মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ (ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. এর যাদুল মা‘আদ হতে সংক্ষেপিত)
লেখকঃ ড. আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ
১৩
(১১) হজ্জ-ওমরাহ্ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালার বিবরণ [যাদুল মা‘আদ : ২/৮৬।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/418/13
(ক) ওমরাহ্ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা:
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারবার ওমরাহ্ পালন করেন, (এক) হুদায়বিয়ার ওমরাহ, যখন মুশরিকরা তাঁকে মক্কায় প্রবেশ করতে বাধা দিয়েছিল, তখন তিনি হুদায়বিয়া নামক স্থানে হাদী যবেহ করেন এবং মাথা মুণ্ডন করে হালাল হয়ে যান। (দুই) ওমরাতুল কাযা, যা তিনি হুদায়বিয়ার সন্ধি মোতাবেক পরবর্তী বৎসর আদায় করেছিলেন। (তিন) যেই ওমরাহ্ তিনি হজ্জের সাথে আদায় করেছিলেন। (চার) তিনি জিয়িররানা থেকে একটি ওমরাহ্ আদায় করেছিলেন। [যা হোনাঈন যুদ্ধের সময় হয়েছিল।]
২. তাঁর জীবনে কোনো ওমরাহ্ মক্কা হতে বর্হিগমনকালে ছিল না, বরং সবকয়টি ওমরাহ্ ছিল মক্কায় প্রবেশকালে।
৩. বৎসরে একাধিক ওমরাহ্ করা তাঁর থেকে প্রমাণিত নেই, তিনি কখনই এক বৎসরে দু’ইবার ওমরাহ্ করেন নি।
৪. তাঁর সকল ওমরাহ্ আদায় হজ্জের মাসসমূহে ছিল।
৫. তিনি বলেন, মাহে রমযানে ওমরাহ্ আদায় হজ্জের সমতুল্য।” [বুখারী ও মুসলিম।]
(খ) হজ্জ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ: ২/৯৬।]:
১. হজ্জ ফরয হওয়ার পর অনতি বিলম্বে তিনি হজ্জ আদায় করেন এবং তিনি জীবনে একবার মাত্র হজ্জ করেন এবং তা ছিল হজ্জে ক্বেরান।
২. তিনি যোহরের সালাতের পর হজ্জের ইহরাম বাঁধেন, অতঃপর তালবিয়া পাঠ করে বলেন:
«لبيك اللهم لبيك، لبيك لا شريك لك لبيك، إن الحمد والنعمة لك والملك لا شريك لك» .
“আমি উপস্থিত হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত তোমার কোনো শরীক নেই আমি উপস্থিত, নিশ্চয় সমস্ত প্রশংসা এবং নে‘আমতসমূহ তোমার, আর সমুদয় রাজত্ব তোমার, তোমার কোনো শরীক নেই।”
আর তিনি এই তালবিয়া উচ্চস্বরে পাঠ করেন, যাতে তাঁর সাহাবীগণ শুনতে পান। তিনি তাদেরকে উচ্চস্বরে তালবিয়া পাঠ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি লাগাতার তালবিয়া পড়তে থাকেন। লোকেরা তাতে কম-বেশী করছিল কিন্তু তিনি তাতে অসম্মতি প্রকাশ করেন নি।
৩. তিনি ইহরাম বাঁধার সময় সাহাবীদেরকে হজ্জের তিন প্রকারের যে কোনো একটি মনোনীত করার অনুমতি দেন, অতঃপর তিনি মক্কার নিকটবর্তী হলে হজ্জে ইফরাদ ও হজ্জে ক্বেরানকরীদের মাঝে যাদের সাথে হাদী তথা হজ্জের কুরবানীর পশু ছিল না তাদেরকে হজ্জের ইহরামের বদলে ওমরার নিয়্যাত করার উৎসাহ প্রদান করেন।
৪. তিনি উষ্ট্রীর উপর সাওয়ার হয়ে হজ্জ আদায় করেন, পাল্কি কিংবা হাওদা-ডুলির মধ্যে নয় এবং খাদ্যদ্রব্য ও সফরের সামান তাঁর সাথেই ছিল।
৫. তিনি মক্কায় উপনীত হয়ে এ মর্মে নির্দেশ জারী করেন যে, যাদের সাথে হাদীর পশু নেই তারা যেন হজ্জের ইহরাম ভঙ্গ করে ওমরার নিয়্যাত করে এবং ওমরাহ্ আদায়ের পর ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যায়। আর যাদের সাথে হাদী রয়েছে তারা যেন ওমরাহ্ আদায়ের পর ইহরাম অবস্থায় থাকে। অতঃপর তিনি সওয়ারীতে আরোহন করে ‘যী-তুয়া’ নামক উপত্যকায় অবতরণ করেন এবং সেখানে মাহে যিল-হজ্জের চতুর্থ তারিখে রবিবারের রাত কাটান এবং সেখানে ফজরের সালাত আদায় করেন। অতঃপর গোসল করে দিনের বেলায় মক্কার হুজুনের দিকে অবস্থিত ‘সানিয়াতুল ‘উলইয়া’-নামক এলাকা দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করেন। অতঃপর তিনি মসজিদে প্রবেশ করেই বায়তুল্লাহর অভিমুখে রাওয়ানা হন, তখন তিনি তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়েননি এবং হাজরে আসওয়াদের নিকট এসে তাকে স্পর্শ করেন এবং তার উপর ভীড় করেন নি। অতঃপর বায়তুল্লাহকে বামে রেখে ডান পার্শ্ব দিয়ে তাওয়াফ শুরু করেন এবং কা‘বার দরজায় কিংবা মীযাবের নিচে অথবা কা‘বা ঘরের পিছনে কিংবা চারকোণে কোনো নির্দিষ্ট দু‘আ পাঠ করেন নি। তবে রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছে এই আয়াতটি পাঠ করা তাঁর থেকে প্রমাণিত রয়েছে :
‘‘হে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে ইহকালে ও পরকালে কল্যাণ দান কর এবং আমাদিগকে জাহান্নামের আগুনের আযাব হতে রক্ষা কর।” এটা ছাড়া তাওয়াফের জন্য আর কোনো নির্দিষ্ট দু‘আ নির্ধারণ করেন নি। আর তিনি এর তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে রমল করেন- অর্থাৎ ছোট ছোট কদমে বা পদক্ষেপে দ্রুত চলেন এবং এই তাওয়াফে ‘ইদতিবা’ করেন- অর্থাৎ পরিহিত চাদরের মধ্যভাগকে ডান কাঁধের নীচ দিয়ে চাদরের উভয় কোণ বাম কাঁধের উপর ধারণ করেন এবং ডান বাহু ও ডান কাঁধ খোলা রাখেন। যখনই তিনি হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হতেন তখন ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তার প্রতি ইশারা করতেন কিংবা হাতের ছড়ি দিয়ে ষ্পর্শ করতেন এবং ছড়িকে চুমু দিতেন। (আরবী শব্দ ‘মেহজন’ মানে মাথা বাঁকা হাতের ছড়ি), আর রুকনে ইয়ামানীর নিকট পৌঁছে সেটাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করেন কিন্তু তাকে চুমু দেন নি, আর স্পর্শ করার পর হাতেও চুমু দেননি, অতঃপর তাওয়াফ শেষে মাক্বামে ইবরাহীমের পিছনে এসে এ আয়াতটি পাঠ করেন:
‘‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থান হিসেবে প্রহণ কর।” [সূরা বাক্বারাহ্, আয়াত ১২৫।]
এবং সেখানে দু’রাকাত সালাত আদায় করেন তখন মাক্বামে ইবরাহিমী তাঁর ও বায়তুল্লাহর মধ্যস্থলে ছিল, উক্ত দু’রাকাতে সূরা ফাতিহার পর ইখলাসের সুরাদ্বয় তথা ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন এবং কুল হুয়াল্লাহ আহাদ’ পাঠ করেন, সালাত শেষে হাজরে আসওয়াদের নিকটবর্তী হয়ে তাকে হাত দিয়ে স্পর্শ করেন, অতঃপর সাফা পাহাড়ের অভিমুখে যাত্রা করেন এবং সাফার নিকটবর্তী হলে এই আয়াতটি পাঠ করেন:
‘‘নিঃসন্দেহে ‘সাফা’ ও মারওয়া’ আল্লাহর নিদর্শনাবলীর অন্তর্গত, সুতরাং যে ব্যক্তি কা‘বা ঘরের ‘হজ্জ’ অথবা উমরাহ্ পালন করে, তার জন্যে এতদুভয়ের মাঝে ‘সাঈ’ করা দোষণীয় নয়, বরং কোনো ব্যক্তি স্বেচ্ছায় সৎকর্ম করলে, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ আমলের সঠিক মূল্যায়নকারী, মহাজ্ঞানী।” [সূরা বাক্বারাহ্ আ: ১৫৮।]
তিনি বলেন: আমি সেখান থেকেই (অর্থাৎ সাফা থেকেই) আরম্ভ করবো যেখান থেকে আল্লাহ আরম্ভ করেছেন, (অর্থাৎ আল্লাহ যার কথা কুরআনে আগে বলেছেন) অতঃপর সাফা পাহাড়ে আরোহণ করেন যেখান থেকে তিনি বায়তুল্লাহ্ দেখতে পান, তখন তিনি ক্বেবলামুখি হয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেন এবং তাকবীর বলে এ দু‘আ পাঠ করেন:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير . لا إله إلا الله وحده أنجز وعده ونصر عبده وهزم الأحزاب وحده» .
‘‘আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক ও একক, তাঁর কোনো শরীক নেই, সমগ্র রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই, তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া সত্যিকার কোনো মা‘বুদ নেই, তিনি তাঁর অঙ্গীকার পূরণ করেছেন, তিনি তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তিনি একাই শত্রু সৈন্যদলকে পরাজিত করেছেন।”
অতঃপর তিনি দু‘আ করেন এবং তিনি অনুরূপ তিনবার করার পর মারওয়া অভিমুখে অগ্রসর হন। অতঃপর দু’পাহাড়ের মধ্যবর্তী সমভুমিতে পৌছে দৌড়ে দ্রুত গতিতে উপত্যকা অতিক্রম করেন, আর তা হলো দুই সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থান, তিনি পায়ে হেটে সা‘য়ী শুরু করেন, কিন্তু তাঁর উপর লোকদের অধিক ভীড় হলে তিনি সাওয়ারীর উপর আরোহণ করে সা‘য়ী পূর্ণ করেন। আর তিনি মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে তার উপরাংশে আরোহণ করেন, তখন তিনি ক্বেবলামুখি হয়ে আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দেন এবং তাকবীর বলেন এবং অনুরূপ করেন যেরূপ তিনি করেছিলেন সাফা পাহাড়ের সাফা পাহাড়ের উপর, তারপর যখন সপ্তম চক্করে মারওয়ার নিকটে সায়ী সমাপ্ত করেন, তখন তিনি জরুরীভিত্তিতে নির্দেশ জারী করেন যে, যাদের সাথে হাদী-কুরবানীর পশু নেই তারা যেন ইহরাম থেকে পূর্ণরূপে হালাল হয়ে যায়, যদিও সে হজ্জে কিরান কিংবা ইফরাদের নিয়্যাত করে থাকে। আর যেহেতু তাঁর সঙ্গে হাদী ছিল, তাই তিনি ইহরাম থেকে হালাল হননি এবং বলেন : যদি আমি আগে জানতাম যা পরে জেনেছি, তবে আমি হাদীর পশু সঙ্গে নিয়ে আসতাম না, বরং হজ্জের ইহরামকে ওমরার দ্বারা পরিবর্তন করে দিতাম।” [বুখারী ও মুসলিম।] আর তিনি মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্যে তিনবার দু‘আ করেন এবং চুল খাটোকারীদের জন্যে একবার। তিনি মক্কায় অবস্থানকালে জিল-হাজ্জ মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত তাঁর বাসস্থানে সালাতসমূহ জামা‘আতের সাথে কসর করে আদায় করেন, তারপর তিনি ৮ তারিখের সকালে সাথীদেরকে নিয়ে মিনায় পৌঁছে যোহর ও আসরের সালাত নির্দিষ্ট ওয়াক্তে আদায় করেন এবং সেখানে রাত্রি যাপন করেন। ৯ তারিখের সূর্যোদয়ের পর আরাফা অভিমুখে যাত্রা করেন, তখন সাহাবীদের কেউ তালবিয়াহ্ পাঠ করছিল, আবার কেউ তাকবীর বলছিল, তিনি তা শুনছিলেন কিন্তু কারো উপর অসম্মতি প্রকাশ করেন নি। অতঃপর নামিরায় পৌঁছে তিনি একটি গোলাকৃতির তাঁবুতে প্রবেশ করেন- যা তাঁর নির্দেশে তাঁর জন্যে স্থাপন করা হয়েছিল, মূলত: নামিরাহ্ নামক স্থান আরাফার অন্তর্গত নয়, বরং সেটি আরাফার পশ্চিমপ্রান্তে একটি এলাকার নাম। সূর্য ঢলা পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করেন, তারপর স্বীয় ‘ক্বাসওয়া’ নামক উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করে ‘ওরানাহ্ উপত্যকায় গমন করেন এবং স্বীয় উষ্ট্রীর উপর বসে একটি মাহাত্ম্যাপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেন; যাতে ইসলামের মৌলিক বিষয়াবলীর স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং শির্ক ও জাহিলিয়্যাতের ভিত্তিসমূহ ধ্বসিয়ে দেন এবং যেসব বিষয়াবলী সকল ধর্ম ও মিল্লাতে হারাম সেগুলোর নিষিদ্ধতার উপর তাকীদ প্রদান করেন এবং জাহিলী যুগের কুসংস্কার ও সুদকে নিজের পায়ের নিচে রাখেন, সেই খুৎবায় জনগণকে মহিলাদের প্রতি সদাচারণের নির্দেশ দেন। কুরআন-সুন্নাহকে দৃঢ়তার সাথে অবলম্বন করে চলার অসিয়াত করেন, তারপর তিনি সাহাবীদের থেকে স্বীকারোক্তি গ্রহণ করেন যে, তিনি আল্লাহর পয়গাম তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন এবং আমানত সম্পূর্ণরূপে আদায় করেছেন এবং উম্মতকে নসীহত করেছেন, অতঃপর উক্ত স্বীকারোক্তির উপর আল্লাহকে সাক্ষী রাখেন। তারপর খোৎবা শেষে বেলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আযানের নির্দেশ দিলে তিনি আযান ও ইকামত দেন। তখন তিনি যোহরের সালাত কসর করে দু’রাকাত আদায় করেন এবং তাতে নিন্মস্বরে কেরাত পড়েন অথচ সেই দিন শুক্রবার ছিল। তারপর ইকামত দিয়ে আসরের সালাত দু’রাকাত আদায় করেন। অথচ তখন তাঁর সঙ্গে মক্কার অধিবাসীগণও ছিল, কিন্তু তিনি তাদেরকে যোহর-আসরের সালাত চার রাকাত পূর্ণ করার নির্দেশ দেন নি, আর না তাদেরকে ‘জম‘য়ে-তাকদীম’ না করার হুকুম দেন। অতঃপর সালাত শেষে তিনি সাওয়ারীতে আরোহণ করে আরাফাতের সীমার মধ্যে অবস্থান করার উদ্দেশ্য গমণ করেন। আরাফার দিন তাঁর রোযা রাখার ব্যাপারে লোকদের মাঝে সন্দেহ দেখা দিলে উম্মুল মু’মিনীন মায়মুনাহ্ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁর নিকট একটি পাত্রে সদ্য দোহন করা দুধ পাঠিয়ে দেন, তখন তিনি আরাফায় অবস্থানরত ছিলেন, তিনি তা পান করেন এবং লোকগণ তা দেখছিল। তিনি ‘জাবালে রহমত’ নামক পাহাড়ের নিচে পাথরসমূহের নিকট ‘জাবালে মুশাত’-কে সম্মুখে রেখে ক্বিবলামুখী হয়ে অবস্থান করেন। তিনি স্বীয় উষ্ট্রীর উপর সাওয়ার ছিলেন এবং তিনি সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর নিকট দু‘আ-প্রার্থনা করতে থাকেন, তিনি লোকদেরকে ‘ওরানাহ্’ নামক উপত্যকায় অবস্থান না করার নির্দেশ দেন এবং বলেন: “আমি এখানে অবস্থান করছি, তবে ‘আরাফার প্রান্তর সবই অবস্থানস্থাল।” [মুসলিম।] তখন তিনি দু‘আ করার সময় ভিখারীর ন্যায় সীনা মুবারক পর্যন্ত হাত উত্তোলন করেন এবং বলেন, শ্রেষ্টতম দু‘আ হলো আরাফার দিনের দু‘আ, আর আমি এবং আমার পুর্ববর্তী নবীগণ কর্তৃক উচ্চারিত শ্রেষ্ঠতম বাণী হলো:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير» .
আর যখন আরাফার দিনে সূর্যাস্ত হয়ে যায় এবং সূর্যাস্তের ব্যাপারটি নিশ্চিত হয় এভাবে যে, সূর্যের সোনালী রং শেষ হয়ে যায়, তখন তিনি ওসামা ইবন যায়েদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে সাওয়ারির পিছনে আরোহণ করিয়ে ধীরস্থিরতার সাথে মুযাদালিফার দিকে যাত্রা করেন এবং তিনি উষ্ট্রীর লাগাম নিজের দিকে টেনে রাখেন এমনভাবে যে, তার মাথা সওয়ারীর কিনারায় যেন যোগ করছিলেন এবং তিনি বলছিলেন: ‘‘হে লোক সকল! তোমরা প্রশান্তি ও ধীরস্থিরতার সাথে চলো, কেননা সৎকর্ম তাড়াহুড়া করার মধ্যে নয়।” [বুখারী।] আর তিনি ‘আল-মা’যেমাইন’ নামক রাস্তা দিয়ে প্রত্যাবর্তন করেন এবং তিনি ‘দ্বব্ব’ নামক রাস্তা দিয়েই আরাফায় প্রবেশ করেছিলেন, আর প্রত্যাবর্তন কালে তাঁর চলার গতি ছিল মধ্যম, কিন্তু যখন কোনো বিস্তীর্ণ প্রান্তরে কিংবা ফাঁকা পথে উপনীত হতেন, তখন দ্রুত গতিতে চলতেন এবং তিনি পথ অতিক্রম কালে লাগাতার তালবিয়া পাঠ করছিলেন। তিনি পথিমধ্যে অবতরণ করে পেশাব করেন, তারপর হাল্কা অযু করে পথ চলেন এবং মাগরিবের সালাত পড়েননি যতক্ষণ না তিনি মুযদালিফায় পৌঁছেন। অতঃপর মুযদালিফায় পৌঁছে সালাতের জন্য অযু করেন এবং বিলাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে আযান ও ইকামতের নির্দেশ দেন। অতঃপর উষ্ট্রীর পিঠ থেকে মাল-সামান রাখার এবং উটের পাল বাঁধার পূর্বেই মাগরিবের সালাত তিন রাকাত আদায় করেন, অতঃপর লোকসকল নিজ নিজ জায়গায় নিজেদের উট বসিয়ে দিলে আযান ছাড়া শুধু ইকামত দিয়েই ‘এশার সালাত কসর করে আদায় করেন এবং মাগরিব ও ‘এশার মাঝে তিনি আর কোনো সালাত পড়েননি। তারপর তিনি ঘুমিয়ে পড়েন ফজর পর্যন্ত এবং সেই রাত জাগ্রত থাকেননি, তবে অর্ধরাত্রি যাপন করার পর পরিবারের দুর্বল লোকদেরকে মিনার দিকে যাত্রা করার অনুমতি প্রদান করেন এবং তাদেরকে নির্দেশ দেন তারা যেন জমরাতে কংকর নিক্ষেপ না করে যতক্ষণ না সূর্য উদিত হয়। অতঃপর ফজরের সময় হলে আযান ও ইকামত দিয়ে প্রথম ওয়াক্তেই ফজরের সালাত আদায় করেন। তারপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে মাশ‘আরে হারামের নিকট গমন করেন এবং লোকদের লক্ষ্য করে বলেন: ‘‘পুরো মুযদালিফাই অবস্থানস্থল।” [মুসলিম।] তখন তিনি ক্বিবলামুখী হয়ে অধিক হারে আল্লাহর যিকির, তাকবীর, তাহলীল, দু‘আ-প্রার্থনা করতে থাকেন যে পর্যন্ত না প্রভাতের আলো অনেকটা ফর্সা হয়ে উঠে। অতঃপর সূর্যোদয়ের আগেই ফাদল ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা-কে সাওয়ারীর পিছনে বসিয়ে মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে যাত্রা করেন।
পথিমধ্যে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে নির্দেশ দেন যে, যেন তিনি জামরাতে নিক্ষেপ করার জন্য সাতটি কংকর বেছে নেন। অতঃপর তিনি সেগুলোকে তাঁর হাতে রেখে তাতে ফুৎকার করতে করতে বলেন: ‘‘তোমরা জামরাতে অনুরূপ ছোট ছোট কংকর নিক্ষেপ করো এবং ধর্মে অতিরঞ্জন করা হতে সতর্ক থেকো।” [নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ্।] আর তিনি ‘মুহাস্সার’ নামক উপত্রকায় পৌঁছলে দ্রুত গতিতে তা অতিক্রম করেন। আর তিনি মধ্যম পথ দিয়ে চলেন যেটি সোজা জামরাতুল কোবরায় নিয়ে যায়। তিনি কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়াহ্ পাঠ করছিলেন। তিনি সূর্যোদয়ের পর উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় উপত্যকার নিচ থেকে জামরাতুল ‘আকাবা বা বড় জামরাতে পর পর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন। তখন তিনি কা‘বা শরীফকে বাম দিকে এবং মিনাকে ডান দিকে রাখেন এবং প্রত্যেকটি কংকর নিক্ষেপের সময় ‘আল্লাহু-আকবার’-তাকবীর বলেন। অতঃপর মিনায় প্রত্যাবর্তন করে একটি মাহাত্ম্যপূর্ণ্য ভাষণ প্রদান করেন, যাতে কুরবানীর দিনের ফযীলত এবং মক্কার মান-মর্যাদা সম্পর্কে লোকদের অবহিত করেন এবং শাসকবর্গের যারা কুরআন-সুন্নাহ্ দ্বারা নেতৃত্ব দেয় তাদের কথা শোনা ও মান্য করার নির্দেশ দেন। তাদেরকে হজ্জের বিধি-বিধান শিক্ষা দেন, তারপর মিনায় পশু যবেহ করার স্থানে গমন করে নিজ হতে ৬৩ টি মোটা-তাজা উট কুরবানী করেন, উট যবেহ করার সময় সেগুলি দাঁড়ানো এবং বাম-পা বাঁধা অবস্থায় ছিল, অতঃপর এক শত উটের অবশিষ্টগুলিকে যবেহ্ করার জন্য ‘আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে নির্দেশ দেন। কুরবানীর পশুর গোশ্ত অভাবগ্রস্ত -দরিদ্র লোকদের মাঝে বন্টন করে দিতে বলেন। কিন্ত কসাইকে তার মজদুরী হিসেবে কুরবানীর গোশ্ত দিতে নিষেধ করেন। তিনি তাদের আরও জানান যে, পুরো মিনাই যবাই-নাহর করার স্থল এবং মক্কার গিরিপথসমূহ রাস্তাও যবাই-নাহর করার স্থল।
অতঃপর কুরবানীর পশু যবেহ্ করা শেষে নাপিতকে ডেকে পাঠান, নাপিত প্রথমে তাঁর মাথার ডান অর্ধাংশ মুণ্ডন করলে তিনি তা আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে প্রদান করেন, অতঃপর বাম অর্ধাংশ মুণ্ডন করলে তিনি চুলগুলো আবু ত্বালহা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে দিয়ে বলেন: ‘‘এগুলি জনগণের মাঝে বন্টন করে দাও।” [বুখারী ও মুসলিম।] তিনি মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্যে তিনবার দু‘আ করেন এবং চুল খাটোকারীদের জন্যে একবার। আর উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা তাঁকে খুশবু মাখিয়ে দেন। অতঃপর যোহরের আগে সাওয়ারীতে আরোহণ করে মক্কা প্রত্যাবর্তন করেন এবং তাওয়াফে ইফাদাহ্ বা ফরয তাওয়াফ আদায় করেন। সেদিন অন্য কোনো তাওয়াফ করেননি এবং তাওয়াফের সথে সা‘য়ীও করেননি [কেননা ক্বারেন হাজীর জন্য তাওয়াফে ওমরাহ ও তাওয়াফে ইফাযাহ্ এবং একটি সায়ী যথেষ্ট, আর বিদায়ী তাওয়াফ তো ঋতুবর্তী মহিলা ছাড়া বহিরাগত সকল হাজীদের উপরই ওয়াজিব।’’-অনুবাদক], তিনি ফরয তাওয়াফ কিংবা বিদায় তাওয়াফে ‘রমল’ করেননি, বরং শুধুমাত্র তাওয়াফে কুদুম বা আগমনী তাওয়াফে ‘রমল’ করেন।
অতঃপর তাওয়াফ শেষে যমযমের নিকট আসেন তখন লোকেরা পানি পান করছিল, লোকেরা তাঁকে পানির পাত্র উঠিয়ে দিলে তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় যমযমের পানি পান করেন। অতঃপর মিনায় ফিরে আসেন এবং মিনাতেই রাত্রি যাপন করেন। সেদিন যোহরের সালাত কোথায় আদায় করেন, এ মর্মে মতানৈক্য রয়েছে, ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এর বর্ণনায় তিনি সেদিন যোহরের সালাত মিনাতে পড়েন, আর জাবের ও উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: তিনি সেদিন যোহরের সালাত মক্কাতেই পড়েন।
অতঃপর ১১ তারিখের সকালে সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে যাওয়ার অপেক্ষা করেন, অতঃপর সূর্য ঢলার পর তিনি তাবু থেকে জামারাত অভিমুখে পায়ে হেঁটে যাত্রা যাত্রা করেন এবং সেদিন সাওয়ারিতে আরোহণ করেন নি, সেথায় পৌঁছে প্রথমে মসজিদে খাইফের সন্নিকটে অবস্থিত প্রথম জামরাতে কংকর মারা শুরু করেন এবং তাতে একের পর এক সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন এবং প্রত্যেক কংকরের সাথে ‘‘আল্লাহু আকবার”-তাকবীর বলেন।
তারপর জামরাহ থেকে কিছুটা অগ্রসর হয়ে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত উত্তোলন করে সূরা বাক্বারার সমপরিমাণ দীর্ঘক্ষণ দু‘আ-প্রার্থনা করেন।
তারপর মধ্যম জমরায় পৌছে সেখানেও প্রথমবারের ন্যায় কংকর নিক্ষেপ করেন, তারপর কিছুটা সম্মুখে উপত্যকার দিকে সরে গিয়ে জামরাকে ডান দিকে রেখে ক্বিবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে প্রায় প্রথমবারের ন্যায় দীর্ঘক্ষণ দু‘আ-প্রার্থনা করেন। তারপর তৃতীয় জমরাতুল আক্বাবার প্রতি অগ্রসর হন এবং সেখানে পৌছে বাম দিকে উপত্যকা সংলগ্ন স্থানে গমন করেন এবং জামরাকে সামনে রেখে এবং কাবা শরীফকে বাম দিকে এবং মিনাকে ডান দিকে রেখে অনুরূপ সাতটি কংকর নিক্ষেপ করেন।
আর কংকর নিক্ষেপ সম্পন্ন করে ফিরে আসেন এবং সেথায় দাঁড়াননি।
অধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো যে, তিনি যোহরের সালাতের পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করেছিলেন। অতঃপর ফিরে এসে সালাত আদায় করেন। তবে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু-কে হাজীদের পানি সরবরাহ করার দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে মিনার দিনগুলোতে মক্কায় রাত কাটানোর অনুমতি দেন। তিনি তাড়াতাড়ি করে ১২ তারিখে মিনা ত্যাগ করেন নি, বরং বিলম্ব করে ‘আইয়্যামে তাশরীক্বের তিন দিনই জামরাহ্গুলোতে কংকর নিক্ষেপ করেন। অতঃপর মুহাস্সাব নামক স্থানে এসে অবস্থান করেন। সেখানে যোহর, আসর, মাগরিব ও এশার সালাত প্রত্যেকটিকে তার সময়মত আদায় করেন এবং অল্প কিছু সময় নিদ্রা যান। অতঃপর সাওয়ারীতে আরোহণ করে মক্কা পৌছে রাত সেহেরীর সময় বায়তুল্লাহর বিদায়ী তাওয়াফ করেন এবং এ তাওয়াফে ‘রমল’ করেননি, তখন উম্মুল মু’মিনীন সাফিয়্যাহ ঋতুবর্তী হয়ে পড়লে তার জন্য বিদায়ী তাওয়াফের হুকুম শিথিল করেন, তাই তিনি বিদায় তাওয়াফ করেন নি।
সে রাতেই আয়েশাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার মনস্তুষ্টির জন্য তাঁর ভাই আব্দুর রহমানকে সাথে নিয়ে ‘তান‘ঈম’ থেকে ইহরাম বেঁধে একটি ওমরাহ্ আদায় করার ব্যবস্থা করে দেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা ওরমাহ্ শেষে রাতে ফিরে এলে তিনি সাহাবীদেরকে সফরের নির্দেশ দেন, তখন সবাই মদীনা অভিমুখে যাত্রা করেন।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/418/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।