মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
একাদশ পরিচ্ছেদ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধৈর্য ও ক্ষমা
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/408/13
আল্লাহর পথে আহবান করতে গিয়ে তিনি ধৈর্য ও ক্ষমার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখে গিয়েছেন। নিম্নে কয়েকটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা হলোঃ
একঃ যে ব্যক্তি বলেছিল, এ বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি, তার ব্যাপারে ধৈর্যধারণঃ
ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, হুনাইনের যুদ্ধের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু লোককে বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিলেন। আকরা ইবনে হাবেস রা.কে একশত উট, উয়াইনাকেও তদ্রুপ দিলেন। আরবের কিছু সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিবর্গকেও সেদিন বেশি দেয়া হয়েছিল। তখন এক ব্যক্তি এই বলে মন্তব্য করল যে, ‘এ বণ্টনে ইনসাফ করা হয়নি। এখানে আল্লাহর সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য ছিল না।’ আমি মনে মনে বললাম, ‘আল্লাহর কসম আমি এ সংবাদটি অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানিয়ে দেব।’ আমি সংবাদ দিলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহ ও তার রাসূল ইনসাফ না করলে আর কে আছে ইনসাফ করবে? মূসার উপর আল্লাহ দয়া করুন, তাকে এর চেয়েও বেশি কষ্ট দেয়া হয়েছে, কিন্তু তিনি ধৈর্য ধারণ করেছেন।’ [সহীহ আল - বুখারী : ৩১৫০, সহীহ মুসলিম : ১০৬২]
এটি দাওয়াতী ময়দানে ধৈর্য ধারণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এখানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হিকমত এই ছিল যে, গণীমতের মালসমূহ দুর্বল ঈমানদারদের মাঝে বণ্টন করা, আর মজবুত ঈমানদারদেরকে তাদের ঈমানের উপর সোপর্দ করা। [ফাতহুল বারী শরহুল সহীহ আল - বুখারী : ৮/৪৯]
দুইঃ যে বলেছিল : আমরাই এর বেশি উপযুক্ত, তার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ :
আবু সায়ীদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, আলী ইবনে আবু তালেব রা. ইয়েমেন থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে চামড়ার থলে ভর্তি কিছু স্বর্ণ পাঠালেন। সেগুলো তিনি চার জনের মাঝে বণ্টন করলেন; উআইনা ইবনে বদর, [ইনি উয়াইনা ইবনে হিসন ইবনে হুযাইফা, ফাতহুল বারী : ৮/৬৮] আকরা ইবনে হাবেস, যায়েদ আল-খাইল, [যায়েদ খায়েল ইবনে মুহালহাল আত-তায়ী, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে যায়েদ আল-খায়ের নামকরণ করেছেন। ফাতহুল বারী :৮/৬৮] চতুর্থ জন আলকামা [তিনি ইবনে উলাছা আল-আমেরী, তিনি ইসলাম গ্রহন করেছেন, এবং সুন্দর ভাবে ইসলামে অটল থেকেছেন। পরবর্তীতে উমর রা. তাকে হাওয়ারেন এলাকার দায়িত্ব দিয়েছেন, ফাতহুল বারী : ৮/৬৮] অথবা আমের ইবনে তুফায়েল। এক সাহাবী মন্তব্য করলো, ‘আমরা তাদের তুলনায় অধিক হকদার।’ কথাটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কানে পৌঁছলে, তিনি বললেন, ‘তোমরা কি আমাকে বিশ্বস্ত মনে কর না? আমি আসমান-যমীনের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি। আমার নিকট সকাল-সন্ধ্যায় আসমানের সংবাদ আসে।’ তখন এক ব্যক্তি দাঁড়াল, যার চোখ দুটো গর্তে ঢুকানো, গাল দুটো উঁচু, কপালটি বহির্গত, ঘন দাড়িযুক্ত, মাথা মুন্ডানো, লুঙ্গি উপরে তোলা। সে বলল, ‘হে রাসূল! আললাহকে ভয় করুন! রাসূল বললেন, ‘এই হতভাগা, আললাহকে ভয় করার ব্যাপারে আমি কি যমীনবাসীর মধ্যে অধিক অগ্রগামী নই।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘অতঃপর সে ব্যক্তি চলে গেলো, খালেদ ইবনে ওয়ালীদ রা. বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তার গর্দান উড়িয়ে দেব না?’ তিনি বললেন, ‘না, সম্ভবত লোকটি নামাজ পড়ে।’ খালেদ রা. বললেন, ‘এমন অনেক নামাজী আছে, যারা মনে যা নেই তা মুখে বলে।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘মানুষের অন্তর ও পেট ছিঁড়ে দেখার জন্যে আমি আদিষ্ট হইনি।’ অতঃপর তিনি লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই ব্যক্তির বংশ থেকে এমন এক জাতির আবির্ভাব ঘটবে, যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করবে, কিন্তু কুরআন তাদের অন্তরে প্রবেশ করবে না। তারা দীন থেকে বের হয়ে যাবে, তীর যেভাবে ধনুক থেকে বের হয়ে আসে। আমি যদি তাদেরকে পাই, তাহলে আদ জাতির মত তাদের হত্যা করে ফেলব।’ [সহীহ আল - বুখারী : ৪৩৫১, সহীহ মুসলিম : ১০৬৪]
এটি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহনশীলতার একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। তিনি বাহ্যিক অবস্থা দৃষ্টে বিচার করেছেন, অন্তরে কি আছে তা অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেননি। লোকটি হত্যাযোগ্য অপরাধ করেছে, কিন্তু তবুও তাকে হত্যা করেননি। যাতে করে মানুষ এ সমালোচনা করার সুযোগ না পায় যে, মুহাম্মাদ তার সাথিদেরকে হত্যা করে, বিশেষ করে লোকটি যখন নামাযী। [ফাতহুল বারী শরহুল সহীহ আল - বুখারী : ৮/৬৮]
তিন : আমের ইবনে তোফাইল রা. এর সাথে আচরণ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমের ইবনে তোফাইল দাউসী রা. এর সাথে সহনশীলতার যে পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছেন, তা অবিস্মরণীয়। তিনি হিজরতের পূর্বে মক্কা নগরীতে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। অতঃপর তিনি আপন জাতির নিকট গিয়ে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন। তিনি সর্বপ্রথম তার পরিবারের মধ্যে দাওয়াত শুরু করলেন, ফলে তার বাবা ও স্ত্রী ইসলাম গ্রহণ করলো। অতঃপর তার বংশ ও গোত্রের অন্যান্য লোকজনকে দাওয়াত দেয়া শুরু করলেন। কিন্তু কেউই ঈমান গ্রহণ করেনি। তোফাইল রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললো, ‘হে আল্লাহর রাসূল! দাউস গোত্র ধ্বংস হয়েছে, তারা কুফরী করেছে।’
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, তোফাইল ইবনে আমর দাওসী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললেন, ‘দাউস গোত্র অস্বীকার করেছে, সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দুআ করুন।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিবলামুখী হয়ে দু’হাত তুলে দুআ করলেন। লোকজন বলল, ‘তারা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। একথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি দাউস গোত্রকে হেদায়েত দান কর এবং তাদেরকে আমার কাছে হাজির করে দাও।’ [সহীহ আল - বুখারী : ২৯৩৭, সহীহ মুসলিম : ২৫২৪, মুসনাদে আহমদ : ২/২৪৩, বিদায়া-নিহায়া :৬/৩৩৭, সীরাতে ইবনে হিশাম : ১/৪০৭]
এ কাজটি দাওয়াতী মিশনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ধৈর্য ও সহনশীলতার এক অনুপম দৃষ্টান্ত। তিনি দাওয়াত অস্বীকারকারীকে শাস্তি প্রদান কিংবা তাদের বিরুদ্ধে বদ-দুআ করার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করেননি। বরং তাদের হেদায়েতের জন্যে দুআ করেছেন। আল্লাহ তার দুআ কবুল করেছেন এবং তিনি স্বীয় ধৈর্য, সহনশীলতা ও তাড়াহুড়া না করার পূর্ণ প্রতিফল পেয়েছেন। ফলে তোফাইল রা. তার গোত্রের লোকজনের নিকট ফিরে গেলেন। নরম ভাষায় তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার ফলে বহু লোক তার হাতে ইসলাম গ্রহণ করলো। অতঃপর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বর থাকা অবস্থায় তোফাইল তার নিকট আসলেন। পরবর্তীতে দাউস গোত্রের আশি থেকে নববইটি পরিবার নিয়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলেন এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মুসলমানদের সাথে তাদের জন্যেও বরাদ্দ করলেন।’ [যাদুল মাআদ : ৩/৬২৬] আললাহু আকবার।
অতএব, দায়ী ভাইদের ধৈর্য ও সহনশীলতার দিকটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার। আর তা একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ, অতঃপর নবী-আদর্শের পূর্ণ অনুশীলন ব্যতীত সম্ভব নয়।
চার : যে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল তার সাথে
সহীহ আল-বুখারী ও সহীহ মুসলিমে জাবের রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমরা নজ্দ অভিমুখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অভিযানে বের হলাম। [সহীহ সহীহ আল - বুখারীতে স্পষ্টভাবে এ যুদ্ধের নামকরণ করা হয়েছে ‘‘যাতুর রিকা’’ : ৪১৩৬] আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রচুর কাটাযুক্ত বৃক্ষ সম্বলিত উপত্যকায় অবস্থান করলাম। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি গাছের নীচে অবতরণ করলেন। তিনি তার তলোয়ারটি গাছের কোন এক ডালে ঝুলিয়ে রাখলেন। আমাদের কাফেলার লোকজন উপত্যকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন গাছের নীচে বিশ্রাম গ্রহণ করতে শুরু করলো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। এক ব্যক্তি এসে আমার তলোয়ার হাতে নিয়ে নেয়। সাথে সাথে আমি জাগ্রত হলাম, উঠে দেখি, সে আমার মাথার উপর কোষমুক্ত তলোয়ার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অতঃপর সে বলল, ‘কে তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাবে?’ আমি বললাম, ‘আললাহ।’ অতঃপর দ্বিতীয়বার সে বলল, ‘কে তোমাকে আমার হাত থেকে বাঁচাবে?’ আমি বললাম, ‘আললাহ।’ একথা শুনে সে তলোয়ার খাপে ঢুকিয়ে ফেললো, এবং বসে পড়লো। কিন্তু নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কিছু বললেন না। [সহীহ আল - বুখারী : ২৯১০, সহীহ মুসলিম : ৪/১৭৮৬, আহমদ : ৩/৩১১]
আললাহু আকবার, এটি কত বড় মহানুভবতা! এটি অন্তরে কত বড় প্রভাব ফেলে! একজন বেদুইন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করতে চেয়েছে, আল্লাহ তাআলা তাকে ঐ ব্যক্তির হাত থেকে বাঁচালেন। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যা করার সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও ক্ষমা করে দিলেন! নিশ্চয় এটি একটি মহান চরিত্র। আল্লাহ সত্যিই বলেছেন, তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেনঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এহেন আচরণ লোকটির জীবনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলল, এবং পরবর্তীতে সে মুসলমান হয়েছে এবং তার মাধ্যমে অনেক মানুষ উপকৃত হয়েছে। [ফাতহুল বারী : ৭/৪২৮, শরহে নববী : ১৫/৪৪]
পাঁচ : পাদ্রী যায়েদের সাথে তার আচরণ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিশোধ গ্রহণের শক্তি থাকা সত্ত্বেও মানুষকে ক্ষমা করে দিতেন। রাগের সময় তিনি ধৈর্যধারণ করতেন। দুর্ব্যবহারকারীর সাথে ভাল ব্যবহার করতেন। উল্লেখিত উঁচুমানের চরিত্রগুলোই তার দাওয়াত কবুল করা, তার প্রতি ঈমান আনার বিষয় সুগম করে দিয়েছে। ইহুদীদের একজন বড় আলেম যায়েদ ইবনে সা’নার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আচরণ দেখিয়েছিলেন তা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। [হিদায়াতুল মুরশিদীন : ৩৮৪]
একদিন যায়েদ ইবনে সা’না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে তার পাওনা তাগাদা দেয়ার জন্য আসলো। সে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চাদর ও জামা ধরে সজোড়ে টান মারলো এবং তার সাথে কঠিন ভাষা প্রয়োগ করলো। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দিকে রূঢ় চেহারায় তাকালো, এবং বললো, ‘হে মুহাম্মাদ, আমার পাওনা পরিশোধ কর, তোমরা আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর আসলেই টাল-বাহানাকারী গোষ্ঠী।’ সাহাবী উমার রা. তার দিকে তাকালেন, তার চোখদুটো ঘূর্ণায়মান নক্ষত্রের মত ঐ ব্যক্তির মাথার উপর ঘুরছে। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর দুশমন! তুমি রাসূলকে যা বলেছো আমি তা শুনেছি এবং তুমি তার সাথে যা আচরণ করেছো, তা আমি দেখেছি। ঐ সত্বার কসম! যিনি তাকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তিনি আমাকে ভৎর্সনা করবেন এই ভয় না থাকলে আমি তলোয়ার দিয়ে তোমার মাথা আলাদা করে ফেলতাম। এদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমার রা. এর দিকে স্থিরতার সাথে মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘হে উমার! আমি ও সে তোমার নিকট থেকে এমন কথা শুনতে প্রস্ত্তত ছিলাম না। তুমি বরং আমাকে সুন্দরভাবে আদায় করার, এবং তাকে সুন্দরভাবে তাগাদা দেয়ার পরামর্শ দিতে পারতে। হে উমার! তাকে নিয়ে যাও এবং তার পাওনা পরিশোধ করে অতিরিক্ত আরো বিশ সা’ খেজুর দিয়ে দাও।’
এ কাজটিই তাকে ইসলাম গ্রহণ করার উৎসাহ দিয়েছে। অতঃপর সে ঘোষণা দিল, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।’
এ ঘটনার পূর্বে যায়েদ বলত, ‘নবুয়্যতীর আলামতসমূহ থেকে কোন একটি আলামত তার চেহারায় ফুটে উঠতে দেখা বাকি ছিল না, তবে দুটি আলামত সম্পর্কে তখনও আমি অবগত হতে পারিনি।
এক : তার অজ্ঞতার তুলনায় জ্ঞান-গরিমাই বেশি হবে।
দুই: তার সাথে মূর্খতাসূলভ ব্যবহার তার সহনশীলতা বাড়িয়ে দেবে। [ইবনে হাজার রহ. আল-ইসাবা নামক কিতাবে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন, : ১/৫৬৬, তাছাড়া ইবনে কাছীর রহ.ও আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া কিতাবে এটি উল্লেখ করেছেন> ২/৩১০।]
সে এই ঘটনার মাধ্যমে তা পরীক্ষা করে, এবং তার সম্পর্কে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, তেমনটিই পেয়েছে। অতঃপর সে ঈমান আনলো এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে অনেক যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করলো, এবং তাবুকের যুদ্ধে অভিযানে শহীদ হল। [আল-ইসাবা ফী তাময়ীজিস সাহাবা : ১/৫৬৬।] মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সত্যবাদিতা ও তিনি যে দিকে আহবান করছেন তা যে সত্য, এ দুই বিষয়ের উপর আখলাকের মাধ্যমে অনেক প্রমাণ পেশ করেছেন।
ষষ্ঠ: মুনাফিক নেতাদের সাথে তার আচরণ :
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলেন, এদিকে আউস ও খাযরাজ গোত্র আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে নেতা বানানোর ব্যাপারে একমত হয়েছিল। এমনকি দুইজন ব্যক্তিও তার মর্যাদার ব্যাপারে মতবিরোধ করেনি। ইতিপূর্বে আউস ও খাযরাজ গোত্র কোন সময় দু’গ্রুপের কারো ব্যাপারে ঐক্যমতে পৌঁছোতে পারেনি। তারা তাকে মালা পড়িয়ে নেতা বানানোর সকল প্রকার প্রস্ত্ততি গ্রহণ করল। ঠিক এমন সময় আল্লাহ তাআলা তাদের সম্মুখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিত করলেন। যখন মুনাফিক নেতার স্বজাতি তার থেকে মুখ ফিরিয়ে ইসলামের দিকে ধাবিত হতে শুরু করল, তখন তার অন্তর হিংসা-বিদ্বেষে পরিপূর্ণ হয়ে গেলো। এবং সে দেখল তার রাজত্ব ও ক্ষমতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাতে চলে যাচ্ছে। সে যখন দেখল, তার স্বজাতি ইসলামে প্রবেশ করছে, তখন সে অপছন্দ করা সত্ত্বেও কপটতা নিয়ে, হিংসা ও বিদ্বেষসহ ইসলামে প্রবেশ করল। [সীরাতে ইবনে হিশাম : ২/২১৬, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/১৫৭।] সে ইসলাম থেকে মানুষকে বিমুখ করা, মুসলিম জামাআতে ফাটল সৃষ্টি করা ও ইহুদীদের সহযোগিতা করার ব্যাপারে কোন প্রকার ত্রুটি করল না।
ইসলামী দাওয়াতের ব্যাপারে তার বিদ্বেষের বিষয়টি ছিল সুস্পষ্ট। কিন্তু তা ছিল সম্পূর্ণ মুনাফেকী অবস্থায়। নবী করীম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বিষয়টি ধৈর্য, সহনশীলতা ও ক্ষমার দৃষ্টিতে গ্রহণ করে নিতেন। কেননা সে ইসলাম প্রকাশ করেছিল। তাছাড়া তার অনেক মুনাফিক সাথি-সঙ্গী ছিল। সে ছিল তাদের নেতা। আর তারা ছিল তার অনুসারী। নবী করীম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথা ও কাজে তার প্রতি অনুগ্রহ করতেন, এবং অনেক সময় তার দুর্ব্যবহারকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখতেন। নিম্নে এ রকম কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করা হলঃ
ইহুদী সম্প্রদায় বনু কুরাইযা অঙ্গীকার ভঙ্গ করার পর তাদের জন্য সুপারিশ করা
বদর যুদ্ধের পর বাজারে জনৈক মুসলিম মহিলার পোশাক খুলে ফেলা উন্মুক্ত এবং এ মহিলাকে সাহায্য করার কারণে একজন মুসলমানকে খুন করার মাধ্যমে বনু কুরাইযা অঙ্গীকার ভঙ্গ করল। [সীরাতে ইবনে হিশাম : ২/৪২৭, আল- বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৪/৪।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের বিশ মাস পর শাওয়াল মাসের মাঝামাঝি শনিবার তাদের কাছে গেলেন, তাদেরকে পনেরো দিন বন্দি করে রাখলেন এবং তারা তাদের দুর্গে আশ্রয় গ্রহণ করল। তিনি খুব কঠিনভাবে তাদেরকে অবরোধ করলেন। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দিলেন, তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিদ্ধান্ত মেনে নেমে আসল। রাসূলের নির্দেশে তাদের উভয় হাত পিছনে বেধে দেয়া হল। তারা ছিল সাত শত জন যোদ্ধা। অতঃপর আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট হাজির হয়ে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ আমার গোলামদের উপর দয়া কর।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিতে দেরি করলে সে আবার বলল, ‘হে মুহাম্মাদ তুমি তাদের উপর দয়া কর।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে, সে রাসূলের বর্ম-পোশাকের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল এবং বলল, যতক্ষণ তুমি আমার লোকদের উপর দয়া না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমাকে ছাড়ব না। (তাদের মধ্যে চার শত জন ছিল বর্ম পোশাক বিহীন, আর তিন শত জন বর্ম-পোশাক পরিহিত।) তারা আমাকে লাল ও কালো জাতি থেকে হেফাযত করেছে। আর তুমি তাদেরকে এক সকালেই আমার থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে চাও? আল্লাহর কসম করে বলছি, আমি অশুভ পরিণতির ভয় করছি। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার খাতিরে তাদেরকে ছেড়ে দিলেন। [সীরাতে ইবনে হিশাম : ২/৪২৮, বিদায়া-নিহায়া : ৪/৪।] তাদেরকে মদীনা থেকে বের হওয়ার এবং এর নিকটে বসবাস না করার আদেশ করলেন। ফলে তারা সিরিয়ার আযরাআতে চলে গেল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মাল সম্পদ গণীমত হিসাবে তার এক পঞ্চমাংশ আয়ত্ব করে নিলেন। [যাদুল মাআদ : ৩/১২৬।] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এহেন সুপারিশের দরুন তাকে কোন শাস্তি দিলেন না। বরং ক্ষমা করে দিলেন।
উহুদ যুদ্ধে রাসূলের সাথে তার আচরণঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উহুদ যুদ্ধে বের হলেন। তিনি যখন মদীনা ও ওহুদের মাঝামাঝি পৌঁছলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এক তৃতীয়াংশ সেনা নিয়ে আলাদা হয়ে গেল, এবং তাদেরকে নিয়ে মদীনায় চলে আসল। জাবের রা. এর পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে হারাম তাদের পিছনে পিছনে গেলেন। অতঃপর তাদেরকে ভৎর্সনা করলেন ও পুনরায় ফিরে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ দিলেন। এবং তিনি বললেন, ‘চলে এসো এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর। অথবা শত্রুদেরকে প্রতিহত কর।’ তারা বলল, ‘আমরা যদি জানতাম তোমরা অবশ্যই যুদ্ধ করবে, তাহলে ফিরে যেতাম না।’ অতঃপর তাদেরকে নিন্দাবাদ করে তাদেরকে রেখে ফিরে এলেন। [যাদুল মাআদ : ৩/১৯৪, সীরাতে ইবনে হিশাম : ৩/৮, বিদায়া-নিহায়া : ৪/৫১।] এত বড় অপরাধ সত্ত্বেও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন শাস্তি দিলেন না।
আল্লাহর প্রতি আহবান করা থেকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বাধা প্রদানঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা’দ ইবনে উবাদা রা. কে দেখতে গেলেন। পথিমধ্যে আল্লাহর শত্রু আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের সাথে তার সাক্ষাৎ হল। তখন তার সাথে স্বীয় কওমের লোকজন উপস্থিত ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাহন থেকে নামলেন এবং সালাম করলেন। অতঃপর কিছুক্ষণ বসলেন। তিনি কুরআন তেলাওয়াত করে তাদেরকে আল্লাহর পথে দাওয়াত দিলেন। আল্লাহর কথা স্মরণ করালেন। ভয় দেখালেন ও সুসংবাদ দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কথা শেষ করলেন, তখন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই দাঁড়িয়ে বলল, ‘হে ব্যক্তি (নবী) আমি তোমার কথাগুলো ভালভাবে মেনে নিতে পারছি না। এগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে তুমি বাড়িতে বসে থাকলেই তো চলে। তোমার কাছে যারা আসে শুধুমাত্র তাদেরকেই এগুলো বয়ান করে শুনাও। তোমার কাছে যে আসে না, তাকে তুমি বিরক্ত কর না। কারো মজলিসে এমন কিছু নিয়ে এসো না যা সে অপছন্দ করে।’ [সীরাতে ইবনে হিশাম : ২/২১৮।] নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাজেও তাকে পাকড়াও করলেন না। বরং ক্ষমা করে দিলেন।
বনী নযীরকে আপন ভূমিতে বহাল রাখার চেষ্টা করা :
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার ইচ্ছা করে বনু নযীর যখন অঙ্গীকার ভঙ্গ করল, তখন তিনি তাদের নিকট মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামাকে এই আদেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন যে, তারা যেন এ শহর ছেড়ে চলে যায়। এদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নেতৃত্বে মুনাফিকরা বলে পাঠাল, তোমরা আপন জায়গায় থাক। নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে শত্রুর হাতে সোপর্দ করব না। যদি তোমরা যুদ্ধের সম্মুখীন হও, তাহলে আমরাও তোমাদের সাথে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করব। যদি তোমাদেরকে বের কের দেয়া হয়, তাহলে আমরাও তোমাদের সাথে বের হয়ে যাব। ফলে ইহুদীদের মনোবল আরো চাঙ্গা হয়ে গেল। তারা চুক্তি ভঙ্গের মাধ্যমে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বিরোধিতা করল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের নিকট গেলেন এবং তাদেরকে অবরোধ করলেন। অতঃপর আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সৃষ্টি করলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে দেশান্তর করলেন। তারা খায়বর গিয়ে আশ্রয় নিল। আর তাদের কেউ কেউ সিরিয়ায় চলে গেল। [সীরাতে ইবনে হিশাম : ৩/১৯২,আল বিদায় ওয়ান নিহায়া : ৪/৭৫, যাদুল মাআদ : ৩/১২৭।] নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের এহেন নিকৃষ্ট তৎপরতার কোন শাস্তি দিলেন না।
মুরাইসি যুদ্ধে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলমানেদের সাথে চক্রান্ত ও বিশ্বাস ঘাতকতাঃ
এ যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এমন একটি অপমানজনক কাজ করেছে, যার কারণে তাকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যায়ঃ
প্রথমতঃ মুনাফিকরা এ যুদ্ধে আয়েশা রা. এর প্রতি অপবাদ রচনা করে। যার নেতৃত্বে ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সালুল। [সহীহ আল - বুখারী : ৪১৪১, সহীহ মুসলিম : ২৭৭০, যাদুল মাআদ : ৩/২৫৬।]
দ্বিতীয়ত : এ যুদ্ধে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই যা বলেছিল আল-কুরআনে তা উল্লেখ করা হয়েছেঃ
‘‘আল্লাহর রাসূলের নিকট যারা রয়েছে তাদের জন্য তোমরা খরচ কর না, যতক্ষণ না তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।’’ [সূরা মুনাফিকুন : ৭।]
এর অনেক পর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের কর্ম-কৌশল আমাদের সামনে সুস্পষ্ট হল। আর উদ্ভাসিত হল ফেৎনার আগুন নিভিয়ে ফেলা ও অকল্যাণের মূলোৎপাটনের ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শিক রাজনীতি। সন্দেহ নেই, আল্লাহর অনুগ্রহ, আব্দুল্লাহ বিন উবাইয়ের ব্যাপারে তার দূরদর্শিতা, তার প্রতি তাঁর সহনশীলতা, তার প্রতি অনুগ্রহ এবং অপমানকর অবস্থানের মোকাবিলায় মুনাফিক নেতাকে ক্ষমা করে দেয়া এ সবগুলোর পিছনে ছিল নানাবিধ হিকমত ও কৌশল।
আর তা হলোঃ এ ব্যক্তির অনেক ভক্ত ছিল, ইসলামী দাওয়াতের ক্ষেত্রে তাদের পক্ষ থেকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ভয় ছিল। তাছাড়া সে বাহ্যিক দৃষ্টিতে মুসলমান ছিল, আর এ কারণেই যখন উমার ইবনে খাত্তাব রা. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে সুযোগ দিন, আমি এ মুনাফিক সর্দারের মাথা উড়িয়ে দিই।’
তখন তিনি তাকে বলেছিলেন, ‘তাকে ছেড়ে দাও, যাতে করে লোকেরা বলাবলি করতে না পারে যে, মুহাম্মাদ নিজ সাথিদের হত্যা করে।’ [সহীহ আল - বুখারী , হাদীস নং (৪৯০৫) ও সহীহ মুসলিম , হাদীস নং ( ২৫৮৪)।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি তাকে হত্যা করতেন তাহলে সেটি লোকদের ইসলামে প্রবেশ করার ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি করত । কারণ লোকেরা আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে মুসলিম বলেই জানত। তখন তারা বলত, মুহাম্মাদ মুসলমানদের হত্যা করে। তাতে করে নতুন ভাবে বিশৃঙ্খলার জন্ম নিত আর জাতীয় স্বার্থ ব্যাহত হত।
এখানে চিন্তা করলে দেখা যাবে নবীজীর পক্ষ থেকে ইসলামের ঐক্য ও শক্তি সুদৃঢ় রাখার প্রত্যয়ে এবং বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশংকায় ছোট খাট সমস্যার ক্ষেত্রে ধৈর্য ও প্রজ্ঞা প্রকাশ পেয়েছে। তাছাড়া তাকে প্রকাশ্য অবস্থার উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আর ভিতরগত বিষয়গুলো আল্লাহ তাআলার উপর ন্যস্ত করতে আদেশ দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ বিন উবাইকে হত্যা না করার তাৎপর্য কি, এটি উমার রা. প্রথম প্রথম বুঝতে পারেননি, তবে কিছুদিন পরে বুঝে আসে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, বিষয়টি আমি বুঝতে পেরেছি যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললামের সিদ্ধান্ত অবশ্যই আমার সিদ্ধান্ত অপেক্ষা অধিক বরকতময় ও কল্যাণকর।’ [আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া ৪/১৮৫, শরহে নববী ১৬/১৩৯।]
এভাবেই আল্লাহর পথে প্রত্যেক দাওয়াত-কর্মীকে নিজ নিজ দাওয়াতী কর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললামের অনুসরণ করে হিকমত ও প্রজ্ঞার রাস্তা অবলম্বন করা বাঞ্ছনীয়।
সপ্তম দৃষ্টান্তঃ ছুমামাহ বিন উসালের সাথেঃ
ইমাম বুখারী ও মুসলিম রহ. সাহাবী আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল অশ্বারোহীকে নজদ অভিমুখে অভিযানে প্রেরণ করেন। তারা বনী হানীফের একলোককে ধরে নিয়ে আসল। যার নাম ছিল, ‘ছুমামাহ বিন উসাল।’ সে ছিল ইয়ামামাবাসীদের নেতা।
তারা তাকে মসজিদের একটি খুটিতে বেঁধে রাখল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট আসলেন। তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে ছুমামাহ! আমাদের সম্পর্কে তোমার ধারণা কি?’ সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ ! আমার নিকট আপনাদের সম্পর্কে ভাল ধারণাই আছে। যদি আপনি হত্যা করেন, তাহলে হত্যাপোযুক্ত লোককেই হত্যা করবেন। আর যদি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ লোককেই অনুগ্রহ করবেন। আর আপনি যদি অর্থকড়ি নিতে চান তাহলে বলুন, আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রদান করা হবে।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রেখে চলে গেলেন। যখন পরের দিন আবার তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে ছুমামাহ! আমাদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?’ উত্তরে সে বলল, ‘আগে যা বলেছি তা-ই, যদি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকেই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি হত্যা করেন তাহলে হত্যাযোগ্য লোককেই হত্যা করবেন। আর যদি অর্থ-কড়ি নিতে চান তাহলে বলুন, আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রদান করা হবে।’
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রেখে চলে গলেন। যখন পরের দিন আসল, তখন বললেন, ‘হে ছুমামাহ আমাদের সম্পর্কে তোমার কি ধারণা?’ উত্তরে সে বলল, ‘আগে যা বলেছি তা-ই, যদি অনুগ্রহ করেন তাহলে একজন কৃতজ্ঞ ব্যক্তিকেই অনুগ্রহ করবেন। আর যদি হত্যা করেন, তাহলে হত্যাযোগ্য লোককেই হত্যা করবেন। আর যদি অর্থকড়ি নিতে চান তাহলে বলুন, আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রদান করা হবে।’
এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমরা ছুমামাহকে মুক্ত করে দাও।’ মুক্তি পেয়ে সে মসজিদের নিকটস্থ একটি খেজুর বাগানে গিয়ে গোসল করল। অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বলল, ‘আশহাদু আল লা ইলাহা... আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ তাআলা ব্যতীত আর কোন মা’বুদ নাই আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা এবং রাসূল। হে মুহাম্মাদ! আল্লাহর শপথ করে বলছি, পৃথিবীর বুকে আমার নিকট আপনার চেহারার চেয়ে অধিক ঘৃণিত কোন চেহারা ছিল না। আর এখন আপনার চেহারা অন্য সকল চেহারা অপেক্ষা আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমার নিকট আপনার ধর্ম অপেক্ষা অধিক ঘৃণিত আর কোন ধর্ম ছিলনা, আর এখন আপনার ধর্ম অন্য সকল ধর্ম থেকে আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় হয়ে গেছে। আল্লাহর শপথ করে বলছি, আপনার শহরই আমার নিকট ছিল সর্বাধিক ঘৃণিত শহর। আর এখন সেটিই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় হয়ে গেছে। আপনার প্রেরিত অশ্বারোহী বাহিনী যখন আমাকে গ্রেফতার করেছে তখন আমি উমরা পালনের নিয়ত করেছিলাম। আপনি এ বিষয়ে কি নির্দেশনা দেবেন? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সুসংবাদ দান করলেন এবং উমরা পালনের নির্দেশ দিলেন। তিনি মক্কায় আগমন করলে জনৈক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, ‘তুমি কি ধর্মত্যাগী হয়ে গেলে?’ উত্তরে সে বলল, ‘না, আল্লাহর কসম বরং আমি রাসূলুল্লাহর সাথে ইসলাম গ্রহণ করেছি। আল্লাহর শপথ করে বলছি, ‘এখন থেকে রাসূলুল্লাহর অনুমোদন ব্যতীত ইয়ামামাহ থেকে তোমাদের কাছে এক দানা গমও আর আসবে না।’ [সহীহ আল - বুখারী (৪৩৭২) ও সহীহ মুসলিম (১৭৬৪)।]
অতঃপর তিনি ইয়ামামায় চলে যান এবং ইয়ামামাবাসীকে মক্কায় কিছু রপ্তানি করতে নিষেধ করে দেন। এ অবস্থা দেখে মক্কাবাসীরা রাসূলুল্লাহর নিকট লিখল যে, ‘তুমি আত্মীয়তা রক্ষা করার নির্দেশ দিয়ে থাক, অথচ সে তুমিই আমাদের সাথে বন্ধন ছিন্ন করে দিলে। তুমি আমাদের পিতৃপুরুষদের তলোয়ার দ্বারা হত্যা করেছ। আর আমাদের সন্তানদের মারছ অনাহারে।’ চিঠি পেয়ে রাসূলুল্লাহ ছুমামাহকে খাদ্য রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার নির্দেশ পাঠালেন। [সীরাতে ইবনে হিশাম ৪/৩১৭ ও ফাতহুল বারী ৮/৮৮]
আললামা ইবনে হাজার রহ. উল্লেখ করেছেনঃ
ইবনে মাজাহ নিজ সনদে ইবনে আববাস রা. থেকে বর্ণনা করেন, ‘ছুমামাহর ইসলাম গ্রহণ, ইয়ামামায় প্রত্যাবর্তন, কুরাইশদের নিকট রসদ-সামগ্রী প্রেরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্পর্কেও আল্লাহ তাআলার নিম্নোক্ত আয়াত অবতীর্ণ করেছেনঃ
‘‘আমি তাদের আজাবের মাধ্যমে পাকড়াও করলাম। কিন্তু তারা তাদের পালনকর্তার তরে নত হলো না এবং কাকতি - মিনতিও করল না।’’{সূরা মুমিনূন:৭৬} [ইবনে হাজার বলেন: এর সনদ জাইয়্যেদ , দেখুন আল ইসাবাহ ... ৭/২০৩]
ইয়ামামাহ বাসীরা যখন স্বধর্মত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায়, তখন ছুমামাহ রা. নিজ ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন । তিনি এবং তার সম্প্রদায়ের যারা তার অনুসরণ করেছিল, তারা ইয়ামামাহ ছেড়ে এসে আলী আল - হাদরামীর সাথে মিশে বাহরাইনের মুরতাদ (ধর্মত্যাগী) দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন।
‘আললাহু আকবার’ কি চমৎকার সহনশীলতা ছিল নবী মুহাম্মাদের! কত উর্দ্ধে ছিল তার চিন্তা-চেতনা ও অবস্থান। তিনি অভিজাত ও সম্ভ্রান্ত শ্রেণীর লোকদের মধ্যে যাদের ইসলাম ও হেদায়াত কামনা করতেন। তাদের মন রক্ষার চেষ্টা করতেন। তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন এবং হৃদ্যতাপূর্ণ আচরণ অব্যাহত রাখতেন। যাতে তাদের ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার মাধ্যমে তাদের অনুসারীবৃন্দও ইসলাম গ্রহণে আগ্রহী হয় এবং ক্রমাগত ইসলামে দীক্ষিতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
এমনি করেই প্রত্যেক দাওয়াত কর্মীর কর্তব্য হবে সহনশীলতা ও অন্যায়কারীকে ক্ষমা করার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা। কেননা ছুমামাহ শপথ করে বলেছে তার ঘৃণা মুহুর্তের মধ্যে ভালোবাসায় রূপান্তরিত হয়ে গেছে। যখন সে দেখল, নবীজী তার সামনে কত সুন্দর করে সহনশীলতা, ক্ষমা ও বিনিময় বিহীন অনুগ্রহের দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
আর এ ক্ষমা ও উদারতা ছুমামার জীবনে ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকা ও ইসলামের প্রতি অন্যদেরকে দাওয়াত দেয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব সৃষ্টি করেছিল। [শারহু সহীহ মুসলিম লিন্নববী (১২/৮৯ ও ফাতহুল বারী (৮/৮৮)]
এজন্যেই তিনি বলেছিলেন:
أهم بترك القول ثم يردني ــ إلى القول إنعام النبي محمد
شكرت له فكي من الغل بعدما ــ رأيت خيالا من حسام مهند
‘কথা বলব না বলে পণ করি আমি তবে - মুহাম্মাদী করুণা সংকল্প ভাংতে বাধ্য করে মোরে।
ভারতে তৈরি ধারালো তলোয়ার দেখে, ছায়ামূর্তি (মৃত্যু) প্রত্যক্ষ করলাম, বন্দিত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলাম।’
অষ্টম দৃষ্টান্তঃ যে বেদুইন রাসূলুল্লাহকে চাদরসহ টান মেরেছিল তার সাথে তাঁর সহনশীল আচরণ
সাহাবী আনাস রা. বলেন, ‘আমি নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললামের সাথে চলছিলাম, তার গায়ে গাঢ় পাড় বিশিষ্ট একটি নাজরানী চাদর ছিল। পথিমধ্যে এক বেদুইন তাকে কাছে পেয়ে চাদর ধরে প্রচন্ড জোরে টান মারল। আমি তাকিয়ে দেখলাম, টানের তীব্রতার কারণে চাদরের পাড়ের মোটা অংশ তার কাঁধে দাগ সেঁটে দিয়েছে। অতঃপর সে বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! তোমার নিকট আল্লাহ প্রদত্ত যে সম্পদ রয়েছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বল।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন। অতঃপর তাকে কিছু দেয়ার নির্দেশ দিলেন। [সহীহ আল-সহীহ আল - বুখারী হাদীস নং (৩১৪৯) ও সহীহ মৃসলিম (১০৫৭)।]
এটিই হচ্ছে নবীজীর চমকপ্রদ ও উৎকর্ষপূর্ণ সহনশীলতা, উন্নততর চরিত্র, উত্তম ক্ষমা প্রদর্শন, নিজ জীবন ও সম্পদে আপতিত বিপদে ধৈর্য ধারণ এবং ইসলামপ্রিয় সহজ সরল ব্যক্তিবর্গের সাথে মার্জনাপূর্ণ অনুকরণীয় আদর্শের প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আল্লাহর রাস্তায় দাওয়াতকর্মীদের এ আদর্শের অনুকরণ একান্ত জরুরী। আরো জরুরী হচ্ছে তার সহনশীলতা, মার্জনাপূর্ণ সদাচরণ, ক্ষমা, উদারতা, প্রসন্ন মানসিকতা এবং দীন ইসলামের উপর আপতিত আঘাত উত্তম পদ্ধতিতে প্রতিহত করা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা। [ফাতহুল বারী ১০/৫০৬ শারহু সহীহ মুসলিম লিন নববী ৭/১৪৬,১৪৭]
নবম দৃষ্টান্তঃ হে আললাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, কারণ তারা বুঝে না
তার সহনশীলতার অন্যতম দৃষ্টান্ত হচ্ছে, তাকে যারা বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছে, অকথ্য নির্যাতন করেছে তাদের বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ করেননি । তাদের বিরুদ্ধে বদ-দু‘আ করার পূর্ণ স্বাধীনতা তার ছিল এবং এতে আল্লাহ তাআলা তাদের ধ্বংস করে দিতেন। কিন্তু তিনি ছিলেন সহনশীল, প্রজ্ঞাময়। দূরদর্শী চিন্তা চেতনা নিয়ে কাজ করতেন। উদ্দেশ্য ছিল সুদূর প্রসারী। আর সেটি হচ্ছে তাদের অথবা তাদের পরবর্তী প্রজন্মের ইসলাম গ্রহণের আকাংখা। এ জন্যেইতো আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রা. বলেন,
‘আমি যেন এখনো রাসূলুল্লাহ পানে তাকিয়ে আছি। তিনি জনৈক নবীর ঘটনা বর্ণনা করছেন, তার কওম তাকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে ফেলেছে আর তিনি নিজ মুখাবয়ব থেকে রক্ত মুছছেন আর বলছেন,
اللهم اغفر لقومي فإنهم لا يعلمون
‘হে আল্লাহ আমার জাতিকে ক্ষমা করে দিন, কারণ তারা জানে না।’ [সহীহ আল - বুখারী (৩৪৭৭) ও সহীহ মুসলিম (১৭৯২)]
নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও সহনশীলতার প্রশংসা করেছেন এবং তাকে অনেক বড় করে দেখেছেন। যেমন সাহাবী আশজ্জ আব্দুল কায়সকে বলেন :
إن فيك خصلتين يحبهما الله : الحلم و الأناة .
‘নিশ্চয়ই তোমার মধ্যে এমন দু'টো স্বভাব বিদ্যমান যা আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন: সহনশীলতা ও ধীরস্থিরতা’। [সহীহ মুসলিম ( ১৭/২৫)]
অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে:
আশজ্জ জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসূলাললাহ উক্ত সভাবদ্বয় কি আমিই অর্জন করেছি, না আল্লাহ আমার স্বভাবে প্রোথিত করে দিয়েছেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, ‘বরং আল্লাহ তাআলাই তোমার স্বভাবে সেগুলো জুড়ে দিয়েছেন।’ তখন তিনি বললেন, সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমার মধ্যে এমন দু'টো স্বভাব জুড়ে দিয়েছেন, যেগুলো আল্লাহ ও তার রাসূল পছন্দ করেন।’ [বর্ণনায় আবু দাউদ , হাদীস নং (৫২২৫) এবং আহমদ (৪/২০৬ ও ৩/২৩)]
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সহনশীলতা পছন্দ করতেন এবং তা নিজের মধ্যে তা লালন করতেন।
দশম দৃষ্টান্তঃ যে ইহুদী তাকে যাদু করেছিল তাকে তাকে ক্ষমা করে দেয়া
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমা প্রদর্শনের অন্যতম একটি দৃষ্টান্ত হল, যাদুকারী ইহুদীর প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন। যে তাঁকে যাদু করেছিল। তিনি কখনোই সে ইহুদীকে এ সম্পর্কে কিছু বলেননি এবং সেও তার চেহারায় মৃত্যু-পূর্ব পর্যন্ত কখনো কোন (বিরক্তিকর) কিছু দেখতে পায়নি। [বর্ণনায় আহমাদ (১৯২৮৬)]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/408/13
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।