hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলা‌ইহি ওয়াসাল্লামের জীবনাদর্শ (ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম রহ. এর যাদুল মা‘আদ হতে সংক্ষেপিত)

লেখকঃ ড. আহমাদ ইবন উসমান আল-মাযইয়াদ

১৯
(১৭) আল্লাহর যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ : ২/৩৩২।]
আল্লাহ্ জাল্লা-শানুহুর যিকর প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা ছিল সর্বাধিক পূর্ণাঙ্গ, বরং তাঁর প্রতিটি কথা-বার্তা ছিল আল্লাহর যিকর ও তাঁর পছন্দনীয় বিষয়ে। উম্মতের প্রতি তাঁর সকল আদেশ-নিষেধ ও বিধি-বিধান প্রণয়ন করা ছিল তাঁর পক্ষ থেকে আল্লাহর যিকরের অন্তর্ভুক্ত। তাঁর চুপ থাকা ছিল অন্তরে আল্লাহর যিকর, সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্বাস-প্রশ্বাসে, উঠা-বসা ও শায়িত, চলা-ফেরা, সফর-ইকামা সকল অবস্থায়ই আল্লাহুর যিকর জারী ছিল।”

(ক) সকাল-সন্ধায় আল্লাহর যিক্‌র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ : ২/৩৩২।]:

১. তিনি সকালে বলতেন:

«أصبحنا على فطرة الإسلام , وكلمة الإخلاص , ودين نبينا محمد وملة أبينا إبراهيم حنيفًا مسلمًا وما كان مِنَ المشركين»

‘আস্ববাহনা ‘আলা-ফিৎরাতিল ইসলাম, ওয়া-‘আলা কালিমাতিল ইখলাস্ব, ওয়া-আলা দ্বীনে নবীয়্যিনা মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ওয়া-‘আলা মিল্লাতে আবীনা ইবরাহীমা হানীফাম মুসলিমান, ওয়ামা-কানা মিনাল মুশরিকিন।”

“আল্লাহর অনুগ্রহ আমরা প্রত্যুষে উপনীত হয়েছি ইসলামের ফিৎরাতের উপর ও ইখলাসের বাণীর উপর এবং আমাদের নবী মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীনের উপর, আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর মিল্লাতের উপর, তিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না।” [মুসনাদে আহমাদ।]

তিনি আরও বলতেন,

«اللهم بك أصبحنا وبك أمسينا وبك نحيا ونموت وإليك النشور»

“আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা, ওয়াবিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহইয়া ওবিকা নামূতু, ওয়াইলাইকান নুশূর”। [আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবন মাজাহ।]

“হে আল্লাহ, আমরা তোমার সাহায্যে সকালে উপনীত হয়েছি, তোমার সাহায্যে বিকালে উপনীত হয়েছি, তোমার সাহায্যে জীবিত থাকি ও মরি, আর তোমার কাছেই প্রত্যাবর্তন।”

যখন তোমাদের কেউ প্রত্যুষে উপনীত হবে, তখন সে বলবে:

«أَصْبَحْنَا وأَصْبَحَ المُلْكُ للهِ رَبِّ العَالَمِينَ , اللَّهُمَّ إنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هذا الْيَومِ فَتْحَهُ وَنَصْرَهُ ونُورَهُ وَبَرَكَتَه وهِدَايَتَهُ , وَأعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ ما فيهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ , ثُمَّ إِذَا أَمْسَى , فَلْيَقُلْ مِثْلَ ذلِكَ»

‘আস্ববাহনা ওয়া-আস্ববাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরা হাযাল-ইয়াউমি, ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু, ওয়া নূরাহু ওয়া বারাকাতাহু ওয়া হুদাহু, ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি মা-ফীহি, ওয়া-শাররি মা বা‘দাহু।’

“আল্লাহু রাব্বুল আলামীনের অনুগ্রহে আমরা এবং সকল সৃষ্টিজগত প্রভাতে উপনীত হয়েছি। হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট কামনা করি এই দিনের কল্যাণ, বিজয়, সাহায্য, নূর ও বরকত এবং হেদায়াত, আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এই দিনের এবং এই দিনের পরের অকল্যাণ হতে। অতঃপর যখন সন্ধা হবে অনুরূপ বলবে।” [আবু দাউদ।]

২. তিনি আরও বলেন: সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার হলো, বান্দা বলবে:

« اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي , لَا إلهَ إلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ , وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ ما اسْتَطَعْتُ , أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ , أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ , وَأَبُوءُ بِذَنْبِي؛ فَاغْفِرْ لي؛ إِنَّهُ لا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ»

‘আল্লা-হুম্মা আন্তা রাব্বী, লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা, খালাক্বতানী ওয়া-আনা আব্দুকা, ওয়া-আনা ‘আলা-‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাস্তাতা‘তু, আউযুবিকা মিন্-শাররি মা সানা‘তু, আবূয়ু লাকা বি-নি‘মাতিকা ‘আলাইয়্যা, ওয়া-আবূয়ু লাকা বিযাম্বী, ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আন্তা।”

“হে আল্লাহ ! তুমিই আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া সত্য কোনো মা‘বুদ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো, আমি তোমার বান্দা, আমি যথাসাধ্য তোমার সাথে কৃত অঙ্গীকারের উপর দৃঢ় থাকবো, আমার কৃতকর্মের কু-ফল ও মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাই, তুমি আমাকে যেসব নে‘আমত দান করেছো আমি তা স্বীকার করছি এবং স্বীকার করছি আমার গুনাহের কথা, অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন; যে কেউ উক্ত দু‘আটি দিনের বেলায় দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বলে এবং সন্ধা হওয়ার আগেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে ব্যক্তি তা রাত্রিবেলায় আন্তরিকতার সাথে বলে এবং সকাল হওয়ার আগেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” [বুখারী।]

৩. তিনি আরও বলেছেন: যে ব্যক্তি দৈনিক এ দু‘আটিকে শতবার পাঠ করবে:

«لَا إلهَ إلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ , لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شيءٍ قَدِيرٌ»

“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু, লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হাম্দু, ওয়াহুয়াআলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্বাদীর।”

“আল্লাহ্ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো ইলাহ বা সত্য মা‘বুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই, রাজত্ব তাঁরই জন্যে এবং সকল প্রশংসা তাঁরই জন্যে, তিনি সকল বিষয়ের উপর সর্বশক্তিমান”, তাহলে সে দশজন দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ পুণ্য লাভ করবে, তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে ও একশত গুনাহ মাফ করা হবে, সে উক্ত দিবসে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের (প্ররোচনা ও বিভ্রান্তি) হতে সুরক্ষিত থাকবে, আর কিয়ামতের দিন তার থেকে উত্তম আমল নিয়ে কেউ আসবে না, কিন্তু ঐ ব্যক্তি যে তার চেয়েও অধিক পরিমাণে আমল করেছে।’ [বুখারী, মুসলিম।]’

৪. তিনি সকাল-সন্ধ্যায় এ দু‘আ করতেন:

«اللَّهُمَّ إِنِّي أسألُكَ العَافِيَةَ في الدُّنْيَا والآخِرَةِ , اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْألُكَ العَفْوَ والعافيةَ في ديني ودُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي , اللَّهُمَّ اسْتُر عَوْرَاتِي , وآمِنْ رَوْعَاتِي , اللّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ ومِنْ خَلْفِي وَعَنْ يَمِيني وَعَنْ شِمَالي , وَمِنْ فَوقِي , وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي»

“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল ‘আফিয়াতা ফিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাতে, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল ‘আফিয়াতা ফী দীনী ওয়া দুনইয়া-য়া ওয়া আহলি ওয়া মা-লি, আল্লাহুম্মাসতুর ‘আওরাতী, ওয়া আমিন রাও‘আতী। আল্লাহুম্মাহফাযনী মিন বাইনে ইয়াদাইয়্যা ওয়ামিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়ান শিমালী, ওয়ামিন ফাওক্বী, ওয়া আ‘উযু বি ‘আযমাতিকা আন-উগতালা মিন তাহতী”।

“হে আল্লাহ ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি, হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি এবং আমার দ্বীন ও দুনিয়ার, আমার পরিবার-পরিজনের এবং আমার ধন-সম্পদের নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ ! তুমি আমার দোষ-ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখো এবং আমার চিন্তা ও উদ্বিগ্নতাকে শান্তি ও নিরাপত্তায় রুপান্তরিত করে দাও, হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নিরাপদে রাখো আমার সম্মুখের বিপদ হতে এবং পশ্চাদের বিপদ হতে, আমার ডানের বিপদ হতে এবং আমার বামের বিপদ হতে, আর উর্ধ্বদেশের গযব হতে, তোমার মহত্বের দোহাই দিয়ে তোমার নিকট আশ্রয় কামনা করছি, আমার নিম্নদেশ হতে আগত বিপদ হতে, তথা মাটি ধ্বসে আকষ্মিক মৃত্যু হতে।” [আবু দাউদ, ইবন মাজাহ।]

৫. তিনি আরো বলেছেন: যে কেউ এ দু‘আটি দৈনিক সকাল-সন্ধ্যায় তিন তিন বার করে পাঠ করে:

«بِسْمِ اللهِ الَّذِي لا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شيءٌ في الأرض وَلَا في السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ العَلِيمُ»

‘বিসমিল্লাহিল-লাযী, লা-ইয়াদুররু, মা‘আ ইসমিহী সাইয়্যুন, ফিল আরদি ওয়ালা ফিস্-সামায়ি, ওয়া হুয়াস্-সামী‘উল আলীম।’

“আমি সেই আল্লাহুর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোনো বস্তুই কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। বস্তুত: তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞাতা”, তাহলে কোনো বস্তুই তার কোনোরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারবে না।” [আবু দাউদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ।]

৬. আবু বকর সিদ্দীক্ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁকে বলেন: আপনি আমাকে শিক্ষা দিন, সকাল-সন্ধ্যায় আমি কোনো দু‘আটি পাঠ করবো, তখন জবাবে তিনি বলেন তুমি বলবে:

«اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاواتِ والأرضِ , عَالِمَ الغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ , رَبَّ كُلِّ شيءٍ وَمَلِيكَهُ ومَالِكه , أَشْهَدُ أَنْ لا إلهَ إلَّا أنْتَ , أعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نفسِي , وَمِنْ شَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِه , وَأَنْ أقْتَرِفَ عَلَى نَفْسِي سُوءًا أَوْ أَجُرَّهُ إِلَى مُسْلِمٍ»

“আল্লা-হুম্মা ফা-তিরিস- সামাওয়াতি ওয়াল আরযি, আ-লিমাল গাইবি ওয়াশ-শাহাদাতি, লা-ইলাহা ইল্লা-আন্তা, রাব্বা কুল্লি-শাইয়্যিন ওয়া মালীকাহ্, আউযুবিকা মিন্-শাররি নাফ্সী, ওয়া-মিন শাররিশ-শায়তানে ওয়া শিরকিহ্, ওয়া আন-আক্বতারিফা ‘আলা-নাফসী সূআন, আউ আজুররুহু ইলা-মুসলিম।

“হে আল্লাহ! তুমি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, তুমি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই জান, তুমি সকল বস্তুর প্রভু-প্রতিপালক এবং সকল কিছুর মালিক, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো মা‘বুদ নেই, আমি আমার প্রবৃত্তির অনিষ্ট হতে এবং শয়তান ও তার শির্কের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আর আমি নিজের অনিষ্ট করা হতে এবং কোনো মুসলিমের অনিষ্ট করা হতে তোমার আশ্রয় চাচ্ছি।” তিনি আরো বলেন: হে আবু বকর! তুমি সকাল-সন্ধ্যায় এবং তোমার শয়নকালে তা পাঠ করবে। [আবু দাউদ ও তিরমিযী।]

(খ) ঘর থেকে বের হওয়া ও ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর যিক্‌র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা: [যাদুল মা‘আদ : ২/৩৩৫।]

১. তিনি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বলতেন:

«بِسْمِ اللهِ , توكلتُ على اللهِ , اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ أوْ أُضَلَّ أَوْ أزلَّ أَوْ أُزَلَّ , أَوْ أَظْلِمَ أَوْ أُظْلَمَ أو أَجهلَ أَوْ يُجْهَلَ عَليَّ»

‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযুবিকা আন আদিল্লা আউ উদাল্লা, আযিল্লা আউ উযাল্লা, আযলিমা আউ উযলামা, আজহালা আউ উজহালা ‘আলাইয়া।

“আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম, অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারো ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া; হে আল্লাহ্ ! আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করছি অন্যকে পথভ্রষ্ট করতে অথবা অন্যের দ্বারা আমি পথভ্রষ্ট হতে, আমি অন্যকে পদঙ্খলন করতে অথবা অন্যের দ্বারা পদঙ্খলিত হতে, আমি অন্যকে অবজ্ঞা করতে অথবা নিজে অপরের দ্বারা অবজ্ঞা হওয়া থেকে।” [তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্।]

২. তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বললো:-

«بِسْمِ اللهِ , تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ ولا حَوْلَ ولَا قُوَّةَ إِلَّا باللهِ»

‘‘বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলা-ল্লাহু, ওয়ালা হাওলা, ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা-বিল্লাহ্”।

“আল্লাহর নাম নিয়ে তাঁরই উপর ভরসা করে বের হলাম, অসৎ কাজ থেকে বেঁচে থাকার এবং সৎকাজ করার কারো ক্ষমতা নেই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া।” তখন তাকে সম্বোধন করে বলা হয় যে, আল্লাহ্ তোমার জন্য যথেষ্ট, তুমি সুরক্ষিত হয়েছ এবং তুমি সঠিক পথ প্রাপ্ত হয়েছ, আর শয়তান তোমার থেকে বহু দূরে সরে গেছে।” [আবু দাউদ, তিরমিযী।]

৩. তিনি প্রত্যুষে ফজরের সালাতের জন্য মসজিদে গমনকালে বলতেন:

«اللَّهُمَّ اجْعَل في قلبِي نورًا , واجْعَل في لسَانِي نورًا , واجْعَل في سَمْعِي نورًا , واجْعَل في بَصَرِي نورًا , واجْعَل مِنْ خَلْفِي نُورًا , وَمِنْ أَمَامِي نُورًا , واجْعَل مِنْ فَوْقِي نُورًا , واجْعَل مِنْ تَحْتِي نُورًا , اللَّهُمَّ أَعْظِمَ لي نُورًا»

“আল্লা-হুম্মাজ-আল-ফী-ক্বালবী নূরান, ওয়া ফী- বাসারী নূরান, ওয়া ফী-সাম‘য়ী নূরান, ওয়া আন-য়ামীনী নূরান, ওয়া আন্-য়্যাসারী নূরান, ওয়া ফাওক্বী নূরান, ওয়া তাহ্তী নূরান, ওয়া আমা-মী নূরান, ওয়া খাল্ফী নূরান, আল্লা-হুম্মা আ‘য়যিম লী নূরান।”

হে আল্লাহ ! তুমি আমার অন্তরে এবং জবানে ‘নূর’ জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, আমার শ্রবণ শক্তিতে এবং আমার দর্শণ শক্তিতে জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, আমার উপরে, আমার নিচে, আমার ডানে, আমার বামে, আমার সামনে, আমার পিছনে জ্যোতি সৃষ্টি করে দাও, হে আল্লাহ! তুমি জ্যোতিকে আমার জন্য অনেক বড় করে দাও।” [বুখারী, মুসলিম।]

৪. তিনি আরো বলেন: যখন কোনো ব্যক্তি স্বগৃহে প্রবেশ করে তখন সে বলবে:

«اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ , بِسْمِ اللهِ وَلَجْنَا , وَعَلَى اللهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا»

‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা খাইরাল মাওলিজি ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়ালাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া ‘আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কাল-না।

“হে আল্লাহ্! আমি তোমার নিকট উত্তম প্রত্যাগমন ও উত্তম বহির্গমন প্রার্থনা করছি, আল্লাহর নামে আমরা প্রবেশ করি, আল্লাহর নামেই বের হই এবং আমাদের প্রভু আল্লাহর উপরই আমরা ভরসা করি।” অতঃপর নিজ পরিবারবর্গের উপর সালাম করবে। [আবু দাউদ।]

(গ) মসজিদে প্রবেশ ও মসজিদ হতে বের হওয়ার সময় আল্লাহুর যিক্‌র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ: ২/৩৩৬।]:

১. তিনি মসজিদে প্রবেশকালে বলতেন:

«أَعُوذُ باللهِ العظيم , وبوجهه الكريم , وسلطانِه القديم مِنَ الشيطانِ الرجيمِ»

‘আউযু বিল্লাহিল আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়া বিসুলতানিহিল কাদীম, মিনাশ শায়তানির রাজীম

“আমি বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি তাঁর করুণাময় সত্বা ও সার্বভৌম শক্তির নামে।” [আবু দাউদ।]

২. তিনি বলেন: যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, নবীজীর উপর সালাত-সালাম পাঠ করে বলবে:

«اللَّهُمَّ افْتَح لي أبوابَ رحمتِكَ»

‘আল্লা-হুম্মাফতাহ্-লী আবওয়াবা রাহমাতিকা”

হে আল্লাহ ! তুমি আমার জন্য তোমার রহমতের দ্বার খুলে দাও;-

আর যখন মসজিদ হতে বের হবে তখন বলবে:

«اللَّهُمَّ إِنِّي أسألُك مِنْ فَضْلِكَ»

‘আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিন ফাদলিকা।

হে আল্লাহ ! আমি তোমার অনুগ্রহ কামনা করছি।” [আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ।]

(ঘ) নতুন চাঁদ দেখাকালে আল্লাহর যিক্‌র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা: [যাদুল মা‘আদ, ২/৩৬১।]

মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চাঁদ দেখে বলতেন:

«اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأَمْنِ وَالإيمانِ , وَالسَّلَامَةِ والإسْلَامِ , رَبِّي وَربُّكَ اللهُ»

‘আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু ‘আলাইনা বিল-আমনি ওয়াল ঈমান, ওয়াস-সালা-মাতি ওয়াল ইসলাম, রাব্বী ওয়া রাব্বুকা-ল্লাহ্।

হে আল্লাহ ! এই নতুন চাঁদকে আমাদের নিরাপত্তা ও ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে উদিত কর, আল্লাহ্ আমাদের এবং তোমার (চাঁদের) প্রভু-প্রতিপালক।” [তিরমিযী।]

(ঙ) হাঁচি ও হাই তোলাকালে আল্লাহর যিক্‌র প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা: [যাদুল মা‘আদ, ২/৩৭১-৩৯৭।]

১. সহীহ্ সনদে রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত যে, তিনি বলেন: আল্লাহ্ হাঁচি পছন্দ করেন এবং হাই তোলা অপছন্দ করেন, অতএব যখন তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে

«الحمد لله»

‘আল-হামদুলিল্লাহ্’ বলে, তখন যে মুসলিমই তা শুনে তার উপর

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলা কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়।

আর হাই উঠার ব্যাপারটি হয়ে থাকে শয়তানের পক্ষ হতে, কাজেই তোমাদের কারো হাই উঠার উপক্রম হলে সে যেন তা সাধ্যমত চেপে রাখার চেষ্টা করে, কারণ কেউ হাই তুললে তাতে শয়তান হাসে।” [বুখারী।]

২. তিনি যখন হাঁচি দিতেন তখন মুখের উপর নিজের হাত বা কাপড় রাখতেন এবং হাঁচির আওয়াজ নিচু বা নিম্নগামী করতেন।” [আবু দাউদ, তিরমিযী।]

৩. তিনি যখন হাঁচি দিতেন তখন কেউ

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বললে তিনি জবাবে বলতেন:

«يَرْحَمُنا اللهُ وإياكم , ويَغْفِرُ لَنَا وَلَكُمْ»

‘‘ইয়ারহামুনা-ল্লাহু ওয়া ইয়্যাকুম, ওয়া ইয়াগফিরু লানা ওয়া লাকুম”

৪. তিনি আরো বলেন : তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে বলবে:

«الحمدُ للهِ»

‘আল-হামদুলিল্লাহ্’-সকল প্রশংসা আল্লাহুর জন্য, তখন তার ভাই অথবা সাথী বলবে:

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ আল্লাহ্ তোমার উপর রহমত বর্ষণ করুণ, তার জন্য সাথী- ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বললে সে যেন জবাবে বলে:

«يهديكم الله ويصلح بالكم»

আল্লাহ্ তোমাদের সৎপথে প্রদর্শণ করুন এবং তোমাদের অবস্থা ভাল করুন।” [বুখারী।]

৫. তিনি আরো বলেন: তোমাদের কেউ হাঁচি দিয়ে

«الحمدُ للهِ»

‘আল-হাম্দুলিল্লাহ্’ বললে, তার জবাবে তোমরা

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলবে, আর যদি সে হাঁচি দিলে

«الحمدُ للهِ»

‘আল- হাম্দুলিল্লাহ্’ না বলে, তাহলে তোমরাও

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’- বলবে না।” [মুসলিম।]

আর যদি কেউ তিনবারের অধিক হাঁচি দিতো, তাহলে তিনি চতুর্থ বারে ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ্’ বলতেন না, বরং বলতেন: এই ব্যক্তি সর্দ্দি রোগে আক্রান্ত। [মুসলিম।]

৬. সহীহ্ সনদে প্রমাণিত যে, ইয়াহূদীগণ তাঁর উপস্থিতিতে হাঁচি দিতে চেষ্টা করতো এবং আশা করতো যে, তিনি জবাবে তাদেরকে

«يَرْحَمُكَ اللهُ»

‘ইয়ারহামুকুমুল্লাহ্’ আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন- বলবেন, কিন্তু তিনি জবাবে বলতেন:

«يَهْدِيكُمُ اللهُ وَيُصْلحُ بالَكُم»

“ইয়াহদীকুমুল্লাহ ওয়া ইউসলিহু বালাকুম”।

“আল্লাহ্ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শণ করুন এবং তোমাদের অবস্থা ভাল করুন।” [তিরমিযী।]

(চ) কোনো বিপদগ্রস্ত লোক দেখে পঠিত দু‘আ প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ, ২/৪১৭]:

তিনি ইরশাদ করেন: যে কেউ কোনো বিপদগ্রস্ত লোক দেখে বলে:

«الحمد لله الذي عافاني مما ابتلاك به وفضلني على كثير ممن خلق تفضيلا»

‘আল-হামদু লিল্লাহিল্লাযি আ-ফা-নী মিন্মাব-তালাকা বিহী, ওয়া ফায্যালানী আরা কাসীরিন মিম্মান খালাকা তাফযীলা;-

“সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাকে নিরাপদে রেখেছেন সেই বিপদ থেকে যা দিয়ে তোমাকে পরীক্ষা করেছেন এবং তাঁর সৃষ্টি জগতের অনেকের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন”, তাহলে সে উক্ত বিপদে আক্রান্ত হবে না, তা যে ধরণেরই হোক।” [আবু দাউদ, তিরমিযী।]

(ছ) মোরগের আওয়াজ ও গাধার ডাক শুনাকালে তাঁর আদর্শমালা [যাদুল মা‘আদ, ২/৪২৬]:

মুহাম্মাদ রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতকে নির্দেশ দেন, যখন তারা গাধার ডাক শুনে তখন যেন শয়তান হতে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে, আর যখন মোরগের ডাক শুনে তখন যেন আল্লাহর অনুগ্রহ কামনা করে।” [বুখারী, মুসলিম।]

(জ) রাগাম্বিত ব্যক্তির কথিত ও কৃত বিষয়াবলী প্রসঙ্গে তাঁর আদর্শমালা: [যাদুল মা‘আদ, ২/৪২৩]

রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যাধিক রাগাম্বিত ব্যক্তিকে নির্দেশ দেন, সে যেন অযু করে এবং বসে পড়ে যদি সে দাঁড়ানো থাকে, আর শোয়ে পড়ে যদি সে বসা থাকে এবং বিতাড়িত শয়তান হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে।”

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন