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোন নিশানা থাকবে না। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]

হাশরের দিন মানুষের ব্যস্ততাঃ
হাশরের মাঠে প্রত্যেক মানুষ মহা ব্যস্ততায় থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَاأَيُّهَا النَّاسُ اتَّقُوا رَبَّكُمْ إِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَيْءٌ عَظِيمٌ يَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّا أَرْضَعَتْ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَتَرَى النَّاسَ سُكَارَى وَمَا هُمْ بِسُكَارَى وَلَكِنَّ عَذَابَ اللَّهِ شَدِيدٌ

অর্থঃ হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সে দিন তোমরা দেখতে পাবে প্রত্যেক স্তন্যদায়ী তার দুধের শিশুকে ভুলে গেছে। এবং প্রত্যেক গর্ভবতী মহিলা তার গর্ভের সন্তান প্রসব করে দিবে। আর আপনি মানুষকে মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর আযাব খুবই কঠিন। (সূরা হজ্জঃ ১-২) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

فَإِذَا جَاءَتْ الصَّاخَّةُ يَوْمَ يَفِرُّ الْمَرْءُ مِنْ أَخِيهِ وَأُمِّهِ وَأَبِيهِ وَصَاحِبَتِهِ وَبَنِيهِ لِكُلِّ امْرِئٍ مِنْهُمْ يَوْمَئِذٍ شَأْنٌ يُغْنِيهِ

অর্থঃ অতঃপর যখন কর্ণ বিদারক আওয়াজ আসবে। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তার ভাইয়ের কাছ থেকে, তার মাতা, তার পিতা, তার পত্মী এবং তার সন্তানদের কাছ থেকেও। সেদিন প্রত্যেকেই নিজের চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে। (সূরা আবাসাঃ ৩৩-৩৭)

১০
হাশরের মাঠের পরিস্থিতি হবে অত্যন্ত ভীতিকরঃ
আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,

أَنَّهَا ذَكَرَتِ النَّارَ فَبَكَتْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا يُبْكِيكِ قَالَتْ ذَكَرْتُ النَّارَ فَبَكَيْتُ فَهَلْ تَذْكُرُونَ أَهْلِيكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَّا فِي ثَلَاثَةِ مَوَاطِنَ فَلَا يَذْكُرُ أَحَدٌ أَحَدًا عِنْدَ الْمِيزَانِ حَتَّى يَعْلَمَ أَيَخِفُّ مِيزَانُهُ أَوْ يَثْقُلُ وَعِنْدَ الْكِتَابِ حِينَ يُقَالُ ( هَاؤُمُ اقْرَءُوا كِتَابِيَهْ ) حَتَّى يَعْلَمَ أَيْنَ يَقَعُ كِتَابُهُ أَفِي يَمِينِهِ أَمْ فِي شِمَالِهِ أَمْ مِنْ وَرَاءِ ظَهْرِهِ وَعِنْدَ الصِّرَاطِ إِذَا وُضِعَ بَيْنَ ظَهْرَيْ جَهَنَّمَ

অর্থঃ তিনি জাহান্নামের আগুনের কথা মনে করে কাঁদতে শুরু করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কাঁদছ কেন? তিনি বললেনঃ আমি জাহান্নামের কথা স্মরণ করে কাঁদছি। হাশরের মাঠে আপনি কি আপনার পরিবার ও আপনজনের কথা মনে রাখবেন? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তরে বললেনঃ তিনটি স্থান এমন রয়েছে যেখানে কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। (১) মানুষের আমল যখন মাপা হবে। তখন মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। চিন্তা একটাই থাকবে, তার নেক আমলের পাল্লা ভারী হবে? না হালকা হবে। (২) যখন প্রত্যেকের আমলনামা দেয়া হবে তখন কেউ কাউকে স্মরণ করবেনা। আমলনামা ডান হাতে পাবে? না বাম হাতে পাবে- এনিয়ে চিন্তিত থাকবে। (৩) পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সকলেই ভীত-সন্ত্রস্ত থাকবে। কেউ কাউকে স্মরণ করবে না। [-আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সুন্নাহ।]

১১
উলঙ্গ অবস্থায় মানুষেরা হাশরের মাঠে উপস্থিত হবেঃ
আয়েশা (রাঃ) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ আমি তাঁকে বলতে শুনেছি,

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلًا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ النِّسَاءُ وَالرِّجَالُ جَمِيعًا يَنْظُرُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ قَالَ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَائِشَةُ الْأَمْرُ أَشَدُّ مِنْ أَنْ يَنْظُرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন নগ্নপদ, উলঙ্গ, এবং খাতনাবিহীন অবস্থায় সমস্ত মানুষকে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! নারী-পুরুষ সকলকেই এ অবস্থায় উপস্থিত করা হবে? তাহলে তো মানুষেরা একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকিয়ে থাকবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ ব্যাপারটি একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে থাকার চেয়ে অনেক ভয়াবহ হবে। [- বুখারী- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু সিফাতিল জান্নাত।] প্রত্যেকেই নিজের উপায় কি হবে তা নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। একজন অন্যজনের লজ্জাস্থানের দিকে তাকানোর চিন্তাও করবেনা।

১২
হাশরের মাঠের একদিনঃ
হাশরের মাঠের একটি দিনের পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। এদিনের দীর্ঘতা দেখে মানুষ মনে করবে দুনিয়াতে তারা মাত্র সামান্য সময় বসবাস করেছিল। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ

অর্থঃ ফেরেশতাগণ এবং রূহ্‌ (জিবরীল আঃ) আল্লাহর দিকে উর্ধগামী হবেন এমন একদিনে, যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। (সূরা মাআহরিজঃ ৪)

১৩
মাথার উপরে সূর্যের আগমণঃ
দুনিয়াতে আমরা যেই সূর্যের আলো পাচ্ছি তা বৈজ্ঞানিকদের হিসাব মতে আমাদের পৃথিবী থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থিত। হাশরের মাঠে সূর্য মানুষের মাথার উপরে মাত্র এক মাইলের দূরত্বে চলে আসবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

تَدْنُوْ الشَّمْسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الْخَلْقِ حَتَّى تَكُونَ مِنْهُمْ كَمِقْدَارِ مِيلٍ فَيَكُونُ النَّاسُ عَلَى قَدْرِ أَعْمَالِهِمْ فِي الْعَرَقِ فَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى كَعْبَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يَكُونُ إِلَى حَقْوَيْهِ وَمِنْهُمْ مَنْ يُلْجِمُهُ الْعَرَقُ إِلْجَامًا قَالَ وَأَشَارَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ إِلَى فِيهِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে চলে আসবে। মাত্র এক মাইলের ব্যবধান থাকবে। মানুষেরা তাদের নিজ নিজ আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। মানুষের শরীরের পঁচা ঘাম কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। একথা বলার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মুখের দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জান্নাত]

১৪
শৃংখলাবদ্ধ অবস্থায় কাফেরদের হাশরঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ وَبَرَزُوا لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْقَهَّارِ وَتَرَى الْمُجْرِمِينَ يَوْمَئِذٍ مُقَرَّنِينَ فِي الْأَصْفَادِ سَرَابِيلُهُمْ مِنْ قَطِرَانٍ وَتَغْشَى وُجُوهَهُمْ النَّارُ

অর্থঃ সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য এক পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমানসমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। আপনি ঐদিন পাপীদেরকে পরস্পরে শৃংখলাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাবেন। তাদের পোষাক হবে দাহ্য আলকাতরার এবং তাদের মুখমন্ডল আগুন আচ্ছন্ন করে ফেলবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪৮-৫০)

অতঃপর সে ভয়ানক দিনে পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে যাবে। বর্তমানে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবেনা। বুখারী ও মুসলিম শরীফে সাহ্‌ল বিন সাহদ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

يُحْشَرُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى أَرْضٍ بَيْضَاءَ عَفْرَاءَ كَقُرْصَةِ نَقِيٍّ قَالَ سَهْلٌ أَوْ غَيْرُهُ لَيْسَ فِيهَا مَعْلَمٌ لِأَحَدٍ

অর্থঃ সকল মানুষকে কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রূটির মত পরিস্কার একটি ভূমিতে উপস্থিত করা হবে। তাতে কারও কোন নিশানা থাকবে না। [- সহীহ বুখারীঃ কিতাবুর রিকাক, মুসলিমঃ ছিফাতুল কিয়ামাহ।] মানুষ তখন পুলসিরাতের উপর থাকবে। কেননা মুসলিম শরীফে আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ আমিই সর্র্বপ্রথম রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে আল্লাহর বাণী,

يَوْمَ تُبَدَّلُ الْأَرْضُ غَيْرَ الْأَرْضِ وَالسَّمَاوَاتُ

অর্থঃ সে দিন আকাশ ও যমিনের অবস্থা পরিবর্তন হয়ে যাবে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করেছি। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ মানুষ তখন কোথায় অবস্থান করবে? তিনি বললেনঃ পুল সিরাতের উপর। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল কিয়ামাহ।]

সে দিন কাফের ও পাপিষ্ঠদের একজনকে অন্যজনের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখা যাবে। প্রত্যেককে তার স্বজাতীয় লোকের সাথে একত্রিত করা হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

احْشُرُوا الَّذِينَ ظَلَمُوا وَأَزْوَاجَهُمْ وَمَا كَانُوا يَعْبُدُونَ

অর্থঃ জালেমদেরকে এবং তাদের সঙ্গীদেরকে একত্রিত কর। (সূরা আস্‌-সাফ্‌ফাতঃ ২২) তাদের হাত, পা এবং ঘাড় শিকল দিয়ে বাঁধা অবস্থায় দেখা যাবে। তাদেরকে আলকাতরার পোষাক পরিয়ে দেয়া হবে। আগুন তাদের চেহারা ঢেকে ফেলবে।

১৫
কাফেরদেরকে অন্ধ অবস্থায় টেনে হাশরের মাঠে আনা হবেঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَنَحْشُرُهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى وَجُوهِهِمْ عُمْيًا وَبُكْمًا وَصُمًّا مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ كُلَّمَا خَبَتْ زِدْنَاهُمْ سَعِيرًا

অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন তাদের সমবেত করব তাদের মুখে ভর দিয়ে চলা অবস্থায় এবং অন্ধ, বোবা ও বধির অবস্থায়। তাদের আবাসস্থল হবে জাহান্নাম। যখনই জাহান্নামের অগ্নি নির্বাপিত হওয়ার উপক্রম হবে তখনই আমি তাদের জন্য অগ্নি আরো বৃদ্ধি করে দিব। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৯৭) বুখারী ও মুসলিম শরীফে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,

َإِنَ رَجُلًا قَالَ يَا نَبِيَّ اللَّهِ كَيْفَ يُحْشَرُ الْكَافِرُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَة؟ِ قَالَ أَلَيْسَ الَّذِي أَمْشَاهُ عَلَى الرِّجْلَيْنِ فِي الدُّنْيَا قَادِرًا عَلَى أَنْ يُمْشِيَهُ عَلَى وَجْهِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟

অর্থঃ জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করলঃ হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে কিয়ামতের দিন কাফেরকে মুখের উপর ভর দিয়ে হাঁটানো হবে? উত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেনঃ দুনিয়াতে যিনি তাকে দুহপায়ের উপর হাঁটাতে সক্ষম ছিলেন তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখের উপর হাঁটাতে সক্ষম নন? [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তাফসীর।] আল্লাহ কাফেরদের আযাবের ব্যাপারে আরো বলেনঃ

إِنَّ الْمُجْرِمِينَ فِي ضَلَالٍ وَسُعُرٍ يَوْمَ يُسْحَبُونَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ ذُوقُوا مَسَّ سَقَرَ

অর্থঃ নিশ্চয়ই অপরাধীরা পথভ্রষ্ট ও আযাবে নিপতিত। যেদিন তাদেরকে মুখের উপর করে টেনে নেয়া হবে জাহান্নামের দিকে। বলা হবেঃ জাহান্নামের যন্ত্রনা আস্বাদন কর। (সূরা কামারঃ ৪৭-৪৮) হাশরের মাঠে প্রচন্ড গরমের সাথে সাথে তারা পিপাসায় কাতর থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَنَسُوقُ الْمُجْرِمِينَ إِلَى جَهَنَّمَ وِرْدًا

অর্র্র্র্র্র্র্র্থঃ এবং আমি অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। (সূরা মারইয়ামঃ ৮৬) এটি নিঃসন্দেহে একটি কঠিন অবস্থা যেখানে তাদেরকে অপমানিত, লাঞ্ছিত, পিপাসিত ও ক্ষুধার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। তারা পানি চেয়ে চিৎকার করবে, কিন্তু পানি দেয়া হবে না, তারা ডাকা-ডাকি করবে, কিন্তু তাদের ডাকে সাড়া দেয়া হবে না, তারা সুপারিশের অনুসন্ধান করবে, কিন্তু তাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী থাকবেনা।

১৬
কাফেরেরা পরস্পরে ঝগড়া ও অভিসম্পাতে লিপ্ত হবেঃ
যখন আল্লাহর শত্রু কাফেরেরা তাদের জন্যে নির্ধারিত শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে তখন তাদের পারস্পরিক বন্ধুত্ব শত্রুতায় পরিণত হবে। একে অপরের সাথে শত্রুতা, ঝগড়া, এবং অভিসম্পাতে লিপ্ত হবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَبَرَزُوا لِلَّهِ جَمِيعًا فَقَالَ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا مِنْ عَذَابِ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ قَالُوا لَوْ هَدَانَا اللَّهُ لَهَدَيْنَاكُمْ سَوَاءٌ عَلَيْنَا أَجَزِعْنَا أَمْ صَبَرْنَا مَا لَنَا مِنْ مَحِيصٍ

অর্থঃ সকলেই আল্লাহর সামনে দন্ডায়মান হবে এবং দুর্বলরা সবলদেরকে বলবেঃ আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম। অতএব তোমরা আল্লাহর আযাব থেকে আমাদেরকে কিছুমাত্র রক্ষা করবে কি? তারা বলবেঃ যদি আল্লাহ আমাদেরকে সৎপথ দেখাতেন তবে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে সৎপথ দেখাতাম। এখন তো আমরা ধৈর্যচ্যুত হই কিংবা সবর করি, সবই আমাদের জন্য সমান, আমাদের কোন রেহাই নেই। (সূরা ইবরাহীমঃ ২১) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَإِذْ يَتَحَاجُّونَ فِي النَّارِ فَيَقُولُ الضُّعَفَاءُ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُنَّا لَكُمْ تَبَعًا فَهَلْ أَنْتُمْ مُغْنُونَ عَنَّا نَصِيبًا مِنْ النَّارِقَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا كُلٌّ فِيهَا إِنَّ اللَّهَ قَدْ حَكَمَ بَيْنَ الْعِبَادِ

অর্থঃ যখন তারা জাহান্নামে পরস্পর বিতর্ক করবে, অতঃপর দুর্বলরা অহংকারীদেরকে বলবেঃ আমরা তোমাদের অনুসারী ছিলাম। তোমরা এখন জাহান্নামের আগুনের কিছু অংশ আমাদের থেকে লাঘব করবে কি? অহংকারীরা বলবেঃ আমরা সবাই তো জাহান্নামে আছি। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে ফয়সালা করে দিয়েছেন। (সূরা গাফেরঃ ৪৭-৪৮)

সেই ভয়াবহ দিনে বিভিন্ন প্রকার ঝগড়া হবে। আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য বাতিল মাহবূদ ও তাদের উপাসনাকারীদের মাধ্যে ঝগড়া হবে। গোমরাহীর নেতাদের সাথে তাদের অনুসারীদের ঝগড়া হবে। দুনিয়াতে যারা পাপের কাজে একে অপরের সহযোগী ও বন্ধু ছিল তারা পরস্পরে বাদানুবাদে লিপ্ত হবে। এমনকি মানুষ যখন তার নিজ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হবে তখন ঝগড়া আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَيَوْمَ يُحْشَرُ أَعْدَاءُ اللَّهِ إِلَى النَّارِ فَهُمْ يُوزَعُونَ حَتَّى إِذَا مَا جَاءُوهَا شَهِدَ عَلَيْهِمْ سَمْعُهُمْ وَأَبْصَارُهُمْ وَجُلُودُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنطَقَ كُلَّ شَيْءٍ وَهُوَ خَلَقَكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ

অর্থঃ যেদিন আল্লাহর শত্রুদেরকে অগ্নিকুন্ডের দিকে ঠেলে নেয়া হবে এবং ওদের বিন্যস্ত করা হবে বিভিন্ন দলে। পরিশেষে যখন তারা জাহান্নামের কাছে পৌঁছবে তখন তাদের কান, চক্ষু ও শরীরের চামড়া তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দিবে। তারা তাদের শরীরের চামড়াকে বলবে, তোমরা আমাদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা বলবেঃ যে আল্লাহ সবকিছুকে বাকশক্তি দিয়েছেন তিনি আমাদেরকেও বাকশক্তি দিয়েছেন। তিনিই তোমাদেরকে প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন এবং তোমরা তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে। (সূরা হা-মীম সাজদাহঃ ১৯-২১) আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর পাশে ছিলাম। তখন তিনি হাসলেন। অতঃপর বললেনঃ তোমরা কি জান আমি কিসের কারণে হাসছি? আনাস (রাঃ) বলেনঃ আমরা বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর সামনে বান্দার কথোপকথন শুনে আমি হাসছি। সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! আমাকে জুলুম থেকে পরিত্রাণ দিবেন না? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আল্লাহ বলবেনঃ হ্যাঁ অবশ্যই। তখন সে বলবেঃ আমার বিরুদ্ধে আমার নিজের ভিতর থেকে কোন সাক্ষী ছাড়া অন্য কারও সাক্ষ্য গ্রহণ করবোনা। তিনি বলেনঃ তখন আল্লাহ বলবেনঃ আজকের দিনে তোমার বিরুদ্ধে তোমার নফস এবং সম্মানিত লেখকগণই (ফেরেশতা) সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট। অতঃপর তার মুখে তালা লাগিয়ে দেয়া হবে এবং তার অঙ্গসমূহকে কথা বলার আদেশ দেয়া হবে তখন তার অঙ্গসমূহ তার কৃতকর্ম সম্পর্কে কথা বলতে শুরু করবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ অতঃপর তাকে তার অঙ্গের সাথে কথা বলার জন্যে ছেড়ে দেয়া হবে। এক পর্যায়ে সে বলবে ধ্বংস হও তোমরা; আফসোস তোমাদের জন্যে! দুনিয়াতে তোমাদের জন্যই তো আমি এত পরিশ্রম করতাম। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহদ।] কাফেরেরা জাহান্নামে প্রবেশ করার পর উঁচু আওয়াজে একে অপরের উপর অভিসম্পাত করবে এবং একজন অন্যজনকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়ার আবদার করবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَعَنَتْ أُخْتَهَا حَتَّى إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِنْ النَّارِ

অর্থঃ যখন এক সমপ্রদায় নরকে প্রবেশ করবে তখন অন্য সমপ্রদায়কে অভিসম্পাত করবে। এমন কি যখন সবাই তাতে পতিত হবে তখন পরবর্তীরা পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে বিপদগামী করেছিল। অতএব আপনি এদেরকে দ্বিগুণ শাস্তি প্রদান করুন। (সূরা আরাফঃ ৩৮)

১৭
কাফেরদের অনুতাপ ও দুনিয়ায় ফেরত আসা বা ধ্বংস কামনাঃ
যখন কাফেরেরা আযাব ও লাঞ্ছনা প্রত্যক্ষ করবে তখন তারা অনুতপ্ত ও হতাশাগ্রস্ত হবে। এজন্যই কিয়ামতের দিনকে হতাশার দিন বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَأَنذِرْهُمْ يَوْمَ الْحَسْرَةِ إِذْ قُضِيَ الْأَمْرُ وَهُمْ فِي غَفْلَةٍ وَهُمْ لَا يُؤْمِنُونَ

অর্থঃ আপনি তাদেরকে পরিতাপের দিবস সম্পর্কে হুঁশিয়ার করে দিন যখন সব ব্যাপারে মীমাংসা হয়ে যাবে। এখন তারা অমনোযোগী অবস্থায় রয়েছে এবং তারা বিশ্বাস স্থাপন করছেনা। (সূরা মারইয়ামঃ ৩৯) কাফের তার নিকট প্রেরিত রাসূলের আনুগত্য না করার কারণে এবং রাসূলদের শত্রুদের অনুসরণের কারণে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে আপন হাতে দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا يَا لَيْتَنِي لَمْ أَتَّخِذْ فُلَانًا خَلِيلًا لَقَدْ أَضَلَّنِي عَنْ الذِّكْرِ بَعْدَ إِذْ جَاءَنِي وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنسَانِ خَذُولًا

অর্থঃ জালেম সেদিন আপন হস্তদ্বয় দংশন করতে করতে বলবেঃ হায় আফসোস! আমি যদি রাসূলের সাথে পথ অবলম্বন করতাম! হায় আমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি অমুককে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করতাম! আমার কাছে উপদেশ আসার পর সে আমাকে তা থেকে বিভ্রান্ত করেছে। শয়তান মানুষকে বিপদকালে ধোকা দেয়। (সূরা ফুরকানঃ ২৭-২৯) সেদিন কাফেরেরা নিশ্চিতরূপে অনুধাবন করতে পারবে যে, তাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হবেনা এবং তাদের ওজর-আপত্তি গ্রহণযোগ্য হবেনা। তাই তারা আল্লাহর রহমত হতে সম্পূর্ণ নিরাশ হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُبْلِسُ الْمُجْرِمُونَ

অর্থঃ যেদিন কিয়ামত সংঘটিত হবে সেদিন অপরাধীরা হতাশ হয়ে যাবে। (সূরা রোমঃ ১২) কাফেরেরা পুনরায় দুনিয়াতে আসার আবদার করবে যাতে তারা পরহেজগার ও ঈমানদার হয়ে সৎকর্ম সম্পাদন করতে পারে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُوا عَلَى النَّارِ فَقَالُوا يَالَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِآيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنْ الْمُؤْمِنِينَ

অর্থঃ আর আপনি যদি দেখেন যখন তাদেরকে দোযখের উপর দাড় করানো হবে। তারা বলবেঃ কতই না ভাল হতো যদি আমরা দুনিয়ায় পুনঃপ্রেরিত হতাম তা হলে আমরা স্বীয় পালনকর্তার নিদর্শন সমূহের উপর মিথ্যারোপ করতাম না এবং আমরা বিশ্বাসীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যেতাম। (সূরা আনআমঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَوْ تَرَى إِذْ الْمُجْرِمُونَ نَاكِسُوا رُءُوسِهِمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ رَبَّنَا أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوقِنُونَ

অর্থঃ যদি আপনি দেখতেন যখন অপরাধীরা তাদের পালনকর্তার সামনে নতশির হয়ে বলবেঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম। এখন আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিন। আমরা সৎকর্ম করব। আমরা দৃঢ় বিশ্বাসী হয়ে গেছি। (সূরা সাজদাহঃ ১২)

সেদিন কাফেরেরা ভয়াবহ আযাব সহ্য করতে না পেরে আল্লাহর কাছে নিজেদেরকে ধ্বংস অথবা মাটিতে পরিণত করে দেয়ার আবেদন করবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَوْمَئِذٍ يَوَدُّ الَّذِينَ كَفَرُوا وَعَصَوْا الرَّسُولَ لَوْ تُسَوَّى بِهِمْ الْأَرْضُ

অর্থঃ সেদিন কাফেরেরা এবং রাসূলের বিরুদ্ধাচরণকারীরা কামনা করবে যে, তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হোক। (সূরা নিসাঃ ৪১) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

وَيَقُولُ الْكَافِرُ يَالَيْتَنِي كُنتُ تُرَابًا

অর্থঃ সেদিন কাফেরেরা বলবে, হায় যদি আমি মাটি হয়ে যেতাম। (সূরা নাবাঃ ৪০)

১৮
তারা জাহান্নামে চিরকাল থাকবে, কখনও বের হতে পারবেনাঃ
কাফের, মুশরেক ও মুনাফেকেরা চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামে অবস্থান করবে। কখনও তা থেকে বের হতে পারবেনা। আল্লাহ তাআহলা বলেনঃ

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থঃ যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলবে এবং তা থেকে অহংকার করবে তারাই দোযখী এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে। (সূরা আহরাফঃ ৩৬) আল্লাহ আরো বলেনঃ

وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِآيَاتِنَا أُوْلَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

অর্থঃ যারা আমার আয়াত সমূহের সাথে কুফরী করেছে এবং তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তারা জাহান্নামী। তথায় তারা অনাদিকাল অবস্থান করবে। (সূরা বাকারাঃ ৩৯) আল্লাহ তাআলা মুনাফেকদের ব্যাপারে বলেনঃ

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنْ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

অর্থঃ নিশ্চয় মুনাফেকরা জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে অবস্থান করবে আর আপনি তাদের জন্যে কোন সাহায্যকারী পাবেন না। (সূরা নিসাঃ ১৪৫) যখন কাফেরদের আযাব কঠিন আকার ধারণ করবে এবং দীর্ঘ দিন পর্যন্ত তারা সকল প্রকার কল্যাণ থেকে নিরাশ ও বঞ্চিত থাকবে তখন তাদের মনে নতুন এক আশার উদয় হবে। তাই জাহান্নামের প্রহরী ওমালেকহ ফেরেশতাকে আহবান করে তারা বলবেঃ হে মালেক! আমাদেরকে মৃত্যু দান করা হোক, যাতে আমরা এই কঠিন শাস্তি হতে রেহাই পেয়ে যাই। কারণ আমরা মহা পেরেশানী এবং এমন ভয়াবহ আযাবের মধ্যে রয়েছি যা সহ্য করার মত ধৈর্য নিঃশেষ হয়ে গেছে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ এক হাজার বছর পর মালেক ফেরেশতা তাদের কথার উত্তর দিয়ে বলবেনঃ তোমাদেরকে এখানেই থাকতে হবে। তোমাদের জন্যে এখান থেকে বের হওয়ার কোন ব্যবস্থা রাখা হয়নি। একথা শুনে তাদের পেরেশানী ও দুঃখ আরও বেড়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يُرِيدُونَ أَنْ يَخْرُجُوا مِنْ النَّارِ وَمَا هُمْ بِخَارِجِينَ مِنْهَا وَلَهُمْ عَذَابٌ مُقِيمٌ

অর্থঃ তারা জাহান্নামের আগুন থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা করবে অথচ তাদের জন্যে বের হওয়ার কোন উপায় থাকবেনা। আর তাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী শাস্তি। (সূরা মায়িদাহঃ ৩৭) তারা দুনিয়াতে ফেরত পাঠানোর আবেদন করবে, কিন্তু তাদের কথার প্রতি কর্ণপাত করা হবেনা। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِي

অর্থঃ তারা বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিন। আমরা যদি আবার দুনিয়াতে পাপের কাজে লিপ্ত হই তাহলে জালেমদের অন্তর্ভূক্ত হব। আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা এখানেই পড়ে থাক এবং আমার সাথে কোন কথা বলো না। (সূরা মুমিনূনঃ ১০৭-১০৮)

ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বলেনঃ

إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ

অর্থঃ যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি স্থানে রেখে যবেহ করে দিয়ে ঘোষণা করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। তোমরা এখানে অনাদিকাল অবস্থান করবে। ওহে জাহান্নামীরা! তোরা চিরকাল একঠিন আযাব ভোগ করবে। তোদের আর মৃত্যু হবেনা। একথা শুনে বেহেশতের অধিবাসীদের আনন্দ ও খুশী আরো বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখ ও পেরেশানী আরো বৃদ্ধি পাবে। [-বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]

অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিয়ামতের দিন মৃত্যুকে সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের একটি দুম্বার আকৃতিতে জান্নাত এবং জাহন্নামের মবধ্যবর্তী একটি নির্দিষ্ট স্থানে উপস্থিত করে প্রথমে জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবে, হে জান্নাতবাসীগণ! তোমরা কি একে চেন? তাঁরা বলবেনঃ আমরা তাকে চিনি। সে হলো মৃত্যু। অতঃপর জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তোমরা কি একে চেন? তারা বলবেঃ আমরা তাকে চিনি। সে হলো মৃত্যু। অতঃপর তাকে যবেহ করে দেয়া হবে।

এই হাদীছটি বর্ণনা করার পর ইমাম কুরতুবী (রঃ) বলেনঃ এই হাদীছটি কাফেরদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়ার ব্যাপারে সুস্পষ্ট দলীল। নির্দিষ্ট কোন সীমা বা কাল পর্যন্ত নয়। বরং তারা কোন প্রকার জীবন-মৃত্যু, আরাম-আয়েশ ও নাজাত ছাড়াই অনাদিকাল পর্যন্ত জাহান্নামে অবস্থান করবে। আল্লাহ তাআলা তাঁর মহাগ্রন্থ আল-কুরআনে কাফেরদের শাস্তি বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ

وَالَّذِينَ كَفَرُوا لَهُمْ نَارُ جَهَنَّمَ لَا يُقْضَى عَلَيْهِمْ فَيَمُوتُوا وَلَا يُخَفَّفُ عَنْهُمْ مِنْ عَذَابِهَا كَذَلِكَ نَجْزِي كُلَّ كَفُورٍ

অর্থঃ যারা কুফরী করেছে তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আগুনের শাস্তি। তাদেরকে মৃত্যুর আদেশও দেয়া হবে না যে তারা মরে যাবে এবং তাদের থেকে শাস্তিও লাঘব করা হবেনা। আমি প্রত্যেক কাফেরকে এভাবেই শাস্তি দিয়ে থাকি। (সূরা ফাতিরঃ ৩৬) আল্লাহ বলেনঃ

كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا

অর্থঃ আগুনের তাপে যখন তাদের চামড়াগুলো জ্বলে-পুড়ে যাবে তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে। (সূরা নিসাঃ ৫৬) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

فَالَّذِينَ كَفَرُوا قُطِّعَتْ لَهُمْ ثِيَابٌ مِنْ نَارٍ يُصَبُّ مِنْ فَوْقِ رُءُوسِهِمْ الْحَمِيمُ يُصْهَرُ بِهِ مَا فِي بُطُونِهِمْ وَالْجُلُودُ وَلَهُمْ مَقَامِعُ مِنْ حَدِيدٍ كُلَّمَا أَرَادُوا أَنْ يَخْرُجُوا مِنْهَا مِنْ غَمٍّ أُعِيدُوا فِيهَا

অর্থঃ অতএব যারা কাফের তাদের জন্যে আগুনের পোশাক তৈরী করা হয়েছে। তাদের মাথার উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে দেয়া হবে। ফলে তাদের পেটে যা আছে তা এবং চর্ম গলে বের হয়ে যাবে। তাদের জন্য রয়েছে লোহার হাতুড়ি। তারা যখনই যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে জাহান্নাম থেকে বের হতে চাইবে তখনই তাতে ফেরত দেয়া হবে। (সূরা হজ্জঃ ১৯-২২)

১৯
ইবলীস শয়তানের ভাষণঃ
হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে যখন ফয়সালা শেষ হওয়ার পর মুমিনগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং কাফেরেরা জাহান্নামে নিপতিত হবে। শয়তানের অনুসারী জাহান্নামীরা যখন শয়তানকে এই বলে দোষারোপ করবে যে, আমরা তোমার কথায় সাড়া দিয়েছিলাম। দুনিয়াতে তুমি আমাদেরকে গোমরাহ করেছিলে, ইত্যাদি বলে শয়তানকে দোষারোপ করবে। শয়তান তখন নিজেকে সম্পূর্ণ দোষমুক্ত ঘোষণা করে একটি ভাষণ প্রদান করবে। আল্লাহ তাআহলা কুরআনে শয়তানের সেই ভাষণটি তুলে ধরেছেন। আল্লাহ বলেনঃ

وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللَّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِي عَلَيْكُمْ مِنْ سُلْطَانٍ إِلَّا أَنْ دَعَوْتُكُمْ فَاسْتَجَبْتُمْ لِي فَلَا تَلُومُونِي وَلُومُوا أَنْفُسَكُمْ مَا أَنَا بِمُصْرِخِكُمْ وَمَا أَنْتُمْ بِمُصْرِخِيَّ إِنِّي كَفَرْتُ بِمَا أَشْرَكْتُمُونِي مِنْ قَبْلُ إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

অর্থঃ কিয়ামত দিবসে যখন ফয়সালা হয়ে যাবে তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন। আমিও ওয়াদা দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার ওয়াদা ছিল মিথ্যা এবং আমি সেই ওয়াদা ভঙ্গ করেছি। তোমাদের উপর আমার কোন কর্তৃত্ব ছিলনা। শুধুমাত্র আমি তোমাদেরকে ডেকেছিলাম আর তোমরা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলে। অতএব আজ তোমরা আমাকে দোষারোপ করোনা। নিজেদেরকে দোষারোপ কর। আমি তোমাদেরকে শাস্তি থেকে বাঁচাতে পারবনা। তোমরাও আমাকে বাঁচাতে পারবেনা। তোমরা ইতিপূর্বে আমাকে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করেছিলে। আমি তা অস্বীকার করছি। নিশ্চয়ই জালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক কঠিন শাস্তি। (সূরা ইবরাহীমঃ ২২)

২০
হাশরের মাঠে মানুষের হিসাব এবং আমলনামা প্রদানঃ
হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে হিসাব সমাপ্ত হওয়ার পর প্রত্যেককে নিজ নিজ আমলনামা প্রদান করা হবে। যারা ডান হাতে আমলনামা পাবেন তারা অত্যন্ত খুশী হবেন। মানুষকে বিশেষভাবে কয়েকটি বিষয়ের হিসাব দিতে হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পাঁচটি বিষয়ের উত্তর দেয়া ছাড়া কোন মানুষ হাশরের মাঠে এক পা অগ্রসর হতে পারবে না। তার বয়স সম্পর্কে এবং কিভাবে তা শেষ করেছে। যৌবন সম্পর্কে এবং কিভাবে তা অতিবাহিত করেছে। তার মাল সম্পর্কে, কোথা থেকে সে তা উপার্জন করেছে এবং কোথায় তা ব্যয় করেছে এবং ইল্‌ম অনুযায়ী সে কতটুকু আমল করেছে। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল কিয়ামাহ।] আল্লাহ তাআহলা ডান হাতে আমলনামাপ্রাপ্ত মুমিনদের খুশীর অবস্থা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

فَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِيَمِينِهِ فَيَقُولُ هَاؤُمْ اقْرَءُوا كِتَابِيه إِنِّي ظَنَنتُ أَنِّي مُلَاقٍ حِسَابِيَه فَهُوَ فِي عِيشَةٍ رَاضِيَةٍ فِي جَنَّةٍ عَالِيَةٍ قُطُوفُهَا دَانِيَةٌ كُلُوا وَاشْرَبُوا هَنِيئًا بِمَا أَسْلَفْتُمْ فِي الْأَيَّامِ الْخَالِيَةِ

অর্থঃ অতঃপর যার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে সে বলবেঃ এসো! তোমরাও আমার আমলনামা পড়ে দেখ। আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে সুউচ্চ জান্নাতে। তার ফলসমূহ অবনমিত থাকবে। বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার প্রতিদান স্বরূপ তোমরা খাও এবং পান কর তৃপ্তি সহকারে। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ১৯- ২৪) কাফের এবং মুনাফেকরা বাম হাতে পিছন দিক থেকে তাদের আমলনামা গ্রহণ করবে। তারা বাম হাতে আমলনামা পেয়ে নিজেদের ধ্বংস কামনা করবে। আল্লাহ তাদের অবস্থা উল্লেখ করে বলেনঃ

وَأَمَّا مَنْ أُوتِيَ كِتَابَهُ بِشِمَالِهِ فَيَقُولُ يَالَيْتَنِي لَمْ أُوتَ كِتَابِي وَلَمْ أَدْرِ مَا حِسَابِي يَالَيْتَهَا كَانَتْ الْقَاضِيَةَ مَا أَغْنَى عَنِّي مَالِيه هَلَكَ عَنِّي سُلْطَانِيه خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ

অর্থঃ যার আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে, সে বলবে হায় আমায় যদি আমলনামা না দেয়া হতো! আমি যদি না জানতাম আমার হিসাব! হায় আমার মৃত্যুই যদি শেষ পরিণতি হত! আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসলনা। আমার ক্ষমতাও বরবাদ হয়ে গেল। ফেরেশতাদেরকে বলা হবেঃ একে ধর। অতঃপর গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। অতঃপর তাকে এমন শিকল দিয়ে বাঁধ যার দৈর্ঘ হবে সত্তর গজ। (সূরা আল-হাক্কাহঃ ২৫-৩২)

২১
এক নজরে জাহান্নাম ও জাহান্নামীদের ভয়াবহ অবস্থাঃ
জাহান্নামের রয়েছে সাতটি দরজা। দুনিয়ার আগুনের তাপমাত্রা জাহান্নামের আগুনের তাপমাত্রার সত্তর ভাগের একভাগ মাত্র। কিয়ামতের দিন সত্তর হাজার লোহার শিকল দিয়ে বেধে টেনে টেনে জাহান্নামকে হাশরের মাঠের নিকটবর্তী করা হবে। প্রতিটি শিকলে সত্তর হাজার ফেরেশতা থাকবে। জাহন্নামের আগুনে সবচেয়ে হালকা আযাব হবে এমন এক ব্যক্তির যাকে আগুনের ফিতা বিশিষ্ট দুহটি জুতা পরিয়ে দেয়া হবে। যার গরমে পাতিলের মধ্যে পানিতে কোন জিনিষ ফুটার মত তার মাথার মগজ গলতে থাকবে। তাকে দেখে মনে হবে তার চেয়ে বেশী শাস্তি আর কাউকে দেয়া হচ্ছে না। অথচ তাকে সবচেয়ে হালকা আযাব দেয়া হচ্ছে।

কিয়ামতের দিন এমন একজন জাহান্নামীকে নিয়ে আসা হবে যে দুনিয়াতে সবচেয়ে বেশী নিয়ামতের অধিকারী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার চুবানি দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবেঃ দুনিয়াতে কখনও সুখ ভোগ করেছো কি? কোন নিয়ামত তোমার কাছে এসেছিল কি? উত্তরে সে বলবেঃ আল্লাহর শপথ করে বলছি! দুনিয়াতে কোন দিন শান্তি ভোগ করিনি।

জাহান্নামীদের দেহ এত বিশাল হবে যে তাদের দাঁতগুলো হবে উহুদ পাহাড়ের মত বিশাল। এক কাঁধ হতে অন্য কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী বাহনে আরোহীর তিন দিনের রাস্তা। শরীরের চামড়াও হবে অনুরূপ মোটা এবং জাহান্নামে তাদের বসার স্থানটি (নিতম্ব) হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী দূরত্বের সমপরিমাণ।

তাদের পানীয় হবে এমন গরম পানি যা মাথার উপর ঢালা হবে। মাথা দিয়ে শরীরের ভিতরে প্রবেশ করে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবে। তাদেরকে পুঁজ মেশানো পানিও পান করানো হবে। যাক্কুম ফল হবে তাদের খাদ্য। তা জাহান্নামের ভিতরেই উৎপন্ন হবে। তারা তা খেতে চাইবেনা। জোর করে খাওয়ানো হবে। যাক্কুম ফলের এক বিন্দু রস যদি দুনিয়াতে ফেলে দেয়া হতো তাহলে দুনিয়াবাসীর সমস্ত জীবিকা নষ্ট করে দিতো এবং তার গন্ধ ও বিষের কারণে মানুষের জন্যে পৃথিবীতে বসবাস করা অসম্ভব হয়ে যেত। তাহলে চিন্তা করুন এই ফলটি যাদের খাদ্য হবে তাদের অবস্থা কেমন কঠিন হবে?!! জাহান্নামের গভীরতা এতো বেশী হবে যে তার উপর থেকে একটি পাথর নিক্ষেপ করলে সত্তর বছরেও তার তলদেশে পৌঁছতে পারবেনা। পাথর এবং কাফেরের শরীর দিয়ে জাহান্নামের আগুন জ্বালানো হবে। জাহান্নামের আগুন কাউকে তার পায়ের গিরা, কাউকে তার হাঁটু, কাউকে কোমর এবং কাউকে তার বুক পর্যন্ত গ্রাস করবে। বাতাস এবং পানি হবে অত্যন্ত গরম। জাহান্নামের গরম বাতাস এবং গরম পানি শরীরের চামড়া জ্বালিয়ে দিয়ে হাড্ডী এবং কলিজা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। জান্নাতীদের অধিবাসীর চেয়ে জাহান্নামের অধিবাসীর সংখ্যা অনেক বেশী হবে। তাদের পোষাক হবে আগুনের। শাস্তি হবে বিভিন্ন ধরণের। শরীরের চামড়া জ্বালিয়ে দেয়া হবে, মাথায় গরম পানি ঢালা হবে, চেহারা জ্বালিয়ে দেয়া হবে, মুখের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তাদের মুখমন্ডল কালো হবে, আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে, হৃদয় পর্যন্ত আগুন পৌঁছে যাবে, নাড়ী-ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে, তাদেরকে শিকল ও বেড়ি লাগিয়ে বেধে রাখা হবে। তারা যে শয়তান ও যেসমস্ত বাতিল মাহবূদের অনুসরণ করত তারাও জাহান্নামীদের সাথে শাস্তি ভোগ করবে।

সম্মানিত পাঠক মন্ডলী! আমরা আখেরাতে ঐ সমস্ত গুনাহগার মানুষের আযাবের বিভিন্ন অবস্থা ও তাদের পরিণতির কথা বর্ণনা করলাম যারা তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করেছে কিংবা আল্লাহ তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন নি।

তাওহীদপন্থী কোন মানুষ যদি আল্লাহর অপছন্দনীয় এমন কাজ করে মৃত্যু বরণ করে যা কোন সৎ আমলের মাধ্যমে মোচন করা হয়নি সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর ইচ্ছাধীন থাকবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করে দিবেন না হয় শাস্তি দিবেন। শাস্তি দিলে মৃত্যুর পরই তা শুরু হবে। কবরে কারও শাস্তি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কারও শাস্তি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বহাল থাকার পর মূলতবী করা হবে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রঃ) তার রূহ্‌ নামক গ্রন্থে এই মাস্‌আলাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন।

হাশরের মাঠে কোন কোন গুনাহগার মুমিনের শাস্তি হবে। কোন কোন অপরাধী গুনাহ থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করে নির্দিষ্ট সময় অবস্থান করার পর সেখান থেকে বের হয়ে আসবে। সহীহ হাদীছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে,

يُعَذَّبُ نَاسٌ مِنْ أَهْلِ التَّوْحِيدِ فِي النَّارِ حَتَّى يَكُونُوا فِيهَا حُمَمًا ثُمَّ تُدْرِكُهُمُ الرَّحْمَةُ فَيُخْرَجُونَ وَيُطْرَحُونَ عَلَى أَبْوَابِ الْجَنَّةِ قَالَ فَيَرُشُّ عَلَيْهِمْ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْمَاءَ فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ الْغُثَاءُ فِي حِمَالَةِ السَّيْلِ ثُمَّ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ

অর্থঃ তাওহীদে বিশ্বাসী কিছু লোককে জাহান্নামের আগুনের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে। তারা আগুনে পুড়ে কয়লার মত হয়ে যাবে। পরিশেষে তাদেরকে আল্লাহর রহমতে আগুন থেকে বের করে জান্নাতের দরজার সামনে আনা হবে। জান্নাতবাসীগণ তাদের উপর পানির ছিটা দেয়ার সাথে সাথে তারা বন্যায় ভাসমান আবর্জনার উপর গজে উঠা তৃণলতার ন্যায় উত্থিত হবে। অতঃপর তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ ছিফাতুল জাহান্নাম।]

এবিষয়ে আরো অনেক হাদীছ রয়েছে যা প্রমাণ করে, কৃত অপরাধের শাস্তি স্বরূপ কোন কোন মুমিনও জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। অতঃপর নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত শাস্তি ভোগ করার পর তারা সেখান থেকে বের হবে।

প্রতিটি মুসলিমের উচিৎ কিয়ামতের দিন নাজাতের উপায় অবলম্বন করা এবং আল্লাহর অপছন্দনীয় প্রতিটি কাজ থেকে এমন দিন আসার পূর্বেই তাওবা করা যেদিন সে তার কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে এবং পুনরায় দুনিয়াতে আগমণ কামনা করবে, যাতে তারা সৎ কাজ করতে পারে অথবা মৃত্যুর ফেরেশতা দেখার পর কামনা করবে যে, তার বয়স বাড়িয়ে দেয়া হোক। অথচ ফেরেশতাগণ তার রূহ্‌ কবজ করার জন্য আগমণ করেছেন। আল্লাহ বলেনঃ

وَلَنْ يُؤَخِّرَ اللَّهُ نَفْسًا إِذَا جَاءَ أَجَلُهَا وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ

অর্থঃ কারও মৃত্যুর সময় এসে গেলে আল্লাহ তাকে মুহূর্তের জন্যেও অবকাশ দিবেন না। আর আল্লাহ তোমাদের কর্ম সম্পর্কে অবগত আছেন। (সূরা মুনাহফিকূনঃ ১১)

২২
আখেরাতে গুনাহগার মুমিনদের অবস্থাঃ
আহ্‌লে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমদের মতে কোন গুনাহগার মুসলিম ব্যক্তিকে কাফের বলা বৈধ নয়। তবে কুরআন ও সুন্নায় যার কুফরী হওয়ার কথা এসেছে এবং তার সামনে দলীল-প্রমাণ সুস্পষ্ট হয়েছে, তার কথা ভিন্ন। এবং তার কুফরী যবরদস্তি বা অজ্ঞতা কিংবা সন্দেহের কারণে নয়। এমনিভাবে আল্লাহ এবং তদীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে সমস্ত মুশরিক, ইহুদী এবং নাসারাদেরকে কাফের হিসাবে ঘোষণা করেছেন তাদের কাফের হওয়ার ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহ করা বৈধ নয়।

এথেকে জানা গেল, যে সমস্ত তাওহীদপন্থী মুমিন আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি এবং তাদের মধ্যে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার কোন কারণও পাওয়া যায়নি কিন্তু তারা গুনাহ ও পাপের কাজে লিপ্ত হয়েছে তাদের ব্যাপারটি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে শাস্তি দিবেন অথবা ক্ষমা করে দিবেন। আল্লাহ বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ

অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শির্ক করাকে ক্ষমা করেন না। শির্ক ব্যতীত অন্যান্য গুনাহ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করে থাকেন। (সূরা নিসাঃ ৪৮) কুরআন ও হাদীছে পাপী মুমিনদের এমন অনেক আমলের বর্ণনা এসেছে যাতে তাদের জন্যে শাস্তির কথা উল্লেখ হয়েছে তবে উহা তাদের চিরস্থায়ী জাহান্নামী হওয়া আবশ্যক করেনা। যে সমস্ত গুনাহগার মুমিন তাদের কৃত অপরাধ থেকে মৃত্যুর পূর্বে তাওবা করেনি নিম্নে আমরা তাদের অবস্থা আলোকপাত করব।

২৩
বেনামাযী ও নামাযে অলসতাকারীর অবস্থাঃ
ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি একেবারেই নামায ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

الْعَهْدُ الَّذِي بَيْنَنَا وَبَيْنَهُمُ الصَّلَاةُ فَمَنْ تَرَكَهَا فَقَدْ كَفَرَ

অর্থঃ আমাদের মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ

অর্থঃ আল্লাহর বান্দা এবং কাফের-মুশরেকের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ছেড়ে দেয়া। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]

তবে যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অলসতা করবে চাই সে অলসতা যথাসময়ে আদায় না করার মাধ্যমে হোক বা ঘুমের মাধ্যমে হোক কিংবা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নামায আদায়ে ত্রুটির মাধ্যমে হোক, সে কাফের না হলেও তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে।

সহীহ বুখারীতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

وَإِنَّا أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُضْطَجِعٍ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِصَخْرَةٍ وَإِذَا هُوَ يَهْوِي بِالصَّخْرَةِ لِرَأْسِهِ فَيَثْلَغُ رَأْسَهُ فَيَتَهَدْهَدُ الْحَجَرُ هَا هُنَا فَيَتْبَعُ الْحَجَرَ فَيَأْخُذُهُ فَلَا يَرْجِعُ إِلَيْهِ حَتَّى يَصِحَّ رَأْسُهُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى

অর্থঃ আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাড়িয়ে ছিল। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ্ে‌। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার তার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথমবারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সফরসঙ্গী ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেনঃ এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরজ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَوَيْلٌ لِلْمُصَلِّينَ الَّذِينَ هُمْ عَنْ صَلَاتِهِمْ سَاهُونَ

অর্থঃ ধ্বংস ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্যে যারা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন। (সূরা মাঊনঃ ৪-৫)

হাফেজ ইবনে কাছির (রঃ) এই আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় বলেনঃ তারা হয়ত প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় না করে সব সময় বা অধিকাংশ সময় দেরী করে নামায আদায় করে থাকে। অথবা নামাযের রুকন ও শর্তসমূহ যথাযথভাবে আদায়ের ব্যাপারে গাফিলতি করে থাকে অথবা তারা নামাযে মনোযোগ দেয়না এবং নামাযে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তারা এর অর্থের মাঝে গবেষণা করেনা। [- ইবনে কাছীর, ৪র্থ খন্ড।] রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ حَافَظَ عَلَيْهَا كَانَتْ لَهُ نُورًا وَبُرْهَانًا وَنَجَاةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ لَمْ يُحَافِظْ عَلَيْهَا لَمْ يَكُنْ لَهُ نُورٌ وَلَا بُرْهَانٌ وَلَا نَجَاةٌ وَكَانَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَعَ قَارُونَ وَفِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَأُبَيِّ بْنِ خَلَفٍ

অর্থঃ যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে কিয়ামতের দিন নামায তাঁর জন্য আলো, তার ঈমানের দলীল এবং নাজাতের উপায় হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবেনা কিয়ামতের দিন তার জন্যে কোন আলো থাকবেনা, তার ঈমানের পক্ষে কোন প্রমাণ এবং তার নাজাতের কোন উপায় থাকবেনা। কিয়ামতের দিন সে ফেরাউন, কারূন, হামান, এবং উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে। [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ। হাদীছটিকে শায়খ আবদুল আযীয বিন বায (রঃ) সহীহ বলেছেন।]

কোন কোন বিদ্বান বলেছেনঃ বেনামাযীকে উক্ত চার শ্রেণীর নিকৃষ্ট মানুষের সাথে হাশরের মাঠে উঠানোর কারণ হলো মানুষ সাধারণতঃ ধন-সম্পদ, রাজত্ব, মন্ত্রিত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকেই নামায থেকে বিরত থাকে। ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে কুখ্যাত ধনী কারূনের সাথে হাশর হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে ফেরাঊনের সাথে হাশর হবে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায নষ্ট করলে ফেরাঊনের মনী্ত্র হামানের সাথে হাশর হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে নামায ছেড়ে দিলে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশর হবে। এধরণের অপমানকর অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

২৪
যাকাত না দেয়ার শাস্তিঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ

অর্থঃ আর যারা স্বর্ণ ও রৌপ্য জমা করে রাখে আর তা হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করেনা তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক আযাবের সুসংবাদ দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার মাধ্যমে তাদের ললাটসমূহে, পার্শ্বদেশসমূহে ও পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। বলা হবে এগুলো ঐ সকল সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্যে জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ কর জমা করে রাখা বস্তুর। (সূরা তাওবাঃ ৩৪-৩৫)

সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ آتَاهُ اللَّهُ مَالًا فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ ثُمَّ تَلَا وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمْ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ আল্লাহ যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন সে যদি তার যাকাত না দেয় কিয়ামতের দিন তার ধন-সম্পদগুলোকে টাক মাথা বিশিষ্ট সাপে পরিণত করা হবে। তার চোখের উপরে দুহটি কালো বিন্দু থাকবে। সাপটি তার চিবুকে কামড়িয়ে ধরবে এবং বলবেঃ আমি তোমার মাল। আমিই তোমার গুপ্তধন। অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরআনের এ আয়াতটি পাঠ করলেনঃ

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمْ اللَّهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ যাদেরকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে ধন-সম্পদ দান করেছেন, তারা যদি তাতে কৃপণতা করে, এই কৃপণতা তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে তারা যেন ধারণা না করে। বরং এটা তাদের জন্য একান্তই ক্ষতিকর। যাতে তারা কার্পণ্য করে, সে ধন-সম্পদকে কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে। (সূরা আল ইমরানঃ ১৮০)

সহীহ মুসলিমে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحَ مِنْ نَارٍ فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْإِبِلُ قَالَ وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا وَمِنْ حَقِّهَا حَلَبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ أَوْفَرَ مَا كَانَتْ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيلًا وَاحِدًا تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ قَالَ وَلَا صَاحِبُ بَقَرٍ وَلَا غَنَمٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ وَلَا جَلْحَاءُ وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطَحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ وَإِمَّا إِلَى النَّارِ

অর্থঃ যে স্বর্ণ-রৌপ্যের মালিক তার স্বর্ণ-রৌপ্যের যাকাত প্রদান করবেনা কিয়ামতের দিন তার স্বর্ণ-রেŠপ্যগুলোকে আগুন দিয়ে গলিয়ে চ্যাপটা করা হবে। অতঃপর জাহান্নামের আগুনে গরম করে তার পার্শ্বদেশে, পিঠে এবং কপালে তা দিয়ে সেঁক দেয়া হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করা হবে। এমন একদিনে তাদের এ শাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে ফয়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত।]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হলো উট ওয়ালার কি অবস্থা হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ উটের মালিক যদি উহার হক আদায় না করে অর্থাৎ যাকাত না দেয় কিয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে উটগুলোকে পূর্বের চেয়ে মোটা-তাজা অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তা থেকে একটি বাচ্চাও বাদ পড়বেনা। উটগুলো পা দিয়ে তাদের মালিককে পিষতে থাকবে এবং দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকবে। যখন প্রথম দলের পালা শেষ হবে পরবর্তী দলের পালা আসবে। এমন এক দীর্ঘ দিনে তাদের এশাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। মানুষের মাঝে ফয়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হাশরের মাঠে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে প্রশ্ন করা হলো গরু এবং ছাগলের মালিকের কি অবস্থা হবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ গরু বা ছাগলের মালিক যদি উহার হক আদায় না করে অর্থাৎ যাকাত না দেয় কিয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে গরু ও ছাগলগুলোকে একত্রিত করা হবে। তা থেকে একটিও বাদ পড়বেনা এবং কোনটিই শিংবিহীন, বাঁকা শিং, অথবা ভাঙ্গা শিংবিশিষ্ট থাকবেনা। অর্থাৎ সবগুলো পূর্বের চেয়ে মোটা-তাজা এবং ধারালো সোজা শিংবিশিষ্ট থাকবে। শিং দিয়ে তাদের মালিককে আঘাত করবে এবং পা দ্বারা পিষতে থাকবে। এমন এক দীর্ঘ দিনে তাদের এশাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। মানুষের মাঝে ফয়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত হাশরের মাঠে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

২৫
সুদখোরের ভয়াবহ পরিণতিঃ
মহান আল্লাহ কুরআনুল কারীমে কিয়ামতের দিন সুদখোরদের অবস্থা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ الْمَسِّ

অর্থঃ যারা সুদ খায় তারা কিয়ামতের দিন এমনভাবে দন্ডায়মান হবে যেমনভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি যাকে শয়তান আছর করে দিশেহারা করে দেয়। (সূরা বাকারাঃ ২৭৫) অর্থাৎ তারা কিয়ামতের দিন জিনেধরা রোগীর মত দিশেহারা অবস্থায় কবর থেকে উঠবে। ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ সুদখোর কিয়ামতের দিন পাগল অবস্থায় হাশরের ময়দানে হাজির হবে। [- তাফসীরে ইবনে কাছীর, প্রথম খন্ড।] অন্য বর্ণনায় আছে, তাদেরকে বড় বড় পেটি বশিষ্ট অবস্থায় হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। তারা হাঁটতে চাইলে উল্টে পড়ে যাবে। মানুষেরা তাদের উপর দিয়ে চলতে থাকবে।

কতিপয় বিদ্বান বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এটা তাদের জন্যে নিদর্শন স্বরূপ হবে যার মাধ্যমে তাদেরকে চেনা যাবে। অতঃপর তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।

সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

فَأَتَيْنَا عَلَى نَهَرٍ حَسِبْتُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ أَحْمَرَ مِثْلِ الدَّمِ وَإِذَا فِي النَّهَرِ رَجُلٌ سَابِحٌ يَسْبَحُ وَإِذَا عَلَى شَطِّ النَّهَرِ رَجُلٌ قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ حِجَارَةً كَثِيرَةً وَإِذَا ذَلِكَ السَّابِحُ يَسْبَحُ مَا يَسْبَحُ ثُمَّ يَأْتِي ذَلِكَ الَّذِي قَدْ جَمَعَ عِنْدَهُ الْحِجَارَةَ فَيَفْغَرُ لَهُ فَاهُ فَيُلْقِمُهُ حَجَرًا فَيَنْطَلِقُ يَسْبَحُ ثُمَّ يَرْجِعُ إِلَيْهِ كُلَّمَا رَجَعَ إِلَيْهِ فَغَرَ لَهُ فَاهُ فَأَلْقَمَهُ حَجَرًا

অর্থঃ আমরা একটি রক্তের নদীর কাছে আসলাম। দেখলাম নদীতে একটি লোক সাঁতার কাটছে। নদীর তীরে অন্য একটি লোক কতগুলো পাথর একত্রিত করে তার পাশে দাড়িয়ে আছে। সাঁতার কাটতে কাটতে লোকটি যখন নদীর কিনারায় পাথরের কাছে দাড়ানো ব্যক্তির নিকটে আসে তখন দাড়ানো ব্যক্তি তার মুখে একটি পাথর ঢুকিয়ে দিচ্ছে। পাথর মুখে নিয়ে লোকটি আবার সাঁতরাতে শুরু করে। যখনই লোকটি নদীর তীরে আসতে চায় তখনই তার মুখে পাথর ঢুকিয়ে দেয়। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মতের সুদখোর। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তা’বীর]

২৬
ব্যভিচারী নারী-পুরুষের করুণ অবস্থাঃ
আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা যে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا

অর্থঃ আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ। (সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২)

ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।

সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ

فَأَتَيْنَا عَلَى مِثْلِ التَّنُّورِ قَالَ فَأَحْسِبُ أَنَّهُ كَانَ يَقُولُ فَإِذَا فِيهِ لَغَطٌ وَأَصْوَاتٌ قَالَ فَاطَّلَعْنَا فِيهِ فَإِذَا فِيهِ رِجَالٌ وَنِسَاءٌ عُرَاةٌ وَإِذَا هُمْ يَأْتِيهِمْ لَهَبٌ مِنْ أَسْفَلَ مِنْهُمْ فَإِذَا أَتَاهُمْ ذَلِكَ اللَّهَبُ ضَوْضَوْا

অর্থঃ আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আসলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ব্বলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা উচঃস্বরে চিৎকার করছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তা’বীর] তাদেরকে উলঙ্গ করে এভাবে শাস্তি দেয়ার কারণ এই যে, তারা উলঙ্গ অবস্থায় নির্জনে একত্রিত হয়ে এই জঘণ্য ঘৃণীত কাজে লিপ্ত হয়েছিল। আর নীচের দিক থেকে আগুন দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেয়ার কারণ হলো ব্যভিচার শরীরের নীচের অঙ্গ দিয়েই হয়ে থাকে।

২৭
ব্যভিচারীর শাস্তির অন্য একটি চিত্রঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিহরাজের রাত্রিতে একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকদেরকে রান্না করে রাখা গোশত থেকে বিরত রেখে পঁচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত, কাঁচা গোশত খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা চিৎকার করছে এবং একান্ত অনিচ্ছা সত্বেও তা থেকে ভক্ষণ করছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল ফেরেশতাক জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা কোন শ্রেণীর লোক? জিবরীল বললেনঃ এরা আপনার উম্মতের ঐ সমস্ত পুরুষ লোক যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র এবং হালাল স্ত্রী থাকা সত্বেও অপবিত্র এবং খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত। [- আল-খুতাবুল মিম্বারিয়াহ, ডঃ সালেহ ফাওযান।]

মুসলিম ভাই-বোনদের উচিৎ এই ধরণের জঘণ্য পাপের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং যেসমস্ত জিনিষ উহার প্রতি আকৃষ্ট করে তা থেকেও সতর্ক থাকা। যেমন নারী-পুরুষের নির্জনে সাক্ষাৎ, বেপর্দা হওয়া, মহিলাদের সৌন্দর্যের স্থান প্রকাশ করা ইত্যাদি। এসমস্ত কাজ মানুষকে ব্যভিচারের প্রতি উৎসাহ যোগায়। তাই এগুলো থেকেও সাবধান থাকতে হবে।

২৮
সতী নারীর প্রতি ব্যভিচারের মিথ্যা অপবাদ দেয়ার আযাবঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَرْمُونَ الْمُحْصَنَاتِ الْغَافِلَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ لُعِنُوا فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ يَوْمَ تَشْهَدُ عَلَيْهِمْ أَلْسِنَتُهُمْ وَأَيْدِيهِمْ وَأَرْجُلُهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ يَوْمَئِذٍ يُوَفِّيهِمْ اللَّهُ دِينَهُمْ الْحَقَّ

অর্থঃ যারা সতী-সাধবী নিরীহ ঈমানদার নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে তারা ইহকালে ও পরকালে অভিশপ্ত হবে এবং তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি। কিয়ামতের দিন তাদের বিরুদ্ধে তাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে সাক্ষী দিবে তাদের জিহ্‌বা, তাদের হাত এবং তাদের পা। সেদিন আল্লাহ তাদের সমুচিত শাস্তি পুরোপুরি দেবেন। (সূরা নূরঃ ২৩-২৫)

২৯
গীবতকারী ও চুগলখোরের কঠিন অবস্থাঃ [- মানুষের অজান্তে দোষ বর্ণনার নাম গীবত। যদিও উক্ত দোষ তার মাঝে বর্তমান থাকে। চুগলখোর ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে মানুষের মাঝে ঝগড়া লাগানোর উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে। গীবতকারী ও চুগলখোরের মধ্যে পার্থক্য এই যে চুগলখোরের মধ্যে ঝগড়া লাগানোর ইচ্ছা থাকে। আর গীবতকারীর মধ্যে তা থাকা শর্ত নয়। বর্তমানে মুসলমানরা ব্যাপকভাবে এই অপরাধটিতে লিপ্ত রয়েছে। বিশেষভাবে মহিলাগণ একাজে বেশী লিপ্ত হয়। সমাজে ব্যাপকভাবে এর চর্চা থাকার কারণে প্রতিনিয়ত মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদের সৃষ্টি হচ্ছে। একারণেই আমি এই পুস্তিকাটিতে বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা করেছি যাতে করে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিগণ সতর্ক হয়ে যায়। আল্লাহ আমাদের সকলকে গীবতকারীদের অনিষ্টতা হতে হেফাজত করুন। আমীন।]
গীবতকারী ও চুগলখোরেরা মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ ও ঝগড়া সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে থাকে। মানুষের পারস্পরিক ভালবাসাকে শত্রুতায় পরিণত করে। তারা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী। তাদেরকে আপনি দেখতে পাবেন একজনের কাছে একরকম এবং অন্যজনের কাছে অন্যরকম চেহারা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মত যখন যা খুশী তাই বলে থাকে। আল্লাহ তায়াহলা তাদেরকে ধমকি দিয়ে বলেনঃ

وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ

অর্থঃ প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ। (সূরা হুমাজাহঃ ১) তারা নিজেদের কথা এবং কাজের মাধ্যমে মানুষের দোষ বর্ণনা করে থাকে। তারা ক্রোধ ও ঘৃণার হকদার। কারণ তারা মিথ্যা, গীবত, চুগলখোরী, খিয়ানত, হিংসা এবং ধোকা থেকে বিরত হয়না। এজন্যই কবরের আজাবের অন্যতম কারণ হলো চুগলখোরী করা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحَائِطٍ مِنْ حِيطَانِ الْمَدِينَةِ أَوْ مَكَّةَ فَسَمِعَ صَوْتَ إِنْسَانَيْنِ يُعَذَّبَانِ فِي قُبُورِهِمَا فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَذَّبَانِ وَمَا يُعَذَّبَانِ فِي كَبِيرٍ ثُمَّ قَالَ بَلَى كَانَ أَحَدُهُمَا لَا يَسْتَتِرُ مِنْ بَوْلِهِ وَكَانَ الْآخَرُ يَمْشِي بِالنَّمِيمَةِ ثُمَّ دَعَا بِجَرِيدَةٍ فَكَسَرَهَا كِسْرَتَيْنِ فَوَضَعَ عَلَى كُلِّ قَبْرٍ مِنْهُمَا كِسْرَةً فَقِيلَ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لِمَ فَعَلْتَ هَذَا قَالَ لَعَلَّهُ أَنْ يُخَفَّفَ عَنْهُمَا مَا لَمْ تَيْبَسَا أَوْ إِلَى أَنْ يَيْبَسَا

অর্থঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা বা মক্কার কোন একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দুহজন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোন অপরাধের কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাঁচা খেজুরের শাখা আনতে বললেন। অতঃপর উক্ত খেজুরের শাখাটিকে দুহভাগে বিভক্ত করে প্রত্যেক কবরের উপর একটি করে রেখে দিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এরকম করলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হয়ত খেজুরের শাখা দুহটি জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ওযু]

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَمَّا عُرِجَ بِي مَرَرْتُ بِقَوْمٍ لَهُمْ أَظْفَارٌ مِنْ نُحَاسٍ يَخْمُشُونَ وُجُوهَهُمْ وَصُدُورَهُمْ فَقُلْتُ مَنْ هَؤُلَاءِ يَا جِبْرِيلُ قَالَ هَؤُلَاءِ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ لُحُومَ النَّاسِ وَيَقَعُونَ فِي أَعْرَاضِهِمْ

অর্থঃ যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি তামার নখ বিশিষ্ট একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এসমস্ত লোক কারা? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশ্‌ত ভক্ষণ করত এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও চুগলখোরী করত। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।]

কাতাদা (রঃ) বলেনঃ আমাদেরকে বলা হয়েছে কবরের আযাবের এক তৃতীয়াংশ হবে গীবতের কারণে, এক তৃতীয়াংশ পেশাব থেকে সাবধান না থাকার কারণে এবং এক তৃতীয়াংশ চুগলখোরীর কারণে। যেহেতু গীবতকারী এবং চুগলখোর মিথ্যা কথাও বলে থাকে তাই সে মিথ্যাবাদীর শাস্তিও ভোগ করবে। সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الْأَوَّلِ فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الْجَانِبُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى

অতঃপর আমরা এমন এক লোকের কাছে উপস্থিত হলাম যাকে চিৎকরে শায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। একজন লোক লোহার কেঁচী হাতে নিয়ে তার মাথার পাশে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মুখের একদিকে সেই কেঁচী প্রবেশ করিয়ে পিছনের দিকে ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে অনুরূপ করা হচ্ছে এবং চোখের ভিতর প্রবেশ করিয়েও অনুরূপ করা হচ্ছে। একদিকে চিরে শেষ করে অন্যদিকেও অনুরূপ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিকে চিরে শেষ করার সাথে সাথে প্রথম দিক আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রথম দিকে নতুন করে চিরা হচ্ছে। হাদীছের শেষাংশে এসেছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এই ব্যক্তি হলো এমন লোক যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলত এবং সে মিথ্যা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত তা’বীর।]

হাদীছে চোগলখোরের কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। হুযায়ফা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন,

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَتَّاتٌ

অর্থঃ চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।] আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন,

مَنْ كَانَ لَهُ وَجْهَانِ فِي الدُّنْيَا كَانَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لِسَانَانِ مِنْ نَارٍ

অর্থঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দুহজনের নিকট দুহরকম কথা বলবে কিয়ামতের দিন তার আগুনের দুহটি জিহ্‌বা হবে। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।] ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত,

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ حَالَتْ شَفَاعَتُهُ دُونَ حَدٍّ مِنْ حُدُودِ اللَّهِ فَقَدْ ضَادَّ اللَّهَ وَمَنْ خَاصَمَ فِي بَاطِلٍ وَهُوَ يَعْلَمُهُ لَمْ يَزَلْ فِي سَخَطِ اللَّهِ حَتَّى يَنْزِعَ عَنْهُ وَمَنْ قَالَ فِي مُؤْمِنٍ مَا لَيْسَ فِيهِ أَسْكَنَهُ اللَّهُ رَدْغَةَ الْخَبَالِ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ

অর্থঃ আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোন দন্ডবিধি বাস্তবায়ন করার প্রতিরোধ হয়ে দাড়াল সে আল্লাহর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হল। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল সে তা থেকে বিরত থাকার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর ক্রোধের ভিতরে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার ভিতরে নেই সে যদি তা বর্জন করতঃ তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ তাকে রাদাগাতুল খাবালে [- জাহান্নামীদের শরীরের পুঁজ ও পঁচা ঘামের নাম রাদাগাতুল খাবাল।] প্রবেশ করাবেন। তার উক্ত কথার প্রায়ঃশিচত্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবে। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আক্বযীয়া।]

আয়েশা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে,

مَنْ أَكَلَ لَحْمَ أخِيْهِ فِىْ الدُّنْيَا قُرِّبَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ كُلْهُ كَمَا أَكَلْتَهُ حَيًّا فَيَأْكُلُهُ وَ يَكْلَحُ وَيَصِيْحُ

যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে (গীবত করবে) কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি এখন মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর। যেমনভাবে জীবিতাবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ করতে। অতঃপর সে অতি অনিচ্ছা সত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে। [- ফাতহুল বারী।]

৩০
প্রতারক ও বিশ্বাসঘাতকের পরিণতিঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِذَا جَمَعَ اللَّهُ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ فَقِيلَ هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ

অর্থঃ হাশরের মাঠে আল্লাহ যখন সমস্ত মানুষকে একত্রিত করবেন তখন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতক এবং প্রতারকের জন্য একটি করে নিশানা স্থাপন করা হবে এবং বলা হবে এটি অমুকের পুত্র অমুকের বিশ্বাস ঘাতকতার নিশানা। [- মুসলিম, কিতাবুল জিহাদ।]

৩১
অহংকারীদের অবস্থাঃ
আমর বিন শুয়াইব (রাঃ) তার পিতা, তাঁর পিতা তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَمْثَالَ الذَّرِّ فِي صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَيُسَاقُونَ إِلَى سِجْنٍ فِي جَهَنَّمَ يُسَمَّى بُولَسَ تَعْلُوهُمْ نَارُ الْأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ طِينَةَ الْخَبَالِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে মানুষের আকৃতিতে ছোট ছোট পিপীলিকার ন্যায় হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্রিত করা হবে যার নাম হবে বুলাস। আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম তাদেরকে পান করতে বাধ্য করা হবে। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ সিফাতুল কিয়ামাহ।] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْر

অর্থঃ যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

بَيْنَمَا رَجُلٌ يَجُرُّ إِزَارَهُ مِنْ الْخُيَلَاءِ خُسِفَ بِهِ فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ فِي الْأَرْضِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ

এক ব্যক্তি দম্ভ ও অহংকারের সাথে তার পায়জামা বা লুঙ্গি যমীনের উপর ঝুলিয়ে টেনে টেনে পথ চলছিল। এমন সময় সে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হল। কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে যমীনে ধ্বসতে (নীচের দিকে) যেতে থাকবে।

৩২
ঋণ পরিশোধ না করে মৃত্যু বরণ করার শাস্তিঃ
সাহাবী সাহদ বিন আতওয়াল (রাঃ) বলেনঃ আমার ভাই মারা গেল। মরার সময় সে ৩০০ দিরহাম রেখে গেল। আমি স্থির করলাম যে ঐ ৩০০ দিরহাম তার ছেলে-মেয়েদের জন্য খরচ করবো। কিন্তু ভাই ছিল ঋণগ্রস্ত নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে এ খবর পৌঁছলে তিনি আমাকে বললেনঃ তোমার ভাই ঋণের ফলে আটকে আছে। তার ঋণ পরিশোধ করে দাও। [- আহমাদ, ইবনে মাজাহ।]

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঋণ রেখে মৃত্যুবরণকারীর জানাযা পড়তেন না। একদা একটি জানাযা উপস্থিত হলে সকলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জানাযা পড়ার অনুরোধ করল। তিনি প্রশ্ন করলেনঃ ওর কি কোন ঋণ পরিশোধ করা বাকী আছে? সকলে বললঃ তিন দীনার। তারপর বললেনঃ ও কি কোন সম্পদ ছেড়ে যাচ্ছে? সকলে বললঃ না। একথা শুনে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা তোমাদের সাথীর জানাযা পড়ে নাও--। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হাওয়ালা।]

নেক আমলের ফলে জান্নাতের অধিকারী মুসলিম ব্যক্তি যদি দুনিয়াতে ঋণ রেখে যায় তাহলে তার ঋণ বেহেশতে যাওয়ার পথে বাধা ও কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে। ঋণ পরিশোধ না করে বেহেশতে যেতে পারবেনা। পরকালে টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা যাবেনা। দুনিয়াতে অর্জিত নেকী দিয়ে তা পরিশোধ করতে হবে। নেকীর পরিমাণ যদি ঋণের চেয়ে কম হয়, তাহলে ঋণ দাতার গুনাহ ঋণ গ্রহীতার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে। পরিণামে জান্নাতের হকদার হওয়া সত্বেও তাকে জাহান্নামে যেতে হবে।

একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা কি জান অসহায় কে? সাহাবীগণ বললেনঃ যার কোন টাকা-পয়সা নেই সেই তো অসহায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে ঐ ব্যক্তি অসহায় যে কিয়ামতের দিন নামায, রোজা ও যাকাত নিয়ে উপস্থিত হবে। কিন্তু সেই সঙ্গে এমন কিছু লোক নিয়ে উপস্থিত হবে যাদের কাউকে গালি দিয়েছে, কারো নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো ধন-সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কাউকে খুন করেছে, কাউকে প্রহার করেছে--- ইত্যাদি। সুতরাং প্রতিশোধ হলো একে নিজের নেকী দান করবে, ওকেও নিজের নেকী দান করবে। পরিশেষে যখন নেকী শেষ হয়ে যাবে অথচ তার ঋণ শেষ হবেনা তখন তাদের গুনাহ নিয়ে এর ঘাড়ে চাপানো হবে এবং সবশেষে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বির ওয়াস্ সিলাত।]

৩৩
মিথ্যাবাদীদের পরিণামঃ
সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর স্বপ্নের দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

فَأَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مُسْتَلْقٍ لِقَفَاهُ وَإِذَا آخَرُ قَائِمٌ عَلَيْهِ بِكَلُّوبٍ مِنْ حَدِيدٍ وَإِذَا هُوَ يَأْتِي أَحَدَ شِقَّيْ وَجْهِهِ فَيُشَرْشِرُ شِدْقَهُ إِلَى قَفَاهُ وَمَنْخِرَهُ إِلَى قَفَاهُ وَعَيْنَهُ إِلَى قَفَاهُ قَالَ وَرُبَّمَا قَالَ أَبُو رَجَاءٍ فَيَشُقُّ قَالَ ثُمَّ يَتَحَوَّلُ إِلَى الْجَانِبِ الْآخَرِ فَيَفْعَلُ بِهِ مِثْلَ مَا فَعَلَ بِالْجَانِبِ الْأَوَّلِ فَمَا يَفْرُغُ مِنْ ذَلِكَ الْجَانِبِ حَتَّى يَصِحَّ ذَلِكَ الْجَانِبُ كَمَا كَانَ ثُمَّ يَعُودُ عَلَيْهِ فَيَفْعَلُ مِثْلَ مَا فَعَلَ الْمَرَّةَ الْأُولَى

অর্থঃ অতঃপর আমরা এমন এক লোকের কাছে উপস্থিত হলাম যাকে চিৎকরে শায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। আর একজন লোক লোহার বড়শী হাতে নিয়ে তার মাথার পাশে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মুখের একদিকে লৌহাস্ত্র (চাকু) প্রবেশ করিয়ে পিছনের দিকে ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে এরূপ করা হচ্ছে। চোখের ভিতর প্রবেশ করিয়েও অনুরূপ করা হচ্ছে। একদিকে চিরে শেষ করে অন্যদিকেও অনুরূপ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিকে চিরে শেষ করার সাথে সাথে প্রথম দিক আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রথম দিকে নতুন করে চিরা হচ্ছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এ হলো এমন লোক যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলতে শুরু করতো এবং সে মিথ্যা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ত। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তা’বীর।] আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেনঃ

وَمَنْ قَالَ فِي مُؤْمِنٍ مَا لَيْسَ فِيهِ أَسْكَنَهُ اللَّهُ رَدْغَةَ الْخَبَالِ حَتَّى يَخْرُجَ مِمَّا قَالَ

অর্থঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের এমন দোষ বর্ণনা করলো যা তার মাঝে নেই সে যদি তা থেকে তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের ভিতরে জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম ও কাঁদা মিশ্রিত স্থানে বসবাস করাবেন। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আকযীয়া।]

৩৪
আমলহীন আলেমের পরিণতিঃ
উসামা বিন যায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি,

يُؤْتَى بِالرَّجُلِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ فَتَنْدَلِقُ أَقْتَابُ بَطْنِهِ فَيَدُورُ بِهَا كَمَا يَدُورُ الْحِمَارُ بِالرَّحَى فَيَجْتَمِعُ إِلَيْهِ أَهْلُ النَّارِ فَيَقُولُونَ يَا فُلَانُ مَا لَكَ أَلَمْ تَكُنْ تَأْمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَتَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ فَيَقُولُ بَلَى قَدْ كُنْتُ آمُرُ بِالْمَعْرُوفِ وَلَا آتِيهِ وَأَنْهَى عَنِ الْمُنْكَرِ وَآتِيهِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর তার পেট থেকে নাড়ীভুঁড়ি বেরিয়ে যাবে। সে ব্যক্তি তার নাড়ীভুঁড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকবে যেমনভাবে চাকি ঘুরাবার কাজে নিয়োজিত গাধা চাকির চার পাশে ঘুরতে থাকে। জাহান্নামীরা তার কাছে উপস্থিত হয়ে বলবেঃ হে অমুক! তোমার এ দুরাবস্থা কেন? তুমি কি দুনিয়াতে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে না? উত্তরে সে বলবেঃ হ্যাঁ, আমি সৎ কাজের আদেশ করতাম কিন্তু নিজে তা পালন করতাম না। অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতাম কিন্তু নিজে অসৎ কাজে লিপ্ত হতাম। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যুহ্দ ওয়ার্ রাকায়েক।]

৩৫
রাসূল (সাঃ)এর নামে মিথ্যা রচনা করার কঠিন শাস্তিঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ تَعَمَّدَ عَلَيَّ كَذِبًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

অর্থঃ যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে আমার নামে মিথ্যা কথা বর্ণনা করবে সে যেন জাহান্নামে আপন ঠিকানা নির্ধারণ করে নেয়। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইলম।]

৩৬
যমিনের আইল পরিবর্তন বা যমিন জবরদখল করার শাস্তিঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ ظَلَمَ قِيدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ

অর্থঃ যে ব্যক্তি কারো অর্ধহাত জমিন জবরদখল করবে কিয়ামত দিবসে তার গলায় সাতটি যমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাজালিম।] তিনি আরো বলেনঃ

لَعَنَ اللَّهُ مَنْ لَعَنَ وَالِدَهُ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ ذَبَحَ لِغَيْرِ اللَّهِ وَلَعَنَ اللَّهُ مَنْ آوَى مُحْدِثًا وَلَعَنَ اللَّهُ منْ غَيَّرَ مَنَارَ الْأَرْضِ

অর্থঃ যে ব্যক্তি তার পিতার উপর অভিসম্পাত করলো তার উপর আল্লাহর লানত, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য পশু যবেহ করল তার উপর আল্লাহর লানত, যে ব্যক্তি কোন অপরাধীকে আশ্রয় দিল তার উপর আল্লাহর অভিশাপ। আর যে ব্যক্তি জমিনের নিশানা বা আইল পরিবর্তন করবে তার উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আযাহী।]

এখানে সীমানা পরিবর্তনের অর্থ হচ্ছে যমিনের আইল চেপে সীমানা নষ্ট করা বা কারো যমিন আত্মসাৎ করে নিজের যমিনের অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া। এদের শাস্তি সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ أَخَذَ مِنَ الْأَرْضِ شَيْئًا بِغَيْرِ حَقِّهِ خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِينَ

অর্থঃ অন্যায়ভাবে যে ব্যক্তি কারও যমিনের কিছু অংশ ছিনিয়ে নিবে, কিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমিনের নীচে দাবিয়ে দেয়া হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাজালিম।]

ইয়ালা বিন মুর্‌রা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও এক বিঘত পরিমাণ যমিন জবরদখল করে নিবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার উপর উক্ত যমিন খনন করতে করতে সাত তবক যমিনের শেষ পর্যন্ত পৌঁছার দায়িত্ব চাপিয়ে দিবেন। অতঃপর তার গলায় সাতটি যমিন ঝুলিয়ে দেয়া হবে। মানুষের মাঝে ফয়সালা শেষ না হওয়া পর্যন্ত উহা তার গলায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকবে। [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ।]

মুসনাদে আহমাদের অন্য বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারও যমিন আত্মসাৎ করবে কিয়ামতের দিন তাকে সেই যমিনের সমস্ত মাটি হাশরের মাঠে বহন করে নিয়ে যেতে বলা হবে। [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ।]

৩৭
অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ আত্মসাৎ করার শাস্তিঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদা আমাদের মাঝে দাড়িয়ে গণীমতের মাল খেয়ানত সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তার ভয়াবহ পরিণতির কথা উল্লেখ করলেন। অতঃপর তিনি বললেনঃ

لَا أُلْفِيَنَّ أَحَدَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى رَقَبَتِهِ شَاةٌ لَهَا ثُغَاءٌ عَلَى رَقَبَتِهِ فَرَسٌ لَهُ حَمْحَمَةٌ يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ وَعَلَى رَقَبَتِهِ بَعِيرٌ لَهُ رُغَاءٌ يَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ وَعَلَى رَقَبَتِهِ صَامِتٌ فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ أَوْ عَلَى رَقَبَتِهِ رِقَاعٌ تَخْفِقُ فَيَقُولُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَغِثْنِي فَأَقُولُ لَا أَمْلِكُ لَكَ شَيْئًا قَدْ أَبْلَغْتُكَ

অর্থঃ আমি কিয়ামতের দিন তোমাদের কাউকে এমন অবস্থায় দেখতে চাইনা যে, সে ঘাড়ে একটি চিৎকাররত ছাগল কিংবা ঘোড়া বহন করছে। সে আমাকে ডেকে বলছেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবোনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় এমন একটি উট ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে যে উটটি আওয়াজ করতে থাকবে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! আমি তখন বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় স্বর্ণ-রেŠপ্য ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবোনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। তোমাদের কেউ যেন কিয়ামতের দিন গলায় কাপড়ের বোঝা ঝুলন্ত অবস্থায় আমার সাথে সাক্ষাৎ না করে। সে বলবেঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সাহায্য করুন!! তখন আমি বলবঃ আমি তোমার কোন উপকার করতে পারবনা। আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি এবং তোমাদের কাছে আল্লাহর দ্বীন পৌঁছিয়ে দিয়েছি। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিহাদ।]

উপরোক্ত হাদীছের অর্থ এইযে, প্রত্যেক খেয়ানতকারী যাই খেয়ানত করুক না কেন কিয়ামতের দিনে তা বহন করে নিয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে। যাতে সে হাশরের ময়দানে সমস্ত মাখলুকের সামনে অপমানিত ও লজ্জিত হয়। চাই খেয়ানতকৃত বস্তু কোন পশু হোক বা স্বর্ণ-রেŠপ্য হোক বা অন্য কিছু হোক। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَمَنْ يَغْلُلْ يَأْتِ بِمَا غَلَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ যে ব্যক্তি যা আত্মসাৎ করবে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাজির হবে। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৬১)

৩৮
মাপে কম দেয়ার পরিণতিঃ
কুরআন ও হাদীছে মাপে এবং ওজনে কম দেয়াকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। মানুষের কাছ থেকে কোন কিছু মেপে নেয়ার সময় পূর্ণ মাত্রায় বা বেশী গ্রহণ করা এবং দেয়ার সময় মাপে কম করে দেয়ার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। আল্লাহর নবী শুয়াইব (আঃ)এর জাতিকে মাপে কম দেয়ার কারণেই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَيْلٌ لِلْمُطَفِّفِينَ الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ وَإِذَا كَالُوهُمْ أَوْ وَزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ أَلَا يَظُنُّ أُولَئِكَ أَنَّهُمْ مَبْعُوثُونَ لِيَوْمٍ عَظِيمٍ يَوْمَ يَقُومُ النَّاسُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ যারা মাপে কম দেয় তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ। যারা লোকদের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয় এবং যখন লোকদেরকে মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয় তখন কম করে দয়। তারা কি ভয় করেনা যে তারা পুনরুত্থিত হবে? একটি মহান দিবসে যেদিন মানুষ আপন কৃতকর্মের হিসাব দেয়ার সময় বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের সামনে দাড়াবে। (সূরা তাতফীফঃ ১-৬)

৩৯
ছবি অঙ্কনকারী ও প্রস্তুতকারীদের অবস্থাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ

অর্থঃ যারা এসমস্ত ছবি অঙ্কন করবে কিয়ামতের দিন তাদেরকে শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবেঃ তোমরা যা তৈরী করেছ তা জীবিত করে দেখাও। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।] আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ

قَالَتْ حَشَوْتُ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وِسَادَةً فِيهَا تَمَاثِيلُ كَأَنَّهَا نُمْرُقَةٌ فَجَاءَ فَقَامَ بَيْنَ الْبَابَيْنِ وَجَعَلَ يَتَغَيَّرُ وَجْهُهُ فَقُلْتُ مَا لَنَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ مَا بَالُ هَذِهِ الْوِسَادَةِ قَالَتْ وِسَادَةٌ جَعَلْتُهَا لَكَ لِتَضْطَجِعَ عَلَيْهَا قَالَ أَمَا عَلِمْتِ أَنَّ الْمَلَائِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيهِ صُورَةٌ وَأَنَّ مَنْ صَنَعَ الصُّورَةَ يُعَذَّبُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ

অর্থঃ আমি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর জন্য একটি বালিশ তৈরী করলাম। তাতে কিছু ছবি ছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরের দরজার কাছে দাড়িয়ে থাকলেন। তা দেখে ক্রোধে তাঁর মুখমন্ডলের রং পরিবর্তন হতে লাগল। আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের কি হলো? তিনি বললেনঃ এই বালিশগুলোর অবস্থা এমন কেন? আয়েশা (রাঃ) বললেনঃ এগুলো আমি আপনার বসার জন্যে তৈরী করেছি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি কি জান না যে ঘরে ছবি থাকে আল্লাহর রহমতের ফেরেশতা সে ঘরে প্রবেশ করেনা? যে ব্যক্তি ছবি তৈরী করবে আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দিবেন এবং বলবেনঃ তোমরা যা তৈরী করেছ তাতে রূহ্‌ প্রদান কর। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ বাদউল খাল্ক।]

ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি,

مَنْ صَوَّرَ صُورَةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ وَلَيْسَ بِنَافِخٍ

অর্থঃ দুনিয়াতে যে ব্যক্তি কোন ছবি অংকন করবে কিয়ামতের দিন তাকে উহাতে রূহ্‌ প্রদান করার আদেশ দেয়া হবে। সে তাতে রূহ্‌ সঞ্চার করতে সক্ষম হবেনা। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।]

ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি,

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُصَوِّرُونَ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন ছবি অঙ্কনকারীদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।] উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ

دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي الْبَيْتِ قِرَامٌ فِيهِ صُوَرٌ فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ تَنَاوَلَ السِّتْرَ فَهَتَكَهُ وَقَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِينَ يُصَوِّرُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ

অর্থঃ একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমণ করলেন। সেসময় বাড়ীতে একটি চাদর ছিল। তাতে ছিল বিভিন্ন রকম ছবি। কাপড়টি দেখে ক্রোধে তাঁর চেহারা পরিবর্তন হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সেটিকে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ অতঃপর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যারা এসমস্ত ছবি আঁকবে কিয়ামতের দিন তাদেরকে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদব, মুসলিমঃ অধ্যায় কিতাবুল লিবাস]

৪০
অকারণে কোন প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করার পরিণাম জাহান্নামঃ
বিনা প্রয়োজনে কোন প্রাণী হত্যা করা জায়েয নয়। তবে যেসমস্ত ক্ষতিকর প্রাণীকে হত্যা করার কথা বলা হয়েছে তার কথা ভিন্ন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

عُرِضَتْ عَلَيَّ النَّارُ فَرَأَيْتُ فِيهَا امْرَأَةً مِنْ بَنِي إِسْرَائِيلَ تُعَذَّبُ فِي هِرَّةٍ لَهَا رَبَطَتْهَا فَلَمْ تُطْعِمْهَا وَلَمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ

অর্থঃ আমার কাছে জাহান্নামকে পেশ করা হল। তাতে দেখলাম বনী ইসরাঈলের একটি মহিলাকে একটি বিড়াল হত্যা করার অপরাধে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। উক্ত মহিলা বিড়ালটিকে বেধে রাখত। সে নিজেও বিড়ালকে কোন কিছু খেতে দেয়নি এবং যমিন থেকে পোকা-মাকড় ধরে খাওয়ার জন্য ছেড়েও দেয়নি। এভাবে ক্ষুধার তাড়নায় বিড়ালটি মৃত্যু বরণ করে। [- মুসিলম, অধ্যঅয়ঃ কিতাবুল কুসূফ।] সহীহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

دَنَتْ مِنِّي الْجَنَّةُ حَتَّى لَوِ اجْتَرَأْتُ عَلَيْهَا لَجِئْتُكُمْ بِقِطَافٍ مِنْ قِطَافِهَا وَدَنَتْ مِنِّي النَّارُ حَتَّى قُلْتُ أَيْ رَبِّ وَأَنَا مَعَهُمْ فَإِذَا امْرَأَةٌ حَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ تَخْدِشُهَا هِرَّةٌ قُلْتُ مَا شَأْنُ هَذِهِ قَالُوا حَبَسَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ جُوعًا لَا أَطْعَمَتْهَا وَلَا أَرْسَلَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ

অর্থঃ জান্নাতকে আমার নিকটবর্তী করা হলো। আমার ইচ্ছা হলে আমি তোমাদেরকে জান্নাতের একছড়া ফল এনে দেখাতে পারতাম। এমনিভাবে জাহান্নামকেও আমার কাছে হাজির করা হলো। আমি তাতে একটি মহিলাকে দেখতে পেলাম। হাদীছের বর্ণনাকারী বলেনঃ আমার মনে হয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ একটি বিড়াল উক্ত মহিলাকে নখ দিয়ে খামচিয়ে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ আমি বললামঃ কি অপরাধের কারণে মহিলাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? ফেরেশতাগণ বললেনঃ এই মহিলা বিড়ালটিকে আটকিয়ে রেখেছিল। বিড়ালটিকে সে কোন কিছু পানাহার করতে দেয়নি এবং যমিন থেকে তার খাবার সংগ্রহ করার জন্যে স্বাধীনভাবে ছেড়েও দেয়নি। শেষ পর্যন্ত ক্ষুধার তাড়নায় বিড়ালটি মারা গিয়েছিল। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আযান।]

৪১
মদ পানকারীদের পরিণতিঃ
জাবের (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) হতে বর্ণনা করেনঃ

كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ إِنَّ عَلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ عَهْدًا لِمَنْ يَشْرَبُ الْمُسْكِرَ أَنْ يَسْقِيَهُ مِنْ طِينَةِ الْخَبَالِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا طِينَةُ الْخَبَالِ قَالَ عَرَقُ أَهْلِ النَّارِ أَوْ عُصَارَةُ أَهْلِ النَّارِ

অর্থঃ নেশা জাতীয় প্রতিটি বস্তুই হারাম। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেশা জাতীয় কোন কিছু পান করবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে তিনাতুল খাবালের পানি পান করাবেন। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! তিনাতুল খাবাল কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ তা হলো জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম বা পুঁজ। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবাহ।] ইবনে উমার (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

كُلُّ مُسْكِرٍ خَمْرٌ وَكُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ وَمَنْ شَرِبَ الْخَمْرَ فِي الدُّنْيَا فَمَاتَ وَهُوَ يُدْمِنُهَا لَمْ يَتُبْ لَمْ يَشْرَبْهَا فِي الْآخِرَةِ

অর্থঃ প্রতিটি নেশাদার বস্তুই মদ এবং প্রতিটি নেশাদার জিনিষই হারাম। যে মদখোর দুনিয়াতে মদ পন করবে অতঃপর তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করবে সে পরকালে বেহেশতের শরাব পান করা থেকে বঞ্চিত হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবাহ।]

৪২
স্বর্ণ-রৌঁপ্যের পাত্রে পানাহারকারীদের অবস্থাঃ
উম্মে সালামা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন,

الَّذِي يَشْرَبُ فِي إِنَاءِ الْفِضَّةِ إِنَّمَا يُجَرْجِرُ فِي بَطْنِهِ نَاَرُ جَهَنَّمَ

অর্থঃ যে ব্যক্তি স্বর্ণ-রেŠপ্যের পাত্রে পানাহার করবে কিয়ামতের দিন তার পেটে জাহান্নামের আগুন গরগর শব্দ করবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আশরিবাহ।]

৪৩
হাশরের মাঠে বিচারের কাঠগড়ায় খুনীদের বিচার প্রথমেঃ
এবিষয়ে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَمَنْ يَقْتُلْ مُؤْمِنًا مُتَعَمِّدًا فَجَزَاؤُهُ جَهَنَّمُ خَالِدًا فِيهَا وَغَضِبَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَعَنَهُ وَأَعَدَّ لَهُ عَذَابًا عَظِيمًا

অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে তার ঠিকানা হবে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ তার উপর ক্রোধাম্বি^ত হয়েছেন তার উপর অভিসম্পাত করেছেন এবং তার জন্যে নির্ধারিত করে রেখেছেন কঠিন শাস্তি। (সূরা নিসাঃ ৯৩) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

أَوَّلُ مَا يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي الدِّمَاءِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে সর্বপ্রথম খুনের বিচার করা হবে। [- বুখারী ও মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত দিয়া‘ত]

৪৪
আত্মহত্যাকারীর করুণ অবস্থাঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেনঃ

مَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ فَحَدِيدَتُهُ فِي يَدِهِ يَتَوَجَّأُ بِهَا فِي بَطْنِهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ شَرِبَ سُمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَحَسَّاهُ فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا وَمَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ فَهُوَ يَتَرَدَّى فِي نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا

যে ব্যক্তি লোহার অস্ত্র দিয়ে নিজের শরীরে আঘাত করে আত্মহত্যা করবে কিয়ামতের দিন তার হাতে সেই লোহার অস্ত্রটি দেয়া হবে। সে উক্ত অস্ত্রটি দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে এবং জাহান্নামই হবে তার জন্য চিরস্থায়ী বাসস্থান। যে ব্যক্তি বিষ পান করে আত্মহত্যা করবে কিয়ামতের দিন সে বিষ হাতে নিয়ে তা পান করতে থাকবে এবং চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। আর যে ব্যক্তি পাহাড়ের উপর থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে লাফ দিয়ে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনে নিজেকে নিক্ষেপ করে চিরকাল তথায় অবস্থান করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]

সহীহ বুখারীতে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

الَّذِي يَخْنُقُ نَفْسَهُ يَخْنُقُهَا فِي النَّارِ وَالَّذِي يَطْعُنُهَا يَطْعُنُهَا فِي النَّارِ

যে ব্যক্তি গলায় ফাঁসি দিয়ে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনে আপন গলায় ফাঁসি দিয়ে ঝুলতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি নিজের শরীরে অস্ত্র দিয়ে আঘাত করবে জাহান্নামের আগুনে উক্ত অস্ত্র দিয়ে সে নিজের শরীরে আঘাত করতে থাকবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।] জুন্দুব বিন আব্দুল্লাহ্‌ হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ بِهِ جُرْحٌ فَجَزِعَ فَأَخَذَ سِكِّينًا فَحَزَّ بِهَا يَدَهُ فَمَا رَقَأَ الدَّمُ حَتَّى مَاتَ قَالَ اللَّهُ تَعَالَى بَادَرَنِي عَبْدِي بِنَفْسِهِ حَرَّمْتُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ

তোমাদের পূর্ববর্তী যামানায় একজন লোক ছিল। তার হাতে আঘাত লাগল। এতে সে ভীষণ যন্ত্রণায় কাতর হয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত সে একটি ছুরি হাতে নিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হাতটি কেটে ফেলল। ফলে রক্ত আর বন্ধ হল না। সে মারা গেল। আল্লাহ্‌ তাআলা বললেনঃ আমার বান্দা নিজেই তাড়াহুড়া করে তার জান বের করে দিল। আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।]

৪৫
অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের সম্পদ ভক্ষণকারীর পরিণামঃ
মহান আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا “

যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমদের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে নিশ্চয় তারা স্বীয় উদরে অগ্নি ব্যতীত কিছুই ভক্ষণ করে না এবং সত্বরই তারা প্রজ্বলিত অগ্নিতে প্রবেশ করবে। (সূরা নিসাঃ ১০)

অর্থাৎ যারা বিনা কারণে এবং অন্যায়ভাবে পিতৃহীন অনাথদের ধন-সম্পদ ভক্ষণ করে তারা মূলতঃ আগুন দিয়েই পেট ভর্তি করছে। কিয়ামতের দিন তাদের পেটে জাহান্নামের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

اجْتَنِبُوْاالسَّبْعَ الْمُوبِقَاتِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا هُنَّ قَالَ الشِّرْكُ بِاللَّهِ وَالسِّحْرُ وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ وَأَكْلُ الرِّبَا وَأَكْلُ مَالِ الْيَتِيمِ وَالتَّوَلِّي يَوْمَ الزَّحْفِ وَقَذْفُ الْمُحْصَنَاتِ الْمُؤْمِنَاتِ الْغَافِلَاتِ

অর্থঃ তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক বিষয় হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন সেগুলো কি কি? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তা হলো (১) আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা (২) যাদু করা (৩) আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করা হারাম করেছেন তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। (৪) সুদ খাওয়া (৫) ইয়াতীমের সম্পদ আত্মসাৎ করা (৬) যুদ্ধের ময়দান হতে পলায়ন করা (৭) সতী-সাধ্বী মুমিন মহিলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দেয়া। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ওয়াসায়া।]

৪৬
সামর্থ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষাবৃত্তিকারীর অবস্থাঃ
আবদুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ سَأَلَ النَّاسَ وَلَهُ مَا يُغْنِيهِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَسْأَلَتُهُ فِي وَجْهِهِ خُمُوشٌ أَوْ خُدُوشٌ أَوْ كُدُوحٌ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا يُغْنِيهِ قَالَ خَمْسُونَ دِرْهَمًا أَوْ قِيمَتُهَا مِنَ الذَّهَبِ

অর্থঃ সামর্থ থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি মানুষের কাছে হাত পাতবে সে কিয়ামতের দিন গোশতবিহীন এবং ক্ষত-বিক্ষত চেহারা নিয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হলো হে আল্লাহর রাসূল! সামর্থবান হওয়ার জন্যে কতটুকু সম্পদ থাকা প্রয়োজন? তিনি বললেনঃ পঞ্চাশ দিরহাম অথবা তার সমপরিমাণ স্বর্ণ বা অন্য কোন সম্পদ। [- তিরমিজী, আবু দাউদ অধ্যায়ঃ কিতাবুয যাকাত।]

৪৭
জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণে উদাসীন শাসকদের পরিণামঃ
মুআহয বিন জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেনঃ

مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ النَّاسِ شَيْئًا فَاحْتَجَبَ عَنْ أُولِيَ الضَّعَفَةِ وَالْحَاجَةِ احْتَجَبَ اللَّهُ عَنْهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ যে ব্যক্তি জনগণের কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর দুর্বল এবং অভাবীদের প্রয়োজন পূরণ করা থেকে দূরে থাকলো কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার প্রয়োজন পূর্ণ করা থেকে দূরে সরে থাকবেন। [- মুসনাদে আহমাদ।]

৪৮
বিনা অনুমতিতে অন্যের কথা শ্রবণকারীর অবস্থাঃ
ইমাম বুখারী ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ تَحَلَّمَ بِحُلْمٍ لَمْ يَرَهُ كُلِّفَ أَنْ يَعْقِدَ بَيْنَ شَعِيرَتَيْنِ وَلَنْ يَفْعَلَ وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ وَهُمْ لَهُ كَارِهُونَ أَوْ يَفِرُّونَ مِنْهُ صُبَّ فِي أُذُنِهِ الْآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ صَوَّرَ صُورَةً عُذِّبَ وَكُلِّفَ أَنْ يَنْفُخَ فِيهَا وَلَيْسَ بِنَافِخٍ

অর্থঃ যে ব্যক্তি স্বপ্নে কিছু না দেখেই মিথ্যা স্বপ্ন বর্ণনা করবে কিয়ামতের দিন তাকে দুহটি গমের দানা দিয়ে একসাথে ঘিরা দেয়ার আদেশ দেয়া হবে অথচ সে কোন ক্রমেই তা করতে পারবে না। আর যে ব্যক্তি কোন গোত্রের অপছন্দ সত্ত্বেও তাদের কথা কান পেতে শ্রবণ করবে কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত শিশা ঢেলে দেয়া হবে। যে ব্যক্তি কোন কিছুর ছবি আঁকবে তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তি প্রদান করা হবে এবং ছবিগুলোতে প্রাণের সঞ্চার করতে বলা হবে। অথচ সে তা করতে কখনই সক্ষম হবে না। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তা’বীর।] এভাবে মানুষের কথা শ্রবণকারী মিথ্যা, গীবত এবং চুগলখোরীতেও লিপ্ত হয় বিধায় সে উক্ত অপরাধের শাস্তিতেও পাকড়াও হবে।

৪৯
মৃতব্যক্তির জন্য উচৈঃস্বরে বিলাপকারীনীর অবস্থাঃ
আবু মালেক আল আশয়াহরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

قَالَ أَرْبَعٌ فِي أُمَّتِي مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ لَا يَتْرُكُونَهُنَّ الْفَخْرُ فِي الْأَحْسَابِ وَالطَّعْنُ فِي الْأَنْسَابِ وَالْاسْتِسْقَاءُ بِالنُّجُومِ وَالنِّيَاحَةُ وَقَالَ النَّائِحَةُ إِذَا لَمْ تَتُبْ قَبْلَ مَوْتِهَا تُقَامُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَيْهَا سِرْبَالٌ مِنْ قَطِرَانٍ وَدِرْعٌ مِنْ جَرَبٍ

আমার উম্মতের মধ্যে জাহেলী যামানার চারটি জিনিষ বর্তমান থাকবে। তারা এ গুলো ছাড়তে পারবে না। (১) বংশ মর্যাদা নিয়ে গর্ব করা। (৩) কারো বংশে আঘাত করা। (৩) তারকার মাধ্যমে বৃষ্টি প্রার্থনা করা। (৪) মৃত ব্যক্তির জন্য উচৈঃস্বরে ক্রন্দন করা। মৃতব্যক্তির জন্যে উচৈঃস্বরে বিলাপকারীনী মহিলা যদি মৃত্যুর পূর্বে তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে কিয়ামতের দিন তাকে আলকাতরার পায়জামা ও খুজলিযুক্ত জামা পরিয়ে হাশরের মাঠে উপস্থিত করা হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল যানায়েজ।]

হাদীছের অর্থ এই যে বিলাপকারীনীকে কিয়ামতের দিন গলিত শীশার প্রলেপযুক্ত জামা পরিয়ে দেয়া হবে। শাস্তি ও অপমান স্বরূপ তাকে এ ধরণের পোষাক পরিয়ে সবার সামনে উপস্থিত করা হবে।

৫০
বেপর্দা মহিলার অবস্থাঃ
যে সমস্ত মহিলা দুনিয়াতে বেপর্দা হয়ে চলা-ফেরা করবে তাদের সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا

অর্থঃ দুই প্রকারের লোক জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু আমি তাদেরকে দেখিনি। তাদের এক প্রকার হলো এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। তা দিয়ে মানুষকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় প্রকার হল এমন সব মহিলা যারা দুনিয়াতে পোষাক পরিধান করবে কিন্তু পোষাক সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা পোষাক দিয়ে সমস্ত শরীর আবৃত না করার কারণে তাদেরকে উলঙ্গের মত দেখা যাবে। তারা বেহায়াপনা ও অশ্লীল আচরণের মাধ্যমে পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে। তাদের মাথার চুলগুলো উটের কুঁজের মত সামনের দিকে ঝুলে থাকবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করা তো দূরের কথা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবেনা। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ বহুদূর থেকে পাওয়া যাবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।]

মুসলিম রমণীর জন্য বেপর্দায় ঘর থেকে বের হওয়া কবীরা গুনাহর অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। পর্দাহীনা মহিলা পর্দা না করার কারণে জাহান্নামের অধিবাসী হওয়ার ভয় রয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

كَمْ مِنْ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ দুনিয়াতে পোষাক পরিধানকারী অনেক মহিলা কিয়ামতের দিন বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল লিবাস।]

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপরোক্ত কথাটির কয়েক ধরণের ব্যাখ্যা হতে পারে।

১) অনেক মহিলা ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যের মাঝে থেকে দুনিয়াতে সুন্দর পোষাক পরিধান করে শরীর ঢেকে রাখবে। কিন্তু দুনিয়াতে ভাল আমল না করার কারণে আখেরাতে ছাওয়াব থেকে খালী থাকবে।

২) মহিলা দুনিয়াতে কাপড় পরিধান করতো, কিন্তু এমন সংকীর্ণ ও পাতলা পোষাক পরিধান করত যা দ্বারা সতর আবৃত হতনা। তাই প্রতিদান স্বরূপ কিয়ামতের দিন উলঙ্গ করার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।

৩) মহিলা দুনিয়াতে পোষাক পরিধান করতো, কিন্তু পিছনের দিকে ওড়না ঝুলিয়ে দিত যাতে বক্ষ ও শরীরের অধিকাংশ প্রকাশ হয়ে যেত। যার ফলে তাকে উলঙ্গের মত দেখা যেত। পরিণামে তাকে কিয়ামতের দিন বিবস্ত্র করে শাস্তি দেয়া হবে।

তাই বুদ্ধিমতী মহিলাদের উচিৎ এ ভয়াবহ অবস্থা ও পরিণতির কথা চিন্তা করা যার একমাত্র কারণ বেপর্দা ও বেহায়াপনা। মুসলিম রমণী যেন ঐ সমস্ত পোষাক ও ওড়নার প্রতি দৃষ্টি না দেয় যা পর্দার মাধ্যম না হয়ে ফিতনার কারণে পরিণত হয়েছে। ভেবে দেখা উচিৎ ঐ রমণীর! যে নিজেকে মুমিন পুরুষদের জন্যে ফিতনার কারণে পরিণত হয়ে তাদেরকে জান্নাতের পথে চলা থেকে পদস্খলন করছে।

৫১
কিয়ামতের দিন লোক দেখানো আমলকারীর প্রথম বিচার হবেঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِنَّ أَوَّلَ النَّاسِ يُقْضَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَيْهِ رَجُلٌ اسْتُشْهِدَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ قَاتَلْتُ فِيكَ حَتَّى اسْتُشْهِدْتُ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ قَاتَلْتَ لِأَنْ يُقَالَ جَرِيءٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ تَعَلَّمَ الْعِلْمَ وَعَلَّمَهُ وَقَرَأَ الْقُرْآنَ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ تَعَلَّمْتُ الْعِلْمَ وَعَلَّمْتُهُ وَقَرَأْتُ فِيكَ الْقُرْآنَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ تَعَلَّمْتَ الْعِلْمَ لِيُقَالَ عَالِمٌ وَقَرَأْتَ الْقُرْآنَ لِيُقَالَ هُوَ قَارِئٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ حَتَّى أُلْقِيَ فِي النَّارِ وَرَجُلٌ وَسَّعَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَعْطَاهُ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ كُلِّهِ فَأُتِيَ بِهِ فَعَرَّفَهُ نِعَمَهُ فَعَرَفَهَا قَالَ فَمَا عَمِلْتَ فِيهَا قَالَ مَا تَرَكْتُ مِنْ سَبِيلٍ تُحِبُّ أَنْ يُنْفَقَ فِيهَا إِلَّا أَنْفَقْتُ فِيهَا لَكَ قَالَ كَذَبْتَ وَلَكِنَّكَ فَعَلْتَ لِيُقَالَ هُوَ جَوَادٌ فَقَدْ قِيلَ ثُمَّ أُمِرَ بِهِ فَسُحِبَ عَلَى وَجْهِهِ ثُمَّ أُلْقِيَ فِي النَّارِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন প্রথমে যেসব লোকের বিচার করা হবে তাদের মধ্যে একজন শহীদ ব্যক্তি। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ তাঁর নেয়াহমতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন আমার দেয়া নেয়াহমতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবেঃ আপনার রাস্তায় জেহাদ করে শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছে; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করে শহীদ হয়েছিলে যাতে তোমাকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করা হয়। পৃথিবীতে তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তাকে মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। অতঃপর এমন একজন আলেমকে উপস্থিত করা হবে যে দ্বীনি ইলম অর্জন করেছে এবং মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। অতঃপর তাকে আল্লাহর নেয়াহমতসমূহ স্মরণ করানো হবে। সেও তা স্বীকার করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেনঃ আমার দেয়া নেয়াহমতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? সে বলবেঃ দ্বীনি ইল্‌ম অর্জন করেছি, অন্যকে তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার জন্যে কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো; বরং তুমি এই জন্যে বিদ্যা শিক্ষা করেছিলে যাতে মানুষ তোমাকে আলেম বলে। আর এই জন্যে কুরআন পাঠ করেছিলে যাতে তোমাকে কারী বলা হয়। পৃথিবীতে তোমাকে এই সব বলা হয়ে গেছে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হবে। অতঃপর নাক ও মুখের উপর উপুড় করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এরপর ঐ ব্যক্তিকে আনা হবে যাকে আল্লাহ নানারকম ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার দেয়া নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আপনি যেসমস্ত পথে খরচ করা পছন্দ করেন তার কোন পথই আমি বাদ দেইনি। সকল পথেই খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো; বরং তুমি এই জন্য খরচ করেছো যাতে মানুষ তোমাকে দানবীর বলে। পৃথিবীতে তোমাকে তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তাকে মুখ ও নাকের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমারাত।]

৫২
বিদআতীরা নবী (সাঃ)এর হাউজে কাউছার থেকে বঞ্চিত হবেঃ
হাশরের মাঠে রয়েছে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাউজে কাউছার যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি, এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর সুঘ্রাণের চেয়েও অধিক পবিত্র। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে। বিদ্‌আতীরা কিয়ামতের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর হাউজে কাউছার থেকে বঞ্চিত হবে। তিনি বলেনঃ

إِنِّي فَرَطُكُمْ عَلَى الْحَوْضِ مَنْ مَرَّ عَلَيَّ شَرِبَ وَمَنْ شَرِبَ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا لَيَرِدَنَّ عَلَيَّ أَقْوَامٌ أَعْرِفُهُمْ وَيَعْرِفُونِي ثُمَّ يُحَالُ بَيْنِي وَبَيْنَهُمْ فَأَقُولُ إِنَّهُمْ مِنِّي فَيُقَالُ إِنَّكَ لَا تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ سُحْقًا سُحْقًا لِمَنْ غَيَّرَ بَعْدِي

অর্থঃ কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের জন্যে হাউজে কাউছারের নিকট উপস্থিত থাকব। যে ব্যক্তি আমার কাছে আসবে আমি তাকে তা থেকে পান করাবো। আমার হাউজ থেকে যে একবার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবেনা। এমন সময় আমার কাছে একদল লোক আগমণ করবে। আমি তাদেরকে চিনতে পারব। তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অতঃপর আমার ও তাদের মাঝে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করা হবে। আমি বলবোঃ এরা আমার উম্মত। তখন আমাকে বলা হবেঃ আপনি জানেন না তারা আপনার পরে কত বিদআত তৈরী করেছিল। আমি বলবঃ আমার রেখে আসা দ্বীনের মধ্যে যারা পরিবর্তন করেছো তারা এখান থেকে সরে যাও। অতঃপর তাদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করা হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর্ রিকাক।]

৫৩
কিয়ামতের দিন কতিপয় লোকের কঠিন পরিণতিঃ
কুরআন ও হাদীছে এমন কতগুলো পাপের বর্ণনা এসেছে তাতে লিপ্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে ধমকি এসেছে যে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে কঠিন শাস্তি।

১) যারা আল্লাহর কিতাব গোপন করে। তারা হলো ঐ সমস্ত আলেম যারা দুনিয়ার স্বার্থ লাভ অথবা কোন শাসককে সন্তুষ্ট করার জন্য ইলম গোপন করে থাকে। আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنْ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُوْلَئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمْ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ أُوْلَئِكَ الَّذِينَ اشْتَرَوْا الضَّلَالَةَ بِالْهُدَى وَالْعَذَابَ بِالْمَغْفِرَةِ فَمَا أَصْبَرَهُمْ عَلَى النَّارِ

নিশ্চয় যারা সে সব বিষয় গোপন করে যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং এর বিনিময়ে অল্প মূল্য গ্রহণ করে তারা আগুন ছাড়া নিজেদের পেটে আর কিছুই ঢুকায়না। আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে বেদনা দায়ক শাস্তি। তারাই সুপথের বিনিময়ে কুপথ এবং ক্ষমার পরিবর্তে শাস্তি ক্রয় করেছে। অতঃপর কিরূপে তারা জাহান্নাম সহ্য করবে? (সূরা বাকারাঃ ১৭৪-১৭৫)

ইমাম বগবী (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাদের সাথে এমন কথা বলবেন না যাতে তারা খুশী হবে; বরং তিনি তাদের সাথে ধমকের স্বরে কথা বলবেন। কেউ কেউ বলেছেনঃ তিনি তাদের উপর ক্রুদ্ধ থাকবেন। যেমন বলা হয়ে থাকে অমুক ব্যক্তি অমুকের সাথে কথা বলবেনা। এটা ঐ সময় বলা হয় যখন সে তার উপর ক্রুদ্ধ থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ কোন আলেমকে শরীয়তের কোন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে সে যদি জানা সত্ত্বেও তা গোপন করে কিয়ামতের দিন তার মুখে আগুনের লাগাম পরিয়ে দেয়া হবে। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইল্ম।]

২) যারা আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা ভঙ্গ করে ও সামান্য মূল্যের বিনিময়ে প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এবং দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে মিথ্যা শপথ করে। আল্লাহ তাআলা তাদের সম্পর্কে বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُوْلَئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمْ اللَّهُ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ

অর্থঃ যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রয় করে আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। তাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। আর তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব। (সূরা আল ইমরানঃ ৭৭)

৩) যে ব্যক্তি টাখনুর নীচে যমিন পর্যন্ত লুঙ্গী ও অন্যান্য কাপড় ঝুলিয়ে পরিধান করে। যে ব্যক্তি মানুষকে কোন কিছু দান করার পর খোঁটা দেয়। আর যে ব্যক্তি পণ্যদ্রব্য বিক্রয় ও চালু করার জন্যে মিথ্যা শপথ করে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ قَالَ فَقَرَأَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلَاثَ مِرَارًا قَالَ أَبُو ذَرٍّ خَابُوا وَخَسِرُوا مَنْ هُمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ الْمُسْبِلُ وَالْمَنَّانُ وَالْمُنَفِّقُ سِلْعَتَهُ بِالْحَلِفِ الْكَاذِبِ

তিন জন লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথাটি তিনবার বললেন। আবু যার (রাঃ) বলেনঃ তাহলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হবে। হে আল্লাহর রাসূল! তারা কোন শ্রেণীর লোক? জবাবে তিনি বললেনঃ টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী, কোন কিছু দান করার পর খোঁটাদানকারী ও মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্যদ্রব্য বিক্রয়কারী। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]

৪) যে ব্যক্তি এমন স্থানে বসবাস করে যাতে পানির খুব সংকট অথচ তার নিকট প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি রয়েছে। আর সে অন্যদেরকে পানি ব্যবহার করা থেকে বাধা দিয়ে থাকে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়ার কোন স্বার্থ হাসিলের জন্যে ইমামের হাতে বায়আত করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ رَجُلٌ عَلَى فَضْلِ مَاءٍ بِطَرِيقٍ يَمْنَعُ مِنْهُ ابْنَ السَّبِيلِ وَرَجُلٌ بَايَعَ رَجُلًا لَا يُبَايِعُهُ إِلَّا لِلدُّنْيَا فَإِنْ أَعْطَاهُ مَا يُرِيدُ وَفَى لَهُ وَإِلَّا لَمْ يَفِ لَهُ وَرَجُلٌ سَاوَمَ رَجُلًا بِسِلْعَةٍ بَعْدَ الْعَصْرِ فَحَلَفَ بِاللَّهِ لَقَدْ أَعْطَى بِهَا كَذَا وَكَذَا فَأَخَذَهَا

অর্থঃ তিন ব্যক্তির সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। (১) এমন ব্যক্তি, যে কোন ময়দানে বসবাস করে, তার কাছে রয়েছে অতিরিক্ত পানি। অথচ সে মুসাফিরদেরকে তা ব্যবহার করতে নিষেধ করে থাকে। (২) এমন ব্যক্তি যে দুনিয়ার স্বার্থে কোন শাসকের হাতে বায়আত করে। শাসক যদি কিছু দেয় তবে তার সাথে কৃত অঙ্গিকার পূর্ণ করে আর না দিলে অঙ্গিকার্র ভঙ্গ করে। (৩) এমন ব্যক্তি যে কারও কাছে আসরের নামাযের পরে শপথ করে কোন জিনিষ বিক্রি করে। সে বলেঃ আল্লাহর কসম! আমি জিনিষটি এত টাকা দিয়ে ক্রয় করেছি। যাতে মানুষেরা তার কথা বিশ্বাস করে অথচ সে তাতে মিথ্যাবাদী। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মুসাকা’ত।]

৫) তাদের মধ্যে রয়েছে বৃদ্ধ ব্যভিচারী, মিথ্যাবাদী বাদশাহ, অহংকারী ফকীর। এসকল লোক সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীছে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

ثَلَاثَةٌ لَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ

তিন জন লোকের সাথে আল্লাহ কিয়ামতের দিন কথা বলবেন না, তাদের দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠিন আজাব। (১) বৃদ্ধ ব্যভিচারী (২) মিথ্যাবাদী বাদশাহ (৩) অহংকারী ফকীর। [-মুসলিমি, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]

৬) তাদের মধ্যে আরও রয়েছে পিতামাতার অবাধ্য সন্তান ঐ মহিলা যে পোষাক ও আকৃতিতে পুরুষের সাদৃশ্যতা অবলম্বন করে এবং দাইউছ। দাইউছ ঐ ব্যক্তিকে বলা হয় যে নিজের স্ত্রী-পরিবারের ভিতরে অশ্লীল কাজ কর্ম দেখা সত্বেও কোন প্রতিবাদ করেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ثَلَاثَةٌ لَا يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالْمَرْأَةُ الْمُتَرَجِّلَةُ وَالدَّيُّوثُ وَثَلَاثَةٌ لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ الْعَاقُّ لِوَالِدَيْهِ وَالْمُدْمِنُ عَلَى الْخَمْرِ وَالْمَنَّانُ بِمَا أَعْطَى

আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির দিকে করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) পুরুষের সাথে সাদৃশ্যকারী মহিলা (৩) দাইউছ। তিনি আরও বলেনঃ তিন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না (১) পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান (২) মদ পানকারী (৩) কোন কিছু দান করে খোঁটাদানকারী। [- নাসাঈ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত।]

৭) তাদের মধ্যে রয়েছে ঐ পুরুষ যে তার স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

لَا يَنْظُرُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى رَجُلٍ جَامَعَ امْرَأَتَهُ فِي دُبُرِهَا

যে ব্যক্তি তার স্ত্রীর পিছনের রাস্তা দিয়ে সহবাস করবে, রোজ কিয়ামতে আল্লাহ তার দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। [- ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুন্ নিকাহ।] অন্য বর্ণনায় এসেছে স্ত্রীর গুহ্যদ্বার দিয়ে সঙ্গমকারী আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হবে।

৫৪
এসো তাওবার পথে
হে আল্লাহর বান্দা! যে সমস্ত অপরাধের কারণে আখেরাতে শাস্তি হবে তুমি তা অবগত হলে। তোমার দ্বারা যদি উপরোক্ত পাপকর্মগুলো বা তার কোন একটি সংঘটিত হয়ে থাকে কাল বিলম্ব না করে ফিরে এসো তাওবার পথে। তোমার জন্যে এখনও তাওবার দরজা উম্মুক্ত রয়েছে। তাওবা করলে আল্লাহ তোমাদের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ

অপরাধ করার পর যে তাওবা করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে কোন অপরাধই করেনি। [- ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ কিতাবুয যুহ্দ।] আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

قُلْ ياَ عِباَدِيَ الَّذِيْنَ أسْرَفُوْا عَلىَ أنْفُسِهِمْ لاَتَقْنَطُوْا مِنْ رَحْمَةِ اللهِ إنَّ اللهَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ جَمِيْعاً إنَّهُ هُوَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيْمُ

‘‘আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা (গুনাহর কাজে ভলপ্ত হয়ে) নিজেদের উপর অন্যায় করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়োনা। নিশ্চয়ই আল্লাহ সমুদয় পাপ ক্ষমা করেন। নিশ্চয় তিনি অতিব ক্ষমা পরায়ণ, পরম করতণ্ব নিধান’’। (সূরা যুমারঃ ৫৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

لَلَّهُ أَشَدُّ فَرَحًا بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ حِينَ يَتُوبُ إِلَيْهِ مِنْ أَحَدِكُمْ كَانَ عَلَى رَاحِلَتِهِ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهُ وَعَلَيْهَا طَعَامُهُ وَشَرَابُهُ فَأَيِسَ مِنْهَا فَأَتَى شَجَرَةً فَاضْطَجَعَ فِي ظِلِّهَا قَدْ أَيِسَ مِنْ رَاحِلَتِهِ فَبَيْنَا هُوَ كَذَلِكَ إِذَا هُوَ بِهَا قَائِمَةً عِنْدَهُ فَأَخَذَ بِخِطَامِهَا ثُمَّ قَالَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ اللَّهُمَّ أَنْتَ عَبْدِي وَأَنَا رَبُّكَ أَخْطَأَ مِنْ شِدَّةِ الْفَرَحِ

অর্থঃ ‘‘বান্দা যখন তাওব্ব করে তখন আল্লাহ তার প্রতি ঐ ব্যত্তিুর চেয়ে অধিক খুশি হন যে তার বাহনে আরোহন করে সফরে বের হল। বাহনের উপরেই ছিল তার খাদ্য-পানীয় ও সফর সামগ্রী। নির্জন মরুভূমির উপর দিয়ে সফর করার সময় বিশ্রামার্থে সে একটি বৃক্ষের নীচে অবতরণ করল। অতঃপর মাটিতে মাথা রেখে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখল তার বাহন কোথায় যেন চলে গেছে। সে নিরাশ হয়ে একটি গাছের নীচে এসে আবার শুয়ে পড়ল। কিছুক্ষণ পর সে দেখতে পেলো, তার হারানো বাহনটি সমুদয় খাদ্য-পানীয়সহ মাথার পাশে দাড়িয়ে আছে। বাহনটির লাগাম ধরে আনন্দে আত্মহারা হয়ে বলে উঠলো, হে আল্লাহ! আপনি আমার বান্দা, আমি আপনার প্রভু। অতি আনন্দের কারণেই সে এত বড় ভুল করে বসেছো। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুত্ তাওবা।] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

كَانَ فِيمَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ رَجُلٌ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ نَفْسًا فَسَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الْأَرْضِ فَدُلَّ عَلَى رَاهِبٍ فَأَتَاهُ فَقَالَ إِنَّهُ قَتَلَ تِسْعَةً وَتِسْعِينَ نَفْسًا فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ فَقَالَ لَا فَقَتَلَهُ فَكَمَّلَ بِهِ مِائَةً ثُمَّ سَأَلَ عَنْ أَعْلَمِ أَهْلِ الْأَرْضِ فَدُلَّ عَلَى رَجُلٍ عَالِمٍ فَقَالَ إِنَّهُ قَتَلَ مِائَةَ نَفْسٍ فَهَلْ لَهُ مِنْ تَوْبَةٍ فَقَالَ نَعَمْ وَمَنْ يَحُولُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ التَّوْبَةِ انْطَلِقْ إِلَى أَرْضِ كَذَا وَكَذَا فَإِنَّ بِهَا أُنَاسًا يَعْبُدُونَ اللَّهَ فَاعْبُدِ اللَّهَ مَعَهُمْ وَلَا تَرْجِعْ إِلَى أَرْضِكَ فَإِنَّهَا أَرْضُ سَوْءٍ فَانْطَلَقَ حَتَّى إِذَا نَصَفَ الطَّرِيقَ أَتَاهُ الْمَوْتُ فَاخْتَصَمَتْ فِيهِ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ وَمَلَائِكَةُ الْعَذَابِ فَقَالَتْ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ جَاءَ تَائِبًا مُقْبِلًا بِقَلْبِهِ إِلَى اللَّهِ وَقَالَتْ مَلَائِكَةُ الْعَذَابِ إِنَّهُ لَمْ يَعْمَلْ خَيْرًا قَطُّ فَأَتَاهُمْ مَلَكٌ فِي صُورَةِ آدَمِيٍّ فَجَعَلُوهُ بَيْنَهُمْ فَقَالَ قِيسُوا مَا بَيْنَ الْأَرْضَيْنِ فَإِلَى أَيَّتِهِمَا كَانَ أَدْنَى فَهُوَ لَهُ فَقَاسُوهُ فَوَجَدُوهُ أَدْنَى إِلَى الْأَرْضِ الَّتِي أَرَادَ فَقَبَضَتْهُ مَلَائِكَةُ الرَّحْمَةِ

অর্থঃ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে জনৈক ব্যক্তি নিরানব্বই জন লোককে হত্যা করল। অতঢ়পর লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলোঃ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলেম কে? বলা হলো অমুক পাদ্রী। সে তার নিকট গিয়ে বললঃ আমি তো নিরানব্বই জন মানুষকে হত্যা করেছি। আমার কি তাওবা করার কোন পথ আছে? পাদ্রী বললঢ় না, তোমার কোন তাওবা নেই। একথা শুনে সে তাকেও হত্যা করে ফেলল এবং একশত সংখ্যা পূর্ণ করল। অতঢ়পর আবার সে লোকদেরকে জিজ্ঞেস করলোঃ এযুগের সবচেয়ে বড় আলেম কে? তাকে একজন আলেম ব্যত্তিুর সন্ধান দেয়া হল। সে তাঁর নিকট গিয়ে প্রশণ করল, আমি একশত প্রাণ হত্যা করেছি। আমার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ তোমার এবং তাওবার মাঝে কোন অমতরায় নেই। তুমি অমুক স্থানে চলে যাও। সেখানে একদল লোক পাবে যারা আল্লাহর এবাদতে লিপ্ত। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর এবাদতে লিপ্ত হয়ে যাও। আর নিজের এলাকায় কখনও ফিরে এসোনা। সে তথায় রওয়ানা হয়ে গেল।

অর্ধেক পথ অতিক্রম করার পর তার মৃত্যু উপস্থিত হয়ে গেল। মৃত্যুর পর রহমতের ফেরেশতা এবং আযাবের ফেরেশতা এসে পরস্পর বিতর্কে লিপ্ত হয়ে গেলেন। রহমতের ফেরেশতাগণ বললেনঃ সে তাওবা করে আল্লাহর কাছে ফেরত এসেছে। সুতরাং আমরা তার জান কবজ করে আল্লাহর রহমতের দিকে নিয়ে যাব। আজাবের ফেরেশতাগণ বললেনঃ সে কখনও ভাল কাজ করেনি। বরং সে একশটি প্রাণ হত্যা করেছে। আমরা তার জান কবজ করে আল্লাহর আযাবের দিকে নিয়ে যাব। এমতাবস্থায় মানুষের আকৃতিতে একজন ফেরেশতা আগমণ করলেন। তারা তাকে উভয় দলের মাঝে বিচারক নির্ধারণ করলেন। তিনি ফয়সালা দিলেন যে, তোমরা এই স্থান থেকে দুহদিকের রাস্তা মেপে দেখ। তারা দুহদিকের রাস্তা মেপে দেখল যে এলাকার দিকে সে রওনা হয়েছিল সে দিকে অধিক নিকটবর্তী। তাই রহমতের ফেরেশতাগণ তার জান কবজ করলেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।]

অন্য একটি বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ দেখা গেল সৎব্যক্তিদের এলাকাটি মাত্র অর্ধহাত অধিক নিকটবর্তী। অতঢ়পর তাকে সেই সৎব্যw³দের অমতর্ভূত্তু করে দেয়া হল।

৫৫
আখেরাতে মুমিনদের আনন্দ
মুমিনদের মৃত্যুর সময় শান্তনা ও জান্নাতের সুসংবাদ দেয়ার জন্যে আল্লাহর পক্ষ হতে রহমতের ফেরেশতা আগমণ করে থাকেন। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمْ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنْتُمْ تُوعَدُونَ نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِي أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ نُزُلًا مِنْ غَفُورٍ رَحِيمٍ “

নিশ্চয়ই যারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে বলতে থাকেনঃ তোমরা ভয় করোনা, চিন্তা করোনা এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্যে আনন্দিত হও। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্যে রয়েছে যা তোমাদের মন চায় এবং তোমরা যা দাবী কর। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের পক্ষ থেকে সাদর আপ্যায়ন। (সূরা হামীম সাজদাহঃ ৩০-৩২)

ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ মৃত্যুর সময় ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে থাকেন। কাতাদা ও মুকাতেল (রঃ) বলেনঃ মুমিনগণ যখন কবর থেকে বের হয়ে হাশরের মাঠের দিকে রওয়না করবেন তখন ফেরেশতাগণ তাদের সাথে থাকবেন। অকী ইবনে জাররাহ (রঃ) বলেনঃ তিন স্থানে ফেরেশতাগণ মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিবেন। মৃত্যুর সময়, কবরে এবং কবর থেকে উঠার সময়।

ইবনে কাছীর (রঃ) উক্ত আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ মুমিনদের মৃত্যুর সময় ফেরেশতাগণ বলবেনঃ আমরা দুনিয়াতে তোমাদের বন্ধু ছিলাম। দুনিয়াতে আল্লাহর আদেশে আমরা তোমাদেরকে সঠিক পথের উপর অবিচল থাকতে সহযোগিতা করতাম এবং তোমাদেরকে সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে হেফাযত করতাম। পরকালেও আমরা তোমাদের সাথে থাকব। কবরের নির্জনতায় ও একাকীত্বে এবং শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার সময় আমরা তোমাদেরকে অভয় দিব। পুনরুত্থান দিবসে তোমাদেরকে নিরাপদে রাখব ও তোমাদেরকে সাথে নিয়ে পুলসিরাত পার হবো এবং তোমাদেরকে অসংখ্য নেয়াহমতে পরিপূর্ণ জান্নাতে পৌঁছিয়ে দিব। [- তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৪র্থ খন্ড।]

মুমিন ব্যক্তির রূহ্‌ কবজের অবস্থা ইতিপূর্বে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মালাকুল মাউত তাঁর মাথার পাশে এসে বসবেন এবং বলবেনঃ ওহে পবিত্র আত্মা! বের হয়ে এসো আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টির দিকে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ পানপাত্র থেকে পানি যেমন সহজভাবে বের হয় মুমিনের আত্মাও ঠিক তেমনই সহজভাবে বের হয়ে আসে। রূহ্‌ বের হওয়ার পর আকাশ ও যমিনের ফেরেশতাগণ তাঁর জন্যে মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার জন্যে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [- আবু দাউদ ও নাসাঈ।]

৫৬
মৃত্যুর সময় আল্লাহর সাক্ষাতের সংবাদ শুনে মুমিনদের আনন্দঃ
ফেরেশতারা যখন পরহেজগার মুমিনগণকে আল্লাহর সাক্ষাতের সুসংবাদ দিবেন, তখন তাঁরা আনন্দ প্রকাশ করবেন। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ أَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَمَنْ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ كَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ فَقُلْتُ يَانَبِيَ اللَّه أَكَرَاهِيَةَ الْمَوْتِ فَكُلُّنَا نَكْرَهُ الْمَوْتَ قَالَ لَيْسَ ذَاكِ وَلَكِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا حَضَرَهُ الْمَوْتُ بُشِّرَ بِرَحْمَةِ اللَّهِ وَ رِضْوَانِ اللَّهِ وَجَنَّتِهِ أَحَبَّ لِقَاءَ اللَّهِ وَأَحَبَّ اللَّهُ لِقَاءَهُ وَإِنَّ الْكَافِرَ إِذَا بُشِّرَ بِعَذَابِ اللَّهِ وَسَخَتِهِ كَرِهَ لِقَاءَ اللَّهِ وَكَرِهَ اللَّهُ لِقَاءَهُ

যে আল্লাহর সাক্ষাৎ ভালবাসবে আল্লাহও তার সাক্ষাৎ ভালবাসবেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করবে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করবেন। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! এটা কি মৃত্যুকে অপছন্দ করা? আমরা সবাইতো মৃত্যুকে অপছন্দ করে থাকি। উত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ এমনটি নয়; বরং মুমিন ব্যক্তিকে যখন আল্লাহর রহমত, সন্তুষ্টি এবং জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে ভালবাসে এবং আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে ভালবাসেন। আর কাফেরকে যখন আল্লাহর আযাবের সংবাদ দেয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করে। ফলে আল্লাহও তার সাথে সাক্ষাৎ করাকে অপছন্দ করেন। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]

সহীহ বুখারীতে আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

إِذَا وُضِعَتِ الْجِنَازَةُ وَاحْتَمَلَهَا الرِّجَالُ عَلَى أَعْنَاقِهِمْ فَإِنْ كَانَتْ صَالِحَةً قَالَتْ قَدِّمُونِي وَإِنْ كَانَتْ غَيْرَ صَالِحَةٍ قَالَتْ يَا وَيْلَهَا أَيْنَ يَذْهَبُونَ بِهَا يَسْمَعُ صَوْتَهَا كُلُّ شَيْءٍ إِلَّا الْإِنْسَانَ وَلَوْ سَمِعَهُ صَعِقَ

যখন জানাযা বহন করে নিয়ে যাওয়া হয় তখন মৃত ব্যক্তি সৎ হয়ে থাকলে বলে আমাকে তাড়াতাড়ি আমার গন্তব্য স্থানে নিয়ে যাও। আর অসৎ হলে তার আপনজনকে বলতে থাকে হায় আমার ধ্বংস!! আমাকে নিয়ে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? তার একথাটি মানুষ ব্যতীত সকলেই শুনতে পায়। কোন মানুষ তা শুনতে পেলে বেহুঁশ হয়ে যেত। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল জানায়েয।]

৫৭
কিয়ামতের দিন মুমিনগণ নিরাপদে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবেনঃ
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

يَوْمَ نَحْشُرُ الْمُتَّقِينَ إِلَى الرَّحْمَنِ وَفْدًا

অর্থঃ সেদিন দয়াময় আল্লাহর কাছে পরহেজগারদেরকে সম্মানিত অতিথিরূপে সমবেত করা হবে। (সূরা মারইয়ামঃ ৮৫)

আল্লামা ইবনে কাছীর (রঃ) এই আয়াতের তাফসীরে বলেনঃ আল্লাহর যেসমস্ত পরহেজগার বান্দা দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে চলবেন, তাঁর রাসূলদের আনুগত্য করতঃ রাসূলগণ কর্তৃক প্রদত্ত সংবাদ সত্য বলে বিশ্বাস করবেন, তারা যে বিষয়ের আদেশ দিবেন তা মেনে নিবেন এবং রাসূলগণ যা থেকে নিষেধ করবেন তা থেকে বিরত থাকবেন তাদেরকে আল্লাহ তাআলা সম্মানিত অতিথি রূপে আপন দরবারে উপস্থিত করবেন। আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ

وَسِيْقَ الَّذِيْنَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاؤُوْهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوْهَا خَالِدِيْنَ “

যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা জান্নাতের নিকটস্থ হবেন এবং তাদের জন্যে জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হবে তখন জান্নাতের রক্ষীগণ তাদেরকে বলবেনঃ তোমাদের প্রতি সালাম। তোমরা সুখে থাক। অতঃপর স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা যুমারঃ ৭৩)

অত্র আয়াতে আল্লাহ সৌভাগ্যবান মুমিনদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন যে, তাদেরকে দ্রুতগামী বাহনে করে সম্মানিত মেহমান রূপে জান্নাতে নিয়ে যাওয়া হবে। নৈকট্যশীলদেরকে সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে। তার পর নেককারদেরকে অতঃপর তাদের পরবর্তীদেরকে। প্রত্যেক দলকে তাদের সাথীদের সঙ্গে বেহেশতে প্রবেশ করানো হবে। নবীগণকে নবীদের সাথে, সত্যবাদীগণকে সত্যবাদীদের সাথে, শহীদদেরকে তাঁদের সঙ্গীদের সাথে এবং আলেমদেরকে তাদের বন্ধুদের সাথে বেহেশতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। পুলসিরাত পার হওয়ার পর যখন তারা জান্নাতের দরজার কাছে পৌঁছবেন তখন জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝামাঝি একটি স্থানে তাদেরকে আটকানো হবে এবং তাদের মাঝে পারস্পরিক জুলুম থেকে প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। তাদেরকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে পবিত্র করে বেহেশতে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে।

৫৮
মুমিনদের পুলসিরাত পারঃ
জাহান্নামের উপরে যে পুলসিরাত স্থাপন করা হবে তার উপর দিয়ে পার হয়ে মুমিনগণ জান্নাতে চলে যাবেন আর কাফের ও অপরাধীরা তা থেকে পড়ে গিয়ে জাহান্নামে পতিত হবে। আল্লাহ তায়াহলা বলেনঃ

وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْمًا مَقْضِيًّا ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِينَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيًّا

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যে তথায় পৌঁছবেনা। এটা আপনার পালনকর্তার অনিবার্য ফয়সালা। অতঃপর আমি আল্লাহ ভীরুদেরকে উদ্ধার করবো এবং জালেমদেরকে সেখানে নতজানু অবস্থায় ছেড়ে দিবো। (সূরা মারইয়ামঃ ৭১-৭২) সহীহ হাদীছে নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনঃ

يَرِدُ النَّاسُ النَّارَ ثُمَّ يَصْدُرُونَ مِنْهَا بِأَعْمَالِهِمْ فَأَوَّلُهُمْ كَلَمْحِ الْبَرْقِ ثُمَّ كَالرِّيحِ ثُمَّ كَحُضْرِ الْفَرَسِ ثُمَّ كَالرَّاكِبِ فِي رَحْلِهِ ثُمَّ كَشَدِّ الرَّجُلِ ثُمَّ كَمَشْيِهِ

অর্থঃ মানুষদেরকে জাহান্নামের আগুনের উপর পেশ করা হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই নিজ নিজ আমল অনুযায়ী তা পার হবে। তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ব্যক্তি চোখের পলকে পার হবে। কেউ পার হবে দ্রুতগামী বাতাসের গতিতে, কেউ দ্রুতগামী ঘোড়ার গতিতে, কেউ দ্রুতগামী উটের গতিতে, কেউ দৌড়িয়ে আবার কেউ পায়ে হেঁটে হেঁটে পার হবে। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ তাফসীরুল কুরআন।]

৫৯
একটি শিক্ষণীয় ঘটনাঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) একবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি তাঁর স্ত্রীর কোলে মাথা রেখে কাঁদতে লাগলেন। তাঁর স্ত্রীও ক্রন্দন শুরু করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি ক্রন্দন করছো কেন? স্ত্রী বললেনঃ আপনাকে ক্রন্দন করতে দেখে আমিও কাঁদছি। আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা (রাঃ) বললেনঃ আমি আল্লাহর বাণী,

وَإِنْ مِنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই, যাকে তথায় (পুলসিরাতে) উপস্থিত করা হবেনা। এই কথাটি স্মরণ করে কাঁদছি। কারণ আমি জানিনা যে, তা থেকে মুক্তি পাব কি না।

৬০
জান্নাত ও জান্নাতীদের বর্ণনা
আল্লাহর প্রিয় মুমিন বান্দাগণ জান্নাতের বিভিন্ন প্রকার চিরস্থায়ী নেয়াহমতের মাঝে অবস্থান করবেন। হে মুসলিম ভাই! মুসলিম বোন! জান্নাতের নেয়াহমত এবং তার মধ্যে আল্লাহ মুমিনদের জন্যে যা কিছু তৈরী করে রেখেছেন তার পরিপূর্ণ বর্ণনা দেয়া সম্ভব নয়। যতই দীর্ঘ বর্ণনা দেয়া হোক না কেন অসম্পূর্ণ থেকেই যাবে। তাই এখানে সকল বর্ণনাকে একত্রিতকারী হাদীছটি উল্লেখ করা হলো। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ তাআলা হাদীছে কুদছীতে বলেনঃ

أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لَا عَيْنٌ رَأَتْ وَلَا أُذُنٌ سَمِعَتْ وَلَا خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ ( فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ

অর্থঃ আমি আমার প্রিয় বান্দাদের জন্যে এমন নেয়াহমত তৈরী করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, যার বর্ণনা কোন কান শ্রবণ করেনি এবং যা কোন মানুষের হৃদয় কল্পনাও করতে পারেনা। অতঃপর আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেনঃ তোমরা চাইলে এই আয়াতটি পাঠ কর,

فَلَا تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ

অর্থঃ কোন ব্যক্তিই জানেনা যে মুমিন বান্দাদের জন্য কি ধরণের চক্ষু শীতলকারী বিষয় গোপন রাখা হয়েছে। (সূরা সিজদাহঃ ১৭) [- বুখারী, অধ্যায়ঃ আহাদীছুল আম্বীয়া।]

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ কিভাবে সেই জান্নাতের বর্ণনা দেয়া সম্ভব হবে যার বৃক্ষসমূহ আল্লাহ নিজ হাতে রোপন করেছেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের জন্যে উহাকে বাসস্থান হিসেবে নির্ধারণ করেছেন, তাঁর রহমত ও সন্তুষ্টি দিয়ে উহাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন, যার নেয়াহমত অর্জন করাকে মহান সাফল্য বলে আখ্যায়িত করেছেন, যার রাজত্বকে বিশাল রাজ্য বলে উল্লেখ করেছেন, যাতে সকল প্রকার নেয়াহমত গচ্ছিত রেখেছেন এবং যাকে সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি থেকে সমপূর্ণ মুক্ত রেখেছেন!!!

যদি তুমি জান্নাতের মাটি সম্পর্কে প্রশ্ন কর তবে জেনে নাও যে উহার মাটি তৈরী করা হয়েছে মিস্‌ক এবং জাফরান দিয়ে।

তুমি জান্নাতের ছাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে জেনে রাখো যে উহার ছাদ হল আল্লাহর আরশ।

আর যদি তুমি জান্নাতের নির্মাণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস কর তবে জেনে নাও যে উহার একটি ইট রূপার তৈরী এবং অপরটি স্বর্ণের তৈরী।

৬১
জান্নাতের বৃক্ষরাজিঃ
জান্নাতের বৃক্ষসমূহ ও তার পাতাগুলো সোনালী ও রূপালী বর্ণের হবে। ফলগুলো হবে কলসীর ন্যায় বৃহদাকার ও মাখনের ন্যায় নরম এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। বেহেশতের একটি বৃক্ষের ছায়া এত দীর্ঘ হবে যে একজন দ্রুতগামী অশ্বারোহী একশত বছরেও তার একপ্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পৌঁছতে পারবেনা। জান্নাতের বৃক্ষসমূহে বাতাস প্রবাহের ফলে পাতাগুলো থেকে এমন বাজনার শব্দ শোনা যাবে যার তালে তালে জান্নাতবাসীগণ আনন্দে মেতে উঠবেন।

৬২
বেহেশতের নদীসমূহঃ
জান্নাতে বিভিন্ন প্রকার নদী থাকবে। (১) দুধের নদী থাকবে যার স্বাদ কখনও পরিবর্তন হওয়ার নয়। (২) মদের নদী প্রবাহিত হবে। তবে তা দুনিয়ার মদের মত নয়। তা হবে অত্যন্ত সুস্বাদু। জান্নাতের শরাব পান করার পর মাথা ব্যথা, নেশা বা বমি হবেনা যা দুনিয়ার মদ পান করার পর হয়ে থাকে; বরং তা পান করার পর শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পাবে। (৩) জান্নাতে আরও থাকবে পরিচ্ছন্ন খাঁটি মধুর নহর যা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্যে তৈরী করে রাখা হয়েছে। (৪) পরিস্কার পানির নদীও থাকবে সেখানে।

৬৩
হাউজে কাউছারের বর্ণনাঃ
বেহেশতের মধ্যে থাকবে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর হাউজে কাউছার যার পানি হবে দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি এবং তার সুঘ্রাণ হবে কস্তুরীর চেয়েও অধিক পবিত্র। আকাশের তারকার সমপরিমাণ তার পেয়ালার সংখ্যা হবে। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে চিরদিনের জন্যে তার পিপাসা মিটে যাবে।

৬৪
জান্নাতে পানাহারের বর্ণনাঃ
আপনি যদি জান্নাতীদের খাদ্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন তাদের খাদ্য হবে তাদের পছন্দ মত ফলমূল এবং রুচী সম্মত পাখীর গোশত। তাদের পানীয় হবে তাসনিমের পানি এবং কর্পুর ও আদার রস মিশ্রিত শরবত। তাদের পানাহারের পাত্রগুলো হবে সোনা ও রূপার তৈরী। তবে তার রং হবে পানপাত্রের রঙ্গের মত। তারা পানাহার করবে; কিন্তু প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হবেনা। শরীর থেকে এমন ঘাম বের হবে যার সুগন্ধ হবে কস্তূরীর সুঘ্রাণ থেকেও উত্তম।

৬৫
জান্নাতীদের পোষাকের বর্ণনাঃ
তাদেরকে রেশমের পোষাক ও স্বর্ণের অলংকার পরিধান করানো হবে। তাদের বিছানাও হবে মোটা রেশমের তৈরী।

৬৬
জান্নাতের প্রশস্ততা
আপনি যদি বেহেশতের প্রশস্ততা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে জেনে নিন যে, বেহেশতের দরজার দুই কপাটের মধ্যখানের প্রশস্ততা হবে চল্লিশ বছরের রাস্তা। বেহেশতের ছাদের উচ্চতা হবে আকাশে উদীয়মান নক্ষত্রের দূরত্বের সমান।

৬৭
জান্নাতীদের বয়সঃ
বেহেশতবাসীদের বয়স হবে ৩৩বছর। তাদের মুখে কোন দাড়ি- মোচ থাকবেনা। তাদের যৌবন শেষ হবে না এবং পোষাকও পুরাতন হবেনা। তাদের প্রথম দলটির চেহারা হবে পূর্ণিমার রাত্রির চাঁদের মত উজ্জ্বল। দৈর্ঘ্য ও শরীরের গঠন হবে মানব জাতির পিতা আদম (আঃ)এর সমান।

৬৮
বেহেশতবাসীদের গান শ্রবণঃ
জান্নাতীদের মনের তৃপ্তির জন্য হুরদের মধ্য থেকে তাদের স্ত্রীগণ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন। তারা সেখানে ফেরেশতা ও নবী-রাসূলগণের কন্ঠস্বরও শুনতে পাবেন। তাছাড়া সেখানে বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর কন্ঠস্বরও শ্রবণ করবেন।

৬৯
জান্নাতের যানবাহনের পরিচয়ঃ
জান্নাতীগণ যে ধরণের যানবাহনের উপর আরোহন করে পরস্পরে সাক্ষাৎ করবেন। আপনি যদি তার পরিচয় জানতে চান তবে জেনে নিন যে উহা এমন এক প্রকার দ্রুতগামী বাহন, যা আল্লাহ তাআলা নিজ পছন্দমত জিনিষ হতে তৈরী করেছেন। এ সমস্ত বাহনে আরোহন করে জান্নাতীরা নিজেদের খুশীমত যেখানে ইচ্ছা ঘুরে বেড়াবেন।

৭০
জান্নাতের সেবকদের পরিচয়ঃ
জান্নাতবাসীদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে মণি-মুক্তার মত উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট বালকেরা। তারা সদাসর্বদা একই বয়স ও অবস্থায় থাকবে।

৭১
জান্নাতের হুরদের বিবরণঃ
আপনি যদি জান্নাতবাসীদের স্ত্রীদের সৌন্দর্য্য সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তাহলে জেনে নিন যে, তাঁরা হবেন উঠতি বয়সের যুবতী রমণী। তাঁদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রবাহিত থাকবে নব যৌবনের স্বর্গীয় সুধা। তাদের গাল হবে গোলাপ ও আপেলের মত লাল মিশ্রিত সাদা বর্ণের। গলায় পরানো থাকবে মণি-মুক্তার অলংকার। তাদের চেহারা সূর্যের মত উজ্জ্বল চকচকে হবে। তারা যখন হাসবে তখন তাদের মুখমন্ডল থেকে বিজলির মত আলোর চমক বের হতে থাকবে। জান্নাতবাসী একজন পুরুষ তাঁর স্ত্রীর গালে নিজের চেহারা দেখতে পাবেন। যেমন আয়নায় নিজের ছবি দেখতে পাওয়া যায়। মাংস ও পোষাকের ভিতরে আচ্ছাদিত হাড়ের মগজসমূহ বাহির থেকে দেখা যাবে। জান্নাতের একজন হুর যদি দুনিয়াতে একবার দৃষ্টি দিত তাহলে আকাশ ও যমিনের মধ্যবর্তী স্থান সুভাসে ভরে যেত, সমস্ত সৃষ্টি আল্লাহর প্রশংসা ও বড়ত্ব বর্ণনা করত, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তকে তথা সমগ্র পৃথিবীটাকে সুসজ্জিত করে দিতো, প্রতিটি চোখ সকল জিনিষ থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতো, সূর্যের আলোতে যেমন তারকারাজির আলো মিটে যায় তেমনি তাঁর চেহারার আলোতে সূর্যের আলো মিটে যেতো। বেহেশতের একজন হুরকে যদি দুনিয়ার মানুষেরা দেখতে পেতো, তাহলে সকল দুনিয়াবাসী আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন করতো। জান্নাতী মহিলার মাথার একটি ওড়নার মূল্য দুনিয়া ও তার মধ্যবর্তী সকল বস্তু হতেও বেশী হবে।

হুরদের কাছে তাদের স্বামীদের সাথে মিলিত হওয়া জান্নাতের অন্যান্য সকল বস্তু হতে অধিক আনন্দময় হবে। তাদের স্বামীদের সাথে দীর্ঘকাল অতিবাহিত হওয়ার পরও তাদের সৌন্দর্য্য ও ভালবাসার বিন্দুমাত্র কমতি হবেনা; বরং কাল যতই অতিবাহিত হবে ততই তাদের সৌন্দর্য্য ও ভালবাসা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

বেহেশতের হুরগণ সকল দোষ-ত্রুটি ও নাপাকী থেকে পূত-পবিত্র হবেন। তারা গর্ভধারণ, সন্তান প্রসব, মাসিক রক্তস্রাব, প্রস্রাব-পায়খানা সহ সকল প্রকার অপবিত্রতা থেকে সম্পূর্ণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকবেন। তাদের যৌবন শেষ হবেনা, পোষাক পুরাতন হবেনা। তাদের সাথে সহবাসে কোন ক্লান্তি বোধ হবেনা। তারা কেবল তাদের স্বামীদের উপরই দৃষ্টি অবনত রাখবেন। স্বামী ছাড়া অন্য কারও কথা মনে কল্পনাও করবেন না। স্বামীর চোখের দৃষ্টিও কেবল তাঁর দিকেই থাকবে। কারণ সেই তো তার একমাত্র চাওয়া-পাওয়ার বস্তু। তার দিকে তাকাইলে তাঁকে আনন্দিত করে তুলবেন। আদেশ দিলে তা পালন করবেন। তাকে রেখে কোথায়ও গেলে আমানতদারীর হেফাযত করবেন। মোট কথা জান্নাতী ব্যক্তি তার স্ত্রীকে নিয়ে চরম আনন্দে ও স্বছন্দে বসবাস করবেন।

জান্নাতের স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীগণের পূর্বে কোন মানুষ বা জিন স্পর্শও করতে পারেনি। যখনই তার দিকে তাকাবেন আনন্দে মন ভরে দিবেন। যখন কথা বলবেন ছন্দময় মিষ্টি কথা দ্বারা হৃদয় ভরে দিবেন। জান্নাতের রুমসমূহে যখন তারা ঘুরাফেরা করবে তখন তাদের আলোতে রুমগুলো আলোকময় হয়ে যাবে। বেহেশতের অধিবাসী নারী-পুরুষগণ হবেন একই বয়সের পরিপূর্ণ যুবক-যুবতী। আপনি যদি বেহেশতের হুরদের সৌন্দর্য্যের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আপনি কি চন্দ্র ও সূর্যের সৌন্দর্য্য ও উজ্জ্বলতা প্রত্যক্ষ করেছেন? তাদের চোখের রং সম্পর্কে জানতে চাইলে জেনে নিন যে, তাদের চোখের রং হবে পরিস্কার সাদার মাঝে কাকের কালো চোখের মত কালো বর্ণের। তাদের শরীরের কোমলতা হবে বৃক্ষের কচি শাখা-পাতার ন্যায় নরম ও কোমল।

আপনি যদি তাদের শরীরের রং সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন যে তাদের শরীরের রং হবে প্রবাল ও পদ্মরাগের মত উজ্জ্বল। জান্নাতে মুমিনদের জন্যে রয়েছে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ। তাদের বাহিরের সৌন্দর্যের সাথে সাথে আভ্যন্তরীণ চরিত্রও হবে অত্যন্ত সুন্দর ও পূত-পবিত্র। তারা হবে অন্তরের প্রশান্তি ও চক্ষু শীতলকারিনী। তারা হবে স্বামীদের কাছে অতি প্রিয় কোমল দেহ বিশিষ্ট আরব্য রমণীতুল্য। সেই রমণী সম্পর্কে আপনাদের কিরূপ ধারণা? তিনি যখন তার স্বামীর চেহারার দিকে তাকাবেন তখন তার হাসিতে জান্নাত আলোকিত হয়ে উঠবে। যখন তিনি এক প্রাসাদ থেকে অন্য প্রাসাদে গমণ করবেন তখন আপনি দেখে বলবেন এই তো সূর্য তার কক্ষপথ ছেড়ে এখানে চলে এসেছে। যখন তিনি তার স্বামীর সাথে কথা বলবেন তখন কতইনা সুন্দর হবে সেই কথোপকথন!!। যখন তাঁর স্বামীর সাথে আলিঙ্গন করবেন তখন কতইনা সুন্দর হবে সেই আলিঙ্গন। হুরেরা যখন গান গাইবে তখন কতইনা সুন্দর হবে সে গানের কন্ঠ!!। যখন তাদের সাথে মেলামেশা করবেন কতইনা আনন্দময় হবে সেই মেলামেশা!! যখন তাকে চুম্বন করবেন তখন সেই চুম্বন হবে তার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বস্তু।

৭২
জান্নাতে মুমিনদের আল্লাহর দিদার লাভঃ
যদি আপনি মহা পরাক্রমশালী প্রশংসিত প্রভুর সাক্ষাৎ এবং কোন প্রকার উপমা ও সাদৃশ্য হতে পবিত্র তাঁর চেহারা দর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন তবে জেনে নিন যে আপনি কিয়ামতের দিন আল্লাহকে সেরকমই দেখতে পাবেন, যেমন পরিস্কার আকাশে দিনের বেলায় সূর্য এবং রাতের বেলায় পূর্ণিমার চন্দ্রকে দেখতে পান। এ সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে মুতাওয়াতির (ধারাবাহিক) সূত্রে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যারীর, সুহাইব, আনাস, আবু হুরায়রা, আবু মুসা, আবু সাঈদ ও অন্যান্য সাহাবী (রাঃ) হতে সহীহ এবং সুনানের কিতাবগুলোতে এসমস্ত হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অতএব আপনি শ্রবণ করুন, যে দিন ঘোষণাকারী এই বলে ঘোষণা করবে যে, হে জান্নাতবাসীগণ! আপনাদের প্রভু আপনাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। আপনারা তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসুন! জান্নাতবাসীগণ দ্রুত বের হয়ে এসে দ্রুতগামী বাহনগুলো প্রস্তুত অবস্থায় দেখতে পাবেন। বাহনের উপর তারা উঠে বসবেন। যখন তারা প্রশস্ত উপত্যকায় সমবেত হবেন তখন আল্লাহ তাআলা সেখানে কুরসী স্থাপন করতে বলবেন। তারপর জান্নাতবাসীদের জন্যে মণি-মুক্তা, নূর, যাবারযাদ, এবং স্বর্ণ-রৌপ্যের মেম্বার স্থাপন করা হবে। তারা যখন স্থির হয়ে বসবেন তখন ঘোষণা দেয়া হবেঃ হে জান্নাতীগণ! সালামুন আলাইকুম (আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। অতি সুন্দর ভাষায় তারা সালামের উত্তর দিবেনঃ

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ تَبَارَكْتَ ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ وَفِي رِوَايَةِ ابْنِ نُمَيْرٍ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার পক্ষ হতেই শান্তির ধারা বর্ষিত হয়ে থাকে। হে মহা সম্মানের অধিকারী! আপনি অতি বরকতময়। তাদের উত্তর শুনে আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম বলবেনঃ আমার সেই বান্দাগণ কোথায়? যারা আমাকে না দেখেই আমার আনুগত্য করেছিল। আজ তাদের অতিরিক্ত পুরস্কারের দিন। তখন সকল জান্নাতবাসী এক বাক্যে বলবেনঃ হে আল্লাহ আমরা আপনার উপর সন্তুষ্ট। সুতরাং আপনিও আমাদের উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তখন আল্লাহ বলবেনঃ হে জান্নাতীগণ! আমি যদি তোমাদের উপর সন্তুষ্ট না থাকতাম তাহলে তোমাদেরকে আমার এই জান্নাতে প্রবেশ করাতামনা। আজ তোমাদের জন্যে অতিরিক্ত পুরস্কারের দিন। তোমাদের মন যা চায়, তাই চাইতে পার। তখন সকলেই এক বাক্যে বলবেনঃ আমাদের জন্যে আপনার চেহারা মুবারাক উম্মুক্ত করুন। আমরা আপনার দিকে তাকিয়ে আপনার দর্শন লাভের নেয়াহমত ভোগ করব। তারপর আল্লাহ তাআলা চেহারার পর্দা উম্মুক্ত করে তাদের সামনে বের হবেন। আল্লাহর নূর তাদেরকে আচ্ছাদিত করে ফেলবে। আল্লাহ যদি এ ফয়সালা না করতেন যে তারা আল্লাহর নূরে প্রজ্বলিত হবেনা তাহলে তাঁরা অবশ্যই জ্বলে যেতেন। ঐ মজলিসে যারা উপস্থিত হবেন তাদের সবার সাথেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কথা বলবেন। এমনকি আল্লাহ বলবেনঃ হে আমার বান্দা! তোমার কি মনে আছে? তুমি অমুক দিন এই কাজ করেছিলে। সে বলবে, হে দয়াময় আল্লাহ! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করে দেননি? আল্লাহ বলবেনঃ আমার ক্ষমার বিনিময়েই তুমি এই মর্যাদায় পৌঁছতে সক্ষম হয়েছো। কতইনা সুন্দর হবে আল্লাহর এসমস্ত কথা শ্রবণ!!

সম্মানিত প্রভুর চেহারার দিকে তাকিয়ে চক্ষু শীতলকারী সৎকর্মশীলদের কতইনা সৌভাগ্য!! ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসা নিয়ে প্রত্যাবর্তনকারীদের কতইনা দুর্ভাগ্য!! আল্লাহ বলেনঃ

وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ بَاسِرَةٌ تَظُنُّ أَنْ يُفْعَلَ بِهَا فَاقِرَةٌ

অর্থঃ সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে। তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর অনেক মুখমন্ডল সেদিন উদাস হয়ে পড়বে। তারা ধারণা করবে যে, তাদের সাথে কোমর ভাঙ্গা আচরণ করা হবে। (সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৫)

৭৩
মওতের শেষ পরিণতিঃ
ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

إِذَا صَارَ أَهْلُ الْجَنَّةِ إِلَى الْجَنَّةِ وَأَهْلُ النَّارِ إِلَى النَّارِ جِيءَ بِالْمَوْتِ حَتَّى يُجْعَلَ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ ثُمَّ يُذْبَحُ ثُمَّ يُنَادِي مُنَادٍ يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ لَا مَوْتَ وَيَا أَهْلَ النَّارِ لَا مَوْتَ فَيَزْدَادُ أَهْلُ الْجَنَّةِ فَرَحًا إِلَى فَرَحِهِمْ وَيَزْدَادُ أَهْلُ النَّارِ حُزْنًا إِلَى حُزْنِهِمْ

অর্থঃ যখন জান্নাতবাসীগণ জান্নাতে চলে যাবেন এবং জাহান্নামীরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে তখন (সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের ভেড়ার আকৃতিতে) মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে এবং তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী একটি স্থানে রেখে যবেহ করে ঘোষণা করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। এখানে তোমরা অনাদিকাল পর্যন্ত অবস্থান করবে। ওহে জাহান্নামীরা! তোমরা চিরকাল এ কঠিন আযাব ভোগ করবে। তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা। একথা শুনে বেহেশতবাসীদের আনন্দ ও খুশী আরো বেড়ে যাবে এবং জাহান্নামীদের দুঃখ ও পেরেশানী আরও বৃদ্ধি পাবে। [-বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]

অন্য বর্ণনায় এসেছে প্রথমে জান্নাতের অধিবাসীদেরকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করা হবেঃ হে জান্নাতবাসীগণ! তোমরা কি একে চেন? তাঁরা বলবেনঃ আমরা তাকে চিনি। সে হলো মৃত্যু। অতঃপর জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ তোমরা কি একে চেন? তারাও বলবেঃ আমরা তাকে চিনি। সে হলো মৃত্যু। অতঃপর তাকে যবেহ করে দেয়া হবে। তারপর বলা হবেঃ হে জান্নাতীগণ! তোমরা এখানে চিরকাল থাকবে। তোমাদের আর কোন দিন মৃত্যু হবেনা। জাহান্নামীদেরকে ডাক দিয়ে বলা হবেঃ তোমরা চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে। তোমাদের আর মৃত্যু হবেনা।

হে আল্লাহ! আমাদেরকে এবং আমাদের পিতা-মাতা ও আপনার প্রিয় বান্দাদেরকে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন এবং জান্নাতের নেয়াহমত লাভে ধন্য করুন! আমীন।

৭৪
কতিপয় জান্নাতী আমল
উপরে জান্নাতের যে সুন্দর বিবরণ পেশ করা হয়েছে তা শুনে প্রতিটি মানুষই তা পাওয়ার জন্যে আকাঙ্খা করবে- এটাই স্বাভাবিক। শুধু তাই নয় মুমিন ব্যক্তির একান্ত কামনাও তাই। এ জন্যেই সে যাবতীয় সৎ আমল করে থাকে। এখানে এমন কতিপয় আমল সম্পর্কে আলোচনা করবো যা পালন করলে জান্নাতের নেয়াহমত লাভ করা খুবই সহজ হবে।

৭৫
এককভাবে আল্লাহর এবাদত করাঃ
যে ব্যক্তি মৃত্যু বরণ করবে এঅবস্থায় যে সে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেনি সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

জনৈক সাহাবী রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললেনঃ আমাকে সংবাদ দিন এমন আমল সম্পর্কে যা আমাকে জান্নাতের নিকটবর্তী করে দিবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে? তিনি বললেনঃ নিশ্চয়ই তাকে একটি বিরাট বিষয়ে প্রশ্ন করার তাওফীক দেয়া হয়েছে। তুমি আল্লাহর এবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবেনা, সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং নিকটাত্মিয়দের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।]

৭৬
পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করাঃ
আল্লাহ তাআলা পাঁচ ওয়াক্ত নামায বান্দার উপর ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি উহা আদায় করবে এবং এগুলোকে হালকা ও তুচ্ছ মনে করে তার কোন কিছু বিনষ্ট করবেনা তার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে অঙ্গীকার রয়েছে তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। যে ব্যক্তি এগুলো আদায় করবেনা তার জন্যে আল্লাহ্‌র কাছে কোন অঙ্গিকার নেই। ইচ্ছা করলে তিনি তাকে শাস্তি দিবেন। ইচ্ছা করলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। [- আবু দাঊদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত।]

৭৭
প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হলো মানুষকে কোন আমলটি বেশী করে জান্নাতে প্রবেশ করাবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ আল্লাহর ভয় এবং উত্তম চরিত্র। [- আহমাদ, ইবনে হিববান।] আল্লাহ বলেনঃ

وَسِيقَ الَّذِينَ اتَّقَوْا رَبَّهُمْ إِلَى الْجَنَّةِ زُمَرًا حَتَّى إِذَا جَاءُوهَا وَفُتِحَتْ أَبْوَابُهَا وَقَالَ لَهُمْ خَزَنَتُهَا سَلَامٌ عَلَيْكُمْ طِبْتُمْ فَادْخُلُوهَا خَالِدِينَ “

যারা তাদের পালনকর্তাকে ভয় করতো, তাদেরকে দলে দলে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। যখন তারা উম্মুক্ত দরজা দিয়ে জান্নাতে পৌঁছবে এবং জান্নাতের রক্ষীরা তাদেরকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি সালাম, তোমরা সুখে থাক, অতঃপর সদাসর্বদা বসবাসের জন্যে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। (সূরা যুমারঃ ৭৩)

বুখারী শরীফে এই মর্মে একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তীদের ভিতরে একজন গুনাহগার লোক ছিল। সে বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হয়ে পরিবারের লোকদেরকে ডেকে বললঃ আমি জীবনে অনেক পাপের কাজ করেছি। আল্লাহ যদি আমাকে ধরতে পারেন তাহলে কঠিন শাস্তি প্রদান করবেন। তাই আমি যখন মৃত্যু বরণ করবো তোমরা অনেক কাঠ সংগ্রহ করে বিরাট একটি অগ্নি প্রজ্বলিত করে আমাকে তাতে নিক্ষেপ করবে। আমার শরীর আগুনে জ্বলে যখন ছাই হয়ে যাবে তখন ছাইগুলোকে ভাল করে পিষবে। অতঃপর তোমরা অপেক্ষা করতে থাকবে। সাগরের ভিতরে যে দিন ঝড় সৃষ্টি হবে এবং প্রচন্ড ঢেউ উঠবে তখন ছাইগুলোকে তাতে নিক্ষেপ করবে। তারা তাই করল। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কেন এরকম করেছো? সে বললঃ হে আল্লাহ! আপনার শাস্তির ভয়ে আমি এরকম করেছি। অতঃপর আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করালেন। [- বুখারী, কিতাবু আহাদীছুল আম্বীয়া।]

৭৮
প্রতিদিন ১২ রাকাহআত সুন্নাত নামায আদায় করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি দিন ও রাতে বার রাকাআত নফল নামায আদায় করবে তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবু সালাতিল মুসাফিরীন।] এই ১২ রাকাহআত নামায হলো জোহরের আগে চার এবং পরে দুই, মাগরিবের পরে দুই, এশার পরে দুই এবং ফজরের আগে দুই রাকাহআত।

৭৯
প্রত্যেকবার অযু করে দুহরাকাআত নফল নামায আদায় করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক দিন বেলাল (রাঃ)কে বললেনঃ হে বেলাল! আমাকে বল তো ইসলামের এমনকি আমল তুমি করে থাক যার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রতিদানের আশা করে থাক? কেননা জান্নাতে আমার সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি। তিনি বললেনঃ আমার কাছে তেমন আশাম্বিত কোন আমল নেই, তবে আমি রাতে বা দিনে যখনই পবিত্রতা অর্জন করি তখনই সে অযু দ্বারা সাধ্যানুযায়ী নামায আদায় করে থাকি।

৮০
কবূল হজ্জ্বঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মাকবূল হজ্জের বিনিময় জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল হাজ্জ।]

৮১
মসজিদ নির্মাণ করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মসজিদ নির্মাণ করবেঃ আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে অনুরূপ একটি ঘর তৈরী করবেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাসাজিদ।] কোন মসজিদের নির্মাণ কাজে সামান্য অর্থ দিয়ে বা অন্য কোনভাবে সহায়তা করলেও উক্ত ছাওয়াব অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ।

৮২
নবী (সাঃ)কে ভালবাসা এবং তাঁর অনুসরণ করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ভালাবাসা ঈমানের অন্যতম শাখা। তিনি বলেনঃ

َوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ والناس أجْمَعَيْنَ

অর্থঃ ঐ সত্বার শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবেনা যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং দুনিয়ার সকল মানুষ হতে প্রিয় হতে পারব। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ঈমান।] নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ আমার উম্মাতের সবাই জান্নাতে প্রবেশ করবে তবে সে ব্যক্তি নয় যে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ কে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে? উত্তরে নবী তিনি বললেনঃ যে ব্যক্তি আমার অনুসরণ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে আমার নাফরমানী করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে অস্বীকার করল। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল ই’তিসাম।]

৮৩
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে একে অপরকে ভালবাসাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

إِنَّ اللَّهَ يَقُولُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَيْنَ الْمُتَحَابُّونَ بِجَلَالِي الْيَوْمَ أُظِلُّهُمْ فِي ظِلِّي يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلِّي

অর্থঃ আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন বলবেনঃ আমার সন্তুষ্টির জন্যে যারা একে অপরকে ভালবাসতো তারা আজ কোথায়? আমি তাদেরকে আমার আরশের ছায়া প্রদান করব। আজ আমার আরশের ছায়া ব্যতীত আর কোন ছায়া নেই। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বির ওয়াস্ সিলাত।]

৮৪
মুসলমানের সাথে হিংসা না রাখাঃ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) বলেনঃ একদা আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাছে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেনঃ তোমাদের কাছে এখনই একজন জান্নাতী লোক আগমণ করবেন। অতঃপর একজন আনসারী লোক আগমণ করলেন। তার দাড়ি বেয়ে ওযুর পানি ঝড়ে পড়ছিল। তার পায়ের জুতা দুহটি বাম হাতে ছিল। পরের দিন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)একই কথা বললেন। কিছুক্ষণ পর সেই আনসারী সাহাবী একই অবস্থায় আগমণ করলেন। তৃতীয় দিনেও তিনি একই কথা বললেন এবং উক্ত আনসারী সাহাবী আগমণ করলেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন চলে গেলেন, তখন আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রাঃ) আনসারী সাহাবীর পিছনে ছুটলেন এবং বললেন আমি আমার পিতার নিকট থেকে তিন দিনের জন্যে অনুমতি নিয়ে এসেছি। আপনি যদি অনুমতি দেন তা হলে এই তিন দিন আপনার কাছে থাকব। আনসারী সাহাবী বললেনঃ কোন অসুবিধা নেই। আনাস (রাঃ) বলেনঃ আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) পরবর্তীতে বলতেন, তিনি তাঁর সাথে পরপর তিনটি রাত্রি যাপন করেছেন। রাত্রিতে তাকে কোন তাহাজ্জুদের নামায বা অতিরিক্ত কোন নামায আদায় করতে দেখেন নি। তবে রাত্রিতে তিনি যখন বিনিদ্রা অনুভব করতেন এবং বিছানায় পার্শ্ব পরিবর্তন করতেন তখন আল্লাহর যিক্‌র করতেন এবং তাঁর বড়ত্ব বর্ণনা করতেন। অতঃপর যখন ফজরের নামাযের সময় হতো, তখন তিনি নামাযের জন্যে উঠতেন। আবদুল্লাহ বিন আমর বলেনঃ তবে আমি তাকে কখনও খারাপ কথা বলতে শুনি নাই। তিন দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আমি তাঁর আমলকে খুবই সামান্য মনে করলাম এবং বললামঃ হে আল্লাহর বান্দা! আপনার কাছে তিন দিন যাবৎ অবস্থানের কারণ হল, আমি তিনবার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, এখন তোমাদের নিকট একজন জান্নাতী লোক উপস্থিত হবে। প্রত্যেকবারই আপনি এসে উপস্থিত হয়েছন। তাই আমি তোমার আমল দেখার জন্য এবং আপনার মত আমল করার জন্যে তিন দিন ধরে আপনার সাথে আছি। কিন্তু আমি আপনাকে বেশী আমল করতে দেখিনি। তা হলে বলুন তো কি আমল করার কারণে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনার ব্যাপারে এরকম মন্তব্য করেছেন? অর্থাৎ আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিলেন। তিনি বললেনঃ তুমি যা দেখলে তার বেশী অতিরিক্ত কোন আমল করার অভ্যাস আমার নেই। আমি যখন চলে আসার জন্যে বের হলাম তখন আমাকে ডেকে বললেনঃ তবে আমার অতিরিক্ত একটি আমল আছে। তা হলো আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাকে যে কল্যাণ দান করেছেন তার প্রতি আমার অন্তরে কোন হিংসা নেই। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) বললেনঃ ইহাই আপনাকে এতো মর্যাদাবান করেছে। [- মুসনাদে আহমাদ।]

৮৫
সূরা ইখলাসের সাথে ভালবাসা রাখাঃ
জনৈক আনসারী সাহাবী মসজিদে কুবায় ইমামতি করতেন। যখনই তিনি সূরা ফাতিহার পর কোন সূরা দিয়ে কিরাত আরম্ভ করতেন তখন প্রথমে সূরা ইখলাস পড়ে নিতেন। তারপর অন্য কোন সূরা পড়তেন। আর এরূপ তিনি প্রতি রাকাআতেই করতেন। মুসল্লীগণ তাকে বললেনঃ আপনি প্রথমে এই সূরা দিয়ে কিরাত শুরু করছেন তারপর তা যথেষ্ট নয় ভেবে অন্য সূরা পাঠ করছেন। আপনি হয় শুধু এই সূরাটি পাঠ করুন অথবা এটা ছেড়ে অন্য কোন সূরা পাঠ করুন। তিনি বললেনঃ আমি উহা পরিত্যাগ করতে রাজি নই। তোমরা যদি চাও তাহলে এভাবেই তোমাদের ইমামতি করবো। আর যদি অপছন্দ কর তবে তোমাদের ইমামতি ছেড়ে দিবো। তারা মনে করতেন, তিনি তাদের মাঝে সর্বাধিক যোগ্য ব্যক্তি, আর অন্য কেউ তাদের ইমামতি করুক এটাও অপছন্দ করতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম) একদা তাদের নিকট আগমণ করে তারা ব্যাপারটি তাঁর কাছে পেশ করলেন। তিনি সেই ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেনঃ হে অমুক! তোমার সাথীরা তোমাকে যে পরামর্শ দিচ্ছে, তা গ্রহণ করতে কিসে তোমাকে বাঁধা দিচ্ছে? আর কেনইবা তুমি উক্ত সূরা প্রতি রাকাহআতে পাঠ করছ? জবাবে তিনি বললেনঃ আমি উহাকে খুব ভালবাসি। তিনি বললেনঃ এই ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালিম।]

৮৬
মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট মোচনকারীর প্রতিদানঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই। সে তার ভাইয়ের প্রতি জুলুম করবেনা। তাকে বিপদাপদে অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিবেনা। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সহায়তা করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের উপর হতে দুনিয়ার কোন মুসিবত দূর করবে আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদাপদ দূর করবেন। যে ব্যক্তি মুসলমানের দোষ-ত্রুটি গোপন করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মাযালেম ওয়াল গাযাব।]

৮৭
ন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালাকারী জান্নাতে যাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

الْقُضَاةُ ثَلَاثَةٌ قَاضِيَانِ فِي النَّارِ وَقَاضٍ فِي الْجَنَّةِ رَجُلٌ قَضَى بِغَيْرِ الْحَقِّ فَعَلِمَ ذَاكَ فَذَاكَ فِي النَّارِ وَقَاضٍ لَا يَعْلَمُ فَأَهْلَكَ حُقُوقَ النَّاسِ فَهُوَ فِي النَّارِ وَقَاضٍ قَضَى بِالْحَقِّ فَذَلِكَ فِي الْجَنَّةِ

অর্থঃ বিচারক তিন প্রকার। দুহপ্রকার বিচারক জাহান্নামে যাবে এবং এক প্রকার বিচারক জান্নাতে প্রবেশ করবে। যে বিচারক সত্যকে জেনে শুনে অন্যায়ভাবে বিচার করবে সে জাহান্নাবে যাবে। আর যে বিচারক অজ্ঞতা বশতঃ বিচার-ফয়সালা করতে গিয়ে মানুষের হক নষ্ট করবে সেও জাহান্নামে যাবে। আর যে বিচারক সত্যকে ভালভাবে বুঝবে এবং সে অনুযায়ী মানুষের মাঝে বিচার ফয়সালা করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- তিরমিজী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আহকাম।]

৮৮
রোগীর সেবা ও জানাযায় শরীক হওয়ার বিনিময় জান্নাতঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ صَائِمًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ أَنَا قَالَ فَمَنْ تَبِعَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ جَنَازَةً قَالَ أَبُو بَكْرٍ أَنَا قَالَ فَمَنْ أَطْعَمَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مِسْكِينًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ أَنَا قَالَ فَمَنْ عَادَ مِنْكُمُ الْيَوْمَ مَرِيضًا قَالَ أَبُو بَكْرٍ أَنَا فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا اجْتَمَعْنَ فِي امْرِئٍ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ

অর্থঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ রোযাদার অবস্থায় ঘুম থেকে উঠেছে? আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আমি। আবার বললেনঃ তোমাদের মধ্যে কে আজ একটি জানাযায় অংশ গ্রহণ করেছে? আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আমি। আবার বললেনঃ কে আজ একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করেছে? আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আমি। পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ এমন কে আছে যে আজ একজন রোগী দেখতে গিয়েছিল? আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ আমি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ যার ভিতরে এ সমস্ত গুণের সমাহার ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত।]

৮৯
মুআজ্জিনের পুরস্কারঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ

অর্থঃ কিয়ামতের দিন মুআজ্জিনের ঘাড় সবচেয়ে লম্বা হবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সালাত।] এই নিদর্শন মর্যাদা স্বরূপ মুআজ্জিনকে প্রদান করা হবে। যা দেখে মানুষেরা তাঁকে চিনতে পারবে। কোন কোন বিদ্বান বলেনঃ এখানে ঘাড় লম্বা হওয়ার অর্থ তার সম্মান সবচেয়ে বেশী হবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেনঃ মুআজ্জিনের আওয়াজ যতদূর পৈৗঁছবে ততদূর পর্যন্ত জিন-ইনসানসহ সমস্ত মাখলুক তার ঈমানের পক্ষে কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আযান।]

৯০
ক্রোধ নিবারণকারীর সুসংবাদঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ مَا شَاءَ

অর্থঃ ক্রোধ বাস্তবায়নের ক্ষমতা থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি তা সংবরণ করতে সক্ষম হবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাঁকে সমস্ত মাখলুকের সামনে ডেকে এনে হুরদের মধ্যে থেকে যাকে ইচ্ছা নিজের জন্যে নির্বাচন করার অধিকার দিবেন। [- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।]

৯১
আয়াতুল কুরসী পাঠ করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে মৃত্যু ছাড়া কোন কিছু তাকে জান্নাতে যেতে বারণ করতে পারবেনা। [- নাসাঈ, সহীহ্ ইবনে হিববান।]

৯২
রোযাদারদের রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঢ়

إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

অর্থঃ ‘‘জান্নাতের একটি দরজা রয়েছে যার নাম হল ওরাইয়্যানহ। কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল রোজাদারগণ। বলা হবে রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা উঠে সেই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবেন। তয়বরা ব্যতীত ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা। যখন তাদের প্রবেশ করা শেষ হবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ ষসই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেনা’’। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যাকাত।]

৯৩
ক্ষুধার্তকে খাদ্যদানকারীর প্রতিদানঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঢ়

أَيُّمَا مُؤْمِنٍ أَطْعَمَ مُؤْمِنًا عَلَى جُوعٍ أَطْعَمَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ ثِمَارِ الْجَنَّةِ وَأَيُّمَا مُؤْمِنٍ سَقَى مُؤْمِنًا عَلَى ظَمَإٍ سَقَاهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ الرَّحِيقِ الْمَخْتُومِ

অর্থঃ ‘‘যে মুমিন ব্যত্তিু কোন ক্ষুধার্ত মুমিনকে আহার করাবে আল্লাহ্ তাকে জান্নাতের ফল ভক্ষণ করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন তৃষ্ণর্ত মুমিনের পিপাসা নিবারণ করবে আল্লাহ্ তাকে রাহীকে মাখতূম তথা মোহরাংকিত স্বর্গীয় সুধা পান করাবেন। [- তিরমিযী, কিতাবু সিফাতিল কিয়ামাহ।]

৯৪
পিপাসিত পশু-পাখিকে পানি পান করানোর প্রতিদানঃ
بَيْنَا رَجُلٌ بِطَرِيقٍ اشْتَدَّ عَلَيْهِ الْعَطَشُ فَوَجَدَ بِئْرًا فَنَزَلَ فِيهَا فَشَرِبَ ثُمَّ خَرَجَ فَإِذَا كَلْبٌ يَلْهَثُ يَأْكُلُ الثَّرَى مِنَ الْعَطَشِ فَقَالَ الرَّجُلُ لَقَدْ بَلَغَ هَذَا الْكَلْبَ مِنَ الْعَطَشِ مِثْلُ الَّذِي كَانَ بَلَغَ مِنِّي فَنَزَلَ الْبِئْرَ فَمَلَا خُفَّهُ مَاءً فَسَقَى الْكَلْبَ فَشَكَرَ اللَّهُ لَهُ فَغَفَرَ لَهُ

পূর্বযুগের একজন লোক পথ চলছিল। পথিমধ্যে তার প্রচন্ড পানির পিপাসা হলো। রাস্তার পাশেই একটি কূপের সন্ধান পেয়ে তাতে নেমে পানি পান করে পিপাসা নিবারণ করল। কূপ থেকে উঠে দেখল একটি কুকুর পানির পিপাসায় কাতর হয়ে জিহ্বা দিয়ে ভিজা মাটি চাটছে। লোকটি কুকুরটিকে পিপাসিত ভেবে কূপে নেমে পায়ের মোজা ভর্তি করে পানি এনে কুকুরকে পান করালো। আল্লাহ তার এ কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মুসাকাত।]

৯৫
ইয়াতীমের পরিচর্যাকারী জান্নাতে নবী (সাঃ)এর সাথে থাকবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَقَالَ بِإِصْبَعَيْهِ السَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى

অর্থঃ আমি এবং ইয়াতীমের তত্বাবধানকারী এভাবে জান্নাতে থাকব। এই কথা বলে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তর্জনি এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে এক সাথে মিলালেন। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল আদাব।]

৯৬
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ ঐ ব্যক্তির নাক ধূলিমলিন হোক যে তার পিতা-মাতাকে বা তাদের একজনকে বৃদ্ধাবস্থায় পেল অথচ তাদের খেদমত করে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারলনা। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বির ওয়াস্ সিলাত।]

৯৭
কন্যা সন্তান প্রতিপালনে কষ্ট স্বীকার করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তিকে কন্যা সন্তান দ্বারা পরীক্ষায় ফেলা হয় সে যদি তাদের প্রতি করুণাশীল হয় তবে তারা তার জন্য জাহান্নামের পর্দা স্বরূপ হয়ে যাবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বির ওয়াস্ সিলাত।]

৯৮
যে মহিলার উপর তার স্বামী সন্তুষ্ট থাকবে সে জান্নাতে যাবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

أَيُّمَا امْرَأَةٍ مَاتَتْ وَزَوْجُهَا عَنْهَا رَاضٍ دَخَلَتِ الْجَنَّةَ

অর্থঃ ‘‘স্বামী সন্তুষ্ট থাকাবস্থায় যদি কোন মহিলা মৃত্যু বরণ করে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিযা (দুগ্ধ পান করানো)।] সুতরাং হে রমণী! তুমি চিন্তা করে দেখ তোমার ঠিকানা কোথায়।

৯৯
অন্ধ হয়ে গেলে ধৈর্য ধারণ করাঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ বলেনঃ আমি যার দুহটি প্রিয় বস্তু তথা চোখ নষ্ট করে দেয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা করি আর সে ধৈর্য ধারণ করে তার বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত প্রদান করবো। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল মারযা।] হাদীছ থেকে জানতে পারা যায় যে, জন্মান্ধরাও যদি সবূর করে এবং আল্লাহর অনুগত থাকে তাদেরকেও আল্লাহ তাআলা জান্নাত প্রদান করবেন।

১০০
যারা আল্লাহর নিরানব্বইটি নাম মুখস্থ করবেঃ
আল্লাহ তাআলার নিরানব্বইটি নাম রয়েছে। যে ব্যক্তি উহা মুখস্থ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুয্ যিকরি।] এখানে মুখস্থ করার অর্থ হলো সেগুলো মুখস্থ করা, অর্থ বুঝা, তার দাবী অনুযায়ী আমল করা এবং সেগুলোর উসীলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দুহআ করা।

১০১
যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করবেঃ
قَالَ مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করবে আমি তার জন্যে বেহেশতের জিম্মাদার হব। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]

১০২
যাদেরকে বেহেশতের সকল দরজা দিয়েই ডাকা হবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ فِي سَبِيلِ اللَّهِ نُودِيَ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ يَا عَبْدَ اللَّهِ هَذَا خَيْرٌ فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلَاةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلَاةِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الْجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الْجِهَادِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الرَّيَّانِ وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ رَضِي اللَّه عَنْه بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا عَلَى مَنْ دُعِيَ مِنْ تِلْكَ الْأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ فَهَلْ يُدْعَى أَحَدٌ مِنْ تِلْكَ الْأَبْوَابِ كُلِّهَا قَالَ نَعَمْ وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ

অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জোড়া জোড়া জিনিষ দান করবে তাকে জান্নাতের সকল দরজা দিয়েই প্রবেশের জন্যে ডাকা হবে। তাকে বলা হবেঃ হে আল্লাহর বান্দা এটি তোমার জন্য কতই না উত্তম! সুতরাং নামাযীকে নামাযের দরজা দিয়ে, মুজাহিদকে জিহাদের দরজা দিয়ে, রোযাদারকে ওরাইয়্যানহ নামক দরজা দিয়ে এবং দাতাকে দানের দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার আহবান করা হবে। আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ঐ সকল দরজা থেকে যাদেরকে আহবান করা হবে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করতে কোন অসুবিধা হবেনা। আর এমন কেউ আছে কি, যাকে উক্ত সকল দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য আহবান জানানো হবে? উত্তরে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। আমার বিশ্বাস তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুস্ সিয়াম।]

১০৩
যাদেরকে আল্লাহ আরশের ছায়া দান করবেনঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللَّهِ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللَّهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّي أَخَافُ اللَّهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللَّهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ

অর্থঃ যে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া কোন ছায়া থাকবেনা সে দিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। তারা হলেনঃ (১) ন্যায় পরায়ণ শাসক (২) যে যুবক তাঁর প্রভুর এবাদতের মাঝে প্রতিপালিত হয়ে বড় হয়েছে। (৩) যে ব্যক্তির মন সর্বদা মসজিদের সাথে সম্পৃক্ত থাকে। (৪) এমন দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে একে অপরকে ভালবাসে। আল্লাহর জন্য তারা পরস্পরে একত্রিত হয় এবং আল্লাহর জন্য পরস্পরে বিচ্ছিন্ন হয়। (৫) এমন পুরুষ যাকে একজন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত বংশের মহিলা নিজের দিকে আহবান করে, আর সে পুরুষ বলেঃ আমি আল্লাহকে ভয় করি। (তাই তোমার ডাকে সাড়া দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়)। (৬) যে দানশীল ব্যক্তি এমন গোপনে দান করে, ডান হাত দিয়ে যা দান করে, বাম হাত তা অবগত হতে পারেনা। অর্থাৎ তিনি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যেই দান করেন। তাই মানুষকে শুনানো বা দেখানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনা। (৭) যে ব্যক্তি নির্জনে বসে আল্লাহকে স্মরণ করে চোখের পানি প্রবাহিত করে। [- বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুর রিকাক।]

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী (রঃ) বলেনঃ যদিও উক্ত হাদীছে সাতজনের কথা বলা হয়েছে, তথাপি আল্লাহর আরশের নীচে ছায়া প্রাপ্তদের সংখ্যা সাতের মধ্যে সীমিত নয়। আল্লাহ তাআলা আরও কয়েক প্রকার মানুষকে বিশেষ ধরণের আমলের বিনিময়ে কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ

১০৪
(১) যে ব্যক্তি কোন অভাবী ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দিবেঃ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ أَظَلَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ

অর্থঃ যে ব্যক্তি কোন অভাবী ঋণগ্রস্তকে অবকাশ দিবে অথবা ঋণের কিছু অংশ ছেড়ে দিবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে স্বীয় আরশের ছায়ার নীচে স্থান দিবেন। সে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া থাকবেনা। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ।]

১০৫
(২) যে ব্যক্তি কোন মুজাহিদকে সহযোগিতা করবেঃ
مَنْ أَعَانَ مُجَاهِدًا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَوْ غَارِمًا فِي عُسْرَتِهِ أَوْ مُكَاتَبًا فِي رَقَبَتِهِ أَظَلَّهُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ

অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কোন মুজাহিদকে সহযোগিতা করবে অথবা কোন অভাবীকে তার অভাব মোচনে সাহায্য করবে অথবা মনিবের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ কোন কৃতদাসকে তার দাসত্ব মুক্তিতে সহযোগিতা করবে, আল্লাহ তাকে রোজ কিয়ামতে স্বীয় আরশের ছায়ার নীচে স্থান দিবেন। সে দিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবেনা। [- মুসনাদে ইমাম আহমাদ।]

১০৬
(৩) যে ব্যক্তি কোন অভাবীকে সাহায্য করবেঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সহায়তা করবে আল্লাহ তার প্রয়োজন পূরণে সহায়তা করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের উপর হতে দুনিয়ার কোন মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার বিপদাপদ দূর করবেন। [- মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বির ওয়াস্ সিলাত।]

১০৭
(৪) সত্যবাদী ব্যবসায়ীঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

التَّاجِرُ الصَّدُوقُ الْأَمِينُ مَعَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ

অর্থঃ সত্যবাদী বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীগণ নবী, সিদ্দীক এবং শহীদদের সাথে থাকবেন। [- তিরমিযী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ূ।]

উপরের আলোচনায় আল্লাহর আরশের ছায়া পাওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে, মহিলাগণ উক্ত আমলগুলোতে পুরুষদের শরীক হলেও তারা আল্লাহর আরশের ছায়ার নীচে স্থান পাবেন না এবং উক্ত ছাওয়াবের হকদার হবেন না। বরং মহিলাগণ যদি উক্ত আমলগুলো সম্পাদন করেন তাঁরাও পুরুষের মত মর্যাদা লাভ করবেন। তবে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং সব সময় মসজিদের সাথে সম্পর্ক রাখার বিষয়টি পুরুষের সাথে নির্দিষ্ট।

১০৮
পরিশিষ্ট
হে আল্লাহর বান্দা! আপনার গন্তব্যস্থল সম্পর্কে চিন্তা করুন। আপনি কোন দলের অন্তর্ভূক্ত হবেন। সবচেয়ে ব্যর্থতা হলো তাদের ব্যর্থতা যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেনঃ

قُلْ إِنَّ الْخَاسِرِينَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنْفُسَهُمْ وَأَهْلِيهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَلَا ذَلِكَ هُوَ الْخُسْرَانُ الْمُبِينُ

অর্থঃ হে নবী! আপনি বলুনঃ কিয়ামতের দিন তারাই বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হবে যারা নিজেদের এবং পরিবারবর্গের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সূরা যুমারঃ ১৫) মহান সফলতা অর্জিত হবে তাদের জন্যে যাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেনঃ

فَمَنْ زُحْزِحَ عَنْ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ

অর্থঃ যাকে জাহান্নামের আগুন থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃতপক্ষে সেই সাফল্যমন্ডিত হবে। (সূরা আল-ইমরানঃ ১৮৫)

আফসোস সেই ব্যক্তির জন্য যে স্বপ্নের মত স্বল্পকালীন সামান্য পার্থিব জীবনের বিনিময়ে এমন জান্নাতী নেয়াহমত বিক্রি করল যা কোন চক্ষু দর্শন করে নাই, কোন কর্ণ শ্রবণ করে নাই এবং যা কোন মানুষ কল্পনাও করতে পারেনা। পার্থিব জীবনের সামগ্রী মানুষকে একদিন হাসায় আবার অনেক দিন কাঁদায়। একদিন আনন্দ দিলেও মাসের পর মাস ব্যথা দেয়। ব্যথাগুলো আনন্দের তুলনায় অনেকগুণ বেশী।

হতাশা সেই ব্যক্তির জন্য যে মূল্যবান চিরস্থায়ী সম্পদকে ক্ষণস্থায়ী নগণ্য জিনিষের উপর প্রাধান্য দিল।

দুর্ভোগ ঐ ব্যক্তির জন্য যে বিপদাপদে পরিপূর্ণ সংকীর্ণ জেলখানার বিনিময়ে আকাশ-জমিন তুল্য জান্নাতকে বিক্রি করে দিল!! সংকীর্ণ ঘরের বিনিময়ে আদন নামক জান্নাতের এমন পবিত্র ঘরগুলো বিক্রি করে দিল যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে। আফসোস! আফসোস! ঐ ব্যক্তির জন্যে যে দুশ্চরিত্রবান ব্যভিচারীনী অপবিত্রা কুৎসিৎ, দুষ্ট, ও নিকৃষ্ট মহিলার বিনিময়ে জান্নাতের তাবুতে অবস্থানকারীনী সমবয়স্কা কুমারী প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ্য জান্নাতী রমণীগণকে বিক্রি করে দিল। আফসোস ঐ ব্যক্তির জন্যে যে বিক্রি করল পানকারীদের জন্য মজাদার ও সুস্বাদু শরাবে পরিপূর্ণ জান্নাতের শরাবের নদীগুলোকে জ্ঞান ও দ্বীন-দুনিয়া বিনষ্টকারী অপবিত্র শরাবের বিনিময়ে।

হায় আফসোস! ঐ ব্যক্তির জন্যে যে মন্দ ও নিকৃষ্ট চেহারার দিকে তাকানোর বিনিময়ে মহা পরাক্রমশালী আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর আনন্দকে বিক্রয় করে দিল এবং মহান আল্লাহর সুমধুর আওয়াজকে অবৈধ গান-বাজনা শুনার বিনিময়ে বিক্রি করে দিল।

ওহে আখেরাত হতে বিমুখ হতভাগা!! মৃত্যু ও তার পরবর্তী বিষয়ের ব্যাপারে একটু চিন্তা কর। দুনিয়ার প্রতি বেশী আশা-আকাঙ্খা ও চাকচিক্যকে নস্যাৎ করে দেয়ার জন্য মৃত্যুর স্মরণই যথেষ্ট।

তুমি এ আশায় আমল কর যাতে তুমি তোমার প্রভুর সস্তুষ্টি নিয়ে মৃত্যু বরণ করতে পার। জেনে রাখ! একমাত্র শেষ পরিণতিই মুমিনদের আসল সম্পদ। এ জন্যেই পূর্ব যামানার সৎকর্মশীলগণ শেষ পরিণতি মন্দ হওয়ার ভয়ে সদা ভীত-সন্ত্রস্ত থাকতেন।

১০৯
কতিপয় শিক্ষণীয় ঘটনাঃ
জনৈক সাহাবী মৃত্যুর সময় খুব ক্রন্দন করলেন। তাকে ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা আপন সৃষ্টিকে দুহমুষ্ঠির ভিতরে নিয়ে বললেনঃ এরা জান্নাতী এবং এরা জাহান্নামী। আমি জানি না যে, আমি কোন মুষ্ঠির মধ্যে ছিলাম।

কোন একজন সালাফ বলেছেনঃ তাকদীরের লিখন চক্ষুসমূহকে কতইনা ক্রন্দন করালো!!

সুফিয়ান ছাওরী (রঃ) শেষ পরিণতি কি হবে এভয়ে হতাশ হয়ে যেতেন। তিনি কেঁদে কেঁদে বলতেনঃ আমার ভয় হয় আমি কি তাকদীরের লিখন অনুযায়ী দুর্ভাগ্যবান কি না? আমার ভয় হয়, মরণের সময় আমার ঈমান ছিনিয়ে নেয়া হয় কি না?

মালিক বিন দীনার সারা রাত জাগ্রত থেকে বলতেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি অবশ্যই জানেন যে, কে জান্নাতী আর কে জাহান্নামী। তা হলে মালিক বিন দীনারের ঠিকানা কোথায়?

শেষ কথা এই যে, সংক্ষেপে পুস্তিকাটি সমাপ্ত করলাম। অন্তর সদা পরিবর্তনশীল। বিপদাপদ বিকট আকার ধারণ করলে অন্তর আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা,

اللَّهُمَّ يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ وَ صَرِّفْهُ عَلَى طَاعَتِكَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর সুদৃঢ় রাখুন এবং আপনার আনুগত্যের প্রতি উহাকে ধাবিত করুন।

سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ إِلَيْكَ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি অতি পবিত্র। প্রশংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং আপনার নিকট তাওবা করছি।

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন