hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী

লেখকঃ আবু আব্দুর রাহমান

১৫
ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহমর্মিতা ও কোমলতা
প্রথমতঃ সহানুভূতিশীলতার প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উৎসাহ প্রদানঃ

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, ‘যাকে সহমর্মিতা বা সহানুভূতিতা প্রদান করা হল, দুনিয়া ও আখেরাতের সর্ব প্রকার কল্যাণ তাকেই প্রদান করা হল, আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা, উত্তম চরিত্র এবং উত্তম প্রতিবেশী শহরকে বসবাস করার উপযোগী করে এবং তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করে।’ [আহমাদ:৫১৯]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি বিষয়ে নমনীয়তা, দয়াদ্রতা এবং সহানুভূতির প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন এবং তার কথা, কাজ ও ব্যবহারের মাধ্যমে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। এ ছাড়া সকল গুণাবলির বাস্তব প্রয়োগ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন, যাতে প্রতিটি উম্মত তাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে তা কাজে লাগাতে পারে।

বিশেষ করে, আল্লাহর দিকে আহবানকারী দাওয়াত-কর্মী ও সংস্কারকদের এ বিষয়ে আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে। কারণ, তাদের জন্য নম্রতা, সহনশীলতা, সহানুভূতি, তাদের দাওয়াতের ক্ষেত্রে উঠা-বসা চলাফেরা ইত্যাদিতে। মোট কথা প্রতিটি মুহূর্তে তাদের জন্য এর অনুশীলন এবং চর্চা একান্ত অপরিহার্য।

উল্লেখিত হাদীস এবং পরবর্তী হাদীসগুলোতে নম্র ব্যবহার ইত্যাদির ফজীলত ও বিনয়ী হওয়ার প্রতি উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া যে কোন উত্তম চরিত্রে চরিত্রবান হওয়া, খারাপ আচরণ ও দুশ্চরিত্র হতে বিরত থাকা এবং খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করার প্রতিও দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।

মনে রাখতে হবে, নম্রতা সকল কল্যাণের দ্বার খুলে দেয় এবং সকল প্রকার মহৎ উদ্দেশ্য নম্রতা -ভদ্রতা এবং সৎ-চরিত্রের মাধ্যমেই অর্জিত হয়। যাদের মধ্যে এ সব গুণাবলি রয়েছে তাদের জন্য তাদের গন্তব্যে পৌঁছা বা উদ্দেশ্য হাসিল করা খুবই সহজ হয়।

আর নম্রতা বা সুন্দর চরিত্র দ্বারা যে সওয়াব বা পুণ্য লাভ হয়, তার বিপরীতে অন্য কোন নেক আমল দ্বারা তা কল্পনা করা দুষ্কর ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভদ্রতা হতে সতর্ক করেছেন। এবং তার উম্মতের উপর কোন ধরনের কঠোরতা করা হতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেন।

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার এ ঘরেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের কেউ যদি ক্ষমতাশীল হয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অন্যায়ভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ করে, তুমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ এবং কঠিন আচরণ কর।’ [সহীহ মুসলিম :১৮২৮]

‘আর যে ক্ষমতাশীল হওয়া সত্ত্বেও তা অন্যায়ভাবে প্রয়োগ না করে মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার ও নম্র -ভদ্র আচরণ করল, তুমি তার সাথে ভাল ব্যবহার এবং তার প্রতি দয়া কর।’

রাসূল কাউকে বিশেষ কোন কাজে প্রেরণ করলে, তাকে সহজ করা, চাপ প্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন না করার আদেশ দিতেন।

আবু মুসা আশয়ারী রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে কোন কাজের দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করলে বলতেন, ‘তোমরা সুসংবাদ দাও, সহজ কর এবং কঠোরতা করো না।’ [সহীহ মুসলিম : ১৭৩২]

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ যখন কোন পরিবারে কল্যাণ চান তাদেরকে নম্র হওয়ার সুযোগ দেন।’ [আহমাদ:১২১৯]

আবু মুসা আল আশআরী ও মুআজ ইবনে জাবালকে ইয়েমেনের উদ্দেশ্যে প্রেরণের সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বলেন, ‘তোমরা মানুষের উপর সহজ কর। কঠিন করো না। তাদের সুসংবাদ দাও, আতঙ্কিত করো না। আনুগত্য করো মতবিরোধ করো না।’ [সহীহ আল - বুখারী ৪৩৪৪,২৩৪৫ সহীহ মুসলিম :১৭৩৩]

আনাস রা. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা সহজ কর, কঠিন করো না সুসংবাদ দাও আতঙ্কিত করো না।’ [সহীহ আল - বুখারী ৬৯, সহীহ মুসলিম :১৭৩২]

উল্লেখিত হাদীসগুলোর শব্দাবলীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহজ করার আদেশ এবং এর বিপরীতে কঠিন করার নিষেধ দুটোই উল্লেখ করেন। কারণ, হতে পারে কোন ব্যক্তি কখনো সহজ করল এবং কখনো কঠিন করল আবার কখনো সুসংবাদ দিল আবার কখনো আজাব এবং শাস্তির কথা শুনালো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে যদি শুধু সহজ করার কথা বলতেন, তাহলে কোন ব্যক্তি একবার বা একাধিকবার সহজ করলেই তাকে হাদীসের ভাষার মর্মার্থের প্রতি আনুগত্যশীল বলা যেত। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন আলাদা ভাবে ‘কঠোরতা করো না’ বললেন, তখন কঠোরতার বিষয়টি সর্বাবস্থায় সর্বক্ষেত্রে এবং সকল বিষয়ে রহিত হয়ে যায়। আর হাদীসের

অন্তর্নিহিত মর্মবাণী এ দিকেই নির্দেশ করেন।

অনুরূপভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা আনুগত্য কর, মতবিরোধ করো না।’ দুটি শব্দ বলার কারণ হল, দুই জন কখনো কোন বিষয়ে এক হলেও, আবার কখনো দেখা গেল মতপার্থক্য করল। আবার কোন বিষয়ে একমত হল আবার অন্য কোন বিষয়ে একমত না ও হতে পারে। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘তোমরা বিচ্ছিন্ন হয়ো না’ কথাটা আলাদাভাবে বলে দিলেন, ফলে বিচ্ছিন্ন হওয়া সব সময়ের জন্য এবং সকল ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ হয়ে গেল।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও বিভিন্ন হাদীসে আল্লাহর অসংখ্য নেআমত, মহা পুরস্কার এবং আল্লাহর অপার অনুগ্রহের সু-সংবাদ দেয়ার প্রতি উৎসাহ প্রদান ব্যতীত শুধু আজাব-গজব, শাস্তি -ধমকি, হুমকি দিয়ে মানুষকে আতঙ্কিত করা হতে নিষেধ করেন।

হাদীসের নির্দেশাবলীতে ‘মন রক্ষা কর, তাদের উপর কোন প্রকার কঠোরতা করো না’ করা হয় ইসলামে নব দীক্ষিতদের জন্য।

এ ছাড়াও প্রাপ্ত বয়স্ক ও যারা গুনাহের কাজ হতে ফিরে আসতে চায় তাদের প্রতি নমনীয় আচরণ করে ধীরে ধীরে তাদের ইসলামের অনুশাসনে অভ্যস্ত করতে হবে। হাদীসে যে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে তাতে এ ধরনের লোকদেরও ইসলামী জীবন যাপন পদ্ধতি অবলম্বন করা সহজ হয়।

ইসলামের বিধি বিধান কখনো একত্রে চাপিয়ে দেয়া হয়নি বরং ধাপে ধাপে মানুষের উপর ফরজ করা হয়েছে। ফলে যারা ইসলামে প্রবেশ করত বা প্রবেশের ইচ্ছা পোষণ করত তাদের ইসলাম পালন করা সহজ হত এবং ইসলামে দীক্ষিতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকত।

আর যদি প্রথমেই কাউকে সব কিছু চাপিয়ে দেয়া হত, তাহলে ইসলাম গ্রহণকারীদের সংখ্যা কমে যেত এবং কেউ কেউ ইসলাম গ্রহণ করলেও চাপের মুখে পলায়ন করত। [শরহে নববী:৪১/১২ ফাতহুল বারী: ১৬৩/১]

এমনিভাবে জ্ঞান অর্জন, শিক্ষা দীক্ষার ক্ষেত্রে ও ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়া উচিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ হলো, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের বিভিন্ন সময় বিরতি দিতেন এবং এক দিন পর পর তালীম তরবিয়ত বা শিক্ষা মূলক বৈঠক করতেন। যাতে তারা বিরক্ত না হয় এবং অস্বস্তি অনুভব না করে। [ফতহুল বারী:১৬২,১৬৩/১]

মোট কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন, এ উম্মতের সবচেয়ে বড় হিতাকাঙ্ক্ষী। সর্ব প্রকার কল্যাণের পথ প্রদর্শক, সংবাদ দাতা, এবং সকল অন্যায়, অনাচার, পাপাচার হতে বাধা দানকারী এবং ভীতি প্রদর্শনকারী। উম্মতকে যারা কষ্ট দেন, তাদের অভিশাপ করেন এবং যারা উম্মতের সাথে ভাল ব্যবহার করেন ও তাদের কল্যাণ কামনা করেন, তিনি তাদের জন্য দুআ ও শুভ কামনা করেন। আয়েশা রা. এর উল্লেখিত হাদীস এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

সুতরাং বলা বাহুল্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে কষ্ট দেয়ার ক্ষেত্রে কঠোরতা পরিহার করতেন। আর যারা মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করে এবং তাদের প্রতি মমতা বোধ জাগিয়ে তোলার জন্য কাজ করে তাদের বিশেষ গুরুত্ব দেন। [শরহে নববী: ২১৩/১২]

প্রথম দৃষ্টান্ত: ব্যভিচার করার জন্য এক যুবকের অনুমতি প্রার্থনা

আবু উমামা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একটি যুবক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন,’ তার কথা শুনে উপস্থিত সবাই তাকে ভৎর্সনা করতে লাগল এবং থামাতে চেষ্টা করল। রাসূল বললেন, ‘তুমি কাছে এসো!’ যুবকটি তার নিকটে গেল। তিনি বললেন, ‘তুমি কি তোমার মায়ের সাথে ব্যভিচারকে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা পছন্দ করি না। দুনিয়ার কেউই তা পছন্দ করে না।’ তারপর বললেন, ‘তুমি কি তোমার মেয়ের সাথে অপকর্ম করাকে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন- দুনিয়ার কোনো মানুষই তা পছন্দ করবে না।’ তিনি বললেন, ‘তুমি তোমার বোনের সাথে অপকর্ম করতে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা পছন্দ করি না । আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন- দুনিয়ার কোন মানুষ তার বোনের সাথে অপকর্ম করতে পছন্দ করবে না।’ তিনি বললেন, ‘তুমি কি তোমার ফুফুর সাথে অপকর্ম করতে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘কসম আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, দুনিয়ার কোনো মানুষই তার ফুফুর সাথে অপকর্ম করাকে পছন্দ করে না।’ তারপর বললেন, ‘তুমি কি তোমার খালার সাথে অপকর্ম করাকে পছন্দ কর?’ সে বলল, ‘আল্লাহর কসম! আমি কখনো তা পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন-দুনিয়ার কোনো মানুষই তার খালার সাথে অপকর্ম করাকে পছন্দ করে না।’ এরপর তিনি তার শরীরে হাত রেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ! তুমি গুনাহসমূহ ক্ষমা কর এবং আত্মাকে পবিত্র কর লজ্জাস্থানকে হেফাজত কর।’ সে দিন থেকে যুবকটি কখনো ব্যভিচারের দিকে মনোযোগ দেয়নি। [আহমাদ: ৩৭০/১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদর্শ হতে একজন সংস্কারকের জন্য মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার, তাদের প্রতি দয়া এবং সহানুভূতির গুরুত্ব বিশেষভাবে অনুধাবন করা যায়। বিশেষ করে যারা ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার আশা করে, ঈমানকে বৃদ্ধি করার চেষ্টায় ব্যাকুল এবং ইসলামের উপর অটল অবিচল থাকার বিষয়ে প্রত্যয়ী হয়।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার কাজ-কর্মে এবং আদেশ-নিষেধের মাধ্যমে প্রতিটি ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন।

দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত : ইহুদীর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ব্যবহার

আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, এক দল ইহুদী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বলল, ‘আস্সামু আলাইকুম’ (তোমাদের জন্য মৃত্যু)। আয়েশা রা. বলেন, আমি অভিশপ্ত ইহুদীদের ধোঁকা-বাজী বুঝতে পেরে বলি ‘ওয়া আলাইকুমুস্সাম ওআললনাতু’ (তোমাদের জন্য মৃত্যু ও অভিশাপ)। এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সাবধান! হে আয়েশা, আল্লাহ প্রতিটি কাজে নমনীয়তাকে ভালোবাসেন।’ আমি বললাম, ‘হে রাসূল! তারা কি বলল, আপনি তা শুনেননি?’ রাসূল বললেন, ‘অবশ্যই শুনেছি এবং তাদের উত্তরে আমি বলেছি ওয়া আলাইকুম (তোমাদের জন্যও)। [সহীহ আল - বুখারী ৬০২৪] এ টুকুই বলাই যথেষ্ট।

এবং তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা প্রতিটি কাজে নমনীয়তাকে পছন্দ করেন। নমনীয়তার উপর যে ধরনের বিনিময় এবং সওয়াব দেন, কঠোরতা এবং অন্য কোন আমলের উপর এ পরিমাণ বিনিময় ও সওয়াব দান করেন না। [সহীহ মৃসলিম:২৫৯৩]

তিনি আরো বলেন, ‘যে কোন বিষয়ে নমনীয়তা প্রদর্শন সৌন্দর্যকে বৃদ্ধি করে এবং কঠোরতা প্রদর্শন তিক্ততা ছড়ায়।’ [সহীহ মুসলিম :২৫৯৪]

তিনি বলেন, ‘নমনীয়তা হতে বঞ্চিত ব্যক্তি মানেই যাবতীয় কল্যাণ হতে বঞ্চিত।’

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যাকে নমনীয়তা হতে বঞ্চিত করা হয়, তাকে অবশ্যই দুনিয়া ও আখেরাতের সকল প্রকার কল্যাণ হতে বঞ্চিত করা হয়।’ [সহীহ মুসলিম :২৫৯২]

আবু দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যাকে নম্রতা বা ভদ্রতার ক্রিয়দাংশ প্রদান করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণেরও ক্রিয়দাংশ প্রদান করা হয়। আর যাকে নম্রতা বা ভদ্রতা হতে আংশিক বঞ্চিত করা হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণ হতেও আংশিক বঞ্চিত করা হয়।’

আবু দারদা হতে আরো বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল বলেন, ‘যাকে নম্রতা বা ভদ্রতার ক্রিয়দাংশ দেয়া হয়, তাকে যাবতীয় কল্যাণেরও ক্রিয়দাংশ দেয়া হয়। উত্তম চরিত্র হতে কোন আমলই ভারী হতে পারে না।’ [তিরমিযি:২০১৩]

তৃতীয় দৃষ্টান্ত : মসজিদে পেশাবকারীর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ

আনাস বিন মালেক রা. হতে বর্ণিত, একদা আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে মসজিদে অবস্থান করছিলাম । ঠিক এ মুহূর্তে একজন গ্রাম্য লোক এসে মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে আরম্ভ করল। এ দেখে সাহাবারা তাকে থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তাকে পেশাব করতে বাধা দিও না’, ফলে তারা পেশাব করার জন্য সুযোগ দেন। পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কাছে ডেকে বললেন, ‘মসজিদ পেশাবের জায়গা নয় বরং মসজিদ হলো আল্লাহর জিকির, কুরআন তিলাওয়াত এবং নামাজের স্থান।’ তারপর এক ব্যক্তিকে আদেশ দিলেন- এক বালতি পানি তার পেশাবে ঢেলে দেয়ার জন্য। [সহীহ মুসলিম :২৮৫ সহীহ আল - বুখারী ২১৯]

সহীহ আল-বুখারীর হাদীস দ্বারা প্রমাণিত এ লোকটি বলেছিল, ‘হে! আল্লাহ তুমি আমাকে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রহম কর, আমাদের দুইজন ছাড়া আর কাউকে অনুগ্রহ করো না।’

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে দাঁড়ান। আমরাও দাঁড়াই, লোকটি নামাজে বলল, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুগ্রহ কর। আমাদের ছাড়া আর কাউকে অনুগ্রহ করো না’, নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘তুমি উন্মুক্ত ঝর্নাধারাকে পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিলে।’ [সহীহ আল - বুখারী ৬০১০]

বুখারী ছাড়া অন্যান্য হাদীসের কিতাবে এ ঘটনার ব্যাখ্যা নিম্নরূপ :

আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত, একজন গ্রাম্য লোক মসজিদে দুই রাকাত নামাজ পড়ে বলল, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুগ্রহ কর এবং এ ছাড়া কাউকে অনুগ্রহ করো না।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘তুমি উন্মুক্ত ঝর্নাধারাকে পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিলে?’ এ কথা বলতে না বলতে সে মসজিদে পেশাব করতে আরম্ভ করলে সকলে দৌড়ে বাধা দিতে চেষ্টা করেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, তাদের কষ্টের কারণ বা অকল্যাণের জন্য প্রেরণ করা হয়নি। তোমরা তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও।’ [তিরমিযি: ১৪৭ আহমাদ: ৭২৫৪]

তিনি বলেন, গ্রাম্য লোকটি বিষয়টি অনুধাবন করে বলল, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসেন। কিন্তু তিনি আমাকে কোন প্রকার ধমক দেননি, কোন মন্দ বলেননি এবং কোন প্রকার মারধর করেননি।’ [আহমাদ: ১০৫৪০ ইবনে মাজাহ:৫২৯,৫৩০] দেখুন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী, বিজ্ঞ এবং বুদ্ধিমান। তার আচার -আচরণ এবং কাজর্কম সবই প্রজ্ঞাময় এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক। তার আখলাক, আচার-আচরণ, নম্রতা-ভদ্রতা, নমনীয়তা, দয়াদ্রতা, সহনশীলতা, ক্ষমা ও ধৈর্যশীলতা সম্পর্কে অবগত ব্যক্তি মাত্রই তার প্রতি বিশ্বাস দৃঢ় হবে তার এবং প্রগাঢ় হবে তার ঈমান। লোকটি এমন একটি কাজ করল, তাতে রাগান্বিত হওয়া, শাস্তি যোগ্য অপরাধ মনে করা এবং শিক্ষা দেয়ার মত গর্হিত কাজ বিবেচনা করা ছাড়া উপস্থিত লোকদের সামনে আর কোন বিকল্প ছিল না । এ কারণেই সাহাবীগণ তাড়াহুড়া করে তাকে বারণ করতে লাগলেন, তার এ কাজটিকে তারা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তারা তাকে ধমক দিলেন এবং তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিলেন এবং সাহাবীদের তাকে পেশাবে বাধা দেয়া হতে বিরত রেখে তার সাথে সুন্দর ব্যবহার করেন ও সুশিক্ষা দেন। এবং যখন সবাই বিরক্ত তখন তার প্রতি তিনি দয়ার্দ্র হলেন।

এটা ছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দয়া, সহনশীলতা এবং সুন্দর ব্যবহারের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। প্রতিটি কাজে এবং ব্যবহারে তিনি অনুরূপ হিকমত এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে হিকমতের সাথে শিক্ষা দেন এবং লোকটি যখন এ কথা বলে, ‘হে আল্লাহ তুমি আমাকে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুগ্রহ কর এবং আমাদের ছাড়া কাউকে অনুগ্রহ করো না’, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন, ‘তুমি বিস্তৃত জনপদকে সংকীর্ণ করে ফেললে! অর্থাৎ আল্লাহর রহমতকে। কারণ, সমস্ত কিছুই আল্লাহর রহমত দ্বারা আবৃত। আল্লাহ বলেন, ‘আমার রহমত সব কিছুকেই অন্তর্ভুক্ত করে।’ [সুরা আরাফ:১৫৬]

কিন্তু দুআ করতে গিয়ে লোকটি কার্পণ্য করে এবং রহমতের দুআতে সমস্ত মাখলুককে অন্তর্ভুক্ত করেনি।

অথচ, আল্লাহ তাআলা এর বিপরীতে যারা দুআতে সমস্ত সৃষ্টিকে শামিল করেন তাদের প্রশংসা করেন। তিনি বলেনঃ

وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ

‘‘আর যারা তাদের পরে আগমন করল, তারা বলে, ‘হে আমাদের রব! তুমি আমাদের ক্ষমা কর এবং আমাদের পূর্বে ঈমান সহকারে যারা অতিবাহিত হয়েছে তাদেরও। আর আমাদের অন্তরে ঈমানদারদের সম্পর্কে কোন বিদ্বেষ অবশিষ্ট রেখো না। হে রব! নিশ্চয় তুমি পরম দয়ালু।’’ [সুরা হাসর:১০]

লোকটি উল্লেখিত আয়াতের বর্ণনার সম্পূর্ণ উল্টো দুআ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত নম্র, ভদ্র এবং আদরের সাথে শিক্ষা দেন। এবং এ ধরনের দুআ হতে নিষেধ করেন। [ফতহুল বারী: ৪৩৯/১০]

আর লোকটি পেশাব করতে আরম্ভ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাধা দেয়া হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। কারণ, হতে পারে বাধা দেয়ার ফলে সমস্যা আরো বাড়বে। তাই তিনি বাধা দেননি, কারণঃ

১ - পেশাব করতে আরম্ভ করার পর বাধা প্রদান করলে লোকটির স্বাস্থ্যের দিক হতে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।

২- অথবা পেশাব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে শরীরের অন্যান্য স্থান, পোশাক এবং মসজিদের অন্য কোন অংশে পেশাব লেগে নাপাক হয়ে যেতে পারত ।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কল্যাণের দিক বিবেচনা করে বাধা প্রদান হতে বিরত রাখলেন।

অর্থাৎ তিনি দুটি বড় ধরনের সমস্যা এবং ক্ষতিকে প্রতিহত করেন সহনীয় দুটি ক্ষতিকে মেনে নিলেন। এবং দুটি বড় ধরনের কল্যাণ অর্জনকে প্রাধান্য দেন ছোট দুটিকে ছেড়ে দিয়ে। [ফতহুল বারী: ৩২৫/১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন বুদ্ধিমত্তা এবং হিকমতের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহণকারী। তিনি যে কোন প্রেক্ষাপটে যে কোন কাজকর্ম সমাধান এবং পরিস্থিতি মোকাবিলায় হিকমতের পরিচয় দিয়ে থাকেন। ঘটনায় তিনি তার উম্মত, বিশেষ করে দাওয়াত-কর্মী বা সংস্কারকদের একজন মূর্খ - অজ্ঞ , অশিক্ষিত-যার মধ্যে কোনপ্রকার হটকারিতা বা কপটতার অবকাশ নাই- কোন প্রকার কটূক্তি, হুমকি- ধমকি , কঠোরতা, কষ্ট দেয়া বা দুর্ব্যবহার ছাড়া কীভাবে শিক্ষা দিতে হয় তার একটি দৃষ্টান্ত এবং অনুপম আদর্শ স্থাপন করেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুপম আদর্শ- নমনীয়তা, দয়া, অনুগ্রহ, সহানুভূতিশীল আচরণ, মমতাময়ী ব্যবহার - লোকটির জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। ফলে, সে পরবর্তী জীবনে ঘটনার বর্ণনায় কৃতজ্ঞতার সাথে বলে, ‘তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে আমার দিকে অগ্রসর হন। তবে তিনি আমাকে কোন প্রকার কটূক্তি বা উচ্চবাচ্য করেননি, কোন প্রকার তিরস্কার বা ভৎর্সনা করেননি এবং মারধর করেননি।’ [ইবনে মাজাহ:৫২৯]

তার কথা থেকেই বুঝা যায়, লোকটির জীবনে কেমন পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।

চতুর্থ দৃষ্টান্তঃ মুআবিয়া বিন হাকামের ঘটনা

মুআবিয়া বিন হাকাম আস্সুলামী হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ‘একদিন আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে নামাজ আদায় করতে ছিলাম। ইতি মধ্যে নামাজে এক লোক হাঁচি দিলে তার উত্তরে আমি বলি ‘ইয়ারহামুকাল্লাহ! (আল্লাহ তোমাকে দয়া করুন )’ এ শুনে সবাই আমার দিকে বাঁকা চোখে তাকাতে আরম্ভ করল। আমি তাদের বললাম, ‘হায় দুর্ভোগ! তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা আমার দিকে এভাবে তাকাও কেন?’ তারপর তারা তাদের উরুতে থাপর মারতে আরম্ভ করল। আমি বুঝতে পারলাম তারা আমাকে চুপ করাতে চাচ্ছে। ফলে আমি চুপ হয়ে গেলাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য আমার মাতা পিতা উৎসর্গ হোক, ইতিপূর্বে আমি তার চেয়ে উত্তম কোন শিক্ষক ও এত সুন্দরভাবে শিক্ষা প্রদান করতে কাউকে দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি আমাকে কোন গালি দিলেন না, তিরস্কার করলেন না এবং কোন মারধর করেননি। নামাজ শেষে বলেন, ‘নিশ্চয় নামাজে কথা বলা সঙ্গত নয়। বরং নামাজ হলো তাসবীহ, তাকবীর এবং কুরআন তেলাওয়াত।’

আমি তাকে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি জাহেলিয়্যাতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিলাম। আল্লাহ ইসলাম গ্রহণ করার সুযোগ দিয়েছেন। আমাদের মধ্যে কিছু লোক গণকের নিকট যায়। আমি কি গণকের নিকট যাব?’ রাসূল বলেন, ‘না, তুমি গণকের নিকট যেও না।’ বললাম, ‘আবার আমাদের মধ্যে কিছু লোক এমন আছে তারা লক্ষণ-কুলক্ষণে বিশ্বাস করে।’ তিনি বললেন, ‘এটা একটি কুসংস্কার, অবিশ্বাসী কাফেররা এতে বিশ্বাস করে। তবে তোমাকে এটা যেন কোন কাজ থেকে বিরত না রাখে।’ তারপর আমি বলি, ‘আমাদের মধ্যে কিছু লোক আছে, যারা দাগ দেয়।’ রাসূল বলেন ‘যদি পূর্বেকার কোন নবী এ ধরনের দাগ দিয়ে থাকে, আর যার দাগ নবীর দাগের সাথে মিলে যায়, তার জন্য দাগ দেয়া বৈধ।’

মুআবিয়া বিন হাকাম বর্ণনা করেন, ‘আমার একজন দাসী ওহুদ এবং জাওয়ানিয়া নামক স্থানে ছাগল চরাত। একদিন সে বলল, ‘আমার একটি ছাগল বাঘে খেয়ে ফেলেছে।’ এ কথা শুনে আদম সন্তান হিসেবে স্বাভাবিকভাবে আমি খুব কষ্ট পেলাম, ফলে আমি খুব জোরে তাকে আঘাত করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আমি তাকে মুক্ত করে দেব কি?’ রাসূল বললেন, ‘তুমি তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো।’ তাকে নিয়ে আসলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আল্লাহ কোথায়?’ উত্তরে সে বলল, ‘আল্লাহ আকাশে।’ তারপর জিজ্ঞাসা করলেন, ‘আমি কে?’ সে বলল, ‘আপনি আল্লাহর রাসূল।’ রাসূল বললেন, ‘তাকে মুক্ত করে দাও। কারণ, সে ঈমানদার।’ [সহীহ মুসলিম :৫৩৭/১] আল্লাহর পক্ষ হতে দেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ কত সুমহান ও মহত্তম।

তার আচরণ মুআবিয়া বিন হাকাম আস্সুলামীর এর জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দেয়। তাই সে বলে, ‘আমি ইতিপূর্বে এবং পরে এর চেয়ে উত্তম কোন শিক্ষক দেখিনি।’

পঞ্চম দৃষ্টান্তঃ যার হাত পেলটে ঘুরপাক খেত তার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ

উমার বিন আবি সালমা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কোলে বসে খাচ্ছিলাম। আমার হাত প্লেটের সব জায়গায় ঘুরপাক খেতে থাকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘হে! বালক! তুমি বিসমিল্লাহ পড়। ডান হাত দিয়ে খাও। এবং সামনে যা আছে তা হতে খাও।’ তারপর হতে আমার খাওয়া এ ধরনেরই ছিল। এর ব্যতিক্রম কখনো হয়নি। [সহীহ মুসলিম :২০২২]

ষষ্ঠ দৃষ্টান্ত : রমজানের দিনে স্ত্রীর সাথে সহবাসকারীর সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ

সালামাতা বিন সাখার আল আনছারী হতে বর্ণিত, তিনি তার হাদীসে বলেন, ‘ঘর হতে বের হয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এসে আমার বিষয়ে তাকে অবহিত করি। তিনি বলেন, ‘তুমি এ কাজ করেছ?’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, হে রাসূল!’ তারপর আবার বললেন, ‘তুমি একাজ করেছ?’ বললাম, ‘এ কাজ করেছি হে আল্লাহর রাসূল!’ তৃতীয় বার তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি এ কাজ করেছ?’ আমি বললাম, ‘হাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! আমার উপর বিধান প্রয়োগ করুন! আমি মেনে নেব।’ তিনি বললেন, ‘একজন দাস মুক্ত কর।’ আমি হাতকে স্বীয় ঘাড়ে রেখে বলি, ‘হে আল্লাহর রাসূল! যে সত্তা সত্যের পয়গাম নিয়ে আপনাকে প্রেরণ করছে, তার শপথ করে বলছি, আমি স্বীয় ঘাড় ছাড়া আর কোন কিছুরই মালিক নই।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে দুই মাস রোজা রাখ।’ আমি বললাম, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ! রোজা রাখার কারণেই আমি এ বিপদের সম্মুখীন হলাম।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি ছদকা কর।’ আমি বললাম, ‘আল্লাহর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্যের বাণী দিয়ে দুনিয়াতে প্রেরণ করছেন, আমি রাত যাপন করছি ক্ষুধার্ত অবস্থায়। কারণ, রাতে খাওয়ার কোন ব্যবস্থা ছিল না।’ তিনি বলেন, ‘তুমি বনী জুরাইক এর ছদকার মালিকের নিকট যাও তাদের বল, তারা যেন তোমাকে দান করে। আর তা হতে এক ওসক পরিমাণ তোমার পক্ষ হতে অভাবীদের আহার দাও। আর বাকীগুলো তুমি এবং তোমার পরিবারের জন্য গ্রহণ কর।’ তারপর আমি নিজ গোত্রের নিকট গিয়ে বলি, ‘আমি তোমাদের মধ্যে সংকীর্ণতা দেখতে পাই এবং তোমাদের অদূরর্দশিতা অনুভব করি। আর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সাহসী এবং বরকতময় দেখতে পাই । রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তোমাদের আদেশ করেছেন ছদকা দিতে। তোমরা আমাকে দান কর। এ কথা বলার পর তারা আমাকে দান খয়রাত করে সহযোগিতা করল।’ [আহমদ,আবুদাউদ,তিরমিজি]

সপ্তম দৃষ্টান্ত : কবরের পাশে ক্রন্দন রত মহিলার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আচরণ

আনাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি কবরের পাশে ক্রন্দনরত এক মহিলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। মহিলাটি বলল, ‘তুমি আমার থেকে দূর হও। কারণ, তুমি আমার মত বিপদের সম্মুখীন হওনি।’ আসলে মহিলাটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চিনতে পারেনি। তারপর মহিলাকে লোক জন বলল, ‘তুমি যার সাথে দুর্ব্যবহার করেছো তিন হলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তখন সে দৌড়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বলল, ‘আমি আপনাকে চিনতে পারিনি, তাই অভদ্র আচরণ করেছি।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘প্রথম আঘাতেই ধৈর্য ধারণ করতে হয়।’ [সহীহ আল - বুখারী:১২৮৩]

ভাবার বিষয় হলো, একজন অজ্ঞ ব্যক্তির সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতই না সুন্দর আচরণ করেন। তাকে কোন প্রকার জিজ্ঞাসাবাদ করেননি। তিরস্কার করেননি। এর চেয়ে উত্তম আদর্শ আর কার হতে পারে?

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন