মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যায়পরায়ণতার প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেছেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আরশের ছায়ায় স্থান দেয়া হবে, যে দিন আরশের ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। এদের মধ্যে আছেন ন্যায়পরায়ণ শাসক.... [সহীহ আল - বুখারী ৬৬০, সহীহ মুসলিম ১০৩১]
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিরা রহমানের ডান পার্শে নূরের মঞ্চে আরোহণ করবে। আসলে আল্লাহর দুটো হাতই ডান হাত। যে সকল ব্যক্তি তাদের শাসন কার্যে, পরিবার পরিচালনায় ও অধীনস্থদের ব্যাপারে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করেছে তারা এ মর্যাদার অধিকারী হবে।’ [সহীহ মুসলিম ১৮২৭]
ন্যায়পরায়ণতার ক্ষেত্র হল বিশাল-বিস্তৃত। দেশ শাসনে ন্যায়পরায়ণতা, বিচারের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা, আল্লাহর আইন ও বিধান প্রয়োগে ন্যায়পরায়ণতা, মানুষের সাথে লেনদেন করার ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা, মানুষের মধ্যে সালিশ ও মীমাংসার ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি, শত্রুদের সাথে আচার-আচরণে ন্যায়পরায়ণতা, সন্তান- সন্ততির ব্যাপারে ন্যায়, স্ত্রী পরিজনের ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
প্রথম দৃষ্টান্তঃ মাখযুম গোত্রের এক সম্ভ্রান্ত মহিলা একবার চুরি করল। মহিলার এ বিষয়টি কুরাইশদের ভাবিয়ে তুলল। কারণ বংশের দিক দিয়ে সে ছিল অত্যন্ত সম্মানিত। তারা মহিলার শাস্তি মওকুফ করতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট মধ্যস্থ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিল। তারা বলল যে, ‘কে এ বিষয়ে রাসূলের সাথে কথা বলতে পারে?’ তারা মত দিল, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় ব্যক্তি হল উসামা বিন যায়েদ। সে-ই এ দুঃসাহস দেখাতে পারে। অতঃপর এ মহিলাকে রাসূলুল্লাহর দারবারে আনা হল। তারপর তার ব্যাপারে উসামাহ বিন যায়েদ রা. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট শাস্তি মওকুফের সুপারিশ করলেন। তৎক্ষণাৎ রাসূলুল্লাহর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল এবং বললেন, ‘তুমি কি আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির ব্যাপারে সুপারিশ করছ?’ অতঃপর উসামা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন।’
এরপর বিকেলে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বক্তৃতা দিতে দাঁড়ালেন, তিনি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করলেন, অতঃপর বললেন, ‘শুনে রাখ! তোমাদের পূর্ববর্তীগণ ধ্বংস হয়েছে এজন্য যে, তাদের মধ্যে কেউ কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি চুরি করলে তারা তাকে শাস্তি ব্যতীত ছেড়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল ব্যক্তি চুরি করত তাহলে তারা তার উপর শাস্তি প্রয়োগ করত। আর আমি ঐ সত্বার শপথ করে বলছি যার হাতে আমার জীবন, যদি মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমাও চুরি করে তাহলে আমি তার হাত কেটে দেব।’ এরপর সে মহিলার হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেয়া হল। আয়েশা রা. বলেন, ‘সে মহিলা পরে সুন্দর তাওবা করেছে, বিবাহ করেছে। মাঝে মাঝে সে আমার কাছে আসত। আমি তার প্রয়োজনের কথাগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে উপস্থাপন করতাম।’ [সহীহ আল - বুখারী , সহীহ মুসলিম - কিতাবুল হুদুদ]
ন্যায়পরায়ণতা হল অন্যায়-অবিচারের বিপরীত। আল্লাহ তাআলা সর্বক্ষেত্রে ন্যায়পরায়ণতার নির্দেশ দিয়েছেন। সকল কথায় ও সকল কাজে। তিনি বলেছেনঃ
‘‘যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার-ফয়সালা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে।’’ [সূরা আন- নিসা ৫৮]
দ্বিতীয় দৃষ্টান্তঃ নোমান ইবনে বশীর ও তার ছেলের ব্যাপারেঃ
নুমান বিন বশীর মিম্বরে বসে বলেন যে, আমার পিতা আমাকে অতিরিক্ত দান করলেন কিন্তু উমরাহ বিনতে রাওয়াহা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যেয়ে ফয়সালা ব্যতীত আমি এটা মেনে নিব না।’ অতঃপর বশীর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে আসলেন এবং বললেন, ‘আমি উমরাহ বিনতে রাওয়াহার ঘরে আমার ছেলেকে অতিরিক্ত সম্পদ দান করেছি। অতঃপর সে আমাকে আদেশ করেছে আপনার অনুমোদন নেয়ার জন্য। হে আল্লাহর রাসূল!’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি তোমার সব ছেলেকে এভাবে অতিরিক্ত দিয়েছ?’ তিনি বললেন, ‘না’, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমরা আললাহকে ভয় কর এবং তোমার ছেলেদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ কর।’ বশীর ফিরে চলে গেল এবং তার অতিরিক্ত দান ফিরিয়ে নিল।
আরেক বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তোমার কি আরো সন্তান আছে?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ,আছে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘তুমি কি সবাইকে এ রকম দিয়েছো?’ বললো, ‘না,’ রাসূল বললেন, ‘তাহলে আমি অন্যায় অবিচারের সাক্ষী হতে পারি না।’ [সহীহ আল - বুখারী ২৫৮৬, সহীহ মুসলিম ১৬২৩,]
এ হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সন্তানদের ব্যাপারে ন্যায়-ভিত্তিক আচরণ ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখতে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের শায়খ ইমাম আব্দুল আযীয ইবনে বায রহ. বলেছেন, এ হাদীস দিয়ে স্পষ্ট প্রমাণিত হল যে, সন্তানদের মধ্যে কাউকে বেশি দেয়া জায়েয নয়। এটা তাদের মধ্যে বৈষম্য ও শত্রুতা সৃষ্টির নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে।
তৃতীয় দৃষ্টান্তঃ স্ত্রী পরিজনের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ন্যায়ভিত্তিক আচরণ
স্ত্রীদের সাথে আচরণের ক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ন্যায়পরায়ণতার বাস্তবায়ন করেছেন যথাযথভাবে। তিনি যতটুকু সম্ভব রাত্রি যাপন, খাদ্য-বস্ত্র দান, স্থায়ী বা অস্থায়ী সর্বাবস্থায় সকল বিষয়ে তাদের মধ্যে পরিপূর্ণ সমভাগে ভাগ-বণ্টন করেছেন। তিনি প্রত্যেকের নিকট এক রাত্র করে অবস্থান করতেন। নিজের হাতে যা রয়েছে তা তাদের প্রত্যেকের উপর সমভাবে খরচ করতেন। প্রত্যেকের জন্য একটি করে কক্ষ নির্মাণ করেছেন। যখন তিনি ভ্রমণে যেতেন তখন তাদের মধ্যে লটারি দিতেন। যার ভাগ্যে লটারি আসত তাকে নিয়ে সফরে যেতেন। এ ব্যাপারে তিনি শিথিলতা করতেন না। এ সমতা ছিল তার আমরণ। তার অসুস্থ অবস্থায় তাদের পালা অনুসারে তাকে প্রত্যেক স্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হত। আর যখন এটা করা অসম্ভব হয়ে গেল, তখন সকলে বুঝে নিল যে, তিনি আয়েশার ঘরে থাকতে চান। তারা সকলে আয়েশার ঘরে চিকিৎসা করার অনুমতি দিল। তিনি সেখানে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অবস্থান করলেন। এত পরিমাণ সমতা রক্ষা করা সত্ত্বেও তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করছেন এবং বলেন-
اللهم هذا قسمي فيما أملك، فلا تلمني فيما تملك لا أملك
‘হে আল্লাহ এ হল আমার ভাগ-বণ্টন। যার মালিক আমি। আর আপনি যার মালিক - আমি যার ক্ষমতা রাখি না, সে ব্যাপারে আমাকে তিরস্কার করবেন না।’’ [আবু দাউদ ২১৩৪, তিরমিজী ১১৪০]
অর্থ্যাত বৈষয়িক ভাগ-বণ্টনে আমি সমতার বাস্তবায়ন করলাম কিন্তু আমি অন্তরের মালিক নই। কাজেই আমার অন্তর যদি করো প্রতি ঝুঁকে যায় তবে সে জন্য আমাকে আপনি শাস্তি দেবেন না। অন্তরের উপর ক্ষমতা তো আপনারই।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক স্ত্রীর দিকে অন্য স্ত্রীর তুলনায় বেশি ঝুঁকে যেতে নিষেধ করেছেন এবং তিনি বলেছেন- যার দুজন স্ত্রী রয়েছে অতঃপর সে একটার দিকে বেশি ঝুঁকে যায় সে কেয়ামতের দিন এক পার্শ্ব বাঁকা অবস্থায় উপস্থিত হবে। [আহমাদ ২৪৭/২, আবু দাউদ ২১৩৩]
অত্র হাদীসখানার মাধ্যমে যে আন্তরিক টানের ব্যাপারে মানুষের ইচ্ছাশক্তি কার্যকর, তা হারাম সাব্যস্ত হয়। আর যেটি মানুষের আয়ত্বের বাইরে, সেটি সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছে :
لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا
‘‘আল্লাহ তাআলা কাউকে সামর্থ্যের বাইরে আদেশ করেন না।’’ [সূরা আল-বাকারা : ২৮৬]
‘‘আর তোমরা চাইলেও স্ত্রীদের মাঝে সমতা বজায় রাখতে পারবে না। অতএব, তোমরা কারো প্রতি পূর্ণ ঝুঁকে পড়ো না, ফলে একজনকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছেড়ে দেবে।’’ [সূরা আন-নিসা : ১২৯]
উল্লেখিত হাদীসের সতর্ক বাণী শুধুমাত্র তার ক্ষেত্রে, যে ইচ্ছাকৃত বৈষম্যমূলক আচরণ করে। আর সে কেয়ামত দিবসে মুখের এক পার্শ্ব বক্র অবস্থায় উঠবে। এটি একটি স্পষ্ট শাস্তি।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষা হলো, যে ব্যক্তি কুমারী নারী বিবাহ করবে, সে সাত দিন একাধারে তার সাথে অবস্থান করবে, এবং এরপর থেকে সকল স্ত্রীদের মাঝে সঙ্গ দেয়ার পালা বণ্টন শুরু করবে, যদি তার একাধিক স্ত্রী থাকে। আনাস রা. এর হাদীসে বর্ণিত আছে -
من السنة إذا تزوج الرجل البكر على الثيب أقام عندها سبعاً ثم قسم، وإذا تزوج الثيب أقام عندها ثلاثا ثم قسم .
‘‘কোন ব্যক্তি অন্য স্ত্রী থাকা অবস্থায় যদি কুমারী মেয়ে বিবাহ করে, তার সাথে একাধারে সাত দিন রাত্রিযাপন করবে, অতঃপর পালা বণ্টন শুরু করবে। আর যদি অকুমারী নারী বিবাহ করে, তাহলে তিন দিন অবস্থান করে পালা বণ্টন শুরু করবে। [সহীহ আল - বুখারী, সহীহ মুসলিম] উম্মে সালামা রা. এর বর্ণনা- নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাকে বিবাহ করলেন, তখন তার সাথে তিন দিন অবস্থান করেছেন এবং বলেছেন, ‘তোমার কোন সমস্যা নেই, ইচ্ছা করলে আমি তোমার নিকট সাত দিন থাকতে পারি, তবে তোমার ঘরে সাত দিন রাত্রিযাপন করলে অন্য স্ত্রীদের ঘরেও সাত দিন করে থাকতে হবে।’ [সহীহ মুসলিম]
আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত- সাওদা বিনতে যামআ রা. স্বীয় দিনটি আয়েশা রা. কে দান করেছেন, ফলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যে নিজের ও সাওদার উভয় দিন তার কাছে যাপন করতেন। [সহীহ আল - বুখারী, সহীহ মুসলিম]
আয়েশা রা. থেকে আরো বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালা বণ্টনের ক্ষেত্রে আমাদের কাউকে কারো উপর প্রাধান্য দিতেন না। খুব কম দিনই তিনি আমাদের সকলের কাছে যেতেন। তবে গভীর মেলা-মেশা করা ব্যতীত সকলের নিকটবর্তী হতেন। সর্বশেষ তার নিকট গিয়ে রাত্রি যাপন করতেন, যার পালা রয়েছে। সাওদা রা. বয়স্ক হয়ে যখন এই আশঙ্কা করলেন যে, রাসূল হয়তোবা তাকে দূরে ঠেলে দেবেন, তখন বলেছিলেন, আমি আমার দিনটি আয়েশাকে দিয়ে দিলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রস্তাবটি গ্রহণ করলেন, আয়েশা রা. বলেন, ‘সাওদা এবং তার মত মহিলাদের ব্যাপারেই নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয় -
‘‘যদি কোন নারী তার স্বামীর পক্ষ থেকে রূঢ়তা কিংবা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর আপোশ করে নিলে তাদের কোন গুনাহ নেই।’’ [সূরা আন-নিসা : ১২৮]
ইবনে বায রহ. ঘটনাটি বর্ণনা করে মন্তব্য করেছেন, ‘এর দ্বারা বুঝা গেল, যদি কোন নারী নিজের অধিকার থেকে সরে আসে তবে তা তার জন্য বৈধ। যেমন স্বামীর সন্তুষ্টি সাপেক্ষে নিজের পাওনা দিনটিকে অন্য একজন সতীনকে দান করে দিতে পারে।
সকল স্ত্রীদের জন্যে সম্মিলিত সময় ছিল আসরের পরের সময়টি। আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসর সালাত আদায় করে স্ত্রীদের সান্নিধ্যে যেতেন। [সহীহ আল - বুখারী]
গ্রন্থকার বলেন, আমার শায়েখ ইবনে বায রহ. কে বলতে শুনেছি, এ হাদীসটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের উত্তম চরিত্রের প্রতি দিক-নির্দেশ করে। তিনি ছিলেন স্বীয় পরিবারের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি।
তিনি প্রতিদিন আসর সালাতের পর স্ত্রী গণের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের খোঁজ খবর নিতেন। তবে তিনি ঐ সময় তাদের সাথে মেলামেশা করতেন না। অবশ্য কখনও কখনও সকলের সাথে মেলামেশা শেষ করে একবার গোসল করতেন, যেমনটি আনাস রা. এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তবে এটি ছিল বিরল।
আয়েশা রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ও আনাস রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসের মধ্যে এভাবে সমাধান করা যায় যে, সকল স্ত্রীর সাথে মেলামেশা শেষ করে একবার গোসল করার বিষয়টি খুব কম সময়ই হয়েছিল।
আনাস রা. এর বর্ণনা নিম্নরূপ :
‘নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে ও দিনে একই সময়ে এগারো জন স্ত্রীর সাথে মেলামেশা করতেন, আনাস রা. কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘এটা কি করে সম্ভব?’ তিনি বললেন, ‘আমরা জানি, তাকে ত্রিশজন পুরুষের শক্তি দেয়া হয়েছে।’ সাঈদ রহ. কাতাদার বরাত দিয়ে আনাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, তাতে নয়জন বিবির উল্লেখ রয়েছে। [সহীহ আল - বুখারী]
হাফেয ইবনে হাজার রহ. এর সমাধানে বলেছেন, স্ত্রীর সংখ্যা নয়জনই ছিল, তবে মারিয়া ও রায়হানা নামে দুইজন বাঁদীকেও নয়জনের সাথে যোগ করে দেয়া হয়েছে। আমার উস্তাদ ইবনে বায রহ. থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘এটি একটি আল্লাহ প্রদত্ত শক্তি। কারণ নয়জন বিবি, তার উপর আবার মারিয়া ও রায়হানা নামে দু’জন বাঁদী। [ফাতহুল বারী] এর দ্বারা বুঝা গেল এক ব্যক্তি একাধিক স্ত্রীর সাথে তাদের যৌথ সময়ের মধ্যে মেলামেশা করতে পারে, এটি শুধু জায়েয ই নয়, বরং এটি সুন্নত । এটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের আদর্শ।
আনাস রা. এর হাদীসে বর্ণিত আছে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নয়জন স্ত্রীর জন্য দিন ভাগ করা ছিল। তিনি প্রথম স্ত্রীর নিকট নয়দিন পরই যেতেন। তিনি যেদিন সকলের সাথে মেলামেশা করতেন সেদিন সবাই এক বাড়িতে একত্রিত হত। [সহীহ মুসলিম]
আমার উস্তাদ ইবনে বায রহ. বলতেন, প্রতিদিন আসর বাদ সবার সাথে দেখা করতেন সেটি ভিন্ন ব্যাপার। এভাবেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাঝে সম্প্রীতি ও ভালবাসার সৃষ্টি করতেন এবং সকল প্রকার বৈরী ভাব দূর করতেন। কেননা সতীনদের মাঝে দূরত্ব থাকাটাই স্বাভাবিক। রাতের বেলা সকলে একত্রিত হলে নিজেদের মধ্যে মুহাববত বাড়ে। স্ত্রীদের মাঝে ইনসাফ ঠিক রাখার জন্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করতেন, তখন তাদের মাঝে লটারীর ব্যবস্থা করতেন। লটারীতে যার নাম উঠত, সেই তার সাথে সফরে যেত।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইনসাফ ও উত্তম আখলাকের আরেকটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত আনাস রা. কর্তৃক বর্ণিত হাদীসে সুস্পষ্ট হয়, যা নিম্নরূপঃ
একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন এক স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছিলেন। এমন সময় অন্য আরেক স্ত্রী পেয়ালায় করে কিছু খাদ্য-দ্রব্য পাঠালেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ঘরে অবস্থানরত, তিনি খাদেমের হাত থেকে পেয়ালা ফেলে দিয়ে তা ভেঙ্গে দেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাঙ্গা পেয়ালার টুকরো জমা করে তাতে খাবার উঠাতে লাগলেন এবং বললেন, ‘তোমাদের মা রাগ করেছে।’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদেমকে আটকে রেখে ওর ঘর থেকে একটি ভাল পেয়ালা নিয়ে, যার পেয়ালা ভাঙ্গা হয়েছে তার ঘরে পাঠিয়ে দিলেন, আর ভাঙ্গাটি এ ঘরে রেখে দিলেন।
অত্র হাদীসমূহের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্রের সুমহান দিকগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরা হলো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/408/11
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।