মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।
আসসালামু আলাইকুম, Hadith.one বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে! আমাদের সার্ভারের মেয়াদ ১১ অক্টোবর ২০২৫ এ শেষ হবে, এবং এবং ওয়েবসাইট টি চালানোর জন্য আমাদের কোনো ফান্ড নেই।
🌟 আপনার দান এই প্ল্যাটফর্মকে বাঁচাতে পারে এবং প্রতিটি হাদিস পড়ার মাধ্যমে সদকাহ জারিয়ার অংশীদার হতে পারেন!
🔗 অনুগ্রহ করে আপনার দানের মাধ্যমে আমাদের এই ওয়েবসাইটটি চালিয়ে নিতে সাহায্য করুন!
জাযাকাল্লাহু খাইরান!
ষোড়শ পরিচ্ছেদ: সংস্কার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললাম এর কর্মকৌশল
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/408/18
১। সমাজ সংস্কার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কর্ম-কৌশল
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মদীনায় পৌঁছলেন সেখানকার অধিবাসীদের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও প্রচুর মতপার্থক্য ছিল। তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যও এক ছিল না। তারা একত্রিত হত নিজ নিজ গন্ডিতে । তাদের মধ্যে মতবিরোধ ছিল পুরাতন উত্তরাধিকার সূত্রে। কিছু কিছু নতুন মতবিরোধও ছিল। মদীনার অধিবাসীরা ছিল মূলত তিনভাগে বিভক্তঃ
১- মুসলমানঃ আউস, খাজরাজ ও মুহাজেরদেরদের সমন্বয়ে।
২- মুশরিকঃ আউস, খাজরাজ ও যারা ইসলামে প্রবেশ করেনি তাদের সমন্বয়ে।
৩- ইহুদীঃ তারা কয়েকটি গোত্রে বিভক্ত ছিল। এদের মধ্যে বনু কাইনুকা ছিল খাজরাজ গোত্রের মিত্র। বনু নযীর ও বনু কুরাইযাহ এ দু’ গোত্র ছিল আওস গোত্রের মিত্র।
আউস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে কঠিন বিরোধ ছিল। মধ্যযুগে তাদের মধ্যে অনেক যুদ্ধ হয়েছে। সর্বশেষ তাদের মধ্যে ‘বুয়াসের’ যুদ্ধ হয়েছিল। তার কিছু ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া তখনও তাদের মধ্যে চলমান ছিল। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৩য় খন্ড ২১৪পৃঃ ইবনে হিশাম ২য় খন্ড ১১৪ পৃঃ জাদুল মা’আদ ৩য় খন্ড ৬২ পৃঃ তারিখে ইসলাম মাহমুদ সাকের ২য় খন্ড ১৫৬ পৃঃ আর রহীকুল মাখতুম১৭১ পৃঃ সহীহ আল - বুখারী ৪২৮ সহীহ মুসলিম ৫২৪]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মহান কৌশল তার সুন্দর কুটনীতি দ্বারা এই সমস্ত সমস্যা সুন্দর ও স্থায়ীভাবে সমাধান করতে লাগলেন। এই সমস্ত অবস্থার সমাধান ও সংশোধন এবং মুসলমানদের চিন্তা চেতনা একত্রিত করার কার্যক্রম ছিল এ রকমঃ
১- মসজিদ তৈরী এবং সেখানে একত্রিত হওয়াঃ এই প্রথম কাজটি পরস্পরবিরোধী অন্তরগুলোকে একত্রিত করে দিল। সংশোধন এবং ঐক্য স্থাপনের ব্যাপারে প্রথম কাজ করলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে নববী প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এবং সকল মুসলমান তা নির্মাণের কাজে অংশ গ্রহণ করল। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন তাদের ইমাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এটাই ছিল প্রথম সেবা ও সহযোগিতা মূলক কাজ যা সমস্ত অন্তরকে এক সুতোয় গেঁথে দিল। এবং কর্মের সাধারণ লক্ষ্য স্পষ্ট করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমণের পূর্বে প্রত্যেক গোত্রে লোকদের মিলিত হওয়ার জন্য জন্য আলাদা এক একটি নির্দিষ্ট স্থান ছিল। তারা সেখানে রাত্রে বসে গল্প করত। রাতে জাগ্রত থাকত। কবিতা পাঠ করত। আর এ অবস্থা তাদের অনৈক্যেরই প্রমাণ ছিল ও অনৈক্য বিস্তারে সহায়ক ছিল। যখন মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হল, তখন তা সমস্ত মুসলমানদের কেন্দ্র হয়ে গেল ও তাদের সমবেত হওয়ার স্থান হিসেবে গণ্য হল।
সব সময় তারা সেখানে সমবেত হত। তারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করত। তিনি তাদেরকে শিক্ষা দিতেন, পথ প্রদর্শন করতেন, দিক নির্দেশনা দিতেন। [সহীহ আল - বুখারী ৩৯০৬]
এর মাধ্যমে সমস্ত আলাদা বৈঠকস্থলগুলো এক হয়ে গেল। সমস্ত মহল্লা এক জায়গায় চলে আসল। গোত্রগুলো কাছাকাছি আসল। উপদলগুলো ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হল। অনৈক্য ঐক্যের দ্বারা পরিবর্তিত হয়ে গেল। মদীনায় কোন একাধিক দল থাকল না। বরং সকল দল একটি দলে পরিণত হল। অনেক নেতা থাকল না। বরং নেতা এজনই হয়ে গেল। তিনি হলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তিনি তার প্রভুর নিকট থেকে আদেশ নিষেধ প্রাপ্ত হন, এবং তার উম্মতকে শিক্ষা দেন। মুসলমানরা এক কাতারের ন্যায় হয়ে গেল। সমস্ত সত্তা ও চিন্তা-চেতনার পথগুলো মিলে গেল একটি মোহনায়। তাদের ঐক্য শক্তিশালী হল। আত্মাগুলো শক্তিশালী বন্ধনে আবদ্ধ হল। শরীরগুলো একে অপরকে সাহায্য করল। [তারিখে ইসলামী মাহমুদ সাকের ২য় খন্ড ১৬১-১৬২ পৃঃ রাহীকুল মাখতুম ১৭৯ পৃঃ]
মসজিদ শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জায়গা ছিল না, বরং সেটি ছিল একটি বিশ্ববিদ্যালয়। মুসলমানরা সেখানে ইসলামের শিক্ষা ও দিকনির্দেশনা গ্রহণ করতো। সেখানে একত্রিত হতো, বিভিন্ন গোত্রের লোকজন পরস্পরে মিলিত হতো। যদিও জাহেলী যুগের যুদ্ধ বিগ্রহ, ঝগড়া তাদের মাধ্যে অনেকদিন পর্যন্ত ঘৃণার পরিবেশ তৈরী করে রেখেছিল। মসজিদকে তারা ঘাটি বানিয়ে নিয়েছিল সমস্ত কাজ পরিচালনার জন্য। সেখান থেকেই সব বিষয় প্রচার করা হত। পরামর্শ মূলক ও সিদ্ধান্তমূলক কাজের বৈঠকের স্থান ছিল মসজিদ।
এই জন্যই মদীনায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানেই অবস্থান করেছেন, প্রথমে সেখানে মসজিদ তৈরী করছেন। যেখানে মু’মিনগন একত্রিত হবে। যখন কুবায় অবস্থান করেছেন সেখানে মসজিদ বানিয়েছেন। জুমার নামাজ আদায় করেছেন বনী সালেম বিন আউফে, যা কুবা ও মদীনার মধ্যখানে নিচু জাগায় (রানুনা) নামক স্থানে অবস্থিত। মদীনায় পৌঁছে প্রথমে মসজিদ তৈরী করলেন। [তারিখে ইসলামী মাহমুদ সাকের ২য় খন্ড ১৬১-১৬২ পৃঃ রাহীকুল মাখতুম ১৭৯ পৃঃ]
২- ইহুদীদেরকে প্রজ্ঞাপূর্ণ কথা দ্বারা ইসলামের দাওয়াত দিলেন
সংস্কার ও ঐক্যের ঘাটি থেকে -যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় প্রবেশ করার পর বিণির্মান করেছিলেন- ইহুদীদের সাথে আব্দুল্লাহ বিন সাল্লামের মাধ্যমে যোগাযোগ শুরু করলেন এবং তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন।
আনাস রা. বর্ণনা করেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন সাল্লামের কাছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আসার সংবাদ পৌঁছল। তিনি রাসুলের নিকট এসে বললেন, ‘আমি আপনাকে তিনটি বিষয়ে প্রশ্ন করতে চাই। যার উত্তর নবী ব্যতীত আর কেউ দিতে পারবে না। কেয়ামতের প্রথম নিদর্শন কি? জানণাতবাসী প্রথমে কি খাবার খাবেন? সন্তান কেন তার পিতা অথবা মাতার মত হয়ে থাকে? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘এ প্রশ্নগুলি সম্পর্কে এখনই জিবরীল আমাকে সংবাদ দিয়েছেন।’ ইবনে সাল্লাম বললেন, ‘ফেরেশতাদের মধ্যে ইনিই তো ইহুদীদের শত্রু।’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘কেয়ামতের প্রথম আলামত হল, আগুন আসবে এবং পূর্ব পশ্চিমের মানুষকে একত্রিত করবে। প্রথম খাদ্য যা জান্নাতবাসীরা গ্রহণ করবে তা হল মাছের কলিজার অতিরিক্ত অংশ। আর সন্তান পিতা বা মাতার মত এই কারণে যে, পুরুষ যখন নারীর সাথে মিলিত হয় কখনও পুরুষের বীর্য আগে প্রবেশ করে, তখন সন্তান তার মত আকৃতি ধারণ করে। আর যদি নারীর বীর্য আগে প্রবেশ করে তবে সন্তান তার আকৃতি ধারণ করে।’
আব্দুল্লাহ বিন সাল্লাম বললেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসুল।’ তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! ইহুদীরা মিথ্যারোপকারী জাতি। আপনি তাদেরকে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করার পূবে যদি তারা আমার ইসলাম গ্রহণ সম্পর্কে জানতে পারে তা হলে আপনার নিকট আমার সম্পর্কে মিথ্যা বলবে।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডেকে পাঠালেন, তারা রাসুলের নিকট আসল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, ‘হে ইহুদী জাতি! তোমাদের ধংস হোক। তোমরা আললাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর শপথ যিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই। তোমরা জান আমি আল্লাহর সত্য রাসূল। আমি তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছি। তোমরা ইসলামে প্রবেশ কর।’ তারা বলল, ‘এ সম্পর্কে আমরা কিছু জানিনা।’ এ কথা তারা তিনবার বলল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বললেন, ‘আব্দুল্লাহ বিন সাল্লাম তোমাদের মধ্যে কেমন লোক? তারা বলল, ‘সে তো আমাদের নেতা। আমাদের নেতার সন্তান। আমাদের মধ্যে বড় আলেম-বিদ্বান। আমাদের বড় আলেমের সন্তান।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘সে ইসলাম গ্রহণ করলে তোমরা কি করবে?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর আশ্রয়! সে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে না।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, ‘সে ইসলাম গ্রহণ করলে তোমরা কি করবে?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর আশ্রয়! সে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে না।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার বললেন, ‘সে ইসলাম গ্রহণ করলে তোমরা কি করবে?’ তারা বলল, ‘আল্লাহর আশ্রয়! সে ইসলাম গ্রহণ করতে পারে না।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘হে ইবনে সাল্লাম! তাদের সামনে বের হও?’ ইবনে সাল্লাম বের হয়ে বললেন, ‘হে ইহুদী সম্প্রদায়! তোমরা আললাহকে ভয় কর। ঐ আল্লাহর শপথ যিনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই, তোমরা জান তিনি আল্লাহর রাসুল, তিনি সত্য নিয়ে এসেছেন। তারা সকলে বলল, ‘তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি আমাদের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তির ছেলে।’ এবং তারা সকলে তার উপর আঘাত করল। [সহীহ আল - বুখারী ৩৩২৯ শব্দ সহীহ আল - বুখারীর তিন অধ্যায় থেকে আল-বিদায়া ওয়ান- নিহায়া ৩য় খন্ড ২১০ পৃঃ]
এটাই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ইহুদীদের নিকট থেকে সর্বপ্রথম অভিজ্ঞতা যা তিনি অর্জন করেছিলেন মদীনায় প্রবেশ করার পর।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্দর কৌশল এর মধ্য থেকে একটি হল, তিনি আব্দুল্লাহ বিন সাল্লামের ইসলামের বিষয়টি গোপন করার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন। সাথে সাথে তাদের মধ্যে তার মর্যাদার বিষয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিলেন। যখন তারা তার প্রশংসা করল, ও তার মর্যাদা উচ্চ করে তুলে ধরল। তখনই রাসুল তাকে বের হতে নির্দেশ দিলেন। তিনি বের হলেন, ও ইসলাম প্রকাশ করলেন, এবং ইহুদীরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সত্যতার ব্যাপারে যা গোপন করত তা প্রকাশ করে দিলেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ঐ অঙ্গীকারে আবদ্ধ করলেন যা পরবর্তীতে আলোচনায় আসবে।
৩- মুহাজের ও আনছারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি করাঃ
যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদ নির্মাণ ও ইহুদীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে শুরু করলেন তার কর্মতৎপরতা। অনুরূপভাবে মুহাজের ও আনছারদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করলেন। আর এটাই হল নবুওয়তী উৎকর্ষতা, সৎপথ প্রদর্শন, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও মুহাম্মাদী প্রজ্ঞা। [হাজাল হাবিব ইয়া মুহিব ১৭৮ পৃঃ]ব
তাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব তৈরী করলেন আনাস বিন মালেক রা. এর ঘরে। তারা নববই জন ছিলেন। অর্ধেক মুহাজের, অর্ধেক আনছার। তাদের মধ্যে সহমর্মিতার বন্ধন সৃষ্টি করলেন, মৃত্যুর পর নিকট আত্মীয় না হওয়া সত্বেও পরস্পরে একে অন্যের উত্তরাধিকারী হবেন। এ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের এ নিয়ম চলতে থাকে বদরের যুদ্ধ সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত। যখন আয়াত অবতীর্ণ হলঃ
‘‘এবং আল্লাহর বিধানে আত্মীয়গণ একে অন্যের অপেক্ষা অধিক হকদার।’’ [সুরা আল- আনফাল ৭৫]
তখন থেকে শুধু আত্মীয়তার ভিত্তিতে উত্তরাধিকার ফিরে আসল। ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কারণে উত্তরাধিকার রহিত হয়ে গেল।
জাহেলী যুগের স্বজনপ্রীতি ধুয়ে মুছে গেল। শুধু ইসলামের বিধান অবশিষ্ট রইল। বংশ, বর্ণ এবং ও জাতিভেদের পার্থক্য দূর হয়ে গেল। কেহ সামনে বা পিছনে যেতে পারবে না মানুষত্ব ও তাকওয়া ব্যতীত। ভ্রাতৃত্ব, কুরবানী ও সহমর্মিতার অনুভুতিই সেখানে ছিল মুখ্য। এই ভ্রাতৃত্বের মধ্যে পরস্পরের ভালোবাসা ছিল। নতুন এই সমাজ ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণে পরিপূর্ণ ছিল। আর এই ভ্রাতৃত্বের মধ্যে ইসলামের মানবিক এবং চারিত্রিক ইনসাফের শক্তিশালী রূপ ফুটে উঠেছে। [যাদুল মাআদ ৩য় খন্ড ৬৩পৃঃ, আর-রহীকুল মাখতুম ১৮০ পৃঃ]
আর এই ভ্রতৃত্ব এমন অঙ্গীকার ছিল না যা শুধু কাগজে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। এমন কথাও ছিল না যা শুধু মুখে বলা হয়েছে। বরং এমনই এক ভ্রতৃত্ব ছিল যা অন্তরের পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছিল। তার প্রয়োগ হয়েছে রক্ত ও সম্পদের মাধ্যমে। শুধু মুখের কথা নয়। কথা ও কাজ, জান ও মাল, সুখ ও দুঃখের ভ্রাতৃত্ব ছিল এটি। [তারিখে ইসলামী মাহমুদ সাকের ২য় খন্ড ১৬৫, ফিকহুস সীরাহ ১৯২ পৃঃ]
এই বিষয়ের উত্তম উদাহরণ ইমাম বুখারী তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্দুর রহমান বিন আউফ রা. ও সাআদ বিন রবিইর রা. মধ্যে ভাইয়ের সম্পর্ক গড়ে দিলেন। সাআদ বললেন, ‘আনছাররা জানে যে, আমি তাদের মধ্যে বেশি ধনী। আমি আমার সম্পদ দুই ভাগে ভাগ করব। অর্ধেক থাকবে আমার, আর অর্ধেক তোমার। আমার দুইজন স্ত্রী আছে। তোমার কাছে যাকে বেশি পছন্দ হয় তাকে নিয়ে নাও। আমি তাকে তালাক দিব। যখন তার তালাকের ইদ্দত পূর্ণ হয়ে যাবে, তুমি তাকে বিবাহ করবে। আব্দুর রহমান বিন আওফ রা. বললেন, ‘আল্লাহ তোমার সম্পদে ও সন্তান সন্ততিতে বরকত দান করুন। তোমাদের বাজার কোথায়?’ তারা তাকে বনু কায়নুকার বাজার দেখিয়ে দিল। তিনি বাজার থেকে ফিরলেন। তার হাতে পনির ও মাখনের কিছু অংশ ছিল। পরের দিনও তাই করলেন। এভাবে কাজ করতে থাকলেন। অতঃপর একদিন তার শরীরে মেহেদীর রং দেখা গেল। তা দেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার কি অবস্থা?’ তিনি বললেন, ‘আমি আনছারদের এক মহিলাকে বিবাহ করেছি।’ রাসুল বললেন, ‘মহরানা কি দিয়েছো?’ তিনি বললেন, ‘খেজুরের দানার ওজন পরিমান স্বর্ণ বা খেজুরের দানা পরিমান স্বর্ণ।’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘অলীমা (ভৌভাতের) আয়োজন কর, একটি ছাগল দিয়ে হলেও।’ [সহীহ আল - বুখারী ৩৭৮০-৩৭৮১]
এ ভ্রাতৃত্ব ছিল একটি কল্যাণকর কৌশল এবং সঠিক কুটনীতি। এবং অনেকগুলো সমস্যা মুসলমানরা যার সম্মুখীন হচ্ছিল তার সুন্দর সমাধান ছিল এ ভ্রাতৃত্ববন্ধন।
৪- বিচক্ষণ শিক্ষা
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে শিক্ষা-দীক্ষা, আত্মশুদ্ধির বিষয়ে অঙ্গীকারাবদ্ধ করেছিলেন। সুন্দর চরিত্রের বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করছিলেন। তাদেরকে শিষ্টাচার শিক্ষা দিচ্ছিলেন ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ইজ্জত, সম্মান, ইবাদত, ও আনুগত্যের বিষয়ে। [আর-রাহীকুল মাখতুম ১৭৯-১৮১ এবং ২০৮ পৃঃ তারিখে ইসলামী মাহমুদ সাকের ২য় খন্ড ১৬৫ পৃঃ]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, ‘হে মানবমন্ডলী! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, লোকদেরকে খাবার দাও, এবং রাত্রিতে নামাজ পড় যখন মানুষেরা ঘুমে থাকে, তাহলে জান্নাতে নিরাপদে প্রবেশ করতে পারবে।’ [তিরমিযী ২৪৮৫, ইবনে মাজাহ ৩২৫১, দারামী ১ম খন্ড ১৫৬ পৃঃ, আহমাদ ১ম খন্ড ১৫৬ পৃঃ]
তিনি আরো বলেন, ‘যার প্রতিবেশী তার কষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ [সহীহ মুসলিম ৪৬]
‘প্রকৃত মুসলমান সেই যার জিহবা ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে।’ [সহীহ আল - বুখারী ১১, সহীহ মুসলিম ৪১]
তিনি আরো বলেন, ‘তোমাদের কেহ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার নিজের জন্য যা পছন্দ করবে তা তার ভাইয়ের জন্যও তা পছন্দ করবে।’ [সহীহ আল - বুখারী ১৩, সহীহ মুসলিম ৪৫]
তিনি বলেন, ‘একজন মু’মিন আর একজন মু’মিনের জন্য প্রসাদের ন্যায় যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তিশালী করে।’ এ কথা বলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাতের আঙ্গুলীসমূহ একটি অপরটির মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেখিয়ে দিলেন। [সহীহ মুসলিম ২৫৬৪]
তিনি বলেন, ‘তোমরা পরস্পরে হিংসা করো না, গুপ্তচরবৃত্তি করো না, পরস্পরে শত্রুতায় লিপ্ত হয়ো না, একে অন্যের পিছনে লেগে থাকবে না, একে অপরের বেচাকেনার উপর বেচাকেনা করো না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসেবে সকলে ভাই ভাই হয়ে যাও। মুসলমান মুসলমানের ভাই। সে তাকে অত্যাচার করবে না। সে তাকে শত্রুর হাতে অর্পণ করবে না। সে তাকে তুচ্ছ করবে না। তাকওয়া এখানেই,’- এ কথা বলে বুকের দিকে তিনবার ইশারা করলেন- কোন লোকের নিকৃষ্ট হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে তার মুসলমান ভাইকে অপমান করবে। প্রত্যেক মুসলমানের রক্ত অন্য মুসলমানের জন্য নিষিদ্ধ হল। এমনিভাবে নিষিদ্ধ হল তার সম্পদ।’ [সহীহ আল - বুখারী ৬০৭৭ সহীহ মুসলিম ২৫৬০]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কোন মুসলমানের জন্য বৈধ নয় যে, সে তার ভাইয়ের সাথে তিন রাতের বেশি সম্পর্ক ছিন্ন করে থাকবে। এটাও বৈধ নয়, যখন সাক্ষাত ঘটবে সে মুখ ফিরিয়ে নেবে বা অন্যজন মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাদের দু’জনের মধ্যে সেই উত্তম যে প্রথম সালাম দেবে।’ [সহীহ মুসলিম ২৫৬৫]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সোমবার বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খোলা হয়, যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে না তাদের সকলকে আল্লাহ মাফ করে দেন। কিন্তু তাকে আল্লাহ মাফ করেন না, যার ভাইয়ের সাথে তার বিবাদ আছে। বলা হয়, এই দু’জনকে অবকাশ দাও, যেন সংশোধিত হয়ে যায়। এই দু’জনকে অবকাশ দাও, যেন সংশোধিত হয়ে যায়। এই দু’জনকে অবকাশ দাও, যেন সংশোধিত হয়ে যায়।’ [সহীহ মুসলিম ২৫৮৪, আহমাদ ৩য় খন্ড ৯৯পৃঃ সহীহ আল - বুখারী ২৪৪৩ ও ২৪৪৪]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমল সমূহকে পেশ করা হয় প্রত্যেক বৃহস্পতি ও সোমবার। সেদিন আল্লাহ ঐ সকল ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন যারা আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করে না। কিন্তু কোন ব্যক্তির যদি তার ভাইয়ের সাথে হিংসা থাকে, তখন বলা হবে এ দুজনকে সংশোধিত হওয়া পর্যন্ত দুরে রাখ। এ দুজনকে সংশোধিত হওয়া পর্যন্ত দুরে রাখ।’ [সহীহ মুসলিম ১৯৮৮/৪]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমার ভাইকে সাহায্য কর। হোক সে অত্যাচারী বা অত্যাচারিত।’ অনেকে প্রশ্ন করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! একে অত্যাচারিত অবস্থায় সাহায্য করব এটা আমরা বুঝলাম। কিন্তু অত্যাচারী অবস্থায় কিভাবে সাহায্য করব?’ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাকে অত্যাচার থেকে ফিরিয়ে রাখবে, এটাই তার সাহায্য।’ [সহীহ মুসলিম ১৯৯৮]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘মুসলমানের উপর মুসলমানের ছয়টি অধিকার রয়েছে।’ প্রশ্ন করা হল, ‘হে আল্লাহর রাসুল সেগুলো কি?’ তিনি বললেন, ‘সাক্ষাতে তাকে সালাম দেবে, দাওয়াত দিলে গ্রহণ করবে, উপদেশ চাইলে উপদেশ দেবে, হাঁচি দেয়ার পর আলহামদু লিল্লাহ বললে তুমি তার উত্তর দেবে, অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাবে।’ [সহীহ আল - বুখারী -জানাযা অধ্যায়, সহীহ মুসলিম -সালাম অধ্যায়]
বারা ইবনে আযেব রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের সাতটি বিষয় গ্রহণ এবং সাতটি বিষয় বর্জনের আদেশ করেছেন। আদেশ করেছেনঃ রোগীর সেবা, জানাযায় অংশ গ্রহণ, হাঁচি দাতা আলহামদুলিল্লাহ বললে তার উত্তর প্রদান, নিমন্ত্রণকারীর নিমন্ত্রণ গ্রহণ, সালামের প্রসার, অত্যাচারিতের সাহায্য ও শপথকারীকে দায়মুক্ত করার। এবং নিষেধ করেছেন, স্বর্ণের আংটি ব্যবহার, স্বণের্র পাত্রে আহার, উটের হাওদায় রেশম বা সিল্ক ব্যবহার, কাপড়ে সিল্কের কারুকাজ, সিল্কের পোষাক পরিধান, দীবাজ, এবং ইস্তিবরাক [এ দুটি ও সিল্কের দুইটি বস্ত্র বিশেষ।] থেকে। [সহীহ আল - বুখারী, ১২৩৯।]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘তোমারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষণ না ঈমানদার হবে। আর ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি? তোমাদের এমন বস্ত্তর দিকে পথ নির্দেশ করব না যা করলে তোমাদের পরস্পররের ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তাহল, তোমাদের মাঝে সালামের প্রসার কর।’ [সহীহ মুসলিম , ৫৪।]
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ইসলামে কোন কাজটি উত্তম? বললেন, ‘খাদ্য দান এবং পরিচিত ও অপরিচিত সবাইকে সালাম দেয়া।’ [সহীহ আল - বুখারী ১২, সহীহ মুসলিম ৩৯]
তিনি আরো বলছেন, ‘মু’মিনগণের পরস্পরের বন্ধুত্ব, সহানুভূতি, সহমর্মিতার উদাহরণ হল একটি দেহের মত। যদি এর কোন একটি অঙ্গ অসুস্থ হয়ে যায় তা হলে তা পুরো শরীরে নিদ্রাহীনতা ও জ্বরের ন্যায় অনুভূত হয়।’ [সহীহ আল - বুখারী ৬০১১, সহীহ মুসলিম ২৫৮৬]
নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে রহম বা অনুগ্রহ করে না সে অনুগ্রহ পায় না।’ [সহীহ আল - বুখারী, ৬০১৩ সহীহ মুসলিম ,২৩১৯।]
রাসূল সাললাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামআরো বলেন, ‘যে মানুষের প্রতি দয়া করেনা আল্লাহ তার প্রতি দয়া করেন না।’ [সহীহ মুসলিম কিতাবুল ফাদায়িল।]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া হল পাপ কাজ, তাকে হত্যা করা কুফরী।’ [সহীহ আল - বুখারী ৪৮।]
আনসারদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এ সকল বাণী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি পৌঁছে থাক বা এর কিছু হিজরতের পূর্বে যে সব মুহাজির নবী সাললাললাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শ্রবণ করেছেন তাদের কাছ থেকে শ্রবণ করুক। এ সবই তার পক্ষ হতে সকল সাহাবীদের জন্য শিক্ষা। এবং কেয়ামত অবধি যার কাছেই এ উদ্ধৃতি পৌঁছবে তাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক শিক্ষা, প্রশিক্ষণ বলে বিবেচিত হবে।
অনুরূপ তার আরো অনেক বাণী যা দ্বারা তিনি সাহাবীদের শিক্ষা দিয়েছেন। যেমন তিনি তাদের দান করার প্রতি উৎসাহ দিতেন, দানের ফযিলত বর্ণনা করতেন যা তাদের হৃদয় মনকে আকৃষ্ট করতো। ভিক্ষাবৃত্তি নিষেধ করতেন, ধৈর্যের গুণ ও অল্পে তুষ্ট থাকার জন্য বলতেন। তাদের ইবাদতের প্রতি আগ্রহী করে তুলতেন; যাতে রয়েছে অনেক ফযিলত, সওয়াব, পুরস্কার এবং তাদেরকে অহীর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করে দিতেন। তিনি তাদের পাঠ করে শুনাতেন। তারা ও তাকে পাঠ করে শুনাতো। এ সকলই ছিল নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অবর্তমানে এগুলো হল দাঈ ও আলেম-উলামাদের দায়িত্ব।
এমনিভাবে তিনি তাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়কে উন্নত করেছেন। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন সুউচ্চ মূল্যবোধ। এতে করে তারা উপনীত হয়েছিলেন মানবীয় গুণাবলির সর্বোচ্চ শিখরে।
ফলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পক্ষে সম্ভব হয়ে ছিল উন্নত ও আললাহ-ভীরু একটি ইসলামী সমাজ বিনির্মাণ যা ইতিহাসে সুপরিচিতি লাভ করেছিল। এবং যে সমাজ পতিত ছিল বর্বরতা, মূর্খতা ও কুসংস্কারের গহীন অন্ধকারে সে সমাজ পেয়েছিল তার থেকে একটি সমাধান। অতঃপর তা পরিণত হয়েছিল এমন এক সমাজে যা মানবীয় সকল গুণাবলির দৃষ্টান্তে পরিণত হয়েছিল। আর এটা সম্ভব হয়েছিল একমাত্র আল্লাহর রহমতে তারপরে এ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুগ্রহে। তাই আল্লাহর দিকে আহবানকারীদের কর্তব্য হল তারা তার পথ অনুসরণ করবে, এবং তার দেখানো পথেই তারা হেদায়েত অনুসন্ধান করবে। [আররাহীকুল মাখতুম ১৮৩।]
৫- মুহাজির ও আনসারদের প্রতিজ্ঞা এবং ইহুদীদের সন্ধি
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার পর একটি চুক্তি সম্পাদন করেন যার মাধ্যমে জাহেলী শেওলা এবং গোত্রীয় ঝগড়া- বিবাদ বন্ধ হয়। জাহেলী তাকলীদ বা অন্ধানুকরণ করার আর কোন অবকাশ রইল না। এবং পরস্পরের এ চুক্তির মধ্যে, মুহাজির ও আনসারদের জন্য মদীনায় অবস্থানরত ইহুদীদের প্রতি সংহতি প্রদর্শনের অঙ্গীকারও ছিল। এ চুক্তি ও অঙ্গীকার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের পক্ষে সমাজ সংস্কার এবং সমাজ বিনির্মাণে এক উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা। যা বিশ্বের ইতিহাসে ‘মদীনা সনদ’ নামে পরিচিত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুহাজির ও আনসারদের মাঝে একটি চুক্তি করলেন। তাতে ইহুদীদের সাথেও শত্রুতা ছেড়ে সন্ধি করা হয়েছিল। ইহুদীদের নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। তাদের সম্পদের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল এবং উভয় পক্ষের কল্যাণে কতিপয় শর্ত ঘোষণা করা হয়েছিল। [আল-বিদায়া ওয়াননিহায়া ২২৪-২২৬/৩।]
এ অঙ্গীকার ছিল বিচক্ষণ ও শ্রেষ্ঠ রাজনীতির পরিচায়ক এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাললামের পক্ষ থেকে পূর্ণ এক বিজ্ঞানময় সিদ্ধান্ত। যা মদীনার সকল মুসলিম ও ইহুদীদের একত্র করেছিল। তারা একটি জোটে পরিণত হয়েছিল। মদীনার উপর আক্রমনকারী যে কোন শত্রুর মোকাবেলায় দাঁড়াতে তারা সক্ষম ছিল ।
এ পাঁচটি পরিকল্পনাঃ মসজিদ নির্মাণ, ইসলামের দিকে ইহুদীদেরকে আহবান, মুমিনদের পরস্পর ভ্রাতৃত্ব , তাদের প্রশিক্ষণ ও চুক্তি সম্পাদন।
এ পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর অনুগ্রহে সমাধান করেছিলেন মদীনায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর একটি তিক্ত বিরোধের। এবং প্রাচীন সকল প্রভাব, বিবাদ অপসারণ করেছেন। মুসলমানের হৃদয়ে মিলন সৃষ্টি করেছেন এবং এ কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে মদীনায় নিখুত একটি শাসন ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। অতঃপর এ শাসনব্যবস্থা এবং আল্লাহর দিকে আহবান মদীনা হতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল। [আর রাহিকুল মাখতুম ১৭১,১৭৮,১৮৫।]
সোশ্যাল মিডিয়ায় হাদিস শেয়ার করুন
Or Copy Link
https://hadith.one/bn/book/408/18
রিডিং সেটিংস
Bangla
English
Bangla
Indonesian
Urdu
System
System
Dark
Green
Teal
Purple
Brown
Sepia
আরবি ফন্ট নির্বাচন
Kfgq Hafs
Kfgq Hafs
Qalam
Scheherazade
Kaleel
Madani
Khayma
অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন
Kalpurush
Kalpurush
Rajdip
Bensen
Ekushe
Alinur Nakkhatra
Dhakaiya
Saboj Charulota
Niladri Nur
22
17
সাধারণ সেটিংস
আরবি দেখান
অনুবাদ দেখান
রেফারেন্স দেখান
হাদিস পাশাপাশি দেখান
এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন
মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।