hadith book logo

HADITH.One

HADITH.One

Bangla

Support
hadith book logo

HADITH.One

Bangla

System

এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন
hadith book logo

দয়া ও ভালোবাসার অনন্য বিশ্ব নবী

লেখকঃ আবু আব্দুর রাহমান

ভূমিকা
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আললাহর। আমরা তাঁর প্রশংসা করি। তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। ক্ষমা প্রার্থনা করি তাঁরই কাছে। আমাদের প্রবৃত্তির খারাবি ও কর্মের অসাধুতা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। তিনি যাকে হেদায়াত দান করেন, তাকে কেউ পথভ্রষ্ট করতে পারে না। যাকে পথভ্রষ্ট করেন তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। সাক্ষ্য দিচ্ছি, এক আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই। আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল। তার ও তার সাহাবীদের প্রতি আল্লাহর অসংখ্য রহমত বর্ষিত হোক।

আল্লাহ রাববুল আলামীন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবে পাঠিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে,

وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِلْعَالَمِينَ . ( الأنبياء : 107)

‘‘আমি তো তোমাকে সৃষ্টিকুলের প্রতি শুধু রহমত রূপেই প্রেরণ করেছি।’’ [সূরা আল-আম্বিয়া , আয়াত ১০৭]

তিনি শুধু মানুষের জন্য নন। তিনি জিন ও মানব, মুমিন ও কাফের সকলের প্রতিই রহমত রূপে প্রেরিত হয়েছেন। বিশ্বের সকল জীব-জন্তুর জন্যও তিনি রহমত। সকলকে তিনি আল্লাহর দিকে আহবান করেন। অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান। আল্লাহ বলেন:

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآَمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ . ( الأعراف : 158)

‘‘তুমি ঘোষণা করো, ‘হে মানবমন্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্যে সেই আল্লাহর রাসূল রূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আসমান ও যমীনের একচ্ছত্র মালিক। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তার সেই বার্তা বাহক উম্মী নবীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো। যিনি আললাহতে ও তাঁর কালামে বিশ্বাস রাখেন। তোমরা তারই অনুসরণ কর। আশা করা যায় তোমরা সরল-সঠিক পথের সন্ধান পাবে।’’ [সূরা আল-আরাফ : ১৫৮]

আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে সম্বোধন করে বলেন :

وَإِذْ صَرَفْنَا إِلَيْكَ نَفَرًا مِنَ الْجِنِّ يَسْتَمِعُونَ الْقُرْآَنَ فَلَمَّا حَضَرُوهُ قَالُوا أَنْصِتُوا فَلَمَّا قُضِيَ وَلَّوْا إِلَى قَوْمِهِمْ مُنْذِرِينَ . ( الأحقاف : 29)

‘‘আর যখন আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট করেছিলাম একদল জিনকে, যারা কুরআন পাঠ শুনছিল। যখন তারা তার (নবীর) নিকট উপস্থিত হলো, তারা একে অপরকে বলতে লাগল, ‘চুপ করে শোন।’ যখন কুরআন পাঠ সমাপ্ত হলো, তারা তাদের সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল সতর্ককারী রূপে।’’ [সূরা আল-আহকাফ : ২৯]

তিনি জগৎসমূহের জন্য রহমত। সকল সৃষ্টি জীবের পক্ষে ও বিপক্ষে প্রমাণ। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য এক বিরাট দান। ইরশাদ হয়েছে :

لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آَيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ . ( آل عمران : 164)

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বাসীদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের নিজেদেরই মধ্য হতে রাসূল প্রেরণ করেছেন, যে তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনায় ও তাদের পবিত্র করে। তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিখায় । যদিও তারা ইতিপূর্বে পরিষ্কার বিভ্রান্তিতে ছিল।’’ [সূরা আলে-ইমরান : ১৬৪]

আবু নদরাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আইয়ামে তাশরীকে যারা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খুতবা শুনেছে তাদের মধ্যে একজন আমাকে বলেছে যে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু এক। তোমাদের পিতা এক। অনারবের উপর আরবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। আরবের উপর অনারবের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কৃষ্ণাঙ্গের উপর শ্বেতাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্বেতাঙ্গের উপর কৃষ্ণাঙ্গের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। তবে শ্রেষ্ঠত্ব শুধুই তাকওয়া ভিত্তিক।’ [মুসনাদ আহমাদ, ২২৬/১২]

মানুষের মধ্যে তাকওয়া ব্যতীত পরস্পরে কোন পার্থক্য নেই। এ নীতির পক্ষে এ বাণী এক স্পষ্ট প্রমাণ। তাকওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ যত অগ্রগামী হবে, সে আল্লাহর কাছে ততই শ্রেষ্ঠ বলে বিবেচিত হবে। বর্ণ ও গোত্রের এ ক্ষেত্রে আদৌ কোন মূল্য নেই।

আল্লাহ রাববুল আলামীন তাঁর রাসূলকে উত্তম চরিত্রের সর্বোচ্চ চূড়ায় অধিষ্ঠিত করেছেন। সকল দিক থেকে তাকে করেছেন শ্রেষ্ঠ। তার নান্দনিক চরিত্রমাধুরি দেখে কত মানুষই না ইসলামে দীক্ষিত হয়েছে তা গণনা করে শেষ করা যাবে না। সুন্দর চরিত্রের এমন কোন দিক নেই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাললামের ব্যক্তিত্বে পূর্ণতা পায়নি। পৃথিবীতে তিনিই একমাত্র ও অদ্বিতীয় ব্যক্তি যাকে ঘিরে সুশোভিত হয়েছে সকল প্রকার নান্দনিক গুণাবলি। দান, বদান্যতা, ভদ্রতা, ক্ষমা, মহানুভবতা, ধৈর্য, সহনশীলতা, নম্রতা, সবর, বন্ধুত্বসুলভ আচরণ, বিনয়, ন্যায়পরায়ণতা, দয়া-করুণা, অনুগ্রহ, সাহসিকতা, বীরত্বসহ সকল দিক থেকে তিনি ছিলেন পরিপূর্ণতার অনন্য দৃষ্টান্ত।

সীরাত পাঠকারী ব্যক্তিমাত্রই লক্ষ্য করবেন যে, সকল অবস্থায় নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের ধারক, বাহক। দলে দলে মানুষের ইসলাম গ্রহণের পশ্চাৎগত কারণ হল, প্রথমত আল্লাহ রাববুল আলামীনের ফজল ও করম, তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র মাধুর্যের আকর্ষণ। কত মানুষ যে তার চরিত্র দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছেন তার হিসাব মেলানো দুষ্কর বৈকি।

দেখুন, সুমামা বিন উসাল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমার চরিত্রে মুগ্ধ হয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণ করে তিনি যে বক্তব্য দিলেন তা ছিল, ‘হে রাসূল! আল্লাহর শপথ! ভূ-পৃষ্ঠে আপনার চেহারার চেয়ে অপছন্দনীয় চেহারা আমার কাছে অন্য আরেকটি ছিল না। আর এখন আপনার চেহারা আমার কাছে সমধিক প্রিয়। আপনার ধর্মের চেয়ে অপছন্দনীয় ধর্ম আমার নজরে ছিল না। আর এখন আপনার ধর্মই আমার কাছে সকল ধর্মের চেয়ে প্রিয়তম। ভূ-পৃষ্ঠে আপনার দেশ ছিল আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। আর এখন সকল দেশের চেয়ে আপনার দেশ আমার কাছে অধিক প্রিয়।’ [সহীহ আল - বুখারী ৪৩৭২, সহীহ মুসলিম ১৭৬৪]

শুনুন সেই বেদুইনের বক্তব্য, যে মসজিদে নববীতে প্রস্রাব করছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ক্ষমায় মুগ্ধ হয়ে সে বলল, ‘হে আললাহ! আমাকে ও মুহাম্মাদকে অনুগ্রহ করুন, আমাদের ব্যতীত অন্য কারোর প্রতি আপনি অনুগ্রহ করবেন না।’ তার এ বক্তব্য শুনেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোন ধমক দিলেন না, কটু কথা বললেন না। একজন স্নেহময়ী কল্যাণকামী শিক্ষক হিসেবে তিনি তাকে বললেন, ‘তুমি ব্যাপক-বিস্তৃত বিষয়কে সংকীর্ণ করে দিলে।’ [সহীহ আল - বুখারী ৬০১০]

অর্থাৎ আল্লাহর রহমত হল ব্যাপক-বিস্তৃত। যা সকল মানুষ তো বটেই, সকল সৃষ্টি জীবের উপর বর্ষিত হয়। আর তুমি প্রার্থনায় তা শুধু আমার ও তোমার মধ্যে সীমিত করে দিলে।

মুআবিয়া ইবনুল হাকামের বিষয়টি দেখুন। তাকে শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি বে-নজীর ভাল বাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। মুআবিয়া নিজেই বলেন, ‘আমার পিতা - মাতা তার জন্য উৎসর্গ হোক, আমি শিক্ষাদানের ক্ষেত্রে তার-মত শিক্ষক কখনো দেখিনি। আল্লাহর কসম! (আমি অন্যায় করা সত্ত্বেও) তিনি আমাকে ধমক দিলেন না, প্রহার করলেন না, গালি দিলেন না।’ [সহীহ মুসলিম ৫৩৭)]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে বকরির বিশাল এক পাল দান করে দিলেন। সে তার সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কারণ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনভাবে দান করেন যে, দানপ্রাপ্ত ব্যক্তি জীবনে কখনো দারিদ্রতাকে ভয় করবে না।’ [সহীহ মুসলিম ২৩১২]

সাফওয়ান ইবনে উমাইয়ার প্রতি তাকিয়ে দেখুন, সে ছিল কুরাইশ বংশীয় কাফেরদের শীর্ষ স্থানীয় নেতা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে এক’শ বকরী দান করলেন। এরপর আবার এক’শ বকরী দিলেন। এরপরে আবারো এক’শ। তখন সাফওয়ান বললেন, ‘আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ আমাকে যা দিলেন কেউ আমাকে এত পরিমাণ কখনো দান করেনি। তিনি ছিলেন আমার কাছে সবচেয়ে ঘৃণিত। তিনি আমাকে দান করতেই থাকলেন। ফলে তিনি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হলেন।’ সাফওয়ানের ইসলাম গ্রহণের কারণ ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এই বদান্যতা। [সহীহ মুসলিম ২৩১৩]

আরেকজন মুশরিক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এ ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য তরবারি উত্তোলন করেছিল। কিন্তু হত্যা করতে পারেনি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [সহীহ আল - বুখারী ২৯১০, সহীহ মুসলিম ৮৪৩] পরবর্তীতে সে তার সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে গেল, ইসলাম গ্রহণ করার ঘোষণা দিল। তার দাওয়াতে তার গোত্রের বহু লোক ইসলামে প্রবেশ করল। [ফাতহুল বারী]

বিশিষ্ট ইহুদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ ইবনে সাললামের প্রতি লক্ষ করুন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় আগমন করলে তিনি তার সাথে দেখা করলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি তাকে দেখার জন্য লোকদের সাথে এলাম। যখন আমি তার চেহারার দিকে তাকালাম, আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল, এটা কোন মিথ্যাবাদীর চেহারা হতে পারে না। প্রথম যে কথাটি আমি তার মুখ থেকে শুনলাম তা হল, ‘হে মানবমন্ডলী! সালামের প্রচলন করো, মানুষকে খাবার দাও, আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখো, আর রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকে তখন সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে ।’ [তিরমীজি ২৫৮৫, ইবনে মাজা ৩২৫১]

যায়েদ ইবনে সাইয়া নামক এক ইহুদী পন্ডিতের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পরীক্ষা করার জন্য এল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ক্ষমা করে দিলেন। আর উমর রা. কে নির্দেশ দিলেন তাকে কিছু উপহার দেয়ার জন্য। যায়েদ বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারার দিকে তাকিয়েই নবু্ওয়তের আলামতসমূহ দেখতে পেলাম। হে উমার! তোমাকে সাক্ষী রেখে বলছি, ‘আমি প্রতিপালক হিসেবে আল্লাহর প্রতি, ধর্ম হিসাবে ইসলামের প্রতি ও নবী হিসাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি রাজী হয়ে গেলাম।’ [আল-ইসাবা ফি তামীযিস সাহাবা]

অন্য এক ইহুদীর কথা শুনুন, যে মৃত্যুকালে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করে বলেছিল, যিনি তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন তার কসম, আমরা আমাদের গ্রন্থে আপনার গুণাবলি পেয়েছি। দেখেছি আপনার বৈশিষ্ট্যসমূহ। তাই আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, আর আপনি আল্লাহর রাসূল।’ [আহমাদ ৪১১/৫]

ইথিওপিয়ার সে সময়ের খ্রিস্টান সম্রাট নাজ্জাশীর কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করতেই হয়। যখন সে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতিনিধির কাছে তার দাওয়াত ও ঈসা আ. সম্পর্কে তার মন্তব্য শুনলেন, যে তিনি বলেছেন, ‘ঈসা আল্লাহর বান্দা ও তার রাসূল’, তখন নাজ্জাশী বলে উঠল, তোমাদের স্বাগত জানাচ্ছি, আর অভিবাদন জানাচ্ছি তাকেও যার পক্ষ থেকে তোমরা এসেছ। শুনে রাখ! আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি, মুহাম্মাদ অবশ্যই আল্লাহর রাসূল, যার সম্পর্কে ঈসা আ. আমাদের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আমার যদি বাদশাহীর দায়িত্ব না থাকতো তাহলে আমি তার কাছে যেয়ে তার জুতা চুম্বন করতাম।’

রোমান সাম্রাজ্যের খ্রিস্টান সম্রাট হেরাক্লিয়াসের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। আবু সুফিয়ান যখন তার দরবারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বলল, ‘সে বিশ্বাস ভঙ্গ করে না। সে এক আল্লাহর ইবাদত করতে নির্দেশ দেয়। তার সাথে শিরক করতে নিষেধ করে। প্রতিমা পূজা করতে নিষেধ করে। সালাত আদায় করতে বলে। সততা অবলম্বন করতে বলে। শালীনতার নির্দেশ দেয়।’ তখন রোমান সম্রাট আবু সুফিয়ানকে বলল, ‘তুমি যা বলেছ তা যদি সত্যি হয়, তাহলে সে তো আমার রাজ্যের মালিক হয়ে যাবে। আমি জানতাম তার আবির্ভাব হবে, কিন্তু সে যে তোমাদের জাতি থেকে হবে, তা আমার ধারণা ছিল না। আমি যদি তার কাছে যেতে পারতাম, তবে কষ্ট করে হলেও তার সাথে সাক্ষাৎ করতাম। আমি যদি তার কাছে থাকতাম তাহলে তার দু পা ধৌত করে দিতাম।’ [সহীহ আল - বুখারী-৭]

মহান আল্লাহ সত্যই বলেছেন:

وَإِنَّكَ لَعَلى خُلُقٍ عَظِيمٍ

‘‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’’ [সূরা আল-কলম : আয়াত ৪]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই বলেছেন, ‘সুন্দর চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের জন্য আমাকে প্রেরণ করা হয়েছে।’ [বাইহাকী ১৯২/১০, আহমদ ৩৮১/২]

আয়েশা রা. কে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, ‘তার চরিত্র হল আল-কুরআন।’ [সহীহ মুসলিম ৭৪৬]

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন ইসলামের একটি মূল বিষয়। সকল মুসলিম নর-নারীকে তার সম্পর্কে জানতে হবে। কবরেও তার পরিচয় সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। এ দিকে লক্ষ্য রেখে এ বিষয়ে সংক্ষেপে বইটি লিখেছি। বইটির নাম দিয়েছি : রাহমাতুললিল আলামীন : মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত : মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)

এতে আমি আলোচনা করেছি তার বংশ পরিচয়, শৈশব, চরিত্র, শারীরিক ও চারিত্রিক গুণাবলি, তার মুজিযা, রেসালাতের সার্বজনীনতা, উম্মতের জন্য তার উপদেশ, তার প্রতি উম্মতের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমি এ বইটিকে নিম্নোক্ত বিষয়াবলিতে বিন্যস্ত করেছি

প্রথম পরিচ্ছেদ : সর্বোত্তম ও সর্বশ্রেষ্ঠ বংশে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : জন্ম ও শৈশব

তৃতীয় পরিচ্ছেদ : শারীরিক ও চারিত্রিক গুণাবলি

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : আল্লাহর ইবাদত ও জিহাদে আত্ন-নিয়োগ

পঞ্চম পরিচ্ছেদ: সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত তিনি

ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ : শিশুদের সাথে তার স্নেহময়ী আচরণ ও তাদের আনন্দ দান

সপ্তম পরিচ্ছেদ : সুন্দর চরিত্র

অষ্টম পরিচ্ছেদ: দান ও বদান্যতা

নবম পরিচ্ছেদ : ন্যায়পরায়ণতা

দশম পরিচ্ছেদ : বিনয় ও নম্রতা

একাদশ পরিচ্ছেদ : সহনশীলতা ও ক্ষমা

দ্বাদশ পরিচ্ছেদ : দৃঢ়তা

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ : সহমর্মিতা ও কোমলতা

চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ধৈর্য ও সবর

পঞ্চদশ পরিচ্ছেদ : বীরত্ব ও সাহসিকতা

ষোড়শ পরিচ্ছেদ : সংস্কার ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় কর্মকৌশল

সপ্তদশ পরিচ্ছেদ : ভাষা অলংকার

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : মুজিযা-অলৌকিকতা

ঊনিশতম পরিচ্ছেদ : মানব ও জিনের প্রতি তার রেসালাতের সার্বজনীনতা

বিশতম পরিচ্ছেদ : ইহুদী ও খ্রিস্টান লেখক কর্তৃক রাসূল হিসাবে স্বীকৃতি দান

একুশতম পরিচ্ছেদ : তার শেষ জীবনের শ্রেষ্ঠ-কর্ম

বাইশতম পরিচ্ছেদ : বিদায় হজে উম্মতের জন্য উপদেশ ও বিদায় গ্রহণ

তেইশতম পরিচ্ছেদ : মৃত ও জীবিতকে বিদায় দান

চবিবশতম পরিচ্ছেদ : অসুস্থতার সূচনা ও আবু বকর রা. কে ইমামতির দায়িত্ব প্রদান

পঁচিশতম পরিচ্ছেদ : তার শ্রেষ্ঠ ভাষণসমূহ ও মানুষের জন্য উপদেশ

ছাবিবশতম পরিচ্ছেদ : অসুস্থতার বৃদ্ধি, বিদায় গ্রহণ ও অসীয়ত

সাতাশতম পরিচ্ছেদ : ইন্তেকাল-পূর্ব অসীয়ত

আঠাশতম পরিচ্ছেদ : মহান বন্ধুর সান্নিধ্য প্রত্যাশা

উনত্রিশতম পরিচ্ছেদ : তার শহীদি ইন্তেকাল

ত্রিশতম পরিচ্ছেদ : যে আল্লাহর ইবাদত করে সে জেনে রাখুক আল্লাহ জীবিত, মৃত্যুবরণ করেন না

একত্রিশতম পরিচ্ছেদ : তার ইন্তেকালে মুসলমানদের বিপদ

বত্রিশতম পরিচ্ছেদ : তার উত্তরাধিকার

তেত্রিশতম পরিচ্ছেদ : উম্মতের কাছে তার অধিকার

বইতে নিম্নের ৩ টা পরিচ্ছেদ পাওয়া যায়নি।

[একত্রিশতম পরিচ্ছেদ : তার ইন্তেকালে মুসলমানদের বিপদ

বত্রিশতম পরিচ্ছেদ : তার উত্তরাধিকার

তেত্রিশতম পরিচ্ছেদ : উম্মতের কাছে তার অধিকার]

আল্লাহর তাআলার কাছে আমার প্রার্থনা, তিনি যেন এ অতি সামান্য আমলে বরকত দান করেন। তার সন্তুষ্টির জন্যই কাজটা করার তাওফীক দান করেন। আমার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর এ দ্বারা যেন উপকৃত হতে পারি। তিনিই উত্তম কর্ম-বিধায়ক, তার কাছেই সকল প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি। তিনি আমাদের জন্য যথেষ্ট।

আল্লাহ তাআলা তার বান্দা ও রাসূল মুহাম্মাদের প্রতি ও তার সাহাবা এবং তাদের অনুসারীদের উপর কেয়ামত পর্যন্ত সালাত-রহমত বর্ষণ করুন।

আবু আব্দুর রহমান

২৯-০১-১৪২৭ হিজরী

রিডিং সেটিংস

Bangla

System

আরবি ফন্ট নির্বাচন

Kfgq Hafs

অনুবাদ ফন্ট নির্বাচন

Kalpurush

22
17

সাধারণ সেটিংস

আরবি দেখান

অনুবাদ দেখান

রেফারেন্স দেখান

হাদিস পাশাপাশি দেখান


এই সদাকা জারিয়ায় অংশীদার হোন

মুসলিম উম্মাহর জন্য বিজ্ঞাপনমুক্ত মডার্ন ইসলামিক এপ্লিকেশন উপহার দিতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার এই দান সদাকায়ে জারিয়া হিসেবে আমল নামায় যুক্ত হবে ইন শা আল্লাহ।

সাপোর্ট করুন